
৪০তম বিসিএসের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ১ হাজার ৯২৯ প্রার্থীকে নিয়োগ দিয়ে এ প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। চূড়ান্ত নিয়োগে পিএসসির সুপারিশ করা তালিকা থেকে ৩৪ জন বাদ পড়েছেন।
গত ৩০ মার্চ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) এই বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে। এতে ১ হাজার ৯৬৩ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছিল পিএসসি।
পিএসসি সুপারিশ করার পর প্রার্থীদের তথ্য যাচাই-বাছাই করে পুলিশ। এসব যাচাই-বাছাইয়ে রাজনৈতিক কারণে অনেক প্রার্থীকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পিএসসি ৪০তম বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ওই বিসিএসে আবেদন করেন ৪ লাখ ১২ হাজার ৫৩২ প্রার্থী। ২০১৯ সালের ৩ মে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পরীক্ষা দেন ৩ লাখ ২৭ হাজার পরীক্ষার্থী। ওই বছরের ২৫ জুলাই প্রকাশিত ফলাফলে প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন ২০ হাজার ২৭৭ প্রার্থী।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে লিখিত পরীক্ষা শুরু হয়ে শেষ হয় ফেব্রুয়ারিতে। দেশে ওই সময় করোনা মহামারী শুরু হলে খাতা দেখাসহ অন্যান্য কার্যক্রমে বিঘœ ঘটে। প্রায় এক বছর পর গত বছর ২৭ জানুয়ারি লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে ১০ হাজার ৯৬৪ জন পাস করেন।
এরপর করোনা পরিস্থিতির কারণে পাঁচবার মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তন করে পিএসসি। এ বছরের ৩০ মার্চ চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ১ হাজার ৯৬৩ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে পিএসসি।
আমনের উৎপাদন রেকর্ড পরিমাণ বাড়ায় বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম চাল উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। গতকাল মঙ্গলবার আমনের দর নির্ধারণী সভায় বলা হয়েছে, এবারে গত বছরের চেয়ে ১৩ লাখ টন আমন বেশি হবে; যা উৎপাদিত মোট চালের সঙ্গে যোগ হলে বাংলাদেশ ইন্দোনেশিয়াকে টপকে যাবে।
চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয় দাবি করলেও জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার (ফাও) ওয়েবসাইটে ইন্দোনেশিয়াকেই তৃতীয় বৃহত্তম দেশ দেখানো হচ্ছে। ফাওয়ের গতকাল ১ নভেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ২৯ দশমিক ৬০ শতাংশ চাল উৎপাদন করে চীন। ২৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ উৎপাদন করে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত। ইন্দোনেশিয়া এবং বাংলাদেশ উভয় দেশই ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ করে চাল উৎপাদন করলেও ইন্দোনেশিয়াকেই তৃতীয় দেখাচ্ছে ফাও। একই পরিমাণ উৎপাদন করে বাংলাদেশ চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।
এর কারণ ব্যাখ্যা করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ইন্দোনেশিয়া ধারাবাহিকভাবে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। এ কারণে সমান সমান উৎপাদন করলেও বাংলাদেশকে চতুর্থ দেখাচ্ছে সংস্থাটি। তবে এবারের আমন মৌসুমে চাল উৎপাদন ১৩ লাখ টন বেশি হলে ইন্দোনেশিয়াকে টপকে যাবে বাংলাদেশ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত বছরই বাংলাদেশ তৃতীয় বৃহত্তম চাল উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ফাও ইন্দোনেশিয়াকেই তৃতীয় দেখাচ্ছে। যা-ই হোক, এবারে ১ লাখ টন বেশি হলেও বাংলাদেশ অফিশিয়ালি ইন্দোনেশিয়াকে টপকে যাবে।
গতকাল আমনের দর নির্ধারণী সভা শেষে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চাল উৎপাদনে তৃতীয় হওয়া সত্যি বিস্ময়কর। জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থাগুলো সম্মিলিতভাবেই বলছে চাল উৎপাদনে আমরা এগিয়েছি দারুণভাবে।’
উৎপাদনের হিসাবে দেশে বোরো ধানই সবচেয়ে বড় ফসল। প্রতি বছর এ মৌসুমে প্রায় দুই কোটি টন চাল উৎপাদন হয়। বোরো বড় ফসল হলেও এর উৎপাদন ব্যয় আমনের তুলনায় অনেক বেশি। বোরোর পরই রয়েছে আমনের অবস্থান। এ বছর শ্রাবণ মাসে এক দিন বৃষ্টি হয়েছে; যা নিয়ে কৃষকদের পাশাপাশি সরকারও খুবই উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিল। বৃষ্টির অভাবে সময়মতো আমন রোপণ করতে পারেননি কৃষক। বিষয়টি মন্ত্রিসভা বৈঠকে তোলা হলে সরকার সেচ দিয়ে আমন রোপণের সিদ্ধান্ত নেয়। দেশে বিদ্যুৎসংকট থাকলেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়া হয় সেচ পাম্পে। শেষ পর্যন্ত রোপণ করা হলেও আসে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। তবে যেসব জেলায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত করেছে, সেসব জেলায় খুব একটা আমন হয় না। তারপরও ৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির আমন ফসল নষ্ট হয়েছে।
সরকারিভাবে আমন ধান ও চাল সংগ্রহের জন্য গতকাল দর নির্ধারণী সভায় কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেছেন, আমন হলো ফটোসেনথেটিক (সালোকসংশ্লেষী)। দিন ছোট হয়ে এলে আমন ধানে ফুল এসে যায়, ফুল এলেই উৎপাদন কমে যায়। ধান বড় হতে পারে না। কিন্তু একদম শেষ দিকে কৃষকরা সেচ দিয়ে নানাভাবে আমন চাষ করেছেন। বিল বা নিচু জমিতে আমন হয় না। এবার নিচুজমি শুকিয়ে যাওয়ায় সেসব জমিতেও আমন হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত আমনের ভালো ফলন হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ঘাটতি হবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, যে ধানগুলো একটু পরিপক্ব হয়েছিল, সেগুলো কিছুটা পড়ে গেছে। আর দক্ষিণাঞ্চলে ধানটা দিনাজপুর ও নওগাঁর চেয়ে এক মাস পরে লাগানো হয়। কাজেই মনে হয় না খুব একটা ক্ষতি হয়েছে।
খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিট (এফপিএমইউ) দেশে খাদ্যের পর্যাপ্ততা নিয়ে গবেষণা করে। একই সঙ্গে আমদানির সুবিধার জন্য সারা বিশ্বের খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে। এ ইউনিটই খাদ্য নিয়ে সরকারকে পরামর্শ দেয়। খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের কমিটি হচ্ছে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটি (এফপিএমসি)। অর্থমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রীসহ আট মন্ত্রী এ কমিটির সদস্য। এই কমিটির গতকালের বৈঠকের কার্যপত্র তৈরি করেছে এফপিএমইউ, যেখানে বলা হয়েছে, এ বছর ১ কোটি ৬৩ লাখ টন আমন উৎপাদন হবে; যা গত বছরের চেয়ে ১৩ লাখ টন বেশি। গত ছয় বছরের আমনের উৎপদন বৃদ্ধির হার পর্যালোচনা করলে দেখা যায় প্রতি বছরই কিছু না কিছু উৎপাদন বেড়েছে। ২০১৬-১৭ সালের তুলনায় পরের বছর উৎপাদন বেড়েছে ৩ লাখ টন। আগের বছরের তুলনায় ২০১৮-১৯ সালে উৎপাদন বেড়েছে ১ লাখ টন। ২০১৯-২০ সালে ১ লাখ, ২০২০-২১ সালে ২ লাখ টন উৎপাদন বেড়েছে বলে জানায় এফপিএমসি। গত বছর আমন হয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ টন।
প্রতি বছর দেশের কৃষিজমি কমছেএ অবস্থায় চালের উৎপাদন বাড়ছে কীভাবে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ধানের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন হচ্ছে। অব্যবহৃত জমি সেচের আওতায় আসছে। নিরবচ্ছিন্ন সেচ দেওয়া হচ্ছে। রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হচ্ছে। সবকিছু মিলে আগামী দিনে ধানের উৎপাদন আরও বাড়বে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ উইং জানিয়েছে, প্রতি বছরই কৃষির উৎপাদন খরচ বাড়ছে। আমনের উৎপাদন খরচও ঊর্ধ্বমুখী। চলতি বছর প্রতি কেজি আমন চাল উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৪১ টাকা ৫৮ পয়সা; যা গত বছরের তুলনায় ৫৮ পয়সা বেশি। গত সাত বছরে আমন চালের উৎপাদন খরচ বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১২ টাকা ৫৮ পয়সা।
খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, দেশে সরকারি ও বেসরকারি উভয়ভাবেই চাল ও গমের আমদানি কমেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেসরকারিভাবে গম এসেছে ৬০ লাখ টন। পরের বছর ২০২০-২১ অর্থবছরে তা ছিল প্রায় ৪৯ লাখ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে বেসরকারিভাবে গম এসেছে ৩৪ লাখ ৬৬ হাজার টন। চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের প্রথম চার মাস, অর্থাৎ জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে গম এসেছে মাত্র ৩ লাখ ৫৭ হাজার টন। গত তিন বছরে বেসরকারিভাবে চালও এসেছে খুব কম। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বেসরকারিভাবে চাল এসেছে মাত্র ১ লাখ ৬১ হাজার টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে যা ছিল ৩ লাখ ৪ হাজার টন।
সরকারিভাবে গম আমদানিতেও প্রভাব পড়েছে। গত চার মাসে সরকারিভাবে গম এসেছে ২ লাখ ১৩ হাজার টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে যা ছিল ৫ লাখ ৪৬ হাজার টন।
চলতি আমন মৌসুমে ধানের দাম কেজিতে ১ টাকা এবং চালের দাম ২ টাকা বাড়িয়ে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। গতকালের পরিধারণ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবার সরকারিভাবে সারা দেশের কৃষক ও চালকল মালিকদের কাছ থেকে ৩ লাখ টন ধান ও ৫ লাখ টন সেদ্ধ চাল কেনা হবে। গত আমন মৌসুমে ২৭ টাকা কেজি দরে ধান এবং ৪০ টাকা কেজি দরে চাল সংগ্রহ করেছিল সরকার।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার দেশের ভেতর থেকে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্র ঠিক করলেও বিদেশ থেকেও চাল আমদানি করা হবে। কয়েকটি দেশের সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। সব কিছু ঠিক থাকলে জি টু জির (সরকার থেকে সরকার) আওতায় চাল আমদানি করা হবে।
আসন্ন দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় যুব সমাজকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খাদ্যপণ্য উৎপাদন-প্রক্রিয়াজাতকরণে যুবকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, অনেক উন্নত দেশে অর্থনৈতিক মন্দা বিরাজমান। সেই অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত রাখতে হলে আমাদের প্রতি ইঞ্চি জমিতে যেমন আবাদ করতে হবে, তাছাড়া খাদ্যপণ্য উৎপাদন-প্রক্রিয়াজাত করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। যুব সমাজকে আহ্বান করব, তারা যেন আরও উদ্যোগ নেয়।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় যুব দিবস-২০২২ এর অনুষ্ঠান উদ্বোধন ও যুব পুরস্কার ২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, খাদ্যপণ্য উৎপাদন-প্রক্রিয়াজাতে আমরা যেমন দেশের চাহিদা মেটাতে পারব, আবার অনেক দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশকে আমরা সহযোগিতাও করতে পারব। একই সঙ্গে দেশকে উন্নত করতে ‘যে কোনো কাজ’ করার জন্য নিজেদের প্রস্তুত রাখতেও যুবসমাজের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, যে কোনো কাজ করে, নিজে উপার্জন করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো এটি অত্যন্ত গর্বের বিষয়। কারণ কোনো কাজকে আমরা ছোট করে দেখি না। কোনো কাজকে আমরা ছোট করে দেখব না।
প্রতি জেলা-উপজেলায় যুব কাউন্সিল গঠন করা হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এর মাধ্যমে তারা যেন কাজ করতে পারে এবং দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে সেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কারণ, একটি প্রশিক্ষিত যুবশ্রেণি গড়ে তোলা একান্তভাবে অপরিহার্য।’ দেশে এখন কত প্রশিক্ষিত যুবক রয়েছে, তারও একটি ডাটাবেজ তৈরির প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, দক্ষ যুব সমাজ আমাদের সম্পদ। তাদের কাজে লাগাতে হবে। তারাই ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবকরাই শক্তি। তাদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। আমরা মনে করি, প্রশিক্ষিত যুব সমাজ গড়ে তোলা একান্তভাবে অপরিহার্য। আজ কত প্রশিক্ষিত যুবক আছে, তার ডাটাবেজ থাকা দরকার। এখনো বাংলাদেশের অনেক কর্মক্ষম যুবশক্তি আছে, এটাই আমাদের বড় শক্তি। আমাদের এই জনশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের যুবকরা এত বেশি মেধাবী, তারা সব কাজে পারদর্শিতা দেখাতে পারবে। তিনি বলেন, আমরা দক্ষ ও প্রশিক্ষিত যুব সমাজ গড়ে তুলতে চাই। এজন্য নানা উদ্যোগও গ্রহণ করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। মর্যাদার সঙ্গে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। কারও কাছে হাত পেতে বা মাথা নিচু করে নয়। আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।
এসময় বঙ্গবন্ধুর উদ্ধৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যুবকদের সঙ্গে আত্মিক ও মানসিক সম্পর্ক ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের। তিনি তরুণদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে, অসত্যকে পরিহার করতে, শোষণ-বঞ্চনা, অত্যাচার, অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে অনুপ্রেরণা জোগাতেন। তিনি বলেন, তরুণ যুবকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে জাতির পিতা ১৯৭২ সালের ১৯ আগস্ট সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক জনসভায় দেশ গড়ার জন্য যুবক ও তরুণদের কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘কাজ করো কঠোর পরিশ্রম করো, না হলে বাঁচতে পারবে না, শুধু বিএ, এমএ পাস করে লাভ নেই। আমি চাই কৃষি কলেজ, কৃষি স্কুল, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও স্কুলে যাতে সত্যিকারের মানুষ পয়দা হয়। বুনিয়াদি শিক্ষা নিলে কাজ করে খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবে।’
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের সভাপতিত্বে মিলনায়তন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, যুব ও ক্রীড়া সচিব মেজবাহ উদ্দিন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) আজহারুল ইসলাম খান।
অনুষ্ঠানে আত্মকর্মসংস্থানে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৫ জন আত্মকর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবায় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য ছয় যুব সংগঠকসহ মোট ২১ জন সফল যুবককে জাতীয় যুব পুরস্কার-২০২২ দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুতের লোডশেডিং ও জ্বালানি সংকট নিয়ে সংসদ অধিবেশনে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। তার সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও বিগত বিএনপি সরকারের সমালোচনায় মুখর হন। গতকাল মঙ্গলবার সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি সমালোচনায় সংসদে উত্তাপ ছড়ায়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠিত হয়।
সংসদ অধিবেশন শুরুই হয় বিদ্যুৎ-জ্বালানি বিষয়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব দিয়ে। এ অধিবেশনে বিএনপিদলীয় সদস্যরা নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়েও কথা বলেন। জবাবে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিএনপি জোট সরকারের সময়ে বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির সমালোচনা করে বলেন, ‘তারেক রহমান যে লুটপাট করেছে সে হিসাব আমাদের কাছে আছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে তা তুলে ধরা হবে।’ এরপর অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপিদলীয় সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, সরকার সবকিছুর দায় চাপিয়ে দিচ্ছে তিন নন্দঘোষের ঘাড়ে।
বিএনপিদলীয় সদস্য হারুনুর রশিদ তার সম্পূরক প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, প্রতিমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত সরকারের কথা কমপক্ষে ৫০ বার বলেছেন; যা প্রাসঙ্গিক নয়। তিনি বলেন, ‘আপনি জানাবেন (বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী) বিএনপি সরকারের আমলে বিদ্যুৎ, গ্যাসের দাম কত ছিল?’ তিনি বলেন, ‘আমি আপনার কাছে স্পষ্ট জানতে চাচ্ছি বিএনপি সরকার গ্যাসের যে চুক্তি করেছে, সেটা আছে কি না? সেটা সংসদে উপস্থাপন করবেন। বিএনপির আমলে নিত্যপণ্যের দাম কত ছিল তার উত্তর দিন। শুধু বিএনপি জোট সরকারের সময় এই হচ্ছে, ওই হচ্ছে গল্প শোনাচ্ছেন।’
হারুনের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘সংসদ সদস্য (হারুন) অনেক উত্তেজিত হয়ে গেছেন। অনেকে সত্য কথা সহজে নিতে পারেন না। আমিও চাই সংসদে সময় দেন। সেখানে জ্বালানি নিয়ে কথা বলব। নাইকো মামলা নিয়ে যে পরিমাণ প্রমাণ আমাদের হাতে আছে। সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার প্ল্যান্টে যে পরিমাণ টাকা চুরি করেছে, সেগুলোর প্রমাণপত্র আমাদের হাতে আছে। সেগুলোই ডকুমেন্ট সংসদের ভিডিও স্ক্রিনে তাদের দেখাব।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘খাম্বা কোম্পানি দিয়ে তারেক রহমান যে পরিমাণ লুটপাট করেছে, তার হিসাব আমাদের কাছে আছে। সেই তথ্য আমরা সংগ্রহ করেছি। সময় হলে সব বের করব। নির্বাচন সামনে আসছে তো, প্রস্তুত থাকেন। সব দেখাব।’ তিনি বলেন, বিএনপি জোট সরকারের সময় অন্ধকারে ১৭ ঘণ্টা ছিলেন। উনি (হারুনুর রশিদ) বিদ্যুতের দামের কথা বলেন। আরে অন্ধকারে থাকার যে খরচ, সেই খরচের কথা বলেন।
বিএনপির সময়ে বিদ্যুতের সিস্টেম লস কত ছিল তা কি হারুনুর রশিদ জানেন, নাকি তা জানতে চান নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘উনি ভুলে গেছেন। ৪৪ শতাংশ অপচয় ছিল। এটা দুর্নীতির মধ্যে পড়ে। তিন-তিনবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন কি খামোখা হয়েছে তারা।’ এ সময় পাশ থেকে একজন সদস্য বলেন, টানা পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তখন প্রতিমন্ত্রী সংশোধন করে বলেন পাঁচবার।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয়। বাংলাদেশ উদাহরণ হয় বিশ্বের কাছে সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়। আর ওনারা করেছেন দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা শেষ হয়ে যাবে যদি বক্তব্য দিতে হয় তাদের ব্যাপরে।
নসরুল হামিদ বলেন, ‘কোনো প্রয়োজন নাই চাল, ডাল, গমের কী দাম ছিল জানানোর। আরে ভাই, আপনারা তো খাদ্যই দিতে পারেন নাই। গুলি করে মানুষ মেরেছেন। আবার দামের কথা জিজ্ঞেস করেন।’
বিদ্যুতের দাবিতে কানসাটে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমার এখনো খেয়াল আছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া টঙ্গীতে বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করতে যান। তিনি ঢাকায় পৌঁছাতে পারেননি, সেটা বন্ধ হয়ে গেছে।’
বিএনপি সংসদ সদস্যদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিয়ে সংসদে কথা না বলার অনুরোধ করেন নসরুল হামিদ বিপু। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না, কোন মুখে আপনারা কথা বলার সাহস করেন। হয়তো লজ্জা-শরম আপনাদের মাঝে নাই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বলতে পারব। তথ্য না শুধু, প্রমাণাদিসহ।’
সরকারের হাতে তিন নন্দঘোষ : রুমিন ফারহানা
অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপিদলীয় সদস্য রুমিন ফারহানা বলেছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দায় এড়াতে সরকার তিন নন্দঘোষের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘একটা নন্দঘোষ হচ্ছে করোনা, একটা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আরেকটা বিশ্বমন্দা। যাই হোক না কেন, যে অবস্থায় দাঁড়াক না কেন, সরকার সব দোষ চাপাচ্ছে এই তিনটি নন্দঘোষের ঘাড়ে।’
রুমিন ফারহানা বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা পৃথিবীতে অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব পড়েছে। তাহলে সরকারের হিসাবে আমাদের চেয়ে কম মাথাপিছু আয়ের দেশ ভারত, নেপাল ও আফ্রিকার অনেক গরিব দেশকে বিবিসি কেন শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি হওয়ার তালিকায় রাখেনি। গত একযুগে যে লুটপাট হয়েছে, অনিবার্যভাবে তা হওয়ার কথা।’
বিদ্যুৎ সংকট প্রসঙ্গে রুমিন কুইক রেন্টালের দায়মুক্তির সমালোচনা করেন। এ ছাড়াও অবকাঠামো উন্নয়নে দুর্নীতি হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘যেখানে লুটপাট হয়, সেখানে টাকা পাচার স্বাভাবিক।’
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ-জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে ধন্যবাদ দিয়ে এবং তার বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি কী অবস্থায় আছে সেটা তৌফিক-ই-ইলাহীর চেয়ে বেশি আর কেউ ভালো জানে না।’
আগামী বছর বিশ্বে দুর্ভিক্ষ হবে এমন আশঙ্কা করে প্রধানমন্ত্রী প্রতি ইঞ্চি জমি চাষ করার অনুরোধ জানিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার সমালোচনা করেন রুমিন ফারহানা। তিনি বলেন, ‘সাধারণভাবে ভাবতে গেলে মনে হবে, প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের কথা কৌশলগতভাবে ভুল। আসলে যখন তার পক্ষ থেকে এ ধরনের বার্তা আসে তখন আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।’
মন্ত্রণালয়-দপ্তরের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ১৯০০ কোটি টাকা
প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কাছে বিদ্যুৎ বিভাগের পাওনা ১ হাজার ৮৯৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে পাবে ৯০৫ কোটি ২১ লাখ টাকা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৩৯৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। সরকারদলীয় সদস্য মোজাফফর হোসেনের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
নিজাম উদ্দিন হাজারীর প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ২৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৯ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে।
রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে ভাটা পড়ায় চাপ বেড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেযা প্রতিনিয়তই প্রকট আকার ধারণ করছে। ডলারের এই চাপ সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে ডলার ছাড়ছে। যদিও গত কয়েক মাসে ডলার সরবরাহ করেও চাপ সামাল দেওয়া যায়নি। বর্তমানে দেশের রিজার্ভের পরিমাণ ৩৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। আগামী সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেড় বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ নেমে আসবে ৩৪ বিলিয়ন ডলারে। এতে দেশে অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র মতে, গত বছরের আগস্টে রেকর্ড ৪৮ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। আর এক বছর আগে ২৭ অক্টোবর রিজার্ভ ছিল ৪৬ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে তা নেমে দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ কমেছে ১০ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার।
অর্থনীতিবিদদের মতে, করোনা মহামারীতে আমদানি কম হওয়া ও রেমিট্যান্সের প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় রিজার্ভ বেড়েছে। কিন্তু লকডাউন উঠে যাওয়ায় দেশে আমদানি বৃদ্ধি পায়। আর আমদানির বিপরীতে রপ্তানি না বাড়া এবং রেমিট্যান্স কমতে থাকায় দেশে ডলার সংকট দেখা দেয়। এতে ডলারের এই চাপ সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে ডলার ছাড়ে। এতে প্রভাব পড়ে রিজার্ভে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম ১০ দিনের মধ্যে আকু’র আমদানি বিল পরিশোধ করার কথা রয়েছে। যার পরিমাণ ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের মতো। সেক্ষেত্রে রিজার্ভ থেকে এই বিল পরিশোধ করলে রিজার্ভ নেমে আসবে ৩৪ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে।
আকু হলো এমন একটি ব্যবস্থাযার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো আঞ্চলিক লেনদেনের জন্য আমদানি পেমেন্ট নিষ্পত্তি করে। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা এর সদস্য। এই ব্যবস্থায় দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে প্রতি দুই মাস অন্তর আমদানির অর্থ পরিশোধ করতে হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৭১৯ কোটি ৮১ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যেখানে এসেছিল ৫৪০ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। এর আগের ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রেমিট্যান্সে এসেছিল ৭০৫ কোটি ৫১ লাখ ডলার। করোনার মধ্যেও রেকর্ড রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিল প্রবাসীরা। সম্প্রতি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় পাঠানোর হার বেশ কমেছে। রেমিট্যান্স ভাটায় দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে চোখ রাঙাচ্ছে ডলার সংকট। ডলার সংকটের প্রভাব সরাসরি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর পড়ছে। এ সংকট ধীরে ধীরে প্রকট আকার ধারণ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার ছেড়ে চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। এদিকে দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে আগামীতে দেশের অর্থনীতি আরও বড় সমস্যার মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ডলারের আলাদা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে খোলাবাজারে ডলারের দাম বেশি। এতে প্রবাসীরা হুন্ডিতে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে, গতকাল বিএফআইইউ বলেছে, পণ্যের আমদানি ও রপ্তানিতে মূল্য বেশি বা কম দেখিয়ে অর্থ পাচার হচ্ছে। যদি অর্থ পাচার বন্ধ না করা যায় এবং রেমিট্যান্স বৃদ্ধি না করা যায়, তবে রিজার্ভের ওপর আরও চাপ বাড়বে।
ডলার সংকট ও রিজার্ভের চাপ কমানো সম্পর্কে সাবেক গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও এনবিআরের যৌথ উদ্যোগে যদি অর্থ পাচারকারীদের চিহ্নিত করা না যায় এবং চিহ্নিত অর্থ পাচারকারীদের শাস্তির আওতায় না আনা হয়, তবে এই সংকট কাটানো সম্ভব নয়। এ ছাড়া আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ডলারের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণেরও দাবি করেন এই অর্থনীতিবিদ।
এদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফের বৈঠকে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে রিজার্ভের প্রকৃত হিসাব নিয়ে। আইএমএফ বলছে, চলতি বছরের জুনের শেষ দিকে বাংলাদেশে ৪৬ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ থাকার যে কথা বলা হয়েছিল, তা আসলে ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে বলা হয়েছে। মূলত রিজার্ভ থেকে ৭ বিলিয়ন দিয়ে গঠন করা হয়েছে রপ্তানিকারকদের জন্য রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ)। আবার রিজার্ভের অর্থ দিয়ে গঠন করা হয়েছে লং টার্ম ফান্ড (এলটিএফ) ও গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ)। বাংলাদেশ বিমানকে উড়োজাহাজ কিনতে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে রিজার্ভ থেকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। আবার পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের খনন কর্মসূচিতেও রিজার্ভ থেকে অর্থ দেওয়া হয়েছে। শ্রীলঙ্কাকে ২০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়া হয়েছে। এসব খাতে সব মিলিয়ে ব্যবহৃত হয়েছে ৮ বিলিয়ন ডলার।
আইএমএফ বলছে, এসব বিনিয়োগকে বাদ দিয়ে রিজার্ভের প্রকৃত হিসাব করতে হবে। কারণ রিজার্ভের এসব অর্থ চাইলেই ফেরত পাওয়া যাবে না। জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে না। আইএমএফের এই শর্ত মেনে নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্মত হয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে বর্তমানে রিজার্ভ কমে হয় ২৭ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। আর চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে আকু’র ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর তা নেমে আসবে ২৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে। সেপ্টেম্বরে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। সেই হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী একটি দেশের কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ রিজার্ভ থাকতে হয়। সে বিবেচনায় বেশ অস্বস্তিতে আছে বাংলাদেশ।
টি-টোয়েন্টিতে ভারতের সঙ্গে এগারো দেখায় একটিমাত্র জয় বাংলাদেশের। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সেই ম্যাচটায় ছিলেন না সাকিব আল হাসান। ২০১৯ সালে ফিরোজ শাহ কোটলায় জেতা সেই ম্যাচে সাকিব ছিলেন না, কারণ তখন তিনি ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েও প্রকাশ না করায় নিষিদ্ধ।
সাকিবের স্মৃতিতে তাই ভারতের সঙ্গে টি-টোয়েন্টিতে সবশেষ মুখোমুখি হওয়াটা কলম্বোর সেই দুঃস্বপ্ন। নিদাহাস ট্রফির আসরটারই শেষ বল, জিততে হলে ভারতের দরকার ৫ রান। বোলার ছিলেন সৌম্য সরকার। দীনেশ কার্তিক কাভারের ওপর দিয়ে মারলেন ছয়! সেদিনও সাকিব ছিলেন অধিনায়ক, ৪ বছর বাদে আবারও নানান পাকেচক্রে টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হয়েছেন সাকিব। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দেখা হয়ে গেছে ভারতের সঙ্গেও, এশিয়া কাপে সুপার ফোরে উঠতে না পারায় এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গত আসরে ভিন্ন গ্রুপে থাকায় ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে সাকিবকে মুখোমুখি হতে হয়নি আইপিএল সতীর্থদের।
ভারতীয় ক্রিকেটারদের সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জানার কথা সাকিবেরই, আইপিএলে তো অনেকগুলো মৌসুমই কাটিয়েছেন একাধিক দলে। নামে টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট হলেও আসলে তো শ্রীধরন শ্রীরামই কোচ, নিজের দেশের খেলোয়াড়দের তারও ভালো করে চেনার কথা। অন্তত বিরাট কোহলির দুর্বলতা নিয়ে তো শ্রীরামের জানারই কথা, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের ব্যাটিং কোচ ছিলেন যে। দলের অধিনায়ক এবং কোচ, এমনকি ভিডিও অ্যানালিস্টও (শ্রীনিবাসন, ভারতীয় এবং আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে কাজ করেন) যখন আজকের প্রতিপক্ষ সম্পর্কে এত এত ধারণা রাখেন, তখন প্রস্তুতিটা তো একদম প্রতিটা জায়গা ধরে ধরেই হওয়া উচিত। তবে অবাক করার বিষয় ব্রিসবেন হয়ে অ্যাডিলেডে দু’দিন হলো গেলেও বাংলাদেশ দল অনুশীলনই করেনি!
খবরটা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল আগেই। কারণ অধিনায়কের অভিমত, বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের আগ পর্যন্তই প্রস্তুতি নেওয়ার সময়। ‘একবার খেলা শুরু হয়ে গেলে কোনো বিশ্বকাপেই সেটা ফুটবল বলেন আর ক্রিকেট বলেন খুব বেশি প্রস্তুতির জায়গা থাকে না। আমাদের বেলাতেও এর ব্যতিক্রম কিছু নয়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কত বেশি সতেজ থাকা যায়, মানসিকভাবে এবং শারীরিক ভাবে।’
যদিও সাকিবের যুক্তির সঙ্গে মেলে না ভারতীয় দলের ক্রিকেট দর্শন। কাল অ্যাডিলেডে ঐচ্ছিক অনুশীলন থাকলেও চলে এসেছিলেন বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুলরা। রোদ বৃষ্টি মেঘের লুকোচুরির মাঝেও নেটে রাহুলের ব্যাটিংটা ঠিক করে দেওয়ার জন্য কাজ করছিলেন কোহলি। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত খেলা তিনটা ইনিংসেই এক অঙ্কের ঘরে আটকে গেছেন রাহুল, তাই নেটে কোহলির দ্বারস্থ। সৌম্য সরকার তো রাহুলের চেয়ে রানে অনেক এগিয়ে, করেছেন ১৪, ১৫ আর ০। তার আর নেট অনুশীলনেরই বা কী দরকার!
প্রতিপক্ষ সম্পর্কে সবটা জানেন বলেই বোধহয় মিথ্যে বড়াই করলেন না সাকিব। মেনেই নিলেন, ‘ভারত ফেভারিট দল। তারা বিশ্বকাপ জিততেই এসেছে। আমরা ফেভারিট না, এখানে বিশ্বকাপ জিততে আসিনি। ভারতের বিপক্ষে আমরা যদি জিততে পারি, তাহলে এটি অঘটন হবে। আমরা আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করব। আর অঘটন ঘটানোর চেষ্টা করব।’
বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের সঙ্গে খেলেছে ৮ ব্যাটসম্যান নিয়ে, সঙ্গে তিন পেসার। সাকিবের সঙ্গে হাত ঘুরাচ্ছেন মোসাদ্দেক হোসেন অথবা সৌম্য। দলে একজন বোলারের অভাব আছে কিনা, এমন প্রশ্নে সাকিবের উত্তর ‘দেখুন, ঘাটতি থাকলে আমরা ২০ ওভার করতে পারতাম না। মোসাদ্দেক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই বছর ৫ উইকেটও পেয়েছে একটা ম্যাচে। ৫ উইকেট পাওয়া টি-টোয়েন্টিতে খুবই দুর্লভ ব্যাপার। তাকে যদি অনিয়মিত বোলার হিসেবে মনে করা হয়, আমি বলব যে সেটা ভুল। ও (মোসাদ্দেক) হয়তো আরও ভালো বোলিং করতে পারে, ওকে আমরা ওভাবে বিবেচনা করিনি। যদি ঘরোয়া ক্রিকেট দেখেন ও কিন্তু টি-টোয়েটিতে চার ওভার করে।’
অনেক প্রশ্নের উত্তরই সাকিব এড়িয়ে গেছেন টিম মিটিং না হওয়ার অজুহাত দিয়ে, এমনকি উইকেটও দেখেননি সংবাদ সম্মেলনের আগে। বলেছেন, ‘উইকেট দেখা হয়নি আর দেখলেও যে বোঝা যাবে ব্যাপারটা সে রকম নয়। খেলা শুরুর আগে যেকোনো কিছুই বলা মুশকিল।’
অধিনায়ক হওয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই সাকিব বলেছিলেন হাতে যা মালমশলা আছে তাই দিয়েই সেরাটা বের করে আনাই লক্ষ্য। কাল দলীয় সমন্বয় নিয়ে বলতে গিয়েও সাকিব পুনরাবৃত্তি করলেন, ‘একাদশ নিয়ে আসলে চিন্তা করা হয়নি, কিন্তু কম্বিনেশন তো চাইলেই অনেক রকম বানানো যায়। এমন নয় যে একটা কম্বিনেশন নিয়েই আছি কিংবা থাকা আর কম্বিনেশন আসলে অনেক রকম বানানো যায়। তারপরও আমাদের হাতে যতটুকু আছে, তার সদ্ব্যবহার কীভাবে করতে পারি, সেটা আমাদের চিন্তা করতে হবে।’
ভারতের কোচ রাহুল দ্রাবিড় এসেছিলেন সংবাদ সম্মেলনে। খেলোয়াড়ি জীবনে ভদ্র এবং মার্জিত রাহুল ক্রিকেটের শিষ্টাচার মেনেই বলেছেন, ‘আমরা তাদের (বাংলাদেশ) শ্রদ্ধা করি, তারা ভালো দল। এই বিশ্বকাপ দেখিয়েছে যে অন্তত এই ফরম্যাটে কোনো দলকেই হালকা চালে নেওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের প্রস্তুতি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলার আগে যা ছিল, এখানেও তাই থাকবে। কিছুই বাদ যাবে না।’
আপসেট ঘটানোর স্বপ্ন আছে, কিন্তু প্রস্তুতিটা যে নেই সেটা স্পষ্ট। যে দলে টি-টোয়েন্টির ব্যাটসম্যানদের র্যাংকিংয়ে শীর্ষ দশে থাকা দুজন, তারাও ম্যাচের আগের দিন নেটে অনুশীলনে ব্যস্ত। অন্যদিকে যে দলের বিশ্বকাপে তিন ম্যাচে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ১৫০, তারা হোটেলে বিশ্রাম করছেন। কেন শ্রীরাম ভারতের ক্রিকেটে এক ভুলে যাওয়া অধ্যায় আর দ্রাবিড় এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, দুই দলের ম্যাচের আগের দিনের কার্যক্রম সেটাই মনে করিয়ে দিল আরও একবার।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রোজার মাসে খাবারের জন্য শরীফুল আলমের বাজেট ১২ হাজার টাকা। পাঁচ দিনের বাজার করতে গিয়ে তিনি দেখেন, মাছ কিনলে মুরগি কেনা যায় না, মুরগি কিনলে মাছ বাদ দিতে হয়। গরুর মাংস তো বিলাসী খাবার, তাই সে দোকানে নজরই দেননি তিনি। পাঁচ দিনের মধ্যে তিন দিনই তার পরিবারকে মাছ-মাংসের মতো প্রোটিন খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। আর ইফতারিতে উচ্চ মূল্যের বিদেশি ফল বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত তিনি আগেই নিয়েছেন। শুধু শরিফুলই নন, বাজার করতে আসা নিম্ন মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন আয়ের সব ভোক্তারই একই গল্প। তারা বলছেন, এবারের রমজানে কম খেয়েই রোজা রাখতে হবে।
গত এক বছরে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। প্রায় একই হারে বেড়েছে পাকিস্তানি ককসহ অন্যান্য মুরগির দাম। সব ধরনের মাছের দাম গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
একটু সাধারণ হিসাব করা যাক। চারজনের একটি পরিবার যদি মাছ, মাংস বাদ দিয়ে সাহরিতে গড়ে ২০০ টাকা, সন্ধ্যা রাতের খাবারে যদি গড়ে ১৫০ টাকা আর ইফতারিতে ফল যোগ না করে গড়ে যদি ১০০ টাকা খরচ করেন তবে মাসে ব্যয় হবে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। আর যদি মাছ-মাংস যোগ হয় তাহলে সাহরিতে ন্যূনতম ৩০০, রাতের খাবারে ৩০০ ও ইফতারিতে ফল যোগ করলে গড়ে ২০০ টাকা খরচ করলে মাসে খরচ হবে প্রায় ২৪ হাজার টাকা। এ হিসাব চারজনের একটি পরিবারের সর্বনিম্ন হিসাব। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গত অক্টোবরের হিসাবে বলা হয়েছে, চারজনের একটি পরিবারে খাবার তালিকায় মাছ-মাংস যোগ করলে মাসে খরচ হবে ২২ হাজার ৪২১ টাকা। এটি শুধু খাবারের খরচ। যদি কোনো পরিবার মাছ-মাংস যোগ না করেন তাতে মাসিক খরচ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৯ টাকা।
সিপিডির গবেষণা সেলের কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, চলতি মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। পরিবারপ্রতি এ মাসে খরচ আরও বেড়ে গেছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানোর পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। কিছু ক্ষেত্রে ট্যাক্স ভ্যাট পুরোপুরি উঠিয়ে দিলে সেখানে সবাই উপকৃত হবে।
সিপিডির অক্টোবরের হিসাবই যদি ধরা হয়, তাহলে এবারের রোজায় খাবারের তালিকা ছোট করা ছাড়া উপায় নেই ভোক্তাদের। ২২ হাজার টাকার সঙ্গে যদি বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ভাড়াসহ গড়ে ১৫ হাজার টাকা ধরলে চারজনের একটি পরিবারের খরচ দাঁড়ায় ৩৭ হাজার টাকা।
অবশ্য সিপিডির এ তথ্য যখন প্রকাশ করা হয়, তখন মুরগির মাংসের কেজি ছিল ১৫০ টাকা, এখন তা ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে। গরুর মাংসের দাম ছিল ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায়, এখন তা ৭৫০ টাকায়। চিনির দাম ছিল ৯৮ টাকায় এখন তা ১২২ টাকায়। অর্থাৎ সব পণ্যেরই দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন ভোক্তার। বেসরকারি স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিন থাকেন রাজধানীর বাড্ডায়। থাকেন ৩ কামরা একটি ফ্ল্যাটে। তার মাসিক খরচ ৩১-৩২ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধু মাত্র বাসা ভাড়ায় খরচ হয় ১৬ হাজার টাকা। একমাত্র সন্তানের পড়া ও পরিবারের ভরণ-পোষণে খরচ হয় আরও ১৩-১৫ হাজার টাকা। বাদ বাকি খরচ আরও ২ হাজার। তবে এই শিক্ষক মাসে আয় করেন ২৮-৩০ হাজার টাকা। মাসিক আয় হিসেবে তার অতিরিক্ত খরচ হয় ২-৩ হাজার টাকা।
এ শিক্ষক খরচের সমন্বয় করতে সঞ্চয়ও ভেঙেছেন ইতিমধ্যে। তাতেও তার বাড়তি খরচের টাকা প্রতি মাসে ঋণের খাতায় যোগ হয়। উপায়ান্তর না দেখে পরিচয় গোপন করে মাঝেমধ্যে রাইড শেয়ার দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত কাজে এসেছিলাম মহাখালীতে। ভাবলাম একই সঙ্গে রোজার বাজার করে বাসাই ফিরি। তবে বাজারে প্রবেশ করে চিন্তায় পড়ে গেলাম। ব্যাগ দেখিয়ে বলেন, ১ কেজি করে মুরগি, মাছ ও ছোলাসহ আরও দুএকটি পণ্য কিনতেই ১ হাজার টাকা শেষ। দামের অবস্থা দেখে বুঝা যাচ্ছে চাহিদা মতো বাকি সদাইগুলো বাসায় নিয়ে যেতে পারব না। আর নয়তো অর্ধেকের ওপর ভরসা রাখতে হবে।
শুধু স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিনই নন, গেল কয়েক মাসে দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহ অবস্থার কারণে মধ্য ও নিম্নমধ্য আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে নিত্যপণ্যের বাজার। মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজির দামও মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। গরিবের মাছ বলে খ্যাত পাঙ্গাস, তেলাপিয়াও এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। গত ৩-৪ মাস আগেও পাঙ্গাস ১৪০-১৪৫ টাকা ও তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হয়েছিল ১৩৫-৪০ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য মাছের মধ্যে মান ভেদে রুই মাছ ২৯০-৩৮০ টাকা, সরপুঁটি ২০০-৪০০ টাকা, চাষের মাগুর ৬০০ টাকা, শোল মাছ ৮০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ১ হাজার টাকা করে বিক্রি করছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
দ্রব্যমূল্য যে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে, তা শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল মজুমদারও বলছেন। গত বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারের কোনো মিল নেই। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করছে। ডলারের দাম বাড়ার অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবেই দেখা যায়, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এ বছর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। যদিও গত মঙ্গলবার একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, চলতি মার্চে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। চৈত্রের খরা ও রোজায় মানুষের অতিরিক্ত মজুদের কারণে এ মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কার কথা বলেছেন তিনি।
বিবিএসের চিত্রেই আবার ফেরা যাক। গত বছর চিনির কেজি ছিল ৮২ টাকা, সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২২ টাকায়। যদিও বাজারের চিত্র ব্যতিক্রম। গরুর মাংস গত বছরের মার্চে কেজি ছিল ৬১০ টাকা, কিন্তু বছর ঘুরতেই এ পণ্যের দাম এখন ৭৫০ টাকা। মানুষ বেশি দামে গরুর মাংস কিনতে না পেরে কিছুদিন আগেও ভরসা করত ব্রয়লার মুরগির ওপর, যার দাম এখন ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে।
রমজানের ইফতারিতে বেশি চাহিদা থাকে ফলের ওপর। কিন্তু সেই ফলের দামও লাগামছাড়া। ডলার সংকটের কারণে ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ফলের ওপর শুল্কারোপ বাড়িয়ে দেয় সরকার। ফলে গত কয়েক মাস ধরেই ফলের দাম অনেক বেশি।
সাহরিতে রোজাদারের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর অন্যতম উপাদান দুধ। গত বছরের মার্চে দুধের লিটার কিনতে হয়েছিল ৭০ টাকায়, এ বছর তা ৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের একটা প্রভাব রয়েছে। তবে আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছি বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। তিনি বলেন, রমজানের ভোক্তা পর্যায়ে ভোগান্তি কমাতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছি। মাঠ পর্যায়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। যেখানে অনিয়ম পাচ্ছি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিছুটা দায়ী। কিন্তু পুরোপুরি না। সম্পূর্ণ দায় এ যুদ্ধের ওপর চাপানো ঠিক না। ভোক্তাদের দায় বেড়েছে, তাদের ওপর চাপও বেড়েছে।
সিন্ডিকেশন করে মুরগির বাচ্চা ও ব্রয়লার মুরগির দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে মাত্র ৫২ দিনে বড় উৎপাদকদের একটি চক্র ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তাদের অন্য একটি সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন গতকাল বৃহস্পতিবার এ অভিযোগ করে। এদিকে মুরগির দাম নিয়ে ‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। অন্য এক মতবিনিময় সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, মুরগি ও গরুর মাংসের দাম না কমালে তা তারা বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবেন। রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সরকারি তদারকি না থাকায় হরিলুট চলছে পোলট্রি সেক্টরে। প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩ হাজার ৫০০ টন। কিন্তু অস্বাভাবিক দাম ও প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে উৎপাদন কমায় এখন দুই থেকে আড়াই হাজার টন সরবরাহ হচ্ছে। প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ আগে কম থাকলেও এখন প্রতি কেজিতে ১৬০-১৬৫ টাকা এবং করপোরেট কোম্পানিদের উৎপাদন খরচ ১৩০-১৪০ টাকা। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত।
সংগঠনটি জানিয়েছে, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজিতে যদি অতিরিক্ত ৬০ টাকা মুনাফা ধরা হয় তবে প্রতিদিন অন্তত ২ হাজার টনে ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ৫২ দিনে শুধু ব্রয়লার মুরগি থেকে ৬২৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ সিন্ডিকেট। এ ছাড়া এক দিনের মুরগির বাচ্চা প্রতিদিন উৎপাদন হয় ২০ লাখ। একটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। যা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ১০-১৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত সেই বাচ্চা ৬২ থেকে ৬৮ টাকা মেসেজ করলেও প্রকৃতপক্ষে তা বিক্রয় হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। প্রতি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা ধরা হলে আলোচ্য সময়ে মুরগির বাচ্চা বিক্রি থেকে ৩১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ব্রয়লার মুরগি ও বাচ্চা বিক্রি থেকেই ৫২ দিনে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শীর্ষ কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা শতভাগ উৎপাদন করে করপোরেট গ্রুপ। তারাই আবার আংশিক ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে এবং চুক্তিভিক্তিক খামার করেন। এতে বাজার এসব প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে যাচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগির দাম কমল ৪০ টাকা : ব্রয়লার মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণে শীর্ষ উৎপাদনকারী ফার্মগুলো নতুন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোজার মাসে ভোক্তা পর্যায়ে অস্বস্তি কমাতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি খামারি পর্যায়ে ১৯০-১৯৫ টাকা দরে বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় চারটি মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। যা গেল কয়েক সপ্তাহে ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হয়ে আসছে। হাতবদল হয়ে এসব মুরগি ভোক্তাপর্যায়ে এসে বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়।
‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত এই চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত জাতীয় ভোক্তা অধিকারের কনফারেন্স কক্ষে কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, আফতাব বহুমুখী ফার্মস ও সিপি বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, গতকাল আমরা ২৭০-২৮০ টাকায় ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হতে দেখেছি। এ দাম অযৌক্তিক। এটা ২০০ টাকার বেশি হতে পারে না। ফার্ম পর্যায়ে ২২০-২৩০ টাকা দরে ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে। হাতবদল হয়ে ভোক্তাপর্যায়ে এ অবস্থা। ব্রয়লার মুরগি এসএমএসের মাধ্যমে নিলাম হচ্ছে। আমি তাদের আহ্বান করেছি, আপনারা এ রমজান মাসে একটু কম লাভ করেন। তারা একমত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, খামার থেকে আসা ব্রয়লার মুরগি হাতবদলে যেন দাম খুব বেশি না বাড়ে, সে বিষয়ে সংস্থাটি নজর রাখবে। ব্রয়লারের দাম কমাতে প্রয়োজনে বর্ডার উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
এ সময় কাজী ফার্ম কর্তৃপক্ষ জানান, তারা রমজানে ২২০ টাকা থেকে কমিয়ে ব্রয়লার বিক্রি করবেন ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়। এ বিষয়ে একমত পোষণ করছে আফতাব, প্যারাগন ও সিপি কোম্পানি।
রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে : মুরগি ও গরুর মাংসের দাম বাড়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে আগামী দুই-তিন মাসের জন্য মুরগি ও গরুর মাংস বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবে সংগঠনটি। গতকাল এফবিসিসিআই বোর্ডরুমে ‘রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি, মজুদ, সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভায়’ এ কথা জানানো হয়। এ সময় সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানান, রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশীয় উৎপাদক, ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার কিছু পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ ও কিছু পণ্য আমদানি বন্ধ রেখেছে। এ সুযোগে বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ালে হবে না। ভোক্তার ওপর এত চাপ দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় বেশি খেজুর আছে। পর্যাপ্ত রয়েছে ছোলা, পামঅয়েল, সয়াবিনসহ অন্যান্য পণ্য। আমরা চাই না ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের হেনস্তা করুক। পণ্য ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদ বিষয়ে সরকারের নিয়মনীতি রয়েছে। এসব বিষয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে বাজার কমিটিগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পণ্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হলে আমাদের জানান, আমরা সহযোগিতা করব।
জসিম উদ্দিন বলেন, এখন গরু ও পোলট্রির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। দেশীয় এ খাত বাঁচাতে এতদিন মাংস আমদানি বন্ধ ছিল। এখন তারা যদি সঠিক মূল্যে গরুর মাংস ও ব্রয়লার মুরগি দিতে না পারে তাহলে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলব, বাজার ঠিক রাখতে আমদানির অনুমতি দেওয়ার জন্য। আমদানি করলে যদি বাজারে দাম কমে যায়, তাহলে আমদানি করতে হবে। মানুষ যদি ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে না পারে, তাহলে ইন্ডাস্ট্রির কথা চিন্তা করে লাভ নেই।
এফবিসিসিআই সভাপতি ব্যবসায়ীদের বলেন, এবার সরকার বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে কঠোরভাবে। কোনো বাজারে বেশি মূল্য রাখা হলেই সেই বাজার কমিটি বাতিল করবে সরকার। একই সঙ্গে দাম বেশি নেওয়া প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সও বাতিল করা হবে। আমরা চাই না, রোজায় কোনো ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল হোক, কাউকে আটক করা হোক।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের সমস্যা থাকতে পারে। সমস্যাটি আমাদের জানাবেন। আমরা কথা বলব। আমাদের টিমও বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে। আশা করব আপনারা কেউ বেশি মুনাফা করবেন না।
কয়েক দফা বাড়ার পর রমজানের প্রথম দিন কিছুটা কমেছে মুরগির দাম। শুক্রবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমনটা দেখা গেছে। এ ছাড়াও গতকাল শীর্ষ চার পোল্ট্রি উৎপাদন প্রতিষ্ঠানকে তলব করে ভোক্তা অধিকার। পরে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় মুরগির দাম।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে ২৪৫-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালির দাম ২০ টাকা কমে ৩৬০ টাকায়, আর দেশি মুরগি ৬৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূলত চাহিদা কমে যাওয়ায় দাম কমেছে। তারা জানান, আগের তুলনায় তাদের বিক্রি কমে গেছে। এ অবস্থায় দাম আরও কমতে পারে বলে জানান তারা।
আর ক্রেতারা বলছেন, এখনও তাদের নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে মুরগি ও ডিম।
এদিকে, বাজার তদারকিতে সকাল থেকে অভিযানে নেমেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। রোজার প্রথম দিন শুক্রবার (২৪ মার্চ) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অভিযানে নামে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সকাল সাড়ে ১০টায় এ বাজারের কিচেন মার্কেটে অভিযান শুরু করেন সংস্থার সদস্যরা। অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। উপস্থিত আছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান আব্দুল জব্বার মণ্ডলসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা।
এর আগে, গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুরগির দাম সমন্বয়ের জন্য ডাকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সেখানে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, 'মুরগির দাম ২০০ টাকার বেশি হতে পারে না।'
ব্রাজিলের সমুদ্রতীরবর্তী শহর রিও ডি জেনেইরোর কাছে একটি অপরাধী চক্রের প্রধানের গ্রেপ্তারে অভিযানের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার রিও ডি জেনেইরোর উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সাও গনসালো শহরের শ্রমিকদের আবাসিক এলাকা সালগেইরোতে এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানায়। পুলিশের দাবি, নিহতরা সবাই সন্দেহভাজন অপরাধী।
ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য পারার মাদক-নেতা অভিযুক্ত লিওনার্দো কোস্তা আরাউজো সালগেইরোতে লুকিয়ে আছে- এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে আরাউজোও আছেন। পারার বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার নিহতের ঘটনায় তার হাত আছে বলেও অভিযোগ।
পুলিশ জানিয়েছে, আরাউজোকে গ্রেপ্তারে বৃহস্পতিবার চালানো এই অভিযানে হেলিকপ্টার ও সাঁজোয়া যান ব্যবহার করা হয়।
রিও শহরের পুলিশ প্রায়ই এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করে। শহরটির গভর্নর ক্লডিও কাস্টো সোশালে এক পোস্টে লেখেন, আমরা আমাদের এই শহরকে অন্য কোনো এলাকা থেকে আসা দুর্বৃত্তদের অভয়াশ্রম হতে দেব না।
এ ঘটনায় অপরাধী চক্রের স্থানীয় তিনজন সোর্সও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।