
দেশের ৩২ শতাংশ মৃত্যু পরিবেশদূষণের সঙ্গে সম্পর্কিত। পাশাপাশি গ্রীষ্মম-লীয় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দেশে বছরে গড় ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) ডলার; যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। এর প্রভাব আরও বাড়তে পারে। আরও ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় হলে এর চেয়ে বেশি ক্ষতি হতে পারে। গুরুতর বন্যার মুখে দেশের জিডিপি ভিত্তিরেখার তুলনায় ৯ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর হোটেল রেনেসার্সে বিশ^ব্যাংকের ‘কান্ট্রি ক্লাইমেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্টে’ এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন এসডিজির সাবেক সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আব্দুল হামিদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ^ব্যাংকের সাউথ এশিয়ান সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের জন রুমী। মূল আলোচক ছিলেন নেদারল্যান্ডস অ্যাম্বাসির ফাস্ট সেক্রটোরি ফর্করেট জিজেডি জগার এবং কমনওয়েলথ ডেভেলপমেন্ট অফিসের ক্লাইমেট অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের টিম লিডার অ্যানেক্স হারভে। বক্তব্য দেন বিশ^ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড্যান ড্যান চেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়ুদূষণের কারণে বছরে প্রাক্কালিত ক্ষতি জিডিপির ৯ শতাংশ। মধ্য মেয়াদে জলবায়ু বিনিয়োগ ব্যয়ের জন্য প্রাক্কলিত কমপক্ষে ১২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের জন্য সরকারি-বেসরকারি অর্থায়নের প্রয়োজন হবে। পাশাপাশি সরকারি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা জোরদার করা প্রয়োজন। বাজেটের ২০ শতাংশ জলবায়ু-সম্পর্কিত বিনিয়োগের জন্য নির্ধারণ করলে জিডিপির ১ শতাংশ বাড়তে পারে। জলবায়ু অর্থায়ন বাড়াতে সরকারকে ভর্তুকি বিলোপ, গ্যাসের দাম যৌক্তিক করা, বিভিন্ন পথে জ¦ালানি পরিবহনের ওপর অভিন্ন মূল্য সংযোজন এবং পর্যায়ক্রমে কার্বন কর আরোপ করতে হবে।
প্রতিবেদন উপস্থাপনে জন রুমী বলেন, বাংলাদেশে তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি এবং বৃষ্টিপাত ৪ ডিগ্রি বাড়লে ২০২৫ সালে বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে পারে ২৭ সেন্টিমিটার। এভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়লে বাড়বে সম্পদহানি, যার মূল্য আনুমানিক ৩০০ মিলিয়ন ডলার।
বিশ^ব্যাংক বলছে, নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ না নিলে ২০৫০ সাল নাগাদ জিডিপির এক-তৃতীয়াংশ কৃষিজমি হারানোর শঙ্কা রয়েছে। বাস্তুচ্যুত হবে ১৩ মিলিয়ন মানুষ। ঝুঁকি মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি খাতকে সমানভাবে এগিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, উন্নয়ন অর্জনের জন্য অধিকতর সবুজ, সহনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি মডেলে রূপান্তর খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে। নগর উন্নয়নে জরবায়ুবান্ধব আঞ্চলিক কৌশল একটি অগ্রাধিকার। বাংলাদেশকে অবশ্যই একই সঙ্গে দারিদ্র্র্য হ্রাস এবং কৃষি, পানি ও জমির ব্যবহার পদ্ধতিতে, বিশেষ করে উচ্চ জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা অঞ্চল এবং নগর ও গ্রামীণ এলাকায় সহিষ্ণুতা গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশ ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ (বিডিপি ২১০০) বাস্তবায়নে পানি, বাস্তুসংস্থান, পরিবেশ এবং ভূমি সম্পদের টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। স্থানীয়ভাবে অভিযোজিত এবং স্থানীয় সমাধান সহনশীলতা গড়ে তুলতে অপরিহার্য হবে। দীর্ঘমেয়াদি নিম্ন কার্বন রূপান্তর কর্মসংস্থানের ও সামাজিক ব্যয়ের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। উভয় বিষয়েই সতর্কতার সঙ্গে ব্যবস্থাপনার দরকার হবে।
আরও বলা হয়েছে, জ্বালানি, পরিবহন, শিল্প এবং কৃষি থেকে কার্বন নিঃসরণ তুলনামূলক কম খরচে করা যেতে পারে এবং বায়ুদূষণ, স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় এবং কর্মসংস্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত উল্লেখযোগ্যসহ সুবিধা বয়ে আনতে পারে। বাংলাদেশে জ্বালানি খাতে কার্বন নির্গমন কমানোর উল্লেখযোগ্য সুযোগ রয়েছে, যা উন্নয়ন সুবিধা বয়ে আনবে, কার্বন-নিবিড় বিনিয়োগ সীমিত করবে এবং পতিত সম্পদের ঝুঁকি প্রশমন করবে। সব খাতে জ¦ালানি দক্ষতা এবং সংরক্ষণ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব এবং একটি অগ্রাধিকার। পরবর্তী এক দশকে পরিবহন খাত ১৫ শতাংশ কার্বন নিঃসরণের কারণ হতে পারে, ফলে এ খাতে কার্বন নির্গমন কমানোর পদ্ধতিগত পরিবর্তন দরকার
মূল প্রবন্ধে জন রুমী বলেন, জলবায়ু কার্যক্রমের জন্য আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার উন্নতি এবং বিদ্যমান নীতি ও কার্যক্রমের কার্যকর বাস্তবায়ন বাংলাদেশের সবচেয়ে জরুরি চ্যালেঞ্জ। পরিবেশ পণ্য ও সেবায় ট্যারিফ ও বাণিজ্যসংক্রান্ত অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা হ্রাস এ ধরনের পণ্য ও সেবার বৈশি^ক ভ্যালু চেইন বাংলাদেশের অংশগ্রহণে সহায়তা করতে পারে। জলবায়ু কার্যক্রমে বেসরকারি খাতের ভূমিকা বাড়ানোর উল্লেখযোগ্য সুযোগ রয়েছে। আর্থিক খাত সবুজায়নের নীতি বাস্তবায়নসহ এ খাতের বিদ্যমান দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা প্রয়োজন। জরুরি প্রয়োজনীয়তা, মাত্রা ও জটিলতা বিবেচনায় জলবায়ু পরিবর্তন কার্যক্রম পরিচালনা এবং মনিটরিংয়ের জন্য এনজিওদের সঙ্গে অংশীদারির প্রয়োজন হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আছি। আমাদের আগামী প্রজন্ম তরুণদের দক্ষ জন শক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এ ছাড়া যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় বর্তমান সরকার ব্যাপক সচেতন রয়েছে। কয়েক দিন আগে সিত্রাং ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করা হয়েছে। তারও আগে করোনা মোকাবিলা করা হয়েছে।’
চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বনানী আবাসিক এলাকার ২০ বিঘা জমি নিয়ে একটি প্লট প্রকল্প করা হয়। প্রকল্পে বিভিন্ন আয়তনের ৫৪টি প্লট তৈরি করা হয়েছিল। জোট সরকারের শেষ সময়ে বরাদ্দ করা এসব প্লটে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
বরাদ্দের তালিকায় থাকা তৎকালীন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কেউ কেউ মারা গেছেন। তাদের ওয়ারিশানরা এখন প্লটের হস্তান্তর, বন্ধক, নামজারি, নকশা অনুমোদনসহ দাপ্তরিক কোনো কাজ করতে পারছে না।
প্রায় ১৫ বছর আগে তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকারের আমলে এসব প্লটের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। দুয়েকটি ছাড়া সব প্লটে ইমারত নির্মাণও করা হয়েছে। তবে হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে একাধিক প্লট বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করায় আটটি প্লট বাতিল করেছে রাজউক। প্লট বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের দাবি, যারা নিয়মমাফিক একটি প্লট পেয়েছে সেখানেও দাপ্তরিক কাজ বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।
রাজউকের একটি সূত্র জানায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেই এসব প্লটের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। এসব প্লটের প্রায় সবই যেহেতু বিএনপির নেতাদের নামে তাই তারা যেন বিক্রি করে সরকারবিরোধী কাজে অর্থ খরচ না করতে পারে সেই বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে। এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে রাজউক চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আনিছুর রহমান মিয়ার ব্যক্তিগত মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
যেভাবে বন্ধ হয়েছে কার্যক্রম : অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে রাজউকের পাঁচটি এলাকার দামি প্লটগুলোর দৈনন্দিন কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন উপসচিব আবদুস সালাম মিয়া ২০০৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজউক চেয়ারম্যানকে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে টঙ্গী শিল্প এলাকার ৪৮টি শিল্প প্লট, উত্তরা এলাকার ৩টি প্রাতিষ্ঠানিক প্লট, বাড্ডা পুনর্বাসন এলাকার ৫৩৪টি প্লট, বনানী এলাকার ৫০টি ও উত্তরা এলাকার ৫০টি আবাসিক প্লট এবং নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার ১টি প্রাতিষ্ঠানিক প্লটের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বলা হয়।
যাদের নামে প্লট : ঢাকার বনানী এলাকায় যাদের নামে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল তাদের ৪১ জনই বিএনপির সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য; একজন জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য ও একজন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। ৫৪ জনের বাকি ১২ জনের বেশিরভাগ বিএনপির নেতা ও বিএনপিপন্থি শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী।
বরাদ্দপ্রাপ্তরা হলেন বিএনপির সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া (প্রয়াত), সাবেক তথ্যমন্ত্রী তরিকুল ইসলাম, সাবেক মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান, সাবেক ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকী, সাবেক বাণিজ্য উপদেষ্টা বরকত উল্লা বুলু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এহছানুল হক মিলন, সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটল, সাবেক সংসদ সদস্য মজিবর রহমান সরোয়ার, রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, ইলিয়াস আলী, ফজলুল হক মিলন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আবদুল হাই, সেলিমা রহমান, আলমগীর হায়দার খান, নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু, কবির হোসেন, হাফিজ ইব্রাহিম, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আবুল হোসেন খান, খায়রুল কবির খোকন, নাদিম মোস্তফা, শহিদুল আলম তালুকদার, অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম, মজিবুর রহমান মঞ্জু, মশিউর রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, শামসুদ্দিন আহমেদ এছাক, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সাবেক মন্ত্রী হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ড. হামিদা বানু শোভা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা, বিএনপি নেতা মফিকুল হাসান তৃপ্তি, মাসুদা একরাম, এসএম হাসান রেজা, ইমতিয়াজ আহমেদ, মহিউদ্দিন খান, আহসান হাবিব ও মেহেদী হাসান, সিদ্দিকুর রহমান ও আসাদুল আশরাফ এবং সালেহ আহমেদ।
রাজউক সূত্র জানায়, রাজউকে দাখিল করা হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্লট নিয়েছে এমন কয়েকটি প্লট ইতিমধ্যে বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ।
তদন্তে দায়মুক্তি মিললেও বাস্তবে মিলছে না : বনানী এলাকায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে যারা প্লট নিয়েছেন তাদের প্লট বাতিল করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করারও সিদ্ধান্ত হয়। তদন্তের অংশ হিসেবে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত শামসুদ্দিন এছাকের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে। রাজউকের সচিব সুশান্ত চাকমা দুদক সচিবের কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেন, ‘ঢাকা মহানগরে রাজউকের (বনানী ২০ বিঘা প্লট প্রকল্প ব্যতীত) এলাকার কোথাও এছাকের নিজের, স্ত্রীর, নির্ভরশীল ছেলেমেয়ের অথবা কোনো পোষ্যের নামে আবাসিক জমি/প্লট বা ফ্ল্যাট খরিদ বা উত্তরাধিকার সূত্রে নেই।’ মৃত শামসুদ্দিন এছাকের ছেলে কবির হোসেন দীর্ঘদিন ঘুরেও নামজারি বা প্লট সংক্রান্ত কোনো কাজ করতে পারেননি। কর্মকর্তারা তাকে জানিয়ে দিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট ফাইলের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে একাধিক সূত্র দাবি করছে, বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নামে থাকা প্লটটি তার উত্তরাধিকারীর নামে নামজারির ও অন্যান্য কাজ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই প্রভাবশালী মহলের চাপে রাজউক কাজটি করেছে।
তড়িঘড়ির বরাদ্দ, দায়ী কর্মকর্তারা : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রথম বনানীর ৫৪ প্লটের কাজ বন্ধ হয়। বর্তমান সরকার প্রথম দফায় ক্ষমতায় আসার পর ‘বনানী ৫৪ প্লট’ নামের প্রকল্পের বরাদ্দের সঙ্গে জড়িত সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দাপ্তরিক ব্যবস্থা নিতে শুরু করে। পূর্ত মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সিনিয়র সহকারী সচিব খন্দকার মনোয়ার মোর্শেদ ২০১৫ সালের ২০ আগস্ট রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দিয়ে বিস্তারিত জানতে চান। চিঠিতে বলা হয়, ‘২০ বিঘার ৫৪ প্লটের বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিধিবিধান মানা হয়েছে কি না এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে কেউ প্লট নিয়েছে কি না তা জানানো হোক। কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হোক।’ এরপর মন্ত্রণালয়ের আরেক সিনিয়র সচিব শ্যামলী নবী একই বছরের ৮ অক্টোবর রাজউক চেয়ারম্যানকে আরেকটি চিঠি দেন। তাতে বলা হয়, ‘বনানী আবাসিক এলাকার বিষয়ে ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বরাদ্দের সঙ্গে ৭ জন কর্মকর্তা জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার রুজু করার বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানানো হোক।’ রাজউক ও পূর্ত মন্ত্রণালয়ের তদন্তে বরাদ্দের সঙ্গে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ১১ জন ও কর্মকর্তা-কর্মচারী পর্যায়ের ৬ জনের নাম আসে। যাদের এসেছে তারা হলেন, সাবেক চেয়ারম্যান মো. শহীদ আলম, সদস্য মো. আজিজুল ইসলাম, মো. নাসির উদ্দিন, মো. রেজাউল করিম তরফদার, মীর মোশাররফ হোসেন, এসএম জাফর উল্লাহ, প্রধান প্রকৌশলী এমদাদুল ইসলাম, সচিব মো. আতাউল হক মোল্লা, পরিচালক মীর মোশারফ হোসেন, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. জহিরুল হক ও উপপরিচালক মো. শওকত। সহকারী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম, মো. মিজানুর রহমান, এমদাদ আলী বিশ^াস, মো. জামাল উদ্দিন ও তত্ত্বাবধায়ক জাহানারা বেগমের নামও উঠে আসে। প্রায় কোনো কর্মকর্তাই এখন রাজউকে নেই। কেউ কেউ চাকরিজীবন শেষ করেছেন। কোনো কোনো কর্মকর্তা মারা গেছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। দুদক গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কবির হোসেনের প্লটটি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
মিথ্যা হলফনামায় বাতিল ৮ প্লট : রাজউকের প্রচলিত বিধান অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা তার স্ত্রী অথবা স্বামী, সন্তান বা পোষ্য যদি রাজউক থেকে ইতিপূর্বে প্লট বরাদ্দ পেয়ে থাকেন তাহলে দ্বিতীয়বার প্লট পাবেন না। বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্লটের আবেদনকারীদের কাছ থেকে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে অঙ্গীকারনামা (হলফনামা) নিয়ে থাকে কর্তৃপক্ষ। রাজউকের বনানী এলাকায় চারদলীয় জোট সরকারের শেষ সময়ে তড়িঘড়ি প্লট-বরাদ্দ করায় হলফনামায় অনেকেই মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। যারা তথ্য গোপন করেছেন তাদের খুঁজে বের করে প্লট বাতিল করতে শুরু করেছে রাজউক। রাজউকের এমআইএস সেল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সহায়তায় কাজটি করছে। ইতিমধ্যে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপনের বনানীর ১/সি রোডের ৩ নম্বর প্লট, সাবেক সংসদ সদস্য সামসুজ্জোহা খানের ১/বি রোডের ৫ নম্বর প্লট, পেশাজীবীর তালিকায় বরাদ্দ পাওয়া শিক্ষক সাবিনা শারমিনের বনানী ১/এ রোডের ৪ নম্বর প্লট, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমানের প্লট, সাবেক সংসদ সদস্য আবুল খায়ের ভূঁইয়ার প্লট, বরিশালের সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ারের বনানী ২ নম্বর রোডের ৭ নম্বর প্লট, বিএনপি নেতা বরকত উল্লা বুলুর প্লট, সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর প্লট ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদের প্লট বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব প্লটের বেশিরভাগে বাড়িঘর তৈরি করেছে সংশ্লিষ্টরা। আবার কোনো কোনো প্লট হস্তান্তর করে ফেলেছে তারা। ফলে নথিপত্রে প্লট বরাদ্দ বাতিল হলেও দখল বুঝে নিতে পারেনি রাজউক। কিছু প্লটে মামলাসংক্রান্ত জটিলতাও আছে।
রাজউকের সদস্য (এস্টেট) মো. নূরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এসব প্লটের কাজকর্ম বন্ধ আছে। এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।’
পরিচালক (এস্টেট) মো. কামরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি তিন চার দিন হলো এসেছি। সবকিছু বুঝে উঠতে সময় লাগবে। ফাইলের সঙ্গে জড়িত লোকজনের সঙ্গে খুব বেশি সখ্য হয়নি। তাই কোনো তথ্য দিয়ে আপনাকে সহয়তা করতে পারছি না।’
এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি কোথাও যেন পানি না জমে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে ডেঙ্গু নিয়ে আলোচনার সময় এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
বর্ষায় মশাবাহিত এ রোগটি দেখা গেলেও এবার সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে রোগটির প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে অক্টোবরে। প্রায় প্রতিদিনই ২ থেকে ৫ জনের মৃত্যুর কথা জানাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আজ (গতকাল) ডেঙ্গু নিয়ে বিশেষভাবে আলোচনা হয়েছে। ২০১৯ সালে ১ লাখ ডেঙ্গু রোগী ছিল। এবার এরই মধ্যে ৩৬ হাজার লোক আক্রান্ত হয়েছে। ঢাকায় ২৩ হাজার, চট্টগ্রামে ৪ হাজার, খুলনায় ১ হাজার ৬০০, সিলেটে সব থেকে কম ৫৩ জন।
তিনি জানান, এ বছর ইতিমধ্যে ১৩৬ জন মারা গেছে ডেঙ্গুতে। তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশ নারী; আর পুরুষ ৪০ শতাংশ। সে জন্য এটা সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদের পক্ষ থেকে, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীও অনুরোধ করেছেন, সেটা হলো সবাই যেন বাড়িঘর ক্লিন রাখে এবং বিশেষ করে পানি যেন না জমতে পারে।
সিটি করপোরেশনসহ সবাইকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিশেষ করে সিভিল এভিয়েশনকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বিমানবন্দর এলাকায় স্প্রে করার জন্য। তারা সপ্তাহে দুদিন স্প্রে করতেন; এখন বলা হয়েছে, প্রতিদিনই স্প্রে করার জন্য। সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সমন্বয় করে প্রচারণা চালিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
২০৩০ সাল পর্যন্ত কাটা যাবে না : জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সংরক্ষিত ও প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের গাছ কাটার ওপর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সামাজিক বনায়নের আওতায় যে বন রয়েছে, সেগুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।
জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সংরক্ষিত ও প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের গাছ কাটার ওপর চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা ছিল। এর আগে পাঁচ বছর করে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও এবার মন্ত্রিসভা আট বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়াল।
৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান দিবস : সরকার ৪ নভেম্বরকে জাতীয় সংবিধান দিবস ঘোষণা করেছে। ফলে প্রতি বছর ৪ নভেম্বর এ দিবসটি পালিত হবে। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর জাতীয় সংসদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে সংবিধান অনুমোদন দেওয়া হয়। এ কারণেই এখন থেকে প্রতি বছর ৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান দিবস পালন করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ ও মুখ্য সচিবের বাড়িতে হচ্ছে না সুইমিংপুল : মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের জন্য নির্মাণাধীন বাড়িতে সুইমিংপুল করার বিষয়টি নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। আলাদা সুইমিংপুল না হলেও সবার জন্য কমন কোনো সুইমিংপুল নির্মাণ করা যায় কি না, সে বিষয়ে ভেবে দেখা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সেখানে যাদের বাড়ি বরাদ্দ আছে, তারা ও তাদের সন্তানরা ওখানে সাঁতার কাটার সুযোগ পাবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের জন্য রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন এলাকায় ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে পাশাপাশি নির্মিত হবে দুটি বাসভবন। প্রকল্পের পরিকল্পনা অনুসারে প্রতিটি ভবন হবে তিনতলা। এর মধ্যে প্রতিটি বাসভবনে সুইমিংপুল নির্মাণের কথা ছিল। বিশ^ব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সরকার দেশবাসীকে কৃচ্ছসাধনের পরামর্শ দিচ্ছে। এমন সময় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে এ নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের বাড়িগুলো খুবই পুরোনো। এগুলো মুখ্য সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের বাড়ির বিষয় না, সব পুরনো বাড়ি আস্তে আস্তে ভেঙে ফেলা হবে। সংসদের উপনেতার বাড়ি এরই মধ্যে ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এগুলো সেই ১৯৪০-১৯৪৫ সালের বাড়ি। বাড়িগুলো একটা একটা করে সব নতুন করে তৈরি করা হবে।
গতকালের বৈঠকে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (২০২৩-২০৫০) অনুমোদন করা হয়েছে।
বিশ্বকাপ, বাংলাদেশ আর অ্যাডিলেড মানেই যেন রুবেল হোসেনের হাত থেকে বের হওয়া দুটো স্বপ্নের ডেলিভারি। ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে এখানেই তো ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এক অর্থে বলা যায়, বাংলাদেশের কাছে বিশ্বকাপে সেই হারই বদলে দিয়েছিল ইংল্যান্ডকে। যার ফল ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপেই ইংল্যান্ডের শিরোপা জয়।
সেই একই দল নিয়েই ইংল্যান্ড স্রেফ মানসিকতা বদলে হয়ে গেছে রোমাঞ্চকর এক দল। বাংলাদেশ দল অবশ্য গত সাত বছরে এগিয়ে-পিছিয়েছে অনেকটাই।
বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে মেকি সাফল্য উদযাপনের আড়ালে ঢাকা পড়ছে বড় দলের বিপক্ষে দুর্বলতা। এবারের আসরেও দুটো জয় মূলপর্বে, যদিও প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস এবং জিম্বাবুয়ে। জয়ের ব্যবধানও সামান্য, ৯ রানে এবং ৩ রানে। এত কিছুর পর খেলাটা অ্যাডিলেডে আর প্রতিপক্ষ ভারত বলেই কি খানিকটা আশা?
ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবশেষ দেখা মানেই তো বুকভরা হাহাকারের গল্প। ২০১৬ সালে বেঙ্গালুরুতে দুই ভায়রা ভাই মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ মিলে যেভাবে জেতা ম্যাচটা হাতছাড়া করলেন, সেই আক্ষেপ বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তদের মন থেকে মুছবে না। বছর দুয়েক পর নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে আবারও হৃদয়ভাঙা হার ভারতের কাছে। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ খেলে খেলে হাত পাকানো ভারতীয় ক্রিকেটারদেরও যে এতটা চাপের মুখে ফেলতে পারে বাংলাদেশ, সেটাই তো মাঝে মাঝে মনে হয় অবিশ্বাস্য!
আগের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে খানিকটা ব্যাকফুটে ভারত। এই সুযোগটাই কি নেবেন সাকিব আল হাসান? কাগজে-কলমে বাংলাদেশের সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ এখনো আছে। ভারত আর পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটো ম্যাচে জিতলেই বাংলাদেশ চলে যাবে শেষ চারে। যদিও বাস্তবতার অঙ্ক অনেক কঠিন। নেদারল্যান্ডস আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জিততেই ঘাম ছুটে গেছে বাংলাদেশের। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পড়েছে মুখ থুবড়ে। বিশ্বকাপে আসার আগে ত্রিদেশীয় সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা দুটো টি-টোয়েন্টিতেই হেরেছে। বাকি থাকল ভারত, ১১ বার মুখোমুখি হয়ে একটি মাত্র জয় ২০১৯ সালে দিল্লিতে। পরিসংখ্যান, সামর্থ্য সব কিছুতেই পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ কেবল এগিয়ে আছে একটি জায়গায়। মুখে খই ফোটাতে।
আজ যেমন অ্যাডিলেডে অনুশীলন বাতিল করেছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিনও অনুশীলনে এসেছিলেন শুধু নুরুল হাসান সোহান আর ইয়াসির রাব্বি। অধিনায়ক সাকিবের দর্শন, পরীক্ষার আগের রাতে বেশি পড়লে উল্টো ক্ষতি হয়! সেজন্যই বিশ্রামে ভ্রমণ ক্লান্তি দূর করে চনমনে হয়ে মাঠেই নামার পরিকল্পনা। অন্যদিকে ভারত রেখেছে ঐচ্ছিক অনুশীলন।
ভারতের উইকেটরক্ষক দীনেশ কার্তিক পিঠের চোটের কারণে বাংলাদেশের বিপক্ষে একাদশে নাও থাকতে পারেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই তিনি মাঠ ছাড়েন ম্যাচে মাঝপথে। তার বদলে দলে ঢুকতে পারেন ঋষভ পান্থ।
অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপ খেলার জন্য আরব আমিরাতে প্রস্তুতির পর নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন, হোবার্ট, সিডনি, ব্রিসবেন হয়ে অ্যাডিলেডে বাংলাদেশ। এখানেই শেষ দুটো ম্যাচ। জিতলে সেমিফাইনালে, হারলে দেশের বিমানে।
কৃষ্ণসাগরের নৌবহরে ব্যাপক ড্রোন হামলার অভিযোগ তুলে ক্রিমিয়ার সেভাস্তোপোল বন্দর দিয়ে খাদ্যশস্য রপ্তানি চুক্তি থেকে সরে এসেছে রাশিয়া। আর হামলার জন্য দায়ী করেছে ইউক্রেন ও যুক্তরাজ্যকে। রাশিয়ার এই সিদ্ধান্ত বিশ্বকে নতুন করে খাদ্যঝুঁকিতে ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অবশ্য চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের দিনই রাশিয়া ঘোষণা দিয়েছে, গরিব দেশগুলোতে তারা লাখ লাখ টন খাদ্য সহায়তা দেবে। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মনে করছেন, চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে রাশিয়া আফ্রিকা ও এশিয়ায় বড় ধরনের দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তার মতে, রাশিয়ার এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ, মিসর, আলজেরিয়া, ইয়েমেন, ভিয়েতনামের মতো অনেক দেশের মানুষের খাদ্যপ্রাপ্তি অনিশ্চয়তায় ফেলবে।
গত ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানি বন্ধ ছিল। জুলাই মাসে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ চুক্তি করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। চুক্তির পর ৮০ লাখ টন শস্য রপ্তানি করেছে ইউক্রেন। তবে শনিবার সকালে সেভাস্তোপোল বন্দরে নৌবহরে ড্রোন হামলার পর চুক্তিটি থেকে সরে গেছে রাশিয়া।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবার বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, গত রবিবার শস্যবাহী কোনো জাহাজ ইউক্রেনের বন্দর ছেড়ে যায়নি। কোনো জাহাজ বন্দরে প্রবেশ করেনি। তার অভিযোগ, মস্কো আবারও মানুষের ক্ষুধা নিয়ে খেলছে। আর দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, আফ্রিকা ও এশিয়াকে নতুন করে বড় আকারের দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে ফেলতে মস্কো ইচ্ছাকৃতভাবে এমনটা করছে। এ ধরনের তৎপরতা রুখে দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য হিলের প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত শনিবার দেওয়া বক্তব্যে জেলেনস্কি বলেন, চুক্তি থেকে রুশদের সরে আসাটা প্রত্যাশিত ছিল। এই সিদ্ধান্ত তাদের আজকের নয়। গত সেপ্টেম্বরে যখন তারা ইউক্রেনে উৎপাদিত খাদ্যশস্য বহনকারী জাহাজ আটকে দিয়েছিল তখনই তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল। জেলেনস্কির ভাষ্য, রাশিয়ার এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ, মিসর, আলজেরিয়া, ইয়েমেন, ভিয়েতনামের মতো অনেক দেশের মানুষের খাদ্যপ্রাপ্তি ঝুঁকিতে ফেলবে।
চুক্তি স্থগিত করায় রাশিয়ার সমালোচনা করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, রাশিয়ার এমন উদ্যোগ আপত্তিকর। এর ফলে বিশ্বে খাদ্যসংকট বাড়বে। বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, রাশিয়া খাদ্যশস্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত বদলাতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বলেছে, রাশিয়ার এমন সিদ্ধান্ত বিশ্বকে নতুন করে খাদ্যসংকটের মুখে ফেলবে। তাই মস্কোর প্রতি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানাচ্ছে ইইউ। একই আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেন, শস্য রপ্তানি চুক্তি স্থগিতের মতো সংকটকালে মানবিক কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করে, এমন কোনো কার্যক্রম থেকে সব পক্ষের বিরত থাকা উচিত।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতির মাঠে সরব হয়েছে বিএনপি। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি বিগত তিনটি নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীনদের মামলা-হামলাসহ নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এখনো অনেক নেতাকর্মী নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি। এসব মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে সরকার হটানোর আন্দোলন করছে বিএনপি। দলটির নেতাদের মধ্যে কেউ জামিনে আছেন, কেউ আছেন জামিন ছাড়াই। দিনে দিনে আন্দোলনের মাত্রা বাড়ানোর চেষ্টা করছে সরকারবিরোধীরা। এতে সরকারের পক্ষ থেকেও সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
সরকারের শীর্ষ মহলের কাছে তথ্য এসেছে, আন্দোলনের নামে দেশে বড় ধরনের নাশকতামূলক কর্মকা- চালানোর পাঁয়তারা চলছে। আর এসবের পেছনে সবধরনের কলকাঠি নাড়ছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নাশকতা মামলার আসামিরা। এসব তথ্য পেয়ে কঠোর হার্ডলাইনে যাচ্ছে সরকারের হাইকমা-। ইতিমধ্যে নাশকতা মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছে। নির্দেশনা পেয়ে পুরনো মামলার পাশাপাশি নতুন করে মামলা করারও কৌশল নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ঢাকার মিরপুরে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বিএনপি ও ছাত্রদলের ৫ নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুরনো ও নতুন মামলা থাকায় ঢাকায় বিএনপি ও ছাত্রদলের ছয় নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন।
নির্দেশনা পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর কাজ শুরু করেছে। গত শনিবার পুলিশের সবকটি ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের বার্তা দেওয়া হয়েছে। বার্তায় নাশকতা মামলার আসামিদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বার্তা পেয়ে নড়েচড়ে বসেছেন পুলিশের কর্তাব্যক্তিরা। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামের যেসব নেতাকর্মীর নামে নাশকতা মামলা আছে তাদের তালিকা তৈরি শুরু হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপারদের পরামর্শে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) ওই তালিকা করছেন।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারবিরোধীদের নিয়ে কথা বলেন। বিশেষ করে নাশকতামূলক কর্মকা-ের বিষয়ে কথা বলেন। যারা খুনের সঙ্গে জড়িত, অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত, আমি জানি তারা অনেকে লুকিয়ে ছিল। এখন বিএনপি মাঠে নেমেছে, তারাও মাঠে নামবে। এসব আসামিকে কিন্তু ধরতে হবে। তাদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। কারণ তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। জীবন্ত মানুষ হত্যা করেছে। চোখ-হাত কেটেছে, মানুষকে নির্যাতন করেছে।
তাদের ছাড় নেই। আইন তার আপন গতিতে চলবে। আইন সবার জন্য সমান। এটা তাদের মাথায় রাখতে হবে। রাজনীতি করবে রাজনীতিক হিসেবে। কিন্তু সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী রাজনীতি এই দেশে চলবে না। এটা মাথায় রাখতে হবে।
এসব নির্দেশনা পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়। বার্তা পেয়ে এসপি ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তালিকা করার কাজ শুরু করেছেন। মাসখানেকের মধ্যে তালিকার কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, দেড় বছরের কম সময়ে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইভিএমসহ নানা ইস্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত। বিএনপির নেতাকর্মীরা দেশের বিভিন্নস্থানে বিক্ষোভ করছে। আবার বিএনপির যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে আওয়ামী লীগও মাঠে নেমেছে। এই নিয়ে সংঘর্ষও হয়েছে দেশের বিভিন্নস্থানে। কোনো কোনো জেলায় নতুন করে মামলা হচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া পুরনো মামলাগুলো সক্রিয় করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জামায়াতের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ উঠেছে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, যারা বিশৃঙ্খলা করবে তাদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আন্দোলনের নামে বিএনপি বা অন্য কোনো দল আইনের ব্যত্যয় ঘটালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা তাদের মেনে চলতে হবে। তারা যদি রাস্তা অবরোধ করেন কিংবা ভাঙচুর করেন, জনজীবনে দুঃসহ অবস্থা তৈরি করেন তাহলে আমাদের করার কিছু আছে। যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে অথচ জামিনে নেই তাহলে আইন অনুযায়ী কাজ করবে পুলিশ। তবে অহেতুক কাউকে হয়রানি করা হবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, দিনে দিনে বিএনপিসহ অন্য দলগুলোর আগ্রাসন মনোভাব দেখা যাচ্ছে। তারা আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছে। বিশেষ করে নাশকতা মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা চালাচ্ছে। এদের বেশিরভাগ আসামি বিএনপি ও জামায়াত নেতা। তাদের মধ্যে আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে কলকাঠি নাড়ছেন জামায়াত নেতারা। ওই পুলিশ কর্মকর্তারা আরও বলেন, নাশকতা মামলার আসামিদের মধ্যে কেউ কেউ জামিনে আছেন। আবার কারোর জামিনে মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন না। এই জন্য তাদের তালিকা করার নির্দেশ দেওয়া আছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুরনো মামলার পাশাপাশি নতুন মামলা করারও পরিকল্পনা আছে। বিশৃঙ্খলা, পুলিশের ওপর হামলা ও রাষ্ট্রের ক্ষতি করলে নতুন করে মামলা হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এই বিষয়ে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে বলেন, নাশকতা মামলার আসামিদের বিষয়ে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বিশেষ বার্তা এসেছে। বিশৃঙ্খলা করলে পুরনো মামলার পাশাপাশি নতুন মামলা হবে। তারা আরও বলেন, বিএনপির অনেক নেতাকর্মী আছেন তারা জামিন না নিয়েই রাজপথ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের তালিকা করা হচ্ছে। জেলা পুলিশের পাশাপাশি থানা পুলিশও এই নিয়ে কাজ করছে। বিএনপি নেতারা গ্রেপ্তার হলেও দলের শীর্ষ নেতারা অনেকটা চাপে পড়বেন কোনো সন্দেহ নেই। তাদের আর বেশি বাড়তে দেওয়া হবে না।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরের শাহআলী থানা পুলিশের ওপর হামলা করার অভিযোগে বিএনপি ও ছাত্রদলের অন্তত অর্ধশত নেতার বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। ওই মামলায় শুক্রবার রাতে শাহআলী থানাধীন ৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রায়হান ইসলাম, একই ওয়ার্ডের বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদীন ও মিরনসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাছাড়া ওইদিন সন্ধ্যায় গুলশান ২ নম্বর থেকে নাশকতা মামলার আসামি ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হুমায়ুন কবির রওশনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১০টির মতো মামলা আছে।
শাহআলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে জানান, নাশকতা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় হুমায়ুন কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যরা কিছুদিন আগে পুলিশের ওপর হামলা করায় থানায় মামলা হয়েছে। যারা অপরাধ করবে তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
বাংলাদেশের ৫৩তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস রবিবার।
একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালিদের ওপর অতর্কিত গণহত্যা অভিযান ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু করে এবং বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের পূর্বে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ রাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালি বেসামরিক লোকের ওপর গণহত্যা শুরু করে।
তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। ওই ঘোষণা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয়।
বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তারের আগে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পাশাপাশি যে কোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
মুহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই সময় বাস্তবতা ও নিরাপত্তা জনিত কারণে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার এই ঘোষণা নথি সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল না। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তৎকালীন ইপিআর-এর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পরে। পরে চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ বেশ কয়েকজন শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।
দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধর পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে একটি ভূখণ্ডের, যার নাম বাংলাদেশ।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।
রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধির মধ্যেই তৈরি পোশাক খাতের আকাশে দেখা দিয়েছে শঙ্কার মেঘ। কয়েক মাস ধরেই খাতটির উদ্যোক্তারা রপ্তানি আয় কমে যাওয়া নিয়ে নানা ধরনের শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন। তারা বলছেন, রপ্তানির প্রধান প্রধান অঞ্চলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকায় আগামীতে ওই সব অঞ্চলে রপ্তানি ব্যাপক হারে কমে গেছে। তাদের ভাষ্য, ইতিমধ্যে তার প্রভাবও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। অর্ডার কমে যাওয়ায় কমেছে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানিও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যও বলছে সে কথা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলার হার নেমেছে প্রায় অর্ধেকে।
দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। তবে এই খাতের কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতির পুরোটাই আমদানিনির্ভর; যা চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাপক হারে কমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) টেক্সটাইল ফেব্রিক্স আমদানির এলসি বা ঋণপত্র খোলা কমেছে ২৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ৬২৬ কোটি ডলারের এলসি খোলেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮৬৫ কোটি ডলার।
তবে প্রস্তুত কাপড়ের চেয়ে বেশি আমদানি কমেছে কাঁচামালের। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে কাঁচা তুলা বা কটন আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এ সময়ে কাঁচা তুলা আমদানিতে ১৫৩ কোটি ডলারের এলসি খোলেন ব্যবসায়ীরা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে তুলা আমদানিতে ২৭২ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। আবার তুলার চেয়ে সুতা আমদানি আরও কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সুতা আমদানিতে এলসি খোলা হয় ১০৭ কোটি ডলারের, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৪২ কোটি ডলার। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সুতা আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৫৬ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের আট মাসে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৫৪ দশমিক ১১ শতাংশ। এই সময় টেক্সটাইল যন্ত্রপাতির এলসি খোলা কমেছে ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ। আর গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৬৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করে উদ্যোক্তারা সাধারণত নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন বা কারখানার সম্প্রসারণ করে থাকেন। অর্থাৎ শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়ে। বিনিয়োগ বাড়লে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। সামগ্রিক অর্থনীতিতে গতিশীলতা আসে। আর এটি কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে, ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা ব্যবসা সম্প্রসারণ কিংবা নতুন কলকারখানা স্থাপন অনেক কমিয়ে দিয়েছেন। এতে দেশে বিনিয়োগ ও উৎপাদনে ‘ধস’ নামার একটা অশনিসংকেত পাওয়া যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে কাঁচামাল ও জাহাজভাড়া অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার ব্যাপক পতন, বিভিন্ন দেশে মন্দার শঙ্কাসহ নানা কারণে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে উচ্চ আমদানি ব্যয়ের কারণে দেশে ডলার সংকট দেখা দিলে এলসি খোলায় কড়াকড়ি আরোপ করে সরকার। এতে ডলারের ওপর চাপ কিছুটা কমানো গেলেও আমদানি জটিলতায় পড়েছে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য খাত।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানির ক্রয়াদেশ কিছুটা কমেছে। কিন্তু উচ্চমূল্যের পণ্য রপ্তানি বাড়ায় রপ্তানি আয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রভাব পড়েনি। যেহেতু সাধারণ পোশাক রপ্তানি কমেছে সে কারণে কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আমদানিও কমেছে। পাশাপাশি ডলার সংকটও আমদানি কমে যাওয়াতে ভূমিকা রেখেছে। ফারুকের আশঙ্কা, উন্নত দেশগুলোতে ব্যাংকিং খাতে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তার কারণেও রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে এসব বিষয় মোকাবিলায় পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংকগুলোতে বিনিয়োগ করার মতো অর্থের সংকট রয়েছে। এ কারণে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করতে পারছে না। পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার বড় অবমূল্যায়নের কারণে মালিকরা খুব বেশি প্রয়োজন না হলে মূলধনি যন্ত্রপাতি আনছেন না। অবশ্য আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম কমায় আমদানির পরিমাণে প্রভাব পড়েছে বলেও মনে করেন ফজলে শামীম এহসান।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মন্দার আশঙ্কায় কেউ নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এ কারণে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। তবে কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়াটাকে তারাও আসন্ন সংকট হিসেবে দেখছেন। গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এবং ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশে ডলারের সংকটের কারণে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা কাঁচামাল আমদানি করতেই হিমশিম খাচ্ছেন। এটা খুব ভালো লক্ষণ নয়। তবে তিনি আশাও দেখছেন। তার ভাষ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম কমে যাওয়ায় মূলত আমদানি ব্যয় কম হয়েছে। আমদানির পরিমাণ খুব একটা কমেছে বলে মনে করেন না তিনি।
পুলিশ ভেরিফিকেশন না হওয়ায় চাকরি স্থায়ীকরণ হচ্ছিল না। কিন্তু তার দেরি সয়নি। নিজের তত্ত্বাবধানে থাকা সার্ভিস বইয়ের পাতায় কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে স্থায়ী করে নিলেন নিজের চাকরি। এই ব্যক্তি হলেন ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের উচ্চমান সহকারী মো. মনোয়ার হোছাইন। স্থানীয় সরকার বিভাগ তদন্তের পর থানায় মামলা হয়। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে তার বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের চারটির প্রমাণ মিলে। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট আইনের দুটি ধারায় তার ১২ বছর সাজা ও অর্থদ- হয়েছে। পুলিশ মনোয়ারকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯৪ সালের ১৯ মে ‘ক্রু’ বা মশককর্মী পদে যোগ দেন মনোয়ার হোছাইন। দপ্তরের চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী, এলডিএ কাম টাইপিস্ট হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু অসম্ভবকে সম্ভব করে তিনি ওই পদও বাগিয়েছেন। ওই পদ থেকে উচ্চমান সহকারী (হেড ক্লার্ক) পদেও পদোন্নতি নিয়েছেন। এরপর দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদের অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে নেন। তথ্য গোপন করে পদোন্নতি নেওয়া এই কর্মকর্তার বাদ ছিল চাকরিতে স্থায়ী হওয়া। প্রথমবার কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে বিধিবহির্ভূত পদোন্নতি নেওয়ার পর তার উচ্চাকাক্সক্ষা বেড়ে যায়। ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি তিনি দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল স্বাক্ষর করে চাকরি স্থায়ী করেন। এর আগে দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. রওশন আরা তালুকদারকে চাকরি স্থায়ী করার জন্য চাপ দেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি।
এ ঘটনার পর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্থানীয় সরকার বিভাগ ও দুদকের তদন্ত কমিটির কাছে লিখিতভাবে তার স্বাক্ষর জাল করার বিষয়ে অভিযোগ করেন। ২০১১ সালে মনোয়ারকে বরখাস্ত করা হয়।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. রওশন আরা তালুকদার তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগের পক্ষে বিভিন্ন প্রমাণও জমা দেন। তিনি লিখিত বক্তব্যে জানান, অভিযুক্ত মনোয়ার হোছাইনের চাকরি স্থায়ীকরণ সংক্রান্ত চাকরি বইয়ের দ্বিতীয় খ-ের নবম পৃষ্ঠায় যে স্বাক্ষর রয়েছে তা তার নয়। ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি তারিখের স্বাক্ষরটি মনোয়ারের সৃজনকৃত। চাকরিকালীন তার বিষয়ে কোনো পুলিশ ভেরিফিকেশন করানো হয়নি। এ জন্য তার চাকরিও স্থায়ী করা হয়নি। আর সার্ভিস বইয়ে যে সিল ব্যবহার করা হয়েছে তা তার সময়ে ব্যবহৃত সিল থেকে ভিন্ন। সিলের নিচে যে স্বাক্ষর রয়েছে তিনি বলতে পারবেন সেটা কীভাবে হলো। ইস্যু রেজিস্টার খাতায় ৪৬ নম্বর দিয়ে যে চিঠিটি তৈরি করা হয়েছে তার কোনো কপি কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। ৪৬ নম্বর ক্রমিকটি ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি লেখা রয়েছে। অন্যান্য কলাম খালি রয়েছে। পরের পাতায় ২০১০ সালের ২৫ জানুয়ারি ২৬ নম্বর ক্রমিক দিয়ে একটি বদলির চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরও জানান, ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের উচ্চমান সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন মনোয়ার হোছাইন। দপ্তরের বিধি-বিধান অনুযায়ী নথি, রেকর্ডপত্র, সার্ভিস বই তার কাছে রক্ষিত ছিল। এ কারণে জাল স্বাক্ষরের দায় তিনি কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। দপ্তরে জমা দেওয়া তার এলএলবি পাসের সনদও সঠিক ছিল না। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় থেকে তার ওই সনদ সঠিক নয় বলে লিখিতভাবে দপ্তরকে জানানো হয়েছে।
মনোয়ারের বিরুদ্ধে অনিয়মতান্ত্রিক কার্যকলাপ, নিয়োগ বাণিজ্য, স্বাক্ষর জাল, নিজেই নিজের চাকরি স্থায়ীকরণ এবং নথি, রেকর্ডপত্র, সার্ভিস বইয়ে ত্রুটি ঘটানোসহ পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে চারটি অভিযোগের প্রমাণ মেলে।
ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশে ২০১৩ সালের ১৮ জুন দপ্তরের পক্ষ থেকে চকবাজার থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা (নম্বর-৪) করা হয়। পরে মামলাটি তদন্তের জন্য দুদকে পাঠানো হয়। দুদক তদন্ত করে মনোয়ারের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর তাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট আইনের একটি ধারায় তার পাঁচ বছরের কারাদ- হয়। পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের সশ্রম কারাদ- দেয় আদালত। আরেকটি ধারায় সাত বছরের কারাদন্ড দেওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের বরখাস্ত উচ্চমান সহকারী মনোয়ার হোছাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, একটি চক্র তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। তাদের চক্রান্তের শিকার হয়ে তিনি কর্মস্থল থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল এবং আদালতের সাজার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা কত কিছু করছে। কোথায় আবার কী করেছে বুঝতে পারছি না। এ প্রসঙ্গটি বারবার উত্থাপন করলেও তিনি এড়িয়ে যান।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গণহত্যা নিয়ে পাকিস্তান যা বলে, তারাও (বিএনপি) তাই বলে। কারণ তারা পাকিস্তানি ভাবধারায় উজ্জীবিত, তাদের হৃদয়ে পাকিস্তানি চেতনা।
আজ রবিবার (২৬ মার্চ) ভোরে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের দাবি 'আওয়ামী লীগের ভুলের জন্য গণহত্যা হয়েছিল'- এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, তাদের (বিএনপি) হৃদয়ে পাকিস্তানি চেতনা। তারা এমনটা বলবে, এটাই সমীচীন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার শত্রুরা সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ; এমন নানা পোশাকে স্বাধীনতাকে চ্যালেঞ্জ করে। এই অপশক্তিকে পরাস্ত করতে হবে। কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ সোনার বাংলা গড়ার পথে রয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া এখন অন্যতম অঙ্গীকার।
এর আগে, জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুলউল আলম হানিফ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
বাংলাদেশের অপরাধীরা আগে ভারতে গিয়ে আত্মগোপন করত। এরপর জানা গেল, সেখান থেকে দেশে অপরাধ ঘটায় তারা। কারও কারও নেপালে অবস্থানের কথাও জানা যায়। ভারতকে নিরাপদ মনে না করায় আরব আমিরাতের দুবাই বেছে নিচ্ছে অপরাধীরা। সেখানে তারা আস্তানা গেড়েছে।
পুলিশসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দেশের অপরাধজগতের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীরা অপরাধ করেই দুবাই চলে যাচ্ছে। সেখানে বসেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কলকাঠি নাড়ছে। এখন বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরাও দুবাইকে কেন্দ্র করে নানা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। সেখানে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও আছে। তাদের কেউ কেউ সোনার কারবারও করছেন। ওই দেশে ভারতের দুর্ধর্ষ অপরাধী দাউদ ইব্রাহিমের শিষ্যত্ব নেওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ওইসব অপরাধীর তথ্য জানার পরও তাদের ফেরত আনতে পারছেন না। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিসের’ দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে পুলিশকে। তালিকাভুক্ত অপরাধীদের ধরতে রেড নোটিস জারি হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তারা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যাকাণ্ডের পর অনেকে পার পেয়ে গেছে। যদিও মামলাটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তবে নতুন করে আলোচিত মামলাটির পুনঃতদন্ত করার কথা ভাবছে পুলিশ। এ নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ রূপান্তরকে জানান, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ সড়কে গুলি চালিয়ে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যা করা হয়। গুলিতে নিহত হন এক কলেজছাত্রী। চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের মূল হোতা সুমন শিকদার ওরফে মুসা ঘটনার রাতেই দেশ ছেড়ে চলে যায় দুবাইয়ে। সেখানে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও জয়ের সঙ্গে তার বৈঠক হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে মুসা চলে যায় ওমানে। জিসান ও জয় এখনো দুবাইতেই বসবাস করছে। যদিও ওমান থেকে মুসাকে ওই বছরের ৯ জুন ইন্টারপোলের মাধ্যমে ঢাকায় ফিরিয়ে আনে পুলিশ সদর দপ্তর। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই ফের আলোচনায় আসে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও হিরো আলমের দুবাই সফরকে কেন্দ্র করে। তারা বনানীতে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের আসামি আরাভ খান নামধারী রবিউল ইসলামের সোনার দোকান উদ্বোধন করতে সেখানে যান। দুবাই যাওয়ার কারণে সাকিব ও হিরো আলমকে যেকোনো সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হতে পারে। এ ছাড়া ‘প্লেজার ট্যুরের’ জন্য এখন দেশের শিল্পপতিদের পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে দুবাই। কারণ ঢাকাকে তারা নিরাপদ মনে করছেন না। পাশাপাশি দেশে আটক সোনার চালানের ৮০ শতাংশ জব্দ হচ্ছে দুবাইফেরত বিভিন্ন এয়ারলাইনস থেকে। সব মিলিয়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে দুবাই।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অপরাধীরা যে দেশেই থাকুক না কেন, তাদের চিহ্নিত করে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে আটক করার পর দুবাই থেকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফেরত আনতে চেয়েছিল পুলিশ। সম্প্রতি আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আরাভকে দুবাই থেকে ফেরত আনতে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করি অল্প সময়ে সুখবর দেওয়া সম্ভব হবে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে জানান, সম্প্রতি আলোচনায় আসা আরাভ খানকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি ভারতের পাসপোর্টধারী। দেশে তার নামে ১২টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। ওইসব পরোয়ানার কপি ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে পাঠানোর পর দ্রুতই তাকে ফেরানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও এর আগে জিসান ও জয়কে দুবাই থেকে ফেরত আনার উদ্যেগ নিয়েও আনতে পারেনি। টের পেয়ে তারা দুবাই ছেড়ে কানাডায় চলে যায়। তারা আবার দুবাই এসেছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা এই দেশে অপরাধ করে দুবাই গিয়ে আস্তানা গাড়েন। ইতিমধ্যে পুলিশ একটি তালিকা করেছে। ওই তালিকায় গুলশান ও বনানী এলাকার মডেলের সংখ্যা বেশি। বছরখানেক আগে গ্রেপ্তার হওয়া ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ বেশিরভাগ সময় দুবাই থাকেন। তাদের সঙ্গে অপরাধ জগতের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সখ্য আছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে। এমনকি বনানীতে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যাকান্ডে তাদেরও সম্পৃক্ততা ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনার পর পিয়াসা, রাজ ও আরাভকে আটকও করা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের এক বড় মাপের নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তার অনুরোধে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এসব বিষয় নিয়ে পুনরায় তদন্ত করা হতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংগীতশিল্পী, এক ব্যবসায়ীর স্ত্রী ও কয়েকজন মডেল নিয়মিত দুবাই আসা-যাওয়া করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালে তৎকালীন সরকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসী ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন ধরা পড়েছে। আবার কেউ ক্রসফায়ারে মারা গেছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তাড়া খেয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে আছে কেউ কেউ। আত্মগোপনে থেকেই তারা অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই দুবাই রয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। এ নিয়ে পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তারা কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আলাদাভাবে বৈঠক হয়েছে। ওইসব বৈঠকে বলা হয়েছে, ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করার পরও কেন তারা ধরা পড়ছে না তা খতিয়ে দেখতে হবে। ২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাই চলে যায়। সেখান থেকেও ঢাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আছে। তার সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহেল শাহরিয়ার ওরফে শটগান সোহেল, কামরুল হাসান হান্নান, ইব্রাহীম, রবিন ও শাহাদৎ হোসেন বেশিরভাগ সময় দুবাই থাকে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্দিবিনিময় চুক্তি থাকায় বেশ কয়েকজন শীর্ষ অপরাধীকে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, শাহাদৎ, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার আসামি নুর হোসেনসহ অনেকেই কলকাতায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। নুর হোসেন ছাড়া অন্য সন্ত্রাসীদের দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। সুব্রত, মোল্লা মাসুদ ও শাহাদৎ ভারতে সুবিধা করতে না পেরে মুম্বাই হয়ে দুবাই চলে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার অপরাধজগতের এক সন্ত্রাসী এ প্রতিবেদককে বলেন, অপরাধীরা এখন আর ভারত যেতে চায় না। কারণ ওই দেশে শান্তিতে থাকা যায় না। ফলে সবাই এখন দুবাইমুখী হচ্ছে। দুবাইয়ে সবাই নিরাপদে থাকতে পারছে।