
মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্বকাপের ফাইনালের মঞ্চটা সেজেছিল আকাশি-সাদার মিশেলে। সৌদি আরবের কাছে আর্জেন্টিনার হারে লুসাইল হয়ে যায় নীল। সে মাঠটাই কাল দখল করে নিয়েছিল হলুদ। চিরবৈরী আর্জেন্টিনার মতো ব্রাজিলকে হতাশ করেনি লুসাইল। উপস্থিত ৮০ হাজার দর্শকের সামনে নান্দনিক ফুটবলের পসরা সাজিয়ে সার্বিয়াকে সেলেসাওরা হারিয়েছে ২-০ ব্যবধানে। দ্বিতীয়ার্ধে রিচার্লিসনের চমকে মাতোয়ারা হয়ে উঠে লুসাইল। টটেনহ্যাম স্ট্রাইকার জোড়া গোলে একাই লেখেন ম্যাচের ভাগ্য।
ম্যাচটা ছিল স্থানীয় সময় রাত ১০টায়। অথচ ব্রাজিলিয়ান সমর্থকরা হাজির হতে শুরু করে দুপুর থেকেই। নেইমাররাও হতাশ করেননি। সার্বিয়াকে হয়তো গোলবন্যায় ভাসানো যায়নি। তবে গোলের জন্য তিতের তারায় ভরা অ্যাটাকিং ব্রিগেড দেখিয়েছে তাদের শক্তি। আক্রমণের সুনামি বইয়ে দিয়েছে তারা। তিতের ৪-২-৩-১ আগ্রাসী কৌশলে বাঁদিকে ভিনিসিয়ুস দিয়েছেন আস্থার প্রতিদান। রাফিনহা খেলেন ডানদিকে। নাম্বার নাইনে রিচার্লিসনকে রেখে পেছন থেকে পাকেতাকে নিয়ে আক্রমণ গুছিয়েছেন প্রাণভ্রমরা নেইমার।
তবে এ ম্যাচের নায়ক হতে পারতেন সার্বিয়ার গোলকিপার ভানিয়া মিলিনকোভিচ সেভিচ। ব্রাজিলের জোগো বনিতো থামিয়েছেন পুরো প্রথমার্ধ। কখনো হতাশ করেছেন ভিনিসিয়ুসকে। কখনো পথ আগলে দাঁড়িয়েছেন নেইমার, রিচার্লিসন, পাকেতা, কাসেমিরোর সামনে। তিনটি নিশ্চিত গোল রুখে দিয়ে ব্রাজিলকে খালিহাতে বিরতিতে পাঠান মিলিনকোভিচ। তবে ব্রাজিলের আগ্রাসনের সামনে কতক্ষণ আর প্রতিরোধ ধরে রাখা যায়? ঘড়ির কাঁটা ঘণ্টা ছুঁতেই রক্ষণ প্রাচীন ভেঙে চুরমার। অ্যালেক্স সান্দ্রোর দূর থেকে নেওয়া শট পোস্ট কাঁপাতেই যেন টলে যায় সব দৃঢ়তা। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে ৬২ মিনিটে ব্রাজিলকে এগিয়ে নেন রিচার্লিসন। আর ১০ মিনিটর পর যে গোলটি করেন, তা নির্দ্বিধায় আসরের সেরা গোলের তালিকায় থাকবে ওপরের দিকে। বাঁদিক থেকে ভিনিসিয়ুসের একটু লাফিয়ে ওঠা পাসটা প্রথমে আয়ত্তে নিলেন রিচার্লিসন, এরপর পুরো শরীর ঘুরিয়ে ডান পায়ে নেন নিশানাভেদী বাইসাইকেল শট। ব্রাজিলের এ জয়ে অন্যদের নড়েচড়ে বসতেই হচ্ছে। তিতের দলকে জয়ের নেশায় পেয়ে বসলে ১৮ ডিসেম্বরও লুসাইলে হতে পারে হলুদ উৎসব।
যশোরে জনসভায় উপস্থিত জনতার কাছে আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার ওয়াদা চাইলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যশোর আওয়ামী লীগ এই সমাবেশের আয়োজক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘আমি এটুকুই বলব, আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই, আগামী নির্বাচনেও আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন।’
যশোরের শামস-উল-হুদা স্টেডিয়ামে আয়োজিত জনসভায় যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, মাগুরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা আওয়ামী লীগের’ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। ২০১৮ সালের নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের প্রার্থীদের জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আপনাদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ কেউ রিজার্ভ নিয়ে কথা বলে। রিজার্ভ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। অনেকে বলে ব্যাংকে টাকা নেই; কেউ কেউ ব্যাংক থেকে টাকা তুলছে। ব্যাংকের টাকা তুলে ঘরে রাখলে তো চোরে নিয়ে যাবে। চোরকে সুযোগ দেওয়া কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে? ব্যাংকের টাকা নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। গতকাল আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ ব্যাংক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং করেছি। আমাদের এ বিষয়ে কোনো সমস্যা নেই। প্রত্যেকটা ব্যাংকে যথেষ্ট টাকা আছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের রেমিট্যান্স আসছে। বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আসছে। আমদানি হচ্ছে, রপ্তানিও হচ্ছে। রপ্তানি আয় বেড়েছে। আমাদের ট্যাক্স কালেকশন বেড়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অর্থনীতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে, অর্থনৈতিক মন্দায় ভুগছে। বাংলাদেশ এখনো যথেষ্ট শক্তিশালী। ধান উৎপাদনে আমরা সারা বিশ্বে তৃতীয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রিজার্ভ কোথাও যায়নি। মানুষের কাজেই লেগেছে। যুদ্ধ লেগেছে, যে গম ২০০ ডলারে আনতাম সেই গম এখন ৬০০ ডলার। তারপরও আমরা কিনে আনছি দেশের মানুষের জন্য। গম, ভুট্টা, সার প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়েছে আন্তর্জাতিকভাবে। পরিবহন খরচ বেড়েছে। তারপরও আমরা খরচ করছি, যাতে দেশে খাদ্য-ঘাটতি না হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গুজবে কান দেবেন না। আপনারা জানেন, বিএনপির কাজ হচ্ছে গুজব ছড়ানো। তারা ক্ষমতায় গিয়ে লুটপাট করে খেয়েছে। ’৯৬ সালে আমরা যখন সরকার গঠন করি তার আগে ক্ষমতায় ছিল বিএনপি; রিজার্ভ রেখে গিয়েছিল মাত্র ২ পয়েন্ট ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করলাম দ্বিতীয় দফায়, তার আগেও বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। তারা রিজার্ভ ৫ বিলিয়ন ডলার রেখে গিয়েছিল। আমদানি-রপ্তানি ছিল না। আমাদের সময়ে রিজার্ভ প্রায় ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়ার সময় প্রায় ৪০ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত। আমাদের সময়ে তা কমে ২০ ভাগে নেমেছে। যদি আরও কমাতে পারতাম তাহলে বাংলাদেশে আর গরিব থাকত না। হতদরিদ্র ২৫ ভাগ ছিল; আমরা ১০ ভাগে নামিয়েছি। কারণ আমরা মানুষের কথা চিন্তা করি।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা ভোট দিয়েছেন, বারবার নির্বাচিত করেছেন। আপনারা ভোট দিয়েছেন বলেই দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশকে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করা হয়েছিল। বিদেশ থেকে পুরনো কাপড় এনে মানুষকে পরানো হতো। মানুষের পেটে খাবার ছিল না। মাথা গোজার ঠাঁই ছিল না। চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল না। ক্ষমতায় এসে আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক করি। সেখানে বিনা পয়সায় ওষুধ পাওয়া যায়। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। কর্মসংস্থান হয়েছে অনেক মানুষের। সবার হাতে মোবাইল ফোন। এটা আওয়ামী লীগ সরকার আপনাদের হাতে তুলে দিয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর বিএনপি-জামায়াত সরকার কী দিয়েছে? দিয়েছে অস্ত্র, দিয়েছে খুন, হত্যা। রক্ত আর হত্যা ছাড়া বিএনপি কিছু দিতে পারেনি মানুষকে। তারা লুটপাট করেছে, জনগণের অর্থ পাচার করেছে। মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে নিজেদের উদর পূর্তি করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়া যখন মারা যায় তখন কিছু থুয়ে (রেখে) যায়নি, ভাঙা সুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া। সেই ভাঙা সুটকেস হয়ে গেল জাদুর বাক্সো। কোকো-তারেক হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে।’
তিনি বলেন, ‘যে দলের নেতা সাজাপ্রাপ্ত সে দলকে জনগণ কী দেবে? তারা কিছু দিতে পারে না, তারা শুধু মানুষের রক্ত চুষে খেতে পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে সম্মানিত করেছি। সেইভাবে উন্নয়ন করেছি। ২০১৮’র নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিলাম রূপকল্প ২০২১-এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ করব। বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ করেছি। রাস্তাঘাট, স্কুল, ব্রিজ আমরা করে দিচ্ছি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘যশোরে ভবদহ-কপোতাক্ষের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে প্রথম প্রকল্প শেষ হয়েছে। এবার দ্বিতীয় প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। তাহলে ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন হবে। এই জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের সমস্যা। এটা দূর করতে পদক্ষেপ নিয়েছি। যশোরের অভয়নগরে ইপিজেড করছি। ইতিমধ্যে ৫০০ একর জমি নেওয়া হয়ে গেছে। ৪০০ শিল্প প্লট হবে এখানে।
তিনি বলেন, ‘যশোরে ২০১০ সালে একটি মেডিকেল কলেজ করে দেওয়া হয়েছে। ৫০০ শয্যার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল করার প্রাথমিক কাজ চলমান রয়েছে।’
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, ড. আবদুর রাজ্জাক, পিযূষ কান্তি ভট্টাচার্য্য, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, ঝিনাইদহ জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, নড়াইল জেলার সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, যশোরের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, শেখ আফিল উদ্দিন, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল, বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, বাগেরহাট-২ আসনের সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়, বাগেরহাট-৪ আসনের সদস্য আমিরুল আলম মিলন, শরীয়তপুর-১ আসনের সদস্য ইকবাল হোসেন অপু, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য পারভিন জামান কল্পনা, গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্য, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, যুব মহিলা লীগের সভাপতি অধ্যাপক নাজমা রহমান প্রমুখ।
সভা পরিচালনা করেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম। গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকেলে শপথ নেন তিনি। গত শনিবারের সাধারণ নির্বাচনে কোনো দল বা জোট সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত ঝুলন্ত পার্লামেন্ট তৈরি হয়। রাজনৈতিক দলগুলোও সরকার গঠনে নিজেদের মধ্যে সমঝোতায় ব্যর্থ হয়। শেষ অবধি রাজা আল-সুলতান আবদুল্লাহের বিশেষ কাউন্সিলে আসে সিদ্ধান্ত। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, দেশটির সাধারণ নির্বাচনে আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বাধীন একটি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের নেতৃত্বাধীন অপর রাজনৈতিক জোটও কাক্সিক্ষত ফল পায়নি। দেশটির ২২২ আসনের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ছিল ১১২টি আসন। আনোয়ারের দল পায় ৮২টি আসন আর মুহিউদ্দিনের পারিকাতান ন্যাশনাল পায় ৭৩টি।
নির্বাচনের চার দিন পর অচলাবস্থা থেকে উত্তরণে নতুন প্রধানমন্ত্রী বাছাই নিয়ে আলোচনার জন্য সুলতানদের ‘কাউন্সিল অব রুলার্স’-এর বিশেষ বৈঠক ডাকেন রাজা আল-সুলতান আবদুল্লাহ। মালয়েশিয়ার প্রদেশ ৯টি। প্রতিটি প্রদেশের প্রাদেশিক প্রধানের পদবি হচ্ছে সুলতান। এই সুলতানরা সবাই রাজপরিবারের সদস্য। ‘কাউন্সিল অব রুলার্স’ মালয়েশিয়ার রাজা ও সুলতানদের নিয়ে গঠিত। পদাধিকার বলে রাজা আবদুল্লাহ এই পরিষদের প্রধান। মালয়েশিয়ার রাজার ভূমিকা মূলত আলঙ্কারিক হলেও সাংবিধানিক অধিকার বলে তিনি কাউকে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করলে তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় আনোয়ারের তিন দশক ধরে চলা লম্বা সফরের অবসান হলো। একসময় যাকে প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকার হিসেবে ভাবা হয়েছিল সমকামিতার অভিযোগে তাকেই কারাগারে যেতে হয়। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন আনোয়ার।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ দেশটির সেনাপ্রধান হিসেবে লে. জেনারেল আসিম মুনিরকে মনোনীত করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার টুইটারে এই ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব।
এর মধ্য দিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে দক্ষিণ এশীয় দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী পদে নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন জল্পনার আপাতত অবসান হলো। আওরঙ্গজেব টুইটারে আরও জানিয়েছেন, লে. জেনারেল সাহির শামসাদ জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার স্থলাভিষিক্ত হবেন আসিম মুনির। সেনাপ্রধান হিসেবে ২৯ নভেম্বর জাভেদ বাজওয়ার মেয়াদ শেষ হবে। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার একটি বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। ওই বৈঠকে সেনাবাহিনীর শীর্ষ পদের জন্য ছয়জনের তালিকা নির্বাচন করেন তিনি।
আসিম মুনির বর্তমানে সেনা সদর দপ্তর রাওয়ালপিন্ডিতে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য দেশটির শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, মুনির ও শামসাদের নাম প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। পাকিস্তানের সশস্ত্রবাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ডার প্রেসিডেন্ট। আসিফ বলেন, ‘এটি প্রেসিডেন্ট আলভির জন্যও একটি পরীক্ষা, তিনি রাজনৈতিক পরামর্শ গ্রহণ করবেন নাকি সাংবিধানিক ও আইনি পরামর্শ অনুসরণ করবেন।’
প্রেসিডেন্ট আলভি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ডার হিসেবে রাজনৈতিক সংঘাত থেকে দেশকে রক্ষা করা তার দায়িত্ব।’ এদিকে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের অফিশিয়াল অ্যাকাউন্ট ইমরানকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘(সেনাপ্রধান নিয়োগের) সারাংশ আসার পর আমি এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট সংবিধান ও আইন অনুযায়ী কাজ করব।’
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে বলতে গেলে নেই নিবন্ধিত ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো। তবে ইসলামী ঐক্যজোট ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একটি অংশকে জোটে রেখে ইসলামী দলের সংখ্যা মোটামুটি ঠিক রাখা হয়েছে।
ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ (আবদুর রকিব) ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের (মনসুরুল হাসান রায়পুরী-মহিউদ্দীন ইকরাম) একাংশ ২০-দলীয় জোটে থাকলেও তাদের নিবন্ধন নেই। নিবন্ধনের আবেদনও করেনি তারা। দুই দলের মধ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে জানান দেওয়ার মতো কিছু কর্মসূচিতে মাঠে দেখা গেলেও বিবৃতি আর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়া ইসলামী ঐক্যজোটকে দেখাই যায় না। ময়দানে তাদের কোনো কর্মসূচি নেই।
আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপরেখা ঠিক করতে সরকারের বিরুদ্ধে যারা যুগপৎ আন্দোলন করতে ইচ্ছুক সেসব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় সংলাপ শুরু করেছে বিএনপি। প্রথম দফার মতো দ্বিতীয় দফাতেও উপর্যুক্ত দুই দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে বিএনপি নেতৃত্ব। গত ১৮ অক্টোবর জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সঙ্গে সংলাপ শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে জানান, ‘সরকারের পদত্যাগ, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে একমত হয়ে যুগপৎ আন্দোলন করতে আমরা একমত হয়েছি।’
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইসলামবিরোধী কোনো আইন পাস না করা, স্বকীয়তা বজায় রেখে কওমি সনদের মূল্যায়ন ও আলেম-উলামাদের কল্যাণে আমরা কিছু দাবির কথা জানিয়েছি। তারা আমাদের আশ^স্ত করেছেন।’ জোটে থাকার দরুন কোনো চাপ আছে কিনা জানতে চাইলে ওই নেতা বলেন ‘সবাই অবগত, কোন অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে!’
লেখক ও ইসলামী রাজনীতিক মাওলানা নাজমুল হকের মতে, ‘আলেম-উলামা ও কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। অতীতের নির্বাচনে ভোটের বাক্সে এর প্রতিফলন দেখা গেছে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর জোট-ত্যাগ জাতীয়তাবাদী শক্তির জন্য বিশাল ধাক্কা। আগামী নির্বাচনে আলেম-উলামাদের আস্থা অর্জন করে সাধারণ মানুষের ভোট পেতে ইসলামী দলের সঙ্গে সম্পর্ক বেশ জরুরি। এক্ষেত্রে অনেকটাই ব্যাকফুটে বিএনপি। সোজা কথা, ভোটের রাজনীতিতে ইসলামী দলগুলো গুরুত্বপূর্ণ হলেও ‘ইসলামী মূল্যবোধের দাবিদার’ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকা অথবা নিবন্ধিত বা প্রভাবক কোনো দলের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকা বিএনপির জন্য স্বস্তিকর বিষয় নয়।’
নিবন্ধিত শেষ দল হিসেবে গত বছরের ১ অক্টোবর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট ছেড়ে যায় খেলাফত মজলিস। দলটির মহাসচিব হেফাজতে ইসলামের মামলায় কারান্তরীণ থাকা অবস্থায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই ঘোষণার ২ মাস ৮ দিন পর ৯ ডিসেম্বর দলের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের মুক্তি পান। ২০-দলীয় জোট ছাড়ার সময় সরকারের চাপের কথা অস্বীকার করে মান-অভিমানের কথা বলে কয়েকটি কারণ দেখিয়ে জোট ছাড়ে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক এই রাজনৈতিক দল।
জোট ছাড়ার ঘোষণায় দলটির আমির মাওলানা ইসহাক বলেছিলেন, ‘জোট কোনো স্থায়ী বিষয় নয়। খেলাফত মজলিস ২০-দলীয় জোটে ২২ বছর ধরে ছিল। ২০১৯ সাল থেকে ২০-দলীয় জোটের দৃশ্যমান রাজনৈতিক তৎপরতা ও কর্মসূচি নেই। ২০১৮ সালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের মধ্য দিয়ে ২০-দলীয় জোটকে কার্যত রাজনৈতিকভাবে অকার্যকর করা হয়। তাই ২০-দলীয় জোটসহ সব রাজনৈতিক জোটের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করছে খেলাফত মজলিস।’
দলটির একাধিক নেতা সরকারের চাপ থাকার বিষয়টি সরাসরি স্বীকার না করলেও মূলত রাজনৈতিক কারণেই জোট ছেড়েছেন তারা। এই বিষয়ে তাদের বক্তব্য ‘ভাই! বোঝেনই তো...।’
‘নির্বাচন কিংবা জোট গঠনে কোনো চাপ নেই’ উল্লেখ করে দলটির নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজনৈতিক যেকোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে প্রথমে আমাদের দলীয় ফোরামে আলোচনা হয়। গত মাসে আমাদের নির্বাহী কমিটির ত্রৈমাসিক বৈঠক হয়েছে। সেখানে কোনো দলের সঙ্গে জোট বা সমঝোতার কথা আলোচনা হয়নি। তবে ঐক্যপ্রত্যাশী কেউ এগিয়ে এলে আমরাও এগিয়ে যাব। দেশের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে কোনো সিদ্ধান্ত হলে আমাদের দল পিছিয়ে থাকবে না।’
একই বছরের ১৪ জুলাই ২০-দলীয় জোট ছাড়ে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক প্রাচীন ধর্মীয় সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। জোট ত্যাগের সময় ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি বিএনপির অনাস্থা এবং জোটের শরিক দল হিসেবে যথাযথ মূল্যায়ন না করাসহ কয়েকটি অভিযোগ আনে জমিয়তে। হেফাজতে ইসলামের মামলায় জমিয়তের প্রথম সারির কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা অবস্থায় জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় সংগঠনটি। জোট ত্যাগের সপ্তাহ না পেরুতেই জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের তিন কেন্দ্রীয় নেতার মুক্তি মেলে। এরপর আরও কয়েকজন নেতা জামিনে মুক্তি পান।
দলীয় সূত্র জানায়, জোট ছাড়ার পর গত ডিসেম্বরে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসমারোহে জাতীয় কাউন্সিল হয়েছে। দলটির ছাত্র ও যুব সংগঠন সারা দেশে ব্যাপক সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দলের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক ও সহ-সভাপতি মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী নিজ নিজ এলাকা থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আগামীতে একক কিংবা আলাদাভাবে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত কয়েকটি ইসলামী দলের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করে ভোটের মাঠে নামতে পারে জমিয়তে।
‘যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে ইসলামী ধারার দলগুলো সুবিধা করতে পারছে না’ উল্লেখ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের এক নেতা বলেন, ‘ধর্মভিত্তিক দলগুলো যাতে নিজেদের মতো ‘নির্বাচনী সমঝোতা বা জোট’ গড়ে তুলতে পারে, তার জন্য সরকারের দিক থেকে উৎসাহ আছে। ইতিমধ্যে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের মধ্যে নির্বাচনকেন্দ্রিক সমঝোতার লক্ষ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়েছে। সম্ভাব্য জোটের কর্মপদ্ধতি ও নেতৃত্বের বিষয়টি স্পষ্ট করে একসঙ্গে পথ চলতে আপত্তি নেই জমিয়তের বেশিরভাগ নেতার।’
বিএনপির শরিকরা জোট ছেড়ে গেলেও ২০-দলীয় জোটে দলের সংখ্যায় হেরফের হয়নি। যখনই কোনো দল জোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে, তখনই দলের অন্য একজন নেতার নেতৃত্বে একাংশ একই নামে আলাদা দল গঠনের ঘোষণা দিয়ে ২০ দলে থেকে গেছে। অবশ্য বিএনপি দাবি করেছে, সরকারের চাপে পড়েই শরিক ইসলামী দলগুলো জোট ছেড়েছে।
জমিয়তের জোট ত্যাগের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘এটা রাজনীতি। রাজনীতি ভাঙা-গড়ার খেলা। একূল ভাঙে, ওকূল গড়ে এ রকম চলতেই থাকে। মূল বিষয় সেটা নয়। বিষয়টা হচ্ছে, তারা চলে যাবেন সরকারের চাপে। মামলা-মোকদ্দমা, প্রচণ্ড রকমের চাপ আছে। অনেকের চাকরিও চলে যাবে। তারা রাজনৈতিক দল। তাদের যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে।’
হেফাজতে ইসলামের কোণঠাসা হওয়ার প্রভাব পড়ে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দলগুলোর ওপর। সবচেয়ে বেশি চাপে পড়ে বিএনপি জোটের শরিকরা। ২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরবিরোধী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনায় প্রায় এক হাজার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বেশিরভাগ ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থক।
জানা যায়, মামলা-হামলার ভয়েই মূলত রাজপথে ইসলামী দলগুলোর তৎপরতা কমে গেছে। তবে তারা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইসলামী দলের নেতারা জানান, তারা স্বাধীন ও স্বাভাবিকভাবে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছেন না। নানা ধরনের বিধিনিষেধ রয়েছে। এমন গুমোট পরিবেশ থেকে বের হয়ে আসাই বড় চ্যালেঞ্জ।
ইসলামী রাজনীতি থেকে ক্ষোভে ও অভিমানে দূরে থাকা একাধিক নেতা ভিন্নমত পোষণ করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দুই-একটা দল বাদে ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো অভ্যন্তরীণ কোন্দল, স্বজনতোষণ, নিয়ম না মানার রীতি, কোনো কোনো নেতার নৈতিকতা-বিবর্জিত কর্মকান্ড, সুবিধাবাদিতা ও প্রত্যাশা-প্রাপ্তির বাসনার কারণে ভাঙতে ভাঙতে বিলীন হওয়ার পথে। তারা মুখ বাঁচাতে, নেতাকর্মীদের কাছে ভালো সাজতে নানা চাপের কথা বলে দায় এড়ায়। ইসলামী দলগুলোতে যোগ্য নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। জনসম্পৃক্ততা না থাকা, মাঠে কাজ না করে বড় দল থেকে সুবিধা আদায়ের মানসিকতা এজন্য দায়ী।’
দু’বছর আগে এই দিনেই আমরা তাকে হারিয়েছিলাম চিরদিনের জন্য। তবুও সে আমাদের সঙ্গে সবসময় আছে। ডিয়েগো ম্যারাডোনা আসলে ক্ষণজন্মা প্রতিভা। ভালো ও মন্দ, সব ব্যাপারেই ছিল তার দারুণ প্রতিভা। ম্যারাডোনা ছিল আসলে অলরাউন্ডার। আসলে এখন তার স্মৃতিচারণ করা আর তাকে সম্মান জানানো ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই। ডিয়েগো ম্যারাডোনা ছিল বিশ্বের সেরা ফুটবলার, যে আর্জেন্টিনার জন্য যত কিছু করা সম্ভব তার সবটাই করেছিল।
ডিয়েগোর সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই দুটো গোলই স্মৃতির মণিকোঠায় উজ্জ্বল হয়ে আছে। সেই দৌড় যেটার চূড়ান্ত পরিণতি ছিল গোল, ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম গোল। সেই মাঠের অবস্থাটা এত খারাপ ছিল যে বল নিয়ন্ত্রণে রাখা রীতিমতো কষ্টসাধ্য ছিল। তবে ম্যারাডোনা ছিল জাদুকর। সে যখন আমার দিকে একবার তাকাল, আমি ভেবেছিলাম বলটা সে আমাকে পাস দেবে। কিন্তু কেউ জানত না তার মাথায় কী খেলছে! এরপর সে বল নিয়ে দিল একটা দৌড়, সেই জাদুকরি দৌড় যেটা চূড়ান্ত পরিণতি পেল অসাধারণ এক গোলে, বিশ্বের সেরা গোলে। যে গোলটা থামিয়ে দিয়েছিল ‘ঈশ্বরের হাত’ গোল নিয়ে সব সমালোচনা।
সেই ‘ঈশ্বরের হাত’ গোলটার সময় যেটা ডিয়েগো নিজেই হাত দিয়ে করেছিল, আমি তখন ছিলাম তার অন্য পাশেই। আমি গত ৩৬ বছর ধরে এটাই বলে আসছি যে, আমি ওটা দেখিনি। ওদের গোলরক্ষক খুব একটা লম্বা ছিল না, ‘হ্যান্ড অব গড’ গোলটা হয়েছিল গোলরক্ষকের উচ্চতার সমান জায়গা থেকে। গোলটা হতে দেখিনি। যখন গোলের উদযাপনের অংশ হতে গেলাম তখন ডিয়েগো আমাদের বলল ‘আনন্দ কর’। সে বলল আমরা যেন একে অন্যকে জড়িয়ে ধরি, আনন্দ করি, উদযাপন করি। কারণ লাইন্সম্যান ততক্ষণে মাঝমাঠের দিকে চলে গেছে। আমরা নিশ্চিত ছিলাম, সে চাচ্ছিল গোলটাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য। এখন যে বিতর্কগুলো হয় গোলটা নিয়ে, প্রযুক্তি থাকলে সেটা হয়তো হতো না। তবে ডিয়েগো ছিল এমন এক প্রতিভা যে সেটা করতেই পারত। তখন আমি এবং বেশ কয়েকজন ১৫ মিটার দূরে দাঁড়িয়েছিলাম, আমরাও ভেবেছিলাম গোলটা হয়েছে হেড থেকেই।
যুক্তি এটাই বলে যে লাইন্সম্যান ও রেফারি দুজনেই খুব দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। তখন যেহেতু ‘ভিএআর’ ছিল না, তারাই আলাপ আলোচনা করে গোলটার বৈধতা দিয়েছিল। উদযাপনের সময়ই বুঝেছিলাম, সিদ্ধান্ত আমাদের পক্ষেই আসছে।
সে সময় ডিয়েগোর কাছে যারা ছিল, তাদের প্রতিক্রিয়া ছিল দেখার মতো। অনেকেই ভেবেছে এটা গোল হয়নি, কিন্তু ম্যারাডোনার উচ্ছ্বাস ও প্রতিক্রিয়া দেখে আর যেভাবে সে উল্লাস করছিল ও হর্ষধ্বনি করছিল, আমরা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরছিলাম যেন সত্যিই গোল হয়েছে। আসলে অন্যদের পক্ষে এটা চিন্তা করাই দুঃসাধ্য যে এমন কিছু করা যেতে পারে। তবে এমনটাই হয়েছিল। যদিও হ্যান্ড অব গড গোলটা বাদ দিলেও সেই ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আর্জেন্টিনাই জিতত।
আমাদের প্রতিক্রিয়া ছিল আমরা উদযাপন করব, সবাই মুঠো আকাশে তুলব, কাছের সতীর্থকে ডেকে আয়োজনে শামিল করে নেব এবং তাকেও বলব জোরালো ভাবে উদযাপন করতে।
খেলা শেষে, ড্রেসিং রুমে যখন আমরা কোয়ার্টার ফাইনাল জিতে সেমিফাইনালে ওঠার আনন্দ উদযাপন করছি, তখন ডিয়েগো আমাদের কাছে জানতে চাইল যে আমরা উদযাপন শুরু করতে এত দেরি করলাম কেন? আমরা কেন তাৎক্ষণিকভাবে স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে উদযাপন শুরু করে দেইনি। এমনকি পিটার শিলটন এবং ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়রা যে অল্পকিছু সময় প্রতিবাদ করেছিল তাতেও সে অবাক হয়েছিল।
ইংল্যান্ড দলটা সামান্য কিছু প্রতিবাদের সুযোগ পেয়েছিল, মূলত শিলটন আর বুচার। তারা খুব বেশিক্ষণ প্রতিবাদ করতে পারেনি। রেফারি দৌড়ে মাঝমাঠে চলে যায়। লাইনসম্যানও একই কাজ করে। আমরা একটু চমকেই গিয়েছিলাম, কারণ যদি গোলের সিদ্ধান্তটা আমাদের বিপক্ষে যায় তাহলে খেলা হয়তো ১০ মিনিট বন্ধ থাকবে। হতে পারে ওরা অনেক ভদ্র, এসব করা ওদের সংস্কৃতিতে নেই, তাই ওরা করেনি।
ওর সঙ্গে স্মৃতির তো শেষ নেই। আমরা মেক্সিকোয় এসেছিলাম বিশ্বকাপ শুরুর এক মাস আগে। উদ্দেশ্য ছিল মেক্সিকোর উচ্চতা আর আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া। আমরা অনুশীলন করতাম দুপুরে, যখন সূর্য একদম মাথার ওপরে থাকত। এভাবেই শুরু হয়েছিল কঠিন এক বিশ্বকাপ অভিযানের, কারণ আমরা বেশ কষ্টেসৃষ্টেই মূল পর্বে এসেছিলাম। আর্জেন্টিনা আসলে উন্নতি করছিল বিশ্বকাপে এসে। একটা একটা করে ম্যাচ জিতছিলাম আর আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ছিল। আমরা দারুণ খেলেছিলাম, একটা ম্যাচও হারিনি। দারুণ সব গোল করছিলাম আমরা। ম্যারাডোনার সেই গোল তো আছেই, ফাইনালে আমার আর ভালদানোর গোল দুটোও ছিল দুর্দান্ত। বিশ্বকাপে যেন ফুটবল দেবতা আমাদের সব পরিশ্রম, সব কষ্টের প্রতিদান দিতে শুরু করেছিলেন। বিশ্বকাপের আগে তিনটা বছর আমরা যে কঠিন সময়ের ভেতর দিয়ে পার করেছিলাম, কত সমালোচনা আর অন্যায়... সবকিছু আমরা ফিরিয়ে দিয়েছিলাম বিশ্বকাপ জিতে।
আর আমার জন্য, সেই গোলটা করা, একটা দৌড় যার শেষটা হয়েছিল বিশ্বকাপ জেতানো গোল করে। তখন পাশে ছিল ডিয়েগো ম্যারাডোনা, বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম ফুটবলার। আমার জন্য ওই মুহূর্তটা ছিল অনন্য, অনেক কিছুকে পেছনে ফেলে ফুটবল জীবনে এমন কিছু মন্ত্রমুগ্ধকর মুহূর্ত উপহার দেবে। আর আমার জন্য সেই রকম একটা মুহূর্তের কারিগর ছিল ডিয়েগো।
রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিতেছেন গ্যারেথ বেল। তাই এই টুর্নামেন্টের ফাইনাল সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে ওয়েলসের সাবেক অধিনায়কের। আজ রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে মুখোমুখি হবে ম্যানচেস্টার সিটি ও ইন্তার মিলান। বেলের বাজি সিটির পক্ষে।
ইংলিশ ক্লাব সাউদাম্পটন ও টটেনহামে খেলার সময় ম্যানসিটির বিপক্ষে খেলেছেন বেল। আজ রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের ফলাফলের সঙ্গে ম্যাচসেরা কে হবেন সেই মতামতও দিয়েছেন বেল। ইন্সটাগ্রামে বেল বলেন, 'ম্যানসিটি ৫-০ তে হারাবে ইন্তার মিলানকে।’
বেলের মতে, ম্যাচসেরা হবেন সিটি মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৩ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবল থেকে অবসর নেন বেল। তার আগে কাতার বিশ্বকাপে খেলে বিশ্ব ফুটবল মঞ্চে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে গেছেন।
মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপ শিরোপা জিতেছে পেপ গার্দিওলার দল। আজ চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলে ট্রেবল হবে তাদের। ২০২১ এ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে চেলসির কাছে হেরেছিল ম্যানসিটি।
দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা প্রত্যাশামতো পায়নি অস্ট্রেলিয়া। তবে মিডল অর্ডাররা দিয়েছেন আস্থার প্রতিদান। তাতে ভারতকে ৪৪৪ রানের লক্ষ্য দেয় অসিরা। এই রান তাড়া করলেই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন শিরোপাজয়ী হবে ভারত। রান টপকালে শুধু জয়ই হবে না, হবে রেকর্ডও। তাই শেষ দিনে বিরাট কোহলি ও অজিঙ্কা রাহানের পানে তাকিয়ে থাকবে ভারত।
টেস্ট চ্যাম্পিয়ন হতে হলে বিশ্বরেকর্ডটাই করতে হবে ভারতকে। করতে হবে টেস্টের সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। আর না হলে ড্রয়ের জন্য মরিয়া হয়ে ওভালে পঞ্চম দিনের পিচে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে কোহলি-রাহানেদের। এ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই ভারতের সামনে।
রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে নেমে লন্ডনের ওভালে আজ চতুর্থ দিন শেষে ভারত তুলেছে ৩ উইকেটে ১৬৪ রান। দুই বছরের জন্য টেস্ট শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পেতে রবিবার পঞ্চম তথা শেষ দিনে ভারতের দরকার ২৮০ রান, অস্ট্রেলিয়ার চাই ৭ উইকেট। শেষ দিনের শুরুটা করবেন অজিঙ্কা রাহানে (২০*), সঙ্গে বিরাট কোহলি (৪৪*)।
টেস্টের শেষ ইনিংসে ব্যাট করা সবসময়ই কঠিন। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪১৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে উইন্ডিজের ওই জয় এখনো সাদা পোশাকে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। সে হিসেবে ওভালে ভারতের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথটা অনেক কঠিন।
রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে ভারতের শুরুটা হয়েছিল ওয়ানডে মেজাজে। প্রথম ৭ ওভারে দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুবমান গিল করেন ৪১ রান। গ্রিনের বিতর্কিত এক ক্যাচে বোল্যান্ডের বলে গিল আউট হলেও খেলার ধরন পাল্টাননি রোহিতরা।
১৯ ওভারে ৯১ রান তোলা ভারত ২০তম ওভারে হারায় রোহিতকে। এই ইনিংস খেলার পথে ওপেনার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৩ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন রোহিত।
রোহিতের আউটের পর যখন সবাই ভাবছিলেন, উইকেটে থাকা চেতেশ্বর পূজারা তাঁর চিরাচরিত ধরন মেনে রয়েসয়ে ব্যাটিং করবেন। তবে পূজারা আউট হন নিজের চরিত্রের বাইরে গিয়ে কামিন্সের বলে আপার কাট খেলতে গিয়ে।
এর আগে ৪ উইকেটে ১২৩ রান তুলে গতকাল তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করে অস্ট্রেলিয়া। আজ চতুর্থ দিন সকালটা দুর্দান্ত শুরু করেন ভারতের পেসাররা। কাল ৪১ রানে অপরাজিত থাকা লাবুশেন চতুর্থ দিনে কোনো রান যোগ না করেই আউট হন উমেশ যাদবের দলে। স্লিপে চেতেশ্বর পূজারার হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ১২৬ বলে ৪ চারে ৪১ রান করেছেন লাবুশেন। অ্যালেক্স ক্যারি (৬৬*) ও বোলার মিচেল স্টার্কের (৪১) ৯৩ রানের জুটিতে দারুণ পুঁজি গড়ে ফেলে অজিরা। সুবাদে ৮ উইকেটে ২৭০ রান করে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করা সহজ হয় দলটির। হয়তো জয়ের পথটাও তৈরি হলো ওই জুটিতে।
সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে খেলেন বলেই লাতিন দেশটিকে নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের যত উৎসাহ–উদ্দীপনা। এর আগেও বাংলাদেশের মানুষ ম্যারাডোনা–প্রীতি থেকে আর্জেন্টিনার প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছেন। কিন্তু এবার কাতার বিশ্বকাপে অতীতের সেই ভালোবাসা বা উদ্দীপনাকে চরমভাবে হার মানিয়েছে। আর এর কারণ ওই একটাই, মেসি।
মেসি যে ইউরোপের ফুটবলের পাট চুকিয়ে মেজর লিগ সকারের দল ইন্টার মায়ামিতে যাচ্ছেন, সেই ঘোষণা আসে গত বুধবার। এখনও নাম লেখাননি, কবে থেকে মায়ামির হয়ে মাঠে নামবেন, সেটাও নিশ্চিত নয়। শুধু মেসি ইন্টার মায়ামিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইন্টার মায়ামির অনুসারীর সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে।
গুগলে ফ্লোরিডাভিত্তিক এই ক্লাবটিকে খোঁজা শুরু করে সারা বিশ্বের মেসি–সমর্থকেরা। গুগলে গত ৭ দিনে সবচেয়ে বেশি মায়ামিকে খোঁজা হয়েছে বাংলাদেশ থেকেই। গুগলে এই খোঁজার দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে মেসির নিজের দেশ আর্জেন্টিনার চেয়েও। কেউ কেউ বলতে পারেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা আর্জেন্টিনার চেয়ে বেশি ১৪ কোটি। সেই বিবেচনায় এটাই তো হওয়ার কথা।
মূলত গুগল ট্রেন্ডে কোনো ওয়েব সার্চের সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তার মানদণ্ড হচ্ছে ১০০। বাংলাদেশ এখানে পেয়েছে এক শই। শনিবার বিকেল ৫টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত আর্জেন্টিনা পেয়েছে ৮৪।
গুগল ট্রেন্ডের এই তালিকায় বাংলাদেশ আর্জেন্টিনার পরের নামটা নেপালের। তারা পেয়েছে ৮২। চার নম্বরে আছে হাইতি (৮১), আর পাঁচে আইভরি কোস্ট (৭৩)। এই তালিকায় সেরা দশে আছে ইরাক, ইয়েমেন, কঙ্গো, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া। মেসিকে নিজেদের লিগে নিতে চাওয়া সৌদি আরব আছে এই তালিকার ১৪ নম্বরে।
যুক্তরাষ্ট্র আছে ৫১ নম্বরে। এতে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ নিজেদের দেশের ক্লাব সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের ভালোই জানাশোনা থাকার কথা। তা ইন্টার মায়ামি ক্লাব হিসেবে যতই নতুন হোক না কেন।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ১২ বছরে ৭ বারই চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। পেপ গার্দিওলার অধীনেই ৫ বার। কিন্তু ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে বারবার ব্যর্থ হয়েছে তারা। দুবছর আগে ফাইনালে উঠলেও পারেনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে। অবশেষে গেঁরো খুলতে পারল তারা। ইন্তার মিলানকে হারিয়ে ইউরোপের সর্বোচ্চ ক্লাব আসরের শিরোপা জিতেছে তারা।
ইস্তানবুলের ফাইনালে ইতালীয় ক্লাবকে ১-০ গোলে হারিয়ে এই আসরের নতুন চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। একমাত্র গোলটি করেছেন ৬৮ মিনিটে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রদ্রি।
প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতে এবারের মৌসুমে ট্রেবলও পূরণ করে নিল সিটি। এর আগে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপের শিরোপা জিতেছিল তারা। তাদের আগে একমাত্র ইংলিশ ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জিতেছিল তাদের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর কোচ হিসেবে দুবার ট্রেবল জয়ের নতুন রেকর্ডও গড়লেন গার্দিওলা। এর আগে বার্সেলোনার কোচ হিসেবে প্রথমবার ট্রেবল জিতেছিলেন তিনি।
২০২১-র ফাইনালে রদ্রিকে না খেলানো নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল গার্দিওলার। দুই বছর পর আরেকটি ফাইনালে সিটির জয়ের মূলনায়ক সেই রদ্রি। ডিফেন্সিভ এই মিডফিল্ডার গোল নিয়ে অতো ভাবেন না। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১১ ম্যাচ খেলে একটা গোল ছিল তারা। সেটি ছিল এবারের আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে ঘরের মাঠে বায়ার্ন মিউনিখকে ৩-০ গোলে হারানো ম্যাচের প্রথমটি। সেই গোলের পেছনে অবদান ছিল যার সেই বার্নার্দ সিলভা ইস্তানবুলে গোলশূণ্য প্রথমার্ধের পর ৬৮ মিনিটে ইন্তার গোললাইনের কাছ থেকে বল ফিরিয়ে দেন বক্সের মাথায়। অরক্ষতি রদ্রির কথা কেউ ভাবেইনি। ডান পায়ের চতুর শটে দুই ডিফেন্ডারের পা এড়িয়ে ডান দিকে জালে জড়ায় বল (১-০)।
এর পরপরই সমতা ফেরানোর সম্ভাবনা তৈরি করেছিল ইন্তার। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের, দিমারকোর হেড বাধা পায় পোস্টে। ২০২১'র ফাইনালে মতো এবারো চোটে পড়ে মাঠ ছাড়েন সিটির মধ্যমাঠের প্রাণ ডি ব্রুইনে। ৩৬ মিনিটেই মাঠে নামা ফিল ফোডেন ইন্তারের আক্রমণ ভাগে বার বার হানা দিয়েছেন। তবে সিটির আর গোল পায়নি। বরং গোল খেতে পারতো তারা। কিন্তু গোলরক্ষক এডারসনের দক্ষতায় দুবার নিশ্চিত বেচে যায়। রবিন গোসেনের ক্রস থেকে একেবারে ফাঁকায় থেকে হেড নেওয়ার সুযোগ পান লুকাকু। কিন্তু নেন গোলরক্ষক বরাবর। কোনো মতে পা দিয়ে ঠেকিয়ে সে যাত্রা দলকে রক্ষা করেন এডারসন।
ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে এডারসনের আরও একটি দুর্দান্ত সেভ। কর্নার থেকে গোসেনের নেওয়া হেড ঝাঁপিয়ে ঠেকান তিনি। এরপর রেফারি শেষ বাঁশি বাজালে উল্লাসে মাতে সিটিজেনরা।
সাধারণত প্রাথমিক স্তরে একটি দেশে এক ধরনের শিক্ষাব্যবস্থাই চালু থাকে। তবে কোনো কোনো দেশে এক শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যেও পাঠক্রমে (কারিকুলামে) ভিন্নতা থাকে সেটা সর্বোচ্চ দুই বা তিন ধরনের হয়ে থাকে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই ঠিক করে দেয় শিক্ষার্থীরা কী ধরনের শিক্ষাগ্রহণ করবে।
বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণি থেকেই হরেক রকমের শিক্ষাব্যবস্থা এবং হরেক পরীক্ষা চালু আছে। এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষা ১২ রকমে দেওয়া যায়। ফলে এক সনদের জন্য ১২ রকমের শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। আর শিক্ষা-প্রশাসনের পক্ষে শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
প্রচলিত বা সাধারণ স্কুলগুলোতে যারা পড়ালেখা করে তারা ‘সাধারণ’ এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে থাকে। আর মাদ্রাসায় যারা পড়ে তারা দেয় দাখিল পরীক্ষা। দাখিল ভোকেশনাল নামেও একটি পরীক্ষা দেওয়া যায়। কারিগরিতে যারা পড়ে তারা দেয় এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমেও দেওয়া যায়। প্রাইভেট এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থাও আছে। মাধ্যমিকে যেসব বিদ্যালয়ে ইংরেজি ভার্সন রয়েছে, সেখানে ইংরেজি ভাষায় এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া যায়।
ইংলিশ মিডিয়ামে (ইংরেজি ভার্সন নয়) যারা পড়ে, তাদের এসএসসি সমমানের পরীক্ষার নাম ‘ও’ লেভেল। সে ব্যবস্থাতেও এডেক্সেল ও কেমব্রিজ কারিকুলামের স্কুলে পৃথক পড়ালেখা। আর সারা দেশেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে কওমি মাদ্রাসা; এ শিক্ষাকেও সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে। কওমি শিক্ষাব্যবস্থা থেকে দাওরায়ে হাদিস পাস করা শিক্ষার্থীদের মাস্টার্সের সমমান দেওয়া হয়েছে। কওমিতে হাফেজি ও মাওলানা (টাইটেল) ধারায় পড়ালেখার সুযোগ রয়েছে।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক এম তারিক আহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় বিভিন্ন ধারা থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে এ ধারাগুলো যদি একটা ফ্রেমওয়ার্ক ও মনিটরিংয়ে না থাকে, তাহলে বিশৃঙ্খলা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় বিভিন্ন ধারাকে একটা ফ্রেমওয়ার্কে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়েছে; অর্থাৎ সবার জন্য নির্দিষ্ট কিছু বিষয় রাখা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠদান ও মূল্যায়ন করা হচ্ছে কি না তা শিক্ষার সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে মনিটরিং করতে হবে।’
তারিক আহসান বলেন, ‘কওমিতে অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে, এটা ঠিক। তবে সরকার তাদের কিছু ডিগ্রিকে সাধারণ শিক্ষার সমমান দিচ্ছে। এই শিক্ষাকেও একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মূল ধারায় নিয়ে আসতে হবে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাধারণ এসএসসি ও ইংরেজি ভার্সনের এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আছে ৯টি শিক্ষা বোর্ড। মাদ্রাসায় দুই ধরনের দাখিলের জন্য রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। কারিগরি শিক্ষার জন্য আছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়ের মাধ্যমেও দেওয়া যায় এসএসসি পরীক্ষা। শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীনেই প্রাইভেট এসএসসি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
ইদানীং ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। বিভাগীয় এবং জেলা শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। এসবের বেশিরভাগের নিবন্ধন নেই। তারা এডেক্সেল ও কেমব্রিজ কারিকুলামে পরীক্ষা দিলেও তাদের কোনো নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ নেই। শিক্ষা বোর্ডগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণ করে না।
অনেক আগে থেকেই আমাদের দেশে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা চালু রয়েছে। করোনার পর দেশে সাধারণ স্কুলের সংখ্যা কমলেও কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ কওমি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। তাদের পরীক্ষার জন্য তারা নিজেরাই একাধিক বোর্ড বানিয়েছে। এগুলোতে সরকারের তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসিক বিষয়গুলো সবাই অনুসরণ করে। কারিগরি ও মাদ্রাসায় আলাদা কিছু বিষয় যুক্ত রয়েছে। আমি বলব, বিভিন্ন ধারা বলে কিছু নেই। তবে ব্যতিক্রম ইংলিশ মিডিয়াম। আমাদের দেশের ইংলিশ মিডিয়ামে সাধারণত ব্রিটিশ কারিকুলামে পড়ানো হয়। সেখানেও আমরা বাংলাদেশ স্টাডিজ নামে একটি বিষয় যুক্ত করেছি। ওই কারিকুলামের শিক্ষার্থীরা যেন দেশপ্রেম ভুলে না যায় এবং নিজের ভাষা-সংস্কৃতির প্রতি বিরূপ মনোভাবের না হয়। আরেকটি বড় ব্যতিক্রম কওমি মাদ্রাসা। সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়।’
যারা খুব দরিদ্র তারা সাধারণত কওমি শিক্ষায় যায়। সেখানে পড়ালেখার পাশাপাশি থাকা-খাওয়ারও ব্যবস্থা থাকে। যারা নিম্নমধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত তারা সাধারণ স্কুলে লেখাপড়া করে। উচ্চবিত্তরা সাধারণত তাদের সন্তানদের ইংলিংশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ালেখা করান। ইদানীং মধ্যবিত্তরাও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও ইংরেজি ভার্সনের স্কুলে ঝুকছে। যারা পড়ালেখায় পিছিয়ে তারা সাধারণত কারিগরি শিক্ষায় যায়। আর যেসব অভিভাবক ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষার মিশ্রণ চান, তারা সাধারণত তাদের সন্তানদের আলিয়া মাদ্রাসায় পাঠান।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, দেশে একাধিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। আবার শিক্ষাকাঠামোর নিয়ন্ত্রণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকছে না। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী তার পছন্দের বাইরের শিক্ষাব্যবস্থায় পড়ালেখা করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। ফলে মাধ্যমিকে ঝরেপড়া কমছে না। আবার উচ্চশিক্ষায় গিয়েও অনেকে তাল মেলাতে পারছে না। অনেকে তার উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখা তেমন কাজে লাগাতে পারছে না।
ব্রিটেনে সাধারণত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সবার একই রকমের শিক্ষা। এরপর শিক্ষার্থীদের দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একদল যায় কারিগরি শিক্ষায়। অন্যদল যায় সাধারণ শিক্ষায়। যদিও দুই ভাগেই কিছু ট্রেড কোর্স থাকে। কে কোন ধরনের শিক্ষায় যাবে তাতে অভিভাবকদের কিছু বলার নেই। শিক্ষকরাই বিবেচনা করে শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষাব্যবস্থা নির্ধারণ করেন।
কোনো দেশের উন্নয়নের মূল হচ্ছে কারিগরি শিক্ষার প্রসার। এ ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে। কারিগরিতে এখনো মেধাবী শিক্ষার্থীরা যাচ্ছে না। সরকার ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থীকে কারিগরিতে নিতে পেরেছে বললেও তাতে নানা ফাঁকি রয়েছে। কওমি মাদ্রাসা ও ইংলিশ মিডিয়ামে শিক্ষার্থী বাড়লেও কারিগরিতে সেভাবে শিক্ষার্থী বাড়ছে না।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশে^র বেশিরভাগ দেশেই শিক্ষাব্যবস্থা চলে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায়। অর্থাৎ উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীর পড়ালেখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা স্কুলেই সময় কাটায়। আমাদের দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পড়ালেখা করা যায়। তবে টিউশন ফি ও বই ছাড়াও শিক্ষার্থীদের নানা খরচ থাকে, যা পরিবারকে বহন করতে হয়। মাধ্যমিক থেকে পুরোপুরিই পড়তে হয় অভিভাবকদের খরচে। ফলে অভিভাবকদের পছন্দে ও বাণিজ্যিক কারণে নানা ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এর থেকে সরকার কোনোভাবেই বের হতে পারছে না। বের হওয়ার পরিকল্পনাও দেখা যাচ্ছে না।
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে দেশি-বিদেশি শিক্ষাকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছিল; অর্থাৎ সবাইকে কিছু কোর সাবজেক্ট পড়তে হবে। কিন্তু সেটা হয়নি। সবাই দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে আচ্ছন্ন। মতভেদও রয়েছে। আমাদের বুঝতে হবে, মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীরা যায়, কারণ সেখানে পড়তে পয়সা লাগে না। আমাদের হাজার হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারীকরণ করেছি। কিন্তু রাষ্ট্র শিক্ষার্থীদের পুরো দায়িত্ব নিচ্ছে না। যত দিন রাষ্ট্র দায়িত্ব নেবে না, তত দিন সব ধরনের শিক্ষাকে এক প্ল্যাটফরমে আনা কঠিন।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর (৪১) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে তিনি চিরকুট লিখে গেছেন। তবে সেখানে কি লেখা আছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশের ধারণা, অর্পিতা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পরে স্বজনের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করতেন অর্পিতা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মা ফাতেমা কবিরের মৃত্যুর কারণে তিনি দেশে আসেন। এরপর দেশেই ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার লণ্ডনে ফেরার কথা ছিল। মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া একটি চিরকুটে (সুইসাইড নোট) তিনি আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
মেয়ের মৃত্যুতে শোকে বিবহবল লেখক–কলামিস্ট শাহরিয়ার কবির গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অর্পিতাকে তাঁর মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে। রবিবার তাঁর কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’