
ভাষা আন্দোলন থেকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, বাংলাদেশের অভ্যুদয় থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে দেশের বামপন্থি দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অনস্বীকার্য। এসব আন্দোলনের ক্ষেত্রে বামপন্থিরা কখনো প্রকাশ্য আবার কখনো নেপথ্যে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। ইতিহাসের বাঁকবদলের এসব আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মণি সিংহ, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ, আবদুল হক, মোহাম্মদ তোয়াহা, মোহাম্মদ ফরহাদদের মতো বাম ও উদারপন্থি নেতার আবির্ভাব ঘটেছে। এখনো রাশেদ খান মেনন, আব্দুর রব, হাসানুল হক ইনুর মতো নেতা জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তাদের পরবর্তী প্রজন্ম কি তৈরি হয়েছে, যারা বাম আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবেন এমন আলোচনা আছে রাজনৈতিক মহলে।
এমনও আলোচনা আছে যে, ঘুরে ঘুরে দুই-একজন নেতার হাতে দলের নেতৃত্ব থাকায় দলীয় নেতৃত্বের ক্ষেত্রেই নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও সংকট ঘনীভূত হচ্ছে।
দেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, ক্ষেতমজুরদের অবদান সবসময়ই বেশি ছিল। এই সংগঠনগুলোতে বামপন্থিদের প্রভাব থাকায় একদিকে আন্দোলন যেমন বেগবান হয়েছে তেমনি বামপন্থি দলগুলোও জনগণের কাছাকাছি যেতে পেরেছিল। বর্তমান সময়ে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। দেশে কৃষক-ক্ষেতমজুরদের কোনো কার্যকর আন্দোলন নেই, শ্রমিক সংগঠনগুলো পুরোপুরি আওয়ামী-বিএনপির দখলে চলে গিয়েছে। এইসব পেশাভিত্তিক গণ-সংগঠনগুলোই ছিল বামপন্থি দলগুলোর জনগণের মধ্যে কাজ করা এবং প্রভাব বিস্তার করার মূল মাধ্যম। ফলে কোনো গণআন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না দলগুলো।
বামদলগুলোর নেতারা মনে করেন, এরশাদবিরোধী আন্দোলনের পরে দেশের বাম রাজনীতিতে যোগ্য ও জনপ্রিয় নেতা আসেননি। যারা রয়েছেন তাদের মধ্যেও দূরদর্শিতার অভাব রয়েছে। অন্যদিকে অনেকেই নিজেদের অস্তিত্ব ও ক্ষমতার স্বাদ পেতে জোট করেছেন ক্ষমতায় থাকা দলগুলোর সঙ্গে। এ নিয়ে দলগুলোর ভেতরে ও বাইরে আলোচনা-সমালোচনা আছে। বড় কথা বাম দলগুলো সাংগঠনিক শক্তি হারাচ্ছে। জনগণের মনোযোগও আর আকর্ষণ করতে পারছে না।
সিপিবির সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাম দলের নেতৃত্ব তৈরি হয় শ্রেণিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে। কিন্তু আমাদের বামপন্থিরা এটা ভুলে গেছে। শ্রেণিসংগ্রাম তো সমাজের চালিকাশক্তি, কিন্তু সেই শ্রেণিসংগ্রামই নেই। বর্তমানে বামপন্থিদের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে। তাদের যে পথ, সেখান থেকে তারা সরে আসছে। ঐতিহ্যকে ধারণ করে আন্দোলন-সংগ্রাম অগ্রসর করেনি।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সারা বিশ্বেই বাম রাজনীতি হোঁচট খেয়েছে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। একটা গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বে পরিবর্তন আসা উচিত। বিশেষ করে বাম দলগুলোতে নেতৃত্বের এই পরিবর্তন অনেক আগেই আসা উচিত ছিল। কিন্তু তা না হয়ে দীর্ঘ সময় ধরে পদ-পদবি আগলে ধরে রাখার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বামদলগুলো ব্যক্তিনির্ভর রাজনীতিতে ঘুরপাক খাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাম রাজনীতির সফলতা নির্ভর করে নেতৃত্বের দৃঢ়তা ও সততার ওপর।
বাম দলগুলোর কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ২৮ বছর ধরে দেশের অন্যতম বড় বামপন্থি দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। অন্যদিকে, ৩৬ বছর আহ্বায়ক এবং পাঁচ বছর সাধারণ সম্পাদক, সব মিলিয়ে গত ৪১ বছর ধরে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নেতৃত্বে ছিলেন খালেকুজ্জামান। সম্প্রতি কংগ্রেসের মাধ্যমে দুই দলের নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে।
একই অবস্থা ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির। দলটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ৩৭ বছর ধরে মূল নেতৃত্ব রয়েছেন। এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) হাসানুল হক ইনু ৩৫ বছর ধরে নেতৃত্বে রয়েছেন। গত বছর নেতৃত্ব জটিলতায় দলটি আবারও ভাঙনের মুখে পড়ে। এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব ৩৭ বছর, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ৃয়া ৩৪ বছর ধরে নিজ নিজ দলের নেতৃত্বে আছেন।
বাসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ সময় বিশেষ চাহিদা বা প্রয়োজন দেখা দেয়। তার ভিত্তিতে নেতৃত্ব সেভাবে সংগঠিত হওয়া দরকার। যদি কেউ সেটা অনুসরণ না করে তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার শুধুমাত্র নিয়ম করে পরিস্থিতি না বুঝে দলের নেতৃত্ব অদল-বদল করলে দলের অগ্রগতি হয় না। আবার প্রয়োজনের তাগিদে সাড়া না দিয়ে শুধুমাত্র একই নেতৃত্ব বহাল থাকলেও দল বা আন্দোলন অগ্রসর হয় না।’ তিনি বলেন, ‘এটা মূলত নির্ভর করে একটা বিপ্লবী সংগ্রামের বিকাশ, দলের প্রয়োজন এবং সার্বিক সাংগঠনিক প্রয়োজনের ওপর। তার নিরিখে নেতৃত্ব নির্বাচিত হওয়া দরকার এবং রদবদল হওয়া দরকার।’
খালেকুজ্জামান আরও বলেন, ‘শুধুমাত্র নাম করা নেতা হলেই একটা আন্দোলন বিকশিত হয়, তা না। নীতিগত সংগ্রামের বিকাশের মধ্য দিয়ে নেতা তৈরি হয়।’
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই সময়টাতে পৃথিবীজুড়ে বামেরা লড়ছে। বিভিন্ন দেশে লাল ঝা-া উড়াচ্ছে। কিন্তু আমরা পারছি না। এটা আমাদের বড় ব্যর্থতা। আমরা যে কিছু করতে পারি, এই বুঝটা আমাদের মধ্যে নেই।’
তিনি বলেন, ‘দেশের বাম গণতান্ত্রিক শক্তি কখনোই দুর্বল ছিল না। সমস্যা হলো আমাদের শক্তি নিয়ে জনগণের কাছে যেতে পারছি না। এখানে নেতৃত্বের ঘাটতি রয়েছে। কারণ আমরা সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে দিকনির্দেশ করতে পারিনি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাসের অভিঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে আছে। এ মন্দা মোকাবিলায় এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে ‘ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ ২০২২’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা গণভবন থেকে মিরপুরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত মূল আয়োজনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সকল ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়টা হলো আমাদের উন্নয়নের গতি কিছুটা হলেও শ্লথ হয়ে গিয়েছে।
করোনাভাইরাসের অভিঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা), কাউন্টার স্যাংশনের (পাল্টা নিষেধাজ্ঞা) ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। এই মন্দা মোকাবিলায় এখন থেকেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তার দেশের প্রতিটি মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে, উন্নত জীবন পাবে, শিক্ষা-দীক্ষায় উন্নত হবে, সেই লক্ষ্য ইনশাআল্লাহ আমরা বাস্তবায়ন করব।’
অগ্নিনির্বাপণকারীদের ‘দুঃসময়ের বন্ধু’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা (ফায়ার ফাইটার) নিজেদের জীবন বাজি রেখে মানুষের কল্যাণ করে মানুষকে উদ্ধার করেন। একটি মহৎ কাজে তারা নিয়োজিত রয়েছেন। কাজেই ফায়ার সার্ভিসের প্রতিটি সদস্যই দুঃসময়ের বন্ধু হিসেবে মানুষের কাছে প্রতীয়মান। তাই ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আমরা বিদেশি সহায়তাও কাজে লাগিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে সাম্প্রতিক বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়িত্ব পালনকালে নিহত ৩০ জন অগ্নিনির্বাপণকর্মীকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস সম্পূর্ণ সক্ষমতার, উচ্চক্ষমতার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে যাতে রূপান্তরিত হয়, সে ব্যবস্থাই আমরা গ্রহণ করেছি। প্রতিটি উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠার যে ঘোষণা আমরা দিয়েছিলাম, তা এখন শেষ পর্যায়ে। যারা এ কাজে সম্পৃক্ত, তারা যেন উন্নত মানের প্রশিক্ষণ ও যন্ত্রপাতি পান, সেদিকে লক্ষ রেখেই আমরা বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমি প্রতিষ্ঠারও উদ্যোগ নিয়েছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, লিঙ্গবৈষ্যম দূর করতে ‘ফায়ারম্যান’ পদের নাম ‘ফায়ার ফাইটার’ করা হয়েছে। পরিদর্শকের সংখ্যা ৫০ থেকে ২৬৮, ডুবুরির সংখ্যা ২৫ থেকে ৮৫, অ্যাম্বুলেন্স সংখ্যা ৫০ থেকে ১৯২, আগুন নেভানোর পানিবাহী গাড়ির সংখ্যা ২২৭ থেকে ৬১৭ এবং ফায়ার পাম্পের সংখ্যা ৪৫০ থেকে ১৫৪৬টিতে উন্নীত করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও নিরাপত্তাসেবা বিভাগের সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সীতাকুণ্ডে সাম্প্রতিক বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১৩ জন অগ্নিবীরের পরিবারসহ ফায়ার সার্ভিসের ৪৫ জন সদস্যের হাতে চারটি ক্যাটাগরিতে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স পদক-২০২২ তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী বাহিনীর কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন এবং রাষ্ট্রীয় সালাম গ্রহণ করেন। সূত্র : বাসস
পরতে পরতে রঙ বদলানো ম্যাচের শেষটায় ভাগ্য মুখ ফিরিয়ে নিল রূপায়ণ সিটি কুমিল্লার কাছ থেকে। ৫৬ মিনিটে সমতায় ফেরার সুবর্ণ সুযোগ হেলায় হারালেন দলটির কোরিয়ান ডিফেন্ডার কিম সুং ইয়োব। তার পেনাল্টি স্ট্রোক চলে গেল বার উঁচিয়ে। এর সঙ্গে দুই বিদেশি আম্পায়ারের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত দলটির বিরুদ্ধে গেছে। তাতে হকি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনাল খেলার স্বপ্ন বিলীন হয়েছে রূপায়ণ সিটির। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে মোনার্ক পদ্মার কাছে তারা হেরেছে ৪-৩ গোলে। মোনার্কের হয়ে চারটি গোলই করেন জাপানিজ মিয়া তানিমিৎসু। আগামীকাল সাকিব আল হাসান মালিকানাধীন মোনার্ক ফাইনালে মুখোমুখি হবে একমি চট্টগ্রামের।
ম্যাচের প্রায় পুরোটা সময় প্রাধান্য বিস্তার করে খেলতে দেখা গিয়েছে রূপায়ণ সিটিকে। আগের ম্যাচে স্পেন থেকে উড়িয়ে আনা তারকা জোয়াকিন মেনিনির সংযুক্তিতে তারা আক্রমণভাগে ছিল অনেক বেশি সংঘবদ্ধ। তবে ম্যাচজুড়েই দুই মালয়েশিয়ান ও কোরিয়ান আম্পায়ারের ভুল বাঁশি খেলার গতিরোধ করেছে। তাদের বেশিরভাগ সিদ্ধান্তই গেছে রূপায়ণের বিপক্ষে। তারপরও প্রথম কোয়ার্টারে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল তারা। ১৩ মিনিটে মেনিনি করেন সুযোগ সন্ধানী গোল। মিলন হোসেনের রিভার্স হিট গোলমুখ থেকে ফিরিয়েছিলেন ইরফানুল হক। ফিরতি বল পেয়ে জোরালো হিটে গোলের খাতা খোলেন স্প্যানিশ তারকা। পরের মিনিটেই দলের দ্বিতীয় পিসিকে গোলে পরিণত করে ব্যবধান বাড়ান সোহানুর রহমান সবুজ। মিলনের পুশ ভারতীয় প্রদীপ মোর থামালে তাতে রূপায়ণ অধিনায়কের ড্র্যাগ অ্যান্ড ফ্লিক জালে জড়ায়। তবে দ্বিতীয় কোয়ার্টারে দারুণভাবে ফিরে আসে আগের দিন এলিমিনেটরে মেট্রো বরিশালকে হারিয়ে আসা মোনার্ক পদ্মা। ১৭ মিনিটে তানিমিৎসু দলের দ্বিতীয় পিসি থেকে গোল করে ব্যবধান কমান। দ্বিতীয় কোয়ার্টারের শেষ মুহূর্তে রূপায়ণ সিটির মালয়েশিয়ান ডিফেন্ডার ইজাদ হাকিমি রাসেল মাহমুদ জিমিকে শুটিং সার্কেলের ভেতরে বাজে ট্যাকল করে পেনাল্টি স্ট্রোক উপহার দেন। তা থেকে ২-২ করেন তানিমিৎসু। তবে ৩৯ মিনিটে মেনিনি অসাধারণ স্টিকওয়ার্কে রূপায়ণের লিড পুনরুদ্ধার করেন। বাঁ দিক থেকে ভারতীয় প্রদীপ মোরের পাস পেয়ে একজনকে কাটিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন এই আর্জেন্টাইন বংশোদ্ভূত স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড। চতুর্থ কোয়ার্টারের পঞ্চম মিনিটে একটি বিতর্কিত পিসি ও হলুদ কার্ডের সিদ্ধান্তে খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল রূপায়ণ। রূপায়ণ অধিনায়ক সবুজকে হলুদ কার্ড দেখালে তারা মাঠের এক পাশে চলে আসে। খেলা প্রায় ৫ মিনিট বন্ধ থাকার পর রূপায়ণ সিটি কুমিল্লার দেখভালের দায়িত্বে থাকা সাবেক ফুটবলার আবদুল গাফফারের হস্তক্ষেপে মাঠে গড়ায় খেলা। সেই পিসি থেকে গোল না পেলেও পেনাল্টি স্ট্রোক আদায় করে নেয় মোনার্ক। তবে রেফারেল চেয়ে সেটি বাতিল করায় রূপায়ণ। তবে ফিরতি পিসি থেকে তানিমিৎসু ৩-৩ করেন। ৫৫ মিনিটে পরপর দুটি পিসি নষ্ট করার পর তানিমিৎসু মোনার্ককে প্রথমবারের মতো এগিয়ে নেন। তবে ম্যাচে ফেরার দারুণ সুযোগ ছিল রূপায়ণের। পরের মিনিটে দলটির কোরিয়ান ডিফেন্ডার কিম সুং ইয়োব পিসি থেকে গোল করতে না পারলেও আম্পায়ার পেনাল্টি স্ট্রোকের বাঁশি বাজান। দারুণ সেই সুযোগ ইয়োব বার উঁচিয়ে মেরে দলের বিদায় নিশ্চিত করে দেন।
ম্যাচ শেষে রূপায়ণ গ্রুপের উপদেষ্টা আবদুল গাফফার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিং এই ম্যাচেও জারি থাকল। গত ম্যাচে আম্পায়াররা আমাদের হারিয়ে দিয়েছিল। আজও বারবার আম্পায়ারদের বাঁশি আমাদের বিরুদ্ধে বেজেছে। এর সঙ্গে ভাগ্যও শেষ পর্যন্ত সহায়তা করেনি। তাই হারতে হয়েছে।’ রূপায়ণ সিটির ক্ষুব্ধ ম্যানেজার এহসান রানা দাবি করেন, ‘এখানে অন্য কিছু কাজ করেছে। আমরা ৭ গোলে এগিয়ে গেলেও এই ম্যাচ জিতে বের হতে পারতাম না।’
ম্যাচ শেষে মোনার্ক পদ্মার অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার জিমি ও রানার মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়েছিল; যা অন্যদের হস্তক্ষেপে হাতাহাতিতে গড়ায়নি। সব মিলিয়ে বিদায়টা প্রত্যাশা মতো হলো না রূপায়ণ সিটি কুমিল্লার।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া বস্তির (চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র) মূল ফটক দিয়ে ঢুকে এক কিলোমিটার ভেতরে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নব কিশলয় উচ্চ বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে কাইলা রায়হানের তিনতলা ভবন। গত সোমবার বিকেলে ওই ভবনের কাছাকাছি গেলে দেখা যায়, ভবন লাগোয়া সরু রাস্তার সামনে ১৫ থেকে ২০ বছরের ৮-১০ জনের জটলা। ভবনের সামনে যেতেই সরু রাস্তা দিয়ে ভেতরে ঢুকে যায় তারা।
নব কিশলয় বিদ্যালয়ের আশপাশের দোকানি ও স্থানীয় লোকজন জানান, দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা এভাবেই মাদক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে কারবারিরা। বস্তির সব থেকে বেশি মাদক বিক্রি হয় কাইলা রায়হানের বাড়ির সামনে। ওই বাড়িতেই রয়েছে মাদকের গুদাম। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ (২৩) চনপাড়া বস্তিতে খুন হওয়ার পর থেকে বাড়িটি তালাবদ্ধ রয়েছে। তবে থেমে নেই মাদকের কারবার।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শীতলক্ষ্যা নদীর পাশে ১২৬ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা চনপাড়া বস্তির ৮০ একরে সোয়া লাখ মানুষের বাস। ৯টি ওয়ার্ড বা মহল্লায় বিভক্ত এই বস্তিতে ছোট-বড় ১১৪টি মাদক বিক্রির স্পট রয়েছে। ইয়াবা ট্যাবলেট, ফেনসিডিল, হেরোইন, গাঁজা থেকে
শুরু করে সবধরনের মাদকই এসব স্পটে পাওয়া যায়। এসব মাদক বিক্রি করা হচ্ছে ছোট ছোট ছেলেদের দিয়ে। প্রতিটি স্পটের জন্য কারবারিদের কাছ থেকে সপ্তাহে ৫ হাজার টাকা করে চাঁদা বা বখরা তোলা হয়, মাসে যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২৩ লাখ টাকা। এর বিনিময়ে প্রকাশ্যে নির্বিঘেœ মাদক বেচাবিক্রির সুযোগ পায় কারবারিরা। একই সঙ্গে ক্রেতারা কোনো ঝুটঝামেলা ছাড়াই মাদক সেবনের সুযোগ পান বস্তি এলাকায়। এসব মাদকের ক্রেতা উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা। যাদের বেশিরভাগই রাজধানী থেকে যাওয়া ও বস্তির আশপাশের বাসিন্দা।
এ ছাড়া চনপাড়া বস্তি থেকে মাদকের বড় চালান যায় বস্তিসংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীর বিপরীত পাশে রাজধানীর ডেমরা থানাধীন শিল্প এলাকায়ও। ডেমরা থেকেই পুরো রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়ে এসব মাদক।
বস্তির ষাটোর্ধ্ব এক বাসিন্দা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেসব ছেলেমেয়ে মাদক সেবন করতে আসে তা কল্পনাও করতে পারবেন না। ভার্সিটির ছেলেমেয়েরা দল বেঁধে আসে, স্বামী-স্ত্রীও প্রাইভেট কার নিয়ে চলে আসে বস্তিতে মাদকসেবন করতে। ২৪ ঘণ্টা ধরে বেচাবিক্রি হয়। প্রতিটি স্পটে মাদক গ্রহণের জন্য ঘরের ব্যবস্থাও আছে।’
তিনি বলেন, ‘একেকটি ওয়ার্ডে সাত থেকে দশটি করে মাদকের স্পট আছে। এখানে কে কোন ওয়ার্ডে মাদক বিক্রি করবে তা রাজনৈতিক নেতারা ঠিক করে দেয়। সব মুখবুজে সহ্য করা ছাড়া কারও কিছুই করার নেই।’
বস্তি এলাকায় আধিপত্য নিয়ে মাদক কারবারিদের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ হয়। তাদের বিবাদে অতিষ্ঠ সাধারণ বাসিন্দাদের অনেকে বস্তি ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে যাচ্ছেন। বস্তির অফিস ঘাটের নৌকার মাঝি মো. আলমগীর হোসেন সম্প্রতি পরিবার নিয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। তিনি গতকাল মুঠোফোনে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বস্তিতে থাকার মতন পরিবেশ নেই। মাদক কারবারিদের আধিপত্য নিয়ে বিবাদ লেগেই থাকে। একপক্ষ আরেক পক্ষের ওপর হামলা চালায়। নির্বিচারে ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে।’ তার মতন অনেকে বস্তি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন বলে জানান আলমগীর।
বস্তিবাসীর অভিযোগ রয়েছে, মাদক কারবারিদের পৃষ্ঠপোষক কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. বজলুর রহমান। তিনি বস্তি এলাকার ‘অঘোষিত সম্রাট’। তিনি একই সঙ্গে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের চনপাড়া ইউনিটের (চনপাড়া শেখ রাসেল নগর ইউনিয়ন) সাধারণ সম্পাদক। বজলুর বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে। তার ঘনিষ্ঠজনদের দিয়ে গড়ে তুলেছেন মাদক কারবারের এক অভয় আশ্রম। বজলুর রহমানের সাঙ্গোপাঙ্গরা মাদকের স্পট থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলে। চাঁদার সেই টাকার ভাগবাটোয়ারা হয় রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে পুলিশের বিভিন্ন মহলেও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মাদক কারবারি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ইউপি সদস্য বজলুর লোকজন নিয়মিত চাঁদা তোলেন। এসব টাকার একটি বড় অংশ রাজনৈতিক নেতারা পান। আরেকটা অংশ চনপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি, রূপগঞ্জ থানা, ডেমরা থানা ও ডিবি পুলিশকে দেওয়া হয়। ফলে বস্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ঝামেলা করে না।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে বজলুর রহমানকে গতকাল ফোন করলে এক নারী রিসিভ করেন। এ প্রতিবেদকের পরিচয় জানার পর ফোন কেটে দেন তিনি। এরপর একাধিকবার ফোন করলেও রিসিভ করেননি।
স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, বস্তিতে আধিপত্যের লড়াই ও কাঁচা টাকার ছড়াছড়ি শুরু হয় ২০১৩ সালের পর থেকে। সে সময় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিতে বাড়িপ্রতি প্রথম পর্যায়ে ৪০ হাজার ও পরে ১০ হাজার করে টাকা দিতে হয়েছে। এভাবে কোটি কোটি টাকা বাগিয়ে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা বজলু, আনোয়ার ও সমশেরের তিনটি গ্রুপ। যাদের আধিপত্য বেশি ছিল তারা বেশি টাকা নিয়েছিল।
বস্তিসংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীতে চারটি নৌঘাট রয়েছে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ‘বাজার ঘাট’, ৪ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী অফিস ঘাট, ১ নম্বর ওয়ার্ডের ‘এক নং চরের ঘাট ও ‘বওর বা বাইদ্দার ঘাট’। এসব ঘাট দিয়ে নদী পথে বস্তিতে মাদক ঢোকে। মাদক কারবারিরা কক্সবাজার থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট বড় চালান এনে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে জড়ো করে। সেখান থেকে দুই থেকে তিন হাজার করে ভাগ করে প্রথমে মেঘনা নদী ও পরে শীতলক্ষ্যা নদী দিয়ে বাল্ক হেডে করে চনপাড়া বস্তিতে নিয়ে আসে। গভীর রাতে অফিস ঘাট দিয়ে বেশি ঢোকে এসব ইয়াবা। এ ছাড়া পাশর্^বর্তী দেশ ভারত থেকে আসা ফেনসিডিল মেঘনা ব্রিজের পাম্পের আশপাশে গাড়ি থেকে ফেলে দেয় কারবারিরা। সেখান থেকে অটোরিকশা করে ঢোকে চনপাড়া বস্তিতে। নদী পথেও আসে। অন্যান্য মাদকের বেশিরভাগই ঢোকে এই চার ঘাট দিয়ে। বস্তির পাইকারি ডিলারদের মধ্যে বজলু মেম্বরের মেয়ের জামাই রিপন, শ্যালক জাহির ছাড়াও ফেন্সি ফারুক, রবিন অন্যতম।
বস্তির এক নম্বর ওয়ার্ডে মাদক বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করে তালুকদার মুজাহিদ, মাল্টা রনি ও উজ্জ্বল। দুই নম্বর ওয়ার্ডে আলমগীর, তিন নম্বর ওয়ার্ডে শাওন, চান ও পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে রায়হান, ছয় নম্বর ওয়ার্ডে মনু ওরফে ময়না ও পাগলা ফারুক, সাত নম্বর ওয়ার্ডে বন্দুকযুদ্ধে নিহত শাহিনের সহযোগী জুলহাস, সুমন ও সিরাজুল। আর ৯ নম্বর ওয়ার্ডে রাজার লোকজন। এসব মাদক কারবারি কখনো বস্তির বাইরে বের হয় না।
জানতে চাইলে চনপাড়া বস্তি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মাদকের বেশিরভাগই নদীপথে ঢোকে। এজন্য আমাদের তেমন কিছু করার থাকে না।’ মাদক কারবারিদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি মাত্র এক মাস হয় এখানে এসেছি। এসব অভিযোগ মিথ্যা।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চনপাড়া বস্তিতে দীর্ঘদিন দুটি গ্রুপের আধিপত্য ছিল। গ্রুপ দুটির একটি হলো বজলু মেম্বার ও জয়নালের। আর অন্যটি শাহিন ও রাজার। পরে বজলু ও জয়নালের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। জয়নাল স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে জেলে আছেন। তার বিরুদ্ধে অন্তত ১০টি মাদক ও হত্যা মামলা আছে। আর অপর গ্রুপের শাহিন গত বৃহস্পতিবার র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। তিনিও স্বেচ্ছাসেবক লীগের চনপাড়া ইউনিটের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে মাদক ও হত্যার ২৩ মামলা ছিল। রাজাও র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে আছেন।
ফ্লাইট জটিলতায় দেরি শুধু সাকিব আল হাসানেরই হয় না, নেইমারেরও হয়! বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের ফ্লাইট জটিলতায় দেরিতে নিউজিল্যান্ডে পৌঁছানো নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। তাহিতি হয়ে আসতে না পারায় হাজির থাকতে পারেননি অধিনায়কদের ফটোসেশনে। একই বরাত নেইমার আর মারকুইনহোসেরও। প্যারিস থেকে তুরিনে সময়মতো হাজির হতে পারেননি প্যারিস সেন্ট জার্মেইর এই দুই ফুটবলার, তাই অংশ নেওয়া হয়নি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ব্রাজিলের প্রথম অনুশীলন সেশনে। তবে কাল দ্বিতীয় অনুশীলনে ঠিকই মাঠে নেমে পড়েছেন নেইমার।
বিশ্বকাপের আগে তুরিনে, জুভেন্তাসের মাঠে পাঁচ দিনের অনুশীলন ক্যাম্প ব্রাজিলের। দেশ থেকে সাড়ে পাঁচশ কেজি মালপত্র নিয়ে রবিবার তুরিনে পৌঁছেছেন ব্রাজিল দলের কোচ তিতে ও তার সহকারীরা। সঙ্গে ছিলেন ব্রাজিলিয়ান লিগে খেলা বিশ্বকাপ দলে থাকা তিন ফুটবলার পেদ্রো, এভারটন রিবেইরো ও ওয়েভারটন।
চূড়ান্ত দলে ডাক পাওয়া ইউরোপের লিগে খেলা ফুটবলাররাও পৌঁছে গেছেন তুরিনে। সবার শেষে যোগ দিয়েছেন মারকুইনহোস ও নেইমার। বিমানে যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দেওয়াতে বিমান পরিবর্তন করতে হয় পিএসজির এ দুই ব্রাজিলিয়ানকে। মাঠে পৌঁছতে পৌঁছতে গড়িয়ে যায় দুপুর। তাই প্রথম অনুশীলন সেশনে অংশ নিতে পারেননি তারা।
বিশ্বকাপের আগে তুরিনেই তৈরি হবেন ব্রাজিলের ফুটবলাররা। কোচ তিতে তারপর শেষ মিশনে উড়াল দেবেন কাতারের উদ্দেশে। ২৪ নভেম্বর সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে সেলেসাওদের মিশন হেক্সা।
এবারই প্রথম বিশ্বকাপের দলে থাকার সৌভাগ্য হয়েছে রাফিনহার। বার্সেলোনায় খেলা ২৫ বছর বয়সী এই উইঙ্গারের জাতীয় দলে অভিষেক গত বছরের অক্টোবরে, এক বছর এক মাসেই জায়গা করে নিয়েছেন বিশ্বকাপের দলে। বার্সেলোনার ওয়েবসাইটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাফিনহা জানিয়েছেন নিজের রোমাঞ্চের কথা, ‘আমি বিশ্বকাপের জন্য তৈরি আর আমি কঠোর পরিশ্রম করছি যতটা সম্ভব ভালো শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিশ্বকাপে যাওয়া যায়।’
বিশ্বকাপে খেলতে বাড়তি কোনো চাপ অনুভব করছেন না রাফিনহা, জানিয়েছেন বার্সেলোনার ওয়েবসাইটকে ‘ব্রাজিলের মতো একটা দল যখন বিশ্বকাপ বা যেকোনো প্রতিযোগিতায় খেলে তখনই শিরোপা জয়ের প্রত্যাশা তৈরি হয়। ফ্যানদের এই প্রত্যাশাটা স্বাভাবিক, কারণ আমাদের দলটা এত ভালো, এত এত দারুণ খেলোয়াড়!’
ব্রাজিল সবশেষ বিশ্বকাপ জিতেছিল ২০০২ সালে, রাফিনহা তখন শিশু। সেই স্মৃতি একদমই মনে নেই তার, ‘২০০২ বিশ্বকাপ নিয়ে আমার খুব বেশি কিছু মনে নেই কারণ তখন আমি খুব ছোট। তবে সেটা ছিল দারুণ আর ভাষায় প্রকাশ করতে না পারার মতো একটা অভিজ্ঞতা। সবাই সবাইকে আলিঙ্গন করছিল। সেরকম আনন্দের মুহূর্ত ফিরিয়ে আনার এটাই সেরা সময়’ জানিয়েছেন রাফিনহা।
সবশেষ মৌসুমে রাফিনহা ছিলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল লিডসে। ক্লাবকে অবনমন থেকে বাঁচাবার আনন্দে মাঠে হাঁটু দিয়ে হেঁটেছিলেন রাফিনহা, ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিতলে সেটাই করবেন ‘কথা দিচ্ছি, ব্রাজিল যদি বিশ্বকাপ জিতে তাহলে লিডসের প্রিমিয়ার লিগ থেকে অবনমন থেকে রক্ষার পর যেভাবে হাঁটু দিয়ে হেঁটেছিলাম সেভাবেই উদযাপন করব।’
বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেয়েছেন ঠিকই, তবে একাদশে জায়গা পেতে হলে জিততে হবে একটা অন্যরকম এল ক্লাসিকো! উইঙ্গার হিসেবে কোচের চোখে রাফিনহার চেয়ে এগিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, মাদ্রিদিস্তাদের এই ফুটবলার গত মৌসুমে ছিলেন দলের ১৪তম চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের অন্যতম নায়ক। তাকে টপকে একাদশে ঢুকতে অনেকটা কষ্টই করতে হবে রাফিনহাকে।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) উত্থাপনের জন্য পাঠানো হয়েছে। গত রবিবার এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
প্রস্তাবটি কিছু সংশোধনী দিয়ে পাঠিয়ে এডিপিতে অননুমোদিত প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বলা হয়েছে। তবে এ প্রকল্প এডিপিতে পাস হবে কি না মুশকিলে রয়েছে নির্বাচন কমিশন। কারণ প্রস্তাব অনুযায়ী এ মেশিন কিনতে হলে সরকারকে খরচ করতে হবে ৬০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ।
এখন রিজার্ভ (বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চিতি) মাত্র ২৬ বিলিয়ন ডলার (যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক তার ওয়েবসাইটে দেখাচ্ছে ৩৬.৮ বিলিয়ন ডলার)। রিজার্ভের ওপর যখন চাপ, জ¦ালানি-ঘাটতিতে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি যখন নাজুক, তখন এ যন্ত্রের জন্য এত ডলার খরচে সরকারের অনীহা থাকতে পারে।
জানতে চাইলে ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, তিনি একটি বৈঠকে আছেন। এ বিষয়ে পরে জানাতে পারবেন।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সচিব মো. মামুন আল রশিদ গত সোমবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জাতীয়ভাবে এ প্রস্তাবের গুরুত্ব কী এবং কোথায়, তা-ই মূল বিবেচনার বিষয়। বিভিন্ন দলের সঙ্গে সভা করে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তারা ইভিএম চালু করবে। নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। তাদের রিকয়ারমেন্ট অনুযায়ী প্রস্তাবটি আমাদের কাছে এসেছে। নীতিগতভাবে অবশ্যই আমরা এটি বিবেচনা করব।’
গত ৮ নভেম্বর (মঙ্গলবার) প্রস্তাবিত প্রকল্পটির ব্যয়ে কাটছাঁটের জন্য সেটি নির্বাচন কমিশনে ফেরত পাঠিয়েছিল পরিকল্পনা কমিশন। ফেরত পাঠানো প্রস্তাবের কোন কোন খাতে কীভাবে ব্যয়-সমন্বয় করা যায় তা নিয়ে মুশকিলে পড়েন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।
ইসির সূত্র জানিয়েছে, ৮ হাজার ৭১২ কোটি টাকার ইভিএম প্রকল্প। এর সঙ্গে যুক্ত হবে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নির্বাচন পরিচালনা খাতের খরচের প্রায় ৮০০ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্যয় হবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।’
পরিকল্পনা কমিশন থেকে ফেরত পাঠানোর পর নতুন প্রস্তাবে প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে তোড়জোড় শুরু করে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। কোন কোন খাতে কীভাবে ব্যয়-সমন্বয় করা যায় তা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন তারা।
ইসির সেই প্রস্তাবের সার-সংক্ষেপ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে আলোচনার পর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি গত রবিবার পরিকল্পনা কমিশন পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে ইসির পক্ষ থেকে ‘নির্বাচন ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এর ব্যবহার বৃদ্ধি ও টেকসই ব্যবস্থাপনা’ প্রকল্পটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের এডিপিতে অননুমোদিত প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে অনুরোধ করা হয়। চিঠি পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগে রয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রকল্পটি গত ২৬ অক্টোবর আন্তঃমন্ত্রণালয় প্রোগ্রামিং কমিটির বিশেষ সভার সুপারিশ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে ২০২২-২৩ অর্থবছরের এডিপিতে অননুমোদিত প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হলো। তবে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগে মূল্যায়ন করার সময় নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচ্য।
উপর্যুক্ত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থাপনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে অর্থ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে অর্থায়নের সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; প্রকল্প ব্যয়ের নিবিড় পর্যালোচনা করে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট খাতগুলো ঠিক রেখে পুরো ব্যয় প্রয়োজনে পুনর্বিন্যাস করতে হবে; প্রকল্পের কাজে ব্যবহারের জন্য চারটি জিপ ও ৫৩৪টি ডাবল কেবিন পিকআপ কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে, গাড়িগুলো কিনে ভাড়া করা যায় কি না তা বিবেচনা করা যেতে পারে। আরও বলা হয়েছে, ডিপিপির ক্রয় পরিকল্পনা অংশের ক্রয়পদ্ধতি এবং অর্পিত ক্রয়কার্য এবং ডিপিএমের বদলে ওটিএম উল্লেখ করতে হবে। ডিপিডির অনুচ্ছেদ-৯-এ উল্লিখিত প্রশাসনিক ব্যয়, পেশাগত সেবা ও সম্মানী, মেরামত ও সংরক্ষণ, ভবন-স্থাপনা, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি এবং ভূমি অধিগ্রহণ খাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ যৌক্তিকভাবে পুনর্নির্ধারণ করা যেতে পারে।
গত বুধবার নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বাজেট কমে গেলে ইভিএমে আসনসংখ্যাও কমে যাবে। শুধু তাই নয়, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রকল্প অনুমোদিত না হলে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করা সম্ভব নয়। প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানোর পর দেশের অর্থনৈতিক সংকটের বিষয়টি উপলব্ধি করেছে ইসি। ইভিএমে অর্থের অপচয় যাতে না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রেখেই সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে জানান, ইভিএম নিয়ে আমাদের পর্যবেক্ষণ পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। কমিশন থেকে যে ফাইল দেওয়া হয়েছিল, তাতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। শুধু টেকনিক্যাল কমিটির কিছু পর্যবেক্ষণ যুক্ত করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা দুই লাখ ইভিএম কেনার প্রস্তাবই পর্যবেক্ষণে রেখেছি। ১৫০ আসনে ইভিএম দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েই প্রস্তাব জমা দিয়েছি। একনেকে ওঠার জন্য যে কাজগুলো দরকার তা হয়ে গেছে। একনেকে পাস হলেই আমরা বাকি কাজ শুরু করব।’
খরচ হবে ৬১০ মিলিয়ন ডলার : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ছিল ৪০ হাজার ১৮৩টি। ভোটকক্ষ ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২টি। ভোটার ছিল ১০ কোটি ৪২ লাখের কিছু বেশি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৩০০ আসনে ভোটারের সংখ্যা হবে ১২ কোটির কাছাকাছি। ভোটকেন্দ্র হতে পারে ৪২ থেকে ৪৪ হাজার। আর ভোটকক্ষ হতে পারে আড়াই লাখের মতো। নির্বাচন কমিশন ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করতে চায়। এ জন্য তারা গত ১৯ সেপ্টেম্বর কমিশনের বৈঠকে দুই লাখ ইভিএম কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। একটি ইভিএম মেশিনের দাম ইসি ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা প্রস্তাব করেছে। সেই হিসাবে মোট খরচ হবে ৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা বা ৬১০ মিলিয়ন ডলার (১০০ টাকা = ১ ডলার হিসাবে)। পুরো ডলারই রিজার্ভ থেকে ছাড় করতে হবে।
আমদানি তিন দেশ থেকে : নির্বাচন কমিশন তাদের একমাত্র সোর্স বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) মাধ্যমে ইভিএম আমদানি করবে। ২০১৮ সালেও বিএমটিএফের কাছ থেকে এসব যন্ত্র কেনা হয়েছিল। আর ইভিএমের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ এসেছিল স্পেন, হংকং ও চীন থেকে। বিএমটিএফ আমদানিকারক হলেও এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছে রাজধানীর উত্তরখানের এমএম এন্টারপ্রাইজ। তারা স্পেনের সিটল (এসসিওয়াইটিএল) ভোটিং হার্ডওয়্যার কোম্পানি এসব যন্ত্র কিনেছিল। প্রতিষ্ঠানটি তিন দেশ থেকে আমদানিকারককে যন্ত্র সরবরাহ করে।
দেউলিয়া সিটল (এসসিওয়াইটিএল) : প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশসহ ৩৫টি দেশে ইভিএম সরবরাহ করেছে। তবে অস্ট্রেলিয়া, ইকুয়েডর, নরওয়েসহ বেশ কয়েকটি দেশে প্রতিষ্ঠানটির সরবরাহকৃত যন্ত্রে ত্রুটি ধরা পড়ায় পরে তারা আর এ যন্ত্র ব্যবহার করেনি বলে উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটের নিউজ থেকে জানা যায়।
২ জুন ২০২০, একটি স্প্যানিশ আদালত সিটলকে দেউলিয়া ঘোষণা করে এবং এর সম্পদ নিলামের প্রক্রিয়া শুরু করে। প্যারাগন গ্রুপের সাবসিডিয়ারি ‘সার্ভিস পয়েন্ট সলিউশনস’ ডিসেম্বর ২০২১ এসওই (ঝঙঊ) ও সিটলকে (ঝপুঃষ) অধিগ্রহণ করে। এবার এ প্রতিষ্ঠান থেকে ইভিএম আনা হবে কি না ভেবে দেখা হচ্ছে বলে ইসি সূত্রের দাবি।
কীভাবে খরচ হবে নির্বাচনী ব্যয় : আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কত টাকা খরচ হবে, তার হিসাব এখনো করেনি ইসি সচিবালয়। ভোটের যে ব্যয় হয়, তার বড় অংশ যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ও নির্বাচন পরিচালনায়। ব্যালট ছাপা ও আনুষঙ্গিক খরচ খুব বেশি নয়। ব্যালটে হোক আর ইভিএমে নির্বাচন হোক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নির্বাচন পরিচালনার খরচ একই থাকবে। নির্বাচন কর্মকর্তাদের ইভিএমের প্রশিক্ষণ, ভোটারদের জন্য ‘মক ভোটিং’-এ বাড়তি খরচ হয়।
ইসি সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটের জন্য ৭০০ কোটি টাকার বরাদ্দ অনুমোদন করেছিল ইসি। ৪০০ কোটি টাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাবদ এবং ৩০০ কোটি টাকা নির্বাচন পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছিল। পরে ব্যয় কিছুটা বেড়েছিল। শেষ পর্যন্ত কত ব্যয় হয়েছিল, তার সুনির্দিষ্ট হিসাব ইসি সচিবালয় থেকে পাওয়া যায়নি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘দেশের সব পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, ইভিএম দিয়ে সুষ্ঠু ভোট হবে না। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সেটা দিয়েই নির্বাচন করতে চাচ্ছে। এটা ক্লিয়ার ও সিম্পল বিষয়, তারা শেষ সময়ে নিজেদের আখের গোছাতে চুরি করতে চাচ্ছে। কমিশনের নেতৃত্বে যারা আছে, তারা মনে করছে সবাই চুরি করেছে। আমি বাদ যাব কেন! তাই চুরির একটি রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
বুধবার (২৯ মার্চ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
হেফাজতে সুলতানার মৃত্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ‘হঠাৎ করে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। আপনি প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরনের দুর্ঘটনা দেখতে পাবেন।’
‘এই সপ্তাহে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি গণগুলিতে শিশু নিহত হয়েছে। কারও সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে? আমি মনে করি না এই ধরনের দুর্ঘটনা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নষ্ট করবে।’
এর আগে, নওগাঁ পৌরসভা-চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহকারী সুলতানাকে (৩৮) র্যাব-৫ এর একটি টহল দল ২২ মার্চ সকালে কাজে যাওয়ার সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ধরে নিয়ে যায়। হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতাল এবং তারপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ মার্চ তার মৃত্যু হয়।
মোমেন বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে অন্যদের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়ার দরকার নেই।
‘বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের সংগ্রামে ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে। অন্য দেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে আমাদের কোনো পাঠের প্রয়োজন নেই।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন খুবই শক্তিশালী।
যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের সমস্যা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের গণতন্ত্র খুবই দুর্বল। তাই তারা দেশে ও বিদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের পক্ষে ওকালতি করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দেশে ও বিদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের বিষয়ে আরও সোচ্চার হওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা আমাদের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি। আমরা এটি সম্পর্কে একই পৃষ্ঠায় আছি। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো গত এক দশকে ব্যাপক সংস্কারের মধ্য দিয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা ভুয়া ভোটারদের মোকাবিলা করার জন্য ছবিসহ ভোটার আইডি তৈরি করেছি। বিগত ১৪ বছরে নির্বাচন কমিশন হাজার হাজার নির্বাচন পরিচালনা করেছে। তাদের প্রায় সবগুলোই ছিল স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য। এবং ভবিষ্যতেও আমাদের নির্বাচন হবে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য।’
মোমেন বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন বৈশ্বিক গণমাধ্যমে ‘জাদুকরী’ হিসেবে সমাদৃত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান বিশ্বব্যাপী আমাদের গুরুত্ব বাড়িয়েছে। এবং ক্রমাগত উন্নয়নের কারণে, বিশ্বের অনেক দেশ এখন আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।’
তিনি আরও বলেন,‘এই স্বাধীনতা দিবসে এবং রমজানের শুরুতে, আমরা অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাছ থেকে অভিনন্দনমূলক চিঠি পেয়েছি।’
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যেও 'সময়োচিত সংস্কার পদক্ষেপ' গ্রহণের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ বাংলাদেশে আগামী সাধারণ নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন সরকার চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সংবাদ সংস্থাটি এক নিবন্ধে লিখেছে, 'তিনি (শেখ হাসিনা) টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।' একই সঙ্গে শেখ হাসিনাকে পুরো তহবিল পেতে আরও সংস্কার করতে হবে বলেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে টানা চতুর্থ মেয়াদে সম্ভাব্য জয়ী হওয়ার কারণ এটা নয় যে তার অনেক প্রতিপক্ষ কারাগারে আছেন বা আইনি ফাঁদে পড়েছেন।
নিবন্ধে বলা হয়, শেখ হাসিনার বিজয়ের কারণ 'কেবলমাত্র তার অনেক প্রতিপক্ষ কারাগারে আছে বা আইনি ফাঁদে পড়েছেন- এটা নয় বরং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তার সাফল্যের কারণেই এটা ব্যাপকভাবে প্রত্যাশিত।'
আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির সময়োপযোগী সংস্কারের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণপ্রাপ্তির পটভূমিতে ব্লুমবার্গ দুটি উপশিরোনামসহ 'বাংলাদেশ লিডার বেটস আইএমএফ-ম্যান্ডেটেড রিগর উইল পে অফ ইন পোলস' শিরোনামের এই নিবন্ধটি প্রকাশ করে।
এতে বলা হয়, 'পুরো তহবিল পেতে শেখ হাসিনাকে আরও সংস্কার করতে হবে' এবং 'নির্বাচনে তিনি টানা চতুর্থবারের মতো জয়ী হবেন বলে আশা করা হচ্ছে'।
ব্যালট বাক্সে পরাজিত হওয়ার ভয়ে বিশ্বজুড়ে সরকারি দলের নেতারা প্রায়শই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাথে সম্মত সংস্কার বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়ছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের মতো নন।
তার দ্রুত আইএমএফ ম্যান্ডেটের বাস্তবায়ন দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে যেখানে পাকিস্তান এখনও জ্বালানি ভর্তুকি নিয়ে দুরাবস্থার মধ্যে রয়েছে। শ্রীলঙ্কা স্থানীয় পৌরসভা নির্বাচন বিলম্বিত করেছে, কারণ, তারা গত সপ্তাহে আইএমএফ তহবিল পেতে কর এবং সুদের হার বাড়িয়েছে।
গত জুলাই মাসে আইএমএফের সহায়তা চাওয়া দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশের মধ্যে সর্বশেষ ছিল বাংলাদেশ। দেশটি দ্রুত জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির পর প্রথম ঋণ অনুমোদন পেয়েছে। ৭৫ বছর বয়সী শেখ হাসিনা এই পদক্ষেপ নিতে কোনো কুণ্ঠা বোধ করেননি।
মেয়েদের বয়সভিত্তিক দল নিয়ে বাফুফে যতটা তৎপর, সিনিয়র জাতীয় দল নিয়ে ততটাই উদাসীন। আরো একবার দেশের ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থার সিদ্ধান্ত সেটাই প্রমাণ করল। অর্থাভাবের অজুহাত দিয়ে সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানী সরকারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বাফুফে বলেছে, ‘মায়ানমার যাতায়াতের বিমান ভাড়া, ইনস্যুরেন্স ফি, সেখানে থাকা-খাওয়া ও ট্রান্সপোর্টশনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচের সংকুলান না হওয়ায় উক্ত প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ মেয়েদের জাতীয় ফুটবল দলের অংশগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।’
অলিম্পিক বাছাইয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা আছে ‘বি’ গ্রুপে। স্বাগতিক মায়ানমারের সঙ্গে গ্রুপে আরও আছে ইরান ও মালদ্বীপ। গ্রুপের খেলাগুলো হবে আগামী ৫ থেকে ১১ এপ্রিল।
বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে চেয়েছিলাম এই বাছাই পর্বের স্বাগতিক হতে। কিন্তু স্বাগতিক মর্যাদা মায়ানমারকে দেওয়া হয়। টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী এখানে অংশ নিতে হলে সব খরচ নিজেদের বহন করতে হবে, যা বহন করার মতো অবস্থায় নেই বাফুফের।’
আবু নাঈম সোহাগ আরও বলেন, ‘আমরা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। সেই সাহায্য পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এরপরই আমরা দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
গত সেপ্টেম্বরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেননি সাবিনারা। এই সফর বাতিল হওয়ায় মাঠে নামার অপেক্ষাটা তাদের আরো বাড়ল।
মেয়েদের জাতীয় দল নিয়ে বাফুফের উদাসীনতার নজির এটাই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৯ সালের এসএ গেমসে মেয়েদের দল পাঠায়নি বাফুফে।
সেবার যুক্তিটা ছিল অদ্ভুত। যেহেতু তখন মেয়েদের জাতীয় দলটি মূলত বয়সভিত্তিক দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া ছিল, তাই শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে খারাপ করলে তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে। এই কারণের কথা বলে সেবার এসএ গেমসে দল পাঠায়নি বাফুফে।
যদি কোনো নারী কমপক্ষে দুটি মুরগি পালন করেন অথবা কোনো ব্যক্তি যদি সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করেন তাকে শ্রমশক্তির আওতায় এনেছে সরকার। অথচ সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করে কর্মের আওতায় এসেছেন এমন পরিসংখ্যানের হিসাবই দেওয়া হয়নি। গতকাল বুধবার শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রকাশের কথা থাকলে শ্রমশক্তি জরিপটি ছয় বছর পর প্রকাশ করল বিবিএস। এতে বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার বলে উল্লেখ করা হযেছে। যা ২০১৭ সালের জরিপে ছিল ২৭ লাখ। অর্থাৎ ছয় বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার কমেছে ৭০ হাজার। শ্রমশক্তি জরিপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
সরকারের বেকারত্বের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ৩০ দিনে বেতন বা নিজস্ব পণ্য উৎপাদনের নিমিত্তে কোনো না কোনো কাজ খুঁজে থাকেন এবং গত সাত দিনে কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকেন তবে তাকে বেকার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বিবিএস বলছে, করোনার সময় দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়েনি বরং কমেছে। কারণ ওই সময় সরকার বিশেষ অনেক পদক্ষেপ নেওয়ায় এসব বেকারের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। তাছাড়া কৃষি খাতে অংশগ্রহণ বাড়ায় বেকারের সংখ্যা কমেছে।
জরিপে বলা হয়েছে, দেশে এখন ২৬ লাখ ৩০ হাজার বেকার আছে। এর আগে ২০১৭ সালের জরিপে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ। ছয় বছরের ব্যবধানে বেকার কমেছে ৭০ হাজার।
জরিপে দেখা গেছে, ছয় বছর আগের তুলনায় বেকারত্বের হারও কমেছে। ২০১৭ সালে বেকারত্ব ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। সর্বশেষ জরিপ বলছে, এখন বেকারত্ব কমে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। সপ্তাহে এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজ করার সুযোগ না পেলে তাকে বেকার হিসেবে ধরা হয়।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, এখন দেশে শ্রমশক্তিতে ৭ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ আছে। এর মধ্যে কাজে নিয়োজিত ৭ কোটি ৭ লাখ ৮০ হাজার মানুষ। এ শ্রমশক্তির মধ্যে থাকা ৪ কোটি ৭৪ লাখ পুরুষ আর ২ কোটি ৫৯ লাখ নারী। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৯৯ লাখ ১০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তির আওতায় এসেছে অর্থাৎ এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
জরিপে ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের বিবেচনা করা হয়েছে। গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশের প্রায় সোয়া লাখ পরিবার থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তথ্য সংগ্রহ করা হয় দ্বৈবচয়ন অর্থাৎ লটারি পদ্ধতিতে বাছাইয়ের মাধ্যমে। এর আগে ২০১৭ সালে শ্রমশক্তি জরিপ করেছে বিবিএস। প্রতি চার থেকে পাঁচ বছরের ব্যবধান এ জরিপ করা হয়ে থাকে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেকারদের মধ্যে পুরুষ ১৬ লাখ ৯০ হাজার। আর নারী ৯ লাখ ৪০ হাজার। পাঁচ বছর আগের চেয়ে নারীর বেকারত্ব কমেছে। বেড়েছে পুরুষের বেকারত্ব। ২০১৭ সালের জরিপে ১৪ লাখ পুরুষ বেকার ছিল। ওই সময় ১৩ লাখ নারী বেকার ছিল।
জরিপ বলছে, মোট সাত কোটি কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তির মধ্যে কৃষি খাতে নিয়োজিত রয়েছে ৩ কোটি ২২ লাখ, শিল্প খাতে ১ কোটি ২০ লাখ এবং সেবা খাতে ২ কোটি ৬৬ লাখ।
জরিপের হিসাবে আরও দেখা যায়, দেশে শ্রমশক্তির বাইরে আছেন ৪ কোটি ৬৯ লাখ মানুষ। এর মধ্যে নারী ৩ কোটি ৪৮ লাখ, পুরুষের সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ। বেকারত্ব কমে আসার পাশাপাশি কর্মে নিয়োজিত জনবলও বেড়েছে দেশে। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী যুবকদের কর্মসংস্থান হয়েছে ২ কোটি ৬৮ লাখ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, এ জরিপের মাধ্যমে অর্থনীতির মূল গতিবিধি আমরা বুঝতে পারব। আমরা কোনো তথ্যই লুকিয়ে রাখব না। তিনি বলেন, আমাদের দেশের গৃহিণীরা প্রায় ২৪ ঘণ্টাই কাজ করেন। তাদের শ্রম হিসাব করা হয় না। তাদের শ্রম হিসাবে এলে জিডিপির আকার ৬০০ থেকে ৭০০ বিলিয়ন হতো। নারীদের শ্রমের প্রকৃত বিচার হয় না। আমরা আশা করছি এখন থেকে এ তথ্য প্রতি তিন মাসেই পাব।
আইএলওর আইন মানা হয়েছে কি না সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আইএলওর মানদ- অনুযায়ী এ জরিপ করা হয়েছে। কডিডের সময় আমাদের দেশে বেকারত্ব কমেছে কারণ সে সময় আমরা শিল্প খোলা রেখেছিলাম। লকডাউনে সড়কে বাস চলাচল করতে দিয়েছি। ১ মিলিয়ন ডলারের বেশি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে সে সময়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, এটি প্রভিশনাল রিপোর্ট। এ তথ্য মূল প্রতিবেদনে পরিবর্তিত হতে পারে। অর্থনীতির হাল বোঝার জন্য এ তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে বেকার বাড়ছে নাকি কমছে সে তথ্য সরকারের নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এসব তথ্য-উপাত্ত নিয়ে যেসব প্রশ্ন আসছে, এগুলো সবসময়ই এসে থাকে। এসব প্রশ্ন আসবেই। শহরের মহিলা শ্রমিক কমে গেছে, তার মানে হলো তারা গ্রামে গিয়ে কৃষিতে যুক্ত হচ্ছে।
বিবিএস বলছে, সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা ও নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে ঘরে ঘরে চাকরি প্রদানের বিষয়ে বিশেষ সুযোগ তৈরির প্রচেষ্টায় বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমেছে।
এ সময় শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব এহসান-ই-এলাহী বলেন, আমি তো ভেবেছিলাম দেশে শ্রমিক ছয় কোটি, এখন দেখি সাত কোটির বেশি। এটি বড় সুসংবাদ। আমরা আগামী বছরের মধ্যে তিন লাখ শ্রমিকের ডেটাবেজ করব। কারণ আমাদের কাছে সঠিক কোনো ডেটাবেজ নেই।
মেট্রোরেলের উত্তরা দক্ষিণ ও শেওড়াপাড়া স্টেশন আগামীকাল ৩১ মার্চ যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) ইতিমধ্যে এ দুটি স্টেশন খোলার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। মেট্রোরেল সেবা পরিচালনাকারী ডিএমটিসিএল সূত্র এ তথ্য জানায়।
উত্তরা দক্ষিণ ও শেওড়াপাড়া স্টেশন চালু হলে যাত্রীরা উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশন ব্যবহার করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারবেন।
ডিএমটিসিএল-এর একজন কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা দুটি দল গঠন করেছি যারা অপারেশনের জন্য উত্তরা দক্ষিণ এবং শেওড়াপাড়া স্টেশনের অপারেশন টিমের সাথে সমন্বয় করবে।'
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রথম এলিভেটেড মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন। রাজধানীর দিয়াবাড়িতে দিয়াবাড়ি-আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬ এর ১১.৭৩ কিলোমিটার অংশের ফলক উন্মোচন করেন তিনি। বর্তমানে মেট্রোরেল সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত যাত্রীসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।