ভাঙছে না সরকারি দরপত্রে একচেটিয়া আধিপত্য!
তোফাজ্জল হোসেন রুবেল | ৩০ মে, ২০২২ ০০:০০
সরকার ই-টেন্ডার পদ্ধতি চালু করলেও সরকারি কাজের টেন্ডারের (দরপত্র) ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট করার অভিযোগ কমেনি। বিভিন্ন দপ্তরে বছরের পর বছর ধরে একই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের একচেটিয়া আধিপত্য থাকছে। এর অন্যতম কারণ, সরকারি কাজের অভিজ্ঞতা একবার যারা অর্জন করতে পেরেছে তারাই মূলত একচ্ছত্রভাবে কাজ করছে। ব্যবসায়িকভাবে বড় প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও অভিজ্ঞতার অজুহাতে অনেক প্রতিষ্ঠান সরকারি কাজে অংশ নিতে পারছে না।
গত কয়েক বছর ধরে দরপত্র নিয়ন্ত্রণের বদনাম ঘোচাতে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশের পরও পিপিআর ও টেন্ডার সংশ্লিষ্ট নিয়মাবলিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। আবার বিদ্যমান আইনে সুযোগ থাকার পরও দরপত্র আহ্বানকারী দপ্তর বেসরকারি অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর সুযোগ দিচ্ছে না। ফলে গুটিকয়েক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সংস্থায় এমনকি সরকারের বড় আকারের প্রকল্পেও নিজেদের ইচ্ছামাফিক কাজ বাগিয়ে নিচ্ছে। এমনও আছে, শুধু অভিজ্ঞতার ‘সনদ’ বিক্রি করে ‘মাঝখান’ থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রভাবশালী মহল। তাই অবাধ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে সরকারি উন্নয়ন কাজে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের অভিজ্ঞতা আমলে নেওয়ার ব্যাপারে জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারের যে বিপুল অর্থ উন্নয়ন খাতে ব্যয় হয় তার সঠিক ব্যবস্থাপনা হয় না। সরকারের প্রায় সব দপ্তরেই দরপত্র নিয়ন্ত্রণে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করে। তারা ঠিক করে কে কাজ পাবে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দরপত্র আহ্বানকারী কর্মকর্তা আর ঠিকাদার মিলে আগেই রফা করে নেন। তাদের এ শক্তিশালী নেটওয়ার্কের বাইরে গিয়ে নতুন কোনো ঠিকাদার সেখানে প্রবেশ করতে পারেন না। এ ছাড়া দরপত্রের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি এমনভাবে শর্ত জুড়ে দেন, যেন তার পছন্দের ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ দরপত্রে অংশ নিতে না পারেন। অথচ আইন অনুযায়ী, দরপত্র আহ্বানের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা যদি মনে করেন সরকারি কাজের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি বেসরকারি কাজে অভিজ্ঞদের অংশ নেওয়ার সুযোগ দেবেন, তিনি সেটা করতে পারেন। এতে উন্নয়ন কাজে বেশি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। আবার সর্বোচ্চ দরকষাকষির মাধ্যমে সরকারের অর্থ সাশ্রয় হবে।
উন্নয়ন কাজে সম্পৃক্ত একজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এই মুহূর্তে সেন্ট্রাল প্রকিউরম্যান্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) বেঁধে দেওয়া স্ট্যান্ডার্ড ডকুমেন্ট অনুযায়ী সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কাজের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। যদি সরকারি ১০তলা ভবনের দরপত্র আহ্বান করা হয়, তাহলে অভিজ্ঞতা চাওয়া হয় কমপক্ষে ৬-৭ তলা ভবন তৈরির। আর আর্থিক অভিজ্ঞতাও চাওয়া হয় দরপত্রের ৫০ থেকে ৭৫ ভাগ। এখানে বেসরকারি কাজের অভিজ্ঞতার বিষয়টি যুক্ত থাকে না। যদি এমন শর্ত দেওয়া না হতো তাহলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও অংশ নিতে পারত।
অবাধ প্রতিযোগিতার সুফল উল্লেখ করে আরেক কর্মকর্তা বলেন, করোনা শুরু হওয়ার পর সরকার অতি জরুরি পণ্য হিসেবে বেশকিছু ওষুধ কিনেছে। সেখানে আগে যেসব উপকরণ কেনা হয়েছে তার তুলনায় করোনাকালে কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকা কমে কিনতে পেরেছে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি)। কারণ আগে দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী ‘মিঠু সিন্ডিকেট’ ছাড়া কেউ অংশ নিতে পারত না। সিএমএসডি কর্তৃপক্ষ শর্ত শিথিল করে সবার জন্য দরপত্র উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরপরই মিলেছে এ সুফল।
গণপূর্ত অধিপ্তরের একজন অভিজ্ঞ প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারি কাজের অভিজ্ঞতার অজুহাতে দেশের অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান সরকারি কাজের দরপত্রে অংশ নিতে পারে না। সেখানে জি কে শামীমদের মতো ঠিকাদারদের সিন্ডিকেট রাতারাতি দাঁড়িয়ে যায়। তারা নানা কৌশলে তাদের মধ্যেই কাজগুলো ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। অথচ সরকারের অনেক বড় প্রকল্প রয়েছে যেখানে দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলো অংশ নিতে পারলে একদিকে যেমন অর্থের সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে কাজের গুণগত মানও ভালো থাকবে।
পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস-২০০৮ (পিপিআর)-এর ১৮ ধারায় ক্রয় কাজে প্রতিযোগিতার কথা বলা আছে। ক্রয়কার্য সম্পাদনের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির দায়দায়িত্ব সম্পর্কে ওই ধারার উপধারা (২)-এ বলা হয়েছে, ‘যে মানদ-ের ভিত্তিতে আবেদনকারী বা দরদাতা বা পরামর্শকদের যোগ্যতা নিরূপণ করা হইবে উহা সংশ্লিষ্ট দলিলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করিয়া আবেদনকারী বা দরপত্রদাতাকে আহ্বানের সাড়া প্রদানের জন্য পর্যাপ্ত সময় প্রদান করিতে হইবে এবং উক্ত সময় প্রযোজ্য দলিলে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করিতে হইবে।’
দরপত্র নিয়ে কাজ করা একজন অভিজ্ঞ প্রকৌশলী দেশর রূপান্তরকে বলেন, দরপত্র আহ্বানকারী কর্মকর্তা (প্রকিউর ইন্টিটি) চাইলে বেসরকারি অভিজ্ঞতার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন। তবে সেই ক্ষেত্রে তাকে (দরপত্র আহ্বানকারী) সিপিটিইউর স্ট্যান্ডার্ড টেন্ডার ডকুমেন্টের ১৪. ১(এ) ও ১৪. ১(বি) ধারায় কিছু সংশোধন আনতে হবে। সেখানে একজন দর আহ্বানকারী কীভাবে দর আহ্বান করবে, দরপত্রে কারা কারা অংশ নিতে পারবে বা কী কী যোগ্যতা লাগবে তা তিনিই নির্ধারণ করেন। ফলে একজন মূল ঠিকাদার, উপঠিকাদার বা যৌথ ঠিকাদার কোন বছর কী কাজ করেছে, কত টাকার কাজ করেছে, কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিসহ সবকিছুই দরপত্র আহ্বানকারী নিজেদের ইচ্ছামাফিক ঠিক করে থাকেন। তিনি আরও বলেন, অনেকেই বলার চেষ্টা করেন যে, বেসরকারি কাজের অভিজ্ঞতা বা আর্থিক সক্ষমতা যাচাই করা যায় না। ফলে বেসরকারি কাজের অভিজ্ঞতা দরপত্রে আমলে নিলে সেখানে অনেকেই মিথ্যা তথ্য দিতে পারেন। কিন্তু তা অনেকাংশেই সঠিক নয়। সরকারের অনেকগুলোর সংস্থার রাজধানীসহ মাঠ পর্যায়ে দক্ষ প্রকৌশল ইউনিট রয়েছে। এই ইউনিটে বেসরকারি যেকোনো স্থাপনা বা রাস্তার তথ্য পাঠিয়ে কাজের মূল্যমানসহ বিস্তারিত জানা সম্ভব। তবে একটি কাজে কী পরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছে তা কাগজপত্রে সরকারি দর অনুযায়ী উল্লেখ করতে হবে।
উদাহরণ দিয়ে এ প্রকৌশলী আরও বলেন, ধানমন্ডি এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের লিফট বসানোর অভিজ্ঞতা যদি সরকারি কাজে লাগনো হয়; তাহলে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছ থেকে যাচাই-বাছাই করে দেখা যেতে পারে। এখানে তথ্য গোপন করার কোনো সুযোগ নেই।
শেয়ার করুন
তোফাজ্জল হোসেন রুবেল | ৩০ মে, ২০২২ ০০:০০

সরকার ই-টেন্ডার পদ্ধতি চালু করলেও সরকারি কাজের টেন্ডারের (দরপত্র) ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট করার অভিযোগ কমেনি। বিভিন্ন দপ্তরে বছরের পর বছর ধরে একই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের একচেটিয়া আধিপত্য থাকছে। এর অন্যতম কারণ, সরকারি কাজের অভিজ্ঞতা একবার যারা অর্জন করতে পেরেছে তারাই মূলত একচ্ছত্রভাবে কাজ করছে। ব্যবসায়িকভাবে বড় প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও অভিজ্ঞতার অজুহাতে অনেক প্রতিষ্ঠান সরকারি কাজে অংশ নিতে পারছে না।
গত কয়েক বছর ধরে দরপত্র নিয়ন্ত্রণের বদনাম ঘোচাতে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশের পরও পিপিআর ও টেন্ডার সংশ্লিষ্ট নিয়মাবলিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। আবার বিদ্যমান আইনে সুযোগ থাকার পরও দরপত্র আহ্বানকারী দপ্তর বেসরকারি অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর সুযোগ দিচ্ছে না। ফলে গুটিকয়েক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সংস্থায় এমনকি সরকারের বড় আকারের প্রকল্পেও নিজেদের ইচ্ছামাফিক কাজ বাগিয়ে নিচ্ছে। এমনও আছে, শুধু অভিজ্ঞতার ‘সনদ’ বিক্রি করে ‘মাঝখান’ থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রভাবশালী মহল। তাই অবাধ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে সরকারি উন্নয়ন কাজে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের অভিজ্ঞতা আমলে নেওয়ার ব্যাপারে জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারের যে বিপুল অর্থ উন্নয়ন খাতে ব্যয় হয় তার সঠিক ব্যবস্থাপনা হয় না। সরকারের প্রায় সব দপ্তরেই দরপত্র নিয়ন্ত্রণে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করে। তারা ঠিক করে কে কাজ পাবে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দরপত্র আহ্বানকারী কর্মকর্তা আর ঠিকাদার মিলে আগেই রফা করে নেন। তাদের এ শক্তিশালী নেটওয়ার্কের বাইরে গিয়ে নতুন কোনো ঠিকাদার সেখানে প্রবেশ করতে পারেন না। এ ছাড়া দরপত্রের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি এমনভাবে শর্ত জুড়ে দেন, যেন তার পছন্দের ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ দরপত্রে অংশ নিতে না পারেন। অথচ আইন অনুযায়ী, দরপত্র আহ্বানের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা যদি মনে করেন সরকারি কাজের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি বেসরকারি কাজে অভিজ্ঞদের অংশ নেওয়ার সুযোগ দেবেন, তিনি সেটা করতে পারেন। এতে উন্নয়ন কাজে বেশি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। আবার সর্বোচ্চ দরকষাকষির মাধ্যমে সরকারের অর্থ সাশ্রয় হবে।
উন্নয়ন কাজে সম্পৃক্ত একজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এই মুহূর্তে সেন্ট্রাল প্রকিউরম্যান্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) বেঁধে দেওয়া স্ট্যান্ডার্ড ডকুমেন্ট অনুযায়ী সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কাজের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। যদি সরকারি ১০তলা ভবনের দরপত্র আহ্বান করা হয়, তাহলে অভিজ্ঞতা চাওয়া হয় কমপক্ষে ৬-৭ তলা ভবন তৈরির। আর আর্থিক অভিজ্ঞতাও চাওয়া হয় দরপত্রের ৫০ থেকে ৭৫ ভাগ। এখানে বেসরকারি কাজের অভিজ্ঞতার বিষয়টি যুক্ত থাকে না। যদি এমন শর্ত দেওয়া না হতো তাহলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও অংশ নিতে পারত।
অবাধ প্রতিযোগিতার সুফল উল্লেখ করে আরেক কর্মকর্তা বলেন, করোনা শুরু হওয়ার পর সরকার অতি জরুরি পণ্য হিসেবে বেশকিছু ওষুধ কিনেছে। সেখানে আগে যেসব উপকরণ কেনা হয়েছে তার তুলনায় করোনাকালে কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকা কমে কিনতে পেরেছে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি)। কারণ আগে দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী ‘মিঠু সিন্ডিকেট’ ছাড়া কেউ অংশ নিতে পারত না। সিএমএসডি কর্তৃপক্ষ শর্ত শিথিল করে সবার জন্য দরপত্র উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরপরই মিলেছে এ সুফল।
গণপূর্ত অধিপ্তরের একজন অভিজ্ঞ প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারি কাজের অভিজ্ঞতার অজুহাতে দেশের অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান সরকারি কাজের দরপত্রে অংশ নিতে পারে না। সেখানে জি কে শামীমদের মতো ঠিকাদারদের সিন্ডিকেট রাতারাতি দাঁড়িয়ে যায়। তারা নানা কৌশলে তাদের মধ্যেই কাজগুলো ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। অথচ সরকারের অনেক বড় প্রকল্প রয়েছে যেখানে দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলো অংশ নিতে পারলে একদিকে যেমন অর্থের সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে কাজের গুণগত মানও ভালো থাকবে।
পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস-২০০৮ (পিপিআর)-এর ১৮ ধারায় ক্রয় কাজে প্রতিযোগিতার কথা বলা আছে। ক্রয়কার্য সম্পাদনের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির দায়দায়িত্ব সম্পর্কে ওই ধারার উপধারা (২)-এ বলা হয়েছে, ‘যে মানদ-ের ভিত্তিতে আবেদনকারী বা দরদাতা বা পরামর্শকদের যোগ্যতা নিরূপণ করা হইবে উহা সংশ্লিষ্ট দলিলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করিয়া আবেদনকারী বা দরপত্রদাতাকে আহ্বানের সাড়া প্রদানের জন্য পর্যাপ্ত সময় প্রদান করিতে হইবে এবং উক্ত সময় প্রযোজ্য দলিলে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করিতে হইবে।’
দরপত্র নিয়ে কাজ করা একজন অভিজ্ঞ প্রকৌশলী দেশর রূপান্তরকে বলেন, দরপত্র আহ্বানকারী কর্মকর্তা (প্রকিউর ইন্টিটি) চাইলে বেসরকারি অভিজ্ঞতার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন। তবে সেই ক্ষেত্রে তাকে (দরপত্র আহ্বানকারী) সিপিটিইউর স্ট্যান্ডার্ড টেন্ডার ডকুমেন্টের ১৪. ১(এ) ও ১৪. ১(বি) ধারায় কিছু সংশোধন আনতে হবে। সেখানে একজন দর আহ্বানকারী কীভাবে দর আহ্বান করবে, দরপত্রে কারা কারা অংশ নিতে পারবে বা কী কী যোগ্যতা লাগবে তা তিনিই নির্ধারণ করেন। ফলে একজন মূল ঠিকাদার, উপঠিকাদার বা যৌথ ঠিকাদার কোন বছর কী কাজ করেছে, কত টাকার কাজ করেছে, কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিসহ সবকিছুই দরপত্র আহ্বানকারী নিজেদের ইচ্ছামাফিক ঠিক করে থাকেন। তিনি আরও বলেন, অনেকেই বলার চেষ্টা করেন যে, বেসরকারি কাজের অভিজ্ঞতা বা আর্থিক সক্ষমতা যাচাই করা যায় না। ফলে বেসরকারি কাজের অভিজ্ঞতা দরপত্রে আমলে নিলে সেখানে অনেকেই মিথ্যা তথ্য দিতে পারেন। কিন্তু তা অনেকাংশেই সঠিক নয়। সরকারের অনেকগুলোর সংস্থার রাজধানীসহ মাঠ পর্যায়ে দক্ষ প্রকৌশল ইউনিট রয়েছে। এই ইউনিটে বেসরকারি যেকোনো স্থাপনা বা রাস্তার তথ্য পাঠিয়ে কাজের মূল্যমানসহ বিস্তারিত জানা সম্ভব। তবে একটি কাজে কী পরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছে তা কাগজপত্রে সরকারি দর অনুযায়ী উল্লেখ করতে হবে।
উদাহরণ দিয়ে এ প্রকৌশলী আরও বলেন, ধানমন্ডি এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের লিফট বসানোর অভিজ্ঞতা যদি সরকারি কাজে লাগনো হয়; তাহলে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছ থেকে যাচাই-বাছাই করে দেখা যেতে পারে। এখানে তথ্য গোপন করার কোনো সুযোগ নেই।