
সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটাই কি কাতার বিশ্বকাপে নেইমারের একমাত্র উপস্থিতি হয়ে থাকবে? লুসাইলে নেইমার খেলেছেন ৭৯ মিনিট, এরপর তাকে তুলে নেন তিতে। এই ৭৯ মিনিটে ৯ বার ফাউলের শিকার হয়েছেন নেইমার। ম্যাচের পর তার ফুলে যাওয়া গোড়ালির ছবি নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে, আর তাকে নিয়ে আশঙ্কা বেড়েছে। স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক মার্কা’র খবর, সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপে ব্রাজিলের পরের ম্যাচে খেলবেন না নেইমার। যদি দ্বিতীয় পর্ব নিশ্চিত হয়ে যায় তাহলে ক্যামেরুনের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচেও তাকে মাঠে নামাবেন না তিতে।
চোটের সঙ্গে নেইমারের সখ্যটা পুরনো। আর বিশ্বকাপ মানেই যেন নেইমারের বড় চোটে ছিটকে পড়া। ২০১৪ বিশ্বকাপে কলম্বিয়ার কামিলো জুনিগা লাফিয়ে উঠে হাঁটু দিয়ে পিঠে আঘাত করে ভার্টেব্রায় চিড় ধরিয়ে তাকে বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে দিয়েছিলেন। ২০১৮ বিশ্বকাপ খেলতে রাশিয়া আসার আগে মেটাটারসালের চোট থেকে মাত্র সেরে উঠলেও ঠিক ছন্দে ছিলেন না নেইমার। আর এইবার প্রথম ম্যাচেই সার্বিয়ান ফুটবলাররা যেন তাকে বানিয়ে ফেলেন ‘পাঞ্চিং ব্যাগ’। ৯ বার ফাউলের শিকার হয়েছেন নেইমার, গোড়ালি ফুলে হয়েছে ঢোল। ব্রাজিল দলের চিকিৎসক রদরিগো লাসমার ম্যাচ শেষে জানিয়েছেন, ডান পায়ের গোড়ালি মচকে গেছে নেইমারের। ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণের পর বোঝা যাবে নেইমার কতটা সেরে উঠছেন।
মার্কা জানতে পেরেছে, সোমবার সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটায় খেলতে পারবেন না নেইমার। যদি গ্রুপ পর্ব থেকে পরের রাউন্ডে ওঠা নিশ্চিত করার ম্যাচ না হয়, তাহলে ক্যামেরুনের বিপক্ষেও তাকে খেলাবেন না তিতে। নেইমার নিজে অবশ্য বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে চান না চোট নিয়ে, তবে বিশ্রামে থাকতে হবে। এতে করে তিতের অবশ্য খুব অসুবিধা হওয়ার কথা নয় কারণ তার হাতে অ্যান্টনি, রদরিগো, ব্রুনো গুইমারেসসহ অনেক বিকল্পই আছে।
উল্লেখযোগ্য সময়ে চোটের কারণে অনুপস্থিতি অবশ্য নেইমারের জন্য নতুন কোনো অভিজ্ঞতা নয়। বার্সেলোনা থেকে প্যারিস সেন্ত জার্মেইতে যোগ দেওয়ার পর এই নিয়ে ছয়বার বড় কোনো চোটে পড়লেন নেইমার। এর মধ্যে তিনটাই গোড়ালিতে, দুটো বাম গোড়ালিতে আর একটা ডানে।
বিশ্বকাপ এলেই চোট পাওয়ার এই ব্যাপারটা ছিল পেলের মধ্যেও। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের লক্ষ্যই থাকতেন পেলে। এক সাক্ষাৎকারে তো পেলে বলেইছিলেন, ১৯৭০ বিশ্বকাপে ভেবেছিলেন খেলবেনই না চোটের ভয়ে, ‘একটা সময় ভেবেছিলাম যাবই না, কারণ আমি খুব একটা ভাগ্যবান নই।’ আগের বিশ্বকাপে অর্থাৎ ১৯৬৬ সালে বুলগেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে বেশ মার হজম করেছিলেন পেলে। চোট নিয়ে খেলেছিলেন পর্তুগালের বিপক্ষে আর হাঙ্গেরির বিপক্ষে মাঠেই নামেননি।
নেইমারেরও বিশ্বকাপটা শেষ হয়ে যেতে পারে এই এক ম্যাচেই। যদি সেরে না ওঠেন, কিংবা দল যদি গ্রুপ পর্বের পর আর না এগোয় তাহলে সার্বিয়ার ৯ ফাউলই শেষ করে দিতে পারে নেইমারের বিশ্বকাপ।
শুক্রবার ছিল ডিয়েগো ম্যারাডোনার মহাপ্রয়াণের দ্বিতীয় বার্ষিকী। প্রিয় তারকার স্মরণে কাল দোহার কনমেবল কর্নারে হয়েছে নানা আয়োজন। যেখানে ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো কিংবদন্তির ’৮৬-র বিশ্বকাপ হাতে মূর্তি উন্মোচন করেন। হাজারো ভক্ত স্মরণ করেন প্রিয় তারকাকে। মেসিদের ভাবনায়ও ছিলেন বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক। আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বরের ’৮৬-র সেই কীর্তির পুনরাবৃত্তির স্বপ্ন নিয়ে কাতারে আসা আর্জেন্টিনাকে প্রথম ম্যাচেই বড় ধাক্কা দিয়েছে সৌদি আরব। সেই ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াতে অভিযানে আজ আর্জেন্টিনার দিতে হবে অগ্নিপরীক্ষা। মেক্সিকোর বিপক্ষে জয়টা মেসিরা চান ম্যারাডোনাকে উৎসর্গ করতে।
কাল জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনিকে দিতে হয়েছে অনেক প্রশ্নের জবাব। শোনাতে হয়েছে আশার বাণী। করতে হয়েছে মোড় ঘোরানোর প্রতিশ্রুতি। তাতে কি আর স্বস্তি ফিরে সমর্থকদের মনে? পুঁচকে সৌদি কাছে হারের পর কোনো কথাতেই আর আশ্বস্ত হওয়া যাচ্ছে না। সমর্থকরা মাঠে দেখতে চায় মুখের কথার বাস্তব প্রতিফলন। আজ সেটা করতে না হলেই তো সব শেষ।
‘মেক্সিকোকে হারাও, নয় তো বিদায় হও’ এরকম সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে আজ লুসাইল স্টেডিয়ামে অগ্নিপরীক্ষা দিতে নামবে আলবিসেলেস্তেরা। এক হারে যেমন সবকিছু ওলট-পালট হয়ে গেছে, একটা জয়ও পারে সব ঝড় থামিয়ে দলটিকে কক্ষে ফেরাতে। সমর্থকদের এই দলটার ওপরে ছিল অগাধ বিশ্বাস। এরাই তো ব্রাজিলকে হারিয়ে দেশকে ২৮ বছর পর এনে দিয়েছিল কোপা আমেরিকা শিরোপা। এরাই স্বপ্নের ঘুড়িটাকে দূর আকাশে পৌঁছে দিয়েছিল টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে। তাহলে সৌদির সামনে সেই উত্তুঙ্গ আত্মবিশ্বাস কোথায় হারাল? কেনইবা হারাল?
স্কালোনি হারের ময়নাতদন্ত যতটুকুই করেছেন, তা প্রকাশ্যে আনেননি। সৌদির বিপক্ষে ঘর অরক্ষিত রেখে বারবার আক্রমণে ওঠার বড় শাস্তি পেতে হয়েছিল। স্কালোনির রক্ষণ কৌশল বিফলে গেছে। মেক্সিকোর বিপক্ষে তাই একাদশে পরিবর্তন অত্যাবশ্যকীয়। তবে স্কালোনি খেলার ধরনে পরিবর্তনের পক্ষে নন। যে কৌশলে দলটি এতদিন সাফল্য পেয়েছে, সেটি এক হারেই বদলে ফেলার লোক নন তিনি। তবে জানেন, মেক্সিকো তাদের কাজটা কঠিন করতে সম্ভাব্য সবকিছুই করবে। মেক্সিকোর কোচ গেরার্দো মার্তিনো এক সময় ছিলেন আর্জেন্টিনার দায়িত্বে। মেসি তার অধীনে বার্সেলোনাতেও খেলেছেন। এই আর্জেন্টাইন আজ নিজ দেশের সবচেয়ে বড় শত্রু। ডাগ আউটে তাই পূর্বসূরিকে পেছনে ফেলার একটা তাড়নাও থাকবে স্কালোনির।
কোপা আমেরিকার সুবাদে দু’দলের দেখা-সাক্ষাতের ঘটনা কম নয়। এ পর্যন্ত ম্যাচ হয়েছে ২৩টি। যার ১৫টিই জিতেছে আর্জেন্টিনা। দুটি মেক্সিকো। আর বাকি ছয় ম্যাচ ড্র। তবে শেষ ১০ ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে হারাতে পারেনি মেক্সিকো। আর বিশ্বকাপের মঞ্চে কখনই না। ১৯৩০ প্রথম বিশ্বকাপে ৬-৩, ২০০৬ বিশ্বকাপে ২-১ ও ২০১০ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা জিতেছিল ৩-১ ব্যবধানে। তবে সৌদি দুঃস্বপ্ন সামনে চলে আসলে এসব পরিসংখ্যান মিথ্যে হয়ে যায় নিমেষেই। স্কালোনি চান মেক্সিকোকে হারিয়ে সৌদি দুঃস্বপ্ন ভুলিয়ে দিতে, ‘সেদিনটা ছিল বড় কষ্টের। তবে পরের দিন যখন ঘুম ভাঙল, তখন থেকেই পরের ম্যাচ নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। সবাইকে বুঝিয়েছি, একটা বাজে দিন আসতেই পারে। আমরা ৩০-এর ওপরে ম্যাচে অপরাজিত ছিলাম। সেই রেকর্ড এখন আর নেই। একটু খারাপ লাগছে রেকর্ডটা ভেঙেছে বিশ্বকাপে। তবে এটাও ভালো যে আমরা প্রথম ম্যাচটা হেরেছি, যা আমাদের সতর্ক হতে বাধ্য করেছে। নিজেদের ভাগ্য আমরা নিজেরাই গড়ে নিতে পারি। আমরা আমাদের দায়িত্বটা জানি। ছেলেরা পরের দুই ম্যাচ জিততে সেরাটা উজাড় করে দেবে।’
সংবাদ সম্মেলনে একাধিক প্রশ্ন হয়েছে মেসিকে নিয়ে। কেমন আছেন খুদে জাদুকর? খেলবেন তো? কানাঘুষা ছিল বৃহস্পতিবার মেসি দলের সঙ্গে পুরোটা সময় অনুশীলন করেননি। পুরনো চোট মাথাচাড়া দেওয়ায় তার খেলা নিয়েও কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করেছিল। এসব উড়িয়ে দিয়ে আর্জেন্টাইন কোচ বলেন, ‘মেসিকে নিয়ে কোত্থেকে যে এসব বানোয়াট তথ্য পায় মানুষ। সে অনেক ভালো আছে। সেটা শারীরিক ও মানসিক দুই দিক থেকেই।’
মেক্সিকোর বিপক্ষে আর্জেন্টিনা একাদশ কেমন হবে? স্কালোনি দিয়েছেন পরিবর্তনের ইঙ্গিত, ‘হয়তো একাদশে কিছু পরিবর্তন ঘটবে। তবে পরিষ্কার করে বলতে চাই আমাদের খেলার ধরনে কোনো পরিবর্তন আসবে না। বিশ্বাস করি যারাই সুযোগ পাবে তারা দারুণ ফুটবল খেলবে। তবে পরিবর্তনগুলো সৌদির ম্যাচ দেখে হচ্ছে না। পরিবর্তন আসবে প্রতিপক্ষ বদলাচ্ছে বলেই।’
না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো কিংবদন্তিকে খুশি করতে কাল মাঠে নামতে চান মার্তিনেজ। স্মৃতিতে ম্যারাডোনাকে তুলে এনে আজ দোহায় সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা তাকে আমাদের হৃদয়ে ধারণ করেছি। আমাদের আর্জেন্টাইনদের জন্য তিনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাই তাকে আমরা সর্বোচ্চ উপায়েই স্মরণ করি। অবশ্যই তার চলে যাওয়ার দিনটা প্রত্যেকের জন্যই দুঃখের দিন। এবং আশা করি আগামীকাল আমরা তাকে খুশি করতে পারব।’
আর্জেন্টিনা কোচ বিশ্বাস করেন, মেক্সিকোও তাদের খেলায় কোনো পরিবর্তন আনবে না। কারণ দিন শেষে তাদেরও দরকার পয়েন্ট। নিজেদের ঘর সামলানোর পাশাপাশি মেসিদের গোলও করতে হবে। আর এই কাজটা কঠিন করতে আছেন গিলের্মো ওচোয়া। অভিজ্ঞ এই কিপার পোল্যান্ডকে জিততে দেননি বার্সা তারকা রবার্ট লেভানডফস্কির পেনাল্টি ঠেকিয়ে। ওচোয়া ছাড়া দলটিতে তারকার সম্ভার নেই। তবে দল হিসেবে বড্ড একতাবদ্ধ।
আরও একটা অতীত পরিসংখ্যান আশা দেখাবে আর্জেন্টিনাকে। ইউরোপের বাইরের দলগুলোর কাছে বিশ্বকাপ মঞ্চে কখনই পরপর দুই ম্যাচ হারেনি তারা। কঠিন বর্তমানকে অতীত পরিসংখ্যানের সঙ্গে মেলাতে পারলে আর্জেন্টিনা শিবিরে ফিরবে স্বস্তি। নইলে তৃতীয় বিশ্বকাপের অপেক্ষাটা দীর্ঘায়িত হবে। আর মেসিকে ট্র্যাজেডির নায়ক হয়েই বিদায় নিতে হবে।
ভারতীয় হাইকমিশনারকে জিম্মি করার কেন ওই অভিযান? কীভাবে পরিকল্পনা হয় সেটির? এমন নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কর্নেল তাহেরের ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের (বীরপ্রতীক) মুখোমুখি হন লেখক ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক সালেক খোকন
পঁচাত্তরের নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে অভ্যুত্থান আর পাল্টা অভ্যুত্থান বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয় সামরিক শাসনের অন্ধকার এক সময়ের দিকে। সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে যারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের প্রতিশোধ নেওয়ার কথা ভাবছিলেন, তাদেরই একটি অংশ ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ৩ নভেম্বর ঘটনাপ্রবাহের গতিপথ পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেন অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। ফলে বন্দি হন সেই সময়ের সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান। কিন্তু তিন দিনের মাথায় ৭ নভেম্বর পাল্টা অভ্যুত্থানে নিহত হন খালেদ মোশাররফ। কর্নেল তাহের ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেতৃত্বে সেই ঘটনাপ্রবাহ জিয়াকে নিয়ে যায় ক্ষমতার কেন্দ্রে। যে অভ্যুত্থানের কারণে নিশ্চিত মৃত্যু থেকে রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়েছিলেন জিয়া, উল্টো সেই অভ্যুত্থান ঘটানোর অভিযোগে ২৪ নভেম্বর কর্নেল তাহের, মেজর জলিলসহ প্রায় সব শীর্ষস্থানীয় জাসদ নেতাকে গ্রেপ্তার করেন তিনি। ২৬ নভেম্বর সকালে কর্নেল তাহেরসহ জাসদ নেতাদের মুক্তির দাবিতে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার সমর সেনকে জিম্মি করার চেষ্টা করেন জাসদ গণবাহিনীর ছয় সদস্যের সশস্ত্র একটি দল। কিন্তু তারা ব্যর্থ হন। ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হন এবং আহত অবস্থায় বেঁচে যান দুজন সৈয়দ বাহারুল হাসান সবুজ ও ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল। বেঁচে যাওয়া দুজনের মধ্যে সবুজের বক্তব্য বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে উঠে এলেও ওইদিনের ঘটনা ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের ভাষ্য আগে বিশদ জানা যায়নি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল (বীরপ্রতীক) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত নেত্রকোনা-৫ আসনের (পূর্বধলা) সংসদ সদস্য। একাত্তরে তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন এগারো নম্বর সেক্টরে। এ সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল আবু তাহের (তখন মেজর ছিলেন) তার বড় ভাই। তাদের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার কাজলা গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন একাদশ শ্রেণির ছাত্র। শেখ কামালের হাত ধরেই তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ছাত্রাবস্থাতে গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন এ বীর মুক্তিযোদ্ধা।
আলাপচারিতার শুরুতেই কথা হয় জাসদ ও গণবাহিনী গঠন প্রসঙ্গে। বেলাল নিজের মত তুলে ধরেন ঠিক এভাবে ‘দেখুন, আমি ও বাহার জাসদে যুক্ত ছিলাম না। কিন্তু কর্নেল তাহের, আনোয়ার ভাই, সাঈদ ভাইদের মতো মুক্তিযোদ্ধারা কেন জাসদ করল সেটাও চিন্তায় আনা দরকার। বঙ্গবন্ধু উদ্যোগ নিলে হয়তো জাসদ হতো না। তখন উনাকেও ঘিরে ছিল মোশতাক চক্র। আবার সেই সময় জাসদ যে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের কথা বলত সেটা অনেকের কাছেই পরিষ্কার ছিল না।’
জাসদ করতেন না, তাহলে জাসদের কার্যক্রমে কেন অংশ নিয়েছিলেন?
‘পারিবারিকভাবে তো যুক্ত ছিলাম। কিন্তু চিন্তাভাবনা করে অফিশিয়ালি যুক্ত থাকা হয়নি। আমি ও বাহার অফিশিয়ালি জাসদ-গণবাহিনীর সঙ্গেও যুক্ত ছিলাম না। মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম। অপারেশন পরিকল্পনা, এক্সপ্লোসিভ ও অস্ত্র চালানোর ট্রেনিং ছিল। শুধুমাত্র ভাই কর্নেল তাহেরকে সেভ করতেই যুক্ত হয়েছিলাম। বড় ভাইকে মুক্ত করতে জীবন দেওয়ার শপথও নিয়েছিলাম। আমাদের কাজ করার ক্ষেত্রেও জাসদ বা গণবাহিনীর সদস্যদের কোনো আপত্তি ছিল না তখন।’
পঁচাত্তরের ২৬ নভেম্বর আপনারা ভারতীয় হাইকমিশনে অভিযান চালান। ওই অভিযানে আপনি আহতও হন এবং আপনার বড় ভাই শাখাওয়াত হোসেন বাহারসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এমন অভিযানের প্রস্তুতি কি আগেই ছিল?
‘একটা সুইসাইডাল স্কোয়াড (আত্মঘাতী দল) আগেই গঠন করা ছিল।’
কেন?
‘বড় কোনো নেতাকে যদি ধরে নিয়ে যায়। তাহলে ওই স্কোয়াডটা কাজ করবে, বিদেশি কাউকে জিম্মি করে তাকে ছাড়ানোর জন্য। এ ধরনের একটা চিন্তা আগেই ছিল। মূলত আনোয়ার ভাই (আনোয়ার হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি) ছয়জনের ওই স্কোয়াড তৈরি করে দেন। তখন তিনি ছিলেন জাসদ-গণবাহিনীর ঢাকা সিটির কমান্ডার।’
সুইসাইডাল স্কোয়াডে কারা কারা ছিলেন?
‘ছয়জনের ছদ্মনাম ছিল এমন আসাদ, বাচ্চু, মাসুদ, হারুন, আমি ফিরোজ আর সবুজ।’
কার কোন নাম?
‘শাখাওয়াত হোসেন বাহারের ছদ্মনাম ছিল আসাদ, নজরুল ইসলামের ছদ্মনাম বাচ্চু, মাসুদ উদ্দিনের নাম মাসুদ, হারুনুর রশিদের ছদ্মনাম ছিল হারুন। আমার নাম ফিরোজ আর সৈয়দ বাহারুল হাসান সবুজের ছদ্মনাম সবুজই ছিল।’
অভিযানের লক্ষ্য কী ছিল?
‘একজন অ্যাম্বাসেডরকে (রাষ্ট্রদূত) জিম্মি করার মাধ্যমে কর্নেল তাহেরসহ জাসদ নেতাদের মুক্ত করতে জিয়া সরকারকে বাধ্য করানোর পরিকল্পনা ছিল। আগেই টার্গেট ছিলেন বোস্টার (ডেভিস ইউজিন বোস্টার), যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন অ্যাম্বাসেডর। তাকে জিম্মি করতে রেইকিও সম্পন্ন করা হয়। ধানম-ি মাঠের উল্টো দিকে ইউনিসেফের একটি অফিস ছিল। ওখানেই বোস্টার থাকতেন। প্রতিদিন সেখান থেকেই যেতেন আদমজী বিল্ডিংয়ে। আমেরিকান অ্যাম্বাসি তখন ছিল ওখানে। মোটরসাইকেলে তাকে ফলো (অনুসরণ) করতাম। শুনেছি তিনি ছিলেন কমান্ডো। সেজন্য তার অ্যাকটিভিটিগুলো (গতিবিধি) ভালোভাবে জেনে নিই। বিকেল বেলা তিনি স্কোয়াশ খেলতে যেতেন ঢাকা ক্লাবে। গ্যালারিতে বসে তার খেলাও দেখেছি। এভাবে তাকে চোখে চোখে রাখি। আর নির্দেশের অপেক্ষায় থাকি।’
তাহলে কেন ভারতীয় হাইকমিশনে অপারেশন (অভিযান) করলেন?
‘পুরো পরিকল্পনাটি ছিল আনোয়ার ভাইয়ের। একদিন তিনি ডেকে বললেন অপারেশন করতে। আমরা তো আগেই প্রস্তুত, বোস্টারকে জিম্মি করতে। উনি বললেন, বোস্টার নয়, ইন্ডিয়ান হাইকমিশনার সমর সেনকে করতে হবে। শুনে থমকে গেলাম। বলে কি! কর্নেল তাহের সবসময় বলতেন, কোনো কারণে ভারতীয় অ্যাম্বাসি অ্যাটাক করবা না। কারণ ওরা প্রতিবেশী দেশ। এতে ইন্টারভেশন (হস্তক্ষেপ) হয়ে যেতে পারে। ওই অজুহাতে ওরা ভেতরে ঢুকে পড়তে পারে।’
‘আনোয়ার ভাইকে বলে ফেললাম, না, এটা করা ঠিক হবে না। তাছাড়া সমর সেনকে আমরা কোনো সময় রেইকি করিনি।’ উনি বললেন, ‘রেইকি করো। সময় দিলাম একদিন’। বললাম, ‘একদিনের রেইকিতে কোনো অপারেশন করিনি।’ তিনি বললেন, ‘করতে হবে, ইটস এন অর্ডার। ডু ইট’।
এ বিষয়ে তার কি কোনো ব্যাখ্যা ছিল?
‘ছিল। ৭ নভেম্বরের পর জাসদের ওপর একটা কালার দিয়ে দেওয়া হয় যে, এরা ইন্ডিয়ার (ভারত) দালাল। মানুষ তা বিশ্বাসও করত। আনোয়ার ভাইয়ের মনে হয়েছে, কর্নেল তাহেরকে মুক্ত করার অংশ হিসেবেই ইন্ডিয়ান হাইকমিশনে অপারেশন করলে ওই অপবাদটা কমবে। এছাড়া তিনি বোঝালেন, ইন্ডিয়ান হাইকমিশনারকে যদি জিম্মি করা হয় তাহলে কেউ ধারণাও করতে পারবে না যে এটা জাসদের কাজ।’
রেইকি কীভাবে করলেন?
‘ইন্ডিয়ান হাইকমিশন তখন ছিল ধানম-ি দুই নম্বরে। সহযোদ্ধা মাসুদের একটা কানেকশন (সংযোগ) ছিল সেখানে। অ্যাম্বাসির সেক্রেটারি মি. মুখীর সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। ফলে সে খুব সহজে গিয়ে রেইকিটা করে আসে। ফিরে এসে জানাল, ‘ছয়জনকে আমাদের ওভারকাম করতে হবে। সমর সেনের সঙ্গে চারজন সিকিউরিটি গার্ড থাকে। তাদের হাতে অস্ত্র থাকে ইন্ডিয়ান এসএমজি। সমর সেন গাড়ি নিয়ে আসতেন মেয়েসহ। তাকে নামিয়ে দিয়েই মেয়েকে নিয়ে গাড়ি চলে যেত। পেছনে আরেকটি গাড়িতে থাকত গার্ডরা।’
আপনাদের পরিকল্পনাটি কেমন ছিল?
‘পরিকল্পনা ছিল সমর সেনকে ভেতরে নিয়ে সমস্ত হাইকমিশনের কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণ) আমাদের হাতে নিয়ে নেওয়ার। ছয়জনের স্কোয়াডটি তিনজন করে দুটো ভাগে ভাগ হব। তিনজন গিয়ে দাঁড়াবে ইন্ডিয়ান হাইকমিশনের উল্টোদিকে, জার্মান কালচারাল সেন্টারের কাছে। সমর সেনের গাড়ির পিছু পিছু অন্য তিনজন ভেতরে ঢুকবে। তখন পেছনের তিনজন এসে জয়েন করবে। এভাবেই আমরা ভেতরে ঢুকে যাব।’
পরিকল্পনা মতোই কি সব ঘটল?
‘হ্যাঁ। ২৬ নভেম্বর ১৯৭৫। সকাল ১০টার দিকে অ্যাকশনে গেলাম। আমি, বাহার ও সবুজ গেইটের সামনে, অ্যাডভান্স পার্টিতে (অগ্রগামী দল)। অস্ত্র ছিল পিস্তল ও রিভলবার। একটা মার্সিডিজ গাড়িতে করে সমর সেন গেইটের ভেতরে ঢুকেন। কাজের অজুহাতে আমরাও ভেতরে যাই। তিনি গাড়ি থেকে নামেন। পেছন থেকে আমাদের তিনজনের গ্রুপ এসে চারজন সিকিউরিটি গার্ডের স্টেনগানগুলো নিয়ে নেয়। আমরা তা দেখলাম। সমর সেন বেশ লম্বা। দোতলায় উঠতে উনি সিঁড়িতে পা রাখলেন। তখনই আমি এক পাশে তার হাত ধরে রিভলবার ঠেকালাম। অন্যপাশে সবুজ ও পেছনে বাহারও রিভলবার ঠেকায়। তখনই আমি বললাম, ‘মিস্টার সেন টেল ইওর ম্যান নট টু ফায়ার। আদারওয়াইজ, আই শ্যাল কিল ইউ’। উনি এদিক ওদিকে তাকিয়ে কাঁপছেন। লম্বা হওয়াতে তাকে আমরা ফিজিক্যালি গ্রিপে (কব্জা) পাচ্ছিলাম না। ফলে এক সময় তিনি পড়ে যান।’
“ঠিক তখনই একটা সিঙ্গেল শট ফায়ার হয়। তাকিয়ে দেখি চারপাশে ‘ব্লাকক্যাটে’ ভরা। ভেতরের রুম থেকে অস্ত্র হাতে আরও লোকজন বের হচ্ছে। চারজন সিকিউরিটি ছাড়াও সেখানে যে উনিশ জন ‘ব্ল্যাকক্যাট’ সৈন্য ছিল এটা আমাদের জানা ছিল না। মূলত বঙ্গবন্ধু হত্যার পরই অ্যাম্বাসিতে এই ‘ব্লাকক্যাট’ দেয় ইন্ডিয়ান গভর্নমেন্ট। তারা লুকিয়ে থাকত ভেতরে। পেছন থেকে ওরা প্রথম ফায়ার করে বাহারকে। সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। গুলি খেয়েও বাহার বলতে থাকে, ‘ডোন্ট কিল সমর সেন’। কারণ তাকে মারলে যদি ইন্ডিয়া ইন্টারভেশন করে। এ চিন্তাটা তখনো বাহারের ছিল।”
‘হাইকমিশনে ঢোকার সময় সাদা পোশাকে যে দারোয়ান ছিল তার হাতেও দেখি পিস্তল। সেও ফায়ার করছিল। অনেক গুলি চলছে। হঠাৎ মনে হলো কেউ আমাকে জোরে ধাক্কা দিয়েছে। অনুভব করলাম একটা গুলি এসে লেগেছে ডান কোমরে। সবুজের শরীরের নানা জায়গায়ও লাগে ৬-৭টা বুলেট। প্রচ- ব্লিডিং হচ্ছিল ওর। ওইসময় সমর সেনেরও গুলি লাগে। নিচে পড়ে থাকে আমাদের বাকি চারজনের ডেড বডি। অর্ধেক দোতলা থেকে আমরাও সমর সেনসহ এসে পড়ি নিচে। সিকিউরিটি গার্ডরা দ্রুত তুলে নেয় তাকে।’
এরপর কী ঘটল?
‘সবুজকে নিয়ে আমি একটা রুমে আশ্রয় নিই। রুমের দরজার পাশে চিকন গ্লাস দেওয়া। ওইদিক দিয়ে ফায়ার করে ইন্ডিয়ান সিকিউরিটি গার্ড। আর জানালা দিয়ে ফায়ার করছিল বাংলাদেশের পুলিশ। এত গুলি আসছিল যে রুমের জিনিসগুলো উড়ে উড়ে যাচ্ছিল। সেখানে আরও দুজন বৌদ্ধ লোক ছিল। কোনো কাজে এসেছিল তারা। তাদের নিয়ে এক কোনায় লুকিয়ে থাকি আমরা। চিন্তা তখন একটাই বাঁচতে হবে।’
‘রিভলবারটা কার্পেটের নিচে ফেলে দিই। ২৫-৩০ মিনিট পর গুলি থামতেই সারেন্ডার (আত্মসমর্পণ) করি। প্রথমে স্বীকার করিনি। বলেছিলাম আমরা সাধারণ লোক, ভিসার জন্য এসেছি। বাইরে যেতেই দেখি আর্মি চলে এসেছে। ওরা পিকআপ ভ্যানে আমাদের তুলে নেয় সিএমএইচে (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল)। হাইকমিশনে অপারেশন সাকসেসফুল (সফল) হলে রেডিওতে কী বক্তব্য দেওয়া হবে সেটাও রাখা ছিল পেছনের পকেটে। যাওয়ার পথে কৌশলে সেটি ফেলে দিই। আমার কোমর থেকে গুলি বের করে আনা হয় সিএমএইচে। পরে সেখানেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই মামলায় পাঁচ বছরের সাজা হয়েছিল আমার আর সবুজের। জেল খেটেছি কোনো আফসোস নেই। কিন্তু তাহের ভাইকে তো মুক্ত করতে পারলাম না। বরং বাহারের মতো বন্ধু ও ভাইকে হারিয়েছি ওইদিন। সে স্মৃতি এখনো আমাকে কাঁদায়। ওই অপারেশনটা ছিল একটি মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত।’
ওই ঘটনায় কর্নেল তাহেরের মত কি জানতে পেরেছিলেন?
‘তাহের ভাইয়ের সঙ্গে শেষ দেখা হয় কারাগারে, আট (নম্বর) সেলে। তার ফাঁসির আগেরদিন। ভারতীয় হাইকমিশন অ্যাটাকের বিষয়টিতে উনি বেশ বিরক্ত হয়েছিলেন। এক কথায় বললেন, ‘ইউ হ্যাভ ডান এ গ্রেট ব্লান্ডার। কাজটা ঠিক হয়নি।’
কর্নেল তাহেরকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
‘মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল তাহের শতভাগ সফল। জাসদে তার যেটুকু দায়িত্ব ছিল, তার যে অ্যাসাইনমেন্ট (কর্তব্য) ছিল, তিনি তা শতভাগ পালন করেছিলেন। কিন্তু জাসদের বাকি নেতারা তা করেননি। ফলে আমরা আমাদের ভাইকে হারিয়েছি। ফাঁসির মঞ্চে তিনি হাসিমুখে গিয়েছিলেন। আমার মনে হয়, কর্নেল তাহের মৃত্যুটাকে আলিঙ্গন করেছেন। হয়তো তিনি ভেবেছেন যে তার মৃত্যুর মধ্য দিয়েই উনি যে স্বপ্নটা দেখেছেন সেটা প্রজন্মের কাছে বেঁচে থাকবে।’
নগরীর বন্দরটিলার নয়ারহাটের খালপাড় সংলগ্ন তিনতলা একটি ভবন ঘিরে আশপাশের মানুষের কৌতূহল। ভিড় ঠেলে সামনে এগোতেই শুনতে পাওয়া যায় ভবনটির দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাট থেকে ভেসে আসা বুকভাঙা বিলাপ ও আহাজারির শব্দ। ফ্ল্যাটটিতে ঢুকেই অতিথি কক্ষে দেখা যায়, বিলাপ করতে করতে এক নারী বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। চেতনা ফিরলেই নিজের চার বছর ১১ মাস বয়সী মেয়ে আলীনা ইসলাম আয়াতকে খুঁজে ফিরছেন। তিনি ১০ দিন আগে নিজ বাসার সামনে থেকে নিখোঁজ হওয়া আয়াতের মা শাহেদা আক্তার তামান্না।
বিলাপ করতে করতে বারবার বলছিলেন, ‘আমার এই ৪ বছরের বাচ্চাটাকে কীভাবে ছয় টুকরা করে কেটে ফেলল আবীর। কী দোষ ছিল আমার মেয়েটার। আমরা তো কোনোদিন কারও ক্ষতি করিনি, তাও কেন আমাদের সঙ্গে আল্লাহ এমন করলেন? বাচ্চাটা আমার মক্তবে যাচ্ছিল পড়তে, কিন্তু এখন তার ছোট্ট শরীরটাই আর দেখতে পেলাম না।’ কাঁদতে কাঁদতে ফের মূর্ছা যান তামান্না। প্রতিবেশী নারীরা শত চেষ্টা করেও তার মন ভোলাতে পারেননি। এই চিত্র গতকাল শুক্রবার দুপুরের।
গত ১৫ নভেম্বর নিজ বাড়ির সামনে থেকে নিখোঁজ হওয়া আলীনা ইসলাম আয়াত মুক্তিপণের জন্য অপহরণের পর হত্যার শিকার হয়েছে। অপহরণকারী এক তরুণ তাকে হত্যার পর লাশ কেটে ছয় টুকরা করে সাগর ও খালে ভাসিয়ে দিয়েছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কর্মকর্তারা বলছেন, গতকাল আবীর আলী (১৯) নামে অপহরণকারী ওই তরুণকে আটকের পর এসব তথ্য জানতে পেরেছেন তারা। আবীরের পরিবার শিশু আয়াতের বাসায় ভাড়া থাকে।
শাহেদা আক্তার তামান্নার পাশে বসে বুক চাপড়ে নিজের নাতনিকে এনে দেওয়ার কথা বলছিলেন আয়াতের নানি। আহাজারি করতে করতে তিনি বলেন, ‘আমার নাতিকে যে এমন নৃশংসভাবে মেরেছে তাকে আমাদের কাছে আনো, তাকে আমি জিজ্ঞেস করতে চাই এই মাসুম বাচ্চাটা কী করেছিল তার?’
বাসাটির আরেকটি কক্ষে কান্নারত আয়াতের ছোট চাচা সুমন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আবীর আমাদের অনেক পুরনো ভাড়াটিয়া। আমার ভাতিজিকে ডাক দিলেই সে দৌড়ে আবীরের কোলে উঠত। কিন্তু এই আবীর যে আমার মেয়ের মতো ভাতিজিকে এভাবে টুকরো করবে তা আমার কল্পনাতেও নেই। কী দোষ ছিল আমার আয়াতের? ঘটনার দিনও আমার ভাতিজিকে সে ডেকে বাসায় নিয়ে গেছে আর শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলেছে।’
মেয়ে হত্যার শিকার হয়েছে এমন তথ্য জানার পর শোকে স্তব্ধ হয়ে যান আয়াতের বাবা সোহেল রানা। তিনি শুধু বলেন, ‘যেদিন আমার আয়াত হারায়, সেদিন আবীরও আমাদের সঙ্গে আয়াতকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। আমি তাকে কত করে জিজ্ঞেস করলাম, সে আমার আয়াতকে দেখেছে কি না। কিন্তু সে জানায়, আয়াতকে দেখেনি। এত বড় ঘটনা ঘটিয়ে সে একটুও ভয় পায়নি। সে আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে ছিল এবং বুঝতে দেয়নি সে কত বড় অপরাধ করেছে।’
নিজ বাসা থেকে মক্তবে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয় আয়াত। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও আশপাশে তাকে না পেয়ে ইপিজেড থানায় জিডি করা হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। কিন্তু আয়াতের দাদা মো. মঞ্জুর কাছে বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তিনি পিবিআই অফিসে যান সহযোগিতার জন্য। এরপর পিবিআইয়ের চট্টগ্রাম অফিসের কর্মকর্তারা জিডির ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেন। তারা স্থানীয় শিশুদের কাছ থেকে জানতে পারেন যে ঘটনার দিন আবীর নামে এক যুবক আয়াতকে কোলে নিয়ে ঘুরছিল। পরে পিবিআই কর্মকর্তারা আবীরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে আয়াতকে কোল থেকে নামিয়ে নিজের কাজে চলে গিয়েছিল বলে জানায়। এরপর আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আয়াত নিখোঁজের পরদিন ভোর ৬টার একটি ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বের হচ্ছে আবীর। ব্যাগটি সাধারণ আকারের চেয়ে বেশি বড় হওয়ায় তাকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করেন পিবিআই কর্মকর্তারা। তখন সে জানায়, তার মা-বাবা আলাদা হয়ে যাওয়ায় সে তার মালামাল মায়ের নতুন বাসা আকমল আলী রোড এলাকায় নিয়ে যেতে বড় ব্যাগ ব্যবহার করেছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ব্যাগটা দেখাতে বললে সে তা দেখাতে পারেনি। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে গতকাল জানায়, ওই ব্যাগে শিশু আয়াতের খণ্ডবিখণ্ড ছয় টুকরা লাশ ছিল। যা সে খালে ও বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিয়েছে।
নিহত আয়াতের বাড়ির পাশের ফোরকান নামে এক গার্মেন্টসকর্মী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আবীর এখানে অনেকদিন থেকে থাকে এবং ইপিজেডের একটি প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। বেশ কিছুদিন থেকে দেখতাম আয়াতের সঙ্গে মিশতে চেষ্টা করত, আদর করত। ভাবতাম একই ভবনের বাসিন্দা এবং আয়াতও ছোট তাই আদর করে। কিন্তু তার আদরের পেছনে এত বড় ভয়াবহতা ছিল তা আজকের ঘটনা উদঘাটন না হলে কখনো জানতেই পারতাম না কীভাবে একটি বাচ্চাকে এভাবে শ্বাসরোধ করে মেরে টুকরো করতে পারে।’
আয়াত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পিবিআই চট্ট-মেট্রোর পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আয়াতের নিখোঁজের বিষয়টা আমাদের হাতে আসার পর আমরা খুব গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করি। বিভিন্নজনকে জিজ্ঞাসাবাদ ও সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে গিয়ে আবীরের বিষয়টি জানতে পারি। প্রথমবার জিজ্ঞাসাবাদে সে কিছুই জানে না বলে দাবি করে। কিন্তু ফুটেজে দেখা যায়, তার কাছে বড় ব্যাগ আছে এবং তা নিয়ে কোথায় যাচ্ছিল জানতে চাইলে বাসা পরিবর্তনের কথা বলে। তখন আমরা একটি টিম তার বাসায় পাঠালে সে ব্যাগটি দেখাতে পারেনি। বাসার ভেতরে তদন্ত করতে গিয়ে আমরা বাথরুমের ওপর সানশেডে জমাট রক্ত দেখতে পাই। তখন আবীরকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে আয়াতকে হত্যার বিষয়টা স্বীকার করে।’
পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আবীর গত ছয় মাস ধরে আয়াতকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করবে বলে পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সে এই কাজ করতে পারেনি। পরে গত ১৫ নভেম্বর অপহরণ করে নিজের বাসায় নিয়ে গেলে আয়াতের চেঁচামেচিতে আবীর ভয় পায় এবং তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরবর্তী সময়ে রাতের কোনো এক সময় আয়াতকে কেটে ছয় টুকরো করে। আসিফ নামে এক বন্ধুর সাহায্য নেয় বস্তা ও রিকশা এনে দিতে। কিন্তু আয়াতের লাশ ছয় টুকরো করে তিন টুকরো খালে আর তিন টুকরো সাগরে ফেলে দেওয়ার পুরো কাজটা সে একাই করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আবীর প্রায়ই টেলিভিশন সিরিজ ক্রাইম পেট্রোল ও সিআইডি দেখত, আর শেখার চেষ্টা করত কীভাবে অপহরণ ও লাশ গুম করে স্বাভাবিক, সাবলীল থাকা যায়। আয়াতকে অপহরণ ও টুকরো করার পর সে খুব স্বাভাবিকভাবেই সবার সঙ্গে মিলে নিখোঁজ আয়াতকে খুঁজতে পরিবারকে সাহায্য করে।’
নিহত আয়াতের খণ্ড দেহাবশেষগুলো উদ্ধার সময়সাপেক্ষ জানিয়ে পিবিআই কর্মকর্তা নাঈমা সুলতানা বলেন, ‘যেহেতু সে (আবীর) তিন টুকরো জোয়ারের আগে খালে এবং বাকি তিন টুকরো সাগরে ফেলেছে। তাই পানির স্রোতে দূরে কোথাও চলে গিয়েছে। আমরা আয়াতের লাশ খুঁজতে এখন মাঠে আছি।’
ব্রাজিলিয়ান অঙ্কনশিল্পী গিলমার পাইভাকে বিশ্ব ফুটবলের অনেকেই হয়তো চেনেন না। তবে এখন থেকে তিনি আর অচেনা থাকবেন না। সার্বিয়ার বিপক্ষে অ্যাক্রোবেটিক স্টাইলে করা রিচার্লিসনের গোলের ছবি এঁকে ফুটবল বিশ্বে পরিচিতি পেয়ে গেলেন। সেই পরিচিতি এনে দিয়েছেন স্বয়ং ব্রাজিল তারকা। পিঠে পাখাযুক্ত বাইসাইকেল কিক ভঙ্গির সেই ছবিটা রিচার্লিসন নিজে টুইটারে শেয়ার দিয়েছেন। তাতে গতকাল বিকেল পর্যন্ত লাইক ১৩ লাখের ওপর। শুধু ছবি নয়, গোলটাই যে হইচই ফেলে দিয়েছে ফুটবলাঙ্গনে। গোল বলের খেলায় ফুটবলারদের উইন্ডিমিলের মতো শূন্যে ভেসে নেওয়া শটে লক্ষ্যভেদ করার নজির অনেক আছে। জøাতান ইব্রাহিমোভিচ. ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, গ্যারেথ বেলরা সেই কীর্তি করে দেখিয়েছেন ক্লাব ফুটবলে। ওই গোলগুলোও চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। তবে রিচার্লিসনের গত পরশুর গোল বিশ্বকাপের, তাই এ গোলের মহত্ত্ব বিশেষ। চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো সুন্দর গোলটি তাই রিচার্লিসনেরও ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা।
এই বিশ্বকাপটা তার জন্য একটু দুশ্চিন্তা নিয়েই শুরু হয়। টটেনহ্যামের হয়ে মৌসুমে ১০ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন অথচ গোল নেই। একজন জাত স্ট্রাইকারের জন্য তা একেবারে বেমানান। এই ফর্ম নিয়ে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ে রিচার্লিসন অবদান রাখবেন কী করে! সার্বিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে গোল করার আগ পর্যন্ত তাকে খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছিল না মাঠে। কিন্তু ৬২ মিনিটেই সব বদলে ফেলেন রিচি। নিজের প্রথম গোলের আগে মাত্র দুবার বলে পা ছোঁয়াতে পেরেছিলেন। ফুটবল ম্যাচে প্রথমার্ধ শেষ হয়, দ্বিতীয়ার্ধের ১০ মিনিট পার হয়ে যায় কিন্তু স্ট্রাইকারের পায়ে বল যায় মাত্র দুবার। ব্যাপারটি কেমন যেন। কিন্তু তৃতীয় টাচকেই স্বর্ণে পরিণত করেন রিচি। প্রথম গোল করে ব্রাজিলকেও এগিয়ে দেন। আর প্রায় ১০ মিনিট পর ওই অবিশ্বাস্য বাইসাইকেল কিকের গোল, যা এই বিশ্বকাপের সেরা গোলের তালিকায় ওপরেই থাকবে।
ম্যাচ শেষে সেরার পুরস্কার নেওয়া সাবেক এভারটন স্ট্রাইকার বলছিলেন গোল করার আগে গোলের গন্ধ পাচ্ছিলেন। ঠিক যেমন দক্ষ শিকারি শিকারের আগে জন্তুর ঘ্রাণ পেয়ে থাকেন। কোচ তিতেকে ব্রাজিল দলের সবাই প্রফেসর বলে ডাকেন। স্ট্রাইকারদের উজ্জীবিত করতে ম্যাচের মধ্যে তাদের গোলের ঘ্রাণ পাওয়ার কথা বলেন তিতে। রিচার্লিসন সেই দিকটি মাথায় এনেছিলেন ম্যাচে, ‘প্রফেসর (তিতে) যেমনটি বলেন, তুমি গোলের ঘ্রাণ পাচ্ছ, আমার ক্ষেত্রেও তাই। আমি গোলের ঘ্রাণ পাচ্ছিলাম এবং তাই ঘটেছে। এটি আমাদের জন্য দুর্দান্ত একটি রাত ছিল। একটি সুন্দর জয় অবশ্যই এবং লক্ষ্যে পৌঁছতে আমাদের আর ছয়টি ম্যাচ বাকি আছে।’
অথচ তিতে না হয়ে অন্য যে কোনো কোচ ১০ ম্যাচে গোল না করা স্ট্রাইকারকে সেরা একাদশে রাখতে দুবার ভাবতেন। ব্রাজিলের হয়ে দারুণ ফর্মে থাকায় তিতে সেই পথে হাঁটেননি। টটেনহ্যামের হয়ে গোল না পেলেও এই মৌসুমে জাতীয় দলের জার্সিতে দুর্দান্ত ছুটছেন রিচি। শেষ ৭ ম্যাচে করেছিলেন ৯ গোল। তিতে জানালেন রিচি অফফর্মে থাকলেও চিন্তা নেই তার, ‘আমাকে অবশ্যই বলতে হয় ব্রাজিল দলে এমন ৬-৭ জনের নাম বলতে পারি যাদের সবাইকে আপনি স্ট্রাইকার হিসেবে খেলাতে পারেন এবং তাতে সেরা একাদশ গড়তে আপনার বিন্দুমাত্র সমস্যা হবে না। আমি রিচির ওপর ভরসা রেখেছি কারণ সে আগে ভালো করেছে এবং সে আস্থার প্রতিদান দিয়েছে। যেভাবে সে দ্বিতীয়ার্ধে বল নিয়ন্ত্রণ করেছে তা অসাধারণ এবং ওই গোলটা অবিশ্বাস্য।’
এক ম্যাচে জোড়া গোল করে ২০১৪ সালে নেইমারের পর প্রথম ব্রাজিলিয়ান হিসেবে অভিষেক বিশ্বকাপে একাধিক গোল করলেন রিচার্লিসন। তার গোল নিয়ে বিবিসি টুইটারে আলোচনায় যোগ দেন গ্যারি লিনেকার, অ্যালান শিয়েরার ও ২০০২ বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল ডিফেন্ডার গিলবার্তো সিলভা। লিনেকার নিজে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন এই গোলের। এরপর গিলবার্তোকে জিজ্ঞাসা করেন এটাই আসরের সেরা গোল কি না। জবাবে ব্রাজিল তারকা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত অবশ্যই এটা সেরা গোল। রিচার্লিসন অনেক পরিশ্রম করছে। এটা তার প্রাপ্য ছিল। সে এই মুহূর্তে ব্রাজিলের সেরা স্ট্রাইকারদের একজন।’ সাবেক ইংল্যান্ড লিজেন্ড অ্যালান শিয়েরার রিচার্লিসনকে ব্রাজিলের স্বর্ণ বলেছেন, ‘ওর গোলগুলো সবসময় ভিন্ন হয়। প্রথম গোলটিও আমাকে একই রকম তৃপ্তি দিয়েছে যেমন দ্বিতীয়টা। টটেনহ্যামের হয়ে হয়তো সে এখনো গোল করেনি কিন্তু ব্রাজিলের হয়ে সে স্বর্ণে পরিণত হয়েছে।’
এদিকে রিচার্লিসনের অবিশ্বাস্য গোলের প্রশংসায় গলে যাচ্ছে বিশ্ব মিডিয়া। তাদের দাবি বিশ্বকাপের মঞ্চে এমন গোল প্রশংসার যে কোনো শব্দ বা ভাষাকেই হার মানায়। জার্মান দৈনিক বিল্ড লিখেছে স্বপ্নের গোল। ব্রিটিশ গার্ডিয়ান রিচার্লিসনের গোল করার মুহূর্তের ছবি দিয়ে লিখেছে খেলাটা কত সুন্দর তা আপনাদের দেখাই। নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে অসাধারণ, ঠিক যেন বায়ুচক্র (উইন্ডমিল)। ক্রীড়াক্ষেত্রে খ্যাতিমান স্প্যানিশ দৈনিক মার্কা নিজেদের স্প্যানিশ ভাষা ত্যাগ করে ব্রাজিলিয়ান পর্তুগিজ শব্দ দিয়ে হেডলাইন করেছে। এছাড়া ফিফা মাত্র তিন বর্ণে এই গোলের ব্যাখ্যা করেছে ওয়াও।
রাজনীতির ময়দানে হেফাজতে ইসলাম বেশ আলোচিত সংগঠন। তবে এখন অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। সংগঠনটি কেন্দ্রীয় ও মহানগর পর্যায়ের কমিটি পুনর্বিন্যাস এবং সম্প্রসারণ করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সম্প্রতি। আগামী ১৭ ডিসেম্বর ঢাকায় উলামা-মাশায়েখ সম্মেলন করবে হেফাজত।
কারাবন্দি হেফাজত নেতাকর্মীদের মুক্তি ও তাদের নামে ২০১৩ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দায়ের হওয়া বিভিন্ন মামলা প্রত্যাহারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেবেন হেফাজতের আমির। গত ৩১ অক্টোবর হাটহাজারী মাদ্রাসায় সংগঠনের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অন্যদিকে সরবে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি ওয়াজ মাহফিলকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত সময় পার করছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। আর নীরবে দল গোছানোর কাজে ব্যস্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গী ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো।
সরকারের সঙ্গে থাকা ইসলামি দল
প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে রয়েছে সর্বাধিকসংখ্যক নিবন্ধিত ইসলামি দল। বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন (নজিবুল বশর) আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের এবং ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ (বাহাদুর শাহ) মহাজোটের শরিক। একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাকের পার্টির (মোস্তফা আমীর) সঙ্গে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী সমঝোতা হয়েছিল। এসবের বাইরে অনিবন্ধিত বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট (মিছবাহুর রহমান চৌধুরী) প্রকাশ্যেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্য রেখে চলে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে জাকের পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শামীম হায়দার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সেভাবে কোনো জোটে নেই। গত নির্বাচনে ৯১ আসনে গোলাপ ফুল প্রতীকে আমাদের প্রার্থীরা আলাদাভাবে নির্বাচন করেছে। তবে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের ‘চমৎকার বোঝাপড়া’ আছে। এটা অব্যাহত থাকবে।’
একাধিক রাজনীতি-বিশ্লেষকের মতে, ‘কওমি ও ইসলামপন্থিদের বেশি করে কাছে টানা গেলে বিএনপির ভোট কমবে এই ভাবনায় ছোট-বড় সব ধর্মভিত্তিক ‘রাজনৈতিক’ দল, সংগঠন ও ব্যক্তির সঙ্গে বিগত সময়ে সম্পর্ক বাড়িয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। কোনো কোনো দলকে প্রকাশ্যে জোটভুক্ত না করে আলাদাভাবে রাজনীতি ও নির্বাচনী মাঠে রেখেছে তারা।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে থাকা ইসলামপন্থি দলগুলোর মধ্যে একমাত্র সংসদ সদস্য নজিবুল বাশার মাইজভা-ারী। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হয়েছে তরীকতের দায়ের করা মামলায়। বর্তমান এবং তার আগের নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাবে তরীকত চমক দেখায়। বর্তমান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ও কমিশনার আহসান হাবিব খানের নাম তরীকত ফেডারেশনের তালিকায় ছিল। এর আগের প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা, কমিশনার রফিকুল ইসলাম ও শাহাদাত হোসেনও নিয়োগ পেয়েছিলেন তরীকত ফেডারেশনের তালিকা থেকে। নজিবুল বাশার আওয়ামী লীগ থেকে একবার ও তরীকত ফেডারেশনের প্রার্থী হিসেবে টানা দুইবার চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়ি থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হন। একই এলাকার লোক হওয়ায় নজিবুল বাশারের সঙ্গে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। বিগত সময়ে নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসন করে চমক সৃষ্টি করেছেন তিনি।
নির্বাচন ও হেফাজত নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক বিষয়ে নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ১৪ দলীয় জোটে আছি। বর্তমানে জোট আগের চেয়েও শক্তিশালী; শেখ হাসিনার নেতৃত্ব দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনেও মানুষ স্বাধীনতার পক্ষশক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটকেই নির্বাচিত করবে। আসন নিয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। এটা দর-কষাকষির বিষয় নয়, আলাপ-আলোচনার বিষয়। আর হেফাজত আমিরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক নতুন নয়, অনেক আগে থেকেই উনার সঙ্গে এবং কওমি কমিউনিটির সঙ্গে আমার চমৎকার সম্পর্ক।’
জাকের পার্টি ভোটের রাজনীতিতে এখন খুব একটা সক্রিয় নয়। ইসলামিক ফ্রন্ট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ বিভিন্ন স্থানীয় পরিষদের নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। গত জানুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানিয়েছে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ। এর বাইরে দলীয় প্রোগ্রাম ছাড়া রাজনীতিতে তাদের খুব একটা দেখা যায় না। ইসলামিক ফ্রন্টের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটা সত্য আমরা মহাজোটে ছিলাম; এখনো আছি। কিন্তু মহাজোট তো আর সেভাবে নেই। আমাদের সেভাবে মূল্যায়নও করা হয়নি। আমরা আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আলাদাভাবে ৩০০ আসনে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ তবে কি মহাজোট ছাড়বেন?এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জোট ছাড়ার কথা এখনো বলার সময় হয়নি, তেমন উপলক্ষও তৈরি হয়নি। দল হিসেবে আমাদের স্বতন্ত্র অবস্থান আছে। আমরা দলীয় কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’
বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মহাজোট পুনর্গঠিত হলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সেখানেই থাকব। আমার আপ্রাণ চেষ্টা থাকবে এবার দলকে নির্বাচনে নেওয়ার।’
আলোচনায় হেফাজত
ইসলামি দল সম্পর্কিত আলোচনায় ২০১০ সালে গঠিত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নানা কারণে প্রাসঙ্গিক। হেফাজত প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ‘অরাজনৈতিক’ সংগঠন হলেও এটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন বিভিন্ন ইসলামি রাজনৈতিক দলের নেতারা। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে অবস্থান-পরবর্তী সময়ে সমঝোতার অংশ হিসেবে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক এই সংগঠনের একাংশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলে। সরকারও নমনীয়তা দেখায় এবং কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে কওমি সনদের স্বীকৃতি দেয়। পরে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে হেফাজত বিবৃতি দিয়ে বলে, ‘হেফাজতে ইসলাম নির্বাচন করবে না, কাউকে মনোনয়ন দেবে না এবং কাউকে সমর্থনও করবে না।’
গত ১৪ নভেম্বর রাজধানীর খিলগাঁওয়ে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগর কমিটির পরিচিতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান হেফাজতের নেতাকর্মীদের নামে করা সব মামলা প্রত্যাহার ও ২০২১ সাল থেকে বন্দি আলেমদের মুক্তি দাবি করে বলেন, ‘হেফাজতের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই।’
হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুর পর ছয় মাসের মাথায় ২০২১ সালের মার্চ মাসে পরিস্থিতি বদলে যায়। ধোলাইখাল মোড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতার পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট আন্দোলন-সহিংসতার কারণে হেফাজতের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেপ্তার হন। অন্যদিকে হেফাজতের নতুন আমির মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীসহ শীর্ষস্থানীয় কয়েক নেতা ইন্তেকাল করেন। সরকারের চাপে বিপদ এড়াতে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সর্বস্তরের কমিটি ভেঙে ৩৩ সদস্যের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির কেউ রাজনৈতিকভাবে উল্লেখযোগ্য নন। রাজনীতিতে তাদের প্রভাব তেমন নেই। নতুন কমিটিতে জেলে থাকা ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিচয়ধারী নেতাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। আগামী নির্বাচনে সংগঠনটির ভূমিকা কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
হেফাজতে ইসলামের এক নায়েবে আমির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হেফাজত কোনো রাজনৈতিক দল নয়। নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো চিন্তাভাবনা নেই। যদিও আমাদের নেতাদের অনেকে রাজনীতি করেন, তাদের ভিন্ন দল আছে। তারা তাদের দলে সিদ্ধান্ত নেবেন। সেখানে হেফাজতের নাম ব্যবহৃত হবে না।’
তৎপর চরমোনাই পীরের দল
ইসলামি দলগুলোর মধ্যে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিমের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলীয় সরকারের অধীনে হওয়ায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি অংশ নেয়নি। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ আসনে প্রার্থী দেয়। অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচনের দিন ভোট বর্জন করে। সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হাতপাখা প্রতীকে অংশ নিয়ে দলটির ৯ জন চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়।
আগামী নির্বাচনে ইসলামি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আলাদা জোট বা নির্বাচনী সমঝোতার উদ্যোগ নিয়েছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন। দলটি ইতিমধ্যে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, খেলাফত আন্দোলন, গণ-অধিকার পরিষদ, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (রায়পুরী), নেজামে ইসলাম পার্টি (একাংশ) ও মুসলিম লীগসহ (একাংশ) ছয়-সাতটি দলের সঙ্গে কথা বলেছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অতীতে কখনো দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। অতীতের অভিজ্ঞতায় বর্তমান প্রেক্ষাপটে দলীয় সরকার বা নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া না-যাওয়ার বিষয় রয়েছে। এখনো চূড়ান্ত কিছু বলার সময় আসেনি। তবে আমরা জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। যাতে সবার কাছে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়। ভোটের পরিবেশ ফিরে আসে এবং ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়।’
জোট গঠনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা পরিবেশ-পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আলাপ-আলোচনা চলছে। সব ইসলামি ও সমমনা শক্তিকে নিয়ে যাতে নির্বাচনে যেতে পারি এমন চিন্তাও রয়েছে। তবে সেটা কীভাবে হবে এই নিয়েই আলাপ চলছে। আমরা একসঙ্গে চলতে চাই, এক আসনে একজন প্রার্থী দিতে চাই।’
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।