
ক্রীড়াঙ্গনে সুখবরের তালিকা আরও বাড়ল। আরব আমিরাত থেকে একসঙ্গে এলো দুই জয়ের খবর। ফুটবলের পর এবার ক্রিকেটে। আবুধাবিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। ওদিকে দুবাইয়ে আরব আমিরাতকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টিতে পুরুষ ক্রিকেটে স্বস্তির জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। দুই জয়ই এসেছে সমান ৭ রানে।
টি-টোয়েন্টিতে পায়ের নিচের মাটি খুঁজে পেতে একটি জয়ের দূরে ছিল বাংলাদেশ। কাল দুবাইতে আরব আমিরাতের বিপক্ষে বহুল প্রতীক্ষিত জয় এলো ঠিকই। তবে প্রশ্ন থাকছে তা কতটা স্বস্তির? আগে ব্যাট করে বাংলাদেশের ৫ উইকেটে ১৫৮ রানের পুঁজিটা যে ছুঁয়েই ফেলেছিল স্বাগতিকরা। শেষ দুই ওভারে মোসাদ্দেক হোসেন ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ক্যাচ মিসে হারের ভয় জাগে। তবে এ দুই ফিল্ডারেরই পরপর দুই ক্যাচে জয় নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের। শরিফুল ইসলামের হ্যাটট্রিক সুযোগটাও টিকে থাকল। আরব আমিরাতকে ১৫১ রানে অলআউট করে ৭ রানের জয়ে দুই ম্যাচের সিরিজেও এগিয়ে রইল সফরকারীরা।
ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। মেরে খেলার ‘ইন্টেন্টে’ ছিলেন সব ব্যাটার। কিন্তু ভুল শটে একের পর এক আউট। শেষে আফিফ হোসেনের কার্যকরী ইনিংসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচা। ইনিংসে দুবার জীবন পেয়েছেন আফিফ। একবার ৬২ রানে আর অপরটি ইনিংসের শুরুতে। এ দুই হোঁচট বাদে কাল দুবাইয়ে আরব আমিরাতের বিপক্ষে স্বচ্ছন্দ ব্যাটিং করে গেলেন এই বাঁহাতি। পেলেন ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস, দল পেল স্বস্তির সংগ্রহ।
বিশ্বকাপ সামনে রেখে নতুন কিছু করার চিন্তায় নতুন শুরু করে বাংলাদেশ। এই দলে নেই অভিজ্ঞদের কেউ। পুরো ভরসা তাই নতুনদের ওপর। আরব আমিরাতে প্রস্তুতি করতে চেয়ে বাড়তি পাওয়া এই সিরিজে নিজেদের নানা পরিকল্পনা দেখে নেওয়াই বাংলাদেশের উদ্দেশ্য। সেখানে পরিকল্পনাটা অবশ্য পুরনো। এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কা ম্যাচের মতোই সাব্বির রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজ ওপেন করেন। ভালো হয়নি মোটেই। সাব্বির এবারও মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে ফ্লিক করে চার মারার চেষ্টায় ছিলেন। কিন্তু শ্রীলঙ্কা ম্যাচের মতো এবার প্রথম বলে চার পাননি উল্টো আউট হওয়া থেকে বেঁচে যান। এক বল পর গুডলেন্থের বলে পুল করে মিডউইকেটে ধরা পড়েন। প্রথম থেকেই মেরে খেলার ইচ্ছেটা ছিল সাব্বিরের কিন্তু সফল হননি। একই রকম ব্যর্থ অপর ওপেনার মিরাজ। শুরু থেকেই তার ব্যাটে বল লাগছিল না ভালোভাবে। পরে ১৪ বলে ১২ করে ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে অহেতুক শটে ক্যাচ আউট হন। সাকিব আল হাসানের জায়গায় দলে ফেরা লিটন দাশ নামেন তিনে। ৮ বলে ৩ চারে ১৩ করা লিটন দারুণ শুরু পেয়েছিলেন। কিন্তু অতিরিক্ত শট খেলার মানসিকতায় ভুল শটে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন। লিটন ফেরা পর্যন্ত পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেট হারিয়ে ৪২ রান তোলে বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বদলে দলে সুযোগ পাওয়া ইয়াসির আলিও ৪ রানে বোল্ড হন মারাত্মক ভুলে। লেগ স্পিনার মিয়াপ্পানের বলে শট নিয়ে তার ব্যাট-পায়ের কোনো সমন্বয়ই ছিল না। একই বোলারকে সামনে বেড়ে খেলতে গিয়ে মাত্র ৩ রানে পরাস্ত হন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও।
১০ ওভারে ৭৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে তখন স্বল্প রানে আটকে যাওয়ার শঙ্কায় ভুগছিল বাংলাদেশ। ওই অবস্থা থেকে দলকে টেনে তোলেন আফিফ-সোহান। ৫৪ বলে অপরাজিত ৮১ রান তাদের। পুরো ইনিংসটাই টেনে নিয়ে আসেন আফিফ। পাওয়ার হিটে তিনটি ছক্কা ও সাত চারে ৫৫ বলে করেন অপরাজিত ৭৭। ১৪০ স্ট্রাইকরেটের ইনিংসটি তার ক্যারিয়ারসেরা। ২টি করে ছক্কা ও চারে আফিফকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন ২৫ বলে অপরাজিত ৩৫ করা সোহান। তার স্ট্রাইকরেটও ১৪০। দুজনের ব্যাটে ইনিংসে ৫ ছক্কা পেয়েছে বাংলাদেশ। শেষ ৫ ওভারে আসে ৫৫ রান।
বোলিংয়ে মিরাজ ও শরিফুল ছিলেন আপ টু দ্য মার্ক। দুজনই ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন ওভারপ্রতি ৬ রানের কাছাকাছি খরচ করে। এছাড়া মোস্তাফিজ নিয়েছেন ২টি উইকেট। বাজে বোলিংটা ছিল সাইফউদ্দিনের। ৪ ওভারে ৪০ রান খরচ করেছেন। পাওয়ার প্লে ও ডেথ ওভারে কাজ করার আছে আরও। দুই সময়েই ১০ রানের বেশি খরচ হয়েছে একাধিক ওভারে। এমনিতে শুরু ও শেষের ব্যাটারদের দৃঢ়তায় জয়ের কাছেই চলে যায় আরব আমিরাত। ওপেনার চিরাগ সুরি ২৪ বলে ৩৯ ও নিচের দিকে আয়ান আফজাল ১৭ বলে ২৫ রান করেন।
কাক্সিক্ষত জয় এসেছে ঠিকই। তবে আরব আমিরাতের সঙ্গে ম্যাচটি এত ক্লোজ হওয়া বাংলাদেশের জন্য ব্যর্থতা। এর আগে ২০১৬ এশিয়া কাপে একবারই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। সেবার ৫১ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ। চলতি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ওই রকম একটি জয় নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের আগে আত্মবিশ্বাস জাগানিয়া হবে বাংলাদেশের জন্য।
মহালয়ার দিনটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য আনন্দের। এদিনে দেবী দুর্গাকে আবাহন করা হয়। দেবীপক্ষের এ সূচনা মানে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসবের সুর বেজে ওঠা। এমন আনন্দের মুহূর্তে পঞ্চগড়ে নারী-পুরুষ-শিশু মিলে ধর্মীয় সভায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে নৌকা ডুবে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ২৫ জন।
গতকাল রবিবার জেলার বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়ার ঘাট এলাকায় করতোয়া নদীতে এ দুর্ঘটনায় আরও ৩০ জন নিখোঁজ রয়েছে। গতকাল রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটের কর্মীরা উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছিল।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জয়শ্রী রানী রায়কে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপঙ্কর কুমার রায় জানান, নৌকাডুবিতে হতাহতের বিষয়ে তথ্য পেতে ৬ নম্বর মাড়েয়া বামন হাট ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে জরুরি তথ্য কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যেকোনো প্রয়োজনে এসি ল্যান্ড : ০১৭০৮৩৯৭৭১৮, জাকির : ০১৭১৯৩৪৭১৭৩ এই নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নদীর অন্য পাড়ে বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের বরদেশ^রী মন্দিরে মহালয়া উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও ধর্মসভার আয়োজন করা হয়। এ ধর্মসভায় যোগ দিতে গতকাল দুপুরে করতোয়া পার হওয়ার সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ওই নৌকার যাত্রীরা। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নদীর মাঝপথে নৌকাটি ডুবে যায়। অনেকে সাঁতার জানায় তীরে আসতে পারলেও সাঁতার না জানা বিশেষ করে নারী ও শিশুরা পানিতে ডুবে মারা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী নজরুল ইসলাম জানান, করতোয়ার পাড়ে শিশু ও নারীসহ ২৪ জনের লাশ দেখেছেন।
ঘটনার খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা ঘটনাস্থল থেকে জানান, নারী ও শিশুর ২৫টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ফায়ার সার্ভিসের অভিযান শেষ হলে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা জানা যাবে। তিনি নৌকাটিতে অতিরিক্ত যাত্রী ছিল বলে জানান।
গতকাল রাতে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১২ নারী ও ৮ শিশুসহ ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়ছে। তাদের মধ্যে ২০ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলো বোদা উপজেলার মাড়েয়া ফুটকিবাড়ী গ্রামের পলি রানী (১৪), দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা খালপাড়া গ্রামের লক্ষ্মী রানী (১৫), পশ্চিম শিকারপুর গ্রামের অমল চন্দ্র (৬৫), মাড়েয়া বামনপাড়া গ্রামের শোভা রানী (১৭), শালডাঙ্গা হাড়িডোবা গ্রামের দীপন কর (৩), বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনপাড়া গ্রামের প্রিয়ন্ত (আড়াই বছর), খুকি রানী (৩৫), ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের প্রমিলা রানী (৫৫), ছত্র শিকারপুর গ্রামের তারা রানী (২৪), পাঁচপীর বংশীধর গ্রামের শোলেকা রানী (৬০), মাড়েয়া শিকারপুর প্রধানপাড়া গ্রামের ফাল্গুনী রানী (৫৫), পাঁচপীরের প্রমিলা রানী (৭০), দেবীগঞ্জ তেলীপাড়া গ্রামের ধনো বালা (৪৭), পাঁচপীর বংশীধর গ্রামের সুমিত্রা রানী (৫৭), ময়দানদীঘি চকপাড়া গ্রামের সফলতা রানী (৪০), মাড়েয়া বামনহাটের শিমলা রানী (৩৫), বড়শশী কুমারপাড়া গ্রামের হাচান আলী (৫২), আলোকপাড়া গ্রামের উশোশি (শিশু), হাড়িডোবা গ্রামের তনুশি (শিশু), পাঁচপীর মদনহাটের শ্রেয়শী (শিশু)।
বোদা থানার ওসি সুজয় কুমার রায় জানান, যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তাদের স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হচ্ছে।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বদেশ্বরী মন্দিরে ধর্মসভায় যোগ দিতে পঞ্চগড়ের বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও অন্য এলাকার লোকজন শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে নদী পার হচ্ছিল। অতিরিক্ত যাত্রীর তোলার কারণে মাঝনদীতে নৌকাটি উল্টে গিয়ে ডুবে যায়। সাঁতার জানা যাত্রীরা তীরে উঠে আসতে পারলেও সাঁতার না জানা নারী ও শিশুরা ডুবে যায়। তাদের চিৎকারে আশপাশের এলাকার লোকজন ছুটে এসে অনেককে উদ্ধার করে। পরে পুলিশ, প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। এরপর উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, নৌকা পারাপারের জন্য ঘাটে চারটি নৌকা থাকে। মন্দিরগামী যাত্রীর চাপ থাকার কারণে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হয় নৌকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত দুদিন প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। ফলে উজানের ঢলে নদীর পানি বেড়ে গেছে। আর নৌকাটি ডুবেছে মাঝনদী বরাবর। এতেই প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় এক তরুণ বলছিলেন, তিনিও ওই নৌকায় করে মন্দিরে যাওয়ার জন্য এসেছিলেন। তার সঙ্গে মোটরসাইকেল ছিল। কিন্তু নৌকায় যাত্রী অনেক বেশি ছিল। যে কারণে তিনি আর যেতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, মাঝনদীতে যাওয়ার পরই নৌকাটি কাত হয়ে উল্টে যায়। তখন এপারে যারা ছিলেন তাদের অনেকেই নেমে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। পরে অবশ্য পুলিশ আর ফায়ার সার্ভিস আসে।
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, নৌকাটিতে দেড় শতাধিক যাত্রী ছিল। নৌকাডুবির পর পাড় থেকে অনেকেই নৌকা নিয়ে গিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করেন।
জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম জানান, মৃত ব্যক্তি সৎকারের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যেককে ২০ হাজার এবং আহতদের প্রত্যেককে ১০ হাজার করে টাকা অনুদান দেওয়া হবে।
আহতদের উদ্ধার করে সঙ্গে সঙ্গে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার খবর পেয়ে জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।
স্বজনদের খোঁজ নিতে অনেকেই নদীপাড়ে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। শোকার্তদের আহাজারি চলছে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নৌকাডুবিতে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রপ্রধান নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন এবং আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌকাডুবিতে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক জানিয়েছেন। এক শোকবার্তায় সরকারপ্রধান নৌকাডুবির ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এ ছাড়া শোকবার্তা দিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। শোকবার্তায় তিনি নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা এবং তাদের পরিবারবর্গের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের যোগ্য জবাব দিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে চালানো অপপ্রচারের তাৎক্ষণিক উপযুক্ত জবাব দিন।’ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে এবং বিশ্বে বাংলাদেশ যে মর্যাদা ও সম্মান অর্জন করেছে তা ধরে রেখে মাথা উঁচু করে বিশ্বব্যাপী চলারও আহ্বান জানান তিনি।
নিউইয়র্কে তার অবস্থানকালীন হোটেল থেকে গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া ভার্চুয়াল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, যুদ্ধাপরাধী ও জাতির পিতার খুনিদের আত্মীয়স্বজনদের পাশাপাশি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া অর্থ পাচারকারীসহ নানা অপরাধী রয়েছে এ অপপ্রচারের নেপথ্যে। তিনি বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তাদের বেশিরভাগকেই অপকর্মে জড়িত থাকার জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে বা অপরাধ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।’
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে সরকার এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে অন্যদের সবক দিচ্ছেন এমন ব্যক্তিদের চরিত্র ও অপকর্ম জনসমক্ষে তুলে ধরার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তাদের কথায় কর্ণপাত করবেন না বরং আমাদের উন্নয়নকে জনগণের সামনে তুলে ধরুন।’
সরকারপ্রধান প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি তার সরকারের করা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে সব স্থানে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কে আপনার এলাকার কংগ্রেসম্যান, সিনেটর এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অবহিত করুন এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখুন।’
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাজেটের আকারের তুলনামূলক চিত্র দেখে তাদের দ্বারা কতটা উন্নয়ন হয়েছে তা বিচার করতে পারবেন। তিনি বলেন, বিএনপি আমলে বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৬০ হাজার কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ বাজেট ছিল ৬ লাখ কোটি টাকার ওপরে।
প্রধানমন্ত্রী মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ এনে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প থেকে তাদের তহবিল প্রত্যাহারের বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের ধন্যবাদ জানান, যা পরবর্তী সময়ে কানাডার আদালতেও ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি বদলে দিয়েছে এবং প্রমাণ করেছে যে বাংলাদেশ যা বলে তা করার ক্ষমতা রাখে।
প্রধানমন্ত্রী আবারও জলবায়ু পরিবর্তন, কভিড-১৯ মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বে আসন্ন তীব্র খাদ্য সংকট সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক করে ভবিষ্যতে তা থেকে বাঁচতে সবাইকে আরও বেশি করে খাদ্য উৎপাদনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘যেহেতু একটি প্রকট খাদ্য সংকট আসন্ন, তাই দেশে আপনার স্বজনদের বলুন, বিভাজনের কারণে দেশের কোনো জমিই অনাবাদি রাখা যাবে না। তা ছাড়া বাংলাদেশ ইতিমধ্যে একটি ডিজিটাল দেশে রপান্তরিত হয়েছে।’
ভোট কারচুপি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি গুম, খুন এবং দুর্নীতি, অর্থ পাচার এবং অস্ত্র বাণিজ্যসহ সব ধরনের অপকর্মের রাজনীতি চালু করা সত্ত্বেও নির্বাচনী প্রক্রিয়া, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য শেখ হাসিনা বিএনপির কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘ভোট কারচুপিতে বিএনপি চ্যাম্পিয়ন ছিল। তারা ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করেছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার জন্য রাজনীতিতে হত্যা, গুম, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং এবং ঋণখেলাপি সংস্কৃতির মতো সব খারাপ কাজের সূচনা করেছিলেন।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন জিয়াউর রহমান সেই বিচার বন্ধ করে দেন এবং তাদের উপদেষ্টা ও মন্ত্রী বানিয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, খালেদা ও এরশাদ একই কাজ করেছেন। তার (জিয়াউর রহমানের) স্ত্রী খালেদা জিয়া এতিমদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতির মামলায় এবং তার ছেলে তারেক রহমান মানি লন্ডারিং এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় দোষীসাব্যস্ত হয়েছেন। সরকার ইতিমধ্যে জিয়ার আরেক ছেলে প্রয়াত কোকোর কাছ থেকে অবৈধভাবে চুরি করা ২০ কোটি টাকা ফেরত এনেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (জিয়া পরিবার) এত বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করেছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে তার ছেলেকে (জয়) অপহরণ ও হত্যার উদ্দেশ্যে তথ্য সংগ্রহে এক এফবিআই কর্মকর্তাকে নিয়োগ করেছিল।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তার দল সবসময় জনগণের অধিকার রক্ষায় বিশ্বাসী। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্যান্টনমেন্টে বন্দি অবস্থা থেকে জনগণের ভোটাধিকারের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশ এখন আর্থসামাজিকভাবে উন্নত হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত জোট বারবার অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাস ও হত্যার সংস্কৃতির আশ্রয় নিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু জনগণ কখনোই তাদের কর্মকাণ্ডে সাড়া দেয় না। কারণ তারা হত্যা, দুর্নীতি, অর্থ পাচার এবং অস্ত্র ব্যবসাসহ প্রতিটি অপকর্মের সঙ্গে জড়িত।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার সবসময় ন্যায়ের পক্ষে। তাই জাতির পিতা হত্যা মামলার বিচার এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সূচনা করেছে। বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধু হত্যা ও যুদ্ধাপরাধের বিচার না হওয়ার অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও প্রাণবন্ত হয়েছে এবং উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার দেশের মানুষকে একটি সুন্দর ও উন্নত জীবন দিতে পদক্ষেপ নিয়েছে। এ পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের একজনও গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না উল্লেখ করে তিনি জানান, তারা ইতিমধ্যে ১০ লাখ পরিবারকে বিনা খরচে বাড়ি দিয়েছেন এবং জীবন ও জীবিকা নির্বাহের জন্য আয়ের ব্যবস্থা করেছেন। দেশের মানুষ এখন ভালো অবস্থায় আছে।
তিনটি ব্যাংকসহ প্রবাসীদের সুবিধার্থে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন প্রচেষ্টার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। সংকটকালীন দেশের পাশে থাকার জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে আরও বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান।
ওয়াশিংটন পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৭তম অধিবেশন এবং উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটনে পৌঁছেছেন। তার উপ-প্রেস সচিব কেএম শাখাওয়াত মুন জানান, প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা শনিবার সন্ধ্যায় সড়কপথে নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছেছেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ১৫-১৯ সেপ্টেম্বর রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিয়ে যুক্তরাজ্য সফর শেষে ১৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পৌঁছান।
নিউইয়র্কে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা ইউএনজিএর ৭৭তম অধিবেশনের সাধারণ বিতর্কে ভাষণ দেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলায় ভাষণ দেন।
২০-২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শেখ হাসিনা বেশ কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের এবং রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পাশাপাশি সরকার, রাষ্ট্র ও সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় অংশ নেন। আগামী ৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। বাসস
ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে খুলনার দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া রহিমা বেগমকে। গত শনিবার রাতে বোয়ালমারী থেকে উদ্ধারের পর তাকে নেওয়া হয় খুলনা। গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় রহিমা বেগমকে তার মেয়ে আদুরী বেগমের জিম্মায়ও দিয়েছে আদালত। তবে রহিমা বেগমের আরেক মেয়ে মরিয়ম মান্নানের বিভিন্ন সময়ে দেওয়া বক্তব্য, উদ্ধারের পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও রহিমা বেগমের ভাষ্য এবং ফরিদপুরের যে বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন সে বাড়ির লোকজন যে বক্তব্য দিচ্ছেন তাতে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে।
গত ২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার বাসার উঠানের নলকূপে পানি আনতে গিয়ে নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। তার বড় মেয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলাও করেন। পুলিশ ওই মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তারও করে। মাকে ফিরে পাওয়ার দাবিতে গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনও করেন মরিয়ম মান্নান। বিষয়টি আলোচিত হয় দেশজুড়ে। দীর্ঘদিনেও মরিয়মের মায়ের হদিস দিতে না পারায় পুলিশের সমালোচনাও করেন অনেকে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় উদ্ধার হওয়া একটি লাশ নিজের মায়ের বলেও দাবি করেছিলেন মরিয়ম। তবে ২৯ দিন নিখোঁজ থাকার পর গত শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে ফরিদপুরের বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুসের বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। ওই রাতেই রহিমা বেগমকে নিয়ে পুলিশের একটি দল খুলনার দৌলতপুর থানায় পৌঁছায়। খুলনা মেট্রোপলিটন (কেএমপি) পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, গোপন সংবাদের মাধ্যমে পুলিশ রহিমা বেগমের অবস্থান জানতে পারে। পরে এডিসি দৌলতপুরের নেতৃত্বে থানার ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। তবে উদ্ধারের পর ১৫ ঘণ্টা কোনো কথা বলেননি রহিমা বেগম। তাকে গতকাল ভোর ৫টার দিকে দৌলতপুর থানা থেকে নগরীর সোনাডাঙ্গা ভিকটিম সেন্টারে আনা হয়। সকাল ৮টার দিকে তার সন্তানরা তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন কিন্তু তারা কথা বলতে পারেননি। বেলা ১১টার দিকে রহিমা বেগমকে পিবিআই খুলনার অফিসে আনা হয়। সেখানে পিবিআইয়ের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রহিমা বেগম জানিয়েছেন তাকে অপহরণ করা হয়েছিল। তবে তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেটি বলতে পারেননি।
পিবিআই পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানান, ওই রাতে পানি আনতে গেলে তিন-চারজন তার মুখে কাপড় ধরে কিছু একটা দিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায় বলে দাবি করেছেন রহিমা বেগম। তিনি জানান, রহিমা বেগম প্রথমে কথা বলেননি। যখন তার মেয়েরা তার সামনে আসেন এবং দেখা করেন তখন তিনি পিবিআইয়ের পুলিশ সুপারের রুমে বসে কথা বলেন।
রহিমা বেগম জানান, তাকে অপহরণের পর কোথায় নিয়ে যাওয়া হয় তিনি জানেন না। সেখানে গিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে তার স্বাক্ষর নেওয়া হয়। সেখানে যাদের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে গণ্ডগোল তাদের মধ্যে কিবরিয়া, মহিউদ্দিন নামে কেউ ছিলেন।
রহিমা জানান, তিনি ঘুরতে ঘুরতে মনি নামে এক মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়। তার সঙ্গে তাদের বাড়িতে থাকেন। পরে মনি তাকে এক হাজার টাকা দেন। সেই টাকা নিয়ে তিনি বাসে উঠে ফরিদপুরের মোকসুদপুর এসে নামেন।
এতদিন কেন ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে কোনো মোবাইল ফোন ছিল না।’ আপনি খুলনায় আসেননি কেন এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘যারা আমাকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিলেন তারা আমাকে ভয় দেখিয়েছিলেন। আমি ভয়ে খুলনায় আসিনি।’
রহিমা বেগম জানান, যখন তাকে অপহরণ করা হয় তার স্বামী বেল্লাল ঘটক দোতলায় দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। তিনি তাকে নামতে নিষেধ করেন এবং নিরাপদে দরজা আটকে দিতে বলেন।
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা রহিমা বেগমের কাছ থেকে এটুকু জানতে পেরেছি। যেহেতু তিনি বলেছেন তার স্বামী তাকে দেখেছিলেন অপহরণের সময়। তাই তার সঙ্গে আমরা কথা বলব। ঘটনা নিয়ে ক্রসচেক করব। যেহেতু তিনি জেলাতে আছেন তাই তাকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ তিনি বলেন, রহিমা বেগম কিছুটা শারীরিকভাবে সুস্থ হলেও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
গতকাল দুপুর ১টার দিকে রহিমার মেয়ে মরিয়ম মান্নানসহ চার মেয়ে পিবিআই অফিসে আসেন। মরিয়ম মান্নান বলেন, ‘আমার মাকে জীবিত উদ্ধার করায় আমরা খুশি। মায়ের সঙ্গে আমরা দেখা করতে চাই এবং কথা বলতে চাই। তিনি কোথায় ছিলেন, কীভাবে ছিলেন এসব বিষয়ে আমরা জানতে চাই। মায়ের আত্মগোপনে আমরা ভাইবোন জড়িত কি না এ নিয়ে অনেকে সন্দেহ করছেন। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, আমরা যদি কোনোভাবেই এ ঘটনায় জড়িত হই বা থাকি তাহলে তদন্ত করে আমাদের বিরুদ্ধে শাস্তি দেওয়া হোক। কিন্তু আমরা কোনোভাবেই জানতাম না আমার মা কোথায় গিয়েছেন। তা ছাড়া আমি আগেও বলেছি আমার মা যদি নিজে আত্মগোপন করে থাকেন তাহলে প্রচলিত আইনে তার শাস্তি হোক। আমরা চাই এ ঘটনায় যথাযথ তদন্ত হোক।’
তবে দৌলতপুর থানা পুলিশ জানায়, জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে রহিমা ও তার মেয়েরা অপহরণের নাটক সাজান। রহিমা আত্মগোপনে যাওয়ার পর অজ্ঞাতপরিচয় যেকোনো নারীর মরদেহকে মায়ের বলে দাবি করার পরিকল্পনাও সাজিয়ে রেখেছিলেন তার মেয়েরা। সে জন্যই ময়মনসিংহে ১২ দিন আগে উদ্ধার করা একটি মরদেহকে মায়ের বলে দাবি করেছিলেন মরিয়ম মান্নানসহ তার বোনরা।
বিষয়টি আরও রহস্যজনক হয়ে উঠেছে রহিমা বেগম ফরিদপুরের যে বাড়িতে ছিলেন সেই বাড়ির বাসিন্দাদের কথাবার্তায়। বোয়ালমারীর যে বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে ওই বাড়ির মালিক ৭০ বছর বয়সী কুদ্দুস মোল্যা ২৫-৩০ বছর আগে খুলনার মিরেরচর এলাকায় অবস্থিত সোনালি জুট মিলে কাজ করতেন। তখন রহিমা বেগমের বাড়িতে তিনি ভাড়া থাকতেন। সেই সূত্রেই তিনি তাদের বাড়ি আসেন। কুদ্দুস মোল্যার ভাগ্নে জয়নাল খান (৩৫) বলেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর রহিমা বেগম নামে ওই মহিলা মামার (কুদ্দুস মোল্যা) বাড়িতে এসে আশ্রয় চান। এরপর গত শুক্রবার ইউটিউবে ওই মহিলার ছবিসহ নিখোঁজের একটি সংবাদ দেখি। বিষয়টি মামাতো ভাই আল-আমিনকে (কুদ্দুস মোল্যার ছোট ছেলে) জানালে সে রহিমা বেগমের বড় ছেলে মিরাজের মোবাইলে ফোন দেয়। কিন্তু ফোন ধরেন তার স্ত্রী। তিনি বিরক্ত প্রকাশ করেন এবং এ ব্যাপারে আর ফোন দিতে নিষেধ করেন। পরে বোয়ালমারী সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেনকে জানাই। তিনি খুলনার পুলিশ কমিশনারকে জানালে শনিবার রাতে খুলনা থেকে একদল পুলিশ এসে রহিমা বেগমকে নিয়ে যায়।
রহিমা বেগম নিখোঁজ হওয়ার পর তার পরিবারের সদস্যরা প্রথমে সাধারণ ডায়েরি ও পরে মামলা করেন। পরে রহিমা অপহৃত হয়েছেন দাবি করে ১ সেপ্টেম্বর খুলনায় সংবাদ সম্মেলন করেন পরিবারের সদস্যরা। রহিমার সঙ্গে জমি নিয়ে স্থানীয়দের মামলা চলছে বলেও সে সময় জানানো হয়েছিল। সেই মামলায় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রধান প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া, তার বড় ভাই মহিউদ্দিন, রহিমা বেগমের আগের স্বামী হেলাল হাওলাদার, দৌলতপুর মহেশ্বরপশা রফিকুল ইসলাম পলাশ, নূর আলম জুয়েল এবং হেলাল শরীফকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আদালত ১৪ সেপ্টেম্বর রহিমা অপহরণ মামলা পিবিআইতে পাঠানোর আদেশ দেয়। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর নথিপত্র বুঝে নেয় পিবিআই।
এদিকে রহিমা বেগমকে পুলিশ ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে নাটকীয়ভাবে সুস্থ শরীরে উদ্ধার করার পর স্বস্তি ফিরে এসেছে তার মেয়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ছয়জনের পরিবারের মধ্যে। তারা দাবি করেছেন, রহিমা বেগমের আত্মগোপন করা ছিল পুরোটাই নাটক। তাদের হেনস্থার জন্যই তিনি স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করেছিলেন। তার এ অন্তর্ধানের পেছনে তার সন্তানদেরও ইন্ধন রয়েছে। বিশেষ করে তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান, মাহমুদা আক্তার ও ছেলে মিরাজ ওরফে মো. সাদী। প্রতিবেশীদের দাবি, রহিমা বেগম এবং তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান, মাহমুদা আক্তার ও ছেলে সাদী ভীষণ উচ্ছৃঙ্খল। এলাকায় তারা মামলাবাজ হিসেবে পরিচিত।
রহিমা বেগমের বাড়ির ভাড়াটিয়া মুজিবর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘প্রতিবেশী কারও সঙ্গেই রহিমা বেগমের পরিবারের সদস্যদের কোনো সম্পর্ক নেই। তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান ভীষণ উগ্র প্রকৃতির। তার অত্যাচারে এলাকার মানুষ টিকতে পারছে না। কথায় কথায় সে লোকজনকে মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।’
এদিকে গ্রেপ্তার হওয়া গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী আয়েশা বলেন, ‘রহিমা বেগমের সতীনের কাছ থেকে তাদের বাড়ির ২ কাঠা জমি প্রথমে একজন মহুরি কেনেন। সেই মহুরির কাছ থেকে আমার স্বামী গোলাম কিবরিয়া ওই জমি কিনে নেন। এরপর থেকেই রহিমা বেগম ও তার ছেলেমেয়েরা আমাদের মিথ্যা মামলাসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছে।’
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, এর আগে ওনার প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত একটি মামলায় বিরোধ আছে। সেই বিরোধকে ঘিরে এ ঘটনা ঘটছে কি না সেটা আমরা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তদন্ত করছি, তদন্ত শেষে প্রতিবেদন যখন আদালতে দাখিল করব, তখন বিস্তারিত আপনাদের জানাতে পারব।
রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নানের ব্যাপারে বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, মা হারিয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবে যে কেউ একটু রিঅ্যাক্ট করেন। এটাকে আমরা স্বাভাবিকভাবে দেখতে চাই। নিশ্চিত তিনি (মরিয়ম মান্নান) এখন কোনো পোস্ট দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করবেন এবং ওনার ভুল স্বীকার করবেন।
ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে কলেজ শাখার সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিতু আক্তার আহত হয়েছেন। গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। আহত দুই নেত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
আহত রিতু জানান, সন্ধ্যায় কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসের নেতৃত্বে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা চেয়ার, লাঠি দিয়ে আঘাত করে।
অবশ্য যার নামে এই অভিযোগ, সেই জান্নাতুলের ওপরই হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে ইডেন ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় রবিবার দুপুরে তাদের দুজনকে ক্যাম্পাসে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেছিলেন কলেজ ছাত্রলীগের ২৫ নেত্রী। দুপুরে কলেজের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রীনিবাসের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইডেন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বলেন, ‘গত শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে তাদের অনুসারীরা হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) ছাত্রীনিবাসের সামনে সহসভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।’
বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, ‘ক্যান্টিনের চাঁদাবাজি, ইন্টারনেট সার্ভিস থেকে চাঁদাবাজি, কলেজের মুদিদোকানে চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে শতাধিক কক্ষ দখল করে রাখা, বিভিন্নভাবে ছাত্রীদের অনৈতিক কাজের প্রস্তাব দেওয়াসহ নানা অভিযোগ আছে তামান্না-রাজিয়ার বিরুদ্ধে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের এসব জানানো হলেও তাদের কাছ থেকে নিরপেক্ষ কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।’
সিট বাণিজ্য ও চাঁদাবাজির অভিযোগ করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ায় শনিবার রাতে সহসভাপতি জান্নাতুলকে আটকে রেখে হেনস্তা ও মারধরের অভিযোগ ওঠে ইডেন ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়ার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত শনিবার মধ্যরাত থেকেই কলেজ ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ঘটনা তদন্তে ছাত্রলীগ একটি কমিটি করেছে। এ ছাড়া জান্নাতুল প্রশাসনের কাছেও লিখিত অভিযোগ করেছেন।
দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩০ লাখ শিশু জন্মগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে প্রায় চার লাখ অপরিণত। অপরিণত শিশুর রেটিনা স্বাভাবিকভাবেই অপরিণত থাকে। শতকরা ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে সেই রেটিনা ধীরে ধীরে পরিপূর্ণতা পায়। ৩০ ভাগ ক্ষেত্রে দেখা দেয় নানা সমস্যা। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয়ের অভাবে একসময় এসব শিশুর দৃষ্টি রক্ষা করা সম্ভব হয় না।
গতকাল রবিবার বিশ্ব রেটিনা দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আয়োজিত এক সেমিনারে চিকিৎসকরা এ তথ্য তুলে ধরেন।
এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে চিকিৎসকরা বলেন, রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচিউরিটি বা অপরিণত শিশুর রেটিনার রোগ। এটি বাংলাদেশে নতুন সমস্যা। তাই রেটিনায় সমস্যা নিয়ে জন্ম নেওয়া অপরিণত ৩০ শতাংশ শিশুকে খুঁজে বের করতে চক্ষু বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরীক্ষা (স্ক্রিনিং) দরকার। অপরিণত শিশু জন্মগ্রহণ করলে অবশ্যই সঠিক সময়ে চোখ পরীক্ষা করাতে হবে। সঠিক সময়ে যদি এ রোগ ধরা যায়, তাহলে শিশুর দৃষ্টি রক্ষা করা সম্ভব। বর্তমানে আমাদের দেশে অপরিণত শিশুদের যতœ নেওয়ার বিশেষ ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের সক্ষমতা বেড়েছে।
এতে বলা হয়, দেশে ডায়াবেটিস এখন মহামারীরূপে আবির্ভূত হয়েছে। ডায়াবেটিস চোখের সব অংশের তুলনায় রেটিনায় বেশি ক্ষতি করে। অন্ধত্বের সামগ্রিক কারণের মধ্যে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির জন্য অন্ধত্ব বরণ করে শতকরা ১২ দশমিক ৫ শতাংশ ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষ। ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী এই একই সমস্যায় ভুগতে পারেন।
সেমিনারে আরও বলা হয়, ১৫ বছর বা আরও অধিককাল ধরে যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাদের ভেতরে প্রায় ২ শতাংশ মানুষ অন্ধ হয়ে যায়। আরও ১০ শতাংশের দৃষ্টিশক্তির গুরুতর অবনতি ঘটে। ডায়াবেটিস যাদের আছে তাদের উচ্চ রক্তচাপ থাকা খুবই স্বাভাবিক। এ রোগে চোখের রেটিনার নানা সমস্যা হতে পারে। সঠিক চিকিৎসা না হলে এখান থেকেও অন্ধত্ব হতে পারে।
রেটিনা সমস্যার চিকিৎসা আছে জানিয়ে চিকিৎসকরা বলেন, চোখের ভেতরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ রেটিনা। বিভিন্ন রকম শারীরিক ও চোখের সমস্যায় রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে একজন ব্যক্তি আজীবনের জন্য অন্ধ হয়ে যেতে পারে। দেশে রেটিনার সমস্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু এ নিয়ে মানুষের সচেতনতা কম। এ রোগের চিকিৎসা আছে। লেজার করা হয়, চোখের ভেতর ইনজেকশনও দেওয়া হয়। রেটিনায় রোগ প্রতিরোধ করার জন্য ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকলে বছরে একবার রেটিনা পরীক্ষা করাতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে। বয়স ৬০-এর ওপরে হলে বছরে একবার ম্যাকুলা বিষয়ে পরীক্ষা করাতে হবে।
সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ ভিট্রিও রেটিনা সোসাইটি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সোসাইটির মহাসচিব সহযোগী অধ্যাপক ডা. তারিক রেজা আলী। সভাপতিত্ব করেন সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. জিয়াউল আহসান। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ উপ-উপাচার্য (শিক্ষা ও গবেষণা) অধ্যাপক মো. জাহিদ হোসেন ও বিশেষ অতিথি এশিয়া প্যাসিফিক একাডেমি অব অফথালমোলজির সভাপতি (ইলেক্ট) অধ্যাপক আভা হোসেন এবং বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক আশরাফ সাঈদ।
সোসাইটির সহসভাপতি বিএসএমএমইউর চক্ষু বিভাগের অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরীর সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইউভিয়া সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম, গ্লুকোমা সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক হাসান শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বাংলাদেশ সোসাইটি অব ক্যাটারেক্ট অ্যান্ড রিফ্রাকটিভ সার্জনসের সভাপতি অধ্যাপক ডা. জাফর খালেদ এবং বাংলাদেশ একাডেমি অব অফথালমোলজির অনারারি সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. মো. শওকত কবীর।
সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে বিকেলে ঢাকায় এসেছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল। আজ শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনা মো. হাশিম।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি শ্রমবাজারের জটিলতা নিয়ে আলাপ করবেন। কিভাবে দেশটিতে আমরা সহজে কর্মী পাঠাতে পারি; সেগুলো আলোচনায় উঠে আসবে। আমাদেরও কিছু প্রস্তাব রয়েছে। আমাদের কর্মীদের স্বার্থ আগে আমরা চাই, সবার জন্য বাজার খুলে দেওয়া হোক। নিয়োগকর্তার পছন্দমতো রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়োগ— এটা আমরা চাই না। অভিবাসন ব্যয়
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার গত কয়েক বছর ধরে অস্থির। দেশটিতে প্রত্যাশিত শ্রমিক পাঠাতে পারছে না বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমবাজারটির জটিলতা নিরসনে আলোচনা করতে সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে ঢাকায় আসছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল।
তার সফরে শ্রমবাজারটি গতিশীল করতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) পরিবর্তন, অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় কমানোসহ দেশের সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য বাজার উন্মুক্ত করার প্রস্তাব দেবে ঢাকা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ২৪ ঘণ্টার সফরে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পাশাপাশি তিনি সেনাকল্যাণ সংস্থার সঙ্গেও একটি বৈঠক করবেন।
'পাঠান' মুক্তির আগে থেকেই অনুরাগীদের সঙ্গে শাহরুখের যোগাযোগের একটাই মাধ্যম, টুইটার। শনিবার ফের টুইটারে 'আস্ক এসআরকে' সেশনে ধরা দিলেন শাহরুখ। হালকা মেজাজে, খোলামেলা আড্ডায় মাতলেন অনুরাগীদের সঙ্গে। অনুরাগীদের প্রশ্ন উত্তর দিলেন। সেখানেই একজন টুইটার ব্যবহারকারীর উপদেশ- বয়স অনুযায়ী চরিত্রে অভিনয়ের করার। পাল্টা জবাব দেন শাহরুখও। বলেন, 'তিনি হিরো ছিলেন, আছেন, থাকবেন'।
অনুরাগীরা যেমন রয়েছেন, তেমনই ট্রোল করার লোকের সংখ্যাও কম নয় শাহরুখের সোশালে। বছর সাতান্নর 'তরুণ' এই অভিনেতাকে একজনের প্রশ্ন, 'আপনি কি এভাবেই হিরোর চরিত্রেই অভিনয় করবেন, নাকি কোনো দিন নায়ক-নায়িকার বাবার চরিত্র করার পরিকল্পনাও রয়েছে?' তাতে শাহরুখ যা জবাব দিয়েছেন, তা রীতিমত ছড়িয়ে পড়েছে সোশালে।
এমনিতেই রসিক মানুষ শাহরুখ। তবে কোন কথায় কাকে কী উত্তর দেবেন, তা ভালোই জানা তার। বাদশাহ লেখেন, 'তুই বাপ হ… আমি হিরোর চরিত্রেই ঠিক আছি।'
শনিবারের 'আস্ক এসআরক'-এ সেশনে, শাহরুখের কাছে জানতে চাওয়া হয় 'পাঠান'-এর মোট আয়ের পরিসংখ্যান। তাকেও ফেরাননি শাহরুখ। উত্তর দিয়ে লেখেন, 'ভালোবাসা ৫ হাজার কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে, ৩ হাজার কোটি প্রশংসা, ৩২৫০ কোটি হাগ, ২০০০ কোটি হাসি এখনও গণণা চলছে। তোমার অ্যাকাউন্ট্যান্ট কী বলছেন?'
'পাঠান' ঘিরে উন্মাদনা নজিরবিহীন। প্রেক্ষাগৃহের বাইরে এই ছবি দেখার ঢল। শাহরুখ অভিনীত ছবিটি লম্বা রেসের ঘোড়া, বলেছেন সিনেমা বিশেষজ্ঞরা। ৪ বছর পর শাহরুখ পর্দায় ফিরেছেন বলেই শুধু নয়, ৭ দিনে বক্স অফিসে ৭০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে 'পাঠান', যা বলিউডে বছরের সেরা ব্লকবাস্টার হিসাবে গণ্য হতে চলেছে।
দুঃসময় পিছু ছাড়ছে না লিভারপুলের। প্রিমিয়ার লিগে টানা তিন ম্যাচে জয়হীন থেকে মাঠে নেমেছিল তারা। ভাঙতে চেয়েছিল ব্যর্থতার বৃত্ত। কিন্তু পারেনি, উল্টো উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্সের ধরাশায়ী হয়েছে তারা। পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থাকা দল হেরে গেছে বড় ব্যবধানে।
নিজেদের মাঠে শনিবার ৩-০ গোলে জিতেছে উলভস। লিভারপুলের বিপক্ষে লিগে আগের ১১ ম্যাচে হারের পর জয়ের স্বাদ পেয়েছে তারা।
শুরুর ১২ মিনিটে দুই গোল হজম করে দিশেহারা লিভারপুল ঘুরে দাঁড়ানোর পথই খুঁজে পায়নি। দ্বিতীয়ার্ধে হজম করেছে আরও একটি গোল। তার আগেই ছিটকে যায় ম্যাচ থেকে। দারুণ জয়ে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেন উলভসের ফুটবলাররা।
শুরু থেকে একের পর এক আক্রমণে লিভারপুলের রক্ষণ কাঁপাতে থাকে উলভস। দলটির সমর্থকরা আনন্দে মেতে ওঠার উপলক্ষ পেয়ে যায় পঞ্চম মিনিটে। আত্মঘাতী গোল করে লিভারপুল। বাইলাইনের কাছাকাছি গিয়ে হাং হি-চান শট নেওয়ার পরিস্থিতি না দেখে তিনি বক্সে বাড়ান বল, জোয়েল মাতিপের পায়ে লেগে বল পোস্ট ছুঁয়ে গোললাইন পেরিয়ে যায়। আলিসনের প্রাণপণ চেষ্টা যায় বিফলে।
দ্বাদশ মিনিটে আবারও গোল হজম করে বসে লিগে ধুঁকতে থাকা লিভারপুল। ইংলিশ ডিফেন্ডার ক্রেইগ ডসনের পায়ের জোরাল শটে বল খুঁজে নেয় জাল। উলভসের হয়ে অভিষেকেই গোল পেয়ে যান তিনি। ২-০ গোলের ব্যবধান নিয়ে বিরতিতে যায় উলভস।
বিরতির পরও চলে আক্রমণ আর পালটা আক্রমণ। ৭১তম মিনিটে মাঝমাঠে জো গোমেজ ও স্তেফান বাইচেতিস আটকাতে পারেননি জোয়াও মৌতিনিয়োকে। এই পর্তুগিজ মিডফিল্ডারের পাস ধরে বক্সে আড়াআড়ি ক্রস বাড়ান আদামা ত্রাওরো। নিখুঁত টোকায় বাকি কাজ সারেন রুবেন নেভেস। ম্যাচের ভাগ্যও লেখা হয়ে যায় অনেকটাই।
এই হারে লিগ টেবিলে সেরা চারে থাকার পথটা আরও কঠিন হয়ে গেল লিভারপুলের। ২০ ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে দশম স্থানে আছে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। তাদের চেয়ে ১০ পয়েন্ট বেশি নিয়ে চার নম্বরে নিউক্যাসল ইউনাইটেড। ২১ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে ১৫তম স্থানে উঠে এসেছে উলভস।
ছবি মুক্তির ১০ দিন পার। এখনও বক্স অফিসে 'পাঠান' রাজ। শুধু দেশের মাটিতেই নয়, বিদেশেও অব্যাহত 'পাঠান' ঝড়। বিশ্বজুড়ে ৭০০ কোটির বেশি ব্যবসা ইতিমধ্যেই করে ফেলেছে শাহরুখ খানের এই ছবি। এমনকি, ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানেও 'পাঠান' জ্বরে ভুগছেন আমজনতা। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সে দেশে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হলো 'পাঠান'। খালি রইল না প্রেক্ষাগৃহের একটি আসনও, হাউসফুল সেই শো।
অন্য ভারতীয় ছবির মতোই পাকিস্তানে মুক্তির ছাড়পত্র পায়নি সিদ্ধার্থ আনন্দ পরিচালিত ছবি 'পাঠান'। তবে সে দেশের সিন্ধ সেন্সর বোর্ডের সেই নিষেধাজ্ঞাকে একপ্রকার বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন করল শাহরুখের ছবি। কানায় কানায় ভর্তি প্রেক্ষাগৃহ দেখল রুপালি পর্দায় 'বাদশাহ ম্যাজিক'।
পাকিস্তানি মুদ্রায় ৯০০ টাকার টিকিটেও হাউসফুল 'পাঠান'-এর শো। নিষেধাজ্ঞা থাকায় বেআইনিভাবেই জোগাড় করে দেখানো হলো 'ওয়াইআরএফ স্পাই ইউনিভার্স'-এর এই ছবি।
পাকিস্তানের 'ফায়ারওয়ার্ক ইভেন্ট' নামক এক সংস্থা আয়োজন করে 'পাঠান' ছবির প্রদর্শনের। ছবির টিকিটমূল্য রাখা হয় পাকিস্তানি মুদ্রায় ৯০০ টাকা। তাতেই ছবির টিকিট পাওয়ার জন্য কাউন্টারের বাইরে লম্বা লাইন পড়ে সিনেপ্রেমীদের। অল্প সময়ের মধ্যেই শো হাউসফুল ঘোষণা করে দেওয়া হয়। তবে পাকিস্তানি সেন্সর বোর্ডের কানে এ খবর যেতেই নড়েচড়ে বসে তারা। 'ফায়ারওয়ার্ক ইভেন্ট'কে অবিলম্বে 'পাঠান'-এর সব প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বিবৃতি জারি করে সিন্ধ সেন্সর বোর্ড। কেউ যদি এর পরেও বেআইনিভাবে 'পাঠান' প্রদর্শন করে, তাহলে অপরাধের শাস্তিস্বরূপ তার ১ লাখ টাকা জরিমানা থেকে ৩ বছরের জেল পর্যন্ত হতে পারে, হুঁশিয়ারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
সাভারের আশুলিয়ায় মহাসড়কের পাশের একটি ডোবা থেকে মো. ইমাম হোসেন (৪৬) নামে এক ব্যক্তির ভাসমান লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যায় সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পার্শ্ববর্তী ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পশ্চিম পাশের ডোবা থেকে নিহতের ক্ষতবিক্ষত মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত ইমাম হোসেন জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ভালুকগড়ি গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে। তিনি পরিবার নিয়ে আশুলিয়ার জিরাবো পুকুরপাড় এলাকার ভাড়া বাসায় থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
থানা পুলিশ জানায়, স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে সন্ধ্যায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী একটি ডোবা থেকে লুঙ্গি এবং জ্যাকেট পরিহিত অজ্ঞাত এক ব্যক্তির ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পিবিআইকে খবর দেওয়া হলে তারা এসে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে।
নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল-মামুন কবির বলেন, ইমাম হোসেন বৃহস্পতিবার অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। মরদেহটি উদ্ধারের খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা থানায় এসে লাশ শনাক্ত করেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে দুর্বৃত্তরা তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে গেছে এবং নিহতের মরদেহটি ডোবার মধ্যে ফেলে গেছে।
মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আশুলিয়া থানায় মামলা দায়েরের পাশাপাশি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার এবং গায়েব হওয়া অটোরিকশাটি উদ্ধারে অভিযান চালানো হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।