
চলতি বছরের মাঝামাঝি শুরু হওয়া রাজনৈতিক উত্তাপ নতুন বছরে দেশে বড় ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষে মোড় নেবে, সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন দুশ্চিন্তা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, দেশের শান্তি বিঘ্নিত করার সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না। সহিংসতা ও নাশকতার আশ্রয় নিয়ে বিএনপিকে মাঠে থাকতে দেওয়া হবে না। তাই সাধারণ মানুষের দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনার কোনো কারণ নেই। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজপথে বিএনপিকে মোকাবিলার জন্য তারা নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এখন দুটি কৌশল নিয়ে মাঠে নামবেন তারা। এসব কৌশলের একটি হলো বিএনপির কর্মসূচিকে সহিংসতা ও নাশকতার কর্মসূচি হিসেবে দেখানো হবে। বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণা করার ভেতরের মানেই সহিংসতা ও নাশকতা তা প্রমাণ করতে তাদের কর্মসূচিতে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা তুলে ধরে সভা-সমাবেশে বক্তব্য দেবেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা। আরেকটি কৌশল হলো, বিএনপির রাজপথের কর্মসূচিগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে অনুমতির প্রয়োজন পড়ে সেটাকে কাজে লাগিয়ে কর্মসূচির লাগাম টেনে ধরা।
এ দুটি কৌশলের বাইরে পুরনো কৌশলও কাজে লাগানো হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা। তারা বলছেন, সে কৌশলটি হলো বছরের শেষদিকে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে যেসব পুরনো মামলা রয়েছে দ্রুত তার বিচার সম্পন্ন করা ও সেসব মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির অতীত রাজনীতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তাদের টার্গেট কর্মসূচির নামে নাশকতা ও সহিংসতা সৃষ্টি করে সুফল আদায় করা।’ তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির কর্মসূচিতে যেসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে কোনোটিতেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দায়ী করা যাবে না। পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে প্রত্যেক ঘটনাই তাদের উসকানির ফল।
ফারুক খান বলেন, বিএনপির চেষ্টা দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করা, আওয়ামী লীগের চেষ্টা দেশের প্রত্যেক মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ও জানমাল রক্ষা করা।
গত আগস্ট মাসে বিএনপি লোডশেডিংসহ নানা ঘটনার প্রতিবাদে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি দিয়ে আসছে। ওই মাসেই বিভিন্ন স্থানে দলটির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে, যা চলতি মাসেও দেখা গেছে। এসব সহিংসতায় বিএনপির পাঁচ কর্মী নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
বিএনপি বর্তমানে রাজধানীর ১৬টি স্থানে কর্মসূচি পালন করছে। আগের কর্মসূচিগুলোতে নেতাকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় চলমান এ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সম্প্রতি বিএনপির কর্মীদের লাঠির মাথায় জাতীয় পতাকা হাতে কর্মসূচিতে আসতে দেখা যাচ্ছে। রায়েরবাজারের সমাবেশ কর্মসূচি পালনের সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এর আর কোনো কর্মসূচিতে সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি।
লাঠি হাতে বিএনপির কর্মীদের কর্মসূচিতে দেখা যাওয়ার বিষয়ে দলটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা আত্মরক্ষার জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছেন। পুলিশের বিরুদ্ধেও দলটির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ আছে বিএনপির।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা এর সমালোচনা করে সহিংসতা ঘটানোর অভিযোগ তুলেছেন। পুলিশের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, কর্মসূচিতে লাঠি কিংবা দেশীয় অস্ত্র বহন করা যাবে না। আত্মরক্ষা বা নিরাপত্তা কোনো কিছুর জন্যই এটা করা যাবে না। এটা পুলিশের জন্য হুমকিস্বরূপ।
এদিকে বিএনপি নতুন বিভাগীয় শহরে সমাবেশ এবং এসব সমাবেশ শেষে ঢাকায় মহাসমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে। ৮ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে সর্বশেষ ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শেষ করার কথা। কিন্তু বিএনপির কথিত আত্মরক্ষার কৌশল এবং আওয়ামী লীগের পাল্টা কৌশল আগামী দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠকে উত্তপ্ত করে তুলতে পারে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি মাঠে থাকলে আওয়ামী লীগ কি ঘরে থাকবে? আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীও মাঠে নেমে যাবে। কর্মসূচির নামে কোনো দল জনগণের শান্তি বিনষ্ট করবে আর তা প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে এটা প্রতিষ্ঠিত করবে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
সরকারি দলের ওই নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হবে না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে, তা পুঁজি করে মাঠে নেমেছে বিএনপি এটা আমরা বুঝি। প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনাকে সুযোগ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দলীয় সভাপতির সেই নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করলেও বিএনপি সেই নির্দেশনার অপব্যবহার করছে। ওই দলটি কর্মসূচি ঘোষণা করে আর সহিংসতা-নাশকতার প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লী ও সম্পাদকমন্ডলীর একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পায়ে পড়ে কারও ঝগড়া করার মানসিকতা থাকলে বিনা বাধায় ছেড়ে দেওয়া কি সম্ভব? কর্মসূচির নামে অশান্তি সৃষ্টি করা, সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া এসব ঘরে বসে দেখা বা সহ্য করা অসম্ভব। বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে যত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে তার সবই উসকানির ফলে হয়েছে।
ওই নেতারা আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মানে এ নয় যে, বিএনপি সহিংসতা-সংঘাত চালিয়ে যাবে, অন্যরা নীরবে সহ্য করে যাবে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যাবে না তেমনটাও নয়।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সারা দেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। জেলা-উপজেলা-থানা ও ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পর্যন্ত সম্মেলন করা হচ্ছে। সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে আমরা আগে থেকেই মাঠে রয়েছি। সামনে জাতীয় নির্বাচন ফলে সভা-সমাবেশও আরও বেড়ে যাবে।’ তিনি বলেন, বিএনপি যত বেশি কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে সরব উপস্থিতি দেখাবে আওয়ামী লীগ তারও কয়েকগুণ বেশি কর্মসূচি দিয়ে রাজপথ দখলে রাখবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সহিংসতা চালিয়ে যাবে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যাবে না এটা রাজনৈতিক সংস্কৃতি হতে পারে না। তারা নাশকতা-সহিংসতা সৃষ্টি করে সুবিধা নিতে চাইবে, সরকার ও আওয়ামী লীগ চুপচাপ দেখে যাবে না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে মাঠে থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করার নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। পাশাপাশি কর্মসূচির নামে শান্তি বিনষ্ট করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশনাও আছে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করার প্রয়োজনে বিএনপির নাশকতার প্রতিরোধ করতে গেলে কিছু সংঘাত-সংঘর্ষ ঘটবে, এটা দেশের মানুষ মেনেও নেবে। অনাকাক্সিক্ষত সেসব ঘটনা ঘটলেও সেদিকটার প্রতি আপাতত নজর দিতে চায় না ক্ষমতাসীনরা। তাতে মিডিয়া ও তথাকথিত সুশীল সমাজের কিছু সমালোচনার দায় নিতেও প্রস্তুত রয়েছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা লক্ষ রাখছি বিএনপি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচির আড়ালে সহিংসতা ও নাশকতা সৃষ্টি করতে না পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকবে ব্যাপারটা তেমন নয়। আমরা প্রত্যেকের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করতে আগ্রহী। তবে সহিংসতা ও নাশকতা করলে এর যথাযথ জবাব দেওয়া হবে।’
সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথের আন্দোলন-কর্মসূচিতে লাঠির সঙ্গে জাতীয় পতাকা বেঁধে অংশ নিচ্ছে। দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, আত্মরক্ষায় লাঠির সঙ্গে জাতীয় পতাকাসহ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে তারা, আক্রান্ত হলেই কেবল এটি ব্যবহার করা হবে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের লাঠির সঙ্গে জাতীয় পতাকা বহন করে বিএনপির কর্মসূচি পালনের সমালোচনা করে বলেন, ‘আন্দোলন করুন, কিন্তু লাঠিবাজি চলবে না। রাজপথ কারও পৈতৃক সম্পত্তি নয়। জনগণের জন্য রাস্তায় নামব আমরাও। অপেক্ষায় আছি, দেখছি। সামনের দিনে লাঠিতে জাতীয় পতাকা নিয়ে মাঠে নামলে বিএনপির খবর আছে।’
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সমাবেশ তো আমরা করছি অনেক দিন ধরে। কখনো লাঠি নিয়ে নামিনি। এখন কেন নামতে হচ্ছে তা দেশবাসী জানে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ যখন একাকার হয়ে আমাদের ওপর হামলা করছে তখন আত্মরক্ষায় আমরা লাঠি নিয়ে নেমেছি। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ কিংবা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা করলে আমরা বসে থাকব না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলব।’ গতকাল বুধবার বিকেলে রমনার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের কোনো ধরনের সভা-সমাবেশে লাঠিসোটা বা দেশি অস্ত্র বহন করা যাবে না।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা শুরুতেই লাঠি নেইনি। যখন আক্রান্ত হয়েছি তখন আত্মরক্ষায় লাঠি নিয়েছি। আমরা চাই না লাঠি নিতে। আওয়ামী লীগ বিনা কারণে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা না করলে, পুলিশ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করলে আমাদের লাঠির প্রয়োজন নেই। ডিএমপির এই নির্দেশনা শুধু বিএনপির জন্য কি না তা সময় হলে আমরা দেখব।’
অসহনীয় লোডশেডিং, জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও পুলিশের গুলিতে দলের তিন নেতাকর্মীর মৃত্যুর প্রতিবাদে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে বনানীতে মোমবাতি প্রজ¦লন কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। কর্মসূচি শেষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অতর্কিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল মিন্টুসহ অনেকে আহত হন। পরদিন ১৮ সেপ্টেম্বর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে বিএনপি নেতারা বলেন, ‘আঘাত আসলে তা মোকাবিলার জন্য আমরা প্রস্তুত।’ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল মারলে লাঠি নিয়ে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান তারা।
এর পরের দিন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এক সমাবেশে খিলক্ষেত থানার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক শওকত উল ইসলাম লাঠি নিয়ে সমাবেশে অংশ নেন। শওকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শনিবার গুলশানে আমাদের শান্তিপূর্ণ মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করে। হামলায় আমাদের দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল মিন্টুসহ কয়েকজন আহত হন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নেতাদের নিরাপত্তা না দিয়ে বরং তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছে। এটা খুব অন্যায়। এভাবে চলতে পারে না। এই কারণে নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা লাঠি নিয়ে এসেছি।’
সর্বশেষ গত সোমবার রাজধানীর হাজারীবাগের সিকদার মেডিকেল কলেজের কাছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী লাঠিতে জাতীয় পতাকা বেঁধে অংশ নেন। সেদিন সমাবেশের আগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ হয়। গত মঙ্গলবার রাজধানীর ইস্কাটনের সমাবেশেও লাঠি বহন করে নেতাকর্মীরা। তবে সেদিন কোনো সংঘর্ষ হয়নি।
বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আমরা কর্মসূচি পালন করেছি কিন্তু কখনো লাঠি বহন করিনি, এখন করতে হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করলে, নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করলে আমাদের লাঠি হাতে নিতে হতো না।’
যুবদল নেতা এইচ এম দীন মোহাম্মাদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী হামলা ও পুলিশের নির্যাতন থেকে নিজেদের বাঁচাতে আমরা সমাবেশে লাঠি বহন করি।’ সাবেক ছাত্রদল নেতা আসাদুল আলম টিটু বলেন, ‘খালি হাতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। আত্মরক্ষার্থে জাতীয় পতাকা বাঁধা বাঁশের লাঠির বিকল্প নেই। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে আমরা লাঠি নিয়ে সমাবেশে যাচ্ছি।’
সাবেক ছাত্রদল নেতা মির্জা ইয়াসিন আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যখন আমরা দেখি দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে, আমার ভাই লাশ হচ্ছে গুম হচ্ছে তখন আমরা দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য, আঠারো কোটি মানুষের ও আমাদের জীবন বাঁচানোর জন্য জাতীয় পতাকা বাঁধা বাঁশের লাঠি নিয়ে রাজপথে নেমেছি। এটা চলতেই থাকবে। আমরাই এই যুগের মুক্তিযোদ্ধা। গত ১৫ বছরের দুঃশাসন বিএনপিকে রত্নের খনি দিয়েছে, বিএনপিই তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে ইনশাআল্লাহ।’
সাবেক ছাত্রদল নেতা আজমল হোসেন পাইলট দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির কোনো সভা-সমাবেশেই দলের নেতাকর্মীরা প্রথমে হামলা করেছে এমন নজির নেই। প্রতিপক্ষ যখন রামদা-চাপাতি-রড-হকিস্টিক প্রভৃতি দেশি অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে তখন ঘুরে দাঁড়ানো ছাড়া আর উপায় থাকে না। আত্মরক্ষা করা ফরজ।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা জাহিদুর রহমান ইমন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সমাবেশে লাঠি বহন করি না। আমরা জাতীয় পতাকা নিয়ে সমাবেশে যাই। এটা করা হয় জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা বহন করার জন্য।’
ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সম্পাদক হাফিজুর রহমান সোহান বলেন, ‘একজন নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করা। কিন্তু সরকারের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের দফায় দফায় হামলা বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের জীবন আজ শঙ্কাগ্রস্ত। আত্মরক্ষার্থে কর্মীরা সমাবেশে বাঁশের লাঠি নিয়ে আসছে।’
ছাত্রদল নেতা নাহিদুর রহমান নিপু বলেন, ‘বিএনপির চলমান বিক্ষোভ, সমাবেশ ও আন্দোলন দেশের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন। দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে গণতন্ত্রকামী বিএনপি নেতাকর্মীরা দেশপ্রেমের প্রতীকস্বরূপ সমাবেশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে আসেন। বাঁশের লাঠিকে হাতিয়ার বলার কোনো সুযোগ নেই। বিএনপির মূল হাতিয়ার হচ্ছে জনগণ।’
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মূলমন্ত্র ধর্ম নিরপেক্ষতা সমুন্নত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘একমাত্র ভরসা’ উল্লেখ করেছে ভারতের বহুল প্রচারিত ইংরেজি সাপ্তাহিক ইন্ডিয়া টুডে। শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন উপলক্ষে গত বুধবার প্রকাশিত ওই নিবন্ধে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মতো মর্মান্তিক ঘটনা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য বিরোধীদের সমালোচনাও করা হয়েছে।
ইন্ডিয়া টুডের ডিজিটাল বিভাগের নির্বাহী সম্পাদক দীপ হালদার তার সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে এ নিবন্ধে লিখেছেন, দেশটির হিন্দুদের জন্য ‘শেখ হাসিনাই একমাত্র ভরসা’।
তৃণমূল পর্যায়ের হিন্দুদের সঙ্গে লেখকের আলোচনা এ বিষয়টিকে আরও বিস্তৃত ও স্পষ্ট করেছে বলেও নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা প্রদর্শিত কঠোর রাষ্ট্রনীতির প্রতি ইঙ্গিত করে লেখাটিতে বলা হয়, ‘বঙ্গবন্ধু পরিবারের মতো সন্ত্রাসের শিকারদের সর্বদা উগ্রবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য গণনা করা যেতে পারে।’ বেগম জিয়াসহ ’৭৫-পরবর্তী সরকারগুলোর রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের খুনিদের মধ্যে একটি শক্তিশালী সংযোগের উল্লেখ করে, এ নিবন্ধে বিএনপি-জামায়াত জোটের সমালোচনা করা হয়। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মতো মর্মান্তিক ঘটনা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্যও তাদের সমালোচনা করা হয়েছে।
ধানমণ্ডি ৩২-এ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে তার পরিদর্শনের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি লিখেছেন, ‘আমি এ সত্য থেকে সান্ত¡না পেয়েছি যে আপনার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে বাংলাদেশ কল্পনা করেছিলেন এবং গড়ে তুলেছিলেন, সেখানে গত বছর তাণ্ডব চালানো এমন মৌলবাদীদের জন্য কোনো স্থান ছিল না।’
দীপ হালদার লিখেছেন, ‘আমার মনে আছে, কীভাবে আপনার পরিবার দেশকে ধর্মনিরপেক্ষ রাখার চেষ্টা করার জন্য এত বড় মূল্য দিয়েছে এবং কীভাবে আপনি, ম্যাডাম প্রধানমন্ত্রী, চার দশকে ১৯ বার হত্যা প্রচেষ্টা থেকে বেঁচে গেছেন।’
‘বাংলাদেশে এক ধরনের দুষ্ট রাজনীতির চক্র আছে, তারা ভবিষ্যতেও থাকবে। সেই শ্রেণির মানুষরা নষ্ট রাজনীতির দুষ্টচর্চায় অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে আমাকে কেউ পক্ষে আবিষ্কার করেছে। আবার কেউ আমাকে বিপক্ষে আবিষ্কার করেছে। আজ তাদের বিরুদ্ধে আমার কোনো অনুযোগ নেই, কোনো অভিযোগ নেই। আপনারা ভালো থাকবেন এ কামনা করি। এ দেশ আমার, আপনার সবার। দেশকে সবার আগে ভালোবাসতে হবে’ এ কথা বলেন পুলিশের বিদায়ী মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ অডিটরিয়ামে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, ‘ডিএমপি কমিশনার, র্যাবের ডিজি ও আইজিপি হিসেবে পুলিশের শীর্ষ পদে ১২ বছর দায়িত্ব পালনকালে সব ভালো কাজের ক্রেডিট সরকার ও জনগণের আর ব্যর্থতার দায় আমার।’
আজ শুক্রবার আইজিপি বেনজীর আহমেদ পুলিশ বাহিনীতে প্রায় সাড়ে ৩৪ বছরের কর্মজীবন শেষ করবেন। অবসরে যাওয়ার আগে নিজের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের নানা অর্জন সম্পর্কে এবং প্রাসঙ্গিক নানা বিষয়ে কথা বলেন তিনি। ধন্যবাদ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দেশের জনগণকে।
চাকরিজীবনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়ে জানতে চাইলে বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘সব চ্যালেঞ্জই চ্যালেঞ্জ। যতক্ষণ পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম না করতে পারব, ততক্ষণ পর্যন্ত সেটাই চ্যালেঞ্জ। আপনারা মনে করতে পারছেন কি না, ফরমালিনের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলাম। ম্যাজিস্ট্রেটদের সহযোগিতা নিয়ে শত শত টন ফরমালিন মেশানো মাছ-মাংস-ফল-সবজি ধংস করে জাতিকে ফরমালিনমুক্ত খাবার উপহার দিয়েছি। ওই সময়ে দেশে বছরে প্রায় ৭০০ টন ফরমালিন আমদানি হতো। এখন আমদানি হয় কমবেশি ১০০ টন। সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করা ছিল আরেকটি চ্যালেঞ্জ। এ সমস্যা প্রায় ৪০০ বছরের। দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪০ বছর পর্যন্ত দস্যুরা সুন্দরবনে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। সুন্দরবনে যারা জীবিকা নির্বাহ করত, তারা দস্যুদের কাছে জিম্মি ছিল। মৌসুমের সময় নিয়মিত অপহরণ করত সাধারণ মানুষকে। আমরা তিন ডজন ডাকাতকে আত্মসমর্পণ করিয়েছি। এই ১২ বছরে যা কিছু ভালো হয়েছে, তার ক্রেডিট সরকারের এবং বাংলাদেশের মানুষের। ব্যর্থতা থাকলে সেগুলোর দায় ডেফিনিটলি আমার। কারণ, সেসব ক্ষেত্রে হয়তো রাষ্ট্রের দায়িত্ব আমি ঠিকমতো প্রতিপালন করতে পারিনি।’
দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার বিষয়ে জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, ‘এটাকে সফলতা-ব্যর্থতার মাপকাঠি হিসেবে বরং না দেখি। আমি দেখতে চাই, অর্জন কতটা হয়েছে আর অর্জনের কী বাকি আছে। অর্জনের বিষয়টা একটা প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়া কখনো শেষ হওয়ার নয়। আমি দৌড়েছি, এখন আমার সহকর্মীর কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরিত হলে তিনি দৌড়াবেন। থিউরি অব পারফেকশন বলে, পৃথিবীতে কিছুই পারফেক্ট নয়। মানুষের মানবিক সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের যা কিছু করতে হয় মানবিক সীমাবদ্ধতার মধ্যেই করতে হয়।’
কক্সবাজারের কাউন্সিলর একরাম নিহত হওয়ার সময় র্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন ড. বেনজীর আহমেদ। একরামের নিহত হওয়ার ঘটনা তাকে অনুতপ্ত করে কি না জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, ‘বিষয়টি একটি লিগ্যাল ইস্যু। যে পর্যন্ত বিষয়টি অন্যায্য বা অনৈতিক প্রমাণিত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ বিষয়ে আমার অনুভূতি প্রকাশ করার সুযোগ নেই। ঘটনাটি আমার ব্যক্তিগত ক্যাপাসিটিতে ঘটেনি, ঘটনাটি ঘটেছে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার ফিল্ড লেভেলের লোকজনের মাধ্যমে। যে ভদ্রলোক নিহত হয়েছেন, তার সঙ্গে ওখানকার মাঠপর্যায়ের লোকজনের ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ ছিল না। তাই বিষয়টিকে ব্যক্তিগতভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে আমরা একটি বিষয় দেখি, আমাদের কোনো সহকর্মী দায়িত্বের বাইরে গিয়েছে কি না। কেউ যদি দায়িত্বের বাইরে গিয়ে কাজ করে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। একরামের বিষয়েও একাধিক তদন্ত হয়েছে।’
পুলিশের মধ্যে মানবাধিকারের উন্নয়নের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুলিশকে মানবাধিকারবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেবে বলে এ দেশের এনজিওগুলো শত শত কোটি টাকা নিয়ে এসেছে। কয়েক হাজার কোটি টাকা হবে। এসব টাকা আমরা আনিনি, এনেছে এনজিওগুলো পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। এনজিও কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, তবে যখনই তারা ডেকেছে, পুলিশ গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে। পুলিশকে মানবাধিকারবিষয়ক প্রশিক্ষণ সবসময় দেওয়া হয়। এ ছাড়া সরকার থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে পুলিশের জবাবদিহির ব্যবস্থা আছে।’
অবসরে যাওয়ার পর কী করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আজ পর্যন্ত দায়িত্বে আছি। অবসর নেব আগামীকাল (আজ)। পরে অবসর নিয়ে ভাবব। তবে অবসরের পর এ সমাজের অংশ হিসেবে মানুষের সঙ্গে বাস করব বাকি সারাটা জীবন। দেশের মানুষের অনেক অবদান রয়েছে আমার প্রতি, আমি চেষ্টা করব জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাদের পাশে দাঁড়াতে।’
অনেকে বলেন বেনজীর আহমেদ চাকরিজীবন শেষে রাজনীতিতে আসবেন, তিনি রাজনৈতিক নেতাদের মতো বক্তব্য দেন এমন প্রশ্নের জবাবে বিদায়ী আইজিপি বলেন, ‘আমি তো এমন কথা কখনো বলিনি। অন্যের বক্তব্যের বিষয়ে আমি কোনো উত্তর দিতে আগ্রহী নই।’
বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে অনেক সময় মানুষ মারা যায়, এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এগুলো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। আমাদের প্রাথমিক এবং প্রধান লক্ষ্য থাকে মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য। এর জন্য আমাদের হাতে অস্ত্র থাকে। এসব ঘটনার বিষয়ে নির্বাহী ও বিভাগীয় তদন্ত হয়।’
আইজিপি বলেন, ‘আমার ৩৪ বছর ৫ মাস ১৬ দিনের কর্মজীবনের মধ্যে ২০১০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১২ বছর পুলিশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদে দায়িত্ব পালন করেছি। ডিএমপি কমিশনার, র্যাব ডিজি ও সর্বশেষ আইজিপির দায়িত্ব। অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছি। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আপনারা সমর্থন জুগিয়েছেন, দেশবাসীও সমর্থন জুগিয়েছে। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। দায়িত্ব পালনকালে চেষ্টা করেছি মানুষের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। চাকরির শেষ দিন মানে আগামীকাল থেকে জীবনের একটি পাতা উল্টিয়ে নতুন পাতা পড়ার চেষ্টা করব। তার মানে আগামীকাল থেকে দেখা হবে না, কথা হবে না এমনটি নয়। সামাজিক জীব হিসেবে সবার সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে, যেখানেই সুযোগ পাব একসঙ্গে দায়িত্ব পালন করব।’
আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশ পুলিশের দুটি বিষয় সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কীভাবে আমরা সফলভাবে করোনা ক্রাইসিস অতিক্রম করেছি এবং সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের সাফল্য। কিছুদিন আগে জাতিসংঘের কাউন্টার টেররিজম ডিপার্টমেন্ট আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে, আমরা কীভাবে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সফল হয়েছি।’
অবসরে নিরাপত্তা : আজ অবসরে যাবেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। এ সময়ে তার দায়িত্বে থাকবে একটি এসকর্ট গাড়িসহ পুলিশের ছয়জন সদস্য। তার বাসায় নিরাপত্তা দেবেন একজন এএসআইসহ তিন কনস্টেবল। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেকোনো আইজিপি অবসরে যাওয়ার আগে মন্ত্রণালয়ে যদি আবেদন করেন তাহলে সিকিউরিটিসহ সব ধরনের সুবিধা পান। সাবেক আইজিপি শহীদুল হকও আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশি সহায়তা পেয়েছেন। তবে সাবেক আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী পুলিশ চেয়ে আবেদন করেননি। বেনজীর আহমেদ অবসরকালীন এক বছর এ সুবিধা পাবেন।
মিয়ানমারে সরকারি গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দেশটির গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চিকে আরও ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই অভিযোগে তার সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক শন টার্নেলকেও একই সাজা দিয়েছে জান্তা আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার জান্তা আদালতের এই রায়ের বিষয়ে এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানায় বিবিসি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে মিয়ানমারে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। তবে অভিযুক্ত উভয়কেই ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অবশ্য দুজনই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছিলেন।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। বন্দি করা হয় গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি ও তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) বিভিন্ন স্তরের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে।
সংবাদমাধ্যম বলছে, বিভিন্ন অভিযোগে হওয়া সব মামলায় যদি সু চি দোষী সাব্যস্ত হন তাহলে সব মিলিয়ে তার প্রায় ১৯০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। রাজধানী নেইপিদোর রুদ্ধদ্বার আদালতে সু চির বিরুদ্ধে বিচারকাজ চলছে।
রয়টার্স বলছে, এখন পর্যন্ত বিভিন্ন মামলায় অং সান সু চিকে ১৭ বছরেরও বেশি কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। অবশ্য বরাবরই তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
এদিকে সু চির উপদেষ্টা শন টার্নেল অস্ট্রেলিয়ার ম্যাকুয়ারি ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক। সামরিক অভ্যুত্থানের কয়েক দিন পর তিনিও আটক হন।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং এর আগেই বলেছিলেন, টার্নেলকে বিচারের বিষয়ে জান্তা আদালতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে তার দেশ।
বৃহস্পতিবারের এই রায় নিয়ে অবশ্য এখনো কোনো মন্তব্য করেনি মিয়ানমারের জান্তা সরকার। তবে তারা জোর দিয়ে বলছে, মিয়ানমারের আদালত স্বাধীন এবং যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা যথাযথ আইনি সুবিধা পাচ্ছে।
ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, জবাবদিহির আওতায় না আসা পর্যন্ত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। এ নিয়ে আমাদের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার গুলশানে একটি হোটেলে ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসাডর’ অনুষ্ঠানে পিটার হাস বলেন, এই নীতি ততক্ষণ পর্যন্ত পরিবর্তন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দায়বদ্ধতা ও সংস্কার হচ্ছে।
পিটার হাস বলেন, আমরা সরকারকে যেমন বলেছি ঠিক তেমনি প্রকাশ্যে বলেছি এই নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য কাউকে শাস্তি দেওয়া নয়। এর ফলে তারা যাতে তাদের আচরণ পরিবর্তন করে। গত বছরের ডিসেম্বরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এটা খুব ভালো।
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পিটার হাস বলেন, নির্বাচন কমিশনের করণীয় বা সংবিধান সংশোধনী বিষয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই। তবে আমরা বহুমুখী সমাজ দেখতে চাই। সাধারণভাবে পেশাদার কূটনীতিকরা ‘হতে পারে’ এমন কোনো বিষয়ে মন্তব্য করেন না। নির্বাচন শুধু একটি দিনের ঘটনা নয়। বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছভাবে হবে কি না, তা নির্ভর করছে বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর। রাজনৈতিক দলগুলো স্বাধীনভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করতে পারছে কি না, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ তাদের মতপ্রকাশের সুযোগ পাচ্ছে কি না, তার ওপর নির্ভর করছে এটি। তবে বাংলাদেশে বর্তমানে যে রাজনৈতিক সহিংসতা চলছে তা একটি সঠিক নির্বাচনের জন্য সহায়ক নয় বলে উল্লেখ করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে ও পরের ঘটনাও একটি অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অংশ, তাই বাংলাদেশের বর্তমান সহিংসতার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও বিশ্ব সম্প্রদায় নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বাংলাদেশের জনগণ ঠিক করবে সুষ্ঠু ও স্বাধীন নির্বাচনের বিষয়। এমন কোনো নির্বাচন নেই, যেখানে সহিংসতা ভালো পরিবেশ তৈরি করতে পারে।
একজন কূটনীতিক কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে, বিশেষ করে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে এ ধরনের মন্তব্যের এখতিয়ার রাখে কিনা? আর এমন মন্তব্য কূটনৈতিক শিষ্টাচারের বাইরে কিনাএমন প্রশ্নের জবাবে পিটার হাস বলেন, ‘আমি কূটনৈতিক শিষ্টাচার সম্পর্কে অবহিত, অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করা যায় না। আমি এটাও অবহিত যে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে নির্বাচন করার বিষয়ে অনেক পরামর্শ ও সুপারিশ রয়েছে। আমি যখন নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করি, আমি ওই পরামর্শ বিষয়ে কথা বলি এবং আমি বলতে চাই যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অর্জনে সহায়তা করতে চায়। কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন দেয় না যুক্তরাষ্ট্র।’
পিটার হাস বলেন, ইন্দো প্যাসিফিক কৌশলে (আইপিএস) বাংলাদেশের যোগ দেওয়া বা না দেওয়াটা কোনো বিষয় নয়। এটা একটি নীতি। এটা বাংলাদেশ কীভাবে নেয় সেটাই দেখার বিষয়। আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানো যুক্তরাষ্ট্রের নীতি। এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ও উন্নয়নে আঞ্চলিক কানেকটিভিটিকে আমরা প্রাধান্য দিয়ে থাকি। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (বিআরআই) যোগ দেওয়াটা বাংলাদেশের নিজস্ব সিদ্ধান্ত এবং বাংলাদেশ কোন জোটে যোগ দেবে, কোন জোটে যোগ দেবে নাসেটা বাংলাদেশের বিষয়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ দেওয়ারও চেষ্টা করছি। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের সহায়তা দিচ্ছি। আমাদের নানা উদ্যোগ রয়েছে। আমরা এই সংকট সমাধানে আমাদের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) ও জার্মান গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ফ্রেডরিখ এবার্ট স্টিফটাং মিট দ্য অ্যাম্বাসাডর অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, সাবেক রাষ্ট্রদূত, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা, শিক্ষক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন।
গাজীপুরের টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীতে ৩৬০ টাকা বেতনে কর্মজীবন শুরু করা আসাদুর রহমান কিরণ এখন গাজীপুর মহানগরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর বিভিন্ন দল বদলে ক্ষমতার পাশাপাশি প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। বিভিন্ন সূত্র মতে, কিরণ এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। তার এত সম্পদের মালিক হওয়ার পেছনে রয়েছে দখলবাজি, জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর দুর্নীতি ও অনিয়ম।
কিরণের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ ৩১টি দপ্তরে যে অভিযোগ জমা পড়েছে, তাতে ডিগবাজি দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসা এই ভারপ্রাপ্ত মেয়রের ৬০০ কোটি টাকার দুর্নীতি-অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য হাইকোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছে।
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর নির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। নগরীর ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ তখন ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণকে একাধিকবার ফোন করা হয়েছে। মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।
৩১ দপ্তরে অভিযোগ : গত বছর ২০ জুলাই ৩১টি দপ্তরে সচেতন নাগরিক, বাংলাদেশের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন মো. নজরুল ইসলাম। লিখিত অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, দুদক, স্থানীয় সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে গত বছর জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালন না করেও সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে টাকা আত্মসাৎ করেছেন কিরণ।
জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার অভিযোগপত্রে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের দুর্নীতি ও অনিয়ম চিত্র তুলে ধরেছি।’
কিরণের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র : ভারপ্রাপ্ত মেয়রের চেয়ারে বসে কিরণ দুর্নীতি-লুটপাট, কমিশন বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। দায়িত্ব নেওয়ার পর তার নজর পড়ে পুবাইলের চিরুলিয়ায় অর্পিত সম্পত্তির ওপর। ২৩ বিঘা জমি নিজের কবজায় নেন কিরণ। এর জন্য ভুয়া জমির মালিক বানান একজনকে। এ জমি নিজের করায়ত্তে নিতে সিটি করপোরেশনের ১৮ লাখ টাকা কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। জানাজানি হয়ে গেলে কিছুদিন আগে কর পরিশোধ করেন। তবে অবৈধ প্রক্রিয়ায় জমির মালিক হওয়ায় ওই জমির খাজনা এখনো দিতে পারেননি কিরণ।
পোশাকশিল্প কারখানার সবচেয়ে বড় নগরী গাজীপুর। সিটি করপোরেশনের আয়ের সবচেয়ে বড় মাধ্যম শিল্প ও হোল্ডিং ট্যাক্স। আর সেখানেই অনিয়মের বড় ক্ষেত্র তৈরি করেছেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র। তিন/পাঁচ কোটি টাকার বকেয়া হোল্ডিং, শিল্প ট্যাক্স অর্ধেকে নামিয়ে এনে করপোরেশনের কোষাগারে মাত্র ৫০ লাখ টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে রেহাই দিয়ে দেন করদাতাদের। কিরণের এই কৌশলে বেঁচে যান কর ফাঁকি দেওয়া শিল্প-মালিকরা। কিন্তু রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় রাষ্ট্র। নগরের আটটি জোনে করের টাকা আত্মসাৎ করার অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিরণ ২০১৬-১৭ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় একটি টেন্ডার আহ্বান করেন। টেন্ডার নম্বর : জিসিসি/জেড। ওই টেন্ডারের কাজের অগ্রগতি না থাকায় জাহাঙ্গীর আলম মেয়র নির্বাচিত হলে ওই টেন্ডারের কোনো বিল পরিশোধ করতে পারেননি কিরণ। ২০২১ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই বিল পরিশোধের উদ্যোগ নেন। ওই সময়ের বিভিন্ন ঠিকাদারকে ডেকে তাদের কাছ থেকে কাজের হিসাব করে তার কমিশন আদায় করেন কিরণ। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কিছু চিত্র সিটি করপোরেশনের চেক রেজিস্ট্রার বই ঘেঁটেও পাওয়া গেছে।
উত্তরায় ‘অস্থায়ী কার্যালয়’ : উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডে ১০ নম্বর বাড়ির ছয়তলায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একটি ‘কার্যালয়’ করেছেন কিরণ। উত্তরার এ কার্যালয়ে বসে ঠিকাদারদের নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। লেনদেন-দরবার সবই হয় এ বাড়িতে বসেই। পার্সেন্টেজ ছাড়া যেমন ঠিকাদারদের কাজের বিল পরিশোধ করা হয় না, তেমনি পার্সেন্টেজ ছাড়া ঠিকাদারি কাজও পান না কেউই। কোন কাজ কে পাবে, কে পাবে না, কে কত পার্সেন্ট কমিশন দেবে এসব হিসাব ও মধ্যরাতের প্রমোদ-ফুর্তির যে ব্যয় হয় সিটি করপোরেশনের এলআর ফান্ড থেকে নির্বাহ করা হয়। শিল্পাঞ্চল-সমৃদ্ধ গাজীপুর নগরীর অধিকাংশ ব্যবসায়ী-ঠিকাদার ‘১০ পার্সেন্ট’ হিসাবেও কিরণকে চিনে-জানে।
বর্তমানে গাজীপুর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সারা জীবন রাজনীতি করেছি দলের জন্য। অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছি কিন্তু মূল্যায়ন পাইনি। একটি কাজের জন্য আমি ছয় মাস ঘুরছি। কিন্তু কিরণ আমাকে কাজ দিচ্ছেন না। কারণ আমার কাছ থেকে পার্সেন্টেজ নিতে পারবেন না।’
শুধু কী তা-ই, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজনের নামে গত বছর ১৭ মার্চ কোনো আয়োজন না করেই কিরণ সিটি করপোরেশনের খরচের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগও আছে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৭৬ জন কাউন্সিলর এবং কিছু কর্মকর্তার সিলেটে পিকনিক আয়োজন করার নামে করপোরেশনের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা খরচ বাবদ দেখিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগও আছে।
কিরণের সম্পদ : টঙ্গীর পাগাড়, ঢাকার আশুলিয়া এবং গাজীপুরে নিজ নামে, স্ত্রী, শ্যালক ও শ্যালিকার নামে ১১২ বিঘা জমির মালিক কিরণ। টঙ্গীর পাগাড়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কিছু জমি রয়েছে, যা নয়ছয় ও ভয়ভীতি দেখিয়ে দলিল করে নিয়েছেন তিনি। নজরুল ইসলামের অভিযোগ অনুযায়ী, উত্তরায় ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডের ১০ নম্বর বাড়িটি সাততলা। এটি নির্মাণ করতে কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। একই এলাকার ৭ নম্বর সেক্টরে ১৮ নম্বর রোডে ৯৫ নম্বর বাড়ি রয়েছে। বারোতলা নির্মাণাধীন ওই ভবনের আনুমানিক মূল্য ৩৫ কোটি টাকা। গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কে ফ্ল্যাটের তথ্যও পাওয়া গেছে। ২ হাজার ৫০০ বর্গফুটের ওই ফ্ল্যাটের মূল্য কমপক্ষে সাত কোটি টাকা।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় স্ত্রী ও নিজের নামে অন্তত ২০০ বিঘা জমির ওপর ভারপ্রাপ্ত মেয়রের কারখানা রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি টাকা হতে পারে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অধীনে টঙ্গীতে তিনটি কারখানা আছে তার। এগুলোর আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি কোটি টাকা।
কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত কয়েকশ কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিজের ও স্ত্রীর নামে যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্ক শহরে বাড়ি করেছেন বলেও অভিযোগ আছে। কিরণ দ্বৈত নাগরিক বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।
হাইকোর্টের আদেশ : গত বছরের ২০ জুলাই দুদকে জমা পড়া অভিযোগ লাল ফিতায় আটকে গেলে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন হয়। গত বছর ২১ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করা হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত কিরণের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে। হাইকোর্ট চার মাসের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে সময় বেঁধে দেন। একই সঙ্গে গাজীপুরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।
রাজনীতিতে উত্থান : প্রিন্টিং প্রেস কারখানায় বাইন্ডার-ম্যান হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন আসাদুর রহমান কিরণ। ১৯৮৪-৮৫ সালে এলিট প্রিন্টিং প্রেস নামে ওই কারখানায় চাকরি করা কিরণ ১৯৮৬ সালে রাজনীতিতে আসেন। ওই সময় তিনি জাতীয় পার্টির যুব সংগঠন যুব সংহতির টঙ্গীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই সময় গাজীপুর নিয়ন্ত্রণ করতেন হাসান উদ্দিন সরকার। তিনি জাতীয় পার্টি ও পরে বিএনপির রাজনীতিতেও যুক্ত হন। ওই সময়ের সবচেয়ে ক্ষমতাধর হাসান উদ্দিন সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা ও তার ঘনিষ্ঠ পরিচিতি লাভ করে শুরু করেন জমি দখল। টঙ্গী, পাগাড় মৌজায় হিন্দু-খ্রিস্টানের মালিকানায় থাকা জমি দখল করে নেন তিনি। পরে প্লট বানিয়ে চড়া দামে বিক্রি করেন। তবে প্রিন্টিং প্রেসের শ্রমিক কিরণ ওই সময় টঙ্গীর বিসিক এলাকায় শ্রমিক নেতা হিসেবেও আধিপত্য বিস্তার করেন। হিন্দু-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কেউ জমি দিতে না চাইলে রাজনৈতিক চাপ ও সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে উচ্ছেদ করতেন। পাগাড় শিল্পাঞ্চল এলাকা হওয়ায় ওই এলাকায় টার্গেট করে জমি দখল করেন কিরণ। টঙ্গী পৌরসভা হিসেবে প্রথম ভোটে ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কমিশনারও নির্বাচিত হন। তত দিনে ক্ষমতা-সম্পদ ও অঢেল অর্থের মালিক হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর গুরু পাল্টে কিরণ হয়ে যান সাবেক পৌর মেয়র গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লার ‘মাইম্যান’। এই সুযোগে ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত হয়ে ওঠে কিরণের। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে আজমত উল্লা মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক আবদুল মান্নানের কাছে পরাজিত হন। কিরণ মূলত দুর্নীতি-অনিয়ম শেখেন তখন থেকেই। বিএনপি নেতা মান্নান মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হলে তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান। গাজীপুরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচন কেন্দ্র করে আজমত উল্লার সঙ্গেও সুসম্পর্ক নেই কিরণের।
গাজীপুরের মাওনা এলাকার আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চেয়ার ছুঁয়েই কিরণ স্বেচ্ছাচারিতা, লুটপাট, ভূমিদখলসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তিনি করেননি। দলীয় লোককে সরিয়ে রেখেছেন, সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রেখেছেন। কারণ, কিরণ আওয়ামী লীগ নয়, মূলত সুবিধাবাদী।’
ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিষয়ে জানতে চাইলে আজমত উল্লা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিরণ অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন সত্যি, তবে তিনি দলের জন্য কাজ করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের যে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে সেটা তো প্রমাণ হয়নি এখনো। প্রমাণ হলে তখন মন্তব্য করা যাবে।’
বরকতময় রমজান মাস পাওয়া প্রতিটি মুমিনের জন্য মহা সৌভাগ্যের বিষয়। কেননা এ মাসের মর্যাদা অনেক বেশি। যাতে বান্দার জন্য মহান মনিবের সন্তুষ্টি অর্জন করা অন্য সময়ের চেয়ে সহজতর। কোরআনে কারিমের ভাষায়, ‘তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করবে এবং তোমাদের সৎপথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করবে এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।’ -সুরা বাকারা : ১৮৫
বর্ণিত আয়াতে ‘শাহিদা’ (উপস্থিত ও বর্তমান থাকা) শব্দ দিয়ে রোজা সম্পর্কিত বহু হুকুম-আহকাম ও মাসয়ালা-মাসায়েলের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। আর আয়াতের শেষাংশে বান্দাকে ‘কৃতজ্ঞ’ হতে বলা হয়েছে। কৃতজ্ঞতর সাধারণ অর্থ উপকারীর উপকার মনে রাখা ও স্বীকার করে। এর সঙ্গে প্রশংসা, মহিমা, মূল্য ও যোগ্যতার বিষয়গুলো জড়িত। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ইসলামের শিক্ষা হলো- সর্বাবস্থায় সবকিছুর জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো। কেননা তিনিই তো এর প্রাপ্য। চোখের প্রতি পলকে এবং হৃৎপিণ্ডের ওঠানামার সঙ্গে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে তার দেওয়া অসংখ্য নিয়ামতে ডুবিয়ে রেখেছেন। এই নিয়ামত এবং দান, যেগুলো প্রতি দিনে-রাতে নবায়ন হচ্ছে, সেগুলোর জন্য আমাদের উচিত আল্লাহকে ধন্যবাদ জানানো। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং যারা উপদেশ গ্রহণ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশে ইচ্ছুক, তাদের জন্য রাত এবং দিনকে সৃষ্টি করেছেন পরস্পরের অনুগামীরূপে।’ -সুরা আল ফুরকান : ৬২
ইসলাম কৃতজ্ঞতাকে উচ্চাসন দিয়েছে। তাই তো উপকারী ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে। এ কৃতজ্ঞতা যদি কেউ প্রকাশ না করে, তাহলে সে সমাজের চোখে তো নিন্দিত হয়ই, সে নিন্দিত হয় মহান রাব্বুল আলামিনের কাছেও। নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করে না, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞ হয় না।’ -জামে তিরমিজি : ১৯৫৪
উল্লিখিত কোরআনের আয়াত ও হাদিস দ্বারা এটা স্পষ্ট যে মানুষের অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা আদায় করা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশেরই অংশ। ইসলাম বলে, কৃতজ্ঞতার মানসিকতা লালন করে যেতে হবে। এমন যেন না হয়, আমার বিপদে একজন পাশে দাঁড়াল, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিল, কিন্তু আমি তা ভুলে গেলাম, তার প্রতিপক্ষ হয়ে গেলাম। এমন হলে পারস্পরিক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়।
অকৃতজ্ঞতা নীতিহীনতার পরিচয়। এর মাধ্যমে নিয়ামতের অপরিসীম ধারাকে দাতার সামনেই অসম্মান করা হয়। এ ধরনের আচরণের ফলে আরও বেশি কিছু চাওয়া কিংবা পাওয়ার অধিকার হ্রাস পায়। মানবজাতির প্রতি আদেশ হলো, তাদের প্রতিপালকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে।
কৃতজ্ঞতা কোনো কঠিন দায়িত্ব নয়, যেখানে ধৈর্যের সঙ্গে পথ চলতে হয়; বরং এটি হলো পরিপূর্ণতার পথ, যেটি দৃঢ় সংকল্প এবং উদ্দেশ্য নিয়ে পাড়ি দিতে হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ! আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে পবিত্র বস্তু আহার করো এবং আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো; যদি তোমরা শুধু তারই ইবাদত করে থাকো।’ -সুরা বাকারা : ১৭২
মধুর আবেগ এবং হৃদয়ের উপলব্ধি দিয়ে আল্লাহর নিয়ামতের শোকরিয়া আদায়, একজন ব্যক্তিকে আরও বেশি পাওয়ার যোগ্য করে তোলে। তার রহমতের বর্ষণ ঠিক সেই উর্বর জমিতে ঢালা পানির ন্যায়, যা জমিনকে ফুলে-ফলে সুশোভিত করে তোলে। কৃতজ্ঞতা শুধু ঠোঁটে প্রকাশযোগ্য কোনো শব্দ নয়; বরং কৃতজ্ঞতা হলো হৃদয়ের এমন এক অনুভূতি যা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তার জীবনের প্রতিটি কাজ এবং আচরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন। অকৃতজ্ঞতার পরিণাম সম্পর্কে মানবজাতিকে ভয়ংকর পরিণতির ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, আর অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ -সুরা বাকারা : ১৫২
রমজান মাসে অনেক পুণ্যের সমাহার ঘটে। পুণ্যময় এসব কাজের একটি হতে পারে আল্লাহকে স্মরণ ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা। কারণ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারীকে অনুগ্রহ লাভের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
লেখক : খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
আজ রবিবার (২ এপ্রিল) সকাল ৯টায় রাজধানী ঢাকার বায়ুর মানের স্কোর ছিল ১২৫। এই স্কোরের অর্থ- ঢাকার দূষণমাত্রা 'সংবেদনশীলদের জন্য অস্বাস্থ্যকর'। বাতাসের মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (আইকিউএয়ার) সূচক থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
একই সময়ে বায়ুদূষণের শীর্ষে রয়েছে থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই। শহরটির দূষণের স্কোর ২৫৪ অর্থাৎ 'খুবই অস্বাস্থ্যকর'। দ্বিতীয় চীনের রাজধানী বেইজিং, স্কোর ১৬৬ অর্থাৎ 'অস্বাস্থ্যকর'। আর ১৬৪ স্কোর নিয়ে তৃতীয় ভারতের দিল্লি, এটিও 'অস্বাস্থ্যকর'।
উল্লেখ্য, স্কোর শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকলে বায়ুর মান ভালো বলে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে মাঝারি, সংবেদনশীলদের জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর, ২০১ থেকে ৩০০ খুবই অস্বাস্থ্যকর আর ৩০১-এর বেশি হলে বিপজ্জনক।
গত অক্টোবরের পর আর্সেনালের জার্সিতে প্রথম গোলের দেখা পেলেন গাব্রিয়েল জেসুস। তার আবার জোড়া গোল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের জ্বলে ওঠার দিনে লিডস ইউনাইটেডকে উড়িয়ে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ফের আট পয়েন্টে এগিয়ে গেল আর্সেনাল।
ঘরের মাঠে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতে আর্সেনাল। স্পট কিকে দলকে প্রথম এগিয়ে দেন জেসুস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেন হোয়াইট ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এর খানিক পরই জোড়া গোল পূর্ণ করেন জেসুস।
এরপর লিডস একটি গোল শোধ করলেও গ্রানিত জাকার গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে ফেরার পর এটিই প্রথম ম্যাচ ছিল আর্সেনালের। বিরতিতে যাওয়ার আগে নিজেদের মাঠে একই ব্যবধানে তারা হারিয়েছিল ক্রিস্টাল প্যালেসকে।
এই জয়ে ২৯ ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল গানাররা। ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর প্রথমবার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্সেনাল। তাদের সঙ্গে গত লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ব্যবধান ৮।
গানারদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিটি। একই দিন তারাও নিজেদের মাঠে লিভারপুলকে উড়িয়ে দিয়েছে ৪-১ গোলে।
ভাড়া করা বিমানে উড়িয়ে নিয়েও মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম ম্যাচে একাদশে রাখল না দিল্লি ক্যাপিটালস। আসরে তাদের শুরুটাও ভালো হলো না। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারল মোস্তাফিজবিহীন দিল্লি।
ঘরের মাঠে ৫০ রানের জয়ে আসর শুরু করল লক্ষ্ণৌ। ১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিল্লি থামে ৯ উইকেটে ১৪৩ রানে। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়ে লক্ষ্ণৌয়ের জয়ের নায়ক মার্ক উড।
এদিন দিল্লির ব্যাটিং ছিল পুরো ফ্লপ। দলের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ৪৮ বলে ৫৬ রান করেছেন। পাশাপাশি রাইলি রোশো ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু বাকিরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ফলে যা হরার তাই হলো ম্যাচের ফল।
এর আগে স্বাগতিক দলের হয়ে ঝড় তোলেন কাইল মেয়ার্স। এই ক্যারিবীয়ান ৩৮ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন। ২টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৭টি ছক্কা। এ ছাড়া নিকোলস পুরান ২১ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৩ রানের পুঁজি গড়ে লক্ষ্ণৌ।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এক বছরেরও কম। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচন হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করা দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো আন্দোলন করছে।
এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে এই চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিদেশিদের মধ্যে এবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অনেক বেশি। এর আলামত দেখা যাচ্ছে কয়েক মাস ধরে। নির্বাচন ছাড়াও দেশটি মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীন প্রশ্নে অনেক সোচ্চার। ২০২১ সালের ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি।
সরকারের তরফ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য তারা বিদেশিদের উদ্যোগ নিতে বলছে। একই সঙ্গে সরকার যেকোনো চাপে নতি স্বীকার করবে না, সেটাও বলেছে।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯০ সালে দেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি আসার পর থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক আগ্রহ বাড়ছে। নির্বাচনের এক বছর আগে থেকেই প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানা সবক দিতে থাকে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
তাদের মতে, বরং নির্বাচন ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রভাব লক্ষণীয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই প্রতিবেশী দেশ এবং বড় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সরকার নিয়ে সবচেয়ে বেশি আধিপত্য দেখিয়ে আসছিল ভারত। ১৯৯০ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পশ্চিমাদের প্রভাব। আর তিন দশক ধরে বিভিন্ন কূটনৈতিক জোট, আঞ্চলিক জোট এবং সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগ্রহ বেড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রভাবশালী দেশগুলোর নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ যতই থাক না কেন, এর মূল কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা। তারা মনে করছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সমাধান যদি নিজেরা না করতে পারি, তাহলে বাইরের প্রভাব বাড়তে থাকবে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালী উর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে তাদের প্রভাব বলয়ে রাখতে চায়। তাদের নিজেদের দেশেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। বর্তমান সরকারও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করছে। তাদের এই চাপ কাজে দেবে না।’ আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলের অভিমত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এবং আঞ্চলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কারণও তাই। কূটনীতিকরা বলছেন, ভারত, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ থাকলেও এক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতা লক্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে সরকারবিরোধী বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বারবার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি কিছুটা হলেও গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন পদ্ধতি এবং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশি সোচ্চার হলেও তাদের কূটনীতি সরকারবিরোধী দলগুলোর পক্ষে যাবে এমন ধারণা করার কোনো কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এটা যেমন সত্য, তেমনি ইন্দো প্যাসিফিক এবং এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের বোঝাপড়াটা বেশি জরুরি। আর সে কারণেই বিএনপি যতই তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলুক যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে না। তাদের বক্তব্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং নির্বাচনে বিরোধীপক্ষের জন্য সুষ্ঠু ও অবাধ পরিবেশ তৈরি করা।
কূটনীতিক সূত্রগুলো বলছে, আগের কয়েক দফা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী থাকলেও ভারতের সঙ্গে একধরনের সমঝোতা করে বা আলোচনা করে তাদের মতামত দিয়েছে। কিন্তু ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন নিয়ে পরামর্শ এবং তাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে বেশি সোচ্চার।
বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চর্চার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ পায় ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে। এরপর থেকেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংলাপও হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল এবং প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করেছেন। তাদের সফরে আগামী নির্বাচন, বিরোধীপক্ষের প্রতি সরকারের আচরণ, মানবাধিকার ও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সরকার, আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
গত ২১ মার্চ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের উদ্ধৃত করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে এবং বিরোধীদলীয় পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ গুরুতর অনিয়ম রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত সম্মান ও অংশীদারিত্বের মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে মানবাধিকারের বিষয়গুলো উত্থাপন করে। এটা তারা চালিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন আগ্রহের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বলয় বাড়াতে চায় দেশটি। এরই মধ্যে দেশটি এশিয়ায় তাদের বন্ধু দেশগুলোকে নিয়ে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ (আইপিএস) পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এর আওতায় ইন্দো-প্যাসিফিক ফোরাম গঠন করা হয়েছে। একই কৌশলের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারত সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে কোয়াড গঠন করেছে। এগুলোর লক্ষ্য হলো চীনের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলে একটি শক্তিশালী বলয় গঠন করা। ভারতের পাশাপাশি এ বলয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকেও চায়। বাংলাদেশ যেন কোনোভাবেই চীনের বলয়ে না যেতে পারে, সেই কৌশলের অংশ হিসেবেও আগামী নির্বাচন ঘিরে চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে দেশটি। যদিও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো জোটেই যায়নি। আবার ‘বার্মা অ্যাক্ট’ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাবে তারা বাংলাদেশকে পাশে চায়। এসব কারণে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ নানা ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ ঢাকায় সফররত দেশটির কর্মকর্তারা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক নিয়েও ইতিবাচক কথা বলেন। এ ছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বিভিন্ন বক্তব্যেও নির্বাচনের পরিবেশ ও স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তারও বলেছিলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তারা সরকারকে এবং এই দেশকে সহযোগিতা করেব। তিনি সেই সময় দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাস ও ইউএসএইডের বাংলাদেশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব তুলে ধরেন।
গত বছরের অক্টোবরে ঢাকায় এসেই এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায়। এরপর থেকে তিনি নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রায় অভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো একটি দলকে সমর্থন করে না। তারা চান জনগণ তাদের পছন্দের সরকার নির্বাচন করবে।
এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসহ ১৪টি দেশের কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন নিয়ে তাদের মনোভাব তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অভিনন্দন বার্তায়ও বাংলাদেশে সবার জন্য উন্মুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। দিবসটি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শুভেচ্ছা বার্তায় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে লেখা বাইডেনের এ বার্তায় বর্তমান সরকার ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসাও করা হয়েছে।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলে তার ঢাকা সফরে বলেছিলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, অর্থাৎ যারা পরাজিত হবেন, তারাও যেন মনে করেন নির্বাচনটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ হয়েছে এমনটাই তারা চান। তিনি বলেছিলেন, শক্তিশালী সুশীল সমাজ, মুক্ত গণমাধ্যম এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায় যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে নেতিবাচক প্রশ্ন উঠবে না। এই পরিবেশ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও শোলে জানান।
ডেরেক শোলে চলে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, সরকারপক্ষ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিকে বলা হয়েছে তারা অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তারা সরকারের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত। তবে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও পূর্ববর্তী নির্বাচন নিয়ে তারা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। যখনই প্রয়োজন হবে, তারা সেটা জানাবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ নেই। এই সুযোগটা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোই করে দিয়ে আসছে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিশালী অবস্থান চায়। এ জন্যই তারা কথা বলছে।’