
চলতি বছরের প্রথম আট মাসে দেশে ২ হাজার ৩০১ জন কন্যাশিশুর বাল্যবিয়ে হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি মাসে ২৮৮ জনের বাল্যবিয়ে হয়েছে। এ সময়ে ৫৮৯টি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। একই সময়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫৭৪ জন কন্যাশিশু। তাদের মধ্যে ৮৪ জন সংঘবদ্ধ ও ৩৬৪ জন একক ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (প্রতিবন্ধী) কন্যাশিশু রয়েছে ৪৩ জন। জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘জানুয়ারি-আগস্ট ২০২২ : কন্যাশিশু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন’ উপস্থাপন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাসিমা আক্তার জলি। তিনি জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ২৪টি জাতীয়, স্থানীয় ও অনলাইন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে শূন্য থেকে ১৯ বছর বয়সী কন্যাশিশুদের নির্যাতনের তথ্য ১৩টি ক্যাটাগরির আওতায় ৫৬টি সাব-ক্যাটাগরিতে ভাগ করে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত আট মাসে প্রেমের অভিনয় ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ৪৯ জন কন্যাশিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২০ জনকে হত্যাও করা হয়েছে। ৮৭ জন কন্যাশিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়া যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ৭৬ জন। ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার কন্যাশিশুদের মধ্যে এক বছর বয়সী শিশুও রয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, এ সময়ে ১৮৬ জন কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। পাচার করা হয়েছে ১৩৬ কন্যাশিশুকে; তাদের মধ্যে ৭৪ জনকে অপহরণ করা হয়েছে।
দেশে গত আট মাসে ১৮১ জন কন্যাশিশু আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেমে প্রতারণার শিকার হয়ে ৪৬ জন এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে ৩৫ জন কন্যাশিশু আত্মহত্যা করেছে। এর আগে ২০২১ সালের প্রথম আট মাসে আত্মহত্যা করেছিল ১৫৩ জন। অর্থাৎ ২০২২ সালে বেড়েছে আত্মহত্যার পরিমাণ। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ১৮৬ জন কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতা, যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৩ জন। যৌতুক দিতে না পারায় পাঁচজন কন্যাশিশু আত্মহত্যা করেছে। এছাড়া গৃহশ্রমিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১৫টি। এর মধ্যে দুজনকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে এবং একজন আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে।
কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম জানিয়েছে, কন্যাশিশু ও নারীরা পথঘাট, যানবাহন ও বাজারসহ সব ধরনের পাবলিক প্লেসে, শিক্ষা ও ধর্মীয়প্রতিষ্ঠান এমনকি নিজ বাড়িতেও হরহামেশা যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ৭৬ জন কন্যাশিশু যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (প্রতিবন্ধী) শিশুও রয়েছে। এ নির্যাতনগুলোর অধিকাংশই সংঘটিত হয়েছে রাস্তায়, নিজের বাসায়, নিকট আত্মীয়-পরিজন ও গৃহকর্তার হাতে। এছাড়া প্রতিদিন ৩০-৩৫ জন, মাসে ৯০০-১০০০ জন কন্যাশিশু সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে। পর্নোগ্রাফির শিকার হয়েছে ১৫ জন কন্যাশিশু। সাইবার বুলিংয়ের শিকার হওয়া অধিকাংশ কন্যাশিশুই জানে না কীভাবে, কোথায়, কার সহায়তায় এ বিষয়ে অভিযোগ করা যায় বা এর ফল কী হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাসিডের সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে ৩ জন কন্যাশিশু। পারিবারিক বিবাদ, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হওয়া, সম্পত্তিসংক্রান্ত আক্রোশ ইত্যাদি কারণে অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। অপহরণ ও পাচারের শিকার হয়েছে ১৩৬ জন কন্যাশিশু। এর মধ্যে অপহরণের শিকার হয়েছে ৭৪ জন। অপহরণের শিকার শিশুদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জোরপূর্বক যৌনপেশায় নিয়োজিত করা হয়।
অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, দেশে নতুন বা পুরনো যেকোনো ধরনের অস্থিরতাতেই কন্যাশিশু ও নারীর ওপর নির্যাতন কখনো থামে না। বরং তা সব সময় বৃদ্ধিই পায়। এ নির্যাতন শুধু ঘরের বাইরেই নয়, নিজ ঘরেও ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। প্রতিনিয়তই ঘটে যাওয়া ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাগুলো সাধারণ মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে।
তারা আরও বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে মানুষের অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ভয়ঙ্কর বর্বরতা ও হিংস্রতা। লঙ্ঘিত হচ্ছে কন্যাশিশু ও নারীর মানবাধিকার। একটি সুস্থ সুন্দর সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কন্যাশিশুদের অধিকার, তাদের শিক্ষা, সুস্বাস্থ্য, মানসিক ও শারীরিক বিকাশ নিশ্চিত করাসহ নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
তথ্য বিশ্লেষণ করে আলোচকরা বলেন, কন্যাশিশু ও নারীর প্রতি নির্যাতনের বিষয়ে অভিযোগ জানানোর ক্ষেত্রে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে নানা ধরনের ভুল ধারণা, শঙ্কা ও কুসংস্কার এখনো বিদ্যমান। নির্যাতিত কন্যাশিশু বা তার পরিবার নানা বাধা পেরিয়ে বিচার চাইতে গেলেও নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা সুপারিশ করেন, কন্যাশিশু নির্যাতন বন্ধে শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার সব ঘটনা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে; সর্বস্তরের জন্য ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’ নামে একটি আইন প্রণয়ন করতে হবে; সাইবার নিরাপত্তায় নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করাসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
অনুষ্ঠানে কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার, চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড প্রটেকশন এডুকো বাংলাদেশ স্পেশালিস্ট মো. শহীদুল ইসলাম, গুডনেইবারস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাঈনুদ্দীন মাইনুল, বাংলাদেশ ওয়াইডব্লিউসিএ’র জাতীয় সাধারণ সম্পাদক হেলেন মনিষা সরকার বক্তব্য রাখেন।
বিশ্ব-জনসংখ্যায় প্রবীণতার হার আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি এবং দ্রুত তা ঘটছে। জাপান, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড, পর্তুগাল প্রভৃতি দেশের জনসংখ্যায় ইতিমধ্যে বয়স্ক লোকের আধিক্য দেখা দিয়েছে। এ প্রবণতা এখন শুধু ইউরোপ বা উন্নত অর্থনীতির দেশে সীমিত নয়। প্রবীণতা সব জনসংখ্যাকেই আচ্ছন্ন করছে, তবে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায়। বাংলাদেশও প্রবীণ লোকের দেশের তালিকায় ঢুকতে যাচ্ছে। দুই যুগ পরেই বাংলাদেশ রূপান্তরিত হবে ‘প্রবীণের সমাজে’।
দেশ গঠনে অবদান রাখা সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য বিভিন্ন দেশ স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলেও বাংলাদেশে তা দেখা যায় না। মাসিক ৫০০ টাকা বয়স্ক ভাতা দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে সরকার। তবে অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ একটি সর্বজনীন পেনশন পলিসি গ্রহণ করেছে, যা এখনো প্রক্রিয়াধীন।
কোনো দেশের মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশের বয়স যদি ৬৫ বা তার বেশি হয়, তাহলে সেই দেশকে ‘প্রবীণের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই হিসেবে ২০৪৭ সালে বাংলাদেশ ‘প্রবীণের সমাজ’ বা ‘প্রবীণ দেশ’-এ রূপান্তরিত হবে। এই প্রক্রিয়া শুরু হবে মাত্র সাত বছর পর।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ২০২৯ সালে প্রবীণমুখিতার পর্যায়ে পৌঁছাবে। ‘বৃদ্ধ বা প্রবীণ’ পর্যায়ে রূপান্তরিত হতে বাংলাদেশের মাত্র ১৮ বছর লাগবে। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ যে গতিতে ‘বয়স্ক’ থেকে ‘বার্ধক্য’ পর্যায়ে পৌঁছবে তা উন্নত এশীয় ও সমৃদ্ধ ইউরোপীয় দেশগুলোর গতির চেয়ে বেশি হবে। এই রূপান্তরে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুত রূপান্তরশীল সমাজ হবে। উন্নতির অনেক নিচের ধাপে থেকে জনসংখ্যা-রূপান্তরের এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ছিল ৪৮ বছর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান ২০২২ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭৪ বছর ৩ মাস। জনস্বাস্থ্যের উন্নতি, জীবনযাত্রার মানবৃদ্ধি এবং পুষ্টিকর খাবার দেশের মানুষের গড় আয়ু বাড়িয়েছে। একদিকে গড় আয়ু বাড়ছে, অন্যদিকে প্রজনন হার কমছে। এ কারণেই বয়স কাঠামোতে পরিবর্তন ঘটছে, এক পর্যায়ে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়বে। এই অভিজ্ঞতা জাপানের হয়েছে। এখন চীন, সিঙ্গাপুরের হচ্ছে। সেই পরিস্থিতির মুখে বাংলাদেশকেও পড়তে হবে।
নাগরিকদের কর্মজীবন শেষ হয়ে গেলে তাদের মঙ্গল নিশ্চিত করতে একটি দেশের সামাজিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু করণীয় জরুরি হয়ে ওঠে। একই সময়ে অর্থনৈতিকভাবে সক্রিয় জনসংখ্যার পরিবর্তন না ঘটলে শ্রমশক্তির আকার কমবে, যারা অবসর নিয়েছেন তাদের চাহিদাপূরণের জন্য দেশটির অর্থনৈতিক সক্ষমতা সীমিত হবে। ‘বয়স্ক’ জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের কর্মক্ষম লোকসংখ্যা কমবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নতির পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা ও সঞ্চয় বাড়াতে বেশি জোর দিতে হবে। তা না হলে ‘বৃদ্ধ’ বা ‘প্রবীণ’দের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিয়ে নাগরিক অধিকারসহ সামাজিক জীবনে অংশগ্রহণ অসম্ভব হয়ে পড়বে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যারা আয়-উপার্জন করে তাদের ওপরই বয়স্করা নির্ভরশীল থাকেন। এখন যারা কম বয়সী আছেন, তাদের কর্মসংস্থানে সর্বোচ্চ জোর দিচ্ছি আমরা। কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনা এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে দরিদ্রতা কমে, সঞ্চয় বাড়ে বৃদ্ধ বয়সে তারা যেন খেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী বাড়বে, তাদের জন্য এখন সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ষাটোর্ধ্ব বয়সের সব বৃদ্ধরা সামাজিক সুরক্ষার আওতায় সহায়তা পাবে, নব্বই বছরের ঊর্ধ্বে যারা তারা দ্বিগুণ হারে ভাতা পাবে।
বাংলাদেশে শ্রমিকের দক্ষতা কিংবা নিম্ন উৎপাদনশীলতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা হলেও এক্ষেত্রে প্রত্যাশিত অগ্রগতি নেই। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য বলছে, বাংলাদেশে শ্রমশক্তির উৎপাদনশীলতা না বেড়ে বরং গত দুই দশকে কমেছে। ২০০০-২০০৯ সালে দেশের শ্রমশক্তির উৎপাদনশীলতায় প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ শতাংশের মতো; ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালে তা ৪ শতাংশের নিচে নেমেছে। করোনা অতিমারীর পর শ্রমিকের দক্ষতা তথা উৎপাদনশীলতা আরও কমেছে।
বাংলাদেশের রপ্তানি-আয়ের প্রায় ৮৪ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হয়েও এই খাতে শ্রমিকের উৎপাদনশীলতায় চীন, ভিয়েতনাম, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের মধ্যে বাংলাদেশের শ্রমিকের দক্ষতা সবার নিচে। চীনে একজন পোশাক শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা ৬৫ শতাংশ, বাংলাদেশে ৪০ শতাংশ।
শামসুল আলম বলেন, ‘উৎপাদনশীলতা বাড়াতে আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। কারিগরি শিক্ষায় জোর দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’
স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা আরও করুণ। জিডিপির এক শতাংশেরও কম ব্যয় হয় স্বাস্থ্য খাতে। সিঙ্গাপুর, চীনসহ অনেক দেশ বয়স্কদের স্বাস্থ্যসেবায় আলাদা ব্যবস্থা নিলেও বাংলাদেশের এ বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা খাতে জিডিপির দুই শতাংশ বরাদ্দের পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২ অনুযায়ী, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় দেশজ সঞ্চয় কমছে। জিডিপি যে হারে বাড়ছে, সঞ্চয় সেভাবে বাড়ছে না। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশজ সঞ্চয় ছিল ২৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে তা কমে হয়েছে ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
প্রবীণ জনসংখ্যা, এই শতাব্দীর প্রধান সমস্যা। এটি উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় ধরনের দেশকেই প্রভাবিত করে বা করবে। এই সমস্যা মোকাবিলা করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এমনটা মনে করে না ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন (আইএসএসএ)।
জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের এই বিষয়টিতে বিশে^র সব দেশ তাদের স্বাস্থ্য ও সামাজিক ব্যবস্থায় সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। প্রবীণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দেশগুলোর স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সুরক্ষায় ব্যয় বাড়ছে। বিপরীতে পেনশন ব্যবস্থার জন্য লোক কম। আইএমএফের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, উন্নত অর্থনীতিতে বেসরকারি ও সরকারি উভয় খাতে সঞ্চয় কমে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। আগামী ৩০ বছরে পেনশন বাবদ বেশি ব্যয় করতে হতে পারে। এসব দেশের অল্পবয়সীরা যদি আজকের অবসরপ্রাপ্তদের মতো পেনশন-সুবিধা ভোগ করতে চায়, তবে অনেক দিন ধরে তাদের আরও বেশি সঞ্চয় করতে হবে এবং কয়েক বছর অবসর স্থগিত করতে হবে।
সিনিয়র সিটিজেনদের স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যাপক কর্মসূচি রয়েছে উন্নত দেশগুলোর। বড় অঙ্কের ব্যয়ও করতে পারছে তারা। সিঙ্গাপুর সিনিয়র সিটিজেনদের সম্মান জানাতে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সিনিয়ররা যাতে তাদের স্বর্ণসময়কে উপভোগ করতে পারে, সক্রিয় ও অর্থপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে, তা নিশ্চিতে স্বাস্থ্যসেবা, বীমাসহ বিভিন্ন সুবিধার বাইরে অতিরিক্ত ১৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে তারা। সিঙ্গাপুর সিলভার প্রজন্মের স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা মেটাতে ২০১৫ সাল থেকে ৩ হাজার ৬০০টি ডে-কেয়ার, ২ হাজার ৬০০টি হোম কেয়ার এবং ৩ হাজার ৭০০টি নার্সিং হোম বেড তৈরি করেছে।
চীনে প্রবীণদের সুবিধাদি নিশ্চিতে তিনটি মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে নীতিমালা ও প্রকল্প তৈরি করছে। চীনা সরকারের প্রবীণ যত্ন নীতি অনুযায়ী, ৯০ শতাংশ প্রবীণ বাড়িতে থাকার সুবিধা, ৭ শতাংশ মধ্যবর্তী সুবিধা এবং ৩ শতাংশ নার্সিং হোম সুবিধা পায় বা পাবে।
বাংলাদেশে প্রবীণদের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় পরিচালিত ছয়টি প্রবীণ নিবাস আছে, যেগুলোতে ৫০ জন করে থাকতে পারে। বেসরকারি উদ্যোগে বেশ কয়েকটি বৃদ্ধাশ্রম আছে সাভার, গাজীপুরসহ কয়েকটি এলাকায়।
বাংলাদেশে প্রবীণদের সেবা বেসরকারি খাত থেকে হতে হবে বলে মনে করেন ড. শামসুল আলম। তিনি বলেন, ‘সরকারি খাতের ব্যবস্থাপনা অনেক সময় সফল হয় না। বেসরকারি খাত এখন প্রসারিত। অনেকে বিনিয়োগের জায়গা খুঁজছেন। বেসরকারি খাতকেই আমরা বেশি উৎসাহিত করব।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এখন উপার্জন করছেন, তারা একটু একটু করে সঞ্চয় করবেন। বৃদ্ধ বয়সে জমানো সঞ্চয়ের পাশাপাশি সরকারও সহায়তা দিলে তারা স্বেচ্ছা পেনশনে যেতে পারবেন। তাদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি প্রণীত হয়েছে, এটি চালু হবে।’
সবচেয়ে বেশি প্রবীণের বাস মোনাকোতে। ছোট দেশটির মোট জনসংখ্যার ৩৬ শতাংশের বয়স ৬৫ বছরের বেশি। এরপর রয়েছে জাপান। জাপানের মোট জনসংখ্যার ২৯ দশমিক ৮ শতাংশের বয়স ৬৫ বছরের ওপরে। ২০৫০ সালে ৩৫টির বেশি দেশের অবস্থা জাপানের মতো হবে। প্রবীণদের পুনর্বাসন কিংবা দেখভালের জন্য কর্মীদের ঘাড়ে চাপ বাড়বে। এই পরিবর্তনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব সরকারি-বেসরকারি খাত উপেক্ষা করতে পারবে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, ২০৫০ সালের মধ্যে প্রবীণ জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ বাস করবে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০২১ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময়কে ‘বার্ধক্যের দশক’ ঘোষণা করেছে। এর লক্ষ্য স্বাস্থ্যে বৈষম্য কমানো এবং সম্মিলিতভাবে প্রবীণদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবনমানকে উন্নত করা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রতি ৬ জনের মধ্যে ১ জনের বয়স ৬০ বছর বা তার বেশি হবে। এই সময়ে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সীর সংখ্যা ১৪০ কোটি হবে। ২০৫০ সালের মধ্যে, বিশ্বে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হবে (২১০ কোটি)। ৮০ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তির সংখ্যা ২০৫০ সালের মধ্যে তিনগুণ হয়ে প্রায় ৪৩ কোটিতে পৌঁছাবে।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে ১৯৬০ সালে একজন প্রবীণ নির্ভরশীলের বিপরীতে ২০ জন কর্মক্ষম ব্যক্তি ছিলেন, ২০১৯ সালে তা ১৩তে নেমেছে। ২০৪০ সালে প্রতি ৬ জন কর্মক্ষম ব্যক্তির বিপরীতে একজন প্রবীণ নির্ভরশীল থাকবে। আর ২০৬৫ সালে প্রতি তিনজন সমর্থ ব্যক্তির বিপরীতে একজন নির্ভরশীল প্রবীণ থাকবে।
বিশ্বে প্রবীণ জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দৈহিকভাবে সমর্থ প্রবীণদের কাজে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে অনেক দেশ। জাপান ইতিমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্য তার নাগরিকদের অবসরের বয়সসীমা ৬৫ থেকে ৬৬তে উন্নীত করে। ২০২৬ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে নাগরিকদের অবসরের বয়সসীমা ৬৬ থেকে ৬৭তে উন্নীত করবে তারা। ২০৩৭ থেকে ২০৩৯ সালের মধ্যে অবসরের বয়সসীমা ৬৮তে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুসারে আগামীতে অবসরভাতাপ্রাপ্তির বয়সসীমা ৬০+ থেকে বাড়িয়ে ৬৫+ করার কথা বিবেচনা করা হবে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হয়েছে। আজ শনিবার মহাষষ্ঠীতে দুর্গা দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও দেবীর অধিবাসের মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনের এ উৎসব শুরু হলো। এবার দেবী কৈলাস থেকে মর্ত্যে আসছেন গজে (হাতি) চড়ে। ফিরে যাবেন নৌকায় করে। এবার বসুন্ধরা হবে শস্যপূর্ণ।
আজ থেকে ঢাকের বাদ্য, চন্ডী ও মন্ত্রপাঠ, কাঁসর ঘণ্টা, শঙ্খ আর উলুধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে রাজধানীসহ সারা দেশের ৩২ হাজারের বেশি পূজামন্ডপ। সকালে বেলগাছতলে (বিল্ববৃক্ষ) দেবীর আবাহন, সংকল্প ও ‘ত্রিনয়নী’ দুর্গা দেবীর ঘুম ভাঙিয়ে পূজার্চনায় আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মাধ্যমে দেবীকে বরণ করা হবে।
আগামীকাল রবিবার হবে মহাসপ্তমী বিহিতপূজা। এরপর সোমবার মহাঅষ্টমী, মঙ্গলবার মহানবমী ও বুধবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা নিরঞ্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব শেষ হবে।
দুর্গাপূজা উদযাপনে পাঁচ দিনব্যাপী আলোকসজ্জা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আরতি, প্রসাদ বিতরণ হবে। এ ছাড়া মহাঅষ্টমীর দিনে অন্যতম আকর্ষণ কুমারীপূজা ও বিজয়া দশমীতে শোভাযাত্রার আয়োজন থাকছে। ইতিমধ্যে জাতীয় ঢাকেশ^রী মন্দিরসহ সারা দেশের পূজামন্ডপগুলোকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। প্রতিটি পূজামন্ডপে নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী এবার রাজধানীসহ সারা দেশে ৩২ হাজার ১৬৮টি স্থায়ী ও অস্থায়ী মন্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন হচ্ছে। রাজধানীতে পূজা হচ্ছে ২৪১টি মন্ডপে। গত বছরের চেয়ে এবার সারা দেশে ৫০টি এবং ঢাকায় ৬টি পূজামন্ডপ বেড়েছে। পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যদের পাশাপাশি আয়োজক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক দল মন্ডপের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করবে। কেন্দ্রীয়ভাবে সারা দেশের পূজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে মনিটরিং সেল গঠনের পাশাপাশি বিভাগীয় পর্যায়েও মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।
ঢাকায় ঢাকেশ্বরী মন্দির ও মন্ডপ, রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজামন্ডপ, রমনা কালীমন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রম, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির, গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা পরিষদ মন্ডপ, পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার ও তাঁতীবাজারে মহাসমারোহে ও ব্যাপক আয়োজনে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে।
শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক ও সাধারণ সম্পাদক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার। গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে তারা বলেন, সুন্দরভাবে দুর্গাপূজার আয়োজন ও শান্তিপূর্ণভাবে সুসম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবেন তারা।
পরিষদের নেতারা আরও বলেন, গত বছর পশুশক্তির তান্ডবে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল যা ছড়িয়ে পড়েছিল প্রায় ২৭টি জেলায়। তবে এবার সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক আগে থেকেই সতর্ক রয়েছে। এটা আশাব্যঞ্জক ও প্রশংসনীয়।
ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মহালয়ার দিন থেকে দেবীপক্ষ শুরু হয়েছে। আজ ষষ্ঠীতে দেবীকে আমন্ত্রণের মাধ্যমে দুর্গোৎসব শুরু হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি বিএনপি সরকারের দুর্নীতি, অনিয়ম ও বিরোধীদের বিরুদ্ধে চালানো নৃশংসতার বর্ণনা তুলে ধরতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, ‘বিদেশিরা জানুক, দেশের বিরুদ্ধে বিদেশে অপপ্রচার চালানো বিএনপির এখন প্রধান কাজ।’
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব কেএম শাখাওয়াত মুন বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং দীর্ঘসময় ধরে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় থাকায় উন্নত দেশের মর্যাদা পেতে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে একত্রে কাজ করে যাচ্ছি।’
নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, তার দল দেশে নির্বাচনের নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিত করেছে। এর ফলে জনগণ এখন স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে। অপরদিকে বিএনপি ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরি করে এবং ভোটের দিন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে জনগণের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন উপায়ে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করে ফেলেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি গত সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের বিপরীতে ৭০০ জনকে মনোনয়ন দিয়েছিল এবং আসন বাণিজ্যের কারণে জনগণ তাদের ভোট দেয়নি।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে সংক্ষিপ্তভাবে তার সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা মাতৃভূমিতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশের কোনো মানুষ গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশন ও উচ্চপর্যায়ের অন্যান্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে ওয়াশিংটন ডিসিতে রয়েছেন। ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য ১৫-১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লন্ডনে অবস্থান করার পর তিনি ১৯ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে যান।
প্রধানমন্ত্রী আগামী ৪ অক্টোবর দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বাসস
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। ছুটির দিনে বঙ্গবাজারসংলগ্ন পুলিশ সদর দপ্তরে থাকে না কোনো কোলাহল। থাকে না কোনো কর্মকর্তার পদচারণা। কিন্তু গতকালের ছুটির দিনটি ছিল ভিন্ন। দুই বছরের অধিক সময় ধরে দায়িত্বে থাকা পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিদায় নিয়েছেন কাল। পাশাপাশি নয়া আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন। আর এর মধ্যদিয়ে পুলিশে বেনজীর আহমেদের বিস্তৃত অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে।
ডিএমপির সঙ্গে পেশাগত ও আত্মিক সম্পর্ক ছিল বেনজীর আহমেদের। ১৯৯০ সালে সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে ডিএমপিতে যোগদান করেন তিনি। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এখানে কর্মরত ছিলাম। পরে ২০০০ সালে ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার হন। সর্বশেষ ২০১০ সালের অক্টোবরে ডিএমপি কমিশনার হন। এ ছাড়া ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি র্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাজারবাগে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বেনজীর আহমেদ বলেন, প্রতিটি মুহূর্তই চ্যালেঞ্জিং ছিল। সেই সময়ে যারা সর্বোচ্চ ত্যাগ, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করেছেন তাদের সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
গতকাল হৃদয়গ্রাহী ছিল বেনজীর আহমেদের বিদায়লগ্নটি। এই সময় বেশিরভাগ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের চোখে ছিল পানি। সহকর্মীদের চোখে পানি দেখে বেনজীর আহমেদও আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। সমাপ্ত করেন ৩৪ বছর ৫ মাস ১৬ দিনের কর্মজীবনের।
গতকাল বিকেল ৩টা ৩২ মিনিটে অতিরিক্ত পুলিশ প্রহরায় পুলিশ সদর দপ্তরে আসেন নতুন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এই সময় সদর দপ্তরের দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় নির্মিত একটি প্যান্ডেলে অভ্যর্থনা জানান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) কামরুল আহসানসহ অন্য কর্মকর্তারা। গার্ড অব অনার শেষে তাকে নেওয়া হয় পুরনো ভবনের দ্বিতীয় তলায় আইজিপির দপ্তরে। তিনি অপেক্ষা করেন বিদায়ী আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদকে অভ্যর্থনা জানাতে। বিকেল ৩টা ৩৮ মিনিটে পোশাক পরে পুলিশ সদর দপ্তরে প্রবেশ করেন বেনজীর আহমেদ। তবে অন্য সময়ের মতো ছিল না কঠোর নিরাপত্তা। ভবনের পূর্ব দিকের ফটকে বেনজীর আহমেদের গাড়িটি আসার পর তাকে স্যালুট দেন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (প্রশাসন)। দেওয়া হয় গার্ড অব অনার। এই সময় অন্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। বেনজীর আহমেদ গাড়ি থেকে নামার পর প্রতিটি স্তরের কর্মকর্তা ও অন্য সদস্যদের সঙ্গে করমর্দন করেন। পরে সোজা চলে যান দায়িত্ব পালন করার সেই কক্ষটিতে। নয়া আইজিপির সঙ্গে করমর্দন করে আইজিপির বসার স্থানে আগে থেকে থাকা দুটি চেয়ারে গিয়ে বসেন। তাদের ঘিরে ছিলেন পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা। তবে দুজনের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ডিআইজি প্রশাসন, ডিআইজি হেডকোয়ার্টার ও অ্যাডিশনাল ডিআইজি হেডকোয়ার্টার। এই সময় কোনো কোনো কর্মকর্তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। বিদায়ী ও নয়া আইজিপি অনেকটা হাস্যোজ্জ্বল থেকে যার যার ফাইলে স্বাক্ষর করেন। ত্রিশ মিনিটের মধ্যে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন তারা। এরই মধ্যে ভবনের নিচতলায় সাজসজ্জা করা সাদা রংয়ের প্রাডো গাড়িটি প্রস্তুত রাখা হয়। গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন পুলিশের কয়েক কর্মকর্তা।
বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে বেনজীর আহমেদ তার চিরাচেনা কক্ষ থেকে বের হন। আইজিপি কার্যালয়ে কর্মরত স্টাফদের সঙ্গে করমর্দন করে দোয়া চান। পুলিশ কর্মকর্তাদের বেষ্টনীর মধ্যে বেনজীর আহমেদ নেমে আসেন নিচতলায়। গাড়ির সামনে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এই সময় তার দুই চোখের কোণ লাল হয়ে ওঠে। এই দৃশ্য দেখে অন্য কর্মকর্তারাও আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তাকে শেষবারের মতো বিদায় জানাতে দুই পাশে পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রায় সবার হাতেই ছিল গাঁদা ফুলের পাপড়ি। বেনজীর আহমেদ গাড়িতে না উঠে চলে যান লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কর্মকর্তা ও সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে। প্রায় সবার সঙ্গে তিনি করমর্দন করতে থাকলে অনেকটা আবেগময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। নিজেকে কোনো রকম সামলে বেনজীর আহমেদ চলে যান নির্দিষ্ট স্থানে থাকা গাড়ির সামনে। শেষবারের মতো উঠে পড়েন গাড়িতে। ৪টা ১৮ মিনিটে চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী বাদ্যযন্ত্র বাজানো শুরু হয়। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রশি টেনে সামনের দিকে নিতে থাকেন গাড়িবহর। এ সময় সবার মধ্যে নীরবতা নেমে আসে। জানালার গ্লাস খুলে হাত নেড়ে সহকর্মীদের কাছ থেকে বিদায় নেন বেনজীর আহমেদ। বিদায় নেওয়ার সময় তিনি অনেকটা আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন। পৌনে ৫টার দিকে ভবনের পশ্চিম পাশের গেইট অতিক্রম করেন বেনজীর আহমেদ। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বের হয়ে সোজা চলে যান মিন্টো রোডের পুলিশ ভবনে।
জানা গেছে, অবসরে যাওয়ার আগে গত তিন দিন ধরে বেনজীর আহমেদকে বিদায় সংবর্ধনা জানানো হয়। ২৭ সেপ্টেম্বর রাজারবাগে সংবর্ধনা দেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। অনুষ্ঠানে বক্তারা স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের তান্ডবলীলা দমনে আপনার সাহসী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বাংলাদেশসহ বহির্বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত করে আপনি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সারা দেশে ৬৯১২টি বিট স্থাপন করে বিট পুলিশিং কার্যক্রমকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে গুলশান এবং বনানী এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখেন। আধুনিক ও ডিজিটাইলাইজেশন আপনার হাত ধরেই পুলিশে সূচনা হয়েছে। নারীদের জন্য নিরাপদ সাইবার স্পেস নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ নারী পুলিশ দ্বারা পরিচালিত পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন নামে ফেইসবুক পেইজ, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে কুইক রেসপন্স টিম এবং নারী-শিশু ও বয়স্কদের জন্য প্রতিটি থানায় আলাদা ডেস্ক স্থাপনে নারীরা সহজে সেবা পাচ্ছেন।’
এ সময় বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘ডিএমপির সঙ্গে আমার একধরনের পেশাগত ও আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৯০ সালে সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে ডিএমপিতে যোগদান করে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এখানে কর্মরত ছিলাম। আবার ২০০০ সালে উপ-পুলিশ কমিশনার হিসেবে ডিএমপিতে যোগ দিই। সর্বশেষ ২০১০ সালের অক্টোবরে ডিএমপি কমিশনার হিসেবে যোগদান করি। প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। সেই সময়ে যারা সর্বোচ্চ ত্যাগ, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করেছেন তাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞ।’
আইজিপির দায়িত্ব নিলেন চৌধুরী মামুন: গতকাল শুক্রবার বিকেলে দায়িত্ব বুঝে নেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। পরে তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর রাজারবাগ পুলিশ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। আইজিপি ১৯৮৯ সালের ২০ ডিসেম্বর ৮ম বিসিএস ব্যাচে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। তিনি পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট, পুলিশ সদর দপ্তর, সিআইডি, ঢাকা ও ময়মনসিংহ রেঞ্জ ও র্যাব মহাপরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৪ সালের ১২ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের শাল্লা থানার শ্রীহাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি বিবাহিত। তার সহধর্মিণী হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। ২ পুত্র ও ১ কন্যাসন্তানের জনক আইজিপি।
র্যাব মহাপরিচালকের দায়িত্ব নিলেন এম খুরশীদ: গতকাল অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক এম খুরশীদ হোসেন দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১২তম বিএসএস ব্যাচের কর্মকর্তা।
আইন আছে মা-বাবাকে দেখতে হবে। তাদের ভরণপোষণ করতে হবে। আইনটি বহুল আলোচিত। কিন্তু আলোচিত হলেও আইনটির কার্যকারিতা নেই বললেই চলে। আইনটির রয়েছে নানা ফাঁকফোকর। এসব ফাঁকফোকর দিয়ে বাবা-মায়ের ‘দুষ্টু’ ছেলেরা পার পেয়ে যায়।
২০১৩ সালে পিতা-মাতার ভরণপোষণের আইন করে সরকার। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আইনটি হয়। এত দিন হয়ে গেলেও আইনটি কার্যকর করা যায়নি কেনজানতে চাইলে কর্মকর্তা, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা জানান, আইনটির প্রধান সমস্যা হচ্ছে ভরণপোষণের দাবিতে সন্তানের বিরুদ্ধে বাবা-মাকেই মামলা করতে হবে। অন্য কারও অভিযোগ আমলে নেওয়া যায় না। দেশের সামাজিক মূল্যবোধ অনুযায়ী, সন্তানের বিরুদ্ধে মা-বাবা সাধারণত মামলা করেন না। ভরণপোষণের প্রশ্ন তখনই আসে, যখন তারা কর্মক্ষমতা হারান। ওই সময় বৃদ্ধ মা-বাবাই সন্তানের কাছে জিম্মি হয়ে থাকেন। এ অবস্থায় আদালতে মামলা করা অনেক সাহস ও সামর্থ্যরে ব্যাপার। তাই বৃদ্ধ বয়সে তাদের পক্ষে মামলা করা সম্ভব হয় না। ছেলের স্ত্রীকে ভরণপোষণের দায়িত্বের বাইরে রাখা হয়েছে। অথচ অনেক পরিবারে স্ত্রীদের অশান্তি সৃষ্টির জন্য দায়ী করা হয়। আইনটি কার্যকর করতে হলে ছেলের স্ত্রীকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আইনটি যথাযথভাবে কার্যকর করার জন্য বিধিমালাও প্রয়োজন। অথচ আইন প্রণয়নের ৯ বছর পরও এর বিধিমালা হয়নি।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিধিমালার কাজ চলছে। আশা করি শিগগিরই হয়ে যাবে। ভেটিংয়ের (আইনি মতামত) জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’
গত ৯ বছরেও কেন হয়নি জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘করোনার কারণে অনেক কাজই আটকে ছিল। এই বিধিমালার অনেক স্টেক হোল্ডার (অংশীজন)। তাদের সঙ্গে বৈঠক করা যাচ্ছিল না। তা ছাড়া ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হলে আইন মন্ত্রণালয় থেকেও অনেক সংযোজন-বিয়োজনের পরামর্শ দেওয়া হয়। মোটকথা, বিধিমালা না হলেও কাজের প্রক্রিয়ার মধ্যেই ছিল।’
আইনে বলা আছে, প্রত্যেক সন্তানকে মা-বাবার ভরণপোষণ নিশ্চিত করতে হবে। একাধিক সন্তান থাকলে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ভরণপোষণের বিষয়টি নিশ্চিত করবেন তারা। প্রত্যেক সন্তানকে মা-বাবাকে নিয়ে একই স্থানে বসবাস করতে হবে। কোনো সন্তান মা-বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের বৃদ্ধ নিবাস বা অন্য কোথাও আলাদাভাবে বসবাসে বাধ্য করতে পারবেন না। প্রত্যেক সন্তান মা-বাবার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর নেবেন। তাদের চিকিৎসাসেবা বহন করবেন ও পরিচর্যা করবেন। মা অথবা বাবা আলাদা বসবাস করলেও সন্তানকে খোঁজ নিতে হবে। আইনে মা-বাবার অবর্তমানে দাদা-দাদি, নানা-নানির ভরণপোষণের কথাও বলা হয়েছে। আইনের এসব বিধান মানা সন্তানদের জন্য বাধ্যতামূলক। না মানলে বাবা-মায়েরা ভরণপোষণের দাবিতে আদালতে মামলা করতে পারবেন। দোষী সাব্যস্ত হলে এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদন্ডের বিধান আছে। ভরণপোষণবিষয়ক এ মামলা আপস ও জামিনযোগ্য। আর মামলা হবে আদালতে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভরণপোষণের আইনটি একটি ব্যতিক্রমী ও অস্বাভাবিক আইন। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এ ধরনের আইনের নজির পাওয়া যায় না। দুঃখজনক হলেও আমাদের দেশে এ ধরনের একটি আইন করতে হয়েছে। আমাদের দেশে বাবা-মায়েরা জন্মের পর থেকে লেখাপড়া ও স্বনির্ভর হওয়া পর্যন্ত সন্তানদের সমর্থন দিয়ে যান। তারপরও বৃদ্ধ বয়সে অনেক পিতা-মাতা অনাদর আর অবহেলায় থাকেন। কোথাও কোথাও তারা নির্যাতনেরও শিকার হন। উন্নত বিশ্বে সন্তানদের ১৮ বছর হলেই বাবা-মায়ের আর কোনো দায়িত্ব থাকে না। সেখানে সামাজিক নিরাপত্তা আছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে আইনবিদ শাহদীন মালিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ দায়িত্ব রাষ্ট্রেরও। রাষ্ট্র তা কতটা করছে, সেটাও দেখতে হবে। পিতা-মাতা বা সিনিয়র সিটিজেনদের (বয়স্ক নাগরিকদের) ভরণপোষণের জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে উদ্যোগী হতে হবে।’
আইন প্রণয়নের পর থেকে এ পর্যন্ত একটি মামলার খবর জানেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। মামলাটি হয় ২০১৭ সালে কক্সবাজারে। এরপর আর কোনো মামলার খবর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পাননি। কিন্তু মা-বাবাকে ভরণপোষণ না করার খবর তারা হরদম পান। বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। করোনা মহামারীতে অসুস্থ পিতা-মাতাকে জঙ্গলে, অচেনা জনপদে ফেলে আসা হয়েছে।
আইনজীবী মনজিল মোরশেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনের চেয়ে বেশি দরকার সামাজিকভাবে বিষয়টি সুরাহা করা। আইন করে পারিবারিক শান্তি আনা যায় না। ছোটবেলা থেকেই মূল্যবোধ শেখাতে হবে। সন্তানদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই এ ধরনের আইনের প্রয়োজন হবে না। আইন আছে অথচ মামলা হয় নানিশ্চয়ই এর ভেতর সমস্যা আছে। তা না হলে আইন প্রণয়নের এত বছরে মাত্র একটি মামলা হলো কেন। এসব সমস্যার সমাধান করে আইনটির ব্যাপক প্রচার দরকার।’
সমাজসেবা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, যেকোনো অবস্থাতেই পিতা-মাতাকে ভরণপোষণ করতে হবে। এর কোনো ব্যত্যয় চলবে না। কিন্তু বিষয়টি ঘটছে এবং দিন দিন বাড়ছে। সরকারি চাকরিজীবীদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আসছে। তারা অনেক অভিযোগ পান। কিন্তু তাদের কিছু করার এখতিয়ার আইনে নেই। ভরণপোষণ না দিলে পিতা-মাতাকে আদালতে যেতে হবে। কিন্তু তারা আদালতে যেতে চান না। শত অপরাধ করলেও শেষ পর্যন্ত তারা সন্তানের বিরুদ্ধে মামলা করতে চান না।
যশরাজ ফিল্মসের হাত ধরে বড় পর্দায় শাহরুখ খানের রাজকীয় প্রত্যাবর্তনের সাক্ষী বলিউড। তার 'পাঠান' বক্স অফিসে নজির গড়ছে। ভারতীয় ছবির সাফল্য পাড়ি দিয়েছে আমেরিকাতেও।
৪ বছর পর বড় পর্দায় ফিরেছেন শাহরুখ। 'পাঠান'-এ তার অ্যাকশন দেখতে দলে দলে হলে যাচ্ছেন অনুরাগীরা। মুক্তির পর প্রথম কয়েক দিনেই বিপুল টাকার ব্যবসা করে ফেলেছে এই ছবি। গড়েছে একাধিক নজির। গত বুধবার, ২৫ জানুয়ারি মুক্তি পায় 'পাঠান'। রবিবার পঞ্চম দিনে ছবিটি বিশ্বজুড়ে ৫০০ কোটির বেশি টাকার ব্যবসা করে ফেলেছে। কোনো কোনো পরিসংখ্যানে দাবি, পঞ্চম দিনের শেষে 'পাঠান'-এর আয় সাড়ে ৫০০ কোটি। মুক্তির প্রথম ৪ দিনই দেশের বাজারে হাফ সেঞ্চুরি করেছিল 'পাঠান'। রবিবারও তার অন্যথা হয়নি। ৫০ কোটির গণ্ডি পেরিয়ে এই ছবি রবিবার দেশে প্রায় ৭০ কোটি টাকার ব্যবসা করে। ভারতে এখন পর্যন্ত 'পাঠান'-এর মোট আয় ২৮২ কোটি টাকা। শনি ও রবিবার সপ্তাহান্তেই আরও বেশি করে এই ছবি দেখতে হলে যান মানুষ। চতুর্থ দিনে দেশের বক্স অফিসে শাহরুখের ছবির আয় ছিল ৫১ কোটি টাকা। সারা বিশ্বে এ ছবির মোট রোজগার শনিবার পর্যন্ত ছিল ৪২৯ কোটি টাকা। রবিবার এক লাফে ৫০০ কোটির গণ্ডি ছাড়িয়েছে 'পাঠান'।
দেশের বাইরে 'পাঠান' মোট ১০০টি দেশে মুক্তি পেয়েছে। বিদেশে ২৫০০টি পর্দায় এই ছবি দেখানো হচ্ছে। ভারতে এই ছবি চলছে সাড়ে ৫ হাজার পর্দায়। শুধুমাত্র আমেরিকাতেই ৬৯৪টি সিনেমা হলে 'পাঠান' মুক্তি পেয়েছে। সেখানে রমরমিয়ে চলছে শাহরুখ, দীপিকা পাডুকোন এবং জন আব্রাহাম অভিনীত ছবিটি। নজির গড়েছে। উত্তর আমেরিকার বক্স অফিসে হিন্দি ছবি হিসাবে 'পাঠান'-এর প্রথম দিনের আয় সর্বোচ্চ। ছবিটি মুক্তির দিন ১৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ১৫ কোটি টাকা) আয় করেছে আমেরিকায়। উত্তর আমেরিকার ৬৯৪টি সিনেমা হলে সাম্প্রতিককালে মুক্তিপ্রাপ্ত যেকোনো ছবির তুলনায় 'পাঠান'-এর গড় সবচেয়ে বেশি।
আয়ের গড় হিসাবে হলিউডকেও টেক্কা দিচ্ছেন শাহরুখ। এই নিরিখে হলিউডের ৩টি ছবি কেবল 'পাঠান'-এর সামনে রয়েছে। সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে সেরা গড়ের তালিকায় তৃতীয় কিংবা চতুর্থ স্থানে শেষ করতে পারে 'পাঠান'। তালিকায় 'পাঠান'-এর আগে রয়েছে 'অ্যাভাটার : দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’, 'পুস ইন দ্য বুটস : দ্য লাস্ট উইশ' এবং 'এ ম্যান কলড ওটো'।
কাস্টমস লাইসেন্সিং বিধিমালা বাতিলের দাবিতে আজ থেকে দুই দিন দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন।
রোববার (২৯ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. সুলতান হোসেন খান।
লিখিত বক্তব্যে সুলতান হোসেন খান জানান, কাস্টমস এজেন্টস লাইসেন্সিং বিধিমালা-২০১৬ তে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের মৌলিক অধিকার পরিপন্থী বিধি সন্নিবেশিত থাকায় বিধিমালা জারির পর ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে মৌলিক অধিকার পরিপন্থী বিধি সংশোধনের দাবি জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দেওয়া হলেও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাজস্ব বোর্ড কর্তৃপক্ষ বিধিমালা সংশোধনের কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
‘উপরন্তু ২০২০-২০২১ সালের বাজেট প্রস্তাবনার সঙ্গে আরও কঠিন শর্ত যুক্ত করে লাইসেন্সিং বিধিমালা-২০২০ জারি করা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের বাজেট প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে উত্থাপিত লাইসেন্সিং রুলের কয়েকটি বিধি ও উপবিধি সংশোধনীর প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছিল। কিন্তু গত বাজেটেও কোনোরূপ সংশোধনী আনা হয়নি।’
তিনি আরও জানান, দীর্ঘদিন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় গত বছরের জুনে সারা দেশে একদিনের কর্মবিরতি পালন করে সিঅ্যান্ডএফ সংশ্লিষ্টরা। জুন মাসের শেষে আবারও দুই দিনের কর্মবিরতি ঘোষণা দিলে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ৩০ দিনের মধ্যে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড হতে লাইসেন্সিং রুলসহ অন্যান্য বিধিসমূহ সংশোধনের জন্য কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নাই। এ বিষয়ে ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেও কার্যকর কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি। তাই বাধ্য হয়ে লাইসেন্সিং বিধিমালা-২০২০ এর আইন ও বিধি পরিবর্তন ও সংশোধনের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামী ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি সোম ও মঙ্গলবার দেশের সকল কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ফেডারেশন যে সকল বিধিবিধান সংশোধনের দাবি জানিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আমদানিকারকের কাছে শুল্ক করাদি পাওনা থাকলে সংশ্লিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের লাইসেন্স নবায়ন না করার বিধান বাতিল করা, উত্তরাধিকারের অনুকূলে লাইসেন্স হস্তান্তর সংশ্লিষ্ট শর্ত শিথিল করা, শুল্ককর পরিশোধ না করলে লাইসেন্স বাতিল ও অর্থদণ্ড আরোপের বিধান বাতিল করা, মূল লাইসেন্স বাতিল হলে রেফারেন্স লাইসেন্স বাতিলের বিধি বাদ দেওয়া, দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিকে লাইসেন্স প্রদান না করা, শুল্ক মূল্যায়ন বিধিমালা-২০০০ এর যথাযথ বাস্তবায়ন এবং ভুলের অজুহাতে ২০০ থেকে ৪০০ শতাংশ জরিমানার আদেশ বাতিলের দাবি উল্লেখযোগ্য।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ্ব শামছুর রহমান, সহসভাপতি জনাব শেখ মো. মোখলেছুর রহমান (লাভলু), অর্থ সচিব এ কে এম আকতার হোসেন, বন্দর বিষয়ক সচিব জনাব মো. খায়রুল বাশার প্রমুখ।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইলেকট্রিক্যাল ও মেশিনারি পণ্য নিয়ে রাশিয়া থেকে আসা বিদেশি জাহাজ ‘এম,ভি আনকা সান’ ও ‘এম,ভি সাপোডিলা’ মোংলা বন্দরে ভিড়েছে। রবিবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বন্দরের ৭ নম্বর জেটিতে ভিড়ে আনকা সান ও সন্ধ্যা ৭টায় ৮ নম্বর জেটিতে ভিড়ে সাপোডিলা।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইলেকট্রিক্যাল মালামাল নিয়ে ভেনুটা পতাকাবাহী জাহাজ এম,ভি আনকা সান রবিবার বিকেল পৌনে ৫টায় মোংলা বন্দরের ৭ নম্বর জেটিতে ভিড়েছে। ১ হাজার ৯৭৯ প্যাকেজের ১ হাজার ৪শ মেট্রিক টন ইলেকট্রিক্যাল পণ্য নিয়ে গত ২৬ ডিসেম্বর রাশিয়ার নভরস্কি বন্দর থেকে ছেড়ে আসে এ জাহাজটি। এ ছাড়া রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ বন্দর থেকে ৪৩৬ প্যাকেজের ৫১৮ মেট্রিক টন মেশিনারি পণ্য নিয়ে সন্ধ্যা ৭টায় বন্দরের ৮ নম্বর জেটিতে ভিড়ে বিদেশি জাহাজ এম,ভি সাপোডিলা।
বিদেশি জাহাজ আনকা সান’র স্থানীয় শিপিং এজেন্ট কনভেয়ার শিপিং লাইনসের খুলনার ম্যানেজার (অপারেশন শিপিং) সাধন কুমার চক্রবর্তী ও সাপোডিলা’র স্থানীয় শিপিং এজেন্ট ইন্টারপোর্ট’র খুলনার ম্যানেজার অসিম মন্ডল জানান, বন্দর জেটিতে অবস্থান নেয়া এ জাহাজ দুটি থেকে রবিবার সন্ধ্যার পর অর্থাৎ রাত থেকে পণ্য খালাস শুরু হবে। এরপর জাহাজের এ পণ্য খালাস করে জেটিতে রাখা হবে। তারপর সোম বা মঙ্গলবার থেকে তা সড়ক পথে নেয়া হবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে।
এর আগে গত ২২ জানুয়ারি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল নিয়ে মোংলা বন্দরে এসেছিল বিদেশি জাহাজ এম,ভি কামিল্লা। এ জাহাজগুলো মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত।
উল্লেখ্যে, সম্প্রতি ৭টি জাহাজ কোম্পানির ৬৯টি জাহাজে রূপপুরের মালামাল পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রেক্ষিতে রূপপুরের মালামাল নিয়ে রাশিয়া থেকে মোংলা বন্দরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা এম,ভি উসরা মেজরকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হয়নি তখন। ওই জাহাজটির ২৪ ডিসেম্বর মোংলা বন্দরে ভেড়ার শিডিউল ছিল। কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় তা আর সম্ভব হয়নি। পরে অবশ্য ওই জাহাজটি পণ্য খালাসে ভারতে গেলে সেখানেও পণ্য খালাস করতে না পারায় ফেরত যায় উসরা মেজর। যা মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, বাংলাদেশ ও ভারতসহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মহলে নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
চলছে শীত মৌসুম। এই সময় ফুলকপি খাবেন না, তা কি হয়? ফুলকপি খুবই পুষ্টিকর একটি সবজি; যা রান্না কিংবা কাঁচা যে কোন প্রকারে খাওয়া যায়। তবে ফুলকপির পাতাও কম উপকারী নয়। অনেকেই ফুলকপির পাতা ফেলে দেন। কিন্তু এর গুণ জানলে এমন করার আগে দু’বার ভাববেন।
ফুলকপিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, প্রোটিন, খনিজ পদার্থ, ক্যালসিয়াম প্রভৃতি রয়েছে। যা দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন রোগের হাত থেকে মানবদেহকে রক্ষা করে।
ওজন কমাতে
মেদ ঝরাতে পরিশ্রম কম করেন না কেউই। অথচ হাতের সামনে এমন উপকারী জিনিস থাকতেও, অপ্রয়োজনীয় ভেবে ফেলে দিচ্ছি। ফুলকপির পাতায় রয়েছে ভরপুর পরিমাণে ফাইবার। ওজন কমাতে চাইলে অতি অবশ্যই রোজের ডায়েটে রাখতে পারেন এই পাতা। শুধু লেটুস নয়, সালাদেও এই পাতা রাখতে পারেন।
দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে
গবেষণা বলছে, ফুলকপির পাতায় রয়েছে ভিটামিন এ। যা দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি, চোখ সংক্রান্ত নানা সমস্যার সমাধান করে। চোখের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে চোখ বন্ধ করে ভরসা রাখতে পারেন ফুলকপির পাতার উপর। রাতকানা রোগের আশঙ্কা দূর করতে এই পাতা কার্যকর।
হাড়ের যত্নে
শীতকালে হাড়ের বাড়তি খেয়াল রাখার দরকার পড়ে। তাই চিকিৎসকরা ক্যালশিয়ামে সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার কথা বলে থাকেন। ফুলকপির পাতা হল ক্যালশিয়ামের সমৃদ্ধ উৎস। এমনকি, ঋতুবন্ধের পরেও অনেক শারীরিক সমস্যা এড়াতে খেতে পারেন ফুলকপির পাতা।
সন্তানের বেড়ে ওঠায়
ফুলকপির পাতায় রয়েছে ভরপুর পরিমাণে প্রোটিন এবং খনিজ পদার্থ, যা শিশুর বেড়ে ওঠায় সাহায্য করবে। পুষ্টিবিদরা শিশুর বা়ড়ন্ত বয়সে এমন কিছু খাবার খাওয়ার কথা বলে থাকেন, যেগুলো তাদের উচ্চতা, ওজন এবং হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করবে। ফুলকপির পাতা সেই খাবারগুলোর মধ্যে অন্যতম।
‘শনিবার বিকেল’ মুক্তির বাধা কাটার খবর মিলেছিল গত ২১ জানুয়ারি। সেই দিনও ছিল শনিবার। এরপর দশ দিন কেটে গেলেও এখনও আনুষ্ঠানিক চিঠি হাতে পাননি ছবিটির নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সেন্সর বোর্ডের প্রতি দ্রুত চিঠি পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
ফেসবুকে পেজে দেওয়া পোস্টে সোমবার ফারুকী লিখেছেন, ‘সেন্সর বোর্ডের প্রিয় ভাই-বোনেরা, আমরা এখনও আপনাদের চিঠির অপেক্ষায়। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী আপিল বোর্ড একটা সিনেমার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার সর্বোচ্চ ক্ষমতা রাখে। শনিবার বিকেলের ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্ত দেশি-আন্তর্জাতিক পত্র-পত্রিকা এবং টেলিভিশনের কল্যাণে সারা দুনিয়ার মানুষ জানে। তারা সবাই তাকিয়ে আছে। আর দেরি না করে চিঠিটা তাড়াতাড়ি পাঠান।’
বাংলাদেশকে আর বিব্রতকর অবস্থায় না ফেলার অনুরোধ রাখেন ফারুকী, ‘আমরা বাংলাদেশকে আর বিব্রতকর অবস্থায় না ফেলি। ওদিকে ফারাজ রিলিজ হচ্ছে তিন তারিখ (৩ ফেব্রুয়ারি)। বাংলাদেশের মানুষ তাকিয়ে আছে শনিবার বিকেল মুক্তির দিকে, ফারাজের সাথে একই দিন বা এক ঘণ্টা আগে হলেও।’
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ২০১৬ সালের জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি নির্মিত। এতে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান, পরমব্রত, তিশা, ইরেশ যাকেরের সঙ্গে ফিলিস্তিনি অভিনেতা ইয়াদ হুরানিও। বাংলাদেশ-ভারত-জার্মান এই তিন দেশের যৌথ প্রযোজনায় সিনেমাটি বানাতে টানা ১৫ দিন মহড়ায় মাত্র ৭ দিনেই শুটিং শেষ করেন ফারুকী। এরপর বিদেশের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটি প্রদর্শিত এবং প্রশংসিত হলেও দেশে সেন্সর বোর্ডে এটি আটকে দেয়।
২০১৯ সালে সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা দুবার দেখার পর এটি আটকে দেন মূলত বোর্ডে থাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির আপত্তিতে। তখন বলা হয়েছিল, ‘স্পর্শকাতর’ বিষয়টি নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে।
যদিও ফারুকী বরাবরই বলে আসছিলেন, চলচ্চিত্রটি হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনা নিয়ে নয়, ওই ঘটনার ‘অনুপ্রেরণায়’ নির্মিত একটি কাহিনিচিত্র। তারপর ফারুকী ছাড়াও চলচ্চিত্র অঙ্গনের সবাই সিনেমাটি মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছিল।
গুলশান হামলা নিয়ে সম্প্রতি ভারতে নির্মিত সিনেমা ফারাজ এর মুক্তির দিন ঘোষণার পর নতুন করে শনিবার বিকেল নিয়ে সবাই সরব হয়। এর মধ্যে ফারুকীর করা আপিল আবেদন নিয়ে শুনানিতে বসে আপিল বোর্ড।
মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে সভাপতি ও সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যানকে আহ্বায়ক করে গঠিত সাত সদস্যের সেই আপিল কমিটিতে রয়েছেন সংসদ সদস্য অভিনয়শিল্পী সুবর্ণা মুস্তাফা, সাবেক অতিরিক্ত সচিব নূরুল করিম, অভিনেত্রী সুচরিতা ও সাংবাদিক শ্যামল দত্ত।
ফারুকী তার এদিনের স্ট্যাটাসে সেন্সর বোর্ডকে উদ্দেশ্য করে লিখেন, ‘এটা দ্রুত সমাধান করেন। আমরা হাসিমুখে সিনেমাটা রিলিজ করি। পৃথিবীর নানা দেশে সিনেমাটা দেখানো হয়েছে, হচ্ছে। এবার বাংলাদেশের মানুষের পালা।’
সেন্সর বোর্ডে সিনেমা আটকে দেওয়াকে সেকেলে চিন্তা উল্লেখ করে ফারুকী লিখেন, ‘এটাও আপনাদের ভাবার সময় আসছে, এই নতুন মিডিয়ার যুগে সিনেমা আটকানোর মতো সেকেলে চিন্তা আদৌ কোনো কাজে আসে কিনা। কারণ যে কেউ চাইলে তার ছবি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে উন্মুক্ত করে দিতে পারে। ফলে ছবি আটকানোর চেষ্টা একটা পণ্ডশ্রম যা কেবল দেশের জন্য বদনাম-ই বয়ে আনতে পারে।’
রাজপথে খালি পায়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে স্লোগান দিচ্ছে এক পথশিশু। পেছনে বিক্ষুব্ধ মিছিল। শিশুটির পরনে চার পকেটের হাফপ্যান্ট; গেঞ্জিটা কোমরে বাঁধা। কণ্ঠে স্বৈরতন্ত্রের কবর রচনার হুঙ্কার। দৃঢ় চোয়ালে অগ্নিস্পর্ধী সাহসিকতার বহিঃপ্রকাশ। পাঁজরগুলো যেন শরীরের ভেতর থেকে তীরের ফলার মতো বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। মিছিলের অগ্রভাগে থাকা অপ্রতিরোধ্য শিশুটি সেদিন সবার নজর কাড়ে। ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি সকালে বাংলাদেশের স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনের এ প্রতিবাদী মুহূর্তটি ক্যামেরায় বন্দি করেছিলেন প্রথিতযশা আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদার।
সেই সময়ে দৈনিক সংবাদের নিজস্ব সংবাদচিত্রী ছিলেন তিনি। ছবিটি ফ্রেমবন্দি করে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি ইতিহাসের মূর্ত সাক্ষীর আলোকচিত্রী। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের আইকনিক আলোকচিত্র হিসেবে ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠে এ ছবি। ছবিটি আমাদের সংগ্রামী অতীতকে স্মরণ করিয়ে দে য়। এর কেন্দ্রীয় চরিত্র শিশুটির চোখ-মুখের ভাষা মানুষকে মনে করিয়ে দেয় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের কথা। ছবিটির দৃশ্য-ভাষা এতই শক্তিশালী যে, এখনো মানুষের মনে শিহরন জাগায়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আহ্বান জানায়।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট : ছাত্রসমাজের ১১ দফা মুক্তিসনদকে সামনে নিয়ে ঊনসত্তরের ২০ জানুয়ারি দাবানলের মতো জ্বলে উঠে পূর্ব বাংলা ও তার রাজধানী ঢাকা। এর ধারাবাহিকতায় ২৪ জানুয়ারি কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে ঢাকার রাজপথে নামে জনতার ঢল। বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালাকেও ম্লান করে দেয় সেদিনের জনসমুদ্রের বিক্ষুব্ধ ঊর্মিদল। অধিকার-সচেতন জনতার হুঙ্কারে কেঁপে ওঠে অত্যাচারীর আসন। সেই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য গর্জে উঠে স্বৈরাচারের বন্দুক। বুলেটের আঘাতে রাজপথে ঝরে পড়ে কয়েকটি প্রাণ। শহীদের লাশ নিয়ে রাজপথে মিছিলের ঢল নামে। রাত ৮টায় কারফিউ জারির মাধ্যমে জনতাকে নিবৃত্ত করার সর্বশেষ প্রয়াসকে ব্যর্থ করে দিয়ে রাতের নৈঃশব্দ্যকে প্রকম্পিত করে মুক্তিপাগল জনতা। এর কয়েক দিন পর জনতার অদম্য আন্দোলনের মুখে অত্যাচারী সরকারকে পালাতে হয়। সমাধি রচিত হয় আইয়ুব-মোনায়েমের রাজত্বের।
সেদিন ছিল আধাবেলা হরতাল। ঢাকায় সেক্রেটারিয়েটের ভেতর থেকে পুলিশ দুই দফা গুলিবর্ষণ করে। প্রথম দফা গুলিবর্ষণ সকাল ১১টা ৫ মিনিটে। দুপুরে দ্বিতীয় দফা। গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় নবকুমার ইনস্টিটিউশনের নবম শ্রেণির ছাত্র মতিউর রহমান মল্লিক ও নোয়াখালীর নান্দিয়াপাড়া হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সৈয়দ রুস্তম আলী। প্রেস ট্রাস্ট অফিসের সামনে পুলিশের গুলিতে আরও একজন নিহত হয়। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ-ইপিআরের গুলিবর্ষণ ও লাঠিচার্জে আহত হয় ২১ জন। পরদিন সব দৈনিক পত্রিকা হতাহতদের নাম, বাবার নাম, বয়স, পেশা, কার-কোথায় গুলি লেগেছে, কীভাবে ঘটনা ঘটেছে তার বিস্তারিত বিবরণ ছাপায়। বেশিরভাগ পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় শহীদ মতিউর ও রুস্তমের মৃত মুখের ছবি ছাপা হয়। সেদিন কোনো পত্রিকায় কোনো পথশিশুর মৃত্যুর খবর ছাপা হয়নি।
আইকনিক ফটো : রশীদ তালুকদারের তোলা পথশিশুর ছবিটি প্রথম ছাপা হয় ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি দৈনিক সংবাদের বিশেষ ক্রোড়পত্রে। এরপর থেকে প্রতি বছর ২৪ জানুয়ারি ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক ঘটনার লেখনীর সঙ্গে ছবিটি দৈনিক সংবাদ প্রকাশ করে। রশীদ তালুকদার ১৯৭৫ সালে সংবাদ ছেড়ে ইত্তেফাকে যোগদান দেন। এরপর ইত্তেফাকও ছবিটি প্রতি বছর প্রকাশ করে। অনেক দিন এ ছবির নেপথ্য ঘটনার অনুসন্ধান হয়নি। কোনো পত্রিকায় ছবিটি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন, ফিচার, প্রবন্ধ-নিবন্ধও লেখা হয়নি। রশীদ তালুকদারও এই ছবি সম্পর্কে কোথাও কিছু লিখে যাননি। দীর্ঘ ৫৪ বছর শিশুটির কথা অজানাই রয়ে গেছে। খোঁজ মেলেনি বলে সবাই ধরে নিয়েছে শিশুটি সেদিন বুলেটবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী তার ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে শিশুটির পরিচয় তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, মিছিলের অগ্রভাগে থাকা শিশুটির নাম মো. হোসেন আলী। সেই সূত্রেই পাওয়া যায় হোসেন আলীর খোঁজ।
হোসেন আলীর কথা : ৬৪ বছর বয়সী হোসেন আলী বলেছেন, মিছিলের অগ্রভাগে থাকা শিশুটি তিনিই। তার বক্তব্য, ‘ঊনসত্তরে আমার বয়স আছিল দশ বছর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমারে ডাকতেন পালোয়ান বইলা। ওই দিন জগন্নাথ কলেজের দিক থাইক্যা ছাত্রলীগের একটা মিছিল আইতেছিল। আমি তখন ফুলবাড়িয়া ইস্টিশনে থাকি। “জেলের তালা ভাঙবো, মুজিব ভাইকে আনবো” স্লোগান শুইন্যা আমিও যোগ দিলাম ওই মিছিলে। মিছিলে আমার মতো কয়েকটি শিশুও আছিল। রেগওলা (স্ট্রাইপ) হাফশার্ট গায়ে ছেলেডা আমার পেছনে আছিল। মিছিল পলাশী ব্যারাক হইয়া শাহবাগের দিকে আইলো। আমি কিন্তু মিছিলের সামনে। গরমে ঘামাইয়া গেছি। তাই গেঞ্জিটা খুইলা কোমরে বাঁধলাম। শাহবাগের সামনে আইসা দেখি, রেডিও অফিসের সামনে ইপিআর পজিশন লইয়া আছে। দুইবার মাইকিং করছে “চল যাও, চল যাও”। কে কার কথা শুনে? আমি জয় বাংলা বলে স্লোগান দিচ্ছি। তিন-চারজন ছবি তুলতাছে। তিনবার বলার পর দেখি বন্দুক রেডি করতাছে। সাথে সাথে একটা গুলির আওয়াজ পাইলাম। দৌড়াইয়া তারের ঘের দেওয়া রেসকোর্স ময়দানে ঢুকলাম। এরপর মন্দির, হাইকোর্ট, সেক্রেটারিয়েট হয়ে জিন্নাহ অ্যাভিনিউর রুচিতা হোটেলে আইলাম। কাঙালি হিসেবে আমারে তখন জিন্নাহ অ্যাভিনিউর অনেকে চিনতো। একদিন কয়েকজন আমারে পত্রিকার ছবি দেখাইয়া কইলো ‘তোরে তো পাঞ্জাবিরা মাইরালাইবো।’
হোসেন আলী বলেন, ‘আমি বহুদিন বহু লোকরে কইছি ওই শিশুটা আমি। আমি তো কাঙাল মানুষ, তাই আমার কথা কেউ শোনে না, পাত্তা দেয় না। আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, বঙ্গবন্ধুর বডিগার্ড মহিউদ্দীন ভাই তো এখনো বাঁইচা আছে। আমারে তাগো কাছে লইয়া যান।’ বুকে একটা কালো দাগ দেখিয়ে বললেন, ‘আসল ছবিটার সঙ্গে মিলাইয়া দ্যাখেন। সবকিছু পরিষ্কার হইয়া যাইবো।’ হোসেন আলীর ছেলে উজ্জ্বল হোসেন বাবু বলেন, ‘ছোটবেলা বেলা থেকে বাবার মুখে এই কথা শুনে শুনে বড় হয়েছি। বাবার চুলের শেপটা দেখেন, মিল পাবেন।’
হোসেন আলীর গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার চান্দেরকান্দিতে। মফিজ উদ্দিন ও ফাতেমা বেগমের একমাত্র সন্তান তিনি। পথশিশু পরিচয়ে শৈশব কাটে ফুলবাড়িয়া টার্মিনালে। মুক্তিযুদ্ধের সময় থাকতেন আওয়ামী লীগ অফিসের নিচে। ৭৭ সালে ২২ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে শুরু করেন টোকানো কাগজের ব্যবসা। আটাশির বন্যায় দোকান তলিয়ে গেলে আবার নিঃস্ব হয়ে পড়েন। অনেক দিন রিকশা চালিয়েছেন। এখন আট হাজার টাকা বেতনে নৈশপ্রহরীর চাকরি নিয়েছেন। তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বেকার ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন মান্ডার কদমতলী এলাকার ঝিলপাড়ে।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে : ছবিটি কেমন করে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সেই গল্প বলেন ভারতের পদ্মশ্রী খেতাবপ্রাপ্ত আলোকচিত্রী টি কাশীনাথ। বাহাত্তরে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান ফেয়ারে অংশ নেয় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের ছবির নেগেটিভগুলো ফটোসাংবাদিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে দিল্লিতে যান ফটোসাংবাদিক মোহাম্মদ জহিরুল হক। বঙ্গবন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে একটি চিঠি লিখে দেন। জহিরুল হক সেই চিঠি পৌঁছান ভারতের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রীর হাতে। তথ্যমন্ত্রী ফটোগ্রাফি বিভাগের পরিচালক টি কাশীনাথকে ডেকে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করতে বলেন। কাশীনাথের তত্ত্বাবধানে ২০ ফুট বাই ৩০ ফুট সাইজে ছবিগুলো পরিবর্ধিত (এনলার্জ) করা হয়। রশীদ তালুকদারের তোলা ঊনসত্তরের পথশিশুর ছবি ও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ছবিটি প্রদর্শন করা হয় স্টলের প্রবেশমুখে। ছবি দুটি দেখার জন্য মেলায় আসা লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ে। বাংলাদেশের স্টলের সামনের ভিড় সরাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করতেও বাধ্য হয়। বাংলাদেশের শিল্পকলার এই চমকপদ তথ্যটি অনেক দিন এ দেশের মানুষের অজানা ছিল। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) রিসোর্স পারসন হিসেবে টি কাশীনাথ বাংলাদেশে এসে এ গল্পটি করেন।
নীরব অভিমান : ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোতে প্রথিতযশা আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদারের তোলা ছবিগুলো আমাদের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। ১৯৫৯ সালে রশীদ তালুকদারের কর্মজীবন শুরু। বাষট্টিতে দৈনিক সংবাদে আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করার আগে তিন বছর ৮০ টাকা বেতনে ফটো টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন পিআইডিতে। সংবাদে কাজ করেছেন টানা ১৩ বছর। এরপর তিনি যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে। বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার ঘটনা প্রভৃতির অসংখ্য ছবি তুলে স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির অল রোভস প্রোগ্রামে প্রতি বছর বিশ্বের একজন সেরা ফটোসাংবাদিককে পাইওনিয়ার ফটোগ্রাফার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। ২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এ পদক পান রশীদ তালুকদার। তার তোলা ছবি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া এনসাইক্লোপিডিয়ায় যুক্ত হয়েছে। এত কিছুর পরও আমাদের রাষ্ট্র তাকে ঠিক বুঝে উঠতে সক্ষম হয়নি। রাষ্ট্রের অন্যমনস্কতায় নীরব অভিমানে ২০১১ সালের ২৫ অক্টোবর ৭২ বছর বয়সে পরলোকে চলে গেলেন বাংলাদেশের ইতিহাস নির্মাণকালের এই রূপকার।
লেখক : দেশ রূপান্তরের আলোকচিত্র সম্পাদক
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে গড়ে উঠছে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর। এই সমুদ্রবন্দরে প্রবেশ করতে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ নীল পানির চ্যানেল (জাহাজ চলাচলের পথ) দেখে মনে হবে যেন উন্নত কোনো দেশের বন্দর। এই নীল জলরাশির তীরেই গড়ে উঠবে উপমহাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর। কিন্তু এই নীল পানি দেখে আশাবাদী হওয়ার বদলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের (চবক) কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। যার কারণ হলো কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত চ্যানেলের জন্য খরচ হওয়া প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার দায় পড়তে যাচ্ছে চবকের কাঁধে।
গত রবিবার মাতারবাড়ী ঘুরে দেখা যায়, ৩৫০ মিটার চওড়া ও ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল নির্মাণের কাজ শেষ। কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় জেটি নির্মাণও হয়ে গেছে, সেই জেটিতে ইতিমধ্যে ১১২টি জাহাজ ভিড়েছেও। কিন্তু চ্যানেলের জন্য চবককে পরিশোধ করতে হবে ৯ হাজার ৩৫০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ঋণ হিসেবে রয়েছে ৭ হাজার ৯২২ কোটি ১৬ লাখ এবং বাংলাদেশ সরকারের ১ হাজার ৪২৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এই টাকা কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় খরচ করা হয়েছিল। আর কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্যই চ্যানেলটি নির্মাণ হয়েছিল। এখন যেহেতু এই চ্যানেলকে ব্যবহার করে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে উঠছে, তাই তা নির্মাণের সব খরচ চবককে পরিশোধ করতে হবে বলে গত ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবকে প্রধান করে একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়, যে কমিটি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাছ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের কাছে চ্যানেলটি ও তা নির্মাণের ব্যয় হস্তান্তরের পদ্ধতি নির্ধারণ করবে।
কিন্তু এই টাকা পরিশোধ নিয়ে বিপাকে পড়েছে চবক। এ বিষয়ে বন্দর কর্র্তৃপক্ষের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এই সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার মধ্যে জাইকার ৭ হাজার ৯২২ কোটি ১৬ লাখ ঋণের পরিশোধ শুরু হবে আগামী বছর থেকে। সেই হিসাবে প্রথম বছরে পরিশোধ করতে হবে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা এবং পরবর্তী বছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। শুধু কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় ঋণ নয়, মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণের জন্য জাইকা থেকে ৬ হাজার ৭৪২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে চবক। এই টাকার বিপরীতে ২০২৯ সালে জাইকাকে দিতে হবে ১ হাজার ৮১৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা, পরে প্রতি বছর ঋণ ও সুদ বাবদ দিতে হবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া মাতারবাড়ী বন্দরের ড্রেজিং বাবদ বছরে খরচ হবে প্রায় ৫০ কোটি এবং এই বন্দর পরিচালনায় প্রতি বছর ভর্তুকি দিতে হবে প্রায় ৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে শুধু ঋণ শোধ বাবদ চবককে পরিশোধ করতে হবে ৪ হাজার ৪২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে আগামী বছর লাগবে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। বাকি টাকা পর্যায়ক্রমে ২০২৬ সাল থেকে প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া বে টার্মিনালের ব্রেক ওয়াটার ও চ্যানেল নির্মাণের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে চবক। অন্যদিকে চবকের বার্ষিক গড় আয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। তাহলে চবক এত টাকা কীভাবে পরিশোধ করবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
চবকের দাবি, চ্যানেল নির্মাণের খরচ যাতে তাদের কাঁধে দেওয়া না হয়। কিন্তু এই টাকা পরিশোধ করতে হবে বলে জানিয়েছেন কয়লাবিদ্যুৎ (কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড সিপিজিসিবিএল) প্রকল্পের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। এ প্রসঙ্গে তিনি গতকাল সোমবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই চ্যানেল কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নিমির্ত হয়েছে। এখন যেহেতু বন্দর কর্র্তৃপক্ষ চ্যানেল ব্যবহার করবে, তাহলে তো তাদের টাকা দিতেই হবে। আর এই টাকা তো ৪০ বছরে পরিশোধ করতে হবে।’
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। জাইকার অর্থায়নে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে মাতারবাড়ী পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ, ১৬ মিটার ড্রাফট (গভীরতা) এবং ২৫০ মিটার চওড়া চ্যানেল নির্মাণ হয় বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায়। কয়লাবিদ্যুতের চ্যানেলের ওপর ভিত্তি করে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলা যায় বলে জাইকা একটি প্রস্তাবনা দেয়। সেই প্রস্তাবনা ও পরে সমীক্ষার পর ‘মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয়। আর এরই আওতায় চ্যানেলের প্রশস্ততা ১০০ মিটার বাড়ানোর পাশাপাশি গভীরতাও ১৮ মিটারে উন্নীত করা হয়। এ জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষ ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ ১৩ হাজার টাকার বাজেট একনেক থেকে অনুমোদন করে। এর মধ্যে জাইকার ঋণ ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ ৫ হাজার টাকা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের (নিজস্ব তহবিল) ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা এবং বাংলাদেশ সরকারের ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। মাতারবাড়ীতে ৩৫০ মিটার দীর্ঘ ও ১৬ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের গভীরতা) জাহাজ ভিড়তে পারবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে ২০০ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে। মাতারবাড়ী চালু হলে এর সঙ্গে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রাবন্দরের নেটওয়ার্ক আরও বাড়বে। ফলে গভীর সমুদ্রবন্দরের অভাব পূরণ করবে মাতারবাড়ী বন্দর।
আর কখনো রাজনীতিতে জড়াবে না হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। মুচলেকা দিয়ে এ কথা বলেছে তারা। সংগঠনটির নেতারা আরও বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক দলের অংশও হবেন না তারা। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রকাশ্য বা গোপন কোনো সম্পর্কেই জড়াবে না হেফাজতে ইসলাম।
হেফাজতে ইসলাম বেশ কিছু শর্তও দিয়েছে। শর্তে তারা বলেছে, হেফাজত নেতা মামুনুল হকসহ যেসব নেতা কারাবন্দি রয়েছেন তাদের সবাইকে ছেড়ে দিতে হবে এবং মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। আওয়ামী লীগ ও হেফাজতে ইসলাম গত বছর ১৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে এ মুচলেকা দেয় এবং এসব শর্ত বা দাবি জানায়।
আগে হেফাজত নেতারা তিন মন্ত্রীর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেন। তারপর দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে মুচলেকা দেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা হেফাজতের মুচলেকা দেওয়ার কথা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন। সরকারের সহযোগী হিসেবে থাকার অঙ্গীকার করেছে হেফাজত।
১৪ দলের অন্যতম শরিক তরিকত ফেডারেশনের নেতা নজিবুল বশর মাইজভা-ারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, হেফাজতে ইসলামের চেয়ারম্যান তাকে জানিয়েছেন তারা কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়; তারা রাজনীতি করবে না। কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে তারা জোটবদ্ধও হবে না।
হেফাজতে ইসলাম আরও কিছু শর্ত দিয়েছে, যেমন কাদিয়ানি সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে এবং বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর বৃহত্তম বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশকে (বেফাক) সরকারি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে থেকে হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও তাদের মুক্তির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে মামুনুল হক এবং আরও কয়েকজনকে এখনই মুক্তি দেওয়া সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে সরকারি মহল। একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মামুনুলকে ছাড়তে হবে, যা সময়সাপেক্ষ।
সূত্রে আরও জানা গেছে, কাদিয়ানি সম্প্রদায় বিষয়ে হেফাজতের দাবি আপাতত আমলে নেওয়া হয়নি। কারণ, তাদের অমুসলিম ঘোষণা করা হলে বিদেশি চাপ আসবে। যে চাপ সামলানো প্রায় অসম্ভব। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন ঝামেলায় জড়ানো যাবে না বলে হেফাজত নেতাদের বলা হয়েছে। বেফাক ইস্যুতেও আপাতত কোনো উদ্যোগ নিতে চায় না সরকার। বেফাককে সরকারি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি মানাও আপাতত অসম্ভব, জানিয়েছে সরকার। তবে হেফাজত নেতাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, অন্য শর্তগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে আরও বৈঠক হবে।
হেফাজত নেতাদের বলা হয়েছে, ধর্মীয় বিভিন্ন অপপ্রচার চলছে সরকারের বিরুদ্ধে; এসব ব্যাপারে কথা বলতে হবে তাদের। জামায়াতবিরোধী অবস্থান নিয়ে কাজ করতে হবে হেফাজতকে। হেফাজত নেতারা বলেছেন, জামায়াত ইস্যুতে তারা কোনো ছাড় দেবে না। জামায়াতকে তারা ইসলামের ধারক-বাহক মনে করে না।
বলা যায়, হেফাজতের সঙ্গে সরকারের রাজনৈতিক বোঝাপড়া হয়েছে। এটা একটা ‘পলিটিক্যাল ডিল অর আন্ডারস্ট্যান্ডিং’। জানা গেছে, এ সমঝোতার ভিত্তিতেই হেফাজতের বিরুদ্ধে ২০৩টি মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে এবং নেতারা জামিন পেতে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে পুলিশকে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। হেফাজত ইসলামী বাংলাদেশের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে সরকার।
২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় এখনো তদন্ত হচ্ছে ২০৩টি মামলার। অনেক দিন ধরেই তদন্ত হচ্ছে। কিন্তু সুরাহা করতে পারছে না তদন্তকারী সংস্থাগুলো। হেফাজত নেতাকর্মীদের অনেকে কারাগারেও আছেন। তবে বেশিরভাগ আসামি প্রকাশ্যে চলাফেরা করছেন।
পুলিশের পাশাপাশি হেফাজত নেতারা মামলাগুলো নিয়ে ত্যক্ত-বিরক্ত। তারা এগুলোর নিষ্পত্তি চান। এ নিয়ে কয়েক দফা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন হেফাজত নেতারা। সর্বশেষ গত ১৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে হয়েছে। বৈঠকে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির অনুরোধ জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীও তাদের অনুরোধ বিবেচনায় নিয়ে সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
সরকারের নির্দেশনা পেয়ে পুলিশও কাজ শুরু করে দিয়েছে। গত এক মাসে অন্তত ১০ জন নেতা জামিন পেয়েছেন। তারা যেকোনো সময় কারামুক্ত হবেন। তবে মামুনুল হক আপাতত মুক্ত হচ্ছেন না।
হেফাজত নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর তারা আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারাও ‘সবুজ সংকেত’ দিয়েছেন। তারা বলেন, এসবের জন্যই সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় গিয়েছি আমরা। তবে সমঝোতার কথা সবিস্তারে প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, হেফাজতের মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে মৌখিক নির্দেশনা পাওয়া গেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করার পরিকল্পনা আছে আমাদের। হেফাজত নেতারা সরকারের অঙ্গীকার করেছে, তারা রাজনৈতিক কর্মকা- চালাবেন না। শুধু ইসলাম নিয়ে কথা বলবেন। জামায়াতে ইসলামীর কর্মকা-ের সমালেচনাও করবে বলে সরকারের নীতিনির্ধারকদের আশ্বস্ত করেছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি।
নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন তদন্তকারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পুলিশ সদর দপ্তর নির্দেশনা এসেছে। আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। মামলাগুলোর অনেক আসামি জামিনে আছে, কেউ কেউ জামিন ছাড়াই প্রকাশ্যে ঘুরছে। দীর্ঘদিন ধরে মামলাগুলোর নিষ্পত্তি না হওয়ায় সমালোচনাও হচ্ছে সবখানে। এগুলোর দ্রুত সুরাহা চাচ্ছি আমরাও।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, ২০১৩ সালে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন চলাকালে কথিত নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছিল হেফাজতে ইসলাম। ওই বছরের ৫ মে ঢাকার ছয়টি প্রবেশমুখে অবরোধ করে তারা। একপর্যায়ে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়। সে সময় হেফাজতের বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থকের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। তারা রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে যানবাহন ভাঙচুর করে এবং বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয়। সহিংসতায় হতাহতের ঘটনাও ঘটে।
২০২১ সালের মার্চ মাসে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসেন। তার সফরের বিরোধিতা করে মাঠে নামে হেফাজতে ইসলাম। ২৬ মার্চ রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকায় বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় তাদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। সংঘর্ষে ১৯ জনের মৃত্যু হয় এবং পুলিশসহ সহস্রাধিক হেফাজত নেতাকর্মী আহত হয়। হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয় সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায়। এসব ঘটনায় সারা দেশে ১৫৪টি মামলা হয়। ওইসব মামলার কোনোটাতেই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি।
হেফাজত ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মাসখানেক আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। বৈঠকে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় সবাই ছিলেন। বৈঠকে আমরা বলেছি, আমরা কোনো ধরনের রাজনীতি করি না। ইসলাম নিয়ে কাজ করি। একটি মহল আমাদের নামে অপবাদ দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি, আমরা রাজনীতি করছি না, আর করবও না।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশ রূপান্তরকে বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে। আমরাও চাচ্ছি মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হোক। হেফাজতের কেন্দ্রীয় এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারপ্রধানের সঙ্গে আমরা গত ১৭ ডিসেম্বর বৈঠক করেছি। তাতে সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহিয়ার নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। প্রায় ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট বৈঠক হয়েছে। অনেক কথা হয়েছে। আমাদের শর্তও তাকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, সমঝোতা ছাড়া কোনো কিছুরই সমাধান হয় না। আমরা চাই না সরকারের সঙ্গে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হোক। আমরা কথা বলেছি। সরকারপ্রধান ইতিবাচক হিসেবে বিষয়টি আমলে নিয়েছেন।
রাজপথে খালি পায়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে স্লোগান দিচ্ছে এক পথশিশু। পেছনে বিক্ষুব্ধ মিছিল। শিশুটির পরনে চার পকেটের হাফপ্যান্ট; গেঞ্জিটা কোমরে বাঁধা। কণ্ঠে স্বৈরতন্ত্রের কবর রচনার হুঙ্কার। দৃঢ় চোয়ালে অগ্নিস্পর্ধী সাহসিকতার বহিঃপ্রকাশ। পাঁজরগুলো যেন শরীরের ভেতর থেকে তীরের ফলার মতো বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। মিছিলের অগ্রভাগে থাকা অপ্রতিরোধ্য শিশুটি সেদিন সবার নজর কাড়ে। ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি সকালে বাংলাদেশের স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনের এ প্রতিবাদী মুহূর্তটি ক্যামেরায় বন্দি করেছিলেন প্রথিতযশা আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদার।
সেই সময়ে দৈনিক সংবাদের নিজস্ব সংবাদচিত্রী ছিলেন তিনি। ছবিটি ফ্রেমবন্দি করে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি ইতিহাসের মূর্ত সাক্ষীর আলোকচিত্রী। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের আইকনিক আলোকচিত্র হিসেবে ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠে এ ছবি। ছবিটি আমাদের সংগ্রামী অতীতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এর কেন্দ্রীয় চরিত্র শিশুটির চোখ-মুখের ভাষা মানুষকে মনে করিয়ে দেয় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের কথা। ছবিটির দৃশ্য-ভাষা এতই শক্তিশালী যে, এখনো মানুষের মনে শিহরন জাগায়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আহ্বান জানায়।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট : ছাত্রসমাজের ১১ দফা মুক্তিসনদকে সামনে নিয়ে ঊনসত্তরের ২০ জানুয়ারি দাবানলের মতো জ্বলে উঠে পূর্ব বাংলা ও তার রাজধানী ঢাকা। এর ধারাবাহিকতায় ২৪ জানুয়ারি কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে ঢাকার রাজপথে নামে জনতার ঢল। বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালাকেও ম্লান করে দেয় সেদিনের জনসমুদ্রের বিক্ষুব্ধ ঊর্মিদল। অধিকার-সচেতন জনতার হুঙ্কারে কেঁপে ওঠে অত্যাচারীর আসন। সেই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য গর্জে উঠে স্বৈরাচারের বন্দুক। বুলেটের আঘাতে রাজপথে ঝরে পড়ে কয়েকটি প্রাণ। শহীদের লাশ নিয়ে রাজপথে মিছিলের ঢল নামে। রাত ৮টায় কারফিউ জারির মাধ্যমে জনতাকে নিবৃত্ত করার সর্বশেষ প্রয়াসকে ব্যর্থ করে দিয়ে রাতের নৈঃশব্দ্যকে প্রকম্পিত করে মুক্তিপাগল জনতা। এর কয়েক দিন পর জনতার অদম্য আন্দোলনের মুখে অত্যাচারী সরকারকে পালাতে হয়। সমাধি রচিত হয় আইয়ুব-মোনায়েমের রাজত্বের।
সেদিন ছিল আধাবেলা হরতাল। ঢাকায় সেক্রেটারিয়েটের ভেতর থেকে পুলিশ দুই দফা গুলিবর্ষণ করে। প্রথম দফা গুলিবর্ষণ সকাল ১১টা ৫ মিনিটে। দুপুরে দ্বিতীয় দফা। গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় নবকুমার ইনস্টিটিউশনের নবম শ্রেণির ছাত্র মতিউর রহমান মল্লিক ও নোয়াখালীর নান্দিয়াপাড়া হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সৈয়দ রুস্তম আলী। প্রেস ট্রাস্ট অফিসের সামনে পুলিশের গুলিতে আরও একজন নিহত হয়। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ-ইপিআরের গুলিবর্ষণ ও লাঠিচার্জে আহত হয় ২১ জন। পরদিন সব দৈনিক পত্রিকা হতাহতদের নাম, বাবার নাম, বয়স, পেশা, কার-কোথায় গুলি লেগেছে, কীভাবে ঘটনা ঘটেছে তার বিস্তারিত বিবরণ ছাপায়। বেশিরভাগ পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় শহীদ মতিউর ও রুস্তমের মৃত মুখের ছবি ছাপা হয়। সেদিন কোনো পত্রিকায় কোনো পথশিশুর মৃত্যুর খবর ছাপা হয়নি।
আইকনিক ফটো : রশীদ তালুকদারের তোলা পথশিশুর ছবিটি প্রথম ছাপা হয় ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি দৈনিক সংবাদের বিশেষ ক্রোড়পত্রে। এরপর থেকে প্রতি বছর ২৪ জানুয়ারি ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক ঘটনার লেখনীর সঙ্গে ছবিটি দৈনিক সংবাদ প্রকাশ করে। রশীদ তালুকদার ১৯৭৫ সালে সংবাদ ছেড়ে ইত্তেফাকে যোগদান দেন। এরপর ইত্তেফাকও ছবিটি প্রতি বছর প্রকাশ করে। অনেক দিন এ ছবির নেপথ্য ঘটনার অনুসন্ধান হয়নি। কোনো পত্রিকায় ছবিটি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন, ফিচার, প্রবন্ধ-নিবন্ধও লেখা হয়নি। রশীদ তালুকদারও এই ছবি সম্পর্কে কোথাও কিছু লিখে যাননি। দীর্ঘ ৫৪ বছর শিশুটির কথা অজানাই রয়ে গেছে। খোঁজ মেলেনি বলে সবাই ধরে নিয়েছে শিশুটি সেদিন বুলেটবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী তার ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে শিশুটির পরিচয় তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, মিছিলের অগ্রভাগে থাকা শিশুটির নাম মো. হোসেন আলী। সেই সূত্রেই পাওয়া যায় হোসেন আলীর খোঁজ।
হোসেন আলীর কথা : ৬৪ বছর বয়সী হোসেন আলী বলেছেন, মিছিলের অগ্রভাগে থাকা শিশুটি তিনিই। তার বক্তব্য, ‘ঊনসত্তরে আমার বয়স আছিল দশ বছর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমারে ডাকতেন পালোয়ান বইলা। ওই দিন জগন্নাথ কলেজের দিক থাইক্যা ছাত্রলীগের একটা মিছিল আইতেছিল। আমি তখন ফুলবাড়িয়া ইস্টিশনে থাকি। “জেলের তালা ভাঙবো, মুজিব ভাইকে আনবো” স্লোগান শুইন্যা আমিও যোগ দিলাম ওই মিছিলে। মিছিলে আমার মতো কয়েকটি শিশুও আছিল। রেগওলা (স্ট্রাইপ) হাফশার্ট গায়ে ছেলেডা আমার পেছনে আছিল। মিছিল পলাশী ব্যারাক হইয়া শাহবাগের দিকে আইলো। আমি কিন্তু মিছিলের সামনে। গরমে ঘামাইয়া গেছি। তাই গেঞ্জিটা খুইলা কোমরে বাঁধলাম। শাহবাগের সামনে আইসা দেখি, রেডিও অফিসের সামনে ইপিআর পজিশন লইয়া আছে। দুইবার মাইকিং করছে “চল যাও, চল যাও”। কে কার কথা শুনে? আমি জয় বাংলা বলে স্লোগান দিচ্ছি। তিন-চারজন ছবি তুলতাছে। তিনবার বলার পর দেখি বন্দুক রেডি করতাছে। সাথে সাথে একটা গুলির আওয়াজ পাইলাম। দৌড়াইয়া তারের ঘের দেওয়া রেসকোর্স ময়দানে ঢুকলাম। এরপর মন্দির, হাইকোর্ট, সেক্রেটারিয়েট হয়ে জিন্নাহ অ্যাভিনিউর রুচিতা হোটেলে আইলাম। কাঙালি হিসেবে আমারে তখন জিন্নাহ অ্যাভিনিউর অনেকে চিনতো। একদিন কয়েকজন আমারে পত্রিকার ছবি দেখাইয়া কইলো ‘তোরে তো পাঞ্জাবিরা মাইরালাইবো।’
হোসেন আলী বলেন, ‘আমি বহুদিন বহু লোকরে কইছি ওই শিশুটা আমি। আমি তো কাঙাল মানুষ, তাই আমার কথা কেউ শোনে না, পাত্তা দেয় না। আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, বঙ্গবন্ধুর বডিগার্ড মহিউদ্দীন ভাই তো এখনো বাঁইচা আছে। আমারে তাগো কাছে লইয়া যান।’ বুকে একটা কালো দাগ দেখিয়ে বললেন, ‘আসল ছবিটার সঙ্গে মিলাইয়া দ্যাখেন। সবকিছু পরিষ্কার হইয়া যাইবো।’ হোসেন আলীর ছেলে উজ্জ্বল হোসেন বাবু বলেন, ‘ছোটবেলা বেলা থেকে বাবার মুখে এই কথা শুনে শুনে বড় হয়েছি। বাবার চুলের শেপটা দেখেন, মিল পাবেন।’
হোসেন আলীর গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার চান্দেরকান্দিতে। মফিজ উদ্দিন ও ফাতেমা বেগমের একমাত্র সন্তান তিনি। পথশিশু পরিচয়ে শৈশব কাটে ফুলবাড়িয়া টার্মিনালে। মুক্তিযুদ্ধের সময় থাকতেন আওয়ামী লীগ অফিসের নিচে। ৭৭ সালে ২২ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে শুরু করেন টোকানো কাগজের ব্যবসা। আটাশির বন্যায় দোকান তলিয়ে গেলে আবার নিঃস্ব হয়ে পড়েন। অনেক দিন রিকশা চালিয়েছেন। এখন আট হাজার টাকা বেতনে নৈশপ্রহরীর চাকরি নিয়েছেন। তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বেকার ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন মান্ডার কদমতলী এলাকার ঝিলপাড়ে।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে : ছবিটি কেমন করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সেই গল্প বলেন ভারতের পদ্মশ্রী খেতাবপ্রাপ্ত আলোকচিত্রী টি কাশীনাথ। বাহাত্তরে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান ফেয়ারে অংশ নেয় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের ছবির নেগেটিভগুলো ফটোসাংবাদিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে দিল্লিতে যান ফটোসাংবাদিক মোহাম্মদ জহিরুল হক। বঙ্গবন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে একটি চিঠি লিখে দেন। জহিরুল হক সেই চিঠি পৌঁছান ভারতের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রীর হাতে। তথ্যমন্ত্রী ফটোগ্রাফি বিভাগের পরিচালক টি কাশীনাথকে ডেকে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করতে বলেন। কাশীনাথের তত্ত্বাবধানে ২০ ফুট বাই ৩০ ফুট সাইজে ছবিগুলো পরিবর্ধিত (এনলার্জ) করা হয়। রশীদ তালুকদারের তোলা ঊনসত্তরের পথশিশুর ছবি ও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ছবিটি প্রদর্শন করা হয় স্টলের প্রবেশমুখে। ছবি দুটি দেখার জন্য মেলায় আসা লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ে। বাংলাদেশের স্টলের সামনের ভিড় সরাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করতেও বাধ্য হয়। বাংলাদেশের শিল্পকলার এই চমকপদ তথ্যটি অনেক দিন এ দেশের মানুষের অজানা ছিল। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) রিসোর্স পারসন হিসেবে টি কাশীনাথ বাংলাদেশে এসে এ গল্পটি করেন।
নীরব অভিমান : ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোতে প্রথিতযশা আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদারের তোলা ছবিগুলো আমাদের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। ১৯৫৯ সালে রশীদ তালুকদারের কর্মজীবন শুরু। বাষট্টিতে দৈনিক সংবাদে আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করার আগে তিন বছর ৮০ টাকা বেতনে ফটো টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন পিআইডিতে। সংবাদে কাজ করেছেন টানা ১৩ বছর। এরপর তিনি যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে। বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার ঘটনা প্রভৃতির অসংখ্য ছবি তুলে স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির অল রোভস প্রোগ্রামে প্রতি বছর বিশ্বের একজন সেরা ফটোসাংবাদিককে পাইওনিয়ার ফটোগ্রাফার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। ২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এ পদক পান রশীদ তালুকদার। তার তোলা ছবি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া এনসাইক্লোপিডিয়ায় যুক্ত হয়েছে। এত কিছুর পরও আমাদের রাষ্ট্র তাকে ঠিক বুঝে উঠতে সক্ষম হয়নি। রাষ্ট্রের অন্যমনস্কতায় নীরব অভিমানে ২০১১ সালের ২৫ অক্টোবর ৭২ বছর বয়সে পরলোকে চলে গেলেন বাংলাদেশের ইতিহাস নির্মাণকালের এই রূপকার।
লেখক : দেশ রূপান্তরের আলোকচিত্র সম্পাদক
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’