
দুই ড্রাম দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ ঢাকা থেকে মাগুরা পাঠানোর জন্য গত বুধবার যোগাযোগ করা হয় ইউএসবি এক্সপ্রেস কুরিয়ার সার্ভিসের এলিফ্যান্ট রোডের কার্যালয়ে। গ্রাহক সেজে এই প্রতিবেদক কথা বলেন। কুরিয়ার সার্ভিসটির এ-সংক্রান্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বলেন, ‘লিকুইড (তরল) আপাতত “ওয়ার হাউজ” (কুরিয়ার সার্ভিসের গুদাম) নিচ্ছে না। কয়েক দিন আগে “মেট্রো এক্সপ্রেস” কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়িতে বিস্ফোরণে লোক মারা গেছে, এ জন্য আমাদের সমস্ত লিকুইড বহন বন্ধ আছে।’ কবে নাগাদ চালু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনো বলা যাচ্ছে না।’
‘ফক্স পার্সেলে’র ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং কমপ্লেক্সের কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি এই প্রতিবেদককে প্রথমে বলেন, ‘পাঠানো যাবে, হোয়াটসঅ্যাপে বিস্তারিত লিখে পাঠান।’ পরে বলেন, ‘আমরা ইন্টারন্যাশনালি (আন্তর্জাতিক) পার্সেল করি, ডমেস্টিক (দেশের অভ্যন্তরে) করি না।’ এসএ পরিবহন পার্সেল অ্যান্ড কুরিয়ার সার্ভিসের কাকরাইল কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বলেন, ‘লিকুইড কেমিক্যাল বহন বন্ধ আছে। কিছুদিন আগে আমাদের বরিশালের একটি গাড়িতে দাহ্য কেমিক্যাল (রাসায়নিক) বহন করার সময় আগুন লেগেছিল। এরপর থেকে আমরা নিষেধ করে দিয়েছি।’
তবে অন্য একটি মাধ্যমে যোগাযোগ করলে আরেকটি কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী জানান, রাসায়নিক বেশি পরিমাণে হলে পিকআপ ভ্যানে পাঠানোর ব্যবস্থা করা যাবে। সে ক্ষেত্রে টাকা বেশি লাগবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু এসব প্রতিষ্ঠানই নয়, বেশির ভাগ কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানই দাহ্য রাসায়নিক পরিবহনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নির্দেশনা মানে না। দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০০ কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের দাহ্য রাসায়নিক পরিবহনের অনুমতি নেই। এরপরও দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্তদের খামখেয়ালিতে দেশের বেশ কিছু কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান দাহ্য রাসায়নিক বহন করছে। বেশি মুনাফার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজ করছে বছরের পর বছর। কয়েক বছর ধরে কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য বহনেরও অভিযোগ আছে।
কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলোর সমিতি ‘কুরিয়ার সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’-এর (সিএসএবি) তথ্যমতে, দেশের ১৬০টি কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সিএসএবির সদস্য। দেশের কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ৮৫টির।
সিএসএবির সভাপতি হাফিজুর রহমান পুলক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সব কুরিয়ার সার্ভিসের প্রতি আমাদের সুস্পষ্ট নির্দেশ আছে, তারা কোনো ধরনের কেমিক্যাল বহন করতে পারবে না। প্রতিনিয়ত এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়। এরপরও হাজারীবাগে মেট্রো এক্সপ্রেস কুরিয়ার সার্ভিসে এমন বিস্ফোরণের ঘটনা দুঃখজনক। এখানে মালিকপক্ষ, ম্যানেজমেন্ট, বুকিং অফিসারদের বিষয় থাকে। তবে হাজারীবাগের ঘটনায় মালিক জড়িত না বলে জানতে পেরেছি। সেখানে ম্যানেজার, সুপারভাইজার ও বুকিং অফিসার দায়ী।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাজারীবাগের দুর্ঘটনার পর আমরা বিষয়টি নিয়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছি। ইতিমধ্যে কয়েকটি কুরিয়ার সার্ভিসকে ফোন করে সতর্ক করা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতের পরিবারকে আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা দেওয়ার বিষয়টিও গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।’
দাহ্য বা ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক বহনের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক দুর্ঘটনায় হতাহতও হয়েছে। দুর্ঘটনার পর সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু পরে আবার শুরু করে। সর্বশেষ গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর হাজারীবাগের বউবাজার বালুর মাঠ বেড়িবাঁধ এলাকায় মেট্রো এক্সপ্রেস নামের একটি কুরিয়ার সার্ভিসের ওয়ার হাউজের সামনে কাভার্ড ভ্যান থেকে দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ মিথাইল ইথাইল কেটন পারক্সাইড নামানোর সময় বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই ওই কুরিয়ার সার্ভিসের শ্রমিক ইলিয়াস মরমু (২০) মারা যান। আহত হন আরও ৩ শ্রমিক।
বিস্ফোরণের পর প্রাথমিক তদন্ত করে ফায়ার সার্ভিস। হাজারীবাগ ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আব্দুস শহীদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কুরিয়ার সার্ভিসের কাভার্ড ভ্যানটিতে ৫টি ড্রামে প্রায় ১০০ লিটারের মতো দাহ্য রাসায়নিক ছিল। সেখানে শ্রমিকদের হাত থেকে একটি ড্রাম গাড়ির ভেতরেই পড়ে গেলে বিস্ফোরিত হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিস্ফোরিত ড্রামে যে রাসায়নিক ছিল, সেটা দাহ্য পদার্থ এবং পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর; বিশষে করে বিস্ফোরিত হলে এটা বাতাসের সঙ্গে মিশে মানুষের শরীরে গেলে ফুসফুসে সরাসরি আঘাত করে। অনেক সময় আগুনও ধরে যায়। এ ধরনের রাসায়নিক কোথাও রাখার জন্য বিস্ফোরক পরিদপ্তরের অনুমোদন লাগে।’
বিস্ফোরক পরিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৫৪ ধরনের দাহ্য রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ করে পরিদপ্তরটি। এগুলো কুরিয়ার সার্ভিসে বহন করা নিষিদ্ধ। মিথাইল ইথাইল কেটন পারক্সাইড এর মধ্যে অন্যতম। পরিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো প্রতিষ্ঠান এই ৫৪টি আইটেমের মধ্যে কোনোটি যদি দেশের বাইরে থেকে আমদানি করে তাহলে দেশে ঢোকার পর বন্দর থেকে সরাসরি যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা মেনে ওই প্রতিষ্ঠানের মজুদাগারে নিয়ে যাবে। সেখানেই ওই রাসায়নিক ব্যবহার করবে। অন্য কোনো স্থানে বহন করার সুযোগ নেই। আর যেগুলো অন্যত্র নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে, সেগুলো নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করে নিতে হবে। যেমন জ¦ালানি তেল পরিবহনের জন্য পদ্মা, মেঘনা, যমুনাসহ বিভিন্ন ট্যাঙ্কার রয়েছে। আবার যদি বিস্ফোরক হয়, তবে সেগুলো পুলিশ প্রহরায় নিয়ে যেতে হবে।
বিস্ফোরক পরিদপ্তরের সহকারী বিস্ফোরক পরিদর্শক (ঢাকা) মুহাম্মদ মেহেদী ইসলাম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কোনো কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানকেই দাহ্য কেমিক্যাল বহনের অনুমোদন দেওয়া হয় না। সুতরাং তাদের এগুলো বহন করার কোনো সুযোগ নেই।’
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১৫ জুন ঢাকা থেকে নীলফামারী যাওয়ার পথে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে এসএ পরিবহন কুরিয়ার অ্যান্ড পার্সেল সার্ভিসের একটি কাভার্ড ভ্যানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর মির্জাপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম জানান, কাভার্ড ভ্যানটিতে অন্যান্য মালামালের মধ্যে রাসায়নিক ছিল। ওই রাসায়নিক থেকে আগুনের সূত্রপাত।
২০১৭ সালের ১০ মার্চ রাজবাড়ীতে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের চলন্ত গাড়িতে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। সেবারও গাড়িতে থাকা ২৪টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারির রাসায়নিক থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয় বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস। এসব দুর্ঘটনায় আহত ও নিহত কুরিয়ার সার্ভিসের শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কুরিয়ার সার্ভিসের অনেক ছোটখাটো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ পায় না। ঝুঁকি থাকার পরও এসব রাসায়নিক বহনের পেছনে রয়েছে কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর অতি মুনাফার লোভ। আবার অনেক ক্ষেত্রে মালিককে না জানিয়েই কুরিয়ার সার্ভিসের সুপারভাইজার ও বুকিং অফিসার উৎকোচ নিয়ে এসব দাহ্য রাসায়নিক বহন করছেন।
কুরিয়ার সার্ভিসের সার্বিক দেখভালের দায়িত্বে থাকা সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কুরিয়ার সার্ভিসের নানা অনিয়ম দূর করতে নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গঠন করা হয়েছে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা ম. শেফায়েত হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কুরিয়ার সার্ভিসের জন্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে আলাদা একটি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে। তাদের অপারেশনাল কিছু দুর্বলতা ছিল, যা বর্তমানে দূর হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হবে।’
শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। একজন আদর্শ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাঝে যেমনি জ্ঞান বিতরণ করেন, তেমনি ন্যায়নীতি ও আদর্শেরও দীক্ষা দেন। জাতি গঠনে তিনি সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারেন। এজন্য শিক্ষককে নীতিনৈতিকতার দিক থেকে স্বচ্ছতার পরিচয় দিতে হয়। কিন্তু শিক্ষকের নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হলে তখন?
চলতি বছরের জুন মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) এক প্রতিবেদনে দেশে ১ হাজার ১০৮ জন এমন শিক্ষক পাওয়া গেছে যারা জাল সনদে চাকরি করছেন বছরে পর বছর ধরে। গত ১০ বছরে ২৪ হাজার ১২৩টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে এসব জাল সনদধারী শিক্ষকদের শনাক্ত করে ডিআইএ। ভুয়া সনদ দিয়ে তারা চাকরি করে যাচ্ছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। আর নিয়মিতভাবেই সরকারের কাছ থেকে বেতনও তুলে নিচ্ছেন। অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে চাকরি করে যাওয়া এসব শিক্ষকের এমপিও বাতিল এবং সরকারের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ ফেরত দেওয়ার সুপারিশও করেছে ডিআইএ। কিন্তু জাল সনদ ধরা পড়ার পরও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে গড়িমসির অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তাতেও রয়েছে দীর্ঘসূত্রতা। এতে জাল সনদ ধরা পড়লেও কতজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এর হিসাব পাওয়া যায়নি।
কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার পাল্টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (সমাজবিজ্ঞান) হাজেরা খাতুন। তিনি ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি যোগদান করেন এবং ২০১২ সালের ১ নভেম্বর এমপিওভুক্ত হয়ে নিয়মিতভাবে সরকারি বেতন-ভাতা পেয়ে আসছেন। সম্প্রতি ওই স্কুল পরিদর্শনে যান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) কর্মকর্তারা। পরিদর্শনের সময় তিনি শিক্ষক নিবন্ধনের যে সনদটি দেখিয়েছেন তা বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে যাচাই করেন ডিআইএ কর্মকর্তারা। যাচাইয়ে দেখা যায়, এই সনদ ইস্যু করেনি এনটিআরসিএ, সনদটি মূলত জাল। এ বছরের ২২ এপ্রিল ডিআইএ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি অবৈধভাবে নেওয়া ১২ লাখ ৩২ হাজার টাকা ফেরতের সুপারিশ করা হয়েছে।
পাল্টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কম্পিউটার শিক্ষক কল্পনা খাতুনের কম্পিউটার সনদও জাল পাওয়া গেছে। কারণ ওই শিক্ষক ‘ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি, বগুড়া’ থেকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত নয়। ফলে তিনি যে সনদ নিয়েছেন তা বৈধ নয়। সরকারি বেতন-ভাতা বাবদ ওই শিক্ষকের নেওয়া ১১ লাখ ২৩ হাজার ৮৫০ টাকা ফেরত দেওয়ার সুপারিশ করেছে ডিআইএ।
কুষ্টিয়ার একই উপজেলার নাতুরিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক মো.ইদ্রিস আলী এমপিওভুক্ত হন ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি। সম্প্রতি ডিআইএ ওই প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে গেলে তিনি জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমি (নেকটার), বগুড়ার সনদ দেখান। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানে সনদ যাচাই করে ডিআইএ জানতে পারে তা জাল। ওই শিক্ষককেও ১৫ লাখ ১০ হাজার ৯২ টাকা ফেরত দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
সম্প্রতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, জাল সনদ শনাক্ত, আদায়যোগ্য টাকার পরিমাণ, বেহাত হওয়া জমির পরিমাণসহ নানা তথ্যসংবলিত গত ১০ অর্থবছরের এক প্রতিবেদন ডিআইএ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে গত ১০ বছরে ১ হাজার ১০৮ জন জাল সনদধারী শিক্ষক চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানে ৮২৪ জন এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানে ২৮৪ জন জাল সনদধারী শিক্ষক পাওয়া গেছে। ভুয়া সনদ দিয়ে বছরের পর বছর দিব্যি চাকরি করে যাচ্ছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অনেকেই। নিয়মিতভাবেই তারা সরকারের কাছ থেকে বেতনও তুলে নিয়েছেন।
ডিআইএ’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে ২৪ হাজার ১২৩টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হয়েছে। এরমধ্যে যাচাইবাছাই শেষে ১৬ হাজার ৮৫২টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ৭৯৯ জনের শিক্ষক নিবন্ধনের সনদ জাল পাওয়া গেছে। এরপর কম্পিউটার সনদ জাল পাওয়া গেছে ২৪৯ জনের। আর অন্যান্য সনদ জাল পাওয়া গেছে ৬০ জনের। এসব শিক্ষক জাল সনদ দিয়ে চাকরি করে সরকারি কোষাগার থেকে এখন পর্যন্ত ৪৯ কোটি ৮২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৬০ টাকা অবৈধভাবে নিয়েছেন, যা ফেরতের সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৭ জন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১২৩ জন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১১৯ জন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৪১ জন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১১২ জন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২০৩ জন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১১৮ জন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭৭ জন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৪১ জন এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬৭ জন জাল সনদধারী চিহ্নিত করেছে ডিআইএ।
জানতে চাইলে ডিআইএ’র পরিচালক অধ্যাপক অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চিহ্নিত হওয়া জাল সনদধারী শিক্ষকদের কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, কারওটা আবার ঝুলে আছে। আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানের জবাব নেওয়া হয়। এরপর নানা মাধ্যম শেষে মন্ত্রণালয়ের মিটিংয়ে ওইসব শিক্ষকের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা প্রতিষ্ঠান পর্যায় বা মাউশি অধিদপ্তরে ঝুলে থাকে।’
অধ্যাপক অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর আরও বলেন, ‘আমরা মূলত নিবন্ধন, কম্পিউটার ও গ্রন্থাগার সনদেই বেশি জোর দেই। আরও সনদ যাচাই করলে চিত্রটা অন্যরকম হতো। সম্প্রতি আমরা প্রতিষ্ঠানের জমির পরিমাণ, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, ফলসহ নানা বিষয় পরিদর্শনে যুক্ত করেছি। এতে আমাদের পরিদর্শন করা প্রতিষ্ঠানের যেকোনো তথ্য দরকার হলেই তা সহজেই হাতে পাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।’
অনিয়ম পাওয়া গেছে রাজধানীর নামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও। এখানেও রয়েছে জাল সনদধারী শিক্ষক। আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিলের মূল ক্যাম্পাসের দিবা শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আ. ছালাম খান জাল সনদ দিয়েই দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করছেন। তিনি ১৯৯৪ সালে এই স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ২০১২ সালে হন সহকারী প্রধান শিক্ষক। তার সহকারী প্রধান শিক্ষক হওয়ার অন্যতম যোগ্যতা বিএড সনদটিই জাল বলে প্রমাণিত হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের তদন্তে। এরপর তার এমপিও স্থগিত করেছিল মাউশি অধিদপ্তর। কিন্তু ছালাম খান উচ্চ আদালতে রিট করলে মাউশির আদেশে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। মামলাটি এখনো চলমান রয়েছে।
জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটও জাল করেছেন কিছু শিক্ষক। শিক্ষক নিবন্ধন ও কম্পিউটার সনদের পাশাপাশি বিএড, এমএডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ডিপ্লোমা ও গ্রন্থাগার সনদও জাল পাওয়া যাচ্ছে।
শরীয়তপুরের সখীপুর ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. সালাউদ্দিন ১২ বছর আগে এমপিওভুক্তি হলেও সম্প্রতি তার জাল সনদ ধরা পড়েছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ পাসের সনদ জাল করেছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ জাল করেছেন নাটোরের লালপুরের মাজার শরীফ টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস কলেজের শিক্ষক মো. আবুল কালাম আজাদ।
জাল সনদ ধরা পড়ার পরও ঠিকমতো ব্যবস্থা না নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। আবার যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তাতেও রয়েছে নানা দীর্ঘসূত্রতা। ফলে জাল সনদ ধরা পড়লেও কতজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এর হিসাব পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির আগে তাদের সনদ যথাযথভাবে যাচাই করার কথা। কিন্তু জাল সনদ জানার পরও ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে তা ছেড়ে দিচ্ছে আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো। তবে সম্প্রতি এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষকরা নিয়োগ পাওয়ায় জাল সনদ নিয়ে চাকরিতে ঢোকার সুযোগ অনেকাংশেই কমে গেছে। তবে ২০১৫ সালের আগে যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের মধ্যে হাজার হাজার শিক্ষক এখনো জাল সনদ নিয়েই দিব্যি চাকরি করে যাচ্ছেন।
ডিআইএ’র যুগ্ম পরিচালক বিপুল চন্দ্র সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের সময় অথবা অভিযোগ এলে শিক্ষকদের সনদ যাচাই করি। যেই সনদ নিয়ে আমাদের সন্দেহ জাগে সেই সনদ ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষকে আমরা অফিশিয়ালি চিঠি দিই। তারাই বলে দেয়, ওই সনদ সঠিক কীনা? এরপর জাল সনদ ধরা পড়লে আমরা প্রতিবেদন আকারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাই। মন্ত্রণালয় মাউশি অধিদপ্তরের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’
প্রথমে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া, তারপর গণভোটের আয়োজন, সবশেষে ঘোষণা দিয়ে রুশ ফেডারেশনে অন্তর্ভুক্ত করা; এভাবেই ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রাশিয়া। গত শুক্রবার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। সেদিন তিনি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক এবং দক্ষিণাঞ্চলের জেপোরিজিয়া ও খেরসনকে রাশিয়ার ভূখণ্ড বলে ঘোষণা দেন। তবে পুতিনের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন পশ্চিমা দেশগুলোর নেতারা। পাশাপাশি রাশিয়ার মিত্র হিসেবে পরিচিত কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। সবমিলিয়ে বিশ্বকে উদ্বেগে ফেলেছে পুতিনের নতুন পদক্ষেপ ও তার বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের পাল্টা ব্যবস্থার ঘোষণা।
তবে গতকাল শনিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইউক্রেনের চারটি এলাকা রাশিয়ার অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে একটি খসড়া নিন্দা প্রস্তাব রাখে যুক্তরাষ্ট্র। তবে সে প্রস্তাব বাতিল হয়ে গেছে। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী ও অস্থায়ী ১৫ সদস্যের মধ্যে দশটি দেশ এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। তবে চীন, গ্যাবন, ভারত এবং ব্রাজিল ভোটদানে বিরত থাকে। আর রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট দিয়ে তাতে ভোটোও দিয়েছে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড গত শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করেন। এতে সদস্য দেশগুলোকে ইউক্রেনের কোনো পরিবর্তিত অবস্থা স্বীকৃতি না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে এ প্রস্তাবে রাশিয়াকে ইউক্রেন থেকে সেনা প্রত্যাহারে বাধ্য করার কথা বলা হয়।
এ ছাড়া ইউক্রেন আর তার পশ্চিমা মিত্ররা ওই ভোটকে ‘অবৈধ ও জোরজবরদস্তিমূলক’ অভিহিত করছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডা এরই মধ্যে মস্কোর ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার আবেদন জমা দিয়েছে।
এদিকে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে রাশিয়াকে শাসন করা পুতিন ‘বৃহত্তর ঐতিহাসিক রাশিয়ার’ জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে রাশিয়াকে ধ্বংসের পরিকল্পনার অভিযোগ এনেছেন; ওয়াশিংটন এবং তার মিত্ররাই নর্ড স্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইনে ছিদ্র করেছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। এ ছাড়া নতুন যুক্ত অঞ্চলগুলো রক্ষায় পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবেন বলে প্রচ্ছন্ন হুমকি দেন পুতিন। তিনি ঘোষণা দিয়ে বলেন, এসব অঞ্চল সবসময় রাশিয়ার অংশ থাকবে। তার এই ভাষণের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন তার দেশ পুতিনের বেপরোয়া হুমকির পরোয়া করে না।
ইউরোপীয় ইউনিয়নও এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, ‘অবৈধ গণভোটের মাধ্যমে ইউক্রেনের স্বাধীনতার আরেক দফা লঙ্ঘনে রাশিয়ার কৌশলকে আমরা কখনোই স্বীকৃতি দেব না।’ রাশিয়ার এই পদক্ষেপকে ‘অবৈধ ভূমি দখল প্রক্রিয়া’ হিসেবে অভিহিত করেছেন ন্যাটো মহাসচিব ইয়েনস স্টোলটেনব্যার্গ। ব্রাসেলসে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জোরপূর্বক ইউরোপের কোনো এলাকা দখল করে নেওয়ার সবচেয়ে বড় চেষ্টা।’
এমন ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে জাপানও। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কুশিদা বলেন, ‘রাশিয়ার এমন পদক্ষেপ ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত। এমন পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং তা কখনোই মেনে নেওয়া হবে না।’
রাশিয়াসহ ৫৭টি দেশের জোট অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি কোঅপারেশন ইন ইউরোপের (ওএসসিই) কর্মকর্তারাও এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। সংস্থাটির চেয়ারম্যান-ইন-অফিস এবং পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রন্ত্রী ও অন্য কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, রাশিয়ার এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের ভয়ানক লঙ্ঘন। তা ছাড়া এটি জাতিসংঘ সনদ এবং ওএসসিইর নীতিবিরোধী।
এদিকে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করার বিষয়ে রাশিয়ার ওপর আরও অবরোধ আরোপের পরিকল্পনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। নতুন অবরোধে কী কী বিষয় থাকবে তা নিয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে জোটের সদস্যরা। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার পণ্য আমদানি এবং সেনাবাহিনীর কাজে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ।
রাশিয়ার ওপর নতুর করে নিষেধাজ্ঞা আরোপে পিছিয়ে নেই যুক্তরাজ্যও। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন সেবা খাত যেমন তথ্যপ্রযুক্তি, স্থাপত্য ও প্রকৌশল খাতে নিজেদের অবস্থান হারাবে মস্কো। তা ছাড়া রাশিয়ার শিল্প ও প্রযুক্তি খাতে যুক্তরাজ্যের রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে জানানো হয়।
এদিকে রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেনের লিমান শহরে রুশ সেনাদের একটি বড় অংশ ঘিরে ফেলেছে ইউক্রেনের বাহিনী। সেই সঙ্গে শহরটির চারপাশের বসতিগুলো পুনরুদ্ধার করেছে তারা। ইউক্রেনীয় বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান সেরি চেরেভাতি এ দাবি করেছেন বলে বিবিসির খবরে বলা হয়।
ইউক্রেনের টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেরি চেরেভাতি বলেন, ‘আমাদের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, লিমান শহরে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার রুশ সেনা ছিল। কিন্তু ইউক্রেনের বাহিনীর অভিযানে অনেক রুশ সেনা হতাহত হওয়ায় এ সংখ্যা এখন কমে এসেছে।’
সেরি চেরেভাতি বলেন, রুশ সেনাদের সাফল্য অর্জনের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। সাক্ষাৎকারে লিমান শহরের গুরুত্ব নিয়েও কথা বলেন তিনি। শহরটি ইউক্রেনের সেনারা দখল করতে পারলে ক্রেমিনা ও সেভরোদোনেৎস্ক শহরে অগ্রসর হওয়া তাদের জন্য সহজ হবে। বর্তমানে শহর দুটিতে রুশ সেনাদের শক্ত ঘাঁটি আছে।
চলে গেলেন দৈনিক বাংলার সম্পাদক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত বর্ষীয়ান সাংবাদিক তোয়াব খান। গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। ১৯৩৪ সালের ২৪ এপ্রিল সাতক্ষীরা জেলার রসুলপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তোয়াব খান। সাংবাদিক হিসেবে সুদীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য কর্মজীবন তার।
দৈনিক বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি হারুন আল রশিদ জানান, বার্ধক্যজনিত জটিলতায় তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ (গতকাল) দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বরেণ্য সাংবাদিক তোয়াব খানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখপ্রকাশ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘তোয়াব খানের মৃত্যু এক কিংবদন্তি সাংবাদিকের জীবনাবসান, যিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সাংবাদিকতায় নিয়োজিত থেকেছেন।’
ছাত্রজীবন থেকেই তোয়াব খান তৎকালীন বিভিন্ন পত্রিকায় সমকালীন ইস্যু নিয়ে লেখালেখি করতেন। ২০১৬ সালে একুশে পদক পাওয়া তোয়াব খানের সাংবাদিকতা জীবনের শুরু ১৯৫৩ সালে সাপ্তাহিক জনতার মাধ্যমে। ১৯৫৫ সালে যোগ দেন দৈনিক সংবাদে। ১৯৬১ সালে তিনি দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদক হন। এরপর ১৯৬৪ সালে যোগ দেন দৈনিক পাকিস্তানে। দেশ স্বাধীনের পর দৈনিক পাকিস্তান থেকে বদলে যাওয়া দৈনিক বাংলার প্রথম সম্পাদক ছিলেন তোয়াব খান। ১৯৭২ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি দৈনিক বাংলার সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেস সচিব ছিলেন। পরে রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ এবং প্রথম অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রেস সচিবের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।
প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ও প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন এই যশস্বী সাংবাদিক।
মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শব্দসৈনিকের ভূমিকা পালন করেন তোয়াব খান। সে সময় তার আকর্ষণীয় উপস্থাপনায় নিয়মিত প্রচারিত হয় ‘পিণ্ডির প্রলাপ’ নামের অনুষ্ঠান।
দৈনিক জনকণ্ঠের শুরু থেকে গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত পত্রিকাটির উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন তোয়াব খান। এরপর নতুন আঙ্গিক ও ব্যবস্থাপনায় প্রকাশিত দৈনিক বাংলার সম্পাদকের দায়িত্ব নেন তিনি।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাত পৌনে ১২টার দিকে ওই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
এদিকে ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার পর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। কুবি ছাত্রলীগের বিবদমান দুটি পক্ষ সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহী এবং সদ্য সাবেক সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজের অনুসারীরা গতকাল শনিবার ক্যাম্পাসে পাল্টাপাল্টি সশস্ত্র মহড়া দিয়েছে। এ সময় ফাঁকা গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল বিকেল ৩টার দিকে ছাত্রলীগের একটি অংশের নেতাকর্মীরা ৪০-৫০টি মোটরসাইকেল নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকে। তারা ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত মোটরসাইকেল শোডাউন করে। তাদের মধ্যে অনেকেই বহিরাগত ছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছাত্রলীগের এই অংশটির নেতাকর্মীরা শহীদ মিনার থেকে ফিরে এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে গিয়ে ফাঁকা গুলি ছোড়ার পাশাপাশি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। তারা হলটিতে অবস্থান করা ছাত্রলীগের অপর অংশের নেতাকর্মীদের বের হতে বলে। একইসঙ্গে কুবি ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি (২০১৭ সালে গঠিত কমিটির) ইলিয়াস হোসেন সবুজের বিরুদ্ধে এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক (২০১৫ সালে গঠিত কমিটির) রেজা-ই-এলাহীর পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। প্রায় ২০ মিনিট সেখানে অবস্থানের পর প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী ও অন্য শিক্ষকরা এসে অনুরোধ করলে চলে যায় রেজা-ই-এলাহীর অনুসারীরা। এরপর ইলিয়াসের অনুসারীরা তাদেরকে প্রতিহত করতে হল থেকে নামতে শুরু করে। এ সময় তাদের হাতে রামদা, হকিস্টিক ও লাঠিসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র দেখা যায়। প্রধান ফটক বন্ধ থাকার পরও কীভাবে বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে শোডাউন করে এমন প্রশ্ন তুলে তারা প্রক্টরের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে।
ক্যাম্পাসে মহড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কুবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহী বলেন, ‘কমিটি বিলুপ্ত হওয়ায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও লোটাস কামালকে (অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল) ধন্যবাদ জানিয়ে আনন্দ মিছিল দিয়েছি। কিন্তু ওরা (ইলিয়াসের অনুসারীরা) ঝামেলা করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার বিষয়টিকে ঘোলাটে করার জন্য তারা (ইলিয়াসের অনুসারীরা) বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কমিটি বিলুপ্ত করার পরও তারা বিষয়টিকে অস্বীকার করে যাচ্ছে। আর ক্যাম্পাসের যে কেউই আমার নামে স্লোগান দিতে পারে। সব জায়গায় আমার অনুসারী আছে।’
অন্যদিকে কুবি শাখা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭১ সালের কালরাত ছাড়া হলের ভেতরে ঢুকে গুলি করা, ককটেল মারা, পুলিশ এবং প্রক্টরের সামনে দিয়ে ক্যাম্পাস গেট অতিক্রম করে হলের (বঙ্গবন্ধু) দোতলায় উঠে যাওয়া, প্রক্টরের পাশেই ককটেল ফোটানো এটি বিরল ঘটনা হয়ে থাকবে। এখানে তিন-চারজন সাবেক ছাত্র এবং একজন রানিং ছাত্র, অটোচালক, বহিরাগত, বিভিন্ন মামলার আসামি ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কুবি প্রশাসনকে বলব ছেলেদের দুপুরে ঘুমানোর যদি নিরাপত্তা না থাকে তাহলে এ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া উচিত। প্রশাসনের নীরব ভূমিকার কারণে তাদের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে। অস্ত্রসহ প্রশাসনের লোকের সামনে কীভাবে ক্যাম্পাসে ঢোকে। যারা এ ঘটনায় জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে এজাহারভুক্ত মামলা করতে হবে। তা না হলে সব শিক্ষার্থীকে সাথে নিয়ে আমরা কঠিন আন্দোলনে যাব, দরকার হলে আমরণ অনশন করব।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা প্রভোস্টদেরকে নিয়ে বসেছি এবং উপাচার্যের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। আমরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করব।’
কমিটি বিলুপ্ত নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য : বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ফেইসবুক পেইজে শুক্রবার রাত ১১টা ৪৯ মিনিটে কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার মাধ্যমে কুবি ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার কথা জানানো হয়। কিন্তু বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশের আধাঘণ্টার মধ্যে ছাত্রলীগের ফেইসবুক পেইজ থেকে তা আবার সরিয়ে ফেলা হয়। পরে ওই দিন রাতেই কমিটি বিলুপ্তির সত্যতা নিশ্চিত হতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের একাধিক নেতার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ও দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি বলেন, কুবি ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অন্যদিকে কমিটি বিলুপ্তির বিষয়টি সত্য বলে দাবি করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।
আবার ছাত্রলীগের ফেইসবুক পেইজ থেকে পোস্টটি সরিয়ে ফেলা হলেও কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন নিজেদের ফেইসবুক ওয়ালে বিজ্ঞপ্তিটি রেখে দেন।
সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য মোবাইল ফোন থেকে পাঠানো বার্তায় বলেন, কুবি ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়নি। সম্মেলন আয়োজন করা হবে। তারিখ নির্ধারণ হলে জানানো হবে।
দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি জানান, কুবির কমিটির ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি এখনো। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি ভুল করে দেওয়া হয়েছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন তার ফেইসবুক স্ট্যাটাস দেখতে বলেন। পরে আবারও যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘প্রেস রিলিজ হয়েছে কমিটি বিলুপ্তের। এখন পর্যন্ত আমরা এটাই জানি। পরবর্তীতে কোনো আপডেট পাইনি যে ওই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়েছে কি না।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
২০১৭ সালের ২৮ মে লোকপ্রশাসন বিভাগের ইলিয়াস হোসেন সবুজকে সভাপতি এবং গণিত বিভাগের রেজাউল ইসলাম মাজেদকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছরের জন্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ১১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
র্যাবে সংস্কারের কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন না বাহিনীটির নবনিযুক্ত মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন। গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান নবনিযুক্ত র্যাব ডিজি। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বলব, র্যাব সংস্কারের কোনো প্রশ্ন দেখি না। আমরা এমন কোনো কাজ করছি না যে র্যাবকে সংস্কার করতে হবে। আমাদের আগে থেকে যে বিধিবিধান আছে, সেই বিধিবিধান অনুসারে আমরা কাজ করছি। আমরা আইনের বাইরে কোনো কাজ করি না।’ সম্প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, র্যাবের নিষেধাজ্ঞা এখনই বাতিল হচ্ছে না। র্যাবকে সংস্কারের কথা জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র্যাব মহাপরিচালক বলেন,
‘যুক্তরাষ্ট্র র্যাব কর্মকর্তাদের যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেটা সরকারিভাবে মোকাবিলা করা হচ্ছে। তারা যেসব বিষয় আমাদের কাছে চেয়েছে, এরইমধ্যে আমরা সেসব বিষয়ে জবাব দিয়েছি। জবাব দেওয়ার পর তারা আর পাল্টা প্রশ্ন করার সুযোগ পায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আপনি বললেন এতগুলো লোক আমার উধাও হয়েছে, বলতে তো হবে তারা কারা? আমরা তো বলেছি কে কোথায় কী অবস্থায় আছে। আমি মনে করি না এটি বড় কোনো চ্যালেঞ্জ সরকার কিংবা আমাদের জন্য। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করে যাব। এটি সত্য, যারা কাজ করে তাদের ভুলত্রুটি হতেই পারে। তবে দেখতে হবে, সেটি ব্যক্তি স্বার্থে করেছি নাকি দেশের সাধারণ মানুষের জন্য করেছি। তাই বলব, এসব বিষয় আমরা সরকারিভাবে মোকাবিলা করব।’
র্যাব সংস্কারের জন্য যুক্তরাষ্ট্র লিখিত কোনো প্রস্তাব দিয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাব প্রধান বলেন, ‘না, আমাদের কাছে কোনো লিখিত প্রস্তাব দেয়নি।’
টেস্ট ক্রিকেটে সিলেটের পথচলা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। অভিজাত সংস্করণে যা ছিল দেশের অষ্টম ভেন্যু। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পা রাখে দেশের সবচেয়ে সুন্দর এই স্টেডিয়ামটি। তবে মাঠের অভিষেক ম্যাচেই হেরে যায় বাংলাদেশ। তারপর আর কোনো পাঁচ দিনের খেলা গড়ায়নি এই মাঠে। এ নিয়ে স্থানীয়দের আক্ষেপের শেষ নেই।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর ফুরাচ্ছে। পাঁচ বছর পর আবারও টেস্ট ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
ক্রিকবাজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, ‘আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথম টেস্ট আয়োজন করতে পারব বলে আশা করছি। এটি আমাদের জন্য খুব একটি উপলক্ষ হবে। কারণ পাঁচ বছর পর সিলেটের মাঠে টেস্ট ক্রিকেট ফিরবে।’
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল সিলেট সফর করেছে। তারা সেখানকার মাঠসহ সব সুযোগ সুবিধা পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সবকিছু দেখে তারা এখানে আরও বেশি ম্যাচ আয়োজনের জন্য উন্মুখ বলে জানিয়েছেন বিসিবির নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান নাদেল।
তিনি যোগ করেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল আমাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেশ মুগ্ধ। তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে আমরা তাদের সব প্রত্যাশা ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারব।’
এফটিপি সূচি অনুযায়ী চলতি বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজে খেলার কথা নিউজিল্যান্ডের। তবে সিরিজটি হবে দুই ভাগে। প্রথম ভাগে সেপ্টেম্বরের শেষভাগে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে খেলবে কিউইরা। এই সিরিজ খেলেই বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাবে দুই দল।
বিশ্বকাপের পর হবে দুই দলের টেস্ট সিরিজ। নভেম্বরের শেষ দিকে আবারও বাংলাদেশে আসবে কিউইরা। বিসিবি প্রস্তাবিত সূচি অনুযায়ী ২১ নভেম্বর ঢাকায় পা রাখার কথা সফরকারীদের। এরপর একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে দলটি। ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর হবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের প্রথম টেস্ট।
প্রথম দুই সেটই গড়িয়েছে টাইব্রেকারে। প্রথমটি নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৫ মিনিটে। দ্বিতীয়টিও টাইব্রেকারে। সেটির নিষ্পত্তি ঘণ্টার ওপরে। দুটোতেই জয় নোভাক জকোভিচের। তারপরেরটিও জিতে যান এই সার্বিয়ান। ১৪তম ফ্রেঞ্চ ওপেনের খেলায় স্পেনের আলেজান্দ্রো ফোকিনার সঙ্গে ৩-০ সেটে জয়লাভ করেন তিনি। যে জয়ে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছেন তিনি।
৩৬ বছর বয়সী এই নাম্বার ওয়ান টেনিস তারকা প্রথম সেটে কিছুটা ছন্দহীন ছিলেন। তবে চ্যাম্পিয়নদের ঘুরে দাঁড়াতে তো সময় বেশি লাগে না। জকোভিচও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তারপর ফোকিনাকে কোনো সেট জিততে না দিয়েই ম্যাচ শেষ করেন তিনি।
প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী চলা এই ম্যাচটিতে এক পেশে জয় হলেও প্রতিটি সেটেই উত্তেজনার পারদ ছড়িয়েছেন দুজন। সমর্থকেরাও বারবার হয়েছেন রোমাঞ্চিত। তবে শেষ পর্যন্ত নোভাক জকোভিচের সমর্থকেরাই হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আগামী সোমবার জকোভিচ শেষ ষোলোর ম্যাচ খেলতে নামবেন। সেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে কার্লোস আলকারাজকে পেতে পারেন তিনি।
স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট কো-স্পোর্টস যতটা না তাদের কর্মগুণে সমাদৃত, তার চেয়ে বেশি আলোচিত নানা নেতিবাচক কারণে। একটা সময় কে-স্পোর্টস ও এর প্রধান নির্বাহী ফাহাদ করিমে আস্থা রেখেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বড় বড় সব চুক্তিও সে সময় হয়েছিল দুই পক্ষের। তবে চুক্তির নানা শর্ত ভঙ্গ করে বিসিবির গুড বুক থেকে কাটা গেছে তাদের নাম।
বিসিবিতে সুবিধা করে উঠতে না পেরে গেল কয়েক বছর ফাহাদ করিম সওয়ার হয়েছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনে। বাফুফের এই আলোচিত সভাপতি একটা সময় বড় গলায় ভারতীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ, বিসিবির বিপিএলের কঠোর সমালোচনা করে বলেছিলেন, ফুটবলকে জনপ্রিয় করতে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের মতো সস্তা আয়োজনের প্রয়োজন নেই।
অথচ ফাহাদের পাল্লায় পড়ে সেই সালাউদ্দিনই নিজের বলা কথা ভুলে গেছেন। তৎপর হয়েছেন নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আয়োজনে। যদিও এমন আয়োজনের জন্য কোনো রকম পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না কে-স্পোর্টসের। যার জ্বলন্ত উদাহরণ ফ্র্যাঞ্চাইজি চূড়ান্ত না করেই আসর মাঠে গড়ানোর তারিখ ঘোষণা করা এবং অনুমিতভাবেই ঘোষিত তারিখে খেলা শুরু করতে না পারা।
কে-স্পোর্টসের সিইও ফাহাদ করিমের সঙ্গে সালাউদ্দিনের দহরম মহরম বেশ কয়েক বছর আগে থেকে। সেটা কখনো কখনো ফুটবলের স্বার্থ ছাড়িয়ে চলে যায় ব্যক্তিস্বার্থে। সাফল্যপ্রসবা নারী ফুটবলে বেশি আগ্রহ সালাউদ্দিনের। ক্রীড়া-বেনিয়া ফাহাদও সালাউদ্দিনের নারী ফুটবলের প্রতি বাড়তি অনুরাগটা ধরে ফেলে ২০১৯ সালে বাফুফেতে প্রবেশ করেন ঢাকায় অনূর্ধ্ব-১৯ আন্তর্জাতিক নারী টুর্নামেন্ট আয়োজনের মধ্য দিয়ে।
এর পরের বছর টিভি সম্প্রচারস্বত্ব পাইয়ে দিতে বাফুফের সঙ্গে তিন বছরের বড় অঙ্কের চুক্তি করে কে-স্পোর্টস। চুক্তি অনুযায়ী বাফুফেকে ফি-বছর আড়াই কোটি টাকা করে দেওয়ার কথা কে-স্পোর্টসের। সেই অর্থ বুঝে না পেয়ে সম্প্রতি ফাহাদ করিমকে চিঠি দেয় বাফুফে।
বিষয়টি সমাধান না হলে নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ নিয়ে চুক্তি না করার ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছিল চিঠিতে। তবে এই চিঠি দেওয়া যে শুধুই আনুষ্ঠানিকতার, তা সালাউদ্দিন-ফাহাদ করিমের হাবভাবেই বোঝা যায়। চুক্তির বিষয়টাকে এক পাশে রেখে আসলে তাদের বড় দুর্ভাবনা নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ।
পাঁচ তারকা হোটেলে সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানীদের নিয়ে দেশ-বিদেশ থেকে নামীদামি নায়ক-নায়িকা-মডেল ভাড়া করে এনে ফাহাদ করিম এর মধ্যেই আসরের লোগো, ট্রফি ও বল উন্মোচন করেছেন একাধিক অনুষ্ঠানে। ১ মে হওয়ার কথা ছিল আসরের প্লেয়ার্স ড্রাফটস। সেদিন ড্রাফটসের জায়গায় হয়েছে ট্রফি ও বল উন্মোচন অনুষ্ঠান। কে-স্পোর্টস যে ফ্র্যাঞ্চাইজিও চূড়ান্ত করতে পারেনি, প্লেয়ার ড্রাফটসটা হবেই বা কাদের নিয়ে?
এই অবস্থা এখনো চলমান। ১৫ মে শুরু হওয়ার কথা ছিল খেলা। সেই তারিখও ভেস্তে গেছে। আসলে অনিয়ম-জালিয়াতির আখড়ায় রূপ নেওয়া বাফুফের প্রতি আস্থা হারিয়েছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। যেচে কেউই চায় না ফাহাদ-সালাউদ্দিনের দেওয়া টোপ গিলতে। এমনকি ফুটবলের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক আছে এমন কোম্পানিগুলোও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
শুরুতে এ আসরটি ছয় দল নিয়ে আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিল কে-স্পোর্টস। পরে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সাড়া না পেয়ে দলসংখ্যা নামিয়ে আনা হয় চারে। জানা গেছে, বাফুফেকে পৃষ্ঠপোষকতা করা বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে বারবার গিয়েও খেলতে রাজি করাতে পারেননি ফাহাদ। অথচ তারপরও এই ফাহাদে সালাউদ্দিনের আস্থা টলেনি।
সম্প্রতি সালাউদ্দিন, বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী ও বাফুফের নারী কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তারের সঙ্গে দীর্ঘ সভা করেন। বৈঠক শেষে বাফুফে ভবন ছাড়ার সময় ফাহাদ করিম যা বলেছিলেন, তাতে পরিষ্কার নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের কোনো অগ্রগতিই হয়নি।
দেশ রূপান্তরকে ফাহাদ বলেছেন, ‘দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজি চূড়ান্ত হয়েছে। বাকিগুলো শিগগিরই হয়ে যাবে। বড় কোনো অগ্রগতি হলে আমি সবাইকে ডেকে জানাব।’
গত সোমবার বাফুফের জরুরি সভা শেষে কাজী সালাউদ্দিন নতুন করে লিগ শুরুর তারিখ ঘোষণা করেন। পরে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘ওমেন্স ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ ১০ জুন থেকে শুরু হবে। ১২ দিনে হবে ১৩ টি ম্যাচ। এটা এখন বলা দরকার যে, ফিফা উইন্ডোতে লিগ করছি। যেন বিদেশি খেলোয়াড় আসতে পারে। না হলে আসতে পারবে না।’
নতুন তারিখ ঘোষণা করেছেন ঠিকই। তবে আদৌ নির্ধারিত তারিখে খেলা হবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট শঙ্কা।
গত বছর নেপালে সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকেই মাঠে ফেরার দিন গুনছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা। সাফ জয়ের পর সালাউদ্দিন শুনিয়েছিলেন গালভরা বুলি। সাবিনাদের নিয়মিত খেলার ব্যবস্থা করবেন। অথচ লিগের কিছু ম্যাচ ছাড়া আর খেলারই সুযোগ আসেনি। অথচ অর্থ সংকটের খোঁড়া অজুহাত দেখিয়ে বাফুফে মেয়েদের মিয়ানমারে পাঠায়নি অলিম্পিক বাছাই খেলতে।
ফিফা উইন্ডোতেও বাফুফে পারেনি দলের জন্য প্রতিপক্ষ জোগাতে। পাঁচ তারকা হোটেলের চোখ ঝলসানো মায়াবী আলো আর সুরের মূর্ছনায় ফাহাদ করিম আয়োজন করেছিলেন লোগো, ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠান। সেখানে গিয়ে সাবিনারাও দেখেছিলেন বাড়তি কিছু উপার্জনের রঙিন স্বপ্ন। তবে বাফুফের অদূরদর্শী সভাপতি অপ্রস্তুত এক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আয়োজনের দায়িত্ব তুলে দিয়ে যেন সাবিনাদের স্বপ্নটাকেই আরেকবার গলাটিপে ধরতে চাইছেন।
জার্মানির ফুটবল দলে বায়ার্ন মিউনিখের আধিপত্যটা পুরনো। পেপ গার্দিওলা ক্লাবটির কোচ হওয়ার পর ২০১৪ সালে দেশটি বিশ্বকাপ জিতে। সেসময় দলে ভারি ছিল মিউনিখের এই ক্লাবটি। এই ক্লাবের কোচ ছিলেন হ্যান্সি ফ্লিক। তার অধীনেই সবশেষ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতেছে দলটি।
মিউনিখ মিশন শেষে এখন জার্মান জাতীয় ফুটবল দলকে সামলাচ্ছেন ফ্লিক। প্রাক্তন ক্লাবের প্রতি বাড়তি দরদ কাজ করাটা স্বাভাবিক। ক্লাবসহ সমর্থকদেরও প্রত্যাশা তাই থাকে। তবে পেশাদারিত্ব অনেক নিষ্ঠুর যে! আবেগকে নয়, বরং পারফরম্যান্সকে মূল্যায়ন করতে হয়। সেটাই প্রকাশ পেয়েছে ঘোষিত স্কোয়াডে।
আগামী ১২ জুন (সোমবার) প্রীতি ম্যাচ ইউক্রেনের সঙ্গে মুখোমুখি হচ্ছে জার্মানি। সেই ম্যাচের আগে ২৬ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন হ্যান্সি ফ্লিক। সেখানে ফ্লিকের প্রাক্তন ক্লাব বায়ার্ন থেকে আছেন মাত্র ৪ জন খেলোয়াড়। ঘোষিত এই দলে নেই থমাস মুলার ও সার্জিও গিনাব্রের নাম। তাছাড়া চোটের কারণে দলে নেই নিয়মিত অধিনায়ক ম্যানুয়েল নয়্যার।
বায়ার্ন থেকে নেওয়া ৪ ফুটবলারও অবশ্য নিয়মিত মুখ। তারা হলেন মিডফিল্ডার জশুয়া কিমিচ, লিওন গোরেটজকা, ফরোয়র্ড লেরয় সানে ও জামাল মুসিয়ালা।
ঘোষিত সেই দলে আছেন-
গোলরক্ষক : বার্ন্ড লেনো, মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেন, কেভিন ট্র্যাপ। ডিফেন্স : ম্যাথিয়াস জিন্টার, রবিন গোসেনস, বেঞ্জামিন হেনরিকস, থিলো কেহরের, লুকাস ক্লোস্টারম্যান, ডেভিড রাউম, আন্তোনিও রুডিগার, নিকো শ্লোটারবেক, ম্যালিক থিয়াও, মারিয়াস উলফ। মিডফিল্ড/আক্রমণ : জুলিয়ান ব্র্যান্ডট, এমরে ক্যান, নিকলাস ফুলক্রুগ, লিওন গোরেটজকা, ইকাই গুনদোয়ান, কাই হেভার্টেজ, জোনাস হফম্যান, জোশুয়া কিমিচ, জামাল মুসিয়ালা, লেরয় সানে, কেভিন শেড, টিমো ওয়ার্নার, ফ্লোরিয়ান উইর্টজ।
ইউক্রেন মিশন শেষে চলতি মাসে আরও দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে জার্মানি। বাকি আগামী ১৭ জুন পোল্যান্ডের বিপক্ষে এবং ২১ জুন কলোম্বিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে জার্মানি।
টানা চার দিন ধরে বাড়ছে তাপমাত্রা। গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের উৎপাদন সে তুলনায় না বাড়ায় লোডশেডিং ক্রমে বাড়ছে। এ অবস্থার মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা কয়লার অভাবে এক-দুই দিনের মধ্যে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমনটা হলে লোডশেডিং চরমে পৌঁছানোর আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
আগে রাজধানী ঢাকায় লোডশেডিং তেমন না হলেও এখন বিভিন্ন এলাকায় চার-পাঁচবার করে পাঁচ-সাত ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। ঢাকার বাইরের শহরে এবং গ্রামাঞ্চলে ভয়াবহ লোডশেডিং হচ্ছে। কোথাও কোথাও ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে।
তীব্র গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় শিশু ও বয়স্কদের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বিদ্যুতের অভাবে কারখানার উৎপাদন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এবং অফিস-আদালতে কাজের ব্যাঘাত হচ্ছে। লোডশেডিংয়ে ব্যাটারিচালিত ভ্যানের চালক ও অটোচালকরা ঠিকমতো চার্জ দিতে না পারায় তাদের আয় কমে গেছে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায়ও মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। মোটকথা জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গরম থেকে আপাতত নিস্তার নেই। ৮ বা ৯ জুন বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ ৭ জুন পর্যন্ত দেশে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার শঙ্কা রয়েছে। আগামী এক মাসের আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হতে পারে।
বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে বড় ভূমিকা রাখছিল পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। কিন্তু কয়লার অভাবে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রটির দুটি ইউনিটের একটি গত ২৫ মে বন্ধ করা হয়। ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার অন্য ইউনিটটি থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলেও সেটিও এক-দুই দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কয়লা কেনার অর্থের অভাবে।
বিল বকেয়া থাকায় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে চীনা কোম্পানি সিএমসি। কয়লা আমদানি বাবদ বর্তমানে পায়রার ২৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার বকেয়া আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আপাতত ১০০ মিলিয়ন ডলার সংস্থান করা গেলেও কেন্দ্রটির জন্য নতুন করে কয়লা আমদানি করা যাবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ৮৮ মিলিয়ন ডলার পাওয়া গেছে। বাকি অর্থ এ সপ্তাহে পাওয়ার কথা রয়েছে। এরপর কয়লা আমদানির জন্য এলসি ওপেন করা হবে। এলসি খোলার পর কয়লা আসতে অন্তত ২৫ দিন সময় লাগবে। কয়লা এলেও সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ কেন্দ্র পুরোদমে চালু করা যাবে না। দ্রুত অর্থ সংস্থান হলেও অন্তত এক মাস এটি বন্ধ থাকবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কর্মকর্তারা বলছেন, সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও জ্বালানির অভাবে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। ডলার সংকটে জ্বালানি তেল, এলএনজি ও কয়লা আমদানি কমায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে চাইলেও উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। সংকট সামলাতে এখন আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতির অপেক্ষা করছে কর্তৃপক্ষ। তারা আশা করছে, এ সপ্তাহ শেষে গরম অনেকটা কমবে। গরম কমলে বিদ্যুতের চাহিদাও কমবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ মনে করেন, বৈশ্বিক কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা পরিকল্পনা মাফিক চললেও প্রাথমিক জ্বালানির সরবরাহের ধারাবাহিকতা চ্যালেঞ্জে পড়েছে। কভিড ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব বিশ্বের সব দেশের মতো বাংলাদেশেও পড়েছে। তবে দেশে কয়লা নিয়ে যে সংকট চলছে সেটা থাকবে না। আমরা চেষ্টা করছি; সে সঙ্গে আশা করছি দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হবে। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের যে বকেয়া রয়েছে তা তারা পাবে। তবে একটু ধৈর্য ধরতে হবে।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘আজকের এ পরিস্থিতির জন্য বৈশ্বিক পরিস্থিতির চেয়ে সরকার বেশি দায়ী। ভুলনীতির কারণে প্রাথমিক জ্বালানির সংস্থান না করে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বাড়ছে। ফলে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে দফায় দফায়। অতিরিক্ত দাম দিয়েও মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। সামনে লোডশেডিং আরও বাড়বে।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম এখন অনেক কম। তারপরও জ্বালানি নিয়ে আমাদের দেশে কেন এ দুরবস্থা তা বোধগম্য নয়।’
পিডিবি সূত্রমতে, বর্তমানে চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুতের ঘাটতি দেড় থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাস্তবে বিদ্যুতের ঘাটতি প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট।
এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৩ হাজার ৩৭০ মেগাওয়াট। জ্বালানির অভাবে গড়ে প্রতিদিন ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটের সক্ষমতা ব্যবহার করা যায় না। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আরও প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াটের উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়। মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৪৭ শতাংশ গ্যাসভিত্তিক। পিডিবির হিসাবে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ৩৯ মেগাওয়াট। গড়ে উৎপাদন করা হচ্ছে ৬ হাজার ২২১ মেগাওয়াট। ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। কিন্তু উৎপাদন করা হচ্ছে দৈনিক ৩ হাজার ৮০৬ মেগাওয়াট। কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ৩ হাজার ৪৪০ মেগাওয়াট। উৎপাদিত হচ্ছে ২ হাজার ২২৬ মেগাওয়াট।
প্রাথমিক জ্বালানিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া না হলে বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান হবে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক সদস্য মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী।
বিদ্যুৎ উৎপাদন বাবদ বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ১৮ হাজার কোটি টাকার বিল বকেয়া হয়ে আছে। সরকার এ বকেয়া কমিয়ে না আনলে কয়েকটি কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ইতিমধ্যে কয়েকটিতে উৎপাদন কমেছে।
গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি এবং লোডশেডিংয়ের কারণে অধিকাংশ শিল্পে ৩০-৪০ শতাংশ উৎপাদন কমে গেছে বলে জানিয়েছেন শিল্পমালিকরা। ডিজেলচালিত জেনারেটর দিয়ে অনেক কারখানায় উৎপাদন ঠিক রাখতে গিয়ে খরচ বাড়ছে। তারা বলছেন, অনেক সম্ভাবনা থাকলেও কারখানার চাকা ঠিক রাখতে না পারায় ব্যবসা গুটিয়েছেন বা উৎপাদনের পরিমাণ কমাচ্ছেন অনেক উদ্যোক্তা।
ডলার সংকটে পেট্রোবাংলা এলএনজি আমদানির বিল, এলএনজি টার্মিনালের চার্জ এবং বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানির (আইওসি) বিল দিতে পারছে না। সময়মতো বিল দিতে না পারায় জরিমানা গুনতে হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটিকে। পেট্রোবাংলার মোট বকেয়া প্রায় ২৫ কোটি ডলার।
একই কারণে আমদানিকৃত জ্বালানির মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না বিপিসি। আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে তেলবাহী কার্গো না পাঠানোর হুমকি দিয়েছে। গত ১১ মে পর্যন্ত বিপিসির কাছে সরবরাহকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনা হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি ডলার।
বিপিসি জানিয়েছে, বকেয়া পরিশোধ না করায় ৩০ হাজার টনের একটি ডিজেল কার্গো বাতিল করেছে ভিটল সিঙ্গাপুর। আন্তর্জাতিক তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, এ মাসে তারা ১৫০ হাজার টন ডিজেল, ৫০ হাজার টন ফার্নেস অয়েল সরবরাহ করবে না। বিপিসি জ্বালানি বিভাগকে জানিয়েছে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রাখা কঠিন হবে। জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।