
বিশ্ব-জনসংখ্যায় প্রবীণতার হার আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি এবং দ্রুত তা ঘটছে। জাপান, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড, পর্তুগাল প্রভৃতি দেশের জনসংখ্যায় ইতিমধ্যে বয়স্ক লোকের আধিক্য দেখা দিয়েছে। এ প্রবণতা এখন শুধু ইউরোপ বা উন্নত অর্থনীতির দেশে সীমিত নয়। প্রবীণতা সব জনসংখ্যাকেই আচ্ছন্ন করছে, তবে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায়। বাংলাদেশও প্রবীণ লোকের দেশের তালিকায় ঢুকতে যাচ্ছে। দুই যুগ পরেই বাংলাদেশ রূপান্তরিত হবে ‘প্রবীণের সমাজে’।
দেশ গঠনে অবদান রাখা সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য বিভিন্ন দেশ স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলেও বাংলাদেশে তা দেখা যায় না। মাসিক ৫০০ টাকা বয়স্ক ভাতা দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে সরকার। তবে অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ একটি সর্বজনীন পেনশন পলিসি গ্রহণ করেছে, যা এখনো প্রক্রিয়াধীন।
কোনো দেশের মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশের বয়স যদি ৬৫ বা তার বেশি হয়, তাহলে সেই দেশকে ‘প্রবীণের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই হিসেবে ২০৪৭ সালে বাংলাদেশ ‘প্রবীণের সমাজ’ বা ‘প্রবীণ দেশ’-এ রূপান্তরিত হবে। এই প্রক্রিয়া শুরু হবে মাত্র সাত বছর পর।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ২০২৯ সালে প্রবীণমুখিতার পর্যায়ে পৌঁছাবে। ‘বৃদ্ধ বা প্রবীণ’ পর্যায়ে রূপান্তরিত হতে বাংলাদেশের মাত্র ১৮ বছর লাগবে। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ যে গতিতে ‘বয়স্ক’ থেকে ‘বার্ধক্য’ পর্যায়ে পৌঁছবে তা উন্নত এশীয় ও সমৃদ্ধ ইউরোপীয় দেশগুলোর গতির চেয়ে বেশি হবে। এই রূপান্তরে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুত রূপান্তরশীল সমাজ হবে। উন্নতির অনেক নিচের ধাপে থেকে জনসংখ্যা-রূপান্তরের এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ছিল ৪৮ বছর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান ২০২২ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭৪ বছর ৩ মাস। জনস্বাস্থ্যের উন্নতি, জীবনযাত্রার মানবৃদ্ধি এবং পুষ্টিকর খাবার দেশের মানুষের গড় আয়ু বাড়িয়েছে। একদিকে গড় আয়ু বাড়ছে, অন্যদিকে প্রজনন হার কমছে। এ কারণেই বয়স কাঠামোতে পরিবর্তন ঘটছে, এক পর্যায়ে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়বে। এই অভিজ্ঞতা জাপানের হয়েছে। এখন চীন, সিঙ্গাপুরের হচ্ছে। সেই পরিস্থিতির মুখে বাংলাদেশকেও পড়তে হবে।
নাগরিকদের কর্মজীবন শেষ হয়ে গেলে তাদের মঙ্গল নিশ্চিত করতে একটি দেশের সামাজিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু করণীয় জরুরি হয়ে ওঠে। একই সময়ে অর্থনৈতিকভাবে সক্রিয় জনসংখ্যার পরিবর্তন না ঘটলে শ্রমশক্তির আকার কমবে, যারা অবসর নিয়েছেন তাদের চাহিদাপূরণের জন্য দেশটির অর্থনৈতিক সক্ষমতা সীমিত হবে। ‘বয়স্ক’ জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের কর্মক্ষম লোকসংখ্যা কমবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নতির পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা ও সঞ্চয় বাড়াতে বেশি জোর দিতে হবে। তা না হলে ‘বৃদ্ধ’ বা ‘প্রবীণ’দের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিয়ে নাগরিক অধিকারসহ সামাজিক জীবনে অংশগ্রহণ অসম্ভব হয়ে পড়বে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যারা আয়-উপার্জন করে তাদের ওপরই বয়স্করা নির্ভরশীল থাকেন। এখন যারা কম বয়সী আছেন, তাদের কর্মসংস্থানে সর্বোচ্চ জোর দিচ্ছি আমরা। কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনা এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে দরিদ্রতা কমে, সঞ্চয় বাড়ে বৃদ্ধ বয়সে তারা যেন খেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী বাড়বে, তাদের জন্য এখন সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ষাটোর্ধ্ব বয়সের সব বৃদ্ধরা সামাজিক সুরক্ষার আওতায় সহায়তা পাবে, নব্বই বছরের ঊর্ধ্বে যারা তারা দ্বিগুণ হারে ভাতা পাবে।
বাংলাদেশে শ্রমিকের দক্ষতা কিংবা নিম্ন উৎপাদনশীলতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা হলেও এক্ষেত্রে প্রত্যাশিত অগ্রগতি নেই। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য বলছে, বাংলাদেশে শ্রমশক্তির উৎপাদনশীলতা না বেড়ে বরং গত দুই দশকে কমেছে। ২০০০-২০০৯ সালে দেশের শ্রমশক্তির উৎপাদনশীলতায় প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ শতাংশের মতো; ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালে তা ৪ শতাংশের নিচে নেমেছে। করোনা অতিমারীর পর শ্রমিকের দক্ষতা তথা উৎপাদনশীলতা আরও কমেছে।
বাংলাদেশের রপ্তানি-আয়ের প্রায় ৮৪ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হয়েও এই খাতে শ্রমিকের উৎপাদনশীলতায় চীন, ভিয়েতনাম, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের মধ্যে বাংলাদেশের শ্রমিকের দক্ষতা সবার নিচে। চীনে একজন পোশাক শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা ৬৫ শতাংশ, বাংলাদেশে ৪০ শতাংশ।
শামসুল আলম বলেন, ‘উৎপাদনশীলতা বাড়াতে আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। কারিগরি শিক্ষায় জোর দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’
স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা আরও করুণ। জিডিপির এক শতাংশেরও কম ব্যয় হয় স্বাস্থ্য খাতে। সিঙ্গাপুর, চীনসহ অনেক দেশ বয়স্কদের স্বাস্থ্যসেবায় আলাদা ব্যবস্থা নিলেও বাংলাদেশের এ বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা খাতে জিডিপির দুই শতাংশ বরাদ্দের পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২ অনুযায়ী, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় দেশজ সঞ্চয় কমছে। জিডিপি যে হারে বাড়ছে, সঞ্চয় সেভাবে বাড়ছে না। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশজ সঞ্চয় ছিল ২৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে তা কমে হয়েছে ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
প্রবীণ জনসংখ্যা, এই শতাব্দীর প্রধান সমস্যা। এটি উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় ধরনের দেশকেই প্রভাবিত করে বা করবে। এই সমস্যা মোকাবিলা করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এমনটা মনে করে না ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন (আইএসএসএ)।
জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের এই বিষয়টিতে বিশে^র সব দেশ তাদের স্বাস্থ্য ও সামাজিক ব্যবস্থায় সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। প্রবীণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দেশগুলোর স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সুরক্ষায় ব্যয় বাড়ছে। বিপরীতে পেনশন ব্যবস্থার জন্য লোক কম। আইএমএফের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, উন্নত অর্থনীতিতে বেসরকারি ও সরকারি উভয় খাতে সঞ্চয় কমে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। আগামী ৩০ বছরে পেনশন বাবদ বেশি ব্যয় করতে হতে পারে। এসব দেশের অল্পবয়সীরা যদি আজকের অবসরপ্রাপ্তদের মতো পেনশন-সুবিধা ভোগ করতে চায়, তবে অনেক দিন ধরে তাদের আরও বেশি সঞ্চয় করতে হবে এবং কয়েক বছর অবসর স্থগিত করতে হবে।
সিনিয়র সিটিজেনদের স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যাপক কর্মসূচি রয়েছে উন্নত দেশগুলোর। বড় অঙ্কের ব্যয়ও করতে পারছে তারা। সিঙ্গাপুর সিনিয়র সিটিজেনদের সম্মান জানাতে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সিনিয়ররা যাতে তাদের স্বর্ণসময়কে উপভোগ করতে পারে, সক্রিয় ও অর্থপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে, তা নিশ্চিতে স্বাস্থ্যসেবা, বীমাসহ বিভিন্ন সুবিধার বাইরে অতিরিক্ত ১৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে তারা। সিঙ্গাপুর সিলভার প্রজন্মের স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা মেটাতে ২০১৫ সাল থেকে ৩ হাজার ৬০০টি ডে-কেয়ার, ২ হাজার ৬০০টি হোম কেয়ার এবং ৩ হাজার ৭০০টি নার্সিং হোম বেড তৈরি করেছে।
চীনে প্রবীণদের সুবিধাদি নিশ্চিতে তিনটি মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে নীতিমালা ও প্রকল্প তৈরি করছে। চীনা সরকারের প্রবীণ যত্ন নীতি অনুযায়ী, ৯০ শতাংশ প্রবীণ বাড়িতে থাকার সুবিধা, ৭ শতাংশ মধ্যবর্তী সুবিধা এবং ৩ শতাংশ নার্সিং হোম সুবিধা পায় বা পাবে।
বাংলাদেশে প্রবীণদের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় পরিচালিত ছয়টি প্রবীণ নিবাস আছে, যেগুলোতে ৫০ জন করে থাকতে পারে। বেসরকারি উদ্যোগে বেশ কয়েকটি বৃদ্ধাশ্রম আছে সাভার, গাজীপুরসহ কয়েকটি এলাকায়।
বাংলাদেশে প্রবীণদের সেবা বেসরকারি খাত থেকে হতে হবে বলে মনে করেন ড. শামসুল আলম। তিনি বলেন, ‘সরকারি খাতের ব্যবস্থাপনা অনেক সময় সফল হয় না। বেসরকারি খাত এখন প্রসারিত। অনেকে বিনিয়োগের জায়গা খুঁজছেন। বেসরকারি খাতকেই আমরা বেশি উৎসাহিত করব।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এখন উপার্জন করছেন, তারা একটু একটু করে সঞ্চয় করবেন। বৃদ্ধ বয়সে জমানো সঞ্চয়ের পাশাপাশি সরকারও সহায়তা দিলে তারা স্বেচ্ছা পেনশনে যেতে পারবেন। তাদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি প্রণীত হয়েছে, এটি চালু হবে।’
সবচেয়ে বেশি প্রবীণের বাস মোনাকোতে। ছোট দেশটির মোট জনসংখ্যার ৩৬ শতাংশের বয়স ৬৫ বছরের বেশি। এরপর রয়েছে জাপান। জাপানের মোট জনসংখ্যার ২৯ দশমিক ৮ শতাংশের বয়স ৬৫ বছরের ওপরে। ২০৫০ সালে ৩৫টির বেশি দেশের অবস্থা জাপানের মতো হবে। প্রবীণদের পুনর্বাসন কিংবা দেখভালের জন্য কর্মীদের ঘাড়ে চাপ বাড়বে। এই পরিবর্তনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব সরকারি-বেসরকারি খাত উপেক্ষা করতে পারবে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, ২০৫০ সালের মধ্যে প্রবীণ জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ বাস করবে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০২১ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময়কে ‘বার্ধক্যের দশক’ ঘোষণা করেছে। এর লক্ষ্য স্বাস্থ্যে বৈষম্য কমানো এবং সম্মিলিতভাবে প্রবীণদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবনমানকে উন্নত করা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রতি ৬ জনের মধ্যে ১ জনের বয়স ৬০ বছর বা তার বেশি হবে। এই সময়ে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সীর সংখ্যা ১৪০ কোটি হবে। ২০৫০ সালের মধ্যে, বিশ্বে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হবে (২১০ কোটি)। ৮০ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তির সংখ্যা ২০৫০ সালের মধ্যে তিনগুণ হয়ে প্রায় ৪৩ কোটিতে পৌঁছাবে।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে ১৯৬০ সালে একজন প্রবীণ নির্ভরশীলের বিপরীতে ২০ জন কর্মক্ষম ব্যক্তি ছিলেন, ২০১৯ সালে তা ১৩তে নেমেছে। ২০৪০ সালে প্রতি ৬ জন কর্মক্ষম ব্যক্তির বিপরীতে একজন প্রবীণ নির্ভরশীল থাকবে। আর ২০৬৫ সালে প্রতি তিনজন সমর্থ ব্যক্তির বিপরীতে একজন নির্ভরশীল প্রবীণ থাকবে।
বিশ্বে প্রবীণ জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দৈহিকভাবে সমর্থ প্রবীণদের কাজে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে অনেক দেশ। জাপান ইতিমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্য তার নাগরিকদের অবসরের বয়সসীমা ৬৫ থেকে ৬৬তে উন্নীত করে। ২০২৬ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে নাগরিকদের অবসরের বয়সসীমা ৬৬ থেকে ৬৭তে উন্নীত করবে তারা। ২০৩৭ থেকে ২০৩৯ সালের মধ্যে অবসরের বয়সসীমা ৬৮তে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুসারে আগামীতে অবসরভাতাপ্রাপ্তির বয়সসীমা ৬০+ থেকে বাড়িয়ে ৬৫+ করার কথা বিবেচনা করা হবে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হয়েছে। আজ শনিবার মহাষষ্ঠীতে দুর্গা দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও দেবীর অধিবাসের মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনের এ উৎসব শুরু হলো। এবার দেবী কৈলাস থেকে মর্ত্যে আসছেন গজে (হাতি) চড়ে। ফিরে যাবেন নৌকায় করে। এবার বসুন্ধরা হবে শস্যপূর্ণ।
আজ থেকে ঢাকের বাদ্য, চন্ডী ও মন্ত্রপাঠ, কাঁসর ঘণ্টা, শঙ্খ আর উলুধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে রাজধানীসহ সারা দেশের ৩২ হাজারের বেশি পূজামন্ডপ। সকালে বেলগাছতলে (বিল্ববৃক্ষ) দেবীর আবাহন, সংকল্প ও ‘ত্রিনয়নী’ দুর্গা দেবীর ঘুম ভাঙিয়ে পূজার্চনায় আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মাধ্যমে দেবীকে বরণ করা হবে।
আগামীকাল রবিবার হবে মহাসপ্তমী বিহিতপূজা। এরপর সোমবার মহাঅষ্টমী, মঙ্গলবার মহানবমী ও বুধবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা নিরঞ্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব শেষ হবে।
দুর্গাপূজা উদযাপনে পাঁচ দিনব্যাপী আলোকসজ্জা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আরতি, প্রসাদ বিতরণ হবে। এ ছাড়া মহাঅষ্টমীর দিনে অন্যতম আকর্ষণ কুমারীপূজা ও বিজয়া দশমীতে শোভাযাত্রার আয়োজন থাকছে। ইতিমধ্যে জাতীয় ঢাকেশ^রী মন্দিরসহ সারা দেশের পূজামন্ডপগুলোকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। প্রতিটি পূজামন্ডপে নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী এবার রাজধানীসহ সারা দেশে ৩২ হাজার ১৬৮টি স্থায়ী ও অস্থায়ী মন্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন হচ্ছে। রাজধানীতে পূজা হচ্ছে ২৪১টি মন্ডপে। গত বছরের চেয়ে এবার সারা দেশে ৫০টি এবং ঢাকায় ৬টি পূজামন্ডপ বেড়েছে। পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যদের পাশাপাশি আয়োজক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক দল মন্ডপের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করবে। কেন্দ্রীয়ভাবে সারা দেশের পূজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে মনিটরিং সেল গঠনের পাশাপাশি বিভাগীয় পর্যায়েও মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।
ঢাকায় ঢাকেশ্বরী মন্দির ও মন্ডপ, রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজামন্ডপ, রমনা কালীমন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রম, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির, গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা পরিষদ মন্ডপ, পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার ও তাঁতীবাজারে মহাসমারোহে ও ব্যাপক আয়োজনে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে।
শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক ও সাধারণ সম্পাদক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার। গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে তারা বলেন, সুন্দরভাবে দুর্গাপূজার আয়োজন ও শান্তিপূর্ণভাবে সুসম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবেন তারা।
পরিষদের নেতারা আরও বলেন, গত বছর পশুশক্তির তান্ডবে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল যা ছড়িয়ে পড়েছিল প্রায় ২৭টি জেলায়। তবে এবার সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক আগে থেকেই সতর্ক রয়েছে। এটা আশাব্যঞ্জক ও প্রশংসনীয়।
ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মহালয়ার দিন থেকে দেবীপক্ষ শুরু হয়েছে। আজ ষষ্ঠীতে দেবীকে আমন্ত্রণের মাধ্যমে দুর্গোৎসব শুরু হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি বিএনপি সরকারের দুর্নীতি, অনিয়ম ও বিরোধীদের বিরুদ্ধে চালানো নৃশংসতার বর্ণনা তুলে ধরতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, ‘বিদেশিরা জানুক, দেশের বিরুদ্ধে বিদেশে অপপ্রচার চালানো বিএনপির এখন প্রধান কাজ।’
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব কেএম শাখাওয়াত মুন বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং দীর্ঘসময় ধরে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় থাকায় উন্নত দেশের মর্যাদা পেতে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে একত্রে কাজ করে যাচ্ছি।’
নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, তার দল দেশে নির্বাচনের নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিত করেছে। এর ফলে জনগণ এখন স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে। অপরদিকে বিএনপি ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরি করে এবং ভোটের দিন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে জনগণের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন উপায়ে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করে ফেলেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি গত সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের বিপরীতে ৭০০ জনকে মনোনয়ন দিয়েছিল এবং আসন বাণিজ্যের কারণে জনগণ তাদের ভোট দেয়নি।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে সংক্ষিপ্তভাবে তার সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা মাতৃভূমিতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশের কোনো মানুষ গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশন ও উচ্চপর্যায়ের অন্যান্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে ওয়াশিংটন ডিসিতে রয়েছেন। ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য ১৫-১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লন্ডনে অবস্থান করার পর তিনি ১৯ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে যান।
প্রধানমন্ত্রী আগামী ৪ অক্টোবর দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বাসস
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। ছুটির দিনে বঙ্গবাজারসংলগ্ন পুলিশ সদর দপ্তরে থাকে না কোনো কোলাহল। থাকে না কোনো কর্মকর্তার পদচারণা। কিন্তু গতকালের ছুটির দিনটি ছিল ভিন্ন। দুই বছরের অধিক সময় ধরে দায়িত্বে থাকা পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিদায় নিয়েছেন কাল। পাশাপাশি নয়া আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন। আর এর মধ্যদিয়ে পুলিশে বেনজীর আহমেদের বিস্তৃত অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে।
ডিএমপির সঙ্গে পেশাগত ও আত্মিক সম্পর্ক ছিল বেনজীর আহমেদের। ১৯৯০ সালে সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে ডিএমপিতে যোগদান করেন তিনি। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এখানে কর্মরত ছিলাম। পরে ২০০০ সালে ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার হন। সর্বশেষ ২০১০ সালের অক্টোবরে ডিএমপি কমিশনার হন। এ ছাড়া ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি র্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাজারবাগে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বেনজীর আহমেদ বলেন, প্রতিটি মুহূর্তই চ্যালেঞ্জিং ছিল। সেই সময়ে যারা সর্বোচ্চ ত্যাগ, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করেছেন তাদের সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
গতকাল হৃদয়গ্রাহী ছিল বেনজীর আহমেদের বিদায়লগ্নটি। এই সময় বেশিরভাগ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের চোখে ছিল পানি। সহকর্মীদের চোখে পানি দেখে বেনজীর আহমেদও আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। সমাপ্ত করেন ৩৪ বছর ৫ মাস ১৬ দিনের কর্মজীবনের।
গতকাল বিকেল ৩টা ৩২ মিনিটে অতিরিক্ত পুলিশ প্রহরায় পুলিশ সদর দপ্তরে আসেন নতুন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এই সময় সদর দপ্তরের দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় নির্মিত একটি প্যান্ডেলে অভ্যর্থনা জানান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) কামরুল আহসানসহ অন্য কর্মকর্তারা। গার্ড অব অনার শেষে তাকে নেওয়া হয় পুরনো ভবনের দ্বিতীয় তলায় আইজিপির দপ্তরে। তিনি অপেক্ষা করেন বিদায়ী আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদকে অভ্যর্থনা জানাতে। বিকেল ৩টা ৩৮ মিনিটে পোশাক পরে পুলিশ সদর দপ্তরে প্রবেশ করেন বেনজীর আহমেদ। তবে অন্য সময়ের মতো ছিল না কঠোর নিরাপত্তা। ভবনের পূর্ব দিকের ফটকে বেনজীর আহমেদের গাড়িটি আসার পর তাকে স্যালুট দেন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (প্রশাসন)। দেওয়া হয় গার্ড অব অনার। এই সময় অন্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। বেনজীর আহমেদ গাড়ি থেকে নামার পর প্রতিটি স্তরের কর্মকর্তা ও অন্য সদস্যদের সঙ্গে করমর্দন করেন। পরে সোজা চলে যান দায়িত্ব পালন করার সেই কক্ষটিতে। নয়া আইজিপির সঙ্গে করমর্দন করে আইজিপির বসার স্থানে আগে থেকে থাকা দুটি চেয়ারে গিয়ে বসেন। তাদের ঘিরে ছিলেন পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা। তবে দুজনের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ডিআইজি প্রশাসন, ডিআইজি হেডকোয়ার্টার ও অ্যাডিশনাল ডিআইজি হেডকোয়ার্টার। এই সময় কোনো কোনো কর্মকর্তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। বিদায়ী ও নয়া আইজিপি অনেকটা হাস্যোজ্জ্বল থেকে যার যার ফাইলে স্বাক্ষর করেন। ত্রিশ মিনিটের মধ্যে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন তারা। এরই মধ্যে ভবনের নিচতলায় সাজসজ্জা করা সাদা রংয়ের প্রাডো গাড়িটি প্রস্তুত রাখা হয়। গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন পুলিশের কয়েক কর্মকর্তা।
বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে বেনজীর আহমেদ তার চিরাচেনা কক্ষ থেকে বের হন। আইজিপি কার্যালয়ে কর্মরত স্টাফদের সঙ্গে করমর্দন করে দোয়া চান। পুলিশ কর্মকর্তাদের বেষ্টনীর মধ্যে বেনজীর আহমেদ নেমে আসেন নিচতলায়। গাড়ির সামনে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এই সময় তার দুই চোখের কোণ লাল হয়ে ওঠে। এই দৃশ্য দেখে অন্য কর্মকর্তারাও আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তাকে শেষবারের মতো বিদায় জানাতে দুই পাশে পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রায় সবার হাতেই ছিল গাঁদা ফুলের পাপড়ি। বেনজীর আহমেদ গাড়িতে না উঠে চলে যান লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কর্মকর্তা ও সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে। প্রায় সবার সঙ্গে তিনি করমর্দন করতে থাকলে অনেকটা আবেগময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। নিজেকে কোনো রকম সামলে বেনজীর আহমেদ চলে যান নির্দিষ্ট স্থানে থাকা গাড়ির সামনে। শেষবারের মতো উঠে পড়েন গাড়িতে। ৪টা ১৮ মিনিটে চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী বাদ্যযন্ত্র বাজানো শুরু হয়। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রশি টেনে সামনের দিকে নিতে থাকেন গাড়িবহর। এ সময় সবার মধ্যে নীরবতা নেমে আসে। জানালার গ্লাস খুলে হাত নেড়ে সহকর্মীদের কাছ থেকে বিদায় নেন বেনজীর আহমেদ। বিদায় নেওয়ার সময় তিনি অনেকটা আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন। পৌনে ৫টার দিকে ভবনের পশ্চিম পাশের গেইট অতিক্রম করেন বেনজীর আহমেদ। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বের হয়ে সোজা চলে যান মিন্টো রোডের পুলিশ ভবনে।
জানা গেছে, অবসরে যাওয়ার আগে গত তিন দিন ধরে বেনজীর আহমেদকে বিদায় সংবর্ধনা জানানো হয়। ২৭ সেপ্টেম্বর রাজারবাগে সংবর্ধনা দেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। অনুষ্ঠানে বক্তারা স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের তান্ডবলীলা দমনে আপনার সাহসী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বাংলাদেশসহ বহির্বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত করে আপনি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সারা দেশে ৬৯১২টি বিট স্থাপন করে বিট পুলিশিং কার্যক্রমকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে গুলশান এবং বনানী এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখেন। আধুনিক ও ডিজিটাইলাইজেশন আপনার হাত ধরেই পুলিশে সূচনা হয়েছে। নারীদের জন্য নিরাপদ সাইবার স্পেস নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ নারী পুলিশ দ্বারা পরিচালিত পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন নামে ফেইসবুক পেইজ, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে কুইক রেসপন্স টিম এবং নারী-শিশু ও বয়স্কদের জন্য প্রতিটি থানায় আলাদা ডেস্ক স্থাপনে নারীরা সহজে সেবা পাচ্ছেন।’
এ সময় বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘ডিএমপির সঙ্গে আমার একধরনের পেশাগত ও আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৯০ সালে সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে ডিএমপিতে যোগদান করে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এখানে কর্মরত ছিলাম। আবার ২০০০ সালে উপ-পুলিশ কমিশনার হিসেবে ডিএমপিতে যোগ দিই। সর্বশেষ ২০১০ সালের অক্টোবরে ডিএমপি কমিশনার হিসেবে যোগদান করি। প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। সেই সময়ে যারা সর্বোচ্চ ত্যাগ, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করেছেন তাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞ।’
আইজিপির দায়িত্ব নিলেন চৌধুরী মামুন: গতকাল শুক্রবার বিকেলে দায়িত্ব বুঝে নেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। পরে তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর রাজারবাগ পুলিশ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। আইজিপি ১৯৮৯ সালের ২০ ডিসেম্বর ৮ম বিসিএস ব্যাচে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। তিনি পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট, পুলিশ সদর দপ্তর, সিআইডি, ঢাকা ও ময়মনসিংহ রেঞ্জ ও র্যাব মহাপরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৪ সালের ১২ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের শাল্লা থানার শ্রীহাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি বিবাহিত। তার সহধর্মিণী হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। ২ পুত্র ও ১ কন্যাসন্তানের জনক আইজিপি।
র্যাব মহাপরিচালকের দায়িত্ব নিলেন এম খুরশীদ: গতকাল অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক এম খুরশীদ হোসেন দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১২তম বিএসএস ব্যাচের কর্মকর্তা।
চলতি বছরের প্রথম আট মাসে দেশে ২ হাজার ৩০১ জন কন্যাশিশুর বাল্যবিয়ে হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি মাসে ২৮৮ জনের বাল্যবিয়ে হয়েছে। এ সময়ে ৫৮৯টি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। একই সময়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫৭৪ জন কন্যাশিশু। তাদের মধ্যে ৮৪ জন সংঘবদ্ধ ও ৩৬৪ জন একক ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (প্রতিবন্ধী) কন্যাশিশু রয়েছে ৪৩ জন। জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘জানুয়ারি-আগস্ট ২০২২ : কন্যাশিশু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন’ উপস্থাপন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাসিমা আক্তার জলি। তিনি জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ২৪টি জাতীয়, স্থানীয় ও অনলাইন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে শূন্য থেকে ১৯ বছর বয়সী কন্যাশিশুদের নির্যাতনের তথ্য ১৩টি ক্যাটাগরির আওতায় ৫৬টি সাব-ক্যাটাগরিতে ভাগ করে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত আট মাসে প্রেমের অভিনয় ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ৪৯ জন কন্যাশিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২০ জনকে হত্যাও করা হয়েছে। ৮৭ জন কন্যাশিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়া যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ৭৬ জন। ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার কন্যাশিশুদের মধ্যে এক বছর বয়সী শিশুও রয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, এ সময়ে ১৮৬ জন কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। পাচার করা হয়েছে ১৩৬ কন্যাশিশুকে; তাদের মধ্যে ৭৪ জনকে অপহরণ করা হয়েছে।
দেশে গত আট মাসে ১৮১ জন কন্যাশিশু আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেমে প্রতারণার শিকার হয়ে ৪৬ জন এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে ৩৫ জন কন্যাশিশু আত্মহত্যা করেছে। এর আগে ২০২১ সালের প্রথম আট মাসে আত্মহত্যা করেছিল ১৫৩ জন। অর্থাৎ ২০২২ সালে বেড়েছে আত্মহত্যার পরিমাণ। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ১৮৬ জন কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতা, যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৩ জন। যৌতুক দিতে না পারায় পাঁচজন কন্যাশিশু আত্মহত্যা করেছে। এছাড়া গৃহশ্রমিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১৫টি। এর মধ্যে দুজনকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে এবং একজন আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে।
কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম জানিয়েছে, কন্যাশিশু ও নারীরা পথঘাট, যানবাহন ও বাজারসহ সব ধরনের পাবলিক প্লেসে, শিক্ষা ও ধর্মীয়প্রতিষ্ঠান এমনকি নিজ বাড়িতেও হরহামেশা যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ৭৬ জন কন্যাশিশু যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (প্রতিবন্ধী) শিশুও রয়েছে। এ নির্যাতনগুলোর অধিকাংশই সংঘটিত হয়েছে রাস্তায়, নিজের বাসায়, নিকট আত্মীয়-পরিজন ও গৃহকর্তার হাতে। এছাড়া প্রতিদিন ৩০-৩৫ জন, মাসে ৯০০-১০০০ জন কন্যাশিশু সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে। পর্নোগ্রাফির শিকার হয়েছে ১৫ জন কন্যাশিশু। সাইবার বুলিংয়ের শিকার হওয়া অধিকাংশ কন্যাশিশুই জানে না কীভাবে, কোথায়, কার সহায়তায় এ বিষয়ে অভিযোগ করা যায় বা এর ফল কী হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাসিডের সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে ৩ জন কন্যাশিশু। পারিবারিক বিবাদ, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হওয়া, সম্পত্তিসংক্রান্ত আক্রোশ ইত্যাদি কারণে অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। অপহরণ ও পাচারের শিকার হয়েছে ১৩৬ জন কন্যাশিশু। এর মধ্যে অপহরণের শিকার হয়েছে ৭৪ জন। অপহরণের শিকার শিশুদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জোরপূর্বক যৌনপেশায় নিয়োজিত করা হয়।
অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, দেশে নতুন বা পুরনো যেকোনো ধরনের অস্থিরতাতেই কন্যাশিশু ও নারীর ওপর নির্যাতন কখনো থামে না। বরং তা সব সময় বৃদ্ধিই পায়। এ নির্যাতন শুধু ঘরের বাইরেই নয়, নিজ ঘরেও ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। প্রতিনিয়তই ঘটে যাওয়া ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাগুলো সাধারণ মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে।
তারা আরও বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে মানুষের অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ভয়ঙ্কর বর্বরতা ও হিংস্রতা। লঙ্ঘিত হচ্ছে কন্যাশিশু ও নারীর মানবাধিকার। একটি সুস্থ সুন্দর সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কন্যাশিশুদের অধিকার, তাদের শিক্ষা, সুস্বাস্থ্য, মানসিক ও শারীরিক বিকাশ নিশ্চিত করাসহ নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
তথ্য বিশ্লেষণ করে আলোচকরা বলেন, কন্যাশিশু ও নারীর প্রতি নির্যাতনের বিষয়ে অভিযোগ জানানোর ক্ষেত্রে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে নানা ধরনের ভুল ধারণা, শঙ্কা ও কুসংস্কার এখনো বিদ্যমান। নির্যাতিত কন্যাশিশু বা তার পরিবার নানা বাধা পেরিয়ে বিচার চাইতে গেলেও নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা সুপারিশ করেন, কন্যাশিশু নির্যাতন বন্ধে শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার সব ঘটনা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে; সর্বস্তরের জন্য ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’ নামে একটি আইন প্রণয়ন করতে হবে; সাইবার নিরাপত্তায় নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করাসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
অনুষ্ঠানে কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার, চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড প্রটেকশন এডুকো বাংলাদেশ স্পেশালিস্ট মো. শহীদুল ইসলাম, গুডনেইবারস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাঈনুদ্দীন মাইনুল, বাংলাদেশ ওয়াইডব্লিউসিএ’র জাতীয় সাধারণ সম্পাদক হেলেন মনিষা সরকার বক্তব্য রাখেন।
আইন আছে মা-বাবাকে দেখতে হবে। তাদের ভরণপোষণ করতে হবে। আইনটি বহুল আলোচিত। কিন্তু আলোচিত হলেও আইনটির কার্যকারিতা নেই বললেই চলে। আইনটির রয়েছে নানা ফাঁকফোকর। এসব ফাঁকফোকর দিয়ে বাবা-মায়ের ‘দুষ্টু’ ছেলেরা পার পেয়ে যায়।
২০১৩ সালে পিতা-মাতার ভরণপোষণের আইন করে সরকার। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আইনটি হয়। এত দিন হয়ে গেলেও আইনটি কার্যকর করা যায়নি কেনজানতে চাইলে কর্মকর্তা, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা জানান, আইনটির প্রধান সমস্যা হচ্ছে ভরণপোষণের দাবিতে সন্তানের বিরুদ্ধে বাবা-মাকেই মামলা করতে হবে। অন্য কারও অভিযোগ আমলে নেওয়া যায় না। দেশের সামাজিক মূল্যবোধ অনুযায়ী, সন্তানের বিরুদ্ধে মা-বাবা সাধারণত মামলা করেন না। ভরণপোষণের প্রশ্ন তখনই আসে, যখন তারা কর্মক্ষমতা হারান। ওই সময় বৃদ্ধ মা-বাবাই সন্তানের কাছে জিম্মি হয়ে থাকেন। এ অবস্থায় আদালতে মামলা করা অনেক সাহস ও সামর্থ্যরে ব্যাপার। তাই বৃদ্ধ বয়সে তাদের পক্ষে মামলা করা সম্ভব হয় না। ছেলের স্ত্রীকে ভরণপোষণের দায়িত্বের বাইরে রাখা হয়েছে। অথচ অনেক পরিবারে স্ত্রীদের অশান্তি সৃষ্টির জন্য দায়ী করা হয়। আইনটি কার্যকর করতে হলে ছেলের স্ত্রীকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আইনটি যথাযথভাবে কার্যকর করার জন্য বিধিমালাও প্রয়োজন। অথচ আইন প্রণয়নের ৯ বছর পরও এর বিধিমালা হয়নি।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিধিমালার কাজ চলছে। আশা করি শিগগিরই হয়ে যাবে। ভেটিংয়ের (আইনি মতামত) জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’
গত ৯ বছরেও কেন হয়নি জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘করোনার কারণে অনেক কাজই আটকে ছিল। এই বিধিমালার অনেক স্টেক হোল্ডার (অংশীজন)। তাদের সঙ্গে বৈঠক করা যাচ্ছিল না। তা ছাড়া ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হলে আইন মন্ত্রণালয় থেকেও অনেক সংযোজন-বিয়োজনের পরামর্শ দেওয়া হয়। মোটকথা, বিধিমালা না হলেও কাজের প্রক্রিয়ার মধ্যেই ছিল।’
আইনে বলা আছে, প্রত্যেক সন্তানকে মা-বাবার ভরণপোষণ নিশ্চিত করতে হবে। একাধিক সন্তান থাকলে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ভরণপোষণের বিষয়টি নিশ্চিত করবেন তারা। প্রত্যেক সন্তানকে মা-বাবাকে নিয়ে একই স্থানে বসবাস করতে হবে। কোনো সন্তান মা-বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের বৃদ্ধ নিবাস বা অন্য কোথাও আলাদাভাবে বসবাসে বাধ্য করতে পারবেন না। প্রত্যেক সন্তান মা-বাবার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর নেবেন। তাদের চিকিৎসাসেবা বহন করবেন ও পরিচর্যা করবেন। মা অথবা বাবা আলাদা বসবাস করলেও সন্তানকে খোঁজ নিতে হবে। আইনে মা-বাবার অবর্তমানে দাদা-দাদি, নানা-নানির ভরণপোষণের কথাও বলা হয়েছে। আইনের এসব বিধান মানা সন্তানদের জন্য বাধ্যতামূলক। না মানলে বাবা-মায়েরা ভরণপোষণের দাবিতে আদালতে মামলা করতে পারবেন। দোষী সাব্যস্ত হলে এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদন্ডের বিধান আছে। ভরণপোষণবিষয়ক এ মামলা আপস ও জামিনযোগ্য। আর মামলা হবে আদালতে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভরণপোষণের আইনটি একটি ব্যতিক্রমী ও অস্বাভাবিক আইন। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এ ধরনের আইনের নজির পাওয়া যায় না। দুঃখজনক হলেও আমাদের দেশে এ ধরনের একটি আইন করতে হয়েছে। আমাদের দেশে বাবা-মায়েরা জন্মের পর থেকে লেখাপড়া ও স্বনির্ভর হওয়া পর্যন্ত সন্তানদের সমর্থন দিয়ে যান। তারপরও বৃদ্ধ বয়সে অনেক পিতা-মাতা অনাদর আর অবহেলায় থাকেন। কোথাও কোথাও তারা নির্যাতনেরও শিকার হন। উন্নত বিশ্বে সন্তানদের ১৮ বছর হলেই বাবা-মায়ের আর কোনো দায়িত্ব থাকে না। সেখানে সামাজিক নিরাপত্তা আছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে আইনবিদ শাহদীন মালিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ দায়িত্ব রাষ্ট্রেরও। রাষ্ট্র তা কতটা করছে, সেটাও দেখতে হবে। পিতা-মাতা বা সিনিয়র সিটিজেনদের (বয়স্ক নাগরিকদের) ভরণপোষণের জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে উদ্যোগী হতে হবে।’
আইন প্রণয়নের পর থেকে এ পর্যন্ত একটি মামলার খবর জানেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। মামলাটি হয় ২০১৭ সালে কক্সবাজারে। এরপর আর কোনো মামলার খবর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পাননি। কিন্তু মা-বাবাকে ভরণপোষণ না করার খবর তারা হরদম পান। বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। করোনা মহামারীতে অসুস্থ পিতা-মাতাকে জঙ্গলে, অচেনা জনপদে ফেলে আসা হয়েছে।
আইনজীবী মনজিল মোরশেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনের চেয়ে বেশি দরকার সামাজিকভাবে বিষয়টি সুরাহা করা। আইন করে পারিবারিক শান্তি আনা যায় না। ছোটবেলা থেকেই মূল্যবোধ শেখাতে হবে। সন্তানদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই এ ধরনের আইনের প্রয়োজন হবে না। আইন আছে অথচ মামলা হয় নানিশ্চয়ই এর ভেতর সমস্যা আছে। তা না হলে আইন প্রণয়নের এত বছরে মাত্র একটি মামলা হলো কেন। এসব সমস্যার সমাধান করে আইনটির ব্যাপক প্রচার দরকার।’
সমাজসেবা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, যেকোনো অবস্থাতেই পিতা-মাতাকে ভরণপোষণ করতে হবে। এর কোনো ব্যত্যয় চলবে না। কিন্তু বিষয়টি ঘটছে এবং দিন দিন বাড়ছে। সরকারি চাকরিজীবীদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আসছে। তারা অনেক অভিযোগ পান। কিন্তু তাদের কিছু করার এখতিয়ার আইনে নেই। ভরণপোষণ না দিলে পিতা-মাতাকে আদালতে যেতে হবে। কিন্তু তারা আদালতে যেতে চান না। শত অপরাধ করলেও শেষ পর্যন্ত তারা সন্তানের বিরুদ্ধে মামলা করতে চান না।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রোজার মাসে খাবারের জন্য শরীফুল আলমের বাজেট ১২ হাজার টাকা। পাঁচ দিনের বাজার করতে গিয়ে তিনি দেখেন, মাছ কিনলে মুরগি কেনা যায় না, মুরগি কিনলে মাছ বাদ দিতে হয়। গরুর মাংস তো বিলাসী খাবার, তাই সে দোকানে নজরই দেননি তিনি। পাঁচ দিনের মধ্যে তিন দিনই তার পরিবারকে মাছ-মাংসের মতো প্রোটিন খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। আর ইফতারিতে উচ্চ মূল্যের বিদেশি ফল বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত তিনি আগেই নিয়েছেন। শুধু শরিফুলই নন, বাজার করতে আসা নিম্ন মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন আয়ের সব ভোক্তারই একই গল্প। তারা বলছেন, এবারের রমজানে কম খেয়েই রোজা রাখতে হবে।
গত এক বছরে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। প্রায় একই হারে বেড়েছে পাকিস্তানি ককসহ অন্যান্য মুরগির দাম। সব ধরনের মাছের দাম গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
একটু সাধারণ হিসাব করা যাক। চারজনের একটি পরিবার যদি মাছ, মাংস বাদ দিয়ে সাহরিতে গড়ে ২০০ টাকা, সন্ধ্যা রাতের খাবারে যদি গড়ে ১৫০ টাকা আর ইফতারিতে ফল যোগ না করে গড়ে যদি ১০০ টাকা খরচ করেন তবে মাসে ব্যয় হবে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। আর যদি মাছ-মাংস যোগ হয় তাহলে সাহরিতে ন্যূনতম ৩০০, রাতের খাবারে ৩০০ ও ইফতারিতে ফল যোগ করলে গড়ে ২০০ টাকা খরচ করলে মাসে খরচ হবে প্রায় ২৪ হাজার টাকা। এ হিসাব চারজনের একটি পরিবারের সর্বনিম্ন হিসাব। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গত অক্টোবরের হিসাবে বলা হয়েছে, চারজনের একটি পরিবারে খাবার তালিকায় মাছ-মাংস যোগ করলে মাসে খরচ হবে ২২ হাজার ৪২১ টাকা। এটি শুধু খাবারের খরচ। যদি কোনো পরিবার মাছ-মাংস যোগ না করেন তাতে মাসিক খরচ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৯ টাকা।
সিপিডির গবেষণা সেলের কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, চলতি মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। পরিবারপ্রতি এ মাসে খরচ আরও বেড়ে গেছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানোর পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। কিছু ক্ষেত্রে ট্যাক্স ভ্যাট পুরোপুরি উঠিয়ে দিলে সেখানে সবাই উপকৃত হবে।
সিপিডির অক্টোবরের হিসাবই যদি ধরা হয়, তাহলে এবারের রোজায় খাবারের তালিকা ছোট করা ছাড়া উপায় নেই ভোক্তাদের। ২২ হাজার টাকার সঙ্গে যদি বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ভাড়াসহ গড়ে ১৫ হাজার টাকা ধরলে চারজনের একটি পরিবারের খরচ দাঁড়ায় ৩৭ হাজার টাকা।
অবশ্য সিপিডির এ তথ্য যখন প্রকাশ করা হয়, তখন মুরগির মাংসের কেজি ছিল ১৫০ টাকা, এখন তা ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে। গরুর মাংসের দাম ছিল ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায়, এখন তা ৭৫০ টাকায়। চিনির দাম ছিল ৯৮ টাকায় এখন তা ১২২ টাকায়। অর্থাৎ সব পণ্যেরই দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন ভোক্তার। বেসরকারি স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিন থাকেন রাজধানীর বাড্ডায়। থাকেন ৩ কামরা একটি ফ্ল্যাটে। তার মাসিক খরচ ৩১-৩২ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধু মাত্র বাসা ভাড়ায় খরচ হয় ১৬ হাজার টাকা। একমাত্র সন্তানের পড়া ও পরিবারের ভরণ-পোষণে খরচ হয় আরও ১৩-১৫ হাজার টাকা। বাদ বাকি খরচ আরও ২ হাজার। তবে এই শিক্ষক মাসে আয় করেন ২৮-৩০ হাজার টাকা। মাসিক আয় হিসেবে তার অতিরিক্ত খরচ হয় ২-৩ হাজার টাকা।
এ শিক্ষক খরচের সমন্বয় করতে সঞ্চয়ও ভেঙেছেন ইতিমধ্যে। তাতেও তার বাড়তি খরচের টাকা প্রতি মাসে ঋণের খাতায় যোগ হয়। উপায়ান্তর না দেখে পরিচয় গোপন করে মাঝেমধ্যে রাইড শেয়ার দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত কাজে এসেছিলাম মহাখালীতে। ভাবলাম একই সঙ্গে রোজার বাজার করে বাসাই ফিরি। তবে বাজারে প্রবেশ করে চিন্তায় পড়ে গেলাম। ব্যাগ দেখিয়ে বলেন, ১ কেজি করে মুরগি, মাছ ও ছোলাসহ আরও দুএকটি পণ্য কিনতেই ১ হাজার টাকা শেষ। দামের অবস্থা দেখে বুঝা যাচ্ছে চাহিদা মতো বাকি সদাইগুলো বাসায় নিয়ে যেতে পারব না। আর নয়তো অর্ধেকের ওপর ভরসা রাখতে হবে।
শুধু স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিনই নন, গেল কয়েক মাসে দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহ অবস্থার কারণে মধ্য ও নিম্নমধ্য আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে নিত্যপণ্যের বাজার। মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজির দামও মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। গরিবের মাছ বলে খ্যাত পাঙ্গাস, তেলাপিয়াও এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। গত ৩-৪ মাস আগেও পাঙ্গাস ১৪০-১৪৫ টাকা ও তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হয়েছিল ১৩৫-৪০ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য মাছের মধ্যে মান ভেদে রুই মাছ ২৯০-৩৮০ টাকা, সরপুঁটি ২০০-৪০০ টাকা, চাষের মাগুর ৬০০ টাকা, শোল মাছ ৮০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ১ হাজার টাকা করে বিক্রি করছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
দ্রব্যমূল্য যে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে, তা শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল মজুমদারও বলছেন। গত বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারের কোনো মিল নেই। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করছে। ডলারের দাম বাড়ার অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবেই দেখা যায়, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এ বছর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। যদিও গত মঙ্গলবার একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, চলতি মার্চে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। চৈত্রের খরা ও রোজায় মানুষের অতিরিক্ত মজুদের কারণে এ মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কার কথা বলেছেন তিনি।
বিবিএসের চিত্রেই আবার ফেরা যাক। গত বছর চিনির কেজি ছিল ৮২ টাকা, সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২২ টাকায়। যদিও বাজারের চিত্র ব্যতিক্রম। গরুর মাংস গত বছরের মার্চে কেজি ছিল ৬১০ টাকা, কিন্তু বছর ঘুরতেই এ পণ্যের দাম এখন ৭৫০ টাকা। মানুষ বেশি দামে গরুর মাংস কিনতে না পেরে কিছুদিন আগেও ভরসা করত ব্রয়লার মুরগির ওপর, যার দাম এখন ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে।
রমজানের ইফতারিতে বেশি চাহিদা থাকে ফলের ওপর। কিন্তু সেই ফলের দামও লাগামছাড়া। ডলার সংকটের কারণে ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ফলের ওপর শুল্কারোপ বাড়িয়ে দেয় সরকার। ফলে গত কয়েক মাস ধরেই ফলের দাম অনেক বেশি।
সাহরিতে রোজাদারের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর অন্যতম উপাদান দুধ। গত বছরের মার্চে দুধের লিটার কিনতে হয়েছিল ৭০ টাকায়, এ বছর তা ৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের একটা প্রভাব রয়েছে। তবে আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছি বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। তিনি বলেন, রমজানের ভোক্তা পর্যায়ে ভোগান্তি কমাতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছি। মাঠ পর্যায়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। যেখানে অনিয়ম পাচ্ছি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিছুটা দায়ী। কিন্তু পুরোপুরি না। সম্পূর্ণ দায় এ যুদ্ধের ওপর চাপানো ঠিক না। ভোক্তাদের দায় বেড়েছে, তাদের ওপর চাপও বেড়েছে।
ব্রাজিলের সমুদ্রতীরবর্তী শহর রিও ডি জেনেইরোর কাছে একটি অপরাধী চক্রের প্রধানের গ্রেপ্তারে অভিযানের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার রিও ডি জেনেইরোর উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সাও গনসালো শহরের শ্রমিকদের আবাসিক এলাকা সালগেইরোতে এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানায়। পুলিশের দাবি, নিহতরা সবাই সন্দেহভাজন অপরাধী।
ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য পারার মাদক-নেতা অভিযুক্ত লিওনার্দো কোস্তা আরাউজো সালগেইরোতে লুকিয়ে আছে- এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে আরাউজোও আছেন। পারার বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার নিহতের ঘটনায় তার হাত আছে বলেও অভিযোগ।
পুলিশ জানিয়েছে, আরাউজোকে গ্রেপ্তারে বৃহস্পতিবার চালানো এই অভিযানে হেলিকপ্টার ও সাঁজোয়া যান ব্যবহার করা হয়।
রিও শহরের পুলিশ প্রায়ই এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করে। শহরটির গভর্নর ক্লডিও কাস্টো সোশালে এক পোস্টে লেখেন, আমরা আমাদের এই শহরকে অন্য কোনো এলাকা থেকে আসা দুর্বৃত্তদের অভয়াশ্রম হতে দেব না।
এ ঘটনায় অপরাধী চক্রের স্থানীয় তিনজন সোর্সও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
সিন্ডিকেশন করে মুরগির বাচ্চা ও ব্রয়লার মুরগির দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে মাত্র ৫২ দিনে বড় উৎপাদকদের একটি চক্র ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তাদের অন্য একটি সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন গতকাল বৃহস্পতিবার এ অভিযোগ করে। এদিকে মুরগির দাম নিয়ে ‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। অন্য এক মতবিনিময় সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, মুরগি ও গরুর মাংসের দাম না কমালে তা তারা বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবেন। রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সরকারি তদারকি না থাকায় হরিলুট চলছে পোলট্রি সেক্টরে। প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩ হাজার ৫০০ টন। কিন্তু অস্বাভাবিক দাম ও প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে উৎপাদন কমায় এখন দুই থেকে আড়াই হাজার টন সরবরাহ হচ্ছে। প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ আগে কম থাকলেও এখন প্রতি কেজিতে ১৬০-১৬৫ টাকা এবং করপোরেট কোম্পানিদের উৎপাদন খরচ ১৩০-১৪০ টাকা। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত।
সংগঠনটি জানিয়েছে, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজিতে যদি অতিরিক্ত ৬০ টাকা মুনাফা ধরা হয় তবে প্রতিদিন অন্তত ২ হাজার টনে ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ৫২ দিনে শুধু ব্রয়লার মুরগি থেকে ৬২৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ সিন্ডিকেট। এ ছাড়া এক দিনের মুরগির বাচ্চা প্রতিদিন উৎপাদন হয় ২০ লাখ। একটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। যা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ১০-১৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত সেই বাচ্চা ৬২ থেকে ৬৮ টাকা মেসেজ করলেও প্রকৃতপক্ষে তা বিক্রয় হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। প্রতি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা ধরা হলে আলোচ্য সময়ে মুরগির বাচ্চা বিক্রি থেকে ৩১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ব্রয়লার মুরগি ও বাচ্চা বিক্রি থেকেই ৫২ দিনে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শীর্ষ কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা শতভাগ উৎপাদন করে করপোরেট গ্রুপ। তারাই আবার আংশিক ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে এবং চুক্তিভিক্তিক খামার করেন। এতে বাজার এসব প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে যাচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগির দাম কমল ৪০ টাকা : ব্রয়লার মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণে শীর্ষ উৎপাদনকারী ফার্মগুলো নতুন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোজার মাসে ভোক্তা পর্যায়ে অস্বস্তি কমাতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি খামারি পর্যায়ে ১৯০-১৯৫ টাকা দরে বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় চারটি মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। যা গেল কয়েক সপ্তাহে ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হয়ে আসছে। হাতবদল হয়ে এসব মুরগি ভোক্তাপর্যায়ে এসে বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়।
‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত এই চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত জাতীয় ভোক্তা অধিকারের কনফারেন্স কক্ষে কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, আফতাব বহুমুখী ফার্মস ও সিপি বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, গতকাল আমরা ২৭০-২৮০ টাকায় ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হতে দেখেছি। এ দাম অযৌক্তিক। এটা ২০০ টাকার বেশি হতে পারে না। ফার্ম পর্যায়ে ২২০-২৩০ টাকা দরে ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে। হাতবদল হয়ে ভোক্তাপর্যায়ে এ অবস্থা। ব্রয়লার মুরগি এসএমএসের মাধ্যমে নিলাম হচ্ছে। আমি তাদের আহ্বান করেছি, আপনারা এ রমজান মাসে একটু কম লাভ করেন। তারা একমত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, খামার থেকে আসা ব্রয়লার মুরগি হাতবদলে যেন দাম খুব বেশি না বাড়ে, সে বিষয়ে সংস্থাটি নজর রাখবে। ব্রয়লারের দাম কমাতে প্রয়োজনে বর্ডার উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
এ সময় কাজী ফার্ম কর্তৃপক্ষ জানান, তারা রমজানে ২২০ টাকা থেকে কমিয়ে ব্রয়লার বিক্রি করবেন ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়। এ বিষয়ে একমত পোষণ করছে আফতাব, প্যারাগন ও সিপি কোম্পানি।
রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে : মুরগি ও গরুর মাংসের দাম বাড়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে আগামী দুই-তিন মাসের জন্য মুরগি ও গরুর মাংস বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবে সংগঠনটি। গতকাল এফবিসিসিআই বোর্ডরুমে ‘রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি, মজুদ, সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভায়’ এ কথা জানানো হয়। এ সময় সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানান, রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশীয় উৎপাদক, ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার কিছু পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ ও কিছু পণ্য আমদানি বন্ধ রেখেছে। এ সুযোগে বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ালে হবে না। ভোক্তার ওপর এত চাপ দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় বেশি খেজুর আছে। পর্যাপ্ত রয়েছে ছোলা, পামঅয়েল, সয়াবিনসহ অন্যান্য পণ্য। আমরা চাই না ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের হেনস্তা করুক। পণ্য ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদ বিষয়ে সরকারের নিয়মনীতি রয়েছে। এসব বিষয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে বাজার কমিটিগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পণ্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হলে আমাদের জানান, আমরা সহযোগিতা করব।
জসিম উদ্দিন বলেন, এখন গরু ও পোলট্রির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। দেশীয় এ খাত বাঁচাতে এতদিন মাংস আমদানি বন্ধ ছিল। এখন তারা যদি সঠিক মূল্যে গরুর মাংস ও ব্রয়লার মুরগি দিতে না পারে তাহলে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলব, বাজার ঠিক রাখতে আমদানির অনুমতি দেওয়ার জন্য। আমদানি করলে যদি বাজারে দাম কমে যায়, তাহলে আমদানি করতে হবে। মানুষ যদি ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে না পারে, তাহলে ইন্ডাস্ট্রির কথা চিন্তা করে লাভ নেই।
এফবিসিসিআই সভাপতি ব্যবসায়ীদের বলেন, এবার সরকার বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে কঠোরভাবে। কোনো বাজারে বেশি মূল্য রাখা হলেই সেই বাজার কমিটি বাতিল করবে সরকার। একই সঙ্গে দাম বেশি নেওয়া প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সও বাতিল করা হবে। আমরা চাই না, রোজায় কোনো ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল হোক, কাউকে আটক করা হোক।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের সমস্যা থাকতে পারে। সমস্যাটি আমাদের জানাবেন। আমরা কথা বলব। আমাদের টিমও বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে। আশা করব আপনারা কেউ বেশি মুনাফা করবেন না।
পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ফুল সুজিপানা (ওলফিয়া আরিজাহ)।
এর বৈজ্ঞানিক নাম Wolffia Arrhiza
এটি একবীজপত্রী উদ্ভিদ বর্গের Lemnaceae গোত্রের অন্তর্গত অবাধ ভাসমান জলজ সপুষ্পক উদ্ভিদ। পানিতে চরে বেড়ানো পাখিদের প্রিয়খাদ্য।
দ্রুত বংশবৃদ্ধিতে অন্যান্য গাছগাছালিকে সহজেই ছাড়িয়ে যায় এবং খরা, ঠান্ডা, খাদ্যাভাব ইত্যাদি পরিবেশগত দুর্যোগেও টিকে থাকতে পারে।
সপুষ্পক হলেও সুজিপানায় দৈবাৎ ফুল ফোটে, বংশবৃদ্ধি মূলত অঙ্গজ-মুকুলে। এগুলো বাংলাদেশ এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে আছে গত এক শতক ধরে।
এ ক্ষুদ্রতম ফুল উৎপাদনকারী উদ্ভিদটি থ্যালাস (যে উদ্ভিদ পাতা, শাখা-প্রশাখা এবং মূলে বিন্যস্ত নয়) প্রজাতির উদ্ভিদ।
সবুজ বা হলুদাভ সবুজ বর্ণের এই উদ্ভিদটির কোনো মূল নেই।
উদ্ভিদটির দৈর্ঘ্য ১ থেকে ৫ মিমি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর কোনো স্বতন্ত্র কান্ড ও পাতা নেই। গোটা উদ্ভিদটিই আসলে চ্যাপ্টা ছোট একটি পত্রকল্প কাঠামো বা ফ্রন্ড (frond)। এ ফ্রন্ড নিচে ঝুলন্ত এক বা একাধিক কৈশিক মূলসহ একক বা দলবদ্ধ থাকে।
ফুল সাধারণত উদ্ভিদটির ওপরের স্তরে জন্মে থাকে। এর একটি করে পুংকেশর ও গর্ভকেশর থাকে। এর সম্পূর্ণ পুষ্পবিন্যাসের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১ মিমি হয়ে থাকে। ওলফিয়া শতকরা ৮০ ভাগ প্রোটিনসমৃদ্ধ একটি উদ্ভিদ। আদর্শ পরিবেশে এগুলোর জীবসত্তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দ্বিগুণ হয়।
সালাদ হিসেবে খাদ্যযোগ্য ওলফিয়া প্রোটিন, ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘বি’ সমৃদ্ধ।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।