
ইউক্রেনে নিজেদের নিয়ন্ত্রিত চার অঞ্চলকে রুশ ফেডারেশনের অংশ হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। গতকাল শুক্রবার ক্রেমলিনে এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে পুতিন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক এবং দক্ষিণাঞ্চলের জেপোরিজিয়া ও খেরসনকে রাশিয়ার ভূখণ্ড বলে ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি গণভোটের ফলাফলের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ওই এলাকার মানুষই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ এটা তাদের একমাত্র সিদ্ধান্ত নেওয়ার ছিল।
তবে ইউক্রেন ও দেশটির পশ্চিমা মিত্ররা প্রথম থেকে এ গণভোটকে ‘ভাঁওতাবাজি’ আখ্যা দিয়ে আসছে। গণভোটের ফল ও ওই অঞ্চলগুলো স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল পুতিনের ঘোষণার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে রাশিয়ার ওপর। অন্যদিকে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, পুতিনের ঘোষণার পরই তার দেশকে যত দ্রুত সম্ভব ন্যাটোর সদস্য করে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন।
রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রশ্নে ওই চার অঞ্চলে গত ২৩ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পাঁচ দিনব্যাপী গণভোট হয়েছে। তাতে খেরসনে পড়া ভোটের ৮৭ দশমিক ০৫ শতাংশই স্বাধীনতা এবং রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে পড়েছে বলে জানিয়েছেন অঞ্চলটির রুশপন্থি প্রশাসনের কর্মকর্তারা। জেপোরিজিয়াতেও মোট ভোটারের ৯৩ দশমিক ২৩ শতাংশ স্বাধীনতা ও রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। আর দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকে ও লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে ভোট পড়েছে ৯৯ দশমিক ২৩ শতাংশ ও ৯৮ দশমিক ৪২ শতাংশ।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস, আলজাজিরা, বিবিসি, রয়টার্সসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, আগামী কয়েক দিনে আনুষ্ঠানিক আরও কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অঞ্চলগুলো রাশিয়া ফেডারেশনভুক্ত হবে।
বিবিসি জানাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট পুতিনের চুক্তিতে সইয়ের পর এ সংক্রান্ত নথি যাবে রাশিয়ার সাংবিধানিক আদালতে। এরপর রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ স্টেট দুমা ও উচ্চকক্ষ ফেডারেল কাউন্সিলে এসব চুক্তি অনুমোদন পেতে হবে। পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের অনুমোদনের পর পুতিন আনুষ্ঠানিকভাবে ওই চার অঞ্চলকে ভূখণ্ডভুক্ত করে নেওয়ার নথি সই করবেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাওয়া দুই অঞ্চল খেরসন ও জেপোরিজিয়াকে স্বাধীন সার্বভৌম দুটি রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেন পুতিন। সেদিন তিনি এ সংক্রান্ত দুটি ডিক্রি জারি করেন। ২৯ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত দুই ডিক্রিতে খেরসন ও জেপোরিজিয়া অঞ্চলের নাম উল্লেখ করে বলা হয়, স্বাক্ষরের দিন থেকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে তাদের স্বীকৃতি কার্যকর হবে। এসব নথিতে পুতিন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইনের রীতিনীতি এবং জনগণের সমানাধিকার ও আত্মনিয়ন্ত্রণের নীতির উল্লেখ করেছেন।
বিবিসি জানাচ্ছে, গতকাল চুক্তি অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে পুতিন বলেন, রুশ ফেডারেশনের এ চার অঞ্চলকে কেন্দ্রীয় পরিষদ সমর্থন জানাবে, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। কারণ এটি লাখো মানুষের আকাক্সক্ষা ছিল। সে সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত কর্মকর্তারা করতালির মধ্য দিয়ে পুতিনের এ ঘোষণাকে সমর্থন জানান। এরপর ইউক্রেনে যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত রুশ সেনাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের আহ্বান জানান পুতিন। এ সময় তিনি বলেন, নিহত এ সেনারা রাশিয়ার বীর। তারা দেশের জন্য নিজেদের জীবন দিয়েছেন। ভাষণে পুতিন বলেন, তিনি চান কিয়েভ ও পশ্চিমারা জানুক দনবাস অঞ্চলের বাসিন্দারা চিরদিনের জন্য রাশিয়ার নাগরিক হচ্ছে। কিয়েভ কর্তৃপক্ষের উচিত জনগণের ইচ্ছাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে সম্মান জানানো।
পশ্চিমা বিশ্বকে ‘লোভী’ হিসেবে বর্ণনা করে পুতিন বলেন, তারা রাশিয়াকে ‘উপনিবেশ’ বানাতে চায়। সে কারণেই পশ্চিম দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি ‘হাইব্রিড যুদ্ধ’ চালাচ্ছে। পশ্চিমারা আমাদের স্বাধীন সমাজ হিসেবে দেখতে চায় না, তারা আমাদের একদল দাস হিসেবে দেখতে চায়।
বিবিসি জানায়, ভাষণে পুতিন ইউক্রেনকে অবিলম্বে গোলা ছোড়া বন্ধ করে আলোচনার টেবিলে আসারও আহ্বান জানিয়েছেন। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, জেপোরিজিয়া এবং খেরসন নিজেরাই রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে চাওয়ার কারণে এ বিষয়টি নিয়ে আর কোনো আলোচনা হবে না।
দ্রুত ন্যাটোভুক্তির আবেদন জেলেনস্কির : পুতিন চুক্তিতে স্বাক্ষরের পরপরই ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তার দেশকে দ্রুত ন্যাটোভুক্ত করার আবেদন জানিয়েছেন। গতকাল চুক্তি সইয়ের পর এক ভিডিও বার্তায় এ তথ্য জানান তিনি। জেলেনস্কি টেলিগ্রাম পোস্টে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে মিত্রতার মানদণ্ডের সঙ্গে আমাদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছি। ন্যাটোতে দ্রুত যোগ দিতে ইউক্রেনের আবেদনে স্বাক্ষর করে আমরা দৃঢ় পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
ন্যাটোতে যোগদানের আবেদনের বিষয়ে জেলেনস্কির বক্তব্যের একটি ভিডিও ইউক্রেন সরকারের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ন্যাটোতে ইউক্রেনের আবেদনের কথা পরে স্বীকারও করেছে ইউক্রেন সরকার।
গতকালের ভিডিওতে জেলেনস্কি তার দেশে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত বলেও জানান। তবে তার শর্ত, সেই আলোচনা প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে করবে না কিয়েভ।
নতুন নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের : এদিকে এ ঘটনায় রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তর জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িত রাশিয়ার সমরাস্ত্র নির্মাণশিল্প মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স ছাড়াও দেশটির বড় দুটি আন্তর্জাতিক অস্ত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, রাশিয়ার আর্থিক খাতের তিন নেতা, রাশিয়ার কিছু জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার পরিবারের সদস্য এবং রাশিয়ার আইনসভার ২৭৮ জন সদস্য এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছেন।
দেশটির অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন বলেন, ‘পুতিন প্রতারণা করে ইউক্রেনের কিছু অংশ নিজ দেশের সঙ্গে সংযুক্ত করার চেষ্টা করায় আমরা তার পাশে নেই। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তর এবং সরকার রাশিয়ার অবৈধ যুদ্ধ চালানোর ক্ষমতাকে দুর্বল করতে ব্যাপক পদক্ষেপ নিচ্ছে।’ তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্র দেশগুলো রাশিয়ার ভেতর-বাইরে ‘যারা এ যুদ্ধ এবং এ জালিয়াতি গণভোটে জড়িত’ তাদের বিরুদ্ধে ‘কঠোর পদক্ষেপ’ নিতে দ্বিধা করবে না।
রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ২৩ : এদিকে গতকাল জেপোরিজিয়ার প্রান্তে এক বেসামরিক গাড়িবহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ২৩ জন নিহত ও ২৮ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন সেখানকার আঞ্চলিক গভর্নর। জেপোরিজিয়া অঞ্চলের ইউক্রেনীয় গভর্নর ওলেকজান্দার স্তারুখ টেলিগ্রামে লিখেছেন, এ পর্যন্ত ২৩ জন নিহত ও ২৮ জন আহত হয়েছে। সবাই বেসামরিক।
বিশ্ব-জনসংখ্যায় প্রবীণতার হার আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি এবং দ্রুত তা ঘটছে। জাপান, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড, পর্তুগাল প্রভৃতি দেশের জনসংখ্যায় ইতিমধ্যে বয়স্ক লোকের আধিক্য দেখা দিয়েছে। এ প্রবণতা এখন শুধু ইউরোপ বা উন্নত অর্থনীতির দেশে সীমিত নয়। প্রবীণতা সব জনসংখ্যাকেই আচ্ছন্ন করছে, তবে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায়। বাংলাদেশও প্রবীণ লোকের দেশের তালিকায় ঢুকতে যাচ্ছে। দুই যুগ পরেই বাংলাদেশ রূপান্তরিত হবে ‘প্রবীণের সমাজে’।
দেশ গঠনে অবদান রাখা সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য বিভিন্ন দেশ স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলেও বাংলাদেশে তা দেখা যায় না। মাসিক ৫০০ টাকা বয়স্ক ভাতা দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে সরকার। তবে অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ একটি সর্বজনীন পেনশন পলিসি গ্রহণ করেছে, যা এখনো প্রক্রিয়াধীন।
কোনো দেশের মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশের বয়স যদি ৬৫ বা তার বেশি হয়, তাহলে সেই দেশকে ‘প্রবীণের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই হিসেবে ২০৪৭ সালে বাংলাদেশ ‘প্রবীণের সমাজ’ বা ‘প্রবীণ দেশ’-এ রূপান্তরিত হবে। এই প্রক্রিয়া শুরু হবে মাত্র সাত বছর পর।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ২০২৯ সালে প্রবীণমুখিতার পর্যায়ে পৌঁছাবে। ‘বৃদ্ধ বা প্রবীণ’ পর্যায়ে রূপান্তরিত হতে বাংলাদেশের মাত্র ১৮ বছর লাগবে। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ যে গতিতে ‘বয়স্ক’ থেকে ‘বার্ধক্য’ পর্যায়ে পৌঁছবে তা উন্নত এশীয় ও সমৃদ্ধ ইউরোপীয় দেশগুলোর গতির চেয়ে বেশি হবে। এই রূপান্তরে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুত রূপান্তরশীল সমাজ হবে। উন্নতির অনেক নিচের ধাপে থেকে জনসংখ্যা-রূপান্তরের এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ছিল ৪৮ বছর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান ২০২২ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭৪ বছর ৩ মাস। জনস্বাস্থ্যের উন্নতি, জীবনযাত্রার মানবৃদ্ধি এবং পুষ্টিকর খাবার দেশের মানুষের গড় আয়ু বাড়িয়েছে। একদিকে গড় আয়ু বাড়ছে, অন্যদিকে প্রজনন হার কমছে। এ কারণেই বয়স কাঠামোতে পরিবর্তন ঘটছে, এক পর্যায়ে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়বে। এই অভিজ্ঞতা জাপানের হয়েছে। এখন চীন, সিঙ্গাপুরের হচ্ছে। সেই পরিস্থিতির মুখে বাংলাদেশকেও পড়তে হবে।
নাগরিকদের কর্মজীবন শেষ হয়ে গেলে তাদের মঙ্গল নিশ্চিত করতে একটি দেশের সামাজিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু করণীয় জরুরি হয়ে ওঠে। একই সময়ে অর্থনৈতিকভাবে সক্রিয় জনসংখ্যার পরিবর্তন না ঘটলে শ্রমশক্তির আকার কমবে, যারা অবসর নিয়েছেন তাদের চাহিদাপূরণের জন্য দেশটির অর্থনৈতিক সক্ষমতা সীমিত হবে। ‘বয়স্ক’ জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের কর্মক্ষম লোকসংখ্যা কমবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নতির পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা ও সঞ্চয় বাড়াতে বেশি জোর দিতে হবে। তা না হলে ‘বৃদ্ধ’ বা ‘প্রবীণ’দের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিয়ে নাগরিক অধিকারসহ সামাজিক জীবনে অংশগ্রহণ অসম্ভব হয়ে পড়বে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যারা আয়-উপার্জন করে তাদের ওপরই বয়স্করা নির্ভরশীল থাকেন। এখন যারা কম বয়সী আছেন, তাদের কর্মসংস্থানে সর্বোচ্চ জোর দিচ্ছি আমরা। কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনা এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে দরিদ্রতা কমে, সঞ্চয় বাড়ে বৃদ্ধ বয়সে তারা যেন খেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী বাড়বে, তাদের জন্য এখন সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ষাটোর্ধ্ব বয়সের সব বৃদ্ধরা সামাজিক সুরক্ষার আওতায় সহায়তা পাবে, নব্বই বছরের ঊর্ধ্বে যারা তারা দ্বিগুণ হারে ভাতা পাবে।
বাংলাদেশে শ্রমিকের দক্ষতা কিংবা নিম্ন উৎপাদনশীলতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা হলেও এক্ষেত্রে প্রত্যাশিত অগ্রগতি নেই। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য বলছে, বাংলাদেশে শ্রমশক্তির উৎপাদনশীলতা না বেড়ে বরং গত দুই দশকে কমেছে। ২০০০-২০০৯ সালে দেশের শ্রমশক্তির উৎপাদনশীলতায় প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ শতাংশের মতো; ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালে তা ৪ শতাংশের নিচে নেমেছে। করোনা অতিমারীর পর শ্রমিকের দক্ষতা তথা উৎপাদনশীলতা আরও কমেছে।
বাংলাদেশের রপ্তানি-আয়ের প্রায় ৮৪ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হয়েও এই খাতে শ্রমিকের উৎপাদনশীলতায় চীন, ভিয়েতনাম, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের মধ্যে বাংলাদেশের শ্রমিকের দক্ষতা সবার নিচে। চীনে একজন পোশাক শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা ৬৫ শতাংশ, বাংলাদেশে ৪০ শতাংশ।
শামসুল আলম বলেন, ‘উৎপাদনশীলতা বাড়াতে আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। কারিগরি শিক্ষায় জোর দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’
স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা আরও করুণ। জিডিপির এক শতাংশেরও কম ব্যয় হয় স্বাস্থ্য খাতে। সিঙ্গাপুর, চীনসহ অনেক দেশ বয়স্কদের স্বাস্থ্যসেবায় আলাদা ব্যবস্থা নিলেও বাংলাদেশের এ বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা খাতে জিডিপির দুই শতাংশ বরাদ্দের পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২ অনুযায়ী, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় দেশজ সঞ্চয় কমছে। জিডিপি যে হারে বাড়ছে, সঞ্চয় সেভাবে বাড়ছে না। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশজ সঞ্চয় ছিল ২৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে তা কমে হয়েছে ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
প্রবীণ জনসংখ্যা, এই শতাব্দীর প্রধান সমস্যা। এটি উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় ধরনের দেশকেই প্রভাবিত করে বা করবে। এই সমস্যা মোকাবিলা করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এমনটা মনে করে না ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন (আইএসএসএ)।
জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের এই বিষয়টিতে বিশে^র সব দেশ তাদের স্বাস্থ্য ও সামাজিক ব্যবস্থায় সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। প্রবীণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দেশগুলোর স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সুরক্ষায় ব্যয় বাড়ছে। বিপরীতে পেনশন ব্যবস্থার জন্য লোক কম। আইএমএফের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, উন্নত অর্থনীতিতে বেসরকারি ও সরকারি উভয় খাতে সঞ্চয় কমে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। আগামী ৩০ বছরে পেনশন বাবদ বেশি ব্যয় করতে হতে পারে। এসব দেশের অল্পবয়সীরা যদি আজকের অবসরপ্রাপ্তদের মতো পেনশন-সুবিধা ভোগ করতে চায়, তবে অনেক দিন ধরে তাদের আরও বেশি সঞ্চয় করতে হবে এবং কয়েক বছর অবসর স্থগিত করতে হবে।
সিনিয়র সিটিজেনদের স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যাপক কর্মসূচি রয়েছে উন্নত দেশগুলোর। বড় অঙ্কের ব্যয়ও করতে পারছে তারা। সিঙ্গাপুর সিনিয়র সিটিজেনদের সম্মান জানাতে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সিনিয়ররা যাতে তাদের স্বর্ণসময়কে উপভোগ করতে পারে, সক্রিয় ও অর্থপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে, তা নিশ্চিতে স্বাস্থ্যসেবা, বীমাসহ বিভিন্ন সুবিধার বাইরে অতিরিক্ত ১৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে তারা। সিঙ্গাপুর সিলভার প্রজন্মের স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা মেটাতে ২০১৫ সাল থেকে ৩ হাজার ৬০০টি ডে-কেয়ার, ২ হাজার ৬০০টি হোম কেয়ার এবং ৩ হাজার ৭০০টি নার্সিং হোম বেড তৈরি করেছে।
চীনে প্রবীণদের সুবিধাদি নিশ্চিতে তিনটি মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে নীতিমালা ও প্রকল্প তৈরি করছে। চীনা সরকারের প্রবীণ যত্ন নীতি অনুযায়ী, ৯০ শতাংশ প্রবীণ বাড়িতে থাকার সুবিধা, ৭ শতাংশ মধ্যবর্তী সুবিধা এবং ৩ শতাংশ নার্সিং হোম সুবিধা পায় বা পাবে।
বাংলাদেশে প্রবীণদের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় পরিচালিত ছয়টি প্রবীণ নিবাস আছে, যেগুলোতে ৫০ জন করে থাকতে পারে। বেসরকারি উদ্যোগে বেশ কয়েকটি বৃদ্ধাশ্রম আছে সাভার, গাজীপুরসহ কয়েকটি এলাকায়।
বাংলাদেশে প্রবীণদের সেবা বেসরকারি খাত থেকে হতে হবে বলে মনে করেন ড. শামসুল আলম। তিনি বলেন, ‘সরকারি খাতের ব্যবস্থাপনা অনেক সময় সফল হয় না। বেসরকারি খাত এখন প্রসারিত। অনেকে বিনিয়োগের জায়গা খুঁজছেন। বেসরকারি খাতকেই আমরা বেশি উৎসাহিত করব।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এখন উপার্জন করছেন, তারা একটু একটু করে সঞ্চয় করবেন। বৃদ্ধ বয়সে জমানো সঞ্চয়ের পাশাপাশি সরকারও সহায়তা দিলে তারা স্বেচ্ছা পেনশনে যেতে পারবেন। তাদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি প্রণীত হয়েছে, এটি চালু হবে।’
সবচেয়ে বেশি প্রবীণের বাস মোনাকোতে। ছোট দেশটির মোট জনসংখ্যার ৩৬ শতাংশের বয়স ৬৫ বছরের বেশি। এরপর রয়েছে জাপান। জাপানের মোট জনসংখ্যার ২৯ দশমিক ৮ শতাংশের বয়স ৬৫ বছরের ওপরে। ২০৫০ সালে ৩৫টির বেশি দেশের অবস্থা জাপানের মতো হবে। প্রবীণদের পুনর্বাসন কিংবা দেখভালের জন্য কর্মীদের ঘাড়ে চাপ বাড়বে। এই পরিবর্তনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব সরকারি-বেসরকারি খাত উপেক্ষা করতে পারবে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, ২০৫০ সালের মধ্যে প্রবীণ জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ বাস করবে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০২১ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময়কে ‘বার্ধক্যের দশক’ ঘোষণা করেছে। এর লক্ষ্য স্বাস্থ্যে বৈষম্য কমানো এবং সম্মিলিতভাবে প্রবীণদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবনমানকে উন্নত করা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রতি ৬ জনের মধ্যে ১ জনের বয়স ৬০ বছর বা তার বেশি হবে। এই সময়ে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সীর সংখ্যা ১৪০ কোটি হবে। ২০৫০ সালের মধ্যে, বিশ্বে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হবে (২১০ কোটি)। ৮০ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তির সংখ্যা ২০৫০ সালের মধ্যে তিনগুণ হয়ে প্রায় ৪৩ কোটিতে পৌঁছাবে।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে ১৯৬০ সালে একজন প্রবীণ নির্ভরশীলের বিপরীতে ২০ জন কর্মক্ষম ব্যক্তি ছিলেন, ২০১৯ সালে তা ১৩তে নেমেছে। ২০৪০ সালে প্রতি ৬ জন কর্মক্ষম ব্যক্তির বিপরীতে একজন প্রবীণ নির্ভরশীল থাকবে। আর ২০৬৫ সালে প্রতি তিনজন সমর্থ ব্যক্তির বিপরীতে একজন নির্ভরশীল প্রবীণ থাকবে।
বিশ্বে প্রবীণ জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দৈহিকভাবে সমর্থ প্রবীণদের কাজে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে অনেক দেশ। জাপান ইতিমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্য তার নাগরিকদের অবসরের বয়সসীমা ৬৫ থেকে ৬৬তে উন্নীত করে। ২০২৬ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে নাগরিকদের অবসরের বয়সসীমা ৬৬ থেকে ৬৭তে উন্নীত করবে তারা। ২০৩৭ থেকে ২০৩৯ সালের মধ্যে অবসরের বয়সসীমা ৬৮তে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুসারে আগামীতে অবসরভাতাপ্রাপ্তির বয়সসীমা ৬০+ থেকে বাড়িয়ে ৬৫+ করার কথা বিবেচনা করা হবে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হয়েছে। আজ শনিবার মহাষষ্ঠীতে দুর্গা দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও দেবীর অধিবাসের মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনের এ উৎসব শুরু হলো। এবার দেবী কৈলাস থেকে মর্ত্যে আসছেন গজে (হাতি) চড়ে। ফিরে যাবেন নৌকায় করে। এবার বসুন্ধরা হবে শস্যপূর্ণ।
আজ থেকে ঢাকের বাদ্য, চন্ডী ও মন্ত্রপাঠ, কাঁসর ঘণ্টা, শঙ্খ আর উলুধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে রাজধানীসহ সারা দেশের ৩২ হাজারের বেশি পূজামন্ডপ। সকালে বেলগাছতলে (বিল্ববৃক্ষ) দেবীর আবাহন, সংকল্প ও ‘ত্রিনয়নী’ দুর্গা দেবীর ঘুম ভাঙিয়ে পূজার্চনায় আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মাধ্যমে দেবীকে বরণ করা হবে।
আগামীকাল রবিবার হবে মহাসপ্তমী বিহিতপূজা। এরপর সোমবার মহাঅষ্টমী, মঙ্গলবার মহানবমী ও বুধবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা নিরঞ্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব শেষ হবে।
দুর্গাপূজা উদযাপনে পাঁচ দিনব্যাপী আলোকসজ্জা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আরতি, প্রসাদ বিতরণ হবে। এ ছাড়া মহাঅষ্টমীর দিনে অন্যতম আকর্ষণ কুমারীপূজা ও বিজয়া দশমীতে শোভাযাত্রার আয়োজন থাকছে। ইতিমধ্যে জাতীয় ঢাকেশ^রী মন্দিরসহ সারা দেশের পূজামন্ডপগুলোকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। প্রতিটি পূজামন্ডপে নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী এবার রাজধানীসহ সারা দেশে ৩২ হাজার ১৬৮টি স্থায়ী ও অস্থায়ী মন্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন হচ্ছে। রাজধানীতে পূজা হচ্ছে ২৪১টি মন্ডপে। গত বছরের চেয়ে এবার সারা দেশে ৫০টি এবং ঢাকায় ৬টি পূজামন্ডপ বেড়েছে। পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যদের পাশাপাশি আয়োজক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক দল মন্ডপের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করবে। কেন্দ্রীয়ভাবে সারা দেশের পূজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে মনিটরিং সেল গঠনের পাশাপাশি বিভাগীয় পর্যায়েও মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।
ঢাকায় ঢাকেশ্বরী মন্দির ও মন্ডপ, রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজামন্ডপ, রমনা কালীমন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রম, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির, গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা পরিষদ মন্ডপ, পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার ও তাঁতীবাজারে মহাসমারোহে ও ব্যাপক আয়োজনে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে।
শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক ও সাধারণ সম্পাদক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার। গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে তারা বলেন, সুন্দরভাবে দুর্গাপূজার আয়োজন ও শান্তিপূর্ণভাবে সুসম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবেন তারা।
পরিষদের নেতারা আরও বলেন, গত বছর পশুশক্তির তান্ডবে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল যা ছড়িয়ে পড়েছিল প্রায় ২৭টি জেলায়। তবে এবার সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক আগে থেকেই সতর্ক রয়েছে। এটা আশাব্যঞ্জক ও প্রশংসনীয়।
ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মহালয়ার দিন থেকে দেবীপক্ষ শুরু হয়েছে। আজ ষষ্ঠীতে দেবীকে আমন্ত্রণের মাধ্যমে দুর্গোৎসব শুরু হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি বিএনপি সরকারের দুর্নীতি, অনিয়ম ও বিরোধীদের বিরুদ্ধে চালানো নৃশংসতার বর্ণনা তুলে ধরতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, ‘বিদেশিরা জানুক, দেশের বিরুদ্ধে বিদেশে অপপ্রচার চালানো বিএনপির এখন প্রধান কাজ।’
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব কেএম শাখাওয়াত মুন বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং দীর্ঘসময় ধরে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় থাকায় উন্নত দেশের মর্যাদা পেতে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে একত্রে কাজ করে যাচ্ছি।’
নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, তার দল দেশে নির্বাচনের নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিত করেছে। এর ফলে জনগণ এখন স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে। অপরদিকে বিএনপি ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরি করে এবং ভোটের দিন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে জনগণের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন উপায়ে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করে ফেলেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি গত সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের বিপরীতে ৭০০ জনকে মনোনয়ন দিয়েছিল এবং আসন বাণিজ্যের কারণে জনগণ তাদের ভোট দেয়নি।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে সংক্ষিপ্তভাবে তার সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা মাতৃভূমিতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশের কোনো মানুষ গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশন ও উচ্চপর্যায়ের অন্যান্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে ওয়াশিংটন ডিসিতে রয়েছেন। ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য ১৫-১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লন্ডনে অবস্থান করার পর তিনি ১৯ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে যান।
প্রধানমন্ত্রী আগামী ৪ অক্টোবর দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বাসস
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। ছুটির দিনে বঙ্গবাজারসংলগ্ন পুলিশ সদর দপ্তরে থাকে না কোনো কোলাহল। থাকে না কোনো কর্মকর্তার পদচারণা। কিন্তু গতকালের ছুটির দিনটি ছিল ভিন্ন। দুই বছরের অধিক সময় ধরে দায়িত্বে থাকা পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিদায় নিয়েছেন কাল। পাশাপাশি নয়া আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন। আর এর মধ্যদিয়ে পুলিশে বেনজীর আহমেদের বিস্তৃত অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে।
ডিএমপির সঙ্গে পেশাগত ও আত্মিক সম্পর্ক ছিল বেনজীর আহমেদের। ১৯৯০ সালে সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে ডিএমপিতে যোগদান করেন তিনি। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এখানে কর্মরত ছিলাম। পরে ২০০০ সালে ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার হন। সর্বশেষ ২০১০ সালের অক্টোবরে ডিএমপি কমিশনার হন। এ ছাড়া ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি র্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাজারবাগে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বেনজীর আহমেদ বলেন, প্রতিটি মুহূর্তই চ্যালেঞ্জিং ছিল। সেই সময়ে যারা সর্বোচ্চ ত্যাগ, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করেছেন তাদের সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
গতকাল হৃদয়গ্রাহী ছিল বেনজীর আহমেদের বিদায়লগ্নটি। এই সময় বেশিরভাগ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের চোখে ছিল পানি। সহকর্মীদের চোখে পানি দেখে বেনজীর আহমেদও আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। সমাপ্ত করেন ৩৪ বছর ৫ মাস ১৬ দিনের কর্মজীবনের।
গতকাল বিকেল ৩টা ৩২ মিনিটে অতিরিক্ত পুলিশ প্রহরায় পুলিশ সদর দপ্তরে আসেন নতুন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এই সময় সদর দপ্তরের দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় নির্মিত একটি প্যান্ডেলে অভ্যর্থনা জানান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) কামরুল আহসানসহ অন্য কর্মকর্তারা। গার্ড অব অনার শেষে তাকে নেওয়া হয় পুরনো ভবনের দ্বিতীয় তলায় আইজিপির দপ্তরে। তিনি অপেক্ষা করেন বিদায়ী আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদকে অভ্যর্থনা জানাতে। বিকেল ৩টা ৩৮ মিনিটে পোশাক পরে পুলিশ সদর দপ্তরে প্রবেশ করেন বেনজীর আহমেদ। তবে অন্য সময়ের মতো ছিল না কঠোর নিরাপত্তা। ভবনের পূর্ব দিকের ফটকে বেনজীর আহমেদের গাড়িটি আসার পর তাকে স্যালুট দেন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (প্রশাসন)। দেওয়া হয় গার্ড অব অনার। এই সময় অন্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। বেনজীর আহমেদ গাড়ি থেকে নামার পর প্রতিটি স্তরের কর্মকর্তা ও অন্য সদস্যদের সঙ্গে করমর্দন করেন। পরে সোজা চলে যান দায়িত্ব পালন করার সেই কক্ষটিতে। নয়া আইজিপির সঙ্গে করমর্দন করে আইজিপির বসার স্থানে আগে থেকে থাকা দুটি চেয়ারে গিয়ে বসেন। তাদের ঘিরে ছিলেন পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা। তবে দুজনের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ডিআইজি প্রশাসন, ডিআইজি হেডকোয়ার্টার ও অ্যাডিশনাল ডিআইজি হেডকোয়ার্টার। এই সময় কোনো কোনো কর্মকর্তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। বিদায়ী ও নয়া আইজিপি অনেকটা হাস্যোজ্জ্বল থেকে যার যার ফাইলে স্বাক্ষর করেন। ত্রিশ মিনিটের মধ্যে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন তারা। এরই মধ্যে ভবনের নিচতলায় সাজসজ্জা করা সাদা রংয়ের প্রাডো গাড়িটি প্রস্তুত রাখা হয়। গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন পুলিশের কয়েক কর্মকর্তা।
বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে বেনজীর আহমেদ তার চিরাচেনা কক্ষ থেকে বের হন। আইজিপি কার্যালয়ে কর্মরত স্টাফদের সঙ্গে করমর্দন করে দোয়া চান। পুলিশ কর্মকর্তাদের বেষ্টনীর মধ্যে বেনজীর আহমেদ নেমে আসেন নিচতলায়। গাড়ির সামনে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এই সময় তার দুই চোখের কোণ লাল হয়ে ওঠে। এই দৃশ্য দেখে অন্য কর্মকর্তারাও আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তাকে শেষবারের মতো বিদায় জানাতে দুই পাশে পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রায় সবার হাতেই ছিল গাঁদা ফুলের পাপড়ি। বেনজীর আহমেদ গাড়িতে না উঠে চলে যান লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কর্মকর্তা ও সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে। প্রায় সবার সঙ্গে তিনি করমর্দন করতে থাকলে অনেকটা আবেগময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। নিজেকে কোনো রকম সামলে বেনজীর আহমেদ চলে যান নির্দিষ্ট স্থানে থাকা গাড়ির সামনে। শেষবারের মতো উঠে পড়েন গাড়িতে। ৪টা ১৮ মিনিটে চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী বাদ্যযন্ত্র বাজানো শুরু হয়। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রশি টেনে সামনের দিকে নিতে থাকেন গাড়িবহর। এ সময় সবার মধ্যে নীরবতা নেমে আসে। জানালার গ্লাস খুলে হাত নেড়ে সহকর্মীদের কাছ থেকে বিদায় নেন বেনজীর আহমেদ। বিদায় নেওয়ার সময় তিনি অনেকটা আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন। পৌনে ৫টার দিকে ভবনের পশ্চিম পাশের গেইট অতিক্রম করেন বেনজীর আহমেদ। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বের হয়ে সোজা চলে যান মিন্টো রোডের পুলিশ ভবনে।
জানা গেছে, অবসরে যাওয়ার আগে গত তিন দিন ধরে বেনজীর আহমেদকে বিদায় সংবর্ধনা জানানো হয়। ২৭ সেপ্টেম্বর রাজারবাগে সংবর্ধনা দেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। অনুষ্ঠানে বক্তারা স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের তান্ডবলীলা দমনে আপনার সাহসী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বাংলাদেশসহ বহির্বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত করে আপনি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সারা দেশে ৬৯১২টি বিট স্থাপন করে বিট পুলিশিং কার্যক্রমকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে গুলশান এবং বনানী এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখেন। আধুনিক ও ডিজিটাইলাইজেশন আপনার হাত ধরেই পুলিশে সূচনা হয়েছে। নারীদের জন্য নিরাপদ সাইবার স্পেস নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ নারী পুলিশ দ্বারা পরিচালিত পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন নামে ফেইসবুক পেইজ, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে কুইক রেসপন্স টিম এবং নারী-শিশু ও বয়স্কদের জন্য প্রতিটি থানায় আলাদা ডেস্ক স্থাপনে নারীরা সহজে সেবা পাচ্ছেন।’
এ সময় বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘ডিএমপির সঙ্গে আমার একধরনের পেশাগত ও আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৯০ সালে সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে ডিএমপিতে যোগদান করে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এখানে কর্মরত ছিলাম। আবার ২০০০ সালে উপ-পুলিশ কমিশনার হিসেবে ডিএমপিতে যোগ দিই। সর্বশেষ ২০১০ সালের অক্টোবরে ডিএমপি কমিশনার হিসেবে যোগদান করি। প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। সেই সময়ে যারা সর্বোচ্চ ত্যাগ, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করেছেন তাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞ।’
আইজিপির দায়িত্ব নিলেন চৌধুরী মামুন: গতকাল শুক্রবার বিকেলে দায়িত্ব বুঝে নেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। পরে তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর রাজারবাগ পুলিশ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। আইজিপি ১৯৮৯ সালের ২০ ডিসেম্বর ৮ম বিসিএস ব্যাচে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। তিনি পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট, পুলিশ সদর দপ্তর, সিআইডি, ঢাকা ও ময়মনসিংহ রেঞ্জ ও র্যাব মহাপরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৪ সালের ১২ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের শাল্লা থানার শ্রীহাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি বিবাহিত। তার সহধর্মিণী হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। ২ পুত্র ও ১ কন্যাসন্তানের জনক আইজিপি।
র্যাব মহাপরিচালকের দায়িত্ব নিলেন এম খুরশীদ: গতকাল অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক এম খুরশীদ হোসেন দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১২তম বিএসএস ব্যাচের কর্মকর্তা।
চলতি বছরের প্রথম আট মাসে দেশে ২ হাজার ৩০১ জন কন্যাশিশুর বাল্যবিয়ে হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি মাসে ২৮৮ জনের বাল্যবিয়ে হয়েছে। এ সময়ে ৫৮৯টি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। একই সময়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫৭৪ জন কন্যাশিশু। তাদের মধ্যে ৮৪ জন সংঘবদ্ধ ও ৩৬৪ জন একক ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (প্রতিবন্ধী) কন্যাশিশু রয়েছে ৪৩ জন। জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘জানুয়ারি-আগস্ট ২০২২ : কন্যাশিশু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন’ উপস্থাপন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাসিমা আক্তার জলি। তিনি জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ২৪টি জাতীয়, স্থানীয় ও অনলাইন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে শূন্য থেকে ১৯ বছর বয়সী কন্যাশিশুদের নির্যাতনের তথ্য ১৩টি ক্যাটাগরির আওতায় ৫৬টি সাব-ক্যাটাগরিতে ভাগ করে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত আট মাসে প্রেমের অভিনয় ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ৪৯ জন কন্যাশিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২০ জনকে হত্যাও করা হয়েছে। ৮৭ জন কন্যাশিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়া যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ৭৬ জন। ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার কন্যাশিশুদের মধ্যে এক বছর বয়সী শিশুও রয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, এ সময়ে ১৮৬ জন কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। পাচার করা হয়েছে ১৩৬ কন্যাশিশুকে; তাদের মধ্যে ৭৪ জনকে অপহরণ করা হয়েছে।
দেশে গত আট মাসে ১৮১ জন কন্যাশিশু আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেমে প্রতারণার শিকার হয়ে ৪৬ জন এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে ৩৫ জন কন্যাশিশু আত্মহত্যা করেছে। এর আগে ২০২১ সালের প্রথম আট মাসে আত্মহত্যা করেছিল ১৫৩ জন। অর্থাৎ ২০২২ সালে বেড়েছে আত্মহত্যার পরিমাণ। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ১৮৬ জন কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতা, যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৩ জন। যৌতুক দিতে না পারায় পাঁচজন কন্যাশিশু আত্মহত্যা করেছে। এছাড়া গৃহশ্রমিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১৫টি। এর মধ্যে দুজনকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে এবং একজন আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে।
কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম জানিয়েছে, কন্যাশিশু ও নারীরা পথঘাট, যানবাহন ও বাজারসহ সব ধরনের পাবলিক প্লেসে, শিক্ষা ও ধর্মীয়প্রতিষ্ঠান এমনকি নিজ বাড়িতেও হরহামেশা যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ৭৬ জন কন্যাশিশু যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (প্রতিবন্ধী) শিশুও রয়েছে। এ নির্যাতনগুলোর অধিকাংশই সংঘটিত হয়েছে রাস্তায়, নিজের বাসায়, নিকট আত্মীয়-পরিজন ও গৃহকর্তার হাতে। এছাড়া প্রতিদিন ৩০-৩৫ জন, মাসে ৯০০-১০০০ জন কন্যাশিশু সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে। পর্নোগ্রাফির শিকার হয়েছে ১৫ জন কন্যাশিশু। সাইবার বুলিংয়ের শিকার হওয়া অধিকাংশ কন্যাশিশুই জানে না কীভাবে, কোথায়, কার সহায়তায় এ বিষয়ে অভিযোগ করা যায় বা এর ফল কী হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাসিডের সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে ৩ জন কন্যাশিশু। পারিবারিক বিবাদ, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হওয়া, সম্পত্তিসংক্রান্ত আক্রোশ ইত্যাদি কারণে অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। অপহরণ ও পাচারের শিকার হয়েছে ১৩৬ জন কন্যাশিশু। এর মধ্যে অপহরণের শিকার হয়েছে ৭৪ জন। অপহরণের শিকার শিশুদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জোরপূর্বক যৌনপেশায় নিয়োজিত করা হয়।
অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, দেশে নতুন বা পুরনো যেকোনো ধরনের অস্থিরতাতেই কন্যাশিশু ও নারীর ওপর নির্যাতন কখনো থামে না। বরং তা সব সময় বৃদ্ধিই পায়। এ নির্যাতন শুধু ঘরের বাইরেই নয়, নিজ ঘরেও ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। প্রতিনিয়তই ঘটে যাওয়া ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাগুলো সাধারণ মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে।
তারা আরও বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে মানুষের অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ভয়ঙ্কর বর্বরতা ও হিংস্রতা। লঙ্ঘিত হচ্ছে কন্যাশিশু ও নারীর মানবাধিকার। একটি সুস্থ সুন্দর সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কন্যাশিশুদের অধিকার, তাদের শিক্ষা, সুস্বাস্থ্য, মানসিক ও শারীরিক বিকাশ নিশ্চিত করাসহ নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
তথ্য বিশ্লেষণ করে আলোচকরা বলেন, কন্যাশিশু ও নারীর প্রতি নির্যাতনের বিষয়ে অভিযোগ জানানোর ক্ষেত্রে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে নানা ধরনের ভুল ধারণা, শঙ্কা ও কুসংস্কার এখনো বিদ্যমান। নির্যাতিত কন্যাশিশু বা তার পরিবার নানা বাধা পেরিয়ে বিচার চাইতে গেলেও নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা সুপারিশ করেন, কন্যাশিশু নির্যাতন বন্ধে শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার সব ঘটনা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে; সর্বস্তরের জন্য ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’ নামে একটি আইন প্রণয়ন করতে হবে; সাইবার নিরাপত্তায় নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করাসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
অনুষ্ঠানে কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার, চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড প্রটেকশন এডুকো বাংলাদেশ স্পেশালিস্ট মো. শহীদুল ইসলাম, গুডনেইবারস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাঈনুদ্দীন মাইনুল, বাংলাদেশ ওয়াইডব্লিউসিএ’র জাতীয় সাধারণ সম্পাদক হেলেন মনিষা সরকার বক্তব্য রাখেন।
বুধবার বগুড়া-৪ আসনের উপনির্বাচনে মাত্র ৮৩৪ ভোটে হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম। এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, স্যার ডাকতে হবে এ জন্য কিছু শিক্ষিত মানুষ আমাকে হারিয়ে দিয়েছে।
হিরো আলম বলেন, এমপি হলে আমাকে স্যার বলতে হবে। এ জন্য কিছু শিক্ষিত মানুষ আমাকে আগে থেকেই মানতে পারছিলো না। আমাকে স্যার বলতে কষ্ট হবে এমন লোকেরাই ফলাফল পাল্টে আমাকে পরাজিত করেছেন। তারা আমাকে ইভিএম কারসাজিতে হারিয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়া আমি এমপি হলে নাকি বাংলাদেশের সম্মানহানী হবে। এমন ভাবনা থেকেও আমাকে হারিয়ে দেয়া হয়েছে। মশাল মার্কার অস্তিত্ব ছিল না। আমি কাহালু-নন্দীগ্রাম আসন থেকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছি। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের জোগসাজশে গণনায় আমাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি এ ফলাফল মানি না।
হিরো আলম বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় বগুড়া সদরের এরুলিয়া নিজ বাড়িতে গণমাধ্যমকর্মীদের এসব বলেন।
তিনি আরো বলেন, সারাদিন মাঠে ভোটারের উপস্থিতি তেমন ছিল না। হঠাৎ এত ভোট কোথা থেকে এল বুঝতে পারছি না। মশাল মার্কার অস্তিত্ব ছিল না। তাদের নির্বাচনী প্রচার ছিল না। মানুষের তাদের আগেই প্রত্যাখ্যান করেছে। তারপর কীভাবে আমার চেয়ে বেশি ভোট পেল বিষয়টি পরিস্কার নয়।বগুড়া সদর আসন সম্পর্কে তিনি বলেন, সেখানে অনেক কেন্দ্রে তার এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তার কর্মীদের মারধর করা হয়েছে। ফলে সকালেই ওই আসনের ভরসা ছেড়ে দিই।
ফলাফল নিয়ে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখন কোনো কথা বলব না। পরে জানান হবে।
তিনি ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা আমাকে নির্বাচনে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমি ভোটে হারলেও সারাজীবন মানুষের পাশে ছিলাম, শেষ পর্যন্ত থাকব।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধে এমনটা যে ঘটবে তার আলামত কিন্তু যুদ্ধের সময়েই টের পাওয়া গিয়েছিল। এই যুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ ঘটেছে। নেতৃত্ব ছিল নির্বাচনে-জেতা জাতীয়তাবাদীদের হাতে। ভারত সরকার তাদের সাহায্য করেছে। জাতীয়তাবাদীরা ক্ষমতার হস্তান্তর চেয়েছে, রূপান্তর চায়নি। তারা লড়ছিল হস্তান্তরের লক্ষ্যেই। জনগণ কিন্তু তত দিনে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে, তারা শুধু যে ক্ষমতার হস্তান্তর চেয়েছে তা নয়, চেয়েছে রাষ্ট্র ক্ষমতার বিচূর্ণকরণ। বস্তুত রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের অভ্যুত্থান এবং একাত্তরের যুদ্ধ এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে যে চেতনাটি অগ্রসর হচ্ছিল সেটা ছিল সমাজবিপ্লবী। এই চেতনা ঠিকই বুঝেছে যে পুরাতন রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রেখে মুক্তি আসবে না। রাষ্ট্রকে ভাঙতে হবে, যাতে করে রাষ্ট্র জনগণের শত্রু না হয়ে মিত্র হয়; শুধু মিত্রও নয়, জনগণের সেবক হয়। ঊনসত্তরের অভ্যুত্থানের মূল আকাক্সক্ষাটা ছিল ওই রকম রাষ্ট্রের। কথা ছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ওই আকাক্সক্ষাটাকে বাস্তবায়িত করবে।
কিন্তু যুদ্ধ সেদিকে এগোয়নি। নেতৃত্বে রয়ে গেছে জাতীয়তাবাদীই। পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের জায়গায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ স্থাপিত হয়েছে। এ পর্যন্ত ঠিকই আছে। দুই জাতীয়তাবাদের ভেতর পার্থক্যটাও সুস্পষ্ট, কিন্তু দুয়ের ভেতর মিল এইখানে যে, উভয়েই পুঁজিবাদী। এই মিলটা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। জাতীয়তাবাদী নেতারা ব্যক্তিমালিকানার বিরোধী ছিলেন না, যেমন ছিলেন না তারা সামাজিক মালিকানার পক্ষে। বস্তুত পুরাতন ধ্যানধারণাই নতুন রাষ্ট্রে কার্যকর হয়েছে। সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যাভিমুখী যাত্রার কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু সেদিকে যাবে কী, রাষ্ট্র অচিরেই তার পুরাতন পথে ফিরে গেছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যক্তিমালিকানায় চলে গেছে। রাষ্ট্রীয়করণ ছিল ব্যক্তিমালিকানা স্থাপনের মধ্যবর্তী ধাপ। আদমজী জুট মিলস পাকিস্তান আমলে ছিল, এখন নেই। এটা কেবল ঘটনা নয়, একটা প্রতীকও বটে।
যুদ্ধের শুরুতেই কিন্তু বোঝা গিয়েছিল যে বিপ্লবী উপাদান থাকা সত্ত্বেও এ যুদ্ধ বিপ্লবী হবে না। ধরা যাক স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ঘটনা। চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে প্রান্তিকভাবে যুক্ত তিনজন দুঃসাহসী তরুণ স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগ নিয়ে ওই গোপন বেতার কেন্দ্রটি স্থাপন করেন, কালুরঘাট ট্রান্সমিটার কেন্দ্রটিকে ব্যবহার করে। নাম দিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র। ২৬ মার্চ ওই নামেই বেতার কেন্দ্রটি চালু হয়। কিন্তু তার বিপ্লবী নামটি ধরে রাখা যায়নি। বিপ্লবী নাম ধরে রাখবে কী, ৩০ তারিখ দুপুরে কেন্দ্রটিই সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। ধ্বংসের কাজটি করে পাকিস্তানি হানাদাররা। তারা বিমান আক্রমণ চালায়। ওটিই ছিল বাংলাদেশে তাদের যুদ্ধবিমানের প্রথম আক্রমণ। বেতার কেন্দ্রটি ধ্বংস না করে তাদের স্বস্তি ছিল না, কারণ সেখান থেকে প্রতিরোধ যুদ্ধের সংবাদ সম্প্রচারিত হয়েছিল। তারা লড়ছে, বিশ্ববাসী জেনেছিল, সবচেয়ে বেশি করে জেনেছিল বাঙালিরা, দেশে যেমন, বিদেশেও তেমনি। তারা উদ্দীপ্ত হয়েছে, ভরসা পেয়েছে, সাহস পেয়েছে রুখে দাঁড়ানোর। হানাদাররা অস্থির হয়েছে। খুঁজে খুঁজে বের করেছে বেতার কেন্দ্রের ঠিকানা, বোমাবর্ষণ করেছে মহোৎসাহে।
এরপরও কেন্দ্রটি চালু ছিল। প্রথমে গেছে সে আগরতলায়, সেখান থেকে কলকাতায়। কিন্তু ‘বিপ্লবী’ আর থাকেনি। ওই পরিচয় বিলুপ্ত করা হয়েছিল কিন্তু মেজর জিয়ার নির্দেশেই। পরে আওয়ামী লীগের প্রবাসী সরকার যে বিপ্লবীকে ফেরত এনেছে তা মোটেই নয়, বেতার কেন্দ্রটি বিপ্লবহীন ‘স্বাধীন’ অবস্থায় রয়ে গেছে। যুদ্ধটা তো ছিল পুরোপুরি জনযুদ্ধ, কিন্তু ওই শব্দটি একবার মাত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তারপর নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ‘জনযুদ্ধ’ মাওবাদের গন্ধ আছে বলে। বেতার অনুষ্ঠানের শেষে একটি সিগনেচার টিউন বাজানো হতো, সে গানটির শুরু ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ দিয়ে, শেষে ছিল ভুখা বেকার মানুষদের কথা, আপত্তিকর বিবেচনায় গানটি বাদ দেওয়া হয়। বেকারদের দায়িত্ব স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র কেন নিতে যাবে? স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ওপর চাপ ছিল আওয়ামী লীগের খবরকে বেশি বেশি প্রচার করার, পারলে মুক্তিযুদ্ধকে একদলীয় ঘটনা হিসেবে চিত্রিত করার। কলকাতায় কেন্দ্রটি সম্পূর্ণরূপে প্রবাসী সরকারের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। শেষের দিকে ভারত সরকারের একজন প্রতিনিধিও অনুষ্ঠানসূচির ওপর চোখ রাখতেন। স্বাধীনতার পরপর ইনি ঢাকাতেও এসেছিলেন, বাংলাদেশ বেতারের দেখভাল করার জন্য। ডিসেম্বরের ৬ তারিখে ভারত সরকার যখন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় সেই ক্ষণ থেকেই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র তার নাম বদলে ফেলে বাংলাদেশ বেতার হয় অর্থাৎ একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়ে যায়। বিপ্লবীত্ব আগেই গিয়েছিল এবার গেল স্বাধীনতাটুকুও। যেন বাংলাদেশেরই প্রতীক। পাকিস্তানি বেতারের মতোই স্বাধীন বাংলা বেতারের অনুষ্ঠানও কিন্তু কোরআন পাঠ ও ব্যাখ্যা দিয়েই শুরু হতো। সপ্তাহে ছয় দিন ইসলামের দৃষ্টিতে বলে একটি অনুষ্ঠান থাকত।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা; ওই ঘটনার ভেতরে আমাদের মুক্তিসংগ্রামের মোড়বদলের কালে সংগ্রামের শক্তি ও সীমা দুটোই প্রতিফলিত হয়েছে। কেন্দ্রের গঠনে উদ্যোগী তিন তরুণের সঙ্গে বেগম মুশতারী শফীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। যুদ্ধের শুরুতেই তিনি তার স্বামী এবং সহোদর একমাত্র ভাইটিকে হারান; তার বড় বোনের স্বামীও শহীদ হয়েছেন। অবিশ্বাস্য কষ্টের ভেতর দিয়ে সাত সন্তানের ছয়জনকে সঙ্গে নিয়ে ভাসতে ভাসতে সম্পূর্ণরূপে সর্বহারা দশায় আগরতলায় উপস্থিত হয়ে কোনো মতে প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিলেন। পরে তার অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে তিনি ‘স্বাধীনতা আমার রক্তঝরা দিন’ (১৯৮৯) নামে একটি বই লিখেছেন, তার অভিজ্ঞতার ভেতর ভবিষ্যতের বাংলাদেশ কেমন হবে তার লক্ষণ বিলক্ষণ ফুটে উঠেছিল। আগরতলায় গিয়ে যেসব ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছেন তাতে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ সম্পর্কে ভরসা রীতিমতো বিচলিত রয়েছে। আগরতলা পৌঁছে তিনি জানতে পেরেছেন যে চট্টগ্রামের এমএনএ এমপিএরা একটি ভবনে রয়েছেন। শুনে আশান্বিত হয়ে তিনি গেছেন তাদের খোঁজে। ভবনে গিয়ে পৌঁছান সকাল সাড়ে দশটায়। নেতাদের সন্ধান পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু দরজার সামনে কাজের ছেলেটি বলেছে দেখা করা যাবে না। কেন? কারণ ওনারা একটু বেসামাল আছেন। দরজাটা ভেজানো ছিল। মুশতারী শফী লিখেছেন, ‘আমি যেখানে বসেছি সেখান থেকে দরজার ফাঁক দিয়ে আরেকটি রুম দেখা যায়। সেখানে দেখা যাচ্ছে চিৎ হয়ে উপুড় হয়ে মেঝেতেই দু-তিনজন শুয়ে আছে।’ তিনি ভেবেছিলেন ঘুমোচ্ছে। পরে জানলেন নেতারা রাতে ড্রিংক করেছেন, সেজন্য সকালে তাদের ওই করুণদশা। মুশতারী শফীর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া : ‘আমি অবাক। এখানে ড্রিংক? এরাই না জাতীয় নেতা? মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করছেন?’ (পৃ. ১৩৭-৩৮)
অবাক হওয়াটা ওখানেই শেষ হয়নি। তার জন্য আরও একটি ‘বিস্ময়-মহাবিস্ময়’ অপেক্ষা করছিল। তিনি লিখেছেন, ‘এখানে এসে একটা বিষয় লক্ষ করলাম, ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টির রিক্রুট-করা মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা প্রবাসী সরকার করছে না। যেমন আওয়ামী লীগের যে কেউ যে-কাউকে রিক্রুট করলে তার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি খরচে ট্রেনিং এবং থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, বামপন্থি দলের কাউকেই সে রকমটি করা হচ্ছে না। কোথাও পাশ কাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কোথাও সরাসরি নাকচ করা হচ্ছে। ফলে বামপন্থিরা ভারত সরকারের দুয়ারে দুয়ারে ধাক্কা দিয়ে এবং নিজেদের পার্টির খরচে সম্পূর্ণ আলাদা ট্রানজিট ক্যাম্প এবং যুবকদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ (পৃ. ১৫৪)
তার মনে প্রশ্ন জেগেছে জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম যেখানে চলছে, সেখানে বাম-ডান আবার কী, সবাই তো মুক্তিযোদ্ধা। তার মতো মানুষদের কাছে সব মুক্তিযোদ্ধাই যে এক, এটা ঠিক, কিন্তু নেতৃত্ব তো ছিল পুঁজিবাদী ঘরানার, তারা বামপন্থির গন্ধ পেলেই সতর্ক হতো। ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টির মতো নরম বামদের তবু সহ্য করত, তাড়িয়ে দিত না। শক্ত বামপন্থিদের দেখা মাত্র ধাওয়া করত। শক্ত বামপন্থিদের কাউকে কাউকে তাই প্রাণ ভয়ে আগরতলার মুক্তভূমি থেকে আবার হানাদারকবলিত পাকিস্তানে পালিয়ে আসতে হয়েছে। কেউ কেউ নিহতও হয়েছে, আগরতলাতেই। মুশতারী শফীর আরেক মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোনো-মতো তৈরি করা ফিল্ড হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসক, স্বেচ্ছাসেবক সবাই কাজ করছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। আহত যোদ্ধারা দিন গুনছেন কখন উঠে দাঁড়াতে পারবেন, এবং পুনরায় যুদ্ধে যাবেন। স্বেচ্ছাসেবকদের ভেতর মুশতারী শফীও ছিলেন।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ভারতের কর্নাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে বান্ধবীর সাড়ে তিন বছর বয়সী মেয়েকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে উঠেছে এক ব্যক্তির (২৬) বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে বেঙ্গালুরু পুলিশ।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) এ খবর জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
জানা গেছে, একটি তৈরি পোশাক কারখানার কর্মী ওই নারী বাড়িতে তার তিন বছরের মেয়েকে রেখে কাজে যেতেন। সেই সময় শিশুটিকে দেখভাল করতেন তার প্রেমিক। সোমবার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বান্ধবীর অনুপস্থিতিতে ওই ব্যক্তি বাড়ি এসে শিশুটিকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ।
পুলিশ বলছে, শিশুটির মায়ের সঙ্গে অভিযুক্তের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কাজ শেষে শিশুটির মা বাড়ি ফিরলে তার মেয়েকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। এরপর তিনি এবং ওই ব্যক্তি মেয়েটিকে কাছের একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ সময় ওই নারী মেয়ের মৃত্যু নিয়ে প্রেমিককে প্রশ্ন করলে তিনি তাকে মারধর করেন। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দেয়। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই ব্যক্তি শিশুটিকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা হয়েছে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’
তার কলাম মানেই সেদিন বাংলার বাণী অফিস সরগরম। সকাল থেকেই ফোন আসত। বিভিন্ন আড্ডায়ও আলোচনা হতো সেই কলাম নিয়ে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়-আশয় এবং দেশের সমসাময়িক বিষয়গুলো আকর্ষণীয় এবং সহজ করে পাঠকের কাছে তুলে ধরতেন এই সাংবাদিক। এর বাইরে প্রকৃতি, পাহাড়, নদী ও দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে লিখতেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের লাল পাহাড়ের মানুষের জীবনের গল্পও তুলে আনতেন। প্রায় দেড় দশক নিরবচ্ছিন্নভাবে তিনি সাংবাদিকতা করেছেন। লিখেছেন অসংখ্য কলাম।
যখন সাংবাদিকতা করতেন তখন তার কাজের জায়গাটিতে তিনি ছিলেন সেরা। ছাত্ররাজনীতির জন্য যেমন নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন, ছাত্রনেতা হিসেবেও পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়। সফল হয়েছেন প্রতিমন্ত্রী এবং মন্ত্রী হিসেবে। দেশের ঐতিহ্যবাহী এবং ইতিহাসসমৃদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও তিনি সফল। তৃতীয়বারের মতো দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি হলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রাজনীতির বাইরে তার আরও অনেক পরিচয়ের মধ্যে সাংবাদিক পরিচয়টাও অনেক বেশি উজ্জ্বল।
ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন স্পষ্টবাদী, সাহসী ও দেশপ্রেমিক। পাকিস্তান আমলে ছাত্র ও গণআন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা এ নেতা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং কোম্পানীগঞ্জ থানা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) অধিনায়ক ছিলেন।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। ওই ভয়াল রাতে নিহত হন তার ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি। তিনি তখন দৈনিক বাংলার বাণীর সম্পাদক। ফলে পত্রিকাটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ১৯৮১ সালে পত্রিকাটি আবার ছাপার অনুমতি পায়। ওই সময় ওবায়দুল কাদের জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। সেই সঙ্গে লেখালেখি। দ্বিতীয়বার শেখ ফজলুল করিম সেলিমের (বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য) সম্পাদনায় বাংলার বাণী পত্রিকার ছাপা শুরু হওয়ার পর যুক্ত হন ওবায়দুল কাদের। তিনি পত্রিকাটির সহকারী সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য ও পরে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের আগপর্যন্ত তিনি সাংবাদিকতা করেছেন।
টানা ১৫ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে ওবায়দুল কাদের অসংখ্য কলাম লিখেছেন বাংলার বাণীতে। ‘ও কাদের’ নামে তিনি কলাম লিখতেন। প্রতিদিন সকালে অফিসে আসতেন। সম্পাদকীয় বিভাগ ও অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে মিটিং করতেন। সম্পাদকীয় বিভাগের বাইরে সেই সময় তিনি বাংলার বাণীর আন্তর্জাতিক পাতাটি নিজের দায়িত্বে বের করতেন। আন্তর্জাতিক বিষয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও সমসাময়িক বিষয়ে তিনি খুব বেশি সচেতন ও আগ্রহী ছিলেন।
ওবায়দুল কাদেরের সেই সময়কার সহকর্মীরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সহকর্মী হিসেবে তিনি চমৎকার ছিলেন। তাছাড়া সাংবাদিক হিসেবেও খুব পেশাদার ছিলেন। তিনি যদি রাজনীতি না করে সাংবাদিক থাকতেন, তার অনেক লেখা এবং অসংখ্য বই আমরা পেতাম। যদিও তিনি এখন রাজনীতিতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছেন। কিন্তু আমরা যারা তাকে পেয়েছি, তারা তার লেখা মিস করছি। তার লেখার জন্য অপেক্ষা করতাম। যেহেতু বাংলার বাণী ছিল বিরোধী ঘরানার পত্রিকা, তাই সাধারণ মানুষেরও আগ্রহ থাকত।
ওবায়দুল কাদেরের লেখালেখি ও তার কলাম সম্পর্কে জাতীয় অধ্যাপক প্রয়াত কবীর চৌধুরী লিখেছিলেন, ‘যখনি সংকট, যখনই এক অপয়া অন্ধকার ওঁৎ পেতে আসে, যখনই সমাজ ধূসরতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, যখনই মিথ্যা ও ইতিহাস বিকৃতির গোলকধাঁধায় নয়া প্রজন্মকে দিগভ্রান্ত করার অপচেষ্টা, যখনই রাজনীতির গৌরব কলুষতায় ঢেকে দেওয়ার অপপ্রয়াস তখনই ওবায়দুল কাদেরের এই জীবন ঘনিষ্ঠ, সত্য ও সুন্দরের আরাধনাময় সাহসী রচনা সমাজকে আলোর ইতিহাস শোনাতে পারে।’
ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকতা জীবনে সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয়, রাজনৈতিক কলাম লিখেছেন অসংখ্য। কবি নির্মলেন্দু গুণ তার সম্পর্কে বলেছেন, ‘বাংলার বাণী পত্রিকায় সম্পাদকীয় বিভাগে আমার সহকর্মী ছিলেন, কলাম লেখক হিসেবেও জনপ্রিয় হয়েছিলেন।... আমি তার অলংকৃত কাব্যিক ভাষায় বক্তৃতার একজন ভক্তশ্রোতা।’
প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মূল্যায়ন ছিল, ‘ওবায়দুল কাদের শুধু রাজনীতিক নন, তিনি সাংবাদিক, তিনি বাগ্মী, তিনি লেখক। বক্তৃতায় বাংলা শব্দ উচ্চারণ, ছন্দের ব্যবহারে চারণকবি তিনি। নিবন্ধ লেখক হিসেবে যুক্তি ও বিশ্লেষণে তীব্র লক্ষ্যভেদী তিনি।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন বাংলার বাণীতে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৯৮৯ সালে বাংলার বাণীতে যখন জয়েন করি তখন সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাদের ভাইকে পাই। আমরা বার্তাকক্ষে বসতাম আর তিনি তখন অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটরদের রুমে বসতেন। ওনাদের আলাদা রুম ছিল। তিনি রুম থেকে বের হয়ে সবসময় আমাদের খোঁজখবর নিতেন। মাঝেমধ্যে আমাদের এখানে এসে গল্প করতেন। তিনি সহকর্মী হিসেবে খুবই আন্তরিক ও সহকর্মীবান্ধব ছিলেন।’
সেই সময়ে বাংলার বাণীতে ওবায়দুল কাদেরের আরেক সহকর্মী ও পাক্ষিক ক্রীড়াজগৎ পত্রিকার সম্পাদক দুলাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি তাকে ১৯৮৫ সালে পেয়েছি। আমি তখন সহ-সম্পাদক হিসেবে জয়েন করেছি বাংলার বাণীতে। ওবায়দুল কাদের তখন সহকারী সম্পাদক ছিলেন। তিনি কলাম লিখতেন। তার কলাম পাঠকের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল। তার লেখার মধ্যে সাহিত্য ছিল। লেখা খুব আকর্ষণীয় ছিল। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন জায়গায় যেতেন, সেসব বিষয় নিয়েও লিখতেন। তার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা ছিল চট্টগ্রাম, পাহাড়-সমুদ্র খুব পছন্দ করতেন এবং এসব নিয়েও তিনি লেখালেখি করতেন। তিনি খুব আবেগী লোক ছিলেন এবং লেখার মধ্যে সেটা ফুটে উঠত। তার লেখা পাঠক পড়তে বাধ্য হতেন।’
তিনি বলেন, ‘রাজনীতির মানুষ হলেও অফিসে ঢুকলে একজন সংবাদকর্মী হিসেবেই থাকতেন ওবায়দুল কাদের। রাজনীতির বিষয়টা বাইরে রাখতেন। বরাবরই তিনি শৌখিন টাইপের লোক ছিলেন। ভালো কাগজ-কলম ব্যবহার করতেন লেখার সময়। লেখার সময় আলাদা একটা মেজাজে থাকতেন। তখন খুব জরুরি না হলে কোনো বিষয় অ্যালাউ করতেন না। লেখা শেষ করলে বেশ ফুরফুরে থাকতেন। তখন আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, গল্প করতেন। পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে তার মনোভাব আমরা দেখতে পেয়েছি।’
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাংবাদিক সুভাষ চন্দ বাদল বাংলার বাণী পত্রিকায় ওবায়দুল কাদেরের সহকর্মী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কাদের ভাইকে ছাত্ররাজনীতি থেকেই চিনতাম। ১৯৭৫ সালের পর যখন তিনি কারাগারে যান তখন আমিও কারাগারে। তাকে কারাগারে দেখেছি বই নিয়ে ডুবে থাকতে। বাংলার বাণীতে এসে তাকে নতুন করে পেয়েছি। সেই সময় আজিজ মিসির ও তার কলাম ছিল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তিনি সাংবাদিকবান্ধব। বাংলার বাণী অফিসেও সহকর্মীদের সবসময় সহযোগিতা করতেন। আমি রিপোর্টার হিসেবে যদি কখনো কোথাও আটকে যেতাম তিনি সহযোগিতা করতেন। কাদের ভাই সাংবাদিক হিসেবে ছিলেন মেধাবী ও জ্ঞানী। তার সাহসের ঘাটতি ছিল না। তার কলামেও এর প্রভাব দেখেছি।’
ওবায়দুল কাদের ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার বড় রাজাপুর গ্রামে জন্ম নেন। বাবা মোশারফ হোসেন সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা শুরু করেন। মা ফজিলাতুন্নেছা। ওবায়দুল কাদের বসুরহাট সরকারি এএইচসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও নোয়াখালী কলেজ থেকে মেধা তালিকায় স্থান পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি কলেজজীবন থেকে ছাত্ররাজনীতি শুরু করেন।
১৯৭৫-এর পর একনাগাড়ে দীর্ঘ আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পরপর দুবার সভাপতি ছিলেন।
তার সেই সময়ের সহকর্মীরা বলেন, সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের তথা কাদের ভাই মানেই অন্যরকম। তিনি ছিলেন খুব সংবেদনশীল। সবাইকে মেনে নেওয়ার একটা ক্ষমতা ছিল। তিনি যে এত বড় একজন রাজনীতিক ও মুক্তিযোদ্ধা, এত বড় ছাত্রনেতা, তা কখনই সাংবাদিকদের কাছে মনে হতো না। মনে হতো, কাদের ভাই যেন সাংবাদিকতার মধ্যেই ডুবে আছেন। কোনো রিপোর্টার বা সাব-এডিটর অনুবাদ করতে সমস্যায় পড়েছেÑ কাদের ভাইয়ের কাছে গেলেই সমাধান। নিজের রুমে, ডেস্কে বসিয়ে বুঝিয়ে দিতেন। আর তার টেবিলে ছিল সবসময়ই গাদা গাদা বই।
বাংলার বাণীর সেই সময়ের একাধিক সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে দেশ রূপান্তরকে বলেন, কাদের ভাই ছিলেন সাংবাদিকতার প্রতি পুরো নিষ্ঠাবান। তার কাছে অনেক কিছু শিখেছি। তিনি দীর্ঘক্ষণ কোথাও বসে থাকতেন না। কাজের ফাঁকে ফাঁকেই তিনি রুম থেকে বেরিয়ে অন্য সহকর্মীদের টেবিলে টেবিলে আড্ডা দিতেন। সেখানে হয়তো আমরা চায়ের অর্ডার দিয়েছি। চা আসতে না আসতেই তিনি উঠে যেতেন। তারপর আবার তাকে চায়ের কাপ নিয়ে খুঁজতে হতো কাদের ভাই কই...।
আজ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের উদ্যোগে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম। আর অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন যুবলীগ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
সভাপতির বক্তব্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের কথা, মানবাধিকারের কথা মানায় না। আপনাদের হিংসাত্মক রাজনীতি আর সন্ত্রাসের কারণে নতুন প্রজন্ম রাজনীতি করতে চায় না। যারা একুশে আগস্ট ঘটিয়েছে, নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে, মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে, কৃষকের বুকে গুলি চালিয়েছে, জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটিয়েছে, তাদের সকল অপকর্মের মেডেল আছে। আমি বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপির প্রধান শত্রু এ দেশের সাধারণ জনগণ। যারা একাত্তরে হাতিয়ার তুলে নিয়েছিল দেশকে স্বাধীন করার জন্য, একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আপনারা বার বার তাদেরকেই আক্রমণ করেন। আওয়ামী লীগ আপনাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে আসে বলেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপনাদের বিরোধ ঘটে। সব সময় এ দেশের সাধারণ মানুষকে আপনাদের ষড়যন্ত্রের শিকার বানান, হত্যার শিকার বানান এবং আপনাদের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের শিকার বানান।
পরশ আরও বলেন, এ বছরটা নির্বাচনের বছর। আমাদের রাজপথে থাকতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। শুধু নেতাকর্মী দ্বারা আবর্ত থাকলে চলবে না, আমাদের চলে যেতে হবে সাধারণ মানুষের কাছে। গত ১৪ বছরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অর্জনের কথা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। যদি সাধারণ মানুষ উন্নয়নের সুফল না পায় তাহলে সেই উন্নয়নের কোনো মূল্য থাকে না। যখন আমাদের সকল উন্নয়নের সুফল সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারব তখনই জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।
তিনি যুবলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, যুবলীগের ভাই ও বোনেরা- আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন, আপনারা ধৈর্যশীল থাকবেন। ওদের কৌশল আমাদের সন্ত্রাসী হিসাবে উপস্থাপন করা। ওরা পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে চাইবে। আপনারা ওদের ফাঁদে পা দেবেন না। কিন্তু রাজপথ আমরা ছেড়ে দেব না। ভুলে যাবেন না, ওরা কিন্তু দিনকে রাত এবং রাতকে দিন বানাতে পারদর্শী। মিথ্যার ওপরই দলটার সৃষ্টি। ওরা জাতির পিতার নাম মুছে ফেলেছিল, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছিল। সুতরাং মিথ্যা চর্চার ক্ষেত্রে এই দলকে দুর্বল ভাবার কোনো সুযোগ নেই।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, যখন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, যখন বাংলাদেশের জিডিপি সিংগাপুর, মালয়েশিয়ার উপরে, যখন বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ ঠিক সেই মুহূর্তে বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশকে পেছনের দিকে নেওয়ার জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক তারা সবাই ভবিষ্যদ্বণী করছে, বাংলাদেশ যেভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যদি এভাবে এগিয়ে যায় তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৭তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে। আর এটা সম্ভব শুধুমাত্র রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে।
তিনি যুবলীগের উদ্দেশে বলেন, বিএনপি-জামায়াত আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা নানা মিথ্যা প্রচারণা ও গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রতিটি জেলায়, উপজেলায়, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এবং ইউনিটে জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। বলতে হবে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়নি, বাংলাদেশ উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আপনারা শেখ হাসিনার পাশে থাকুন, নৌকার পাশে থাকুন, নৌকায় ভোট দিন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম বলেন, যারা স্যাংশন নিয়ে কথা বলেন তাদের দলের প্রধান খালেদা জিয়া তৎকালীন আমেরিকার পরারাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্যাংশন চেয়েছেন। যাতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ভাবে ভেঙে পড়ে, দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়, খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়, বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পায়, মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। এটাই হলো বিএনপির আসল চেহারা। তারা কখনোই এ দেশের মানুষের ভালো চায় না। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অভিজ্ঞতা আছে কিভাবে অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে তোলা যায়। সামনের যে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কথা বলা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ তা কাটিয়ে উঠতে পারবে। আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিলে বঙ্গবন্ধুকন্যা তার দূরদর্শী নেতৃত্বে একটি উন্নত-সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবে।
সঞ্চালকের বক্তব্যে যুবলীগ সম্পাদক নিখিল বলেন, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঢাকার রাজপথে আপনারা পোস্টার হয়েছেন। নুর হোসেন, ফাত্তাহ বাবুল হয়েছেন। তারপরেও দেশের স্বার্থে সংগঠনের স্বার্থে, বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার প্রশ্নে যুবলীগ আপস করেনি, যুবলীগ আপস করতে জানে না। তিনি যুবলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যেমনি করে বিগত দিনে কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে রাজপথ আগলে রেখে প্রিয় নেত্রীর নির্দেশিত পথে মানুষের কল্যাণে, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আপনারা সব সময় কাজ করেছেন। আগামী নির্বাচনেও সেই সাহসিকতা আর বীরত্বের সাথে রাজপথে থাকবেন। বিএনপি-জামায়াতের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আবারও রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে ঘরে ফিরবেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. হাবিবুর রহমান পবন, মো. নবী নেওয়াজ প্রমুখ।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।