
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদের সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হচ্ছেন সংসদের স্পিকারের এমন আশ্বাস পেয়ে সংসদে যোগ দিয়েছে জাপা। গতকাল সোমবার জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাপার সংসদ সদস্যরা (এমপি) অধিবেশনে যোগ দেন। তারও আধঘণ্টা আগেই অধিবেশনে উপস্থিত হন দল থেকে অব্যাহতি পাওয়া মসিউর রহমান রাঙ্গা।
এর আগে গত রবিবার বিকেলে জিএম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে গেজেট প্রকাশ না করা পর্যন্ত জাপার এমপিরা সংসদে যাবেন না স্পিকারকে এমনটি জানিয়ে দেয় জাপা সংসদীয় দল। এক দিনের ব্যবধানে গতকাল স্পিকার আশ্বাস দিলে সিদ্ধান্ত পাল্টায় দলটি। তবে কবে নাগাদ আনুষ্ঠানিকভাবে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে জিএম কাদেরের নাম ঘোষণা করা হবে, সে ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি।
গতকাল জাপা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, স্পিকারের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ অধিবেশনে যাবেন জাপার এমপিরা। পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের গতকাল এক নির্দেশনায় দলের সব এমপিকে অধিবেশনে যোগ দিতে নির্দেশ দেন।
সংসদে ফিরলেও গতকাল রাত পর্যন্ত বিরোধীদলীয় নেতার কোনো চিঠি পাননি জিএম কাদের। জাপার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সংসদ সদস্য জানান, অধিবেশন চলাকালীন পর্যন্ত জিএম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করে স্পিকারের কার্যালয়ে থেকে কোনো চিঠি তারা পাননি।
গত রবিবার চলতি একাদশ জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশন শুরু হয়। এ অধিবেশন চলবে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত। অধিবেশনে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ জ্যেষ্ঠ চার এমপি সংসদে শোক প্রস্তাবের আলোচনায় বক্তব্যও দেন। তবে পরে সংসদে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান।
জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে সরিয়ে জিএম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করতে জাপার সংসদীয় দল গত ৩ সেপ্টেম্বর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে চিঠি দেয়। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্য কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিলে স্পিকার সেটি অনুমোদন দেন। কিন্তু জাপার ব্যাপারে গত দুই মাসেও কোনো সিদ্ধান্ত দেননি স্পিকার।
এ প্রেক্ষাপটে গত রবিবার সংসদীয় দলের বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় স্পিকারের সঙ্গে দেখা করেন জাপার নেতারা। সেখানে বিরোধীদলীয় নেতা করার বিষয়ে স্পিকারের সিদ্ধান্ত জানতে চান। কিন্তু ইতিবাচক কোনো আশ্বাস না পাওয়ায় সে রাতেই সংসদে যোগ না দেওয়ার ঘোষণা দেয় জাপা। পাশাপাশি গতকালের অধিবেশনে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয় সংসদের তোলার সিদ্ধান্তের কথা জানান।
জাপার নেতারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, এর আগে স্পিকারের কার্যালয় থেকে জিএম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করার বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া পান তারা। কিন্তু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসছিল না। গত রবিবার স্পিকারের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তারা এ বিষয়ে আরও নিশ্চিত হতে পেরেছেন। তারা আশা করছেন, দু-এক দিনের মধ্যেই এ ব্যাপারে চিঠি পাবেন।
কে হচ্ছেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও উপনেতা : সংসদের বর্তমান বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদেরই হচ্ছেন সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা এমনটা প্রায় ধরেই নিয়েছে জাপা। সে ক্ষেত্রে কে হচ্ছেন নতুন উপনেতা এ নিয়ে দলের ভেতর ও বাইরে বেশ আগ্রহ দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিন ধরেই এ পদে পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপির নাম শোনা যাচ্ছে। বিষয়টির আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে জিএম কাদেরের বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার ওপর।
তবে নতুন করে জটিলতা দেখা দিয়েছে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের পদ নিয়েও। রাঙ্গাকে প্রথমে চিফ হুইপ ও পরে দল থেকে বহিষ্কারের পর থেকেই এ পদে কে আসছেন তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের ভেতর। শুরু থেকেই এ পদে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং ময়মনসিংহ-৮ আসনের সংসদ সদস্য ফকরুল ইমামের নাম শোনা যাচ্ছিল। গতকাল দুপুরে বনানীতে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের কার্যালয়ে এ ব্যাপারে বৈঠক করেন দলের এমপিরা। সে বৈঠকে রাঙ্গাকে সরিয়ে ফকরুল ইমামকে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান জাপার কয়েকজন নেতা। কিন্তু পরে রাতে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ হিসেবে পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদের নাম নতুন আলোচনায় এসেছে।
জাপার এক নেতা দেশ রূপান্তরকে জানান, ফকরুল ইমামকে চিফ হুইপ করার কথা শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত কাজী ফিরোজ রশীদকে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ করার অনুরোধ জানিয়ে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন জিএম কাদের।
অন্যদিকে রাঙ্গাও পাল্টা চিঠি দিয়েছেন স্পিকারকে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওরা কাজী ফিরোজ রশীদকে চিফ হুইপ করতে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছে। আমিও স্পিকারকে চিঠি দিয়েছি যে তাদের প্রস্তাব বিধিসম্মত নয়। বিরোধীদলীয় নেতা না থাকলে কীভাবে সিদ্ধান্ত হয়?’
পদের দ্বন্দ্ব এরশাদের মৃত্যুর পর থেকেই : এরশাদের মৃত্যুর পর থেকেই বিরোধীদলীয় নেতার পদ নিয়ে রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। তারা দুজনই পৃথকভাবে বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার জন্য স্পিকারকে চিঠি দেন। তখন বিরোধীদলীয় উপনেতা ছিলেন রওশন এরশাদ। স্পিকার শেষ পর্যন্ত রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা ও জিএম কাদেরকে উপনেতা করেন।
গত আগস্ট পর্যন্ত এ পদ নিয়ে পার্টিতে কোনো বিরোধ ছিল না। কিন্তু ৩০ আগস্ট ব্যাংকক থেকে হঠাৎ করেই পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করে আহ্বায়ক কমিটি করেন রওশন এরশাদ এবং সেই কমিটিতে তার অনুসারীদের রাখা হয়। এ নিয়ে বিরোধ দেখা দেয় জাপায়। এমন সিদ্ধান্তের পরদিনই তড়িঘড়ি করে জাপার সংসদীয় দলের সদস্যরা রওশনকে সরিয়ে বিরোধীদলীয় নেতার পদে জিএম কাদেরকে বসানোর সিদ্ধান্ত নেন। দলের ২৬ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে রওশন এরশাদ ও তার ছেলে সাদ এরশাদ ছাড়া বাকি ২৪ জনই এ সিদ্ধান্তে একমত হন।
বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্পিকারকে জানায় জাপার মহাসচিব মুজিবুল হকের নেতৃত্বে দলের একটি প্রতিনিধিদল। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর বিরোধী দলের চিফ হুইপ ও জাপার সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা এ বিষয়ে লিখিত আবেদন স্পিকারের কার্যালয়ে জমা দেন। পরে অবশ্য রাঙ্গা তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন এবং স্পিকারকে পাল্টা চিঠি দিয়ে জাপার সংসদীয় দলের নেওয়া সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চান। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের পদ থেকে অব্যাহতি দেয় জাপা। এমনকি দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়।
চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বনানী আবাসিক এলাকার ২০ বিঘা জমি নিয়ে একটি প্লট প্রকল্প করা হয়। প্রকল্পে বিভিন্ন আয়তনের ৫৪টি প্লট তৈরি করা হয়েছিল। জোট সরকারের শেষ সময়ে বরাদ্দ করা এসব প্লটে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
বরাদ্দের তালিকায় থাকা তৎকালীন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কেউ কেউ মারা গেছেন। তাদের ওয়ারিশানরা এখন প্লটের হস্তান্তর, বন্ধক, নামজারি, নকশা অনুমোদনসহ দাপ্তরিক কোনো কাজ করতে পারছে না।
প্রায় ১৫ বছর আগে তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকারের আমলে এসব প্লটের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। দুয়েকটি ছাড়া সব প্লটে ইমারত নির্মাণও করা হয়েছে। তবে হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে একাধিক প্লট বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করায় আটটি প্লট বাতিল করেছে রাজউক। প্লট বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের দাবি, যারা নিয়মমাফিক একটি প্লট পেয়েছে সেখানেও দাপ্তরিক কাজ বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।
রাজউকের একটি সূত্র জানায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেই এসব প্লটের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। এসব প্লটের প্রায় সবই যেহেতু বিএনপির নেতাদের নামে তাই তারা যেন বিক্রি করে সরকারবিরোধী কাজে অর্থ খরচ না করতে পারে সেই বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে। এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে রাজউক চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আনিছুর রহমান মিয়ার ব্যক্তিগত মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
যেভাবে বন্ধ হয়েছে কার্যক্রম : অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে রাজউকের পাঁচটি এলাকার দামি প্লটগুলোর দৈনন্দিন কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন উপসচিব আবদুস সালাম মিয়া ২০০৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজউক চেয়ারম্যানকে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে টঙ্গী শিল্প এলাকার ৪৮টি শিল্প প্লট, উত্তরা এলাকার ৩টি প্রাতিষ্ঠানিক প্লট, বাড্ডা পুনর্বাসন এলাকার ৫৩৪টি প্লট, বনানী এলাকার ৫০টি ও উত্তরা এলাকার ৫০টি আবাসিক প্লট এবং নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার ১টি প্রাতিষ্ঠানিক প্লটের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বলা হয়।
যাদের নামে প্লট : ঢাকার বনানী এলাকায় যাদের নামে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল তাদের ৪১ জনই বিএনপির সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য; একজন জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য ও একজন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। ৫৪ জনের বাকি ১২ জনের বেশিরভাগ বিএনপির নেতা ও বিএনপিপন্থি শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী।
বরাদ্দপ্রাপ্তরা হলেন বিএনপির সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া (প্রয়াত), সাবেক তথ্যমন্ত্রী তরিকুল ইসলাম, সাবেক মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান, সাবেক ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকী, সাবেক বাণিজ্য উপদেষ্টা বরকত উল্লা বুলু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এহছানুল হক মিলন, সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটল, সাবেক সংসদ সদস্য মজিবর রহমান সরোয়ার, রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, ইলিয়াস আলী, ফজলুল হক মিলন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আবদুল হাই, সেলিমা রহমান, আলমগীর হায়দার খান, নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু, কবির হোসেন, হাফিজ ইব্রাহিম, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আবুল হোসেন খান, খায়রুল কবির খোকন, নাদিম মোস্তফা, শহিদুল আলম তালুকদার, অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম, মজিবুর রহমান মঞ্জু, মশিউর রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, শামসুদ্দিন আহমেদ এছাক, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সাবেক মন্ত্রী হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ড. হামিদা বানু শোভা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা, বিএনপি নেতা মফিকুল হাসান তৃপ্তি, মাসুদা একরাম, এসএম হাসান রেজা, ইমতিয়াজ আহমেদ, মহিউদ্দিন খান, আহসান হাবিব ও মেহেদী হাসান, সিদ্দিকুর রহমান ও আসাদুল আশরাফ এবং সালেহ আহমেদ।
রাজউক সূত্র জানায়, রাজউকে দাখিল করা হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্লট নিয়েছে এমন কয়েকটি প্লট ইতিমধ্যে বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ।
তদন্তে দায়মুক্তি মিললেও বাস্তবে মিলছে না : বনানী এলাকায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে যারা প্লট নিয়েছেন তাদের প্লট বাতিল করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করারও সিদ্ধান্ত হয়। তদন্তের অংশ হিসেবে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত শামসুদ্দিন এছাকের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে। রাজউকের সচিব সুশান্ত চাকমা দুদক সচিবের কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেন, ‘ঢাকা মহানগরে রাজউকের (বনানী ২০ বিঘা প্লট প্রকল্প ব্যতীত) এলাকার কোথাও এছাকের নিজের, স্ত্রীর, নির্ভরশীল ছেলেমেয়ের অথবা কোনো পোষ্যের নামে আবাসিক জমি/প্লট বা ফ্ল্যাট খরিদ বা উত্তরাধিকার সূত্রে নেই।’ মৃত শামসুদ্দিন এছাকের ছেলে কবির হোসেন দীর্ঘদিন ঘুরেও নামজারি বা প্লট সংক্রান্ত কোনো কাজ করতে পারেননি। কর্মকর্তারা তাকে জানিয়ে দিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট ফাইলের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে একাধিক সূত্র দাবি করছে, বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নামে থাকা প্লটটি তার উত্তরাধিকারীর নামে নামজারির ও অন্যান্য কাজ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই প্রভাবশালী মহলের চাপে রাজউক কাজটি করেছে।
তড়িঘড়ির বরাদ্দ, দায়ী কর্মকর্তারা : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রথম বনানীর ৫৪ প্লটের কাজ বন্ধ হয়। বর্তমান সরকার প্রথম দফায় ক্ষমতায় আসার পর ‘বনানী ৫৪ প্লট’ নামের প্রকল্পের বরাদ্দের সঙ্গে জড়িত সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দাপ্তরিক ব্যবস্থা নিতে শুরু করে। পূর্ত মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সিনিয়র সহকারী সচিব খন্দকার মনোয়ার মোর্শেদ ২০১৫ সালের ২০ আগস্ট রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দিয়ে বিস্তারিত জানতে চান। চিঠিতে বলা হয়, ‘২০ বিঘার ৫৪ প্লটের বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিধিবিধান মানা হয়েছে কি না এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে কেউ প্লট নিয়েছে কি না তা জানানো হোক। কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হোক।’ এরপর মন্ত্রণালয়ের আরেক সিনিয়র সচিব শ্যামলী নবী একই বছরের ৮ অক্টোবর রাজউক চেয়ারম্যানকে আরেকটি চিঠি দেন। তাতে বলা হয়, ‘বনানী আবাসিক এলাকার বিষয়ে ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বরাদ্দের সঙ্গে ৭ জন কর্মকর্তা জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার রুজু করার বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানানো হোক।’ রাজউক ও পূর্ত মন্ত্রণালয়ের তদন্তে বরাদ্দের সঙ্গে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ১১ জন ও কর্মকর্তা-কর্মচারী পর্যায়ের ৬ জনের নাম আসে। যাদের এসেছে তারা হলেন, সাবেক চেয়ারম্যান মো. শহীদ আলম, সদস্য মো. আজিজুল ইসলাম, মো. নাসির উদ্দিন, মো. রেজাউল করিম তরফদার, মীর মোশাররফ হোসেন, এসএম জাফর উল্লাহ, প্রধান প্রকৌশলী এমদাদুল ইসলাম, সচিব মো. আতাউল হক মোল্লা, পরিচালক মীর মোশারফ হোসেন, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. জহিরুল হক ও উপপরিচালক মো. শওকত। সহকারী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম, মো. মিজানুর রহমান, এমদাদ আলী বিশ^াস, মো. জামাল উদ্দিন ও তত্ত্বাবধায়ক জাহানারা বেগমের নামও উঠে আসে। প্রায় কোনো কর্মকর্তাই এখন রাজউকে নেই। কেউ কেউ চাকরিজীবন শেষ করেছেন। কোনো কোনো কর্মকর্তা মারা গেছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। দুদক গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কবির হোসেনের প্লটটি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
মিথ্যা হলফনামায় বাতিল ৮ প্লট : রাজউকের প্রচলিত বিধান অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা তার স্ত্রী অথবা স্বামী, সন্তান বা পোষ্য যদি রাজউক থেকে ইতিপূর্বে প্লট বরাদ্দ পেয়ে থাকেন তাহলে দ্বিতীয়বার প্লট পাবেন না। বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্লটের আবেদনকারীদের কাছ থেকে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে অঙ্গীকারনামা (হলফনামা) নিয়ে থাকে কর্তৃপক্ষ। রাজউকের বনানী এলাকায় চারদলীয় জোট সরকারের শেষ সময়ে তড়িঘড়ি প্লট-বরাদ্দ করায় হলফনামায় অনেকেই মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। যারা তথ্য গোপন করেছেন তাদের খুঁজে বের করে প্লট বাতিল করতে শুরু করেছে রাজউক। রাজউকের এমআইএস সেল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সহায়তায় কাজটি করছে। ইতিমধ্যে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপনের বনানীর ১/সি রোডের ৩ নম্বর প্লট, সাবেক সংসদ সদস্য সামসুজ্জোহা খানের ১/বি রোডের ৫ নম্বর প্লট, পেশাজীবীর তালিকায় বরাদ্দ পাওয়া শিক্ষক সাবিনা শারমিনের বনানী ১/এ রোডের ৪ নম্বর প্লট, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমানের প্লট, সাবেক সংসদ সদস্য আবুল খায়ের ভূঁইয়ার প্লট, বরিশালের সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ারের বনানী ২ নম্বর রোডের ৭ নম্বর প্লট, বিএনপি নেতা বরকত উল্লা বুলুর প্লট, সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর প্লট ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদের প্লট বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব প্লটের বেশিরভাগে বাড়িঘর তৈরি করেছে সংশ্লিষ্টরা। আবার কোনো কোনো প্লট হস্তান্তর করে ফেলেছে তারা। ফলে নথিপত্রে প্লট বরাদ্দ বাতিল হলেও দখল বুঝে নিতে পারেনি রাজউক। কিছু প্লটে মামলাসংক্রান্ত জটিলতাও আছে।
রাজউকের সদস্য (এস্টেট) মো. নূরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এসব প্লটের কাজকর্ম বন্ধ আছে। এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।’
পরিচালক (এস্টেট) মো. কামরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি তিন চার দিন হলো এসেছি। সবকিছু বুঝে উঠতে সময় লাগবে। ফাইলের সঙ্গে জড়িত লোকজনের সঙ্গে খুব বেশি সখ্য হয়নি। তাই কোনো তথ্য দিয়ে আপনাকে সহয়তা করতে পারছি না।’
এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি কোথাও যেন পানি না জমে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে ডেঙ্গু নিয়ে আলোচনার সময় এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
বর্ষায় মশাবাহিত এ রোগটি দেখা গেলেও এবার সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে রোগটির প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে অক্টোবরে। প্রায় প্রতিদিনই ২ থেকে ৫ জনের মৃত্যুর কথা জানাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আজ (গতকাল) ডেঙ্গু নিয়ে বিশেষভাবে আলোচনা হয়েছে। ২০১৯ সালে ১ লাখ ডেঙ্গু রোগী ছিল। এবার এরই মধ্যে ৩৬ হাজার লোক আক্রান্ত হয়েছে। ঢাকায় ২৩ হাজার, চট্টগ্রামে ৪ হাজার, খুলনায় ১ হাজার ৬০০, সিলেটে সব থেকে কম ৫৩ জন।
তিনি জানান, এ বছর ইতিমধ্যে ১৩৬ জন মারা গেছে ডেঙ্গুতে। তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশ নারী; আর পুরুষ ৪০ শতাংশ। সে জন্য এটা সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদের পক্ষ থেকে, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীও অনুরোধ করেছেন, সেটা হলো সবাই যেন বাড়িঘর ক্লিন রাখে এবং বিশেষ করে পানি যেন না জমতে পারে।
সিটি করপোরেশনসহ সবাইকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিশেষ করে সিভিল এভিয়েশনকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বিমানবন্দর এলাকায় স্প্রে করার জন্য। তারা সপ্তাহে দুদিন স্প্রে করতেন; এখন বলা হয়েছে, প্রতিদিনই স্প্রে করার জন্য। সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সমন্বয় করে প্রচারণা চালিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
২০৩০ সাল পর্যন্ত কাটা যাবে না : জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সংরক্ষিত ও প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের গাছ কাটার ওপর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সামাজিক বনায়নের আওতায় যে বন রয়েছে, সেগুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।
জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সংরক্ষিত ও প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের গাছ কাটার ওপর চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা ছিল। এর আগে পাঁচ বছর করে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও এবার মন্ত্রিসভা আট বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়াল।
৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান দিবস : সরকার ৪ নভেম্বরকে জাতীয় সংবিধান দিবস ঘোষণা করেছে। ফলে প্রতি বছর ৪ নভেম্বর এ দিবসটি পালিত হবে। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর জাতীয় সংসদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে সংবিধান অনুমোদন দেওয়া হয়। এ কারণেই এখন থেকে প্রতি বছর ৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান দিবস পালন করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ ও মুখ্য সচিবের বাড়িতে হচ্ছে না সুইমিংপুল : মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের জন্য নির্মাণাধীন বাড়িতে সুইমিংপুল করার বিষয়টি নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। আলাদা সুইমিংপুল না হলেও সবার জন্য কমন কোনো সুইমিংপুল নির্মাণ করা যায় কি না, সে বিষয়ে ভেবে দেখা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সেখানে যাদের বাড়ি বরাদ্দ আছে, তারা ও তাদের সন্তানরা ওখানে সাঁতার কাটার সুযোগ পাবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের জন্য রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন এলাকায় ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে পাশাপাশি নির্মিত হবে দুটি বাসভবন। প্রকল্পের পরিকল্পনা অনুসারে প্রতিটি ভবন হবে তিনতলা। এর মধ্যে প্রতিটি বাসভবনে সুইমিংপুল নির্মাণের কথা ছিল। বিশ^ব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সরকার দেশবাসীকে কৃচ্ছসাধনের পরামর্শ দিচ্ছে। এমন সময় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে এ নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের বাড়িগুলো খুবই পুরোনো। এগুলো মুখ্য সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের বাড়ির বিষয় না, সব পুরনো বাড়ি আস্তে আস্তে ভেঙে ফেলা হবে। সংসদের উপনেতার বাড়ি এরই মধ্যে ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এগুলো সেই ১৯৪০-১৯৪৫ সালের বাড়ি। বাড়িগুলো একটা একটা করে সব নতুন করে তৈরি করা হবে।
গতকালের বৈঠকে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (২০২৩-২০৫০) অনুমোদন করা হয়েছে।
বিশ্বকাপ, বাংলাদেশ আর অ্যাডিলেড মানেই যেন রুবেল হোসেনের হাত থেকে বের হওয়া দুটো স্বপ্নের ডেলিভারি। ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে এখানেই তো ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এক অর্থে বলা যায়, বাংলাদেশের কাছে বিশ্বকাপে সেই হারই বদলে দিয়েছিল ইংল্যান্ডকে। যার ফল ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপেই ইংল্যান্ডের শিরোপা জয়।
সেই একই দল নিয়েই ইংল্যান্ড স্রেফ মানসিকতা বদলে হয়ে গেছে রোমাঞ্চকর এক দল। বাংলাদেশ দল অবশ্য গত সাত বছরে এগিয়ে-পিছিয়েছে অনেকটাই।
বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে মেকি সাফল্য উদযাপনের আড়ালে ঢাকা পড়ছে বড় দলের বিপক্ষে দুর্বলতা। এবারের আসরেও দুটো জয় মূলপর্বে, যদিও প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস এবং জিম্বাবুয়ে। জয়ের ব্যবধানও সামান্য, ৯ রানে এবং ৩ রানে। এত কিছুর পর খেলাটা অ্যাডিলেডে আর প্রতিপক্ষ ভারত বলেই কি খানিকটা আশা?
ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবশেষ দেখা মানেই তো বুকভরা হাহাকারের গল্প। ২০১৬ সালে বেঙ্গালুরুতে দুই ভায়রা ভাই মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ মিলে যেভাবে জেতা ম্যাচটা হাতছাড়া করলেন, সেই আক্ষেপ বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তদের মন থেকে মুছবে না। বছর দুয়েক পর নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে আবারও হৃদয়ভাঙা হার ভারতের কাছে। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ খেলে খেলে হাত পাকানো ভারতীয় ক্রিকেটারদেরও যে এতটা চাপের মুখে ফেলতে পারে বাংলাদেশ, সেটাই তো মাঝে মাঝে মনে হয় অবিশ্বাস্য!
আগের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে খানিকটা ব্যাকফুটে ভারত। এই সুযোগটাই কি নেবেন সাকিব আল হাসান? কাগজে-কলমে বাংলাদেশের সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ এখনো আছে। ভারত আর পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটো ম্যাচে জিতলেই বাংলাদেশ চলে যাবে শেষ চারে। যদিও বাস্তবতার অঙ্ক অনেক কঠিন। নেদারল্যান্ডস আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জিততেই ঘাম ছুটে গেছে বাংলাদেশের। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পড়েছে মুখ থুবড়ে। বিশ্বকাপে আসার আগে ত্রিদেশীয় সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা দুটো টি-টোয়েন্টিতেই হেরেছে। বাকি থাকল ভারত, ১১ বার মুখোমুখি হয়ে একটি মাত্র জয় ২০১৯ সালে দিল্লিতে। পরিসংখ্যান, সামর্থ্য সব কিছুতেই পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ কেবল এগিয়ে আছে একটি জায়গায়। মুখে খই ফোটাতে।
আজ যেমন অ্যাডিলেডে অনুশীলন বাতিল করেছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিনও অনুশীলনে এসেছিলেন শুধু নুরুল হাসান সোহান আর ইয়াসির রাব্বি। অধিনায়ক সাকিবের দর্শন, পরীক্ষার আগের রাতে বেশি পড়লে উল্টো ক্ষতি হয়! সেজন্যই বিশ্রামে ভ্রমণ ক্লান্তি দূর করে চনমনে হয়ে মাঠেই নামার পরিকল্পনা। অন্যদিকে ভারত রেখেছে ঐচ্ছিক অনুশীলন।
ভারতের উইকেটরক্ষক দীনেশ কার্তিক পিঠের চোটের কারণে বাংলাদেশের বিপক্ষে একাদশে নাও থাকতে পারেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই তিনি মাঠ ছাড়েন ম্যাচে মাঝপথে। তার বদলে দলে ঢুকতে পারেন ঋষভ পান্থ।
অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপ খেলার জন্য আরব আমিরাতে প্রস্তুতির পর নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন, হোবার্ট, সিডনি, ব্রিসবেন হয়ে অ্যাডিলেডে বাংলাদেশ। এখানেই শেষ দুটো ম্যাচ। জিতলে সেমিফাইনালে, হারলে দেশের বিমানে।
কৃষ্ণসাগরের নৌবহরে ব্যাপক ড্রোন হামলার অভিযোগ তুলে ক্রিমিয়ার সেভাস্তোপোল বন্দর দিয়ে খাদ্যশস্য রপ্তানি চুক্তি থেকে সরে এসেছে রাশিয়া। আর হামলার জন্য দায়ী করেছে ইউক্রেন ও যুক্তরাজ্যকে। রাশিয়ার এই সিদ্ধান্ত বিশ্বকে নতুন করে খাদ্যঝুঁকিতে ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অবশ্য চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের দিনই রাশিয়া ঘোষণা দিয়েছে, গরিব দেশগুলোতে তারা লাখ লাখ টন খাদ্য সহায়তা দেবে। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মনে করছেন, চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে রাশিয়া আফ্রিকা ও এশিয়ায় বড় ধরনের দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তার মতে, রাশিয়ার এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ, মিসর, আলজেরিয়া, ইয়েমেন, ভিয়েতনামের মতো অনেক দেশের মানুষের খাদ্যপ্রাপ্তি অনিশ্চয়তায় ফেলবে।
গত ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানি বন্ধ ছিল। জুলাই মাসে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ চুক্তি করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। চুক্তির পর ৮০ লাখ টন শস্য রপ্তানি করেছে ইউক্রেন। তবে শনিবার সকালে সেভাস্তোপোল বন্দরে নৌবহরে ড্রোন হামলার পর চুক্তিটি থেকে সরে গেছে রাশিয়া।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবার বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, গত রবিবার শস্যবাহী কোনো জাহাজ ইউক্রেনের বন্দর ছেড়ে যায়নি। কোনো জাহাজ বন্দরে প্রবেশ করেনি। তার অভিযোগ, মস্কো আবারও মানুষের ক্ষুধা নিয়ে খেলছে। আর দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, আফ্রিকা ও এশিয়াকে নতুন করে বড় আকারের দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে ফেলতে মস্কো ইচ্ছাকৃতভাবে এমনটা করছে। এ ধরনের তৎপরতা রুখে দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য হিলের প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত শনিবার দেওয়া বক্তব্যে জেলেনস্কি বলেন, চুক্তি থেকে রুশদের সরে আসাটা প্রত্যাশিত ছিল। এই সিদ্ধান্ত তাদের আজকের নয়। গত সেপ্টেম্বরে যখন তারা ইউক্রেনে উৎপাদিত খাদ্যশস্য বহনকারী জাহাজ আটকে দিয়েছিল তখনই তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল। জেলেনস্কির ভাষ্য, রাশিয়ার এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ, মিসর, আলজেরিয়া, ইয়েমেন, ভিয়েতনামের মতো অনেক দেশের মানুষের খাদ্যপ্রাপ্তি ঝুঁকিতে ফেলবে।
চুক্তি স্থগিত করায় রাশিয়ার সমালোচনা করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, রাশিয়ার এমন উদ্যোগ আপত্তিকর। এর ফলে বিশ্বে খাদ্যসংকট বাড়বে। বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, রাশিয়া খাদ্যশস্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত বদলাতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বলেছে, রাশিয়ার এমন সিদ্ধান্ত বিশ্বকে নতুন করে খাদ্যসংকটের মুখে ফেলবে। তাই মস্কোর প্রতি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানাচ্ছে ইইউ। একই আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেন, শস্য রপ্তানি চুক্তি স্থগিতের মতো সংকটকালে মানবিক কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করে, এমন কোনো কার্যক্রম থেকে সব পক্ষের বিরত থাকা উচিত।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতির মাঠে সরব হয়েছে বিএনপি। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি বিগত তিনটি নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীনদের মামলা-হামলাসহ নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এখনো অনেক নেতাকর্মী নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি। এসব মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে সরকার হটানোর আন্দোলন করছে বিএনপি। দলটির নেতাদের মধ্যে কেউ জামিনে আছেন, কেউ আছেন জামিন ছাড়াই। দিনে দিনে আন্দোলনের মাত্রা বাড়ানোর চেষ্টা করছে সরকারবিরোধীরা। এতে সরকারের পক্ষ থেকেও সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
সরকারের শীর্ষ মহলের কাছে তথ্য এসেছে, আন্দোলনের নামে দেশে বড় ধরনের নাশকতামূলক কর্মকা- চালানোর পাঁয়তারা চলছে। আর এসবের পেছনে সবধরনের কলকাঠি নাড়ছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নাশকতা মামলার আসামিরা। এসব তথ্য পেয়ে কঠোর হার্ডলাইনে যাচ্ছে সরকারের হাইকমা-। ইতিমধ্যে নাশকতা মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছে। নির্দেশনা পেয়ে পুরনো মামলার পাশাপাশি নতুন করে মামলা করারও কৌশল নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ঢাকার মিরপুরে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বিএনপি ও ছাত্রদলের ৫ নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুরনো ও নতুন মামলা থাকায় ঢাকায় বিএনপি ও ছাত্রদলের ছয় নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন।
নির্দেশনা পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর কাজ শুরু করেছে। গত শনিবার পুলিশের সবকটি ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের বার্তা দেওয়া হয়েছে। বার্তায় নাশকতা মামলার আসামিদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বার্তা পেয়ে নড়েচড়ে বসেছেন পুলিশের কর্তাব্যক্তিরা। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামের যেসব নেতাকর্মীর নামে নাশকতা মামলা আছে তাদের তালিকা তৈরি শুরু হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপারদের পরামর্শে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) ওই তালিকা করছেন।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারবিরোধীদের নিয়ে কথা বলেন। বিশেষ করে নাশকতামূলক কর্মকা-ের বিষয়ে কথা বলেন। যারা খুনের সঙ্গে জড়িত, অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত, আমি জানি তারা অনেকে লুকিয়ে ছিল। এখন বিএনপি মাঠে নেমেছে, তারাও মাঠে নামবে। এসব আসামিকে কিন্তু ধরতে হবে। তাদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। কারণ তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। জীবন্ত মানুষ হত্যা করেছে। চোখ-হাত কেটেছে, মানুষকে নির্যাতন করেছে।
তাদের ছাড় নেই। আইন তার আপন গতিতে চলবে। আইন সবার জন্য সমান। এটা তাদের মাথায় রাখতে হবে। রাজনীতি করবে রাজনীতিক হিসেবে। কিন্তু সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী রাজনীতি এই দেশে চলবে না। এটা মাথায় রাখতে হবে।
এসব নির্দেশনা পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়। বার্তা পেয়ে এসপি ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তালিকা করার কাজ শুরু করেছেন। মাসখানেকের মধ্যে তালিকার কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, দেড় বছরের কম সময়ে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইভিএমসহ নানা ইস্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত। বিএনপির নেতাকর্মীরা দেশের বিভিন্নস্থানে বিক্ষোভ করছে। আবার বিএনপির যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে আওয়ামী লীগও মাঠে নেমেছে। এই নিয়ে সংঘর্ষও হয়েছে দেশের বিভিন্নস্থানে। কোনো কোনো জেলায় নতুন করে মামলা হচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া পুরনো মামলাগুলো সক্রিয় করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জামায়াতের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ উঠেছে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, যারা বিশৃঙ্খলা করবে তাদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আন্দোলনের নামে বিএনপি বা অন্য কোনো দল আইনের ব্যত্যয় ঘটালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা তাদের মেনে চলতে হবে। তারা যদি রাস্তা অবরোধ করেন কিংবা ভাঙচুর করেন, জনজীবনে দুঃসহ অবস্থা তৈরি করেন তাহলে আমাদের করার কিছু আছে। যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে অথচ জামিনে নেই তাহলে আইন অনুযায়ী কাজ করবে পুলিশ। তবে অহেতুক কাউকে হয়রানি করা হবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, দিনে দিনে বিএনপিসহ অন্য দলগুলোর আগ্রাসন মনোভাব দেখা যাচ্ছে। তারা আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছে। বিশেষ করে নাশকতা মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা চালাচ্ছে। এদের বেশিরভাগ আসামি বিএনপি ও জামায়াত নেতা। তাদের মধ্যে আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে কলকাঠি নাড়ছেন জামায়াত নেতারা। ওই পুলিশ কর্মকর্তারা আরও বলেন, নাশকতা মামলার আসামিদের মধ্যে কেউ কেউ জামিনে আছেন। আবার কারোর জামিনে মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন না। এই জন্য তাদের তালিকা করার নির্দেশ দেওয়া আছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুরনো মামলার পাশাপাশি নতুন মামলা করারও পরিকল্পনা আছে। বিশৃঙ্খলা, পুলিশের ওপর হামলা ও রাষ্ট্রের ক্ষতি করলে নতুন করে মামলা হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এই বিষয়ে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে বলেন, নাশকতা মামলার আসামিদের বিষয়ে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বিশেষ বার্তা এসেছে। বিশৃঙ্খলা করলে পুরনো মামলার পাশাপাশি নতুন মামলা হবে। তারা আরও বলেন, বিএনপির অনেক নেতাকর্মী আছেন তারা জামিন না নিয়েই রাজপথ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের তালিকা করা হচ্ছে। জেলা পুলিশের পাশাপাশি থানা পুলিশও এই নিয়ে কাজ করছে। বিএনপি নেতারা গ্রেপ্তার হলেও দলের শীর্ষ নেতারা অনেকটা চাপে পড়বেন কোনো সন্দেহ নেই। তাদের আর বেশি বাড়তে দেওয়া হবে না।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরের শাহআলী থানা পুলিশের ওপর হামলা করার অভিযোগে বিএনপি ও ছাত্রদলের অন্তত অর্ধশত নেতার বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। ওই মামলায় শুক্রবার রাতে শাহআলী থানাধীন ৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রায়হান ইসলাম, একই ওয়ার্ডের বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদীন ও মিরনসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাছাড়া ওইদিন সন্ধ্যায় গুলশান ২ নম্বর থেকে নাশকতা মামলার আসামি ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হুমায়ুন কবির রওশনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১০টির মতো মামলা আছে।
শাহআলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে জানান, নাশকতা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় হুমায়ুন কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যরা কিছুদিন আগে পুলিশের ওপর হামলা করায় থানায় মামলা হয়েছে। যারা অপরাধ করবে তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
বেলজিয়ামের নতুন অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে সম্মানতি বোধ করছেন ম্যানচেস্টার সিটি তারকা কেভিন ডি ব্রুইনা।
গত বছর বিশ্বকাপের পর রিয়াল মাদ্রিদ তারকা এডেন হ্যাজার্ড জাতীয় দলকে বিদায় জানান। বেলজিয়াম কোচ ডোমেনিকো টেডেসকো প্লেমেকার ডি ব্রুইনাকে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেন। বিশ্বকাপের পর বেলজিয়ামের কোচের পদে রবার্তো মার্টিনেজের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন টেডেসকো।
গত জানুয়ারিতে ৩২ বছরে পা রেখেছেন ব্রুইনা। আরটিএল-টিভিআই টেলিভিশনে বেলজিয়ামের নেতৃত্ব পাওয়া নিয়ে ডি ব্রুইনা বলেছেন, ‘এভাবে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারা সত্যিই সম্মানের। আমার বয়স প্রায় ৩২ হয়ে গেছে। আমি কখনই আন্তর্জাতিক অবসরের চিন্তা করিনি। আমি বিশ্বাস করি এখনো দলকে কিছু দেবার সক্ষমতা আমার আছে। এই সুযোগে তরুণদেরও সহযোগিতা করতে চাই।’
সুইডেনের বিরুদ্ধে শুক্রবার ইউরো বাছাইপর্বে অধিনায়ক হিসেবে ডি ব্রুইনার অভিষেক হতে যাচ্ছে। মাদ্রিদ গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া ও চেলসি রোমেলু লুকাকু ডি ব্রুইনার সহ-অধিনায়ক হিসেবে কাজ করবেন।
কোনো জেলায় কেউ গৃহহীন ও ভূমিহীন রয়েছে কি না তা জানতে তালিকা তৈরি করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্রত্যেক ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করা আমার সরকারের লক্ষ্য হওয়ায় আমি প্রত্যেককে বাড়ি দেব। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই প্রতিটি মানুষ বাড়ি, আশ্রয় এবং জীবিকার সুযোগ পাবে। তারা আর সমাজের বোঝা হয়ে থাকবে না। আমরা চাই প্রত্যেকে নিজের পায়ে দাঁড়াবে এবং যথাযথ সম্মানের সঙ্গে বসবাস করবে।’
গতকাল প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের চতুর্থ ধাপে বাড়ি হস্তান্তরের সময় এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি সাতটি জেলা ও ১৫৯টি উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেন। জেলাগুলো হলো মাদারীপুর, গাজীপুর, নরসিংদী, জয়পুরহাট, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা।
এর আগে তিনি পঞ্চগড় ও মাগুরার সব উপজেলাসহ ৫২টি উপজেলাকে গৃহহীন-ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেন। তিনি গতকাল ৯টি জেলা এবং ২১১টি উপজেলা গৃহহীন-ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেন। খবর বাসসের।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভূমিহীনদের ঘর দেওয়ার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো দুস্থ মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। জাতির পিতা দেশকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত করে বাংলাদেশের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে একটি উন্নত ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন দিতে চেয়েছিলেন। যার জন্য তার সরকার অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না বলে তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে গৃহহীনদের জন্য পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু করেন। বঙ্গবন্ধুর পদচিহ্ন অনুসরণ করে তিনি বলেন, তার সরকার ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের বাড়িঘর ও জমির মালিকানা দেওয়ার উদ্যোগ নেয়।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া। অনুষ্ঠানে বাড়িপ্রাপ্তদের পরিবর্তিত জীবনযাত্রার ওপর একটি ভিডিও-প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সরকার প্রধান বলেন, ‘কেউ ঠিকানা ছাড়া থাকবে না। আমরা তাদের শুধু ঘরই দিইনি, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থাও করে দিয়েছি। তাদের জীবিকার জন্য ঋণও দিয়েছি। তারা এখন দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।’ তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা ঘোষণা করেছিলেন, একজন ব্যক্তি ১০০ বিঘা জমির অধিকারী হতে পারবে এবং এর অতিরিক্ত পরিমাণ জমি কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
বাংলাদেশকে বিমান যোগাযোগের প্রাণকেন্দ্র গড়তে রোডম্যাপ জরুরি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভৌগোলিক-কৌশলগত সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশকে বিমান যোগাযোগের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। গতকাল ঢাকায় প্রথম অ্যাভিয়েশন সামিটের উদ্বোধন অধিবেশনে দেওয়া এক ভিডিও ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সহযোগিতায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ অ্যাভিয়েশন সামিট-২০২৩’-এর আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী এই শীর্ষ সম্মেলনকে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। কারণ, দেশটির এই অঞ্চলে একটি বিমান যোগাযোগের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হওয়ার আকাক্সক্ষা রয়েছে।
বাংলাদেশকে বিমান যোগাযোগের একটি কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে শেখ হাসিনা যাত্রী ও মালামাল উভয়ের জন্যই একটি উন্নত ও টেকসই বাজার সৃষ্টির পাশাপাশি সহায়ক পরিবেশ তৈরির জন্য সরকারি সংস্থা, এয়ারলাইনস ও সংশ্লিষ্ট অন্য সব পক্ষকে যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘সরকার ই-ভিসা সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশে ব্যবসা করতে ও পর্যটনে আসা যাত্রীদের সুবিধা দেবে ও ভিসা প্রক্রিয়া দ্রুত হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের যুবকদের অবশ্যই পাইলট, বিমান প্রকৌশলী, মেকানিক, ক্রু ও আরও অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ থাকতে হবে।’ তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, তার সরকারের প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি দেশের বিমানশিল্পে লোকবলের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, এই বিমানশিল্প এরই মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উদাহরণ সৃষ্টির মাধ্যমে নেতৃত্ব দিতে হবে।
সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এম মাহবুব আলী ও ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলী বক্তব্য দেন।
চতুর্থ পর্বে মাস্টারদা সূর্য সেনকে নিয়ে লিখেছেন ইসমত শিল্পী
সূর্য সেনের স্বাধীনতার স্বপ্ন
স্বাধীনতার মাস মার্চেই বিপ্লবী সূর্য সেনের জন্ম। ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ তিনি চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
মাস্টারদা সূর্য সেন ছিলেন বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের একজন অন্যতম নেতা এবং ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি’র প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। ১৯৩০ সালে তিনি চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন কওে সেখানে বিপ্লবী সরকার গঠন করেন। ১৯৩৩ সালে তাকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিচারে তাঁর ফাঁসি হয়।
বালক বয়সেই সূর্য সেন বুঝতে পেরেছিলেন যে, সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপার থেকে ছুটে আসা ইংরেজদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতেই হবে। জাস্টিস কিংসফোর্ডকে হত্যাচেষ্টার জন্য ক্ষুদিরামের ফাঁসি সূর্য সেনের হৃদয় ও মনকে দারুণভাবে আলোড়িত করে। কলেজে পড়ার সময়ই ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য তিনি বিপ্লবী সংগ্রামে যোগ দেন। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে পড়ার সময় শিক্ষক সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী তাকে বিপ্লবী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করেন। ইংরেজদের শোষণ-নির্যাতন থেকে মুক্তির পথ খুঁজে বের করার জন্য সূর্য সেনের হৃদয়-মন তৈরি হয়। তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দেশ থেকে ইংরেজ তাড়ানোর অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা নেন।
সে সময় চট্টগ্রামে একটি গোপন বিপ্লবী দল ছিল। ১৯১৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে এই বিপ্লবী দলের কয়েকজন ছাড়া প্রায় সবাইকে গ্রেপ্তার করে সরকার জেল দেয়। বিপ্লবের জন্য স্বচ্ছ চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধি ও মেধা অন্যদের তুলনায় বেশি থাকায় তিনি কিছু দিনের মধ্যেই দলের একজন নেতা হয়ে ওঠেন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন অস্ত্রাগার লুণ্ঠন তার বুদ্ধি-পরামর্শ-নেতৃত্বেই সংঘটিত হয়েছিল।
সূর্য সেনের বিপ্লবী কর্মকাণ্ড, দুঃসাহসী অভিযান, সঠিক নেতৃত্ব¡ এই উপমহাদেশের মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিল। দেশের তরুণ ও যুবশক্তি তার আত্মাহুতিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে মরণপণ স্বাধীনতা সংগ্রামে দলে দলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সূর্য সেনের বাহিনী কয়েক দিনের জন্য ব্রিটিশ শাসনকে চট্টগ্রাম এলাকা থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। সূর্য সেনের অন্যতম সাথী বিপ্লবী অনন্ত সিংহের ভাষায়, ‘কে জানত যে আত্মজিজ্ঞাসায় মগ্ন সেই নিরীহ শিক্ষকের স্থির প্রশান্ত চোখ দুটি একদিন জ্বলে উঠে মাতৃভূমির দ্বিশতাব্দীব্যাপী অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে উদ্যত হবে? ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ দমনের জন্য বর্বর অমানুষিক অত্যাচারের প্রতিশোধ, জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ! কে জানত সেই শীর্ণ বাহু ও ততোধিক শীর্ণ পদযুগলের অধিকারী একদিন সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ রাজশক্তির বৃহত্তম আয়োজনকে ব্যর্থ করে তার সব ক্ষমতাকে উপহাস করে বছরের পর বছর চট্টগ্রামের গ্রামে গ্রামে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে তুলবে?’
সূর্য সেন পরে ছাত্রদের মাঝে বিপ্লবের মন্ত্র ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য শিক্ষকতার পেশা গ্রহণ করেন। চরিত্রের মাধুর্য দিয়ে বুঝিয়ে-সুজিয়ে দলে দলে যুবকদের তার বিপ্লবী দলে টেনে আনেন। তিনি দেশপ্রেমের শিখাকে প্রত্যেকের অন্তরে জ্বেলে দেন। ছাত্রদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মেলামেশার কারণে নিজের স্কুল ও শহরের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ছাত্ররা একান্ত আপনজনের মতো তাকে ‘মাস্টারদা’ বলে ডাকতে শুরু করে।
১৯২৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে মাস্টারদার স্ত্রী পুষ্পকুন্তলা হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারা যান। এ সময় মাস্টারদা জেলে ছিলেন। পরে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান।
১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে মাত্র কয়েকজন যুবক রাত সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম পাহাড়ের ওপর অবস্থিত অস্ত্রাগারটি আকস্মিকভাবে আক্রমণ করে দখল করে নেন এবং সব অস্ত্র লুণ্ঠন ও ধ্বংস করে ফেলেন। সূর্য সেন সেই রাতে ঘোষণা করেন, চট্টগ্রাম এই মুহূর্তে দুইশ বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করেছে। এই মুহূর্তে চট্টগ্রাম স্বাধীন।
মাস্টারদার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম শহর ৪৮ ঘণ্টার জন্য ইংরেজ শাসনমুক্ত ও স্বাধীন ছিল। জালালাবাদ পাহাড়ে বিপ্লবীদের মুখোমুখি সংঘর্ষ শেষ হওয়ার পরও তারা টানা তিন বছর গেরিলা যুদ্ধ চালিয়েছিলেন। ব্রিটিশ সৈন্যদের দৃষ্টি থেকে মাস্টারদাকে আড়ালে রাখার উদ্দেশ্যেই বিপ্লবীরা এই যুদ্ধ চালিয়েছিলেন।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনাধীন পরাধীন ভারতের স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীরা। সূর্য সেন ছাড়াও এই দলে ছিলেন গণেশ ঘোষ, লোকনাথ বল, নির্মল সেন, অনন্ত সিং, অপূর্ব সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, নরেশ রায়, ত্রিপুরা সেনগুপ্ত, বিধুভূষণ ভট্টাচার্য, শশাঙ্ক শেখর দত্ত, অর্ধেন্দু দস্তিদার, হরিগোপাল বল, প্রভাসচন্দ্র বল, তারকেশ্বর দস্তিদার, মতিলাল কানুনগো, জীবন ঘোষাল, আনন্দ গুপ্ত, নির্মল লালা, জিতেন দাসগুপ্ত, মধুসূদন দত্ত, পুলিনচন্দ্র ঘোষ, সুবোধ দে, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এবং কল্পনা দত্ত। ছিলেন সুবোধ রায় নামের এক ১৪ বছরের বালক।
বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তারের হাত থেকে অলৌকিকভাবে রক্ষা পেয়েছেন মাস্টারদা। চট্টগ্রামের কাছেই গইরালা গ্রামে এক বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন মাস্টারদা। এক জ্ঞাতির বিশ্বাসঘাতকতায় ব্রিটিশ সৈন্যরা তার সন্ধান পেয়ে যায়। মাস্টারদা গ্রেপ্তার হন ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। ১৯৩৪ সালে ফাঁসির আগেই স্বাধীনতার স্বপ্নের কথা বলেছিলেন সূর্য সেন। ১৯৩৪ সালে ১২ জানুয়ারি ভোর ১২.৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর হয়। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে সঙ্গীদের উদ্দেশে তিনি লিখে যান, ‘আমি তোমাদের জন্য রেখে গেলাম মাত্র একটি জিনিস, তা হলো আমার একটি সোনালি স্বপ্ন। স্বাধীনতার স্বপ্ন। প্রিয় কমরেডস, এগিয়ে চলো, সাফল্য আমাদের সুনিশ্চিত।’
রাজধানীর মালিবাগ রেলগেটে ট্রেনের সঙ্গে বাসের সংঘর্ষের ঘটনায় ২ ঘণ্টা পর চালু হয়েছে রেল যোগাযোগ।
ইঞ্জিন পরীক্ষার পর পঞ্চগড়গামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাত ১১টার দিকে ছেড়ে যায়। এতে সড়কের ২ পাশের যান চলাচলও স্বাভাবিক হয়ে আসতে থাকে।
বুধবার রাত ৯টার পর মালিবাগ লেভেল ক্রসিংয়ে পঞ্চগড়গামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনটি সোহাগ পরিবহনের একটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাসে ধাক্কা দেয়। এতে বাসের সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, এ ঘটনায় তিন জন আহত হন। দুর্ঘটনার সময় বাসটিতে কোনো যাত্রী ছিল না। ট্রেনের গতিও কম ছিল।
মাদারীপুরের শিবচরে সড়ক দুর্ঘটনার কামরুজ্জামান ফকির (৩৫) নামে এক পল্লি চিকিৎসক নিহত হয়েছেন। এ সময় জাহিদ (২৮) নামে আরেকজন আহত হন। আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকে উপজেলার শেখপুর বাজারসংলগ্ন মির্জারচর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত কামরুজ্জামান মাদারীপুর সদর উপজেলার আদিত্যপুর গ্রামের আবদুর রব ফকিরের ছেলে।
হাসপাতালে, ফায়ার সার্ভিস ও নিহতের আত্মীয় সূত্রে জানা যায়, ভোরে কামরুজ্জামান তার আপন ভায়রা জাহিদকে নিয়ে তাবলিগ জামাতে অংশ নিতে গাজীপুরের টঙ্গী যাওয়ার উদ্দেশে শিবচরের পাঁচ্চর বাসস্ট্যান্ডের দিকে রওনা হন। পাঁচ্চর থেকে বাসযোগে টঙ্গী যাওয়ার কথা ছিল তার। এ সময় তার মোটরসাইকেলটি শিবচর-মাদারীপুর আঞ্চলিক সড়কে শিবচরের শেখপুর মির্জারচর নামক স্থানে আসলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মোটরসাইকেল থাকা দুজন গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা কামরুজ্জামানকে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। আহত জাহিদকে উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়।
শিবচর ফায়ার সার্ভিসের লিডার তরুনুর রশিদ খান বলেন, ভোরে আমরা খবর পেয় ঘটনাস্থলে যাই। সেখান থেকে আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। পরে ডাক্তার তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।
শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, সকালে রোগীকে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন উদ্ধার করে এখানে নিয়ে আসে। পরে আমরা পরীক্ষা করে দেখতে পাই হাসপাতালে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
একাত্তরের যুদ্ধে রবীন্দ্রনাথ-নজরুল, বিশেষ করে নজরুল ছিলেন বাঙালির সংগ্রামী চৈতন্যের অগ্নিস্রোত। কথা না-থাকলেও সেই দুর্বার সময়ে বিষণœতার কবি জীবনানন্দ দাশ ওই অগ্নিবলয়ের ভেতর ঢুকে গেলেন। কেন ঢুকলেন তা বিচার করতে চাইলে বাঙালি সংস্কৃতি এবং মানসচৈতন্যের দিকে তাকাতে হবে। কল্পনাবিলাসী, আবেগপ্রবণ, ভাবুক, দুঃখবাদী, বিষন্ন, প্রকৃতিমুগ্ধ, কৃষিভিত্তিক জীবনবিলাসী বাঙালি রক্তাক্ত বিদ্রোহের ভেতরও ‘আমি ক্লান্ত প্রাণ এক’ আর ‘দু’দণ্ড শান্তি’-এর মতো ‘নাটোরের বনলতা সেন’কে কেন বারবার স্মরণ করত? এ প্রশ্ন অনিবার্য। আশ্চর্য এই যে, ভাববাদী রোমান্টিকরা তো বটেই, চরম বস্তুবাদী রিয়ালিস্টিক পাঠকও জীবনানন্দকে এড়িয়ে যেতে পারে না। কোন জাদুতে? জীবনানন্দ নিজেই কি ম্যাজিক বা ম্যাজিশিয়ান, তার শব্দ, চিত্রকল্প, উপমা, কাব্যভাব কি ম্যাজিক? জীবনানন্দ মুগ্ধতা কি ক্রমবিবর্তনের ভেতর দিয়ে বাঙালির বাঙালি হয়ে ওঠার নানা উপাদান অর্থাৎ চারিত্রিক এবং সাংস্কৃতিক নানা দুর্বলতার ফল মাত্র? বাঙালির মানসচেতনার সীমাবদ্ধতার কথা সত্যি জানতেন জীবনানন্দ। তিনি নিজেও যে একই গোত্রের। তার কবিতার শব্দ-প্রযুক্তিবিদ্যা, ধ্বনিমাধুর্য প্রবাহ, রূপকল্পের আবেগী ব্যবহার, অতীন্দ্রিয়ের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ব্যবহার বাঙালিকে বিস্মিত করেছে।
দারিদ্র্য, শোষণ, বঞ্চনা, দীর্ঘ উপনিবেশিক শাসন, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘরে ও বাইরে চিরক্লান্ত, আশাশূন্য, বিধ্বস্ত এবং ঘোর অবসাদাক্রান্ত বাঙালিকে জীবনানন্দের কবিতা গভীর আত্মমুখী আঁধারে ডুবিয়ে দেয়। সমকালের, সমাজের, রাষ্ট্রের, পরিবার এবং ব্যক্তির অন্তর্নিহিত রোগ, অসহায়ত্বকে ধরতে পেরেছিলেন জীবনানন্দ। নিজের জীবনের ওপর পরীক্ষাও করেছেন। তার অকাল মৃত্যুও ভেতর গোপন অদৃশ্য ব্যাধির ইঙ্গিত লুকিয়ে আছে নিশ্চয়ই।
জীবনানন্দের কবিতার ভেতরই জটিল রহস্য রয়েছে। তার কবিতা ক্লান্ত-বিধ্বস্ত সমাজ ও ব্যক্তিকে আশ্রয় নিয়ে ‘দু’দণ্ড শান্তি’ নিতে উসকে দেয়। মানুষের মগজে, স্নায়ুতন্ত্রীতে মাদকের মতো ‘প্রশান্তির জগৎ’ তৈরি করে। যে কাব্য সমালোচকরা তার কাব্যে জীবনবিমুখতা, আত্মপলায়নপরতা কিংবা অবক্ষয়ী মূল্যবোধের চর্চার অভিযোগ এনেছেন, তাদের সব যুক্তিকে বাতিল করা যায় না। এ কথাও সত্য যে, তাকে নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, কিন্তু গুরুত্ব লঘু করা না। কেন যায় না তা নিয়ে আমরা তর্কে যাব না, কেননা আমাদের উদ্দেশ্য সেটা নয়, উদ্দেশ্য বরং একাত্তরের যুদ্ধের প্রেক্ষিতে তাকে নিয়ে বাঙালির আবেগ এবং চর্চার সীমানাটা খুঁজে দেখা। এ দেখাটা স্বাধীন দেশের বাঙালির জন্য জরুরি।
সাহিত্যের দহলিজে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে, বুদ্ধিজীবী মহলে জীবনানন্দ চর্চা পূর্ববঙ্গে পঞ্চাশের দশকেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ ও চর্চার সঙ্গে জীবনানন্দের ‘রূপসী বাংলা’ চর্চারও একটা যোগসূত্র দেখা যায়। ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলনের কিছু আগে বা পরে জীবনানন্দের কাব্যসমগ্র রণেশ দাশগুপ্তের সম্পাদনায় বাংলাবাজার থেকে বের হয়। ব্যাপক সাড়াও ফেলে। জীবনানন্দ অনুসন্ধানের আগে আমরা জেনে নিতে চাই তার শিল্পের মননজগৎ তৈরির পেছনের সামাজিক, রাষ্ট্রিক এবং আন্তর্জাতিক কার্য-কারণগুলো। জীবনানন্দের কাব্যসাধনা এবং তার বিকাশ ও পরিণতি ঘটে দুই মহাযুদ্ধের মধ্যবর্তী থেকে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলাকালীন, সময়ের সেই প্রভাবেই তিনি আন্দোলিত হয়েছেন।
বাংলায় উপনিবেশিক শাসন-শোষণ, জমিদারতন্ত্র, হিন্দু বর্ণবাদ, হিন্দুধর্ম আর ব্রাহ্মধর্মে সংঘাত, হিন্দুধর্মের শাক্ত আর বৈষ্ণব মতবাদীদের পরস্পর বিদ্বেষ, দেবী কালী আর অবতার কৃষ্ণের বিবাদ সমাজ অভ্যন্তরে তৈরি করে অস্থিরতা। সেই ইতিহাসই পরবর্তীকালে দেখিয়ে দেয় কেমন করে ভাঙন ধরে হিন্দুধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া একেশ্বরবাদী, পৌত্তলিকতা-বিরোধী নতুন ধর্ম ব্রাহ্মবাদেও। শরৎচন্দ্রের গল্প-উপন্যাসে এর বর্ণনা আছে। বরিশালের ব্রাহ্মসন্তান জীবনানন্দ দাশও এ থেকে মুক্ত ছিলেন না। ব্রাহ্ম হওয়ার কারণে হিন্দুপ্রধান কলকাতা শহরে জীবনানন্দের জীবন-জীবিকাও সংকটে পড়ে। কলকাতার সিটি কলেজে অধ্যাপনা করতে গিয়ে তা তিনি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন। ব্রাহ্ম রবীন্দ্রনাথের সংস্পর্শেও তিনি শান্তি পাননি। ব্যক্তির এই সামাজিক হতাশা তার কাব্যে সংক্রমিত হয়। একটা কথা উল্লেখ করতেই হয় যে, সাতচল্লিশের আগে ও পরে পূর্ববঙ্গের ‘বাঙাল’ আর দেব-দেবী বিদ্বেষী ব্রাহ্মদের জন্য মহানগর কলকাতা এক দুর্ভোগের স্থান হয়ে ওঠে।
বাংলা তো বিশ্বমানচিত্রের বাইরে নয়, বিশ্বেরই সে অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশ্বের যে কোনো কম্পনই তাকে ছুঁয়ে যাবে। বিশ্বপুঁজির মহাসংকটের নগ্ন প্রকাশ ঘটে প্রথম মহাযুদ্ধের ভেতর দিয়ে। তথাকথিত উন্নত ইউরোপ তো বটেই, উপনিবেশিক অনুন্নত দেশগুলোতেও মানুষের হতাশা, ভয়ংকর ভীতি ও ধ্বংসস্তূপের ভেতর মৃত্যুর প্রেতছায়ার মতো ছড়িয়ে পড়ে। এর কম্পন-প্রকম্পন থামতে না থামতেই এসে যায় দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ। আরও জটিল, আরও বহুমাত্রিক বিভীষিকা নেমে আসে বিশ্বে। বঙ্গ-ভারতের গণমানসে মুক্তির স্পৃহা জেগে ওঠে। উপনিবেশিক শোষণ আর দেশীয় উৎপীড়ন থেকে মানুষ মুক্তি চায়। কমিউনিস্ট পার্টি এবং সশস্ত্র লড়াই সামনে এসে দাঁড়ায়। শাসকরা দেশীয় বুর্জোয়ারা রাজনৈতিক দলের উদ্ভব ঘটায় স্বাধীনতা, আজাদী, স্বরাজের নামে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ব্যাপক ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া মানবসভ্যতা নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বিশ্ব সমাজতন্ত্র গড়ার দিকে ঝুঁকে পড়ে। সেটা বুঝতে পেরে পুঁজিবাদী শক্তি ইউরোপের দেশে দেশে ব্যক্তির মুক্তি, সামাজিক মুক্তি এবং জাতীয় স্বাধীনতার প্রশ্নে নানারকম নতুন নতুন দর্শনের উদ্ভব ঘটানোর জন্য একদল দার্শনিককে কাজে নামিয়ে দেয়। জীবনবিমুখ অতীন্দ্রিয়বাদী দর্শনকে কবর থেকে টেনে তুলে আনে। ফরাসি বিপ্লবের দার্শনিক ভলতেয়ারের ভাবশিষ্যরাই বিস্ময়করভাবে আত্মসমর্পণ করে সোরেন কিয়ের্কগার্ড-এর বাতিল অস্তিত্ববাদের প্রেতের কাছে। তারা উচ্চকণ্ঠ হলেন বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদের বিরুদ্ধে। ঘোষণা করলেন যে, হতাশা, বিষন্নতা, বিষাদ, দুঃখবাদ আর আত্মবিচ্ছিন্নতার ভেতর লুকিয়ে রয়েছে মানব জীবনের সুখ-আনন্দ-পরম শান্তি।
দর্শনচর্চাকারী মাত্রই জানেন যে, কিয়ের্কগার্ড দর্শনের মৌল উপাদান হলো এই ধারণা যে, মানব অস্তিত্বের প্রকৃত রূপ নিঃসঙ্গতা, কোনো মানুষই এই নিঃসঙ্গতাকে ডিঙিয়ে যেতে পারে না। হেগেলের যুক্তিবাদকে খণ্ডন করে কিয়ের্কগার্ড দাবি করেন ঈশ্বরই হচ্ছে একমাত্র পথ। ব্যক্তিমানুষকে ঈশ্বরের সামনে দাঁড়াতে হবে পাপবোধ, আত্মগ্লানি, অনুতাপ, নৈরাশ্য, যন্ত্রণা, সামাজিক শোষণ-উৎপীড়ন, হিংসা, হিংস্রতা থেকে মুক্তির জন্য। ব্যক্তির দুঃখ ভোগ যত বৃদ্ধি পাবে, ততই ব্যক্তির চেতনায় ধর্ম ও ঈশ্বরভাব জাগ্রত হবে। এতেই তার আত্মার মুক্তি ঘটবে।
কিয়ের্কগার্ডের জন্য দর্শনচর্চার উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করে দেয় প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা এবং মানুষের অবসাদ-নৈরাশ্য। সেই ব্যাধি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপ হয়ে সারা বিশ্বে। জীবনানন্দ দাশ ইংরেজি ভাষার শিক্ষক ছিলেন। সেই ভাষাই তার সংযোগ ঘটায় কিয়ের্কগার্ড দর্শনের সঙ্গে। রুশ বিপ্লব এবং বস্তুবাদী দর্শন তাকে আন্দোলিত করে না। তার বিশ্বাসের সাক্ষ্য রেখে গেছেন তিনি নিজের লেখায়। ‘আধুনিক কবিতা : কবিতার কথা’ তার দলিল। দ্বিধাশূন্য জীবনানন্দ বলছেন, ‘কিয়ের্কগার্ড প্রভৃতি দার্শনিকের অস্তিত্ববাদ যা প্রমাণ করেছে সেটা মানুষের প্রাণধর্মে টিকে থাকার... দার্শনিক তথ্য হিসেবে মানুষকে সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন... তার সাহিত্যিক শিষ্যদের রীতির চেয়ে আরও নিপুণ ও নির্ভুল প্রয়োগে, মানুষের জীবনের এই অন্তর্নিঃসহায়তার কথা ফুটে উঠেছে...।’ সহজ কথায়, এটা নির্মম সত্য যে, জীবনানন্দ বাঙালি পাঠকদের ঘাড়ে তার নিজস্ব অন্তর্নিঃসহায়তার বোঝা চাপিয়ে দিতে সচেষ্ট ছিলেন।
কেবল কিয়ের্কগার্ড নয়, ফ্রেডারিখ নিটসে, পাস্কাল, মনোবিজ্ঞানী অ্যালফ্রেড অ্যাডলার এবং আরও অনেকে বিজ্ঞানবিরোধী, প্রতিক্রিয়াশীল দর্শন যুদ্ধবিধ্বস্ত নৈরাশ্যবাদী ক্লান্ত মানুষের সামনে তুলে রেখে গেছেন। আশ্চর্যজনকভাবে তারা বিশ্বাস করতেন বুদ্ধি, মুক্তি, বিজ্ঞান নয়; বরং মানুষের বিশ্বাস, তার অনুভূতিই জীবন বাস্তবতার আসল সত্য। জীবনানন্দ যখন এসব চর্চা শুরু করেন তার আগেই সারা ইউরোপে যুক্তিবাদ আর বিজ্ঞানবাদের বিরুদ্ধে প্রগতিবিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠেছে। এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল পুঁজিবাদকে মরণসংকট থেকে রক্ষা করা।
যুদ্ধ, ধ্বংস, চূড়ান্ত শোষণ, মানবতার মহাবিপর্যয় না ঘটিয়ে ব্যাধিতে আক্রান্ত যে পুঁজিবাদ টিকতে পারে না, এই বাস্তবতার ভেতর দার্শনিক রুশোর দর্শনে কথিত সেই ‘ঘধঃঁৎধষ গধহ’ সার্ত্রে-এর বিশ্বাসে কোনো রূপ নেয়? সার্ত্রে ব্যক্তিমানুষকে তার বাস্তব স্থান আর সময়কালের সূত্র থেকে বিচ্ছিন্ন করে মুক্ত ব্যক্তিসত্তার কল্পনার দিকে টেনে নেন। তিনি বিশ্বাস করতেন ব্যক্তিমানুষ রাষ্ট্র ও সমাজের বন্ধন থেকে কোনোভাবেই মুক্ত বা স্বাধীন হতে পারে না। সমাজতন্ত্র বা সাম্যবাদও ব্যক্তিমানুষকে তার প্রত্যাশিত মুক্তি এনে দিতে পারে না। ব্যক্তিমানুষ চূড়ান্তভাবেই নিঃসঙ্গ; পৃথিবীর বিপক্ষেও সে। একেবারেই একা।
সার্ত্রের ভাববাদী দর্শন ব্যক্তিমানবসত্তা সম্পর্কে কী বলে? অতলান্তিক কালস্রোতে ভাসমান মানুষ মুহূর্তকালের ভেতরই শূন্যতায় আক্রান্ত হয়। এই শূন্যতা তাকে আতঙ্কের ভেতর ঠেলে দেয় এবং দাঁড় করিয়ে দেয় বিমূর্ত এক সত্তার সামনে। সেই সত্তাটি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয়, বরং অতীন্দ্রিয়। স্বাধীনতা যেহেতু অসীম এবং নিরঙ্কুশ তাই প্রতিকূল সমাজে ব্যক্তিমানুষ এতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এমন বিশ্বাসের ভেতর সার্ত্রে মনে করতেন উৎকণ্ঠা থেকে মানুষের মুক্তি নেই। ব্যক্তিমানুষ কখনো সমষ্টি বা সঙ্ঘের সঙ্গে মিলিত হতে পারে না, মিলিত হওয়ার চেষ্টাটা কেবলই দুঃস্বপ্ন। সার্ত্রের ভাবশিষ্যরা তো এই দর্শনই তাদের সাহিত্যের নানা শাখায় প্রয়োগ করেছেন।
সার্ত্রে কেবল ইউরোপ নয়, ইংরেজি ভাষাকে বাহন করে বঙ্গভারতে শিক্ষিত শ্রেণির একাংশের চেতনায় প্রবেশ করেন। জীবনানন্দ কিন্তু তাদেরই দলে। সার্ত্রে চিরন্তন সত্যবাদ, ঐতিহ্যবাদ, ধর্মবাদ এবং বুর্জোয়া নৈতিকতাবাদের বিরোধিতা করে বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদের পক্ষ নিলেও সামাজিক শ্রেণি ও শ্রেণি দ্বন্দ্বের বাস্তবতাকে অনুধাবন করতে সম্মত হননি। বস্তুজগৎ এবং মানবমনের দ্বন্দ্বের বাস্তবতাকে তিনি অবজ্ঞা করেছেন। তার দাবি ছিল, ‘No general ethics can shwo you what is to be done’ এবং ‘ও I have got to limit myself to what I see’
মানব অস্তিত্বরক্ষার সুনির্ধারিত কোনো অর্থ বা কারণ সার্ত্রের বিশ্বাসের দর্শনে নেই। তিনি এই সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন যে, চরম অস্তিত্ব সংকটে নিপতিত মানুষ অন্ধের মতো আশ্রয় সন্ধানে আবর্তিত হবে। নিঃসঙ্গতা, আতঙ্ক, উদ্বেগ তার নিত্যসঙ্গী। জীবন ও জগৎ তার কাছে অনিয়ন্ত্রিত অন্ধকার হেঁয়ালি এবং যুক্তিশূন্য। তার গল্পের নায়ককে তাই উচ্চারণ করতে হয়, ‘The nausea is not inside me, I feel it out There... I am the one who is within it......’
বিস্ময়কর এটাই যে, অস্তিত্ববাদী এই দর্শনকে মহাযুদ্ধে বিধ্বস্ত মানুষদের একাংশ বরণ করে নেয়। পুঁজিবাদী অর্থনীতি এবং ভয়াবহ যুদ্ধে ক্ষত-বিক্ষত মানবতা, অবক্ষয়ী নৈতিকতার ভেতর মনোলোকের এই অন্তঃসারশূন্যতা ব্যক্তিমানুষকে মহাশূন্যে ভাসমান মৃত গ্রহের ভগ্ন অণুর মতো ঘিরে ধরে। সে সময়ের কবিরা তো মানবচেতনার আশা-প্রত্যাশা আর নতুন স্বপ্নের বদলে দেখতে পেলেন চরাচরের চারদিকে কেবলই নির্জন শূন্যতা আর মৃত্যু। কাফ্কার মতো সংবেদনশীল শিল্পীও লিখলেন, ‘ÔI am separated from all things by a hollwo space...’। আলবেয়ার কামুও একই পথের পথিক। স্যামুয়েল বেকেট তো বলেই ফেললেন, ‘...I was born or not, have lived or not, am dead or merely dying...’। ইউরোপের অনেক কবি-সাহিত্যিক আত্মনিমগ্নতার ওই অন্ধকারে ডুব দেন।
আর ওই যে অস্তিত্ববাদী দর্শনের অভিঘাতে ইউরোপে জন্মাল Sur-realism, Dadaism, Futurism, বিশেষ করে পরাবাস্তববাদ। এর প্রভাব বাঙালি মননেও পড়ে। কলকাতার অনেক পরে, কবরে ভূত হয়ে যাওয়ার পর পরাবাস্তববাদ ঢাকাতেও উঁকি মারে। বাঙালি যখন গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে লড়াই করছে, তখনই এই ভূত ঢাকায় এসে হাজির। বাংলাদেশের কাব্যদর্শনের এই দেউলিয়াপনার বাইরে মনুষ্যত্বের পক্ষে, মুক্তির প্রশ্নে একদল কবির আবির্ভাব ওই পরাবাস্তব প্রেতাত্মাকে পরাভূত করেছিল। ভাষা আন্দোলন, সামরিক শাসন, গণতন্ত্র-গণ-অভ্যুত্থান এবং একাত্তরের যুদ্ধবিষয়ক কবিতার দিকে তাকালে এটা স্পষ্ট ধরা পড়ে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও লেখক
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।