
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) উত্থাপনের জন্য পাঠানো হয়েছে। গত রবিবার এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
প্রস্তাবটি কিছু সংশোধনী দিয়ে পাঠিয়ে এডিপিতে অননুমোদিত প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বলা হয়েছে। তবে এ প্রকল্প এডিপিতে পাস হবে কি না মুশকিলে রয়েছে নির্বাচন কমিশন। কারণ প্রস্তাব অনুযায়ী এ মেশিন কিনতে হলে সরকারকে খরচ করতে হবে ৬০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ।
এখন রিজার্ভ (বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চিতি) মাত্র ২৬ বিলিয়ন ডলার (যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক তার ওয়েবসাইটে দেখাচ্ছে ৩৬.৮ বিলিয়ন ডলার)। রিজার্ভের ওপর যখন চাপ, জ¦ালানি-ঘাটতিতে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি যখন নাজুক, তখন এ যন্ত্রের জন্য এত ডলার খরচে সরকারের অনীহা থাকতে পারে।
জানতে চাইলে ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, তিনি একটি বৈঠকে আছেন। এ বিষয়ে পরে জানাতে পারবেন।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সচিব মো. মামুন আল রশিদ গত সোমবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জাতীয়ভাবে এ প্রস্তাবের গুরুত্ব কী এবং কোথায়, তা-ই মূল বিবেচনার বিষয়। বিভিন্ন দলের সঙ্গে সভা করে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তারা ইভিএম চালু করবে। নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। তাদের রিকয়ারমেন্ট অনুযায়ী প্রস্তাবটি আমাদের কাছে এসেছে। নীতিগতভাবে অবশ্যই আমরা এটি বিবেচনা করব।’
গত ৮ নভেম্বর (মঙ্গলবার) প্রস্তাবিত প্রকল্পটির ব্যয়ে কাটছাঁটের জন্য সেটি নির্বাচন কমিশনে ফেরত পাঠিয়েছিল পরিকল্পনা কমিশন। ফেরত পাঠানো প্রস্তাবের কোন কোন খাতে কীভাবে ব্যয়-সমন্বয় করা যায় তা নিয়ে মুশকিলে পড়েন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।
ইসির সূত্র জানিয়েছে, ৮ হাজার ৭১২ কোটি টাকার ইভিএম প্রকল্প। এর সঙ্গে যুক্ত হবে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নির্বাচন পরিচালনা খাতের খরচের প্রায় ৮০০ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্যয় হবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।’
পরিকল্পনা কমিশন থেকে ফেরত পাঠানোর পর নতুন প্রস্তাবে প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে তোড়জোড় শুরু করে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। কোন কোন খাতে কীভাবে ব্যয়-সমন্বয় করা যায় তা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন তারা।
ইসির সেই প্রস্তাবের সার-সংক্ষেপ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে আলোচনার পর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি গত রবিবার পরিকল্পনা কমিশন পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে ইসির পক্ষ থেকে ‘নির্বাচন ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এর ব্যবহার বৃদ্ধি ও টেকসই ব্যবস্থাপনা’ প্রকল্পটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের এডিপিতে অননুমোদিত প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে অনুরোধ করা হয়। চিঠি পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগে রয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রকল্পটি গত ২৬ অক্টোবর আন্তঃমন্ত্রণালয় প্রোগ্রামিং কমিটির বিশেষ সভার সুপারিশ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে ২০২২-২৩ অর্থবছরের এডিপিতে অননুমোদিত প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হলো। তবে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগে মূল্যায়ন করার সময় নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচ্য।
উপর্যুক্ত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থাপনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে অর্থ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে অর্থায়নের সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; প্রকল্প ব্যয়ের নিবিড় পর্যালোচনা করে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট খাতগুলো ঠিক রেখে পুরো ব্যয় প্রয়োজনে পুনর্বিন্যাস করতে হবে; প্রকল্পের কাজে ব্যবহারের জন্য চারটি জিপ ও ৫৩৪টি ডাবল কেবিন পিকআপ কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে, গাড়িগুলো কিনে ভাড়া করা যায় কি না তা বিবেচনা করা যেতে পারে। আরও বলা হয়েছে, ডিপিপির ক্রয় পরিকল্পনা অংশের ক্রয়পদ্ধতি এবং অর্পিত ক্রয়কার্য এবং ডিপিএমের বদলে ওটিএম উল্লেখ করতে হবে। ডিপিডির অনুচ্ছেদ-৯-এ উল্লিখিত প্রশাসনিক ব্যয়, পেশাগত সেবা ও সম্মানী, মেরামত ও সংরক্ষণ, ভবন-স্থাপনা, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি এবং ভূমি অধিগ্রহণ খাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ যৌক্তিকভাবে পুনর্নির্ধারণ করা যেতে পারে।
গত বুধবার নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বাজেট কমে গেলে ইভিএমে আসনসংখ্যাও কমে যাবে। শুধু তাই নয়, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রকল্প অনুমোদিত না হলে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করা সম্ভব নয়। প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানোর পর দেশের অর্থনৈতিক সংকটের বিষয়টি উপলব্ধি করেছে ইসি। ইভিএমে অর্থের অপচয় যাতে না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রেখেই সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে জানান, ইভিএম নিয়ে আমাদের পর্যবেক্ষণ পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। কমিশন থেকে যে ফাইল দেওয়া হয়েছিল, তাতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। শুধু টেকনিক্যাল কমিটির কিছু পর্যবেক্ষণ যুক্ত করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা দুই লাখ ইভিএম কেনার প্রস্তাবই পর্যবেক্ষণে রেখেছি। ১৫০ আসনে ইভিএম দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েই প্রস্তাব জমা দিয়েছি। একনেকে ওঠার জন্য যে কাজগুলো দরকার তা হয়ে গেছে। একনেকে পাস হলেই আমরা বাকি কাজ শুরু করব।’
খরচ হবে ৬১০ মিলিয়ন ডলার : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ছিল ৪০ হাজার ১৮৩টি। ভোটকক্ষ ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২টি। ভোটার ছিল ১০ কোটি ৪২ লাখের কিছু বেশি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৩০০ আসনে ভোটারের সংখ্যা হবে ১২ কোটির কাছাকাছি। ভোটকেন্দ্র হতে পারে ৪২ থেকে ৪৪ হাজার। আর ভোটকক্ষ হতে পারে আড়াই লাখের মতো। নির্বাচন কমিশন ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করতে চায়। এ জন্য তারা গত ১৯ সেপ্টেম্বর কমিশনের বৈঠকে দুই লাখ ইভিএম কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। একটি ইভিএম মেশিনের দাম ইসি ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা প্রস্তাব করেছে। সেই হিসাবে মোট খরচ হবে ৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা বা ৬১০ মিলিয়ন ডলার (১০০ টাকা = ১ ডলার হিসাবে)। পুরো ডলারই রিজার্ভ থেকে ছাড় করতে হবে।
আমদানি তিন দেশ থেকে : নির্বাচন কমিশন তাদের একমাত্র সোর্স বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) মাধ্যমে ইভিএম আমদানি করবে। ২০১৮ সালেও বিএমটিএফের কাছ থেকে এসব যন্ত্র কেনা হয়েছিল। আর ইভিএমের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ এসেছিল স্পেন, হংকং ও চীন থেকে। বিএমটিএফ আমদানিকারক হলেও এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছে রাজধানীর উত্তরখানের এমএম এন্টারপ্রাইজ। তারা স্পেনের সিটল (এসসিওয়াইটিএল) ভোটিং হার্ডওয়্যার কোম্পানি এসব যন্ত্র কিনেছিল। প্রতিষ্ঠানটি তিন দেশ থেকে আমদানিকারককে যন্ত্র সরবরাহ করে।
দেউলিয়া সিটল (এসসিওয়াইটিএল) : প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশসহ ৩৫টি দেশে ইভিএম সরবরাহ করেছে। তবে অস্ট্রেলিয়া, ইকুয়েডর, নরওয়েসহ বেশ কয়েকটি দেশে প্রতিষ্ঠানটির সরবরাহকৃত যন্ত্রে ত্রুটি ধরা পড়ায় পরে তারা আর এ যন্ত্র ব্যবহার করেনি বলে উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটের নিউজ থেকে জানা যায়।
২ জুন ২০২০, একটি স্প্যানিশ আদালত সিটলকে দেউলিয়া ঘোষণা করে এবং এর সম্পদ নিলামের প্রক্রিয়া শুরু করে। প্যারাগন গ্রুপের সাবসিডিয়ারি ‘সার্ভিস পয়েন্ট সলিউশনস’ ডিসেম্বর ২০২১ এসওই (ঝঙঊ) ও সিটলকে (ঝপুঃষ) অধিগ্রহণ করে। এবার এ প্রতিষ্ঠান থেকে ইভিএম আনা হবে কি না ভেবে দেখা হচ্ছে বলে ইসি সূত্রের দাবি।
কীভাবে খরচ হবে নির্বাচনী ব্যয় : আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কত টাকা খরচ হবে, তার হিসাব এখনো করেনি ইসি সচিবালয়। ভোটের যে ব্যয় হয়, তার বড় অংশ যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ও নির্বাচন পরিচালনায়। ব্যালট ছাপা ও আনুষঙ্গিক খরচ খুব বেশি নয়। ব্যালটে হোক আর ইভিএমে নির্বাচন হোক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নির্বাচন পরিচালনার খরচ একই থাকবে। নির্বাচন কর্মকর্তাদের ইভিএমের প্রশিক্ষণ, ভোটারদের জন্য ‘মক ভোটিং’-এ বাড়তি খরচ হয়।
ইসি সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটের জন্য ৭০০ কোটি টাকার বরাদ্দ অনুমোদন করেছিল ইসি। ৪০০ কোটি টাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাবদ এবং ৩০০ কোটি টাকা নির্বাচন পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছিল। পরে ব্যয় কিছুটা বেড়েছিল। শেষ পর্যন্ত কত ব্যয় হয়েছিল, তার সুনির্দিষ্ট হিসাব ইসি সচিবালয় থেকে পাওয়া যায়নি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘দেশের সব পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, ইভিএম দিয়ে সুষ্ঠু ভোট হবে না। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সেটা দিয়েই নির্বাচন করতে চাচ্ছে। এটা ক্লিয়ার ও সিম্পল বিষয়, তারা শেষ সময়ে নিজেদের আখের গোছাতে চুরি করতে চাচ্ছে। কমিশনের নেতৃত্বে যারা আছে, তারা মনে করছে সবাই চুরি করেছে। আমি বাদ যাব কেন! তাই চুরির একটি রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাসের অভিঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে আছে। এ মন্দা মোকাবিলায় এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে ‘ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ ২০২২’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা গণভবন থেকে মিরপুরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত মূল আয়োজনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সকল ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়টা হলো আমাদের উন্নয়নের গতি কিছুটা হলেও শ্লথ হয়ে গিয়েছে।
করোনাভাইরাসের অভিঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা), কাউন্টার স্যাংশনের (পাল্টা নিষেধাজ্ঞা) ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। এই মন্দা মোকাবিলায় এখন থেকেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তার দেশের প্রতিটি মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে, উন্নত জীবন পাবে, শিক্ষা-দীক্ষায় উন্নত হবে, সেই লক্ষ্য ইনশাআল্লাহ আমরা বাস্তবায়ন করব।’
অগ্নিনির্বাপণকারীদের ‘দুঃসময়ের বন্ধু’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা (ফায়ার ফাইটার) নিজেদের জীবন বাজি রেখে মানুষের কল্যাণ করে মানুষকে উদ্ধার করেন। একটি মহৎ কাজে তারা নিয়োজিত রয়েছেন। কাজেই ফায়ার সার্ভিসের প্রতিটি সদস্যই দুঃসময়ের বন্ধু হিসেবে মানুষের কাছে প্রতীয়মান। তাই ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আমরা বিদেশি সহায়তাও কাজে লাগিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে সাম্প্রতিক বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়িত্ব পালনকালে নিহত ৩০ জন অগ্নিনির্বাপণকর্মীকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস সম্পূর্ণ সক্ষমতার, উচ্চক্ষমতার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে যাতে রূপান্তরিত হয়, সে ব্যবস্থাই আমরা গ্রহণ করেছি। প্রতিটি উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠার যে ঘোষণা আমরা দিয়েছিলাম, তা এখন শেষ পর্যায়ে। যারা এ কাজে সম্পৃক্ত, তারা যেন উন্নত মানের প্রশিক্ষণ ও যন্ত্রপাতি পান, সেদিকে লক্ষ রেখেই আমরা বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমি প্রতিষ্ঠারও উদ্যোগ নিয়েছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, লিঙ্গবৈষ্যম দূর করতে ‘ফায়ারম্যান’ পদের নাম ‘ফায়ার ফাইটার’ করা হয়েছে। পরিদর্শকের সংখ্যা ৫০ থেকে ২৬৮, ডুবুরির সংখ্যা ২৫ থেকে ৮৫, অ্যাম্বুলেন্স সংখ্যা ৫০ থেকে ১৯২, আগুন নেভানোর পানিবাহী গাড়ির সংখ্যা ২২৭ থেকে ৬১৭ এবং ফায়ার পাম্পের সংখ্যা ৪৫০ থেকে ১৫৪৬টিতে উন্নীত করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও নিরাপত্তাসেবা বিভাগের সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সীতাকুণ্ডে সাম্প্রতিক বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১৩ জন অগ্নিবীরের পরিবারসহ ফায়ার সার্ভিসের ৪৫ জন সদস্যের হাতে চারটি ক্যাটাগরিতে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স পদক-২০২২ তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী বাহিনীর কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন এবং রাষ্ট্রীয় সালাম গ্রহণ করেন। সূত্র : বাসস
পরতে পরতে রঙ বদলানো ম্যাচের শেষটায় ভাগ্য মুখ ফিরিয়ে নিল রূপায়ণ সিটি কুমিল্লার কাছ থেকে। ৫৬ মিনিটে সমতায় ফেরার সুবর্ণ সুযোগ হেলায় হারালেন দলটির কোরিয়ান ডিফেন্ডার কিম সুং ইয়োব। তার পেনাল্টি স্ট্রোক চলে গেল বার উঁচিয়ে। এর সঙ্গে দুই বিদেশি আম্পায়ারের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত দলটির বিরুদ্ধে গেছে। তাতে হকি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনাল খেলার স্বপ্ন বিলীন হয়েছে রূপায়ণ সিটির। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে মোনার্ক পদ্মার কাছে তারা হেরেছে ৪-৩ গোলে। মোনার্কের হয়ে চারটি গোলই করেন জাপানিজ মিয়া তানিমিৎসু। আগামীকাল সাকিব আল হাসান মালিকানাধীন মোনার্ক ফাইনালে মুখোমুখি হবে একমি চট্টগ্রামের।
ম্যাচের প্রায় পুরোটা সময় প্রাধান্য বিস্তার করে খেলতে দেখা গিয়েছে রূপায়ণ সিটিকে। আগের ম্যাচে স্পেন থেকে উড়িয়ে আনা তারকা জোয়াকিন মেনিনির সংযুক্তিতে তারা আক্রমণভাগে ছিল অনেক বেশি সংঘবদ্ধ। তবে ম্যাচজুড়েই দুই মালয়েশিয়ান ও কোরিয়ান আম্পায়ারের ভুল বাঁশি খেলার গতিরোধ করেছে। তাদের বেশিরভাগ সিদ্ধান্তই গেছে রূপায়ণের বিপক্ষে। তারপরও প্রথম কোয়ার্টারে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল তারা। ১৩ মিনিটে মেনিনি করেন সুযোগ সন্ধানী গোল। মিলন হোসেনের রিভার্স হিট গোলমুখ থেকে ফিরিয়েছিলেন ইরফানুল হক। ফিরতি বল পেয়ে জোরালো হিটে গোলের খাতা খোলেন স্প্যানিশ তারকা। পরের মিনিটেই দলের দ্বিতীয় পিসিকে গোলে পরিণত করে ব্যবধান বাড়ান সোহানুর রহমান সবুজ। মিলনের পুশ ভারতীয় প্রদীপ মোর থামালে তাতে রূপায়ণ অধিনায়কের ড্র্যাগ অ্যান্ড ফ্লিক জালে জড়ায়। তবে দ্বিতীয় কোয়ার্টারে দারুণভাবে ফিরে আসে আগের দিন এলিমিনেটরে মেট্রো বরিশালকে হারিয়ে আসা মোনার্ক পদ্মা। ১৭ মিনিটে তানিমিৎসু দলের দ্বিতীয় পিসি থেকে গোল করে ব্যবধান কমান। দ্বিতীয় কোয়ার্টারের শেষ মুহূর্তে রূপায়ণ সিটির মালয়েশিয়ান ডিফেন্ডার ইজাদ হাকিমি রাসেল মাহমুদ জিমিকে শুটিং সার্কেলের ভেতরে বাজে ট্যাকল করে পেনাল্টি স্ট্রোক উপহার দেন। তা থেকে ২-২ করেন তানিমিৎসু। তবে ৩৯ মিনিটে মেনিনি অসাধারণ স্টিকওয়ার্কে রূপায়ণের লিড পুনরুদ্ধার করেন। বাঁ দিক থেকে ভারতীয় প্রদীপ মোরের পাস পেয়ে একজনকে কাটিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন এই আর্জেন্টাইন বংশোদ্ভূত স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড। চতুর্থ কোয়ার্টারের পঞ্চম মিনিটে একটি বিতর্কিত পিসি ও হলুদ কার্ডের সিদ্ধান্তে খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল রূপায়ণ। রূপায়ণ অধিনায়ক সবুজকে হলুদ কার্ড দেখালে তারা মাঠের এক পাশে চলে আসে। খেলা প্রায় ৫ মিনিট বন্ধ থাকার পর রূপায়ণ সিটি কুমিল্লার দেখভালের দায়িত্বে থাকা সাবেক ফুটবলার আবদুল গাফফারের হস্তক্ষেপে মাঠে গড়ায় খেলা। সেই পিসি থেকে গোল না পেলেও পেনাল্টি স্ট্রোক আদায় করে নেয় মোনার্ক। তবে রেফারেল চেয়ে সেটি বাতিল করায় রূপায়ণ। তবে ফিরতি পিসি থেকে তানিমিৎসু ৩-৩ করেন। ৫৫ মিনিটে পরপর দুটি পিসি নষ্ট করার পর তানিমিৎসু মোনার্ককে প্রথমবারের মতো এগিয়ে নেন। তবে ম্যাচে ফেরার দারুণ সুযোগ ছিল রূপায়ণের। পরের মিনিটে দলটির কোরিয়ান ডিফেন্ডার কিম সুং ইয়োব পিসি থেকে গোল করতে না পারলেও আম্পায়ার পেনাল্টি স্ট্রোকের বাঁশি বাজান। দারুণ সেই সুযোগ ইয়োব বার উঁচিয়ে মেরে দলের বিদায় নিশ্চিত করে দেন।
ম্যাচ শেষে রূপায়ণ গ্রুপের উপদেষ্টা আবদুল গাফফার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিং এই ম্যাচেও জারি থাকল। গত ম্যাচে আম্পায়াররা আমাদের হারিয়ে দিয়েছিল। আজও বারবার আম্পায়ারদের বাঁশি আমাদের বিরুদ্ধে বেজেছে। এর সঙ্গে ভাগ্যও শেষ পর্যন্ত সহায়তা করেনি। তাই হারতে হয়েছে।’ রূপায়ণ সিটির ক্ষুব্ধ ম্যানেজার এহসান রানা দাবি করেন, ‘এখানে অন্য কিছু কাজ করেছে। আমরা ৭ গোলে এগিয়ে গেলেও এই ম্যাচ জিতে বের হতে পারতাম না।’
ম্যাচ শেষে মোনার্ক পদ্মার অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার জিমি ও রানার মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়েছিল; যা অন্যদের হস্তক্ষেপে হাতাহাতিতে গড়ায়নি। সব মিলিয়ে বিদায়টা প্রত্যাশা মতো হলো না রূপায়ণ সিটি কুমিল্লার।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া বস্তির (চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র) মূল ফটক দিয়ে ঢুকে এক কিলোমিটার ভেতরে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নব কিশলয় উচ্চ বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে কাইলা রায়হানের তিনতলা ভবন। গত সোমবার বিকেলে ওই ভবনের কাছাকাছি গেলে দেখা যায়, ভবন লাগোয়া সরু রাস্তার সামনে ১৫ থেকে ২০ বছরের ৮-১০ জনের জটলা। ভবনের সামনে যেতেই সরু রাস্তা দিয়ে ভেতরে ঢুকে যায় তারা।
নব কিশলয় বিদ্যালয়ের আশপাশের দোকানি ও স্থানীয় লোকজন জানান, দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা এভাবেই মাদক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে কারবারিরা। বস্তির সব থেকে বেশি মাদক বিক্রি হয় কাইলা রায়হানের বাড়ির সামনে। ওই বাড়িতেই রয়েছে মাদকের গুদাম। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ (২৩) চনপাড়া বস্তিতে খুন হওয়ার পর থেকে বাড়িটি তালাবদ্ধ রয়েছে। তবে থেমে নেই মাদকের কারবার।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শীতলক্ষ্যা নদীর পাশে ১২৬ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা চনপাড়া বস্তির ৮০ একরে সোয়া লাখ মানুষের বাস। ৯টি ওয়ার্ড বা মহল্লায় বিভক্ত এই বস্তিতে ছোট-বড় ১১৪টি মাদক বিক্রির স্পট রয়েছে। ইয়াবা ট্যাবলেট, ফেনসিডিল, হেরোইন, গাঁজা থেকে
শুরু করে সবধরনের মাদকই এসব স্পটে পাওয়া যায়। এসব মাদক বিক্রি করা হচ্ছে ছোট ছোট ছেলেদের দিয়ে। প্রতিটি স্পটের জন্য কারবারিদের কাছ থেকে সপ্তাহে ৫ হাজার টাকা করে চাঁদা বা বখরা তোলা হয়, মাসে যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২৩ লাখ টাকা। এর বিনিময়ে প্রকাশ্যে নির্বিঘেœ মাদক বেচাবিক্রির সুযোগ পায় কারবারিরা। একই সঙ্গে ক্রেতারা কোনো ঝুটঝামেলা ছাড়াই মাদক সেবনের সুযোগ পান বস্তি এলাকায়। এসব মাদকের ক্রেতা উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা। যাদের বেশিরভাগই রাজধানী থেকে যাওয়া ও বস্তির আশপাশের বাসিন্দা।
এ ছাড়া চনপাড়া বস্তি থেকে মাদকের বড় চালান যায় বস্তিসংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীর বিপরীত পাশে রাজধানীর ডেমরা থানাধীন শিল্প এলাকায়ও। ডেমরা থেকেই পুরো রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়ে এসব মাদক।
বস্তির ষাটোর্ধ্ব এক বাসিন্দা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেসব ছেলেমেয়ে মাদক সেবন করতে আসে তা কল্পনাও করতে পারবেন না। ভার্সিটির ছেলেমেয়েরা দল বেঁধে আসে, স্বামী-স্ত্রীও প্রাইভেট কার নিয়ে চলে আসে বস্তিতে মাদকসেবন করতে। ২৪ ঘণ্টা ধরে বেচাবিক্রি হয়। প্রতিটি স্পটে মাদক গ্রহণের জন্য ঘরের ব্যবস্থাও আছে।’
তিনি বলেন, ‘একেকটি ওয়ার্ডে সাত থেকে দশটি করে মাদকের স্পট আছে। এখানে কে কোন ওয়ার্ডে মাদক বিক্রি করবে তা রাজনৈতিক নেতারা ঠিক করে দেয়। সব মুখবুজে সহ্য করা ছাড়া কারও কিছুই করার নেই।’
বস্তি এলাকায় আধিপত্য নিয়ে মাদক কারবারিদের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ হয়। তাদের বিবাদে অতিষ্ঠ সাধারণ বাসিন্দাদের অনেকে বস্তি ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে যাচ্ছেন। বস্তির অফিস ঘাটের নৌকার মাঝি মো. আলমগীর হোসেন সম্প্রতি পরিবার নিয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। তিনি গতকাল মুঠোফোনে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বস্তিতে থাকার মতন পরিবেশ নেই। মাদক কারবারিদের আধিপত্য নিয়ে বিবাদ লেগেই থাকে। একপক্ষ আরেক পক্ষের ওপর হামলা চালায়। নির্বিচারে ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে।’ তার মতন অনেকে বস্তি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন বলে জানান আলমগীর।
বস্তিবাসীর অভিযোগ রয়েছে, মাদক কারবারিদের পৃষ্ঠপোষক কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. বজলুর রহমান। তিনি বস্তি এলাকার ‘অঘোষিত সম্রাট’। তিনি একই সঙ্গে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের চনপাড়া ইউনিটের (চনপাড়া শেখ রাসেল নগর ইউনিয়ন) সাধারণ সম্পাদক। বজলুর বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে। তার ঘনিষ্ঠজনদের দিয়ে গড়ে তুলেছেন মাদক কারবারের এক অভয় আশ্রম। বজলুর রহমানের সাঙ্গোপাঙ্গরা মাদকের স্পট থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলে। চাঁদার সেই টাকার ভাগবাটোয়ারা হয় রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে পুলিশের বিভিন্ন মহলেও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মাদক কারবারি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ইউপি সদস্য বজলুর লোকজন নিয়মিত চাঁদা তোলেন। এসব টাকার একটি বড় অংশ রাজনৈতিক নেতারা পান। আরেকটা অংশ চনপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি, রূপগঞ্জ থানা, ডেমরা থানা ও ডিবি পুলিশকে দেওয়া হয়। ফলে বস্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ঝামেলা করে না।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে বজলুর রহমানকে গতকাল ফোন করলে এক নারী রিসিভ করেন। এ প্রতিবেদকের পরিচয় জানার পর ফোন কেটে দেন তিনি। এরপর একাধিকবার ফোন করলেও রিসিভ করেননি।
স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, বস্তিতে আধিপত্যের লড়াই ও কাঁচা টাকার ছড়াছড়ি শুরু হয় ২০১৩ সালের পর থেকে। সে সময় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিতে বাড়িপ্রতি প্রথম পর্যায়ে ৪০ হাজার ও পরে ১০ হাজার করে টাকা দিতে হয়েছে। এভাবে কোটি কোটি টাকা বাগিয়ে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা বজলু, আনোয়ার ও সমশেরের তিনটি গ্রুপ। যাদের আধিপত্য বেশি ছিল তারা বেশি টাকা নিয়েছিল।
বস্তিসংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীতে চারটি নৌঘাট রয়েছে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ‘বাজার ঘাট’, ৪ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী অফিস ঘাট, ১ নম্বর ওয়ার্ডের ‘এক নং চরের ঘাট ও ‘বওর বা বাইদ্দার ঘাট’। এসব ঘাট দিয়ে নদী পথে বস্তিতে মাদক ঢোকে। মাদক কারবারিরা কক্সবাজার থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট বড় চালান এনে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে জড়ো করে। সেখান থেকে দুই থেকে তিন হাজার করে ভাগ করে প্রথমে মেঘনা নদী ও পরে শীতলক্ষ্যা নদী দিয়ে বাল্ক হেডে করে চনপাড়া বস্তিতে নিয়ে আসে। গভীর রাতে অফিস ঘাট দিয়ে বেশি ঢোকে এসব ইয়াবা। এ ছাড়া পাশর্^বর্তী দেশ ভারত থেকে আসা ফেনসিডিল মেঘনা ব্রিজের পাম্পের আশপাশে গাড়ি থেকে ফেলে দেয় কারবারিরা। সেখান থেকে অটোরিকশা করে ঢোকে চনপাড়া বস্তিতে। নদী পথেও আসে। অন্যান্য মাদকের বেশিরভাগই ঢোকে এই চার ঘাট দিয়ে। বস্তির পাইকারি ডিলারদের মধ্যে বজলু মেম্বরের মেয়ের জামাই রিপন, শ্যালক জাহির ছাড়াও ফেন্সি ফারুক, রবিন অন্যতম।
বস্তির এক নম্বর ওয়ার্ডে মাদক বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করে তালুকদার মুজাহিদ, মাল্টা রনি ও উজ্জ্বল। দুই নম্বর ওয়ার্ডে আলমগীর, তিন নম্বর ওয়ার্ডে শাওন, চান ও পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে রায়হান, ছয় নম্বর ওয়ার্ডে মনু ওরফে ময়না ও পাগলা ফারুক, সাত নম্বর ওয়ার্ডে বন্দুকযুদ্ধে নিহত শাহিনের সহযোগী জুলহাস, সুমন ও সিরাজুল। আর ৯ নম্বর ওয়ার্ডে রাজার লোকজন। এসব মাদক কারবারি কখনো বস্তির বাইরে বের হয় না।
জানতে চাইলে চনপাড়া বস্তি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মাদকের বেশিরভাগই নদীপথে ঢোকে। এজন্য আমাদের তেমন কিছু করার থাকে না।’ মাদক কারবারিদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি মাত্র এক মাস হয় এখানে এসেছি। এসব অভিযোগ মিথ্যা।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চনপাড়া বস্তিতে দীর্ঘদিন দুটি গ্রুপের আধিপত্য ছিল। গ্রুপ দুটির একটি হলো বজলু মেম্বার ও জয়নালের। আর অন্যটি শাহিন ও রাজার। পরে বজলু ও জয়নালের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। জয়নাল স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে জেলে আছেন। তার বিরুদ্ধে অন্তত ১০টি মাদক ও হত্যা মামলা আছে। আর অপর গ্রুপের শাহিন গত বৃহস্পতিবার র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। তিনিও স্বেচ্ছাসেবক লীগের চনপাড়া ইউনিটের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে মাদক ও হত্যার ২৩ মামলা ছিল। রাজাও র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে আছেন।
ভাষা আন্দোলন থেকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, বাংলাদেশের অভ্যুদয় থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে দেশের বামপন্থি দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অনস্বীকার্য। এসব আন্দোলনের ক্ষেত্রে বামপন্থিরা কখনো প্রকাশ্য আবার কখনো নেপথ্যে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। ইতিহাসের বাঁকবদলের এসব আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মণি সিংহ, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ, আবদুল হক, মোহাম্মদ তোয়াহা, মোহাম্মদ ফরহাদদের মতো বাম ও উদারপন্থি নেতার আবির্ভাব ঘটেছে। এখনো রাশেদ খান মেনন, আব্দুর রব, হাসানুল হক ইনুর মতো নেতা জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তাদের পরবর্তী প্রজন্ম কি তৈরি হয়েছে, যারা বাম আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবেন এমন আলোচনা আছে রাজনৈতিক মহলে।
এমনও আলোচনা আছে যে, ঘুরে ঘুরে দুই-একজন নেতার হাতে দলের নেতৃত্ব থাকায় দলীয় নেতৃত্বের ক্ষেত্রেই নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও সংকট ঘনীভূত হচ্ছে।
দেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, ক্ষেতমজুরদের অবদান সবসময়ই বেশি ছিল। এই সংগঠনগুলোতে বামপন্থিদের প্রভাব থাকায় একদিকে আন্দোলন যেমন বেগবান হয়েছে তেমনি বামপন্থি দলগুলোও জনগণের কাছাকাছি যেতে পেরেছিল। বর্তমান সময়ে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। দেশে কৃষক-ক্ষেতমজুরদের কোনো কার্যকর আন্দোলন নেই, শ্রমিক সংগঠনগুলো পুরোপুরি আওয়ামী-বিএনপির দখলে চলে গিয়েছে। এইসব পেশাভিত্তিক গণ-সংগঠনগুলোই ছিল বামপন্থি দলগুলোর জনগণের মধ্যে কাজ করা এবং প্রভাব বিস্তার করার মূল মাধ্যম। ফলে কোনো গণআন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না দলগুলো।
বামদলগুলোর নেতারা মনে করেন, এরশাদবিরোধী আন্দোলনের পরে দেশের বাম রাজনীতিতে যোগ্য ও জনপ্রিয় নেতা আসেননি। যারা রয়েছেন তাদের মধ্যেও দূরদর্শিতার অভাব রয়েছে। অন্যদিকে অনেকেই নিজেদের অস্তিত্ব ও ক্ষমতার স্বাদ পেতে জোট করেছেন ক্ষমতায় থাকা দলগুলোর সঙ্গে। এ নিয়ে দলগুলোর ভেতরে ও বাইরে আলোচনা-সমালোচনা আছে। বড় কথা বাম দলগুলো সাংগঠনিক শক্তি হারাচ্ছে। জনগণের মনোযোগও আর আকর্ষণ করতে পারছে না।
সিপিবির সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাম দলের নেতৃত্ব তৈরি হয় শ্রেণিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে। কিন্তু আমাদের বামপন্থিরা এটা ভুলে গেছে। শ্রেণিসংগ্রাম তো সমাজের চালিকাশক্তি, কিন্তু সেই শ্রেণিসংগ্রামই নেই। বর্তমানে বামপন্থিদের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে। তাদের যে পথ, সেখান থেকে তারা সরে আসছে। ঐতিহ্যকে ধারণ করে আন্দোলন-সংগ্রাম অগ্রসর করেনি।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সারা বিশ্বেই বাম রাজনীতি হোঁচট খেয়েছে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। একটা গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বে পরিবর্তন আসা উচিত। বিশেষ করে বাম দলগুলোতে নেতৃত্বের এই পরিবর্তন অনেক আগেই আসা উচিত ছিল। কিন্তু তা না হয়ে দীর্ঘ সময় ধরে পদ-পদবি আগলে ধরে রাখার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বামদলগুলো ব্যক্তিনির্ভর রাজনীতিতে ঘুরপাক খাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাম রাজনীতির সফলতা নির্ভর করে নেতৃত্বের দৃঢ়তা ও সততার ওপর।
বাম দলগুলোর কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ২৮ বছর ধরে দেশের অন্যতম বড় বামপন্থি দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। অন্যদিকে, ৩৬ বছর আহ্বায়ক এবং পাঁচ বছর সাধারণ সম্পাদক, সব মিলিয়ে গত ৪১ বছর ধরে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নেতৃত্বে ছিলেন খালেকুজ্জামান। সম্প্রতি কংগ্রেসের মাধ্যমে দুই দলের নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে।
একই অবস্থা ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির। দলটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ৩৭ বছর ধরে মূল নেতৃত্ব রয়েছেন। এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) হাসানুল হক ইনু ৩৫ বছর ধরে নেতৃত্বে রয়েছেন। গত বছর নেতৃত্ব জটিলতায় দলটি আবারও ভাঙনের মুখে পড়ে। এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব ৩৭ বছর, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ৃয়া ৩৪ বছর ধরে নিজ নিজ দলের নেতৃত্বে আছেন।
বাসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ সময় বিশেষ চাহিদা বা প্রয়োজন দেখা দেয়। তার ভিত্তিতে নেতৃত্ব সেভাবে সংগঠিত হওয়া দরকার। যদি কেউ সেটা অনুসরণ না করে তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার শুধুমাত্র নিয়ম করে পরিস্থিতি না বুঝে দলের নেতৃত্ব অদল-বদল করলে দলের অগ্রগতি হয় না। আবার প্রয়োজনের তাগিদে সাড়া না দিয়ে শুধুমাত্র একই নেতৃত্ব বহাল থাকলেও দল বা আন্দোলন অগ্রসর হয় না।’ তিনি বলেন, ‘এটা মূলত নির্ভর করে একটা বিপ্লবী সংগ্রামের বিকাশ, দলের প্রয়োজন এবং সার্বিক সাংগঠনিক প্রয়োজনের ওপর। তার নিরিখে নেতৃত্ব নির্বাচিত হওয়া দরকার এবং রদবদল হওয়া দরকার।’
খালেকুজ্জামান আরও বলেন, ‘শুধুমাত্র নাম করা নেতা হলেই একটা আন্দোলন বিকশিত হয়, তা না। নীতিগত সংগ্রামের বিকাশের মধ্য দিয়ে নেতা তৈরি হয়।’
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই সময়টাতে পৃথিবীজুড়ে বামেরা লড়ছে। বিভিন্ন দেশে লাল ঝা-া উড়াচ্ছে। কিন্তু আমরা পারছি না। এটা আমাদের বড় ব্যর্থতা। আমরা যে কিছু করতে পারি, এই বুঝটা আমাদের মধ্যে নেই।’
তিনি বলেন, ‘দেশের বাম গণতান্ত্রিক শক্তি কখনোই দুর্বল ছিল না। সমস্যা হলো আমাদের শক্তি নিয়ে জনগণের কাছে যেতে পারছি না। এখানে নেতৃত্বের ঘাটতি রয়েছে। কারণ আমরা সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে দিকনির্দেশ করতে পারিনি।’
ফ্লাইট জটিলতায় দেরি শুধু সাকিব আল হাসানেরই হয় না, নেইমারেরও হয়! বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের ফ্লাইট জটিলতায় দেরিতে নিউজিল্যান্ডে পৌঁছানো নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। তাহিতি হয়ে আসতে না পারায় হাজির থাকতে পারেননি অধিনায়কদের ফটোসেশনে। একই বরাত নেইমার আর মারকুইনহোসেরও। প্যারিস থেকে তুরিনে সময়মতো হাজির হতে পারেননি প্যারিস সেন্ট জার্মেইর এই দুই ফুটবলার, তাই অংশ নেওয়া হয়নি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ব্রাজিলের প্রথম অনুশীলন সেশনে। তবে কাল দ্বিতীয় অনুশীলনে ঠিকই মাঠে নেমে পড়েছেন নেইমার।
বিশ্বকাপের আগে তুরিনে, জুভেন্তাসের মাঠে পাঁচ দিনের অনুশীলন ক্যাম্প ব্রাজিলের। দেশ থেকে সাড়ে পাঁচশ কেজি মালপত্র নিয়ে রবিবার তুরিনে পৌঁছেছেন ব্রাজিল দলের কোচ তিতে ও তার সহকারীরা। সঙ্গে ছিলেন ব্রাজিলিয়ান লিগে খেলা বিশ্বকাপ দলে থাকা তিন ফুটবলার পেদ্রো, এভারটন রিবেইরো ও ওয়েভারটন।
চূড়ান্ত দলে ডাক পাওয়া ইউরোপের লিগে খেলা ফুটবলাররাও পৌঁছে গেছেন তুরিনে। সবার শেষে যোগ দিয়েছেন মারকুইনহোস ও নেইমার। বিমানে যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দেওয়াতে বিমান পরিবর্তন করতে হয় পিএসজির এ দুই ব্রাজিলিয়ানকে। মাঠে পৌঁছতে পৌঁছতে গড়িয়ে যায় দুপুর। তাই প্রথম অনুশীলন সেশনে অংশ নিতে পারেননি তারা।
বিশ্বকাপের আগে তুরিনেই তৈরি হবেন ব্রাজিলের ফুটবলাররা। কোচ তিতে তারপর শেষ মিশনে উড়াল দেবেন কাতারের উদ্দেশে। ২৪ নভেম্বর সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে সেলেসাওদের মিশন হেক্সা।
এবারই প্রথম বিশ্বকাপের দলে থাকার সৌভাগ্য হয়েছে রাফিনহার। বার্সেলোনায় খেলা ২৫ বছর বয়সী এই উইঙ্গারের জাতীয় দলে অভিষেক গত বছরের অক্টোবরে, এক বছর এক মাসেই জায়গা করে নিয়েছেন বিশ্বকাপের দলে। বার্সেলোনার ওয়েবসাইটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাফিনহা জানিয়েছেন নিজের রোমাঞ্চের কথা, ‘আমি বিশ্বকাপের জন্য তৈরি আর আমি কঠোর পরিশ্রম করছি যতটা সম্ভব ভালো শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিশ্বকাপে যাওয়া যায়।’
বিশ্বকাপে খেলতে বাড়তি কোনো চাপ অনুভব করছেন না রাফিনহা, জানিয়েছেন বার্সেলোনার ওয়েবসাইটকে ‘ব্রাজিলের মতো একটা দল যখন বিশ্বকাপ বা যেকোনো প্রতিযোগিতায় খেলে তখনই শিরোপা জয়ের প্রত্যাশা তৈরি হয়। ফ্যানদের এই প্রত্যাশাটা স্বাভাবিক, কারণ আমাদের দলটা এত ভালো, এত এত দারুণ খেলোয়াড়!’
ব্রাজিল সবশেষ বিশ্বকাপ জিতেছিল ২০০২ সালে, রাফিনহা তখন শিশু। সেই স্মৃতি একদমই মনে নেই তার, ‘২০০২ বিশ্বকাপ নিয়ে আমার খুব বেশি কিছু মনে নেই কারণ তখন আমি খুব ছোট। তবে সেটা ছিল দারুণ আর ভাষায় প্রকাশ করতে না পারার মতো একটা অভিজ্ঞতা। সবাই সবাইকে আলিঙ্গন করছিল। সেরকম আনন্দের মুহূর্ত ফিরিয়ে আনার এটাই সেরা সময়’ জানিয়েছেন রাফিনহা।
সবশেষ মৌসুমে রাফিনহা ছিলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল লিডসে। ক্লাবকে অবনমন থেকে বাঁচাবার আনন্দে মাঠে হাঁটু দিয়ে হেঁটেছিলেন রাফিনহা, ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিতলে সেটাই করবেন ‘কথা দিচ্ছি, ব্রাজিল যদি বিশ্বকাপ জিতে তাহলে লিডসের প্রিমিয়ার লিগ থেকে অবনমন থেকে রক্ষার পর যেভাবে হাঁটু দিয়ে হেঁটেছিলাম সেভাবেই উদযাপন করব।’
বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেয়েছেন ঠিকই, তবে একাদশে জায়গা পেতে হলে জিততে হবে একটা অন্যরকম এল ক্লাসিকো! উইঙ্গার হিসেবে কোচের চোখে রাফিনহার চেয়ে এগিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, মাদ্রিদিস্তাদের এই ফুটবলার গত মৌসুমে ছিলেন দলের ১৪তম চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের অন্যতম নায়ক। তাকে টপকে একাদশে ঢুকতে অনেকটা কষ্টই করতে হবে রাফিনহাকে।
উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে দুই বছর আগে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। এ বছর তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা গুচ্ছ ভর্তি। স্বাভাবিকভাবেই তিন বছরে অনেকটাই গুছিয়ে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু তা তো হয়নি, বরং আরও অনেকটা অগোছালো হয়ে উঠেছে। এমনকি গুচ্ছে থাকা বড় দুই বিশ্ববিদ্যালয় এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। আর অনেকটা জোর করেই তাদের গুচ্ছে রাখার চেষ্টা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ফলে গুচ্ছ ভর্তি নিয়েই টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জোর করে হয়তো এ বছর ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছে রেখে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এর ফল ভালো হবে না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে তাদের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল যে সিদ্ধান্ত নেয়, সেই অনুযায়ীই এগুনো উচিত।
জানা যায়, গত বছরের এইচএসসির ফল প্রায় সাত মাস দেরিতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ হয়। অথচ এর আগেই তাদের প্রথমবর্ষের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দ্রুত ভর্তি পরীক্ষা শেষ করার তাগিদ দিয়েছিল ইউজিসি। ইতিমধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে। কিন্তু গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা দফায় দফায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সঙ্গে বৈঠক করেও সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছেন না। এতে শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দুই-একটি বিশ্ববিদ্যালয় যেসব কারণ দেখিয়ে গুচ্ছ থেকে সরে আসতে চাচ্ছে তা যুক্তিসংগত নয়। আমাদের প্রত্যাশা, তারা গুচ্ছে থাকবেন। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে রাষ্ট্রপতি নিজেই গুচ্ছ ভর্তি শুরু করার তাগিদ দিয়েছিলেন। যারা গুচ্ছে এসেছিলেন তাদের এখন দায়িত্ব হয়ে পড়েছে, এখানে থাকা। আর গুচ্ছে গত দুই বছর যেসব ত্রুটি ছিল, সেসব ইতিমধ্যেই সমাধান করা হয়েছে। ফলে এ বছর অনেকটাই ত্রুটিমুক্ত হবে গুচ্ছ ভর্তি।’
সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। সেখানে আলোচনা হয়েছে, নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে, তাই বলে এখান থেকে পিছু হটার বা বের হয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ বছরও গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ই গুচ্ছে থাকছে। তবে আগামী বছর থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ইউনিক পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হবে বলে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সভায় গুচ্ছে থাকার আলোচনা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাস্তব চিত্র ভিন্ন। গুচ্ছে থাকা বড় দুই বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কোনোভাবেই গুচ্ছে থাকতে চান না। প্রয়োজনে তারা বড় ধরনের আন্দোলনে যেতেও পিছপা হবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আর আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বের হওয়ার উপায় খুঁজছে।
সূত্র জানায়, এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন গ্রহণ শুরুর কথা ছিল। আর জুলাইয়ের শেষ নাগাদ যাতে ক্লাস শুরু করা যায় সে ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শেষ পর্যন্ত গুচ্ছে থাকবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দেওয়ায় এখনো ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু বা চূড়ান্ত পরিকল্পনা করতে পারছে না গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কমিটি।
গত ১৫ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বিশেষ সভায় নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে হিসাবে আগামী ২ এপ্রিলের মধ্যে কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটি গঠন ও ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আল্টিমেটাম বেঁধে দিয়ে উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে শিক্ষকরা আন্দোলন ও কর্মসূচির মাধ্যমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে দাবি আদায় করার ঘোষণা দিয়েছেন।
শিক্ষকরা বলছেন, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের পরও যদি গুচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থাকে তাহলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৫ সালের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। এই অবস্থায় গুচ্ছে থাকতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সংশোধন করতে হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৫ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সব বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে থাকবে সে কথা বলেই আমাদের গুচ্ছে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো না আসায় আমরা আমাদের স্বকীয়তাই হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছি। আর গুচ্ছে হাজারো ত্রুটি। এতে দীর্ঘসূত্রতা ও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির পাশাপাশি সারা বছর ধরে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। ফলে গুচ্ছে ভালো ছেলেমেয়েরা আসছে না। অনেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিজস্ব প্রক্রিয়ায় ভর্তি কার্যক্রম শুরু করার জন্য আগামী ২ এপ্রিল পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছি। এরমধ্যে ফল না এলে আমাদের আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া পথ থাকবে না।’
২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নিজস্ব পদ্ধতিতে নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শিক্ষক সমিতি। গত ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ১২৫তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় সর্বসম্মতভাবে গুচ্ছে না যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে সভায় কয়েকটি সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে, অনতিবিলম্বে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা, ১ জুলাই নতুন বর্ষের ক্লাস শুরু করা, আবেদনের জন্য ন্যূনতম ফি নির্ধারণ এবং শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে ভর্তি পরীক্ষার পর শুধু ভর্তি হওয়ার জন্যই ক্যাম্পাসে আসবে এবং বাকি কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন করতে হবে।
গত ২৮ মার্চ শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভা থেকে আগামী ৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সভা আহ্বানের জন্য উপাচার্যকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, ‘অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত এখনো বহাল আছে। ইতিমধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী ৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভা আহ্বান করে দ্রুত ভর্তি কার্যক্রম শুরু করার জন্য ভিসি (উপাচার্য) স্যারকে অনুরোধ জানিয়েছি। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা যাব না।’
জানা যায়, সাধারণ ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছের নাম দেওয়া হয়েছে জিএসটি (জেনারেল, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি)। প্রকৌশল গুচ্ছে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কৃষি গুচ্ছের আটটি বিশ্ববিদ্যালয়েও আলাদা ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে পরিচালিত চার বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর) গুচ্ছ ভর্তিতে আসেনি। এ তালিকায় আছে বিশেষায়িত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।
এ ছাড়া বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটিও আলাদা পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে। অ্যাফিলাইটিং বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে সাধারণত ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া জিপিএ’র ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলেও পরে আলাদা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাদের নিজেদের মতো শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। এতে একই শিক্ষার্থীর নাম একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধা তালিকায় আসছে। কিন্তু ওই শিক্ষার্থী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ায় অন্যদের ফের মেধা তালিকা প্রকাশ করতে হচ্ছে। এভাবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই পাঁচ-সাতবার মেধা তালিকা প্রকাশের পরও তাদের আসন শূন্য থাকছে। এমনকি গত বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুচ্ছভুক্ত একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আসন পূর্ণ করতে পারেনি।
সুপারস্টার শাকিব খানের জন্মদিন ছিল ২৮ মার্চ। বিশেষ দিনটিতে অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীরা শুভেচ্ছায় সিক্ত হন নায়ক। একই সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির সহকর্মীরাও শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান তাকে।
বিশেষ ওই দিনটি ঘরোয়া আয়োজনে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে উদযাপন করেন তিনি। পরিবারের সদস্য এবং দুই ছেলে আব্রাম খান জয় ও শেহজাদ খান বীরের সঙ্গে কেক কাটেন তিনি। সমাজমাধ্যম ছড়িয়ে আছে সেসব ছবি।
অভিনেতার জন্মদিনে ছেলে বীরকে নিয়ে শাকিবের সঙ্গে খুনসুটিতে মেতে উঠেছিলেন বুবলী। তারই একটি ভিডিও বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টায় ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে পোস্ট করেছেন বুবলী।
নায়িকা ৩৪ সেকেন্ডের ভিডিও প্রকাশ করে ক্যাপশনে লেখেন—'বাবার জন্মদিনে যখন বাবা ছেলের দুষ্ট-মিষ্টি খুনসুটি।' এর পরই জুড়ে দেন একটি রেড হার্ট ইমো।
বুবলীর পোস্ট করা নজরকাড়া ভিডিওটি ইতিমধ্যে প্রায় চার লাখবার দেখা হয়েছে। এ ছাড়া মন্তব্য পড়েছে প্রায় তিন হাজার।
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন গুজরাট লায়ন্স ও চারবারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ম্যাচ দিয়ে শুক্রবার মাঠে গড়াবে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ষোড়শ আসর।
আহমেদাবাদে আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়। দশ দলকে নিয়ে আট সপ্তাহে ১২টি ভেন্যুতে এবারের আসরের খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হবে। মোট ম্যাচের সংখ্যা ৭৪টি।
গেল বছর আইপিএলে নতুন দুটি দল যুক্ত হয়- গুজরাট ও লখনউ সুপার জায়ান্টস। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দারুণ ক্রিকেট খেলে তারা। লিগ পর্ব শেষে টেবিলের শীর্ষে ছিল হার্ডিক পান্ডিয়ার নেতৃত্বাধীন গুজরাট। রাজস্থান রয়্যালসের সাথে পয়েন্ট সমান হলেও রান রেটে পিছিয়ে তৃতীয় হয় লখনউ।
কিন্তু টুর্নামেন্টের ফাইনালে ঠিকই জায়গা করে নেয় গুজরাট। ফাইনালে রাজস্থানকে হারিয়ে শিরোপা জিতে গুজরাট। এবারও শিরোপা ধরে রাখার মিশন গুজরাটের। যথারীতি দলকে নেতৃত্ব দিবেন পান্ডিয়া।
টুর্নামেন্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই। ধোনির নেতৃত্বেই রেকর্ড নয়বার ফাইনালে খেলেছে তারা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দুই বছর আগে অবসর নিলেও এখনও আইপিএল খেলছেন ৪১ বছর বয়সী ধোনি। চেন্নাই দলের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে ধোনির উপর। ধরনা করা হচ্ছে এবারের আইপিএল ধোনির ক্যারিয়ারের শেষ আইপিএল।
আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পাঁচবার শিরোপা জয়ের রেকর্ডের মালিক মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। গেল বছর টেবিলের তলানিতে থেকে আসর শেষ করে রোহিত শর্মার দল। দ্বিতীয় সফল দল চেন্নাইও ভালো করতে পারেনি। দশ দলের মধ্যে নবম ছিল চেন্নাই। মুম্বাই শেষ করেছিল সবার শেষে থেকে। এবার এই দুই দলের ওপরই আলাদা নজর থাকবে সবার।
আগামী ২৮ মে ফাইনাল দিয়ে পর্দা নামবে আইপিএলের এবারের আসরের।
পবিত্র রমজান মাস যেহেতু প্রতি বছরই আসে, সেজন্য এটা অনেকের জন্য পরীক্ষার বিষয় হয়ে যায়। কারণ যে কাজ বারবার করা হয় তাতে গভীর মনোযোগ ও একনিষ্ঠতা ধরে রাখা এবং ওই কাজের মাধ্যমে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা এবং সওয়াবের প্রত্যাশা অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে পড়ে। তখন অনেকেই এ জাতীয় কাজ করেন অভ্যাসবশত। ফলে ওই কাজের গুরুত্ব ও মর্যাদা আর বজায় থাকে না। তার বিনিময়ে আল্লাহতায়ালার যে ওয়াদা সেটা স্মরণ থাকে না। কিংবা সেই ওয়াদার ওপর বিশ্বাস যথাযথভাবে মনে থাকে না। কারণ কোনো কাজ অভ্যাসজাত হয়ে গেলে তা অনেকটা অভ্যাসের তাগিদেই করা হয়। তাতে অন্য কোনো বিষয় খেয়াল করা হয় না। অথচ স্পষ্টভাবে হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ইমান (বিশ্বাস) ও ইহতিসাব (একনিষ্ঠতা)-এর সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে, তার অতীত গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ -সহিহ বোখারি : ৩৮
বর্ণিত হাদিসে ইমান তথা বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে সওয়াবের প্রত্যাশা নিয়ে রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে। এখান থেকে খুব খেয়াল করে শিক্ষাগ্রহণ এবং পুরো রমজান মাস সেই শিক্ষা মনে রাখা।
একটু চিন্তা করা দরকার, মানুষ কেন রোজা রাখে? কেন সে পানাহার ত্যাগ করে? প্রচ- গরমেও সে পানি পান করে না! তীব্র ক্ষুধায়ও খাবার খায় না। অথচ সবকিছুর ব্যবস্থা আছে। চাইলেই সে যে কোনো কিছু গ্রহণ করতে পারে। এমনিভাবে সে আরও অনেক ধরনের কষ্ট করে। অনেক কিছু সয়ে নেয়। এসব কেন করে?
উত্তর পরিষ্কার। আল্লাহতায়ালার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে। তার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে। তার কাছ থেকে বিনিময় ও সওয়াবের আশায়।
যারা মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান এবং মানবীয় দুর্বলতার খবর রাখেন, তারা জানেন- যখন কোনো বিষয় ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয় এবং নির্ধারিত রুটিনের আওতাভুক্ত হয়, তখন সেটা অনেক সময়ই উদাসীনভাবে পালন করা হয় এবং অবচেতন মনে আদায় করা হয়। রোজা রাখতে হবে, তাই রাখা। রোজা না রাখলে মানুষ মন্দ ভাববে, ঘরের লোক খারাপ বলবে। মানুষের কাছে লজ্জা পেতে হবে, সমালোচনা শুনতে হবে। তাই সে রোজা পালন করে।
আবার অনেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তেই রোজা রাখে কিন্তু তাদের হৃদয় সবসময় জাগ্রত থাকে না। রোজার প্রকৃত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তাদের স্মরণ থাকে না। অথচ আমলের হিসাব নেওয়া, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি মনোযোগী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবুও মানুষ সেদিকে মনোযোগী হয় না। খেয়াল করে না- কেন সে রোজা রাখছে? কেন সে পানাহার ত্যাগ করছে? চাহিদা ও চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা থাকার পরও সে কেন তা থেকে বিরত থাকছে? রোজাপালনের ক্ষেত্রে এমন উদাসীনতা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
রোজার যেসব ফজিলত এবং রোজার মাধ্যমে যেসব বিষয় অর্জনের কথা বলা হয়েছে, তার একটি হলো- তাকওয়া তথা আল্লাহভীতি। সরাসরি কোরআন মাজিদে এই ফজিলতের কথা এসেছে। আর হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রোজার অসিলায় কামাই-রোজগারে বরকত হয়। মানব হৃদয় আলোকিত হয়। গোনাহ থেকে বাঁচার শক্তি অর্জিত হয়। আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সহজ হয়ে যায়। সর্বোপরি তাতে আল্লাহর নির্দেশ পালন ও নবী কারিম (সা.)-এর অনুসরণ করা হয়।
আমরা পানাহারে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও যখন শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তা পরিত্যাগ করি, তখন প্রতিটি মুহূর্তে সওয়াব হতে থাকে, আমাদের মর্যাদা উঁচু হতে থাকে। কারণ এই ত্যাগ আল্লাহর কাছে খুবই দামি, তাতে আল্লাহ খুব খুশি হন। বান্দা যখন তার হুকুম পালনার্থে এবং তাকে খুশি করার উদ্দেশ্যে ক্ষুৎপিপাসার কষ্ট সহ্য করছে- এর মর্যাদা তার কাছে অনেক বেশি।
কিন্তু আফসোসের কথা হলো- অধিকাংশ রোজাদারেরই এসব কথা মনে থাকে না। রোজাদারের মর্যাদা, তার জন্য আল্লাহ কী পুরস্কার নির্ধারণ করেছেন, আল্লাহ তাকে কত ভালোবাসেন ইত্যাদি বিষয়ের দিকে মনোযোগ নিবদ্ধ হয় না। অথচ সেটা খুবই জরুরি। আল্লাহর হুকুমের কথা মনে করা, তার সন্তুষ্টি লাভের নিয়ত স্মরণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যখন একটা অনুষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে শুরু হয়, নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় এবং সবাই তাতে অংশগ্রহণ করে তখন কে কী নিয়তে অংশগ্রহণ করে সেটা স্পষ্ট থাকা জরুরি। প্রত্যেকের মূল্যায়ন হবে তার নিয়তের ভিত্তিতে।
রমজানের রোজার ক্ষেত্রে দেখা যায়, যেন একধরনের বাতাস আসে এবং সেইসঙ্গে একটি মৌসুম আসে। তাতে চারপাশে নতুন আবহ ছড়িয়ে পড়ে। সবাই ওই আবহে প্রভাবিত হয় এবং সে অনুযায়ী আমল শুরু করে। অথচ আসল উদ্দেশ্য ও নিয়তের কথা সবার মনে থাকে না।
জীবনের সব কাজে এই ‘ইমান (বিশ্বাস) ও ইহতিসাব (একনিষ্ঠতা)’ যদি আমাদের অর্জন হয়ে যায়, তাহলে পুরো জীবন আল্লাহর রহমত ও করুণার বারিধারায় স্নাত হবে। এর প্রকৃত ফায়দা দেখা যাবে কেয়ামতের দিন। যখন সবাই আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে, তখন বুঝে আসবে ‘ইমান ও ইহতিসাব’-এর মূল্য। ছোট ছোট এই আমলগুলোও দেখা যাবে- কত বড় আকারে সামনে আসছে! কারও কোনো ছোট্ট একটি কাজ করে দিয়েছিলাম, কারও সঙ্গে একটু হেসে কথা বলেছিলাম, সেগুলোই দেখা যাবে অনেক সওয়াবের মাধ্যম হয়ে গেছে। এটাই রমজান মাসের প্রথম ও সবচেয়ে বড় হাদিয়া। অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তের গুণ অর্জন। এটাই জীবনের জন্য বরকতময় এ মাসের বার্তা।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক
বাবা কাহিনি
আমার বাবা ১৯৪৬ সালের ম্যাট্রিকুলেটদের একজন (আমার বাবা আমার হাইপ্রোফাইল বন্ধুদের বাবাদের মতো কোনোকালেও ফার্স্ট ক্লাস বা ফার্স্ট ডিভিশন পাননি)। ১৯৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি ঘটনাচক্রে তিনি ঢাকায় ছিলেন, থাকার কথা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের চাকলালায় তার বিমানবাহিনীর কর্মক্ষেত্রে। সন্ধ্যার দিকে তার খুব ইচ্ছা হলো উত্তপ্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভেতরটাতে কী হচ্ছে একটু দেখে আসবেন (আমার বাবা কসি¥নকালেও ভাষাসৈনিকদের একজন ছিলেন না এবং তাকে ঠেলেঠুলে ভাষাসৈনিক বানানোর কোনো গোপন বা প্রকাশ্য ইচ্ছাও আমার নেই)। চারদিকে তখন ঢিল খাওয়া এত ক্ষুব্ধ পুলিশ যে, ডাক্তারদেরও ভেতরে প্রবেশ করতে অসুবিধা হচ্ছিল।
সাইকেল আরোহী আমার বাবা তার সাইকেলসহ ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেন এবং পুলিশের ধমক খেলেন। কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে দলছুট একজন কনস্টেবলকে সালাম দিয়ে বললেন, স্যার, আমার একটু হাসপাতলের ভেতরে যাওয়া দরকার যদি একটু সুযোগ করে দিতেন স্যার, কৃতজ্ঞ থাকতাম।
একই বাক্যে দুবার স্যার সম্মোধন শুনে কনস্টেবল যথেষ্ট দয়া পরবশ হয়ে তাকে বললেন, সাইকেল নিয়ে যাওয়া যাবে না।
পরক্ষণেই আমার বাবা বললেন, স্যার, আপনি যদি আমার সাইকেলটা একটু দেখে রাখতেন...।
তার স্যার বলার আন্তরিকতা কনস্টেবল সাহেবকে মুগ্ধ করে থাকতে পারে। তিনি একটি জায়গা দেখিয়ে বললেন, এখানে রাখো, পনেরো মিনিটের মধ্যে যা যা দেখার দেখে ফিরে আসবে।
জি স্যার, অবশ্যই, বলে আমার বাবা তারই সঙ্গে গেট পর্যন্ত আসেন এবং ভেতরেও ঢুকে যান। তার পরিচিত দু-একজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে, কিছু দেখার কৌতূহল নিবৃত্ত করে আধা ঘণ্টা পর বেরিয়ে এসে আবারও তাকে স্যার ডেকে ধন্যবাদ জানিয়ে সাইকেল নিয়ে রাত্রিনিবাসে ফিরে এলেন।
আমি একাধিকবার তার কাছে এই এপিসোডটি শুনেছি এবং প্রতিবারই তিনি উপসংহারে বলেছেন : স্যার ডেকে পুলিশকে দিয়ে আমার সাইকেলটি আধা ঘণ্টা পাহারাও দেওয়াতে পেরেছি।
তিনি যে স্যার ডেকে ভেতরে যেতে পেরেছেন তার কাছে এর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে নিজের সাইকেলের নিরাপত্তায় পুলিশ প্রহরা নিশ্চিত করতে পারা।
কারও পছন্দ হোক বা না হোক, উপনিবেশবাদ তাদের কাউকে খোঁচা দিক বা না দিক আমি ব্যক্তিজীবনে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত বাবার এই শিক্ষাটাকে গ্রহণ করেছি। কৌশল কিংবা চাতুর্য হিসেবে নয়, অপ্রত্যাশিতভাবেই আমি অনেককে স্যার বলি, বন্ধুদের কাউকেও বলি এবং বলে কিছুটা সম্মান ফিরেও পাই বলে আমার বিশ্বাস।
নিজের কাহিনি
‘আমলাতন্ত্রের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘লাল ফিতের দৌরাত্ম্য বন্ধ কর বন্ধ কর’ এসব লিখতে লিখতে এ চাকরি সে চাকরি করতে করতে বাবাকেও সন্তুষ্ট রাখতে ১৯৮২ সালের নিয়মিত বিসিএস পরীক্ষায় বসলাম এবং শুরুতে বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ার কারণে সম্ভবত গণিত ও ইংরেজির পুঁজির জোরে পাসও করে গেলাম। প্রথম পদায়ন বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। হায়ারার্কি বা পদসোপানের বিষয়টি একটু একটু করে টের পেতে শুরু করলাম। একেবারে প্রথম দিনই অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোমেনুল হককে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আচ্ছা ভাই, এই অফিসে কাকে কাকে স্যার বলতে হবে?’
আমার সৌভাগ্য আমার চাকরি জীবনে প্রথম কথা বলা বস মোমেনুল হক (১৯৬৯-এর ইপিসিএস) তখনই এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আমলাতন্ত্র নিয়ে কিছু রসিকতা করলেন, টেক্সট বইয়ের বাইরে কিছু জানি কিনা বোঝার চেষ্টা করলেন এবং বুঝলেন আমি টেক্সট বইয়ের তেমন কিছুই জানি না, সামান্য যা জানি সবই টেক্সট বইবহির্ভূত আমার আমলে সেগুলোকে বলা হতো আউট বই কিংবা কাজে বই।
তাকে আমার প্রশ্নের জবাবে ফিরিয়ে আনি। তিনি বললেন, ডিসি, এডিসি জেনারেল, এডিসি রেভিনিউ, এডিসি ভূমি হুকুমদখল এবং এডিএম (শামসুল হক)-কে স্যার বলবে।
আমি দেখলাম যার সঙ্গে কথা বলছি তিনিও এডিএম, তাকেই বা কেন বাদ দেব। বললামও, তাহলে ভাই আপনাকেও স্যার বলব।
তিনি বললেন, ইচ্ছা হলে বলো। ইচ্ছা না হলে থাক।
আরও বললেন, সিনিয়রদের মধ্যে যাদের তুমি একটু বেশি পছন্দ করবে তাদের স্যার কম বললেও চলবে, কিন্তু যারা কম পছন্দের হবেন তাদের একটু বেশি বেশি করে বলাই হবে উত্তম কাজ।
স্যার শুনে যেমন তৃপ্তি (!) বলেও তো তৃপ্তি আছে। আমার চাকরিজীবনের (কিংবা আমলাজীবনের) শুরুতে যাকে স্যার বলে তৃপ্তি পেয়েছি, তিনি মোমেনুল হক। একটি প্রতিষ্ঠানের বড়কর্তা থাকা অবস্থায় পদব্রজে রমনা পার্কের ভেতর দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে যা আছে সব খোয়াতে বাধ্য হন। ঘটানাটি সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছিল। ছিনতাইকারীরা তার ১৪৫ টাকার সবটাই নিয়ে যায়।
১৯৮৮ সালের একেবারে শুরুতে ভূমি সচিব এম. মোকাম্মেল হক আমাকে মাঠ থেকে তুলে ভূমি মন্ত্রণালয়ে নিয়ে আসেন। এটাই আমার সচিবালয় চাকরির সূচনা, সহকারী সচিব হিসেবে। মেজাজে আবেগময় দোদুল্যমানতা ছিল এমন একজন বিদ্বান যুগ্ম সচিব ডক্টর কামাল সিদ্দিকীকে আমাদের জ্যেষ্ঠ একজন সহকর্মী আসহাবুর রহমান বলতেন, কামাল ভাই। আমি ততদিনে সিনিয়রদের স্যার বলতে বেশ অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। কিন্তু ডক্টর সিদ্দিকী হুকুম করলেন এখন থেকে তুমিও আমাকে ভাই বলবে, কামাল ভাই। এটা আমার আদেশ। এটা তোমার জন্য স্পেশাল অফার। কিন্তু আদেশটা পালনের উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছি।
আবার সর্বজন শ্রদ্ধেয় স্যার ছিলেন বাংলাদেশে প্রথম মন্ত্রিসভায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ডক্টর মফিজ চৌধুরী, তিনি সবার স্যার, কিন্তু আমার হয়ে রইলেন ভাই। আদমসূত্র ছাড়া তার সঙ্গে আমার আত্মীয়তার কোনো সম্পর্ক নেই। তাকে মফিজ ভাই বলছি শুনে আমার বাবাও অবাক হলেন এবং আমার অপরাধটা যে অমার্জনীয় তা মনে করিয়ে দিলেন। আমি যখন ডক্টর মফিজ চৌধুরীকে স্যার বলতে চেষ্টা করলাম, তিনি বললেন, ফাজলামি শুরু করলে।
তার সঙ্গে আমার সম্পর্কসূত্র সাহিত্যের, হ্যামলেটের, রবীন্দ্রনাথের। সুতরাং তিনি আবার বাবার স্যার হলেও আমার ভাই, মফিজ ভাই।
সে আমলে নারীদের স্যার বলার রেওয়াজটা শুরুই হয়নি। বগুড়া কালেক্টরেটের দোতলায় আমি বসি। দুপুরের পর পঞ্চাশোর্ধ্ব একজন ভদ্রমহিলা এলেন, তার কয়েকটা কাগজ এবং ছবি প্রত্যয়ন করে দিতে হবে।
ছবিটা উল্টে দেখি নাম লেখা রোমেনা আফাজ। আমি নাম দেখেই দাঁড়িয়ে যাই। আমি অনেকটা তোতলাতে তোতলাতে বলি, আমি একজন রোমেনা আফাজকে জানি, দস্যু বনহুরের লেখক। আপনি তাহলে আরেকজন।
তিনি বললেন, না, একজনই রোমেনা আফাজ, আমিই দস্যু বনহুর সিরিজ লিখেছি। আমার ক্লাস সেভেন জীবনে রোমেনা আফাজই ছিলেন আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লেখক, আমি কীভাবে তাকে সম্বোধন করব, কীভাবে সম্মান জানাব, অস্থির হয়ে উঠলাম। ‘স্যার’ ছাড়া আর সম্মানসূচক যত শব্দ আমার মনে আসে সবই তার জন্য নিবেদন করেছি। ‘স্যার’ বলিনি কারণ, সে সময় কোনো নারী স্যার শুনলে ভাবতেন ‘বিটলামি’ করছি। আমার উচ্ছ্বাস তাকে বিব্রত করে থাকতে পারে তিনি ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলেন এবং বললেন, এই কালেক্টরেটে কত এসেছি, কিন্তু এত সম্মান কখনো পাইনি।
আমার আরও আরও স্যার
১৯৮৯-এর অক্টোবরে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার ইউএনও পদে যোগ দিই। আমাকে সংবর্ধিত করতেই কিনা যোগ দেওয়ার সঙ্গে ছুটতে হলো ডাকাতের গুলিতে নিহত পাঁচজনকে দেখতে। মৃত্যুশয্যায় আরও কয়েকজন। খানিকটা দেহ গাছের ওপর, খানিকটা ঘরের চালে এমন একটি মরদেহও নামাতে হলো। তার অল্পদিন আগে কুমিল্লায় নিদারাবাদের ছয় খুনের ঘটনা বেশ আলোচিত হয়েছে। পরদিনই আহতদের একজনের মৃত্যু হলে ঢাকায় পত্রিকায় ছাপা হয়েছে গফরগাঁও নিদারাবাদের সঙ্গে ড্র করেছে।
বিভিন্ন কারণে গফরগাঁও প্রশাসনে তখন অস্থিরতা চলছে ইউএনওবিরোধী হয়ে উঠেছেন উপজেলা হাসপাতালের সব ডাক্তার; প্রকৃচি (প্রকৌশলী কৃষিবিদ ও চিকিৎসা) সমাজের আন্দোলনও চলছে। পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, সংসদ সদস্য উপজেলার কারও কারও মতে, উপজেলাটাকে গিলে খাচ্ছেন। এ রকম একটি অস্থির পরিবেশে একটি সভাতে আমি গফরগাঁও সরকারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আমীর আলীকে সম্বোধন করলাম স্যার; খায়রুল্লাহ গার্লস স্কুলের হেডমিস্ট্রেস মার্জিয়া বেগমকে বললাম ম্যাডাম; গফরগাঁও কলেজের প্রিন্সিপাল মোকাররম হোসেন তো অবশ্যই স্যার আমার এক-দুজন সহকর্মীর মনে হলো আমি প্রশাসনের ডিসিপ্লিন ভেঙে ফেলছি। অভিযোগটা আরও গুরুতর হলো যখন আমি একজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে বললাম, স্যার। প্রশাসন বোধ হয় তখন পুরোটাই ভেঙেই পড়ল! সেই ইউনিয়নের নাম রাওনা এবং চেয়ারম্যান হামিদুল্লাহ মাস্টার। আমার ‘বস’ ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক শফিউল আলম ফিসফিস করে বললেন, কী শুনলাম, তুমি নাকি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকেও স্যার বলতে শুরু করেছ।
একটু হালকা চালে বললাম, স্যার, গ্রাসরুটস লেভেল থেকেও এগোতে এগোতে মন্ত্রী হওয়ার নজির আছে। মন্ত্রীকে সবাই স্যার বলেন। কে কখন মন্ত্রী হয়ে যান বলা তো যায় না, আমি না হয় একটু আগে থেকেই স্যার বলা শুরু করলাম।
গফরগাঁও স্কুলটা সরকারি হাইস্কুল, আমি ঢাকার একটি সরকারি হাইস্কুলে পড়তাম গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল। সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের আন্তঃস্কুল বদলি হয়েই থাকে। আমি হয়তো আমীর আলীকে সরাসরি আমার শিক্ষক হিসেবেই ল্যাবরেটরি স্কুলে পেতে পারতাম। কাজেই তাকে তো আমার স্যার বলতেই হবে, না বলাটাই হবে ঔদ্ধত্ব। বদলিসূত্রে আমি যখন গফরগাঁও ছেড়ে আসি, আমীর আলী স্যার আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, শিক্ষকতা জীবনের শেষ পর্বে এসে সম্মানটা পেয়েছি। ১৯৯৯-এর এপ্রিলে তার-আমার শেষ দেখা।
মার্জিয়া বেগমের ‘সফিসটিকেশন’ চোখে পড়ার মতো। আদর্শ স্কুলশিক্ষক, আমি সম্বোধন করতাম ম্যাডাম। সন্তানদের বাধা উপেক্ষা করে হামিদুল্লাহ মাস্টার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। অন্তত তার বিরুদ্ধে চাল-গম তছরুপের কাহিনি আমি শুনিনি। মাস্টার হিসেবে, ভালো মানুষ হিসেবে, ভালো জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি অবশ্যই আমার স্যার।
আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ কবি হিসেবে বড়, আমলা হিসেবেও। চাকরিসূত্রে তিনি কেবল আমার নন, আমার বসদের যারা বস তাদেরও স্যার। ১৯৮২ সালে সন্ধানী প্রকাশনীর কর্ণধার গাজী শাহাবুদ্দিন আহমেদ আরও কটি বইয়ের সঙ্গে আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর বইও দিলেন, উদ্দেশ্য বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকায় রিভিও লেখানো। আমি তার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে তখনো পরিচিত হইনি। ১৯৯২ সালে তার একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা যখন তার সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমিও ফিসফিস করে বললাম, স্যার, আমি অবজারভারে আপনার বই নিয়ে লিখেছিলাম।
তিনি বললেন, আমি তো তোমাকেই খুঁজছি। বলেই আমার কাছে তার মুখ এনে আস্তে করে বললেন, তুমি আমাকে স্যার বলবে না, সেন্টু ভাই বলবে। তারপরও দেখা হয়েছে, আমি সেন্টু ভাই বলতে পারিনি, স্যারই বলেছি।
লেখক: সরকারের সাবেক কর্মকর্তা ও কলামিস্ট
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সন্ধ্যার আকাশে রহস্যময় চাঁদ দেখে আটকে যায় চোখ। চাঁদের নিচে আলোকরেখার মতো ছোট এক বিন্দু। এ নিয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) সন্ধ্যা থেকেই সোশালে মাতামাতি। এ সংক্রান্ত ছবি সমানে শেয়ার করে চলেছে নেটিজেনরা। সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছেন নানা রকম মন্তব্য।
কেউ কেউ বলছেন, এটি দেখতে ঠিক আরবি হরফ ‘বা’-এর মতো। আবার কেউ কেউ বলছেন, দৃশ্যটির সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে কাজী নজরুল ইসলামের একটি গান মোর ‘প্রিয়া হবে এসো রানী’র। গানে প্রিয়তমার খোঁপায় ‘তারার ফুল’ দেওয়ার কথা বলেছিলেন বিদ্রোহী কবি।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজিকসের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, বসন্তের আকাশে ধরা পড়া রহস্যময় এই আলোকরেখা আসলে শুক্র গ্রহ। অবশ্য এই মহাজাগতিক দৃশ্য বিরল। সৌরমণ্ডলের উজ্জ্বলতম গ্রহটি শুক্রবার চলে আসে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের কাছাকাছি। নতুন অবস্থানের কারণেই মানুষের কাছে ভিন্নভাবে ধরা দেয় গ্রহটি। তবে সেটি আবার কয়েক মিনিটের মধ্যেই হারিয়ে যায়।
এদিন সন্ধ্যার পর বাংলাদেশ-ভারতসহ কয়েকটি দেশে আকাশে চাঁদের নিচে আলোকবিন্দুটি দেখা যায়। এ সময় অনেকেই চাঁদ দেখতে ঘর থেকে বের হয়ে যান। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এই বিরল মহাজাগতিক মিলন দেখার উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজিকস টেলিস্কোপ ও ক্যামেরা ব্যবহার করে এই মহাজাগতিক ঘটনা সরাসরি সম্প্রচার করে।
সোশালে সাইফুদ্দিন আহমেদ নামে একজন কলেজ শিক্ষক মন্তব্য করেন, ‘এটিই নজরুলের ‘তৃতীয়া তিথির চৈতি চাঁদের দুল...। কবি তার একটি গানে লিখেছিলেন, ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রানী, দেব খোঁপায় তারার ফুল / কর্ণে দোলাব তৃতীয়া তিথির চৈতি চাঁদের দুল ...।’ গতকাল ছিল চৈত্র মাস, চাঁদ আর শুক্রের সম্মিলিত এই মোহনীয় রূপও ছিল ঠিক তৃতীয়া তিথিতে।
তবে শুধু এই কলেজ শিক্ষকই নন, আরও অনেকে চাঁদ ও শুক্র গ্রহের বিরল এবং যৌথ রূপকে কানের দুলের মতো দেখতে বলে মন্তব্য করেছেন।
এর আগে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে চাঁদের সঙ্গে এক সারিতে দেখা গিয়েছিল শুক্র ও সৌরমণ্ডলের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতিকে। এবার চাঁদের নিচে দেখা মিলল শুক্র গ্রহের। চাঁদের নিচে অবস্থানের পাশাপাশি কিছুক্ষণের জন্য চাঁদের আড়ালেও চলে গিয়েছিল গ্রহটি।
মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বলছে, গত ১ মার্চ থেকেই খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে বৃহস্পতি ও শুক্র গ্রহ। বিভিন্ন দেশে রাতের আকাশেই দেখা মিলছে এ বিরল দৃশ্যের। সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশের দিকে তাকালেই দেখা যাচ্ছে বৃহস্পতি ও শুক্র। আকাশে মেঘ না থাকলে কাছাকাছি আসার দৃশ্য খালি চোখেই দেখতে পারছেন যে কেউ।
বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইট অ্যাকিউ ওয়েদার বলছে, পৃথিবীর দুই প্রতিবেশী গ্রহ শুক্র ও মঙ্গল একে অপরের সবচেয়ে নিকটে আসতে চলেছে। একই সঙ্গে এক সারিতে দেখা যাবে শুক্র-মঙ্গল ও চাঁদকে। এমন ঘটনাকে ‘প্ল্যানেটরি কনজাংশন’ বলে আখ্যা করেছেন বিজ্ঞানীরা।
আগামী ২৬ মার্চ, মঙ্গল ও শুক্র গ্রহ নিজেদের কক্ষপথ থেকে সবচেয়ে কম দূরত্বে ও একই সারিতে অবস্থান করবে। ওই দিন সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশে দুটি গ্রহ দৃশ্যমান হবে। এর আগে, ২৫ মার্চ রাতে চাঁদের কাছাকাছি আসবে এই দুই প্রতিবেশী গ্রহ, যা মহাকাশ বিজ্ঞানে বেশ বিরল ঘটনা।