
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাসের অভিঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে আছে। এ মন্দা মোকাবিলায় এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে ‘ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ ২০২২’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা গণভবন থেকে মিরপুরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত মূল আয়োজনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সকল ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়টা হলো আমাদের উন্নয়নের গতি কিছুটা হলেও শ্লথ হয়ে গিয়েছে।
করোনাভাইরাসের অভিঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা), কাউন্টার স্যাংশনের (পাল্টা নিষেধাজ্ঞা) ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। এই মন্দা মোকাবিলায় এখন থেকেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তার দেশের প্রতিটি মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে, উন্নত জীবন পাবে, শিক্ষা-দীক্ষায় উন্নত হবে, সেই লক্ষ্য ইনশাআল্লাহ আমরা বাস্তবায়ন করব।’
অগ্নিনির্বাপণকারীদের ‘দুঃসময়ের বন্ধু’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা (ফায়ার ফাইটার) নিজেদের জীবন বাজি রেখে মানুষের কল্যাণ করে মানুষকে উদ্ধার করেন। একটি মহৎ কাজে তারা নিয়োজিত রয়েছেন। কাজেই ফায়ার সার্ভিসের প্রতিটি সদস্যই দুঃসময়ের বন্ধু হিসেবে মানুষের কাছে প্রতীয়মান। তাই ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আমরা বিদেশি সহায়তাও কাজে লাগিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে সাম্প্রতিক বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়িত্ব পালনকালে নিহত ৩০ জন অগ্নিনির্বাপণকর্মীকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস সম্পূর্ণ সক্ষমতার, উচ্চক্ষমতার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে যাতে রূপান্তরিত হয়, সে ব্যবস্থাই আমরা গ্রহণ করেছি। প্রতিটি উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠার যে ঘোষণা আমরা দিয়েছিলাম, তা এখন শেষ পর্যায়ে। যারা এ কাজে সম্পৃক্ত, তারা যেন উন্নত মানের প্রশিক্ষণ ও যন্ত্রপাতি পান, সেদিকে লক্ষ রেখেই আমরা বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমি প্রতিষ্ঠারও উদ্যোগ নিয়েছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, লিঙ্গবৈষ্যম দূর করতে ‘ফায়ারম্যান’ পদের নাম ‘ফায়ার ফাইটার’ করা হয়েছে। পরিদর্শকের সংখ্যা ৫০ থেকে ২৬৮, ডুবুরির সংখ্যা ২৫ থেকে ৮৫, অ্যাম্বুলেন্স সংখ্যা ৫০ থেকে ১৯২, আগুন নেভানোর পানিবাহী গাড়ির সংখ্যা ২২৭ থেকে ৬১৭ এবং ফায়ার পাম্পের সংখ্যা ৪৫০ থেকে ১৫৪৬টিতে উন্নীত করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও নিরাপত্তাসেবা বিভাগের সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সীতাকুণ্ডে সাম্প্রতিক বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১৩ জন অগ্নিবীরের পরিবারসহ ফায়ার সার্ভিসের ৪৫ জন সদস্যের হাতে চারটি ক্যাটাগরিতে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স পদক-২০২২ তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী বাহিনীর কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন এবং রাষ্ট্রীয় সালাম গ্রহণ করেন। সূত্র : বাসস
পরতে পরতে রঙ বদলানো ম্যাচের শেষটায় ভাগ্য মুখ ফিরিয়ে নিল রূপায়ণ সিটি কুমিল্লার কাছ থেকে। ৫৬ মিনিটে সমতায় ফেরার সুবর্ণ সুযোগ হেলায় হারালেন দলটির কোরিয়ান ডিফেন্ডার কিম সুং ইয়োব। তার পেনাল্টি স্ট্রোক চলে গেল বার উঁচিয়ে। এর সঙ্গে দুই বিদেশি আম্পায়ারের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত দলটির বিরুদ্ধে গেছে। তাতে হকি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনাল খেলার স্বপ্ন বিলীন হয়েছে রূপায়ণ সিটির। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে মোনার্ক পদ্মার কাছে তারা হেরেছে ৪-৩ গোলে। মোনার্কের হয়ে চারটি গোলই করেন জাপানিজ মিয়া তানিমিৎসু। আগামীকাল সাকিব আল হাসান মালিকানাধীন মোনার্ক ফাইনালে মুখোমুখি হবে একমি চট্টগ্রামের।
ম্যাচের প্রায় পুরোটা সময় প্রাধান্য বিস্তার করে খেলতে দেখা গিয়েছে রূপায়ণ সিটিকে। আগের ম্যাচে স্পেন থেকে উড়িয়ে আনা তারকা জোয়াকিন মেনিনির সংযুক্তিতে তারা আক্রমণভাগে ছিল অনেক বেশি সংঘবদ্ধ। তবে ম্যাচজুড়েই দুই মালয়েশিয়ান ও কোরিয়ান আম্পায়ারের ভুল বাঁশি খেলার গতিরোধ করেছে। তাদের বেশিরভাগ সিদ্ধান্তই গেছে রূপায়ণের বিপক্ষে। তারপরও প্রথম কোয়ার্টারে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল তারা। ১৩ মিনিটে মেনিনি করেন সুযোগ সন্ধানী গোল। মিলন হোসেনের রিভার্স হিট গোলমুখ থেকে ফিরিয়েছিলেন ইরফানুল হক। ফিরতি বল পেয়ে জোরালো হিটে গোলের খাতা খোলেন স্প্যানিশ তারকা। পরের মিনিটেই দলের দ্বিতীয় পিসিকে গোলে পরিণত করে ব্যবধান বাড়ান সোহানুর রহমান সবুজ। মিলনের পুশ ভারতীয় প্রদীপ মোর থামালে তাতে রূপায়ণ অধিনায়কের ড্র্যাগ অ্যান্ড ফ্লিক জালে জড়ায়। তবে দ্বিতীয় কোয়ার্টারে দারুণভাবে ফিরে আসে আগের দিন এলিমিনেটরে মেট্রো বরিশালকে হারিয়ে আসা মোনার্ক পদ্মা। ১৭ মিনিটে তানিমিৎসু দলের দ্বিতীয় পিসি থেকে গোল করে ব্যবধান কমান। দ্বিতীয় কোয়ার্টারের শেষ মুহূর্তে রূপায়ণ সিটির মালয়েশিয়ান ডিফেন্ডার ইজাদ হাকিমি রাসেল মাহমুদ জিমিকে শুটিং সার্কেলের ভেতরে বাজে ট্যাকল করে পেনাল্টি স্ট্রোক উপহার দেন। তা থেকে ২-২ করেন তানিমিৎসু। তবে ৩৯ মিনিটে মেনিনি অসাধারণ স্টিকওয়ার্কে রূপায়ণের লিড পুনরুদ্ধার করেন। বাঁ দিক থেকে ভারতীয় প্রদীপ মোরের পাস পেয়ে একজনকে কাটিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন এই আর্জেন্টাইন বংশোদ্ভূত স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড। চতুর্থ কোয়ার্টারের পঞ্চম মিনিটে একটি বিতর্কিত পিসি ও হলুদ কার্ডের সিদ্ধান্তে খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল রূপায়ণ। রূপায়ণ অধিনায়ক সবুজকে হলুদ কার্ড দেখালে তারা মাঠের এক পাশে চলে আসে। খেলা প্রায় ৫ মিনিট বন্ধ থাকার পর রূপায়ণ সিটি কুমিল্লার দেখভালের দায়িত্বে থাকা সাবেক ফুটবলার আবদুল গাফফারের হস্তক্ষেপে মাঠে গড়ায় খেলা। সেই পিসি থেকে গোল না পেলেও পেনাল্টি স্ট্রোক আদায় করে নেয় মোনার্ক। তবে রেফারেল চেয়ে সেটি বাতিল করায় রূপায়ণ। তবে ফিরতি পিসি থেকে তানিমিৎসু ৩-৩ করেন। ৫৫ মিনিটে পরপর দুটি পিসি নষ্ট করার পর তানিমিৎসু মোনার্ককে প্রথমবারের মতো এগিয়ে নেন। তবে ম্যাচে ফেরার দারুণ সুযোগ ছিল রূপায়ণের। পরের মিনিটে দলটির কোরিয়ান ডিফেন্ডার কিম সুং ইয়োব পিসি থেকে গোল করতে না পারলেও আম্পায়ার পেনাল্টি স্ট্রোকের বাঁশি বাজান। দারুণ সেই সুযোগ ইয়োব বার উঁচিয়ে মেরে দলের বিদায় নিশ্চিত করে দেন।
ম্যাচ শেষে রূপায়ণ গ্রুপের উপদেষ্টা আবদুল গাফফার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিং এই ম্যাচেও জারি থাকল। গত ম্যাচে আম্পায়াররা আমাদের হারিয়ে দিয়েছিল। আজও বারবার আম্পায়ারদের বাঁশি আমাদের বিরুদ্ধে বেজেছে। এর সঙ্গে ভাগ্যও শেষ পর্যন্ত সহায়তা করেনি। তাই হারতে হয়েছে।’ রূপায়ণ সিটির ক্ষুব্ধ ম্যানেজার এহসান রানা দাবি করেন, ‘এখানে অন্য কিছু কাজ করেছে। আমরা ৭ গোলে এগিয়ে গেলেও এই ম্যাচ জিতে বের হতে পারতাম না।’
ম্যাচ শেষে মোনার্ক পদ্মার অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার জিমি ও রানার মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়েছিল; যা অন্যদের হস্তক্ষেপে হাতাহাতিতে গড়ায়নি। সব মিলিয়ে বিদায়টা প্রত্যাশা মতো হলো না রূপায়ণ সিটি কুমিল্লার।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া বস্তির (চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র) মূল ফটক দিয়ে ঢুকে এক কিলোমিটার ভেতরে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নব কিশলয় উচ্চ বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে কাইলা রায়হানের তিনতলা ভবন। গত সোমবার বিকেলে ওই ভবনের কাছাকাছি গেলে দেখা যায়, ভবন লাগোয়া সরু রাস্তার সামনে ১৫ থেকে ২০ বছরের ৮-১০ জনের জটলা। ভবনের সামনে যেতেই সরু রাস্তা দিয়ে ভেতরে ঢুকে যায় তারা।
নব কিশলয় বিদ্যালয়ের আশপাশের দোকানি ও স্থানীয় লোকজন জানান, দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা এভাবেই মাদক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে কারবারিরা। বস্তির সব থেকে বেশি মাদক বিক্রি হয় কাইলা রায়হানের বাড়ির সামনে। ওই বাড়িতেই রয়েছে মাদকের গুদাম। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ (২৩) চনপাড়া বস্তিতে খুন হওয়ার পর থেকে বাড়িটি তালাবদ্ধ রয়েছে। তবে থেমে নেই মাদকের কারবার।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শীতলক্ষ্যা নদীর পাশে ১২৬ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা চনপাড়া বস্তির ৮০ একরে সোয়া লাখ মানুষের বাস। ৯টি ওয়ার্ড বা মহল্লায় বিভক্ত এই বস্তিতে ছোট-বড় ১১৪টি মাদক বিক্রির স্পট রয়েছে। ইয়াবা ট্যাবলেট, ফেনসিডিল, হেরোইন, গাঁজা থেকে
শুরু করে সবধরনের মাদকই এসব স্পটে পাওয়া যায়। এসব মাদক বিক্রি করা হচ্ছে ছোট ছোট ছেলেদের দিয়ে। প্রতিটি স্পটের জন্য কারবারিদের কাছ থেকে সপ্তাহে ৫ হাজার টাকা করে চাঁদা বা বখরা তোলা হয়, মাসে যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২৩ লাখ টাকা। এর বিনিময়ে প্রকাশ্যে নির্বিঘেœ মাদক বেচাবিক্রির সুযোগ পায় কারবারিরা। একই সঙ্গে ক্রেতারা কোনো ঝুটঝামেলা ছাড়াই মাদক সেবনের সুযোগ পান বস্তি এলাকায়। এসব মাদকের ক্রেতা উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা। যাদের বেশিরভাগই রাজধানী থেকে যাওয়া ও বস্তির আশপাশের বাসিন্দা।
এ ছাড়া চনপাড়া বস্তি থেকে মাদকের বড় চালান যায় বস্তিসংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীর বিপরীত পাশে রাজধানীর ডেমরা থানাধীন শিল্প এলাকায়ও। ডেমরা থেকেই পুরো রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়ে এসব মাদক।
বস্তির ষাটোর্ধ্ব এক বাসিন্দা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেসব ছেলেমেয়ে মাদক সেবন করতে আসে তা কল্পনাও করতে পারবেন না। ভার্সিটির ছেলেমেয়েরা দল বেঁধে আসে, স্বামী-স্ত্রীও প্রাইভেট কার নিয়ে চলে আসে বস্তিতে মাদকসেবন করতে। ২৪ ঘণ্টা ধরে বেচাবিক্রি হয়। প্রতিটি স্পটে মাদক গ্রহণের জন্য ঘরের ব্যবস্থাও আছে।’
তিনি বলেন, ‘একেকটি ওয়ার্ডে সাত থেকে দশটি করে মাদকের স্পট আছে। এখানে কে কোন ওয়ার্ডে মাদক বিক্রি করবে তা রাজনৈতিক নেতারা ঠিক করে দেয়। সব মুখবুজে সহ্য করা ছাড়া কারও কিছুই করার নেই।’
বস্তি এলাকায় আধিপত্য নিয়ে মাদক কারবারিদের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ হয়। তাদের বিবাদে অতিষ্ঠ সাধারণ বাসিন্দাদের অনেকে বস্তি ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে যাচ্ছেন। বস্তির অফিস ঘাটের নৌকার মাঝি মো. আলমগীর হোসেন সম্প্রতি পরিবার নিয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। তিনি গতকাল মুঠোফোনে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বস্তিতে থাকার মতন পরিবেশ নেই। মাদক কারবারিদের আধিপত্য নিয়ে বিবাদ লেগেই থাকে। একপক্ষ আরেক পক্ষের ওপর হামলা চালায়। নির্বিচারে ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে।’ তার মতন অনেকে বস্তি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন বলে জানান আলমগীর।
বস্তিবাসীর অভিযোগ রয়েছে, মাদক কারবারিদের পৃষ্ঠপোষক কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. বজলুর রহমান। তিনি বস্তি এলাকার ‘অঘোষিত সম্রাট’। তিনি একই সঙ্গে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের চনপাড়া ইউনিটের (চনপাড়া শেখ রাসেল নগর ইউনিয়ন) সাধারণ সম্পাদক। বজলুর বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে। তার ঘনিষ্ঠজনদের দিয়ে গড়ে তুলেছেন মাদক কারবারের এক অভয় আশ্রম। বজলুর রহমানের সাঙ্গোপাঙ্গরা মাদকের স্পট থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলে। চাঁদার সেই টাকার ভাগবাটোয়ারা হয় রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে পুলিশের বিভিন্ন মহলেও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মাদক কারবারি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ইউপি সদস্য বজলুর লোকজন নিয়মিত চাঁদা তোলেন। এসব টাকার একটি বড় অংশ রাজনৈতিক নেতারা পান। আরেকটা অংশ চনপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি, রূপগঞ্জ থানা, ডেমরা থানা ও ডিবি পুলিশকে দেওয়া হয়। ফলে বস্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ঝামেলা করে না।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে বজলুর রহমানকে গতকাল ফোন করলে এক নারী রিসিভ করেন। এ প্রতিবেদকের পরিচয় জানার পর ফোন কেটে দেন তিনি। এরপর একাধিকবার ফোন করলেও রিসিভ করেননি।
স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, বস্তিতে আধিপত্যের লড়াই ও কাঁচা টাকার ছড়াছড়ি শুরু হয় ২০১৩ সালের পর থেকে। সে সময় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিতে বাড়িপ্রতি প্রথম পর্যায়ে ৪০ হাজার ও পরে ১০ হাজার করে টাকা দিতে হয়েছে। এভাবে কোটি কোটি টাকা বাগিয়ে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা বজলু, আনোয়ার ও সমশেরের তিনটি গ্রুপ। যাদের আধিপত্য বেশি ছিল তারা বেশি টাকা নিয়েছিল।
বস্তিসংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীতে চারটি নৌঘাট রয়েছে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ‘বাজার ঘাট’, ৪ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী অফিস ঘাট, ১ নম্বর ওয়ার্ডের ‘এক নং চরের ঘাট ও ‘বওর বা বাইদ্দার ঘাট’। এসব ঘাট দিয়ে নদী পথে বস্তিতে মাদক ঢোকে। মাদক কারবারিরা কক্সবাজার থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট বড় চালান এনে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে জড়ো করে। সেখান থেকে দুই থেকে তিন হাজার করে ভাগ করে প্রথমে মেঘনা নদী ও পরে শীতলক্ষ্যা নদী দিয়ে বাল্ক হেডে করে চনপাড়া বস্তিতে নিয়ে আসে। গভীর রাতে অফিস ঘাট দিয়ে বেশি ঢোকে এসব ইয়াবা। এ ছাড়া পাশর্^বর্তী দেশ ভারত থেকে আসা ফেনসিডিল মেঘনা ব্রিজের পাম্পের আশপাশে গাড়ি থেকে ফেলে দেয় কারবারিরা। সেখান থেকে অটোরিকশা করে ঢোকে চনপাড়া বস্তিতে। নদী পথেও আসে। অন্যান্য মাদকের বেশিরভাগই ঢোকে এই চার ঘাট দিয়ে। বস্তির পাইকারি ডিলারদের মধ্যে বজলু মেম্বরের মেয়ের জামাই রিপন, শ্যালক জাহির ছাড়াও ফেন্সি ফারুক, রবিন অন্যতম।
বস্তির এক নম্বর ওয়ার্ডে মাদক বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করে তালুকদার মুজাহিদ, মাল্টা রনি ও উজ্জ্বল। দুই নম্বর ওয়ার্ডে আলমগীর, তিন নম্বর ওয়ার্ডে শাওন, চান ও পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে রায়হান, ছয় নম্বর ওয়ার্ডে মনু ওরফে ময়না ও পাগলা ফারুক, সাত নম্বর ওয়ার্ডে বন্দুকযুদ্ধে নিহত শাহিনের সহযোগী জুলহাস, সুমন ও সিরাজুল। আর ৯ নম্বর ওয়ার্ডে রাজার লোকজন। এসব মাদক কারবারি কখনো বস্তির বাইরে বের হয় না।
জানতে চাইলে চনপাড়া বস্তি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মাদকের বেশিরভাগই নদীপথে ঢোকে। এজন্য আমাদের তেমন কিছু করার থাকে না।’ মাদক কারবারিদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি মাত্র এক মাস হয় এখানে এসেছি। এসব অভিযোগ মিথ্যা।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চনপাড়া বস্তিতে দীর্ঘদিন দুটি গ্রুপের আধিপত্য ছিল। গ্রুপ দুটির একটি হলো বজলু মেম্বার ও জয়নালের। আর অন্যটি শাহিন ও রাজার। পরে বজলু ও জয়নালের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। জয়নাল স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে জেলে আছেন। তার বিরুদ্ধে অন্তত ১০টি মাদক ও হত্যা মামলা আছে। আর অপর গ্রুপের শাহিন গত বৃহস্পতিবার র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। তিনিও স্বেচ্ছাসেবক লীগের চনপাড়া ইউনিটের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে মাদক ও হত্যার ২৩ মামলা ছিল। রাজাও র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে আছেন।
ভাষা আন্দোলন থেকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, বাংলাদেশের অভ্যুদয় থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে দেশের বামপন্থি দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অনস্বীকার্য। এসব আন্দোলনের ক্ষেত্রে বামপন্থিরা কখনো প্রকাশ্য আবার কখনো নেপথ্যে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। ইতিহাসের বাঁকবদলের এসব আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মণি সিংহ, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ, আবদুল হক, মোহাম্মদ তোয়াহা, মোহাম্মদ ফরহাদদের মতো বাম ও উদারপন্থি নেতার আবির্ভাব ঘটেছে। এখনো রাশেদ খান মেনন, আব্দুর রব, হাসানুল হক ইনুর মতো নেতা জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তাদের পরবর্তী প্রজন্ম কি তৈরি হয়েছে, যারা বাম আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবেন এমন আলোচনা আছে রাজনৈতিক মহলে।
এমনও আলোচনা আছে যে, ঘুরে ঘুরে দুই-একজন নেতার হাতে দলের নেতৃত্ব থাকায় দলীয় নেতৃত্বের ক্ষেত্রেই নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও সংকট ঘনীভূত হচ্ছে।
দেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, ক্ষেতমজুরদের অবদান সবসময়ই বেশি ছিল। এই সংগঠনগুলোতে বামপন্থিদের প্রভাব থাকায় একদিকে আন্দোলন যেমন বেগবান হয়েছে তেমনি বামপন্থি দলগুলোও জনগণের কাছাকাছি যেতে পেরেছিল। বর্তমান সময়ে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। দেশে কৃষক-ক্ষেতমজুরদের কোনো কার্যকর আন্দোলন নেই, শ্রমিক সংগঠনগুলো পুরোপুরি আওয়ামী-বিএনপির দখলে চলে গিয়েছে। এইসব পেশাভিত্তিক গণ-সংগঠনগুলোই ছিল বামপন্থি দলগুলোর জনগণের মধ্যে কাজ করা এবং প্রভাব বিস্তার করার মূল মাধ্যম। ফলে কোনো গণআন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না দলগুলো।
বামদলগুলোর নেতারা মনে করেন, এরশাদবিরোধী আন্দোলনের পরে দেশের বাম রাজনীতিতে যোগ্য ও জনপ্রিয় নেতা আসেননি। যারা রয়েছেন তাদের মধ্যেও দূরদর্শিতার অভাব রয়েছে। অন্যদিকে অনেকেই নিজেদের অস্তিত্ব ও ক্ষমতার স্বাদ পেতে জোট করেছেন ক্ষমতায় থাকা দলগুলোর সঙ্গে। এ নিয়ে দলগুলোর ভেতরে ও বাইরে আলোচনা-সমালোচনা আছে। বড় কথা বাম দলগুলো সাংগঠনিক শক্তি হারাচ্ছে। জনগণের মনোযোগও আর আকর্ষণ করতে পারছে না।
সিপিবির সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাম দলের নেতৃত্ব তৈরি হয় শ্রেণিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে। কিন্তু আমাদের বামপন্থিরা এটা ভুলে গেছে। শ্রেণিসংগ্রাম তো সমাজের চালিকাশক্তি, কিন্তু সেই শ্রেণিসংগ্রামই নেই। বর্তমানে বামপন্থিদের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে। তাদের যে পথ, সেখান থেকে তারা সরে আসছে। ঐতিহ্যকে ধারণ করে আন্দোলন-সংগ্রাম অগ্রসর করেনি।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সারা বিশ্বেই বাম রাজনীতি হোঁচট খেয়েছে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। একটা গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বে পরিবর্তন আসা উচিত। বিশেষ করে বাম দলগুলোতে নেতৃত্বের এই পরিবর্তন অনেক আগেই আসা উচিত ছিল। কিন্তু তা না হয়ে দীর্ঘ সময় ধরে পদ-পদবি আগলে ধরে রাখার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বামদলগুলো ব্যক্তিনির্ভর রাজনীতিতে ঘুরপাক খাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাম রাজনীতির সফলতা নির্ভর করে নেতৃত্বের দৃঢ়তা ও সততার ওপর।
বাম দলগুলোর কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ২৮ বছর ধরে দেশের অন্যতম বড় বামপন্থি দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। অন্যদিকে, ৩৬ বছর আহ্বায়ক এবং পাঁচ বছর সাধারণ সম্পাদক, সব মিলিয়ে গত ৪১ বছর ধরে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নেতৃত্বে ছিলেন খালেকুজ্জামান। সম্প্রতি কংগ্রেসের মাধ্যমে দুই দলের নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে।
একই অবস্থা ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির। দলটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ৩৭ বছর ধরে মূল নেতৃত্ব রয়েছেন। এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) হাসানুল হক ইনু ৩৫ বছর ধরে নেতৃত্বে রয়েছেন। গত বছর নেতৃত্ব জটিলতায় দলটি আবারও ভাঙনের মুখে পড়ে। এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব ৩৭ বছর, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ৃয়া ৩৪ বছর ধরে নিজ নিজ দলের নেতৃত্বে আছেন।
বাসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ সময় বিশেষ চাহিদা বা প্রয়োজন দেখা দেয়। তার ভিত্তিতে নেতৃত্ব সেভাবে সংগঠিত হওয়া দরকার। যদি কেউ সেটা অনুসরণ না করে তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার শুধুমাত্র নিয়ম করে পরিস্থিতি না বুঝে দলের নেতৃত্ব অদল-বদল করলে দলের অগ্রগতি হয় না। আবার প্রয়োজনের তাগিদে সাড়া না দিয়ে শুধুমাত্র একই নেতৃত্ব বহাল থাকলেও দল বা আন্দোলন অগ্রসর হয় না।’ তিনি বলেন, ‘এটা মূলত নির্ভর করে একটা বিপ্লবী সংগ্রামের বিকাশ, দলের প্রয়োজন এবং সার্বিক সাংগঠনিক প্রয়োজনের ওপর। তার নিরিখে নেতৃত্ব নির্বাচিত হওয়া দরকার এবং রদবদল হওয়া দরকার।’
খালেকুজ্জামান আরও বলেন, ‘শুধুমাত্র নাম করা নেতা হলেই একটা আন্দোলন বিকশিত হয়, তা না। নীতিগত সংগ্রামের বিকাশের মধ্য দিয়ে নেতা তৈরি হয়।’
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই সময়টাতে পৃথিবীজুড়ে বামেরা লড়ছে। বিভিন্ন দেশে লাল ঝা-া উড়াচ্ছে। কিন্তু আমরা পারছি না। এটা আমাদের বড় ব্যর্থতা। আমরা যে কিছু করতে পারি, এই বুঝটা আমাদের মধ্যে নেই।’
তিনি বলেন, ‘দেশের বাম গণতান্ত্রিক শক্তি কখনোই দুর্বল ছিল না। সমস্যা হলো আমাদের শক্তি নিয়ে জনগণের কাছে যেতে পারছি না। এখানে নেতৃত্বের ঘাটতি রয়েছে। কারণ আমরা সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে দিকনির্দেশ করতে পারিনি।’
ফ্লাইট জটিলতায় দেরি শুধু সাকিব আল হাসানেরই হয় না, নেইমারেরও হয়! বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের ফ্লাইট জটিলতায় দেরিতে নিউজিল্যান্ডে পৌঁছানো নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। তাহিতি হয়ে আসতে না পারায় হাজির থাকতে পারেননি অধিনায়কদের ফটোসেশনে। একই বরাত নেইমার আর মারকুইনহোসেরও। প্যারিস থেকে তুরিনে সময়মতো হাজির হতে পারেননি প্যারিস সেন্ট জার্মেইর এই দুই ফুটবলার, তাই অংশ নেওয়া হয়নি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ব্রাজিলের প্রথম অনুশীলন সেশনে। তবে কাল দ্বিতীয় অনুশীলনে ঠিকই মাঠে নেমে পড়েছেন নেইমার।
বিশ্বকাপের আগে তুরিনে, জুভেন্তাসের মাঠে পাঁচ দিনের অনুশীলন ক্যাম্প ব্রাজিলের। দেশ থেকে সাড়ে পাঁচশ কেজি মালপত্র নিয়ে রবিবার তুরিনে পৌঁছেছেন ব্রাজিল দলের কোচ তিতে ও তার সহকারীরা। সঙ্গে ছিলেন ব্রাজিলিয়ান লিগে খেলা বিশ্বকাপ দলে থাকা তিন ফুটবলার পেদ্রো, এভারটন রিবেইরো ও ওয়েভারটন।
চূড়ান্ত দলে ডাক পাওয়া ইউরোপের লিগে খেলা ফুটবলাররাও পৌঁছে গেছেন তুরিনে। সবার শেষে যোগ দিয়েছেন মারকুইনহোস ও নেইমার। বিমানে যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দেওয়াতে বিমান পরিবর্তন করতে হয় পিএসজির এ দুই ব্রাজিলিয়ানকে। মাঠে পৌঁছতে পৌঁছতে গড়িয়ে যায় দুপুর। তাই প্রথম অনুশীলন সেশনে অংশ নিতে পারেননি তারা।
বিশ্বকাপের আগে তুরিনেই তৈরি হবেন ব্রাজিলের ফুটবলাররা। কোচ তিতে তারপর শেষ মিশনে উড়াল দেবেন কাতারের উদ্দেশে। ২৪ নভেম্বর সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে সেলেসাওদের মিশন হেক্সা।
এবারই প্রথম বিশ্বকাপের দলে থাকার সৌভাগ্য হয়েছে রাফিনহার। বার্সেলোনায় খেলা ২৫ বছর বয়সী এই উইঙ্গারের জাতীয় দলে অভিষেক গত বছরের অক্টোবরে, এক বছর এক মাসেই জায়গা করে নিয়েছেন বিশ্বকাপের দলে। বার্সেলোনার ওয়েবসাইটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাফিনহা জানিয়েছেন নিজের রোমাঞ্চের কথা, ‘আমি বিশ্বকাপের জন্য তৈরি আর আমি কঠোর পরিশ্রম করছি যতটা সম্ভব ভালো শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিশ্বকাপে যাওয়া যায়।’
বিশ্বকাপে খেলতে বাড়তি কোনো চাপ অনুভব করছেন না রাফিনহা, জানিয়েছেন বার্সেলোনার ওয়েবসাইটকে ‘ব্রাজিলের মতো একটা দল যখন বিশ্বকাপ বা যেকোনো প্রতিযোগিতায় খেলে তখনই শিরোপা জয়ের প্রত্যাশা তৈরি হয়। ফ্যানদের এই প্রত্যাশাটা স্বাভাবিক, কারণ আমাদের দলটা এত ভালো, এত এত দারুণ খেলোয়াড়!’
ব্রাজিল সবশেষ বিশ্বকাপ জিতেছিল ২০০২ সালে, রাফিনহা তখন শিশু। সেই স্মৃতি একদমই মনে নেই তার, ‘২০০২ বিশ্বকাপ নিয়ে আমার খুব বেশি কিছু মনে নেই কারণ তখন আমি খুব ছোট। তবে সেটা ছিল দারুণ আর ভাষায় প্রকাশ করতে না পারার মতো একটা অভিজ্ঞতা। সবাই সবাইকে আলিঙ্গন করছিল। সেরকম আনন্দের মুহূর্ত ফিরিয়ে আনার এটাই সেরা সময়’ জানিয়েছেন রাফিনহা।
সবশেষ মৌসুমে রাফিনহা ছিলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল লিডসে। ক্লাবকে অবনমন থেকে বাঁচাবার আনন্দে মাঠে হাঁটু দিয়ে হেঁটেছিলেন রাফিনহা, ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিতলে সেটাই করবেন ‘কথা দিচ্ছি, ব্রাজিল যদি বিশ্বকাপ জিতে তাহলে লিডসের প্রিমিয়ার লিগ থেকে অবনমন থেকে রক্ষার পর যেভাবে হাঁটু দিয়ে হেঁটেছিলাম সেভাবেই উদযাপন করব।’
বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেয়েছেন ঠিকই, তবে একাদশে জায়গা পেতে হলে জিততে হবে একটা অন্যরকম এল ক্লাসিকো! উইঙ্গার হিসেবে কোচের চোখে রাফিনহার চেয়ে এগিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, মাদ্রিদিস্তাদের এই ফুটবলার গত মৌসুমে ছিলেন দলের ১৪তম চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের অন্যতম নায়ক। তাকে টপকে একাদশে ঢুকতে অনেকটা কষ্টই করতে হবে রাফিনহাকে।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) উত্থাপনের জন্য পাঠানো হয়েছে। গত রবিবার এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
প্রস্তাবটি কিছু সংশোধনী দিয়ে পাঠিয়ে এডিপিতে অননুমোদিত প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বলা হয়েছে। তবে এ প্রকল্প এডিপিতে পাস হবে কি না মুশকিলে রয়েছে নির্বাচন কমিশন। কারণ প্রস্তাব অনুযায়ী এ মেশিন কিনতে হলে সরকারকে খরচ করতে হবে ৬০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ।
এখন রিজার্ভ (বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চিতি) মাত্র ২৬ বিলিয়ন ডলার (যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক তার ওয়েবসাইটে দেখাচ্ছে ৩৬.৮ বিলিয়ন ডলার)। রিজার্ভের ওপর যখন চাপ, জ¦ালানি-ঘাটতিতে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি যখন নাজুক, তখন এ যন্ত্রের জন্য এত ডলার খরচে সরকারের অনীহা থাকতে পারে।
জানতে চাইলে ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, তিনি একটি বৈঠকে আছেন। এ বিষয়ে পরে জানাতে পারবেন।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সচিব মো. মামুন আল রশিদ গত সোমবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জাতীয়ভাবে এ প্রস্তাবের গুরুত্ব কী এবং কোথায়, তা-ই মূল বিবেচনার বিষয়। বিভিন্ন দলের সঙ্গে সভা করে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তারা ইভিএম চালু করবে। নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। তাদের রিকয়ারমেন্ট অনুযায়ী প্রস্তাবটি আমাদের কাছে এসেছে। নীতিগতভাবে অবশ্যই আমরা এটি বিবেচনা করব।’
গত ৮ নভেম্বর (মঙ্গলবার) প্রস্তাবিত প্রকল্পটির ব্যয়ে কাটছাঁটের জন্য সেটি নির্বাচন কমিশনে ফেরত পাঠিয়েছিল পরিকল্পনা কমিশন। ফেরত পাঠানো প্রস্তাবের কোন কোন খাতে কীভাবে ব্যয়-সমন্বয় করা যায় তা নিয়ে মুশকিলে পড়েন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।
ইসির সূত্র জানিয়েছে, ৮ হাজার ৭১২ কোটি টাকার ইভিএম প্রকল্প। এর সঙ্গে যুক্ত হবে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নির্বাচন পরিচালনা খাতের খরচের প্রায় ৮০০ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্যয় হবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।’
পরিকল্পনা কমিশন থেকে ফেরত পাঠানোর পর নতুন প্রস্তাবে প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে তোড়জোড় শুরু করে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। কোন কোন খাতে কীভাবে ব্যয়-সমন্বয় করা যায় তা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন তারা।
ইসির সেই প্রস্তাবের সার-সংক্ষেপ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে আলোচনার পর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি গত রবিবার পরিকল্পনা কমিশন পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে ইসির পক্ষ থেকে ‘নির্বাচন ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এর ব্যবহার বৃদ্ধি ও টেকসই ব্যবস্থাপনা’ প্রকল্পটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের এডিপিতে অননুমোদিত প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে অনুরোধ করা হয়। চিঠি পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগে রয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রকল্পটি গত ২৬ অক্টোবর আন্তঃমন্ত্রণালয় প্রোগ্রামিং কমিটির বিশেষ সভার সুপারিশ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে ২০২২-২৩ অর্থবছরের এডিপিতে অননুমোদিত প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হলো। তবে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগে মূল্যায়ন করার সময় নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচ্য।
উপর্যুক্ত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থাপনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে অর্থ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে অর্থায়নের সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; প্রকল্প ব্যয়ের নিবিড় পর্যালোচনা করে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট খাতগুলো ঠিক রেখে পুরো ব্যয় প্রয়োজনে পুনর্বিন্যাস করতে হবে; প্রকল্পের কাজে ব্যবহারের জন্য চারটি জিপ ও ৫৩৪টি ডাবল কেবিন পিকআপ কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে, গাড়িগুলো কিনে ভাড়া করা যায় কি না তা বিবেচনা করা যেতে পারে। আরও বলা হয়েছে, ডিপিপির ক্রয় পরিকল্পনা অংশের ক্রয়পদ্ধতি এবং অর্পিত ক্রয়কার্য এবং ডিপিএমের বদলে ওটিএম উল্লেখ করতে হবে। ডিপিডির অনুচ্ছেদ-৯-এ উল্লিখিত প্রশাসনিক ব্যয়, পেশাগত সেবা ও সম্মানী, মেরামত ও সংরক্ষণ, ভবন-স্থাপনা, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি এবং ভূমি অধিগ্রহণ খাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ যৌক্তিকভাবে পুনর্নির্ধারণ করা যেতে পারে।
গত বুধবার নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বাজেট কমে গেলে ইভিএমে আসনসংখ্যাও কমে যাবে। শুধু তাই নয়, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রকল্প অনুমোদিত না হলে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করা সম্ভব নয়। প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানোর পর দেশের অর্থনৈতিক সংকটের বিষয়টি উপলব্ধি করেছে ইসি। ইভিএমে অর্থের অপচয় যাতে না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রেখেই সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে জানান, ইভিএম নিয়ে আমাদের পর্যবেক্ষণ পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। কমিশন থেকে যে ফাইল দেওয়া হয়েছিল, তাতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। শুধু টেকনিক্যাল কমিটির কিছু পর্যবেক্ষণ যুক্ত করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা দুই লাখ ইভিএম কেনার প্রস্তাবই পর্যবেক্ষণে রেখেছি। ১৫০ আসনে ইভিএম দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েই প্রস্তাব জমা দিয়েছি। একনেকে ওঠার জন্য যে কাজগুলো দরকার তা হয়ে গেছে। একনেকে পাস হলেই আমরা বাকি কাজ শুরু করব।’
খরচ হবে ৬১০ মিলিয়ন ডলার : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ছিল ৪০ হাজার ১৮৩টি। ভোটকক্ষ ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২টি। ভোটার ছিল ১০ কোটি ৪২ লাখের কিছু বেশি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৩০০ আসনে ভোটারের সংখ্যা হবে ১২ কোটির কাছাকাছি। ভোটকেন্দ্র হতে পারে ৪২ থেকে ৪৪ হাজার। আর ভোটকক্ষ হতে পারে আড়াই লাখের মতো। নির্বাচন কমিশন ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করতে চায়। এ জন্য তারা গত ১৯ সেপ্টেম্বর কমিশনের বৈঠকে দুই লাখ ইভিএম কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। একটি ইভিএম মেশিনের দাম ইসি ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা প্রস্তাব করেছে। সেই হিসাবে মোট খরচ হবে ৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা বা ৬১০ মিলিয়ন ডলার (১০০ টাকা = ১ ডলার হিসাবে)। পুরো ডলারই রিজার্ভ থেকে ছাড় করতে হবে।
আমদানি তিন দেশ থেকে : নির্বাচন কমিশন তাদের একমাত্র সোর্স বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) মাধ্যমে ইভিএম আমদানি করবে। ২০১৮ সালেও বিএমটিএফের কাছ থেকে এসব যন্ত্র কেনা হয়েছিল। আর ইভিএমের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ এসেছিল স্পেন, হংকং ও চীন থেকে। বিএমটিএফ আমদানিকারক হলেও এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছে রাজধানীর উত্তরখানের এমএম এন্টারপ্রাইজ। তারা স্পেনের সিটল (এসসিওয়াইটিএল) ভোটিং হার্ডওয়্যার কোম্পানি এসব যন্ত্র কিনেছিল। প্রতিষ্ঠানটি তিন দেশ থেকে আমদানিকারককে যন্ত্র সরবরাহ করে।
দেউলিয়া সিটল (এসসিওয়াইটিএল) : প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশসহ ৩৫টি দেশে ইভিএম সরবরাহ করেছে। তবে অস্ট্রেলিয়া, ইকুয়েডর, নরওয়েসহ বেশ কয়েকটি দেশে প্রতিষ্ঠানটির সরবরাহকৃত যন্ত্রে ত্রুটি ধরা পড়ায় পরে তারা আর এ যন্ত্র ব্যবহার করেনি বলে উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটের নিউজ থেকে জানা যায়।
২ জুন ২০২০, একটি স্প্যানিশ আদালত সিটলকে দেউলিয়া ঘোষণা করে এবং এর সম্পদ নিলামের প্রক্রিয়া শুরু করে। প্যারাগন গ্রুপের সাবসিডিয়ারি ‘সার্ভিস পয়েন্ট সলিউশনস’ ডিসেম্বর ২০২১ এসওই (ঝঙঊ) ও সিটলকে (ঝপুঃষ) অধিগ্রহণ করে। এবার এ প্রতিষ্ঠান থেকে ইভিএম আনা হবে কি না ভেবে দেখা হচ্ছে বলে ইসি সূত্রের দাবি।
কীভাবে খরচ হবে নির্বাচনী ব্যয় : আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কত টাকা খরচ হবে, তার হিসাব এখনো করেনি ইসি সচিবালয়। ভোটের যে ব্যয় হয়, তার বড় অংশ যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ও নির্বাচন পরিচালনায়। ব্যালট ছাপা ও আনুষঙ্গিক খরচ খুব বেশি নয়। ব্যালটে হোক আর ইভিএমে নির্বাচন হোক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নির্বাচন পরিচালনার খরচ একই থাকবে। নির্বাচন কর্মকর্তাদের ইভিএমের প্রশিক্ষণ, ভোটারদের জন্য ‘মক ভোটিং’-এ বাড়তি খরচ হয়।
ইসি সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটের জন্য ৭০০ কোটি টাকার বরাদ্দ অনুমোদন করেছিল ইসি। ৪০০ কোটি টাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাবদ এবং ৩০০ কোটি টাকা নির্বাচন পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছিল। পরে ব্যয় কিছুটা বেড়েছিল। শেষ পর্যন্ত কত ব্যয় হয়েছিল, তার সুনির্দিষ্ট হিসাব ইসি সচিবালয় থেকে পাওয়া যায়নি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘দেশের সব পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, ইভিএম দিয়ে সুষ্ঠু ভোট হবে না। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সেটা দিয়েই নির্বাচন করতে চাচ্ছে। এটা ক্লিয়ার ও সিম্পল বিষয়, তারা শেষ সময়ে নিজেদের আখের গোছাতে চুরি করতে চাচ্ছে। কমিশনের নেতৃত্বে যারা আছে, তারা মনে করছে সবাই চুরি করেছে। আমি বাদ যাব কেন! তাই চুরির একটি রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।’
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।