
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের বলেছেন, ‘সহিংসতার মাধ্যমে জোরজবরদস্তির একটি নির্বাচন হবে, সরকারি দল থেকে এমন মেসেজ আমরা পাচ্ছি। এটা দেশ ও জাতির জন্য দুঃখজনক। ‘চলমান সহিংস রাজনীতি আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য অশনিসংকেত।’
গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি পিরোজপুর মঠবাড়িয়া উপজেলার তুষখালী ইউনিয়নে সন্ত্রাসী হামলায় আহত ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলামকে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি বিশ্বাস করি। কোনো সহিংসতাকে বিশ্বাস করি না। কথা বলার, সভা-সমাবেশের, বিক্ষোভ প্রদর্শনের স্বাধীনতা দিতে হবে। সভা সমাবেশ ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের অধিকার থাকতে হবে। স্বাভাবিক রাজনীতি বাধাগ্রস্ত হলে সহিংস রাজনীতি আসে, যা দেশের জন্য অমঙ্গল বয়ে আনবে।’
তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গণতন্ত্র যেন এদেশে স্থান লাভ করতে পারে সেজন্য আমরা সব জায়গায় প্রার্থী দিচ্ছি। আর এসব করতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হচ্ছি। কিছুদিন আগে গাজীপুরে মিটিং করতে গিয়েছিলাম সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় লোক সভা করতে দেয়নি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম। সেখানেও যদি বাধাগ্রস্ত হই, তাহলে দেশে স্বাভাবিক রাজনীতি কীভাবে চলবে। এভাবে সাধারণ রাজনীতিকে যদি পথরোধ করে দেয়, তাহলে দেশ বড় ধরনের সহিংসতার দিকে চলে যাবে বলে আশঙ্কা করছি। এটা কারও কাম্য নয়। এটি আগামী নির্বাচনের জন্য অশনিসংকেত।’
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয়, রাজনীতি করতে গিয়ে হামলা মামলার শিকার হতে হচ্ছে। শফিকুল ইসলাম মামলার হাজিরা দিতে কোর্টে যাচ্ছিলেন। তখনই তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়েছে।’
হাসপাতালে আসা স্বজনরা জানান, গত বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে মোটরসাইকেলে করে মঠবাড়িয়া থেকে পিরোজপুরে যাওয়ার পথে মাঝেরপোল ফরাজী বাড়ির সামনে সন্ত্রাসীরা তার ওপর হামলা চালায়। তার বাম পায়ের গোড়ালি বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। একজন আদর্শ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাঝে যেমনি জ্ঞান বিতরণ করেন, তেমনি ন্যায়নীতি ও আদর্শেরও দীক্ষা দেন। জাতি গঠনে তিনি সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারেন। এজন্য শিক্ষককে নীতিনৈতিকতার দিক থেকে স্বচ্ছতার পরিচয় দিতে হয়। কিন্তু শিক্ষকের নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হলে তখন?
চলতি বছরের জুন মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) এক প্রতিবেদনে দেশে ১ হাজার ১০৮ জন এমন শিক্ষক পাওয়া গেছে যারা জাল সনদে চাকরি করছেন বছরে পর বছর ধরে। গত ১০ বছরে ২৪ হাজার ১২৩টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে এসব জাল সনদধারী শিক্ষকদের শনাক্ত করে ডিআইএ। ভুয়া সনদ দিয়ে তারা চাকরি করে যাচ্ছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। আর নিয়মিতভাবেই সরকারের কাছ থেকে বেতনও তুলে নিচ্ছেন। অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে চাকরি করে যাওয়া এসব শিক্ষকের এমপিও বাতিল এবং সরকারের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ ফেরত দেওয়ার সুপারিশও করেছে ডিআইএ। কিন্তু জাল সনদ ধরা পড়ার পরও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে গড়িমসির অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তাতেও রয়েছে দীর্ঘসূত্রতা। এতে জাল সনদ ধরা পড়লেও কতজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এর হিসাব পাওয়া যায়নি।
কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার পাল্টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (সমাজবিজ্ঞান) হাজেরা খাতুন। তিনি ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি যোগদান করেন এবং ২০১২ সালের ১ নভেম্বর এমপিওভুক্ত হয়ে নিয়মিতভাবে সরকারি বেতন-ভাতা পেয়ে আসছেন। সম্প্রতি ওই স্কুল পরিদর্শনে যান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) কর্মকর্তারা। পরিদর্শনের সময় তিনি শিক্ষক নিবন্ধনের যে সনদটি দেখিয়েছেন তা বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে যাচাই করেন ডিআইএ কর্মকর্তারা। যাচাইয়ে দেখা যায়, এই সনদ ইস্যু করেনি এনটিআরসিএ, সনদটি মূলত জাল। এ বছরের ২২ এপ্রিল ডিআইএ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি অবৈধভাবে নেওয়া ১২ লাখ ৩২ হাজার টাকা ফেরতের সুপারিশ করা হয়েছে।
পাল্টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কম্পিউটার শিক্ষক কল্পনা খাতুনের কম্পিউটার সনদও জাল পাওয়া গেছে। কারণ ওই শিক্ষক ‘ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি, বগুড়া’ থেকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত নয়। ফলে তিনি যে সনদ নিয়েছেন তা বৈধ নয়। সরকারি বেতন-ভাতা বাবদ ওই শিক্ষকের নেওয়া ১১ লাখ ২৩ হাজার ৮৫০ টাকা ফেরত দেওয়ার সুপারিশ করেছে ডিআইএ।
কুষ্টিয়ার একই উপজেলার নাতুরিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক মো.ইদ্রিস আলী এমপিওভুক্ত হন ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি। সম্প্রতি ডিআইএ ওই প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে গেলে তিনি জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমি (নেকটার), বগুড়ার সনদ দেখান। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানে সনদ যাচাই করে ডিআইএ জানতে পারে তা জাল। ওই শিক্ষককেও ১৫ লাখ ১০ হাজার ৯২ টাকা ফেরত দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
সম্প্রতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, জাল সনদ শনাক্ত, আদায়যোগ্য টাকার পরিমাণ, বেহাত হওয়া জমির পরিমাণসহ নানা তথ্যসংবলিত গত ১০ অর্থবছরের এক প্রতিবেদন ডিআইএ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে গত ১০ বছরে ১ হাজার ১০৮ জন জাল সনদধারী শিক্ষক চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানে ৮২৪ জন এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানে ২৮৪ জন জাল সনদধারী শিক্ষক পাওয়া গেছে। ভুয়া সনদ দিয়ে বছরের পর বছর দিব্যি চাকরি করে যাচ্ছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অনেকেই। নিয়মিতভাবেই তারা সরকারের কাছ থেকে বেতনও তুলে নিয়েছেন।
ডিআইএ’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে ২৪ হাজার ১২৩টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হয়েছে। এরমধ্যে যাচাইবাছাই শেষে ১৬ হাজার ৮৫২টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ৭৯৯ জনের শিক্ষক নিবন্ধনের সনদ জাল পাওয়া গেছে। এরপর কম্পিউটার সনদ জাল পাওয়া গেছে ২৪৯ জনের। আর অন্যান্য সনদ জাল পাওয়া গেছে ৬০ জনের। এসব শিক্ষক জাল সনদ দিয়ে চাকরি করে সরকারি কোষাগার থেকে এখন পর্যন্ত ৪৯ কোটি ৮২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৬০ টাকা অবৈধভাবে নিয়েছেন, যা ফেরতের সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৭ জন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১২৩ জন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১১৯ জন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৪১ জন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১১২ জন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২০৩ জন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১১৮ জন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭৭ জন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৪১ জন এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬৭ জন জাল সনদধারী চিহ্নিত করেছে ডিআইএ।
জানতে চাইলে ডিআইএ’র পরিচালক অধ্যাপক অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চিহ্নিত হওয়া জাল সনদধারী শিক্ষকদের কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, কারওটা আবার ঝুলে আছে। আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানের জবাব নেওয়া হয়। এরপর নানা মাধ্যম শেষে মন্ত্রণালয়ের মিটিংয়ে ওইসব শিক্ষকের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা প্রতিষ্ঠান পর্যায় বা মাউশি অধিদপ্তরে ঝুলে থাকে।’
অধ্যাপক অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর আরও বলেন, ‘আমরা মূলত নিবন্ধন, কম্পিউটার ও গ্রন্থাগার সনদেই বেশি জোর দেই। আরও সনদ যাচাই করলে চিত্রটা অন্যরকম হতো। সম্প্রতি আমরা প্রতিষ্ঠানের জমির পরিমাণ, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, ফলসহ নানা বিষয় পরিদর্শনে যুক্ত করেছি। এতে আমাদের পরিদর্শন করা প্রতিষ্ঠানের যেকোনো তথ্য দরকার হলেই তা সহজেই হাতে পাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।’
অনিয়ম পাওয়া গেছে রাজধানীর নামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও। এখানেও রয়েছে জাল সনদধারী শিক্ষক। আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিলের মূল ক্যাম্পাসের দিবা শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আ. ছালাম খান জাল সনদ দিয়েই দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করছেন। তিনি ১৯৯৪ সালে এই স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ২০১২ সালে হন সহকারী প্রধান শিক্ষক। তার সহকারী প্রধান শিক্ষক হওয়ার অন্যতম যোগ্যতা বিএড সনদটিই জাল বলে প্রমাণিত হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের তদন্তে। এরপর তার এমপিও স্থগিত করেছিল মাউশি অধিদপ্তর। কিন্তু ছালাম খান উচ্চ আদালতে রিট করলে মাউশির আদেশে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। মামলাটি এখনো চলমান রয়েছে।
জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটও জাল করেছেন কিছু শিক্ষক। শিক্ষক নিবন্ধন ও কম্পিউটার সনদের পাশাপাশি বিএড, এমএডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ডিপ্লোমা ও গ্রন্থাগার সনদও জাল পাওয়া যাচ্ছে।
শরীয়তপুরের সখীপুর ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. সালাউদ্দিন ১২ বছর আগে এমপিওভুক্তি হলেও সম্প্রতি তার জাল সনদ ধরা পড়েছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ পাসের সনদ জাল করেছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ জাল করেছেন নাটোরের লালপুরের মাজার শরীফ টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস কলেজের শিক্ষক মো. আবুল কালাম আজাদ।
জাল সনদ ধরা পড়ার পরও ঠিকমতো ব্যবস্থা না নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। আবার যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তাতেও রয়েছে নানা দীর্ঘসূত্রতা। ফলে জাল সনদ ধরা পড়লেও কতজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এর হিসাব পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির আগে তাদের সনদ যথাযথভাবে যাচাই করার কথা। কিন্তু জাল সনদ জানার পরও ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে তা ছেড়ে দিচ্ছে আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো। তবে সম্প্রতি এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষকরা নিয়োগ পাওয়ায় জাল সনদ নিয়ে চাকরিতে ঢোকার সুযোগ অনেকাংশেই কমে গেছে। তবে ২০১৫ সালের আগে যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের মধ্যে হাজার হাজার শিক্ষক এখনো জাল সনদ নিয়েই দিব্যি চাকরি করে যাচ্ছেন।
ডিআইএ’র যুগ্ম পরিচালক বিপুল চন্দ্র সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের সময় অথবা অভিযোগ এলে শিক্ষকদের সনদ যাচাই করি। যেই সনদ নিয়ে আমাদের সন্দেহ জাগে সেই সনদ ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষকে আমরা অফিশিয়ালি চিঠি দিই। তারাই বলে দেয়, ওই সনদ সঠিক কীনা? এরপর জাল সনদ ধরা পড়লে আমরা প্রতিবেদন আকারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাই। মন্ত্রণালয় মাউশি অধিদপ্তরের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’
প্রথমে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া, তারপর গণভোটের আয়োজন, সবশেষে ঘোষণা দিয়ে রুশ ফেডারেশনে অন্তর্ভুক্ত করা; এভাবেই ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রাশিয়া। গত শুক্রবার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। সেদিন তিনি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক এবং দক্ষিণাঞ্চলের জেপোরিজিয়া ও খেরসনকে রাশিয়ার ভূখণ্ড বলে ঘোষণা দেন। তবে পুতিনের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন পশ্চিমা দেশগুলোর নেতারা। পাশাপাশি রাশিয়ার মিত্র হিসেবে পরিচিত কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। সবমিলিয়ে বিশ্বকে উদ্বেগে ফেলেছে পুতিনের নতুন পদক্ষেপ ও তার বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের পাল্টা ব্যবস্থার ঘোষণা।
তবে গতকাল শনিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইউক্রেনের চারটি এলাকা রাশিয়ার অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে একটি খসড়া নিন্দা প্রস্তাব রাখে যুক্তরাষ্ট্র। তবে সে প্রস্তাব বাতিল হয়ে গেছে। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী ও অস্থায়ী ১৫ সদস্যের মধ্যে দশটি দেশ এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। তবে চীন, গ্যাবন, ভারত এবং ব্রাজিল ভোটদানে বিরত থাকে। আর রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট দিয়ে তাতে ভোটোও দিয়েছে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড গত শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করেন। এতে সদস্য দেশগুলোকে ইউক্রেনের কোনো পরিবর্তিত অবস্থা স্বীকৃতি না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে এ প্রস্তাবে রাশিয়াকে ইউক্রেন থেকে সেনা প্রত্যাহারে বাধ্য করার কথা বলা হয়।
এ ছাড়া ইউক্রেন আর তার পশ্চিমা মিত্ররা ওই ভোটকে ‘অবৈধ ও জোরজবরদস্তিমূলক’ অভিহিত করছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডা এরই মধ্যে মস্কোর ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার আবেদন জমা দিয়েছে।
এদিকে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে রাশিয়াকে শাসন করা পুতিন ‘বৃহত্তর ঐতিহাসিক রাশিয়ার’ জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে রাশিয়াকে ধ্বংসের পরিকল্পনার অভিযোগ এনেছেন; ওয়াশিংটন এবং তার মিত্ররাই নর্ড স্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইনে ছিদ্র করেছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। এ ছাড়া নতুন যুক্ত অঞ্চলগুলো রক্ষায় পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবেন বলে প্রচ্ছন্ন হুমকি দেন পুতিন। তিনি ঘোষণা দিয়ে বলেন, এসব অঞ্চল সবসময় রাশিয়ার অংশ থাকবে। তার এই ভাষণের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন তার দেশ পুতিনের বেপরোয়া হুমকির পরোয়া করে না।
ইউরোপীয় ইউনিয়নও এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, ‘অবৈধ গণভোটের মাধ্যমে ইউক্রেনের স্বাধীনতার আরেক দফা লঙ্ঘনে রাশিয়ার কৌশলকে আমরা কখনোই স্বীকৃতি দেব না।’ রাশিয়ার এই পদক্ষেপকে ‘অবৈধ ভূমি দখল প্রক্রিয়া’ হিসেবে অভিহিত করেছেন ন্যাটো মহাসচিব ইয়েনস স্টোলটেনব্যার্গ। ব্রাসেলসে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জোরপূর্বক ইউরোপের কোনো এলাকা দখল করে নেওয়ার সবচেয়ে বড় চেষ্টা।’
এমন ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে জাপানও। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কুশিদা বলেন, ‘রাশিয়ার এমন পদক্ষেপ ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত। এমন পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং তা কখনোই মেনে নেওয়া হবে না।’
রাশিয়াসহ ৫৭টি দেশের জোট অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি কোঅপারেশন ইন ইউরোপের (ওএসসিই) কর্মকর্তারাও এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। সংস্থাটির চেয়ারম্যান-ইন-অফিস এবং পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রন্ত্রী ও অন্য কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, রাশিয়ার এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের ভয়ানক লঙ্ঘন। তা ছাড়া এটি জাতিসংঘ সনদ এবং ওএসসিইর নীতিবিরোধী।
এদিকে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করার বিষয়ে রাশিয়ার ওপর আরও অবরোধ আরোপের পরিকল্পনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। নতুন অবরোধে কী কী বিষয় থাকবে তা নিয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে জোটের সদস্যরা। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার পণ্য আমদানি এবং সেনাবাহিনীর কাজে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ।
রাশিয়ার ওপর নতুর করে নিষেধাজ্ঞা আরোপে পিছিয়ে নেই যুক্তরাজ্যও। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন সেবা খাত যেমন তথ্যপ্রযুক্তি, স্থাপত্য ও প্রকৌশল খাতে নিজেদের অবস্থান হারাবে মস্কো। তা ছাড়া রাশিয়ার শিল্প ও প্রযুক্তি খাতে যুক্তরাজ্যের রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে জানানো হয়।
এদিকে রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেনের লিমান শহরে রুশ সেনাদের একটি বড় অংশ ঘিরে ফেলেছে ইউক্রেনের বাহিনী। সেই সঙ্গে শহরটির চারপাশের বসতিগুলো পুনরুদ্ধার করেছে তারা। ইউক্রেনীয় বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান সেরি চেরেভাতি এ দাবি করেছেন বলে বিবিসির খবরে বলা হয়।
ইউক্রেনের টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেরি চেরেভাতি বলেন, ‘আমাদের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, লিমান শহরে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার রুশ সেনা ছিল। কিন্তু ইউক্রেনের বাহিনীর অভিযানে অনেক রুশ সেনা হতাহত হওয়ায় এ সংখ্যা এখন কমে এসেছে।’
সেরি চেরেভাতি বলেন, রুশ সেনাদের সাফল্য অর্জনের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। সাক্ষাৎকারে লিমান শহরের গুরুত্ব নিয়েও কথা বলেন তিনি। শহরটি ইউক্রেনের সেনারা দখল করতে পারলে ক্রেমিনা ও সেভরোদোনেৎস্ক শহরে অগ্রসর হওয়া তাদের জন্য সহজ হবে। বর্তমানে শহর দুটিতে রুশ সেনাদের শক্ত ঘাঁটি আছে।
চলে গেলেন দৈনিক বাংলার সম্পাদক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত বর্ষীয়ান সাংবাদিক তোয়াব খান। গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। ১৯৩৪ সালের ২৪ এপ্রিল সাতক্ষীরা জেলার রসুলপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তোয়াব খান। সাংবাদিক হিসেবে সুদীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য কর্মজীবন তার।
দৈনিক বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি হারুন আল রশিদ জানান, বার্ধক্যজনিত জটিলতায় তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ (গতকাল) দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বরেণ্য সাংবাদিক তোয়াব খানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখপ্রকাশ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘তোয়াব খানের মৃত্যু এক কিংবদন্তি সাংবাদিকের জীবনাবসান, যিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সাংবাদিকতায় নিয়োজিত থেকেছেন।’
ছাত্রজীবন থেকেই তোয়াব খান তৎকালীন বিভিন্ন পত্রিকায় সমকালীন ইস্যু নিয়ে লেখালেখি করতেন। ২০১৬ সালে একুশে পদক পাওয়া তোয়াব খানের সাংবাদিকতা জীবনের শুরু ১৯৫৩ সালে সাপ্তাহিক জনতার মাধ্যমে। ১৯৫৫ সালে যোগ দেন দৈনিক সংবাদে। ১৯৬১ সালে তিনি দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদক হন। এরপর ১৯৬৪ সালে যোগ দেন দৈনিক পাকিস্তানে। দেশ স্বাধীনের পর দৈনিক পাকিস্তান থেকে বদলে যাওয়া দৈনিক বাংলার প্রথম সম্পাদক ছিলেন তোয়াব খান। ১৯৭২ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি দৈনিক বাংলার সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেস সচিব ছিলেন। পরে রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ এবং প্রথম অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রেস সচিবের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।
প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ও প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন এই যশস্বী সাংবাদিক।
মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শব্দসৈনিকের ভূমিকা পালন করেন তোয়াব খান। সে সময় তার আকর্ষণীয় উপস্থাপনায় নিয়মিত প্রচারিত হয় ‘পিণ্ডির প্রলাপ’ নামের অনুষ্ঠান।
দৈনিক জনকণ্ঠের শুরু থেকে গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত পত্রিকাটির উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন তোয়াব খান। এরপর নতুন আঙ্গিক ও ব্যবস্থাপনায় প্রকাশিত দৈনিক বাংলার সম্পাদকের দায়িত্ব নেন তিনি।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাত পৌনে ১২টার দিকে ওই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
এদিকে ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার পর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। কুবি ছাত্রলীগের বিবদমান দুটি পক্ষ সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহী এবং সদ্য সাবেক সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজের অনুসারীরা গতকাল শনিবার ক্যাম্পাসে পাল্টাপাল্টি সশস্ত্র মহড়া দিয়েছে। এ সময় ফাঁকা গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল বিকেল ৩টার দিকে ছাত্রলীগের একটি অংশের নেতাকর্মীরা ৪০-৫০টি মোটরসাইকেল নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকে। তারা ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত মোটরসাইকেল শোডাউন করে। তাদের মধ্যে অনেকেই বহিরাগত ছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছাত্রলীগের এই অংশটির নেতাকর্মীরা শহীদ মিনার থেকে ফিরে এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে গিয়ে ফাঁকা গুলি ছোড়ার পাশাপাশি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। তারা হলটিতে অবস্থান করা ছাত্রলীগের অপর অংশের নেতাকর্মীদের বের হতে বলে। একইসঙ্গে কুবি ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি (২০১৭ সালে গঠিত কমিটির) ইলিয়াস হোসেন সবুজের বিরুদ্ধে এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক (২০১৫ সালে গঠিত কমিটির) রেজা-ই-এলাহীর পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। প্রায় ২০ মিনিট সেখানে অবস্থানের পর প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী ও অন্য শিক্ষকরা এসে অনুরোধ করলে চলে যায় রেজা-ই-এলাহীর অনুসারীরা। এরপর ইলিয়াসের অনুসারীরা তাদেরকে প্রতিহত করতে হল থেকে নামতে শুরু করে। এ সময় তাদের হাতে রামদা, হকিস্টিক ও লাঠিসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র দেখা যায়। প্রধান ফটক বন্ধ থাকার পরও কীভাবে বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে শোডাউন করে এমন প্রশ্ন তুলে তারা প্রক্টরের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে।
ক্যাম্পাসে মহড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কুবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহী বলেন, ‘কমিটি বিলুপ্ত হওয়ায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও লোটাস কামালকে (অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল) ধন্যবাদ জানিয়ে আনন্দ মিছিল দিয়েছি। কিন্তু ওরা (ইলিয়াসের অনুসারীরা) ঝামেলা করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার বিষয়টিকে ঘোলাটে করার জন্য তারা (ইলিয়াসের অনুসারীরা) বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কমিটি বিলুপ্ত করার পরও তারা বিষয়টিকে অস্বীকার করে যাচ্ছে। আর ক্যাম্পাসের যে কেউই আমার নামে স্লোগান দিতে পারে। সব জায়গায় আমার অনুসারী আছে।’
অন্যদিকে কুবি শাখা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭১ সালের কালরাত ছাড়া হলের ভেতরে ঢুকে গুলি করা, ককটেল মারা, পুলিশ এবং প্রক্টরের সামনে দিয়ে ক্যাম্পাস গেট অতিক্রম করে হলের (বঙ্গবন্ধু) দোতলায় উঠে যাওয়া, প্রক্টরের পাশেই ককটেল ফোটানো এটি বিরল ঘটনা হয়ে থাকবে। এখানে তিন-চারজন সাবেক ছাত্র এবং একজন রানিং ছাত্র, অটোচালক, বহিরাগত, বিভিন্ন মামলার আসামি ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কুবি প্রশাসনকে বলব ছেলেদের দুপুরে ঘুমানোর যদি নিরাপত্তা না থাকে তাহলে এ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া উচিত। প্রশাসনের নীরব ভূমিকার কারণে তাদের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে। অস্ত্রসহ প্রশাসনের লোকের সামনে কীভাবে ক্যাম্পাসে ঢোকে। যারা এ ঘটনায় জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে এজাহারভুক্ত মামলা করতে হবে। তা না হলে সব শিক্ষার্থীকে সাথে নিয়ে আমরা কঠিন আন্দোলনে যাব, দরকার হলে আমরণ অনশন করব।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা প্রভোস্টদেরকে নিয়ে বসেছি এবং উপাচার্যের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। আমরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করব।’
কমিটি বিলুপ্ত নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য : বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ফেইসবুক পেইজে শুক্রবার রাত ১১টা ৪৯ মিনিটে কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার মাধ্যমে কুবি ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার কথা জানানো হয়। কিন্তু বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশের আধাঘণ্টার মধ্যে ছাত্রলীগের ফেইসবুক পেইজ থেকে তা আবার সরিয়ে ফেলা হয়। পরে ওই দিন রাতেই কমিটি বিলুপ্তির সত্যতা নিশ্চিত হতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের একাধিক নেতার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ও দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি বলেন, কুবি ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অন্যদিকে কমিটি বিলুপ্তির বিষয়টি সত্য বলে দাবি করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।
আবার ছাত্রলীগের ফেইসবুক পেইজ থেকে পোস্টটি সরিয়ে ফেলা হলেও কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন নিজেদের ফেইসবুক ওয়ালে বিজ্ঞপ্তিটি রেখে দেন।
সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য মোবাইল ফোন থেকে পাঠানো বার্তায় বলেন, কুবি ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়নি। সম্মেলন আয়োজন করা হবে। তারিখ নির্ধারণ হলে জানানো হবে।
দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি জানান, কুবির কমিটির ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি এখনো। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি ভুল করে দেওয়া হয়েছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন তার ফেইসবুক স্ট্যাটাস দেখতে বলেন। পরে আবারও যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘প্রেস রিলিজ হয়েছে কমিটি বিলুপ্তের। এখন পর্যন্ত আমরা এটাই জানি। পরবর্তীতে কোনো আপডেট পাইনি যে ওই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়েছে কি না।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
২০১৭ সালের ২৮ মে লোকপ্রশাসন বিভাগের ইলিয়াস হোসেন সবুজকে সভাপতি এবং গণিত বিভাগের রেজাউল ইসলাম মাজেদকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছরের জন্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ১১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
র্যাবে সংস্কারের কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন না বাহিনীটির নবনিযুক্ত মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন। গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান নবনিযুক্ত র্যাব ডিজি। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বলব, র্যাব সংস্কারের কোনো প্রশ্ন দেখি না। আমরা এমন কোনো কাজ করছি না যে র্যাবকে সংস্কার করতে হবে। আমাদের আগে থেকে যে বিধিবিধান আছে, সেই বিধিবিধান অনুসারে আমরা কাজ করছি। আমরা আইনের বাইরে কোনো কাজ করি না।’ সম্প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, র্যাবের নিষেধাজ্ঞা এখনই বাতিল হচ্ছে না। র্যাবকে সংস্কারের কথা জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র্যাব মহাপরিচালক বলেন,
‘যুক্তরাষ্ট্র র্যাব কর্মকর্তাদের যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেটা সরকারিভাবে মোকাবিলা করা হচ্ছে। তারা যেসব বিষয় আমাদের কাছে চেয়েছে, এরইমধ্যে আমরা সেসব বিষয়ে জবাব দিয়েছি। জবাব দেওয়ার পর তারা আর পাল্টা প্রশ্ন করার সুযোগ পায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আপনি বললেন এতগুলো লোক আমার উধাও হয়েছে, বলতে তো হবে তারা কারা? আমরা তো বলেছি কে কোথায় কী অবস্থায় আছে। আমি মনে করি না এটি বড় কোনো চ্যালেঞ্জ সরকার কিংবা আমাদের জন্য। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করে যাব। এটি সত্য, যারা কাজ করে তাদের ভুলত্রুটি হতেই পারে। তবে দেখতে হবে, সেটি ব্যক্তি স্বার্থে করেছি নাকি দেশের সাধারণ মানুষের জন্য করেছি। তাই বলব, এসব বিষয় আমরা সরকারিভাবে মোকাবিলা করব।’
র্যাব সংস্কারের জন্য যুক্তরাষ্ট্র লিখিত কোনো প্রস্তাব দিয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাব প্রধান বলেন, ‘না, আমাদের কাছে কোনো লিখিত প্রস্তাব দেয়নি।’
ভারতীয় বংশোদ্ভূত বুকার পুরস্কারজয়ী ঔপন্যাসিক সালমান রুশদি তার ওপর সংঘটিত ছুরি হামলা নিয়ে প্রথমবারের মতো কথা বলেছেন। মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে আসা রুশদি এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেননি। কিন্তু বেঁচে ফেরায় তিনি নিজেকে ‘ভাগ্যবান’ মনে করছেন। পাশাপাশি প্রকাশ করেছেন কৃতজ্ঞতা।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনটি সম্প্রতি দ্য নিউইয়র্কারকে দেওয়া রুশদির একটি সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
২০২২ সালের আগস্টে নিউইয়র্কে একটি সাহিত্যবিষয়ক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন রুশদি। এ সময় মঞ্চে তার ওপর হামলা চালান ২৪ বছর বয়সী যুবক হাদি মাতার। নিউ জার্সির এই বাসিন্দা সেদিন রুশদিকে ১০ থেকে ১৫ বার ছুরিকাঘাত করেন। এতে নিজের রক্তের ওপর লুটিয়ে পড়েন রুশদি। এর জের ধরে প্রায় ছয় সপ্তাহ হাসপাতালে কাটাতে হয় এই লেখককে। পরে এক চোখের দৃষ্টিশক্তিও হারিয়ে ফেলেন তিনি।
দ্য নিউইয়র্কারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রুশদি বলেন, ‘আমি অনেকটাই ভাল হয়েছি। যা ঘটেছিল তা বিবেচনা করে দেখলে খুব একটা খারাপ নেই। বড় ক্ষতগুলো সেরে গেছে। তবে বুড়ো আঙুল, তর্জনী ও তালুর নিচের অর্ধেকটা অনুভব করছি। আমাকে প্রচুর হাতের থেরাপি নিতে হচ্ছে। যদিও আমাকে বলা হয়েছে শারীরিকভাবে আমি উন্নতি করছি’।
রুশদি জানান, আঙ্গুলের কিছু অংশে অনুভূতি না থাকায় লিখতে অসুবিধা হচ্ছে তার। তিনি বলেন, ‘আমি উঠে দাঁড়াতে পারছি। হাঁটতে পারছি চারপাশে। তবে আমার শরীরে এমন কিছু অংশ আছে যেগুলো নিয়মিত চেকআপ করতে হবে। এটা ছিল একটি মারাত্মক আক্রমণ’। তিনি জানান, ছুরি হামলার ঘটনায় মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছেন। এর ফলে তাকে নিরাপত্তার বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
১৯৮১ সালে ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ উপন্যাস দিয়ে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেন রুশদি। শুধু যুক্তরাজ্যেই বইটির ১০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল। ১৯৮৮ সালে চতুর্থ উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ লেখার পর থেকে প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে আসছিলেন এই লেখক। এই উপন্যাস লেখার জন্য রুশদিকে ৯ বছর আত্মগোপনে থাকতে হয়। উপন্যাসটিতে ইসলাম ধর্মের অবমাননা করা হয়েছে বলে মনে করেন মুসলিমরা।
উপন্যাসটি প্রকাশের এক বছর পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি রুশদির মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেন। সেই সঙ্গে তার মাথার দাম হিসেবে ঘোষণা করেন ৩ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার। রুশদি ২০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। মঙ্গলবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত হচ্ছে তার লেখা নতুন উপন্যাস ‘ভিক্টরি সিটি’। পুরুষতান্ত্রিক বিশ্বকে উপেক্ষা করে এই নারী কীভাবে একটি শহরকে পরিচালনা করেছেন, সে গল্পই উঠে এসেছে বইটিতে।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা খরচের হিসাব ধরে বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বেশি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে খরচের বেশিরভাগ অর্থ জোগাড়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৯ শতাংশ বাড়ানো হবে। আসছে জুনের প্রথমভাগে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী বাজেট হবে জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এখানে নেওয়া কোনো পদক্ষেপে যেন আওয়ামী লীগ সরকার সমালোচনার মুখে না পড়ে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের থাকছে বিশেষ নজর। এ ছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। তাই সংকট ও নির্বাচন দুটোই মাথায় রাখতে হচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে মোটাদাগে একটি রূপরেখা পাঠানো হয়েছে। নতুন পরিকল্পনার পাশাপাশি গত তিন মেয়াদে সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে আগামী বাজেট প্রস্তাবে তা মনে করিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি নীতিনির্ধারকদের উপস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো আগামী বাজেটের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে হিসাব ধরে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট প্রস্তাব প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে তা কয়েক দফা খতিয়ে দেখা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধন, যোগ-বিয়োগ করে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার আগেও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে।
ডলার সংকটে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পণ্যের দাম বাড়ছে। কাঁচামাল সংকটে বিপাকে শিল্প খাত। ব্যাংক খাতে অস্থিরতা। নতুন চাকরির সুসংবাদ নেই বললেই চলে। দফায় দফায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। খুব শিগগিরই এসব সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা। অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঋণদাতা সংস্থার কঠিন শর্তের বেড়াজালে আছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশি^ক অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবে তা আগামী বাজেটে স্পষ্ট করা হবে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও বলা হবে। তবে শত সংকটের মধ্যেও আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী যতটা সুবিধা দেওয়া সম্ভব তা দিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দিতে হিসাব কষা হচ্ছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটে আমদানি রপ্তানি প্রায় বন্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকটকাল চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে আমাদের দাবি অনুযায়ী নগদ সহায়তা দিতে হবে। রাজস্ব ছাড় দিতে হবে। কর অবকাশ ও কর অব্যাহতি বাড়াতে দিতে হবে।’
ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সংস্কারের শর্ত মানার অঙ্গীকার করে সরকার ঋণ পেয়েছে। শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে ঋণের যেকোনো কিস্তি আটকে দিতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যায়ক্রমে প্রতি অর্থবছরের বাজেটে এসব সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়ন করা হবে। আসছে বাজেটে শর্ত মানার চেষ্টা থাকবে। বিশেষভাবে অতীতের মতো ঢালাওভাবে কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না। আর্থিক খাতের সংস্কারের কিছু ঘোষণা থাকবে। বিশেষভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হবে। আইএমএফের সুপারিশে এরই মধ্যে ভ্যাট আইন চূড়ান্ত হয়েছে। আয়কর আইন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে। শুল্ক আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। এ তিন আইন অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। আসছে বাজেটে টেকসই অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার কথা বলা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু উদ্যোগের কথা শোনানো হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঋণদাতা সংস্থার শর্ত মানার কথা বলা হলেও সব আগামী বাজেটে একবারে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে অর্থনীতির গতি কমে যাবে।’
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত খাত এবং এনবিআর খাতের জন্য মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হতে পারে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে। এনবিআর এ লক্ষ্যমাত্রা কমানোর জোরালো আবেদন করেছে। কিন্তু তা আমলে আনেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হিসেবে, ৩৪ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা আয়কর হিসেবে এবং ৩১ শতাংশ বা বাকি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হিসেবে সংগ্রহ করার কথা বলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার কথা শুধু বললেই হবে না। কীভাবে অর্জিত হবে, সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা না থাকলে প্রতিবারের মতো ঘাটতি থাকবে। রাজস্ব ঘাটতি হলে অর্থনীতিতে আয় ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত।’
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআর উৎসে করের আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। সম্পদশালীদের ওপর নজর বাড়ানো হবে। শুধু বেশি সম্পদ থাকার কারণে অতিরিক্ত কর গুনতে হবে। সারচার্জ বহাল রাখা হবে। সুপারট্যাক্স গ্রুপকে উচ্চহারে গুনতে হবে কর। আগামী অর্থবছরেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা থাকবে। অর্থ পাচারোধে আইনের শাসন কঠোর করা হবে। অর্থ পাচার আটকাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে। করপোরেট কর কমানোর দাবি থাকলেও তা মানা হবে না। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে খোদ অর্থমন্ত্রী বললেও রাজস্ব আদায় কমে যাবে এমন যুক্তি দেখিয়ে এনবিআর রাজি নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। কমানো হবে শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি শুল্ক। ডলারের ওপর চাপ কমাতে বেশি ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমাতে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হবে। তৈরি পোশাক খাতের সব সুবিধা বহাল রাখা হবে। শিল্পের অন্যান্য খাতেও কতটা সুবিধা বাড়ানো যায় তা নিয়ে এনবিআর হিসাব করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বাজেট প্রস্তুতিবিষয়ক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং ঘাটতি ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হতে পারে। আগামী অর্থবছরে জিডিপির ৬ শতাংশ ঘাটতি ধরে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হতে পারে বলে জানা যায়। ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকলেও আগামীবার এ খাতে বেশি ব্যয় ধরা হতে পারে। এ খাতে ১ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় আছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদন করে। ঋণদাতা সংস্থাটির কাছ থেকে বাংলাদেশ ছয় কিস্তিতে তিন বছরে ৪৭০ কোটি ডলার পাচ্ছে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের দিন আইএমএফ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে পূর্বাভাস দেয়। সংস্থাটি বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা হতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
এতে রিজার্ভ সম্পর্কে বলা হয়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ৩ হাজার কোটি ডলার। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বাড়বে এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।