মেয়রদের কর্তৃত্বে লাগাম
তোফাজ্জল হোসেন রুবেল | ৭ জুলাই, ২০২২ ০০:০০
২০২২-২৩ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্য ৪১ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এবারের বাজেটে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ। বাজেটের বড় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনকে। সরকারের দেওয়া এ অর্থ কোন খাতে কত পরিমাণে খরচ করা হবে তা এত দিন সুনির্দিষ্ট ছিল না। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রকল্প তৈরি করে নিয়ে আসা হতো আর তাতে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেওয়া হতো। ফলে অর্থ খরচের ক্ষেত্রে বেশ নৈরাজ্য ছিল।
এবার খাতওয়ারি খরচের ‘ছক’ করে দিয়েছে সরকার। শুধু তা-ই নয়, যেসব খাতে টাকা খরচ করা হচ্ছে সেসবের সার্বিক অগ্রগতিও সময়ে-সময়ে মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় সিটি করপোরেশনের অনুকূলে বরাদ্দ করা ‘উন্নয়ন সহায়তার অর্থ ব্যবহার নির্দেশিকা-২০২২’-এ এসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এই নীতিমালা জারির ফলে সিটি করপোরেশনের টাকা খরচে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে নগর-পরিকল্পনাবিদরা মনে করছেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব নূরে আলম সিদ্দিকী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনগুলো যে অর্থ সরকার থেকে পায় তা তারা কীভাবে খরচ করে তার স্পষ্ট হিসাব সরকারের কাছে এত দিন ছিল না। সিটি করপোরেশন প্রকল্প দিলে তা অনুমোদন সাপেক্ষে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হতো। কিন্তু এসব প্রকল্পের বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ পরে আর খোঁজখবর রাখত না। এবারই প্রথম সরকারের অর্থ ব্যয় বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে, যেখানে সব ধরনের বিষয় উঠে এসেছে।’
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ জুন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী স্বাক্ষরিত নীতিমালা সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়। সরকার থেকে বরাদ্দ পাওয়া অর্থ কোন খাতে কী পরিমাণে খরচ করা যাবে তা এই নীতিমালায় বলা আছে। নতুন নীতিমালায় ৭টি খাতের কথা বলা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে মোট বরাদ্দের ২০-২৫ শতাংশ টাকা খরচ করা যাবে। জনস্বাস্থ্য ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে থাকবে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য ডাস্টবিন বা সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন নির্মাণ, ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জন্য জমি অধিগ্রহণ ও আবর্জনার স্তূপ নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ, স্বাস্থ্যসম্মত গণশৌচাগার নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ। জলাবদ্ধতা নিরসনে মোট বরাদ্দের ২০-২৫ শতাংশ খরচ করা যাবে। এ খাতে রয়েছে পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত ড্রেন নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, পানি নিষ্কাশনের জন্য খাল বা নদী খনন ও রক্ষণাবেক্ষণ। খাতওয়ারি সবচেয়ে বেশি খরচ করা যাবে রাস্তাঘাট, কালভার্ট নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে। এ খাতে মোট বরাদ্দের ৩০-৩৫ শতাংশ খরচ করা যাবে। সিটি করপোরেশন এলাকায় বিদ্যমান সড়ক সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ, ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, রাস্তাঘাট আলোকিতকরণ ও সড়কবাতি স্থাপন। পানীয় জল সরবরাহ ও স্যানিটেশনে বরাদ্দের ১০-১৫ শতাংশ রাখা হয়েছে। যেসব সিটি করপোরেশন এলাকায় ওয়াসা বা পানীয় জল সরবরাহ কর্তৃপক্ষ নেই, সেসব সিটি করপোরেশনে পানীয় জল সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন প্রণালি রক্ষণাবেক্ষণে এ টাকা খরচ করা যাবে।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় সিটি করপোরেশনের অনুকূলে বরাদ্দ করা টাকার ৫-১০ শতাংশ খরচ করা যাবে ক্রীড়া, শিক্ষা ও সংস্কৃতি এবং নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রক্ষণাবেক্ষণে। এ ছাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় ১০-১৫ শতাংশ ও বিবিধ নামে মোট বরাদ্দের ৫-১০ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিবিধের আওতায় রয়েছে বাসটার্মিনাল, মার্কেট সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ, কবরস্থান, শ্মশানঘাটের উন্নয়ন, পুকুর বা জলাশয় সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং পার্ক বা বিনোদনকেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণ।
নগরবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব মনে করেন, সিটি করপোরেশনকে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করাতে হলে দুটি বিষয় থাকা প্রয়োজন। একটি হলো, সরকারের কাছ থেকে যে পরিমাণ অর্থ নেবে তা কীভাবে খরচ করা হচ্ছে তা সরকারকে জানানো। এতে সিটি করপোরেশনের জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। বিগত সময়ে কিছু সিটি করপোরেশন সরকারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কর্মচারীর বিল পরিশোধসহ নিজেদের ইচ্ছামাফিক খরচ করার খারাপ নজির স্থাপন করেছে। ফলে সরকারের এ ধরনের অনুশাসনকে আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছি। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তাদেরও জনগণকে দেওয়া অঙ্গীকার পূরণ করতে কিছু অগ্রাধিকারভিত্তিক কাজ করতে হয়। তারা তা নিশ্চিত করবেন নিজস্ব, অর্থাৎ করপোরেশনের রাজস্ব আয় থেকে। তাতে সরকারের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের নগর এলাকায় শতকরা ৬০ ভাগ মানুষ সিটি করপোরেশন এলাকায় বাস করছে। তাদের জন্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিটি করপোরেশনের আধুনিক পরিষেবা, যেমন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নগর পরিচ্ছন্নতা, জলাবদ্ধতা নিরসন, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও মেরামত, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন এবং স্থানীয় পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা নিশ্চিতে সম্পদ আহরণ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। নগরবাসীকে মানসম্মত নগরসেবা দেওয়ার জন্য ১২টি সিটি করপোরেশন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সিটি করপোরেশনগুলো এখনো নিজস্ব আয় দিয়ে চলতে পারে না। প্রতি বছর সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দিয়ে থাকে। এ জন্য সরকার একটি গাইডলাইন (দিকনির্দেশনা) জারি করেছে।
এই নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য : সিটি করপোরেশনগুলোর উন্নয়নসহায়তা ব্যবহারে সক্ষমতা বৃদ্ধি; জন-অংশগ্রহণের মাধ্যমে উন্নয়নসহায়তা ব্যবহার; অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান; সিটি করপোরেশনের বাধ্যতামূলক দায়িত্ব ও কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন; জন-আকাক্সক্ষার ভিত্তিতে অগ্রাধিকারমূলক উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা।
নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯-এর তৃতীয় তফসিল অনুযায়ী সাধারণ সেবা সম্পর্কিত, যেমন জনস্বাস্থ্য, পানি সরবরাহ ও নর্দমা ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা নিরসন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সড়ক (বাতিসহ) রক্ষণাবেক্ষণ, উন্মুক্ত স্থান-পার্ক-পুকুর-জলাশয় ব্যবস্থাপনা, মার্কেট, জননিরাপত্তা ও অগ্নিনির্বাপণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কবরস্থান ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য সুবিধা, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সমাজকল্যাণ, জন্ম-মৃত্যুর নিবন্ধনে সরকারের বরাদ্দ করা উন্নয়নসহায়তা ব্যবহারে প্রকল্প নিতে হবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, এখন থেকে সরকারি অর্থ খরচের বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে নিয়মিত প্রতিবেদন পাঠাতে হবে। অর্থবছরের শুরুতে চূড়ান্ত করা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত প্রকল্প সম্পর্কিত তালিকা করপোরেশনের মাসিক সাধারণ সভায় অনুমোদনক্রমে নির্ধারিত ছকে প্রতি বছর ৩১ আগস্ট তারিখের মধ্যে জমা দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট অর্থবছরের ছাড় করা অর্থের শতকরা খরচের হার উল্লেখসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন নির্ধারিত ছকে প্রতি বছর ৩১ আগস্টের মধ্যে পাঠাতে হবে। পূর্ববর্তী অর্থবছরে বাস্তবায়িত প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রতিবেদন নির্ধারিত ছকে প্রতি বছর ৩১ আগস্টের মধ্যে পাঠাতে হবে।
শেয়ার করুন
তোফাজ্জল হোসেন রুবেল | ৭ জুলাই, ২০২২ ০০:০০

২০২২-২৩ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্য ৪১ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এবারের বাজেটে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ। বাজেটের বড় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনকে। সরকারের দেওয়া এ অর্থ কোন খাতে কত পরিমাণে খরচ করা হবে তা এত দিন সুনির্দিষ্ট ছিল না। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রকল্প তৈরি করে নিয়ে আসা হতো আর তাতে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেওয়া হতো। ফলে অর্থ খরচের ক্ষেত্রে বেশ নৈরাজ্য ছিল।
এবার খাতওয়ারি খরচের ‘ছক’ করে দিয়েছে সরকার। শুধু তা-ই নয়, যেসব খাতে টাকা খরচ করা হচ্ছে সেসবের সার্বিক অগ্রগতিও সময়ে-সময়ে মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় সিটি করপোরেশনের অনুকূলে বরাদ্দ করা ‘উন্নয়ন সহায়তার অর্থ ব্যবহার নির্দেশিকা-২০২২’-এ এসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এই নীতিমালা জারির ফলে সিটি করপোরেশনের টাকা খরচে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে নগর-পরিকল্পনাবিদরা মনে করছেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব নূরে আলম সিদ্দিকী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনগুলো যে অর্থ সরকার থেকে পায় তা তারা কীভাবে খরচ করে তার স্পষ্ট হিসাব সরকারের কাছে এত দিন ছিল না। সিটি করপোরেশন প্রকল্প দিলে তা অনুমোদন সাপেক্ষে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হতো। কিন্তু এসব প্রকল্পের বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ পরে আর খোঁজখবর রাখত না। এবারই প্রথম সরকারের অর্থ ব্যয় বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে, যেখানে সব ধরনের বিষয় উঠে এসেছে।’
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ জুন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী স্বাক্ষরিত নীতিমালা সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়। সরকার থেকে বরাদ্দ পাওয়া অর্থ কোন খাতে কী পরিমাণে খরচ করা যাবে তা এই নীতিমালায় বলা আছে। নতুন নীতিমালায় ৭টি খাতের কথা বলা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে মোট বরাদ্দের ২০-২৫ শতাংশ টাকা খরচ করা যাবে। জনস্বাস্থ্য ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে থাকবে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য ডাস্টবিন বা সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন নির্মাণ, ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জন্য জমি অধিগ্রহণ ও আবর্জনার স্তূপ নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ, স্বাস্থ্যসম্মত গণশৌচাগার নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ। জলাবদ্ধতা নিরসনে মোট বরাদ্দের ২০-২৫ শতাংশ খরচ করা যাবে। এ খাতে রয়েছে পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত ড্রেন নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, পানি নিষ্কাশনের জন্য খাল বা নদী খনন ও রক্ষণাবেক্ষণ। খাতওয়ারি সবচেয়ে বেশি খরচ করা যাবে রাস্তাঘাট, কালভার্ট নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে। এ খাতে মোট বরাদ্দের ৩০-৩৫ শতাংশ খরচ করা যাবে। সিটি করপোরেশন এলাকায় বিদ্যমান সড়ক সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ, ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, রাস্তাঘাট আলোকিতকরণ ও সড়কবাতি স্থাপন। পানীয় জল সরবরাহ ও স্যানিটেশনে বরাদ্দের ১০-১৫ শতাংশ রাখা হয়েছে। যেসব সিটি করপোরেশন এলাকায় ওয়াসা বা পানীয় জল সরবরাহ কর্তৃপক্ষ নেই, সেসব সিটি করপোরেশনে পানীয় জল সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন প্রণালি রক্ষণাবেক্ষণে এ টাকা খরচ করা যাবে।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় সিটি করপোরেশনের অনুকূলে বরাদ্দ করা টাকার ৫-১০ শতাংশ খরচ করা যাবে ক্রীড়া, শিক্ষা ও সংস্কৃতি এবং নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রক্ষণাবেক্ষণে। এ ছাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় ১০-১৫ শতাংশ ও বিবিধ নামে মোট বরাদ্দের ৫-১০ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিবিধের আওতায় রয়েছে বাসটার্মিনাল, মার্কেট সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ, কবরস্থান, শ্মশানঘাটের উন্নয়ন, পুকুর বা জলাশয় সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং পার্ক বা বিনোদনকেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণ।
নগরবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব মনে করেন, সিটি করপোরেশনকে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করাতে হলে দুটি বিষয় থাকা প্রয়োজন। একটি হলো, সরকারের কাছ থেকে যে পরিমাণ অর্থ নেবে তা কীভাবে খরচ করা হচ্ছে তা সরকারকে জানানো। এতে সিটি করপোরেশনের জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। বিগত সময়ে কিছু সিটি করপোরেশন সরকারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কর্মচারীর বিল পরিশোধসহ নিজেদের ইচ্ছামাফিক খরচ করার খারাপ নজির স্থাপন করেছে। ফলে সরকারের এ ধরনের অনুশাসনকে আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছি। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তাদেরও জনগণকে দেওয়া অঙ্গীকার পূরণ করতে কিছু অগ্রাধিকারভিত্তিক কাজ করতে হয়। তারা তা নিশ্চিত করবেন নিজস্ব, অর্থাৎ করপোরেশনের রাজস্ব আয় থেকে। তাতে সরকারের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের নগর এলাকায় শতকরা ৬০ ভাগ মানুষ সিটি করপোরেশন এলাকায় বাস করছে। তাদের জন্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিটি করপোরেশনের আধুনিক পরিষেবা, যেমন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নগর পরিচ্ছন্নতা, জলাবদ্ধতা নিরসন, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও মেরামত, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন এবং স্থানীয় পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা নিশ্চিতে সম্পদ আহরণ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। নগরবাসীকে মানসম্মত নগরসেবা দেওয়ার জন্য ১২টি সিটি করপোরেশন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সিটি করপোরেশনগুলো এখনো নিজস্ব আয় দিয়ে চলতে পারে না। প্রতি বছর সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দিয়ে থাকে। এ জন্য সরকার একটি গাইডলাইন (দিকনির্দেশনা) জারি করেছে।
এই নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য : সিটি করপোরেশনগুলোর উন্নয়নসহায়তা ব্যবহারে সক্ষমতা বৃদ্ধি; জন-অংশগ্রহণের মাধ্যমে উন্নয়নসহায়তা ব্যবহার; অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান; সিটি করপোরেশনের বাধ্যতামূলক দায়িত্ব ও কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন; জন-আকাক্সক্ষার ভিত্তিতে অগ্রাধিকারমূলক উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা।
নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯-এর তৃতীয় তফসিল অনুযায়ী সাধারণ সেবা সম্পর্কিত, যেমন জনস্বাস্থ্য, পানি সরবরাহ ও নর্দমা ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা নিরসন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সড়ক (বাতিসহ) রক্ষণাবেক্ষণ, উন্মুক্ত স্থান-পার্ক-পুকুর-জলাশয় ব্যবস্থাপনা, মার্কেট, জননিরাপত্তা ও অগ্নিনির্বাপণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কবরস্থান ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য সুবিধা, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সমাজকল্যাণ, জন্ম-মৃত্যুর নিবন্ধনে সরকারের বরাদ্দ করা উন্নয়নসহায়তা ব্যবহারে প্রকল্প নিতে হবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, এখন থেকে সরকারি অর্থ খরচের বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে নিয়মিত প্রতিবেদন পাঠাতে হবে। অর্থবছরের শুরুতে চূড়ান্ত করা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত প্রকল্প সম্পর্কিত তালিকা করপোরেশনের মাসিক সাধারণ সভায় অনুমোদনক্রমে নির্ধারিত ছকে প্রতি বছর ৩১ আগস্ট তারিখের মধ্যে জমা দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট অর্থবছরের ছাড় করা অর্থের শতকরা খরচের হার উল্লেখসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন নির্ধারিত ছকে প্রতি বছর ৩১ আগস্টের মধ্যে পাঠাতে হবে। পূর্ববর্তী অর্থবছরে বাস্তবায়িত প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রতিবেদন নির্ধারিত ছকে প্রতি বছর ৩১ আগস্টের মধ্যে পাঠাতে হবে।