
বছর বছর মাথাপিছু আয় বাড়ছে। বাহাবা জুটছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। সরকারের স্মিত হাসি চওড়া হচ্ছে। এত ভালোর মধ্যেও নির্ধারিত আয়ের মানুষের পাতের খাবারের তালিকা সংকুচিত হচ্ছে। কেউ কম খাচ্ছেন, কেউবা খাবারের মান কমিয়েছেন। সংসারের অন্য সব খরচেও টান পড়েছে। শখের জিনিসের পেছনে খরচ বন্ধ হয়েছে অনেক আগেই। সবকিছু মিলে কষ্টে দিন পার করছেন সাধারণ মানুষ। মাথাপিছু আয় বাড়লেও এতে সাধারণ বা খেটে খাওয়া মানুষের পেট ভরছে না।
গত ১৪ নভেম্বর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। বৈঠকে গত অর্থবছরের (২০২১-২২) মাথাপিছুু আয় ২ হাজার ৮২৪ ডলারে উন্নীত হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৩৩ ডলার বেশি। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হার প্রতি বছরই বাড়ছে।
নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জীবনে মাথাপিছু আয় বাড়ার যে কোনো প্রভাব নেই, তা বোঝা যায় বিক্রয়কর্মী বকুলের জবানিতে। ঢাকা নিউমার্কেটের একটি শাড়ির দোকানের এ বিক্রয়কর্মী জানান, তিনি মাসে বেতন ও কমিশন মিলে ২০ হাজার টাকা পান। তার দুই ছেলে গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলে পড়ে। বড় ছেলে ফিজিকস ও কেমিস্ট্রির জন্য কোচিং করত। কুলিয়ে উঠতে না পারায় গত মার্চ থেকে কোচিং বন্ধ করে দিয়েছেন। বাবার অসহায়ত্ব টের পেয়ে ছেলে একটি অনলাইনভিত্তিক খাবার বিক্রি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহকারীর চাকরি নিয়েছে। পাশাপাশি লেখাপড়াও চালাচ্ছে।
ঘটনাটি জানিয়ে বকুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সারা দিন সাইকেলে করে ছেলে এখানে-ওখানে খাবার পৌঁছে দেয়। রাতে ডিউটি শেষে ছেলে যখন বাসায় ফিরে ক্লান্ত শরীরে বই নিয়ে বসে, তখন আর সইতে পারি না। চোখের পাতা ভিজে উঠে। স্ত্রী টের পায়, কষ্টে সেও পাশে এসে দাঁড়াতে চায়। তখন বাবা হিসেবে নিজেকে অক্ষম মনে হয়। কিন্তু আমার যে আর করার কিছু নেই। একটাই পারি, পরিবারের সদস্যদের গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে। কিন্তু ছেলেকে একটা ভালো স্কুলে ভর্তি করেছি। তাও পারতাম না, লটারি পদ্ধতির কারণে আমার ছেলে স্কুলটিতে ভর্তি হতে পেরেছে। এ জন্য কষ্ট করে হলেও তাদের ঢাকায় রেখেছি।’
কিন্তু এভাবে আর চলতে পারছেন না জানিয়ে বকুল বলেন, ‘প্রতিদিনই কোনো না কোনো জিনিসের দাম বাড়ছে। ছেলের কোচিং না হয় বন্ধ করলাম। কাগজ, কলম, পেনসিল, গ্রাফপেপার, বই দাম বাড়ার তালিকা থেকে কোনো কিছুই বাদ যাচ্ছে না। আটা-ময়দা, চাল-চিনি, তেল-সাবান, তরিতরকারি যেটুকু কিনি তার সবটাই বাড়তি দামে।’
গত তিন বছরে নিউমার্কেটের বিক্রয়কর্মীদের কোনো বেতন বাড়েনি। প্রথম দুই বছর করোনা মহামারীর জন্য নিয়মিত বেতন হয়নি। তবে মহামারী নিয়ন্ত্রণে আসার পর থেকে নিয়মিত বেতন হচ্ছে। সরকারের মাথাপিছু আয়ের যে ফর্মুলা তাতে প্রতি বছরই বেতন বৃদ্ধির কথা বলা হয়ে থাকে। ফর্মুলা অনুযায়ী জিনিসপত্রের যেমন দাম বাড়ে, তেমনি শ্রমের মজুরিও বাড়ে বছর বছর।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) মতে, গত মাসে চারজনের একটি পরিবারের খরচ ছিল ২২ হাজার ৪২১ টাকা। এ হিসাব খাবার তালিকায় মাছ-মাংস ধরে। মাছ-মাংস বা আমিষের জোগান বাদ দিয়ে খরচ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৯ টাকা। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে খরচ ছিল মাছ-মাংসসহ ১৭ হাজার ৫৩০ টাকা আর বাদ দিয়ে ৬ হাজার ৫৪১ টাকা।
বাজার দর কতটা বাড়ল তা নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি তথ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। গত ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ওই মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ, যা গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ওই সময় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। কিন্তু সিপিডি বলছে, ওই সময় খাদ্যপণ্যের প্রকৃত মূল্যস্ফীতি ২০ থেকে ৫০ শতাংশ।
খাদ্যের পেছনে মানুষকে এখন তার আয়ের বেশিরভাগ অংশ ব্যয় করতে হচ্ছে। এক বছরের ব্যবধানে জরুরি খাদ্যপণ্যের দাম ৩৬ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এক বছর আগে বাজারে মোটা চালের দাম ছিল প্রতি কেজি ৪৪ থেকে ৪৮, যা এখন ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় উন্নীত হয়েছে। এ সময়ে নাজিরশাইল চাল ৬০ থেকে ৮০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ৩৪ টাকার খোলা আটা এখন ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা। গত এক বছরে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে অন্তত ২৫ শতাংশ। এ সময়ে বিভিন্ন ধরনের মসুর ডাল ২০ থেকে ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। আর চিনির দাম ৭৫ থেকে ১১০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ ডলারে উঠলেও বাস্তবে দেশের প্রতিটি মানুষের আয় তা নয়। কারণ, মাথাপিছু আয় কোনো ব্যক্তির একক আয় নয়। দেশের অভ্যন্তরের পাশাপাশি রেমিট্যান্সসহ যত আয় হয়, তা দেশের মোট জাতীয় আয়। সেই জাতীয় আয়কে দেশের মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে মাথাপিছু আয় বের হয়। ফলে দেশে মাথাপিছু আয় বাড়লেও, তাতে ব্যক্তির আয়ে কোনো তারতম্য হয় না।
মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) হিসাব করার জন্য সম্প্রতি নতুন ভিত্তিবছর চূড়ান্ত করেছে সরকার। ২০১৫-১৬ ভিত্তিবছর ধরে জিডিপি, প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ বা মাথাপিছু আয় গণনা করা হয়। এতদিন ২০০৫-০৬ ভিত্তিবছর ধরে এসব গণনা করা হতো।
মাথাপিছু আয়ের যে হিসাব দেওয়া হচ্ছে তা সঠিকভাবে করা হচ্ছে কি না, সেটি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের একজনের আয় আসলেই ২ হাজার ৮২৪ ডলার হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। সেটা যদি হয়েও থাকে, তাহলে আয়টা কার কাছে যাচ্ছে সেটাও দেখা দরকার। কারণ এত আয়ের পরও সাধারণ মানুষ সংসার চালাতে পারছে না। বাস্তবতা হচ্ছে, কতিপয় মানুষের কাছে সম্পদ কুক্ষিগত হচ্ছে, যারা হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ফলে সমাজে বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করছে।’
দেশে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার কত, সরকারিভাবে তা প্রকাশ করা হয়নি। চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী দেশে দারিদ্র্যের যে হার উল্লেখ করেছেন তা পুরনো, অর্থাৎ ২০২০ ও ’২১ সালের করোনাভাইরাসের প্রকোপকালের আগের। গত জুনে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ আইপিসি ক্রনিক ফুড ইনসিকিউরিটি রিপোর্ট’টি ২০০৯-১৯ সময়কালের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রণীত। এতে করোনা মহামারী-পরবর্তী সময়ের অর্থাৎ ২০২০ ও ’২১ সাল শেষে দেশে দারিদ্র্যের হার সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই। দারিদ্র্যের হার নির্ধারণে কাজ করা সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০১৬ সালের পর এ সম্পর্কিত কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। সংস্থাটির সর্বশেষ ‘হাউজহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে (হায়েস) ২০১৬’-এ জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্যের হার দেখানো হয়েছে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। দেশের কয়েকটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা প্রতিবেদনে দারিদ্র্যের হারে যে ঊর্ধ্বগতি উঠে এসেছে তা গ্রহণে সরকার অনীহা প্রকাশ করেছে। তাই দেশে দারিদ্র্যের বর্তমান হার নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের একটানা এক যুগের শাসনামলের অর্জন নিয়ে একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে এবং অতিদারিদ্র্যের হার ১০ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।’
গত দুই বছরে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের অর্থনীতি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কর্মসংস্থানে মূল ভূমিকা পালনকারী বেসরকারি খাতে চাকরিচ্যুতি, বেতন বা মজুরি কর্তনে মানুষের আয় কমেছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক জনমত জরিপ প্রতিষ্ঠান গ্যালাপ পরিচালিত ‘স্টেট অব দ্য গ্লোবাল ওয়ার্কপ্লেস ২০২১’ অনুযায়ী, করোনার সময় বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ৫৫ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। আর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট উচ্চ মূল্যস্ফীতি আয় কমে যাওয়া মানুষের দুর্গতি বাড়িয়েছে বহুগুণ।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ। একই বছর শ্রম মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অর্থাৎ শ্রম মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি ছিল। ২০২০ সালে মহামারী দেখা দেওয়ার আগপর্যন্ত মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির হারের চেয়ে শ্রম মজুরি বৃদ্ধির হার বেশি ছিল। কিন্তু মহামারী শুরুর পর শ্রম মজুরির চেয়ে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির হার বেশি, যা এখনো বহাল রয়েছে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে দেশের স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষ যখন দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন দেশে কোটিপতির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত ১৩ বছরে দেশের ব্যাংকগুলোতে এক কোটি বা তার চেয়ে বেশি পরিমাণের আমানত রয়েছে এমন ব্যক্তির সংখ্যা চার গুণেরও বেশি বেড়েছে। এ সময়ে কোটিপতি আমানতকারীদের টাকার পরিমাণ বেড়েছে সাত গুণেরও বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০০৯ সালের মার্চে দেশে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ৬৩৬ জন, যা চলতি বছরের জুন শেষে ১ লাখ ৮ হাজার ৪৫৭তে উন্নীত হয়েছে। ১৩ বছরে কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে ৮৮ হাজার ৮২১ জন বা ৪৫২ শতাংশ।
২০০৯ সালে ব্যাংকে রাখা কোটিপতি আমানতকারীদের টাকার পরিমাণ ছিল ৭৯ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের জুন শেষে ৬ লাখ ৮০ হাজার ৩৬২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এ হিসাবে ১৩ বছরে কোটিপতি আমানতকারীদের ব্যাংকে গচ্ছিত সম্পদ বেড়েছে ৬ লাখ ৪৯৬ কোটি টাকা। এ সময়ে কোটিপতি আমানতকারী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকে রাখা তাদের সম্পদ বেড়েছে ৭৫১ শতাংশ।
গত বছরের চেয়ে এবার এসএসসি ও সমমানের ফলাফলে পাসের হার কমেছে ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। কিন্তু জিপিএ-৫ বেড়েছে ৮৬ হাজার ২৬২ জন। যা মোট উত্তীর্ণের ১৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এসএসসি পরীক্ষায় গ্রেডিং পদ্ধতি চালুর পর এ বছরই সবচেয়ে বেশি জিপিএ ৫ পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। মূলত বেশি প্রশ্নের মধ্য থেকে খুবই কম উত্তরের সুযোগ থাকায় জিপিএ ৫-এর এ উল্লম্ফন বলে মনে করছেন পরীক্ষাসংশ্লিষ্টরা।
গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় বোর্ড চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ বছরের এসএসসি ও সমমানের ফলাফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এরপর দুপুর ১টায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ সম্মেলনে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী।
এবার ৯টি সাধারণ বোর্ডসহ ১১ শিক্ষা বোর্ডে ১৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৩৭ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯ জন। গড় পাসের হার ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন। এর মধ্যে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২ হাজার ৯৭৫টি। তবে একজনও পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫০টি।
আর গত বছর পাসের হার ছিল ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং জিপিএ ৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন শিক্ষার্থী। ওই বছর শূন্য পাস প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১৮টি আর ৫ হাজার ৪৯৪টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করেছিল।
একাধিক শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে জিপিএ ৫-এর উল্লম্ফনের পেছনে তিনটি কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। প্রথমত এ বছর প্রত্যেক পরীক্ষার রচনামূলক অংশে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল বেশি। রচনামূলকে কোনো পরীক্ষায় ১১টির মধ্যে ৪টি এবং ব্যবহারিক থাকা পরীক্ষায় ৮টির মধ্যে ৩টির উত্তর দিতে হয়েছে। নৈর্ব্যক্তিক অংশে কোনো পরীক্ষায় ৩০টির মধ্যে ১৫টি এবং ব্যবহারিক থাকা পরীক্ষায় ২৫টির মধ্যে ১৫টির উত্তর দিতে হয়েছে। আর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা হয়েছে ৫০ নম্বরের, সেখানে তুলনামূলক আগের চেয়ে বেশি সময় দেওয়া হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের পক্ষে খুব সহজেই উত্তর করা সম্ভব হয়েছে।
দ্বিতীয় কারণ সাবজেক্ট ম্যাপিং। এবার ১২টি বিষয়ের মধ্যে ৯টির পরীক্ষা হয়েছে। বাকি তিনটিতে এসএসসির ক্ষেত্রে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), দাখিলের ক্ষেত্রে জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) এবং এসএসসি ও দাখিলের (ভোকেশনাল) ক্ষেত্রে নবম শ্রেণির ফলের ভিত্তিতে নম্বর দেওয়া হয়েছে। সাধারণত এসএসসির চেয়ে জেএসসি বা জেডিসিতে বেশি পাস করলেও বাংলা, ইংরেজি, গণিত, পদার্থ, রসায়ন, উচ্চতর গণিতের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নম্বর কম পায়। আবার তুলনামূলক সহজ বিষয়গুলোতে নম্বর বেশি পায়। এবার যেহেতু বাংলাদেশ ও বিশ^ পরিচয়/সাধারণ বিজ্ঞান, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিং হয়েছে। সেগুলোতে জেএসসি ও জেডিসিতে বেশি নম্বর পাওয়ায় অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থীর জিপিএ ৫ পাওয়ার পথ সুগম হয়েছে। তৃতীয় কারণ হচ্ছে, পরীক্ষার জন্য অনেক বেশি সময় পাওয়া। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনে পরীক্ষা শুরু হলেও এবার করোনা এবং বন্যার কারণে তা পিছিয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর শুরু হয়। এতে শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বছরের চেয়ে সাত মাসেরও বেশি সময় পায়। অথচ এ বছরের এসএসসির সিলেবাস ছিল সংক্ষিপ্ত। যা তাদের পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করে।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা এ বছর প্রস্তুতির জন্য অনেক বেশি সময় পেয়েছে। করোনার সময় অনলাইনে ক্লাস হয়েছে। আবার করোনার প্রাদুর্ভাব কমলে সরাসরি ক্লাস করেছে। শিক্ষার্থীরা বেশি পড়াশোনা করতে পেরেছে। এতে জিপিএ ৫ বেড়েছে। তবে আমরা চাই আমাদের সব শিক্ষার্থীই পাস করুক।’
জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এবার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে কম নম্বরের পরীক্ষা হয়েছে। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার অপশন ছিল বেশি। এমনকি শিক্ষার্থীরা নৈর্ব্যক্তিকেও অপশন পেয়েছে। যার কারণে প্রতিটি প্রশ্নই ভালো করে লেখার সুযোগ পেয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে সাবজেক্ট ম্যাপিং হয়নি। এতে কোনো শিক্ষার্থী জেএসসি বা জেডিসিতে খারাপ করলেও এসএসসিতে সে প্রভাব পড়েনি। ফলে জিপিএ ৫ বেড়ে গেছে।’
গত বছরের চেয়ে পাসের হার কিছুটা কমার কারণ জানিয়ে অধ্যাপক তপন কুমার বলেন, ‘এসএসসির ১২টি বিষয়ের মধ্যে গত বছর ৯টি বিষয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিং হয়েছিল। বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরীক্ষা হয়নি। শুধু তিনটি ঐচ্ছিক বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। জেএসসিতে বেশি পাস করলেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে ভালো ফল করে না। অথচ ওই বিষয়গুলোতেই গত বছর সাবজেক্ট ম্যাপিং হয়েছিল। এতে পাসের হার বেড়ে গেলেও এ বছরের চেয়ে জিপিএ ৫ কম ছিল। আর এ বছর ঠিক তার বিপরীত। তিনটি সহজ বিষয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিং হয়েছে। ফলে পাসের হার কিছুটা কমলেও জিপিএ ৫ বেড়েছে।’
শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিং কম বিষয়ে হওয়ায় এবার শূন্য পাস প্রতিষ্ঠান বেড়েছে। কেন তারা খারাপ করল সে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।’
ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে : এ বছর পাসের ও জিপিএ ৫ প্রাপ্তির দিক দিয়ে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে আছে। ৯ লাখ ৯৮ হাজার ১৯৩ জন ছেলে অংশ নিয়ে পাস করেছে ৮ লাখ ৭০ হাজার ৪৬ জন। ছেলেদের পাসের হার ৮৭ দশমিক ১৬ শতাংশ ও জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার ১৫৬ জন। অন্যদিকে ৯ লাখ ৯৫ হাজার ৯৪৪ জন মেয়ে অংশ নিয়ে পাস করেছে ৮ লাখ ৭৩ হাজার ৫৭৩ জন। মেয়েদের পাসের হার ৮৭ দশমিক ৭১ শতাংশ ও জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪৬ জন। অর্থাৎ ছেলেদের চেয়ে ৩ হাজার ৫২৭ জন বেশি মেয়ে পাস করেছে এবং ২৭ হাজার ২৯০ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ ৫ পেয়েছে।
শিক্ষার্থী বেশি মানবিকে, ফল ভালো বিজ্ঞানে : বিজ্ঞান বিভাগে ৫ লাখ ৭ হাজার ২৫৪ শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৪ লাখ ৯২ হাজার ৪৭৪ জন, পাসের হার ৯৭ দশমিক ৮ শতাংশ। এই বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ লাখ ৬ হাজার ৯৮৯ জন, অর্থাৎ বিজ্ঞান বিভাগের ৪০ দশমিক ৮১ শতাংশই জিপিএ ৫ পেয়েছে। মানবিক বিভাগ থেকে ৭ লাখ ৮১ হাজার ২৫৬ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ৬ লাখ ৩১ হাজার ৪২৯ জন, পাসের হার ৮০ দশমিক ৮২ শতাংশ। এই বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে মাত্র ১১ হাজার ৭২৫ জন, অর্থাৎ ১ দশমিক ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে।
অন্যদিকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ৩ লাখ ১৪৭ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৬৮ জন, পাসের হার ৯১ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এই বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৫ হাজার ৪৯ জন, অর্থাৎ ৫ দশমিক ০১ শতাংশ জিপিএ ৫ পেয়েছে।
তবে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় পাস করেছে ২ লাখ ১৩ হাজার ৮৮৩ জন। পাসের হার ৮২ দশমিক ২২ শতাংশ ও জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৫ হাজার ৪৫৭ জন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিলে (ভোকেশনাল) পাস করেছে ১ লাখ ৩০ হাজার ১৬৫ জন। পাসের হার ৮৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ ও জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৮ হাজার ৬৫৫ জন।
সর্বোচ্চ পাস যশোর বোর্ডে : এ বছর সবচেয়ে ভালো ফল করেছে যশোর বোর্ড, তাদের পাসের হার ৯৫ দশমিক ১৭ শতাংশ। এরপর কুমিল্লা ৯১ দশমিক ২৮ শতাংশ, ঢাকা ৯০ দশমিক ৩ শতাংশ, বরিশাল ৮৯ দশমিক ৬১ শতাংশ, কারিগরি বোর্ডে ৮৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ, ময়মনসিংহ ৮৯ দশমিক ২, চট্টগ্রাম ৮৭ দশমিক ৫৩, রাজশাহী ৮৫ দশমিক ৮৮, মাদ্রাসা বোর্ডে ৮২ দশমিক ২২, দিনাজপুর ৮১ দশমিক ১৬ এবং সিলেট বোর্ডে পাস করেছে ৭৮ দশমিক ৮২ শতাংশ।
সিলেট বোর্ডের ফল তুলনামূলক খারাপ হওয়ার পেছনে বন্যা পরিস্থিতিকে দায়ী করেন সিলেট বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রমা বিজয় সরকার।
বিষয়ভিত্তিক ফল : ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিষয়ভিত্তিক ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলায় পাসের হার ৯৯.৭৭ শতাংশ, ইংরেজিতে ৯৬.৬৫ শতাংশ, গণিতে ৯৪.৬৩ শতাংশ, পদার্থবিজ্ঞানে ৯৮.৪৩ শতাংশ, রসায়নে ৯৮.৭৬ শতাংশ, উদ্ভিদবিজ্ঞানে ৯৯ দশমিক ৫১ শতাংশ, অ্যাকাউন্টিংয়ে ৯৭.৬৯ শতাংশ, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিংয়ে ৯৭.৮৯ শতাংশ, অর্থনীতিতে ৯৭.৪৫ শতাংশ, কৃষি শিক্ষায় ৯৯.৬৩ শতাংশ এবং গার্হস্থ্য বিজ্ঞানে ৯৯.০৭ শতাংশ।
ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন শুরু আজ : এসএসসির ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন শুরু হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। আগামী ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসএমএসের মাধ্যমে ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করা যাবে। প্রতিটি বিষয় ও প্রতি পত্রের জন্য ১২৫ টাকা হারে চার্জ কাটা হবে। যেসব বিষয়ের দুটি পত্র (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র) রয়েছে, সেসব বিষয়ের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করলে ২৫০ টাকা ফি কাটা হবে। তবে পরীক্ষা না হওয়া বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়/সাধারণ বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি এবং ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছে বোর্ড।
মেক্সিকোকে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে হারিয়ে আর্জেন্টিনা তাদের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন টিকিয়ে রেখেছে। এখন শেষ ম্যাচে তারা কী করে তার ওপর নির্ভর করবে আর্জেন্টিনা পরের পর্বে যেতে পারবে কিনা। এখনই এত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে চাইছি না। সত্যি কথাটা হচ্ছে আর্জেন্টিনা ভালো খেলছে না। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে তারা সৌদি আরবের বিপক্ষে ১০ মিনিট আর মেক্সিকোর বিপক্ষে ৩০ মিনিট ভালো ফুটবল খেলেছে।
আমার চোখে, আর্জেন্টিনা যে ফুটবলটা খেলে কোপা আমেরিকা জিতেছিল ব্রাজিলকে হারিয়ে, তারা এখন সেই মানের ফুটবল থেকে অনেক অনেক দূরে। এমনকি ইতালিকে হারিয়ে যে দলটা ফিনালিসিমো জিতেছিল, সেই মানেরও ধারেকাছে নেই তারা।
কোচ লিওনেল স্কালোনির সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ। আর্জেন্টিনা দল নিয়ে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাত্রা বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে আর্জেন্টিনা দলের প্রতিটি ফুটবলারকেই নিজের সামর্থ্যরে সীমা বাড়িয়ে তুলতে হবে, যাতে লোকে বুঝতে পারে দলটা অনেক উঁচুমানের এবং সেই বিশ্বাস থেকেই যেন মনে করে এই দলটার অনেক বেশি সাফল্য পাওয়া উচিত। দলে এমন সব খেলোয়াড় আছে যারা শতভাগ ফিট নয়। রিজার্ভ বেঞ্চের খেলোয়াড়দের নিজেদের সামর্থ্যরে কথা জানান দিতে হবে এই মুহূর্তে। আর্জেন্টিনা গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচটা খেলবে পোল্যান্ডের বিপক্ষে। এই ম্যাচটা জিতলেই নিশ্চিত হবে পরের রাউন্ডে খেলা। এই ম্যাচেই বোঝা যাবে, দলটা কি আদৌ উন্নতি করছে নাকি এখনো দলে অনেক কমতি আছে। একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, বিশ্বকাপে কোনো দলই সহজ প্রতিপক্ষ নয় আর কোনো ম্যাচই সহজ নয়।
কোচের কৌশলে রদ্রিগো ডি পল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন খেলোয়াড় আর ব্রাজিলে কোপা আমেরিকা জয়ে তার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত তার পারফরম্যান্স অনেকের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ, যদিও সেটা আমি মনে করি না। এটা হোক রদ্রিগো বা গোটা দল, সবার জন্যই আমার একটা উপদেশ, সামনে এগিয়ে যাও। আত্মবিশ্বাস হারিও না। তোমাদের অনেক কিছু প্রমাণ করা বাকি।
দক্ষিণ আমেরিকার অন্য দল ব্রাজিল টুর্নামেন্টটা বেশ ভালোভাবেই শুরু করেছে, তবে নেইমারের চোট ব্রাজিলের জয়ের আনন্দ ছাপিয়ে বড় শংকার জায়গা হয়ে উঠেছে। যদিও ব্রাজিলের এখনো সেরা পারফরম্যান্সে পৌঁছানো বাকি আর নেইমারকে ছাড়া সেটা সহজ হবে না। পরের দুটো ম্যাচে ব্রাজিলের কোচকে একটা ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে, তারা কি শুধুই নেইমারের বদলে অন্য কাউকে দলে নেবে নাকি কৌশলেই পরিবর্তন আনবে? তার হাতে বিকল্প আছে আরও আক্রমণাত্মক একটা দল সাজানো অথবা আরেকটু রক্ষণাত্মক কৌশল অবলম্বন করে রক্ষণশীল একাদশ সাজানো। দলের সেরা তারকা যখন চোট পায়, তখন শুধুই তার বদলি কাউকে নামিয়ে দিলে কাজ হয় না। আমার মনে হয় এখন ব্রাজিলের উচিত দলের সমন্বয়ে পরিবর্তন আনা আর খেলার কৌশল বদল করা।
ইউরোপের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী স্পেন আর জার্মানি ড্র করেছে। এই ম্যাচে দুই দলের খেলা দেখে মনে হচ্ছে, একটা দল খুব ভালোভাবে জানত তারা কী করতে চায় আর অন্য দলটাকে মনে হয়েছে ভঙ্গুর। বল পায়ে এলে স্পেন তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ, অননুমেয় আর অনন্য ফুটবল খেলে। আর জার্মানি এখন এমন একটা জাতীয় দল যাকে কেউ ভয় পায় না। তারা সাধারণ মানের একটা দলে পরিণত হয়েছে। তাদের সেই সামর্থ্য নেই, শক্তি নেই। তবুও তারা প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে চায়। এখন পর্যন্ত জার্মানি দলকে খুব একটা কার্যকর মনে হয়নি। তাদের মধ্যে আগের সেই নির্দয় মানসিকতা আর ধারাবাহিকতা দেখা যায় না। ২০২২-এর জার্মানি খানিকটা রোমাঞ্চ জাগায় তবে ভঙ্গুর। এখন তাদের শেষ ম্যাচটা জিতলেই শুধু চলবে না, তাকিয়ে থাকতে হবে স্পেনের দিকেও।
বরিশালে বিএনপির গণসমাবেশে যাওয়ার পথে হামলার শিকার পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা, দশমিনা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও পটুয়াখালী জেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য শাহজাহান খান মারা গেছেন। গতকাল সোমবার ঢাকার ধানমন্ডি ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
গত ৫ নভেম্বর বরিশালে অনুষ্ঠিত বিএনপির গণসমাবেশে যাওয়ার পথে ৪ নভেম্বর রাতে পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের তেলিখালী এলাকায় শাহজাহান খান এবং তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা হামলার শিকার হন। হামলার গুরুতর আহত শাহজাহান খান সেই থেকে গত ২৪ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টি বলেন, ‘গত ৪ নভেম্বর রাতে তার (শাহজাহান খান) ওপর যে হামলা হয় সে সময় তার কিডনি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।’
শাহজাহান খান পটুয়াখালী জেলার একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, পাশাপাশি তিনি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, পটুয়াখালী রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
পুরনো হয়ে যাওয়া ৯৭৪টি কনটেইনারকে ব্যবহারযোগ্য করে গড়ে তোলা হয়েছে দোহার স্টেডিয়াম ৯৭৪। নানা রঙের কনটেইনারে সাজানো এ স্টেডিয়ামে হলুদ উৎসবের সব প্রস্তুতিই সেরে রেখেছিল প্রায় ৩০ হাজার ব্রাজিল সমর্থক। লুসাইলের পর এই মাঠে প্রিয় দলকে জেতাতে পুরোটা সময় গলা ফাটিয়েছেন তারা। তবে কেন যেন হচ্ছিলই না। তবে কি নেইমারবিহীন ব্রাজিল থমকে যাবে? না, সেটা হতে দেননি অভিজ্ঞ কাসেমিরো। ৮৪ মিনিটে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এ তারকা। বক্সের ওপর থেকে তার ডান পায়ের জোরালো হাফ ভলিতে ঠিকই খুঁজে নেয় গোলের ঠিকানা। তাতে যেমন নিশ্চিত হয়েছে শেষ ষোলো, তেমনই বিশ্বকাপ মঞ্চে সুইজারল্যান্ড আর ব্রাজিলের গলার কাঁটা হয়ে থাকল না। তৃতীয়বারের চেষ্টায় ঠিকই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে সেলেসাওরা।
১৯৫০ সালে পারেনি। ২০১৮ সালেও না। সেই ধারাবাহিকতা কি দোহাতেও বজায় থাকবে? ম্যাচের গতিপ্রকৃতি দেখে তাই মনে হচ্ছিল। তবে তারায় ভরা তিতের আক্রমণভাগকে রোখা অত সহজ নয়। প্রথমার্ধে রোখা গেছে। দ্বিতীয়ার্ধেরও অনেক সময় সুইজারল্যান্ডের রক্ষণে ফাটল ধরাতে পারেনি। তবে কাসেমিরো ঠিকই দেখালেন বুড়ো হারের ভেলকি। ভিনিসিয়ুস, রিচার্লিসন, রাফিনহা, রদ্রিগোদের একের পর এক আক্রমণ যখন ব্যর্থ হচ্ছে, তখনই গোলের দায়িত্ব নিলেন এ মৌসুমে রিয়াল ছেড়ে ম্যানইউতে আসা কাসেমিরো।
ব্রাজিল কোচ তিতে একাদশে দুটি পরিবর্তন আনেন। সামনে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রিচার্লিসন ও রাফিনহাকে রেখে, মাঝখানে খেলান লুকাস পাকেতা, কাসেমিরো ও নেইমারের জায়গায় ফ্রেদকে। গোলকিপার আলিসনের সামনে স্টপারব্যাক পজিশনে থিয়াগো সিলভা ও মার্কুইনোসের সঙ্গে লেফটব্যাকে অ্যালেক্স সান্দ্রো ও দানিলোর জায়গায় খেলান মিলিতাওকে। সুইজারল্যান্ড কোচ মুরাত ইয়াকিন ব্রাজিলের বিপক্ষে ৪-২-৩-১ ফরমেশন সাজান। তাতেই বোঝা যায় ঘর সামলে প্রতিআক্রমণ যাওয়াই এ কোচের লক্ষ্য। সেই পরিকল্পনাটা ফলেই যাচ্ছিল প্রায়। সার্বিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোল করা রিচার্লিসনকে সেভাবে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ভিনিসিয়ুস ছিলেন আগের মতোই আগ্রাসী। ২৭ মিনিটে গোলের প্রথম সুযোগ নষ্ট করেন এ তারকা। ডানদিক থেকে রাফিনহার ক্রস ছোট ডি-বক্সে পেয়েও প্লেসিংটা ঠিকঠাক করতে পারেননি। সুইজারল্যান্ড কিপার ইয়ান সোমার সহজেই রুখে দেন তার দুর্বল প্রচেষ্টা। ৩১ মিনিটে মিলিতাওয়ের সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে বক্সে ঢুকে জোরালো শট নিয়েছিলেন রাফিনহা। তবে কিপার সোমার সহজেই বল আয়ত্তে নেন।
বিরতি থেকে ফেরা ব্রাজিল মাঠে আসে পাকেতাকে রেখে রিয়াল মাদ্রিদ তারকা রদ্রিগোকে নিয়ে। তার আগমনে আক্রমণের ধার বাড়ে সেলেসাওদের। ৫৬ মিনিটে ভিনিসিয়ুসের আড়াআড়ি ক্রসে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন রিচার্লিসন। তবে ৬৪ মিনিটে ভিনিসিয়ুসের লক্ষ্যভেদে ব্রাজিল ভেবেছিল অবশেষে কাক্সিক্ষত লিডটা তারা পেয়ে গেছে। তবে প্রযুক্তি তাদের এগিয়ে যেতে দেয়নি। কাসেমিরোর বাড়ানো বল ধরে দ্রুত বক্সের বাঁদিক দিয়ে আক্রমণে উঠে বল জালে জড়ান রিয়াল মাদ্রিদ তারকা। তবে রিচার্লিসন অফসাইড থেকে ফিরে সেই মুভে যোগ দেওয়ায় হয়েছে সর্বনাশ। বেহায়া ভিএআর ঠিকই ধরে ফেলে তা। তবে ৮৩ মিনিটে কাসেমিরোর হাফ ভলি ঠিকই পোস্টের ডান দিকটা খুঁজে নিলে বিশ্বকাপের গ্রুপে প্রথমবারের মতো পরপর দুই ম্যাচে ইউরোপিয়ান দুই দলকে হারানোর রেকর্ড হয়ে যায় এই ব্রাজিলের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ক্ষমতায়ন ছাড়া সমাজে নারীর অবস্থান উন্নত হবে না এবং যেকোনো সংঘাত ও দুর্যোগের সময় তাদের দুর্দশা বহুগুণ বেড়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল সোমবার সকালে ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পুলিশ যৌথভাবে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নারী শান্তি ও নিরাপত্তা-ডব্লিউপিএস সেমিনার ২০২২-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা প্রশ্নাতীত যে নারীরা সমাজের সবচেয়ে দুর্বল অংশ, বিশেষ করে তৃতীয় বিশে^র দেশগুলোয়। তারা বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা, অপুষ্টি, অশিক্ষা এবং অন্যান্য মৌলিক চাহিদার ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার। যেকোনো সংঘাত ও দুর্যোগের সময় তাদের দুর্দশা বহুগুণ বেড়ে যায়।’ তিনি বলেন, নারীর শান্তি ও নিরাপত্তা সমস্যার সমাধানে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ১৩২৫ নম্বর প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, যা নারীর শান্তি ও নিরাপত্তা-ডব্লিউপিএস এজেন্ডা প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলাদেশ এই প্রস্তাব প্রণয়নে অংশ নিতে পেরে গর্বিত। খবর বাসসের।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে নারীর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধানও নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার নারী নীতি ২০১১ প্রণয়ন করেছে এবং নীতিমালায় নারীর সামগ্রিক উন্নয়ন ও মূলধারার আর্থসামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং তাদের ক্ষমতায়নের পথে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা, ব্যবসা, খেলাধুলা, সশস্ত্র বাহিনী প্রভৃতি খাতে তাদের বর্ধিত অংশগ্রহণ ও অবদান বাংলাদেশের আর্থসামাজিক দৃশ্যপটকে বদলে দিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকা-ে নারীর অধিকতর অংশগ্রহণের কারণে বাংলাদেশে সব ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতার উন্নতি হয়েছে। শান্তিরক্ষা, শান্তি প্রতিষ্ঠা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে নারীর অংশগ্রহণে বাংলাদেশ একটি রোল মডেল।
সরকারপ্রধান আরও বলেন, বাংলাদেশে নারীরা এখন সরকারের সচিব, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং অনেক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সেমিনারে অংশগ্রহণকারীরা রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন জেনে তিনি আনন্দিত। তিনি আশা করেন যে ইন্টারেক্টিভ অধিবেশনটি যুদ্ধ এবং সংঘাতের শিকারদের বুঝতে অংশগ্রহণকারীদের জন্য একটি দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ, কানাডা ও যুক্তরাজ্য কর্র্তৃক চালু হওয়া প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা প্রধানের বর্তমান চেয়ার হিসেবে সবাই ডব্লিউপিএস এজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনও বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লে. জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। শুরুতে নারী, শান্তি ও নিরাপত্তাবিষয়ক একটি ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
মৌলভীবাজারে 'চা দিবসের সংকল্প, শ্রমিক বান্ধব চা শিল্প' প্রতিপাদ্য নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ চা বোর্ডের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য আয়োজনে তৃতীয়বারের মতো 'জাতীয় চা দিবস' উদযাপন করা হয়েছে।
গতকাল রবিবার (০৪ জুন) শ্রীমঙ্গলের বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে আয়োজিত 'জাতীয় চা দিবস' উদযাপন এবং 'জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৩' প্রদান অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
দেশে প্রথমবারের মতো চালুকৃত 'জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৩' প্রদান করা হয়। আটটি ক্যাটাগরিতে আট ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় পুরস্কার। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
৮ ক্যাটাগরিতে পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন (০১) একর প্রতি সর্বোচ্চ উৎপাদনকারী চা বাগান- ভাড়াউড়া চা বাগান (০২) সর্বোচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন চা উৎপাদনকারী বাগান- মধুপুর চা বাগান (০৩) শ্রেষ্ঠ চা রপ্তানিকারক- আবুল খায়ের কনজ্যুমার প্রোডাক্টস লি. (০৪) শ্রেষ্ঠ ক্ষুদ্রায়তন চা উৎপাদনকারী- মো. আনোয়ার সাদাত সম্রাট (পঞ্চগড়) (০৫) শ্রমিক কল্যাণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চা বাগান- জেরিন চা বাগান (০৬) বৈচিত্র্যময় চা পণ্য বাজারজাতকরণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান/কোম্পানি- কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট লি. (০৭) দৃষ্টিনন্দন ও মানসম্পন্ন চা মোড়কের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চা প্রতিষ্ঠান/কোম্পানি- গ্রিন ফিল্ড টি ইন্ডাস্ট্রিজ লি. (০৮) শ্রেষ্ঠ চা পাতা চয়নকারী (চা শ্রমিক)- উপলক্ষী ত্রিপুরা, নেপচুন চা বাগান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম। এ ছাড়াও চা বোর্ডের কর্মকর্তা, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন বাগানের মালিক ও চা শ্রমিকরা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ও আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন।
মসজিদ ও মাদ্রাসায় ইমামদের সচেতনতা বার্তা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
রাজধানীর মিরপুরে পিএসসি (পুলিশ স্টাফ কলেজ) কনভেনশন হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার মসজিদের ইমামদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মতবিনিময় সভায় ডিএনসিসি এলাকার এক হাজার ইমাম ও খতিব অংশগ্রহণ করেন।
উপস্থিত ইমামদের উদ্দেশে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘আমরা মসজিদে গিয়ে ওয়াক্ত নামাজের সময়, জুমার নামাজের সময় মনোযোগ দিয়ে আপনাদের বয়ান শুনি। আপনারাই পারেন মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে। আপনারাই পারেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। আপনারা মানুষকে জানাবেন বর্ষাকালে এডিস মশার প্রকোপ বেড়ে যায়। এডিস মশার কামড়ে জ্বর হয়, মৃত্যু হয়। জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার লার্ভা জন্মায়। অতএব কোনোভাবে যেন পানি জমে না থাকে’।
মেয়র আরো বলেন, ‘এডিস মশা যখম কামড় দেবে, মশা কিন্তু চিনবে না কে মেয়র, কে কাউন্সিলর, কে ইমাম আর কে খতিব। এডিস মশা সবার জন্যই হুমকি। অতএব এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। একমাত্র সচেতনতা পারে ডেঙ্গু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। যদিও সিটি করপোরেশন থেকে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। কার্যকরী লার্ভিসাইডিং করছি, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছি। কিন্তু সবার সচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়’।
এ সময় ডিএনসিসি মেয়র গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, মাটির পাত্র, খাবারের প্যাকেট, অব্যবহৃত কমোড এগুলো দেখিয়ে উপস্থিত ইমামদের সচেতন করেন।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে লাখো লাখো মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার খতিব রয়েছেন। ইমাম ও খতিবরা মসজিদে মুসুল্লিদের ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সচেতন করলে এই ভয়াবহ মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যেকোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির ও অন্যান্য সাধারণ মানুষের বক্তৃতা থেকে ইমামদের বক্তৃতা বেশি কার্যকর হবে। মসজিদে বিশেষ করে জুমার নামাজের সময় বয়ানে, খুতবায় মুসুল্লিরা ইমামগণের কথা অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনেন। আপনাদের বার্তা মানুষের মনে গেথে থাকে।
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমানের সঞ্চালনায় ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, কাউন্সিলর, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
প্রকৃতি স্থবির নয়, সে সজীব এ কথা প্রায় সোয়া’শ বছর আগে আমাদের জানিয়ে গিয়েছেন আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু। এমনকি প্রতিটি বৃক্ষ অনুভূতিপ্রবণ, আঘাতে সে ন্যুব্জ হয়, ভালোবাসায় উৎফুল্ল হয়। যাকে আমরা আজ ‘প্ল্যান্ট নিউরোবায়োলজি’ নামে অভিহিত করি।
সভ্যতার গোড়াপত্তন থেকেই চলছে প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর মানুষের নির্মম কুঠারাঘাত। নিজেদের লালসা চরিতার্থ করার জন্য ভোগবাদী বিচার-বিবেচনাহীন মানুষ উজাড় করছে বন-বনানী, পাহাড়-অরণ্য, ধ্বংস করছে জীববৈচিত্র্য আর দূষিত করছে জীবনের অপরিহার্য উপাদান পানি ও বায়ু। আর এর ফলাফল হিসেবে দেখছি- বিগত বছরে ঘটে যাওয়া মহামারী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা বর্তমান ধরিত্রীর তীব্র উত্তপ্ত রূপ।
বিশ্ব গবেষণা ইনস্টিটিউটের মতে, বিশ্বের বনভূমি উজাড় হতে হতে প্রায় অর্ধেকে এসে দাঁড়িয়েছে। ভারসাম্যমূলক প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার জন্য দেশে মোট আয়তন ভূখণ্ডের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশে সরকারি হিসাব মতে বনভূমির পরিমাণ ১৬ শতাংশ ধরা থাকলেও বাস্তবে আছে ৯ শতাংশ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপে প্রতি বছর বন উজাড় হচ্ছে ৯.৪ শতাংশ। পাহাড় কেটে বসতবাড়ি তৈরিতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে কম বনভূমি পরিবেষ্টিত দেশগুলোর মধ্যে একটি। যেখানে বনভূমির হার মোট ভূমির মাত্র ৬.৭ শতাংশ।
আইন প্রয়োগের ঘাটতির কারণে নির্বিচারে বন-ধ্বংসের ফলে প্রতি বছর প্রায় ২ হাজার হেক্টর বনভূমি উজাড় হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শালবন প্রায় নিঃশেষ হওয়ার পথে। এমনকি প্রত্যক্ষ তদারকি ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বাংলাদেশের মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধে সক্ষম পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে নির্বিচারে চলছে বৃক্ষনিধন। এছাড়া লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণেও হুমকির সম্মুখীন সুন্দরবন। বিশ্বব্যাপী নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংসের পাশাপাশি শিল্পোন্নত দেশগুলোর অনিয়ন্ত্রিত শিল্পায়নের মাধ্যমে অবাধে কার্বন নিঃসরণের ফলে শুধু জলবায়ু পরিবর্তনই হয়নি, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বন ও বন্যপ্রাণী হুমকির মুখে পড়েছে। এবং বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণিকুল আজ ধ্বংস ও বিলুপ্তির পথে। শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে একের পর এক প্রাকৃতিক বনাঞ্চল উজাড় করে দেওয়ায় ক্রমশ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের জন্য পানিনির্ভর খাদ্যশস্য ও কৃষিপণ্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বিশ্বব্যাপী চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল কারখানার বয়লার চেম্বারের মতো উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বাংলাদেশে বেশ কিছুদিন থেকে তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে। এ বছর এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে গত ১৭ এপ্রিল পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৯ বছর আগে ২০১৪ সালে মারাত্মক তাপপ্রবাহ দেখা গিয়েছিল। সে সময় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। এই মাঝের সময়টা বা গত আট বছরে দেশের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির নিচেই ছিল বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ভূবিজ্ঞানীদের মতে, দেশে অনাবৃষ্টি, পানি অপচয় ও ব্যবহারজনিত কারণে সামগ্রিকভাবে দেশের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিনের পর দিন অতি দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। এই বিপর্যয় মূলত পর্যাপ্ত পরিমাণে বনভূমি ও যথেষ্ট পরিমাণে গাছপালা না থাকারই ফল। এই প্রেক্ষাপটে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর আবহাওয়াতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দিনের বেলায় দুঃসহ গরম আর রাতে প্রচ- শীত অনুভূত হচ্ছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, এ লক্ষণ মরুকরণ প্রক্রিয়ার আশঙ্কাজনক পূর্বাভাস।
এসব কি তাহলে প্রকৃতির প্রতিশোধ? প্রকৃতি যদি সজীব হয়, যদি তার অনুভূতি থাকে, তাহলে তার এমন প্রতিশোধে বিস্মিত হব না। লাখ লাখ বছর ধরে মানুষ ক্রমেই প্রকৃতির ওপর তার আধিপত্য বিস্তার করেছে। বন কেটে বানিয়েছে নগর, ভূগর্ভ থেকে হরণ করেছে গ্যাস, তেল ও কয়লা, নদীপথ পরিবর্তন করে নির্মাণ করেছে অতিকায় বাঁধ। প্রকৃতির ওপর এক কাল্পনিক বিজয় লাভ করে আমরা নিজেদের অজেয় ভেবেছি। কিন্তু এখন সর্বংসহা প্রকৃতি মানবজাতির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
প্রকৃতি একসময় প্রতিশোধ নেবে, এমন এক সম্ভাবনার কথা প্রায় দেড়’শ বছর আগে উল্লেখ করে গেছেন ফ্রেডেরিখ এঙ্গেলস। এমন কথা সম্ভবত তিনিই প্রথম বলেছিলেন তার অসম্পূর্ণ ‘ডায়ালেক্টিকস অব নেচার’ গ্রন্থে। তিনি প্রকৃতির বিরুদ্ধে ধাবমান মানুষকে এই বলে সাবধান করে দিয়েছিলেন, ‘এতটা বাড়াবাড়ি করো না। মনে রাখবে, তোমাদের প্রতিটি বিজয় প্রকৃতির প্রতিশোধ হিসেবে তোমাদের কাছেই ফিরে আসবে।’ আজকের পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে আমরা অনুধাবন করতে পারি, কী কঠোর সত্য উচ্চারণ করেছিলেন তিনি।
একটি আশার কথাও বলেছিলেন তিনি। মানুষকে তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন, আমরা যদি নির্দয় বিজেতা না হয়ে, বহিরাগত কোনো আক্রমণকারী না হয়ে প্রকৃতির অনুগত প্রজা হই, তাহলে সে আমাদের কেবল আশ্রয় দেবে তাই-ই নয় বরং আমাদের রক্ষাকর্তাও হবে। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, খুব বেশি কিছু নয়, এর জন্য প্রয়োজন শুধু প্রকৃতির আইন মেনে চলা। রবীন্দ্রনাথের ‘সভ্যতার প্রতি’ কবিতায়ও আমরা সেই একই ধ্বনি শুনতে পেয়েছিলাম। যান্ত্রিকতাকে পেছনে ফেলে প্রকৃতির কোলে আশ্রয়ের আকুতি!
পরিবেশ সুরক্ষার প্রয়োজনে মানব সচেতনতার একটি বৃহত্তর পদক্ষেপ ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’। পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্নতার কারণজনিত বিষয়ে ১৯৬৮ সালের ২০ মে জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিষদের কাছে একটি চিঠি পাঠায় সুইডেন সরকার। সে বছরই জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি সাধারণ অধিবেশনের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরের বছর জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং সমাধানের উপায় খুঁজতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সম্মতিতে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ১৯৭২ সালের ৫ জুন থেকে ১৬ জুন, জাতিসংঘ মানব পরিবেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনটি ইতিহাসের ‘প্রথম পরিবেশবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন’-এর স্বীকৃতি পায়। ১৯৭৩ সালে সম্মেলনের প্রথম দিন ৫ জুনকে জাতিসংঘ ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। এরপর ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতি বছর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বিশ্ব পরিবেশ দিবসের বার্তা তখনই সফলতা লাভ করবে, যখন প্রকৃতিকে তার স্বরূপ রেখে উন্নয়ন, শিল্পায়ন ও মানবতা বিকাশের পথে বিশ্বের মানবজাতি এগিয়ে যেতে পারবে। এর জন্য প্রয়োজন ব্যাপক সচেতনতা, কঠোর আইন ও মূল্যবোধের বিকাশ।
মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ফলে বিপন্ন এই ধরণী মাতার দিকে তাকিয়ে মনে পড়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আরণ্যক’ উপন্যাসের কথা। সেখানে বনাঞ্চলের জমি প্রজাবিলি করার কাজে গিয়ে সেই বনের মায়ায় পড়ে যান সত্যচরণ বা লেখক। তবে শেষ পর্যন্ত তাকেই ঘন বন কেটে শস্যপূর্ণ জনপদ বসাতে হয়। লেখক তাই উপন্যাসের সমাপ্তি টেনেছেন এভাবে, ‘হে অরণ্যানীর আদিম দেবতারা, ক্ষমা করিও আমায়। বিদায়....’
ক্ষমা করো...
আমাদের ক্ষমা করো বসুন্ধরা!
লেখক : প্রভাষক, বিইউবিটি
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় ফোনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে বিয়ের প্রলোভনে ডেকে নিয়ে মেয়ে (১৭) ও তার মাকে (৪০) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মেয়ের প্রেমিকসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
সোমবার (০৫ জুন) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শিবগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুকোমল চন্দ্র দেবনাথ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, গতকাল রবিবার (০৪ জুন) ভোরে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত তিনজনকে আটক করা হয়। পরে সন্ধ্যায় তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। আর গত শনিবার (০৩ মে) রাত ৮টার পর শিবগঞ্জের পৌর এলাকার মাগুরার মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনায় অভিযুক্ত ও আটককৃতরা হলেন প্রেমিক শিবগঞ্জ পৌর পিঠালিতলা মহল্লার বাসিন্দা সেলিম রেজা (২৫)। তার বন্ধু ও একই গ্রামের বাসিন্দা মো. হাসান (২৪) এবং ভ্যানচালক পিঠালিতলা মহল্লার মো. মেহেরুল (৩০)।
পুলিশ জানায়, শনিবার (০৩ মে) রাত ৮টার পর ওই এলাকার (পৌর মর্দনা গ্রামের পাশে) একটি মাঠের পাশের পাটক্ষেতে মা ও মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর ফেলে যায় অভিযুক্ত মেয়ের প্রেমিক সেলিম এবং তার বন্ধু হাসান। এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে পুলিশের তল্লাশিতে রবিবার (৪ জুন) ভোরে ওই মাঠ থেকে উদ্ধার হয় মা ও মেয়ে। এরপর তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার ভোরে পুলিশের অভিযানে আটক হয় সেলিম ও হাসান।
এদিকে মা ও মেয়েকে রিকশাভ্যানে করে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেওয়ার অভিযোগে আটক হয় মেহেরুল। এ ঘটনায় মেয়ের মা গত রবিবার সকালে আটক তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় আসামিদের গত রবিবার আদালতে হাজির করা হলে ধর্ষণে অভিযুক্ত প্রেমিক সেলিম ও তার সহযোগী হাসান দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। পরে একই দিন সন্ধ্যায় আদালত সকল আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পরিদর্শক সুকোমল চন্দ্র দেবনাথ জানান, রং নাম্বার থেকে মোবাইল ফোনে প্রথম পরিচয় হয় ভুক্তভোগী তরুণী ও সেলিম রেজার। পরে তাদের মধ্যে প্রেম হয়। একপর্যায়ে গত শনিবার রাতে মেয়েকে দেখা ও বিয়ের কথা বলে মা-মেয়েকে শিবগঞ্জে ডেকে নিয়ে আসে সে। পরে ভ্যানচালকের মাধ্যমে মা ও মেয়েকে ওই মাঠের পাশের পাটক্ষেতে নিয়ে যায় সেলিম। সেখানে মা ও মেয়েকে সেলিম ও হাসান ধর্ষণের পর ফেলে রেখে যায়।
তিনি আরও জানান, স্ত্রী ও মেয়ের খোঁজ না পেয়ে মেয়ের বাবা একই দিন রাতেই ঘটনাটি শিবগঞ্জ থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ রাতেই উদ্ধার ও তল্লাশি অভিযান শুরু করে। পরে ভুক্তভোগী মেয়ের মায়ের মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে তাদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। রবিবার ভোরে ওই মাঠ থেকে মা ও মেয়েকে উদ্ধার করা হয়। পরে একই দিন ভোরেই অভিযান চালিয়ে সেলিম, হাসান ও মেহেরুলকে আটক করা হয়। রবিবার সকালে মেয়ের মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করলে পুলিশ আসামিদের আদালতে পাঠায়। মা ও মেয়ের ডাক্তারি পরীক্ষা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে সম্পন্ন হয়।
চোরের মন পুলিশ পুলিশ কিন্তু পুলিশের মন ক্রিমিনাল ক্রিমিনাল কি না সেটা অন্তত আপ্তবাক্য হিসেবে প্রচলিত না। তা না থাক, বহুদিন ধরেই ‘পুলিশকে আরও মানবিক আচরণ করতে হবে’ বলে কথাটি চালু আছে। তার মানে পরিষ্কার– পুলিশের আচরণে নিশ্চয়ই সমস্যা আছে। আরেকটি কথাও প্রচুর শোনা যায়– বাঘে ছুঁলে আঠার ঘা, পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা। তো বেশ পশুত্ব, হিংস্রতা, অমানবিকতার এই বাক্যে পুলিশ সদস্যরা শ্লাঘা বোধ করেন কি না তা জানি না। কিন্তু এটা জানি যে পুলিশের কাছে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হয় অনেক মানুষকে।
পুলিশের আচরণ নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠছে। বাহিনীটির শীর্ষ কর্মকর্তারা বারবার সদস্যদের পরিশীলিত হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন, বলছেন, অতিরিক্ত ক্ষমতার প্রয়োগ হলে শাস্তি পেতে হবে। শাস্তি হচ্ছেও মাঝেমধ্যে, তবু অভিযোগের শেষ নেই। বলা হয়ে থাকে কলোনিয়াল মাইন্ডসেটের কথা। এর সত্যতা থাকলেও পুরোটাই কি সেই ঔপনিবেশিকতার জের, নাকি আরও কিছু ফাঁকফোকরকে ইতিহাসের কাঁধে চেপে আড়াল করে যাওয়া? পুলিশের এই বিকলাঙ্গ আচরণ আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের পঙ্গুত্বকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
পুলিশের অবদান নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তাদের কর্মকাণ্ড যেমন আলোচিত, পাশাপাশি সমালোচিত। সাধারণ মানুষকে পুলিশ বিষয়ে প্রশ্ন করলে নেগেটিভ মন্তব্যই বেশি পাওয়া যাবে। প্রশ্ন হলো, কেন সাধারণ মানুষ পুলিশের সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট নয়? কেন সাধারণ মানুষের অভিযোগ বা মন্তব্যে কেউ কর্ণপাত করছে না? এই বিষয়গুলো আরও গুরুত্ব দিয়ে ভাবার সময় এসেছে।সম্পªতি ১ জুন অর্থমন্ত্রী আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছেন, ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বিশাল আকারের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র এক লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতাসহ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কোনো ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়নি। প্রতিবন্ধী ভাতা পাঁচ হাজার টাকা করাসহ ১১ দফা দাবিতে রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলে পুলিশের বাধায় পড়ে ‘সংক্ষুব্ধ প্রতিবন্ধী নাগরিক সমাজ’।
আন্দোলনকারীদের ভাষ্য মতে, প্রধানমন্ত্রী তাদের দাবি না মানলে সড়ক থেকে উঠবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা। সেই সঙ্গে তাদের রুখতে সজাগ দৃষ্টিতে অবস্থান করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে রবিবার সকাল থেকে শুরু হয় আন্দোলনকারীদের অবস্থান কর্মসূচি। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেখান থেকে কর্মসূচি শেষে যাত্রা শুরু করলে তাদের শাহবাগেই আটকে দেয় পুলিশ। পরে একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সড়ক আটকে দিলে তারা সড়কে বসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে শুরু করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বারবার তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও তারা নিজেদের অবস্থান থেকে সরতে নারাজ। ধরে নিলাম, পুলিশের বক্তব্যই সঠিক। এই বক্তব্যকে এক পাশে রেখে চিন্তা করি যে একটি আদর্শ সমাজে কী হয়। প্রতিবাদ করা একটি অধিকার এবং প্রতিবাদের জন্য অনুমতির প্রয়োজন হওয়ার কথা না।
একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের রিপোর্টে আন্দোলনকারীরা পুলিশের যে আচরণের বর্ণনা দিয়েছেন সেটা মেনে নেওয়া কঠিন। তারা জানান, পুলিশ সামনে হুইল চেয়ারে বসা আন্দোলনকারীদের সামনে এগোতে বাধা দিলে তারা সেখানেই অবস্থান নেন। কিন্তু পুলিশ তাদের ধাক্কা দিয়ে, বলপ্রয়োগ করেই ক্ষান্ত হয়নি, হুইল চেয়ারসহ আন্দোলনকারীদের কাউকে কাউকে তুলে পেছনের দিকে ছুড়ে ফেলার চেষ্টা করেছে। একজন নারীকে হুইল চেয়ার থেকে টেনে ফেলে দিয়েছে পুলিশ। হুইল চেয়ারের চাকা ভেঙে দিয়েছে। শ্রবণপ্রতিবন্ধী হুইল চেয়ারে বসা আন্দোলনকারীদের বলপ্রয়োগ করা হয়েছে। পুলিশকে বাধা দিতে গেলে তারা আরও মারমুখী হয়ে ওঠে এবং আন্দোলনকারী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হয়। একজন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এক আন্দোলনকারী বলেন, পরিস্থিতি নাজুক বুঝতে পেরে আন্দোলনকারীরাই নিজেদের শান্ত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা যদি পরিস্থিতি শান্ত না করতাম তাহলে আরও বড় কিছু হয়ে যেত। এই পর্যায়ে আসলেই প্রশ্ন জাগে যে সেখানকার পুলিশ সদস্যরাই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কি না। যেখানে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের এই বিক্ষোভ-আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের চেয়ে তাদের দাবি-দাওয়া প্রকাশে নিরাপত্তা দেওয়াই স্বাভাবিক পুলিশি তৎপরতা হওয়ার কথা ছিল, সেখানে তারা যে আচরণ করেছে কেবল এজন্যই ওই পুলিশ সদস্যদের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার দাবি রাখে। এখানেই শেষ নয়। অপর একজন প্রতিবন্ধী আন্দোলনকারী জানাচ্ছেন, পুলিশ তাদের তুই-তোকারি করে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করেছে। পাবলিককে, জনগণকে এই তুই-তোকারি করার পুলিশি খাসলতের কারণেও অনেকে পারতপক্ষে পুলিশের কাছে যান না।
রাজনৈতিক আন্দোলন, সরকারবিরোধী বিক্ষোভ, সহিংসতা দমনের ধরন আর প্রতিবন্ধীভাতা বৃদ্ধির দাবিতে শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, হাঁটাচলায় অক্ষম ব্যক্তিদের আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে যে পুলিশ পার্থক্য করতে পারে না, সেই পুলিশ দিয়ে আমরা কী আশা করতে পারি! এখানে ‘অতি উৎসাহী পুলিশ সদস্যরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে’ বলে কি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশ বাহিনী দায় এড়াতে পারে? গণতান্ত্রিক দেশে প্রতিবাদ জানানোর, দাবি জানানোর অধিকার সবার আছে। কিন্তু তা মোকাবিলায় পুলিশের যে আচরণ সেটা ন্যক্কারজনক। আমরা পুলিশকে পেটোয়া বাহিনী হিসেবে দেখতে চাই না।
বিদ্যমান পুলিশি আইনে পুলিশকে মানবিক করা যাবে না। কারণ পুলিশ চলছে ১৮৬১ সালের আইনে। যে আইনটি ব্রিটিশরা করেছিল এ অঞ্চলের মানুষকে শোষণ করার জন্য। যতদিন এ আইন পরিবর্তন করার যাবে না ততদিন পুলিশ এমন অমানবিক আচরণ করবে। এ আইন পরিবর্তন করে পুলিশকে বাহিনীর বদলে সেবাদাতায় পরিণত করতে হবে। তবে অন্যায্য বা অন্যায় আচরণ করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেয় না, এমনটা নয়। গত ছয় বছরে ৭৬ হাজার পুলিশকে নানা ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এই হিসাবে দেশের প্রতি দুজনের একজনই বাহিনীর শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কোনো না কোনোভাবে সাজাপ্রাপ্ত।
প্রতিবন্ধীদের আন্দোলন দমনে সর্বশেষ পুলিশ সদস্যরা যে আচরণ করেছে, তাতে করে গণতন্ত্র রক্ষা না, অমানবিকতার দায়েই বাংলাদেশের পুলিশের ওপর উন্নত দেশগুলো বিশেষ ভিসানীতি দিতে পারে। পুলিশ সদস্যদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য চিকিৎসা জরুরি। এটা দীর্ঘদিনের আলোচনার বিষয়। কারণ যে মানুষটি সারা দিন অপরাধ বা অপরাধী নিয়ে থাকেন বা থাকছেন, তার মানসিক অবস্থার উন্নতি না হলে তিনি কখনো ইয়াসমিনদের তুলে নিয়ে যাবেন, কখনো লতা সমাদ্দারদের টিপ-কাপড় নিয়ে কথা বলবেন, আবার কখনো বা নারীর ব্রা-এর ফিতা কোন দিক দিয়ে বের হয়ে আছে, তা খুঁজে বেড়াবেন। দেখা যাচ্ছে যেখানে নিরাপত্তার প্রশ্ন সেখানে পুলিশ খড়গহস্ত– কেন?
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।