
গত ১০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল চালকল মালিকদের বার্ষিক সাধারণ সভা। পাঁচ তারকা হোটেলে সভা করে মন্ত্রী-সচিব নিয়ে কিছু দাবি আদায়ের কৌশল নিয়েছিলেন মালিকরা। কৌশলটি বুমেরাং হয়ে যায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের জন্য।
ওই সভায় খাদ্যমন্ত্রী ঘোষণা দেন মিল মালিকদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে সরকার একটি আইন করছে ওই আইনে খাদ্যশস্যকে ভিন্ন বা কাল্পনিক নামে বাজারজাত করলে সেটা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। চালের বস্তার গায়ে মিনিকেট লিখলে ৫ বছরের কারাদন্ড হবে।
বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, বাজারে বহুল প্রচলিত মিনিকেট বলে কোনো চাল নেই। মিনিকেটের নামে ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। এই প্রতারণা বন্ধ করার আহ্বান জানান খাদ্যমন্ত্রী।
খাদ্যমন্ত্রীর এ বক্তব্যে মিলাররা প্রথমে মৃদু প্রতিবাদ করেন। তাদের প্রতিবাদ দেখে খাদ্যমন্ত্রী আরও কঠোর হয়ে বলেন, আপনারা মিনিকেটের প্রতারণা বন্ধ না করলে সরকার কঠোর হবে।
খাদ্যমন্ত্রীর কঠোর অবস্থানের কারণে মিলারদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। হল রুমে উপস্থিত মিলাররা একে অপরকে দোষারোপ করতে থাকেন। মঞ্চে উপস্থিত মিলমালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ দেশের বড় বড় মিলমালিকরা বিব্রত হচ্ছিলেন।
এই অবস্থায় বক্তৃতা দিতে ডাকা হয় সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরুকে। প্রতিমন্ত্রীর নাম শুনে সবার মধ্যে কৌতূহল চরমে। সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এখানে কেন। প্রতিমন্ত্রী নিজেই কৌতূহল মেটালেন। মঞ্চে উঠেই তিনি ঘোষণা দেন তার একটি চালকল আছে। তিনি চালকল মিলমালিক সমিতির উপদেষ্টাও।
মিলমালিক হয়েও আশরাফ আলী খান খসরু মিলমালিকদের বিপক্ষে অবস্থান নেন। সভায় প্রতিমন্ত্রী বলেন, চালের বাজারে দুটি মিথ্যা তথ্য প্রচলিত। একটি হচ্ছে মিনিকেট, আরেকটি হচ্ছে মিলাররা চাল কেটে সরু করেন। মিনিকেট নামে কোনো জাত নেই আর চাল সরু করাও সম্ভব না। চাল সরু করতে গেলে ভেঙে যায়। তবে বিভিন্ন মেশিনের মাধ্যমে পোলিশ করে চাল চকচক করা হয়।
ওই বৈঠকেই খাদ্যমন্ত্রী ঘোষণা দেন মিলমালিকদের এ দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে সরকার একটি আইন করছে। প্রস্তাবিত আইনটি পাস হলে মিলারসহ, পরিবহন, বিপণন এমনকি মজুদদারদের কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়তে হবে। সরকার বাধ্য হয়ে এ ধরনের আইন করতে যাচ্ছে।
পরে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ‘খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন, ২০২২’ মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন হয়েছে। সেখান থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। গত মার্চ মাসে আইনটি অনুমোদন হলেও এখনো ভেটিং শেষ হয়নি।
খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, খসড়া আইনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনটির যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে বাজারে খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক ও বাজারে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে। এ আইনে অপরাধীদের শনাক্ত করে সহজেই শাস্তির আওতায় আনা যাবে।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, কোনো স্বীকৃত জাতের খাদ্যশস্যকে ভিন্ন বা কাল্পনিক নামে বাজারজাত করে ক্রেতাকে প্রতারিত করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ অপরাধের শাস্তি ৫ বছরের কারাদন্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, মিনিকেট কোনো জাত না। ভারত সরকার নতুন উদ্ভাবিত ধানের বীজ ছোট বা মিনি প্যাকেটে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে দেয়। সেই বীজধান আশির দশকে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতেও আসে। মিনি প্যাকেটে দেওয়া নতুন ধরনের ধানের একসময় নাম হয়ে যায় মিনিকেট। কাজেই মিনিকেট নাম ব্যবহার করা প্রতারণা। নতুন আইনে এ প্রতারণার কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
বর্তমান আইনে রূপক নাম ব্যবহারের কী শাস্তি দেওয়া হয় জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান আইনে এটা অপরাধ হিসেবে দেখা হয় না। এই ফাঁকফোকর বন্ধ করার জন্যই ‘দ্য ফুড গ্রেইন্স সাপ্লাই’ (প্রিভেনশন অব প্রিজুডিক্যাল অ্যাকটিভিটি) অর্ডিনেন্স, ১৯৭৯ এবং ‘দ্য ফুড’ (স্পেশাল কোর্টস) অ্যাক্ট, ১৯৫৬ যুগোপযোগী করে নতুন আইন হিসেবে প্রণয়ন করা হচ্ছে।
যেকোনো স্থানে সরকারঘোষিত পরিমাণের বেশি খাদ্যশস্য মজুদ রাখা এবং খাদ্যশস্যের হিসাব কর্তৃপক্ষকে দেখাতে ব্যর্থ হওয়া অপরাধ। অনেক মিলমালিকই পুরনো চাল পলিশ করে সরকারি গুদামে সরবরাহ করে। খসড়া আইনে এটাকেও গুরুতর অপরাধ হিসেবে ধরা হয়েছে।
খাদ্য অধিপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বড় অনেক কোম্পানি রয়েছে যারা চালের ব্যবসা করেন। সম্প্রতি অভিযানের সময় এমন অনেক কোম্পানির নাম এসেছে যারা চাল উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে কোনোভাবেই কাজ করে না। কোম্পানিগুলো তাদের প্যাকেট ঢাকায় প্রিন্ট করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের চালের মিলগুলোতে দিয়ে আসে। সেসব মিল নামকরা কোম্পানির মনোগ্রামখচিত প্যাকেটে চাল ভরে রাখে। পরে বড় বড় কোম্পানির গাড়ি গিয়ে ওসব চালের প্যাকেট সারা দেশে বিক্রি করে। এই প্রক্রিয়ায় বড় কোম্পানিগুলোর কোনো অংশগ্রহণ থাকে না। খসড়া আইনে এটা অপরাধ হিসেবে দেখানো হয়েছে এবং ৫ বছরের জেলের বিধান করা হয়েছে।
খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমরা অভিযানে বিভিন্ন মিলে বড় বড় বেসরকারি কোম্পানির প্যাকেট পাই। তারা ওসব মিলে প্যাকেট দিয়ে আসে। এটাও অপরাধ।’
খসড়া আইনে আরও বলা রয়েছে, সরকারি গুদামের খাদ্যশস্যভর্তি বস্তা পুনরায় সরকারের কাছে বিক্রি করা, সরকারি গুদামের সিলযুক্ত চাল বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেলে শাস্তি হবে। প্রকল্পে বিতরণকৃত চাল পরিমাণে কম দেওয়া, উপকারভোগী ছাড়া অন্য কাউকে দিলেও শাস্তি হবে।
সাবেক খাদ্য সচিব আবদুল লতিফ মন্ডল দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার চালের জন্য আর কতকাল মিলমালিকদের ওপর নির্ভর করবে। উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে স্থানীয় বাজার থেকে খাদ্যশস্য কিনলে সমস্যার সমাধান হতে পারে। এতে মৌসুমে বাজার চাঙ্গা থাকবে, কৃষক উপকৃত হবে এবং মিলারদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের (জাগৃক) চেয়ারম্যানের নামে রয়েছে ২৭১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। বিভিন্ন প্রকল্পের নামে ও স্থায়ী আমানত রাখার জন্য এসব ব্যাংক হিসাব পরিচালিত হচ্ছে। এসব ব্যাংক হিসাবের ১০৩টি চলতি হিসাবের আর ১৬৮টি স্থায়ী আমানতের হিসাব।
একটি ব্যাংকেই রয়েছে ৬৫টি অ্যাকাউন্ট। এসব হিসাব গত ৭ থেকে ৮ বছর ধরে পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকল্পের জামানত ও কিস্তি সংগ্রহের জন্য এগুলো খোলা হয়েছিল। অনেক প্রকল্প সমাপ্ত হয়ে গেলেও ব্যাংক হিসাব চলমান রয়েছে। এগুলোর জন্য বাৎসরিক চার্জ হিসেবে গুনতে হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায় আর গৃহায়নের চেয়ারম্যানদের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের পছন্দে এসব অ্যাকাউন্ট খোলা হয়ে থাকে। অনেক হিসাব চলমান না থাকলেও কেউ দায়িত্ব নিয়ে তা বন্ধ করছে না। গৃহায়নের শীর্ষ কর্তারাও স্বীকার করেন, ‘এরকম অস্বাভাবিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা উচিত নয়।’ স্বীকার পর্যন্তই! পরের পদক্ষেপের উদ্যোগ নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. দেলওয়ার হায়দার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এতগুলো অ্যাকাউন্ট থাকা উচিত না। কিছু অ্যাকাউন্ট হলেই চলে। আমাদের ৩২টি প্রকল্প রয়েছে; তাই ৩২টি অ্যাকাউন্ট হলে কাজের সুবিধা হবে। আলাদা প্রকল্পের জন্য আলাদা অ্যাকাউন্ট প্রয়োজন হয়। তাহলে এক প্রকল্পের টাকা অন্য প্রকল্পের টাকার সঙ্গে মিলে যাবে না। হয়তো এই কারণেই বেশি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তবে আমি মনে করি এমনটি হওয়া উচিত না।’
কোন ব্যাংকে কত অ্যাকাউন্ট : এক যুগের বেশি সময় ধরে কিছু ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে যেখানে কোনো লেনদেন নেই, তবু তা সচল। অনেক অ্যাকাউন্ট আছে যা প্রকল্পের জন্য খোলা হয়েছে, সেই প্রকল্প সমাপ্ত হলেও অ্যাকাউন্ট চলছে। বেসিক ব্যাংকের একাধিক শাখায় রয়েছে ৬৫টি চলতি হিসাব। এ ছাড়া ওয়ান ব্যাংকে ১৯টি, ঢাকা ব্যাংকে ৩টি, জনতা ব্যাংকে ১২টি, মার্কেন্টাইল ব্যাংকে ১৭টি, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে ৩টি, মধুমতি ব্যাংকে ৫টি, এনআরবি ব্যাংকে ১টি, অগ্রণী ব্যাংকে ১৫টি, এবি ব্যাংকে ৫টি, ন্যাশনাল ব্যাংকে ৪টি, সোনালী ব্যাংকে ৪টি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে ২টি, আইএফআইসি ব্যাংকে ১০টি, যমুনা ব্যাংকে ২টি, প্রাইম ব্যাংকে ৩টি, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে ৫টি, উত্তরা ব্যাংকে ১টি এবং সরকারি-বেসরকারি আরও ২৩টি ব্যাংকে যেমন রূপালী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, প্রাইম ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, আইএসআইবিএল ব্যাংক, ইউসিবিএল ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকে ১০৪টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। মোট ২৭১টি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাওয়া গেছে।
যেভাবে অ্যাকাউন্টের টাকা যাচ্ছে ব্যাংকের পকেটে : চলতি বছরে সরকারের শুল্ক-কর আদায়কারী সংস্থা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পক্ষে ব্যাংকগুলো পঞ্জিকাবর্ষ (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) ধরে আবগারি শুল্ক কেটে রাখছে। কোনো গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যদি ১ লাখ টাকার কম টাকা থাকে তাহলে কোনো আবগারি শুল্ক কাটা হয় না। তবে ১ লাখ থেকে ৫ লাখ পর্যন্ত টাকা থাকলে ১৫০ টাকা ও ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত থাকলে ৫০০ টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হয়। ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা থাকলে ৩ হাজার টাকা, ১ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা থাকলে ১৫ হাজার টাকা এবং ৫ কোটি টাকার ওপরে থাকলে ৪০ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপ করা হয়।
১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা হলে ৩ হাজার টাকা ধরে হিসাব করলে ২৭১ ব্যাংক হিসাবের বার্ষিক আবগারি শুল্ক হয় ৮ লাখ ১৩ হাজার টাকা। ১ কোটি টাকা থেকে ৫ কোটি টাকা হলে ১৫ হাজার টাকা ধরে ২৭১ হিসাবের বার্ষিক আবগারি শুল্ক হয় ৪০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। ৫ কোটি টাকার ওপরে হলে ৪০ হাজার টাকা ধরে ২৭১ হিসাবের বার্ষিক আবগারি শুল্ক হয় ১ কোটি ৪ লাখ টাকা। গৃহায়নের ব্যাংক হিসাবের বেশিরভাগ কোটি টাকার ওপরে। অ্যাকাউন্ট চার্জ বাবদ তাদের প্রায় কোটি টাকা ব্যাংকগুলোর কোষাগারে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করে গৃহায়নের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এমন অস্বাভাবিক ব্যাংক হিসাব থাকার মূল কারণ যখন যে চেয়ারম্যান বা প্রশাসন শাখার পদস্থ কর্মকর্তা দায়িত্বে থাকেন তখন তাদের পছন্দে ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবের সুপারিশেও বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা জমা রাখা হয়। এসব ব্যাংকে জামানত রাখার বিনিময়ে সংশ্লিষ্টরা নানান সুযোগ-সুবিধাও নিয়ে থাকেন। এ কারণে এসব হিসাব চলমান না থাকলেও কেউ দায়িত্ব নিয়ে বন্ধ করে না। বছরের পর বছর এসব অ্যাকাউন্টে লেনদেন না হলেও গৃহায়নের কোষাগার থেকে ব্যাংকগুলোকে নানা ধরনের ফি দিতে হচ্ছে। সরকারি আর কোনো সংস্থায় এত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই বলেও জানান তারা।
চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মো. রফিকুল্লাহ পাটোয়ারীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় শহরের নতুন বাজার এলাকায় তার নিজ বাসায় এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়।
নিহত রফিকুল্লাহ পাটোয়ারী চাঁদপুরে সর্বজন শ্রদ্ধেয় হেদায়েত উল্লাহ কোম্পানির ছেলে। তারা ছয় ভাই, পাঁচ বোন। ব্যক্তিজীবনে তিনি অবিবাহিত ছিলেন। ঠিকাদারি ব্যবসার পাশাপাশি একটি বরফকলের মালিক ছিলেন।
পুলিশ জানায়, মাগরিবের নামাজ পড়ে রফিকুল্লাহ বাসায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। কিছুক্ষণ পর তার বাসার তত্ত্বাবধায়ক মিরাজ কক্ষে ঢুকে তার ক্ষতবিক্ষত দেহ দেখতে পেয়ে চিৎকার করে ওঠেন। আশপাশের লোকজন ছুটে গিয়ে রফিকুল্লাহকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরীক্ষা করার পর দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
চাঁদপুর সদর হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক সাগর চৌধুরী জানান, নিহত রফিকুল্লাহর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তার শরীরের বাঁ দিকে একটি ছুরি ঢোকানো ছিল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
ষাটোর্ধ্ব রফিকুল্লাহর মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে যান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নাছির উদ্দীন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটোয়ারী দুলাল, পৌর মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েলসহ দলীয় নেতাকর্মীরা।
সেখানে সুজিত রায় নন্দী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে নিহত রফিকুল্লাহ কোম্পানির পরিবারের অপরিসীম অবদান রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে তার বড় ভাই শহীদ জাবেদকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আজকে তারই ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল্লাহকে এভাবে হত্যা করা হলো। তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শান্তিপ্রিয় চাঁদপুর শহরে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড কখনোই ঘটেনি। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের আমরা বিচার চাই।’
আওয়ামী লীগ নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের কারও সাথেই নিহত রফিকুল্লাহ কোম্পানির কোনো প্রকার খারাপ সম্পর্ক ছিল না। সবার সাথে তিনি হাসিখুশিভাবে চলাফেরা করতেন।’
আওয়ামী লীগ নেতা আবু নঈম পাটোয়ারী দুলাল বলেন, ‘ব্যক্তিজীবনে রফিকুল্লাহ পাটোয়ারী সজ্জন মানুষ ছিলেন। কারও সাথে কোনো বিরোধ ছিল বলে জানা নেই। প্রশাসনকে অনুরোধ করব সামনে যেহেতু নির্বাচন রয়েছে তার আগে শহরকে উত্তপ্ত করার জন্য এই হত্যাকাণ্ড দুষ্কৃতকারীদের উসকানিমূলক কাজ কি না বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত। এখন আমরা রাজনৈতিকভাবে অনেকেই আতঙ্কিত।’
নিহতের ভাগ্নে সফিকুর রহমান খান জানান, মাগরিবের নামাজ পড়ে তারা নিচতলার একটি কক্ষে ছিলেন। হঠাৎ ওপর তলা থেকে কেয়ারটেকার মিরাজের চিৎকার শুনে ওপরে যান। সেখানে মামা রফিকুল্লাহকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।
নিহত আওয়ামী লীগ নেতার আরেক ভাগ্নে ফাহিম শাহরিন কৌশিক বলেন, ‘মামার কাছে প্রায়ই ফর্সা, লম্বা করে এক লোক টাকা চাইতে আসতেন। তিনি মাঝে মাঝেই আসতেন, কিন্তু তাকে চিনি না। রাজনৈতিকভাবে মামার কারও সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব ছিল কি না তা জানি না।’
নিহতের ছোট ভাই মো. নাসিরউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘মাগরিবের নামাজের পর বড় ভাইয়ের খুন হওয়ার খবর পাই। বাড়িতে গিয়ে দেখি দোতলায় নিজ কক্ষে ভাইয়ের রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে।’
রফিকুল্লাহ পাটোয়ারীর হত্যার খবর পেয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আসিফ মহিউদ্দিন ও সদর মডেল থানার ওসি আ. রশিদসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে এটি একটি হত্যাকাণ্ড। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করা হয়েছে। আমরা অতি দ্রুত এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করছি।’
ফুটবল টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে গিয়ে ট্রফি বিতরণ না করে সবার সামনে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলের ট্রফি আছড়ে ভেঙে ফেলার অভিযোগ উঠেছে বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহরুবা ইসলামের বিরুদ্ধে। গত শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে চৈক্ষং ইউনিয়নের রেপারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
ট্রফি ভাঙার দৃশ্যের একটি ভিডিও ক্লিপ ওই দিন রাতেই ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ইউএনওকে নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। এমন আচরণ করায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় একাধিক জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
ট্রফি ভেঙে ফেলার প্রতিবাদ জানিয়ে আলীকদম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম তার ভেরিফাইড ফেইসবুক পেজে ইউএনও মেহরুবা ইসলামকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। আবুল কালাম বলেন, ‘ফুটবল খেলার টাইব্রেকারে একটা দলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। খেলায় অংশগ্রহণকারীরা বলেছিলেন, টাইব্রেকারের মধ্যে ত্রুটি আছে, তারা পুনরায় খেলাটা চায়। তখন ইউএনও বক্তব্য দিচ্ছিলেন। বক্তব্যের সময় ইউএনও নিজেই ট্রফিগুলো ভেঙে ফেলেন।’
জানা গেছে, স্থানীয় সামাজিক সংগঠন আবাসিক স্বাধীন যুব সমাজ ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে। ওই টুর্নামেন্টে শুক্রবার রেপারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জুনিয়র একাদশের সঙ্গে রেপারপাড়া বাজার একাদশ ফুটবল দলের ফাইনাল খেলা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আলীকদমের ইউএনও মেহরুবা ইসলাম। খেলার সমাপনী বক্তব্যের সময় হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে উপস্থিত সবার সামনে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলের ট্রফি আছড়ে ভেঙে ফেলেন তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউএনও মেহরুবা ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, ‘খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণের সময় হঠাৎ একজন এসে বললেন যে তিন গোল চার গোল তারা মানে না। তখন আমি বললাম, খেলা আবার হবে কি না। তখন এটা নিয়ে পেছন থেকে খুব আওয়াজ শুরু হলো, তারা ট্রফি নেবে না। তারাই বলল, ট্রফি যত দিন থাকবে, একটা আক্রোশ থাকবে। তারা বলল, ট্রফি ভেঙে ফেলা হোক। পরে আমি বললাম, তাহলে ঠিক আছে আপনারা মেডেলগুলো নিয়ে যান।’
ইউএনও আরও বলেন, ‘তারা সেগুলোও (মেডেল) না নেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। ওরাই বলছে ট্রফিটা ভেঙে ফেলা হোক। তাই ভেঙে ফেলা হয়েছে। ওখানে বহিরাগত কিছু ছেলে এসেছিল। স্থানীয় চেয়ারম্যানও তাদের চেনেন না বলে জানিয়েছেন।’
তবে আলীকদম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল কালামের মতে, ট্রফিগুলো ভাঙা ইউএনওর উচিত হয়নি। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খেলার আয়োজকরা চাঁদা তুলে ট্রফিগুলো কিনেছে। এখনো নাকি ২৭ হাজার টাকার মতো বকেয়া আছে। এসব অনুষ্ঠানে গেলে আয়োজকদের কমপক্ষে ২০-৩০ হাজার টাকা দিই, যাতে ট্রফি ও মেডেল কিনতে পারে। এ জন্য আমরা সহযোগিতা করি। কিন্তু এখানে তাদের কোনো সহযোগিতা না করে উল্টো ট্রফি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ রকম করাটা উচিত হয়নি। সেখানে তিন-চারজন জনপ্রতিনিধিও ছিল।’
ইউএনও মেহরুবা ইসলামের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে উপজেলা চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘দুই দিন আগে পার্কিং করা অবস্থায় দুটি মোটরসাইকেল আনসারদের ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি (ইউএনও)। এ বিষয়টিও আমি আমার ফেইসবুক পেজে তুলে ধরেছি। ইউএনওর ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে।’
ইউএনও মেহরুবা ইসলামের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘটনাটি দুঃখজনক। এ রকম আচরণ করার কথা নয়। বিতর্ক থাকলে ট্রফি না ভেঙে নিজের হেফাজতে রেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারতেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হওয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের ভোটেই ক্ষমতায় আসে। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কখনো কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেনি; বরং আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের ভোটেই ক্ষমতায় আসে।’ জাতিসংঘের ৭৭তম অধিবেশনে যোগদান শেষে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, যারা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চেয়েছিলেন তারা কারা? আওয়ামী লীগ সব সময় দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছে।
শেখ হাসিনা স্পষ্টভাবে নিশ্চিত করেছেন যে জনগণ নির্বাচনে অবাধে তাদের ভোট দেবে এবং বিএনপিকে আশ্বস্ত করেছেন যে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, তারা (বিএনপি) সত্যিই চিন্তিত যে একটি স্বচ্ছ নির্বাচন হবে। কারণ, তারা ভোট কারচুপি এবং ভোটার তালিকায় ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার রাখার সুযোগ পাচ্ছে না। অন্যথায় উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, যারা জনগণের ভোট পেয়ে ক্ষমতায় আসেননি, নির্বাচন নিয়ে জনগণের প্রশ্নে এত গুরুত্ব দেওয়ার কী আছে, তিনি জানেন না। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে জনগণ নির্বিঘেœ ভোট দেবে, ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন এমন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।’
নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি, এটা তাদের দলের সিদ্ধান্ত। তারা জানে যে সঠিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায় আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। তারা হত্যা, অভ্যুত্থান ও ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় আসতে অভ্যস্ত। এটাই বাস্তবতা।’
প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছে। যদি কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারায়, তাহলে কার কী করার আছে?’
আওয়ামী লীগ সরকার দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সঠিক পথে এনেছে, যা সামরিক শাসন ও বিএনপি-জামায়াতের আমলে লাইনচ্যুত হয়েছিল বলে দাবি করেন শেখ হাসিনা।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইভিএম একটি আধুনিক পদ্ধতি এবং বিশে^র অনেক দেশেই এটি ব্যবহৃত হয়। আমরা দেখেছি যেখানে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে দ্রুত নির্বাচনের ফলাফল পাওয়া যায় এবং মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের ভোট দিতে পারে।’
শেখ হাসিনা অবশ্য বলেছেন, এই ইভিএমের বিরুদ্ধে কিছু লোক আছে, এটা ঠিক।
বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংকট ও বিরোধ নিরসনে সংলাপের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে শান্তিপূর্ণ বিশ^ গড়তে অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞা বন্ধ করতে বিশ^সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব বিবেকের কাছে আমার আবেদন, অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ, স্যাংশন বন্ধ করুন। শিশুকে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা দিন। শান্তি প্রতিষ্ঠা করুন।’ গত শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেলে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বরাবরের মতো এবারও বাংলায় ভাষণ দেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইউক্রেন ও রাশিয়ার সংঘাতের অবসান চাই। নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে একটি দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে নারী, শিশুসহ ও গোটা মানবজাতিকেই শাস্তি দেওয়া হয়। এর প্রভাব কেবল একটি দেশেই সীমাবদ্ধ থাকে না; বরং সব মানুষের জীবন-জীবিকা মহাসংকটে পতিত হয়।’
কভিড-১৯ মহামারী প্রাদুর্ভাবের পর এই প্রথম ১৯৩টি সদস্য দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সশরীরে উপস্থিতির মাধ্যমে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশন ১৩ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে সংস্থার সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই অধিবেশন এমন একসময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার সঙ্গে বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন, সহিংসতা ও সংঘাত, কভিড-১৯ মহামারীর মতো একাধিক জটিল এবং বহুমাত্রিক প্রতিকূলতায় পৃথিবী নামক আমাদের এই গ্রহ আজ জর্জরিত। মানবিক চাহিদা গভীর হচ্ছে, জলবায়ু লক্ষ্যগুলো মূলত অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে, বৈষম্য আরও প্রকট হচ্ছে।’
তিনি বলেন, বিশ্বনেতারা সাধারণ পরিষদ হলে ব্যক্তিগতভাবে বিবৃতি বিনিময় করবেন, ‘একটি সংকটপূর্ণ সন্ধিক্ষণ : আন্তঃসংযুক্ত প্রতিকূলতাগুলোর রূপান্তরমূলক সমাধান’ শীর্ষক এবারের প্রতিপাদ্যে এসব প্রতিকূলতা মোকাবিলা এবং আমাদের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করে শান্তিপূর্ণ ও টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলার উপায় খুঁজে বের করার জন্য সবার ঐক্যবদ্ধ আকাক্সক্ষার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
শেখ হাসিনার ভাষণে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, শান্তি ও স্থিতিশীলতা, জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা, কভিড-১৯ মহামারী, ফিলিস্তিন এবং অভিবাসনবিষয়ক বৈশি^ক ও বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি স্থান পেয়েছে।
‘গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ’ গঠন করায় জাতিসংঘের মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই গ্রুপের একজন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে, আমি বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্ব ও সংকটের গভীরতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি বৈশি^ক সমাধান নিরূপণ করতে অন্য বিশ্বনেতাদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি জাতির পিতার রেখে যাওয়া পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’-এর উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ জন্মলগ্ন থেকেই এই প্রতিপাদ্য-উদ্ভূত জোটনিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করে আসছে। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জাতির পিতার দেওয়া ভাষণের একটি চুম্বকাংশ শেখ হাসিনা উদ্ধৃত করেন। জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘শান্তির প্রতি যে আমাদের পূর্ণ আনুগত্য তা এই উপলব্ধি থেকে জন্মেছে যে একমাত্র শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই আমরা আমাদের কষ্টার্জিত জাতীয় স্বাধীনতার ফল আস্বাদন করতে পারব এবং ক্ষুধা, দারিদ্র্য, রোগ-শোক, অশিক্ষা ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য আমাদের সকল সম্পদ ও শক্তি নিয়োগ করতে সক্ষম হব।’ তিনি বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর এই বক্তব্য এখনো সমভাবে প্রাসঙ্গিক।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ২০১৯ সালে পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ বিষয়ক ঐতিহাসিক চুক্তি অনুস্বাক্ষর করি। আমাদের শান্তিকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতির প্রতিফলন হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সৈন্য ও পুলিশ প্রেরণকারী দেশগুলোর মধ্যে আমরা বর্তমানে শীর্ষে অবস্থান করছি।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘ ও বিশ্বনেতাদের কার্যকর ভূমিকা কামনা : প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘ এবং বিশ্বনেতাদের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সমস্যা অব্যাহত থাকলে তা এই অঞ্চল এবং এর বাইরেও স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করতে পারে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি আরও বলেন, ‘গত মাসে ২০১৭ সালে স্বদেশ থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে রোহিঙ্গাদের গণহারে বাংলাদেশে প্রবেশের পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরিতে দ্বিপক্ষীয়, ত্রিপক্ষীয় এবং জাতিসংঘসহ অন্যান্য অংশীজনের নিয়ে আলোচনা সত্ত্বেও একজন রোহিঙ্গাকেও তাদের মাতৃভূমিতে ফেরত পাঠানো যায়নি। মিয়ানমারে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সশস্ত্র সংঘাত বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনকে আরও দুরূহ করে তুলেছে। আশা করি, এ বিষয়ে জাতিসংঘ কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘায়িত উপস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। তাদের প্রত্যাবাসনের অনিশ্চয়তা সর্বস্তরে ব্যাপক হতাশার সৃষ্টি করেছে। মানব পাচার ও মাদক চোরাচালানসহ আন্তঃসীমান্ত অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি এ পরিস্থিতি উগ্রবাদকেও ইন্ধন দিতে পারে।’
জলবায়ু ইস্যুতে ধনী দেশগুলোর ভূমিকা ‘দুঃখজনক’ : জলবায়ু ইস্যুতে ধনী দেশগুলোর অর্থবহ পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থতাকে ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী দেশগুলো জোরালো বক্তব্য রাখলেও পরিস্থিতির গুরুত্বের সঙ্গে তাদের কার্যক্রম সংগতিপূর্ণ নয়।’ নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ‘তারা শুধু কথা বলে, কিন্তু কাজ করে না। অথচ তারাই এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। এটা ধনী ও উন্নত দেশগুলোর দায়িত্ব। তাদেরই এই ইস্যুতে এগিয়ে আসা উচিত। কিন্তু আমরা তাদের দিক থেকে সেই ধরনের কোনো সাড়া পাচ্ছি না। এটাই দুঃখজনক। আমি জানি, ধনী দেশগুলো আরও ধনী হতে চায়। তারা অন্যদের নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে সংযোজন করে এএফপি উল্লেখ করেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে ঘন জনবসতিপূর্ণ ডেলটা ও নিম্নাঞ্চলীয় বাংলাদেশ বিশে^র সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ।
এএফপি আরও বলেছে, বাংলাদেশ পৃথিবীকে উষ্ণায়নের জন্য দায়ী খুবই সামান্য পরিমাণ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ করে।
প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা করে টিকে থাকার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করতে ২০২০ সাল নাগাদ বছরে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার চাওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার মতে, ওই বছর, বেসরকারি মাধ্যমসহ ৮৩.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
ফরাসি বার্তা সংস্থা পূর্বাভাসে জানিয়েছে, নভেম্বরে মিসরে অনুষ্ঠেয় পরবর্তী জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনটি সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে তা হলো, ধনীদেশগুলোকে অভিযোজন ও প্রশমন ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতির জন্যও অর্থ দিতে হবে কিনা।
এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই যে তহবিলটি আরও বৃদ্ধি হোক। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে আমরা উন্নত দেশগুলার কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি না।’
এএফপি জানিয়েছে যে ধনী দেশগুলো ২০২৪ সাল পর্যন্ত শুধু ক্ষয়ক্ষতির ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য সম্মত হয়েছে।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানা থেকে একটি ইজিবাইকে দিনাজপুর সদর উপজেলার খোয়ারের মোড়ে আত্মীয়ের বাসায় আসছিলেন মোহাম্মদ আলী, তার শ্যালক আজগার হোসেন ও মকবুল আলী। পথে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ইজিবাইক থেকে নেমে যান তারা। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে সড়কের পাশে ফুটপাতে নিজেদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু করেন। এ সময় দিনাজপুর শহরমুখী একটি মালবাহী ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাদের ওপর উঠে পড়ে। এতে মোহাম্মদ আলী (৬৫), তার শ্যালক আজগার হোসেন (৩৫) নিহত হন। গুরুতর আহত হন আরেক শ্যালক মকবুল আলী (৪০)। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল শনিবার এই দুর্ঘটনা ঘটে।
এদিকে গতকাল শনিবার বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় নারী-শিশুসহ আরও চারজন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় বাস, ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে এক নারী ও কালিহাতীতে রাস্তা পার হওয়া সময় এক পথচারী নিহত হয়েছেন। মাগুরা সদর উপজেলার বাহারবাগ এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় নসিমনের ধাক্কায় ৪ বছরের শিশু নিহত হয়েছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ট্রলি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে জিহাদ নামে এক শিশু প্রাণ হারিয়েছে। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে
টাঙ্গাইলে ২ জন নিহত : ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গায় বাস, ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে এক নারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছে ৫ জন। এদের মধ্যে সিএনজিচালিত অটোরিকশার এক নারী যাত্রীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে পুলিশ। আহতদের টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত আমেনা বেগম (৩০) ঘাটাইল উপজেলার বাহুন্দা গ্রামের হামিদ আলীর স্ত্রী।
এদিকে কালিহাতীতে রাস্তা পার হওয়া সময় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় এক পথচারী নিহত হয়েছেন। তার নাম ইদ্রিস আলী (৬৫)। তিনি কালিহাতী পৌর এলাকার মৃত হাফেজ আলীর ছেলে। তিনি কালিহাতী পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিদ্দিক হোসেনের বড় ভাই। শুক্রবার রাতে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কালিহাতী থানার পাশে এ ঘটনা ঘটে।
মাগুরায় নসিমনের ধাক্কায় ৪ বছরের শিশু নিহত : মাগুরা সদর উপজেলা বাহারবাগ এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় নসিমনের ধাক্কায় ৪ বছরের শিশু নিহত হয়েছে। তার নাম হানজালা। গতকাল শনিবার সকালে বাহারবাগ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
মাগুরা সদর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাহারবাগ এলাকা থেকে একটি নসিমন ইট নিয়ে মাগুরায় আসছিল। এসময় শিশুটি রাস্তা পার হতে গিয়ে চলন্ত গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে গুরুতর আহত হয়। পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসাপাতালে নিয়ে এলে জরুরি বিভাগের ডাক্তার আশরাফুল ইসলাম মৃত ঘোষণা করে।
পটুয়াখালীতে ট্রলি, ইজি বাইকের সংঘর্ষ নিহত ১ : পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ট্রলি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে জিহাদ (১২) নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে উপজেলার বালিয়াতলী ইউনিয়নের মুসুল্লিয়াবাদ গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছে আরও ৬ জন। এরমধ্যে মধ্যে মুক্তা বেগম (৪০) নামে এক নারীর দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আহতদের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আহতরা জানায়, ৬ যাত্রী নিয়ে অটোরিকশাটি চাপলীবাজার থেকে কলাপাড়ার উদ্দেশে আসতেছিল। মুসুল্লিয়াবাদ এলাকায় পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রলি মুখোমুখি হয়ে আটোরিকশাটিকে চলন্ত অবস্থায় ধাক্কা মারে।
কলাপাড়া থানার ওসি মো. জসিম জানান, আহতদের উদ্ধার করে বরিশাল পাঠানো হয়েছে। ট্রলিটি আটক রয়েছে। পলাতক চালককে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষে থাকা আর্সেনালের সঙ্গে পয়েন্ট ব্যবধান কমিয়ে আনার সুযোগ ছিল ম্যানচেস্টার সিটির। আজ বড় সেই সুযোগটা তারা হাতছাড়া করেছে। হ্যারি কেইনের রেকর্ড গড়া গোলে টটেনহামের বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে গেছে পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা।
বল দখলে সিটি শুরু থেকে একচেটিয়া আধিপত্য দেখিয়ে আসছিল। তবে ম্যাচের ১৫ মিনিটে সিটির রক্ষণের ভুলে বল পেয়ে টটেনহামকে এগিয়ে দেন কেইন। সিটির ডিফেন্ডার মানুয়েল আকনজির দুর্বল পাসে বল পেয়ে বক্সে ঢুকে পিয়া-এমিল হয়বিয়া বাড়ান কেইনকে। প্রথম স্পর্শে ডান পায়ের শটে গোলটি করেন ইংলিশ ফরোয়ার্ড।
এই গোলে তিনি টটেনহামের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলের মালিক হয়ে গেছেন। ২৬৭ গোল করে তিনি পেছনে ফেলেছেন টটেনহাম কিংবদন্তি জিমি গ্রিভসকে। ১৯৭০ সাল থেকে এই রেকর্ড নিজের করে রেখেছিলেন গ্রিভস।
ছন্দে থাকা সিটির তরুণ ফরোয়ার্ড আর্লিং হলান্ড এ দিন পুরোটা সময় নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন। তার দিনটা আজ ভালো কাটেনি। গোল করার তেমন কোনো সুযোগই পাননি সিটির এই নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার।
এই হারে যদিও লিগ টেবিলে সিটির অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে আজ জিতে গেলে আর্সেনালের সঙ্গে পয়েন্টের ব্যবধানটা কমিয়ে আনতে পারত তারা। ২১ ম্যাচ খেলে ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ৪৫। একটি ম্যাচ কম খেলে আর্সেনালের পয়েন্ট ৫০। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে ম্যানচেস্টার সিটির মুখোমুখি হবে আর্সেনাল। ২২ ম্যাচে ৩৯ পয়েন্ট নিয়ে টটেনহামের অবস্থান পঞ্চম। তৃতীয় স্থানে আছে নিউক্যাসল ইউনাইটেড (৪০ পয়েন্ট)।
অপেক্ষার অবসান হলো। হ্যারি কেইনের হাত ধরে যেন জিমি গ্রিভস সাম্রাজ্যের সাম্রাজ্যের পতন হলো। ৫৩ বছর ধরে যে রেকর্ড তিনি দখল করে রেখেছিলেন। সেটাই আজ ভাঙলেন হ্যারি কেইন। প্রিমিয়ার লিগের ইংলিশ ক্লাব টটেনহামের সর্বোচ্চ গোলের মালিক এখন হ্যারি।
রাতে ম্যানচেস্টার সিটিকে ১-০ গোলে হারিয়েছে টটেনহাম। জয়সূচক একমাত্র গোলটি করেছেন ইংলিশ অধিনায়ক কেইন। ম্যাচের ১৫ মিনিটে সিটির ডিফেন্ডার মানুয়েল আকনজির দুর্বল পাসে বল পেয়ে বক্সে ঢুকে পিয়া-এমিল হয়বিয়া বাড়ান কেইনকে। প্রথম স্পর্শে ডান পায়ের শটে গোলটি করেন ইংলিশ ফরোয়ার্ড।
আর এই গোলে তিনি টটেনহামের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলের মালিক হয়ে গেছেন। ২৬৭ গোল করে তিনি পেছনে ফেলেছেন টটেনহাম কিংবদন্তি জিমি গ্রিভসকে। ১৯৭০ সাল থেকে এই রেকর্ড নিজের করে রেখেছিলেন গ্রিভস।
লন্ডনের ক্লাব টটেনহাম হটস্পার দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে কোনো শিরোপা জেতে না। তবুও ইংলিশ লিগে তারাই সেরা দল। দলটির অন্যতম ভরসার নাম হ্যারি কেইন। ইংলিশ এই স্ট্রাইকার ২০০৯ সালে যোগ দেওয়া ক্লাবটির হয়ে গড়ে চলেছেন একের পর এক রেকর্ড।
গত বছরের আগস্টে সার্জিও আগুয়েরোকে টপকে প্রিমিয়ার লিগে এক ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের কীর্তি গড়েন কেইন। গত ২৩ জানুয়ারি তিনি স্পর্শ করেছিলেন জিমি গ্রিভসকে। আজ ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে গোল করে তাকে ছাঁড়িয়ে যান তিনি। ভেঙে ফেলেন পাঁচ দশকের রেকর্ড।
রেকর্ডগড়া গোলে ম্যানসিটির বিপক্ষে টটেনহামকে জিতিয়ে ক্লাবটির ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা বনে যান কেইন। তিনি ছাড়িয়ে যান জিমি গ্রিভসকে। কেইনের বর্তমান গোল সংখ্যা ২৬৭। সঙ্গে লন্ডন ডার্বিতে সবচেয়ে বেশি গোলের (৪৮) রেকর্ডও তার দখলে।
এই ম্যাচে প্রিমিয়ার লিগে ৩০০ ম্যাচ খেলার রেকর্ডও ছুঁয়ে ফেলেছেন তিনি। সিটির বিপক্ষে গোল করে এই লিগে তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ২০০ গোল করার মাইলফলক স্পর্শ করেছেন কেইন। তার ওপরে আছেন শুধু অ্যালান শিয়ারার (২৬০) ও ওয়েন রুনি (২০৮)।
টটেনহাম ইতিহাসের শীর্ষ ৭ গোলদাতা
খেলোয়াড় |
গোল |
সময়কাল |
হ্যারি কেইন |
২৬৭ |
২০০৯-বর্তমান |
জিমি গ্রিভস |
২৬৬ |
১৯৬১-১৯৭০ |
ববি স্মিথ |
২০৮ |
১৯৫৫-১৯৬৪ |
মার্টিন গিভারস |
১৭৪ |
১৯৬৮-১৯৭৬ |
ক্লিফ জোন্স |
১৫৪ |
১৯৫৮-১৯৬৮ |
জারমেইন ডিফো |
১৪৩ |
২০০৩-২০০৮ |
সন হিউং-মিন |
১৩৯ |
২০১৫-বর্তমান |
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা খরচের হিসাব ধরে বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বেশি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে খরচের বেশিরভাগ অর্থ জোগাড়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৯ শতাংশ বাড়ানো হবে। আসছে জুনের প্রথমভাগে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী বাজেট হবে জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এখানে নেওয়া কোনো পদক্ষেপে যেন আওয়ামী লীগ সরকার সমালোচনার মুখে না পড়ে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের থাকছে বিশেষ নজর। এ ছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। তাই সংকট ও নির্বাচন দুটোই মাথায় রাখতে হচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে মোটাদাগে একটি রূপরেখা পাঠানো হয়েছে। নতুন পরিকল্পনার পাশাপাশি গত তিন মেয়াদে সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে আগামী বাজেট প্রস্তাবে তা মনে করিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি নীতিনির্ধারকদের উপস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো আগামী বাজেটের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে হিসাব ধরে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট প্রস্তাব প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে তা কয়েক দফা খতিয়ে দেখা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধন, যোগ-বিয়োগ করে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার আগেও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে।
ডলার সংকটে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পণ্যের দাম বাড়ছে। কাঁচামাল সংকটে বিপাকে শিল্প খাত। ব্যাংক খাতে অস্থিরতা। নতুন চাকরির সুসংবাদ নেই বললেই চলে। দফায় দফায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। খুব শিগগিরই এসব সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা। অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঋণদাতা সংস্থার কঠিন শর্তের বেড়াজালে আছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশি^ক অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবে তা আগামী বাজেটে স্পষ্ট করা হবে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও বলা হবে। তবে শত সংকটের মধ্যেও আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী যতটা সুবিধা দেওয়া সম্ভব তা দিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দিতে হিসাব কষা হচ্ছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটে আমদানি রপ্তানি প্রায় বন্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকটকাল চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে আমাদের দাবি অনুযায়ী নগদ সহায়তা দিতে হবে। রাজস্ব ছাড় দিতে হবে। কর অবকাশ ও কর অব্যাহতি বাড়াতে দিতে হবে।’
ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সংস্কারের শর্ত মানার অঙ্গীকার করে সরকার ঋণ পেয়েছে। শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে ঋণের যেকোনো কিস্তি আটকে দিতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যায়ক্রমে প্রতি অর্থবছরের বাজেটে এসব সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়ন করা হবে। আসছে বাজেটে শর্ত মানার চেষ্টা থাকবে। বিশেষভাবে অতীতের মতো ঢালাওভাবে কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না। আর্থিক খাতের সংস্কারের কিছু ঘোষণা থাকবে। বিশেষভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হবে। আইএমএফের সুপারিশে এরই মধ্যে ভ্যাট আইন চূড়ান্ত হয়েছে। আয়কর আইন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে। শুল্ক আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। এ তিন আইন অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। আসছে বাজেটে টেকসই অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার কথা বলা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু উদ্যোগের কথা শোনানো হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঋণদাতা সংস্থার শর্ত মানার কথা বলা হলেও সব আগামী বাজেটে একবারে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে অর্থনীতির গতি কমে যাবে।’
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত খাত এবং এনবিআর খাতের জন্য মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হতে পারে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে। এনবিআর এ লক্ষ্যমাত্রা কমানোর জোরালো আবেদন করেছে। কিন্তু তা আমলে আনেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হিসেবে, ৩৪ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা আয়কর হিসেবে এবং ৩১ শতাংশ বা বাকি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হিসেবে সংগ্রহ করার কথা বলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার কথা শুধু বললেই হবে না। কীভাবে অর্জিত হবে, সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা না থাকলে প্রতিবারের মতো ঘাটতি থাকবে। রাজস্ব ঘাটতি হলে অর্থনীতিতে আয় ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত।’
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআর উৎসে করের আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। সম্পদশালীদের ওপর নজর বাড়ানো হবে। শুধু বেশি সম্পদ থাকার কারণে অতিরিক্ত কর গুনতে হবে। সারচার্জ বহাল রাখা হবে। সুপারট্যাক্স গ্রুপকে উচ্চহারে গুনতে হবে কর। আগামী অর্থবছরেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা থাকবে। অর্থ পাচারোধে আইনের শাসন কঠোর করা হবে। অর্থ পাচার আটকাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে। করপোরেট কর কমানোর দাবি থাকলেও তা মানা হবে না। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে খোদ অর্থমন্ত্রী বললেও রাজস্ব আদায় কমে যাবে এমন যুক্তি দেখিয়ে এনবিআর রাজি নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। কমানো হবে শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি শুল্ক। ডলারের ওপর চাপ কমাতে বেশি ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমাতে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হবে। তৈরি পোশাক খাতের সব সুবিধা বহাল রাখা হবে। শিল্পের অন্যান্য খাতেও কতটা সুবিধা বাড়ানো যায় তা নিয়ে এনবিআর হিসাব করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বাজেট প্রস্তুতিবিষয়ক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং ঘাটতি ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হতে পারে। আগামী অর্থবছরে জিডিপির ৬ শতাংশ ঘাটতি ধরে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হতে পারে বলে জানা যায়। ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকলেও আগামীবার এ খাতে বেশি ব্যয় ধরা হতে পারে। এ খাতে ১ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় আছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদন করে। ঋণদাতা সংস্থাটির কাছ থেকে বাংলাদেশ ছয় কিস্তিতে তিন বছরে ৪৭০ কোটি ডলার পাচ্ছে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের দিন আইএমএফ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে পূর্বাভাস দেয়। সংস্থাটি বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা হতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
এতে রিজার্ভ সম্পর্কে বলা হয়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ৩ হাজার কোটি ডলার। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বাড়বে এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।