নকল ওষুধের ৯০ ভাগ গ্যাস্ট্রিকের!
ইমন রহমান | ২৩ জুন, ২০২২ ০০:০০
বাজারে গ্যাস্ট্রিকের যে ওষুধের বেশি চাহিদা রয়েছে সেগুলো টার্গেট করেই নকল করা হচ্ছে। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সূত্র বলছে, দেশের নকল ওষুধের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ। গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ছাড়াও অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যাজমা-অ্যালার্জি, জ¦র, ব্যথার ওষুধ বেশি নকল হচ্ছে জানিয়ে ডিবি সূত্র বলছে, এসব নকল ওষুধ এমনভাবে মোড়কজাত করা হচ্ছে, দেখে কারও বোঝার উপায় থাকে না। নকল ওষুধ বিক্রির বড় বাজার গড়ে উঠেছে রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ অভিযানে পাওয়া নকল ওষুধের হিসাব আলাদা করায় গ্যাস্ট্রিকের নকল ওষুধের এ চিত্র পাওয়া গেছে। এর আগে প্রতিটি ওষুধ আলাদাভাবে হিসাব করা হতো না।
সূত্র জানায়, নকল ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রির দায়ে গত ৯ মাসে ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে জুনে দুটি অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১২ জনকে।
জুনের প্রথম সপ্তাহে চালানো ডিবির দুটি অভিযানের তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, একটি অভিযানে উদ্ধার করা ওষুধের ৭৪ শতাংশ এবং আরেকটি অভিযানে ৯৮ শতাংশের বেশি নকল ওষুধই গ্যাস্ট্রিকের। উদ্ধার করা নকল ওষুধের সবই তৈরি হয়েছে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানাধীন ওয়েস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ুর্বেদি) ও কুমিল্লার কাপ্তানবাজারের হিমালয় ল্যাবরেটরিজ (আয়ুর্বেদি) কারখানায়। আয়ুর্বেদিক ওষুধ কারখানায় নকল অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ তৈরির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, জেলা শহরে তৈরি এসব নকল ওষুধ ঢাকায় এনে বিক্রি করা হচ্ছে।
ডিবির তদন্তে উঠে এসেছে ইনসেপ্টা, স্কয়ার, একমি, হেলথকেয়ার, অপসোনিন, জেনিথ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের মতো দেশি নামি কোম্পানির পাশাপাশি বিদেশি কোম্পানির ওষুধও নকল করে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সারা দেশে। সাধারণ রোগের পাশাপাশি ক্যানসারেরও নকল ওষুধ তৈরি হচ্ছে। চক্রগুলো কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে নকল ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছে দোকানিদের কাছে। এছাড়া রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকায় গড়ে ওঠা অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটও এজেন্ট নিয়োগ করে বিক্রি করছে এসব নতুন ওষুধ।
গত ৫ জুন ঢাকার সাভারের একটি গুদাম থেকে অ্যান্টিবায়োটিক, গ্যাস্ট্রিক, অ্যালার্জি, জ¦র ও ব্যথার ২২ লাখ ৯ হাজার ৬৭৬টি নকল ট্যাবলেট জব্দ করে ডিবি। এর মধ্যে ১৬ লাখ ৩৩ হাজার ৬৫৬টিই গ্যাস্ট্রিকের যা শতকরা হিসাবে ৭৪ ভাগ। আর গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের মধ্যে ১০ লাখ ৬৮ হাজার ৪৫৬টিই ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ‘প্যানটোনিক্স-২০ এমজি’ যা মোট জব্দ নকল ওষুধের ৪৮ শতাংশের বেশি। জব্দ ওষুধের মধ্যে ৪ লাখ ১০ হাজার ৪০০টি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ‘সেকলো-২০’ যা শতকরা হিসাবে ১৮ ভাগের বেশি। এছাড়াও হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের সারজেল ৯৬ হাজার, যা শতকরা ৪ ভাগের বেশি, অপসোনিন ফার্মার ফিনিক্স ৫৮ হাজার ৮০০টি, যা শতকরা ২ ভাগের বেশি। জব্দ হওয়া অন্যান্য ওষুধের মধ্যে অ্যালার্জির ওষুধ রয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৫০০টি যা মোট ওষুধের ৯ ভাগের বেশি।
এর আগে গত ৩ মার্চ ডিবি পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও চুয়াডাঙ্গায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১০ লাখ ৫২ হাজার ২৮০ পিস ওষুধ জব্দ করে। এর মধ্যে ১০ লাখ ৩৪ হাজার ২৮০ পিসই ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ‘প্যানটোনিক্স-২০ এমজি’ যা শতকরা হিসাবে জব্দ ওষুধের ৯৮ ভাগের বেশি।
ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘ইউনানি-আয়ুর্বেদিক ওষুধ যখন থেকে ট্যাবলেট ফরম্যাটে এলো তখন থেকেই নকলের পথ তৈরি হয়। আয়ুর্বেদিক ওষুধের সেসব কারখানায় তাদের নিজস্ব ওষুধ বাদ দিয়ে বহুল প্রচলিত কিছু অ্যালোপ্যাথিক নকল ওষুধ বানানো শুরু করেছে। এসব ওষুধের উপাদানে রোগ সারানোর কিছু থাকে না। বরং অত্যন্ত নিম্নমানের ভুট্টাজাত শে্বতসার, স্টেরয়েড ও রঙ ব্যবহৃত হতে পারে। নন-ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রেডের এসব রাসায়নিক সেবনের ফলে মানুষের কিডনি, লিভার, হৃদযন্ত্র ও শ্বসনতন্ত্রে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নকল ওষুধ ঠেকাতে আমরা বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সহযোগিতা পাই না।’
ডিবি লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. রাজীব আল মাসুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নকল ওষুধ উৎপাদন বন্ধ করতে গেলে জেলা পর্যায়ে নজরদারি বাড়াতে হবে। তা না হলে শহরেও এর ব্যাপক বিস্তার হবে।’ ওষুধ কোম্পানির ভূমিকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেসব কোম্পানির ওষুধ বেশি ব্যবহৃত হয় তাদের বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে কেউ সহজে নকল করতে না পারে। এছাড়া ওষুধ বিতরণ ও সংগ্রহ চেইনের প্রতি ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে।’
রাজধানীর মগবাজারে মা ফার্মেসি নামে ওষুধের দোকানের বিক্রয়কর্মী মো. নোবেল দেশ রূপান্তরকে জানান, তারা বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ওষুধ কেনেন। তবে মাঝেমধ্যেই মিটফোর্ড এলাকা থেকে এজেন্ট আসে। তারা কম দামে ওষুধ দিতে চান। তবে সেসব ওষুধ তারা রাখেন না।
আরেক ওষুধের দোকানের বিক্রয়কর্মী নাম প্রকাশ না করে বলেন, বেশিরভাগ ওষুধ আমরা কোম্পানির লোকের মাধ্যমেই রাখি। তবে কিছু ওষুধ কোম্পানি থেকে না পেলে মিটফোর্ড থেকে কিনে আনি। সে ক্ষেত্রে দামও অনেক কম। সেখানকার পাইকারি দোকানিরা বলেন, ঢাকার বাইরে থেকে কম দামে কেনেন তারা।
মিটফোর্ড এলাকার পাইকারি ওষুধের দোকান রিয়াদ মেডিকেল হলের মালিক মো. রিয়াদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা কোম্পানির ইনভয়েস ছাড়া ওষুধ কিনি না। এসব ওষুধ কম দামে কেনায় বিক্রিও করি কম দামে। তবে কিছু পাইকারি দোকানি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নকল ওষুধ বিক্রি করছে।’
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির রমনা থানা শাখার সভাপতি এমদাদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মিটফোর্ড থেকে কেউ ওষুধ কিনলে নকল কি না বোঝা যায় না। আমরাও চাই যারা নকল ওষুধ বিক্রি করে তাদের শাস্তি হোক।’
নকল ওষুধে বাজার ছেয়ে গেলেও বিষয়টি মানতে নারাজ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। তারা বলছে, যেভাবে প্রচার হচ্ছে আসলে সেভাবে নকল হচ্ছে না। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আইয়ুব হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওষুধে নকল ভেজাল অনেক আগেও ছিল। এগুলো ঠেকাতে বিভিন্ন জেলাতেই আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এছাড়া আমাদের সদর দপ্তরে বিশেষ পাঁচটি টাস্কফোর্স আছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভাগীয় কার্যালয় স্থাপনের কাজ চলছে।’ ওষুধ কোম্পানিগুলোর ভূমিকা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা বিভিন্ন সময় মামলা করে। তবে চুপেচাপে করে, জানান দিয়ে করছে না।’
নকল ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রি ঠেকাতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কোনো সীমাবদ্ধতা আছে কি না জানতে চাইলে আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘আমাদের লোকবলের পাশাপাশি লজিস্টিক স্বল্পতা থাকেই।’
শেয়ার করুন
ইমন রহমান | ২৩ জুন, ২০২২ ০০:০০

বাজারে গ্যাস্ট্রিকের যে ওষুধের বেশি চাহিদা রয়েছে সেগুলো টার্গেট করেই নকল করা হচ্ছে। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সূত্র বলছে, দেশের নকল ওষুধের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ। গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ছাড়াও অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যাজমা-অ্যালার্জি, জ¦র, ব্যথার ওষুধ বেশি নকল হচ্ছে জানিয়ে ডিবি সূত্র বলছে, এসব নকল ওষুধ এমনভাবে মোড়কজাত করা হচ্ছে, দেখে কারও বোঝার উপায় থাকে না। নকল ওষুধ বিক্রির বড় বাজার গড়ে উঠেছে রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ অভিযানে পাওয়া নকল ওষুধের হিসাব আলাদা করায় গ্যাস্ট্রিকের নকল ওষুধের এ চিত্র পাওয়া গেছে। এর আগে প্রতিটি ওষুধ আলাদাভাবে হিসাব করা হতো না।
সূত্র জানায়, নকল ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রির দায়ে গত ৯ মাসে ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে জুনে দুটি অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১২ জনকে।
জুনের প্রথম সপ্তাহে চালানো ডিবির দুটি অভিযানের তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, একটি অভিযানে উদ্ধার করা ওষুধের ৭৪ শতাংশ এবং আরেকটি অভিযানে ৯৮ শতাংশের বেশি নকল ওষুধই গ্যাস্ট্রিকের। উদ্ধার করা নকল ওষুধের সবই তৈরি হয়েছে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানাধীন ওয়েস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ুর্বেদি) ও কুমিল্লার কাপ্তানবাজারের হিমালয় ল্যাবরেটরিজ (আয়ুর্বেদি) কারখানায়। আয়ুর্বেদিক ওষুধ কারখানায় নকল অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ তৈরির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, জেলা শহরে তৈরি এসব নকল ওষুধ ঢাকায় এনে বিক্রি করা হচ্ছে।
ডিবির তদন্তে উঠে এসেছে ইনসেপ্টা, স্কয়ার, একমি, হেলথকেয়ার, অপসোনিন, জেনিথ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের মতো দেশি নামি কোম্পানির পাশাপাশি বিদেশি কোম্পানির ওষুধও নকল করে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সারা দেশে। সাধারণ রোগের পাশাপাশি ক্যানসারেরও নকল ওষুধ তৈরি হচ্ছে। চক্রগুলো কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে নকল ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছে দোকানিদের কাছে। এছাড়া রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকায় গড়ে ওঠা অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটও এজেন্ট নিয়োগ করে বিক্রি করছে এসব নতুন ওষুধ।
গত ৫ জুন ঢাকার সাভারের একটি গুদাম থেকে অ্যান্টিবায়োটিক, গ্যাস্ট্রিক, অ্যালার্জি, জ¦র ও ব্যথার ২২ লাখ ৯ হাজার ৬৭৬টি নকল ট্যাবলেট জব্দ করে ডিবি। এর মধ্যে ১৬ লাখ ৩৩ হাজার ৬৫৬টিই গ্যাস্ট্রিকের যা শতকরা হিসাবে ৭৪ ভাগ। আর গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের মধ্যে ১০ লাখ ৬৮ হাজার ৪৫৬টিই ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ‘প্যানটোনিক্স-২০ এমজি’ যা মোট জব্দ নকল ওষুধের ৪৮ শতাংশের বেশি। জব্দ ওষুধের মধ্যে ৪ লাখ ১০ হাজার ৪০০টি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ‘সেকলো-২০’ যা শতকরা হিসাবে ১৮ ভাগের বেশি। এছাড়াও হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের সারজেল ৯৬ হাজার, যা শতকরা ৪ ভাগের বেশি, অপসোনিন ফার্মার ফিনিক্স ৫৮ হাজার ৮০০টি, যা শতকরা ২ ভাগের বেশি। জব্দ হওয়া অন্যান্য ওষুধের মধ্যে অ্যালার্জির ওষুধ রয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৫০০টি যা মোট ওষুধের ৯ ভাগের বেশি।
এর আগে গত ৩ মার্চ ডিবি পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও চুয়াডাঙ্গায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১০ লাখ ৫২ হাজার ২৮০ পিস ওষুধ জব্দ করে। এর মধ্যে ১০ লাখ ৩৪ হাজার ২৮০ পিসই ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ‘প্যানটোনিক্স-২০ এমজি’ যা শতকরা হিসাবে জব্দ ওষুধের ৯৮ ভাগের বেশি।
ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘ইউনানি-আয়ুর্বেদিক ওষুধ যখন থেকে ট্যাবলেট ফরম্যাটে এলো তখন থেকেই নকলের পথ তৈরি হয়। আয়ুর্বেদিক ওষুধের সেসব কারখানায় তাদের নিজস্ব ওষুধ বাদ দিয়ে বহুল প্রচলিত কিছু অ্যালোপ্যাথিক নকল ওষুধ বানানো শুরু করেছে। এসব ওষুধের উপাদানে রোগ সারানোর কিছু থাকে না। বরং অত্যন্ত নিম্নমানের ভুট্টাজাত শে্বতসার, স্টেরয়েড ও রঙ ব্যবহৃত হতে পারে। নন-ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রেডের এসব রাসায়নিক সেবনের ফলে মানুষের কিডনি, লিভার, হৃদযন্ত্র ও শ্বসনতন্ত্রে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নকল ওষুধ ঠেকাতে আমরা বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সহযোগিতা পাই না।’
ডিবি লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. রাজীব আল মাসুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নকল ওষুধ উৎপাদন বন্ধ করতে গেলে জেলা পর্যায়ে নজরদারি বাড়াতে হবে। তা না হলে শহরেও এর ব্যাপক বিস্তার হবে।’ ওষুধ কোম্পানির ভূমিকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেসব কোম্পানির ওষুধ বেশি ব্যবহৃত হয় তাদের বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে কেউ সহজে নকল করতে না পারে। এছাড়া ওষুধ বিতরণ ও সংগ্রহ চেইনের প্রতি ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে।’
রাজধানীর মগবাজারে মা ফার্মেসি নামে ওষুধের দোকানের বিক্রয়কর্মী মো. নোবেল দেশ রূপান্তরকে জানান, তারা বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ওষুধ কেনেন। তবে মাঝেমধ্যেই মিটফোর্ড এলাকা থেকে এজেন্ট আসে। তারা কম দামে ওষুধ দিতে চান। তবে সেসব ওষুধ তারা রাখেন না।
আরেক ওষুধের দোকানের বিক্রয়কর্মী নাম প্রকাশ না করে বলেন, বেশিরভাগ ওষুধ আমরা কোম্পানির লোকের মাধ্যমেই রাখি। তবে কিছু ওষুধ কোম্পানি থেকে না পেলে মিটফোর্ড থেকে কিনে আনি। সে ক্ষেত্রে দামও অনেক কম। সেখানকার পাইকারি দোকানিরা বলেন, ঢাকার বাইরে থেকে কম দামে কেনেন তারা।
মিটফোর্ড এলাকার পাইকারি ওষুধের দোকান রিয়াদ মেডিকেল হলের মালিক মো. রিয়াদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা কোম্পানির ইনভয়েস ছাড়া ওষুধ কিনি না। এসব ওষুধ কম দামে কেনায় বিক্রিও করি কম দামে। তবে কিছু পাইকারি দোকানি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নকল ওষুধ বিক্রি করছে।’
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির রমনা থানা শাখার সভাপতি এমদাদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মিটফোর্ড থেকে কেউ ওষুধ কিনলে নকল কি না বোঝা যায় না। আমরাও চাই যারা নকল ওষুধ বিক্রি করে তাদের শাস্তি হোক।’
নকল ওষুধে বাজার ছেয়ে গেলেও বিষয়টি মানতে নারাজ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। তারা বলছে, যেভাবে প্রচার হচ্ছে আসলে সেভাবে নকল হচ্ছে না। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আইয়ুব হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওষুধে নকল ভেজাল অনেক আগেও ছিল। এগুলো ঠেকাতে বিভিন্ন জেলাতেই আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এছাড়া আমাদের সদর দপ্তরে বিশেষ পাঁচটি টাস্কফোর্স আছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভাগীয় কার্যালয় স্থাপনের কাজ চলছে।’ ওষুধ কোম্পানিগুলোর ভূমিকা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা বিভিন্ন সময় মামলা করে। তবে চুপেচাপে করে, জানান দিয়ে করছে না।’
নকল ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রি ঠেকাতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কোনো সীমাবদ্ধতা আছে কি না জানতে চাইলে আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘আমাদের লোকবলের পাশাপাশি লজিস্টিক স্বল্পতা থাকেই।’