
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘একটি বৈশ্বিক সংকট এবং অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে বিশ^ চললেও দেশের অর্থনীতি সচল ও প্রাণবন্ত রয়েছে। আশা করছি, সকলের সহযোগিতায় বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’
ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ আশা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও করোনাভাইরাস, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশ কিছু সমস্যায় পড়েছে। তিনি বিশ্বব্যাপী সংকট কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে নিজস্ব খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রতিটি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনার জন্য সবার প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও গ্রেট ব্রিটেন থেকে পুরো বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং ব্রিটেন ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে যে এটি অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি হচ্ছে।
২০০৮-এর নির্বাচনে পুনরায় বিজয়ী হয়ে তার সরকার এ পর্যন্ত টানা তিন মেয়াদে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে এ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত আছে বলেই আজকে আমরা দেশের উন্নয়ন করতে পারছি। তবে দুর্ভাগ্য হলো, করোনাভাইরাস যেতে না যেতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে কেন্দ্র করে নিষেধাজ্ঞায় বিশ্বমন্দা ও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন যেন আমরা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক মন্দা ও দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষা করতে পারি।’
জনগণকে দুর্ভোগ থেকে দূরে রাখতে তার সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি আমাদের দেশের মানুষকে যেন বৈশি^ক সংকটে ভুগতে না হয়। সরকার বিশে^র বিভিন্ন জায়গা থেকে বেশি দামে পণ্য ক্রয় করে আনছে।’
সেনাকুঞ্জে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
মানুষের কষ্ট লাঘবে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘মানুষের জীবনমান যাতে সহজভাবে চলতে পারে তার ব্যবস্থা নিচ্ছি। শুধু তা-ই না, যারা একেবারে বয়োবৃদ্ধ বা পঙ্গু অসহায়, তাদের প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল আমরা দিচ্ছি বিনা পয়সায়। আমাদের যারা নিম্নবিত্ত, তাদের ৫০ লক্ষ মানুষকে আমরা ১৫ টাকা কেজিতে চাল দিচ্ছি। আরও এক কোটি মানুষকে আমরা কার্ড করে দিয়েছি, যাতে তারা তাদের প্রয়োজনীয় চারটি পণ্য চাল, ডাল, তেল, চিনি ক্রয় করতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার সরকার জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি বাহিনীকে আধুনিক সমরাস্ত্র ক্রয় করে দিয়েছে এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একে একে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে গড়ে তুলেছে, যাতে করে আমাদের সেনা, নৌ এবং বিমানবাহিনী বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনী কাজ করে। তাদের আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সমৃদ্ধ ও প্রযুক্তি জ্ঞানে দীক্ষিত করে গড়ে তুলছি, যাতে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা চলতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করব না, আমরা শান্তি চাই। “সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়”থ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের এই নীতি শিখিয়ে গেছেন এবং আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর আমি বলতে পারি, আমরা সেই নীতিতে অটল থেকে পৃথিবীর সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। যার সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে।’
তার সরকার সেনাবাহিনীর নতুন নতুন ঘাঁটি তৈরি করা থেকে শুরু করে অনেক কাজ করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতিমালার আলোকে ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করে সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করছে। নৌবাহিনীকেও তার সরকার ত্রিমাত্রিক করেছে এবং সমুদ্রসীমায় আমাদের যে অধিকার, সেটা অর্জন করেছে।’
ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা মিটিয়ে শান্তিপূর্ণ ছিটমহল বিনিময়কে পৃথিবীর কাছে একটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও দুই প্রতিবেশী দেশ এভাবে শান্তিপূর্ণভাবে ছিটমহল বিনিময় করেছে, এমন নজির নেই।’
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের শান্তিরক্ষীরা ৩৪ বছর ধরে ত্যাগ-তিতিক্ষার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করায়, আমরা এখন সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে নিজেদের অবস্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হবে জণগণের বাহিনী, তথা পিপলস আর্মি। আমি বিশ্বাস করি, সত্যিই আমাদের সেনাবাহিনী এখন পিপলস আর্মি, কারণ যেকোনো দুর্যোগে অথবা যেকোনো দুর্ঘটনায় আমাদের সশস্ত্র বাহিনী মানুষের পাশে দাঁড়ায় এবং তাদের সহযোগিতা করে যায়। সে জন্য সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে যখন তিনি প্রথম সরকার গঠন করেছিলেন, তখন দেশে ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যঘাটতি ছিল। তিনি সেই ঘাটতি মোকাবিলা করে ২৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উদ্বৃত্ত রেখে ২০০১ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন।
ঢাকার আদালত থেকে রবিবার জঙ্গি ছিনতাইয়ের পর প্রশ্ন উঠেছে আদালত পাড়ার নিরাপত্তা নিয়ে। রাজধানীর পুরান ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার নিম্ন আদালতে প্রতিদিন হাজার হাজার আসামি ও বিচারপ্রার্থীর সমাগম ঘটে। এদের মধ্যে জঙ্গি-দুর্ধর্ষ খুনের মামলার আসামিও থাকেন। ফলে কে আসামি কে বাদী তা আলাদা করার সুযোগ থাকে না। থাকেন ১৭ হাজার আইনজীবী। মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রায়ই বাদী-বিবাদী পক্ষের মধ্যে বাগ্বিত-া, হাতাহাতিসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে। এই ভিড়বাট্টার মধ্যে গত ১৯ মাসে মৃত্যুদ ন্ড প্রাপ্ত তিনজনসহ পাঁচজন আসামি পালিয়েছেন পুলিশের হেফাজত থেকে। গত রবিবার সিজেএম আদালতের সামনে থেকে দুই জঙ্গি ছিনতাই অরক্ষিত ও অপ্রতুল নিরাপত্তারই প্রতিফলন। যদিও জঙ্গি ছিনতাইয়ের পর আদালতের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। কিন্তু আদালত প্রাঙ্গণের সার্বিক পরিস্থিতি আছে আগের মতোই।
২০১৯ সালের ১৬ জুলাই কুমিল্লার তৃতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে একটি হত্যা মামলায় হাজিরার দিন আদালতে বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের সামনেই এক আসামি হাসান অতর্কিতে ছুরি চালিয়ে হত্যা করেন একই মামলার আরেক আসামি ফারুককে। ঘটনাটি তখন দেশজুড়ে বেশ আলোচনায় আসে। উচ্চ আদালত, ঢাকার আদালত এলাকাসহ দেশের সব অধস্তন আদালতে নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা। কিন্তু সেই নিরাপত্তাব্যবস্থা শিথিল হতে সময় লাগেনি। আদালতের মতো স্পর্শকাতর স্থানে খুন, ফাঁসির আসামির পলায়ন, বিচারকের ওপর হামলার চেষ্টা, বাদীপক্ষের ওপর আসামিপক্ষের হামলার মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাও থামেনি।
এই নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানা থেকে কৌশলে পালিয়ে যান হারুনুর রশিদ নামে ডাকাতি মামলার এক আসামি। চলতি বছরের ২৩ মার্চ সিএমএম আদালত এলাকার হাজতখানা থেকে পালিয়েছেন সাইফুল ইসলাম নামে মাদক মামলার এক আসামি। আর গত ২৮ এপ্রিল ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতের হাজতখানা থেকে পালিয়ে যান হত্যা মামলায় ফাঁসির আসামি বাদশা মিয়া। অন্য একটি হত্যা মামলায় হাজিরা দেওয়ার জন্য তাকে আনা হয়েছিল আদালতে। নিরাপত্তার শিথিলতায় একের পর এক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী ও আদালত সংশ্লিষ্টরা হতবাক। আইনজীবীরা বলেন, নিরাপত্তাসহ নানা কারণে এখানে আদালতের পরিবেশ বলতে যা বোঝায় সেটি অনেক সময়ই থাকে না।
গত রবিবার দুপুরে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম (সিজেএম) আদালত এলাকায় পুলিশের ওপর পিপার স্প্রে করে ছিনিয়ে নেওয়া হয় অভিজিত রায় ও প্রকাশক ফয়সল আরেফীন দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে। ওই দিন সিজেএম আদালতে ভবনে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে তাদের অন্য একটি মামলায় হাজিরার জন্য আনা হয়েছিল। এই ছিনতাইয়ের ঘটনার পর নিরাপত্তা জোরদার করা হয় আদালত প্রাঙ্গণের।
কিন্তু গতকাল ঢাকা মহানগর দায়রা আদালত, সিজেএম আদালত, সিএমএম (মুখ্য মহানগর হাকিম) আদালত ঘুরে দেখা বাড়তি নিরাপত্তার কিছু চোখে পড়েনি। এখানে সেখানে দেদার চলছে ভ্রাম্যমাণ দোকান। আদালতের বিভিন্ন করিডরে হকার ও ফকিরের অবাধ আনাগোনা। আসামিকে হাজির করা কিংবা হাজিরা দেওয়া হয় এমন আদালতগুলোর সামনের অবস্থা আরও বেশি বিশৃঙ্খল। আদালতগুলোতে প্রবেশে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ঘাটতিসহ সিসি ক্যামেরার অপ্রতুলতা তো আছেই।
গতকাল সিএমএম ভবনের পঞ্চম তলায় আদালতের করিডরের সামনে পেয়ারা, চা, সিগারেটের ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে ভিড় চোখে পড়ে। নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশও এ বিষয়ে কিছুই বলছে না। আদালত এলাকার সরু গলিগুলোর ফুটপাতে মাছ, মাংস থেকে শুরু করে নিত্যপণ্য সবই বিক্রি হয় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি আজাদ রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এজলাস থেকে বেরুলে মনে হয় বাজারের মধ্যে আছি। আদালতের এই পরিবেশকে কোনোভাবেই স্বাভাবিক বলা যাবে না। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও পুলিশের তেমন তৎপরতা চোখে পড়ে না। ফলে দিনের পর দিন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটছেই।’
অকুস্থলে যা দেখা গেল : রবিবার ঢাকার আদালত এলাকার যেখান থেকে (সিজেএম ভবন এলাকা) দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয় গতকাল সেখানে গিয়ে দেখা যায় অনেক মানুষের জটলা। আদালতে আসা মানুষদের ওপর নেই কোনো কঠোর নজরদারি কিংবা তল্লাশি। পুলিশ ও গোয়েন্দারা সতর্ক অবস্থানে থাকলেও অন্যদিনের মতোই পরিস্থিতি স্বাভাবিক। প্রতিদিনের মতোই বসেছে চা, সিগারেট, পেয়ারা, পেঁপে, বই এমনকি ব্লাড সুগার ও রক্তচাপ পরীক্ষা করার অন্তত ১৫টি ভ্রাম্যমাণ দোকান। এখানে সেখানে ছড়িয়ে রয়েছে পার্কিং করা গাড়ি যার সবই ব্যক্তিগত। ভবনের নিচতলা ও পাশের ভবনে দুটি সিসি ক্যামেরা চোখে পড়ে।
নাম না প্রকাশের শর্তে একজন আইনজীবী বলেন, ‘এখানে একটি সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। প্রতিটি কর্মদিবসে এই আদালতে দুর্ধর্ষ সব আসামিকে হাজির করা হয়। প্রতিদিনই এখানে আইনজীবীসহ শত শত মানুষের আনাগোনা থাকে। পরিস্থিতি দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে দুদিন আগে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার মতো বড় একটি ঘটনা ঘটেছে।’
ঘুপচি গলির ছোট এলাকায় আদালত নিয়ে অস্বস্তি আইনজীবীদের : ডিএমপির (ঢাকা মহানগর পুলিশ) প্রসিকিউশন বিভাগ বলছে, ঢাকা মহানগর দায়রা আদালত, ঢাকা জেলা আদালত, সিজেএম আদালত, সিএমএম আদালতের ভবনগুলোতে বিচারকাজের এজলাস রয়েছে ১২৭টি। অন্যদিকে ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারা বলেন, প্রায় ২৭ হাজার আইনজীবী আছেন সমিতিতে। এদের মধ্যে অন্তত ১৫ হাজার আইনজীবী নিয়মিত আদালতে মামলা পরিচালনা করেন। এর বাইরে বিচারপ্রার্থী, আসামি মিলিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিটি কর্মদিবসে হাজার হাজার মানুষের সমাগম থাকে আদালত এলাকায়। সব মিলিয়ে পুরান ঢাকার আদালত এলাকার যে পরিবেশ তাতে আইনজীবীদের অনেকের রয়েছে অস্বস্তি।
ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতের প্রধান কৌঁসুলি আব্দুল্লাহ আবু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আসলে যে ঘটনাটি (জঙ্গি ছিনতাই) ঘটেছে সেটি একেবারেই অনাকাক্সিক্ষত ও আকস্মিক। আমরা সবাই হতবাক হয়েছি। এ ঘটনা আসলেই আতঙ্কের।’ তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এখানে আদালত অঙ্গনটির উপযুক্ত জায়গা নয়। আশপাশে বাড়িঘর ও অসংখ্য গলি রয়েছে। দুর্বৃত্তরা ঘটনা ঘটিয়েই খুব সহজে মানুষের সঙ্গে মিশে যায়। যদি এটি কোনো সংরক্ষিত জায়গায় হতো তাহলে পালিয়ে যেত পারত না।’ ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এমনিতেই এটি জনবহুল এলাকা। হাজার হাজার মানুষের সমাগম। বিভিন্ন সমিতির নামে এখানে কিছু ক্যান্টিন রয়েছে। ফুটপাতগুলোতে অসংখ্য ভ্রাম্যমাণ দোকান বসে। আদালতের নিরাপত্তার স্বার্থেই এগুলো সরিয়ে ফেলা উচিত। ইতিমধ্যে বিচারকদের সঙ্গে আমাদের এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আসলে দেশের সব ক্ষেত্রে এখন দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ছে। আদালতও এর বাইরে নেই। অথচ আদালতের পরিবেশ থাকবে আদালতের মতো। কিন্তু শুধু ঢাকা নয়, দেশের অধস্তন আদালতের কোথাও এখন সেটি নেই। যে কারণে আদালতের পরিবেশ ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। এটি আইন ও বিচার অঙ্গনের জন্য শোভন হবে না।
ডিএমপির উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন বিভাগ) মো. জসিম উদ্দীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের ৪০০ পুলিশ সদস্য রয়েছেন। আসামিদের হাজিরা নিশ্চিত করা, হাজিরা শেষে ফেরত পাঠানোসহ শুনানি কাজে আদালতকে সহযোগিতা করাই আমাদের কাজ। আদালত অঙ্গনের নিরাপত্তা, দোকান, হকার এসব বিষয় দেখে স্থানীয় থানা, আদালত ও আইনজীবী সমিতি।’
চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আরেক পুলিশ সুপারকে (এসপি) অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ গত ১৬ নভেম্বর এক আদেশে পুলিশ সুপার ব্যারিস্টার মো. জিল্লুর রহমানকে অবসরে পাঠালেও জননিরাপত্তা বিভাগের ওয়েবসাইটে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে গত রবিবার।
পুলিশের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ঢাকার ট্রাফিক অ্যান্ড ড্রাইভিং স্কুলের (টিডিএস) অতিরিক্ত কমান্ড্যান্ট জিল্লুর রহমানকে ‘জনস্বার্থে’ বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে আদেশে। সাম্প্রতিক সময়ে এ নিয়ে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের মোট সাত কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার। এর মধ্যে দুজন অতিরিক্ত ডিআইজি ও পাঁচজন পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার কর্মকর্তা।
জিল্লুর রহমানকে অবসরে পাঠানোর প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের সদস্য অতিরিক্ত কমান্ড্যান্ট (পুলিশ সুপার) ব্যারিস্টার মো. জিল্লুর রহমানকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ (২০১৮ সালের ৫৭ নম্বর আইন) এর ৪৫ ধারার বিধান অনুযায়ী জনস্বার্থে সরকারি চাকরি থেকে অবসর দেওয়া হলো। জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। সরকারি চাকরি আইনের ৪৫ নম্বর ধারায় বলা আছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর যেকোনো সময় সরকার জনস্বার্থে প্রয়োজনীয় মনে করলে কোনো কারণ না দেখিয়ে তাকে চাকরি থেকে অবসর প্রদান করতে পারবে। তবে শর্ত থাকে যে, যেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি নিয়োগকারী কর্র্তৃপক্ষ, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার পশ্চিমে মহেশখালীর মাতারবাড়ী ও ধলঘাট ইউনিয়নের সাগর উপকূল। সাগরের সুনীল জলরাশি থেকে উপকূলের দিকে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ, ৩৫০ মিটার চওড়া ও ১৬ মিটার গভীর চ্যালেন ঢুকেছে। সেই চ্যানেলের শেষ মাথায় নির্মাণ করা হয়েছে জাহাজ ভেড়ানোর জেটি। ইতিমধ্যে সেই জেটিতে মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আনা পণ্য খালস করে গেছে শতাধিক জাহাজ। তবে ওই এলাকা ঘিরে সরকারের যে মহাপরিকল্পনা তার পুরোপুরি সুফল পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েক বছর। এখনো শুরু হয়নি সমুদ্রবন্দরের টার্মিনাল বা কোনো অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। অবশ্য কর্র্তৃপক্ষের আশা, আগামী বছরের এপ্রিলে শুরু হবে কাক্সিক্ষত টার্মিনাল নির্মাণের কাজ আর তা হবে প্রকল্প মেয়াদের নির্ধারিত সময়েই।
সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, মাতারবাড়ীকে কেন্দ্র করে যে বিশাল বিনিয়োগ পরিকল্পনা করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন হলে দেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে যাবে। এখানে উন্নত যোগাযোগ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, বন্দর, পর্যটনসহ বিভিন্ন খাত নতুন করে স্থাপন করা হচ্ছে। এতে শিল্পের উৎপাদন বাড়ানো, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
গত সপ্তাহে সরেজমিনে দেখা যায়, মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জেটিতে কোনো জাহাজ নেই। চ্যানেলের নীল জলরাশির বুকে চলাচল করছে বন্দরের টাগবোট (ছোট জাহাজ)। শ্রমিকরা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় স্থাপনা নির্মাণের কাজ করছেন। কিন্তু গভীর সমুদ্রবন্দরের টার্মিনাল নির্মাণ ও চ্যানেল (জাহাজ চলাচলের পথ) চওড়া করার কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। চ্যানেলের পশ্চিম প্রান্তে গিয়ে দেখা যায়, এই অংশে এখনো মাটি রয়েছে; অর্থাৎ কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় চ্যানেলের চওড়া ২৫০ মিটার ছিল, কিন্তু বন্দর নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় তা আরও ১০০ মিটার বাড়িয়ে ৩৫০ মিটারে উন্নীতকরণের কথা ছিল, তা হয়নি। তবে সাগরের দিকে অগ্রসর হলে দেখা যায়, ওই অংশে চ্যানেল চওড়া করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সাগর থেকে জেটির দিকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার এলাকায় চ্যানেলটি ১০০ মিটার চওড়া করে ৩৫০ মিটারে উন্নীত করেছি। শুধু কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জেটির পাশের কিছু অংশে চওড়া করা হয়নি। এ অংশের মাটি টার্মিনাল নির্মাণের আওতায় উঠিয়ে নেওয়া হবে এবং চওড়া বর্ধিত করা হবে।’
কিন্তু টার্মিনাল নির্মাণ কিংবা চ্যানেলের গভীরতা ১৮ মিটারে উন্নীতকরণের কাজ কবে নাগাদ হবে জানতে চাইলে বন্দর কর্র্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘আগামী এপ্রিলের মধ্যে টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। প্রথম দফায় ডাকা দরপত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাড়া কম পাওয়ায় দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এই দরপত্রে শিগগিরই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হবে এবং বাস্তবিক অর্থে আগামী এপ্রিলে কাজ শুরু হবে।’
চ্যানেলে কত মিটার ড্রাফটের জাহাজ চলাচল করবে? এমন প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার আরিফুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদ্যমান চ্যানেল দিয়ে এখন ৮ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ছে জেটিতে। তবে আগামীতে ১৬ মিটার ড্রাফটের বেশি জাহাজ ভিড়বে। আর এতেই গভীর সমুদ্রবন্দরের সুবিধা পাওয়া যাবে।’
বন্দরের জেটি কোন দিকে হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাগরের প্রান্তের খালি জায়গায় হবে বন্দরের টার্মিনাল ও জেটি। পণ্য নিয়ে আসা জাহাজগুলো এই অংশে ভিড়বে।’
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প নেয় সরকার। জাইকার অর্থায়নে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে মাতারবাড়ী পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ, ১৬ মিটার ড্রাফট (গভীরতা) এবং ২৫০ মিটার চওড়া চ্যানেল নির্মাণ হয় বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায়। ইতিমধ্যে ১৪ মিটার ড্রাফট করাও হয়েছে। তবে ‘মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’-এর আওতায় ড্রাফট ১৬ মিটারে উন্নীত করা হবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষ কর্র্তৃক নির্মিত এই প্রকল্পের বাজেট ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ ১৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে জাইকার ঋণ ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ ৫ হাজার টাকা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের (নিজস্ব তহবিল) ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা এবং বাংলাদেশ সরকারের ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। দেশে দিন দিন আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৯২ শতাংশ পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে। কিন্তু এখানে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে বড় জাহাজ ভিড়তে পারে না। এই বন্দরের সর্বোচ্চ গভীরতা ৯ দশমিক ৫ মিটার। তাই বড় দৈর্ঘ্য ও বেশি ড্রাফটের জাহাজ ভেড়াতে মাতারবাড়ীর বিকল্প নেই। মাতারবাড়ী চালু হলে এর সঙ্গে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দরের মধ্যে নেটওয়ার্ক আরও বাড়বে। কারণ বড় জাহাজগুলো মাতারবাড়ীতে পণ্য নিয়ে আসবে। সেখান থেকে ছোট জাহাজে করে দেশের অন্যান্য বন্দরে পণ্য পরিবহন অনেক সহজ হবে।
ঢাকার আদালত থেকে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলাজনিত কারণে পুলিশের পাঁচ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে ঊর্ধ্বতন কারোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের পর গতকাল পুলিশ সদর দপ্তর আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। থানায় দায়ের হওয়া মামলাটি তদন্ত করছে সিটিটিসি। পালিয়ে যাওয়ার সময় ফেলে যাওয়া মোটরসাইকেলের মালিককে শনাক্ত করা হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের প্রধান মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ জিয়াউল হকের পরিকল্পনায় আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। মোটরসাইকেলের মালিক পুরান ঢাকার এক বাসিন্দা। তবে ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গিরা এখনো ধরা না পড়লেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দাবি করছে, তারা নজরদারিতেই রয়েছে। রাজধানীর আদালতপাড়া থেকে শুরু করে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোর সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গিসহ তাদের সহযোগীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
সোমবার সন্ধ্যায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তার সঙ্গে আরও কারা কারা ছিল, এ রকম বেশ কয়েকজনের নাম আমরা পেয়েছি। কিন্তু এই মুহূর্তে তদন্তের স্বার্থে ব্যক্তির নাম-পরিচয় আমরা বলতে চাচ্ছি না।’
পুলিশের ৫ সদস্য সাময়িক বহিষ্কার : আদালতপাড়া থেকে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দায়িত্বরত পাঁচ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগ। সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) প্রসিকিউশন বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সাময়িক বরখাস্ত পুলিশ সদস্যরা হচ্ছেন সিএমএম আদালতের হাজতখানার কোর্ট ইন্সপেক্টর মতিউর রহমান, হাজতখানার ইনচার্জ (এসআই) নাহিদুর রহমান ভূঁইয়া, আসামিদের আদালতে নেওয়ার দায়িত্বরত পুলিশের এটিএসআই মহিউদ্দিন, কনস্টেবল শরিফ হাসান ও আব্দুস সাত্তার।
ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, আদালতপাড়া থেকে ছিনিয়ে নেওয়া মৃতুদ-প্রাপ্ত দুই জঙ্গিসহ তাদের সহযোগীদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যেকোনো সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। এ ছাড়া জঙ্গিদের আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। জঙ্গি ছিনতাইয়ের মামলায় ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া ১২ জন আসামির ১০ জনকে ১০ দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে সতর্ক অবস্থানে আছে পুলিশ। তিনি বলেন, ‘আইনজীবীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ছাড়া জঙ্গি আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে টহল জোরদার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
জঙ্গি ছিনতাইয়ের মোটরসাইকেল উদ্ধার : জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল পুরান ঢাকার হাসান আল মামুনের। রবিবার দুপুরে দুই জঙ্গি আসামিকে ছিনিয়ে নিতে দুটি মোটরসাইকেল আদালত প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়েছিল। এ সময় ওই মোটরসাইকেল দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে আদালতের প্রধান ফটকের সামনে দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে তাড়াহুড়ো করে পালানোর সময় একটি মোটরসাইকেল ফেলেই চলে যায় জঙ্গিরা। ঘটনার দিন পুলিশ সেই মোটরসাইকেলটি কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায়। পুলিশ জব্দ তালিকায় তা রেখেছে। বিআরটিএ জানায়, ঢাকা মেট্রো-ল-৩১-৫৭১০ নম্বরের ওই মোটরসাইকেলটি ১৬০ সিসির হোন্ডা ব্র্যান্ডের হরনেট মডেলের। মোটরসাইকেলটির নিবন্ধন হাসান আল মামুন নামে এক যুবকের। তিনি পুরান ঢাকার বাসিন্দা। মোটরসাইকেলটির রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি। গাড়িটির ইঞ্জিন নম্বর কেসি৩৯ইএ০০০ এবং চেসিস নম্বর পিএস০কেসি ৩৯৯০কেএইচ। রেজিস্ট্রেশন আইডি ৬২-৩৮৪৪৫৯১। হাসান আল মামুনকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত কমিটির ঘটনাস্থল পরিদর্শন : ডিএমপির পর পুলিশ সদর দপ্তর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশ হেড কোয়ার্টারের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, সিটিটিসির যুগ্ম কমিশনার এ এইচ এম কামরুজ্জামানসহ কমিটির অন্য সদস্যরা। তাদের সঙ্গে রয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) প্রসিকিউশন বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দিন। কমিটির সদস্যরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান ফটক, সিএমএম আদালতের হাজতখানা, ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধ ট্রাইব্যুনালসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দিন বলেন, তদন্তের কাজে সার্বিক বিষয় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এদিকে এ ঘটনার পর আদালতপাড়ায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থায় আসামিদের আদালতের এজলাসে তোলা হচ্ছে।
গাজীপুরে আদালত, কারাগারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা জোরদারের ব্যবস্থা : সোমবার থেকে গাজীপুর আদালত এলাকা এবং কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। গতকাল কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকে দেখা গেছে, প্রধান ফটকে অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কারাগারের প্রধান ফটকে গিয়ে আরপি চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা কারারক্ষীদের ব্যাপক তৎপরতা দেখা গেছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে জনবলও বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ছাড়া গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন কারাগার এলাকা কঠোর নজরদারিতে রাখছেন। আদালতে আসা বিচার প্রার্থীসহ সব শ্রেণির লোকদের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গার সীমান্ত এলাকাগুলোতে বিজিবির বাড়তি সতর্কতা : চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, দুই জঙ্গির ছবি ও ঠিকানা পাঠানো হয়েছে জয়নগর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুলিশের কাছে। বিজিবির ৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শাহ মো. ইশতিয়াক জানান, দুই জঙ্গি যেন সীমান্ত দিয়ে পালাতে না পারে, সে জন্য গতকাল বিকেলে বিজিবি সদর দপ্তর থেকে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর জন্য নির্দেশনা আসে। জেলার সব সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে।
বেনাপোল বন্দর এবং সীমান্তে ‘রেড অ্যালার্ট’ : শার্শা (যশোর) প্রতিনিধি জানান, যশোর সীমান্তে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন ও যশোর সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতার পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
আখাউড়া সীমান্তে সতর্কতা : আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি জানান, আখাউড়া স্থলবন্দর পুলিশ ইতিমধ্যেই ওই দুই জঙ্গিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। বিজিবির প্রতিটি বর্ডার পোস্টে সতর্ক থাকার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ দেওয়ান মোর্শেদুল হক জানান, ওই দুই জঙ্গির ছবি ও ঠিকানা তাদের দেওয়া হয়েছে। তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তাদের ছবি ইমিগ্রেশন কক্ষে সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সরকারের আমদানি ব্যয় মেটাতে গতকাল সোমবার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে আরও ৭ কোটি ১০ লাখ ডলার সরবরাহ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ৫৫৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার সরবরাহ করা হয়েছে। এতে প্রভাব পড়েছে রিজার্ভে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে বর্তমানে রিজার্ভে রয়েছে ৩৪ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। তবে আইএমএফের হিসাব মূল্যায়ন করলে তা দাঁড়াবে ২৫ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারে। এটি গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রিজার্ভ ছিল ২৫ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশে প্রতি মাসে আমদানির জন্য ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করছে সরকার। অর্থাৎ এখন যে পরিমাণ রিজার্ভ আছে তা দিয়ে সাড়ে তিন মাসের আমদানি দায় পরিশোধ করা যাবে। যদিও রিজার্ভ সব সময় সব আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় না। আর সরকারিভাবে অতি প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চলতি অর্থবছরের প্রথম দিকে আমদানি অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেলে দেশে ডলার সংকট দেখা দেয়। এতে রিজার্ভেও টান পড়ে। পরে আমদানি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে কমতে থাকে আমদানি খরচ। তবে বাকি বা দেরিতে পরিশোধের শর্তে আগের খোলা এলসির দায় এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় কমেনি। যে কারণে দিন দিন ডলারের সংকট বাড়ছে। চাপে পড়ছে অর্থনীতি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি মাসের ২১ দিনে ৯৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার বেশি বিক্রি করা হয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ২১ নভেম্বর পর্যন্ত এর পরিমাণ ৫৫৬ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। আর গত ২১ অক্টোবরে ডলার বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪১০ কোটি ডলার। সে হিসাবে এক মাসে ডলার বিক্রি বেড়েছে ১৪৬ কোটি ডলার। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে রেকর্ড ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এদিকে ডলার সংকটের কারণে আমদানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন পণ্যের এলসি খুলতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আর বৈদেশিক বাণিজ্যে পাওনা পরিশোধেও ব্যর্থ হচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। গত রবিবার বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, ডলার সংকটের কারণে বিভিন্ন শিপিং লাইনের ১৫ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স মুলতবি থাকায় ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু এ অর্থ পাঠাতে না পারলে সাপ্লাই চেইন প্রক্রিয়া ভেঙে পড়বে।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
অপারেশন ছাড়াই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আব্দুল মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক মানসিক রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করেছেন চিকিৎসক।
এ কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। তাদের এই সাফল্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, তার ছেলে মোতালেব খুব ভাল ছাত্র ছিল। ২টি লেটার মার্ক নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর খারাপ সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলি খাদ্য মনে করে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। গত এক বছর ধরে তার শরীরে জ্বর ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছিল না। অবশেষে গত ১৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখানে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার অসুখের কারণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকরা তার পেটের ভিতর থেকে বিনা অপারেশনে কলমগুলো বের করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব হোসেন প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ফলে রোগীটিকে আমার কাছে রেফার্ড করেন। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, কাজটি আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। বর্তমানে রোগীটি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দু‘টি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।