
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে মন্ত্রীর পদমর্যাদা দিচ্ছে সরকার। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী পাচ্ছেন প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছেন। এখন বিষয়টি গেজেটে প্রকাশ করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে চিঠি দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তাও চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ওই চিঠিতে বলা হয়, চার মেয়রকে এ পদমর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করেছেন। বাকি আনুষ্ঠানিকতা সেরে গেজেট প্রকাশের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে সেখানে। বর্তমানে এ চারজন নিয়ে দেশের ১২ সিটি মেয়রের মধ্যে ছয়জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা ভোগ করবেন। বাকি দুজন হলেন খুলনার মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এবং রাজশাহীর মেয়র এ এইচ এম খায়জ্জামান (লিটন)।
এর আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক মারা যান ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির উপনির্বাচনে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন আতিকুল ইসলাম। তখনো তাকে মন্ত্রী পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। এরপর ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে তিনি পুনর্নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হন সাবেক সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস।
প্রয়াত আনিসুল হক যখন ঢাকা উত্তরের মেয়র ছিলেন ২০১৬ সালে তখন তাকেও সরকার মন্ত্রীর পদমর্যাদা দিয়েছিল। সে সময় ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনও একই মর্যাদা পেয়েছিলেন।
তখন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে দেওয়া হয়েছিল উপমন্ত্রীর পদমর্যাদা। এবার নতুন ঘোষণায় তিনি প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেতে যাচ্ছেন। এছাড়া ২০১৬ সালে রংপুর সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুকেও প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেওয়া হয়।
সবশেষ ২০১৯ সালের ২৮ মে ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলামকে মন্ত্রী পদমর্যাদা এবং রাজশাহীর মেয়র খায়রুজ্জামান (লিটন) ও খুলনার মেয়র আব্দুল খালেককে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেওয়া হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বাজারে ডলার সংকটকে পুঁজি করে অনেক ব্যাংক বাড়তি মুনাফা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ডলার ধরে রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে দাম বাড়ানোর এ অভিযোগ খতিয়ে দেখতে মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকগুলো পরিদর্শন শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত ডলার ধরে রেখে দর বাড়ানোর প্রমাণ পাওয়ায় দেশি-বিদেশি ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানদের সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। অনেক ব্যাংকেই ট্রেজারি প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন উপব্যবস্থাপনা পরিচালকরা।
গতকাল সোমবার অভিযুক্ত ব্যাংকগুলোকে তাদের ট্রেজারি প্রধানদের অপসারণের নির্দেশ দিয়ে চিঠি দেওয়া হয় বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিদর্শন বিভাগের উদ্যোগে পরিচালিত পরিদর্শনে ডলার কেনাবেচায় একটি বহুজাতিক ব্যাংক ও পাঁচটি স্থানীয় বেসরকারি ব্যাংকের অতিরিক্ত মুনাফা করার প্রমাণ পাওয়া যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়ে ট্রেজারি বিভাগসহ এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
ডলার বেচাকেনার দর নির্ধারণের বিষয়টি পরিচালিত হয় ট্রেজারি বিভাগের তত্ত্বাবধানে। এ ক্ষেত্রে ট্রেজারি বিভাগের প্রধানের কথা উল্লেখ না থাকলেও দায়ী সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান সিরাজুল ইসলাম।
জানা গেছে, বিদেশি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, দেশি ব্র্যাক ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংকসহ ছয়টি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
করোনা মহামারীর সংকট কেটে যেতে শুরু করলে গত বছরের শেষ দিক থেকে দেশের আমদানি ব্যয় বাড়তে শুরু করে। এর মধ্যে চলতি বছরের মার্চে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন ধরনের অস্থিরতা দেখা দেয়। রাশিয়ার সঙ্গে ডলারে লেনদেনে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার সূত্র ধরে ডলারের সরবরাহ নিয়ে চিন্তায় পড়ে অনেক দেশ। এ ছাড়া জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্য সরবরাহকারী দুই শীর্ষ দেশ রাশিয়া-ইউক্রেনের বৈদেশিক বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিশ্বে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। ফলে প্রতিটি দেশের আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়। দেখা দেয় ডলার সংকট। বাংলাদেশ, ভারতসহ অনেক দেশেরই স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটে। রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ বাড়াতে হয় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।
এই পরিস্থিতিতে গত ২৬ জুলাই দেশের খোলাবাজারে (কার্ব-মার্কেট) ডলারের দর বেড়ে ১১২ টাকায় উঠলে ডলারের বাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দেয়। দেশের ব্যাংকগুলোতে তখন নগদ ডলার ১০৮ টাকায় উঠে যায়। অথচ গত মে মাসেই ডলারের দর ছিল ১০০ টাকার নিচে। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে ডলারের দর প্রায় ৬-৭ টাকা বেড়ে যায়।
এর পরপরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানে অভিযান শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। অভিযানে ৮০টির মতো প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শন করে বেশি দামে ডলার বিক্রিসহ বিভিন্ন অনিয়মের জন্য ৪২টি প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়।
এরপর গত ১০-১২ দিন ডলারের বাজার কিছুটা স্থির থাকলেও গতকাল আবারও ডলারের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হয় ১১৫ টাকায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তঃব্যাংক ডলারের দর ৩০ পয়সা বাড়িয়ে ৯৫ টাকা নির্ধারণ করে। এর সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ডলারের দরও কিছুটা বাড়িয়ে দেয়।
ডলার থেকে আয় কয়েকগুণ : সাম্প্রতিক সময়ে যে ডলার সংকট তৈরি হয়েছে, তার সুযোগ নিয়ে নিজেদের মুনাফা বাড়িয়ে নিয়েছে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ব্যাংকগুলোর অর্ধবার্ষিকের (জানুয়ারি-জুন) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এ সময়ে ডলার ব্যবসা থেকে ব্যাংকগুলোর আয় কয়েকগুণ বেড়েছে।
আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি হিসাববছরের প্রথমার্ধে ডলার ব্যবসা থেকে সবচেয়ে বেশি আয় করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। এ সময়ে ব্যাংকটি ডলার ব্যবসা থেকে ৫১২ কোটি ৭২ লাখ টাকা আয় করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩৬৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। অন্যান্য ব্যাংকের মতো এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ডলার ব্যবসা থেকে সবচেয়ে বেশি আয় করেছে ব্যাংকটি। এ সময়ে এ খাত থেকে ব্যাংকটির আয় হয়েছে ২৯৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৬৩ কোটি টাকা।
সিটি ব্যাংক চলতি বছরের প্রথমার্ধে ডলার ব্যবসা থেকে আয় করেছে ৩৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২৬০ কোটি টাকা। চলতি এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ডলার ব্যবসা থেকে ব্যাংকটির আয় হয় ২০৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৩৯ কোটি টাকা।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ডলার ব্যবসা থেকে প্রাইম ব্যাংকের আয় বেড়েছে ১৩৫ শতাংশ। এ সময় এ খাত থেকে ব্যাংকটির আয় হয়েছে ২২৬ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ৯৬ কোটি টাকা। তবে এ আয়ের বড় অংশই এসেছে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে। এ সময়ে ডলার ব্যবসা থেকে আয় হয় ১৩৮ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৫০ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ডলারের কমিশন ও বিনিময় ব্যবসায় ঢাকা ব্যাংকের আয় বেড়েছে ৯২ শতাংশ। এ সময় এ খাত থেকে ব্যাংকটির আয়ের পরিমাণ ১৬৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৮৮ কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ডলার ব্যবসা থেকে ঢাকা ব্যাংকের আয় হয়েছে ২৬২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৫১ কোটি টাকা।
চলতি বছরের প্রথমার্ধে বিদেশি মুদ্রার কমিশন, বিনিময় ও ব্রোকারেজ থেকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের আয় হয়েছে ৪৯২ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩০০ কোটি টাকা। চলতি দ্বিতীয় প্রান্তিকে ডলার থেকে ব্যাংকটির আয় হয় ২৪১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৫৬ কোটি টাকা।
প্রিমিয়ার ব্যাংক চলতি প্রথমার্ধে ডলার থেকে আয় হয়েছে ৩৯৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৭৩ কোটি টাকা। এ খাতের আয়ের বড় অংশই এসেছে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে, ২৪৭ কোটি ৮৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১০১ কোটি টাকা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে এপ্রিল থেকেই বাজারে ডলার সংকট দেখা দেয়। ব্যাংকগুলোও এর সুযোগ নিতে শুরু করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া হারের চেয়ে অনেক বেশি দরে আমদানিকারকদের কাছে ডলার বিক্রি করে ব্যাংকগুলো।
বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এবি ব্যাংক ডলার ব্যবসা থেকে আয় করেছে ৮৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। একই সময়ে এ খাত থেকে ব্যাংক এশিয়ার আয় হয় ২৩৪ কোটি টাকা। আগের বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এ ব্যবসা থেকে ব্যাংকটির আয় ছিল ৭৭ কোটি টাকা। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ডলার ব্যবসা থেকে ১১২ কোটি ৫১ লাখ টাকা আয় করেছে দ্বিতীয় প্রান্তিকে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩৮ শতাংশ বেশি।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে ডলারে যমুনা ব্যাংকের আয় হয় ১২৪ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪৬ কোটি টাকা। এ সময়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের আয় হয় ১৬৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৬৮ কোটি টাকা। একই প্রান্তিকে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ডলারে আয় করেছে ২০৬ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৭৫ শতাংশ বেশি। এ সময়ে পূবালী ব্যাংকের আয় বেড়েছে ১৭৪ শতাংশ। শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক ১২৯ কোটি টাকা, ট্রাস্ট ১১২ কোটি ও উত্তরা ব্যাংক ৬৪ কোটি আয় করেছে। তবে ডলার থেকে প্রায় সব ব্যাংকের আয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়লেও রূপালী ব্যাংকের আয় উল্টো কমেছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে এ ব্যবসা থেকে ব্যাংকটির আয় হয় ৩৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৬৩ কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথমার্ধেও ব্যাংকটির আয় আগের বছরের তুলনায় ৩৪ কোটি টাকা কমেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গমাতার নেপথ্য ভূমিকা তুলে ধরে বলেছেন, ‘প্রধান রাজনৈতিক ইস্যুতে বঙ্গমাতার সিদ্ধান্ত দেশের স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করেছে। রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর ক্ষেত্রেও আমার মা যখন যে সিদ্ধান্তগুলো দিয়েছেন, সেটাই কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে সবচেয়ে সহায়ক হয়েছে। যেহেতু আমার আব্বা মনেপ্রাণে দেশের কাজ করতে পেরেছিলেন।’ ঐতিহাসিক ছয় দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকালীন প্যারোলে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি প্রত্যাখ্যান এবং সাতই মার্চের ভাষণ প্রদানের প্রাক্কালে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের সময়োচিত সিদ্ধান্ত ও পরামর্শের উল্লেখ করেন তিনি।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন এবং ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক-২০২২’ প্রদান উপলক্ষে গতকাল সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।
সরকারপ্রধান বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন, তখন বঙ্গমাতা ছয় দফা দাবির সঙ্গে আরও দুটি দফার প্রস্তাবিত অন্তর্ভুক্তির বিরুদ্ধে সাহসী পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশের অভ্যুদয় অসম্ভব ছিল। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচার চলাকালে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা বঙ্গবন্ধুর প্যারোলে মুক্তি মেনে নিতে ইচ্ছুক ছিলেনÑএমন একটি ধারণার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন বঙ্গমাতা, যিনি তার নিঃশর্ত মুক্তি চেয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আব্বা যদি প্যারোলে চলে যান, তখন আর আন্দোলন-সংগ্রামের কিছুই থাকত না। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাও প্রত্যাহার হতো না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সার্জেন্ট জহুরুল হককে হত্যা করা হয়েছিল, বাকি যে আসামি সবাইকে তারা মৃত্যুদ-ই দিত। কেউ আর বেঁচে থাকতে পারত না এবং বাংলাদেশও আর স্বাধীনতার মুখ দেখত না।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় জাতির পিতার ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণের বিষয়ে তার মায়ের পরামর্শ দেওয়ার উল্লেখ করে বলেন, ‘সেখানে আমাদের বহু নেতার নানা মতামত উপেক্ষা করে আমার মায়ের মতামতটাই গুরুত্ব পেয়েছে।’
তিনি বলেন, সাতই মার্চের যে বক্তব্য, সেখানে আব্বার হাতে কাগজ বা কোনো কিছু ছিল না। ওনার মনে যে কথাগুলো এসেছে, সেখান থেকে সেটাই তিনি নির্দ্বিধায় বলে গেছেন। কিন্তু ভাষণ দিতে যাওয়ার আগে অনেক বড় বড় নেতা আব্বার হাতে চিরকুট লিখে দিতেনÑএটা বলতে হবে, সেটা বলতে হবে, তখন আমার মা বলে দিতেন তুমি কারও কথা শুনবে না। নিজের মনে যা আসে তা-ই বলবে।’
বঙ্গমাতার অবদানকে চিরস্মরণীয় করার লক্ষ্যে ২০২১ সাল থেকে আটটি ক্ষেত্রে নারীদের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত সর্বোচ্চ জাতীয় পদক ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ প্রদান করা হয়ে থাকে।
এ বছর রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সমাজসেবা এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ যে পাঁচ বিশিষ্ট নারী ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক-২০২২’ পেয়েছেন তারা হলেন ‘রাজনীতি’র ক্ষেত্রে সিলেট জেলার সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, অর্থনীতিতে কুমিল্লা জেলার সেলিমা আহমাদ এমপি, শিক্ষা ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপচার্য অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ, সমাজসেবা ক্ষেত্রে কিশোরগঞ্জ জেলার মোছা. আছিয়া আলম এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে গোপালগঞ্জ জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আশালতা বৈদ্য (মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার)।
পুরস্কার হিসেবে ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের ৪০ গ্রাম ওজনের পদক, সম্মাননাপত্র এবং ৪ লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেন এবং সভাপতিত্ব করেন। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক বঙ্গমাতার জীবনীর ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান চেমন আরা তৈয়ব। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল স্বাগত বক্তব্য দেন। পদক বিজয়ীদের পক্ষে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য দেন সৈয়দা জেবুন্নেছা হক।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার লেখা ‘শেখ ফজিলাতুন নেছা আমার মা’ শীর্ষক একটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন।
ঢাকায় কর্মজীবী নারীদের জন্য ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ অত্যাধুনিক ১০তলা হোস্টেলও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গমাতার ৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠান থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২ হাজার ৫০০ অসচ্ছল নারীর মাঝে ৫০ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। জেলা প্রশাসন গোপালগঞ্জ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এই কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করলেও যুগপৎ সারা দেশেই এই কর্মসূচি পালিত হয়। প্রত্যেক নারী পাচ্ছেন ২ হাজার টাকা। মোট অর্থের মধ্যে ১৩ লাখ টাকা বন্যাকবলিত জেলা সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনার নারীদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে সারা দেশে দুস্থ নারীদের মধ্যে সাড়ে চার হাজার সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতার জীবনীভিত্তিক প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্মিত অত্যাধুনিক কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের বিষয়ের একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
পরে জাতির পিতা, বঙ্গমাতা এবং পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমার বাবা রাজনীতি করতেন, অর্থাৎ রাজনীতির কাজ যেহেতু তিনি এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য করতেন। তাদের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, সেটা উপলব্ধি করেই মা সব সময় পাশে থেকে অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছেন। একজন স্ত্রী হিসেবে কোনো কিছুর দাবি তো করতেনই না; বরং আমার বাবার যা কিছু প্রয়োজন ছিল সেট তিনিই দেখতেন।’
বঙ্গমাতার আদর্শ নিয়ে ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে বাংলাদেশের নারী সমাজ যেন মানুষের কল্যাণে কাজ করেন, সেই আহ্বানও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের নারী সমাজ তারাও যেন এই আদর্শটা ধারণ করে। শুধু চাওয়া, পাওয়া, বিলাসিতা এটাই জীবন নয়। একটা মানুষের জীবনে মানুষের কল্যাণে কাজ করার অনেক সুযোগ আছে এবং একটা আদর্শ নিয়ে চললে মানুষের জন্য অনেক অবদান রাখা যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী চুয়াত্তর সালে দুর্ভিক্ষকে মনুষ্যসৃষ্ট অ্যাখায়িত করে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের উল্লেখ করে সে সময়কার একটি ঘটনার উদাহরণ টানেন।
তিনি বলেন, ‘তখন চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে। মার সঙ্গে সবার একটা যোগাযোগ ছিল। ঢাকা শহরের বা বাংলাদেশের কোথায় কী হচ্ছে, সে খবরটা তিনি জানতেন। যখন চালের দাম বেড়ে গেল মা নিজেই বাবাকে বললেন চালের দাম কিন্তু বেড়ে যাচ্ছে। সে সময় অফিসে গিয়ে জাতির পিতা যে খবর নিলেন তাতে চালের যে দাম আসে তা শুনে বঙ্গমাতা বললেন জাতির পিতাকে সঠিক তথ্য দেওয়া হয়নি। তার বক্তব্য প্রমাণ করার জন্য তখন বঙ্গমাতা ওই দামে এক মণ চাল কিনে দিতে বললে বাস্তাবিক অর্থে সে দামে বাজারে আর চাল পাওয়া গেল না।’
‘এরা সব সময় তোমাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে, তুমি এদের বিষয়ে সতর্ক থাকবে।’ এই পরামর্শ বঙ্গমাতা তখন জাতির পিতাকে দিয়েছিলেন বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্র চালাচ্ছেন আমার বাবা কিন্তু তার পাশে থেকে ছোটখাটো বিষয়গুলোও যে আমার মা খেয়াল করছেন, তখন সেটা দেখা গেল। আর জাতির পিতার পদক্ষেপের ফলেই তখন ১০ টাকা সেরের চাল ৩ টাকায় নেমে এসেছিল।
শুধু স্বাধীনতা সংগ্রাম নয়, প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার মায়ের দৃষ্টি ছিল বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, ঐতিহাসিক ও শোকাবহ আশুরা আজ। সৃষ্টির শুরু থেকেই আল্লাহতায়ালা এ দিনকে বিশেষ মর্যাদাময় করেছেন। এ জন্য আশুরার দিনে এমনসব ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যা অন্য কোনো দিনে একীভূত হয়নি। ইসলামপূর্ব যুগে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের পাশাপাশি মক্কার মুশরিকরাও আশুরার দিনকে বিশেষভাবে সম্মান করত। আশুরার মূল চেতনা সত্য-মিথ্যার লড়াইয়ের, যাবতীয় জুলুমের বিরুদ্ধে জাগরণের।
আশুরা উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার ধর্মপ্রাণ মানুষ নফল রোজা পালন করবেন। অনেকে গতকাল রোজা রেখেছেন, যারা সোমবার রোজা রাখতে পারেননি, তারা আজকের রোজার সঙ্গে মিলিয়ে আগামীকালও রোজা পালন করবেন। আজ সরকারি ছুটিও। আরবি ‘আশারা’ শব্দের অর্থ দশ। আর আশুরা মানে দশম। ইসলামি পরিভাষায়, মহররমের ১০ তারিখকে ‘আশুরা’ বলে।
সৃষ্টির শুরু থেকে মহররমের ১০ তারিখে তথা আশুরার দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এ কারণে আশুরার মর্যাদা ও মাহাত্ম্য উত্তরোত্তর বেড়েছে। হজরত মুসা (আ.) ফেরাউনের অত্যাচার থেকে এই দিনে পরিত্রাণ লাভ করেছিলেন তার অনুসারীদের নিয়ে নীল নদ পার হয়ে। তাদের পেছনে থাকা ফেরাউন সদলবলে নীল নদে ডুবে যায়।
রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। আশুরার দিন অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে রোজা পালন করেছেন নবী কারিম (সা.)।
হিজরি ৬১ সালের এই দিনে ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার পরিবারের সদস্যরা ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে শহীদ হয়েছিলেন। ইসলামের মহান আদর্শ সমুন্নত রাখতে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের এই আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। এ ঘটনা মানবতার ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে শত শত বছর ধরে ন্যায় ও কল্যাণের প্রতিষ্ঠায় মানুষকে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে আসছে। বিশ্বের মুসলমানদের কাছে দিনটি একদিকে যেমন শোকের, তেমনি হত্যা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার চেতনায় উজ্জ্বল। আশুরা যুগ যুগ ধরে মুসলমানদের নীতি ও আদর্শের ওপর অটল থাকার শিক্ষা দেয়। সর্বদা সত্য ও ন্যায়ের পথে চলা, অসত্যের কাছে মাথানত না করা, আত্মত্যাগের মাধ্যমে ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিজেকে উজ্জীবিত করার শিক্ষাও দেয় আশুরা।
কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসাইন (রা.) সপরিবারে আত্মত্যাগের মাধ্যমে এ শিক্ষা দিয়েছেন, আল্লাহর পথে অটল থাকতে মুমিনরা কখনো তাদের জীবন উৎসর্গ করতে দ্বিধা করে না। বর্তমানের মুসলমানরা যাবতীয় অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারলেই ইমাম হোসাইন (রা.)-এর ত্যাগ সার্থক হবে; এটাই কারবালার শিক্ষা।
আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, কারবালার শোকাবহ ঘটনা অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে উদ্বুদ্ধ করে এবং সত্য ও সুন্দরের পথে চলার প্রেরণা জোগায়।
পবিত্র আশুরার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে জাতীয় জীবনে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ দেশ গড়ে তুলতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
আশুরা উপলক্ষে শিয়া ধর্মাবলম্বীরা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাজিয়া মিছিল বের করবেন। মিছিলে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি ইত্যাদি নিয়ে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করেছে। আশুরা উপলক্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো হয়, যা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়Ñ এসবও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
আশুরা উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গতকাল বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ‘পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা নেয়ামত উল্লাহ আল ফরিদী। এ সময় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মো. মুশফিকুর রহমানসহ সংস্থাটির পরিচালক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সাধারণ মুসল্লিরা উপস্থিত ছিলেন।
তরুণ নেতৃত্বে ভরসা রাখতে চাচ্ছে দেশের অন্যতম প্রাচীন দল এবং মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সের নেতাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হতে যাচ্ছে।
আগামী সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্য অনেক যোগ্যতার সঙ্গে বয়সও নির্ধারক মাপকাঠি (ক্রাইটেরিয়া) হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
তরুণ নেতৃত্ব গড়ে তোলার ব্যাপারে বিবেচক দৃষ্টি রেখেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মনোনয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা। বয়সের ব্যাপারটি তিনি ভাবছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্য।
মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, দলের সর্বশেষ সভাপতিম-লীর সভায় বয়স নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারীও এবার সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে পারেন বলে জানান তারা। কারণ, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (২০০৮-এর সংশোধনীতে) রাজনৈতিক দলের সব পর্যায়ে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধি থাকার বিধান রয়েছে। সেটি বাড়াতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারী নেতৃত্ব বেশি রাখা হবে।
মনোনয়ন বোর্ড ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সর্বশেষ সভাপতিম-লীর সভায় সভাপতি শেখ হাসিনা বয়সের বিষয়টি আলোচনায় তোলেন। তার বক্তব্য, আগামী নির্বাচনে নবীন এবং প্রবীণ নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। নবীন নেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।’
সভাপতিমন্ডলীর ওই নেতা বলেন, ‘প্রবীণ নেতারা নানা রোগে আক্রান্ত থাকেন। সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হয়ে পাঁচ বছর পার করার আগেই মৃত্যুবরণ করেন অনেকে। ফলে শূন্য হয়ে পড়ে সংশ্লিষ্ট আসন। শূন্য ঘোষিত আসনে উপনির্বাচন দিতে হয়। তাতে আর্থিক ক্ষতিসহ নানা চাপ সামলাতে হয় দলকে। চাপমুক্ত থাকতেই এমন পরিকল্পনার কথা ভাবা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘কারোর বাঁচা-মরার নিশ্চয়তা নেই। তবু সুস্থতা-অসুস্থতা “ম্যাটার” করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে। তাই আওয়ামী লীগ সভাপতি এবারের মনোনয়নে বয়স বিবেচনায় নিতে চান।’
ক্ষমতাসীন দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, দলে নতুন নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্যও এ বিবেচনা ইতিবাচক হবে মনে করেন সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। মনে করা হচ্ছে বিকল্প একটি নেতৃত্ব, মেধাবী পার্লামেন্টারিয়ান গড়ে তোলার সময় এখন। তাই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে বয়স গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সভাপতিমন্ডলীর এক সভায় বয়সের ব্যাপারটি আলোচনায় ওঠে। সব আসনেই শুধু বয়স বিবেচনায় প্রার্থী পরিবর্তন করা হবে এমন নয়। অন্য অনেক যোগ্যতার সঙ্গে এবার প্রার্থীর বয়সকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে।’
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের আরেক সদস্য বলেন, সব আসনে মনোনয়ন দেওয়া হবে বয়স দেখে, তা কিন্তু নয়। এমপির মনোনয়ন পেতে দলীয় যেসব ক্যাটাগরি থাকতে হয়, যেমন রাজনৈতিক ত্যাগ, মেধা-যোগ্যতা ও জনসম্পৃক্ততা, সেসবের পাশাপাশি প্রার্থীর বয়সও এবার আমলে নেওয়া হবে।
তিনি জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন কারণে যেসব আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে, সেসব আসনেই নানা যোগ্যতার সঙ্গে বয়স বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশের সড়কপথের বিভিন্ন জায়গায় ২৬৫ কিলোমিটার এলাকায় সবসময় বিরাজ করে আতঙ্ক। সড়কে এসব স্থান আলাদা আলাদা হলেও কমন ফ্যাক্টর হচ্ছে যাত্রীদের বা গাড়িতে করে যারা চলেন তাদের অথবা পথিকজনের ভয়, আতঙ্ক।
এসব স্থানে প্রায়ই ঘটছে ছিনতাই, ডাকাতি এবং ধর্ষণসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড। পাশবিক নির্যাতনের ঘটনার ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে অবহিত করেছে, আশা করেছে প্রতিকার মিলবে। প্রতিকার দূর অস্ত।
এসব স্থানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হচ্ছে না অজানিত কারণে (অথবা আইনপ্রয়োকারী সংস্থা কারণ জেনেও না জানার ভান করে বলে)। ফলে ধরা যাচ্ছে না অপরাধকারী চক্রকে। আতঙ্কে হলেও এসব স্থানে নিয়মিত পুলিশি টহল থাকে না। এসব স্থানে রাতের অবস্থা আরও ভয়াবহ। যানবাহনে তল্লাশি হয় না বললেই চলে। এর সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা।
টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর ডাকাতির ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে ঢাকার অদূরে গাজীপুরে ঘটেছে বাসের ভেতরে ধর্ষণের ঘটনা। এসব ঘটনায় দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।
সড়ক-মহাসড়কের যেসব স্থানে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে পুলিশের কয়েকটি ইউনিট সেসব স্থানের একটি তালিকা করেছে। তালিকাটি পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, মহাসড়কে অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় পুলিশ সদর দপ্তর কঠোর হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশের সবকটি ইউনিটের প্রধানদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে নজরদারি বাড়াতে হবে। দিনে-রাতে ২৪ ঘণ্টা পুলিশি টহল থাকতে হবে। টহলের সময় টহল পুলিশ ঘুমাতে পারবে না। যানবাহনে নিয়মিত তল্লøাশি করতে হবে। চালক, হেলপার ও যাত্রীদের চেহারা ভিডিওতে ধারণ করে রাখতে হবে।’
যদি পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে এসব কাজে গাফিলতির অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই মহাসড়কে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। নানা কৌশল অবলম্বন করছে বটে কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা।
প্রতিদিন ঘটছে নানা ঘটনা। চলন্ত বাসে ডাকাতির পর নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতনের ঘটনায় জনমনে বেড়ে গেছে উদ্বেগ, দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।
টাঙ্গাইল ও গাজীপুরে চলন্ত বাসে ধর্ষণের ঘটনার আলোচনা হচ্ছে বেশি। এ নিয়ে পুলিশও ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে পড়েছে। যদিও টাঙ্গাইলের ঘটনায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুই অভিযুক্তকারীকে গ্রেপ্তার করেছে তারা।
চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত টাঙ্গাইলের মধুপুর-এলেঙ্গা সড়কে অন্তত ২০টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। বনাঞ্চল হওয়ায় ডাকাত দলের সদস্যরা ওই স্থানকে বেছে নিচ্ছে বলে বাসচালকদের অভিমত। ওই এলাকায় পুলিশের টহলও নিয়মিত থাকে না। পুলিশের বক্তব্য ডাকাত দলের সদস্যরা বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড থেকে যাত্রীবেশে বাসে ওঠে। পরে সুযোগমতো তারা বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং অপকর্ম সংঘটিত করে।
সড়কে অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিশেষ বৈঠক করেছেন। হাইওয়ে পুলিশের প্রধান এবং কয়েকজন ডিআইজিও (রেঞ্জ) আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। যেসব মহাসড়কে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে তার একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকাটি পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মল্লিক ফকরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতিটি মহাসড়কে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। থানা-পুলিশের পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশও রাস্তায় টহল দিচ্ছে। ৬৫টি স্থানে প্যাট্রোলপার্র্টি যানবাহন দাঁড় করিয়ে তল্লাশির পর ভিডিও করছে। ঝুঁকিপূর্ণ যেসব রাস্তা আছে সেখানে টহল বেশি দেওয়া হচ্ছে। কঠোরভাবে মহাসড়ক মনিটরিং করা হচ্ছে।’
প্রায় একই কথা বলেছেন ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক হাবিবুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘রেঞ্জ এলাকায় যেসব সড়ক আছে সেখানে পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। টাঙ্গাইলের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। রাতের বেলায় টহল পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। রাতের বেলায় যানবাহন তল্লাশি করা হচ্ছে। রাতের বেলায় পুলিশ সদস্যদের সতর্কভাবে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। কেউ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।’
সূত্র জানায়, পুলিশের তালিকা অনুযায়ী দেশের সড়ক-মহাসড়কের ২৬৫ কিলোমিটার এলাকায় অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। সাধারণত সন্ধ্যার পর অপরাধীরা স্থানে স্থানে ঘাপটি মেরে থাকে। সুযোগ বুঝে তারা যানবাহন দাঁড় করিয়ে যাত্রীদের ওপর হামলে পড়ে। স্থানগুলো হলো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা ব্রিজের পূর্ব পাশের ১০ কিলোমিটার এলাকা, বগুড়ার সাত রাস্তা থেকে বনানী এলাকা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার, জামালপুর মহাসড়কের রসুলপুর, কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের কানারামপুর, মাজার বাসস্ট্যান্ড, জালুয়ার বাজার, আমতলা, নান্দাইল চৌরাস্তা ও তারের ঘাট, শেরপুর মহাসড়কের গোপালপুর, উদালধর, তারাকান্দা দক্ষিণ, বাইমকান্দি, গোরদাড়, পাইসলা ও বাইপাস, রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের রাজাবাড়ি, হরিপুর ও কামারপাড়া, নাটোর মহাসড়কের বানেশ^র ও ঝলমলিয়া, নওগাঁ মহাসড়কের নওদাপাড়া, নওহাটা, মৌগাছি, কেশরহাট ও সাপাই, বরিশালের কাশিপুর, নথুলাবাদ ও চৌমাটা, কুমিল্লার নিমসার, দাউদকান্দির গৌরীপুর, চান্দিনা ও কালাকুচয়া বাজার, দেবিদ্বারের কংশনগর, সুয়াগাজী, মিয়াবাজার, চৌদ্দগ্রাম, মহিপাল ও নাথেরপটুয়া, ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের ভালুকার বরাডোবা, ভালুকা, চেলেরঘাট, বাঘামোরা, ত্রিশাল, হৈলরবাজার, কাজীরসিমলা, কানহর ও তুরখাই, টাঙ্গাইল মহাসড়কের মনতলা, সাহেববাজার, ভাপাকিরমোড়, কালীবাড়ি বাজার, চেচুয়াখালী বাজার ও গাবতলী, বাকেরগঞ্জের বোয়ালিয়া, রহমতপুর, জয়শ্রী, লাকুডিয়া বাজার ও মধুপুর-এলেঙ্গা এলাকা। এসব স্থানেই অপরাধীদের তৎপরতা বেশি।
ঘটনাবলি : গত ১৪ জানুয়ারি সোনার তরী পরিবহনে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে যাত্রীবেশে ওঠে সাত ডাকাত। সাভার আসার পর তারা অস্ত্রের মুখে চালক ও যাত্রীদের জিম্মি করে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তাদের নজর পড়ে বাসে থাকা দুই তরুণীর ওপর। চক্রের সদস্যরা পালাক্রমে তাদের ধর্ষণ করে। তরুণীদের গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকায় নামিয়ে দেয় ডাকাতরা। বাস ঘুরিয়ে আবারও চলে যায় টাঙ্গাইলের দিকে। এরপর মির্জাপুর থেকে একটি তেলবোঝাই ট্রাক ছিনতাই করে। সেটি নিয়ে ডাকাত দলের দুই সদস্য ঢাকার দিকে যায়। বাকি সদস্যরা রাতভর বাস নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ভোরে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের সামনে নেমে যায়। গত মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়া থেকে আসা ঈগল পরিবহনের এক নারীযাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। লুট করা হয় বাসে থাকা যাত্রীদের মালামাল। গত ১৪ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাভার থানায় দুটি ও তুরাগ, উত্তরা পশ্চিম, টাঙ্গাইল সদর, মির্জাপুর ও আশুলিয়ায় একটি করে সাতটি ডাকাতির মামলা হয়। এসব ঘটনায় মাঠে নামে ডিবি পুুলিশ। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা শেষে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে চলন্ত বাসে রূপা নামে এক নারীকে দল বেঁধে ধর্ষণের পর হত্যা করে বাসের চালক-হেলপার ও তাদের সহযোগীরা। পরে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার পঁচিশ মাইল এলাকায় বনের মধ্যে রূপার মরদেহ ফেলে যায় তারা। ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল ভোরে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মৌচাকের এক পোশাককর্মী টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী বাসস্ট্যান্ড থেকে ‘বিনিময় পরিবহন’-এর একটি বাসে করে কালিয়াকৈরের উদ্দেশে রওনা দেন। বাসে যাত্রী না থাকার সুযোগে কিছুদূর যাওয়ার পর বাসটির সুপারভাইজার বাসের জানালা-দরজা বন্ধ করে দেয়। এরপর গাড়ির চালক হাবিবুর রহমান নয়ন তাকে ভয় দেখিয়ে পেছনের সিটে নিয়ে ধর্ষণ করে। সুপারভাইজার রেজাউল করিম ও হেলপার ভুট্টুও পালাক্রমে ধর্ষণ করে। বাসটি ঢাকা না গিয়ে ময়মনসিংহ রোডের মধুপুরের একটি ফাঁকা জায়গায় মেয়েটিকে নামিয়ে দেয়। ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব থানা বাসস্ট্যান্ডে এক প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণ করা হয়।
ধারাবাহিকভাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় চলতি বোরো মৌসুমে সেচে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সরকার নানারকম প্রস্তুতি নিয়েছে বলে দাবি করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুতের যে পরিস্থিতি তাতে গ্রীষ্মে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। বেশি দাম দিয়েও কৃষক ঠিকমতো বিদ্যুৎ না পেলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। এতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়তে পারে।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, জ্বালানি তেল, সার ও বীজের দাম বেড়েছে। এখন আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। তার মানে চারদিক থেকে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এর ফলে কৃষকের ‘সিগনিফিকেন্ট লস’ হবে। এভাবে দাম বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বোরো উপকরণনির্ভর ফসল। কিন্তু উপকরণের দাম এভাবে বাড়তে থাকলে, কৃষক আগ্রহ হারিয়ে ফেললে; সে ঠিকমতো উপকরণ ব্যবহার করতে পারবে না। এতে উৎপাদন ব্যাহত হবে। উৎপাদন খারাপ হলে চালের ঘাটতি হবে। এমনিতেই এখন প্রায় ৭০ লাখ টন গম ও ভুট্টা আমদানি করতে হচ্ছে। এরমধ্যে যদি চাল আমদানি করতে হয়; তাহলে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
ড. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘সারাবিশ্ব নানারকম সংকটে ভুগছে। এ অবস্থায় আমাদের অন্তত খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সুযোগ রয়েছে। সেজন্য যে পরিমাণ দাম বেড়েছে সে পরিমাণ নগদ অর্থ সহায়তা দিতে হবে কৃষককে। ২০০৯-১০ সালের দিকে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে এক কোটির বেশি কৃষককে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা সরাসরি নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। এজন্য তারা ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্টও খুলেছিলেন। তাদের সেই অ্যাকাউন্ট এখনো আছে, কিন্তু সহায়তা দেওয়া হয় না। এখন যদি সেই সহায়তা দেওয়া হয় তাহলে কৃষক আবার উৎসাহ পাবে।’
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, প্রতি বছর সেচ মৌসুমে (ফেব্রুয়ারি থেকে মে) বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায়। গত মৌসুমে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। চলতি বছর সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। গত বছরের তুলনায় এ বছর সেচ সংযোগের সংখ্যা ১ হাজার ৯১টি বেড়ে মোট ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৪৫৯টি হয়েছে। এজন্য বিদ্যুৎ লাগবে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট।
সেচ মৌসুমে অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সম্প্রতি তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিদ্যুতের চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় রেখে উৎপাদনও বাড়ানো হচ্ছে। সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গ্যাস, ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল সরবরাহ বৃদ্ধি করা, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সার্বিকভাবে পরিস্থিতি ভালো হবে।’
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে প্রতিদিন ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস, ৭৭ হাজার ৪০০ টন ফার্নেস অয়েল এবং ৬৬ হাজার ১০০ টন ডিজেলের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। সূত্রমতে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ করা বাস্তবে খুব কঠিন ব্যাপার। গত বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পিডিবির দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট ছিল। বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এ বছর জ¦ালানির ঘাটতি আরও বেশি। তবে সরকার খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানি করে ঘাটতি মেটানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু আমদানিকৃত গ্যাস দিয়ে চাহিদা অনুযায়ী কতটা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে তা নিয়ে কর্মকর্তাদের অনেকেই সন্দিহান।
পিডিবির তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ২২ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ১০ হাজার থেকে ১০ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। গ্যাস ও কয়লা সংকটের কারণে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। এ ছাড়া রক্ষণাবেক্ষণের কারণেও কিছু কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে।
দেশে নির্মাণাধীন ও আমদানিকৃত বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আগামী মার্চের শেষ দিকে ভারতের আদানি থেকে অতি উচ্চ দামে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ছাড়া মে মাসের দিকে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ৬১২ মেগাওয়াট এবং অন্যান্য কিছু ছোট বা মাঝারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৫০ থেকে ২০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হতে পারে। এপ্রিল-মে মাসের দিকে বিদ্যুতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি হবে। তখন এসব কেন্দ্র সময়মতো উৎপাদনে এলেও ১৩ হাজার মেগাওয়াটের জোগান দেওয়া সম্ভব হবে। এর বাইরে উচ্চ মূল্যের জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে কিছু কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম মনে করেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সক্ষমতা সরকারের নেই। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি সরবরাহ করতে সরকারের ডলার খরচের যে সক্ষমতা দরকার তা সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘জ্বালানি খাতে সরকারের ভুলনীতি আর অন্যায্য ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয়ের কারণে দাম বেড়েই চলেছে। সেই ব্যয় মেটাতে এখন বিদ্যুৎ জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চাইছে। এই পরিস্থিতিতে উচ্চ দামে বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা অসম্ভব ব্যাপার।’
এদিকে ডলার সংকট এবং ঋণপত্র (এলসি) খোলার বিলম্বের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। সরকারের কাছে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মোটা অঙ্কের বিল পাওনা থাকলেও তারা ঠিকমতো না পাওয়ার কারণে প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানি করতে পারছেন না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর নির্মাণকাজ এবং জ্বালানি আমদানির যে অগ্রগতি তাতে চাহিদার তুলনায় আগামী গ্রীষ্মে বিদ্যুতের ঘাটতি হবে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার মেগাওয়াট। তবে সাশ্রয় নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে ১ হাজার মেগাওয়াট এবং উচ্চ মূল্যের জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে আরও ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণ করতে পারে সরকার। এরপরও অন্তত ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকবে।
এদিকে দাম সমন্বয়ের নামে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে জানুয়ারি মাসে ১৮ দিনে চার দফা গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করেছে সরকার। এর মধ্যে দু’দফায় অন্তত ১০ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর আগে গত বছরের আগস্টে সেচে ব্যবহৃত ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ২৯ টাকা দাম বাড়ানো হয়। বিদ্যুৎ ও জ¦ালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে কৃষিতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে।
কুমিল্লার নাঙলকোট উপজেলার বাসন্ডা গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম মজুমদার বলছিলেন, গত বছর এক বিঘা বা ৩৩ শতক জমিতে ধান চাষ করতে সেচের জন্য ২৭৫০ টাকা ব্যয় হয়েছে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চলতি বোরো মৌসুমে এ ব্যয় বেড়ে অন্তত ৪ হাজার টাকা হবে। এর বাইরে অন্যান্য খরচও আনুপাতিক হারে অনেক বেড়েছে। ফলে এখন ধান চাষ করলে প্রতি বিঘা জমিতে অন্তত দেড় থেকে দুই হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।
ডিজেলচালিত ইঞ্জিনের মাধ্যমে জমিতে সেচ দেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর গ্রামের শিয়ালা গ্রামের কৃষক নাঈম। শনিবার রাতে টেলিফোনে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রতিবিঘা জমিতে এ বছর সেচের ব্যয় বেড়েছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। সার, বীজ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণের দামও বেড়েছে।
এর আগে মূল্যবৃদ্ধির গণশুনানির সময় বিইআরসি কৃষক ও প্রান্তিক মানুষের কথা বিবেচনা করলেও নির্বাহী আদেশের সময় এসব কিছুই বিবেচনা করা হয় না।
অতীতে সামাজিক সুরক্ষার অংশ হিসেবে প্রতিমাসে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীকে লাইফলাইন বা প্রান্তিক ব্যবহারকারী হিসেবে বিবেচনা করে তাদের বিদ্যুতের দাম তুলনামূলক কম বাড়াত কমিশন। দেশে এ ধরনের গ্রাহক রয়েছে ১ কোটি ৬৩ লাখ, যাদের অধিকাংশই কৃষক। কিন্তু সর্বশেষ বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির আদেশে এ সুবিধা বাতিল করা হয়েছে।
লাইফ লাইন শ্রেণির প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিল ছিল ৩.৭৫ টাকা। গত ডিসেম্বরে তা বাড়িয়ে ৩.৯৪ টাকা করেছিল মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে এবার আরেক দফা বাড়িয়ে ৪.১৪ টাকা করা হয়েছে। ফলে গত দুই মাসের ব্যবধানে দরিদ্র মানুষকে এখন প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ৩৯ পয়সা বাড়তি ব্যয় করতে হবে।
কৃষকের কথা বিবেচনা করে আগে সেচে ব্যবহৃত বিদ্যুতের দাম সবসময়েই তুলনামূলক সাশ্রয়ী রাখার চেষ্টা করা হতো। কিন্তু এখন কৃষকেরাও রেহাই পাচ্ছে না। গত ১২ ডিসেম্বর কৃষিতে ব্যবহৃত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ২১ পয়সা বাড়িয়ে ৪.৩৭ টাকা করা হয়। সেখান থেকে এবার আরও ২২ পয়সা বাড়িয়ে ৪.৫৯ টাকা করা হয়েছে।
রংপুরের একজন কৃষক আনোয়ার আলী খানিকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দফায় দফায় যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে তাতে চাষি তো আর বেশিদিন বাঁচতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘ধান চাষ করে এখন লাভ তো দূরের কথা খরচই ওঠে না। তাই আগের চেয়ে ধান চাষ কমিয়ে দিয়েছি। এখন সারা বছর খাওয়ার জন্য যতটুকু ধান দরকার ততটুকুই চাষ করি। তাতে লোকসান হলেও কী করব? ডাল-ভাত তো খাওয়া লাগবে।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খারের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তারা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গতিশীল হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। শ্রীলঙ্কার ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে যোগ দিতে দেশটিতে সফরে আছেন মোমেন ও হিনা। গতকাল শনিবার সেখানে তাদের মধ্যে সাইডলাইন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
রেডিও পাকিস্তান ও নিউজ নেটওয়ার্কের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার পাকিস্তান-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে অর্থনীতি ও বাণিজ্যে পারস্পরিক উপকারী দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংযোগ জোরদার করার এবং পর্যটন ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। অনেক আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বিশেষ করে মুসলিম উম্মাহ সংক্রান্ত বিষয়ে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে মতের মিল রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সহযোগিতা জোরদারের আশা : এদিকে গত শুক্রবার বিকেলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী পদুজানা পেরামুনা পার্টির দিনেশ গুনাবর্ধনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এ সময় তারা দুই দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীর মধ্যে চলমান সেক্টরাল সহযোগিতা আরও বাড়ানোর গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন। বিশেষ করে বাণিজ্য সহজীকরণ, ব্যবসা ও বিনিয়োগ, পর্যটন ও সংযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতার ওপর জোর দেন তারা।
গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, এর আগে সেদিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী সাবরির দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মর্যাদাপূর্ণ ‘লক্ষ্মণ কাদিরগামার স্মারক বক্তৃতা’ শিরোনামে ‘শেয়ারড প্রসপারটি : এ ভিশন ফর সাউথ এশিয়া’ প্রদান করেন। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়ের সম্মিলিত আকাক্সক্ষা এবং যৌথ সমৃদ্ধির জন্য দক্ষিণ এশিয়া সম্মিলিতভাবে যে লক্ষ্যগুলো অনুসরণ করতে পারে সে সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। শ্রীলঙ্কার ঐতিহ্যবাহী পারফরমিং আর্ট সমন্বিত ঐতিহাসিক ইন্ডিপেন্ডেন্স হলে সাংস্কৃতিক উৎসব ‘লঙ্কারলঙ্কা’তে অংশগ্রহণ করেন।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, শ্রীলঙ্কার ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে অংশগ্রহণের জন্য দেশটিতে সফর করছেন ড. মোমেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি সকালে স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এ সফরে তিনি প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী সাবরি, নেপালের সদ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করা বিমলা রায় পাওডেলের সঙ্গে এবং মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খারের সঙ্গেও বৈঠক করেন। আশা করা হচ্ছে, সফর শেষে আজ ঢাকায় পৌঁছাবেন ড. মোমেন।
'পাঠান' মুক্তির আগে থেকেই অনুরাগীদের সঙ্গে শাহরুখের যোগাযোগের একটাই মাধ্যম, টুইটার। শনিবার ফের টুইটারে 'আস্ক এসআরকে' সেশনে ধরা দিলেন শাহরুখ। হালকা মেজাজে, খোলামেলা আড্ডায় মাতলেন অনুরাগীদের সঙ্গে। অনুরাগীদের প্রশ্ন উত্তর দিলেন। সেখানেই একজন টুইটার ব্যবহারকারীর উপদেশ- বয়স অনুযায়ী চরিত্রে অভিনয়ের করার। পাল্টা জবাব দেন শাহরুখও। বলেন, 'তিনি হিরো ছিলেন, আছেন, থাকবেন'।
অনুরাগীরা যেমন রয়েছেন, তেমনই ট্রোল করার লোকের সংখ্যাও কম নয় শাহরুখের সোশালে। বছর সাতান্নর 'তরুণ' এই অভিনেতাকে একজনের প্রশ্ন, 'আপনি কি এভাবেই হিরোর চরিত্রেই অভিনয় করবেন, নাকি কোনো দিন নায়ক-নায়িকার বাবার চরিত্র করার পরিকল্পনাও রয়েছে?' তাতে শাহরুখ যা জবাব দিয়েছেন, তা রীতিমত ছড়িয়ে পড়েছে সোশালে।
এমনিতেই রসিক মানুষ শাহরুখ। তবে কোন কথায় কাকে কী উত্তর দেবেন, তা ভালোই জানা তার। বাদশাহ লেখেন, 'তুই বাপ হ… আমি হিরোর চরিত্রেই ঠিক আছি।'
শনিবারের 'আস্ক এসআরক'-এ সেশনে, শাহরুখের কাছে জানতে চাওয়া হয় 'পাঠান'-এর মোট আয়ের পরিসংখ্যান। তাকেও ফেরাননি শাহরুখ। উত্তর দিয়ে লেখেন, 'ভালোবাসা ৫ হাজার কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে, ৩ হাজার কোটি প্রশংসা, ৩২৫০ কোটি হাগ, ২০০০ কোটি হাসি এখনও গণণা চলছে। তোমার অ্যাকাউন্ট্যান্ট কী বলছেন?'
'পাঠান' ঘিরে উন্মাদনা নজিরবিহীন। প্রেক্ষাগৃহের বাইরে এই ছবি দেখার ঢল। শাহরুখ অভিনীত ছবিটি লম্বা রেসের ঘোড়া, বলেছেন সিনেমা বিশেষজ্ঞরা। ৪ বছর পর শাহরুখ পর্দায় ফিরেছেন বলেই শুধু নয়, ৭ দিনে বক্স অফিসে ৭০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে 'পাঠান', যা বলিউডে বছরের সেরা ব্লকবাস্টার হিসাবে গণ্য হতে চলেছে।
বিশ্বে জনপ্রিয় ফলগুলোর মধ্যে পেঁপে একটি। পুষ্টিগুণের জন্যই সবাই এই ফলটি বেশি পছন্দ করেন।
চিকিৎসক থেকে পুষ্টিবিদ— সকলেই এই ফলকে ‘মহৌষধ’ বলে থাকেন। শিশুদের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে, বয়স্কদের অর্শের সমস্যায় আবার কম বয়সীদের ওজন কমানোর ডায়েটে পাকা পেঁপের স্থান সকলের আগে। বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজের প্রাকৃতিক উৎস পাকা পেঁপে চোখের জন্যও উপকারী। বিটা ক্যারোটিনে ভরপুর পাকা পেঁপে ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর
ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিড্যান্টে ভরপুর পাকা পেঁপে ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য ব্যধির প্রতিরোধক। এ ছাড়াও পেঁপেতে ছড়েছে ক্যারোটিনয়েড, ভিটামিন সি এবং ই, যা ত্বকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হজমে সহায়ক
পেঁপে মুখের রুচি ফেরায়। সেই সঙ্গে খিদেও বাড়ায় এবং পেট পরিষ্কার রাখে। পেট পরিষ্কার থাকলে গ্যাস অম্বলের সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে থাকে। শুধু তাই নয়, যাদের অর্শের সমস্যা রয়েছে, চিকিৎসকরা তাদের পেঁপে খাওয়ার পরামর্শ দেন।
প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম
পেঁপে কিন্তু শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ১০০ শতাংশ ভিটামিন সি পাওয়া যায় এই পাকা পেঁপে থেকেই। শরীরে কোনও সংক্রমণ হলে, তা কমাতে চিকিৎসকরা পাকা পেঁপে খাওয়ার পরামর্শ দেন।
ওজন কমাতে
পাকা পেঁপেতে যথেষ্ট পরিমাণ ফাইবার থাকায় তা অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। পাশাপাশি বিপাক হারও বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়াও যারা ওজন কমাতে ডায়েট মেনে খাবার খেয়ে থাকেন, তাদের জন্যও ভাল পাকা পেঁপে।
হার্টের স্বাস্থ্যরক্ষা করে
হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে পটাশিয়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে এই যৌগ। প্রাকৃতিকভাবে পটাশিয়ামের উৎস হল পাকা পেঁপে।
সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে বিকেলে ঢাকায় এসেছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল। আজ শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনা মো. হাশিম।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি শ্রমবাজারের জটিলতা নিয়ে আলাপ করবেন। কিভাবে দেশটিতে আমরা সহজে কর্মী পাঠাতে পারি; সেগুলো আলোচনায় উঠে আসবে। আমাদেরও কিছু প্রস্তাব রয়েছে। আমাদের কর্মীদের স্বার্থ আগে আমরা চাই, সবার জন্য বাজার খুলে দেওয়া হোক। নিয়োগকর্তার পছন্দমতো রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়োগ— এটা আমরা চাই না। অভিবাসন ব্যয়
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার গত কয়েক বছর ধরে অস্থির। দেশটিতে প্রত্যাশিত শ্রমিক পাঠাতে পারছে না বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমবাজারটির জটিলতা নিরসনে আলোচনা করতে সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে ঢাকায় আসছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল।
তার সফরে শ্রমবাজারটি গতিশীল করতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) পরিবর্তন, অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় কমানোসহ দেশের সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য বাজার উন্মুক্ত করার প্রস্তাব দেবে ঢাকা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ২৪ ঘণ্টার সফরে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পাশাপাশি তিনি সেনাকল্যাণ সংস্থার সঙ্গেও একটি বৈঠক করবেন।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা খরচের হিসাব ধরে বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বেশি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে খরচের বেশিরভাগ অর্থ জোগাড়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৯ শতাংশ বাড়ানো হবে। আসছে জুনের প্রথমভাগে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী বাজেট হবে জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এখানে নেওয়া কোনো পদক্ষেপে যেন আওয়ামী লীগ সরকার সমালোচনার মুখে না পড়ে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের থাকছে বিশেষ নজর। এ ছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। তাই সংকট ও নির্বাচন দুটোই মাথায় রাখতে হচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে মোটাদাগে একটি রূপরেখা পাঠানো হয়েছে। নতুন পরিকল্পনার পাশাপাশি গত তিন মেয়াদে সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে আগামী বাজেট প্রস্তাবে তা মনে করিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি নীতিনির্ধারকদের উপস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো আগামী বাজেটের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে হিসাব ধরে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট প্রস্তাব প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে তা কয়েক দফা খতিয়ে দেখা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধন, যোগ-বিয়োগ করে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার আগেও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে।
ডলার সংকটে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পণ্যের দাম বাড়ছে। কাঁচামাল সংকটে বিপাকে শিল্প খাত। ব্যাংক খাতে অস্থিরতা। নতুন চাকরির সুসংবাদ নেই বললেই চলে। দফায় দফায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। খুব শিগগিরই এসব সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা। অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঋণদাতা সংস্থার কঠিন শর্তের বেড়াজালে আছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশি^ক অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবে তা আগামী বাজেটে স্পষ্ট করা হবে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও বলা হবে। তবে শত সংকটের মধ্যেও আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী যতটা সুবিধা দেওয়া সম্ভব তা দিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দিতে হিসাব কষা হচ্ছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটে আমদানি রপ্তানি প্রায় বন্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকটকাল চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে আমাদের দাবি অনুযায়ী নগদ সহায়তা দিতে হবে। রাজস্ব ছাড় দিতে হবে। কর অবকাশ ও কর অব্যাহতি বাড়াতে দিতে হবে।’
ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সংস্কারের শর্ত মানার অঙ্গীকার করে সরকার ঋণ পেয়েছে। শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে ঋণের যেকোনো কিস্তি আটকে দিতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যায়ক্রমে প্রতি অর্থবছরের বাজেটে এসব সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়ন করা হবে। আসছে বাজেটে শর্ত মানার চেষ্টা থাকবে। বিশেষভাবে অতীতের মতো ঢালাওভাবে কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না। আর্থিক খাতের সংস্কারের কিছু ঘোষণা থাকবে। বিশেষভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হবে। আইএমএফের সুপারিশে এরই মধ্যে ভ্যাট আইন চূড়ান্ত হয়েছে। আয়কর আইন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে। শুল্ক আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। এ তিন আইন অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। আসছে বাজেটে টেকসই অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার কথা বলা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু উদ্যোগের কথা শোনানো হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঋণদাতা সংস্থার শর্ত মানার কথা বলা হলেও সব আগামী বাজেটে একবারে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে অর্থনীতির গতি কমে যাবে।’
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত খাত এবং এনবিআর খাতের জন্য মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হতে পারে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে। এনবিআর এ লক্ষ্যমাত্রা কমানোর জোরালো আবেদন করেছে। কিন্তু তা আমলে আনেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হিসেবে, ৩৪ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা আয়কর হিসেবে এবং ৩১ শতাংশ বা বাকি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হিসেবে সংগ্রহ করার কথা বলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার কথা শুধু বললেই হবে না। কীভাবে অর্জিত হবে, সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা না থাকলে প্রতিবারের মতো ঘাটতি থাকবে। রাজস্ব ঘাটতি হলে অর্থনীতিতে আয় ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত।’
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআর উৎসে করের আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। সম্পদশালীদের ওপর নজর বাড়ানো হবে। শুধু বেশি সম্পদ থাকার কারণে অতিরিক্ত কর গুনতে হবে। সারচার্জ বহাল রাখা হবে। সুপারট্যাক্স গ্রুপকে উচ্চহারে গুনতে হবে কর। আগামী অর্থবছরেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা থাকবে। অর্থ পাচারোধে আইনের শাসন কঠোর করা হবে। অর্থ পাচার আটকাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে। করপোরেট কর কমানোর দাবি থাকলেও তা মানা হবে না। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে খোদ অর্থমন্ত্রী বললেও রাজস্ব আদায় কমে যাবে এমন যুক্তি দেখিয়ে এনবিআর রাজি নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। কমানো হবে শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি শুল্ক। ডলারের ওপর চাপ কমাতে বেশি ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমাতে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হবে। তৈরি পোশাক খাতের সব সুবিধা বহাল রাখা হবে। শিল্পের অন্যান্য খাতেও কতটা সুবিধা বাড়ানো যায় তা নিয়ে এনবিআর হিসাব করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বাজেট প্রস্তুতিবিষয়ক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং ঘাটতি ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হতে পারে। আগামী অর্থবছরে জিডিপির ৬ শতাংশ ঘাটতি ধরে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হতে পারে বলে জানা যায়। ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকলেও আগামীবার এ খাতে বেশি ব্যয় ধরা হতে পারে। এ খাতে ১ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় আছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদন করে। ঋণদাতা সংস্থাটির কাছ থেকে বাংলাদেশ ছয় কিস্তিতে তিন বছরে ৪৭০ কোটি ডলার পাচ্ছে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের দিন আইএমএফ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে পূর্বাভাস দেয়। সংস্থাটি বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা হতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
এতে রিজার্ভ সম্পর্কে বলা হয়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ৩ হাজার কোটি ডলার। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বাড়বে এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।