
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ১৯৯৫, ২১ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে মেলায় ঢুকেই ‘সময় প্রকাশন’-এর স্টলে চলে এলেন হুমায়ূন আহমেদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের হাউজ টিউটরের কোয়ার্টার এবং এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় বসবাসকালে প্রায় প্রতিদিনই মেলায় আসতেন তিনি। হলের বাসা থেকে মাঝেমধ্যে স্ত্রী ও সন্তানদেরসহ আনতেন। সেই দিন সঙ্গে ছিলেন অভিনেতা মোজাম্মেল হক, যিনি নাটকের চরিত্রের নাম ‘হানিফ’ ও ‘খাদক’ নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন। হুমায়ূন আহমেদ ‘সময় প্রকাশন’-এর স্টলে প্রবেশের আগেই অনেক পাঠক জড়ো হয়েছিলেন। সে বছর সময় থেকে লেখকের ‘এবং হিমু...’ বইটি প্রকাশিত হয়। তখন ফেব্রুয়ারি বইমেলার দৃশ্যই ছিল এরকম হুমায়ূন আহমেদের নতুন বই কবে মেলায় আসবে? হুমায়ূন আহমেদ কখন আসবেন? পাঠক-ভক্তরা খোঁজ রাখতেন। নতুন বই যে প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়েছে সেই স্টলের সামনে এসে পাঠকরা জড়ো হয়ে লেখকের জন্য অপেক্ষা করতেন। লেখককে একনজর দেখবেন আর তার অটোগ্রাফ নেবেন। সময় প্রকাশনের স্টলের সামনে ভিড় তখন উপচে পড়ছে, সবাইকে এক লাইনে দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু উৎসুক ভক্তদের ভিড় সামাল দেওয়া যাচ্ছে না পুলিশ দিয়েও। এক পর্যায়ে জনতার চাপে স্টলের সামনের কাউন্টার টেবিল ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হলো, পুলিশ কোনোক্রমে বাইরের জনতা ঠেকাচ্ছে আর স্টলের ভেতর থেকে সময়ের বিক্রয়কর্মীরা টেবিল চাপ দিয়ে ধরে রেখেছে। হুমায়ূন আহমেদ নিজমনে অটোগ্রাফ দিয়ে চলেছেন। ক্রেতাকে বই দেওয়ার লোক নেই। আমি এবং কবি হাসান হাফিজ বই দিচ্ছি। হাসান হাফিজ এসেছিলেন হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে দেখা করতে।
সে সময় বাংলা একাডেমির একজন পরিচালক ছিলেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, তিনি বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছিলেন। ভিড় ঠেলে এগিয়ে এসে নূরুল হুদা হুমায়ূন আহমেদকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন। এতে অপেক্ষমাণরা খুব অসন্তুষ্ট। তাদের চাপে হুমায়ূন আহমেদের বসার ব্যবস্থা করা হলো বর্ধমান হাউজের একটি কক্ষে। বর্ধমান হাউজের পূর্বদিকে গোলাকৃতির যে বারান্দা আছে তার সংলগ্ন রুমে বসতেন একাডেমির ফোকলোর পরিচালক শামসুজ্জামান খান। তার রুমেই লেখককে বসিয়ে অটোগ্রাফ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলো। পরবর্তী সময়ে জনাব খান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হন এবং মুহম্মদ নূরুল হুদা বর্তমান মহাপরিচালক।
বাংলাদেশে হুমায়ূন আহমেদ নামের একজন লেখকের অবিশ্বাস্য পরিমাণ বই বিক্রি হয় এবং ফেব্রুয়ারি বইমেলায় তার অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য মানুষের ভিড় কিংবদন্তি পর্যায়ে চলে গেছে এই সংবাদ কলকাতার বইয়ের সঙ্গে সম্পৃক্তদের বেশ উৎসুক করে তোলে। ১৯৯৪ সালের বইমেলায় কলকাতা থেকে ‘আনন্দ পাবলিশার্স’-এর ম্যানেজার বাদল বসু কলকাতার কয়েকজন জনপ্রিয় লেখকসহ বইমেলা দেখতে আসেন, সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয়তা।
ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল থাকতেন আমেরিকায়। ১৮ বছর পর স্ত্রী, পুত্র-কন্যাসহ বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছিলেন। বড় ভাইয়ের এই জনপ্রিয়তার কথা শুনে থাকলেও চোখে দেখা হয়নি। ১৯৯২ সালে তার আসা এবং যাওয়া নভেম্বর-ডিসেম্বরে সীমাবদ্ধ ছিল। ১৯৯৪ বা ’৯৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে এলেন। বইমেলায় বেড়াতে এলেন। হুমায়ূন আহমেদ তখন ভক্তদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন। দীর্ঘকাল বিদেশে থাকা জাফর ইকবালের স্ত্রী ড. ইয়াসমীন হক এই কালচারের সঙ্গে তেমন পরিচিত নন। উনি খুবই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লেন এবং আমাকে বারবার বলতে লাগলেন, ‘দাদা ভাইয়ের নিরাপত্তা কই? এভাবে তো যেকোনো সময় কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
এসব স্মৃতি এখন গল্প। এখন আর বইমেলাতে এমন ভিড় হয় না। দর্শক অধীর হয়ে কোনো প্রিয় লেখকের বইয়ের অপেক্ষায় থাকেন না! এই বিষয়গুলো বইমেলার একটি অতিরিক্ত আকর্ষণ সৃষ্টি করত। দলে দলে ক্রেতা, এমনকি দর্শক বইমেলায় আসতেন বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। ইদানীংকালের বইমেলায় সেই আকর্ষণ নেই, তাই সেরকম দৃশ্যের অবতারণাও হয় না।
বাংলাদেশের সৃজনশীল বইয়ের জনপ্রিয়তা সৃষ্টির পেছনে হুমায়ূন আহমেদের অনেক অবদান। এরকম অনেক গল্প আছে যা বললে বোঝা যাবে কীভাবে তিনি চেষ্টা করেছেন পাঠক বৃদ্ধিতে। তার শুরুটা খুব সুখকর ছিল না। গত শতকের নয় দশকে আমেরিকা থেকে ফিরে যখন আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিলেন, তখন অধ্যাপনার সঙ্গে সঙ্গে আবার শুরু করলেন লেখালেখি। কিন্তু পাঠক কই বা প্রকাশক কই? যে কয়েকজন প্রকাশক আছেন তাদের শুধু সৃজনশীল প্রকাশক বলা যায় না। তিনি চাইছিলেন এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে কেউ শুধু এদেশের লেখকদের সৃজনশীল বই-ই প্রকাশ করবেন। তখন কয়েকজন প্রকাশককে দিয়ে এ কাজটি তিনি করাতে পেরেছিলেন। আমদানিনির্ভরতা ঝেড়ে ফেলে দেশি বইয়ের প্রকাশনায় সম্পৃক্ত করাতে পেরেছিলেন দুয়েকজনকে। হুমায়ূন আহমেদ বলতেন, ‘আমি এমন ২৫ হাজার পাঠক সৃষ্টি করব। যেসব পরিবার তাদের বাসার বুক শেলফে হুমায়ূন আহমেদের প্রতিটি বই সাজিয়ে রাখবে।’ যদিও পরবর্তীকালে তার পাঠক সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি হয়েছিল। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, হুমায়ূন আহমেদ নিজের পাঠক সৃষ্টি করতে গিয়ে দেশের এক বৃহৎ অংশকে পাঠকে পরিণত করেছিলেন। এই পাঠকদের বইপড়া নেশায় পরিণত হয়েছিল, আর তারা শুধু হুমায়ূন আহমেদের বইয়ে সীমাবদ্ধ থাকেননি। অন্য লেখকদের বইও পড়েছেন। তাই তো ১৯৯০ সাল থেকে সারা দেশে বইয়ের পাঠক বৃদ্ধি পেতে থাকে, সৃষ্টি হয় অনেক নতুন লেখক, তারাও জনপ্রিয়তা পেতে থাকেন। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর এক দশক পরও এই প্রভাব সৃজনশীল বইয়ের বাজার এবং বইমেলায় পরিলক্ষিত হয়।
কিন্তু একথা তো সত্য যে, হুমায়ূন আহমেদের নতুন কোনো বই আর আসছে না, আসার উপায় নেই। সেই আকর্ষণ, সেই ক্রেজ সৃষ্টি হচ্ছে না, কেউ পারছেন না। কিংবদন্তিতুল্য লেখক হুমায়ূন আহমেদ এখনো পাঠকের হৃদয়ে বসবাস করছেন। পাঠক এখনো বইমেলা বা বইয়ের ঘাঁটি বাংলাবাজারে এসে হুমায়ূন আহমেদের বইগুলো খুঁজে ফেরে। একথা কেউ অস্বীকার করবেন না যে, অন্য যেকোনো লেখকের তুলনায় এখনো পাঠক হুমায়ূন আহমেদেই আটকে আছেন বেশি করে। যদিও লেখকের মৃত্যুর পর অনেক প্রকাশক তার পুরনো বই কয়েকটি একত্রিত করে নতুন একটি নাম দিয়ে প্রকাশ করছেন এবং এই ধারা অব্যাহত আছে। এতে করে পাঠক নষ্ট হচ্ছে। পাঠক একটি বই কিনে বাসায় নিয়ে যে ৫-৭টি উপন্যাস বা ২০-২৫টি গল্প দেখতে পান, সেগুলোর অধিকাংশই হয়তো আগে পড়েছেন। এ ধরনের সংকলন প্রকাশ থেকে বিরত থাকা আমাদের উচিত প্রকাশনার স্বার্থে। আমরা যদি সঠিকভাবে বিশ্বস্ততার সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের প্রকাশনাগুলো লালন করি, তবে আরও দীর্ঘদিন সৃজনশীল সাহিত্য উপকৃত হবে এই লেখকের বই থেকে। আমাদের ভালো আমাদেরই বুঝতে হবে।
গত শতাব্দীর নয় দশকের একজন সৃজনশীল প্রকাশক হিসেবে আমার উত্তরণের জন্য আমি ঋণী হুমায়ূন আহমেদের কাছে। তার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। প্রকাশক, সময় প্রকাশন
পরিবহন ধর্মঘট ও পথে পথে পুলিশি তল্লাশিসহ বিভিন্ন বাধা পেরিয়ে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর ও বরিশালের মতো ফরিদপুরেও বড় সমাবেশ করেছে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার ফরিদপুর শহরতলির কোমরপুরের আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউট মাঠে হওয়া এই সমাবেশে দলটির নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশের মানুষের প্রাণের দাবি। গত দুটি নির্বাচনে আপনারা মানুষের সঙ্গে প্রবঞ্চনা করে, মিথ্যা কথা বলে, ভুল বুঝিয়ে নির্বাচন নির্বাচন খেলা করে ক্ষমতায় চলে গেছেন। এবার আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি, মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এবার দেশে আর কোনো নির্বাচন হবে না, যতক্ষণ না নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেওয়া হবে।’
ফরিদপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এ এস এম কাইয়ুমের সভাপতিত্বে এবং জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ কে কিবরিয়ার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাশুকুর রহমান, মো. সেলিমুজ্জামান, ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বক্তব্যে বলেছেন তাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে সরিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। তিনি বলেন, ‘তারেক জিয়ার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। জাতীয় সরকার কেমন হবে তা আগামীতে সমাবেশের মাধ্যমে আমাদের নেতা তারেক রহমান নির্দেশনা দেবেন।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই শেখ হাসিনার পদত্যাগ, আমরা চাই এই সংসদকে বিলুপ্ত করতে হবে, আমরা চাই অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সেই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। সেই নির্বাচন কমিশন নতুন নির্বাচন করবে, নতুন পার্লামেন্ট করবে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, সেই নির্বাচনে আমরা জয়ী হলে একটা জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। জাতীয় সরকার গঠন করে আমরা রাষ্ট্রের মেরামত করতে চাই। আগামীতে রাষ্ট্রনায়ক হবেন তারেক জিয়া।’
বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে এক যুগে ১০ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘দেশের সম্পদ লুট করে তারা বিদেশে পাচার করছে। সরকার কোথায় চুরি করেনি? মেগা প্রজেক্ট থেকে শুরু করে বেকার ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা পর্যন্ত চুরি করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। রাজনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে, দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমাদের ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’
বিকেল ৪টা ২৮ মিনিটে শুরু করে প্রায় আধা ঘণ্টা বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নাকি গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। এটা ভূতের মুখে রাম নাম। প্রশ্ন করি, আপনাদের কাছে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা কী? আপনাদের গণতন্ত্র মানে কি এই যে অন্য কাউকে কিছু বলতে দেব না?’
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তারা মনে করে এ দেশ তাদের বাবার দেশ, দেশের আর সকলে চাকরবাকর। কিন্তু এ অবস্থা আর চলবে না, মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তারা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবে না।’
বেলা আড়াইটায় সমাবেশের প্রধান অতিথি ও অন্য অতিথিরা মঞ্চে উঠলেও মূলত নেতাদের বক্তব্য দেওয়া শুরু হয় বেলা ১১টা থেকেই। এর আগেই সমাবেশের মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। ফরিদপুরের ৯টি উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে খ- খ- মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে জড়ো হন নেতাকর্মীরা। রংবেরঙের টি-শার্ট-ক্যাপ পরে তারা দলের নেতাদের ছবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন বহন করেন।
পথে পথে বাধা পেরিয়ে মুখর সমাবেশস্থল : গত শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হওয়া বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে বিএনপি এবং এর সহযোগী সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী ও অনুসারী দলটির সমাবেশে যোগ দেন। গণসমাবেশ বিকেল ৩টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে যোগ দেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। ফরিদপুরসহ আশপাশের জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীদের ভিড়ে পরিপূর্ণ হয়ে যায় সমাবেশস্থল আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউট মাঠ। খণ্ড খণ্ড মিছিলে মুখরিত হয়ে ওঠে মাঠ ও সংলগ্ন এলাকা। অবশ্য এই সমাবেশের তিন দিন আগে থেকেই ওই মাঠে আসতে শুরু করেছিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। গত শুক্রবার রাতেই তাদের ভিড়ে পরিপূর্ণ হয়ে যায় মাঠটি।
বিএনপির এই বিভাগীয় গণসমাবেশের আগের দিন শুক্রবার সকাল থেকে ফরিদপুরে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়। ফলে ফরিদপুরের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। এতে বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বিএনপি নেতাতের অভিযোগ, তাদের সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে সরকারের ইন্ধনে বাস-মিনিবাস ধর্মঘট ডাকা হয়।
এর আগে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর ও বরিশালে বিএনপির পাঁচটি গণসমাবেশ হয়েছে। সেসব সমাবেশেও নানাভাবে বাধার মুখে পড়েন সমাবেশমুখী নেতাকর্মী-সমর্থকরা। পরিবহন ধর্মঘট ছাড়াও নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে। বিএনপির এই গণসমাবেশের আগের দিন শুক্রবার বিকেলে শহরে কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে গণমিছিল করে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ।
গতকাল বিএনপির সমাবেশে যাওয়ার পথে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের তল্লাশির ফলে ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ। সকাল থেকে শহরে যান চলাচল ছিল একেবারেই কম। এতে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। হাতে গোনা কিছু ভ্যান, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করলেও পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রী ও চালকরা।
ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত : গতকাল সকাল ১০টা থেকে ফরিদপুর জেলায় মোবাইল ইন্টারনেট সেবায় বিঘ্ন ঘটে বলে দাবি করেছেন অনেকেই। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা জানান, সকাল ১০টার পর থেকে তারা মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেননি।
বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সমাবেশের প্রেস উপকমিটির আহ্বায়ক এ বি সিদ্দিক মিতুল অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকার নানাভাবে আমাদের এই সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। সর্বশেষ তারা জেলার মোবাইল ইন্টারনেটের গতি স্থির করেছে, কিন্তু তাদের অপচেষ্টা সফল হবে না।’
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লোডশেডিং, ‘দুর্নীতি-দুঃশাসন’, ‘লুটপাট’, মামলা-হামলা, ‘গুম’, ‘হত্যা’, ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। তারই অংশ হিসেবে সারা দেশে হচ্ছে দলটির বিভাগীয় সমাবেশ। এর আগে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর ও বরিশালে সমাবেশ করেছে দলটি।
বিএনপি এখনই মনোনয়ন বাণিজ্য শুরু করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘ফরিদপুরে আজ টাকা উড়ছে, মির্জা ফখরুল কাকে কাকে মনোনয়ন দেবেন, কাকে মন্ত্রী বানাবেন এসব কথা বলে বস্তায় বস্তায় টাকা নিচ্ছেন। তারেক রহমান বস্তায় বস্তায় টাকা সুইস ব্যাংকে পাঠিয়েছেন। এফবিআই এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়েছে। এবার ডিসেম্বরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তাদের এই বাণিজ্যের বিরুদ্ধে খেলা হবে, খেলা হবে আন্দোলনে, খেলা হবে নির্বাচনে। বিএনপি ফাউল করলে তাদের লাল কার্ড দেখাবে জনগণ।’
গতকাল শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। দীর্ঘ আট বছর পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলো। নিয়াজ মোহাম্মদ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন উদ্বোধন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এই বাংলার ইতিহাস বীরের ইতিহাস, বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস। যদি জিয়াউর রহমান হত্যাকারীদের সঙ্গে না থাকতেন, তাহলে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সাহস হতো না। জিয়াউর রহমান খুনিদের পুরস্কৃত করেছেন। এই জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রক্ষা করতে আইন সংশোধন করেছিলেন। ১৫ আগস্টের মাস্টারমাইন্ড জিয়াউর রহমান, আর ২১ আগস্টের মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমান।’
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর কারণে যারা মেজর থেকে মেজর জেনারেল হয়েছেন তারাই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা জিয়াউর রহমান ও খালেদ মোশাররফের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। জেনারেল শফিউল্লাহ জীবিত থাকলেও জীবন্মৃত, মানুষ তাকে ঘৃণা করে।’
শেখ সেলিম আরও বলেন, ‘তারেক রহমান দেশে আসলে গণপিটুনির শিকার হবেন।’
সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর, কেন্দ্রীয় সদস্য পারভীন সুলতানা কল্পনা ও ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম (অব.)।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত, এবাদুল করিম বুলবুল ও বিএম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন, পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবীর, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী প্রমুখ।
সম্মেলনের শেষদিকে সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে সভাপতি, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকারকে সাধারণ সম্পাদক, সাবেক মেয়র হেলাল উদ্দিনকে এক নম্বর সহসভাপতি, মো. হেলাল উদ্দিনকে সহসভাপতি ও মাহাবুবুল বারী চৌধুরী মন্টুকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি বলেন, এই পাঁচ নেতা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনকে সঙ্গে নিয়ে আগামী এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবেন।
সম্মেলন শুরু হয় দুপুর আড়াইটার পর। তবে সকাল ১১টার পর জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী বাদ্য-বাজনা, ব্যানার ফেস্টুনসহ সম্মেলন যোগ দিতে আসেন। দুপুর ২টার মধ্যেই পুরো স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সম্মেলন উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ ব্যাপক ও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। গত এক সপ্তাহ থেকে জেলা শহর সেজে ওঠে ব্যানার-ফেস্টুন ও তোরণে।
মেলবোর্নে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্তান আর ইংল্যান্ডেরই দেখা হওয়াটা আসলে দুটো ভিন্ন ক্রিকেট দর্শনেরও মুখোমুখি অবস্থান। ইংল্যান্ড, ক্রিকেটের জনক এবং খেলাটাকে ঘিরে তাদের যত চিন্তা, গবেষণা এবং তত্ত্বের প্রয়োগ সবই খেলাটাকে করেছে সমৃদ্ধ। অন্যদিকে পাকিস্তান, প্রকৃতির খেয়ালে এখানে অনাদরে অযতেœ বেড়ে ওঠে অদ্ভুত সব প্রতিভা। নানান ধরনের বৈপরীত্য আর গোলমালের ভেতরেও কেমন করে যেন ঠিকই সাফল্যের সন্ধান পেয়ে যায় তারা। ঠিক খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ছিনিয়ে নেয় শিরোপা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালটা যেন পেশাদারি আর প্রতিভার মুখোমুখি অবস্থান।
প্রায় এক বছর আগে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গত আসরেই সেমিফাইনালে খেলেছিল পাকিস্তান ও ইংল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে ফাইনালে খেলা হয়নি গ্রুপ পর্বে দারুণ খেলা ইংল্যান্ডের, অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথু ওয়েডের ক্যাচটা হাসান আলী ছেড়ে দিয়ে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ অভিযানটাই শেষ করে দিলেন সেমিফাইনালে।
ভাগ্য তাদেরই আবার মুখোমুখি করে দিল মেলবোর্নে। হয়তো ১৯৯২’র স্মৃতি ফিরিয়ে আনতেই। রাজনৈতিক সমাবেশে পায়ে গুলিবিদ্ধ হওয়া ইমরান খান কি বাড়িতে টিভি সেটের সামনে বসে দেখবেন, ৩০ বছর পর এমসিজিতে বিশ্বকাপটা উঁচিয়ে ধরেছেন বাবর আজম? গ্রাহাম গুচের কি আক্ষেপ মিটবে জস বাটলারের হাতে কাপটা দেখতে পেলে?
পাকিস্তান এবং ইংল্যান্ড, দুই দলেরই পথচলায় ছিল হোঁচট। ইংল্যান্ড হেরে যায় আয়ারল্যান্ডের কাছে, পাকিস্তানের হার জিম্বাবুয়ের সঙ্গে। তবে পাকিস্তানের ফাইনালে খেলাটা মনে করিয়ে দেয় সেই ১৯৯২’র বিশ্বকাপকেই। নেদারল্যান্ডসের অবিশ্বাস্য কীর্তিতে সৌভাগ্যের দরজা খুলে যায় পাকিস্তানের সামনে, গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে হারিয়ে তারা পৌঁছে যায় সেমিফাইনালে। সেখানে প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড, একাধিকবার যাদের বিপক্ষে নকআউটে জয়ের নজির আছে পাকিস্তানের। ব্ল্যাকক্যাপদের হারিয়ে সবার আগে ফাইনালে পাকিস্তান, অথচ আসরের প্রথম দুটো ম্যাচেই হেরেছিল তারা।
অন্যদিকে ইংল্যান্ড, শুরু থেকেই ফেভারিটের তকমা গায়ে সেঁটে থাকলেও আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে হার আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটা বৃষ্টিতে পয়েন্ট ভাগাভাগি হওয়াতে সেমিফাইনালে ওঠা নিয়ে তৈরি হয়েছিল শঙ্কা। শেষ চারে জায়গা করলেও ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল, আইসিসির ষড়যন্ত্রৃ নানান তত্ত্ব ঘিরে ধরেছিল ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচকে। জস বাটলার আর অ্যালেক্স হেলস নির্মম প্রহারে সব কানাঘুষাকে একদম তাসমান সাগরে নিয়ে ফেলেছেন। ভারতের ১৬৮ রান ১৬ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে যেভাবে জিতেছে ইংল্যান্ড, তার তুলনা দেওয়া যায় কেবল ২০১৪ ফুটবল বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে ব্রাজিলের ৭-১ গোলের হারকে। এতটা একপেশে সেমিফাইনালে কোনো ফেভারিট দলকে নিকট অতীতে এভাবে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে দেখার স্মৃতি অনেকেরই নেই।
পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ১৯৯২’র বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য এবং পিসিবির চেয়ারম্যান রমিজ রাজা দেখা করেছেন দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে। তাতে বেড়েছে মনোবল। অন্যদিকে জস বাটলার অধিনায়ক হিসেবে তার প্রথম বছরে, প্রথম বড় আসরেই শিরোপা জয়ের খুব কাছাকাছি। ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী ইংল্যান্ড বছর তিনেকের মাথায় আরও একটা বিশ্বকাপ জয়ের দ্বারপ্রান্তে।
বাটলারের কাছে যখন প্রশ্নটা করা হয়েছিল, তখনো মেয়েদের রাগবি বিশ্বকাপের ফাইনালটা হয়নি। যেখানে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে গেছে ইংল্যান্ড। রাগবি লিগ ওয়ার্ল্ড কাপেরও সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড, আসছে ফুটবল বিশ্বকাপও। এত কিছুর ভিড়ে ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়টা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
বাটলারের জবাব ছিল, ‘২০১৯ সালের বিশ্বকাপ জয়ের প্রভাব আমরা দেখেছি। ট্রাফলগার স্কয়ার লোকারণ্য ছিল, জানি না এবারও সকাল ৮টায় ট্রাফলগার স্কয়ারে কেউ খেলা দেখতে আসবে কি না তবে বাড়িতে থাকলেও তাদের শুভকামনা পাব।’ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলায় সেদেশের ফ্রি-টু-এয়ার চ্যানেলে সরাসরি দেখা যাবে সম্প্রচার, এতদিন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের খেলা দেখা যাচ্ছিল কেবল পে-চ্যানেলেই।
অন্য অনেকগুলো খেলায় সাফল্য আসে বলেই হয়তো ক্রিকেটের বিশ্বকাপ জেতা বা না জেতায় খুব বড় কোনো অদলবদল হবে না ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে। যেমনটা হয়েছিল ২০১৫ সালে, বাংলাদেশের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার পর। অন্যদিকে পাকিস্তান বা উপমহাদেশের বেলায় ক্রিকেট যতটা না খেলা, তা চেয়ে বেশি রাজনৈতিক যন্ত্র। পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতা, সহিংসতা, অর্থনৈতিক দুরবস্থা সবই কিছুদিনের জন্য চাপা পড়ে যাবে শিরোপা জয়ের উচ্ছ্বাসে।
প্রায় একই দল নিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে যাওয়ার নজির আছে পাকিস্তানের, আবার নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ জেতার উদাহরণও আছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের মাটিতেই পাকিস্তানকে ৭ টি-২০ ম্যাচের সিরিজে ৪-৩ ব্যবধানে হারিয়ে আসার স্মৃতিটাও ইংল্যান্ডের টাটকা।
মুখোমুখি দুই দলের ভেতর শক্তি আর সামর্থ্যরে ফারাকটা খুবই কম, তবে মানসিকতায় বিস্তর। একদিকে ইংল্যান্ড, পেশাদার এবং নির্মোহ। অন্যদিকে পাকিস্তান, আবেগি এবং খেয়ালি। পেশাদারি মানসিকতা হয়তো ঝুঁকি নিতে দেবে না, আবার অন্ধ আবেগ কী করতে পারে তার উদাহরণ দেখিয়ে গেছে বাংলাদেশ।
এমন ম্যাচে তাই হতে পারে যে কোনো কিছুই। সেমিফাইনালে অমন রুদ্রমূর্তির পর ইংল্যান্ডকে কেউ কেউ খানিকটা এগিয়ে রাখছেন, কিন্তু মনে রাখতে হবে ভুবনেশ্বর কুমার আর শাহিন শাহ আফ্রিদিতে ততটাই ফারাক যতটা আম আর আমড়ায়!
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার কখনো রিজার্ভ থেকে এক পয়সাও নষ্ট করে না; বরং প্রতিটি অর্থ ব্যয় করে বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থে ও কল্যাণে।
গতকাল শনিবার ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজের উদ্বোধনের সময় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে সাভারের আশুলিয়া বাজারসংলগ্ন কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তিনি। ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় হবে ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি ৪ লাখ টাকা।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আজকাল বিরোধী দল থেকে প্রশ্ন করে রিজার্ভের টাকা গেল কোথায়, সারা দেশে অপপ্রচার করে। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল রিজার্ভ ছিল তখন ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার। তারা পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিল, ওই সময় রিজার্ভ ৫ বিলিয়নের মতো বৃদ্ধি পেয়েছিল। আর আমরা সেই রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়নে পৌঁছাই। এর মধ্যে করোনার আঘাত এবং একই সঙ্গে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা তৈরি হয়েছে। আমাদের অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা করোনার ভ্যাকসিন কিনে এনেছি। বিনা পয়সায় টেস্ট করিয়েছি, টিকা দিয়েছি। কোনো উন্নত দেশও বিনা পয়সায় টেস্ট করেনি, ভ্যাকসিন দেয়নি।’
খাদ্যশস্য, জ্বালানি তেলসহ এখনো অনেক পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যা কিছু আমদানি করতে হচ্ছে, সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। রিজার্ভ যা খরচ করছি জনগণের কল্যাণে, জনগণের মঙ্গলে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রিজার্ভের অর্থ থেকে বিমান কেনা হয়েছে। নদীতে ড্রেজিং করা হয়েছে এবং উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্য দেশের ডলার আনলে সুদ দিতে হয়। দেশের টাকা নিজেদের দেশে বিনিয়োগ করলে দেশের টাকা দেশই থাকে। পয়সা কেউ তুলে নিয়ে চলে যায়নি।’
শেখ হাসিনা এ সময় দেশের যোগাযোগব্যবস্থায় উন্নয়নের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আজ সকাল সাড়ে ৭টায় ফোন পেলাম। বলল, “আপা, আপনার জন্য ইলিশ পাঠিয়েছি।” সাড়ে ৭টায় মেসেজ পেলাম, সাড়ে ৯টায় ইলিশ চলে আসল। এটি হয়েছে যোগাযোগটা সহজ হওয়ার কারণে।’
সরকারপ্রধান এ সময় বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, ‘চুরি করে বিএনপি অর্থ-সম্পদ বানিয়েছে। জিয়া মারা যাওয়ার সময় একটা স্যুটকেস ছাড়া কিছু রেখে যায়নি। পরে দেখি হাজার হাজার কোটি টাকা। মানি লন্ডারিং মামলায় তারেক রহমানের সাত বছরের সাজা হয়েছে, এ কারণে তাদের মুখে সমালোচনা মানায় না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত ১৩ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ বদলে গেছে। একটি মানুষও গৃহহীন, ভূমিহীন থাকবে না, আমরা বলেছি। যত টাকা, সব আমরা মানুষের কল্যাণে খরচ করছি। করোনায় সহায়তা দিয়েছি। প্রণোদনা দিয়েছি। মালিকদের হাতে না দিয়ে মোবাইলের মাধ্যমে সরাসরি শ্রমিকদের হাতে দিয়েছি। কৃষকদের ভর্তুকি দিচ্ছি। মানুষের কল্যাণই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছি।’
আসন্ন বৈশি^ক সংকট মোকাবিলায় আবারও পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘নিজেদের ফসল উৎপাদন করতে হবে, খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। প্রতিটি বক্তৃতায় এ কথা বলি। পৃথিবীর কোথাও দুর্ভিক্ষ হলেও বাংলাদেশে যেন ধাক্কা না লাগে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করে দিচ্ছি চলাচল ও পরিবহন সহজ হয় যাতে। নৌ, সড়ক, আকাশপথ সহজ করেছি। এগুলো আকাশ থেকে পড়েনি। উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে এগিয়ে যেতে হবে।’
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু করে আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল হয়ে নবীনগর মোড় এবং ইপিজেড হয়ে চন্দ্রা মোড় পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে শীর্ষক এ প্রকল্প ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সঙ্গে ৩০টি জেলার সংযোগ স্থাপনকারী আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া ও বাইপাইল-চন্দ্রা করিডরে যানজট অনেকাংশে কমবে। উত্তরবঙ্গসহ ৩০টি জেলার চার কোটিরও বেশি মানুষ এক্সপ্রেসওয়ে থেকে উপকৃত হবে। এ ছাড়া জনগণ ও পণ্য পরিবহন সহজ ও দ্রুত করে তুলবে এবং যানজট কমাতে সহায়তা করবে। এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের নথিতে শূন্য দশমিক ২১৭ শতাংশ দেশের মোট জিডিপি বাড়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয়ের বেশির ভাগ অর্থ দেবে চীন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বক্তব্য দেন। সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মঞ্জুর হোসেন এক্সপ্রেসওয়ে সম্পর্কে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। আশুলিয়ায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমানসহ সর্বস্তরের মানুষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার ফরিদপুরে হয়েছে বিএনপির ষষ্ঠ বিভাগীয় গণসমাবেশ। এর আগে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর ও বরিশালে হওয়া গণসমাবেশগুলোর মতো ফরিদপুরের সমাবেশেও দলটির নেতাকর্মীদের বিভিন্ন বাধা পেরিয়ে অংশ নিতে হয়েছে। সমাবেশে অংশ নিতে যাওয়ার পথে শহরের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে বাধার মুখে পড়তে হয় বিএনপি নেতাকর্মীদের। এছাড়া পাশের অন্য জেলাগুলো থেকে সমাবেশগামী বিএনপি নেতাকর্মীরাও পুলিশি বাধার মুখে পড়েন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে বিএনপির সমাবেশ শুরুর আগে গতকাল সকাল ১০টা থেকে পুরো ফরিদপুর জেলায় মোবাইল ইন্টারনেট সেবায় বিঘ্ন ঘটে বলে জানিয়েছেন অনেকেই।
বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সকাল থেকে শহরের ভাঙ্গা রাস্তার মোড়, রাজবাড়ী রাস্তার মোড়, বদরপুরের মোড়, বাহিরদিয়া সেতু এলাকা ও নগরকান্দার তালমা মোড়ে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে বিভিন্ন যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়। কাগজপত্র পরীক্ষা ও তল্লাশির নামে করা হয় হয়রানি। এ সময় ইজিবাইক, ছোট পিকআপ ভ্যান, মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যানসহ বিভিন্ন ছোট যান থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ যাত্রীদেরও নামিয়ে দেওয়া হয়। দিনভর বিএনপির সমাবেশস্থলে যাওয়ার প্রধান পথ শহরের ভাঙ্গা রাস্তার মোড় ও রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে পুলিশের তৎপরতা বেশি দেখা গেছে। ফরিদপুর শহরে ঢোকা কিংবা শহর থেকে আশপাশের জেলায় যেতে হলে ওই দুই মোড় ব্যবহার করতে হয়। তবে পুলিশের দাবি, সমাবেশস্থলের আশপাশে যানজট ও জনদুর্ভোগ কমাতে এসব এলাকায় যান চলাচল করতে দেওয়া হয়নি।
ফরিদপুরে বিএনপির গণসমাবেশের আগের দিন গত শুক্রবার সকাল থেকে জেলা মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকে আঞ্চলিক বাস, মিনিবাসসহ দূরপাল্লার সব রুটে বাস ধর্মঘট শুরু হয়। গতকাল সকাল থেকে ফরিদপুর শহরে যান চলাচল একেবারেই কম দেখা গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। হাতেগোনা কিছু ভ্যান, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করলেও পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
জেলার প্রবেশ দ্বার শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড়, বদরপুরের মোড়, ভাঙ্গা রাস্তার মোড় ও ইমাম উদ্দিন স্কয়ার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পুলিশ তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে। এ সময় ইজিবাইক, ভ্যান, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ছোট যান থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ যাত্রীদেরও নামিয়ে দিতে দেখা যায়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, ‘সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য আমরা এই তল্লাশি করিনি। এটা আমাদের নিয়মিত চেকিংয়ের অংশ। মোটরসাইকেল বা গাড়ির কাগজপত্র দেখা নিয়মিত দায়িত্ব। এটা আমরা নিয়মিত করে থাকি। আর সন্দেহ মনে করলে কোনো গাড়িতে তল্লাশি করেছি। এটা জনগণের জানমাল ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ আইন অনুযায়ী করে থাকে।’
ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত : গতকাল সকাল ১০টা থেকে ফরিদপুর জেলায় মোবাইল ইন্টারনেট সেবায় বিঘ্ন ঘটে বলে দাবি করেছেন অনেকেই। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা জানান, সকাল ১০টার পর থেকে তারা মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেননি।
বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সমাবেশের প্রেস উপ-কমিটির আহ্বায়ক এ বি সিদ্দিক মিতুল অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকার নানাভাবে আমাদের এই সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। সর্বশেষ তারা জেলার মোবাইল ইন্টারনেটের গতি স্থির করেছে, কিন্তু তাদের অপচেষ্টা সফল হবে না।’
পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশে মাগুরা বিএনপির নেতাকর্মীরা : পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে ফরিদপুরের বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগ দেন মাগুরা জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। গতকাল সকাল ১০টার দিকে পাঁচ শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের শ্রীপুর উপজেলার ওয়াপদা বাজার এলাকায় জড়ো হন বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। জেলা বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান অভিযোগ করেন, মাগুরা জেলার বিএনপি নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশস্থলে যেতে চাইলেও পুলিশ তাদের নানাভাবে হয়রানি করে। সকালে শ্রীপুরের ওয়াপদাহ কামারখালী ব্রিজের কাছে সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়া মোটরসাইকেল বহর পুলিশ আটকে দেয়। পরে গড়াই ও মধমুতি নদীর তীর দিয়ে শ্রীপুরের গোয়ালদহ ও মহম্মদপুরের বাবুখালী মাঝিবাড়ির ঘাট পার হয়ে বিকল্প পথে ফরিদপুরের সমাবেশস্থলে পৌঁছেন নেতাকর্মীরা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাগুরার পুলিশ সুপার মসিউদ্দোলা রেজা বলেন, ‘হাইওয়েতে পুলিশের চেকপোস্ট রয়েছে। হেলমেটবিহীন অবস্থায় কোনো মোটরসাইকেলে ২-৩ জন মানুষ বহন করলে নিয়মানুয়ায়ী তাদের বাধা দেবে এটাই স্বাভাবিক। পুলিশ উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাউকে হয়রানি করেনি।’
শিবচর থেকে ট্রলারে ফরিদপুরর সমাবেশে বিএনপি নেতাকর্মীরা : শিবচর থেকে ট্রলারে করে ফরিদপুরের সমাবেশে যোগ দেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, যানবাহন না পাওয়া, ধরপাকড় ও হয়রানি এড়াতে নদীপথ বেছে নিয়েছিলেন তারা। ট্রলারে উপজেলার দত্তপাড়া, সন্ন্যাসীর চর, বন্দরখোলা, পাঁচ্চর, কাঁঠালবাড়ি ও কুতুবপুর ইউনিয়নের চারশতাধিক নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দেন। এরমধ্যে গত শুক্রবার রাত ২টার দিকে আড়িয়াল খাঁ নদের তীরবর্তী মাদবরেরচর হাটের কাছ থেকে তিনটি ট্রলারে ফরিদপুরের উদ্দেশে রওনা হন বিএনপি নেতাকর্মীরা। তারা গতকাল সকাল ৯টার দিকে সমাবেশস্থলে পৌঁছান।
মাদবরেরচর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইমারাত বেপারী বলেন, ‘শিবচর থেকে কোনো বাস, মাইক্রোবাস ভাড়া পাওয়া যায়নি। পরে আমরা আমাদের এলাকা থেকে বড় একটি ট্রলার ভাড়া করি। কিন্তু গতকাল (শুক্রবার) রাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাধা দিলে পরে আমরা ছোট তিনটি ট্রলার ভাড়া করে রওনা হই।’
প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন মাগুরা এবং শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
বরিশালের উজিরপুরে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে এসে সংসদ সদস্যের সামনে আওয়ামী লীগের এক সহসভাপতিকে পিটিয়েছেন আরেক সহসভাপতি। গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উজিরপুর উপজেলা পরিষদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। মারধরে আহত আওয়ামী লীগ নেতাকে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
তিনি হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। নাম মো. ইদ্রিস সরদার (৪৫)। তাকে পিটিয়েছেন একই কমিটির সহসভাপতি ও উজিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হাফিজুর রহমান ওরফে ইকবাল। তারা দুজনই বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহ আলম তালুকদারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। দুজনই এই সংসদ সদস্যের সঙ্গে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। এদিকে মারামারির এ ঘটনায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দুই নেতা এবং ইউনিয়ন যুবলীগের এক নেতাকে সাময়িকভাবে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় লোকজন ও আহত আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে উজিরপুর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গতকাল সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য মো. শাহ আলম তালুকদার। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রধান অতিথি অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হন। তার সঙ্গে ছিলেন হাফিজুর রহমান ও ইদ্রিস সরদার। এ সময় হাফিজুর সংসদ সদস্যের সামনে ইদ্রিসকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করলে ইদ্রিস তার প্রতিবাদ জানান। এরপর হাফিজুর তাকে সংসদ সদস্যের সামনেই মারধর শুরু করেন।
মারধরের শিকার ইদ্রিস অভিযোগ করে বলেন, ‘সংসদ সদস্যের সামনে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর আমাকে নিয়ে কটূক্তি ও অশালীন মন্তব্য করে। আমি প্রতিবাদ করলে হাফিজ আমার ওপর হামলা চালিয়ে মারধর শুরু করে। এ সময় তার সঙ্গে থাকা ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডার কাজী রিয়াজ, পলাশ তালুকদার ও রুবেল হোসেনসহ ৭-৮ জন সন্ত্রাসী আমাকে লাঠিপেটা করে রক্তাক্ত জখম করে।’
তবে ইদ্রিসকে মারধরের ঘটনা তার এবং সংসদ সদস্যের সামনে ঘটেনি বলে দাবি করেন অভিযুক্ত হাফিজুর।
উজিরপুর মডেল থানার ওসি মো. কামরুল হাসান গতকাল বিকেলে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের মাঠে ফুল দেওয়ার পরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি যারা আছেন, তারা বসে বিষয়টি মিটমাট করেছেন।’
দল থেকে ৩ নেতা বহিষ্কর : মারামারির এ ঘটনায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বামরাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান পলাশ, শিকারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ রিয়াজুল ইসলাম কাজী ও বামরাইল ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য জসিম উদ্দিন রুবেলকে সাময়িকভাবে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে তাদের বহিষ্কারের বিষয়টি উজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. গিয়াস উদ্দিন বেপারী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মারামারির ঘটনায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে উজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভার সিদ্ধান্তে তাদের সাময়িকভাবে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. গিয়াস উদ্দিন বেপারী বলেন, ‘দল থেকে সাময়িকভাবে তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিষয়টি আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক আলহাজ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সংসদ সদস্য শাহ আলম তালুকদারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
নেত্রকোনায় র্যালিতে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ, আহত ৬০ : নেত্রকোনার দুর্গাপুরে মহান স্বাধীনতা দিবসে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদনে র্যালি নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। গতকাল রবিবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার কাচারি মোড় থেকে ব্যানার নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা শহীদ বেদিতে যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় নিজেদের অন্তত ৬০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি বিএনপি নেতাদের। অন্যদিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলায় পাঁচ সদস্য আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়া ঘটনার সময় বিএনপির চার কর্মীকে আটকের কথা জানানো হয়।
এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুর্গাপুরে বিএনপির স্বাধীনতা দিবসের র্যালিতে পুলিশ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
নেত্রকোনা পুলিশের দাবি, র্যালি নিয়ে শহীদ বেদিতে ফুল দিতে যাওয়ার সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে গালিগালাজ শুরু করেন দুর্গাপুর বিএনপির নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। তখন তাদের বাধা দিলে সংঘর্ষে জড়ান। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চার রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। পরে বিএনপির চার নেতাকর্মীকে আটক করা হয়।
তবে বিএনপি নেতাদের দাবি, র্যালি নিয়ে শহীদ বেদিতে ফুল দিতে যাওয়ার সময় ব্যানার নিতে বাধা দেয় পুলিশ। এ নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় পুলিশের। একপর্যায়ে লাঠিচার্জ করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে নেতাকর্মীরা আহত হন।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, পুলিশ চার রাউন্ড গুলি ছোড়ার কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে ১৫-২০ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়াসহ ঘটনাস্থল থেকে সাতজন নেতাকর্মীকে ধরে নিয়ে যায়।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জহিরুল আলম ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘কাচারি মোড় এলাকা থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণের জন্য শত শত নেতাকর্মীদের নিয়ে শহীদ মিনারে যাওয়ার প্রাক্কালে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ তর্কবিতর্কে জড়িয়ে গিয়ে আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে আমাদের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। পরে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। এছাড়া সেখান থেকে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে ধরে নিয়ে যায়।’
দুর্গাপুর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব সম্রাট গণি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে প্রথমে আমাদের ব্যানার নিয়ে টানাটানি ও কাগজ ছোড়াছুড়ি হয়। পরে যুবদলের পক্ষ থেকে সেøাগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ ১৫-২০ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে। নিরস্ত্র অবস্থায় তখন আমরাও ঢিল দিই। মোবাইলে ভিডিও করার সময় আমাদের ৭-৮টি মোবাইল ছিনিয়ে নেয় পুলিশ। এছাড়াও মসজিদের ভেতরে নেতাকর্মীদের রাখা প্রায় তিনশ’ মোটরসাইকেলের খোঁজ নেই। কিন্তু পুলিশ বলছে, তারা ৩০-৪০টার মতো মোটরসাইকেল নিয়ে গেছে। আমার ডান হাঁটুতে বুলেট লেগেছে। ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শিশিরের মাথায় গুলি লাগাসহ ৫০-৬০ জন নেতাকর্মী আহত হন।’
তবে দুর্গাপুর থানার ওসি মো. শিবিরুল ইসলাম উল্টো বিএনপি নেতাকর্মীরা আগে পুলিশের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির লোকজন রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করেছে। ইট-পাটকেল মারাসহ ককটেল ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।’
আর নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি ও মিডিয়া) মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএনপির লোকজন শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসার সময় দুর্গাপুর পৌরসভার কাচারি মোড় এলাকায় পৌঁছার পরে পুলিশকে দেখে বিভিন্ন ধরনের সেøাগান ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। পুলিশ গালিগালাজের কারণ জিজ্ঞেস করলে তখন বিএনপির নেতাকর্মীরা ঠেলা ধাক্কা দেওয়া শুরু করে ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে পুলিশ তাদের সতর্ক করে লাঠিচার্জ ও চার রাউন্ড ফায়ার করে এবং চারজনকে আটক করে।’
নিন্দা ও প্রতিবাদ ফখরুলের : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেছেন, ‘স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের ওপরই কেবল বাধা দেওয়া হচ্ছে না, বরং যেকোনো জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানের ওপরও ন্যক্কারজনক হামলা চালানো হচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলায় কেবল আওয়ামী সন্ত্রাসীরাই নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এ ধরনের হামলায় পিছিয়ে নেই।’ গতকাল বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দুর্গাপুর উপজেলা ও পৌর বিএনপিসহ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত মহান স্বাধীনতা দিবসের র্যালিতে পুলিশের বাধা দিয়েছে, টিয়ারশেল, গুলি ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। এতে ৬০ জনের অধিক নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ এবং ৮ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আহত নেতাকর্মীরা গুরুতর আহতাবস্থায় বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমরা এ ধরনের পৈশাচিক ও ন্যক্কারজনক হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন না থাকার কারণে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মাত্রা এখন আরও ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। পুলিশ আইনের রক্ষক অথচ তারাই আইনভঙ্গের মাধ্যমে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম চালাচ্ছে।’
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব অবিলম্বে গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা ‘মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহারসহ তাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান। এছাড়া তিনি ‘পুলিশি গুলিবর্ষণে’ আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করেন।
প্রতিবেদনটি নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল প্রতিনিধি ও উজিরপুর সংবাদদাতার তথ্যে তৈরি
রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় চিকিৎসাধীন খলিলুর রহমান হাসান (৩২) নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৫।
গতকাল রবিবার সকাল ৯টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খলিলের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি জানান, হাসানের শরীরের ১২ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। এছাড়া তার শরীরে গুরুতর আঘাতও ছিল। আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল তাকে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকালে তার মৃত্যু হয়েছে।
হাসানের ছোট ভাই রাহাতুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে জানান, তাদের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার সোনাপুর গ্রামে। বাবার নাম আবু আহমেদ সিদ্দিক। দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক হাসান। সিদ্দিকবাজার এলাকায় থাকতেন হাসান। ফুটপাতে ব্যাগ বিক্রি করতেন। ঘটনার সময় সিদ্দিকবাজারের রাস্তায় বসে ব্যাগ বিক্রি করছিলেন। তখন বিস্ফোরণে তিনি গুরুতর আহত ও দগ্ধ হন।
২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করা ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটকের জনপ্রিয়তা এখন বিশ্বজুড়ে। একেবারে কৈশোর শুরু করে সদ্য তারুণ্যে পা রাখাদের কাছে এই চীনা অ্যাপ ভরপুর বিনোদন আবার কারও কারও কাছে রীতিমতো নেশা। ব্যবহারকারীদের বিচিত্র কাণ্ডকারখানার জন্য ব্যাপক আলোচিত টিকটক এখন ইন্টারনেট জগতে জনপ্রিয়তার কাতারে তৃতীয়। বলছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, প্রতি মাসে কমপক্ষে ১০০ কোটি মানুষ টিকটক ব্যবহার করে। কিন্তু টিকটকের এই টগবগিয়ে ছুটে চলায় বাদ সাধছে পশ্চিমা সরকারগুলোর চীনভীতি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে পশ্চিমা প্রায় সব দেশেই বেশ বাধার সম্মুখীন এখন তারুণ্যের অ্যাপটি। পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে টিকটকের ব্যাপারে সর্বশেষ কঠোর অবস্থানে গেল মানুষের বৈচিত্র্য আর শিল্প-সংস্কৃতির দেশ হিসেবে পরিচিত ফ্রান্সও। তবে ফ্রান্সের কড়াকড়ি কেবল টিকটকেই নয়, ফরাসি সরকারের নিজস্ব জনপ্রতিনিধিদের ডিভাইস থেকে টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, নেটফ্লিক্স এমনকি ক্যান্ডিক্রাশের মতো গেম অ্যাপেও সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। যার মূল কারণ সাইবার নিরাপত্তা কিংবা তথ্য বেহাতের ঝুঁকি। দেশটির জনসেবা দপ্তরের মন্ত্রী স্ট্যানিসলাস গুয়েরিনি বলেন, ‘এসব অ্যাপ কর্মী ও প্রশাসন উভয় পক্ষের ডেটাই ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার ও ডজনখানেক অঙ্গরাজ্য, কানাডা, ইউরোপীয় কমিশন ও যুক্তরাজ্যের সরকারি ডিভাইসগুলোতে এরই মধ্যে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে টিকটক। এর পরপরই ফ্রান্সের এই সিদ্ধান্ত এলো। ওই সব ঘটনার পেছনের যুক্তি প্রায় একই ধরনের, যেখানে দেশগুলোর উদ্বেগ, চীনা সরকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ করে তাদের সম্পর্কে ভুল প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি টিকটকের মূল কোম্পানি বাইটড্যান্সকে বিভিন্ন সংবেদনশীল তথ্য হস্তান্তরে বাধ্য করতে পারে।
তবে চীন সরকারের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ক্রমাগত নাকচ করে আসছে টিকটক। টিকটকের কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস শুনানিতে উপস্থিত হন টিকটকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাও জি চিউ। শুনানিতে এক প্রশ্নের জবাবে টিকটক অ্যাপের মাধ্যমে চীনা গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেন শাও জি চিউ। শুধু তা-ই নয়, চীন সরকারের অনুরোধে টিকটকের কোনো আধেয় মুছে ফেলা বা প্রচারণা চালানো হয় না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
বাংলাদেশের অপরাধীরা আগে ভারতে গিয়ে আত্মগোপন করত। এরপর জানা গেল, সেখান থেকে দেশে অপরাধ ঘটায় তারা। কারও কারও নেপালে অবস্থানের কথাও জানা যায়। ভারতকে নিরাপদ মনে না করায় আরব আমিরাতের দুবাই বেছে নিচ্ছে অপরাধীরা। সেখানে তারা আস্তানা গেড়েছে।
পুলিশসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দেশের অপরাধজগতের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীরা অপরাধ করেই দুবাই চলে যাচ্ছে। সেখানে বসেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কলকাঠি নাড়ছে। এখন বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরাও দুবাইকে কেন্দ্র করে নানা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। সেখানে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও আছে। তাদের কেউ কেউ সোনার কারবারও করছেন। ওই দেশে ভারতের দুর্ধর্ষ অপরাধী দাউদ ইব্রাহিমের শিষ্যত্ব নেওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ওইসব অপরাধীর তথ্য জানার পরও তাদের ফেরত আনতে পারছেন না। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিসের’ দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে পুলিশকে। তালিকাভুক্ত অপরাধীদের ধরতে রেড নোটিস জারি হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তারা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যাকাণ্ডের পর অনেকে পার পেয়ে গেছে। যদিও মামলাটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তবে নতুন করে আলোচিত মামলাটির পুনঃতদন্ত করার কথা ভাবছে পুলিশ। এ নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ রূপান্তরকে জানান, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ সড়কে গুলি চালিয়ে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যা করা হয়। গুলিতে নিহত হন এক কলেজছাত্রী। চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের মূল হোতা সুমন শিকদার ওরফে মুসা ঘটনার রাতেই দেশ ছেড়ে চলে যায় দুবাইয়ে। সেখানে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও জয়ের সঙ্গে তার বৈঠক হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে মুসা চলে যায় ওমানে। জিসান ও জয় এখনো দুবাইতেই বসবাস করছে। যদিও ওমান থেকে মুসাকে ওই বছরের ৯ জুন ইন্টারপোলের মাধ্যমে ঢাকায় ফিরিয়ে আনে পুলিশ সদর দপ্তর। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই ফের আলোচনায় আসে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও হিরো আলমের দুবাই সফরকে কেন্দ্র করে। তারা বনানীতে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের আসামি আরাভ খান নামধারী রবিউল ইসলামের সোনার দোকান উদ্বোধন করতে সেখানে যান। দুবাই যাওয়ার কারণে সাকিব ও হিরো আলমকে যেকোনো সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হতে পারে। এ ছাড়া ‘প্লেজার ট্যুরের’ জন্য এখন দেশের শিল্পপতিদের পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে দুবাই। কারণ ঢাকাকে তারা নিরাপদ মনে করছেন না। পাশাপাশি দেশে আটক সোনার চালানের ৮০ শতাংশ জব্দ হচ্ছে দুবাইফেরত বিভিন্ন এয়ারলাইনস থেকে। সব মিলিয়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে দুবাই।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অপরাধীরা যে দেশেই থাকুক না কেন, তাদের চিহ্নিত করে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে আটক করার পর দুবাই থেকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফেরত আনতে চেয়েছিল পুলিশ। সম্প্রতি আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আরাভকে দুবাই থেকে ফেরত আনতে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করি অল্প সময়ে সুখবর দেওয়া সম্ভব হবে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে জানান, সম্প্রতি আলোচনায় আসা আরাভ খানকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি ভারতের পাসপোর্টধারী। দেশে তার নামে ১২টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। ওইসব পরোয়ানার কপি ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে পাঠানোর পর দ্রুতই তাকে ফেরানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও এর আগে জিসান ও জয়কে দুবাই থেকে ফেরত আনার উদ্যেগ নিয়েও আনতে পারেনি। টের পেয়ে তারা দুবাই ছেড়ে কানাডায় চলে যায়। তারা আবার দুবাই এসেছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা এই দেশে অপরাধ করে দুবাই গিয়ে আস্তানা গাড়েন। ইতিমধ্যে পুলিশ একটি তালিকা করেছে। ওই তালিকায় গুলশান ও বনানী এলাকার মডেলের সংখ্যা বেশি। বছরখানেক আগে গ্রেপ্তার হওয়া ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ বেশিরভাগ সময় দুবাই থাকেন। তাদের সঙ্গে অপরাধ জগতের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সখ্য আছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে। এমনকি বনানীতে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যাকান্ডে তাদেরও সম্পৃক্ততা ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনার পর পিয়াসা, রাজ ও আরাভকে আটকও করা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের এক বড় মাপের নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তার অনুরোধে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এসব বিষয় নিয়ে পুনরায় তদন্ত করা হতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংগীতশিল্পী, এক ব্যবসায়ীর স্ত্রী ও কয়েকজন মডেল নিয়মিত দুবাই আসা-যাওয়া করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালে তৎকালীন সরকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসী ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন ধরা পড়েছে। আবার কেউ ক্রসফায়ারে মারা গেছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তাড়া খেয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে আছে কেউ কেউ। আত্মগোপনে থেকেই তারা অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই দুবাই রয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। এ নিয়ে পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তারা কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আলাদাভাবে বৈঠক হয়েছে। ওইসব বৈঠকে বলা হয়েছে, ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করার পরও কেন তারা ধরা পড়ছে না তা খতিয়ে দেখতে হবে। ২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাই চলে যায়। সেখান থেকেও ঢাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আছে। তার সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহেল শাহরিয়ার ওরফে শটগান সোহেল, কামরুল হাসান হান্নান, ইব্রাহীম, রবিন ও শাহাদৎ হোসেন বেশিরভাগ সময় দুবাই থাকে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্দিবিনিময় চুক্তি থাকায় বেশ কয়েকজন শীর্ষ অপরাধীকে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, শাহাদৎ, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার আসামি নুর হোসেনসহ অনেকেই কলকাতায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। নুর হোসেন ছাড়া অন্য সন্ত্রাসীদের দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। সুব্রত, মোল্লা মাসুদ ও শাহাদৎ ভারতে সুবিধা করতে না পেরে মুম্বাই হয়ে দুবাই চলে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার অপরাধজগতের এক সন্ত্রাসী এ প্রতিবেদককে বলেন, অপরাধীরা এখন আর ভারত যেতে চায় না। কারণ ওই দেশে শান্তিতে থাকা যায় না। ফলে সবাই এখন দুবাইমুখী হচ্ছে। দুবাইয়ে সবাই নিরাপদে থাকতে পারছে।