
সবজি চাষের জন্য বিখ্যাত নরসিংদী। জেলার লাখো কৃষক বেগুন, করলা, শসা, বরবটি, চিচিঙ্গা, ঝিঙা, চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, লালশাক, ডাঁটাশাক, কচু, আলু, ঢেঁড়স, পেঁপে, মুলা, বাঁধাকপি, ফুলকপি ও মরিচসহ বিভিন্ন প্রকারের সবজি চাষ করে থাকেন। যা চাহিদা মেটায় রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের বেশ কিছু জেলার লাখ লাখ ভোক্তার। কিন্তু প্রান্তিক কৃষকের উৎপাদিত এ সবজি বাজারজাতকরণের জন্য গড়ে ওঠেনি যথাযথ বাজারব্যবস্থা। তাই বাধ্য হয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ঘেঁষে গড়ে ওঠা পাইকারি বাজারগুলোতে নিজেদের উৎপাদিত সবজি নিয়ে ভিড় করেন
কৃষকরা। যেসব সবজি হাটে প্রায়ই সড়ক থেকে ঢুকে পড়া যানবাহনে কৃষকের হতাহতের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু তারপরও বিকল্প না থাকায় মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে এসব হাটেই ফসল বিক্রি করতে যাচ্ছেন কৃষকরা।
সর্বশেষ গতকাল রবিবার সকালে জেলার রায়পুরা উপজেলার মেশিনঘর বাসস্ট্যান্ডে মালবাহী বেপরোয়া গতির ট্রাকের চাপায় প্রাণ যায় পাঁচজনের। যার মধ্যে তিনজনই সবজি বিক্রি করতে আসা স্থানীয় কৃষক। এ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও চারজন।
এর আগে গত ৩০ জুন একই হাটে একই জায়গায় নিয়ন্ত্রণ হারানো কাভার্ড ভ্যানের চাপায় হাটে আসা সাতজন নিহত হন। যাদের প্রায় সবাই ছিলেন স্থানীয় কৃষক।
স্থানীয় সবজি চাষি-পাইকার এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর অংশে পাঁচটি আনুষ্ঠানিক (উপজেলা প্রশাসন থেকে ইজারার ভিত্তিতে) সবজির হাট বসে। এর মধ্যে সপ্তাহের বুধ, সোম ও শুক্রবার বারৈচা বাজার, শনি ও মঙ্গলবার নারায়ণপুর, রবিবার জঙ্গলী শিবপুর, মঙ্গলবার সৃষ্টিগড় ও সোমবার কোন্দারপাড়ায় সবজির হাট বসে। এ ছাড়াও অনানুষ্ঠানিকভাবে (ইজারাবিহীন) সবজির হাট বসে মাহমুদাবাদ মেশিনঘর ও নারায়ণপুর গোকুলনগরসহ আরও বেশ কয়েকটি জায়গায়। ভোর থেকে স্থানীয় কৃষকরা ভ্যানে করে এসব হাটে তাদের উৎপাদিত সবজি বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা পাইকারি ক্রেতারা সেসব সবজি কিনে নিয়ে যান।
সরেজমিনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জঙ্গলী শিবপুর সবজির হাটে দেখা যায়, মহাসড়কের দুই পাশ ঘেঁষে বসানো হয়েছে সবজির হাট। আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা মৌসুমি সবজি ঝুড়িতে ও ভ্যানে নিয়ে বিক্রি করতে ভিড় জমিয়েছেন হাটে। মহাসড়ক দিয়ে ছুটে চলেছে দ্রুতগতির বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন। এর মধ্যেই পাইকারদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য মহাসড়কের ওপর ভিড় জমাচ্ছেন সবজি চাষিরা।
অন্যদিকে ট্রাকচাপায় ৯ জন হতাহতের পর গতকাল মাহমুদাবাদ মেশিনঘর বাসস্ট্যান্ড সবজির হাট ছিল ফাঁকা। মহাসড়কের এক পাশে একটি সবজির ভ্যান দুমড়েমুচড়ে পড়ে ছিল। পাশেই কাদামাখা অবস্থায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল ভ্যানের লাউ, বরবটিসহ বিভিন্ন সবজি।
সেখানে এই প্রতিবেদকের কথা হয় দেওয়ান মিয়া নামে এক কৃষকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘চালকদের বেপরোয়া গতির কারণেই বারবার এ হাটে দুর্ঘটনা ঘটছে। তারা হাট দেখেও গাড়ির গতি কমায় না। যার ফলে দুর্ঘটনা ঘটে নিরীহ মানুষদের প্রাণ যাচ্ছে। আমরা চাই মহাসড়কের পাশ থেকে এ ঝুঁকিপূর্ণ হাটটি সরিয়ে যেন একটি নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়।’
ঢাকা-সিলেট সড়কে চলাচলকারী এনা পরিবহনের গাড়িচালক সেলিম মিয়া বলেন, ‘ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুঃখ এ সবজির হাটগুলো। এর ফলে প্রায়ই আমাদের দীর্ঘসময় যানজটের কবলে পড়তে হয়।’
গতকাল দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজগর হোসেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সবজি চাষিরা মহাসড়কের পাশে অনানুষ্ঠানিকভাবে সবজির হাট বসিয়ে থাকেন। আমরা সড়ক ও জনপদ এবং হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা মহাসড়কের পাশে যাতে এসব হাট বসতে না পারে তার জন্য ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া সবজির হাটে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার যাতে ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আস্থার সংকট কাটিয়ে সাধারণ মানুষের মন জয়ের চেষ্টা করছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সংস্থাটি সরকারি হয়েও জনসেবার ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। যতটা ফোকাস হচ্ছে সরকারের সাপোর্ট কিন্তু ততটা পাচ্ছে না তারা।
ভোক্তার অভিযোগ নিষ্পত্তি করা সংস্থাটির প্রধান কাজ হলেও বাস্তবে সরকার নির্দেশিত নানা অভিযানকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এতে সংস্থাটির লক্ষ্যচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিছু সমস্যা আছে। সেগুলো সমাধানের পথেই আছি আমরা। জনবল সবচেয়ে ভাবনার বিষয়। তবে যেটুকু জনবল আছে তা নিয়েই আমরা লড়ে যাচ্ছি। সংস্থাটির লক্ষ্যচ্যুত হওয়ার সুযোগ নেই, কারণ এর সঙ্গে সবার স্বার্থ জড়িত।’
নগরজীবনে চারপাশে হরদম প্রতারণা হচ্ছে। প্রায় সবাই প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবে প্রতারিত হচ্ছেন। সব প্রতারণার সমাধান সরকার দিতে পারছে না। আর সবকিছু নিয়ে সাধারণ মানুষ সরকারের কাছে যায়ও না। গেলেও নানা নিয়মের বেড়াজালে আটকে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। শঙ্কা এড়িয়ে ভোক্তা-অধিকার অধিদপ্তর এগিয়ে চলেছে।
কাঁঠালবাগান ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের ইয়াসির আরাফাত গত বছর ধানমন্ডির একটি রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে। খাবারের দাম অনেক বেশি রাখা হয়েছিল তার কাছ থেকে। কিন্তু যখন দেখলেন ১৫ টাকার পানির বোতল ২০ টাকা রাখা হয়েছে তখনই প্রতিবাদ করেন তিনি। ক্যাশ মেমো নিয়ে অভিযোগ করেন ভোক্তা-অধিকার অধিদপ্তরে।
ইয়াসির আরাফাত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অভিযোগ করার পর শুনানির জন্য ডাকা হয়। মাত্র এক মাসের মধ্যে শুনানি শেষ করে রেস্টুরেন্টটিকে জরিমানা করা হয়। সেই জরিমানার ২৫ ভাগ আমি নিজেও পেয়েছি। এক সময় মানুষের যাওয়ার জায়গা ছিল না, এখন সেই জায়গা হয়েছে।’
ইয়াসির আরাফাতের মতো আরও অনেকেই তাদের অভিযোগের প্রতিকার পেয়েছেন। তাদের কেউ মাছ কিনে ওজনে কম পেয়েছেন, ঈদের সময় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভ্রমণ করতে গিয়ে ভাড়ায় প্রতারিত হয়েছেন বা মেয়াদহীন পণ্য কিনে ঠকেছেন। ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘সমাধান পেতে হলে পণ্য কেনার ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করতে হবে। পণ্যের মানি-রিসিট, গ্যারান্টি বা ওয়ারেন্টি কার্ড বা অন্য যেকোনো ডকুমেন্ট থাকতে হবে।’
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সফিকুজ্জামান বলেন, ‘শুরুতে মানুষের আগ্রহ কম ছিল। কিন্তু এখন ব্যাপক আগ্রহ। গত অর্থবছরে অভিযানের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৬২৫টি। চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এ তিন মাসেই সমসংখ্যক অভিযান হয়েছে। সামনে পুরো বছর তো পড়েই আছে।’
২০০৯-১০ সালে দ-িত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৫৪টি। গত বছর ২৫ হাজার ৬২৩টিতে দাঁড়িয়েছে। অধিদপ্তরের শুরুর বছর অর্থাৎ ২০০৯-১০ সালে অভিযানের সংখ্যা ছিল সাতটি। গত বছর অভিযান হয়েছে ১০ হাজার ৬২৫টি। শুরুর দুই বছর কেউ ২৫ শতাংশ প্রণোদনা পায়নি। ২০১১-১২ সালে প্রণোদনা পেয়েছেন আটজন। এ প্রণোদনা সর্বোচ্চ ১ হাজার ১০ জন পেয়েছিলেন ২০১৭-১৮ অর্থবছরে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রেসিডেন্ট গোলাম রহমান গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর করাই হয়েছে, ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। এ পদক্ষেপে আমাদের পূর্ণ সমর্থন আছে, আমরা সাধুবাদ জানাই। ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এ পদক্ষেপে ভোক্তারা উপকৃত হবে।’
নরসিংদী জেলার ভোক্তা প্রায় ২৬ লাখ। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নরসিংদী জেলা কার্যালয়ে কর্মরত আছেন দুজন। একজন সহকারী পরিচালক অন্যজন অফিস সহকারী। এ দুজনের পক্ষে ২৬ লাখ মানুষের অভিযোগ নেওয়া অসম্ভব বিষয়। এ পরিস্থিতি শুধু নরসিংদী নয়, সব জেলাতেই।
এ পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার জন্য অধিদপ্তর আড়াই হাজার জনবলের এক সাংগঠনিক কাঠামো প্রস্তুত করে জনপ্রশাসনে জমা দেয়। দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রেখে কাঠামো পরিমার্জন করে আবার জমা দিতে বলা হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ শাখা এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির হাত ঘুরে কাঠামো ৪৬৫ জনে নেমে আসে। এ জনবলও চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি। পেলে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করবে ভোক্তা অধিদপ্তর।
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নতুন করে আলোচনায় এসেছে কিছু বহুজাতিক ও জাতীয় কোম্পানিকে জরিমানা করে। ৫৫ টাকার লাক্স সাবান ৭৫ টাকায়, ৯০ টাকার হুইল পাউডার ১৪২, ২১০ টাকার সার্ফ এক্সএল ২৮০, ১০ টাকার মিনি সাবান ১৫ টাকায় বিক্রি করছে বহুজাতিক ইউনিলিভার। একইভাবে সমজাতীয় পণ্যে অতিরিক্ত দাম বাড়ানোর কারণে দেশীয় স্কয়ার, এসিআই, কল্লোল গ্রুপ, কোহিনূর কেমিক্যালকে গত ৭ সেপ্টেম্বর তলব করে অধিদপ্তর। নিজেদের কার্যালয়ে ডেকে এসব কোম্পানি কর্তাকে বলা হয়, ‘নিত্যব্যবহার্য পণ্য বিক্রি করে আপনারা লাভ করবেন এটা স্বাভাবিক। তবে তা ৩০ শতাংশের জায়গায় ৫০ শতাংশ কেন?’
বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি বা কমার ফলে দেশের বাজারে দাম বাড়ছে বা কমছে। তবে নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম একবার বাড়লে আর কমছে না। সেই বাড়তি দরের মধ্যেই আবারও দাম বাড়ানো হচ্ছে।
এসব বিষয়ের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটি একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাটে কোম্পানিগুলোর কাছে তথ্য চেয়েছে। কমিটির সদস্যরা সংশ্লিষ্ট কারখানা পরিদর্শন করবে। যেসব পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে, সেগুলোর উৎপাদন ও বাজারজাতকরণসহ কাঁচামাল আমদানির খরচ যাচাই করে দেখবে কমিটি। ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মূলত কোম্পানিগুলোর বাড়ানো দাম কতটা যৌক্তিক বা অযৌক্তিক সেটা দেখছে। অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ানোর প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দেওয়া প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হবে। কোনো ব্যক্তির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এসব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, বিষয়টা তা নয়। দাম বেড়েছে, তাই সব ভোক্তার পক্ষ থেকে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।’
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ‘কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে উপপরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাসকে। কমিটিতে আইসিএমএবি, ট্যারিফ কমিশন, এফবিসিসিআই ও কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের একজন করে প্রতিনিধি রয়েছে।’ এ বিষয়ে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা কাজ শুরু করেছি।’
ভোক্তা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অধিদপ্তরে অল্প কিছু কর্মকর্তা আছেন। সেখানেও কিছু বঞ্চনার গল্প আছে। সংস্থাটিতে নিজস্ব উপপরিচালক আছেন ১২ জন আর সহকারী পরিচালক ৮০ জন। এ ৮০ জন সহকারী পরিচালক কীভাবে উপপরিচালক হবেন তার কোনো দিকনির্দেশনা নেই। একদফা পদোন্নতিতেও বঞ্চনার ঘটনা আছে। ফেইসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে বিপাকে পড়েছেন এক কর্মকর্তা। এসব কিছু নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। সহকারী পরিচালকদের কাজ হচ্ছে তদারকিমূলক। তারা জরিমানা করতে পারেন। কাজের ধরন অনেকটা প্রশাসন ক্যাডারের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মতো হলেও অভিযানে পুলিশ প্রটেকশন পাওয়া অনেক সময়ই দুরূহ হয়ে পড়ে। সরকারের অন্যান্য দপ্তরের মতো এ দপ্তরেও কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতার দ্বন্দ্ব রয়েছে। বিষয়গুলো এখনই সমাধান করা না হলে সামনে প্রশাসনিক জটিলতা আরও বাড়বে এবং জনআস্থা অর্জনে সমস্যা দেখা দেবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে অনেক সংস্থা গড়ে তুলেছে। তাদের মধ্যে কিছু বেশ কার্যকর। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা প্রচলিত স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছে। নতুন অধিদপ্তরের মধ্যে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কার্যকর হলেও সফলতা দেখাতে পারেনি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। দেরিতে হলেও প্রতিযোগিতা কমিশন ভালো করছে। প্রতিযোগিতা কমিশন ও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর এ দুটি সংস্থার আইনের খসড়া করেছিল গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে আইনগুলো করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।’
ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে রিফাতের কর্মযোগ্য শুরু হয়ে যায়। ৯ বছরের রিফাত কাজ করছে হলটির মুদিদোকানে। সকালে যখন হলের শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় ব্যস্ত, তখন এই শিশুকে দোকানের নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। রিফাত পড়ালেখা করেছে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। পরিবারে আর্থিক অনটনের কারণে বই-খাতা তুলে দুই মাস আগে চাঁদপুর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের দোকানে কাজ নিতে হয়েছে তাকে। শুধু রিফাত নয়, তার মতো দুই শতাধিক শিশু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ক্যানটিন ও দোকানে কাজ করছে। প্রতিদিন তাদের ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। বিনিময়ে খুব সামান্য পরিমাণ পারিশ্রমিক মেলে।
বাংলাদেশে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু দিবস। জাতিসংঘ ২০ নভেম্বরকে বিশ্ব শিশু দিবস নির্ধারণ করলেও বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রতি বছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হয়। এছাড়া ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে পালিত হয় জাতীয় শিশু দিবস।
বিশ্ব শিশু দিবসকে সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি আবাসিক হলে ২৩টি ক্যানটিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব ক্যানটিনে ১২৬ জন শিশু শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। যাদের বয়স ৮ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। বয়সভেদে দুই থেকে চার হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয় তাদের। এ ছাড়া হল প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে প্রতিটি হলে রয়েছে হালকা ও ভারী খাবারের দোকান। এসব দোকানে ৮২ জন শিশু কাজ করছে। তাদের বেতন দৈনিক হিসাবে ৮০ থেকে ১২০ টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া আইবিএ, চারুকলা, আইইআর ও গণিত ভবনের ক্যানটিনেও শিশুদের কাজ করতে দেখা যায়।
জিয়াউর রহমান হলে কাজ করা রিফাতের সঙ্গে কথা হয় দেশ রূপান্তরের এই প্রতিবেদকের। রিফাত বলে, ‘আমার বাবা বিদেশে থাকেন। তিনি কোনো টাকা পাঠান না। তাই বাধ্য হয়ে দোকানে কাজ নিয়েছি।’ পড়ালেখার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে এই শিশু বলে, ‘আমি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি। ঢাকায় আসার পর থেকে পড়ালেখা বাদ দিতে হয়েছে। তবে টাকা জমিয়ে আমি গ্রামে ফিরে গিয়ে আবার স্কুলে ভর্তি হব। বড় হয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হব।’
রিফাতের মতো ১২ বছর বয়সী আমজাদও জগন্নাথ হলের ক্যানটিনে কাজ করে। তাদের দুজনের গল্প প্রায় একই রকম। ভোরে ঘুম থেকে উঠে তার দিন শুরু হয় থালা-বাসন পরিষ্কার করতে করতে। এরপর সকালের নাশতা বানানোর জন্য বাবুর্চিকে সাহায্য করা, ছাত্রদের মাঝে খাবার বিতরণ করা, টেবিল পরিষ্কার করার মতো কাজগুলো তাকে করতে হয়। আমজাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়। তারা বাবা গ্রামে রিকশা চালান। বাড়তি আয়ের আশায় ছেলেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানটিনে কাজে দিয়েছেন। পাঁচ মাস ধরে ক্যানটিনে কাজ করছে আমজাদ। সে এখন ক্যানটিন ছেড়ে বই-খাতা নিয়ে স্কুলে ফিরতে চায়। আমজাদ দেশ রূপান্তরকে বলে, ‘আমার বাড়ি থেকে জোর করে কাজে দিয়েছে। বাড়িতে বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতাম, মজা করতাম। এখানে সেই সুযোগ নাই। সারা দিন কাজ করতে হয়। আমি আবার স্কুলে যেতে চাই, বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে চাই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মাহাদী হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সচেতন। আমাদের সামনে শিশুশ্রম হচ্ছে এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। তবে এই বাচ্চারা আর্থিক সংকটের কারণে এখানে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। আমার মনে হয় তাদের শ্রমের ঝুঁকি কমিয়ে সাধারণ কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে তাদের বিনা মূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত।’
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এ বলা হয়েছে, শিশুদের ন্যূনতম বয়স ১৪ বছর। ১৪ বছরের কম বয়সীদের কাজে নিয়োগ করা যাবে না। শিশুর অভিভাবক কাজ করানোর জন্য কারও সঙ্গে কোনো প্রকার চুক্তি করতে পারবেন না। তবে সারা দেশের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানটিন ও দোকানগুলোতে এ আইনের প্রয়োগ দেখা যায় না।
ক্যানটিন ও দোকানমালিকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, শিশুদের সাধারণত তারা কাজে নিতে চান না। পরিবার খুব অসহায় হওয়ায় অনেকটা বাধ্য হয়ে শিশুদের ক্যানটিনে রাখছেন তারা। তবে তাদের দাবি, শিশুদের দিয়ে ভারী কোনো কাজ করান না তারা।
শিশুশ্রমের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. ফাতেমা রোজিনা ইকবাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশের আইনে শিশুশ্রম সম্পূর্ণভাবে নিষেধ। আমি শিশুশ্রম বিষয়টিকে একদম নেতিবাচকভাবে দেখি। এই বয়সে একটি শিশু মায়ের স্নেহে, বাবার আদরে বড় হবে, বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাবে, সেই বয়সে বাচ্চাটাকে এখানে কাজ করতে হচ্ছে। এ বিষয়টি দেখতে আমার খুব কষ্ট হয়।’
শিশুশ্রম বন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে কি না এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে আজই একটা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ক্যাম্পাসে শিশুশ্রম বন্ধ করতে পারে। এতে কী হবে, এই শিশুগুলো কর্মহীন হয়ে পড়বে। এদের অনেকের বাবা-মা নেই, পরিবার নেই। কাজ বন্ধ করে দিলে এদের কী হবে? তারা কর্মহীন হয়ে পড়বে। তার থেকে এদের জন্য বিকল্প একটা ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আমরা ছাত্র-শিক্ষকরা উদ্যোগ নিয়ে এই শিশুদের পড়ালেখা করাতে পারি।’
শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে এমন একটি সংগঠন বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম। সংগঠনটির পরিচালক আব্দুস শহীদ মাহমুদের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের মতো একটি জায়গায় শিশুরা শ্রম দিচ্ছে, কিন্তু আমরা সবাই নিশ্চুপ! যেন দেখেও দেখছে না কেউ। এটা সবার কাছে স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও হলের কাজে ঝুঁকি কম, তারপরও শিশুদের দিয়ে কাজ করানোটা ঠিক নয়।’
শিশুশ্রমের বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের নজরে আনা হলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হলের দোকান ও ক্যানটিনে শিশুরা কাজ করে, এটা আমি জানি। যখন আমি ছাত্র ছিলাম, তখনো দেখেছি। এই ছেলেরা খুবই দরিদ্র, কাজ থেকে বাদ দিলে তারা আরও অসহায় হয়ে যাবে। তবে আমরা তাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারি। তাহলে তারা কাজের পাশাপাশি নিজেকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে।’
বিশ্ব শিশু দিবসে নানা কর্মসূচি : ‘গড়বে শিশু সোনার দেশ, ছড়িয়ে দিয়ে আলোর রেশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ সোমবার দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভিন্ন-ভিন্ন দিনে দিবসটি পালিত হয়। বাংলাদেশে বিশ্ব শিশু দিবস পালন করা হয় অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার। বিশ্ব শিশু দিবসের সঙ্গে মিলিয়ে শিশুর অধিকার, সুরক্ষা এবং শিশুর উন্নয়ন ও বিকাশে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগী ও সচেতন করার লক্ষ্যে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত পালন করা হবে শিশু অধিকার সপ্তাহ। গতকাল রবিবার মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ-২০২২-এর উদ্বোধন করবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, প্রতিবছরের মতো এবারও দেশব্যাপী বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ উদ্যাপন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার একটি স্টেডিয়ামে দেশটির দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ফুটবল ক্লাব সমর্থকদের সংঘর্ষ, পুলিশের টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপের পর পদদলিত হয়ে ১২৫ জন নিহত হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ এ ঘটনা ঘটেছে দেশটির কানজুরুহান ফুটবল স্টেডিয়ামে।
গত শনিবার রাতে পূর্ব জাভা প্রদেশের মালাং শহরের এ স্টেডিয়ামে আরেমা এফসি ও পেরসেবায়া সুরাবায়া নামের দুটি ফুটবল ক্লাবের মধ্যে খেলা চলছিল। খেলায় আরেমাকে ৩-২ গোলে হারায় পেরসেবায়া। ইন্দোনেশিয়া পুলিশ বলছে, হারের পর স্টেডিয়ামে থাকা আরেমার দর্শকরা মাঠে নেমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। তাদের থামাতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ। এতে দর্শকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ সময় হুড়োহুড়িতে অনেকেই পদদলনে নিহত হন।
পুলিশের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ম্যাচের রেফারি বাঁশিতে চূড়ান্ত ফুঁ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরেমা এফসির ক্ষুব্ধ সমর্থকরা চারদিক থেকে মাঠে ঢুকে পড়েন। এক প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মাঠের মাঝেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন আরেমার ভক্তরা। সেখানেই দুই পুলিশ সদস্য নিহত হন।
পূর্ব জাভার পুলিশপ্রধান নিকো আফিনতা জানান, দাঙ্গাকারীদের মাঠ থেকে গ্যালারিতে ফেরত পাঠাতে পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়তে শুরু করে। এ সময় হুড়োহুড়িতে অনেকে পদদলিত হয় এবং সেখানে দমবন্ধ করা একটি পরিস্থিতির তৈরি হয়। তিনি জানান, সবাই একটি স্থান দিয়েই বের হওয়ার চেষ্টা করছিল। ফলে প্রচণ্ড ভিড়ের একপর্যায়ে অক্সিজেনের অভাবে দমবদ্ধ করা পরিবেশ তৈরি হয়। দেশটির নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ মাহফুদ মাহমোদিনের দাবি, ৩৮ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার ওই স্টেডিয়ামে শনিবারের ম্যাচের জন্য টিকিট বিক্রি হয়েছিল ৪২ হাজার। বিশ^ ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার নিরাপত্তা বিধি অনুযায়ী, মাঠে নিরাপত্তাকর্মীরা কখনোই আগ্নেয়াস্ত্র কিংবা ‘টিয়ার গ্যাস’ ব্যবহার করতে পারেন না।
এদিকে পুলিশপ্রধানের দাবি, বাধ্য হয়েই তারা কাঁদুনে গ্যাস ছুড়েছিলেন। তার ভাষায়, ‘পুরো অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। তারা পুলিশ কর্মকর্তাদের আক্রমণ করেছিল, গাড়ি ভাঙতে শুরু করেছিল।’
এ ছাড়া স্টেডিয়ামের বাইরে সমর্থক ও পুলিশের মধ্যে ফের সংঘর্ষ হয়। সামাজিক মাধ্যমে আসা ভিডিও ও ছবিতে দেখা যায়, স্টেডিয়ামের বাইরে ফুটবল ভক্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ছে পুলিশের গাড়ি।
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো ফুটবল ম্যাচগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে এবং পুরো ঘটনার তদন্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। এ ঘটনার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত লিগ স্থগিত রাখার নির্দেশও দেন তিনি।
ইন্দোনেশিয়ায় ফুটবল মাঠে দাঙ্গা ও সংঘর্ষের ঘটনা নতুন নয়। ফুটবল ক্লাবগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তুমুল, যা সমর্থকদেরও আগ্রাসী করে তোলে অনেক সময়। ফুটবল মাঠে এই মর্মান্তিক ঘটনার পর দেশটির ক্রীড়ামন্ত্রী জয়নুদিন আমালি জানান, তারা ফুটবল মাঠে নিরাপত্তার বিষয়টি আবার খতিয়ে দেখবেন এবং প্রয়োজনে দর্শকবিহীন মাঠে খেলা চালানোর বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হবে।
এ ঘটনা ইন্দোনেশিয়ার ফুটবল ভাবমূর্তিতে কালিমা মেখে দিয়েছে উল্লেখ করে দেশটির ফুটবল ফেডারেশন জানিয়েছে, ঘটনাটির তদন্ত করা হবে।
ইন্দোনেশিয়ার মানবাধিকার কমিশনার রয়টার্সকে বলেছেন, কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার ঘটনাসহ মাঠের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
খেলার মাঠে এ রকম ট্র্যাজেডি বিশে^র নানা প্রান্তে আগেও দেখা গেছে। ২০১২ সালে মিসরে ভয়াবহ সংঘর্ষে ৭৩ জনের মৃত্যু এবং ১ হাজারের বেশি সমর্থকের আহত হওয়ার ঘটনায় সেখানে লিগ বন্ধ ছিল দুই বছর। ২০০১ সালে ঘানায় একটি মাঠে পদদলিত হয়ে মারা যায় ১২৬ জন।
এর আগে ১৯৬৪ সালে পেরুর রাজধানী লিমায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। পেরু-আর্জেন্টিনা অলিম্পিক বাছাইপর্বের ম্যাচের সময় পদদলিত হয়ে ৩২০ জন নিহত এবং ১ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছিল।
এরপর ১৯৮৫ সালে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসের হেইসেল স্টেডিয়ামে ৩৯ জন মারা যান এবং আরও ৬০০ জন আহত হন। সে সময় লিভারপুল (ইংল্যান্ড) ও জুভেন্তাসের (ইতালি) মধ্যে ইউরোপীয় কাপের ফাইনালের সময় একটি প্রাচীরের সঙ্গে ফুটবল ভক্ত-দর্শকদের পিষ্ট হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
একজন উদ্যোক্তা ছোট একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে গেলে বছরের পর বছর কেটে যায় শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দুর্নীতির কারণে। সামান্য কাজেও সরকারি কর্মকর্তারা যে পরিমাণ হয়রানি করেন তাতে ছোট উদ্যোক্তারা তো মনোবল হারানই, বড় শিল্প উদ্যোক্তারাও বিপাকে পড়েন।
গতকাল রবিবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘সেটিং আপ এ ফ্যাক্টরি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ব্যবসায়ী নেতারা।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান, বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মো. মোয়াজ্জেম, বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্সের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বিটিএমইএর সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন, বিল্ডের প্রধান নির্বাহী ফিরদাউস আরা বেগমসহ অন্যরা। সিপিডির উদ্যোগে ‘ফ্যাক্টরি সেটআপবিডি ডট কম’ নামে ওয়েবসাইট সম্পর্কে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির রিসার্স অ্যাসোসিয়েট হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মোয়াজ্জেম বলেন, ‘শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দুর্নীতি ও হয়রানির কারণে বছরের পর বছর কেটে যায় একটা কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে। কিন্তু এসব কর্মকর্তার ঘুষ-দুর্নীতির পরও দেশ এতদূর এগিয়েছে শুধু ব্যবসায়ীদের সাহসের কারণে। এ দেশের ব্যবসায়ীরা এত কষ্ট করে ব্যবসা করছেন, তা পৃথিবীতে বিরল।’
তিনি বলেন, ‘দেশের দুর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কৃষিমন্ত্রী আমাকে বলেন, আপনাদের সিন্ডিকেট যেহেতু ডিমের দাম বাড়াতে পারে তাহলে আরেকটি সিন্ডিকেট করে আলুর দামটা বাড়িয়ে দেন, কৃষকদের উপকার হয়। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো প্রতি বছর শত শত সভা-সেমিনার করে কিন্তু সেখানের সরকারি অফিসগুলোর ডেস্ক অফিসারদের অংশগ্রহণ থাকে না। এতে ফলাফল শূন্য হয়। তাদের অংশগ্রহণ জরুরি। ছোট ছোট ব্যবসায়ী গড়ে তোলার জন্য ১৮ জন উপদেষ্টা নিয়েছে এফবিসিসিআই। গত চার বছর আমরা কাজ করতে পারিনি, কিন্তু এখন আমরা শুরু করেছি।’
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘সিপিডির এ ধরনের ওয়েবসাইট নির্মাণের উদ্যোগ আরও আগেই নেওয়া দরকার ছিল। কারণ কীভাবে কারখানা করতে হয় তা না জানার কারণে নতুন উদ্যোক্তারা নানা হয়রানির শিকার হন। শুধু ফাইল দুর্নীতি নয়, ডকুমেন্টশনের বাইরে নন-ডকুমেন্টশনে যে দুুর্নীতি তাতে টিকে থাকা কঠিন।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি কি এখন নেই? আমরা বিইআরসির সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিলাম এক মেগাওয়াট জেনারেটর বা তার ওপরে হলে রেজিস্ট্রেশন লাগবে। কিন্তু তাদের অডিট টিম এসে ৫০০ কেবির জেনারেটরের জন্যও কাগজ চায়। তারা টাকা ছাড়া নড়েই না।’
বিকেএমইএর সভাপতি দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে বিসিকের রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার জন্য আমার এক ছোট ভাই আইআরসি করবে। তিনি আবেদনের এক মাসেও না পাওয়ায় আমার কাছে এসেছিল। তার কাছে নাকি প্রত্যয়নপত্রের জন্য ৫০ হাজার টাকা ঘুষ চাচ্ছে। আমি বিসিকের ডিরেক্টরকে ফোন দিলে তিনি তখনই সই করে দেন। কিন্তু তারপরও কর্মকর্তারা ফাইল ছাড়েন না। তাদের দাবি, ডিরেক্টরের ফি ২০ হাজার, তিনি তো নেবেন না পরিচিত দেখে, আমাদের ফি ৩০ হাজার না দিলে ফাইল ছাড়ব না।’
বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আমাদের হয়রানির অভাব নেই। নতুন করে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে জানাল সাব-সিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগবে। এটাও এক ধরনের হয়রানি। কিন্তু আমরাই ফরেন কারেন্সি ধরে রাখার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। দেশের রিজার্ভ এখন ৩৬ বিলিয়ন ডলারে। এটি আরও কমবে। দুই মাস আগে থেকেই আমরা বলে আসছি আমাদের পোশাক রপ্তানি কমবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন সমস্যা পাওয়ার সেক্টর নিয়ে। ক্রেতাদের অর্ডার ডেলিভারি করতে পারছিলাম না বিদ্যুতের অভাবের কারণে। কিন্তু এ সময় আমাদের আরও প্রশ্নের জবাব দিতে হয় মার্কেটে পোশাক খাতের শেয়ার কেন কমছে, তার জবাবদিহিতা করতে করতেই সময় পার হয়, আমরা বাকি কাজ করব কখন।’
এ সময় নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘সদ্য প্রয়াত অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পদত্যাগ করেছিলেন শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার কারণে। আমাদের সমস্যা দুটি, গো ফরোয়ার্ড, এরপরই আবার গো ব্যাকওয়ার্ড। দেশের রপ্তানিকারকদের এক নম্বর সমস্যা কাস্টমস অ্যান্ড বন্ড লাইসেন্স।’
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা যত গতিশীল হবেন, দেশের উন্নয়নও তত গতিশীল হবে। তাদের অবদানে দেশ আরও এগিয়ে যাবে।’
সিপিডির উদ্যোগে তৈরি করা এ ওয়েবসাইটে পোশাক খাত, ওষুধ খাত, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, চামড়া শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স, নিবন্ধন ও সার্টিফিকেশন কীভাবে করা যাবে তার বিস্তারিত জানতে পারবেন উদ্যোক্তারা। তাছাড়া আটটি ক্যাটাগরিতে একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার বিষয়ে জানা যাবে এ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্য রেখায় (নো ম্যানস ল্যান্ড) পুঁতে রাখা স্থলমাইন বিস্ফোরণে এক রোহিঙ্গা কিশোর নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল রবিবার ভোরে সীমান্তের পূর্বে পাহাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু সীমান্তের শূন্য রেখার আশ্রয় শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা।
নিহত ওমর ফারুক (১৭) ওই আশ্রয় শিবিরের বাসিন্দা মো. আয়ুবের ছেলে। গতকাল সকালে সীমান্তের পূর্বে পাহাড়ি এলাকা থেকে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
তমব্রুর রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের মাঝি (দলনেতা) আবদুর রহিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওমর ফারুক ও মো. আবদু ইয়্যা নামে দুই রোহিঙ্গা আজ ভোরে (গতকাল) তমব্রুর মিয়ানমার সীমান্ত এলাকার পাহাড়ি ছড়ায় মাছ শিকারে বের হয়। এ সময় বিজিপির (মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ) পুঁতে রাখা স্থলমাইন বিস্ফোরণে দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়ে ওমর ফারুক মারা যায়। আরেকজন প্রাণে রক্ষা পায়। পরে তার মাধ্যমে খবর পেয়ে ফারুকের মরদেহ উদ্ধার করে সীমান্তবর্তী একটি কবরস্থানে দাফন করা হয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে এক রোহিঙ্গার মৃত্যুর খবর গোয়েন্দাদের কাছ থেকে শুনেছি। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’
এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর তমব্রুর শূন্য রেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে মোহাম্মদ ইকবাল (১৮) নামে এক রোহিঙ্গা নিহত হন। আহত হন আরও পাঁচজন। একই দিন ওই সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে অথোয়াইং তঞ্চঙ্গ্যা (২২) নামে এক বাংলাদেশি যুবক আহত হন।
পাঁচ বছর ধরে তমব্রু সীমান্তের বিপরীতে শূন্য রেখায় আশ্রয় শিবির গড়ে বসবাস করছে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত ৪ হাজার ২০০ জনের বেশি রোহিঙ্গা। ওই আশ্রয় শিবির ঘেঁষে মিয়ানমারের কাঁটাতারের বেড়া ও রাখাইন রাজ্যের একাধিক পাহাড় রয়েছে। পাহাড়ের ওপর বিজিপির একাধিক তল্লাশি চৌকি রয়েছে।
তমব্রুর শূন্য রেখার রোহিঙ্গা নেতা আবদুর রহিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমারে ফিরতে না পারে সে জন্য বাংলাদেশ-মিয়ানমান সীমান্ত জুড়ে বিজিপি স্থলমাইন পুঁতে রাখে। এসব মাইনে গত পাঁচ বছরে ছয়জন রোহিঙ্গা মারা গেছে। শূন্য রেখার রোহিঙ্গারা সবসময় আতঙ্কে থাকে।’
গত ১৩ আগস্ট থেকে তমব্রু সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি পাহাড়ে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাত চলছে। সর্বশেষ গত ২৮ আগস্ট এবং ৩ সেপ্টেম্বর দুই দফায় মিয়ানমার থেকে ছোড়া চারটি মর্টার শেল তমব্রু উত্তরপাড়া ও বাইশফাঁড়ি এলাকায় এসে পড়ে। এসব ঘটনায় ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ।
টহল বাড়িয়েছে কোস্ট গার্ড : মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে টেকনাফ সীমান্তে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের টহল এবং নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গতকাল রবিবার কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকি স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার সুযোগে অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে কোস্ট গার্ড। সমুদ্রে সার্বক্ষণিক টহল জাহাজ মোতায়েনসহ টেকনাফ থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত রাত-দিন নিয়মিত অত্যাধুনিক হাইস্পিড বোটের মাধ্যমে টহল চলমান রয়েছে।
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সাতক্ষীরার পৌরসভার ব্যাংক লেনদেন সচল রাখার দাবিতে ময়লার গাড়ি রেখে ব্যাংকের প্রবেশ পথ আড়াই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন বেতন না পাওয়া পৌর কর্মচারীরা।
সোমবার (২৭ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড় বাজার সড়কস্থ সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের সামনে এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এ সময় ব্যাংকের সাধারণ গ্রাহকরা লেনদেন করতে না পেরে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে ব্যাংক ম্যানেজার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে বিষয়টি নিষ্পত্তির আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
তবে, সমস্যা সুরাহা করতে ১২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক আন্দোলনকারী জানিয়েছেন, সাতক্ষীরা পৌরসভার কোনো কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী ২/৩ মাস যাবত বেতন তুলতে পারছেন না। বেতনের টাকা উত্তোলনকে কেন্দ্র করে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক কর্মকর্তা ও পৌর কর্মচারীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সে কারণে ব্যাংকের সামনে পৌরসভার ময়লার গাড়ি রেখে অবরোধ করা হয়।
পরে, পুলিশের উপস্থিতিতে ব্যাংক ম্যানেজারের আশ্বাসে আন্দোলন আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। ১২ ঘণ্টার মধ্যে সুরাহা না হলে ফের আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব, যোগ করেন ওই আন্দোলনকারী।
জানা যায়, সাতক্ষীরার পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতীর বিরুদ্ধে নাশকতার মামলায় হওয়ায় ৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে বরখাস্ত হন। এ সময় ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন কাজী ফিরোজ হাসান।
এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি কে এম কামরু কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বিত হাইকোর্ট ডিভিশনের দ্বৈত বেঞ্চ এক আদেশে চিশতীর বরখাস্তের ওই আদেশ স্থগিত করেন। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত তাকে মেয়র পদে বসতে দেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, চিশতীর পক্ষে দেওয়া উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কপি সোনালী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সাউথবাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে জমা দিলে পৌরসভার ব্যাংক লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। যে কারণে ২/৩ মাস পৌর কর্মচারীরা বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
এক পর্যায়ে তারা সোমবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পৌরসভার ময়লার গাড়ি নিয়ে পূবালী ব্যাংক, সাউথবাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রবেশ পথ বন্ধ করে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে।
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত পৌর মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান বলেন, পৌর কর্মচারীদের মাসিক বেতন দিতে তার এবং পৌরসভার সিইওয়ের যৌথ স্বাক্ষরে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয় সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকে। কিন্তু হাইকোর্টের চিঠি আছে টাকা তোলা যাবে না বলে বিভিন্ন তালবাহানা করছে তারা।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলেছি আমি আর আমার পৌর কর্মচারীরা বেতন পাবে না। তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। টাকার জন্য পৌরসভার অন্যান্য কার্যক্রম ব্যাহত হবে, তাও কাম্য নয়। পৌরসভার ২ লাখ বাসিন্দা টাকার অভাবে নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে, এ হতে পারে না। ব্যাংক ম্যানেজার কেন একক সিদ্ধান্তে এ রকম তালবাহানা করল তা জানা নেই। মঙ্গলবারের (২৮ মার্চ) মধ্যে ব্যাংকে জমা রাখা সমুদয় টাকা দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
অন্যদিকে, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ অফিসার সরফরাজ নেওয়াজ বলেন, পৌর কর্মচারীদের বেতন দিয়ে দিতে বাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা হয়েছে। ২/১ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।
প্রসঙ্গত, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা হওয়া কথা উল্লেখ করে ৬ ফেব্রুয়ারি পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতীকে বরখাস্ত করে। চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি নাশকতার মামলায় তিনি কারাগারে যান এবং ৯ ফেব্রুয়ারি তারিখে জামিনে মুক্ত হন।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
পাবনার বেড়া উপজেলায় অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন প্রকল্প ‘বীর নিবাস’-এ বাড়ি বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজ পরিবারের নামে সেখানে বাড়ি নিয়েছেন বরাদ্দ কমিটির সদস্য সচিব বেড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। তাকে এ কাজে সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মুজিববর্ষে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ‘বীর নিবাস’ নামে সারা দেশে ৩০ হাজার একতলা পাকা বাড়ি নির্মাণ করছে সরকার। নীতিমালা অনুসারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সভাপতি ও সমাজসেবা কর্মকর্তা সদস্য সচিব হিসেবে বরাদ্দ কমিটি গঠন করে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা বাছাইয়ের কাজ করবেন।
বাস্তবে দেখা গেল, রক্ষক ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। ছোট ভাই শফিউদ্দিন ফকিরের জন্য বীর নিবাসের বাড়ি বরাদ্দ নিয়েছেন বেড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। বাড়ির নির্মাণকাজ শেষ, এখন তা হস্তান্তরের পালা।
‘বীর নিবাস’-এ বরাদ্দ নীতিমালায় বলা হয়েছে, সরকারি আবাসন কিংবা ভূমি সুবিধা পাননি এমন অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা বা তার পরিবার সেখানে বরাদ্দ পাবেন। যুদ্ধাহতরা অগ্রাধিকার পাবেন। আবেদনকারী আর্থিকভাবে অসচ্ছল হলেই শুধু বিবেচনাধীন হবেন।
কিন্তু বেড়া উপজেলার কাজীরহাটে বাড়ি বরাদ্দ পাওয়া সমাজসেবা কর্মকর্তার ভাই শফিউদ্দিন ফকির অসচ্ছল ব্যক্তি নন। তিনি সরকারি চাকরিজীবী, কাজীরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। রফিকুলের আরেক ছোট ভাই শওকত আলী ফকির পাবনার সুজানগর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা। রফিকুল ইসলামরা তিন ভাই রফিকুল, শফিউদ্দিন ও শওকত।
অভিযোগ উঠেছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজ পরিবারের সদস্যকে বীর নিবাসে বরাদ্দ দিয়েছেন রফিকুল ইসলাম।
সরেজমিনে কাজীরহাটে গিয়ে দেখা গেছে, শফিউদ্দিন ফকিরের জন্য বীর নিবাসের বাড়ি নির্মাণ শেষ হয়েছে। ওই বাড়ির পাশেই তিনতলা বাড়িতে থাকেন তার বড় ভাই বেড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম।
শফিউদ্দিন জানান, তাদের বাবা মৃত মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন ফকিরের নামে পরিবারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ কমিটির কাছে বীর নিবাসে বাড়ি বরাদ্দ চান তারা। পৈতৃক জমিতে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় তারা মাসুমদিয়া ইউনিয়নে জায়গা কেনেন। সেখানেই বীর নিবাসের বাড়ি বরাদ্দ করেছে বরাদ্দ কমিটি। ভালো বেতনে সরকারি চাকরি করেও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার ঘর কীভাবে বরাদ্দ পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে ইউএনও সাহেব বলতে পারবেন।’
বরাদ্দপ্রাপ্তির পর বাড়ির ভোগদখলের জন্য শফিউদ্দিনকে ক্ষমতা দিয়ে হলফনামা করেন পরিবারের অন্য সদস্যরা। সে সময় আবুল হোসেনের দ্বিতীয় স্ত্রী হালিমা খাতুন বরাদ্দ দাবি করলে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও ও ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে প্রভাব খাটিয়ে বীর নিবাসের স্বত্ব ছাড়তে লিখিত দলিল করিয়ে নেন প্রথম পক্ষের সন্তানরা। এ অভিযোগ করেছেন দ্বিতীয় স্ত্রী হালিমা খাতুন।
হালিমা খাতুন বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রী হিসেবে বাড়িপ্রাপ্তিতে আমার অগ্রাধিকার আছে। আমার একটি নাবালিকা মেয়েও আছে। প্রথম পক্ষের ছেলেরা সরকারি চাকরি করে। তাদের অবস্থা ভালো।’
তিনি বলেন, ‘বাড়ি বরাদ্দের কথা শুনে আমি ইউএনও অফিসে যোগাযোগ করি। কিন্তু তারা আমাকে বরাদ্দ দেয়নি। শফির নামে বাড়ি বরাদ্দ হবে বলে জানায়। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, রূপপুর ইউপি চেয়ারম্যান রূপপুর ইউনিয়ন পরিষদে বৈঠক করে আমার মেয়ের নামে এক লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলে দলিলে সই করিয়ে নেয়। বাধ্য হয়েই তাদের সিদ্ধান্ত আমাকে মেনে নিতে হয়েছে।’
রূপপুর ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মাজহারুল ইসলাম মোহন বলেন, ‘উপজেলা কমিটির কাছ থেকে বীর নিবাসে বরাদ্দ নেওয়ার পর মৃত আবুল হোসেন ফকিরের প্রথম পক্ষের ছেলেদের সঙ্গে দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর বিরোধ বাধে। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ইউএনও আমার পরিষদে উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানে দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর নাবালিকা মেয়ের জন্য এক লাখ টাকা ব্যাংকে স্থায়ী আমানত ও বিয়ের সময় সহযোগিতার শর্তে বীর নিবাসের বাড়ির মালিকানা প্রথম পক্ষের মেজো ছেলে শফিউদ্দিনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।’
শফিউদ্দিন বীর নিবাসের বাড়ির বরাদ্দ নেওয়ায় অনিয়ম হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুরো প্রক্রিয়াই অনিয়মের মধ্য দিয়ে গেছে। কারণ আবুল হোসেন ফকির মুক্তিযোদ্ধাই নন। তিনি ভারতেও প্রশিক্ষণে জাননি, কোনো দিন মুক্তিযুদ্ধ করেছেন বলেও শুনিনি। অথচ এসব পরিবারের লোকজন মুক্তিযোদ্ধার সুবিধা ভোগ করছেন। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা বঞ্চিত হচ্ছেন। আমি এর বিপক্ষে।’
‘বীর নিবাস’ নিয়ে সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুলের পারিবারিক সালিশ শেষে দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর কাছ থেকে বীর নিবাসের দাবি না করার অঙ্গীকারনামা-দলিল করে নেওয়া হয়। সেই দলিলে সাক্ষী হিসেবে সই করেছেন বেড়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল হক বাবু।
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবুল হোসেন ফকিরের বিধবা স্ত্রীর সঙ্গে প্রথম পক্ষের সন্তানদের বীর নিবাস নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়। পরে উভয় পক্ষ বসে সমঝোতা করে নিয়েছে। বৈঠকে আমি অসচ্ছল বিধবা স্ত্রীর অগ্রাধিকারের কথা বলেছিলাম। কিন্তু উভয় পক্ষ সমঝোতা করে স্ট্যাম্প করে। সবার অনুরোধে আমি সাক্ষী হিসেবে স্ট্যাম্পে সই করেছি। উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে আমার স্বাক্ষর দেওয়া ঠিক হয়নি। আমি তখন বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করিনি; সরল মনে স্বাক্ষর করেছি। সমাজসেবা কর্মকর্তার ক্ষমতা ব্যবহার করে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি কেন নিতে হবে, আমার বোধগম্য হয় না। এটি লজ্জারও বিষয়।’
এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বীর নিবাসে বাড়ির জন্য আবেদন আবেদন কম ছিল। আবার যারা আবেদন করেছিল তাদের অনেকেরই প্রয়োজনীয় জমি নেই। আমার পরিবারের সদস্যকে বীর নিবাসে বাড়ি বরাদ্দ আমি একা দিইনি। কমিটি যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
বাড়ি বরাদ্দে অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেছেন বরাদ্দ কমিটির সভাপতি ও বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুর আলী। তিনি বলেন, কমিটির সবার মতামতের ভিত্তিতেই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শফিউদ্দিনের নিজের বাড়ি নেই। অসচ্ছল হিসেবেই তাকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে পাবনা জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, ‘সচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা বা তার পরিবারের কোনো সদস্যের বীর নিবাসে বরাদ্দপ্রাপ্তির সুযোগ নেই। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যের ন্যাশভিলের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্দুকধারীর হামলায় ৩ শিশুসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের স্কুলটিতে বন্দুক হামলা চালানো হয়। গুলিবিদ্ধ ৩ শিশুকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় মোট ছয়জন নিহত হন। বেশ কয়েকজন আহতও হন। তবে কতজন আহত হয়েছেন, তা এখনো জানানো হয়নি।
স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, বন্দুক হামলাকারী ছিলেন ২৮ বছর বয়সী নারী। পুলিশের গুলিতে তিনিও প্রাণ হারান।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যতগুলো বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে, এর ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রেই হামলাকারী পুরুষ ছিলেন। ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২৫০টি বন্দুক হামলার ঘটনার ৯টিতে হামলাকারী নারী ছিলেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
রাজধানীর মিরপুরের একটি মাধ্যমিক-সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সিফাত। একই এলাকায় বসবাসকারী তার বন্ধু সিয়াম পড়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে। সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রোজার ছুটি। আর সরকারি প্রাথমিকে ছুটি ১৫ রোজা অর্থাৎ ৭ এপ্রিল থেকে।
এক দেশে একই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন নিয়মে ছুটি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে লেখাপড়ায় কেউ এগিয়ে যাবে, আবার কেউ পিছিয়ে পড়বে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ মামুনুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার বা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে ভেবেচিন্তেই নেয়। তবে সব ধরনের স্কুলে একটা কো-অর্ডিনেশন থাকলে ভালো হয়। আমরা ছুটির ব্যাপারে আরও আলাপ-আলোচনা করব।’
জানা গেছে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আগামী শুক্রবার শুরু হতে পারে রমজান মাস। বছরের শুরুতেই স্কুলগুলোর ছুটির তালিকা অনুমোদন করা হয়। সে অনুযায়ী পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস, ইস্টার সানডে, বৈসাবি, নববর্ষ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসা ও টিটি (টিচার্স ট্রেনিং) কলেজেও একই সময়ে ছুটির ঘোষণা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছুটির তালিকা ভিন্ন। তারা পবিত্র রমজান, ইস্টার সানডে, চৈত্র-সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ৭ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ প্রায় ১৫ রমজান পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে।
রাজধানীসহ বড় বড় শহরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিকের মতোই তাদের ছুটি থাকবে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রোজার ছুটিও একই। তবে মাদ্রাসায় রোজার ছুটি শুরু এক দিন আগেই অর্থাৎ আজ বুধবার, ২২ মার্চ।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান। তাই বুধবার ক্লাস করে বৃহস্পতিবার রোজার ছুটি শুরু হবে। তবে সব স্কুলে একই ধরনের ছুটি থাকা জরুরি। এতে একই সময়ে সিলেবাস শেষ করা যাবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও সন্তুষ্ট থাকবে।’
রমজানে মাধ্যমিকে স্কুল বন্ধ আর প্রাথমিকে খোলা রাখায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার লাখ শিক্ষকের মধ্যে। তারা বলছেন, যেসব অভিভাবকের সন্তান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই স্কুলেই পড়ে তাদের সমস্যা হবে। রমজান মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাও রোজা রাখেন। তাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিল রেখে প্রাথমিকের ছুটি নির্ধারণ করা যৌক্তিক হবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাংগাঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারি ছুটি ৭৬ দিন, কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৫৪ দিন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ছুটি নির্ধারণের যুক্তি তুলে ধরে আমরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছি। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো সাড়া পাইনি।’
'স্যার নয় আপা ডাকলেই চলবে' রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীনের এমন বক্তব্যের পর রাত ৯ টার দিকে আন্দোলন সমাপ্ত করে ক্যাম্পাসে ফিরে গেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুক ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এর আগে চিত্রলেখা নাজনীনের বিরুদ্ধে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে বুধবার (২২ মার্চ) বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে একাই অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন উমর ফারুক। এর পর তার সাথে একাত্মতা জানিয়ে আন্দোলনে যুক্ত হন বেরোবির বাংলা বিভাগের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা।
তুহিন ওয়াদুদ তার ফেসবুক পোস্টে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
জেলা প্রশাসক চিত্রলেখা নাজনীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, বেরোবির একটা অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র নিয়ে উমর ফারুক আমার কাছে এসেছিলেন। এ সময় আমি বাইরে যাওয়ার জন্য সিঁড়ি দিয়ে নামছিলাম। তখন ওই শিক্ষক আমাকে দেখে আপা বলে ডাক দেন। আমি তাকে স্যার না বলে আপা কেন ডাকছেন জানতে চাই। আমার জায়গায় একজন পুরুষ দায়িত্বে থাকলেও কি তিনি স্যার না বলে ভাই ডাকতেন?
জেলা প্রশাসক জানান, রাতে তিনি ওই শিক্ষক ও আন্দোলনকারীদের স্যার ডাকতে হবে না, আপা ডাকলেই চলবে বলে জানান। এরপর তারা আন্দোলন বন্ধ করে দেন এবং ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে চলে যান।