
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের জন্য আগামী ৩ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সম্মেলন না করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নতুন করে কোনো ইউনিটের কমিটি ঘোষণা করতে নিষেধ করা হয়েছে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে। ছাত্র সংগঠনটির অভিভাবক ও আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নির্দেশ দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, ৩ ডিসেম্বর সংগঠনের ৩০তম সম্মেলনের আগে নতুন করে ‘প্রেস রিলিজ কমিটি’ না দেওয়ার নির্দেশটি ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতাকে ইতিমধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যতম নেতা আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি বলেন, ‘এটা ছাত্রলীগের অভিভাবকের (শেখ হাসিনা) নির্দেশনা। সেটা আমরা যোগাযোগ করে তাদের (ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা) জানিয়ে দিয়েছি।’
এ ব্যাপারে জানতে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।
২০১৯ সালের মে মাসে ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর প্রায় আড়াই মাস পর ওই বছরের ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠায় ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাদের বাদ দিয়ে আল নাহিয়ান খান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত পুনর্মিলনীর সমাবেশে জয় ও লেখককে ভারমুক্ত ঘোষণা করে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে চলতি মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত ১২১টি সাংগঠনিক শাখার মধ্যে ৬৩টির কমিটি ঘোষণা করেন জয় ও লেখক। সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি হয় মাত্র ৮টি শাখার। এর মধ্যে টাঙ্গাইল, বান্দরবান, জামালপুর ও মাগুরা জেলার কমিটি সম্মেলনস্থলেই ঘোষণা হয়। রাজশাহী মহানগর, নড়াইল, বরগুনা ও বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) কমিটি পরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়।
পরিবহন ধর্মঘট ও পথে পথে পুলিশি তল্লাশিসহ বিভিন্ন বাধা পেরিয়ে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর ও বরিশালের মতো ফরিদপুরেও বড় সমাবেশ করেছে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার ফরিদপুর শহরতলির কোমরপুরের আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউট মাঠে হওয়া এই সমাবেশে দলটির নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশের মানুষের প্রাণের দাবি। গত দুটি নির্বাচনে আপনারা মানুষের সঙ্গে প্রবঞ্চনা করে, মিথ্যা কথা বলে, ভুল বুঝিয়ে নির্বাচন নির্বাচন খেলা করে ক্ষমতায় চলে গেছেন। এবার আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি, মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এবার দেশে আর কোনো নির্বাচন হবে না, যতক্ষণ না নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেওয়া হবে।’
ফরিদপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এ এস এম কাইয়ুমের সভাপতিত্বে এবং জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ কে কিবরিয়ার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাশুকুর রহমান, মো. সেলিমুজ্জামান, ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বক্তব্যে বলেছেন তাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে সরিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। তিনি বলেন, ‘তারেক জিয়ার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। জাতীয় সরকার কেমন হবে তা আগামীতে সমাবেশের মাধ্যমে আমাদের নেতা তারেক রহমান নির্দেশনা দেবেন।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই শেখ হাসিনার পদত্যাগ, আমরা চাই এই সংসদকে বিলুপ্ত করতে হবে, আমরা চাই অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সেই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। সেই নির্বাচন কমিশন নতুন নির্বাচন করবে, নতুন পার্লামেন্ট করবে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, সেই নির্বাচনে আমরা জয়ী হলে একটা জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। জাতীয় সরকার গঠন করে আমরা রাষ্ট্রের মেরামত করতে চাই। আগামীতে রাষ্ট্রনায়ক হবেন তারেক জিয়া।’
বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে এক যুগে ১০ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘দেশের সম্পদ লুট করে তারা বিদেশে পাচার করছে। সরকার কোথায় চুরি করেনি? মেগা প্রজেক্ট থেকে শুরু করে বেকার ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা পর্যন্ত চুরি করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। রাজনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে, দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমাদের ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’
বিকেল ৪টা ২৮ মিনিটে শুরু করে প্রায় আধা ঘণ্টা বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নাকি গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। এটা ভূতের মুখে রাম নাম। প্রশ্ন করি, আপনাদের কাছে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা কী? আপনাদের গণতন্ত্র মানে কি এই যে অন্য কাউকে কিছু বলতে দেব না?’
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তারা মনে করে এ দেশ তাদের বাবার দেশ, দেশের আর সকলে চাকরবাকর। কিন্তু এ অবস্থা আর চলবে না, মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তারা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবে না।’
বেলা আড়াইটায় সমাবেশের প্রধান অতিথি ও অন্য অতিথিরা মঞ্চে উঠলেও মূলত নেতাদের বক্তব্য দেওয়া শুরু হয় বেলা ১১টা থেকেই। এর আগেই সমাবেশের মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। ফরিদপুরের ৯টি উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে খ- খ- মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে জড়ো হন নেতাকর্মীরা। রংবেরঙের টি-শার্ট-ক্যাপ পরে তারা দলের নেতাদের ছবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন বহন করেন।
পথে পথে বাধা পেরিয়ে মুখর সমাবেশস্থল : গত শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হওয়া বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে বিএনপি এবং এর সহযোগী সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী ও অনুসারী দলটির সমাবেশে যোগ দেন। গণসমাবেশ বিকেল ৩টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে যোগ দেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। ফরিদপুরসহ আশপাশের জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীদের ভিড়ে পরিপূর্ণ হয়ে যায় সমাবেশস্থল আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউট মাঠ। খণ্ড খণ্ড মিছিলে মুখরিত হয়ে ওঠে মাঠ ও সংলগ্ন এলাকা। অবশ্য এই সমাবেশের তিন দিন আগে থেকেই ওই মাঠে আসতে শুরু করেছিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। গত শুক্রবার রাতেই তাদের ভিড়ে পরিপূর্ণ হয়ে যায় মাঠটি।
বিএনপির এই বিভাগীয় গণসমাবেশের আগের দিন শুক্রবার সকাল থেকে ফরিদপুরে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়। ফলে ফরিদপুরের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। এতে বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বিএনপি নেতাতের অভিযোগ, তাদের সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে সরকারের ইন্ধনে বাস-মিনিবাস ধর্মঘট ডাকা হয়।
এর আগে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর ও বরিশালে বিএনপির পাঁচটি গণসমাবেশ হয়েছে। সেসব সমাবেশেও নানাভাবে বাধার মুখে পড়েন সমাবেশমুখী নেতাকর্মী-সমর্থকরা। পরিবহন ধর্মঘট ছাড়াও নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে। বিএনপির এই গণসমাবেশের আগের দিন শুক্রবার বিকেলে শহরে কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে গণমিছিল করে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ।
গতকাল বিএনপির সমাবেশে যাওয়ার পথে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের তল্লাশির ফলে ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ। সকাল থেকে শহরে যান চলাচল ছিল একেবারেই কম। এতে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। হাতে গোনা কিছু ভ্যান, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করলেও পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রী ও চালকরা।
ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত : গতকাল সকাল ১০টা থেকে ফরিদপুর জেলায় মোবাইল ইন্টারনেট সেবায় বিঘ্ন ঘটে বলে দাবি করেছেন অনেকেই। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা জানান, সকাল ১০টার পর থেকে তারা মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেননি।
বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সমাবেশের প্রেস উপকমিটির আহ্বায়ক এ বি সিদ্দিক মিতুল অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকার নানাভাবে আমাদের এই সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। সর্বশেষ তারা জেলার মোবাইল ইন্টারনেটের গতি স্থির করেছে, কিন্তু তাদের অপচেষ্টা সফল হবে না।’
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লোডশেডিং, ‘দুর্নীতি-দুঃশাসন’, ‘লুটপাট’, মামলা-হামলা, ‘গুম’, ‘হত্যা’, ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। তারই অংশ হিসেবে সারা দেশে হচ্ছে দলটির বিভাগীয় সমাবেশ। এর আগে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর ও বরিশালে সমাবেশ করেছে দলটি।
বিএনপি এখনই মনোনয়ন বাণিজ্য শুরু করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘ফরিদপুরে আজ টাকা উড়ছে, মির্জা ফখরুল কাকে কাকে মনোনয়ন দেবেন, কাকে মন্ত্রী বানাবেন এসব কথা বলে বস্তায় বস্তায় টাকা নিচ্ছেন। তারেক রহমান বস্তায় বস্তায় টাকা সুইস ব্যাংকে পাঠিয়েছেন। এফবিআই এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়েছে। এবার ডিসেম্বরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তাদের এই বাণিজ্যের বিরুদ্ধে খেলা হবে, খেলা হবে আন্দোলনে, খেলা হবে নির্বাচনে। বিএনপি ফাউল করলে তাদের লাল কার্ড দেখাবে জনগণ।’
গতকাল শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। দীর্ঘ আট বছর পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলো। নিয়াজ মোহাম্মদ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন উদ্বোধন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এই বাংলার ইতিহাস বীরের ইতিহাস, বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস। যদি জিয়াউর রহমান হত্যাকারীদের সঙ্গে না থাকতেন, তাহলে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সাহস হতো না। জিয়াউর রহমান খুনিদের পুরস্কৃত করেছেন। এই জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রক্ষা করতে আইন সংশোধন করেছিলেন। ১৫ আগস্টের মাস্টারমাইন্ড জিয়াউর রহমান, আর ২১ আগস্টের মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমান।’
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর কারণে যারা মেজর থেকে মেজর জেনারেল হয়েছেন তারাই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা জিয়াউর রহমান ও খালেদ মোশাররফের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। জেনারেল শফিউল্লাহ জীবিত থাকলেও জীবন্মৃত, মানুষ তাকে ঘৃণা করে।’
শেখ সেলিম আরও বলেন, ‘তারেক রহমান দেশে আসলে গণপিটুনির শিকার হবেন।’
সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর, কেন্দ্রীয় সদস্য পারভীন সুলতানা কল্পনা ও ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম (অব.)।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত, এবাদুল করিম বুলবুল ও বিএম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন, পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবীর, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী প্রমুখ।
সম্মেলনের শেষদিকে সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে সভাপতি, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকারকে সাধারণ সম্পাদক, সাবেক মেয়র হেলাল উদ্দিনকে এক নম্বর সহসভাপতি, মো. হেলাল উদ্দিনকে সহসভাপতি ও মাহাবুবুল বারী চৌধুরী মন্টুকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি বলেন, এই পাঁচ নেতা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনকে সঙ্গে নিয়ে আগামী এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবেন।
সম্মেলন শুরু হয় দুপুর আড়াইটার পর। তবে সকাল ১১টার পর জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী বাদ্য-বাজনা, ব্যানার ফেস্টুনসহ সম্মেলন যোগ দিতে আসেন। দুপুর ২টার মধ্যেই পুরো স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সম্মেলন উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ ব্যাপক ও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। গত এক সপ্তাহ থেকে জেলা শহর সেজে ওঠে ব্যানার-ফেস্টুন ও তোরণে।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ১৯৯৫, ২১ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে মেলায় ঢুকেই ‘সময় প্রকাশন’-এর স্টলে চলে এলেন হুমায়ূন আহমেদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের হাউজ টিউটরের কোয়ার্টার এবং এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় বসবাসকালে প্রায় প্রতিদিনই মেলায় আসতেন তিনি। হলের বাসা থেকে মাঝেমধ্যে স্ত্রী ও সন্তানদেরসহ আনতেন। সেই দিন সঙ্গে ছিলেন অভিনেতা মোজাম্মেল হক, যিনি নাটকের চরিত্রের নাম ‘হানিফ’ ও ‘খাদক’ নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন। হুমায়ূন আহমেদ ‘সময় প্রকাশন’-এর স্টলে প্রবেশের আগেই অনেক পাঠক জড়ো হয়েছিলেন। সে বছর সময় থেকে লেখকের ‘এবং হিমু...’ বইটি প্রকাশিত হয়। তখন ফেব্রুয়ারি বইমেলার দৃশ্যই ছিল এরকম হুমায়ূন আহমেদের নতুন বই কবে মেলায় আসবে? হুমায়ূন আহমেদ কখন আসবেন? পাঠক-ভক্তরা খোঁজ রাখতেন। নতুন বই যে প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়েছে সেই স্টলের সামনে এসে পাঠকরা জড়ো হয়ে লেখকের জন্য অপেক্ষা করতেন। লেখককে একনজর দেখবেন আর তার অটোগ্রাফ নেবেন। সময় প্রকাশনের স্টলের সামনে ভিড় তখন উপচে পড়ছে, সবাইকে এক লাইনে দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু উৎসুক ভক্তদের ভিড় সামাল দেওয়া যাচ্ছে না পুলিশ দিয়েও। এক পর্যায়ে জনতার চাপে স্টলের সামনের কাউন্টার টেবিল ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হলো, পুলিশ কোনোক্রমে বাইরের জনতা ঠেকাচ্ছে আর স্টলের ভেতর থেকে সময়ের বিক্রয়কর্মীরা টেবিল চাপ দিয়ে ধরে রেখেছে। হুমায়ূন আহমেদ নিজমনে অটোগ্রাফ দিয়ে চলেছেন। ক্রেতাকে বই দেওয়ার লোক নেই। আমি এবং কবি হাসান হাফিজ বই দিচ্ছি। হাসান হাফিজ এসেছিলেন হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে দেখা করতে।
সে সময় বাংলা একাডেমির একজন পরিচালক ছিলেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, তিনি বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছিলেন। ভিড় ঠেলে এগিয়ে এসে নূরুল হুদা হুমায়ূন আহমেদকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন। এতে অপেক্ষমাণরা খুব অসন্তুষ্ট। তাদের চাপে হুমায়ূন আহমেদের বসার ব্যবস্থা করা হলো বর্ধমান হাউজের একটি কক্ষে। বর্ধমান হাউজের পূর্বদিকে গোলাকৃতির যে বারান্দা আছে তার সংলগ্ন রুমে বসতেন একাডেমির ফোকলোর পরিচালক শামসুজ্জামান খান। তার রুমেই লেখককে বসিয়ে অটোগ্রাফ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলো। পরবর্তী সময়ে জনাব খান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হন এবং মুহম্মদ নূরুল হুদা বর্তমান মহাপরিচালক।
বাংলাদেশে হুমায়ূন আহমেদ নামের একজন লেখকের অবিশ্বাস্য পরিমাণ বই বিক্রি হয় এবং ফেব্রুয়ারি বইমেলায় তার অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য মানুষের ভিড় কিংবদন্তি পর্যায়ে চলে গেছে এই সংবাদ কলকাতার বইয়ের সঙ্গে সম্পৃক্তদের বেশ উৎসুক করে তোলে। ১৯৯৪ সালের বইমেলায় কলকাতা থেকে ‘আনন্দ পাবলিশার্স’-এর ম্যানেজার বাদল বসু কলকাতার কয়েকজন জনপ্রিয় লেখকসহ বইমেলা দেখতে আসেন, সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয়তা।
ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল থাকতেন আমেরিকায়। ১৮ বছর পর স্ত্রী, পুত্র-কন্যাসহ বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছিলেন। বড় ভাইয়ের এই জনপ্রিয়তার কথা শুনে থাকলেও চোখে দেখা হয়নি। ১৯৯২ সালে তার আসা এবং যাওয়া নভেম্বর-ডিসেম্বরে সীমাবদ্ধ ছিল। ১৯৯৪ বা ’৯৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে এলেন। বইমেলায় বেড়াতে এলেন। হুমায়ূন আহমেদ তখন ভক্তদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন। দীর্ঘকাল বিদেশে থাকা জাফর ইকবালের স্ত্রী ড. ইয়াসমীন হক এই কালচারের সঙ্গে তেমন পরিচিত নন। উনি খুবই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লেন এবং আমাকে বারবার বলতে লাগলেন, ‘দাদা ভাইয়ের নিরাপত্তা কই? এভাবে তো যেকোনো সময় কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
এসব স্মৃতি এখন গল্প। এখন আর বইমেলাতে এমন ভিড় হয় না। দর্শক অধীর হয়ে কোনো প্রিয় লেখকের বইয়ের অপেক্ষায় থাকেন না! এই বিষয়গুলো বইমেলার একটি অতিরিক্ত আকর্ষণ সৃষ্টি করত। দলে দলে ক্রেতা, এমনকি দর্শক বইমেলায় আসতেন বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। ইদানীংকালের বইমেলায় সেই আকর্ষণ নেই, তাই সেরকম দৃশ্যের অবতারণাও হয় না।
বাংলাদেশের সৃজনশীল বইয়ের জনপ্রিয়তা সৃষ্টির পেছনে হুমায়ূন আহমেদের অনেক অবদান। এরকম অনেক গল্প আছে যা বললে বোঝা যাবে কীভাবে তিনি চেষ্টা করেছেন পাঠক বৃদ্ধিতে। তার শুরুটা খুব সুখকর ছিল না। গত শতকের নয় দশকে আমেরিকা থেকে ফিরে যখন আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিলেন, তখন অধ্যাপনার সঙ্গে সঙ্গে আবার শুরু করলেন লেখালেখি। কিন্তু পাঠক কই বা প্রকাশক কই? যে কয়েকজন প্রকাশক আছেন তাদের শুধু সৃজনশীল প্রকাশক বলা যায় না। তিনি চাইছিলেন এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে কেউ শুধু এদেশের লেখকদের সৃজনশীল বই-ই প্রকাশ করবেন। তখন কয়েকজন প্রকাশককে দিয়ে এ কাজটি তিনি করাতে পেরেছিলেন। আমদানিনির্ভরতা ঝেড়ে ফেলে দেশি বইয়ের প্রকাশনায় সম্পৃক্ত করাতে পেরেছিলেন দুয়েকজনকে। হুমায়ূন আহমেদ বলতেন, ‘আমি এমন ২৫ হাজার পাঠক সৃষ্টি করব। যেসব পরিবার তাদের বাসার বুক শেলফে হুমায়ূন আহমেদের প্রতিটি বই সাজিয়ে রাখবে।’ যদিও পরবর্তীকালে তার পাঠক সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি হয়েছিল। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, হুমায়ূন আহমেদ নিজের পাঠক সৃষ্টি করতে গিয়ে দেশের এক বৃহৎ অংশকে পাঠকে পরিণত করেছিলেন। এই পাঠকদের বইপড়া নেশায় পরিণত হয়েছিল, আর তারা শুধু হুমায়ূন আহমেদের বইয়ে সীমাবদ্ধ থাকেননি। অন্য লেখকদের বইও পড়েছেন। তাই তো ১৯৯০ সাল থেকে সারা দেশে বইয়ের পাঠক বৃদ্ধি পেতে থাকে, সৃষ্টি হয় অনেক নতুন লেখক, তারাও জনপ্রিয়তা পেতে থাকেন। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর এক দশক পরও এই প্রভাব সৃজনশীল বইয়ের বাজার এবং বইমেলায় পরিলক্ষিত হয়।
কিন্তু একথা তো সত্য যে, হুমায়ূন আহমেদের নতুন কোনো বই আর আসছে না, আসার উপায় নেই। সেই আকর্ষণ, সেই ক্রেজ সৃষ্টি হচ্ছে না, কেউ পারছেন না। কিংবদন্তিতুল্য লেখক হুমায়ূন আহমেদ এখনো পাঠকের হৃদয়ে বসবাস করছেন। পাঠক এখনো বইমেলা বা বইয়ের ঘাঁটি বাংলাবাজারে এসে হুমায়ূন আহমেদের বইগুলো খুঁজে ফেরে। একথা কেউ অস্বীকার করবেন না যে, অন্য যেকোনো লেখকের তুলনায় এখনো পাঠক হুমায়ূন আহমেদেই আটকে আছেন বেশি করে। যদিও লেখকের মৃত্যুর পর অনেক প্রকাশক তার পুরনো বই কয়েকটি একত্রিত করে নতুন একটি নাম দিয়ে প্রকাশ করছেন এবং এই ধারা অব্যাহত আছে। এতে করে পাঠক নষ্ট হচ্ছে। পাঠক একটি বই কিনে বাসায় নিয়ে যে ৫-৭টি উপন্যাস বা ২০-২৫টি গল্প দেখতে পান, সেগুলোর অধিকাংশই হয়তো আগে পড়েছেন। এ ধরনের সংকলন প্রকাশ থেকে বিরত থাকা আমাদের উচিত প্রকাশনার স্বার্থে। আমরা যদি সঠিকভাবে বিশ্বস্ততার সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের প্রকাশনাগুলো লালন করি, তবে আরও দীর্ঘদিন সৃজনশীল সাহিত্য উপকৃত হবে এই লেখকের বই থেকে। আমাদের ভালো আমাদেরই বুঝতে হবে।
গত শতাব্দীর নয় দশকের একজন সৃজনশীল প্রকাশক হিসেবে আমার উত্তরণের জন্য আমি ঋণী হুমায়ূন আহমেদের কাছে। তার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। প্রকাশক, সময় প্রকাশন
মেলবোর্নে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্তান আর ইংল্যান্ডেরই দেখা হওয়াটা আসলে দুটো ভিন্ন ক্রিকেট দর্শনেরও মুখোমুখি অবস্থান। ইংল্যান্ড, ক্রিকেটের জনক এবং খেলাটাকে ঘিরে তাদের যত চিন্তা, গবেষণা এবং তত্ত্বের প্রয়োগ সবই খেলাটাকে করেছে সমৃদ্ধ। অন্যদিকে পাকিস্তান, প্রকৃতির খেয়ালে এখানে অনাদরে অযতেœ বেড়ে ওঠে অদ্ভুত সব প্রতিভা। নানান ধরনের বৈপরীত্য আর গোলমালের ভেতরেও কেমন করে যেন ঠিকই সাফল্যের সন্ধান পেয়ে যায় তারা। ঠিক খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ছিনিয়ে নেয় শিরোপা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালটা যেন পেশাদারি আর প্রতিভার মুখোমুখি অবস্থান।
প্রায় এক বছর আগে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গত আসরেই সেমিফাইনালে খেলেছিল পাকিস্তান ও ইংল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে ফাইনালে খেলা হয়নি গ্রুপ পর্বে দারুণ খেলা ইংল্যান্ডের, অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথু ওয়েডের ক্যাচটা হাসান আলী ছেড়ে দিয়ে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ অভিযানটাই শেষ করে দিলেন সেমিফাইনালে।
ভাগ্য তাদেরই আবার মুখোমুখি করে দিল মেলবোর্নে। হয়তো ১৯৯২’র স্মৃতি ফিরিয়ে আনতেই। রাজনৈতিক সমাবেশে পায়ে গুলিবিদ্ধ হওয়া ইমরান খান কি বাড়িতে টিভি সেটের সামনে বসে দেখবেন, ৩০ বছর পর এমসিজিতে বিশ্বকাপটা উঁচিয়ে ধরেছেন বাবর আজম? গ্রাহাম গুচের কি আক্ষেপ মিটবে জস বাটলারের হাতে কাপটা দেখতে পেলে?
পাকিস্তান এবং ইংল্যান্ড, দুই দলেরই পথচলায় ছিল হোঁচট। ইংল্যান্ড হেরে যায় আয়ারল্যান্ডের কাছে, পাকিস্তানের হার জিম্বাবুয়ের সঙ্গে। তবে পাকিস্তানের ফাইনালে খেলাটা মনে করিয়ে দেয় সেই ১৯৯২’র বিশ্বকাপকেই। নেদারল্যান্ডসের অবিশ্বাস্য কীর্তিতে সৌভাগ্যের দরজা খুলে যায় পাকিস্তানের সামনে, গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে হারিয়ে তারা পৌঁছে যায় সেমিফাইনালে। সেখানে প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড, একাধিকবার যাদের বিপক্ষে নকআউটে জয়ের নজির আছে পাকিস্তানের। ব্ল্যাকক্যাপদের হারিয়ে সবার আগে ফাইনালে পাকিস্তান, অথচ আসরের প্রথম দুটো ম্যাচেই হেরেছিল তারা।
অন্যদিকে ইংল্যান্ড, শুরু থেকেই ফেভারিটের তকমা গায়ে সেঁটে থাকলেও আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে হার আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটা বৃষ্টিতে পয়েন্ট ভাগাভাগি হওয়াতে সেমিফাইনালে ওঠা নিয়ে তৈরি হয়েছিল শঙ্কা। শেষ চারে জায়গা করলেও ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল, আইসিসির ষড়যন্ত্রৃ নানান তত্ত্ব ঘিরে ধরেছিল ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচকে। জস বাটলার আর অ্যালেক্স হেলস নির্মম প্রহারে সব কানাঘুষাকে একদম তাসমান সাগরে নিয়ে ফেলেছেন। ভারতের ১৬৮ রান ১৬ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে যেভাবে জিতেছে ইংল্যান্ড, তার তুলনা দেওয়া যায় কেবল ২০১৪ ফুটবল বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে ব্রাজিলের ৭-১ গোলের হারকে। এতটা একপেশে সেমিফাইনালে কোনো ফেভারিট দলকে নিকট অতীতে এভাবে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে দেখার স্মৃতি অনেকেরই নেই।
পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ১৯৯২’র বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য এবং পিসিবির চেয়ারম্যান রমিজ রাজা দেখা করেছেন দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে। তাতে বেড়েছে মনোবল। অন্যদিকে জস বাটলার অধিনায়ক হিসেবে তার প্রথম বছরে, প্রথম বড় আসরেই শিরোপা জয়ের খুব কাছাকাছি। ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী ইংল্যান্ড বছর তিনেকের মাথায় আরও একটা বিশ্বকাপ জয়ের দ্বারপ্রান্তে।
বাটলারের কাছে যখন প্রশ্নটা করা হয়েছিল, তখনো মেয়েদের রাগবি বিশ্বকাপের ফাইনালটা হয়নি। যেখানে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে গেছে ইংল্যান্ড। রাগবি লিগ ওয়ার্ল্ড কাপেরও সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড, আসছে ফুটবল বিশ্বকাপও। এত কিছুর ভিড়ে ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়টা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
বাটলারের জবাব ছিল, ‘২০১৯ সালের বিশ্বকাপ জয়ের প্রভাব আমরা দেখেছি। ট্রাফলগার স্কয়ার লোকারণ্য ছিল, জানি না এবারও সকাল ৮টায় ট্রাফলগার স্কয়ারে কেউ খেলা দেখতে আসবে কি না তবে বাড়িতে থাকলেও তাদের শুভকামনা পাব।’ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলায় সেদেশের ফ্রি-টু-এয়ার চ্যানেলে সরাসরি দেখা যাবে সম্প্রচার, এতদিন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের খেলা দেখা যাচ্ছিল কেবল পে-চ্যানেলেই।
অন্য অনেকগুলো খেলায় সাফল্য আসে বলেই হয়তো ক্রিকেটের বিশ্বকাপ জেতা বা না জেতায় খুব বড় কোনো অদলবদল হবে না ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে। যেমনটা হয়েছিল ২০১৫ সালে, বাংলাদেশের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার পর। অন্যদিকে পাকিস্তান বা উপমহাদেশের বেলায় ক্রিকেট যতটা না খেলা, তা চেয়ে বেশি রাজনৈতিক যন্ত্র। পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতা, সহিংসতা, অর্থনৈতিক দুরবস্থা সবই কিছুদিনের জন্য চাপা পড়ে যাবে শিরোপা জয়ের উচ্ছ্বাসে।
প্রায় একই দল নিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে যাওয়ার নজির আছে পাকিস্তানের, আবার নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ জেতার উদাহরণও আছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের মাটিতেই পাকিস্তানকে ৭ টি-২০ ম্যাচের সিরিজে ৪-৩ ব্যবধানে হারিয়ে আসার স্মৃতিটাও ইংল্যান্ডের টাটকা।
মুখোমুখি দুই দলের ভেতর শক্তি আর সামর্থ্যরে ফারাকটা খুবই কম, তবে মানসিকতায় বিস্তর। একদিকে ইংল্যান্ড, পেশাদার এবং নির্মোহ। অন্যদিকে পাকিস্তান, আবেগি এবং খেয়ালি। পেশাদারি মানসিকতা হয়তো ঝুঁকি নিতে দেবে না, আবার অন্ধ আবেগ কী করতে পারে তার উদাহরণ দেখিয়ে গেছে বাংলাদেশ।
এমন ম্যাচে তাই হতে পারে যে কোনো কিছুই। সেমিফাইনালে অমন রুদ্রমূর্তির পর ইংল্যান্ডকে কেউ কেউ খানিকটা এগিয়ে রাখছেন, কিন্তু মনে রাখতে হবে ভুবনেশ্বর কুমার আর শাহিন শাহ আফ্রিদিতে ততটাই ফারাক যতটা আম আর আমড়ায়!
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার কখনো রিজার্ভ থেকে এক পয়সাও নষ্ট করে না; বরং প্রতিটি অর্থ ব্যয় করে বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থে ও কল্যাণে।
গতকাল শনিবার ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজের উদ্বোধনের সময় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে সাভারের আশুলিয়া বাজারসংলগ্ন কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তিনি। ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় হবে ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি ৪ লাখ টাকা।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আজকাল বিরোধী দল থেকে প্রশ্ন করে রিজার্ভের টাকা গেল কোথায়, সারা দেশে অপপ্রচার করে। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল রিজার্ভ ছিল তখন ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার। তারা পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিল, ওই সময় রিজার্ভ ৫ বিলিয়নের মতো বৃদ্ধি পেয়েছিল। আর আমরা সেই রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়নে পৌঁছাই। এর মধ্যে করোনার আঘাত এবং একই সঙ্গে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা তৈরি হয়েছে। আমাদের অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা করোনার ভ্যাকসিন কিনে এনেছি। বিনা পয়সায় টেস্ট করিয়েছি, টিকা দিয়েছি। কোনো উন্নত দেশও বিনা পয়সায় টেস্ট করেনি, ভ্যাকসিন দেয়নি।’
খাদ্যশস্য, জ্বালানি তেলসহ এখনো অনেক পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যা কিছু আমদানি করতে হচ্ছে, সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। রিজার্ভ যা খরচ করছি জনগণের কল্যাণে, জনগণের মঙ্গলে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রিজার্ভের অর্থ থেকে বিমান কেনা হয়েছে। নদীতে ড্রেজিং করা হয়েছে এবং উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্য দেশের ডলার আনলে সুদ দিতে হয়। দেশের টাকা নিজেদের দেশে বিনিয়োগ করলে দেশের টাকা দেশই থাকে। পয়সা কেউ তুলে নিয়ে চলে যায়নি।’
শেখ হাসিনা এ সময় দেশের যোগাযোগব্যবস্থায় উন্নয়নের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আজ সকাল সাড়ে ৭টায় ফোন পেলাম। বলল, “আপা, আপনার জন্য ইলিশ পাঠিয়েছি।” সাড়ে ৭টায় মেসেজ পেলাম, সাড়ে ৯টায় ইলিশ চলে আসল। এটি হয়েছে যোগাযোগটা সহজ হওয়ার কারণে।’
সরকারপ্রধান এ সময় বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, ‘চুরি করে বিএনপি অর্থ-সম্পদ বানিয়েছে। জিয়া মারা যাওয়ার সময় একটা স্যুটকেস ছাড়া কিছু রেখে যায়নি। পরে দেখি হাজার হাজার কোটি টাকা। মানি লন্ডারিং মামলায় তারেক রহমানের সাত বছরের সাজা হয়েছে, এ কারণে তাদের মুখে সমালোচনা মানায় না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত ১৩ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ বদলে গেছে। একটি মানুষও গৃহহীন, ভূমিহীন থাকবে না, আমরা বলেছি। যত টাকা, সব আমরা মানুষের কল্যাণে খরচ করছি। করোনায় সহায়তা দিয়েছি। প্রণোদনা দিয়েছি। মালিকদের হাতে না দিয়ে মোবাইলের মাধ্যমে সরাসরি শ্রমিকদের হাতে দিয়েছি। কৃষকদের ভর্তুকি দিচ্ছি। মানুষের কল্যাণই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছি।’
আসন্ন বৈশি^ক সংকট মোকাবিলায় আবারও পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘নিজেদের ফসল উৎপাদন করতে হবে, খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। প্রতিটি বক্তৃতায় এ কথা বলি। পৃথিবীর কোথাও দুর্ভিক্ষ হলেও বাংলাদেশে যেন ধাক্কা না লাগে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করে দিচ্ছি চলাচল ও পরিবহন সহজ হয় যাতে। নৌ, সড়ক, আকাশপথ সহজ করেছি। এগুলো আকাশ থেকে পড়েনি। উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে এগিয়ে যেতে হবে।’
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু করে আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল হয়ে নবীনগর মোড় এবং ইপিজেড হয়ে চন্দ্রা মোড় পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে শীর্ষক এ প্রকল্প ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সঙ্গে ৩০টি জেলার সংযোগ স্থাপনকারী আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া ও বাইপাইল-চন্দ্রা করিডরে যানজট অনেকাংশে কমবে। উত্তরবঙ্গসহ ৩০টি জেলার চার কোটিরও বেশি মানুষ এক্সপ্রেসওয়ে থেকে উপকৃত হবে। এ ছাড়া জনগণ ও পণ্য পরিবহন সহজ ও দ্রুত করে তুলবে এবং যানজট কমাতে সহায়তা করবে। এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের নথিতে শূন্য দশমিক ২১৭ শতাংশ দেশের মোট জিডিপি বাড়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয়ের বেশির ভাগ অর্থ দেবে চীন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বক্তব্য দেন। সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মঞ্জুর হোসেন এক্সপ্রেসওয়ে সম্পর্কে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। আশুলিয়ায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমানসহ সর্বস্তরের মানুষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনার (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ বলেছেন, নির্বাচনের বছরে দুদক চোখ-কান খোলা রাখবে। আইন অনুসারে আমাদের যেটুকু অংশ, আমরা তা নিরপেক্ষভাবে পালনের চেষ্টা করব। আমরা সাধ্যমতো কাজ করছি।
মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সন্সেলনে দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ও মো. জহুরুল হক এবং দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের বছরে সব প্রার্থীর হলফনামায় যে সম্পদ বিবরণী থাকে তা খতিয়ে দেখবে দুদক। এ বছর চোখ-কান খোলা রাখবে। সমস্ত প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে। আগামী বছরে দুদকের কাজে আরো গতিশীলতা আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সোমবার রাতে বার্ষিক প্রতিবেদনটি (২০২২) রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়ে কিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থান নিতে বলেছেন। দুদক স্বচ্ছতার সঙ্গে সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবগত করা হয়েছে।
ফাঁদ মামলা কেন কমেছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যতটুকু তথ্য পেয়েছি, সেই অনুসারে ফাঁদ মামলা হয়েছে। আমরা শতভাগ সফল হতে পারিনি। বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় গত বছর সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করেছি। ওই বছর এফআরটি কম হয়েছে। মামলা বেশি হয়েছে, এফআরটি কমেছে। সাজার হার বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দুদক ঠিকমতো কাজ করছে না, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মামলা, তদন্ত, অনুসন্ধান সব কিছুই বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। তারা তাদের বক্তব্য দিয়েছে। আমরা তথ্য দিলাম, এগুলো সংরক্ষিত আছে। আপনারাই বিবেচনা করবেন।
এ সময় বেসিক ব্যাংক দুর্নীতি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মামলাগুলো চলমান। এ নিয়ে আর কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি তিনি।
সম্প্রতি আলোচিত দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের ‘অর্থপাচার’ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে দুদক চেয়ারম্যান জানান, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই, পেলে কাজ করবে দুদক।
এদিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, দেশের টাকা বাইরে চলে গেছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো কাজ করতে পারেনি দুদক। পাচারকৃত অর্থ নিয়ে কাজ করে আরো অনেকগুলো সংস্থা। শুধু দুদকের একার কাজ নয় এটি। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি টাকা ফিরিয়ে আনার।
দুদকের অসন্তুষ্টির জায়গা কোনটি এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক বড় বড় দুর্নীতি বিশেষ করে দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেক দুর্নীতিবাজ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, ব্যবসার আড়ালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে। এই বিষয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের মাত্র একটি অপরাধের এখতিয়ার আছে। বাকি ২৬টি অপরাধের বিষয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ার। কিন্তু জনগণের মনে এখনো ভ্রান্ত ধারণা দুদক কী কাজ করে। কিন্তু আমাদের অংশে আমরা কাজ করি ও শতভাগ সাফল্য রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশেরে এক পর্যবেক্ষণের সূত্র ধরে দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, দেশে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বাড়ে নাই, বরং কমেছে। তবে আভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বন্ধ করতে পারিনি। মামলা পরিচালনা ক্ষমতা কমেছে এটা মিথ্যা কথা। কারণ মানিলন্ডারিং মামলায় ১০০ ভাগ সাফল্য, অন্যান্য মামলায় সাজার পরিমাণ ৬৭ থেকে ৭০ ভাগ আমাদের পক্ষে। আমাদের সক্ষমতা কমেছে কে এটা বলেছে। এ কথা আমি বিশ্বাস করি না।
দুদকের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরে দুদকে জমা পড়ে ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগ। এসব যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের জন্য সংস্থাটি হাতে নিয়েছে ৯০১টি অভিযোগ, যা মোট অভিযোগের ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৯৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ অভিযোগই অনুসন্ধানের জন্য আমলে নিতে পারেনি দুদক। ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগের মধ্যে ৩ হাজার ১৫২টি অভিযোগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে। ২০২২ সালে চার্জশিট অনুমোদন হয়েছে ২২৪টি, মামলা হয়েছে ৪০৬টি, ফাঁদ মামলা হয়েছে মাত্র ৪টি।
২০২১-২২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাজা, নিষ্পত্তি ও খালাসের পরিমাণ বেড়েছে। এরমধ্যে গতবছর সংস্থাটির ৩৪৬টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এছাড়া এই সময়ে কমিশন আমলের ৬৪ দশমিক ১৭ শতাংশ ও ব্যুরো আমলের ৩৫ দশমিক ৯০ মামলার আসামির সাজা হয়েছে। ২০২২ সালের দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন দুদক চেয়ারম্যান। উপস্থাপনকালে এই তথ্য জানানো হয়।
ছেলে ইজহান মালিককে সঙ্গে নিয়ে ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে রয়েছেন ভারতের সাবেক টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একাধিক ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে মনিদা শরীফে তোলা নিজের একাধিক ছবি পোস্ট করেন সানিয়া। ভিডিও পোস্ট করেছেন ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে।
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা প্রথম ছবিতেই দেখা যাচ্ছে সানিয়া তাকিয়ে আছেন তার ছেলের দিকে। সানিয়ার পরনে কালো রঙের বোরকা।
ছবিগুলো পোস্ট করে ক্যাপশনে সানিয়া লিখেছেন, ‘আলহামদুল্লিাহ। আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করুন।’
সানিয়ার পোস্ট করা ছবিগুলোর কয়েকটিতে পরিবারের অন্য সদস্যরাও রয়েছেন। তবে তার স্বামী পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিককে কোনোটাতেই দেখা যায়নি।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।