
দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩০ লাখ শিশু জন্মগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে প্রায় চার লাখ অপরিণত। অপরিণত শিশুর রেটিনা স্বাভাবিকভাবেই অপরিণত থাকে। শতকরা ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে সেই রেটিনা ধীরে ধীরে পরিপূর্ণতা পায়। ৩০ ভাগ ক্ষেত্রে দেখা দেয় নানা সমস্যা। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয়ের অভাবে একসময় এসব শিশুর দৃষ্টি রক্ষা করা সম্ভব হয় না।
গতকাল রবিবার বিশ্ব রেটিনা দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আয়োজিত এক সেমিনারে চিকিৎসকরা এ তথ্য তুলে ধরেন।
এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে চিকিৎসকরা বলেন, রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচিউরিটি বা অপরিণত শিশুর রেটিনার রোগ। এটি বাংলাদেশে নতুন সমস্যা। তাই রেটিনায় সমস্যা নিয়ে জন্ম নেওয়া অপরিণত ৩০ শতাংশ শিশুকে খুঁজে বের করতে চক্ষু বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরীক্ষা (স্ক্রিনিং) দরকার। অপরিণত শিশু জন্মগ্রহণ করলে অবশ্যই সঠিক সময়ে চোখ পরীক্ষা করাতে হবে। সঠিক সময়ে যদি এ রোগ ধরা যায়, তাহলে শিশুর দৃষ্টি রক্ষা করা সম্ভব। বর্তমানে আমাদের দেশে অপরিণত শিশুদের যতœ নেওয়ার বিশেষ ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের সক্ষমতা বেড়েছে।
এতে বলা হয়, দেশে ডায়াবেটিস এখন মহামারীরূপে আবির্ভূত হয়েছে। ডায়াবেটিস চোখের সব অংশের তুলনায় রেটিনায় বেশি ক্ষতি করে। অন্ধত্বের সামগ্রিক কারণের মধ্যে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির জন্য অন্ধত্ব বরণ করে শতকরা ১২ দশমিক ৫ শতাংশ ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষ। ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী এই একই সমস্যায় ভুগতে পারেন।
সেমিনারে আরও বলা হয়, ১৫ বছর বা আরও অধিককাল ধরে যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাদের ভেতরে প্রায় ২ শতাংশ মানুষ অন্ধ হয়ে যায়। আরও ১০ শতাংশের দৃষ্টিশক্তির গুরুতর অবনতি ঘটে। ডায়াবেটিস যাদের আছে তাদের উচ্চ রক্তচাপ থাকা খুবই স্বাভাবিক। এ রোগে চোখের রেটিনার নানা সমস্যা হতে পারে। সঠিক চিকিৎসা না হলে এখান থেকেও অন্ধত্ব হতে পারে।
রেটিনা সমস্যার চিকিৎসা আছে জানিয়ে চিকিৎসকরা বলেন, চোখের ভেতরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ রেটিনা। বিভিন্ন রকম শারীরিক ও চোখের সমস্যায় রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে একজন ব্যক্তি আজীবনের জন্য অন্ধ হয়ে যেতে পারে। দেশে রেটিনার সমস্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু এ নিয়ে মানুষের সচেতনতা কম। এ রোগের চিকিৎসা আছে। লেজার করা হয়, চোখের ভেতর ইনজেকশনও দেওয়া হয়। রেটিনায় রোগ প্রতিরোধ করার জন্য ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকলে বছরে একবার রেটিনা পরীক্ষা করাতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে। বয়স ৬০-এর ওপরে হলে বছরে একবার ম্যাকুলা বিষয়ে পরীক্ষা করাতে হবে।
সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ ভিট্রিও রেটিনা সোসাইটি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সোসাইটির মহাসচিব সহযোগী অধ্যাপক ডা. তারিক রেজা আলী। সভাপতিত্ব করেন সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. জিয়াউল আহসান। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ উপ-উপাচার্য (শিক্ষা ও গবেষণা) অধ্যাপক মো. জাহিদ হোসেন ও বিশেষ অতিথি এশিয়া প্যাসিফিক একাডেমি অব অফথালমোলজির সভাপতি (ইলেক্ট) অধ্যাপক আভা হোসেন এবং বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক আশরাফ সাঈদ।
সোসাইটির সহসভাপতি বিএসএমএমইউর চক্ষু বিভাগের অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরীর সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইউভিয়া সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম, গ্লুকোমা সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক হাসান শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বাংলাদেশ সোসাইটি অব ক্যাটারেক্ট অ্যান্ড রিফ্রাকটিভ সার্জনসের সভাপতি অধ্যাপক ডা. জাফর খালেদ এবং বাংলাদেশ একাডেমি অব অফথালমোলজির অনারারি সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. মো. শওকত কবীর।
মহালয়ার দিনটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য আনন্দের। এদিনে দেবী দুর্গাকে আবাহন করা হয়। দেবীপক্ষের এ সূচনা মানে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসবের সুর বেজে ওঠা। এমন আনন্দের মুহূর্তে পঞ্চগড়ে নারী-পুরুষ-শিশু মিলে ধর্মীয় সভায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে নৌকা ডুবে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ২৫ জন।
গতকাল রবিবার জেলার বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়ার ঘাট এলাকায় করতোয়া নদীতে এ দুর্ঘটনায় আরও ৩০ জন নিখোঁজ রয়েছে। গতকাল রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটের কর্মীরা উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছিল।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জয়শ্রী রানী রায়কে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপঙ্কর কুমার রায় জানান, নৌকাডুবিতে হতাহতের বিষয়ে তথ্য পেতে ৬ নম্বর মাড়েয়া বামন হাট ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে জরুরি তথ্য কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যেকোনো প্রয়োজনে এসি ল্যান্ড : ০১৭০৮৩৯৭৭১৮, জাকির : ০১৭১৯৩৪৭১৭৩ এই নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নদীর অন্য পাড়ে বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের বরদেশ^রী মন্দিরে মহালয়া উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও ধর্মসভার আয়োজন করা হয়। এ ধর্মসভায় যোগ দিতে গতকাল দুপুরে করতোয়া পার হওয়ার সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ওই নৌকার যাত্রীরা। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নদীর মাঝপথে নৌকাটি ডুবে যায়। অনেকে সাঁতার জানায় তীরে আসতে পারলেও সাঁতার না জানা বিশেষ করে নারী ও শিশুরা পানিতে ডুবে মারা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী নজরুল ইসলাম জানান, করতোয়ার পাড়ে শিশু ও নারীসহ ২৪ জনের লাশ দেখেছেন।
ঘটনার খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা ঘটনাস্থল থেকে জানান, নারী ও শিশুর ২৫টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ফায়ার সার্ভিসের অভিযান শেষ হলে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা জানা যাবে। তিনি নৌকাটিতে অতিরিক্ত যাত্রী ছিল বলে জানান।
গতকাল রাতে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১২ নারী ও ৮ শিশুসহ ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়ছে। তাদের মধ্যে ২০ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলো বোদা উপজেলার মাড়েয়া ফুটকিবাড়ী গ্রামের পলি রানী (১৪), দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা খালপাড়া গ্রামের লক্ষ্মী রানী (১৫), পশ্চিম শিকারপুর গ্রামের অমল চন্দ্র (৬৫), মাড়েয়া বামনপাড়া গ্রামের শোভা রানী (১৭), শালডাঙ্গা হাড়িডোবা গ্রামের দীপন কর (৩), বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনপাড়া গ্রামের প্রিয়ন্ত (আড়াই বছর), খুকি রানী (৩৫), ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের প্রমিলা রানী (৫৫), ছত্র শিকারপুর গ্রামের তারা রানী (২৪), পাঁচপীর বংশীধর গ্রামের শোলেকা রানী (৬০), মাড়েয়া শিকারপুর প্রধানপাড়া গ্রামের ফাল্গুনী রানী (৫৫), পাঁচপীরের প্রমিলা রানী (৭০), দেবীগঞ্জ তেলীপাড়া গ্রামের ধনো বালা (৪৭), পাঁচপীর বংশীধর গ্রামের সুমিত্রা রানী (৫৭), ময়দানদীঘি চকপাড়া গ্রামের সফলতা রানী (৪০), মাড়েয়া বামনহাটের শিমলা রানী (৩৫), বড়শশী কুমারপাড়া গ্রামের হাচান আলী (৫২), আলোকপাড়া গ্রামের উশোশি (শিশু), হাড়িডোবা গ্রামের তনুশি (শিশু), পাঁচপীর মদনহাটের শ্রেয়শী (শিশু)।
বোদা থানার ওসি সুজয় কুমার রায় জানান, যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তাদের স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হচ্ছে।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বদেশ্বরী মন্দিরে ধর্মসভায় যোগ দিতে পঞ্চগড়ের বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও অন্য এলাকার লোকজন শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে নদী পার হচ্ছিল। অতিরিক্ত যাত্রীর তোলার কারণে মাঝনদীতে নৌকাটি উল্টে গিয়ে ডুবে যায়। সাঁতার জানা যাত্রীরা তীরে উঠে আসতে পারলেও সাঁতার না জানা নারী ও শিশুরা ডুবে যায়। তাদের চিৎকারে আশপাশের এলাকার লোকজন ছুটে এসে অনেককে উদ্ধার করে। পরে পুলিশ, প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। এরপর উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, নৌকা পারাপারের জন্য ঘাটে চারটি নৌকা থাকে। মন্দিরগামী যাত্রীর চাপ থাকার কারণে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হয় নৌকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত দুদিন প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। ফলে উজানের ঢলে নদীর পানি বেড়ে গেছে। আর নৌকাটি ডুবেছে মাঝনদী বরাবর। এতেই প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় এক তরুণ বলছিলেন, তিনিও ওই নৌকায় করে মন্দিরে যাওয়ার জন্য এসেছিলেন। তার সঙ্গে মোটরসাইকেল ছিল। কিন্তু নৌকায় যাত্রী অনেক বেশি ছিল। যে কারণে তিনি আর যেতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, মাঝনদীতে যাওয়ার পরই নৌকাটি কাত হয়ে উল্টে যায়। তখন এপারে যারা ছিলেন তাদের অনেকেই নেমে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। পরে অবশ্য পুলিশ আর ফায়ার সার্ভিস আসে।
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, নৌকাটিতে দেড় শতাধিক যাত্রী ছিল। নৌকাডুবির পর পাড় থেকে অনেকেই নৌকা নিয়ে গিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করেন।
জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম জানান, মৃত ব্যক্তি সৎকারের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যেককে ২০ হাজার এবং আহতদের প্রত্যেককে ১০ হাজার করে টাকা অনুদান দেওয়া হবে।
আহতদের উদ্ধার করে সঙ্গে সঙ্গে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার খবর পেয়ে জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।
স্বজনদের খোঁজ নিতে অনেকেই নদীপাড়ে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। শোকার্তদের আহাজারি চলছে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নৌকাডুবিতে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রপ্রধান নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন এবং আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌকাডুবিতে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক জানিয়েছেন। এক শোকবার্তায় সরকারপ্রধান নৌকাডুবির ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এ ছাড়া শোকবার্তা দিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। শোকবার্তায় তিনি নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা এবং তাদের পরিবারবর্গের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের যোগ্য জবাব দিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে চালানো অপপ্রচারের তাৎক্ষণিক উপযুক্ত জবাব দিন।’ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে এবং বিশ্বে বাংলাদেশ যে মর্যাদা ও সম্মান অর্জন করেছে তা ধরে রেখে মাথা উঁচু করে বিশ্বব্যাপী চলারও আহ্বান জানান তিনি।
নিউইয়র্কে তার অবস্থানকালীন হোটেল থেকে গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া ভার্চুয়াল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, যুদ্ধাপরাধী ও জাতির পিতার খুনিদের আত্মীয়স্বজনদের পাশাপাশি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া অর্থ পাচারকারীসহ নানা অপরাধী রয়েছে এ অপপ্রচারের নেপথ্যে। তিনি বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তাদের বেশিরভাগকেই অপকর্মে জড়িত থাকার জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে বা অপরাধ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।’
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে সরকার এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে অন্যদের সবক দিচ্ছেন এমন ব্যক্তিদের চরিত্র ও অপকর্ম জনসমক্ষে তুলে ধরার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তাদের কথায় কর্ণপাত করবেন না বরং আমাদের উন্নয়নকে জনগণের সামনে তুলে ধরুন।’
সরকারপ্রধান প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি তার সরকারের করা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে সব স্থানে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কে আপনার এলাকার কংগ্রেসম্যান, সিনেটর এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অবহিত করুন এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখুন।’
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাজেটের আকারের তুলনামূলক চিত্র দেখে তাদের দ্বারা কতটা উন্নয়ন হয়েছে তা বিচার করতে পারবেন। তিনি বলেন, বিএনপি আমলে বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৬০ হাজার কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ বাজেট ছিল ৬ লাখ কোটি টাকার ওপরে।
প্রধানমন্ত্রী মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ এনে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প থেকে তাদের তহবিল প্রত্যাহারের বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের ধন্যবাদ জানান, যা পরবর্তী সময়ে কানাডার আদালতেও ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি বদলে দিয়েছে এবং প্রমাণ করেছে যে বাংলাদেশ যা বলে তা করার ক্ষমতা রাখে।
প্রধানমন্ত্রী আবারও জলবায়ু পরিবর্তন, কভিড-১৯ মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বে আসন্ন তীব্র খাদ্য সংকট সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক করে ভবিষ্যতে তা থেকে বাঁচতে সবাইকে আরও বেশি করে খাদ্য উৎপাদনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘যেহেতু একটি প্রকট খাদ্য সংকট আসন্ন, তাই দেশে আপনার স্বজনদের বলুন, বিভাজনের কারণে দেশের কোনো জমিই অনাবাদি রাখা যাবে না। তা ছাড়া বাংলাদেশ ইতিমধ্যে একটি ডিজিটাল দেশে রপান্তরিত হয়েছে।’
ভোট কারচুপি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি গুম, খুন এবং দুর্নীতি, অর্থ পাচার এবং অস্ত্র বাণিজ্যসহ সব ধরনের অপকর্মের রাজনীতি চালু করা সত্ত্বেও নির্বাচনী প্রক্রিয়া, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য শেখ হাসিনা বিএনপির কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘ভোট কারচুপিতে বিএনপি চ্যাম্পিয়ন ছিল। তারা ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করেছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার জন্য রাজনীতিতে হত্যা, গুম, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং এবং ঋণখেলাপি সংস্কৃতির মতো সব খারাপ কাজের সূচনা করেছিলেন।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন জিয়াউর রহমান সেই বিচার বন্ধ করে দেন এবং তাদের উপদেষ্টা ও মন্ত্রী বানিয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, খালেদা ও এরশাদ একই কাজ করেছেন। তার (জিয়াউর রহমানের) স্ত্রী খালেদা জিয়া এতিমদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতির মামলায় এবং তার ছেলে তারেক রহমান মানি লন্ডারিং এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় দোষীসাব্যস্ত হয়েছেন। সরকার ইতিমধ্যে জিয়ার আরেক ছেলে প্রয়াত কোকোর কাছ থেকে অবৈধভাবে চুরি করা ২০ কোটি টাকা ফেরত এনেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (জিয়া পরিবার) এত বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করেছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে তার ছেলেকে (জয়) অপহরণ ও হত্যার উদ্দেশ্যে তথ্য সংগ্রহে এক এফবিআই কর্মকর্তাকে নিয়োগ করেছিল।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তার দল সবসময় জনগণের অধিকার রক্ষায় বিশ্বাসী। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্যান্টনমেন্টে বন্দি অবস্থা থেকে জনগণের ভোটাধিকারের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশ এখন আর্থসামাজিকভাবে উন্নত হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত জোট বারবার অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাস ও হত্যার সংস্কৃতির আশ্রয় নিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু জনগণ কখনোই তাদের কর্মকাণ্ডে সাড়া দেয় না। কারণ তারা হত্যা, দুর্নীতি, অর্থ পাচার এবং অস্ত্র ব্যবসাসহ প্রতিটি অপকর্মের সঙ্গে জড়িত।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার সবসময় ন্যায়ের পক্ষে। তাই জাতির পিতা হত্যা মামলার বিচার এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সূচনা করেছে। বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধু হত্যা ও যুদ্ধাপরাধের বিচার না হওয়ার অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও প্রাণবন্ত হয়েছে এবং উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার দেশের মানুষকে একটি সুন্দর ও উন্নত জীবন দিতে পদক্ষেপ নিয়েছে। এ পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের একজনও গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না উল্লেখ করে তিনি জানান, তারা ইতিমধ্যে ১০ লাখ পরিবারকে বিনা খরচে বাড়ি দিয়েছেন এবং জীবন ও জীবিকা নির্বাহের জন্য আয়ের ব্যবস্থা করেছেন। দেশের মানুষ এখন ভালো অবস্থায় আছে।
তিনটি ব্যাংকসহ প্রবাসীদের সুবিধার্থে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন প্রচেষ্টার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। সংকটকালীন দেশের পাশে থাকার জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে আরও বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান।
ওয়াশিংটন পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৭তম অধিবেশন এবং উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটনে পৌঁছেছেন। তার উপ-প্রেস সচিব কেএম শাখাওয়াত মুন জানান, প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা শনিবার সন্ধ্যায় সড়কপথে নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছেছেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ১৫-১৯ সেপ্টেম্বর রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিয়ে যুক্তরাজ্য সফর শেষে ১৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পৌঁছান।
নিউইয়র্কে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা ইউএনজিএর ৭৭তম অধিবেশনের সাধারণ বিতর্কে ভাষণ দেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলায় ভাষণ দেন।
২০-২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শেখ হাসিনা বেশ কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের এবং রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পাশাপাশি সরকার, রাষ্ট্র ও সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় অংশ নেন। আগামী ৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। বাসস
ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে খুলনার দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া রহিমা বেগমকে। গত শনিবার রাতে বোয়ালমারী থেকে উদ্ধারের পর তাকে নেওয়া হয় খুলনা। গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় রহিমা বেগমকে তার মেয়ে আদুরী বেগমের জিম্মায়ও দিয়েছে আদালত। তবে রহিমা বেগমের আরেক মেয়ে মরিয়ম মান্নানের বিভিন্ন সময়ে দেওয়া বক্তব্য, উদ্ধারের পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও রহিমা বেগমের ভাষ্য এবং ফরিদপুরের যে বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন সে বাড়ির লোকজন যে বক্তব্য দিচ্ছেন তাতে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে।
গত ২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার বাসার উঠানের নলকূপে পানি আনতে গিয়ে নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। তার বড় মেয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলাও করেন। পুলিশ ওই মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তারও করে। মাকে ফিরে পাওয়ার দাবিতে গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনও করেন মরিয়ম মান্নান। বিষয়টি আলোচিত হয় দেশজুড়ে। দীর্ঘদিনেও মরিয়মের মায়ের হদিস দিতে না পারায় পুলিশের সমালোচনাও করেন অনেকে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় উদ্ধার হওয়া একটি লাশ নিজের মায়ের বলেও দাবি করেছিলেন মরিয়ম। তবে ২৯ দিন নিখোঁজ থাকার পর গত শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে ফরিদপুরের বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুসের বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। ওই রাতেই রহিমা বেগমকে নিয়ে পুলিশের একটি দল খুলনার দৌলতপুর থানায় পৌঁছায়। খুলনা মেট্রোপলিটন (কেএমপি) পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, গোপন সংবাদের মাধ্যমে পুলিশ রহিমা বেগমের অবস্থান জানতে পারে। পরে এডিসি দৌলতপুরের নেতৃত্বে থানার ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। তবে উদ্ধারের পর ১৫ ঘণ্টা কোনো কথা বলেননি রহিমা বেগম। তাকে গতকাল ভোর ৫টার দিকে দৌলতপুর থানা থেকে নগরীর সোনাডাঙ্গা ভিকটিম সেন্টারে আনা হয়। সকাল ৮টার দিকে তার সন্তানরা তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন কিন্তু তারা কথা বলতে পারেননি। বেলা ১১টার দিকে রহিমা বেগমকে পিবিআই খুলনার অফিসে আনা হয়। সেখানে পিবিআইয়ের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রহিমা বেগম জানিয়েছেন তাকে অপহরণ করা হয়েছিল। তবে তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেটি বলতে পারেননি।
পিবিআই পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানান, ওই রাতে পানি আনতে গেলে তিন-চারজন তার মুখে কাপড় ধরে কিছু একটা দিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায় বলে দাবি করেছেন রহিমা বেগম। তিনি জানান, রহিমা বেগম প্রথমে কথা বলেননি। যখন তার মেয়েরা তার সামনে আসেন এবং দেখা করেন তখন তিনি পিবিআইয়ের পুলিশ সুপারের রুমে বসে কথা বলেন।
রহিমা বেগম জানান, তাকে অপহরণের পর কোথায় নিয়ে যাওয়া হয় তিনি জানেন না। সেখানে গিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে তার স্বাক্ষর নেওয়া হয়। সেখানে যাদের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে গণ্ডগোল তাদের মধ্যে কিবরিয়া, মহিউদ্দিন নামে কেউ ছিলেন।
রহিমা জানান, তিনি ঘুরতে ঘুরতে মনি নামে এক মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়। তার সঙ্গে তাদের বাড়িতে থাকেন। পরে মনি তাকে এক হাজার টাকা দেন। সেই টাকা নিয়ে তিনি বাসে উঠে ফরিদপুরের মোকসুদপুর এসে নামেন।
এতদিন কেন ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে কোনো মোবাইল ফোন ছিল না।’ আপনি খুলনায় আসেননি কেন এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘যারা আমাকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিলেন তারা আমাকে ভয় দেখিয়েছিলেন। আমি ভয়ে খুলনায় আসিনি।’
রহিমা বেগম জানান, যখন তাকে অপহরণ করা হয় তার স্বামী বেল্লাল ঘটক দোতলায় দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। তিনি তাকে নামতে নিষেধ করেন এবং নিরাপদে দরজা আটকে দিতে বলেন।
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা রহিমা বেগমের কাছ থেকে এটুকু জানতে পেরেছি। যেহেতু তিনি বলেছেন তার স্বামী তাকে দেখেছিলেন অপহরণের সময়। তাই তার সঙ্গে আমরা কথা বলব। ঘটনা নিয়ে ক্রসচেক করব। যেহেতু তিনি জেলাতে আছেন তাই তাকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ তিনি বলেন, রহিমা বেগম কিছুটা শারীরিকভাবে সুস্থ হলেও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
গতকাল দুপুর ১টার দিকে রহিমার মেয়ে মরিয়ম মান্নানসহ চার মেয়ে পিবিআই অফিসে আসেন। মরিয়ম মান্নান বলেন, ‘আমার মাকে জীবিত উদ্ধার করায় আমরা খুশি। মায়ের সঙ্গে আমরা দেখা করতে চাই এবং কথা বলতে চাই। তিনি কোথায় ছিলেন, কীভাবে ছিলেন এসব বিষয়ে আমরা জানতে চাই। মায়ের আত্মগোপনে আমরা ভাইবোন জড়িত কি না এ নিয়ে অনেকে সন্দেহ করছেন। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, আমরা যদি কোনোভাবেই এ ঘটনায় জড়িত হই বা থাকি তাহলে তদন্ত করে আমাদের বিরুদ্ধে শাস্তি দেওয়া হোক। কিন্তু আমরা কোনোভাবেই জানতাম না আমার মা কোথায় গিয়েছেন। তা ছাড়া আমি আগেও বলেছি আমার মা যদি নিজে আত্মগোপন করে থাকেন তাহলে প্রচলিত আইনে তার শাস্তি হোক। আমরা চাই এ ঘটনায় যথাযথ তদন্ত হোক।’
তবে দৌলতপুর থানা পুলিশ জানায়, জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে রহিমা ও তার মেয়েরা অপহরণের নাটক সাজান। রহিমা আত্মগোপনে যাওয়ার পর অজ্ঞাতপরিচয় যেকোনো নারীর মরদেহকে মায়ের বলে দাবি করার পরিকল্পনাও সাজিয়ে রেখেছিলেন তার মেয়েরা। সে জন্যই ময়মনসিংহে ১২ দিন আগে উদ্ধার করা একটি মরদেহকে মায়ের বলে দাবি করেছিলেন মরিয়ম মান্নানসহ তার বোনরা।
বিষয়টি আরও রহস্যজনক হয়ে উঠেছে রহিমা বেগম ফরিদপুরের যে বাড়িতে ছিলেন সেই বাড়ির বাসিন্দাদের কথাবার্তায়। বোয়ালমারীর যে বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে ওই বাড়ির মালিক ৭০ বছর বয়সী কুদ্দুস মোল্যা ২৫-৩০ বছর আগে খুলনার মিরেরচর এলাকায় অবস্থিত সোনালি জুট মিলে কাজ করতেন। তখন রহিমা বেগমের বাড়িতে তিনি ভাড়া থাকতেন। সেই সূত্রেই তিনি তাদের বাড়ি আসেন। কুদ্দুস মোল্যার ভাগ্নে জয়নাল খান (৩৫) বলেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর রহিমা বেগম নামে ওই মহিলা মামার (কুদ্দুস মোল্যা) বাড়িতে এসে আশ্রয় চান। এরপর গত শুক্রবার ইউটিউবে ওই মহিলার ছবিসহ নিখোঁজের একটি সংবাদ দেখি। বিষয়টি মামাতো ভাই আল-আমিনকে (কুদ্দুস মোল্যার ছোট ছেলে) জানালে সে রহিমা বেগমের বড় ছেলে মিরাজের মোবাইলে ফোন দেয়। কিন্তু ফোন ধরেন তার স্ত্রী। তিনি বিরক্ত প্রকাশ করেন এবং এ ব্যাপারে আর ফোন দিতে নিষেধ করেন। পরে বোয়ালমারী সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেনকে জানাই। তিনি খুলনার পুলিশ কমিশনারকে জানালে শনিবার রাতে খুলনা থেকে একদল পুলিশ এসে রহিমা বেগমকে নিয়ে যায়।
রহিমা বেগম নিখোঁজ হওয়ার পর তার পরিবারের সদস্যরা প্রথমে সাধারণ ডায়েরি ও পরে মামলা করেন। পরে রহিমা অপহৃত হয়েছেন দাবি করে ১ সেপ্টেম্বর খুলনায় সংবাদ সম্মেলন করেন পরিবারের সদস্যরা। রহিমার সঙ্গে জমি নিয়ে স্থানীয়দের মামলা চলছে বলেও সে সময় জানানো হয়েছিল। সেই মামলায় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রধান প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া, তার বড় ভাই মহিউদ্দিন, রহিমা বেগমের আগের স্বামী হেলাল হাওলাদার, দৌলতপুর মহেশ্বরপশা রফিকুল ইসলাম পলাশ, নূর আলম জুয়েল এবং হেলাল শরীফকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আদালত ১৪ সেপ্টেম্বর রহিমা অপহরণ মামলা পিবিআইতে পাঠানোর আদেশ দেয়। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর নথিপত্র বুঝে নেয় পিবিআই।
এদিকে রহিমা বেগমকে পুলিশ ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে নাটকীয়ভাবে সুস্থ শরীরে উদ্ধার করার পর স্বস্তি ফিরে এসেছে তার মেয়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ছয়জনের পরিবারের মধ্যে। তারা দাবি করেছেন, রহিমা বেগমের আত্মগোপন করা ছিল পুরোটাই নাটক। তাদের হেনস্থার জন্যই তিনি স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করেছিলেন। তার এ অন্তর্ধানের পেছনে তার সন্তানদেরও ইন্ধন রয়েছে। বিশেষ করে তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান, মাহমুদা আক্তার ও ছেলে মিরাজ ওরফে মো. সাদী। প্রতিবেশীদের দাবি, রহিমা বেগম এবং তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান, মাহমুদা আক্তার ও ছেলে সাদী ভীষণ উচ্ছৃঙ্খল। এলাকায় তারা মামলাবাজ হিসেবে পরিচিত।
রহিমা বেগমের বাড়ির ভাড়াটিয়া মুজিবর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘প্রতিবেশী কারও সঙ্গেই রহিমা বেগমের পরিবারের সদস্যদের কোনো সম্পর্ক নেই। তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান ভীষণ উগ্র প্রকৃতির। তার অত্যাচারে এলাকার মানুষ টিকতে পারছে না। কথায় কথায় সে লোকজনকে মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।’
এদিকে গ্রেপ্তার হওয়া গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী আয়েশা বলেন, ‘রহিমা বেগমের সতীনের কাছ থেকে তাদের বাড়ির ২ কাঠা জমি প্রথমে একজন মহুরি কেনেন। সেই মহুরির কাছ থেকে আমার স্বামী গোলাম কিবরিয়া ওই জমি কিনে নেন। এরপর থেকেই রহিমা বেগম ও তার ছেলেমেয়েরা আমাদের মিথ্যা মামলাসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছে।’
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, এর আগে ওনার প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত একটি মামলায় বিরোধ আছে। সেই বিরোধকে ঘিরে এ ঘটনা ঘটছে কি না সেটা আমরা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তদন্ত করছি, তদন্ত শেষে প্রতিবেদন যখন আদালতে দাখিল করব, তখন বিস্তারিত আপনাদের জানাতে পারব।
রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নানের ব্যাপারে বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, মা হারিয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবে যে কেউ একটু রিঅ্যাক্ট করেন। এটাকে আমরা স্বাভাবিকভাবে দেখতে চাই। নিশ্চিত তিনি (মরিয়ম মান্নান) এখন কোনো পোস্ট দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করবেন এবং ওনার ভুল স্বীকার করবেন।
ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে কলেজ শাখার সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিতু আক্তার আহত হয়েছেন। গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। আহত দুই নেত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
আহত রিতু জানান, সন্ধ্যায় কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসের নেতৃত্বে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা চেয়ার, লাঠি দিয়ে আঘাত করে।
অবশ্য যার নামে এই অভিযোগ, সেই জান্নাতুলের ওপরই হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে ইডেন ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় রবিবার দুপুরে তাদের দুজনকে ক্যাম্পাসে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেছিলেন কলেজ ছাত্রলীগের ২৫ নেত্রী। দুপুরে কলেজের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রীনিবাসের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইডেন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বলেন, ‘গত শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে তাদের অনুসারীরা হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) ছাত্রীনিবাসের সামনে সহসভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।’
বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, ‘ক্যান্টিনের চাঁদাবাজি, ইন্টারনেট সার্ভিস থেকে চাঁদাবাজি, কলেজের মুদিদোকানে চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে শতাধিক কক্ষ দখল করে রাখা, বিভিন্নভাবে ছাত্রীদের অনৈতিক কাজের প্রস্তাব দেওয়াসহ নানা অভিযোগ আছে তামান্না-রাজিয়ার বিরুদ্ধে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের এসব জানানো হলেও তাদের কাছ থেকে নিরপেক্ষ কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।’
সিট বাণিজ্য ও চাঁদাবাজির অভিযোগ করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ায় শনিবার রাতে সহসভাপতি জান্নাতুলকে আটকে রেখে হেনস্তা ও মারধরের অভিযোগ ওঠে ইডেন ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়ার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত শনিবার মধ্যরাত থেকেই কলেজ ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ঘটনা তদন্তে ছাত্রলীগ একটি কমিটি করেছে। এ ছাড়া জান্নাতুল প্রশাসনের কাছেও লিখিত অভিযোগ করেছেন।
রাজধানীর মিরপুরের মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফরহাদ হোসেনকে অবৈধ ঘোষণা করেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের তদন্ত কমিটি। তিনি সোয়া দুই বছর ধরে অবৈধভাবে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই প্রতিষ্ঠানের সরকারি বেতন-ভাতাপ্রাপ্ত ৬৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিও সারেন্ডারে বাধ্য করা হয়েছে। তারা ৬ বছর ধরে সরকারি বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। প্রয়োজনীয় অনুমোদন ও স্বীকৃতি নবায়ন করা ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি চলছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, এমপিও সারেন্ডার করানো এবং স্বীকৃতি নবায়নÑ এই তিন বিষয়ে তদন্ত করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন।
গত ১৫ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তদন্ত করা হয়। গত সপ্তাহে ঢাকা বোর্ডে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন অধ্যাপক মনোয়ার। ১৩ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির নানা অনিয়মের কথা উঠে এসেছে।
মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের নানা আর্থিক অনিয়মের ব্যাপারে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) আরেকটি তদন্ত চলমান রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের চারটি শাখায় প্রায় ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতিবেদনটি আমরা পেয়েছি। এখন তা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরে পাঠানো হবে। তারাই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে।’
কী ব্যবস্থা নেওয়া হয় জানতে চাইলে বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, ‘চুক্তিভিত্তিক অধ্যক্ষ থাকলে সাধারণত তাকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বর্তমান সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী জড়িত আছেন, তাই মাউশি অধিদপ্তর থেকে এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা না-ও নেওয়া হতে পারে। প্রতিবেদন ও সুপারিশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে।
ঢাকা বোর্ডের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসএসসি পাসের সনদ অনুসারে ফরহাদ হোসেনের জন্মতারিখ ৩০ জুলাই, ১৯৬০। এই হিসাবে ২ জুলাই, ২০২০ তার ৬০ বছর পূর্ণ হয়েছে। ওই সময়েই তার অবসরে যাওয়ার কথা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডি তিন বছরের জন্য, অর্থাৎ ২০২৩ সালের ২ জুলাই পর্যন্ত তার চাকরির মেয়াদ বাড়ায়। তিনি সর্বশেষ যে বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা পেতেন তার সবকিছুই বহাল রাখা হয়।
২০১৮ সালের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালার ১১.৬ ধারায় বলা হয়েছে, ‘শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদির সরকারি অংশ ৬০ বছর পর্যন্ত প্রদেয়। বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রধান, সহকারী প্রধান ও শিক্ষক-কর্মচারীকে কোনো অবস্থাতেই পুনর্নিয়োগ বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যাবে না।’
ফরহাদ হোসেন তদন্ত কমিটির কাছে জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১-এর তথ্য উপস্থাপন করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতাদির সরকারি অংশ ৬০ বছর পর্যন্ত প্রদেয়। ঐতিহ্যবাহী ও মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে এবং সরকারের কোনো আর্থিক সুবিধা না নেওয়ার শর্তে সরকারের অনুমোদনক্রমে প্রতিষ্ঠানপ্রধানের পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে আর্থিকসহ সব দায়ভার বহন করতে হবে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসএসসির সনদ অনুসারে ২০২০ সালের ২ জুলাই ফরহাদ হোসেনের ৬০ বছর পূর্ণ হয়েছে। জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ জারি হয়েছে ২০২১ সালের ৪ মার্চ। তার চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে জনবলকাঠামো-২০২১ প্রযোজ্য হবে না। ফলে ফরহাদ হোসেনের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি সঠিক ও বিধিসম্মত হয়নি।
জানা যায়, একসময় এই প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সংসদ সদস্যদের গভর্নিং বডিতে থাকার পথ বন্ধ হলে পরিচালনার দায়িত্ব পান তার মেয়ে রাশেদা আখতার। এরপর প্রতিষ্ঠানটিকে একটি ট্রাস্টের অধীনে পরিচালনার জন্য সরকারের রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস থেকে নিবন্ধন নেওয়া হয়। রাশেদা আখতারকে চেয়ারম্যান ও অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেনকে সদস্য সচিব করে ৯ সদস্যের ট্রাস্ট গঠন করা হয়। যদিও এর অনুমোদন দেয়নি ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। এরপর প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত ৬৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিও সারেন্ডারে বাধ্য করা হয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে এমপিও প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়। ২০১৬ সাল থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের আর সরকারি বেতন-ভাতা তুলতে দেওয়া হচ্ছে না।
তদন্ত কমিটি ৪৪ জন শিক্ষক-কর্মচারীর সাক্ষ্য নিয়েছে। তারা বলেন, ‘আমাদের বেতনের সরকারি অংশ না দেওয়ায় এবং বিবিধ চাপে চাকরি রক্ষার্থে ও প্রাপ্য সব আর্থিক সুযোগ-সুবিধা প্রতিষ্ঠান দেবে এই আশ্বাসের ভিত্তিতে আমরা বাধ্য হয়ে এমপিও প্রত্যাহারে সম্মত হই। কিন্তু প্রতিশ্রুতি কর্তৃপক্ষ রাখছে না।’ শিক্ষক-কর্মচারীরা তদন্ত কমিটির কাছে লিখিতভাবে তাদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ পাওয়ার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী হিসেবেই থাকতে চান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও সারেন্ডার সম্পূর্ণ কার্যকর হয়নি। প্রতিষ্ঠানের এমপিও কোড ২৬১০০৪১৩০৩ চালু রয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানের সব এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী তাদের এমপিও ফিরে পাওয়ার আশাা প্রকাশ করেছেন।
প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের মেয়াদ বাড়ানোর ব্যাপারে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের মাধ্যমিক শাখার স্বীকৃতির মেয়াদ ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি স্বীকৃতির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য ৪ হাজার টাকা এবং ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ১৫ হাজার টাকা জমা দেওয়ার রেকর্ড পাওয়া গেছে। কিন্তু ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর স্বীকৃতির মেয়াদ বাড়ানোর কোনো আদেশ পাওয়া যায়নি। ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটি একাদশ শ্রেণিতে পাঠদানের অনুমতি পায়। পাঠদানের অনুমতির মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এরপর প্রতিষ্ঠানটির উচ্চমাধ্যমিক স্তরের স্বীকৃতি পাওয়ার কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি এখনো প্রতিবেদন হাতে পাইনি। তাই এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।’
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।