দলগুলোর ঐকমত্য না থাকলে নির্বাচন কষ্টকর : সিইসি
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৩ জুন, ২০২২ ০০:০০
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা ও ঐকমত্য না থাকলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে ভোট করা কষ্টকর হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, ‘কমিশনের একার পক্ষে ভালো নির্বাচন করা সম্ভব নয়। আমরা যদি দৃঢ় থাকি, আইন দৃঢ়ভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করি, তাহলে অনেকটা উন্নয়ন সম্ভব।’
গতকাল রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সাবেক সিইসি, নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ও ইসি সচিবদের মতবিনিময় শেষে এসব কথা বলেন সিইসি।
এদিকে মতবিনিময় সভায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন না করার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। অন্যদিকে বিশ্বমানের নির্বাচন করতে হলে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্বাচনকালে নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত রাখার তাগিদ দেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
মতবিনিময় সভা শেষে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘সাবেক সিইসি রউফ সাহেব (বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ) প্রার্থী অনুযায়ী নয়, দলভিত্তিক নির্বাচনের কথা বলেছেন। নির্বাচনে দেখা গেল যে অনেক আগে থেকে দলগুলো তাদের টোটাল প্রার্থীর নাম দিয়ে যাবে। সবাই ৩০০ আসনে প্রার্থী দিল। পার্টি ক, খ, গ, ঘ। যে যত ভোট পেয়েছে, সেভাবে আসন পাবে। এ ধরনের একটা সিস্টেম আছে। তবে এটা আমাদের বিষয় নয়। দলগুলোকেই দেখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে শপথ নিয়েছি, বর্তমানে যে আইনি ও সাংবিধানিক কাঠামো আছে, এর মধ্যেই আমাদের নির্বাচন করতে হবে। কেউ কেউ বলেছেন, একাধিক দিনে নির্বাচন করলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। কেউ কেউ আবার বলেছেন, এতে সমস্যাও হবে। এ নিয়ে কোনো ঐকমত্য হয়নি। কাজেই একাধিক দিনে নির্বাচন করলে আমাদের জন্য অসুবিধাও হতে পারে। ওই ধরনের প্রস্তুতি আমাদের নেই।’
দলগুলোকে পরামর্শ দিতে সমস্যা কোথায় সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘এখনো দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করিনি। সবাই বলেছেন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। নির্বাচন যদি ইনক্লুসিভ না হয়, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বাস্তব অর্থে থাকবে না। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে। এ কালচারের মধ্যে কিছু ইতিবাচক গুণ আনতে হবে। তাদের মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা, ঐকমত্য যদি না থাকে নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে খুব ভালো নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। এটা আমরা যেমন আগে বলেছি, ওনারাও বলেছেন।’
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সহসাই সংলাপ শুরু হবে জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘যখন মতবিনিময় করব আমরা সাজেশন চাইব। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পদ্ধতিগত কী পরিবর্তন করা যেতে পারে তা জানতে চাইব। ব্যক্তি নয়, সিস্টেম উন্নত করতে পারলে নির্বাচন অনেক বেশি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে।’
সেনাবাহিনী মোতায়েনের পক্ষে নন নুরুল হুদা : মতবিনিময় সভায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন না করার পরামর্শ দেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী নির্বাচনে কোনো কাজে আসে না। শত-শত হাজার-হাজার লোক বন্দুক হাতে যুদ্ধাবস্থার মতো দাঁড়িয়ে থাকে। আমি দায়িত্বে থাকতেও বলেছি, এখনো বলছি যে, এসবের প্রয়োজন নেই। সেনাবাহিনী মোতায়েন একেবারেই দরকার নেই। কারণ বিগত নির্বাচনে তাদের অ্যাকটিভিটিজ আমরা দেখেছি। নির্বাচন পরিচালনার কোনো কাজে তারা আসে বলে আমার মনে হয় না। সুতরাং আমাদের এই এলিট ফোর্স সেনাবাহিনীকে নির্বাচনের সময় মাঠে নামানোর কোনো দরকার নেই।’
নির্বাচনী বরাদ্দের ৭৫ শতাংশ অর্থ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেছনে ব্যয় হয় উল্লেখ করে সাবেক সিইসি বলেন, ‘আমরা যখন স্কুলে ছিলাম, তখন দেখতাম, একজন চৌকিদার বাঁশি মুখে আর হাতে লাঠি নিয়ে একটা কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করতেন। এখন আর্মি, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ নামে। একটা কেন্দ্রে যে পরিমাণ সশস্ত্র সদস্য থাকে, তা একটা থানার সমান।’
জনপ্রশাসন-স্বরাষ্ট্র ইসির অধীনে রাখার তাগিদ মাহবুব তালুকদারের : বিশ্বমানের নির্বাচন করতে হলে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্বাচনকালে নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত করতে হবে বলে মনে করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, ‘আমার মতে আগামী জাতীয় নির্বাচনের একটাই চ্যালেঞ্জ। তা হলো সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করা। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। অন্যদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচন বিশ্বমানের হতে হবে। বিশ্বমানের নির্বাচন করতে হলে একটি নিরপেক্ষ সরকার দরকার। গ্রহণযোগ্য সরকারই কেবল গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে পারে।’
দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় জাতীয় নির্বাচনের প্রতিটি আসনে অধিষ্ঠিত সংসদ সদস্যদের পদে বহাল রেখে সুষ্ঠু নির্বাচনের ধারণা বাতুলতামাত্র বলে উল্লেখ করেন মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ না করলে “লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড” অর্থাৎ সবার জন্য সমসুযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।’
জাতীয় নির্বাচনে জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়ারও বিরোধিতা করেন সাবেক এই ইসি। তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের বদলে নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তাদের স্থলাভিষিক্ত করা প্রয়োজন। যদি একান্তই জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করতে হয়, তাহলে জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়ের আগে তাদের ভিন্ন জেলায় বদলি করা আবশ্যক।’
অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হলে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের সংলাপ প্রয়োজন বলেও মনে করেন মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, ‘আমি যে রূপরেখা উপস্থাপন করলাম, তার বাস্তবায়ন করতে হলে সংবিধান সংশোধন করা অপরিহার্য। দুই “এম পি” অর্থাৎ মানি পাওয়ার ও মাসল পাওয়ারকে প্রতিহত করতে হবে। সংবিধান সংশোধন না করা হলে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পরিবর্তন করা যাবে না। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী।’
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় নুরুল হুদা ছাড়াও ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করা সিইসি শামসুল হুদা, ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময়কার সিইসি বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ, মাহবুব তালুকদার ও আবু হাফিজ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন ইসির সাবেক সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও মোহাম্মদ সাদিক এবং সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোখলেছুর রহমান ও বেগম জেসমিন টুলী।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৩ জুন, ২০২২ ০০:০০

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা ও ঐকমত্য না থাকলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে ভোট করা কষ্টকর হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, ‘কমিশনের একার পক্ষে ভালো নির্বাচন করা সম্ভব নয়। আমরা যদি দৃঢ় থাকি, আইন দৃঢ়ভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করি, তাহলে অনেকটা উন্নয়ন সম্ভব।’
গতকাল রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সাবেক সিইসি, নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ও ইসি সচিবদের মতবিনিময় শেষে এসব কথা বলেন সিইসি।
এদিকে মতবিনিময় সভায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন না করার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। অন্যদিকে বিশ্বমানের নির্বাচন করতে হলে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্বাচনকালে নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত রাখার তাগিদ দেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
মতবিনিময় সভা শেষে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘সাবেক সিইসি রউফ সাহেব (বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ) প্রার্থী অনুযায়ী নয়, দলভিত্তিক নির্বাচনের কথা বলেছেন। নির্বাচনে দেখা গেল যে অনেক আগে থেকে দলগুলো তাদের টোটাল প্রার্থীর নাম দিয়ে যাবে। সবাই ৩০০ আসনে প্রার্থী দিল। পার্টি ক, খ, গ, ঘ। যে যত ভোট পেয়েছে, সেভাবে আসন পাবে। এ ধরনের একটা সিস্টেম আছে। তবে এটা আমাদের বিষয় নয়। দলগুলোকেই দেখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে শপথ নিয়েছি, বর্তমানে যে আইনি ও সাংবিধানিক কাঠামো আছে, এর মধ্যেই আমাদের নির্বাচন করতে হবে। কেউ কেউ বলেছেন, একাধিক দিনে নির্বাচন করলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। কেউ কেউ আবার বলেছেন, এতে সমস্যাও হবে। এ নিয়ে কোনো ঐকমত্য হয়নি। কাজেই একাধিক দিনে নির্বাচন করলে আমাদের জন্য অসুবিধাও হতে পারে। ওই ধরনের প্রস্তুতি আমাদের নেই।’
দলগুলোকে পরামর্শ দিতে সমস্যা কোথায় সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘এখনো দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করিনি। সবাই বলেছেন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। নির্বাচন যদি ইনক্লুসিভ না হয়, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বাস্তব অর্থে থাকবে না। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে। এ কালচারের মধ্যে কিছু ইতিবাচক গুণ আনতে হবে। তাদের মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা, ঐকমত্য যদি না থাকে নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে খুব ভালো নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। এটা আমরা যেমন আগে বলেছি, ওনারাও বলেছেন।’
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সহসাই সংলাপ শুরু হবে জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘যখন মতবিনিময় করব আমরা সাজেশন চাইব। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পদ্ধতিগত কী পরিবর্তন করা যেতে পারে তা জানতে চাইব। ব্যক্তি নয়, সিস্টেম উন্নত করতে পারলে নির্বাচন অনেক বেশি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে।’
সেনাবাহিনী মোতায়েনের পক্ষে নন নুরুল হুদা : মতবিনিময় সভায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন না করার পরামর্শ দেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী নির্বাচনে কোনো কাজে আসে না। শত-শত হাজার-হাজার লোক বন্দুক হাতে যুদ্ধাবস্থার মতো দাঁড়িয়ে থাকে। আমি দায়িত্বে থাকতেও বলেছি, এখনো বলছি যে, এসবের প্রয়োজন নেই। সেনাবাহিনী মোতায়েন একেবারেই দরকার নেই। কারণ বিগত নির্বাচনে তাদের অ্যাকটিভিটিজ আমরা দেখেছি। নির্বাচন পরিচালনার কোনো কাজে তারা আসে বলে আমার মনে হয় না। সুতরাং আমাদের এই এলিট ফোর্স সেনাবাহিনীকে নির্বাচনের সময় মাঠে নামানোর কোনো দরকার নেই।’
নির্বাচনী বরাদ্দের ৭৫ শতাংশ অর্থ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেছনে ব্যয় হয় উল্লেখ করে সাবেক সিইসি বলেন, ‘আমরা যখন স্কুলে ছিলাম, তখন দেখতাম, একজন চৌকিদার বাঁশি মুখে আর হাতে লাঠি নিয়ে একটা কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করতেন। এখন আর্মি, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ নামে। একটা কেন্দ্রে যে পরিমাণ সশস্ত্র সদস্য থাকে, তা একটা থানার সমান।’
জনপ্রশাসন-স্বরাষ্ট্র ইসির অধীনে রাখার তাগিদ মাহবুব তালুকদারের : বিশ্বমানের নির্বাচন করতে হলে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্বাচনকালে নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত করতে হবে বলে মনে করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, ‘আমার মতে আগামী জাতীয় নির্বাচনের একটাই চ্যালেঞ্জ। তা হলো সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করা। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। অন্যদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচন বিশ্বমানের হতে হবে। বিশ্বমানের নির্বাচন করতে হলে একটি নিরপেক্ষ সরকার দরকার। গ্রহণযোগ্য সরকারই কেবল গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে পারে।’
দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় জাতীয় নির্বাচনের প্রতিটি আসনে অধিষ্ঠিত সংসদ সদস্যদের পদে বহাল রেখে সুষ্ঠু নির্বাচনের ধারণা বাতুলতামাত্র বলে উল্লেখ করেন মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ না করলে “লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড” অর্থাৎ সবার জন্য সমসুযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।’
জাতীয় নির্বাচনে জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়ারও বিরোধিতা করেন সাবেক এই ইসি। তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের বদলে নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তাদের স্থলাভিষিক্ত করা প্রয়োজন। যদি একান্তই জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করতে হয়, তাহলে জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়ের আগে তাদের ভিন্ন জেলায় বদলি করা আবশ্যক।’
অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হলে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের সংলাপ প্রয়োজন বলেও মনে করেন মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, ‘আমি যে রূপরেখা উপস্থাপন করলাম, তার বাস্তবায়ন করতে হলে সংবিধান সংশোধন করা অপরিহার্য। দুই “এম পি” অর্থাৎ মানি পাওয়ার ও মাসল পাওয়ারকে প্রতিহত করতে হবে। সংবিধান সংশোধন না করা হলে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পরিবর্তন করা যাবে না। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী।’
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় নুরুল হুদা ছাড়াও ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করা সিইসি শামসুল হুদা, ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময়কার সিইসি বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ, মাহবুব তালুকদার ও আবু হাফিজ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন ইসির সাবেক সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও মোহাম্মদ সাদিক এবং সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোখলেছুর রহমান ও বেগম জেসমিন টুলী।