৯ বছর পর বাংলাদেশের লজ্জার হার
ক্রীড়া প্রতিবেদক | ৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০
ধাক্কাটা এত জোরে লাগবে তা কেউ ভাবতেও পারেনি। ২ উইকেটে ৩০৩ রান করে নিশ্চিন্তেই ড্রেসিংরুমে ফিরেছিল বাংলাদেশ। প্রথম দুই ওভারে দুই উইকেট নিয়ে আরেকটি সহজ জয়ের প্রতীক্ষা তখন। অথচ চতুর্থ উইকেটে রেকর্ড জুটি গড়ে বাংলাদেশকে লাইনের বাইরে ঠেলে দিল জিম্বাবুয়ে। দিন শেষে ৫ উইকেটের দুর্দান্ত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা। ইনোসেন্ট কাইয়া ও সিকান্দার রাজার ১৯২ রানের জুটিতে স্মরণীয় জয় জিম্বাবুয়ের। ২০১৪ সালের পর প্রথমবার ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে হারাল তারা।
ক্রিকেটে কাগজ-কলম বলে কিছু নেই। তা আবার প্রমাণ করল জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশ ওয়ানডেতে সেরা, সাকিব আল হাসান বাদে সেরা দলও এটি। গত ৫ সিরিজ জয়ের সাফল্যে উজ্জ্বল।
তবুও মাঠের খেলায় কাল অসহায় তামিম ইকবালরা। ওয়ানডের টানা সাফল্য, ফেভারিট তকমা, এতদিনে ফরম্যাটটা বুঝে ওঠা সব কিছুই তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন কাইয়া-সিকান্দার। দুজনের রেকর্ড গড়া জুটিতে হলো বাজিমাত। ৯ বছর পর ক্রিকেটে নতুন জীবন ফিরে পাওয়া জিম্বাবুয়ে পাল্টে দিল সব হিসাব। অথচ মোস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলামের দুই ওভারে দুই আঘাতে দুর্দান্ত শুরু পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তৃতীয় উইকেটের লড়াইয়ে ফিরে আসার শুরু জিম্বাবুয়ের। ওয়েসলি মাধেভেরে ও ইনোসেন্ট কাইয়া মিলে করেন ৫৬ রানের জুটি। রানআউটে এই গতি থামার পর শুরু হয় রেকর্ডের। বাংলাদেশের বিপক্ষে রেকর্ড চতুর্থ উইকেট জুটি গড়ে ম্যাচটা জিতিয়েই দেন কাইয়া ও সিকান্দার রাজা। দুজনে ১৯২ রান যোগ করেন ১৭২ বলে। চতুর্থ উইকেটে যা জিম্বাবুয়ের ইতিহাসে দ্বিতীয় সেরা জুটি। প্রথমটি ভারতের বিপক্ষে ২০০৪ সালে শন আরভিন ও স্টুয়ার্ট কারলাইলের ২০২। শুরুটা সাবধানী করলেও এ দুজন সময়ের সঙ্গে ভয়ংকর হয়ে ওঠেন। একটা সময় ওভারপ্রতি ১০ রান করে নিতে থাকেন। ৩০ ওভার পর থেকে ৪২ ওভার পর্যন্ত তাদের এই দৌড় জিম্বাবুয়েকে স্মরণীয় জয় এনে দেয়। জীবনের সেরা ইনিংসটি খেলে ১২২ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায় ১১০ রানে থামেন কাইয়া। ক্যারিয়ারে এটি তার প্রথম সেঞ্চুরি। আর সেরা ফর্মে থাকা সিকান্দার রাজা শেষ পর্যন্ত ১০৯ বলে ৮ চার ও ৬ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ১৩৫ রানে। যা তার ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি। ৯ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় লুক জঙ্গে করেন ২৪ রান। মিরাজের বলে ক্যাচ আউট হয়ে ফেরার আগে ৪২ রানের জুটি গড়েন। তাতে স্বাগতিকদের জয় আরও সহজ হয়ে যায়।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে যাওয়াটা কঠিন ছিল বাংলাদেশের জন্য। ব্যাটিং উইকেটে দিনের শেষদিকেই ব্যাট করা সহজ। সূর্যের আলোয় পিচের ময়েশ্চার চলে যায়। জিম্বাবুয়ে সেই সুবিধাই কাজে লাগিয়েছে। সঙ্গে দিনের শুরুতে পিচের ময়েশ্চার কাজে লাগিয়ে পেসারদের ভালো করার সুযোগও ছিল স্বাগতিকদের সামনে। তামিম-লিটন তা ভেস্তে দেন। দুজনের সাবধানী ইনিংস কোনো বিপদ হতে দেয়নি বাংলাদেশের। দুজনের ব্যাটে ১০০ রানের জুটিও পেয়ে যায় দল। এ নিয়ে চতুর্থবার তামিম-লিটন জুটি থেকে ১০০ রান এসেছে। তামিম ক্যারিয়ারের ৫৪তম ফিফটি তুলে নেন। সাবলীল খেললেও বরাবরের মতো দারুণ ইনিংস আত্মাহুতি দেওয়ার ভুলটাই করলেন আবার। সিকান্দার রাজার বলটিতে সজোরে মারতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার ব্যাটের উপরের দিকে লেগে তা ক্যাচে পরিণত হয়। ৮৮ বলে ৯ চারে ৬২ রান করার পথে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে ৮ হাজারের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তামিম। লিটনের সঙ্গে তার জুটি থেকে আসে ১১৯ রান। ২৬তম ওভারে তামিমের বিদায়ের কিছু পরে লিটন দাশ হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন ৭৫ বলে। এ নিয়ে সপ্তম ওয়ানডে ফিফটি পেলেন এই ব্যাটার। ফিফটির পর স্বভাবসুলভ দ্রুত রান তোলা শুরু করেন লিটন। মাত্র ১৪ বলেই করে ফেলেন ৩১। অথচ পায়ে লিগামেন্টে টান লাগায় ৮৯ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৮১ রানের দুর্দান্ত ইনিংসটি না শেষ করেই ফিরে আসতে হয় লিটনকে।
তিন বছর পর ওয়ানডে দলে ফেরা এনামুল হক বিজয়ের সঙ্গে ৪৫ বলে ৫২ রানের জুটি গড়েন। দ্রুতই রান উঠছিল এ জুটিতে। লিটনের বিদায়ে কিছুটা থেমে যায় রানের গতি। উইকেটে মানিয়ে নিয়ে আবারও বিজয়-মুশফিক জুটি রান তোলায় মন দেন। তাতে ৭৬ বলে ৯৬ রান যোগ করেন দুজনে। বিজয় দীর্ঘদিন পর একাদশে ফেরার সুযোগ কাজে লাগালেন ৬২ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৭৩ রানে। অবশ্য দুই রান আগেই জীবন পেয়েছিলেন। আগের তিন জুটির তুলনায় মুশফিকের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর জুটিতে রান তুলনায় কম এসেছে। শেষ ৫ ওভারে এসেছে মাত্র ৩৯ রান, এ দুজনের জুটি ৩৬। মুশফিক একাদশে ফিরে ৪৯ বলে ৫ চারে ৫২ রান অপরাজিত থাকেন। মাহমুদউল্লাহ করেন ১২ বলে ২০। ওয়ানডেতে এই নিয়ে চতুর্থবার বাংলাদেশের ইনিংসে চার ফিফটি ছাড়ানো ইনিংস এলো। প্রথমবার ছিল ২০১৪ এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে। এরপর ২০১৫ সালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে, তৃতীয়বার গত বছর ওয়েস্টইন্ডিজের বিপক্ষে।
টি-টোয়েন্টিতে হারের পর ওয়ানডেতেও শুরু হার দিয়ে। প্রিয় ফরম্যাটে এমন লজ্জা ভাবতেই পারেননি তামিমরা। এই হার তাই বাংলাদেশ ক্রিকেটের হৃদয়ে আঘাত দিয়েছে। মাত্র এক দিন পর দ্বিতীয় ম্যাচ। ওই ম্যাচে না জিতলে আঘাত যে আরও বড় হবে তা নিশ্চিত।
শেয়ার করুন
ক্রীড়া প্রতিবেদক | ৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০

ধাক্কাটা এত জোরে লাগবে তা কেউ ভাবতেও পারেনি। ২ উইকেটে ৩০৩ রান করে নিশ্চিন্তেই ড্রেসিংরুমে ফিরেছিল বাংলাদেশ। প্রথম দুই ওভারে দুই উইকেট নিয়ে আরেকটি সহজ জয়ের প্রতীক্ষা তখন। অথচ চতুর্থ উইকেটে রেকর্ড জুটি গড়ে বাংলাদেশকে লাইনের বাইরে ঠেলে দিল জিম্বাবুয়ে। দিন শেষে ৫ উইকেটের দুর্দান্ত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা। ইনোসেন্ট কাইয়া ও সিকান্দার রাজার ১৯২ রানের জুটিতে স্মরণীয় জয় জিম্বাবুয়ের। ২০১৪ সালের পর প্রথমবার ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে হারাল তারা।
ক্রিকেটে কাগজ-কলম বলে কিছু নেই। তা আবার প্রমাণ করল জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশ ওয়ানডেতে সেরা, সাকিব আল হাসান বাদে সেরা দলও এটি। গত ৫ সিরিজ জয়ের সাফল্যে উজ্জ্বল।
তবুও মাঠের খেলায় কাল অসহায় তামিম ইকবালরা। ওয়ানডের টানা সাফল্য, ফেভারিট তকমা, এতদিনে ফরম্যাটটা বুঝে ওঠা সব কিছুই তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন কাইয়া-সিকান্দার। দুজনের রেকর্ড গড়া জুটিতে হলো বাজিমাত। ৯ বছর পর ক্রিকেটে নতুন জীবন ফিরে পাওয়া জিম্বাবুয়ে পাল্টে দিল সব হিসাব। অথচ মোস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলামের দুই ওভারে দুই আঘাতে দুর্দান্ত শুরু পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তৃতীয় উইকেটের লড়াইয়ে ফিরে আসার শুরু জিম্বাবুয়ের। ওয়েসলি মাধেভেরে ও ইনোসেন্ট কাইয়া মিলে করেন ৫৬ রানের জুটি। রানআউটে এই গতি থামার পর শুরু হয় রেকর্ডের। বাংলাদেশের বিপক্ষে রেকর্ড চতুর্থ উইকেট জুটি গড়ে ম্যাচটা জিতিয়েই দেন কাইয়া ও সিকান্দার রাজা। দুজনে ১৯২ রান যোগ করেন ১৭২ বলে। চতুর্থ উইকেটে যা জিম্বাবুয়ের ইতিহাসে দ্বিতীয় সেরা জুটি। প্রথমটি ভারতের বিপক্ষে ২০০৪ সালে শন আরভিন ও স্টুয়ার্ট কারলাইলের ২০২। শুরুটা সাবধানী করলেও এ দুজন সময়ের সঙ্গে ভয়ংকর হয়ে ওঠেন। একটা সময় ওভারপ্রতি ১০ রান করে নিতে থাকেন। ৩০ ওভার পর থেকে ৪২ ওভার পর্যন্ত তাদের এই দৌড় জিম্বাবুয়েকে স্মরণীয় জয় এনে দেয়। জীবনের সেরা ইনিংসটি খেলে ১২২ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায় ১১০ রানে থামেন কাইয়া। ক্যারিয়ারে এটি তার প্রথম সেঞ্চুরি। আর সেরা ফর্মে থাকা সিকান্দার রাজা শেষ পর্যন্ত ১০৯ বলে ৮ চার ও ৬ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ১৩৫ রানে। যা তার ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি। ৯ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় লুক জঙ্গে করেন ২৪ রান। মিরাজের বলে ক্যাচ আউট হয়ে ফেরার আগে ৪২ রানের জুটি গড়েন। তাতে স্বাগতিকদের জয় আরও সহজ হয়ে যায়।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে যাওয়াটা কঠিন ছিল বাংলাদেশের জন্য। ব্যাটিং উইকেটে দিনের শেষদিকেই ব্যাট করা সহজ। সূর্যের আলোয় পিচের ময়েশ্চার চলে যায়। জিম্বাবুয়ে সেই সুবিধাই কাজে লাগিয়েছে। সঙ্গে দিনের শুরুতে পিচের ময়েশ্চার কাজে লাগিয়ে পেসারদের ভালো করার সুযোগও ছিল স্বাগতিকদের সামনে। তামিম-লিটন তা ভেস্তে দেন। দুজনের সাবধানী ইনিংস কোনো বিপদ হতে দেয়নি বাংলাদেশের। দুজনের ব্যাটে ১০০ রানের জুটিও পেয়ে যায় দল। এ নিয়ে চতুর্থবার তামিম-লিটন জুটি থেকে ১০০ রান এসেছে। তামিম ক্যারিয়ারের ৫৪তম ফিফটি তুলে নেন। সাবলীল খেললেও বরাবরের মতো দারুণ ইনিংস আত্মাহুতি দেওয়ার ভুলটাই করলেন আবার। সিকান্দার রাজার বলটিতে সজোরে মারতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার ব্যাটের উপরের দিকে লেগে তা ক্যাচে পরিণত হয়। ৮৮ বলে ৯ চারে ৬২ রান করার পথে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে ৮ হাজারের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তামিম। লিটনের সঙ্গে তার জুটি থেকে আসে ১১৯ রান। ২৬তম ওভারে তামিমের বিদায়ের কিছু পরে লিটন দাশ হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন ৭৫ বলে। এ নিয়ে সপ্তম ওয়ানডে ফিফটি পেলেন এই ব্যাটার। ফিফটির পর স্বভাবসুলভ দ্রুত রান তোলা শুরু করেন লিটন। মাত্র ১৪ বলেই করে ফেলেন ৩১। অথচ পায়ে লিগামেন্টে টান লাগায় ৮৯ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৮১ রানের দুর্দান্ত ইনিংসটি না শেষ করেই ফিরে আসতে হয় লিটনকে।
তিন বছর পর ওয়ানডে দলে ফেরা এনামুল হক বিজয়ের সঙ্গে ৪৫ বলে ৫২ রানের জুটি গড়েন। দ্রুতই রান উঠছিল এ জুটিতে। লিটনের বিদায়ে কিছুটা থেমে যায় রানের গতি। উইকেটে মানিয়ে নিয়ে আবারও বিজয়-মুশফিক জুটি রান তোলায় মন দেন। তাতে ৭৬ বলে ৯৬ রান যোগ করেন দুজনে। বিজয় দীর্ঘদিন পর একাদশে ফেরার সুযোগ কাজে লাগালেন ৬২ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৭৩ রানে। অবশ্য দুই রান আগেই জীবন পেয়েছিলেন। আগের তিন জুটির তুলনায় মুশফিকের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর জুটিতে রান তুলনায় কম এসেছে। শেষ ৫ ওভারে এসেছে মাত্র ৩৯ রান, এ দুজনের জুটি ৩৬। মুশফিক একাদশে ফিরে ৪৯ বলে ৫ চারে ৫২ রান অপরাজিত থাকেন। মাহমুদউল্লাহ করেন ১২ বলে ২০। ওয়ানডেতে এই নিয়ে চতুর্থবার বাংলাদেশের ইনিংসে চার ফিফটি ছাড়ানো ইনিংস এলো। প্রথমবার ছিল ২০১৪ এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে। এরপর ২০১৫ সালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে, তৃতীয়বার গত বছর ওয়েস্টইন্ডিজের বিপক্ষে।
টি-টোয়েন্টিতে হারের পর ওয়ানডেতেও শুরু হার দিয়ে। প্রিয় ফরম্যাটে এমন লজ্জা ভাবতেই পারেননি তামিমরা। এই হার তাই বাংলাদেশ ক্রিকেটের হৃদয়ে আঘাত দিয়েছে। মাত্র এক দিন পর দ্বিতীয় ম্যাচ। ওই ম্যাচে না জিতলে আঘাত যে আরও বড় হবে তা নিশ্চিত।