
রবিবার সকাল, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মেশিনঘর বাসস্ট্যান্ডের সবজি বাজার জমে উঠতে শুরু করেছে সবে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের কর্ম তৎপরতায় সরগরম বাজার। কেউ দাম হাঁকছেন, কেউ করছেন দর কষাকষি। এর মধ্যেই হঠাৎ করে বাজারে ঢুকে পড়ল মালবাহী এক ট্রাক। সড়কে একটি অটোরিকশাকে ধাক্কা দেওয়া নিয়ন্ত্রণহীন সেই ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ গেল পাঁচজনের। গতকাল রবিবার নরসিংদীর এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চারজন। এদিন ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৃথক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে আরও ৬ জনের। সেসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে আরও অন্তত ৩৫ জন, তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা সংকটজনক।
দেশ রূপান্তরের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত
নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকাল ৬টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর রায়পুরার মির্জাপুর ইউনিয়নের মেশিনঘর বাসস্ট্যান্ডের সবজির হাটে মালবাহী ট্রাকের চাপায় ৫ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৩ জন স্থানীয় কৃষক। বাকি ২ জন অটোরিকশার যাত্রী।
নিহতরা হলো রায়পুরা উপজেলার মাহমুদাবাদ গ্রামের আলাউদ্দিন মিয়ার ছেলে সিদ্দিক মিয়া (৫৫), একই উপজেলার রামনগর গ্রামের বাদশা মিয়ার ছেলে সিদ্দিক মিয়া (৬২), একই উপজেলার নীলকুঠি হাজিবাড়ির সোনা মিয়ার ছেলে আবুল কালাম (৬০), বেলাব উপজেলার পোড়াদিয়া গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে আবুল কালাম এবং কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার ফেরিঘাট এলাকার বজলু মিয়া (৫৪)।
হাইওয়ে পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, রবিবার সকাল সাড়ে ৬টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা একটি সবজিবাহী ট্রাক সিলেটের উদ্দেশে যাচ্ছিল। অপরদিকে ভৈরব থেকে একটি সিএনজি অটোরিকশা ইটাখলার দিকে যাচ্ছিল। মেশিনঘর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মালবাহী ট্রাকটির সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা সিএনজি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সবজির হাটে ঢুকে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই অটোরিকশার দুই যাত্রী ও হাটের এক সবজি বিক্রেতা নিহত হন। আহত অবস্থায় দুজনকে ঢাকা নেওয়ার পথে মারা যান।
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মোবারক হোসেন বলেন, সকালে সিএনজি অটোরিকশা হাটে থামা মাত্রই ট্রাকটি চাপা দিয়ে উল্টে হাটের ওপর উঠিয়ে দেয়। আমরা দৌড়ে গিয়ে দেখি সিএনজি রক্তে ভেসে গেছে আর দুজন মারা গেছে। অন্যদিকে হাটের মানুষ আহত হয়ে পড়ে আছে। আমরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই।
ভৈরব হাইওয়ে পুলিশের ওসি মোজাম্মেল হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাকচালক ব্রেক ফেল করে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। ট্রাক ও অটোরিকশাটি জব্দ করে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
ব্রাক্ষণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, জেলার বিজয়নগরে ট্রাক ও মাইক্রোবাসের চাপায় ২ সিএনজি অটোরিকশা আরোহী নিহত হয়েছে এবং ১০ জন আহত হয়েছে। গতকাল সকালে উপজেলার শশুই এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এ দুর্ঘটনার ঘটে। নিহতরা হলেন মাধবপুর উপজেলার আদাঐর গ্রামের স্বপন মিয়ার ছেলে সুমন (৩০) ও গোরাঙ্গ নাথের ছেলে মোহন নাথ (৩১)। হাইওয়ে পুলিশ জানায়, রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শশুই নামক স্থানে মাধবপুরগামী সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে পেছন দিক থেকে একটি ট্রাক চাপা দিলে ২ জন আরোহী নিহত হয়। একই সময়ে পেছন দিক থেকে আসা আরেকটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে ট্রাকের সংঘর্ষ হলে মাইক্রোবাসের ১০ যাত্রী আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে মাধবপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি সুখেন্দ্র বসু জানান, নিহতের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে এবং আহতদের উদ্ধার করে মাধবপুর হাসপাতালে পাঠনো হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় বাস ও চাঁদের গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ২৫ যাত্রী। গতকাল ৭টার দিকে চট্টগ্রাম রাঙ্গামাটি সড়কের রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর ইউনিয়নের ঠান্ডাছড়ি পাইন-বাগানসংলগ্ন কাশখালী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম জেসাউ প্রু মারমা (২৫)। তিনি দুর্ঘটনাকবলিত চাঁদের গাড়ির হেলপার এবং রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী থানার মাঝের পাড়া এলাকার বাসিন্দা। চালকের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। আহতদের পুলিশ ও স্থানীয়দের সহায়তায় আশেপাশের হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) পাঠানো হয়েছে। রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) খান নুরুল ইসলাম বলেন, গাড়ি দুটি থানায় জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
খুলনায় ইটবাহী ট্রলির ধাক্কায় মো. রফিকুল ইসলাম (৪৫) নামে এক কলেজ অধ্যক্ষের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে রূপসা উপজেলার আলাইপুর সেতুর বাইপাস সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত রফিকুল ইসলাম স্থানীয় চাঁদপুর কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। নিহত রফিকুল ইসলাম সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার মৃত অলি আহম্মদের ছেলে। এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, ১২টার দিকে রফিকুল ইসলাম মোটরসাইকেলে রূপসা উপজেলা সদরের দিকে যাচ্ছিলেন। আলাইপুর সেতুর বাইপাস সড়কে একটি ইটবোঝাই ট্রলি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে তিনি রাস্তার ওপর ছিটকে পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
এদিকে রাজধানীর গুলিস্তানে বিআরটিসি বাসের ধাক্কায় হাসিনা বেগম (৫০) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। ঘটনার পরপরই ঘাতক বাসটি চালকসহ জব্দ করেছে পুলিশ। গতকাল রবিবার দুপুর ১২টার দিকে গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারসংলগ্ন রাস্তায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
পল্টন থানার ওসি মো. সালাউদ্দিন মিয়া জানান, রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি বিআরটিসি বাসের ধাক্কায় ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পরপর বিআরটিসি বাসটি জব্দ ও এর চালককে আটক করা হয়েছে।
নিহত হাসিনার ভাগিনা মো. হিরা জানান, তার খালার বাড়ি পিরোজপুর জেলায়। তবে ছোটবেলা থেকেই তিনি ঢাকার গেন্ডারিয়া মিলব্যারাক এলাকায় ‘মোতালেব শাহ্’-এর মাজারে থাকেন। তার স্বামী সন্তান কেউ নেই। সকালে তিনি একাই কুষ্টিয়া লালন শাহ্’র মাজারে যাওয়ার জন্য রওনা হন। পথে গুলিস্তানে আসার পর বাসের ধাক্কায় তার মৃত্যু হয়।
আস্থার সংকট কাটিয়ে সাধারণ মানুষের মন জয়ের চেষ্টা করছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সংস্থাটি সরকারি হয়েও জনসেবার ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। যতটা ফোকাস হচ্ছে সরকারের সাপোর্ট কিন্তু ততটা পাচ্ছে না তারা।
ভোক্তার অভিযোগ নিষ্পত্তি করা সংস্থাটির প্রধান কাজ হলেও বাস্তবে সরকার নির্দেশিত নানা অভিযানকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এতে সংস্থাটির লক্ষ্যচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিছু সমস্যা আছে। সেগুলো সমাধানের পথেই আছি আমরা। জনবল সবচেয়ে ভাবনার বিষয়। তবে যেটুকু জনবল আছে তা নিয়েই আমরা লড়ে যাচ্ছি। সংস্থাটির লক্ষ্যচ্যুত হওয়ার সুযোগ নেই, কারণ এর সঙ্গে সবার স্বার্থ জড়িত।’
নগরজীবনে চারপাশে হরদম প্রতারণা হচ্ছে। প্রায় সবাই প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবে প্রতারিত হচ্ছেন। সব প্রতারণার সমাধান সরকার দিতে পারছে না। আর সবকিছু নিয়ে সাধারণ মানুষ সরকারের কাছে যায়ও না। গেলেও নানা নিয়মের বেড়াজালে আটকে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। শঙ্কা এড়িয়ে ভোক্তা-অধিকার অধিদপ্তর এগিয়ে চলেছে।
কাঁঠালবাগান ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের ইয়াসির আরাফাত গত বছর ধানমন্ডির একটি রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে। খাবারের দাম অনেক বেশি রাখা হয়েছিল তার কাছ থেকে। কিন্তু যখন দেখলেন ১৫ টাকার পানির বোতল ২০ টাকা রাখা হয়েছে তখনই প্রতিবাদ করেন তিনি। ক্যাশ মেমো নিয়ে অভিযোগ করেন ভোক্তা-অধিকার অধিদপ্তরে।
ইয়াসির আরাফাত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অভিযোগ করার পর শুনানির জন্য ডাকা হয়। মাত্র এক মাসের মধ্যে শুনানি শেষ করে রেস্টুরেন্টটিকে জরিমানা করা হয়। সেই জরিমানার ২৫ ভাগ আমি নিজেও পেয়েছি। এক সময় মানুষের যাওয়ার জায়গা ছিল না, এখন সেই জায়গা হয়েছে।’
ইয়াসির আরাফাতের মতো আরও অনেকেই তাদের অভিযোগের প্রতিকার পেয়েছেন। তাদের কেউ মাছ কিনে ওজনে কম পেয়েছেন, ঈদের সময় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভ্রমণ করতে গিয়ে ভাড়ায় প্রতারিত হয়েছেন বা মেয়াদহীন পণ্য কিনে ঠকেছেন। ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘সমাধান পেতে হলে পণ্য কেনার ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করতে হবে। পণ্যের মানি-রিসিট, গ্যারান্টি বা ওয়ারেন্টি কার্ড বা অন্য যেকোনো ডকুমেন্ট থাকতে হবে।’
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সফিকুজ্জামান বলেন, ‘শুরুতে মানুষের আগ্রহ কম ছিল। কিন্তু এখন ব্যাপক আগ্রহ। গত অর্থবছরে অভিযানের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৬২৫টি। চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এ তিন মাসেই সমসংখ্যক অভিযান হয়েছে। সামনে পুরো বছর তো পড়েই আছে।’
২০০৯-১০ সালে দ-িত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৫৪টি। গত বছর ২৫ হাজার ৬২৩টিতে দাঁড়িয়েছে। অধিদপ্তরের শুরুর বছর অর্থাৎ ২০০৯-১০ সালে অভিযানের সংখ্যা ছিল সাতটি। গত বছর অভিযান হয়েছে ১০ হাজার ৬২৫টি। শুরুর দুই বছর কেউ ২৫ শতাংশ প্রণোদনা পায়নি। ২০১১-১২ সালে প্রণোদনা পেয়েছেন আটজন। এ প্রণোদনা সর্বোচ্চ ১ হাজার ১০ জন পেয়েছিলেন ২০১৭-১৮ অর্থবছরে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রেসিডেন্ট গোলাম রহমান গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর করাই হয়েছে, ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। এ পদক্ষেপে আমাদের পূর্ণ সমর্থন আছে, আমরা সাধুবাদ জানাই। ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এ পদক্ষেপে ভোক্তারা উপকৃত হবে।’
নরসিংদী জেলার ভোক্তা প্রায় ২৬ লাখ। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নরসিংদী জেলা কার্যালয়ে কর্মরত আছেন দুজন। একজন সহকারী পরিচালক অন্যজন অফিস সহকারী। এ দুজনের পক্ষে ২৬ লাখ মানুষের অভিযোগ নেওয়া অসম্ভব বিষয়। এ পরিস্থিতি শুধু নরসিংদী নয়, সব জেলাতেই।
এ পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার জন্য অধিদপ্তর আড়াই হাজার জনবলের এক সাংগঠনিক কাঠামো প্রস্তুত করে জনপ্রশাসনে জমা দেয়। দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রেখে কাঠামো পরিমার্জন করে আবার জমা দিতে বলা হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ শাখা এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির হাত ঘুরে কাঠামো ৪৬৫ জনে নেমে আসে। এ জনবলও চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি। পেলে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করবে ভোক্তা অধিদপ্তর।
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নতুন করে আলোচনায় এসেছে কিছু বহুজাতিক ও জাতীয় কোম্পানিকে জরিমানা করে। ৫৫ টাকার লাক্স সাবান ৭৫ টাকায়, ৯০ টাকার হুইল পাউডার ১৪২, ২১০ টাকার সার্ফ এক্সএল ২৮০, ১০ টাকার মিনি সাবান ১৫ টাকায় বিক্রি করছে বহুজাতিক ইউনিলিভার। একইভাবে সমজাতীয় পণ্যে অতিরিক্ত দাম বাড়ানোর কারণে দেশীয় স্কয়ার, এসিআই, কল্লোল গ্রুপ, কোহিনূর কেমিক্যালকে গত ৭ সেপ্টেম্বর তলব করে অধিদপ্তর। নিজেদের কার্যালয়ে ডেকে এসব কোম্পানি কর্তাকে বলা হয়, ‘নিত্যব্যবহার্য পণ্য বিক্রি করে আপনারা লাভ করবেন এটা স্বাভাবিক। তবে তা ৩০ শতাংশের জায়গায় ৫০ শতাংশ কেন?’
বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি বা কমার ফলে দেশের বাজারে দাম বাড়ছে বা কমছে। তবে নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম একবার বাড়লে আর কমছে না। সেই বাড়তি দরের মধ্যেই আবারও দাম বাড়ানো হচ্ছে।
এসব বিষয়ের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটি একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাটে কোম্পানিগুলোর কাছে তথ্য চেয়েছে। কমিটির সদস্যরা সংশ্লিষ্ট কারখানা পরিদর্শন করবে। যেসব পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে, সেগুলোর উৎপাদন ও বাজারজাতকরণসহ কাঁচামাল আমদানির খরচ যাচাই করে দেখবে কমিটি। ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মূলত কোম্পানিগুলোর বাড়ানো দাম কতটা যৌক্তিক বা অযৌক্তিক সেটা দেখছে। অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ানোর প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দেওয়া প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হবে। কোনো ব্যক্তির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এসব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, বিষয়টা তা নয়। দাম বেড়েছে, তাই সব ভোক্তার পক্ষ থেকে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।’
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ‘কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে উপপরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাসকে। কমিটিতে আইসিএমএবি, ট্যারিফ কমিশন, এফবিসিসিআই ও কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের একজন করে প্রতিনিধি রয়েছে।’ এ বিষয়ে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা কাজ শুরু করেছি।’
ভোক্তা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অধিদপ্তরে অল্প কিছু কর্মকর্তা আছেন। সেখানেও কিছু বঞ্চনার গল্প আছে। সংস্থাটিতে নিজস্ব উপপরিচালক আছেন ১২ জন আর সহকারী পরিচালক ৮০ জন। এ ৮০ জন সহকারী পরিচালক কীভাবে উপপরিচালক হবেন তার কোনো দিকনির্দেশনা নেই। একদফা পদোন্নতিতেও বঞ্চনার ঘটনা আছে। ফেইসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে বিপাকে পড়েছেন এক কর্মকর্তা। এসব কিছু নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। সহকারী পরিচালকদের কাজ হচ্ছে তদারকিমূলক। তারা জরিমানা করতে পারেন। কাজের ধরন অনেকটা প্রশাসন ক্যাডারের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মতো হলেও অভিযানে পুলিশ প্রটেকশন পাওয়া অনেক সময়ই দুরূহ হয়ে পড়ে। সরকারের অন্যান্য দপ্তরের মতো এ দপ্তরেও কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতার দ্বন্দ্ব রয়েছে। বিষয়গুলো এখনই সমাধান করা না হলে সামনে প্রশাসনিক জটিলতা আরও বাড়বে এবং জনআস্থা অর্জনে সমস্যা দেখা দেবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে অনেক সংস্থা গড়ে তুলেছে। তাদের মধ্যে কিছু বেশ কার্যকর। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা প্রচলিত স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছে। নতুন অধিদপ্তরের মধ্যে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কার্যকর হলেও সফলতা দেখাতে পারেনি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। দেরিতে হলেও প্রতিযোগিতা কমিশন ভালো করছে। প্রতিযোগিতা কমিশন ও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর এ দুটি সংস্থার আইনের খসড়া করেছিল গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে আইনগুলো করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।’
ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে রিফাতের কর্মযোগ্য শুরু হয়ে যায়। ৯ বছরের রিফাত কাজ করছে হলটির মুদিদোকানে। সকালে যখন হলের শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় ব্যস্ত, তখন এই শিশুকে দোকানের নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। রিফাত পড়ালেখা করেছে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। পরিবারে আর্থিক অনটনের কারণে বই-খাতা তুলে দুই মাস আগে চাঁদপুর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের দোকানে কাজ নিতে হয়েছে তাকে। শুধু রিফাত নয়, তার মতো দুই শতাধিক শিশু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ক্যানটিন ও দোকানে কাজ করছে। প্রতিদিন তাদের ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। বিনিময়ে খুব সামান্য পরিমাণ পারিশ্রমিক মেলে।
বাংলাদেশে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু দিবস। জাতিসংঘ ২০ নভেম্বরকে বিশ্ব শিশু দিবস নির্ধারণ করলেও বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রতি বছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হয়। এছাড়া ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে পালিত হয় জাতীয় শিশু দিবস।
বিশ্ব শিশু দিবসকে সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি আবাসিক হলে ২৩টি ক্যানটিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব ক্যানটিনে ১২৬ জন শিশু শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। যাদের বয়স ৮ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। বয়সভেদে দুই থেকে চার হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয় তাদের। এ ছাড়া হল প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে প্রতিটি হলে রয়েছে হালকা ও ভারী খাবারের দোকান। এসব দোকানে ৮২ জন শিশু কাজ করছে। তাদের বেতন দৈনিক হিসাবে ৮০ থেকে ১২০ টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া আইবিএ, চারুকলা, আইইআর ও গণিত ভবনের ক্যানটিনেও শিশুদের কাজ করতে দেখা যায়।
জিয়াউর রহমান হলে কাজ করা রিফাতের সঙ্গে কথা হয় দেশ রূপান্তরের এই প্রতিবেদকের। রিফাত বলে, ‘আমার বাবা বিদেশে থাকেন। তিনি কোনো টাকা পাঠান না। তাই বাধ্য হয়ে দোকানে কাজ নিয়েছি।’ পড়ালেখার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে এই শিশু বলে, ‘আমি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি। ঢাকায় আসার পর থেকে পড়ালেখা বাদ দিতে হয়েছে। তবে টাকা জমিয়ে আমি গ্রামে ফিরে গিয়ে আবার স্কুলে ভর্তি হব। বড় হয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হব।’
রিফাতের মতো ১২ বছর বয়সী আমজাদও জগন্নাথ হলের ক্যানটিনে কাজ করে। তাদের দুজনের গল্প প্রায় একই রকম। ভোরে ঘুম থেকে উঠে তার দিন শুরু হয় থালা-বাসন পরিষ্কার করতে করতে। এরপর সকালের নাশতা বানানোর জন্য বাবুর্চিকে সাহায্য করা, ছাত্রদের মাঝে খাবার বিতরণ করা, টেবিল পরিষ্কার করার মতো কাজগুলো তাকে করতে হয়। আমজাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়। তারা বাবা গ্রামে রিকশা চালান। বাড়তি আয়ের আশায় ছেলেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানটিনে কাজে দিয়েছেন। পাঁচ মাস ধরে ক্যানটিনে কাজ করছে আমজাদ। সে এখন ক্যানটিন ছেড়ে বই-খাতা নিয়ে স্কুলে ফিরতে চায়। আমজাদ দেশ রূপান্তরকে বলে, ‘আমার বাড়ি থেকে জোর করে কাজে দিয়েছে। বাড়িতে বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতাম, মজা করতাম। এখানে সেই সুযোগ নাই। সারা দিন কাজ করতে হয়। আমি আবার স্কুলে যেতে চাই, বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে চাই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মাহাদী হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সচেতন। আমাদের সামনে শিশুশ্রম হচ্ছে এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। তবে এই বাচ্চারা আর্থিক সংকটের কারণে এখানে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। আমার মনে হয় তাদের শ্রমের ঝুঁকি কমিয়ে সাধারণ কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে তাদের বিনা মূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত।’
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এ বলা হয়েছে, শিশুদের ন্যূনতম বয়স ১৪ বছর। ১৪ বছরের কম বয়সীদের কাজে নিয়োগ করা যাবে না। শিশুর অভিভাবক কাজ করানোর জন্য কারও সঙ্গে কোনো প্রকার চুক্তি করতে পারবেন না। তবে সারা দেশের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানটিন ও দোকানগুলোতে এ আইনের প্রয়োগ দেখা যায় না।
ক্যানটিন ও দোকানমালিকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, শিশুদের সাধারণত তারা কাজে নিতে চান না। পরিবার খুব অসহায় হওয়ায় অনেকটা বাধ্য হয়ে শিশুদের ক্যানটিনে রাখছেন তারা। তবে তাদের দাবি, শিশুদের দিয়ে ভারী কোনো কাজ করান না তারা।
শিশুশ্রমের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. ফাতেমা রোজিনা ইকবাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশের আইনে শিশুশ্রম সম্পূর্ণভাবে নিষেধ। আমি শিশুশ্রম বিষয়টিকে একদম নেতিবাচকভাবে দেখি। এই বয়সে একটি শিশু মায়ের স্নেহে, বাবার আদরে বড় হবে, বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাবে, সেই বয়সে বাচ্চাটাকে এখানে কাজ করতে হচ্ছে। এ বিষয়টি দেখতে আমার খুব কষ্ট হয়।’
শিশুশ্রম বন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে কি না এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে আজই একটা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ক্যাম্পাসে শিশুশ্রম বন্ধ করতে পারে। এতে কী হবে, এই শিশুগুলো কর্মহীন হয়ে পড়বে। এদের অনেকের বাবা-মা নেই, পরিবার নেই। কাজ বন্ধ করে দিলে এদের কী হবে? তারা কর্মহীন হয়ে পড়বে। তার থেকে এদের জন্য বিকল্প একটা ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আমরা ছাত্র-শিক্ষকরা উদ্যোগ নিয়ে এই শিশুদের পড়ালেখা করাতে পারি।’
শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে এমন একটি সংগঠন বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম। সংগঠনটির পরিচালক আব্দুস শহীদ মাহমুদের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের মতো একটি জায়গায় শিশুরা শ্রম দিচ্ছে, কিন্তু আমরা সবাই নিশ্চুপ! যেন দেখেও দেখছে না কেউ। এটা সবার কাছে স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও হলের কাজে ঝুঁকি কম, তারপরও শিশুদের দিয়ে কাজ করানোটা ঠিক নয়।’
শিশুশ্রমের বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের নজরে আনা হলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হলের দোকান ও ক্যানটিনে শিশুরা কাজ করে, এটা আমি জানি। যখন আমি ছাত্র ছিলাম, তখনো দেখেছি। এই ছেলেরা খুবই দরিদ্র, কাজ থেকে বাদ দিলে তারা আরও অসহায় হয়ে যাবে। তবে আমরা তাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারি। তাহলে তারা কাজের পাশাপাশি নিজেকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে।’
বিশ্ব শিশু দিবসে নানা কর্মসূচি : ‘গড়বে শিশু সোনার দেশ, ছড়িয়ে দিয়ে আলোর রেশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ সোমবার দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভিন্ন-ভিন্ন দিনে দিবসটি পালিত হয়। বাংলাদেশে বিশ্ব শিশু দিবস পালন করা হয় অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার। বিশ্ব শিশু দিবসের সঙ্গে মিলিয়ে শিশুর অধিকার, সুরক্ষা এবং শিশুর উন্নয়ন ও বিকাশে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগী ও সচেতন করার লক্ষ্যে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত পালন করা হবে শিশু অধিকার সপ্তাহ। গতকাল রবিবার মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ-২০২২-এর উদ্বোধন করবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, প্রতিবছরের মতো এবারও দেশব্যাপী বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ উদ্যাপন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার একটি স্টেডিয়ামে দেশটির দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ফুটবল ক্লাব সমর্থকদের সংঘর্ষ, পুলিশের টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপের পর পদদলিত হয়ে ১২৫ জন নিহত হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ এ ঘটনা ঘটেছে দেশটির কানজুরুহান ফুটবল স্টেডিয়ামে।
গত শনিবার রাতে পূর্ব জাভা প্রদেশের মালাং শহরের এ স্টেডিয়ামে আরেমা এফসি ও পেরসেবায়া সুরাবায়া নামের দুটি ফুটবল ক্লাবের মধ্যে খেলা চলছিল। খেলায় আরেমাকে ৩-২ গোলে হারায় পেরসেবায়া। ইন্দোনেশিয়া পুলিশ বলছে, হারের পর স্টেডিয়ামে থাকা আরেমার দর্শকরা মাঠে নেমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। তাদের থামাতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ। এতে দর্শকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ সময় হুড়োহুড়িতে অনেকেই পদদলনে নিহত হন।
পুলিশের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ম্যাচের রেফারি বাঁশিতে চূড়ান্ত ফুঁ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরেমা এফসির ক্ষুব্ধ সমর্থকরা চারদিক থেকে মাঠে ঢুকে পড়েন। এক প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মাঠের মাঝেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন আরেমার ভক্তরা। সেখানেই দুই পুলিশ সদস্য নিহত হন।
পূর্ব জাভার পুলিশপ্রধান নিকো আফিনতা জানান, দাঙ্গাকারীদের মাঠ থেকে গ্যালারিতে ফেরত পাঠাতে পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়তে শুরু করে। এ সময় হুড়োহুড়িতে অনেকে পদদলিত হয় এবং সেখানে দমবন্ধ করা একটি পরিস্থিতির তৈরি হয়। তিনি জানান, সবাই একটি স্থান দিয়েই বের হওয়ার চেষ্টা করছিল। ফলে প্রচণ্ড ভিড়ের একপর্যায়ে অক্সিজেনের অভাবে দমবদ্ধ করা পরিবেশ তৈরি হয়। দেশটির নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ মাহফুদ মাহমোদিনের দাবি, ৩৮ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার ওই স্টেডিয়ামে শনিবারের ম্যাচের জন্য টিকিট বিক্রি হয়েছিল ৪২ হাজার। বিশ^ ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার নিরাপত্তা বিধি অনুযায়ী, মাঠে নিরাপত্তাকর্মীরা কখনোই আগ্নেয়াস্ত্র কিংবা ‘টিয়ার গ্যাস’ ব্যবহার করতে পারেন না।
এদিকে পুলিশপ্রধানের দাবি, বাধ্য হয়েই তারা কাঁদুনে গ্যাস ছুড়েছিলেন। তার ভাষায়, ‘পুরো অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। তারা পুলিশ কর্মকর্তাদের আক্রমণ করেছিল, গাড়ি ভাঙতে শুরু করেছিল।’
এ ছাড়া স্টেডিয়ামের বাইরে সমর্থক ও পুলিশের মধ্যে ফের সংঘর্ষ হয়। সামাজিক মাধ্যমে আসা ভিডিও ও ছবিতে দেখা যায়, স্টেডিয়ামের বাইরে ফুটবল ভক্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ছে পুলিশের গাড়ি।
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো ফুটবল ম্যাচগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে এবং পুরো ঘটনার তদন্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। এ ঘটনার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত লিগ স্থগিত রাখার নির্দেশও দেন তিনি।
ইন্দোনেশিয়ায় ফুটবল মাঠে দাঙ্গা ও সংঘর্ষের ঘটনা নতুন নয়। ফুটবল ক্লাবগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তুমুল, যা সমর্থকদেরও আগ্রাসী করে তোলে অনেক সময়। ফুটবল মাঠে এই মর্মান্তিক ঘটনার পর দেশটির ক্রীড়ামন্ত্রী জয়নুদিন আমালি জানান, তারা ফুটবল মাঠে নিরাপত্তার বিষয়টি আবার খতিয়ে দেখবেন এবং প্রয়োজনে দর্শকবিহীন মাঠে খেলা চালানোর বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হবে।
এ ঘটনা ইন্দোনেশিয়ার ফুটবল ভাবমূর্তিতে কালিমা মেখে দিয়েছে উল্লেখ করে দেশটির ফুটবল ফেডারেশন জানিয়েছে, ঘটনাটির তদন্ত করা হবে।
ইন্দোনেশিয়ার মানবাধিকার কমিশনার রয়টার্সকে বলেছেন, কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার ঘটনাসহ মাঠের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
খেলার মাঠে এ রকম ট্র্যাজেডি বিশে^র নানা প্রান্তে আগেও দেখা গেছে। ২০১২ সালে মিসরে ভয়াবহ সংঘর্ষে ৭৩ জনের মৃত্যু এবং ১ হাজারের বেশি সমর্থকের আহত হওয়ার ঘটনায় সেখানে লিগ বন্ধ ছিল দুই বছর। ২০০১ সালে ঘানায় একটি মাঠে পদদলিত হয়ে মারা যায় ১২৬ জন।
এর আগে ১৯৬৪ সালে পেরুর রাজধানী লিমায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। পেরু-আর্জেন্টিনা অলিম্পিক বাছাইপর্বের ম্যাচের সময় পদদলিত হয়ে ৩২০ জন নিহত এবং ১ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছিল।
এরপর ১৯৮৫ সালে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসের হেইসেল স্টেডিয়ামে ৩৯ জন মারা যান এবং আরও ৬০০ জন আহত হন। সে সময় লিভারপুল (ইংল্যান্ড) ও জুভেন্তাসের (ইতালি) মধ্যে ইউরোপীয় কাপের ফাইনালের সময় একটি প্রাচীরের সঙ্গে ফুটবল ভক্ত-দর্শকদের পিষ্ট হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
একজন উদ্যোক্তা ছোট একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে গেলে বছরের পর বছর কেটে যায় শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দুর্নীতির কারণে। সামান্য কাজেও সরকারি কর্মকর্তারা যে পরিমাণ হয়রানি করেন তাতে ছোট উদ্যোক্তারা তো মনোবল হারানই, বড় শিল্প উদ্যোক্তারাও বিপাকে পড়েন।
গতকাল রবিবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘সেটিং আপ এ ফ্যাক্টরি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ব্যবসায়ী নেতারা।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান, বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মো. মোয়াজ্জেম, বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্সের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বিটিএমইএর সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন, বিল্ডের প্রধান নির্বাহী ফিরদাউস আরা বেগমসহ অন্যরা। সিপিডির উদ্যোগে ‘ফ্যাক্টরি সেটআপবিডি ডট কম’ নামে ওয়েবসাইট সম্পর্কে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির রিসার্স অ্যাসোসিয়েট হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মোয়াজ্জেম বলেন, ‘শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দুর্নীতি ও হয়রানির কারণে বছরের পর বছর কেটে যায় একটা কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে। কিন্তু এসব কর্মকর্তার ঘুষ-দুর্নীতির পরও দেশ এতদূর এগিয়েছে শুধু ব্যবসায়ীদের সাহসের কারণে। এ দেশের ব্যবসায়ীরা এত কষ্ট করে ব্যবসা করছেন, তা পৃথিবীতে বিরল।’
তিনি বলেন, ‘দেশের দুর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কৃষিমন্ত্রী আমাকে বলেন, আপনাদের সিন্ডিকেট যেহেতু ডিমের দাম বাড়াতে পারে তাহলে আরেকটি সিন্ডিকেট করে আলুর দামটা বাড়িয়ে দেন, কৃষকদের উপকার হয়। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো প্রতি বছর শত শত সভা-সেমিনার করে কিন্তু সেখানের সরকারি অফিসগুলোর ডেস্ক অফিসারদের অংশগ্রহণ থাকে না। এতে ফলাফল শূন্য হয়। তাদের অংশগ্রহণ জরুরি। ছোট ছোট ব্যবসায়ী গড়ে তোলার জন্য ১৮ জন উপদেষ্টা নিয়েছে এফবিসিসিআই। গত চার বছর আমরা কাজ করতে পারিনি, কিন্তু এখন আমরা শুরু করেছি।’
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘সিপিডির এ ধরনের ওয়েবসাইট নির্মাণের উদ্যোগ আরও আগেই নেওয়া দরকার ছিল। কারণ কীভাবে কারখানা করতে হয় তা না জানার কারণে নতুন উদ্যোক্তারা নানা হয়রানির শিকার হন। শুধু ফাইল দুর্নীতি নয়, ডকুমেন্টশনের বাইরে নন-ডকুমেন্টশনে যে দুুর্নীতি তাতে টিকে থাকা কঠিন।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি কি এখন নেই? আমরা বিইআরসির সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিলাম এক মেগাওয়াট জেনারেটর বা তার ওপরে হলে রেজিস্ট্রেশন লাগবে। কিন্তু তাদের অডিট টিম এসে ৫০০ কেবির জেনারেটরের জন্যও কাগজ চায়। তারা টাকা ছাড়া নড়েই না।’
বিকেএমইএর সভাপতি দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে বিসিকের রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার জন্য আমার এক ছোট ভাই আইআরসি করবে। তিনি আবেদনের এক মাসেও না পাওয়ায় আমার কাছে এসেছিল। তার কাছে নাকি প্রত্যয়নপত্রের জন্য ৫০ হাজার টাকা ঘুষ চাচ্ছে। আমি বিসিকের ডিরেক্টরকে ফোন দিলে তিনি তখনই সই করে দেন। কিন্তু তারপরও কর্মকর্তারা ফাইল ছাড়েন না। তাদের দাবি, ডিরেক্টরের ফি ২০ হাজার, তিনি তো নেবেন না পরিচিত দেখে, আমাদের ফি ৩০ হাজার না দিলে ফাইল ছাড়ব না।’
বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আমাদের হয়রানির অভাব নেই। নতুন করে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে জানাল সাব-সিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগবে। এটাও এক ধরনের হয়রানি। কিন্তু আমরাই ফরেন কারেন্সি ধরে রাখার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। দেশের রিজার্ভ এখন ৩৬ বিলিয়ন ডলারে। এটি আরও কমবে। দুই মাস আগে থেকেই আমরা বলে আসছি আমাদের পোশাক রপ্তানি কমবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন সমস্যা পাওয়ার সেক্টর নিয়ে। ক্রেতাদের অর্ডার ডেলিভারি করতে পারছিলাম না বিদ্যুতের অভাবের কারণে। কিন্তু এ সময় আমাদের আরও প্রশ্নের জবাব দিতে হয় মার্কেটে পোশাক খাতের শেয়ার কেন কমছে, তার জবাবদিহিতা করতে করতেই সময় পার হয়, আমরা বাকি কাজ করব কখন।’
এ সময় নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘সদ্য প্রয়াত অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পদত্যাগ করেছিলেন শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার কারণে। আমাদের সমস্যা দুটি, গো ফরোয়ার্ড, এরপরই আবার গো ব্যাকওয়ার্ড। দেশের রপ্তানিকারকদের এক নম্বর সমস্যা কাস্টমস অ্যান্ড বন্ড লাইসেন্স।’
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা যত গতিশীল হবেন, দেশের উন্নয়নও তত গতিশীল হবে। তাদের অবদানে দেশ আরও এগিয়ে যাবে।’
সিপিডির উদ্যোগে তৈরি করা এ ওয়েবসাইটে পোশাক খাত, ওষুধ খাত, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, চামড়া শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স, নিবন্ধন ও সার্টিফিকেশন কীভাবে করা যাবে তার বিস্তারিত জানতে পারবেন উদ্যোক্তারা। তাছাড়া আটটি ক্যাটাগরিতে একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার বিষয়ে জানা যাবে এ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্য রেখায় (নো ম্যানস ল্যান্ড) পুঁতে রাখা স্থলমাইন বিস্ফোরণে এক রোহিঙ্গা কিশোর নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল রবিবার ভোরে সীমান্তের পূর্বে পাহাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু সীমান্তের শূন্য রেখার আশ্রয় শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা।
নিহত ওমর ফারুক (১৭) ওই আশ্রয় শিবিরের বাসিন্দা মো. আয়ুবের ছেলে। গতকাল সকালে সীমান্তের পূর্বে পাহাড়ি এলাকা থেকে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
তমব্রুর রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের মাঝি (দলনেতা) আবদুর রহিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওমর ফারুক ও মো. আবদু ইয়্যা নামে দুই রোহিঙ্গা আজ ভোরে (গতকাল) তমব্রুর মিয়ানমার সীমান্ত এলাকার পাহাড়ি ছড়ায় মাছ শিকারে বের হয়। এ সময় বিজিপির (মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ) পুঁতে রাখা স্থলমাইন বিস্ফোরণে দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়ে ওমর ফারুক মারা যায়। আরেকজন প্রাণে রক্ষা পায়। পরে তার মাধ্যমে খবর পেয়ে ফারুকের মরদেহ উদ্ধার করে সীমান্তবর্তী একটি কবরস্থানে দাফন করা হয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে এক রোহিঙ্গার মৃত্যুর খবর গোয়েন্দাদের কাছ থেকে শুনেছি। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’
এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর তমব্রুর শূন্য রেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে মোহাম্মদ ইকবাল (১৮) নামে এক রোহিঙ্গা নিহত হন। আহত হন আরও পাঁচজন। একই দিন ওই সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে অথোয়াইং তঞ্চঙ্গ্যা (২২) নামে এক বাংলাদেশি যুবক আহত হন।
পাঁচ বছর ধরে তমব্রু সীমান্তের বিপরীতে শূন্য রেখায় আশ্রয় শিবির গড়ে বসবাস করছে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত ৪ হাজার ২০০ জনের বেশি রোহিঙ্গা। ওই আশ্রয় শিবির ঘেঁষে মিয়ানমারের কাঁটাতারের বেড়া ও রাখাইন রাজ্যের একাধিক পাহাড় রয়েছে। পাহাড়ের ওপর বিজিপির একাধিক তল্লাশি চৌকি রয়েছে।
তমব্রুর শূন্য রেখার রোহিঙ্গা নেতা আবদুর রহিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমারে ফিরতে না পারে সে জন্য বাংলাদেশ-মিয়ানমান সীমান্ত জুড়ে বিজিপি স্থলমাইন পুঁতে রাখে। এসব মাইনে গত পাঁচ বছরে ছয়জন রোহিঙ্গা মারা গেছে। শূন্য রেখার রোহিঙ্গারা সবসময় আতঙ্কে থাকে।’
গত ১৩ আগস্ট থেকে তমব্রু সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি পাহাড়ে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাত চলছে। সর্বশেষ গত ২৮ আগস্ট এবং ৩ সেপ্টেম্বর দুই দফায় মিয়ানমার থেকে ছোড়া চারটি মর্টার শেল তমব্রু উত্তরপাড়া ও বাইশফাঁড়ি এলাকায় এসে পড়ে। এসব ঘটনায় ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ।
টহল বাড়িয়েছে কোস্ট গার্ড : মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে টেকনাফ সীমান্তে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের টহল এবং নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গতকাল রবিবার কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকি স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার সুযোগে অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে কোস্ট গার্ড। সমুদ্রে সার্বক্ষণিক টহল জাহাজ মোতায়েনসহ টেকনাফ থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত রাত-দিন নিয়মিত অত্যাধুনিক হাইস্পিড বোটের মাধ্যমে টহল চলমান রয়েছে।
বুধবার বগুড়া-৪ আসনের উপনির্বাচনে মাত্র ৮৩৪ ভোটে হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম। এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, স্যার ডাকতে হবে এ জন্য কিছু শিক্ষিত মানুষ আমাকে হারিয়ে দিয়েছে।
হিরো আলম বলেন, এমপি হলে আমাকে স্যার বলতে হবে। এ জন্য কিছু শিক্ষিত মানুষ আমাকে আগে থেকেই মানতে পারছিলো না। আমাকে স্যার বলতে কষ্ট হবে এমন লোকেরাই ফলাফল পাল্টে আমাকে পরাজিত করেছেন। তারা আমাকে ইভিএম কারসাজিতে হারিয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়া আমি এমপি হলে নাকি বাংলাদেশের সম্মানহানী হবে। এমন ভাবনা থেকেও আমাকে হারিয়ে দেয়া হয়েছে। মশাল মার্কার অস্তিত্ব ছিল না। আমি কাহালু-নন্দীগ্রাম আসন থেকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছি। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের জোগসাজশে গণনায় আমাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি এ ফলাফল মানি না।
হিরো আলম বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় বগুড়া সদরের এরুলিয়া নিজ বাড়িতে গণমাধ্যমকর্মীদের এসব বলেন।
তিনি আরো বলেন, সারাদিন মাঠে ভোটারের উপস্থিতি তেমন ছিল না। হঠাৎ এত ভোট কোথা থেকে এল বুঝতে পারছি না। মশাল মার্কার অস্তিত্ব ছিল না। তাদের নির্বাচনী প্রচার ছিল না। মানুষের তাদের আগেই প্রত্যাখ্যান করেছে। তারপর কীভাবে আমার চেয়ে বেশি ভোট পেল বিষয়টি পরিস্কার নয়।বগুড়া সদর আসন সম্পর্কে তিনি বলেন, সেখানে অনেক কেন্দ্রে তার এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তার কর্মীদের মারধর করা হয়েছে। ফলে সকালেই ওই আসনের ভরসা ছেড়ে দিই।
ফলাফল নিয়ে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখন কোনো কথা বলব না। পরে জানান হবে।
তিনি ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা আমাকে নির্বাচনে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমি ভোটে হারলেও সারাজীবন মানুষের পাশে ছিলাম, শেষ পর্যন্ত থাকব।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধে এমনটা যে ঘটবে তার আলামত কিন্তু যুদ্ধের সময়েই টের পাওয়া গিয়েছিল। এই যুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ ঘটেছে। নেতৃত্ব ছিল নির্বাচনে-জেতা জাতীয়তাবাদীদের হাতে। ভারত সরকার তাদের সাহায্য করেছে। জাতীয়তাবাদীরা ক্ষমতার হস্তান্তর চেয়েছে, রূপান্তর চায়নি। তারা লড়ছিল হস্তান্তরের লক্ষ্যেই। জনগণ কিন্তু তত দিনে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে, তারা শুধু যে ক্ষমতার হস্তান্তর চেয়েছে তা নয়, চেয়েছে রাষ্ট্র ক্ষমতার বিচূর্ণকরণ। বস্তুত রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের অভ্যুত্থান এবং একাত্তরের যুদ্ধ এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে যে চেতনাটি অগ্রসর হচ্ছিল সেটা ছিল সমাজবিপ্লবী। এই চেতনা ঠিকই বুঝেছে যে পুরাতন রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রেখে মুক্তি আসবে না। রাষ্ট্রকে ভাঙতে হবে, যাতে করে রাষ্ট্র জনগণের শত্রু না হয়ে মিত্র হয়; শুধু মিত্রও নয়, জনগণের সেবক হয়। ঊনসত্তরের অভ্যুত্থানের মূল আকাক্সক্ষাটা ছিল ওই রকম রাষ্ট্রের। কথা ছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ওই আকাক্সক্ষাটাকে বাস্তবায়িত করবে।
কিন্তু যুদ্ধ সেদিকে এগোয়নি। নেতৃত্বে রয়ে গেছে জাতীয়তাবাদীই। পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের জায়গায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ স্থাপিত হয়েছে। এ পর্যন্ত ঠিকই আছে। দুই জাতীয়তাবাদের ভেতর পার্থক্যটাও সুস্পষ্ট, কিন্তু দুয়ের ভেতর মিল এইখানে যে, উভয়েই পুঁজিবাদী। এই মিলটা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। জাতীয়তাবাদী নেতারা ব্যক্তিমালিকানার বিরোধী ছিলেন না, যেমন ছিলেন না তারা সামাজিক মালিকানার পক্ষে। বস্তুত পুরাতন ধ্যানধারণাই নতুন রাষ্ট্রে কার্যকর হয়েছে। সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যাভিমুখী যাত্রার কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু সেদিকে যাবে কী, রাষ্ট্র অচিরেই তার পুরাতন পথে ফিরে গেছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যক্তিমালিকানায় চলে গেছে। রাষ্ট্রীয়করণ ছিল ব্যক্তিমালিকানা স্থাপনের মধ্যবর্তী ধাপ। আদমজী জুট মিলস পাকিস্তান আমলে ছিল, এখন নেই। এটা কেবল ঘটনা নয়, একটা প্রতীকও বটে।
যুদ্ধের শুরুতেই কিন্তু বোঝা গিয়েছিল যে বিপ্লবী উপাদান থাকা সত্ত্বেও এ যুদ্ধ বিপ্লবী হবে না। ধরা যাক স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ঘটনা। চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে প্রান্তিকভাবে যুক্ত তিনজন দুঃসাহসী তরুণ স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগ নিয়ে ওই গোপন বেতার কেন্দ্রটি স্থাপন করেন, কালুরঘাট ট্রান্সমিটার কেন্দ্রটিকে ব্যবহার করে। নাম দিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র। ২৬ মার্চ ওই নামেই বেতার কেন্দ্রটি চালু হয়। কিন্তু তার বিপ্লবী নামটি ধরে রাখা যায়নি। বিপ্লবী নাম ধরে রাখবে কী, ৩০ তারিখ দুপুরে কেন্দ্রটিই সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। ধ্বংসের কাজটি করে পাকিস্তানি হানাদাররা। তারা বিমান আক্রমণ চালায়। ওটিই ছিল বাংলাদেশে তাদের যুদ্ধবিমানের প্রথম আক্রমণ। বেতার কেন্দ্রটি ধ্বংস না করে তাদের স্বস্তি ছিল না, কারণ সেখান থেকে প্রতিরোধ যুদ্ধের সংবাদ সম্প্রচারিত হয়েছিল। তারা লড়ছে, বিশ্ববাসী জেনেছিল, সবচেয়ে বেশি করে জেনেছিল বাঙালিরা, দেশে যেমন, বিদেশেও তেমনি। তারা উদ্দীপ্ত হয়েছে, ভরসা পেয়েছে, সাহস পেয়েছে রুখে দাঁড়ানোর। হানাদাররা অস্থির হয়েছে। খুঁজে খুঁজে বের করেছে বেতার কেন্দ্রের ঠিকানা, বোমাবর্ষণ করেছে মহোৎসাহে।
এরপরও কেন্দ্রটি চালু ছিল। প্রথমে গেছে সে আগরতলায়, সেখান থেকে কলকাতায়। কিন্তু ‘বিপ্লবী’ আর থাকেনি। ওই পরিচয় বিলুপ্ত করা হয়েছিল কিন্তু মেজর জিয়ার নির্দেশেই। পরে আওয়ামী লীগের প্রবাসী সরকার যে বিপ্লবীকে ফেরত এনেছে তা মোটেই নয়, বেতার কেন্দ্রটি বিপ্লবহীন ‘স্বাধীন’ অবস্থায় রয়ে গেছে। যুদ্ধটা তো ছিল পুরোপুরি জনযুদ্ধ, কিন্তু ওই শব্দটি একবার মাত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তারপর নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ‘জনযুদ্ধ’ মাওবাদের গন্ধ আছে বলে। বেতার অনুষ্ঠানের শেষে একটি সিগনেচার টিউন বাজানো হতো, সে গানটির শুরু ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ দিয়ে, শেষে ছিল ভুখা বেকার মানুষদের কথা, আপত্তিকর বিবেচনায় গানটি বাদ দেওয়া হয়। বেকারদের দায়িত্ব স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র কেন নিতে যাবে? স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ওপর চাপ ছিল আওয়ামী লীগের খবরকে বেশি বেশি প্রচার করার, পারলে মুক্তিযুদ্ধকে একদলীয় ঘটনা হিসেবে চিত্রিত করার। কলকাতায় কেন্দ্রটি সম্পূর্ণরূপে প্রবাসী সরকারের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। শেষের দিকে ভারত সরকারের একজন প্রতিনিধিও অনুষ্ঠানসূচির ওপর চোখ রাখতেন। স্বাধীনতার পরপর ইনি ঢাকাতেও এসেছিলেন, বাংলাদেশ বেতারের দেখভাল করার জন্য। ডিসেম্বরের ৬ তারিখে ভারত সরকার যখন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় সেই ক্ষণ থেকেই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র তার নাম বদলে ফেলে বাংলাদেশ বেতার হয় অর্থাৎ একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়ে যায়। বিপ্লবীত্ব আগেই গিয়েছিল এবার গেল স্বাধীনতাটুকুও। যেন বাংলাদেশেরই প্রতীক। পাকিস্তানি বেতারের মতোই স্বাধীন বাংলা বেতারের অনুষ্ঠানও কিন্তু কোরআন পাঠ ও ব্যাখ্যা দিয়েই শুরু হতো। সপ্তাহে ছয় দিন ইসলামের দৃষ্টিতে বলে একটি অনুষ্ঠান থাকত।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা; ওই ঘটনার ভেতরে আমাদের মুক্তিসংগ্রামের মোড়বদলের কালে সংগ্রামের শক্তি ও সীমা দুটোই প্রতিফলিত হয়েছে। কেন্দ্রের গঠনে উদ্যোগী তিন তরুণের সঙ্গে বেগম মুশতারী শফীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। যুদ্ধের শুরুতেই তিনি তার স্বামী এবং সহোদর একমাত্র ভাইটিকে হারান; তার বড় বোনের স্বামীও শহীদ হয়েছেন। অবিশ্বাস্য কষ্টের ভেতর দিয়ে সাত সন্তানের ছয়জনকে সঙ্গে নিয়ে ভাসতে ভাসতে সম্পূর্ণরূপে সর্বহারা দশায় আগরতলায় উপস্থিত হয়ে কোনো মতে প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিলেন। পরে তার অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে তিনি ‘স্বাধীনতা আমার রক্তঝরা দিন’ (১৯৮৯) নামে একটি বই লিখেছেন, তার অভিজ্ঞতার ভেতর ভবিষ্যতের বাংলাদেশ কেমন হবে তার লক্ষণ বিলক্ষণ ফুটে উঠেছিল। আগরতলায় গিয়ে যেসব ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছেন তাতে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ সম্পর্কে ভরসা রীতিমতো বিচলিত রয়েছে। আগরতলা পৌঁছে তিনি জানতে পেরেছেন যে চট্টগ্রামের এমএনএ এমপিএরা একটি ভবনে রয়েছেন। শুনে আশান্বিত হয়ে তিনি গেছেন তাদের খোঁজে। ভবনে গিয়ে পৌঁছান সকাল সাড়ে দশটায়। নেতাদের সন্ধান পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু দরজার সামনে কাজের ছেলেটি বলেছে দেখা করা যাবে না। কেন? কারণ ওনারা একটু বেসামাল আছেন। দরজাটা ভেজানো ছিল। মুশতারী শফী লিখেছেন, ‘আমি যেখানে বসেছি সেখান থেকে দরজার ফাঁক দিয়ে আরেকটি রুম দেখা যায়। সেখানে দেখা যাচ্ছে চিৎ হয়ে উপুড় হয়ে মেঝেতেই দু-তিনজন শুয়ে আছে।’ তিনি ভেবেছিলেন ঘুমোচ্ছে। পরে জানলেন নেতারা রাতে ড্রিংক করেছেন, সেজন্য সকালে তাদের ওই করুণদশা। মুশতারী শফীর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া : ‘আমি অবাক। এখানে ড্রিংক? এরাই না জাতীয় নেতা? মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করছেন?’ (পৃ. ১৩৭-৩৮)
অবাক হওয়াটা ওখানেই শেষ হয়নি। তার জন্য আরও একটি ‘বিস্ময়-মহাবিস্ময়’ অপেক্ষা করছিল। তিনি লিখেছেন, ‘এখানে এসে একটা বিষয় লক্ষ করলাম, ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টির রিক্রুট-করা মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা প্রবাসী সরকার করছে না। যেমন আওয়ামী লীগের যে কেউ যে-কাউকে রিক্রুট করলে তার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি খরচে ট্রেনিং এবং থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, বামপন্থি দলের কাউকেই সে রকমটি করা হচ্ছে না। কোথাও পাশ কাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কোথাও সরাসরি নাকচ করা হচ্ছে। ফলে বামপন্থিরা ভারত সরকারের দুয়ারে দুয়ারে ধাক্কা দিয়ে এবং নিজেদের পার্টির খরচে সম্পূর্ণ আলাদা ট্রানজিট ক্যাম্প এবং যুবকদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ (পৃ. ১৫৪)
তার মনে প্রশ্ন জেগেছে জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম যেখানে চলছে, সেখানে বাম-ডান আবার কী, সবাই তো মুক্তিযোদ্ধা। তার মতো মানুষদের কাছে সব মুক্তিযোদ্ধাই যে এক, এটা ঠিক, কিন্তু নেতৃত্ব তো ছিল পুঁজিবাদী ঘরানার, তারা বামপন্থির গন্ধ পেলেই সতর্ক হতো। ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টির মতো নরম বামদের তবু সহ্য করত, তাড়িয়ে দিত না। শক্ত বামপন্থিদের দেখা মাত্র ধাওয়া করত। শক্ত বামপন্থিদের কাউকে কাউকে তাই প্রাণ ভয়ে আগরতলার মুক্তভূমি থেকে আবার হানাদারকবলিত পাকিস্তানে পালিয়ে আসতে হয়েছে। কেউ কেউ নিহতও হয়েছে, আগরতলাতেই। মুশতারী শফীর আরেক মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোনো-মতো তৈরি করা ফিল্ড হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসক, স্বেচ্ছাসেবক সবাই কাজ করছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। আহত যোদ্ধারা দিন গুনছেন কখন উঠে দাঁড়াতে পারবেন, এবং পুনরায় যুদ্ধে যাবেন। স্বেচ্ছাসেবকদের ভেতর মুশতারী শফীও ছিলেন।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ভারতের কর্নাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে বান্ধবীর সাড়ে তিন বছর বয়সী মেয়েকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে উঠেছে এক ব্যক্তির (২৬) বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে বেঙ্গালুরু পুলিশ।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) এ খবর জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
জানা গেছে, একটি তৈরি পোশাক কারখানার কর্মী ওই নারী বাড়িতে তার তিন বছরের মেয়েকে রেখে কাজে যেতেন। সেই সময় শিশুটিকে দেখভাল করতেন তার প্রেমিক। সোমবার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বান্ধবীর অনুপস্থিতিতে ওই ব্যক্তি বাড়ি এসে শিশুটিকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ।
পুলিশ বলছে, শিশুটির মায়ের সঙ্গে অভিযুক্তের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কাজ শেষে শিশুটির মা বাড়ি ফিরলে তার মেয়েকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। এরপর তিনি এবং ওই ব্যক্তি মেয়েটিকে কাছের একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ সময় ওই নারী মেয়ের মৃত্যু নিয়ে প্রেমিককে প্রশ্ন করলে তিনি তাকে মারধর করেন। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দেয়। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই ব্যক্তি শিশুটিকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা হয়েছে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’
তার কলাম মানেই সেদিন বাংলার বাণী অফিস সরগরম। সকাল থেকেই ফোন আসত। বিভিন্ন আড্ডায়ও আলোচনা হতো সেই কলাম নিয়ে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়-আশয় এবং দেশের সমসাময়িক বিষয়গুলো আকর্ষণীয় এবং সহজ করে পাঠকের কাছে তুলে ধরতেন এই সাংবাদিক। এর বাইরে প্রকৃতি, পাহাড়, নদী ও দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে লিখতেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের লাল পাহাড়ের মানুষের জীবনের গল্পও তুলে আনতেন। প্রায় দেড় দশক নিরবচ্ছিন্নভাবে তিনি সাংবাদিকতা করেছেন। লিখেছেন অসংখ্য কলাম।
যখন সাংবাদিকতা করতেন তখন তার কাজের জায়গাটিতে তিনি ছিলেন সেরা। ছাত্ররাজনীতির জন্য যেমন নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন, ছাত্রনেতা হিসেবেও পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়। সফল হয়েছেন প্রতিমন্ত্রী এবং মন্ত্রী হিসেবে। দেশের ঐতিহ্যবাহী এবং ইতিহাসসমৃদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও তিনি সফল। তৃতীয়বারের মতো দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি হলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রাজনীতির বাইরে তার আরও অনেক পরিচয়ের মধ্যে সাংবাদিক পরিচয়টাও অনেক বেশি উজ্জ্বল।
ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন স্পষ্টবাদী, সাহসী ও দেশপ্রেমিক। পাকিস্তান আমলে ছাত্র ও গণআন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা এ নেতা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং কোম্পানীগঞ্জ থানা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) অধিনায়ক ছিলেন।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। ওই ভয়াল রাতে নিহত হন তার ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি। তিনি তখন দৈনিক বাংলার বাণীর সম্পাদক। ফলে পত্রিকাটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ১৯৮১ সালে পত্রিকাটি আবার ছাপার অনুমতি পায়। ওই সময় ওবায়দুল কাদের জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। সেই সঙ্গে লেখালেখি। দ্বিতীয়বার শেখ ফজলুল করিম সেলিমের (বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য) সম্পাদনায় বাংলার বাণী পত্রিকার ছাপা শুরু হওয়ার পর যুক্ত হন ওবায়দুল কাদের। তিনি পত্রিকাটির সহকারী সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য ও পরে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের আগপর্যন্ত তিনি সাংবাদিকতা করেছেন।
টানা ১৫ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে ওবায়দুল কাদের অসংখ্য কলাম লিখেছেন বাংলার বাণীতে। ‘ও কাদের’ নামে তিনি কলাম লিখতেন। প্রতিদিন সকালে অফিসে আসতেন। সম্পাদকীয় বিভাগ ও অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে মিটিং করতেন। সম্পাদকীয় বিভাগের বাইরে সেই সময় তিনি বাংলার বাণীর আন্তর্জাতিক পাতাটি নিজের দায়িত্বে বের করতেন। আন্তর্জাতিক বিষয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও সমসাময়িক বিষয়ে তিনি খুব বেশি সচেতন ও আগ্রহী ছিলেন।
ওবায়দুল কাদেরের সেই সময়কার সহকর্মীরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সহকর্মী হিসেবে তিনি চমৎকার ছিলেন। তাছাড়া সাংবাদিক হিসেবেও খুব পেশাদার ছিলেন। তিনি যদি রাজনীতি না করে সাংবাদিক থাকতেন, তার অনেক লেখা এবং অসংখ্য বই আমরা পেতাম। যদিও তিনি এখন রাজনীতিতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছেন। কিন্তু আমরা যারা তাকে পেয়েছি, তারা তার লেখা মিস করছি। তার লেখার জন্য অপেক্ষা করতাম। যেহেতু বাংলার বাণী ছিল বিরোধী ঘরানার পত্রিকা, তাই সাধারণ মানুষেরও আগ্রহ থাকত।
ওবায়দুল কাদেরের লেখালেখি ও তার কলাম সম্পর্কে জাতীয় অধ্যাপক প্রয়াত কবীর চৌধুরী লিখেছিলেন, ‘যখনি সংকট, যখনই এক অপয়া অন্ধকার ওঁৎ পেতে আসে, যখনই সমাজ ধূসরতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, যখনই মিথ্যা ও ইতিহাস বিকৃতির গোলকধাঁধায় নয়া প্রজন্মকে দিগভ্রান্ত করার অপচেষ্টা, যখনই রাজনীতির গৌরব কলুষতায় ঢেকে দেওয়ার অপপ্রয়াস তখনই ওবায়দুল কাদেরের এই জীবন ঘনিষ্ঠ, সত্য ও সুন্দরের আরাধনাময় সাহসী রচনা সমাজকে আলোর ইতিহাস শোনাতে পারে।’
ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকতা জীবনে সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয়, রাজনৈতিক কলাম লিখেছেন অসংখ্য। কবি নির্মলেন্দু গুণ তার সম্পর্কে বলেছেন, ‘বাংলার বাণী পত্রিকায় সম্পাদকীয় বিভাগে আমার সহকর্মী ছিলেন, কলাম লেখক হিসেবেও জনপ্রিয় হয়েছিলেন।... আমি তার অলংকৃত কাব্যিক ভাষায় বক্তৃতার একজন ভক্তশ্রোতা।’
প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মূল্যায়ন ছিল, ‘ওবায়দুল কাদের শুধু রাজনীতিক নন, তিনি সাংবাদিক, তিনি বাগ্মী, তিনি লেখক। বক্তৃতায় বাংলা শব্দ উচ্চারণ, ছন্দের ব্যবহারে চারণকবি তিনি। নিবন্ধ লেখক হিসেবে যুক্তি ও বিশ্লেষণে তীব্র লক্ষ্যভেদী তিনি।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন বাংলার বাণীতে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৯৮৯ সালে বাংলার বাণীতে যখন জয়েন করি তখন সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাদের ভাইকে পাই। আমরা বার্তাকক্ষে বসতাম আর তিনি তখন অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটরদের রুমে বসতেন। ওনাদের আলাদা রুম ছিল। তিনি রুম থেকে বের হয়ে সবসময় আমাদের খোঁজখবর নিতেন। মাঝেমধ্যে আমাদের এখানে এসে গল্প করতেন। তিনি সহকর্মী হিসেবে খুবই আন্তরিক ও সহকর্মীবান্ধব ছিলেন।’
সেই সময়ে বাংলার বাণীতে ওবায়দুল কাদেরের আরেক সহকর্মী ও পাক্ষিক ক্রীড়াজগৎ পত্রিকার সম্পাদক দুলাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি তাকে ১৯৮৫ সালে পেয়েছি। আমি তখন সহ-সম্পাদক হিসেবে জয়েন করেছি বাংলার বাণীতে। ওবায়দুল কাদের তখন সহকারী সম্পাদক ছিলেন। তিনি কলাম লিখতেন। তার কলাম পাঠকের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল। তার লেখার মধ্যে সাহিত্য ছিল। লেখা খুব আকর্ষণীয় ছিল। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন জায়গায় যেতেন, সেসব বিষয় নিয়েও লিখতেন। তার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা ছিল চট্টগ্রাম, পাহাড়-সমুদ্র খুব পছন্দ করতেন এবং এসব নিয়েও তিনি লেখালেখি করতেন। তিনি খুব আবেগী লোক ছিলেন এবং লেখার মধ্যে সেটা ফুটে উঠত। তার লেখা পাঠক পড়তে বাধ্য হতেন।’
তিনি বলেন, ‘রাজনীতির মানুষ হলেও অফিসে ঢুকলে একজন সংবাদকর্মী হিসেবেই থাকতেন ওবায়দুল কাদের। রাজনীতির বিষয়টা বাইরে রাখতেন। বরাবরই তিনি শৌখিন টাইপের লোক ছিলেন। ভালো কাগজ-কলম ব্যবহার করতেন লেখার সময়। লেখার সময় আলাদা একটা মেজাজে থাকতেন। তখন খুব জরুরি না হলে কোনো বিষয় অ্যালাউ করতেন না। লেখা শেষ করলে বেশ ফুরফুরে থাকতেন। তখন আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, গল্প করতেন। পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে তার মনোভাব আমরা দেখতে পেয়েছি।’
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাংবাদিক সুভাষ চন্দ বাদল বাংলার বাণী পত্রিকায় ওবায়দুল কাদেরের সহকর্মী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কাদের ভাইকে ছাত্ররাজনীতি থেকেই চিনতাম। ১৯৭৫ সালের পর যখন তিনি কারাগারে যান তখন আমিও কারাগারে। তাকে কারাগারে দেখেছি বই নিয়ে ডুবে থাকতে। বাংলার বাণীতে এসে তাকে নতুন করে পেয়েছি। সেই সময় আজিজ মিসির ও তার কলাম ছিল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তিনি সাংবাদিকবান্ধব। বাংলার বাণী অফিসেও সহকর্মীদের সবসময় সহযোগিতা করতেন। আমি রিপোর্টার হিসেবে যদি কখনো কোথাও আটকে যেতাম তিনি সহযোগিতা করতেন। কাদের ভাই সাংবাদিক হিসেবে ছিলেন মেধাবী ও জ্ঞানী। তার সাহসের ঘাটতি ছিল না। তার কলামেও এর প্রভাব দেখেছি।’
ওবায়দুল কাদের ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার বড় রাজাপুর গ্রামে জন্ম নেন। বাবা মোশারফ হোসেন সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা শুরু করেন। মা ফজিলাতুন্নেছা। ওবায়দুল কাদের বসুরহাট সরকারি এএইচসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও নোয়াখালী কলেজ থেকে মেধা তালিকায় স্থান পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি কলেজজীবন থেকে ছাত্ররাজনীতি শুরু করেন।
১৯৭৫-এর পর একনাগাড়ে দীর্ঘ আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পরপর দুবার সভাপতি ছিলেন।
তার সেই সময়ের সহকর্মীরা বলেন, সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের তথা কাদের ভাই মানেই অন্যরকম। তিনি ছিলেন খুব সংবেদনশীল। সবাইকে মেনে নেওয়ার একটা ক্ষমতা ছিল। তিনি যে এত বড় একজন রাজনীতিক ও মুক্তিযোদ্ধা, এত বড় ছাত্রনেতা, তা কখনই সাংবাদিকদের কাছে মনে হতো না। মনে হতো, কাদের ভাই যেন সাংবাদিকতার মধ্যেই ডুবে আছেন। কোনো রিপোর্টার বা সাব-এডিটর অনুবাদ করতে সমস্যায় পড়েছেÑ কাদের ভাইয়ের কাছে গেলেই সমাধান। নিজের রুমে, ডেস্কে বসিয়ে বুঝিয়ে দিতেন। আর তার টেবিলে ছিল সবসময়ই গাদা গাদা বই।
বাংলার বাণীর সেই সময়ের একাধিক সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে দেশ রূপান্তরকে বলেন, কাদের ভাই ছিলেন সাংবাদিকতার প্রতি পুরো নিষ্ঠাবান। তার কাছে অনেক কিছু শিখেছি। তিনি দীর্ঘক্ষণ কোথাও বসে থাকতেন না। কাজের ফাঁকে ফাঁকেই তিনি রুম থেকে বেরিয়ে অন্য সহকর্মীদের টেবিলে টেবিলে আড্ডা দিতেন। সেখানে হয়তো আমরা চায়ের অর্ডার দিয়েছি। চা আসতে না আসতেই তিনি উঠে যেতেন। তারপর আবার তাকে চায়ের কাপ নিয়ে খুঁজতে হতো কাদের ভাই কই...।
আজ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের উদ্যোগে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম। আর অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন যুবলীগ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
সভাপতির বক্তব্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের কথা, মানবাধিকারের কথা মানায় না। আপনাদের হিংসাত্মক রাজনীতি আর সন্ত্রাসের কারণে নতুন প্রজন্ম রাজনীতি করতে চায় না। যারা একুশে আগস্ট ঘটিয়েছে, নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে, মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে, কৃষকের বুকে গুলি চালিয়েছে, জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটিয়েছে, তাদের সকল অপকর্মের মেডেল আছে। আমি বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপির প্রধান শত্রু এ দেশের সাধারণ জনগণ। যারা একাত্তরে হাতিয়ার তুলে নিয়েছিল দেশকে স্বাধীন করার জন্য, একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আপনারা বার বার তাদেরকেই আক্রমণ করেন। আওয়ামী লীগ আপনাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে আসে বলেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপনাদের বিরোধ ঘটে। সব সময় এ দেশের সাধারণ মানুষকে আপনাদের ষড়যন্ত্রের শিকার বানান, হত্যার শিকার বানান এবং আপনাদের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের শিকার বানান।
পরশ আরও বলেন, এ বছরটা নির্বাচনের বছর। আমাদের রাজপথে থাকতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। শুধু নেতাকর্মী দ্বারা আবর্ত থাকলে চলবে না, আমাদের চলে যেতে হবে সাধারণ মানুষের কাছে। গত ১৪ বছরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অর্জনের কথা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। যদি সাধারণ মানুষ উন্নয়নের সুফল না পায় তাহলে সেই উন্নয়নের কোনো মূল্য থাকে না। যখন আমাদের সকল উন্নয়নের সুফল সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারব তখনই জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।
তিনি যুবলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, যুবলীগের ভাই ও বোনেরা- আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন, আপনারা ধৈর্যশীল থাকবেন। ওদের কৌশল আমাদের সন্ত্রাসী হিসাবে উপস্থাপন করা। ওরা পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে চাইবে। আপনারা ওদের ফাঁদে পা দেবেন না। কিন্তু রাজপথ আমরা ছেড়ে দেব না। ভুলে যাবেন না, ওরা কিন্তু দিনকে রাত এবং রাতকে দিন বানাতে পারদর্শী। মিথ্যার ওপরই দলটার সৃষ্টি। ওরা জাতির পিতার নাম মুছে ফেলেছিল, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছিল। সুতরাং মিথ্যা চর্চার ক্ষেত্রে এই দলকে দুর্বল ভাবার কোনো সুযোগ নেই।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, যখন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, যখন বাংলাদেশের জিডিপি সিংগাপুর, মালয়েশিয়ার উপরে, যখন বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ ঠিক সেই মুহূর্তে বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশকে পেছনের দিকে নেওয়ার জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক তারা সবাই ভবিষ্যদ্বণী করছে, বাংলাদেশ যেভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যদি এভাবে এগিয়ে যায় তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৭তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে। আর এটা সম্ভব শুধুমাত্র রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে।
তিনি যুবলীগের উদ্দেশে বলেন, বিএনপি-জামায়াত আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা নানা মিথ্যা প্রচারণা ও গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রতিটি জেলায়, উপজেলায়, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এবং ইউনিটে জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। বলতে হবে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়নি, বাংলাদেশ উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আপনারা শেখ হাসিনার পাশে থাকুন, নৌকার পাশে থাকুন, নৌকায় ভোট দিন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম বলেন, যারা স্যাংশন নিয়ে কথা বলেন তাদের দলের প্রধান খালেদা জিয়া তৎকালীন আমেরিকার পরারাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্যাংশন চেয়েছেন। যাতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ভাবে ভেঙে পড়ে, দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়, খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়, বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পায়, মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। এটাই হলো বিএনপির আসল চেহারা। তারা কখনোই এ দেশের মানুষের ভালো চায় না। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অভিজ্ঞতা আছে কিভাবে অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে তোলা যায়। সামনের যে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কথা বলা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ তা কাটিয়ে উঠতে পারবে। আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিলে বঙ্গবন্ধুকন্যা তার দূরদর্শী নেতৃত্বে একটি উন্নত-সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবে।
সঞ্চালকের বক্তব্যে যুবলীগ সম্পাদক নিখিল বলেন, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঢাকার রাজপথে আপনারা পোস্টার হয়েছেন। নুর হোসেন, ফাত্তাহ বাবুল হয়েছেন। তারপরেও দেশের স্বার্থে সংগঠনের স্বার্থে, বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার প্রশ্নে যুবলীগ আপস করেনি, যুবলীগ আপস করতে জানে না। তিনি যুবলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যেমনি করে বিগত দিনে কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে রাজপথ আগলে রেখে প্রিয় নেত্রীর নির্দেশিত পথে মানুষের কল্যাণে, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আপনারা সব সময় কাজ করেছেন। আগামী নির্বাচনেও সেই সাহসিকতা আর বীরত্বের সাথে রাজপথে থাকবেন। বিএনপি-জামায়াতের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আবারও রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে ঘরে ফিরবেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. হাবিবুর রহমান পবন, মো. নবী নেওয়াজ প্রমুখ।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।