
সরকারের আমদানি ব্যয় মেটাতে গতকাল সোমবার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে আরও ৭ কোটি ১০ লাখ ডলার সরবরাহ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ৫৫৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার সরবরাহ করা হয়েছে। এতে প্রভাব পড়েছে রিজার্ভে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে বর্তমানে রিজার্ভে রয়েছে ৩৪ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। তবে আইএমএফের হিসাব মূল্যায়ন করলে তা দাঁড়াবে ২৫ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারে। এটি গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রিজার্ভ ছিল ২৫ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশে প্রতি মাসে আমদানির জন্য ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করছে সরকার। অর্থাৎ এখন যে পরিমাণ রিজার্ভ আছে তা দিয়ে সাড়ে তিন মাসের আমদানি দায় পরিশোধ করা যাবে। যদিও রিজার্ভ সব সময় সব আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় না। আর সরকারিভাবে অতি প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চলতি অর্থবছরের প্রথম দিকে আমদানি অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেলে দেশে ডলার সংকট দেখা দেয়। এতে রিজার্ভেও টান পড়ে। পরে আমদানি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে কমতে থাকে আমদানি খরচ। তবে বাকি বা দেরিতে পরিশোধের শর্তে আগের খোলা এলসির দায় এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় কমেনি। যে কারণে দিন দিন ডলারের সংকট বাড়ছে। চাপে পড়ছে অর্থনীতি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি মাসের ২১ দিনে ৯৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার বেশি বিক্রি করা হয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ২১ নভেম্বর পর্যন্ত এর পরিমাণ ৫৫৬ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। আর গত ২১ অক্টোবরে ডলার বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪১০ কোটি ডলার। সে হিসাবে এক মাসে ডলার বিক্রি বেড়েছে ১৪৬ কোটি ডলার। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে রেকর্ড ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এদিকে ডলার সংকটের কারণে আমদানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন পণ্যের এলসি খুলতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আর বৈদেশিক বাণিজ্যে পাওনা পরিশোধেও ব্যর্থ হচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। গত রবিবার বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, ডলার সংকটের কারণে বিভিন্ন শিপিং লাইনের ১৫ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স মুলতবি থাকায় ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু এ অর্থ পাঠাতে না পারলে সাপ্লাই চেইন প্রক্রিয়া ভেঙে পড়বে।
ঢাকার আদালত থেকে রবিবার জঙ্গি ছিনতাইয়ের পর প্রশ্ন উঠেছে আদালত পাড়ার নিরাপত্তা নিয়ে। রাজধানীর পুরান ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার নিম্ন আদালতে প্রতিদিন হাজার হাজার আসামি ও বিচারপ্রার্থীর সমাগম ঘটে। এদের মধ্যে জঙ্গি-দুর্ধর্ষ খুনের মামলার আসামিও থাকেন। ফলে কে আসামি কে বাদী তা আলাদা করার সুযোগ থাকে না। থাকেন ১৭ হাজার আইনজীবী। মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রায়ই বাদী-বিবাদী পক্ষের মধ্যে বাগ্বিত-া, হাতাহাতিসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে। এই ভিড়বাট্টার মধ্যে গত ১৯ মাসে মৃত্যুদ ন্ড প্রাপ্ত তিনজনসহ পাঁচজন আসামি পালিয়েছেন পুলিশের হেফাজত থেকে। গত রবিবার সিজেএম আদালতের সামনে থেকে দুই জঙ্গি ছিনতাই অরক্ষিত ও অপ্রতুল নিরাপত্তারই প্রতিফলন। যদিও জঙ্গি ছিনতাইয়ের পর আদালতের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। কিন্তু আদালত প্রাঙ্গণের সার্বিক পরিস্থিতি আছে আগের মতোই।
২০১৯ সালের ১৬ জুলাই কুমিল্লার তৃতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে একটি হত্যা মামলায় হাজিরার দিন আদালতে বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের সামনেই এক আসামি হাসান অতর্কিতে ছুরি চালিয়ে হত্যা করেন একই মামলার আরেক আসামি ফারুককে। ঘটনাটি তখন দেশজুড়ে বেশ আলোচনায় আসে। উচ্চ আদালত, ঢাকার আদালত এলাকাসহ দেশের সব অধস্তন আদালতে নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা। কিন্তু সেই নিরাপত্তাব্যবস্থা শিথিল হতে সময় লাগেনি। আদালতের মতো স্পর্শকাতর স্থানে খুন, ফাঁসির আসামির পলায়ন, বিচারকের ওপর হামলার চেষ্টা, বাদীপক্ষের ওপর আসামিপক্ষের হামলার মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাও থামেনি।
এই নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানা থেকে কৌশলে পালিয়ে যান হারুনুর রশিদ নামে ডাকাতি মামলার এক আসামি। চলতি বছরের ২৩ মার্চ সিএমএম আদালত এলাকার হাজতখানা থেকে পালিয়েছেন সাইফুল ইসলাম নামে মাদক মামলার এক আসামি। আর গত ২৮ এপ্রিল ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতের হাজতখানা থেকে পালিয়ে যান হত্যা মামলায় ফাঁসির আসামি বাদশা মিয়া। অন্য একটি হত্যা মামলায় হাজিরা দেওয়ার জন্য তাকে আনা হয়েছিল আদালতে। নিরাপত্তার শিথিলতায় একের পর এক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী ও আদালত সংশ্লিষ্টরা হতবাক। আইনজীবীরা বলেন, নিরাপত্তাসহ নানা কারণে এখানে আদালতের পরিবেশ বলতে যা বোঝায় সেটি অনেক সময়ই থাকে না।
গত রবিবার দুপুরে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম (সিজেএম) আদালত এলাকায় পুলিশের ওপর পিপার স্প্রে করে ছিনিয়ে নেওয়া হয় অভিজিত রায় ও প্রকাশক ফয়সল আরেফীন দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে। ওই দিন সিজেএম আদালতে ভবনে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে তাদের অন্য একটি মামলায় হাজিরার জন্য আনা হয়েছিল। এই ছিনতাইয়ের ঘটনার পর নিরাপত্তা জোরদার করা হয় আদালত প্রাঙ্গণের।
কিন্তু গতকাল ঢাকা মহানগর দায়রা আদালত, সিজেএম আদালত, সিএমএম (মুখ্য মহানগর হাকিম) আদালত ঘুরে দেখা বাড়তি নিরাপত্তার কিছু চোখে পড়েনি। এখানে সেখানে দেদার চলছে ভ্রাম্যমাণ দোকান। আদালতের বিভিন্ন করিডরে হকার ও ফকিরের অবাধ আনাগোনা। আসামিকে হাজির করা কিংবা হাজিরা দেওয়া হয় এমন আদালতগুলোর সামনের অবস্থা আরও বেশি বিশৃঙ্খল। আদালতগুলোতে প্রবেশে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ঘাটতিসহ সিসি ক্যামেরার অপ্রতুলতা তো আছেই।
গতকাল সিএমএম ভবনের পঞ্চম তলায় আদালতের করিডরের সামনে পেয়ারা, চা, সিগারেটের ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে ভিড় চোখে পড়ে। নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশও এ বিষয়ে কিছুই বলছে না। আদালত এলাকার সরু গলিগুলোর ফুটপাতে মাছ, মাংস থেকে শুরু করে নিত্যপণ্য সবই বিক্রি হয় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি আজাদ রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এজলাস থেকে বেরুলে মনে হয় বাজারের মধ্যে আছি। আদালতের এই পরিবেশকে কোনোভাবেই স্বাভাবিক বলা যাবে না। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও পুলিশের তেমন তৎপরতা চোখে পড়ে না। ফলে দিনের পর দিন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটছেই।’
অকুস্থলে যা দেখা গেল : রবিবার ঢাকার আদালত এলাকার যেখান থেকে (সিজেএম ভবন এলাকা) দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয় গতকাল সেখানে গিয়ে দেখা যায় অনেক মানুষের জটলা। আদালতে আসা মানুষদের ওপর নেই কোনো কঠোর নজরদারি কিংবা তল্লাশি। পুলিশ ও গোয়েন্দারা সতর্ক অবস্থানে থাকলেও অন্যদিনের মতোই পরিস্থিতি স্বাভাবিক। প্রতিদিনের মতোই বসেছে চা, সিগারেট, পেয়ারা, পেঁপে, বই এমনকি ব্লাড সুগার ও রক্তচাপ পরীক্ষা করার অন্তত ১৫টি ভ্রাম্যমাণ দোকান। এখানে সেখানে ছড়িয়ে রয়েছে পার্কিং করা গাড়ি যার সবই ব্যক্তিগত। ভবনের নিচতলা ও পাশের ভবনে দুটি সিসি ক্যামেরা চোখে পড়ে।
নাম না প্রকাশের শর্তে একজন আইনজীবী বলেন, ‘এখানে একটি সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। প্রতিটি কর্মদিবসে এই আদালতে দুর্ধর্ষ সব আসামিকে হাজির করা হয়। প্রতিদিনই এখানে আইনজীবীসহ শত শত মানুষের আনাগোনা থাকে। পরিস্থিতি দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে দুদিন আগে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার মতো বড় একটি ঘটনা ঘটেছে।’
ঘুপচি গলির ছোট এলাকায় আদালত নিয়ে অস্বস্তি আইনজীবীদের : ডিএমপির (ঢাকা মহানগর পুলিশ) প্রসিকিউশন বিভাগ বলছে, ঢাকা মহানগর দায়রা আদালত, ঢাকা জেলা আদালত, সিজেএম আদালত, সিএমএম আদালতের ভবনগুলোতে বিচারকাজের এজলাস রয়েছে ১২৭টি। অন্যদিকে ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারা বলেন, প্রায় ২৭ হাজার আইনজীবী আছেন সমিতিতে। এদের মধ্যে অন্তত ১৫ হাজার আইনজীবী নিয়মিত আদালতে মামলা পরিচালনা করেন। এর বাইরে বিচারপ্রার্থী, আসামি মিলিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিটি কর্মদিবসে হাজার হাজার মানুষের সমাগম থাকে আদালত এলাকায়। সব মিলিয়ে পুরান ঢাকার আদালত এলাকার যে পরিবেশ তাতে আইনজীবীদের অনেকের রয়েছে অস্বস্তি।
ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতের প্রধান কৌঁসুলি আব্দুল্লাহ আবু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আসলে যে ঘটনাটি (জঙ্গি ছিনতাই) ঘটেছে সেটি একেবারেই অনাকাক্সিক্ষত ও আকস্মিক। আমরা সবাই হতবাক হয়েছি। এ ঘটনা আসলেই আতঙ্কের।’ তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এখানে আদালত অঙ্গনটির উপযুক্ত জায়গা নয়। আশপাশে বাড়িঘর ও অসংখ্য গলি রয়েছে। দুর্বৃত্তরা ঘটনা ঘটিয়েই খুব সহজে মানুষের সঙ্গে মিশে যায়। যদি এটি কোনো সংরক্ষিত জায়গায় হতো তাহলে পালিয়ে যেত পারত না।’ ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এমনিতেই এটি জনবহুল এলাকা। হাজার হাজার মানুষের সমাগম। বিভিন্ন সমিতির নামে এখানে কিছু ক্যান্টিন রয়েছে। ফুটপাতগুলোতে অসংখ্য ভ্রাম্যমাণ দোকান বসে। আদালতের নিরাপত্তার স্বার্থেই এগুলো সরিয়ে ফেলা উচিত। ইতিমধ্যে বিচারকদের সঙ্গে আমাদের এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আসলে দেশের সব ক্ষেত্রে এখন দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ছে। আদালতও এর বাইরে নেই। অথচ আদালতের পরিবেশ থাকবে আদালতের মতো। কিন্তু শুধু ঢাকা নয়, দেশের অধস্তন আদালতের কোথাও এখন সেটি নেই। যে কারণে আদালতের পরিবেশ ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। এটি আইন ও বিচার অঙ্গনের জন্য শোভন হবে না।
ডিএমপির উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন বিভাগ) মো. জসিম উদ্দীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের ৪০০ পুলিশ সদস্য রয়েছেন। আসামিদের হাজিরা নিশ্চিত করা, হাজিরা শেষে ফেরত পাঠানোসহ শুনানি কাজে আদালতকে সহযোগিতা করাই আমাদের কাজ। আদালত অঙ্গনের নিরাপত্তা, দোকান, হকার এসব বিষয় দেখে স্থানীয় থানা, আদালত ও আইনজীবী সমিতি।’
চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আরেক পুলিশ সুপারকে (এসপি) অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ গত ১৬ নভেম্বর এক আদেশে পুলিশ সুপার ব্যারিস্টার মো. জিল্লুর রহমানকে অবসরে পাঠালেও জননিরাপত্তা বিভাগের ওয়েবসাইটে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে গত রবিবার।
পুলিশের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ঢাকার ট্রাফিক অ্যান্ড ড্রাইভিং স্কুলের (টিডিএস) অতিরিক্ত কমান্ড্যান্ট জিল্লুর রহমানকে ‘জনস্বার্থে’ বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে আদেশে। সাম্প্রতিক সময়ে এ নিয়ে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের মোট সাত কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার। এর মধ্যে দুজন অতিরিক্ত ডিআইজি ও পাঁচজন পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার কর্মকর্তা।
জিল্লুর রহমানকে অবসরে পাঠানোর প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের সদস্য অতিরিক্ত কমান্ড্যান্ট (পুলিশ সুপার) ব্যারিস্টার মো. জিল্লুর রহমানকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ (২০১৮ সালের ৫৭ নম্বর আইন) এর ৪৫ ধারার বিধান অনুযায়ী জনস্বার্থে সরকারি চাকরি থেকে অবসর দেওয়া হলো। জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। সরকারি চাকরি আইনের ৪৫ নম্বর ধারায় বলা আছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর যেকোনো সময় সরকার জনস্বার্থে প্রয়োজনীয় মনে করলে কোনো কারণ না দেখিয়ে তাকে চাকরি থেকে অবসর প্রদান করতে পারবে। তবে শর্ত থাকে যে, যেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি নিয়োগকারী কর্র্তৃপক্ষ, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার পশ্চিমে মহেশখালীর মাতারবাড়ী ও ধলঘাট ইউনিয়নের সাগর উপকূল। সাগরের সুনীল জলরাশি থেকে উপকূলের দিকে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ, ৩৫০ মিটার চওড়া ও ১৬ মিটার গভীর চ্যালেন ঢুকেছে। সেই চ্যানেলের শেষ মাথায় নির্মাণ করা হয়েছে জাহাজ ভেড়ানোর জেটি। ইতিমধ্যে সেই জেটিতে মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আনা পণ্য খালস করে গেছে শতাধিক জাহাজ। তবে ওই এলাকা ঘিরে সরকারের যে মহাপরিকল্পনা তার পুরোপুরি সুফল পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েক বছর। এখনো শুরু হয়নি সমুদ্রবন্দরের টার্মিনাল বা কোনো অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। অবশ্য কর্র্তৃপক্ষের আশা, আগামী বছরের এপ্রিলে শুরু হবে কাক্সিক্ষত টার্মিনাল নির্মাণের কাজ আর তা হবে প্রকল্প মেয়াদের নির্ধারিত সময়েই।
সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, মাতারবাড়ীকে কেন্দ্র করে যে বিশাল বিনিয়োগ পরিকল্পনা করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন হলে দেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে যাবে। এখানে উন্নত যোগাযোগ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, বন্দর, পর্যটনসহ বিভিন্ন খাত নতুন করে স্থাপন করা হচ্ছে। এতে শিল্পের উৎপাদন বাড়ানো, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
গত সপ্তাহে সরেজমিনে দেখা যায়, মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জেটিতে কোনো জাহাজ নেই। চ্যানেলের নীল জলরাশির বুকে চলাচল করছে বন্দরের টাগবোট (ছোট জাহাজ)। শ্রমিকরা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় স্থাপনা নির্মাণের কাজ করছেন। কিন্তু গভীর সমুদ্রবন্দরের টার্মিনাল নির্মাণ ও চ্যানেল (জাহাজ চলাচলের পথ) চওড়া করার কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। চ্যানেলের পশ্চিম প্রান্তে গিয়ে দেখা যায়, এই অংশে এখনো মাটি রয়েছে; অর্থাৎ কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় চ্যানেলের চওড়া ২৫০ মিটার ছিল, কিন্তু বন্দর নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় তা আরও ১০০ মিটার বাড়িয়ে ৩৫০ মিটারে উন্নীতকরণের কথা ছিল, তা হয়নি। তবে সাগরের দিকে অগ্রসর হলে দেখা যায়, ওই অংশে চ্যানেল চওড়া করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সাগর থেকে জেটির দিকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার এলাকায় চ্যানেলটি ১০০ মিটার চওড়া করে ৩৫০ মিটারে উন্নীত করেছি। শুধু কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জেটির পাশের কিছু অংশে চওড়া করা হয়নি। এ অংশের মাটি টার্মিনাল নির্মাণের আওতায় উঠিয়ে নেওয়া হবে এবং চওড়া বর্ধিত করা হবে।’
কিন্তু টার্মিনাল নির্মাণ কিংবা চ্যানেলের গভীরতা ১৮ মিটারে উন্নীতকরণের কাজ কবে নাগাদ হবে জানতে চাইলে বন্দর কর্র্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘আগামী এপ্রিলের মধ্যে টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। প্রথম দফায় ডাকা দরপত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাড়া কম পাওয়ায় দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এই দরপত্রে শিগগিরই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হবে এবং বাস্তবিক অর্থে আগামী এপ্রিলে কাজ শুরু হবে।’
চ্যানেলে কত মিটার ড্রাফটের জাহাজ চলাচল করবে? এমন প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার আরিফুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদ্যমান চ্যানেল দিয়ে এখন ৮ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ছে জেটিতে। তবে আগামীতে ১৬ মিটার ড্রাফটের বেশি জাহাজ ভিড়বে। আর এতেই গভীর সমুদ্রবন্দরের সুবিধা পাওয়া যাবে।’
বন্দরের জেটি কোন দিকে হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাগরের প্রান্তের খালি জায়গায় হবে বন্দরের টার্মিনাল ও জেটি। পণ্য নিয়ে আসা জাহাজগুলো এই অংশে ভিড়বে।’
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প নেয় সরকার। জাইকার অর্থায়নে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে মাতারবাড়ী পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ, ১৬ মিটার ড্রাফট (গভীরতা) এবং ২৫০ মিটার চওড়া চ্যানেল নির্মাণ হয় বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায়। ইতিমধ্যে ১৪ মিটার ড্রাফট করাও হয়েছে। তবে ‘মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’-এর আওতায় ড্রাফট ১৬ মিটারে উন্নীত করা হবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষ কর্র্তৃক নির্মিত এই প্রকল্পের বাজেট ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ ১৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে জাইকার ঋণ ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ ৫ হাজার টাকা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের (নিজস্ব তহবিল) ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা এবং বাংলাদেশ সরকারের ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। দেশে দিন দিন আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৯২ শতাংশ পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে। কিন্তু এখানে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে বড় জাহাজ ভিড়তে পারে না। এই বন্দরের সর্বোচ্চ গভীরতা ৯ দশমিক ৫ মিটার। তাই বড় দৈর্ঘ্য ও বেশি ড্রাফটের জাহাজ ভেড়াতে মাতারবাড়ীর বিকল্প নেই। মাতারবাড়ী চালু হলে এর সঙ্গে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দরের মধ্যে নেটওয়ার্ক আরও বাড়বে। কারণ বড় জাহাজগুলো মাতারবাড়ীতে পণ্য নিয়ে আসবে। সেখান থেকে ছোট জাহাজে করে দেশের অন্যান্য বন্দরে পণ্য পরিবহন অনেক সহজ হবে।
ঢাকার আদালত থেকে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলাজনিত কারণে পুলিশের পাঁচ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে ঊর্ধ্বতন কারোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের পর গতকাল পুলিশ সদর দপ্তর আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। থানায় দায়ের হওয়া মামলাটি তদন্ত করছে সিটিটিসি। পালিয়ে যাওয়ার সময় ফেলে যাওয়া মোটরসাইকেলের মালিককে শনাক্ত করা হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের প্রধান মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ জিয়াউল হকের পরিকল্পনায় আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। মোটরসাইকেলের মালিক পুরান ঢাকার এক বাসিন্দা। তবে ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গিরা এখনো ধরা না পড়লেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দাবি করছে, তারা নজরদারিতেই রয়েছে। রাজধানীর আদালতপাড়া থেকে শুরু করে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোর সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গিসহ তাদের সহযোগীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
সোমবার সন্ধ্যায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তার সঙ্গে আরও কারা কারা ছিল, এ রকম বেশ কয়েকজনের নাম আমরা পেয়েছি। কিন্তু এই মুহূর্তে তদন্তের স্বার্থে ব্যক্তির নাম-পরিচয় আমরা বলতে চাচ্ছি না।’
পুলিশের ৫ সদস্য সাময়িক বহিষ্কার : আদালতপাড়া থেকে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দায়িত্বরত পাঁচ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগ। সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) প্রসিকিউশন বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সাময়িক বরখাস্ত পুলিশ সদস্যরা হচ্ছেন সিএমএম আদালতের হাজতখানার কোর্ট ইন্সপেক্টর মতিউর রহমান, হাজতখানার ইনচার্জ (এসআই) নাহিদুর রহমান ভূঁইয়া, আসামিদের আদালতে নেওয়ার দায়িত্বরত পুলিশের এটিএসআই মহিউদ্দিন, কনস্টেবল শরিফ হাসান ও আব্দুস সাত্তার।
ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, আদালতপাড়া থেকে ছিনিয়ে নেওয়া মৃতুদ-প্রাপ্ত দুই জঙ্গিসহ তাদের সহযোগীদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যেকোনো সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। এ ছাড়া জঙ্গিদের আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। জঙ্গি ছিনতাইয়ের মামলায় ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া ১২ জন আসামির ১০ জনকে ১০ দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে সতর্ক অবস্থানে আছে পুলিশ। তিনি বলেন, ‘আইনজীবীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ছাড়া জঙ্গি আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে টহল জোরদার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
জঙ্গি ছিনতাইয়ের মোটরসাইকেল উদ্ধার : জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল পুরান ঢাকার হাসান আল মামুনের। রবিবার দুপুরে দুই জঙ্গি আসামিকে ছিনিয়ে নিতে দুটি মোটরসাইকেল আদালত প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়েছিল। এ সময় ওই মোটরসাইকেল দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে আদালতের প্রধান ফটকের সামনে দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে তাড়াহুড়ো করে পালানোর সময় একটি মোটরসাইকেল ফেলেই চলে যায় জঙ্গিরা। ঘটনার দিন পুলিশ সেই মোটরসাইকেলটি কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায়। পুলিশ জব্দ তালিকায় তা রেখেছে। বিআরটিএ জানায়, ঢাকা মেট্রো-ল-৩১-৫৭১০ নম্বরের ওই মোটরসাইকেলটি ১৬০ সিসির হোন্ডা ব্র্যান্ডের হরনেট মডেলের। মোটরসাইকেলটির নিবন্ধন হাসান আল মামুন নামে এক যুবকের। তিনি পুরান ঢাকার বাসিন্দা। মোটরসাইকেলটির রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি। গাড়িটির ইঞ্জিন নম্বর কেসি৩৯ইএ০০০ এবং চেসিস নম্বর পিএস০কেসি ৩৯৯০কেএইচ। রেজিস্ট্রেশন আইডি ৬২-৩৮৪৪৫৯১। হাসান আল মামুনকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত কমিটির ঘটনাস্থল পরিদর্শন : ডিএমপির পর পুলিশ সদর দপ্তর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশ হেড কোয়ার্টারের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, সিটিটিসির যুগ্ম কমিশনার এ এইচ এম কামরুজ্জামানসহ কমিটির অন্য সদস্যরা। তাদের সঙ্গে রয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) প্রসিকিউশন বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দিন। কমিটির সদস্যরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান ফটক, সিএমএম আদালতের হাজতখানা, ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধ ট্রাইব্যুনালসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দিন বলেন, তদন্তের কাজে সার্বিক বিষয় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এদিকে এ ঘটনার পর আদালতপাড়ায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থায় আসামিদের আদালতের এজলাসে তোলা হচ্ছে।
গাজীপুরে আদালত, কারাগারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা জোরদারের ব্যবস্থা : সোমবার থেকে গাজীপুর আদালত এলাকা এবং কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। গতকাল কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকে দেখা গেছে, প্রধান ফটকে অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কারাগারের প্রধান ফটকে গিয়ে আরপি চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা কারারক্ষীদের ব্যাপক তৎপরতা দেখা গেছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে জনবলও বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ছাড়া গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন কারাগার এলাকা কঠোর নজরদারিতে রাখছেন। আদালতে আসা বিচার প্রার্থীসহ সব শ্রেণির লোকদের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গার সীমান্ত এলাকাগুলোতে বিজিবির বাড়তি সতর্কতা : চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, দুই জঙ্গির ছবি ও ঠিকানা পাঠানো হয়েছে জয়নগর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুলিশের কাছে। বিজিবির ৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শাহ মো. ইশতিয়াক জানান, দুই জঙ্গি যেন সীমান্ত দিয়ে পালাতে না পারে, সে জন্য গতকাল বিকেলে বিজিবি সদর দপ্তর থেকে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর জন্য নির্দেশনা আসে। জেলার সব সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে।
বেনাপোল বন্দর এবং সীমান্তে ‘রেড অ্যালার্ট’ : শার্শা (যশোর) প্রতিনিধি জানান, যশোর সীমান্তে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন ও যশোর সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতার পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
আখাউড়া সীমান্তে সতর্কতা : আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি জানান, আখাউড়া স্থলবন্দর পুলিশ ইতিমধ্যেই ওই দুই জঙ্গিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। বিজিবির প্রতিটি বর্ডার পোস্টে সতর্ক থাকার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ দেওয়ান মোর্শেদুল হক জানান, ওই দুই জঙ্গির ছবি ও ঠিকানা তাদের দেওয়া হয়েছে। তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তাদের ছবি ইমিগ্রেশন কক্ষে সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা হয়েছিল কাশিমপুর কারাগারের ভেতর থেকেই। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ছিনিয়ে নেওয়ার সময় ১৮ থেকে ২০ জন অংশ নিয়েছিল বলে ধারণা করছে পুলিশ। কিছুদিন আগেও স্বজন সেজে তারা পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের সঙ্গে দেখা করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গতকাল সব কটি কারাগারে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে বিভিন্ন সময়ে জামিন নিয়ে পলাতক জঙ্গিদের সন্ধানে মাঠে নেমেছে পুলিশের একাধিক ইউনিট। তাদের ধরতে পুলিশের ইউনিটগুলো রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। এমনকি ইন্টারপোলেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ছিনতাইকালে ব্যবহৃত পিপার স্প্রে কেবলমাত্র পুলিশ বাহিনীর কাছে থাকে। কিন্তু এটি কীভাবে জঙ্গিদের হাতে গেল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তদন্তসংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার কথা আগেই জানানো হয় কারাগারে আটক শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান ও সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবসহ চারজনকে। গত সপ্তাহের শুরুতে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে তাদের সঙ্গে দেখা করে এই পরিকল্পনার কথা জানান জঙ্গিদের দুই স্বজন। তাদের খোঁজা হচ্ছে। পাশাপাশি ঘটনার সময় তাদের কি করণীয় থাকবে তারও নির্দেশনা দেওয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী, রবিবার দুপুরে আদালতে অপারেশন চলে। জঙ্গিদের লক্ষ্য ছিল চারজনকে ছিনিয়ে নেওয়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা ইমরান ও সাকিবকে ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়। শাহিন আলম ওরফে কামাল ও শাহ আলম ওরফে সালাউদ্দিনকে ছিনিয়ে নিতে ব্যার্থ হয়। ছিনিয়ে নেওয়ার মিশনে তিন ভাগে ভাগ হয়ে অন্তত ২০ জন সদস্য অংশ নেয়। ঘটনার পর তারা জনসাধাণের সঙ্গে মিশে যায় বলে তদন্ত তদারক সূত্রে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের ব্যবহৃত পিপার স্প্রে জঙ্গিদের হাতে কীভাবে গেল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ কারণে পলওয়েল মার্কেটের কয়েকজন দোকানদারকেগোয়েন্দারা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। কারণ হাতকড়াসহ পুলিশের ব্যবহৃত সাধারণ মালামাল একমাত্র ওই মার্কেটেই পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, সেখান থেকে ক্রেতাদের একটা তালিকা পাওয়া গেলে তদন্তে তা সহায়ক হবে।
কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২-এর ডেপুটি জেল সুপার আলী আফজাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কারাগারে সব সময় নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকে। তবে রবিবারের ঘটনার পর নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে আরটি চেকপোস্টে পাঁচ-ছয়জন দায়িত্বে থাকলেও এখন ১০ জন নিয়োজিত করা হয়েছে। কারাগারে আসামি পাঠানোর ক্ষেত্রেও বিশেষ নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। রবিবার সকাল সোয়া ৬টার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সাত সদস্যকে ঢাকায় নেওয়া হয়। ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের হওয়া একটি মামলায় তাদের শুনানির দিন ধার্য ছিল।’
পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে জঙ্গির সংখ্যা প্রায় সাত হাজারের বেশি। জামিনপ্রাপ্ত জঙ্গিদের অনেকেই আবার উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছে। আবার কেউ কেউ আত্মগোপনে চলে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জামিনে থাকা জঙ্গিদের নিয়মিত আদালতে হাজিরা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা তা দিচ্ছে না। এ জন্য আমরা তাদের ধরতে পুলিশের সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার পুলিশ সুপারদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাদের ধরতে অনেকটা ইন্টারপোলের মতোই রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।’
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রপান্তরকে বলেন, ‘পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের ধরতে পুলিশের সব কটি ইউনিট কাজ করছে। যারা মাস্টারমাইন্ড, তাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। পলাতক জঙ্গিদেরও ধরার চেষ্টা চলছে। কারাগারে থাকা জঙ্গিদের বিশেষ নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।’
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘দুই জঙ্গি সদস্য ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত সবাই নজরদারিতে রয়েছে। সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। তারা যাতে পালাতে না পারে, সে জন্য ইতিমধ্যে পুলিশপ্রধান সারা দেশে রেড অ্যালার্ট জারি করেছেন। যেকোনো সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আদালত প্রাঙ্গণ, অন্যান্য জায়গা, সিসিটিভি ফুটেজ এবং বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা কার্যক্রম চলমান। একইভাবে পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গির আগের অপরাধের ধরন, তাদের আত্মীয়স্বজন, বিভিন্ন সময় চলাচলসহ সবকিছু র্যাব পর্যালোচনা করছে। পলাতক জঙ্গিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাবের সব ইউনিট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ঘাপটি মেরে থাকা জঙ্গিরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। শীর্ষ জঙ্গি বা তাদের নেতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে। জেএমবি, নব্য জেএমবি, হুজি, হিযবুত তাহরীর, আনসারউল্লাহ বাংলা টিমসহ অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর অন্তত পাঁচ শতাধিক জঙ্গি জামিনে মুক্তি পেয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তাদের মধ্যে জেএমবি, হুজি ও হিযবুত তাহরীরের সংখ্যাই বেশি। দেশি ও আন্তর্জাতিক চক্রের সহায়তা নিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা ফের সক্রিয় হয়ে উঠছে বলে তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। ইতিমধ্যে পুলিশ ও র্যাব একটি তালিকা তৈরি করেছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জামিন পাওয়া জঙ্গি নিয়ে আমরা দুশ্চিতায় আছি। তাদের আদালতে নিয়মিত হাজিরা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা তা করছে না। আর এ জন্য আমাদের সতর্কতা আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের এলাকা থেকে অর্থ আসছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যারা অর্থ পাঠাচ্ছে, তাদের পরিচয় উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।’
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।