
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্য রেখায় (নো ম্যানস ল্যান্ড) পুঁতে রাখা স্থলমাইন বিস্ফোরণে এক রোহিঙ্গা কিশোর নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল রবিবার ভোরে সীমান্তের পূর্বে পাহাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু সীমান্তের শূন্য রেখার আশ্রয় শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা।
নিহত ওমর ফারুক (১৭) ওই আশ্রয় শিবিরের বাসিন্দা মো. আয়ুবের ছেলে। গতকাল সকালে সীমান্তের পূর্বে পাহাড়ি এলাকা থেকে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
তমব্রুর রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের মাঝি (দলনেতা) আবদুর রহিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওমর ফারুক ও মো. আবদু ইয়্যা নামে দুই রোহিঙ্গা আজ ভোরে (গতকাল) তমব্রুর মিয়ানমার সীমান্ত এলাকার পাহাড়ি ছড়ায় মাছ শিকারে বের হয়। এ সময় বিজিপির (মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ) পুঁতে রাখা স্থলমাইন বিস্ফোরণে দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়ে ওমর ফারুক মারা যায়। আরেকজন প্রাণে রক্ষা পায়। পরে তার মাধ্যমে খবর পেয়ে ফারুকের মরদেহ উদ্ধার করে সীমান্তবর্তী একটি কবরস্থানে দাফন করা হয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে এক রোহিঙ্গার মৃত্যুর খবর গোয়েন্দাদের কাছ থেকে শুনেছি। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’
এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর তমব্রুর শূন্য রেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে মোহাম্মদ ইকবাল (১৮) নামে এক রোহিঙ্গা নিহত হন। আহত হন আরও পাঁচজন। একই দিন ওই সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে অথোয়াইং তঞ্চঙ্গ্যা (২২) নামে এক বাংলাদেশি যুবক আহত হন।
পাঁচ বছর ধরে তমব্রু সীমান্তের বিপরীতে শূন্য রেখায় আশ্রয় শিবির গড়ে বসবাস করছে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত ৪ হাজার ২০০ জনের বেশি রোহিঙ্গা। ওই আশ্রয় শিবির ঘেঁষে মিয়ানমারের কাঁটাতারের বেড়া ও রাখাইন রাজ্যের একাধিক পাহাড় রয়েছে। পাহাড়ের ওপর বিজিপির একাধিক তল্লাশি চৌকি রয়েছে।
তমব্রুর শূন্য রেখার রোহিঙ্গা নেতা আবদুর রহিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমারে ফিরতে না পারে সে জন্য বাংলাদেশ-মিয়ানমান সীমান্ত জুড়ে বিজিপি স্থলমাইন পুঁতে রাখে। এসব মাইনে গত পাঁচ বছরে ছয়জন রোহিঙ্গা মারা গেছে। শূন্য রেখার রোহিঙ্গারা সবসময় আতঙ্কে থাকে।’
গত ১৩ আগস্ট থেকে তমব্রু সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি পাহাড়ে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাত চলছে। সর্বশেষ গত ২৮ আগস্ট এবং ৩ সেপ্টেম্বর দুই দফায় মিয়ানমার থেকে ছোড়া চারটি মর্টার শেল তমব্রু উত্তরপাড়া ও বাইশফাঁড়ি এলাকায় এসে পড়ে। এসব ঘটনায় ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ।
টহল বাড়িয়েছে কোস্ট গার্ড : মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে টেকনাফ সীমান্তে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের টহল এবং নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গতকাল রবিবার কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকি স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার সুযোগে অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে কোস্ট গার্ড। সমুদ্রে সার্বক্ষণিক টহল জাহাজ মোতায়েনসহ টেকনাফ থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত রাত-দিন নিয়মিত অত্যাধুনিক হাইস্পিড বোটের মাধ্যমে টহল চলমান রয়েছে।
আস্থার সংকট কাটিয়ে সাধারণ মানুষের মন জয়ের চেষ্টা করছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সংস্থাটি সরকারি হয়েও জনসেবার ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। যতটা ফোকাস হচ্ছে সরকারের সাপোর্ট কিন্তু ততটা পাচ্ছে না তারা।
ভোক্তার অভিযোগ নিষ্পত্তি করা সংস্থাটির প্রধান কাজ হলেও বাস্তবে সরকার নির্দেশিত নানা অভিযানকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এতে সংস্থাটির লক্ষ্যচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিছু সমস্যা আছে। সেগুলো সমাধানের পথেই আছি আমরা। জনবল সবচেয়ে ভাবনার বিষয়। তবে যেটুকু জনবল আছে তা নিয়েই আমরা লড়ে যাচ্ছি। সংস্থাটির লক্ষ্যচ্যুত হওয়ার সুযোগ নেই, কারণ এর সঙ্গে সবার স্বার্থ জড়িত।’
নগরজীবনে চারপাশে হরদম প্রতারণা হচ্ছে। প্রায় সবাই প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবে প্রতারিত হচ্ছেন। সব প্রতারণার সমাধান সরকার দিতে পারছে না। আর সবকিছু নিয়ে সাধারণ মানুষ সরকারের কাছে যায়ও না। গেলেও নানা নিয়মের বেড়াজালে আটকে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। শঙ্কা এড়িয়ে ভোক্তা-অধিকার অধিদপ্তর এগিয়ে চলেছে।
কাঁঠালবাগান ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের ইয়াসির আরাফাত গত বছর ধানমন্ডির একটি রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে। খাবারের দাম অনেক বেশি রাখা হয়েছিল তার কাছ থেকে। কিন্তু যখন দেখলেন ১৫ টাকার পানির বোতল ২০ টাকা রাখা হয়েছে তখনই প্রতিবাদ করেন তিনি। ক্যাশ মেমো নিয়ে অভিযোগ করেন ভোক্তা-অধিকার অধিদপ্তরে।
ইয়াসির আরাফাত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অভিযোগ করার পর শুনানির জন্য ডাকা হয়। মাত্র এক মাসের মধ্যে শুনানি শেষ করে রেস্টুরেন্টটিকে জরিমানা করা হয়। সেই জরিমানার ২৫ ভাগ আমি নিজেও পেয়েছি। এক সময় মানুষের যাওয়ার জায়গা ছিল না, এখন সেই জায়গা হয়েছে।’
ইয়াসির আরাফাতের মতো আরও অনেকেই তাদের অভিযোগের প্রতিকার পেয়েছেন। তাদের কেউ মাছ কিনে ওজনে কম পেয়েছেন, ঈদের সময় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভ্রমণ করতে গিয়ে ভাড়ায় প্রতারিত হয়েছেন বা মেয়াদহীন পণ্য কিনে ঠকেছেন। ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘সমাধান পেতে হলে পণ্য কেনার ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করতে হবে। পণ্যের মানি-রিসিট, গ্যারান্টি বা ওয়ারেন্টি কার্ড বা অন্য যেকোনো ডকুমেন্ট থাকতে হবে।’
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সফিকুজ্জামান বলেন, ‘শুরুতে মানুষের আগ্রহ কম ছিল। কিন্তু এখন ব্যাপক আগ্রহ। গত অর্থবছরে অভিযানের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৬২৫টি। চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এ তিন মাসেই সমসংখ্যক অভিযান হয়েছে। সামনে পুরো বছর তো পড়েই আছে।’
২০০৯-১০ সালে দ-িত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৫৪টি। গত বছর ২৫ হাজার ৬২৩টিতে দাঁড়িয়েছে। অধিদপ্তরের শুরুর বছর অর্থাৎ ২০০৯-১০ সালে অভিযানের সংখ্যা ছিল সাতটি। গত বছর অভিযান হয়েছে ১০ হাজার ৬২৫টি। শুরুর দুই বছর কেউ ২৫ শতাংশ প্রণোদনা পায়নি। ২০১১-১২ সালে প্রণোদনা পেয়েছেন আটজন। এ প্রণোদনা সর্বোচ্চ ১ হাজার ১০ জন পেয়েছিলেন ২০১৭-১৮ অর্থবছরে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রেসিডেন্ট গোলাম রহমান গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর করাই হয়েছে, ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। এ পদক্ষেপে আমাদের পূর্ণ সমর্থন আছে, আমরা সাধুবাদ জানাই। ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এ পদক্ষেপে ভোক্তারা উপকৃত হবে।’
নরসিংদী জেলার ভোক্তা প্রায় ২৬ লাখ। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নরসিংদী জেলা কার্যালয়ে কর্মরত আছেন দুজন। একজন সহকারী পরিচালক অন্যজন অফিস সহকারী। এ দুজনের পক্ষে ২৬ লাখ মানুষের অভিযোগ নেওয়া অসম্ভব বিষয়। এ পরিস্থিতি শুধু নরসিংদী নয়, সব জেলাতেই।
এ পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার জন্য অধিদপ্তর আড়াই হাজার জনবলের এক সাংগঠনিক কাঠামো প্রস্তুত করে জনপ্রশাসনে জমা দেয়। দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রেখে কাঠামো পরিমার্জন করে আবার জমা দিতে বলা হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ শাখা এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির হাত ঘুরে কাঠামো ৪৬৫ জনে নেমে আসে। এ জনবলও চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি। পেলে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করবে ভোক্তা অধিদপ্তর।
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নতুন করে আলোচনায় এসেছে কিছু বহুজাতিক ও জাতীয় কোম্পানিকে জরিমানা করে। ৫৫ টাকার লাক্স সাবান ৭৫ টাকায়, ৯০ টাকার হুইল পাউডার ১৪২, ২১০ টাকার সার্ফ এক্সএল ২৮০, ১০ টাকার মিনি সাবান ১৫ টাকায় বিক্রি করছে বহুজাতিক ইউনিলিভার। একইভাবে সমজাতীয় পণ্যে অতিরিক্ত দাম বাড়ানোর কারণে দেশীয় স্কয়ার, এসিআই, কল্লোল গ্রুপ, কোহিনূর কেমিক্যালকে গত ৭ সেপ্টেম্বর তলব করে অধিদপ্তর। নিজেদের কার্যালয়ে ডেকে এসব কোম্পানি কর্তাকে বলা হয়, ‘নিত্যব্যবহার্য পণ্য বিক্রি করে আপনারা লাভ করবেন এটা স্বাভাবিক। তবে তা ৩০ শতাংশের জায়গায় ৫০ শতাংশ কেন?’
বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি বা কমার ফলে দেশের বাজারে দাম বাড়ছে বা কমছে। তবে নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম একবার বাড়লে আর কমছে না। সেই বাড়তি দরের মধ্যেই আবারও দাম বাড়ানো হচ্ছে।
এসব বিষয়ের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটি একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাটে কোম্পানিগুলোর কাছে তথ্য চেয়েছে। কমিটির সদস্যরা সংশ্লিষ্ট কারখানা পরিদর্শন করবে। যেসব পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে, সেগুলোর উৎপাদন ও বাজারজাতকরণসহ কাঁচামাল আমদানির খরচ যাচাই করে দেখবে কমিটি। ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মূলত কোম্পানিগুলোর বাড়ানো দাম কতটা যৌক্তিক বা অযৌক্তিক সেটা দেখছে। অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ানোর প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দেওয়া প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হবে। কোনো ব্যক্তির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এসব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, বিষয়টা তা নয়। দাম বেড়েছে, তাই সব ভোক্তার পক্ষ থেকে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।’
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ‘কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে উপপরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাসকে। কমিটিতে আইসিএমএবি, ট্যারিফ কমিশন, এফবিসিসিআই ও কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের একজন করে প্রতিনিধি রয়েছে।’ এ বিষয়ে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা কাজ শুরু করেছি।’
ভোক্তা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অধিদপ্তরে অল্প কিছু কর্মকর্তা আছেন। সেখানেও কিছু বঞ্চনার গল্প আছে। সংস্থাটিতে নিজস্ব উপপরিচালক আছেন ১২ জন আর সহকারী পরিচালক ৮০ জন। এ ৮০ জন সহকারী পরিচালক কীভাবে উপপরিচালক হবেন তার কোনো দিকনির্দেশনা নেই। একদফা পদোন্নতিতেও বঞ্চনার ঘটনা আছে। ফেইসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে বিপাকে পড়েছেন এক কর্মকর্তা। এসব কিছু নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। সহকারী পরিচালকদের কাজ হচ্ছে তদারকিমূলক। তারা জরিমানা করতে পারেন। কাজের ধরন অনেকটা প্রশাসন ক্যাডারের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মতো হলেও অভিযানে পুলিশ প্রটেকশন পাওয়া অনেক সময়ই দুরূহ হয়ে পড়ে। সরকারের অন্যান্য দপ্তরের মতো এ দপ্তরেও কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতার দ্বন্দ্ব রয়েছে। বিষয়গুলো এখনই সমাধান করা না হলে সামনে প্রশাসনিক জটিলতা আরও বাড়বে এবং জনআস্থা অর্জনে সমস্যা দেখা দেবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে অনেক সংস্থা গড়ে তুলেছে। তাদের মধ্যে কিছু বেশ কার্যকর। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা প্রচলিত স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছে। নতুন অধিদপ্তরের মধ্যে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কার্যকর হলেও সফলতা দেখাতে পারেনি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। দেরিতে হলেও প্রতিযোগিতা কমিশন ভালো করছে। প্রতিযোগিতা কমিশন ও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর এ দুটি সংস্থার আইনের খসড়া করেছিল গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে আইনগুলো করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।’
ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে রিফাতের কর্মযোগ্য শুরু হয়ে যায়। ৯ বছরের রিফাত কাজ করছে হলটির মুদিদোকানে। সকালে যখন হলের শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় ব্যস্ত, তখন এই শিশুকে দোকানের নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। রিফাত পড়ালেখা করেছে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। পরিবারে আর্থিক অনটনের কারণে বই-খাতা তুলে দুই মাস আগে চাঁদপুর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের দোকানে কাজ নিতে হয়েছে তাকে। শুধু রিফাত নয়, তার মতো দুই শতাধিক শিশু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ক্যানটিন ও দোকানে কাজ করছে। প্রতিদিন তাদের ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। বিনিময়ে খুব সামান্য পরিমাণ পারিশ্রমিক মেলে।
বাংলাদেশে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু দিবস। জাতিসংঘ ২০ নভেম্বরকে বিশ্ব শিশু দিবস নির্ধারণ করলেও বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রতি বছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হয়। এছাড়া ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে পালিত হয় জাতীয় শিশু দিবস।
বিশ্ব শিশু দিবসকে সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি আবাসিক হলে ২৩টি ক্যানটিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব ক্যানটিনে ১২৬ জন শিশু শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। যাদের বয়স ৮ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। বয়সভেদে দুই থেকে চার হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয় তাদের। এ ছাড়া হল প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে প্রতিটি হলে রয়েছে হালকা ও ভারী খাবারের দোকান। এসব দোকানে ৮২ জন শিশু কাজ করছে। তাদের বেতন দৈনিক হিসাবে ৮০ থেকে ১২০ টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া আইবিএ, চারুকলা, আইইআর ও গণিত ভবনের ক্যানটিনেও শিশুদের কাজ করতে দেখা যায়।
জিয়াউর রহমান হলে কাজ করা রিফাতের সঙ্গে কথা হয় দেশ রূপান্তরের এই প্রতিবেদকের। রিফাত বলে, ‘আমার বাবা বিদেশে থাকেন। তিনি কোনো টাকা পাঠান না। তাই বাধ্য হয়ে দোকানে কাজ নিয়েছি।’ পড়ালেখার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে এই শিশু বলে, ‘আমি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি। ঢাকায় আসার পর থেকে পড়ালেখা বাদ দিতে হয়েছে। তবে টাকা জমিয়ে আমি গ্রামে ফিরে গিয়ে আবার স্কুলে ভর্তি হব। বড় হয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হব।’
রিফাতের মতো ১২ বছর বয়সী আমজাদও জগন্নাথ হলের ক্যানটিনে কাজ করে। তাদের দুজনের গল্প প্রায় একই রকম। ভোরে ঘুম থেকে উঠে তার দিন শুরু হয় থালা-বাসন পরিষ্কার করতে করতে। এরপর সকালের নাশতা বানানোর জন্য বাবুর্চিকে সাহায্য করা, ছাত্রদের মাঝে খাবার বিতরণ করা, টেবিল পরিষ্কার করার মতো কাজগুলো তাকে করতে হয়। আমজাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়। তারা বাবা গ্রামে রিকশা চালান। বাড়তি আয়ের আশায় ছেলেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানটিনে কাজে দিয়েছেন। পাঁচ মাস ধরে ক্যানটিনে কাজ করছে আমজাদ। সে এখন ক্যানটিন ছেড়ে বই-খাতা নিয়ে স্কুলে ফিরতে চায়। আমজাদ দেশ রূপান্তরকে বলে, ‘আমার বাড়ি থেকে জোর করে কাজে দিয়েছে। বাড়িতে বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতাম, মজা করতাম। এখানে সেই সুযোগ নাই। সারা দিন কাজ করতে হয়। আমি আবার স্কুলে যেতে চাই, বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে চাই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মাহাদী হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সচেতন। আমাদের সামনে শিশুশ্রম হচ্ছে এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। তবে এই বাচ্চারা আর্থিক সংকটের কারণে এখানে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। আমার মনে হয় তাদের শ্রমের ঝুঁকি কমিয়ে সাধারণ কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে তাদের বিনা মূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত।’
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এ বলা হয়েছে, শিশুদের ন্যূনতম বয়স ১৪ বছর। ১৪ বছরের কম বয়সীদের কাজে নিয়োগ করা যাবে না। শিশুর অভিভাবক কাজ করানোর জন্য কারও সঙ্গে কোনো প্রকার চুক্তি করতে পারবেন না। তবে সারা দেশের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানটিন ও দোকানগুলোতে এ আইনের প্রয়োগ দেখা যায় না।
ক্যানটিন ও দোকানমালিকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, শিশুদের সাধারণত তারা কাজে নিতে চান না। পরিবার খুব অসহায় হওয়ায় অনেকটা বাধ্য হয়ে শিশুদের ক্যানটিনে রাখছেন তারা। তবে তাদের দাবি, শিশুদের দিয়ে ভারী কোনো কাজ করান না তারা।
শিশুশ্রমের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. ফাতেমা রোজিনা ইকবাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশের আইনে শিশুশ্রম সম্পূর্ণভাবে নিষেধ। আমি শিশুশ্রম বিষয়টিকে একদম নেতিবাচকভাবে দেখি। এই বয়সে একটি শিশু মায়ের স্নেহে, বাবার আদরে বড় হবে, বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাবে, সেই বয়সে বাচ্চাটাকে এখানে কাজ করতে হচ্ছে। এ বিষয়টি দেখতে আমার খুব কষ্ট হয়।’
শিশুশ্রম বন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে কি না এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে আজই একটা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ক্যাম্পাসে শিশুশ্রম বন্ধ করতে পারে। এতে কী হবে, এই শিশুগুলো কর্মহীন হয়ে পড়বে। এদের অনেকের বাবা-মা নেই, পরিবার নেই। কাজ বন্ধ করে দিলে এদের কী হবে? তারা কর্মহীন হয়ে পড়বে। তার থেকে এদের জন্য বিকল্প একটা ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আমরা ছাত্র-শিক্ষকরা উদ্যোগ নিয়ে এই শিশুদের পড়ালেখা করাতে পারি।’
শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে এমন একটি সংগঠন বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম। সংগঠনটির পরিচালক আব্দুস শহীদ মাহমুদের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের মতো একটি জায়গায় শিশুরা শ্রম দিচ্ছে, কিন্তু আমরা সবাই নিশ্চুপ! যেন দেখেও দেখছে না কেউ। এটা সবার কাছে স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও হলের কাজে ঝুঁকি কম, তারপরও শিশুদের দিয়ে কাজ করানোটা ঠিক নয়।’
শিশুশ্রমের বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের নজরে আনা হলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হলের দোকান ও ক্যানটিনে শিশুরা কাজ করে, এটা আমি জানি। যখন আমি ছাত্র ছিলাম, তখনো দেখেছি। এই ছেলেরা খুবই দরিদ্র, কাজ থেকে বাদ দিলে তারা আরও অসহায় হয়ে যাবে। তবে আমরা তাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারি। তাহলে তারা কাজের পাশাপাশি নিজেকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে।’
বিশ্ব শিশু দিবসে নানা কর্মসূচি : ‘গড়বে শিশু সোনার দেশ, ছড়িয়ে দিয়ে আলোর রেশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ সোমবার দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভিন্ন-ভিন্ন দিনে দিবসটি পালিত হয়। বাংলাদেশে বিশ্ব শিশু দিবস পালন করা হয় অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার। বিশ্ব শিশু দিবসের সঙ্গে মিলিয়ে শিশুর অধিকার, সুরক্ষা এবং শিশুর উন্নয়ন ও বিকাশে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগী ও সচেতন করার লক্ষ্যে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত পালন করা হবে শিশু অধিকার সপ্তাহ। গতকাল রবিবার মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ-২০২২-এর উদ্বোধন করবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, প্রতিবছরের মতো এবারও দেশব্যাপী বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ উদ্যাপন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার একটি স্টেডিয়ামে দেশটির দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ফুটবল ক্লাব সমর্থকদের সংঘর্ষ, পুলিশের টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপের পর পদদলিত হয়ে ১২৫ জন নিহত হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ এ ঘটনা ঘটেছে দেশটির কানজুরুহান ফুটবল স্টেডিয়ামে।
গত শনিবার রাতে পূর্ব জাভা প্রদেশের মালাং শহরের এ স্টেডিয়ামে আরেমা এফসি ও পেরসেবায়া সুরাবায়া নামের দুটি ফুটবল ক্লাবের মধ্যে খেলা চলছিল। খেলায় আরেমাকে ৩-২ গোলে হারায় পেরসেবায়া। ইন্দোনেশিয়া পুলিশ বলছে, হারের পর স্টেডিয়ামে থাকা আরেমার দর্শকরা মাঠে নেমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। তাদের থামাতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ। এতে দর্শকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ সময় হুড়োহুড়িতে অনেকেই পদদলনে নিহত হন।
পুলিশের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ম্যাচের রেফারি বাঁশিতে চূড়ান্ত ফুঁ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরেমা এফসির ক্ষুব্ধ সমর্থকরা চারদিক থেকে মাঠে ঢুকে পড়েন। এক প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মাঠের মাঝেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন আরেমার ভক্তরা। সেখানেই দুই পুলিশ সদস্য নিহত হন।
পূর্ব জাভার পুলিশপ্রধান নিকো আফিনতা জানান, দাঙ্গাকারীদের মাঠ থেকে গ্যালারিতে ফেরত পাঠাতে পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়তে শুরু করে। এ সময় হুড়োহুড়িতে অনেকে পদদলিত হয় এবং সেখানে দমবন্ধ করা একটি পরিস্থিতির তৈরি হয়। তিনি জানান, সবাই একটি স্থান দিয়েই বের হওয়ার চেষ্টা করছিল। ফলে প্রচণ্ড ভিড়ের একপর্যায়ে অক্সিজেনের অভাবে দমবদ্ধ করা পরিবেশ তৈরি হয়। দেশটির নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ মাহফুদ মাহমোদিনের দাবি, ৩৮ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার ওই স্টেডিয়ামে শনিবারের ম্যাচের জন্য টিকিট বিক্রি হয়েছিল ৪২ হাজার। বিশ^ ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার নিরাপত্তা বিধি অনুযায়ী, মাঠে নিরাপত্তাকর্মীরা কখনোই আগ্নেয়াস্ত্র কিংবা ‘টিয়ার গ্যাস’ ব্যবহার করতে পারেন না।
এদিকে পুলিশপ্রধানের দাবি, বাধ্য হয়েই তারা কাঁদুনে গ্যাস ছুড়েছিলেন। তার ভাষায়, ‘পুরো অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। তারা পুলিশ কর্মকর্তাদের আক্রমণ করেছিল, গাড়ি ভাঙতে শুরু করেছিল।’
এ ছাড়া স্টেডিয়ামের বাইরে সমর্থক ও পুলিশের মধ্যে ফের সংঘর্ষ হয়। সামাজিক মাধ্যমে আসা ভিডিও ও ছবিতে দেখা যায়, স্টেডিয়ামের বাইরে ফুটবল ভক্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ছে পুলিশের গাড়ি।
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো ফুটবল ম্যাচগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে এবং পুরো ঘটনার তদন্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। এ ঘটনার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত লিগ স্থগিত রাখার নির্দেশও দেন তিনি।
ইন্দোনেশিয়ায় ফুটবল মাঠে দাঙ্গা ও সংঘর্ষের ঘটনা নতুন নয়। ফুটবল ক্লাবগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তুমুল, যা সমর্থকদেরও আগ্রাসী করে তোলে অনেক সময়। ফুটবল মাঠে এই মর্মান্তিক ঘটনার পর দেশটির ক্রীড়ামন্ত্রী জয়নুদিন আমালি জানান, তারা ফুটবল মাঠে নিরাপত্তার বিষয়টি আবার খতিয়ে দেখবেন এবং প্রয়োজনে দর্শকবিহীন মাঠে খেলা চালানোর বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হবে।
এ ঘটনা ইন্দোনেশিয়ার ফুটবল ভাবমূর্তিতে কালিমা মেখে দিয়েছে উল্লেখ করে দেশটির ফুটবল ফেডারেশন জানিয়েছে, ঘটনাটির তদন্ত করা হবে।
ইন্দোনেশিয়ার মানবাধিকার কমিশনার রয়টার্সকে বলেছেন, কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার ঘটনাসহ মাঠের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
খেলার মাঠে এ রকম ট্র্যাজেডি বিশে^র নানা প্রান্তে আগেও দেখা গেছে। ২০১২ সালে মিসরে ভয়াবহ সংঘর্ষে ৭৩ জনের মৃত্যু এবং ১ হাজারের বেশি সমর্থকের আহত হওয়ার ঘটনায় সেখানে লিগ বন্ধ ছিল দুই বছর। ২০০১ সালে ঘানায় একটি মাঠে পদদলিত হয়ে মারা যায় ১২৬ জন।
এর আগে ১৯৬৪ সালে পেরুর রাজধানী লিমায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। পেরু-আর্জেন্টিনা অলিম্পিক বাছাইপর্বের ম্যাচের সময় পদদলিত হয়ে ৩২০ জন নিহত এবং ১ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছিল।
এরপর ১৯৮৫ সালে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসের হেইসেল স্টেডিয়ামে ৩৯ জন মারা যান এবং আরও ৬০০ জন আহত হন। সে সময় লিভারপুল (ইংল্যান্ড) ও জুভেন্তাসের (ইতালি) মধ্যে ইউরোপীয় কাপের ফাইনালের সময় একটি প্রাচীরের সঙ্গে ফুটবল ভক্ত-দর্শকদের পিষ্ট হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
একজন উদ্যোক্তা ছোট একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে গেলে বছরের পর বছর কেটে যায় শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দুর্নীতির কারণে। সামান্য কাজেও সরকারি কর্মকর্তারা যে পরিমাণ হয়রানি করেন তাতে ছোট উদ্যোক্তারা তো মনোবল হারানই, বড় শিল্প উদ্যোক্তারাও বিপাকে পড়েন।
গতকাল রবিবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘সেটিং আপ এ ফ্যাক্টরি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ব্যবসায়ী নেতারা।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান, বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মো. মোয়াজ্জেম, বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্সের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বিটিএমইএর সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন, বিল্ডের প্রধান নির্বাহী ফিরদাউস আরা বেগমসহ অন্যরা। সিপিডির উদ্যোগে ‘ফ্যাক্টরি সেটআপবিডি ডট কম’ নামে ওয়েবসাইট সম্পর্কে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির রিসার্স অ্যাসোসিয়েট হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মোয়াজ্জেম বলেন, ‘শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দুর্নীতি ও হয়রানির কারণে বছরের পর বছর কেটে যায় একটা কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে। কিন্তু এসব কর্মকর্তার ঘুষ-দুর্নীতির পরও দেশ এতদূর এগিয়েছে শুধু ব্যবসায়ীদের সাহসের কারণে। এ দেশের ব্যবসায়ীরা এত কষ্ট করে ব্যবসা করছেন, তা পৃথিবীতে বিরল।’
তিনি বলেন, ‘দেশের দুর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কৃষিমন্ত্রী আমাকে বলেন, আপনাদের সিন্ডিকেট যেহেতু ডিমের দাম বাড়াতে পারে তাহলে আরেকটি সিন্ডিকেট করে আলুর দামটা বাড়িয়ে দেন, কৃষকদের উপকার হয়। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো প্রতি বছর শত শত সভা-সেমিনার করে কিন্তু সেখানের সরকারি অফিসগুলোর ডেস্ক অফিসারদের অংশগ্রহণ থাকে না। এতে ফলাফল শূন্য হয়। তাদের অংশগ্রহণ জরুরি। ছোট ছোট ব্যবসায়ী গড়ে তোলার জন্য ১৮ জন উপদেষ্টা নিয়েছে এফবিসিসিআই। গত চার বছর আমরা কাজ করতে পারিনি, কিন্তু এখন আমরা শুরু করেছি।’
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘সিপিডির এ ধরনের ওয়েবসাইট নির্মাণের উদ্যোগ আরও আগেই নেওয়া দরকার ছিল। কারণ কীভাবে কারখানা করতে হয় তা না জানার কারণে নতুন উদ্যোক্তারা নানা হয়রানির শিকার হন। শুধু ফাইল দুর্নীতি নয়, ডকুমেন্টশনের বাইরে নন-ডকুমেন্টশনে যে দুুর্নীতি তাতে টিকে থাকা কঠিন।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি কি এখন নেই? আমরা বিইআরসির সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিলাম এক মেগাওয়াট জেনারেটর বা তার ওপরে হলে রেজিস্ট্রেশন লাগবে। কিন্তু তাদের অডিট টিম এসে ৫০০ কেবির জেনারেটরের জন্যও কাগজ চায়। তারা টাকা ছাড়া নড়েই না।’
বিকেএমইএর সভাপতি দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে বিসিকের রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার জন্য আমার এক ছোট ভাই আইআরসি করবে। তিনি আবেদনের এক মাসেও না পাওয়ায় আমার কাছে এসেছিল। তার কাছে নাকি প্রত্যয়নপত্রের জন্য ৫০ হাজার টাকা ঘুষ চাচ্ছে। আমি বিসিকের ডিরেক্টরকে ফোন দিলে তিনি তখনই সই করে দেন। কিন্তু তারপরও কর্মকর্তারা ফাইল ছাড়েন না। তাদের দাবি, ডিরেক্টরের ফি ২০ হাজার, তিনি তো নেবেন না পরিচিত দেখে, আমাদের ফি ৩০ হাজার না দিলে ফাইল ছাড়ব না।’
বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আমাদের হয়রানির অভাব নেই। নতুন করে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে জানাল সাব-সিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগবে। এটাও এক ধরনের হয়রানি। কিন্তু আমরাই ফরেন কারেন্সি ধরে রাখার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। দেশের রিজার্ভ এখন ৩৬ বিলিয়ন ডলারে। এটি আরও কমবে। দুই মাস আগে থেকেই আমরা বলে আসছি আমাদের পোশাক রপ্তানি কমবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন সমস্যা পাওয়ার সেক্টর নিয়ে। ক্রেতাদের অর্ডার ডেলিভারি করতে পারছিলাম না বিদ্যুতের অভাবের কারণে। কিন্তু এ সময় আমাদের আরও প্রশ্নের জবাব দিতে হয় মার্কেটে পোশাক খাতের শেয়ার কেন কমছে, তার জবাবদিহিতা করতে করতেই সময় পার হয়, আমরা বাকি কাজ করব কখন।’
এ সময় নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘সদ্য প্রয়াত অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পদত্যাগ করেছিলেন শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার কারণে। আমাদের সমস্যা দুটি, গো ফরোয়ার্ড, এরপরই আবার গো ব্যাকওয়ার্ড। দেশের রপ্তানিকারকদের এক নম্বর সমস্যা কাস্টমস অ্যান্ড বন্ড লাইসেন্স।’
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা যত গতিশীল হবেন, দেশের উন্নয়নও তত গতিশীল হবে। তাদের অবদানে দেশ আরও এগিয়ে যাবে।’
সিপিডির উদ্যোগে তৈরি করা এ ওয়েবসাইটে পোশাক খাত, ওষুধ খাত, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, চামড়া শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স, নিবন্ধন ও সার্টিফিকেশন কীভাবে করা যাবে তার বিস্তারিত জানতে পারবেন উদ্যোক্তারা। তাছাড়া আটটি ক্যাটাগরিতে একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার বিষয়ে জানা যাবে এ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।
ব্যাংক খাতের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ৯টি দুর্বল ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংক এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম।
বর্তমান গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার পর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, ১০টি দুর্বল ব্যাংককে চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্রুতই সেগুলোকে সবল করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। গভর্নরের এমন বক্তব্যের পর গতকাল পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলো।
সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, অপর্যাপ্ত জামানত, অনিয়মের মাধ্যমে সৃষ্ট ঋণ, খেলাপি ঋণের আধিক্য, আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি দেখানোসহ বিভিন্ন অনিয়ম জেঁকে বসেছে ব্যাংক খাতে। তাই এই উদ্যোগ নিয়েছেন গভর্নর।
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, রূপালী, জনতা ও অগ্রণীর পাশাপাশি বেসরকারি ওয়ান ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই পর্যবেক্ষকরা বোর্ড মিটিংয়ে নিজেদের মতামত উপস্থাপন করতে পারবেন। এ ছাড়া ন্যাশনাল, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংকে সমন্বয়ক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যারা সশরীরে ব্যাংকে যাবেন না। কিন্তু ব্যাংকের সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর রাখবেন।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন সময় দেশের ১৫টি ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তা ও অন্যান্য ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের কর্মকর্তা পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এর মধ্যে ২০১৫ সালে একসঙ্গে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ কৃষি ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে পর্যবেক্ষক দেওয়া হয়। আইসিবি ব্যাংকে ১৯৯৪ সালে, ন্যাশনাল ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ২০০৪ সালে , রাষ্ট্রমালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকে ২০১৩ সালে, ইসলামী ব্যাংকে ২০১০ সালে, এনআরবি কমার্শিয়াল ও ফারমার্স ব্যাংকে (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) ২০১৬ সালে এবং এবি ব্যাংকে ২০১৭ সালে পর্যবেক্ষক বসানো হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালের আগস্টে পর্যবেক্ষক বসানো হয় ওয়ান ব্যাংকে।
গত ৪ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছিলেন, ‘ব্যাংক ব্যবস্থায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যাংকগুলোকে চিহ্নিত করতে চার চলকের ওপর ভিত্তি করে এ দফায় ১০টি দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করা হয়েছে। চলকগুলো হচ্ছে শ্রেণিকৃত ঋণের মাত্রা, মূলধন পর্যাপ্ততা, ঋণ-আমানত অনুপাত এবং প্রভিশনের পরিমাণ। আমরা কোনো ব্যাংক বন্ধের পক্ষে না, আমানতকারীর টাকা যেন নিরাপদ থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে চাই। আমরা চাই সব ব্যাংক ব্যবসা করবে, লাভ করবে এবং বাজারে টিকে থাকবে।’
একশ্রেণির আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত রেখে মানুষ টাকা ফেরত পাচ্ছেন না, একশ্রেণির দুর্বল ব্যাংকের ক্ষেত্রেও এমন পরিস্থিতি দাঁড়ায় কি না, এ প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ‘একশ্রেণির আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনাস্থা এসেছে। আমরা চাই ব্যাংকের প্রতি যাতে তা না আসে। সে জন্যই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কিছু কিছু ব্যাংকে নামে-বেনামে নিজেদের মধ্যে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। আবার এসব ঋণের বিপরীতে যে পরিমাণ জামানত নেওয়ার কথা তা নেওয়া হয়নি। যে পরিমাণ জামানত নেওয়া হয়েছে তার গুণগতমান খুবই দুর্বল। যেমন সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক ঘটনায় বন্ধকী সম্পদ হিসেবে যে পরিমাণ জমি দেখানো হয়েছিল তার বড় একটি অংশই ছিল সরকারি খাসজমি, ডোবা-নালা। অনেক ঋণই অনিয়মের মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে।
আবার এসব ঋণ বছরের পর বছর পরিশোধ করা হচ্ছে না। ভুয়া ঋণ সৃষ্টি করে ঋণ পরিশোধ দেখানো হচ্ছে। এভাবে খেলাপি ঋণ আড়াল হয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্প্রতি এক পরিদর্শনে এমন একটি নতুন প্রজন্মের ব্যাংকে ঋণ কেলেঙ্কারির তথ্য উঠে এসেছে। নতুন প্রজন্মের অপর একটি ব্যাংক গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। ইতিমধ্যে ব্যাংকটি নাম পরিবর্তন করে নতুন নামে কার্যক্রম চালাচ্ছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইলেকট্রিক্যাল ও মেশিনারি পণ্য নিয়ে রাশিয়া থেকে আসা বিদেশি জাহাজ ‘এম,ভি আনকা সান’ ও ‘এম,ভি সাপোডিলা’ মোংলা বন্দরে ভিড়েছে। রবিবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বন্দরের ৭ নম্বর জেটিতে ভিড়ে আনকা সান ও সন্ধ্যা ৭টায় ৮ নম্বর জেটিতে ভিড়ে সাপোডিলা।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইলেকট্রিক্যাল মালামাল নিয়ে ভেনুটা পতাকাবাহী জাহাজ এম,ভি আনকা সান রবিবার বিকেল পৌনে ৫টায় মোংলা বন্দরের ৭ নম্বর জেটিতে ভিড়েছে। ১ হাজার ৯৭৯ প্যাকেজের ১ হাজার ৪শ মেট্রিক টন ইলেকট্রিক্যাল পণ্য নিয়ে গত ২৬ ডিসেম্বর রাশিয়ার নভরস্কি বন্দর থেকে ছেড়ে আসে এ জাহাজটি। এ ছাড়া রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ বন্দর থেকে ৪৩৬ প্যাকেজের ৫১৮ মেট্রিক টন মেশিনারি পণ্য নিয়ে সন্ধ্যা ৭টায় বন্দরের ৮ নম্বর জেটিতে ভিড়ে বিদেশি জাহাজ এম,ভি সাপোডিলা।
বিদেশি জাহাজ আনকা সান’র স্থানীয় শিপিং এজেন্ট কনভেয়ার শিপিং লাইনসের খুলনার ম্যানেজার (অপারেশন শিপিং) সাধন কুমার চক্রবর্তী ও সাপোডিলা’র স্থানীয় শিপিং এজেন্ট ইন্টারপোর্ট’র খুলনার ম্যানেজার অসিম মন্ডল জানান, বন্দর জেটিতে অবস্থান নেয়া এ জাহাজ দুটি থেকে রবিবার সন্ধ্যার পর অর্থাৎ রাত থেকে পণ্য খালাস শুরু হবে। এরপর জাহাজের এ পণ্য খালাস করে জেটিতে রাখা হবে। তারপর সোম বা মঙ্গলবার থেকে তা সড়ক পথে নেয়া হবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে।
এর আগে গত ২২ জানুয়ারি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল নিয়ে মোংলা বন্দরে এসেছিল বিদেশি জাহাজ এম,ভি কামিল্লা। এ জাহাজগুলো মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত।
উল্লেখ্যে, সম্প্রতি ৭টি জাহাজ কোম্পানির ৬৯টি জাহাজে রূপপুরের মালামাল পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রেক্ষিতে রূপপুরের মালামাল নিয়ে রাশিয়া থেকে মোংলা বন্দরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা এম,ভি উসরা মেজরকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হয়নি তখন। ওই জাহাজটির ২৪ ডিসেম্বর মোংলা বন্দরে ভেড়ার শিডিউল ছিল। কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় তা আর সম্ভব হয়নি। পরে অবশ্য ওই জাহাজটি পণ্য খালাসে ভারতে গেলে সেখানেও পণ্য খালাস করতে না পারায় ফেরত যায় উসরা মেজর। যা মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, বাংলাদেশ ও ভারতসহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মহলে নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করল দেশের অন্যতম বিজ্ঞাপনী সংস্থা এক্সপ্রেশানস্ লিমিটেড। এ উপলক্ষে গত ২৭ জানুয়ারি রাজেন্দ্রপুরে অবস্থিত ব্র্যাক সিডিএম-এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটি। সেখানে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে যোগ দেন এক্সপ্রেশানস্-এর অর্ধশতাধিক কর্মী।
এ দিন সকাল ১০টায় সম্মিলিতভাবে জাতীয় সংগীত গেয়ে শুরু হয় বার্ষিক সাধারণ সভা। সভায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের বিবরণ শেয়ার করেন বিভিন্ন বিভাগের প্রধানগণ।
বিকেলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীবৃন্দ ক্রিকেট, টেবিল টেনিসসহ নানা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেন এবং সন্ধ্যায় আয়োজিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সংগীত, অভিনয়, নৃত্য ও কবিতা আবৃত্তি শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান রামেন্দু মজুমদার।
তিনি বলেন, তিন দশক পেরিয়ে এক্সপ্রেশানস্ লিমিটেড আজ একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে। জন্মলগ্ন থেকেই আমরা স্বাধীনতা, দেশ, মাটি ও মানুষের চেতনাকে ধারণ করে চলেছি। সম্প্রতি বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন আয়োজনে অফিশিয়াল লোগোটি তৈরি করতে পেরে আমরা, এক্সপ্রেশানস্ আনন্দিত ও গর্বিত।
এক্সপ্রেশানস্ লিমিটেড-এর প্রতিষ্ঠা ১৯৯৩ সালে, দেশজ সংস্কৃতির সঙ্গে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ কৌশলকে সমন্বয় করে বিজ্ঞাপনের উৎকর্ষ অর্জনের প্রত্যয়ে।
ব্র্যান্ড সৃষ্টি, বিপণন ও উন্নয়ন যোগাযোগের লক্ষ্যে এটিএল, বিটিএল, ডিজিটাল ও ওটিটি সকল প্ল্যাটফর্মে ৩৬০ᵒ সমাধান দিতে অডিও, ভিডিও, প্রিন্ট বিজ্ঞাপন তৈরি থেকে শুরু করে যেকোনো ইভেন্ট, অ্যাকটিভেশন, মিডিয়া সলিউশন, ডিজিটাল কমিউনিকেশন করে থাকে এক্সপ্রেশানস্।
বিগত তিন দশক ধরে দেশীয় ও বহুজাতিক করপোরেট প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে সফলভাবে কাজ করার মাধ্যমে অর্জন করেছে অবিচল আস্থা। ডাবর বাংলাদেশ, পারটেক্স বেভারেজ লি., এসিআই লি., বেঙ্গল গ্রুপ, আনোয়ার গ্রুপ, আইএফআইসি ব্যাংক লি., নাভানা এলপিজি লি., ইগলু আইসক্রিম, লাভেলো আইসক্রিম, সেভয় আইসক্রিম, টিভিএস মোটর, সুপারস্টার গ্রুপ, প্রাণ-আরএফএল, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, এটুআই, তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, বন অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, বিআরটিএ, ডিসিসি, বিশ্বব্যাংক, ইউনিসেফ, সেভ দ্য চিলড্রেন, ইউএনডিপি, ইউএসএইড, ইউএস অ্যাম্বাসি, টিআইবি, মেরি স্টোপস, স্টপ টোব্যাকো বাংলাদেশ, ব্র্যাক, আইএলও, আইওএম, ওয়াইল্ড লাইফ প্রোটেকশন, ইপিআই ইত্যাদি সংস্থার যোগাযোগ ও প্রচারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে এক্সপ্রেশানস্ লিমিটেড।
উল্লেখ্য, এক্সপ্রেশানস্ লিমিটেড প্রতিদিন সকালে সম্মিলিতভাবে জাতীয় সংগীত গেয়ে তাদের দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু করে থাকে।
চণতি বছর স্প্রিং সেমেস্টারে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি)-তে ভর্তি হওয়া প্রায় ৯০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৪% নারী। বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত আইইউবির নিজস্ব ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত স্প্রিং ২০২৩ সেমেস্টারের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।
অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে আইইউবির অ্যাডমিশন্স অ্যান্ড ফিনানশিয়াল এইড অফিস।
একই অনুষ্ঠানে, ‘লুম্বিনি ফেলোশিপ’ শিরোনামের শিক্ষার্থী বিনিময় কর্মসূচির আওতায় দুই সেমেস্টারের জন্য আইইউবিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় বান্দরবান ইউনিভার্সিটির দুই শিক্ষার্থী প্রীতি তঞ্চঙ্গ্যা এবং আ আ মোই মারমা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম-ভিত্তিক তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লুম্বিনি লিমিটেড-এর আর্থিক সহায়তায় চার বছরের জন্য এই কর্মসূচির সূচনা করেছে আইইউবি এবং দেশের একমাত্র পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ ভিত্তিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশে পাবলিক এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এটিই প্রথম শিক্ষার্থী বিনিময় কর্মসূচি।
ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বনামধন্য লেখক এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল হক।
আরো বক্তব্য রাখেন আইইউবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার; উপাচার্য তানভীর হাসান, পিএইচডি; উপউপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান, পিএইচডি; রেজিস্ট্রার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আনোয়ারুল ইসলাম; স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড এন্ট্রাপেনারশিপ-এর ডিন অধ্যাপক ড. মেহেরুন আহমেদ; স্কুল অব এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সেস-এর ডিন অধ্যাপক ড. শাহ এম ফারুক; স্কুল অফ লিবারেল আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস-এর ডিন অধ্যাপক ড. তৈয়েবুর রহমান; স্কুল অব ফার্মেসি অ্যান্ড পাবলিক হেলথ-এর ডিন অধ্যাপক ড. জে এম এ হান্নান; এবং স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং, টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস-এর অন্তবর্তীকালীন ডিন ড. মাহাদী হাসান।
অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন অ্যাডমিশন্স অ্যান্ড ফিনানশিয়াল এইড-এর প্রধান লিমা চৌধুরী। সঙ্গীত পরিবশেন করে আইইউবি মিউজিক ক্লাবের সদস্যবৃন্দ।
দক্ষ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার গড়ার লক্ষ্যে নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ড্যাফোডিল পলিটেকনিকের ২০ শিক্ষার্থী ১৫ থেকে ২২ জানুয়ারি কালিঙ্গা ইন্সটিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি এবং কালিঙ্গা ইন্সটিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্স-এ ইন্টারন্যাশনাল ইন্টার্নশিপ অ্যান্ড ভলেন্টিয়ার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন।
ভারতের ভুবনেশ্বর ও ওড়িশাতে এ সময়ে ভিন্ন ভিন্ন সেমিনার, কর্মশালা এবং বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী র্কাযক্রমে অংশগ্রহণ করেন তারা।
শিক্ষার্থীরা কেআইআইটি বিশ্ববিদ্যালযের কর্তৃক আয়োাজিত একটি স্বোচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে যোগ দেন। যেখানে শিক্ষার্থীরা কেআইএসএস-এ শিক্ষা, গবেষণা, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গে কাজ করেন। এর আগে কেআইআইটি বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীরা নৃত্য পরিবেশনসহ বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে তাদের ক্যাম্পাসে ড্যাফোডিল পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানায়।
পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা বায়ো ফার্টিলাইজারের ওপর একটি অধিবেশনে যোগদান করে, যেখানে তারা জৈবসারের মূল্য এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান অর্জন করে।
এ ছাড়া ইউনেস্কোর ইন্টারন্যশনাল মিলিট ইয়ার-২০২৩ উপলক্ষ্যে শিক্ষার্থীরা কেআইএসএস শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন দেশের ইউএমএপি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভারতের কলিঙ্গা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সে পোস্টার উপস্থাপন করেন ও মিলিট ইয়ার এর ওপর সেশনে অংশগ্রহণ করে।
এই উপলক্ষে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং-এর শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চতর পড়াশোনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এটি একটি বড় সুযোগ।
আন্তর্জাতিক এই সফরের ৩য় দিনে, শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিকভাবে বাষ্পে রান্নার প্রক্রিয়া দেখতে কেআইএসএস-এর মেগা কিচেন পরিদর্শন করেন ও নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর প্রভাবের ওপর একটি বিশেষ অধিবেশনে অংশ নেয়। যার ফলে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয়ে তারা জ্ঞান অর্জন করে।
সেশনের শেষ দিন ড. অচিন্তা সামান্তা, প্রতিষ্ঠাতা কেআইআইটি এবং কেআইএসএস, ড্যাফোডিল পলিটেকনিকের পুরো টিমকে (আইভিআইপি) প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের ওপর একটি সেশন নেন এবং শিক্ষার্থীদের সনদ প্রদান করেন।
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং-এর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি বড় অর্জন। ভলেন্টিয়ারি কার্যক্রমে অংশগ্রহণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা ওড়িশার আদিবাসী মিউজিয়াম ভ্রমণ করেন, যা তাদের ওড়িশার এতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারনা প্রদান করে। পুরো সফরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছিলেন ড্যাফোডিল পলিটেকনিকের উপপরিচালক কে এম পারভেজ ববি এবং ড্যাফোডিল ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির ভাইস প্রিন্সিপাল আব্দুল হাকিম।
রাজপথে খালি পায়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে স্লোগান দিচ্ছে এক পথশিশু। পেছনে বিক্ষুব্ধ মিছিল। শিশুটির পরনে চার পকেটের হাফপ্যান্ট; গেঞ্জিটা কোমরে বাঁধা। কণ্ঠে স্বৈরতন্ত্রের কবর রচনার হুঙ্কার। দৃঢ় চোয়ালে অগ্নিস্পর্ধী সাহসিকতার বহিঃপ্রকাশ। পাঁজরগুলো যেন শরীরের ভেতর থেকে তীরের ফলার মতো বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। মিছিলের অগ্রভাগে থাকা অপ্রতিরোধ্য শিশুটি সেদিন সবার নজর কাড়ে। ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি সকালে বাংলাদেশের স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনের এ প্রতিবাদী মুহূর্তটি ক্যামেরায় বন্দি করেছিলেন প্রথিতযশা আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদার।
সেই সময়ে দৈনিক সংবাদের নিজস্ব সংবাদচিত্রী ছিলেন তিনি। ছবিটি ফ্রেমবন্দি করে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি ইতিহাসের মূর্ত সাক্ষীর আলোকচিত্রী। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের আইকনিক আলোকচিত্র হিসেবে ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠে এ ছবি। ছবিটি আমাদের সংগ্রামী অতীতকে স্মরণ করিয়ে দে য়। এর কেন্দ্রীয় চরিত্র শিশুটির চোখ-মুখের ভাষা মানুষকে মনে করিয়ে দেয় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের কথা। ছবিটির দৃশ্য-ভাষা এতই শক্তিশালী যে, এখনো মানুষের মনে শিহরন জাগায়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আহ্বান জানায়।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট : ছাত্রসমাজের ১১ দফা মুক্তিসনদকে সামনে নিয়ে ঊনসত্তরের ২০ জানুয়ারি দাবানলের মতো জ্বলে উঠে পূর্ব বাংলা ও তার রাজধানী ঢাকা। এর ধারাবাহিকতায় ২৪ জানুয়ারি কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে ঢাকার রাজপথে নামে জনতার ঢল। বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালাকেও ম্লান করে দেয় সেদিনের জনসমুদ্রের বিক্ষুব্ধ ঊর্মিদল। অধিকার-সচেতন জনতার হুঙ্কারে কেঁপে ওঠে অত্যাচারীর আসন। সেই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য গর্জে উঠে স্বৈরাচারের বন্দুক। বুলেটের আঘাতে রাজপথে ঝরে পড়ে কয়েকটি প্রাণ। শহীদের লাশ নিয়ে রাজপথে মিছিলের ঢল নামে। রাত ৮টায় কারফিউ জারির মাধ্যমে জনতাকে নিবৃত্ত করার সর্বশেষ প্রয়াসকে ব্যর্থ করে দিয়ে রাতের নৈঃশব্দ্যকে প্রকম্পিত করে মুক্তিপাগল জনতা। এর কয়েক দিন পর জনতার অদম্য আন্দোলনের মুখে অত্যাচারী সরকারকে পালাতে হয়। সমাধি রচিত হয় আইয়ুব-মোনায়েমের রাজত্বের।
সেদিন ছিল আধাবেলা হরতাল। ঢাকায় সেক্রেটারিয়েটের ভেতর থেকে পুলিশ দুই দফা গুলিবর্ষণ করে। প্রথম দফা গুলিবর্ষণ সকাল ১১টা ৫ মিনিটে। দুপুরে দ্বিতীয় দফা। গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় নবকুমার ইনস্টিটিউশনের নবম শ্রেণির ছাত্র মতিউর রহমান মল্লিক ও নোয়াখালীর নান্দিয়াপাড়া হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সৈয়দ রুস্তম আলী। প্রেস ট্রাস্ট অফিসের সামনে পুলিশের গুলিতে আরও একজন নিহত হয়। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ-ইপিআরের গুলিবর্ষণ ও লাঠিচার্জে আহত হয় ২১ জন। পরদিন সব দৈনিক পত্রিকা হতাহতদের নাম, বাবার নাম, বয়স, পেশা, কার-কোথায় গুলি লেগেছে, কীভাবে ঘটনা ঘটেছে তার বিস্তারিত বিবরণ ছাপায়। বেশিরভাগ পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় শহীদ মতিউর ও রুস্তমের মৃত মুখের ছবি ছাপা হয়। সেদিন কোনো পত্রিকায় কোনো পথশিশুর মৃত্যুর খবর ছাপা হয়নি।
আইকনিক ফটো : রশীদ তালুকদারের তোলা পথশিশুর ছবিটি প্রথম ছাপা হয় ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি দৈনিক সংবাদের বিশেষ ক্রোড়পত্রে। এরপর থেকে প্রতি বছর ২৪ জানুয়ারি ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক ঘটনার লেখনীর সঙ্গে ছবিটি দৈনিক সংবাদ প্রকাশ করে। রশীদ তালুকদার ১৯৭৫ সালে সংবাদ ছেড়ে ইত্তেফাকে যোগদান দেন। এরপর ইত্তেফাকও ছবিটি প্রতি বছর প্রকাশ করে। অনেক দিন এ ছবির নেপথ্য ঘটনার অনুসন্ধান হয়নি। কোনো পত্রিকায় ছবিটি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন, ফিচার, প্রবন্ধ-নিবন্ধও লেখা হয়নি। রশীদ তালুকদারও এই ছবি সম্পর্কে কোথাও কিছু লিখে যাননি। দীর্ঘ ৫৪ বছর শিশুটির কথা অজানাই রয়ে গেছে। খোঁজ মেলেনি বলে সবাই ধরে নিয়েছে শিশুটি সেদিন বুলেটবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী তার ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে শিশুটির পরিচয় তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, মিছিলের অগ্রভাগে থাকা শিশুটির নাম মো. হোসেন আলী। সেই সূত্রেই পাওয়া যায় হোসেন আলীর খোঁজ।
হোসেন আলীর কথা : ৬৪ বছর বয়সী হোসেন আলী বলেছেন, মিছিলের অগ্রভাগে থাকা শিশুটি তিনিই। তার বক্তব্য, ‘ঊনসত্তরে আমার বয়স আছিল দশ বছর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমারে ডাকতেন পালোয়ান বইলা। ওই দিন জগন্নাথ কলেজের দিক থাইক্যা ছাত্রলীগের একটা মিছিল আইতেছিল। আমি তখন ফুলবাড়িয়া ইস্টিশনে থাকি। “জেলের তালা ভাঙবো, মুজিব ভাইকে আনবো” স্লোগান শুইন্যা আমিও যোগ দিলাম ওই মিছিলে। মিছিলে আমার মতো কয়েকটি শিশুও আছিল। রেগওলা (স্ট্রাইপ) হাফশার্ট গায়ে ছেলেডা আমার পেছনে আছিল। মিছিল পলাশী ব্যারাক হইয়া শাহবাগের দিকে আইলো। আমি কিন্তু মিছিলের সামনে। গরমে ঘামাইয়া গেছি। তাই গেঞ্জিটা খুইলা কোমরে বাঁধলাম। শাহবাগের সামনে আইসা দেখি, রেডিও অফিসের সামনে ইপিআর পজিশন লইয়া আছে। দুইবার মাইকিং করছে “চল যাও, চল যাও”। কে কার কথা শুনে? আমি জয় বাংলা বলে স্লোগান দিচ্ছি। তিন-চারজন ছবি তুলতাছে। তিনবার বলার পর দেখি বন্দুক রেডি করতাছে। সাথে সাথে একটা গুলির আওয়াজ পাইলাম। দৌড়াইয়া তারের ঘের দেওয়া রেসকোর্স ময়দানে ঢুকলাম। এরপর মন্দির, হাইকোর্ট, সেক্রেটারিয়েট হয়ে জিন্নাহ অ্যাভিনিউর রুচিতা হোটেলে আইলাম। কাঙালি হিসেবে আমারে তখন জিন্নাহ অ্যাভিনিউর অনেকে চিনতো। একদিন কয়েকজন আমারে পত্রিকার ছবি দেখাইয়া কইলো ‘তোরে তো পাঞ্জাবিরা মাইরালাইবো।’
হোসেন আলী বলেন, ‘আমি বহুদিন বহু লোকরে কইছি ওই শিশুটা আমি। আমি তো কাঙাল মানুষ, তাই আমার কথা কেউ শোনে না, পাত্তা দেয় না। আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, বঙ্গবন্ধুর বডিগার্ড মহিউদ্দীন ভাই তো এখনো বাঁইচা আছে। আমারে তাগো কাছে লইয়া যান।’ বুকে একটা কালো দাগ দেখিয়ে বললেন, ‘আসল ছবিটার সঙ্গে মিলাইয়া দ্যাখেন। সবকিছু পরিষ্কার হইয়া যাইবো।’ হোসেন আলীর ছেলে উজ্জ্বল হোসেন বাবু বলেন, ‘ছোটবেলা বেলা থেকে বাবার মুখে এই কথা শুনে শুনে বড় হয়েছি। বাবার চুলের শেপটা দেখেন, মিল পাবেন।’
হোসেন আলীর গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার চান্দেরকান্দিতে। মফিজ উদ্দিন ও ফাতেমা বেগমের একমাত্র সন্তান তিনি। পথশিশু পরিচয়ে শৈশব কাটে ফুলবাড়িয়া টার্মিনালে। মুক্তিযুদ্ধের সময় থাকতেন আওয়ামী লীগ অফিসের নিচে। ৭৭ সালে ২২ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে শুরু করেন টোকানো কাগজের ব্যবসা। আটাশির বন্যায় দোকান তলিয়ে গেলে আবার নিঃস্ব হয়ে পড়েন। অনেক দিন রিকশা চালিয়েছেন। এখন আট হাজার টাকা বেতনে নৈশপ্রহরীর চাকরি নিয়েছেন। তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বেকার ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন মান্ডার কদমতলী এলাকার ঝিলপাড়ে।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে : ছবিটি কেমন করে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সেই গল্প বলেন ভারতের পদ্মশ্রী খেতাবপ্রাপ্ত আলোকচিত্রী টি কাশীনাথ। বাহাত্তরে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান ফেয়ারে অংশ নেয় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের ছবির নেগেটিভগুলো ফটোসাংবাদিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে দিল্লিতে যান ফটোসাংবাদিক মোহাম্মদ জহিরুল হক। বঙ্গবন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে একটি চিঠি লিখে দেন। জহিরুল হক সেই চিঠি পৌঁছান ভারতের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রীর হাতে। তথ্যমন্ত্রী ফটোগ্রাফি বিভাগের পরিচালক টি কাশীনাথকে ডেকে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করতে বলেন। কাশীনাথের তত্ত্বাবধানে ২০ ফুট বাই ৩০ ফুট সাইজে ছবিগুলো পরিবর্ধিত (এনলার্জ) করা হয়। রশীদ তালুকদারের তোলা ঊনসত্তরের পথশিশুর ছবি ও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ছবিটি প্রদর্শন করা হয় স্টলের প্রবেশমুখে। ছবি দুটি দেখার জন্য মেলায় আসা লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ে। বাংলাদেশের স্টলের সামনের ভিড় সরাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করতেও বাধ্য হয়। বাংলাদেশের শিল্পকলার এই চমকপদ তথ্যটি অনেক দিন এ দেশের মানুষের অজানা ছিল। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) রিসোর্স পারসন হিসেবে টি কাশীনাথ বাংলাদেশে এসে এ গল্পটি করেন।
নীরব অভিমান : ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোতে প্রথিতযশা আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদারের তোলা ছবিগুলো আমাদের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। ১৯৫৯ সালে রশীদ তালুকদারের কর্মজীবন শুরু। বাষট্টিতে দৈনিক সংবাদে আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করার আগে তিন বছর ৮০ টাকা বেতনে ফটো টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন পিআইডিতে। সংবাদে কাজ করেছেন টানা ১৩ বছর। এরপর তিনি যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে। বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার ঘটনা প্রভৃতির অসংখ্য ছবি তুলে স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির অল রোভস প্রোগ্রামে প্রতি বছর বিশ্বের একজন সেরা ফটোসাংবাদিককে পাইওনিয়ার ফটোগ্রাফার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। ২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এ পদক পান রশীদ তালুকদার। তার তোলা ছবি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া এনসাইক্লোপিডিয়ায় যুক্ত হয়েছে। এত কিছুর পরও আমাদের রাষ্ট্র তাকে ঠিক বুঝে উঠতে সক্ষম হয়নি। রাষ্ট্রের অন্যমনস্কতায় নীরব অভিমানে ২০১১ সালের ২৫ অক্টোবর ৭২ বছর বয়সে পরলোকে চলে গেলেন বাংলাদেশের ইতিহাস নির্মাণকালের এই রূপকার।
লেখক : দেশ রূপান্তরের আলোকচিত্র সম্পাদক
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে গড়ে উঠছে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর। এই সমুদ্রবন্দরে প্রবেশ করতে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ নীল পানির চ্যানেল (জাহাজ চলাচলের পথ) দেখে মনে হবে যেন উন্নত কোনো দেশের বন্দর। এই নীল জলরাশির তীরেই গড়ে উঠবে উপমহাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর। কিন্তু এই নীল পানি দেখে আশাবাদী হওয়ার বদলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের (চবক) কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। যার কারণ হলো কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত চ্যানেলের জন্য খরচ হওয়া প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার দায় পড়তে যাচ্ছে চবকের কাঁধে।
গত রবিবার মাতারবাড়ী ঘুরে দেখা যায়, ৩৫০ মিটার চওড়া ও ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল নির্মাণের কাজ শেষ। কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় জেটি নির্মাণও হয়ে গেছে, সেই জেটিতে ইতিমধ্যে ১১২টি জাহাজ ভিড়েছেও। কিন্তু চ্যানেলের জন্য চবককে পরিশোধ করতে হবে ৯ হাজার ৩৫০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ঋণ হিসেবে রয়েছে ৭ হাজার ৯২২ কোটি ১৬ লাখ এবং বাংলাদেশ সরকারের ১ হাজার ৪২৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এই টাকা কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় খরচ করা হয়েছিল। আর কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্যই চ্যানেলটি নির্মাণ হয়েছিল। এখন যেহেতু এই চ্যানেলকে ব্যবহার করে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে উঠছে, তাই তা নির্মাণের সব খরচ চবককে পরিশোধ করতে হবে বলে গত ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবকে প্রধান করে একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়, যে কমিটি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাছ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের কাছে চ্যানেলটি ও তা নির্মাণের ব্যয় হস্তান্তরের পদ্ধতি নির্ধারণ করবে।
কিন্তু এই টাকা পরিশোধ নিয়ে বিপাকে পড়েছে চবক। এ বিষয়ে বন্দর কর্র্তৃপক্ষের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এই সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার মধ্যে জাইকার ৭ হাজার ৯২২ কোটি ১৬ লাখ ঋণের পরিশোধ শুরু হবে আগামী বছর থেকে। সেই হিসাবে প্রথম বছরে পরিশোধ করতে হবে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা এবং পরবর্তী বছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। শুধু কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় ঋণ নয়, মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণের জন্য জাইকা থেকে ৬ হাজার ৭৪২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে চবক। এই টাকার বিপরীতে ২০২৯ সালে জাইকাকে দিতে হবে ১ হাজার ৮১৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা, পরে প্রতি বছর ঋণ ও সুদ বাবদ দিতে হবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া মাতারবাড়ী বন্দরের ড্রেজিং বাবদ বছরে খরচ হবে প্রায় ৫০ কোটি এবং এই বন্দর পরিচালনায় প্রতি বছর ভর্তুকি দিতে হবে প্রায় ৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে শুধু ঋণ শোধ বাবদ চবককে পরিশোধ করতে হবে ৪ হাজার ৪২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে আগামী বছর লাগবে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। বাকি টাকা পর্যায়ক্রমে ২০২৬ সাল থেকে প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া বে টার্মিনালের ব্রেক ওয়াটার ও চ্যানেল নির্মাণের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে চবক। অন্যদিকে চবকের বার্ষিক গড় আয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। তাহলে চবক এত টাকা কীভাবে পরিশোধ করবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
চবকের দাবি, চ্যানেল নির্মাণের খরচ যাতে তাদের কাঁধে দেওয়া না হয়। কিন্তু এই টাকা পরিশোধ করতে হবে বলে জানিয়েছেন কয়লাবিদ্যুৎ (কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড সিপিজিসিবিএল) প্রকল্পের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। এ প্রসঙ্গে তিনি গতকাল সোমবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই চ্যানেল কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নিমির্ত হয়েছে। এখন যেহেতু বন্দর কর্র্তৃপক্ষ চ্যানেল ব্যবহার করবে, তাহলে তো তাদের টাকা দিতেই হবে। আর এই টাকা তো ৪০ বছরে পরিশোধ করতে হবে।’
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। জাইকার অর্থায়নে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে মাতারবাড়ী পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ, ১৬ মিটার ড্রাফট (গভীরতা) এবং ২৫০ মিটার চওড়া চ্যানেল নির্মাণ হয় বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায়। কয়লাবিদ্যুতের চ্যানেলের ওপর ভিত্তি করে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলা যায় বলে জাইকা একটি প্রস্তাবনা দেয়। সেই প্রস্তাবনা ও পরে সমীক্ষার পর ‘মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয়। আর এরই আওতায় চ্যানেলের প্রশস্ততা ১০০ মিটার বাড়ানোর পাশাপাশি গভীরতাও ১৮ মিটারে উন্নীত করা হয়। এ জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষ ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ ১৩ হাজার টাকার বাজেট একনেক থেকে অনুমোদন করে। এর মধ্যে জাইকার ঋণ ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ ৫ হাজার টাকা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের (নিজস্ব তহবিল) ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা এবং বাংলাদেশ সরকারের ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। মাতারবাড়ীতে ৩৫০ মিটার দীর্ঘ ও ১৬ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের গভীরতা) জাহাজ ভিড়তে পারবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে ২০০ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে। মাতারবাড়ী চালু হলে এর সঙ্গে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রাবন্দরের নেটওয়ার্ক আরও বাড়বে। ফলে গভীর সমুদ্রবন্দরের অভাব পূরণ করবে মাতারবাড়ী বন্দর।
প্রণয় রায়কে কোথায় পাব? ২০০০ সালের শুরুতে এরকম একটা জিজ্ঞাসা নিয়ে আমি তখন ফোন করেছিলাম এনডিটিভিরই এক স্পোর্টস রিপোর্টারকে, যে প্রণয় রায়কে ব্যক্তিগতভাবে বহু বছর খুব ভালো চেনে, তার প্রতিষ্ঠানে বহু বছর চাকরি করেছে। মনে রাখতে হবে, এমন একটা সময় তখন, যখন সেলফোন সবে এসেছে বা আসেনি, সেই সময় কাউকে ধরার জন্য, এখন যেরকম একটা যন্ত্রই সতেরো সেকেন্ডে কাউকে ধরিয়ে দেয়, তখন তা সম্ভব ছিল না। আর প্রণয় রায়ের মতো বিখ্যাত কেউ হলে তো সেটা প্রায় অসম্ভব। আমি এনডিটিভিতে কয়েকবার ফোন করে নিষ্ফল চেষ্টার পর এই রিপোর্টারের শরণ নেই। তখন সে খোঁজটোজ নিয়ে জানাল, প্রণয় রায় এখন ট্রেনে করে দিল্লি থেকে বোম্বে যাচ্ছেন। আমি সে সময় একটা বই লিখি, যে বইটা ছিল অনেক প্রফেশনালের লেখার সংকলন। বইটার নাম ছিল সেলিব্রেটি এখন আপনিও। আমার কোথাও মনে হয়েছিল যে, এই বইটা যেহেতু টেলিভিশন দুনিয়ায় কী করে সফল হতে হবে এবং সফল হয়ে কীভাবে চলতে হবে তার ওপর একটা কম্পাইলেশন, সেখানে প্রণয় রায়ের কোনো কিছু থাকবে না এটা হতেই পারে না এবং সেই বইটাতে অনেকেই লিখেছিলেন। রাজদীপ, অর্ণব গোস্বামী, রজত শর্মা, তখন খুব বিখ্যাত আরজে রুবি ভাটিয়া, প্রিয়া টেন্ডুলকার। আমার মনে হয়েছিল যে, এই বইটার মুখবন্ধ, তারই করা উচিত, যিনি ভারতীয় টেলিভিশনের জনক এবং সেই কাজটা প্রণয় রায় ছাড়া আর কে করতে পারেন! কিন্তু আমি খুব আশ্চর্য শুনে, যে এনডিটিভির মালিক, তিনি কি না দিল্লি থেকে মুম্বাই যাচ্ছেন ট্রেনে করে! এবং শুনলাম ট্রেন থেকে তিনি মুম্বাইতে নেমে, আবার নাকি ট্রেনে উঠবেন। অর্থাৎ সারমর্ম হচ্ছে, আগামী তিন দিনের মধ্যে আমি তাকে ধরতে পারব না। আমার জন্য যেটা তখনকার মতো সবচেয়ে অবাক লেগেছিল যে, টানা তিন দিন ট্রেনে চড়ে ভারতবর্ষ ঘুরছেন, এত বড় এমন একজন মানুষ যার কাছে প্রত্যেকটা সেকেন্ড দামি। তখন আমায় ওর সহকর্মীরা বললেন যে, উনি এরকমই মাঝেমধ্যে ট্রেনে করে ভারত দেখতে বেরিয়ে পড়েন। বহুকষ্টে প্রণয় রায়কে তারপর ধরা গিয়েছিল। মুখবন্ধটা উনিই লিখেছিলেন আমার বইয়ের। কিন্তু আমার বিস্ময় এখনো কাটেনি। এরকম একজন মিডিয়া ব্যারেন কী করে তার ব্যস্ততার মধ্যে ট্রেন ট্রাভেলের মতো একটা ইচ্ছাকৃত ঝুঁকি নিতে পারেন, ঝক্কি নিতে পারেন, যেখানে তিনি সহজেই দুই ঘণ্টায় মুম্বাই থেকে দিল্লি প্লেনে পৌঁছে যেতে পারেন। প্রণয় রায় নামটার সঙ্গে প্রথম পরিচয় আর সবার মতোই অনেক দূর থেকে। ‘ওয়ার্ল্ড দিস উইক’ বলে একটা অনুষ্ঠান থেকে এবং তখন দেখেই মনে হয়েছিল যে, ফেলুদার কখনো ইংলিশ ভার্সন হলে, সেখানে তার রোলটা করার পক্ষে সবচেয়ে উপযুক্ত প্রণয় রায়। ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি, হাইট; ফেলুদা অবশ্য কখনো ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি রাখেননি, কিন্তু তিনি যে বাঙালি, ইন্টেলেকচুয়াল, যে মননের সঙ্গে ফেলুদাকে দেখতে অভ্যস্ত বা বাঙালি এক করে ফেলেছে, সেই পুরো ফেলুদার ভাবধারাটাই যেন প্রণয় রায় তার মধ্যে বহন করেন। অর্থাৎ তিনি অকুতোভয়। তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান। তিনি শিক্ষিত এবং তিনি খুব সচল, খুব অ্যালার্ট। ওয়ার্ল্ড দিস উইক-এ তাকে দেখে যেরকম সারা ভারতবর্ষ মোহাবিষ্ট হয়ে গিয়েছিল, তারপর আমরা তাকে দেখলাম ইলেকশন অ্যানালাইসিস করতে এবং তখনই একটা নতুন টার্মের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটল। যার নাম হচ্ছে সেফোলজিস্টস অর্থাৎ যিনি ইলেকশন ট্রেন্ডস এবং স্ট্যাটিসটিকস বিশ্লেষণ করেন। ভারতবর্ষে তার আগে, প্রাক-প্রণয় রায় যুগে যেমন পেশাদার টেলিভিশন ছিল না, তেমনি সেফোলজিস্ট শব্দটাও শোনা যায়নি। যাই হোক, প্রণয় রায় তারপর আমাদের সঙ্গে, নির্বাচনের আগে প্রাক-নির্বাচনী সিট পোল করা শুরু করলেন। নির্বাচনের পর বিশ্লেষণ শুরু করলেন এবং নতুন একটা ঘরানা নিয়ে এলেন যেটা এর আগে ভারতীয় টেলিভিশনে কেউ দেখেনি। এবং যেটার মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গিতে অসম্ভব একটা আন্তর্জাতিকতা আছে। আমার তখন থেকেই মনে হতো যে, এই ভদ্রলোকের সঙ্গে যে করে হোক, আলাপ করতে হবে, আবার একই সঙ্গে মনে হতো যে, আলাপ হলে যদি মুগ্ধতা কেটে যায় তাহলে আলাপ না হওয়াই ভালো। দূর থেকে তাকে দেখাটাই ভালো। দুরকম একটা, স্ববিরোধী একটা ভাবনা নিজের মনের মধ্যে ঘুরত। এরপর প্রণয় রায় দেখালেন যে, তিনি শুধু এককভাবে স্টার নন। অর্থাৎ তার শুধু স্টার হলেই চলছিল। স্টার প্রণয় রায়ই যথেষ্ট ছিলেন ভারতবর্ষের জন্য যেভাবে তিনি বিল গেটসকে ইন্টারভিউ করেছেন, যেভাবে তিনি নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে কথা বলেছেন, যেভাবে তার শোগুলো বিশ্লেষণ করেছেন, কখনো কখনো বড় শো করতে এসেছেন লাইভ শো, সেটাই যথেষ্ট ছিল টেলিভিশনের পৃথিবীতে, তাকে পাকাপাকিভাবে রেখে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি ঠিক করলেন যে, তাকে শুধু ভারতীয় টেলিভিশনের অমিতাভ বচ্চন হলেই চলবে না, তাকে একই সঙ্গে হতে হবে ভারতীয় টেলিভিশনের রাজ কাপুর। তাই এনডিটিভি প্রতিষ্ঠা করে নিলেন, তার আগপর্যন্ত তিনি অনুষ্ঠানগুলো স্টারে করছিলেন, অন্য চ্যানেলে করছিলেন, এবার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান নিয়ে এলেন এবং সেই প্রতিষ্ঠানে একটা, যেটাকে লেফট লিবারেল সেন্টিমেন্ট আমরা বলি, সেটার তো ধারক এবং বাহক হয়ে গেলেন গোটা ভারতবর্ষে, একই সঙ্গে অনেক তারার জন্ম দিলেন।
এ তারার জন্ম দেওয়া নিয়ে ভারতবর্ষের মিডিয়া জগতে দুই রকম মতবাদ আছে। বেশিরভাগ মিডিয়া ব্যারেন, তারা মনে করেন যে স্টার তৈরি করাটা বিপজ্জনক, কারণ স্টার আজ আছে, কাল অন্যের হয়ে তারাবাজি করবে। আমাকে ছেড়ে দেবে। তখন সেই তারাবাজির আলোটা আমাকে সহ্য করতে হবে। তার চেয়ে বাবা সবচেয়ে ভালো হচ্ছে, আমি যদি কিছু স্ক্রিন প্রফেশনাল তৈরি করি যাদের বাহ্যিক সেরকম কোনো পরিচিতি নামডাক থাকবে না, কিন্তু যারা খুব এফিশিয়েন্ট হবে। যেটাকে আমরা অনেক সময় ক্রিকেটের ভাষায় বলি লাইন অ্যান্ড লেন বোলার। অর্থাৎ তার ফ্ল্যামবয়েন্স থাকবে না, সে অত্যন্ত পেশাদার হবে, মানে কাজটা তুলে দেবে। যদি সেরকম করি তাহলে সুবিধা হচ্ছে যে, সেই ধরনের পেশাদার সে যদি অন্য জায়গায় চলে যায় আমি আরেকটা পেশাদারকে নিয়ে আসতে পারব। কিন্তু যদি আমার এখান থেকে একটা রাজদীপ চলে যায়, কী অর্ণব চলে যায়, তাহলে আমার সমস্যা যে লোকে প্রতিনিয়ত জিজ্ঞেস করবে যে, ও চলে গেল কেন? ও নেই কেন? তখন অনেক রকম আমার সমস্যা দেখা দিতে পারে। বেশিরভাগ ভারতীয়, আবার বলছি, বেশিরভাগ ভারতীয় মিডিয়া ব্যারেন আজও তাই মনে করেন, ভারতের সবচেয়ে বড় খবরের কাগজ টাইমস অব ইন্ডিয়া তারা আজও ওই ঘরানায় বিশ্বাসী যে, স্টার তোলার দরকার নেই, তোলার দরকার আছে এফিশিয়েন্ট প্রফেশনাল, প্রণয় রায় এখানেও ইউনিক, তিনি এই ধারণাটা কমপ্লিটলি ভেঙে দিয়েছেন, এত সব স্তর তিনি তুলেছেন, যে ভারতীয় টেলিভিশনে সেকেন্ড কোনো নমুনাও নেই বোধহয়। এক থেকে দশ, দিকে দিকে কতগুলো নাম বলব? অর্ণব গোস্বামী, বরখা দত্ত, রাজদীপ, নিধি, রাজদান, রবিশ কুমার, শ্রীনিবাসন জৈন, বিক্রম চন্দ প্রত্যেকে একেকজন স্টার ভারতীয় মিডিয়া জগতের এবং ওদের প্রত্যেককে কিন্তু তুলেছেন প্রণয় রায়। অনেকেই ছেড়ে গেছেন, তাতে তার কিছু এসে যায়নি। তিনি স্টার তৈরির কারখানাতে একইরকমভাবে মনোনিবেশ করেছেন। পরের লোকটাকে বের করে আনার জন্য ইভেন এই চাপের মুখে অচঞ্চলতা এটাও প্রণয় রায়ের একটা হিউজ ট্রেডমার্ক। আমি কখনো দেখিনি কোনো ছবিতে, কখনো শুনিনি যে তিনি অত্যন্ত স্ট্রেসড হয়ে আছেন, নিশ্চয়ই স্ট্রেসড হয়েছেন গত কিছুদিন, কয়েক মাসের ঘটনা যে রকম যখন তিনি এনডিটিভি ছেড়ে দিতে বাধ্য হলেন, অবশ্যই স্ট্রেসের মুখে ছিলেন, কিন্তু কোথাও কখনো পাবলিকলি স্ট্রেসের ভাবটা দেখাননি, যাতে তার ডিগনিটিটা অক্ষুন্ন থাকে, এই পাবলিক লাইফে প্রচ- স্ট্রেসের মধ্যে ডিগনিটি বজায় রাখাটাও প্রণয় রায়ের একটা হিউজ হিউজ ট্রেডমার্ক এবং এটা অনুকরণযোগ্য। আমার একটা সময় বারবার মনে হতো যে প্রণয় রায়ের সঙ্গে কাজ করছি না কেন? কেন প্রণয় রায়ের কোম্পানিতে কাজ করার চেষ্টা করছি না? তারপর সবাই বলত যে, একটু প্রণয় রায়ের সঙ্গে কাজ করতে হলে অক্সফোর্ড বা কেমব্রিজ থেকে পাস করতে হবে অথবা তাদের বাবাদের হতে হবে আইএফএস কিংবা আইএস, প্রণয় যাদের রিক্রুট করেন তাদের যদি আমরা দেখি তারা কোথা থেকে এসেছে, তাহলে দেখা যাবে তারা অত্যন্ত উচ্চবিত্ত সমাজ থেকে এসেছে।
প্রণয় রায়ের ওখানে একেবারে লোয়ার মিডল ক্লাস কেউ নেই, হয়তো কথাটা কতটা অসত্য, হয়তো কথাটা কিছুটা সত্য। কিন্তু আমি সাম হাউ আর কখনো চেষ্টা করিনি। দূর থেকে সবসময় একটা অদ্ভুত রেসপেক্ট এনডিটিভি গ্রুপ সম্পর্কে আমার এবং অন্য অনেক সাংবাদিককুলের বজায় ছিল যে, এরা হয়তো চাপের মুখে তাদের টেকনিক চেঞ্জ করেনি। তারা হয়তো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলছে না, অনেকে বলত যে এনডিটিভিতে ডিসকাশনগুলো খুব বোরিং হয়ে যাচ্ছে। হতে পারে কিন্তু তারা সাবেকি যে ছাঁচটা সাংবাদিকতার, সেটা টেলিভিশনের ঢঙ্কানিনাদে এসেও কিন্তু বজায় রেখেছিল। এবং এই চিৎকার-চেঁচামেচি, মারদাঙ্গা যেটা আধুনিক ভারতীয় টেলিভিশনের ট্রেডমার্ক হয়ে গেছে, সেটা থেকে বরাবর এনডিটিভি দূরে থেকেছে।
তাতে তাদের টিআরপি পড়েছে। তারা কেয়ারও করেনি। তারা মনে করেছে, আমরা এভাবে করতে চাই। এভাবেই করব। বাকি পৃথিবী যা ইচ্ছে বলুক, কিছু আসে যায় না। রাষ্ট্রপতি ভবনে এনডিটিভির একটা বিশাল অনুষ্ঠান হয়েছিল যখন প্রণব মুখার্জি রাষ্ট্রপতি, সেটাতে অমিতাভ বচ্চন, শচীন টেন্ডুলকার, আশা ভোঁসলেসহ অনেকে এসেছিলেন। সেই অনুষ্ঠানটা দেখতে দেখতে আমার মনে হচ্ছিল যে, একজন মানুষের কতটা হোল্ড থাকলে তিনি রাষ্ট্রপতি ভবনে তার চ্যানেলের এরকম একটা অনুষ্ঠান করতে পারেন। পরবর্তীকালে সেটা নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল।
প্রশ্ন উঠেছিল কী করে রাষ্ট্রপতি একটা প্রাইভেট চ্যানেলকে সেখানে অনুষ্ঠান করতে দিতে পারেন। কিন্তু আমার বারবার মনে হচ্ছিল যে, শ্রদ্ধার কোন পর্যায়ে গেলে, কন্টাক্টস কোন পর্যায়ে থাকলে, তিনি রাষ্ট্রপতি ভবনে তার ব্যক্তিগত চ্যানেলের এরকম একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারেন! মহেন্দ্র সিং ধোনি একটা সময় এনডিটিভির সঙ্গে ছিলেন এবং তখন এনডিটিভির দু-একটা অনুষ্ঠান করেছিলেন। আমার মনে আছে, ধোনি একবার সাউথ আফ্রিকায় বললেন, আরে এনডিটিভি কী করে করছে! এটাই প্রণয় রায়ের সবচেয়ে বড় সাফল্য এ কথাটা যে মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো মানুষ বলছেন! এটা ঠিক শোভা পায় না অর্থাৎ সবসময় এনডিটিভির একটা নির্দিষ্ট বেঞ্চমার্ক ছিল। সেটা হচ্ছে শাসকের বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই। প্রশ্ন তোলা। সাহসী প্রশ্ন তোলা। আবার চাপের মুখে মাথা না নামানো, ওই যে বললাম একটা বামপন্থি লেফট লিবারেল দৃষ্টিভঙ্গি।
অনেকেই বলত যে, প্রণয়ের স্ত্রী রাধিকা রায়ের বোন যেহেতু বৃন্দা কারাত, সেজন্যই এ দৃষ্টিভঙ্গি। আমার কখনো তা মনে হয়নি। আমার মনে হয়েছিল প্রণয় রায়ের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি। একেবারে তিনি কলকাতায় হয়তো খুব বেশি সময় কাটাননি। কিন্তু কলকাতার ওই উদার বামপন্থি যে দৃষ্টিভঙ্গি, সেই উদার বামপন্থার সঙ্গে তার মনোভাব একেবারে একরকম। এবং সে জন্যই, বদলে যাওয়া ভারতবর্ষে তার বারবার করে সমস্যা হচ্ছিল এবং সমস্যা হওয়ার বোধহয় কথাও ছিল। কারণ তিনি যেটা বলছিলেন, শাসকরা বলছিলেন কমপ্লিটলি তার বিপরীত কিছু। এখনকার ভারতবর্ষের মিডিয়ায় বিপরীতমুখী আওয়াজটা আর কিছুদিন বাদে আমার ধারণা একমাত্র ফিল্মেই দেখা যাবে, ভারতবর্ষের টেলিভিশনে দেখা যাবে না।
আমার তো মনে হয় যখন এই ছবিগুলো দেখানো হবে যে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস কী রকম লড়াই করেছিল, এককালে আনন্দবাজার গ্রুপ কী লড়াই করেছিল, টাইমস নিয়ে মাঝখানে গিয়ে লড়াই করেছে, এনডিটিভি দীর্ঘদিন ধরে কী লড়াই করেছে সেগুলো বোধহয় ইতিহাসের পাতাতেই চলে গেল। তাই বলে প্রণয় রায়! যিনি কখনো ইতিহাসের কথায় যাবেন না। প্রণয় রায় ইতিহাস হয়ে ইতিহাসের পাতায় থাকবেন। আমার মনে হয়েছে যখন একটা সময় জগমোহন ডালমিয়া রবি শাস্ত্রীকে ইন্ডিয়ান টিমের কোচ হতে বলছিলেন এবং তিনি কোচ হব কি হব না এটা নিয়ে নানান কথা বলছিলেন। তখন আমায় শাস্ত্রী বলেছিলেন যে, আমি তিনটে শর্ত দিয়েছি, একটা শর্ত যে টিম সিলেকশনের ভার আমাকে দিতে হবে। দুই, টিম সিলেকশনের ভার আমার যদি না থাকে, আমার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মত থাকবে। তিন, চূড়ান্ত এগারোর ব্যাপারে আমার মতামত থাকবে। ফোর্থ, টিমের ফিটনেসের ব্যাপারে আমি কিছু কথা বলব। আমি তখন বলেছিলাম যে, আপনি ম্যানেজার হয়তো হবেন। কিন্তু আপনি থাকতে পারবেন না। কারণ আজাহারউদ্দিন। আপনি যদি এসব কথা বলেন তাহলে আজহারউদ্দিন আপনাকে ম্যানেজার রাখবেন না। উনি যেরকম পাওয়ারফুল, ডালমিয়ার সঙ্গে যেরকম সম্পর্ক, আপনাকে চলে যেতে হবে। তখন শাস্ত্রী বলেছিলেন যে, চলে যেতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু গোটা ড্রেসিংরুম জানবে, আমায় কেন চলে যেতে হয়েছিল। ওই রেসপেক্টটাই আমার পাওনা হবে। শাস্ত্রী সেই সময় ভারতীয় দলের কোচ হননি এবং হন অনেক পরে, কিন্তু আজ কোথাও মনে হচ্ছে যে, প্রণয় রায়ের এনডিটিভি থেকে চলে যাওয়া তার অসম্মান, তার অমর্যাদা এসবকিছু ইতিহাসে থেকে গেল, এভাবে ইতিহাস জানল লোকটাকে কেন চলে যেতে হয়েছিল। আমি ইমরান খানকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনাকে এই যে জেলে পুরে অসম্মান করা হলো, আপনার কী মনে হয়েছিল সেই সময়? উনি বলেছিলেন, আমার কিছুই মনে হয়নি, আমার মনে হয়েছিল, গবেটগুলো যে ভুল করেছিল, সেগুলো ইতিহাসের পাতায় চলে গেল।
প্রণয় রায়ের কাহিনী সম্পর্কে আবার তাই মনে হয় যে, গবেটগুলো কী করে জানবে যে ওরা নিজেদেরও ইতিহাসের পাতায় নিয়ে চলে গেল। কিন্তু এটা নিশ্চয়ই সাময়িক। আর তাই বলছি, প্রণয় রায় চলে যাবেন নতুন প্রণয় রায় নিশ্চয়ই ফেরত আসবেন, তাই এটা দীর্ঘকালীন হতে পারে না। এটা সাময়িক। তাই লেখাটার হেডিং বললাম, মেরুদণ্ডের টাইম আউট।
শ্রুতিলিপি : শিমুল সালাহ্উদ্দিন
প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার তালিকাভুক্ত। কিন্তু বাস্তবে অস্তিত্ব নেই। অথচ সরকারি শুল্ক সুবিধার আওতায় বিদেশ থেকে রপ্তানি পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। এমন ৫৩টি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংস্থার প্রাথমিক তদন্তে ব্যাংকিং চ্যানেলে এসব প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচারের তথ্যও মিলেছে। এ ছাড়া আরও ৭১টি প্রতিষ্ঠান একই সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করার মাধ্যমে আর্থিক অনিয়ম ও অর্থ পাচারে যুক্ত বলে এনবিআরের তদন্তে জানা গেছে।
চিহ্নিত এই ১২৪টি প্রতিষ্ঠানের হিসাব জব্দ করা হয়েছে। তদন্ত শেষে পর্যায়ক্রমে গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাব জব্দ করা হয়। এ ছাড়া ব্যবসার লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। আমদানি-রপ্তানিতেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এগুলোর অধিকাংশই তৈরি পোশাক শিল্প ও এর সহযোগী শিল্পের প্রতিষ্ঠান। তাদের পাচার করা অর্থের পরিমাণ চিহ্নিত করতে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সদস্য এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, একেকটি প্রতিষ্ঠান একাধিক চালানে কম করেও ৫ কোটি থেকে ২৫ কোটি টাকার পণ্য এনে খোলাবাজারে বিক্রি করেছে। অন্যদিকে একেকটি প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচারের পরিমাণও ৮ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকা বা তার বেশি। এই হিসাবে ১২৪ প্রতিষ্ঠান প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার পণ্য এনে অবৈধভাবে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে এবং আরও প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা পাচার করেছে। প্রাথমিক তদন্তে এসব পাওয়া গেলেও চূড়ান্ত হিসাবের কাজ চলছে। চূড়ান্ত হিসাবে অর্থের পরিমাণ বাড়তে বা কমতে পারে।
এভাবে শুল্ক সুবিধায় কাঁচামাল এনে খোলাবাজারে বিক্রি করে দেওয়ার কারণে দেশি শিল্পে কী ধরনের প্রভাব পড়ে জানতে চাইলে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশি শিল্প সব ধরনের রাজস্ব পরিশোধ করে পণ্য উৎপাদন করে বলে তাদের উৎপাদন খরচ বেশি। অন্যদিকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় পণ্য আমদানিতে শুল্ক দেওয়া লাগে না বলে খরচ কম হয়। তাই দাম কম থাকে। কম দামে পণ্য পাওয়ায় ক্রেতারা এসব পণ্য বেশি কেনে। অন্যদিকে দেশি পণ্য ন্যূনতম লাভ রেখে বিক্রি করলেও এর সঙ্গে পেরে ওঠে না। ফলে দেশি শিল্প প্রতিষ্ঠান লোকসানে পড়ছে।
এনবিআর কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত ১৭ সদস্যের টাস্কফোর্স কমিটি ১২৪ প্রতিষ্ঠানের পাঁচ বছরের (২০১৭-২০২১) আমদানি-রপ্তানিসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য খতিয়ে দেখেছে। বিশেষভাবে কী পরিমাণ কাঁচামাল আমদানি হয়েছে, কতটা উৎপাদন করা হয়েছে, রপ্তানির পরিমাণ কত, ব্যাংকে এলসি বা ঋণপত্রের মাধ্যমে কী পরিমাণ অর্থ কোন কোন দেশের অনুকূলে পাঠানো হয়েছে, তদন্তে এসব গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে। টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যে ৭১ প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে আছে, তারা কাঁচামাল আমদানি ও রপ্তানিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আর্থিক অনিয়ম করেছে। যে পরিমাণের কাঁচামাল প্রয়োজন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। অন্যদিকে যা রপ্তানি করার কথা তার চেয়ে কম পরিমাণ এবং নামসর্বস্ব পণ্য উৎপাদন করে রপ্তানি করেছে। অন্যদিকে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানগুলোও বাইরে থেকে কিনে নামমাত্র পণ্য রপ্তানি করেছে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তৈরি পোশাক ও সহযোগী শিল্প কারখানা ছাড়াও ইলেকট্রিক, প্লাস্টিক খাতের প্রতিষ্ঠান আছে। কাঁচামাল হিসেবে তারা আর্ট কার্ড, ডুপ্লেক্স বোর্ড, মিডিয়াম পেপার, লাইনার পেপার, পলিপ্রোপাইলিন (পিপি), বিএপিপি ও এডহেসিভ টেপ, প্লাস্টিক দানা, হ্যাঙ্গার, পলিথিন, সুতা, কাপড়, তারসহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম আমদানি করেছে। কিন্তু সেসব কাঁচামাল কারখানায় না নিয়ে রাজধানীর নয়াবাজার, বংশাল, বকশীবাজার, হাতেম টাওয়ার, ধোলাইখাল, টঙ্গীতে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিরপুর ২ নম্বরের বেলুকুচি নিট ওয়্যার, আদাবরের ঠিকানায় কভারস অ্যান্ড কভার ইন্ডাস্ট্রি, শ্যামপুর কদমতলীর ইমপেকস প্যাকেজিং লিমিটেড, টঙ্গীর এম এম ওয়াশিং প্ল্যান্ট লিমিটেড, বনানীর বিমানবন্দর সড়কের পারসা লিমিটেড, বনানী জি ও এইচ ব্লকে রাইন ফ্যাশন লিমিটেড, টঙ্গীর ওয়েলড ড্রেসেস লিমিটেড, মিরপুর পল্লবী সেকশন ৭-এর মারকাভ ডিজাইনারস লিমিটেড, ঢাকার কোতোয়ালির ঠিকানায় ম্যানিলা পলিমার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডসহ ১২৪ প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা দেওয়া হয়। কিন্তু ঠিকানায় গিয়ে ৫৩টির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাস্তবে কোথাও দোকান, আবাসিক ভবন, শপিং মল, ছাত্রী হোস্টেল, স্কুল পাওয়া গেছে। মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার ঠিকানায় আফট্যাকস লিমিটেড অবস্থিত বলা হলেও বাস্তবে সেখানে রয়েছে দোকান।
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, শতভাগ রপ্তানিমুখী হিসেবে ১২৪টি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্ত। উৎপাদনে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা পরিচালক হিসেবে যাদের নাম দেওয়া হয়েছে, তারা এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন। তাদের দাবি, কাঁচামাল আমদানি ও পণ্য রপ্তানিসংক্রান্ত একটি কাগজেও তাদের স্বাক্ষর নেই। তবে এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, এসব ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
সম্প্রতি রাজধানীর বাবুবাজারে বিক্রি করতে নেওয়ার সময় ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কর্মকর্তারা বন্ড সুবিধা বা শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানিকৃত কাগজসহ একটি কাভার্ড ভ্যান আটক করে। এসব কাগজ এবি প্যাকেজিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান বন্দর থেকে খালাস করে এনেছিল। আটক পণ্যের বাজারমূল্য প্রায় ১৪ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে শুল্ক-করসহ দাম হয় প্রায় ২৬ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন চালানে এক বছরে প্রায় ১২ কোটি টাকার পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি করেছে।
শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের পণ্য উৎপাদনে সরকার কাঁচামাল আমদানিতে ‘বন্ড সুবিধা’ নামে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে। এই সুবিধা নেওয়া প্রতিষ্ঠানকে কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক দিতে হয় না। এই সুবিধা পেতে হলে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে কিছু শর্ত মেনে চলতে হয়। শর্তগুলোর অন্যতম হলো, শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানিকৃত কাঁচামালের সবটা উৎপাদনে ব্যবহার করতে হবে। উৎপাদিত সব পণ্য রপ্তানি করতে হবে এবং সামান্য কাঁচামালও খোলাবাজারে বিক্রি করা যাবে না। এসব শর্ত ভঙ্গ করলে শাস্তি হিসেবে বন্ড সুবিধা বাতিল এবং ব্যবসায়ের লাইসেন্স স্থগিত হবে। আর্থিক অনিয়মের সমপরিমাণ অর্থ, রাজস্ব এবং জরিমানাসহ নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। প্রয়োজনে কারখানার জমি, যন্ত্রপাতি জব্দ করা হবে। আমদানিকারকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার আইনি সুযোগ আছে। শাস্তি হিসেবে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ও এর সঙ্গে জড়িতদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা যাবে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১২৪টি প্রতিষ্ঠান আমদানিকৃত কাঁচামালের যে দাম উল্লেখ করে ঋণপত্র বা এলসি খুলে অর্থ পাঠিয়েছে, প্রকৃতপক্ষে আমদানি করেছে তার চেয়ে কম দামের ও কম পরিমাণের পণ্য। আমদানিকারকরা গোপনে বিদেশে নিজস্ব মালিকানাধীন বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান খুলে তার অনুকূলে দাম হিসেবে অর্থ পাঠিয়েছে। এ অবৈধ কারবারে ব্যাংক, বন্দর ও এনবিআরের কিছু অসাধু ব্যক্তিকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের সাবেক কমিশনার এবং এনবিআর সদস্য ড. শহিদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহারকারীদের চিহ্নিত করতে এনবিআর নজরদারি বাড়িয়েছে। তবে আইনি প্যাঁচে অনেক সময় তাদের শাস্তির আওতায় আনতে সময় লেগে যায়। এ বিষয়ে আরও কাজ করার সুযোগ আছে।
বন্ড দুর্নীতি চিহ্নিত করতে প্রিভেন্টিভ, নিয়মিত ও বিশেষ অডিট করা হয়। এসব অডিটে প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের পর চূড়ান্ত তদন্ত করা হয়। তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহে মাস থেকে বছরও পার হয়ে যায়। এরপর শুনানির জন্য অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের তলব করা হয়। তারপর মামলা হয় এনবিআরের আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলা নিষ্পত্তিতে পার হয়ে যায় বছরের পর বছর। রায় হওয়ার পর যেকোনো পক্ষের উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে। আটকে থাকা মামলার সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে।
এনবিআর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ার কারণে বন্ড দুর্নীতি বন্ধ হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আইন সংশোধনসহ এনবিআরকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
আর কখনো রাজনীতিতে জড়াবে না হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। মুচলেকা দিয়ে এ কথা বলেছে তারা। সংগঠনটির নেতারা আরও বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক দলের অংশও হবেন না তারা। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রকাশ্য বা গোপন কোনো সম্পর্কেই জড়াবে না হেফাজতে ইসলাম।
হেফাজতে ইসলাম বেশ কিছু শর্তও দিয়েছে। শর্তে তারা বলেছে, হেফাজত নেতা মামুনুল হকসহ যেসব নেতা কারাবন্দি রয়েছেন তাদের সবাইকে ছেড়ে দিতে হবে এবং মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। আওয়ামী লীগ ও হেফাজতে ইসলাম গত বছর ১৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে এ মুচলেকা দেয় এবং এসব শর্ত বা দাবি জানায়।
আগে হেফাজত নেতারা তিন মন্ত্রীর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেন। তারপর দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে মুচলেকা দেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা হেফাজতের মুচলেকা দেওয়ার কথা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন। সরকারের সহযোগী হিসেবে থাকার অঙ্গীকার করেছে হেফাজত।
১৪ দলের অন্যতম শরিক তরিকত ফেডারেশনের নেতা নজিবুল বশর মাইজভা-ারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, হেফাজতে ইসলামের চেয়ারম্যান তাকে জানিয়েছেন তারা কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়; তারা রাজনীতি করবে না। কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে তারা জোটবদ্ধও হবে না।
হেফাজতে ইসলাম আরও কিছু শর্ত দিয়েছে, যেমন কাদিয়ানি সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে এবং বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর বৃহত্তম বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশকে (বেফাক) সরকারি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে থেকে হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও তাদের মুক্তির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে মামুনুল হক এবং আরও কয়েকজনকে এখনই মুক্তি দেওয়া সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে সরকারি মহল। একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মামুনুলকে ছাড়তে হবে, যা সময়সাপেক্ষ।
সূত্রে আরও জানা গেছে, কাদিয়ানি সম্প্রদায় বিষয়ে হেফাজতের দাবি আপাতত আমলে নেওয়া হয়নি। কারণ, তাদের অমুসলিম ঘোষণা করা হলে বিদেশি চাপ আসবে। যে চাপ সামলানো প্রায় অসম্ভব। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন ঝামেলায় জড়ানো যাবে না বলে হেফাজত নেতাদের বলা হয়েছে। বেফাক ইস্যুতেও আপাতত কোনো উদ্যোগ নিতে চায় না সরকার। বেফাককে সরকারি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি মানাও আপাতত অসম্ভব, জানিয়েছে সরকার। তবে হেফাজত নেতাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, অন্য শর্তগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে আরও বৈঠক হবে।
হেফাজত নেতাদের বলা হয়েছে, ধর্মীয় বিভিন্ন অপপ্রচার চলছে সরকারের বিরুদ্ধে; এসব ব্যাপারে কথা বলতে হবে তাদের। জামায়াতবিরোধী অবস্থান নিয়ে কাজ করতে হবে হেফাজতকে। হেফাজত নেতারা বলেছেন, জামায়াত ইস্যুতে তারা কোনো ছাড় দেবে না। জামায়াতকে তারা ইসলামের ধারক-বাহক মনে করে না।
বলা যায়, হেফাজতের সঙ্গে সরকারের রাজনৈতিক বোঝাপড়া হয়েছে। এটা একটা ‘পলিটিক্যাল ডিল অর আন্ডারস্ট্যান্ডিং’। জানা গেছে, এ সমঝোতার ভিত্তিতেই হেফাজতের বিরুদ্ধে ২০৩টি মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে এবং নেতারা জামিন পেতে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে পুলিশকে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। হেফাজত ইসলামী বাংলাদেশের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে সরকার।
২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় এখনো তদন্ত হচ্ছে ২০৩টি মামলার। অনেক দিন ধরেই তদন্ত হচ্ছে। কিন্তু সুরাহা করতে পারছে না তদন্তকারী সংস্থাগুলো। হেফাজত নেতাকর্মীদের অনেকে কারাগারেও আছেন। তবে বেশিরভাগ আসামি প্রকাশ্যে চলাফেরা করছেন।
পুলিশের পাশাপাশি হেফাজত নেতারা মামলাগুলো নিয়ে ত্যক্ত-বিরক্ত। তারা এগুলোর নিষ্পত্তি চান। এ নিয়ে কয়েক দফা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন হেফাজত নেতারা। সর্বশেষ গত ১৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে হয়েছে। বৈঠকে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির অনুরোধ জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীও তাদের অনুরোধ বিবেচনায় নিয়ে সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
সরকারের নির্দেশনা পেয়ে পুলিশও কাজ শুরু করে দিয়েছে। গত এক মাসে অন্তত ১০ জন নেতা জামিন পেয়েছেন। তারা যেকোনো সময় কারামুক্ত হবেন। তবে মামুনুল হক আপাতত মুক্ত হচ্ছেন না।
হেফাজত নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর তারা আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারাও ‘সবুজ সংকেত’ দিয়েছেন। তারা বলেন, এসবের জন্যই সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় গিয়েছি আমরা। তবে সমঝোতার কথা সবিস্তারে প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, হেফাজতের মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে মৌখিক নির্দেশনা পাওয়া গেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করার পরিকল্পনা আছে আমাদের। হেফাজত নেতারা সরকারের অঙ্গীকার করেছে, তারা রাজনৈতিক কর্মকা- চালাবেন না। শুধু ইসলাম নিয়ে কথা বলবেন। জামায়াতে ইসলামীর কর্মকা-ের সমালেচনাও করবে বলে সরকারের নীতিনির্ধারকদের আশ্বস্ত করেছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি।
নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন তদন্তকারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পুলিশ সদর দপ্তর নির্দেশনা এসেছে। আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। মামলাগুলোর অনেক আসামি জামিনে আছে, কেউ কেউ জামিন ছাড়াই প্রকাশ্যে ঘুরছে। দীর্ঘদিন ধরে মামলাগুলোর নিষ্পত্তি না হওয়ায় সমালোচনাও হচ্ছে সবখানে। এগুলোর দ্রুত সুরাহা চাচ্ছি আমরাও।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, ২০১৩ সালে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন চলাকালে কথিত নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছিল হেফাজতে ইসলাম। ওই বছরের ৫ মে ঢাকার ছয়টি প্রবেশমুখে অবরোধ করে তারা। একপর্যায়ে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়। সে সময় হেফাজতের বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থকের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। তারা রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে যানবাহন ভাঙচুর করে এবং বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয়। সহিংসতায় হতাহতের ঘটনাও ঘটে।
২০২১ সালের মার্চ মাসে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসেন। তার সফরের বিরোধিতা করে মাঠে নামে হেফাজতে ইসলাম। ২৬ মার্চ রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকায় বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় তাদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। সংঘর্ষে ১৯ জনের মৃত্যু হয় এবং পুলিশসহ সহস্রাধিক হেফাজত নেতাকর্মী আহত হয়। হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয় সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায়। এসব ঘটনায় সারা দেশে ১৫৪টি মামলা হয়। ওইসব মামলার কোনোটাতেই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি।
হেফাজত ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মাসখানেক আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। বৈঠকে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় সবাই ছিলেন। বৈঠকে আমরা বলেছি, আমরা কোনো ধরনের রাজনীতি করি না। ইসলাম নিয়ে কাজ করি। একটি মহল আমাদের নামে অপবাদ দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি, আমরা রাজনীতি করছি না, আর করবও না।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশ রূপান্তরকে বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে। আমরাও চাচ্ছি মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হোক। হেফাজতের কেন্দ্রীয় এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারপ্রধানের সঙ্গে আমরা গত ১৭ ডিসেম্বর বৈঠক করেছি। তাতে সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহিয়ার নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। প্রায় ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট বৈঠক হয়েছে। অনেক কথা হয়েছে। আমাদের শর্তও তাকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, সমঝোতা ছাড়া কোনো কিছুরই সমাধান হয় না। আমরা চাই না সরকারের সঙ্গে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হোক। আমরা কথা বলেছি। সরকারপ্রধান ইতিবাচক হিসেবে বিষয়টি আমলে নিয়েছেন।