
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় (গত রবিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩৬৬ জন। এ সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি। এর আগের রবিবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫২৩ জন। সেদিন মারা গেছে তিনজন। এরও আগে গত ২৫ অক্টোরব ৭৫০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল এবং সেদিন দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি; অর্থাৎ ৩৩ দিন পর আবারও দেশে কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়নি। গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৩৬৬ জনের মধ্যে ২১০ জন ঢাকায় ও ১৫৬ জন ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ১ হাজার ৮৩৭ জন। এর মধ্যে ঢাকার ৫৩টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে ১ হাজার ৮৪ জন। ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৭৫৩ জন। এ বছর রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি ৩৬ হাজার ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছে ১৯ হাজার ৬৩১ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মাসের ২৮ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৮ হাজার ৪৭২ জন এবং মারা গেছে ১০৬ জন। এর আগে গত অক্টোবর মাসে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ২১ হাজার ৯৩২ জন। এ সময়ে মারা গেছে ৮৬ জন। এর আগে গত সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ৯ হাজার ৯১১ জন এবং মারা যায় ৩৪ জন। গত আগস্টে হাসপাতালে ৩ হাজার ৫২১ জন ভর্তি হয়েছিল এবং মারা গেছে ১১ জন। এ নিয়ে এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে ৫৬ হাজার ৪৯৬ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এবং মারা গেছে ২৪৭ জন।
বছর বছর মাথাপিছু আয় বাড়ছে। বাহাবা জুটছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। সরকারের স্মিত হাসি চওড়া হচ্ছে। এত ভালোর মধ্যেও নির্ধারিত আয়ের মানুষের পাতের খাবারের তালিকা সংকুচিত হচ্ছে। কেউ কম খাচ্ছেন, কেউবা খাবারের মান কমিয়েছেন। সংসারের অন্য সব খরচেও টান পড়েছে। শখের জিনিসের পেছনে খরচ বন্ধ হয়েছে অনেক আগেই। সবকিছু মিলে কষ্টে দিন পার করছেন সাধারণ মানুষ। মাথাপিছু আয় বাড়লেও এতে সাধারণ বা খেটে খাওয়া মানুষের পেট ভরছে না।
গত ১৪ নভেম্বর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। বৈঠকে গত অর্থবছরের (২০২১-২২) মাথাপিছুু আয় ২ হাজার ৮২৪ ডলারে উন্নীত হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৩৩ ডলার বেশি। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হার প্রতি বছরই বাড়ছে।
নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জীবনে মাথাপিছু আয় বাড়ার যে কোনো প্রভাব নেই, তা বোঝা যায় বিক্রয়কর্মী বকুলের জবানিতে। ঢাকা নিউমার্কেটের একটি শাড়ির দোকানের এ বিক্রয়কর্মী জানান, তিনি মাসে বেতন ও কমিশন মিলে ২০ হাজার টাকা পান। তার দুই ছেলে গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলে পড়ে। বড় ছেলে ফিজিকস ও কেমিস্ট্রির জন্য কোচিং করত। কুলিয়ে উঠতে না পারায় গত মার্চ থেকে কোচিং বন্ধ করে দিয়েছেন। বাবার অসহায়ত্ব টের পেয়ে ছেলে একটি অনলাইনভিত্তিক খাবার বিক্রি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহকারীর চাকরি নিয়েছে। পাশাপাশি লেখাপড়াও চালাচ্ছে।
ঘটনাটি জানিয়ে বকুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সারা দিন সাইকেলে করে ছেলে এখানে-ওখানে খাবার পৌঁছে দেয়। রাতে ডিউটি শেষে ছেলে যখন বাসায় ফিরে ক্লান্ত শরীরে বই নিয়ে বসে, তখন আর সইতে পারি না। চোখের পাতা ভিজে উঠে। স্ত্রী টের পায়, কষ্টে সেও পাশে এসে দাঁড়াতে চায়। তখন বাবা হিসেবে নিজেকে অক্ষম মনে হয়। কিন্তু আমার যে আর করার কিছু নেই। একটাই পারি, পরিবারের সদস্যদের গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে। কিন্তু ছেলেকে একটা ভালো স্কুলে ভর্তি করেছি। তাও পারতাম না, লটারি পদ্ধতির কারণে আমার ছেলে স্কুলটিতে ভর্তি হতে পেরেছে। এ জন্য কষ্ট করে হলেও তাদের ঢাকায় রেখেছি।’
কিন্তু এভাবে আর চলতে পারছেন না জানিয়ে বকুল বলেন, ‘প্রতিদিনই কোনো না কোনো জিনিসের দাম বাড়ছে। ছেলের কোচিং না হয় বন্ধ করলাম। কাগজ, কলম, পেনসিল, গ্রাফপেপার, বই দাম বাড়ার তালিকা থেকে কোনো কিছুই বাদ যাচ্ছে না। আটা-ময়দা, চাল-চিনি, তেল-সাবান, তরিতরকারি যেটুকু কিনি তার সবটাই বাড়তি দামে।’
গত তিন বছরে নিউমার্কেটের বিক্রয়কর্মীদের কোনো বেতন বাড়েনি। প্রথম দুই বছর করোনা মহামারীর জন্য নিয়মিত বেতন হয়নি। তবে মহামারী নিয়ন্ত্রণে আসার পর থেকে নিয়মিত বেতন হচ্ছে। সরকারের মাথাপিছু আয়ের যে ফর্মুলা তাতে প্রতি বছরই বেতন বৃদ্ধির কথা বলা হয়ে থাকে। ফর্মুলা অনুযায়ী জিনিসপত্রের যেমন দাম বাড়ে, তেমনি শ্রমের মজুরিও বাড়ে বছর বছর।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) মতে, গত মাসে চারজনের একটি পরিবারের খরচ ছিল ২২ হাজার ৪২১ টাকা। এ হিসাব খাবার তালিকায় মাছ-মাংস ধরে। মাছ-মাংস বা আমিষের জোগান বাদ দিয়ে খরচ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৯ টাকা। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে খরচ ছিল মাছ-মাংসসহ ১৭ হাজার ৫৩০ টাকা আর বাদ দিয়ে ৬ হাজার ৫৪১ টাকা।
বাজার দর কতটা বাড়ল তা নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি তথ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। গত ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ওই মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ, যা গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ওই সময় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। কিন্তু সিপিডি বলছে, ওই সময় খাদ্যপণ্যের প্রকৃত মূল্যস্ফীতি ২০ থেকে ৫০ শতাংশ।
খাদ্যের পেছনে মানুষকে এখন তার আয়ের বেশিরভাগ অংশ ব্যয় করতে হচ্ছে। এক বছরের ব্যবধানে জরুরি খাদ্যপণ্যের দাম ৩৬ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এক বছর আগে বাজারে মোটা চালের দাম ছিল প্রতি কেজি ৪৪ থেকে ৪৮, যা এখন ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় উন্নীত হয়েছে। এ সময়ে নাজিরশাইল চাল ৬০ থেকে ৮০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ৩৪ টাকার খোলা আটা এখন ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা। গত এক বছরে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে অন্তত ২৫ শতাংশ। এ সময়ে বিভিন্ন ধরনের মসুর ডাল ২০ থেকে ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। আর চিনির দাম ৭৫ থেকে ১১০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ ডলারে উঠলেও বাস্তবে দেশের প্রতিটি মানুষের আয় তা নয়। কারণ, মাথাপিছু আয় কোনো ব্যক্তির একক আয় নয়। দেশের অভ্যন্তরের পাশাপাশি রেমিট্যান্সসহ যত আয় হয়, তা দেশের মোট জাতীয় আয়। সেই জাতীয় আয়কে দেশের মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে মাথাপিছু আয় বের হয়। ফলে দেশে মাথাপিছু আয় বাড়লেও, তাতে ব্যক্তির আয়ে কোনো তারতম্য হয় না।
মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) হিসাব করার জন্য সম্প্রতি নতুন ভিত্তিবছর চূড়ান্ত করেছে সরকার। ২০১৫-১৬ ভিত্তিবছর ধরে জিডিপি, প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ বা মাথাপিছু আয় গণনা করা হয়। এতদিন ২০০৫-০৬ ভিত্তিবছর ধরে এসব গণনা করা হতো।
মাথাপিছু আয়ের যে হিসাব দেওয়া হচ্ছে তা সঠিকভাবে করা হচ্ছে কি না, সেটি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের একজনের আয় আসলেই ২ হাজার ৮২৪ ডলার হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। সেটা যদি হয়েও থাকে, তাহলে আয়টা কার কাছে যাচ্ছে সেটাও দেখা দরকার। কারণ এত আয়ের পরও সাধারণ মানুষ সংসার চালাতে পারছে না। বাস্তবতা হচ্ছে, কতিপয় মানুষের কাছে সম্পদ কুক্ষিগত হচ্ছে, যারা হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ফলে সমাজে বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করছে।’
দেশে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার কত, সরকারিভাবে তা প্রকাশ করা হয়নি। চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী দেশে দারিদ্র্যের যে হার উল্লেখ করেছেন তা পুরনো, অর্থাৎ ২০২০ ও ’২১ সালের করোনাভাইরাসের প্রকোপকালের আগের। গত জুনে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ আইপিসি ক্রনিক ফুড ইনসিকিউরিটি রিপোর্ট’টি ২০০৯-১৯ সময়কালের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রণীত। এতে করোনা মহামারী-পরবর্তী সময়ের অর্থাৎ ২০২০ ও ’২১ সাল শেষে দেশে দারিদ্র্যের হার সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই। দারিদ্র্যের হার নির্ধারণে কাজ করা সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০১৬ সালের পর এ সম্পর্কিত কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। সংস্থাটির সর্বশেষ ‘হাউজহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে (হায়েস) ২০১৬’-এ জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্যের হার দেখানো হয়েছে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। দেশের কয়েকটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা প্রতিবেদনে দারিদ্র্যের হারে যে ঊর্ধ্বগতি উঠে এসেছে তা গ্রহণে সরকার অনীহা প্রকাশ করেছে। তাই দেশে দারিদ্র্যের বর্তমান হার নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের একটানা এক যুগের শাসনামলের অর্জন নিয়ে একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে এবং অতিদারিদ্র্যের হার ১০ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।’
গত দুই বছরে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের অর্থনীতি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কর্মসংস্থানে মূল ভূমিকা পালনকারী বেসরকারি খাতে চাকরিচ্যুতি, বেতন বা মজুরি কর্তনে মানুষের আয় কমেছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক জনমত জরিপ প্রতিষ্ঠান গ্যালাপ পরিচালিত ‘স্টেট অব দ্য গ্লোবাল ওয়ার্কপ্লেস ২০২১’ অনুযায়ী, করোনার সময় বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ৫৫ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। আর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট উচ্চ মূল্যস্ফীতি আয় কমে যাওয়া মানুষের দুর্গতি বাড়িয়েছে বহুগুণ।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ। একই বছর শ্রম মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অর্থাৎ শ্রম মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি ছিল। ২০২০ সালে মহামারী দেখা দেওয়ার আগপর্যন্ত মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির হারের চেয়ে শ্রম মজুরি বৃদ্ধির হার বেশি ছিল। কিন্তু মহামারী শুরুর পর শ্রম মজুরির চেয়ে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির হার বেশি, যা এখনো বহাল রয়েছে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে দেশের স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষ যখন দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন দেশে কোটিপতির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত ১৩ বছরে দেশের ব্যাংকগুলোতে এক কোটি বা তার চেয়ে বেশি পরিমাণের আমানত রয়েছে এমন ব্যক্তির সংখ্যা চার গুণেরও বেশি বেড়েছে। এ সময়ে কোটিপতি আমানতকারীদের টাকার পরিমাণ বেড়েছে সাত গুণেরও বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০০৯ সালের মার্চে দেশে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ৬৩৬ জন, যা চলতি বছরের জুন শেষে ১ লাখ ৮ হাজার ৪৫৭তে উন্নীত হয়েছে। ১৩ বছরে কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে ৮৮ হাজার ৮২১ জন বা ৪৫২ শতাংশ।
২০০৯ সালে ব্যাংকে রাখা কোটিপতি আমানতকারীদের টাকার পরিমাণ ছিল ৭৯ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের জুন শেষে ৬ লাখ ৮০ হাজার ৩৬২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এ হিসাবে ১৩ বছরে কোটিপতি আমানতকারীদের ব্যাংকে গচ্ছিত সম্পদ বেড়েছে ৬ লাখ ৪৯৬ কোটি টাকা। এ সময়ে কোটিপতি আমানতকারী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকে রাখা তাদের সম্পদ বেড়েছে ৭৫১ শতাংশ।
গত বছরের চেয়ে এবার এসএসসি ও সমমানের ফলাফলে পাসের হার কমেছে ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। কিন্তু জিপিএ-৫ বেড়েছে ৮৬ হাজার ২৬২ জন। যা মোট উত্তীর্ণের ১৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এসএসসি পরীক্ষায় গ্রেডিং পদ্ধতি চালুর পর এ বছরই সবচেয়ে বেশি জিপিএ ৫ পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। মূলত বেশি প্রশ্নের মধ্য থেকে খুবই কম উত্তরের সুযোগ থাকায় জিপিএ ৫-এর এ উল্লম্ফন বলে মনে করছেন পরীক্ষাসংশ্লিষ্টরা।
গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় বোর্ড চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ বছরের এসএসসি ও সমমানের ফলাফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এরপর দুপুর ১টায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ সম্মেলনে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী।
এবার ৯টি সাধারণ বোর্ডসহ ১১ শিক্ষা বোর্ডে ১৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৩৭ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯ জন। গড় পাসের হার ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন। এর মধ্যে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২ হাজার ৯৭৫টি। তবে একজনও পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫০টি।
আর গত বছর পাসের হার ছিল ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং জিপিএ ৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন শিক্ষার্থী। ওই বছর শূন্য পাস প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১৮টি আর ৫ হাজার ৪৯৪টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করেছিল।
একাধিক শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে জিপিএ ৫-এর উল্লম্ফনের পেছনে তিনটি কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। প্রথমত এ বছর প্রত্যেক পরীক্ষার রচনামূলক অংশে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল বেশি। রচনামূলকে কোনো পরীক্ষায় ১১টির মধ্যে ৪টি এবং ব্যবহারিক থাকা পরীক্ষায় ৮টির মধ্যে ৩টির উত্তর দিতে হয়েছে। নৈর্ব্যক্তিক অংশে কোনো পরীক্ষায় ৩০টির মধ্যে ১৫টি এবং ব্যবহারিক থাকা পরীক্ষায় ২৫টির মধ্যে ১৫টির উত্তর দিতে হয়েছে। আর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা হয়েছে ৫০ নম্বরের, সেখানে তুলনামূলক আগের চেয়ে বেশি সময় দেওয়া হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের পক্ষে খুব সহজেই উত্তর করা সম্ভব হয়েছে।
দ্বিতীয় কারণ সাবজেক্ট ম্যাপিং। এবার ১২টি বিষয়ের মধ্যে ৯টির পরীক্ষা হয়েছে। বাকি তিনটিতে এসএসসির ক্ষেত্রে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), দাখিলের ক্ষেত্রে জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) এবং এসএসসি ও দাখিলের (ভোকেশনাল) ক্ষেত্রে নবম শ্রেণির ফলের ভিত্তিতে নম্বর দেওয়া হয়েছে। সাধারণত এসএসসির চেয়ে জেএসসি বা জেডিসিতে বেশি পাস করলেও বাংলা, ইংরেজি, গণিত, পদার্থ, রসায়ন, উচ্চতর গণিতের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নম্বর কম পায়। আবার তুলনামূলক সহজ বিষয়গুলোতে নম্বর বেশি পায়। এবার যেহেতু বাংলাদেশ ও বিশ^ পরিচয়/সাধারণ বিজ্ঞান, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিং হয়েছে। সেগুলোতে জেএসসি ও জেডিসিতে বেশি নম্বর পাওয়ায় অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থীর জিপিএ ৫ পাওয়ার পথ সুগম হয়েছে। তৃতীয় কারণ হচ্ছে, পরীক্ষার জন্য অনেক বেশি সময় পাওয়া। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনে পরীক্ষা শুরু হলেও এবার করোনা এবং বন্যার কারণে তা পিছিয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর শুরু হয়। এতে শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বছরের চেয়ে সাত মাসেরও বেশি সময় পায়। অথচ এ বছরের এসএসসির সিলেবাস ছিল সংক্ষিপ্ত। যা তাদের পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করে।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা এ বছর প্রস্তুতির জন্য অনেক বেশি সময় পেয়েছে। করোনার সময় অনলাইনে ক্লাস হয়েছে। আবার করোনার প্রাদুর্ভাব কমলে সরাসরি ক্লাস করেছে। শিক্ষার্থীরা বেশি পড়াশোনা করতে পেরেছে। এতে জিপিএ ৫ বেড়েছে। তবে আমরা চাই আমাদের সব শিক্ষার্থীই পাস করুক।’
জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এবার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে কম নম্বরের পরীক্ষা হয়েছে। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার অপশন ছিল বেশি। এমনকি শিক্ষার্থীরা নৈর্ব্যক্তিকেও অপশন পেয়েছে। যার কারণে প্রতিটি প্রশ্নই ভালো করে লেখার সুযোগ পেয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে সাবজেক্ট ম্যাপিং হয়নি। এতে কোনো শিক্ষার্থী জেএসসি বা জেডিসিতে খারাপ করলেও এসএসসিতে সে প্রভাব পড়েনি। ফলে জিপিএ ৫ বেড়ে গেছে।’
গত বছরের চেয়ে পাসের হার কিছুটা কমার কারণ জানিয়ে অধ্যাপক তপন কুমার বলেন, ‘এসএসসির ১২টি বিষয়ের মধ্যে গত বছর ৯টি বিষয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিং হয়েছিল। বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরীক্ষা হয়নি। শুধু তিনটি ঐচ্ছিক বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। জেএসসিতে বেশি পাস করলেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে ভালো ফল করে না। অথচ ওই বিষয়গুলোতেই গত বছর সাবজেক্ট ম্যাপিং হয়েছিল। এতে পাসের হার বেড়ে গেলেও এ বছরের চেয়ে জিপিএ ৫ কম ছিল। আর এ বছর ঠিক তার বিপরীত। তিনটি সহজ বিষয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিং হয়েছে। ফলে পাসের হার কিছুটা কমলেও জিপিএ ৫ বেড়েছে।’
শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিং কম বিষয়ে হওয়ায় এবার শূন্য পাস প্রতিষ্ঠান বেড়েছে। কেন তারা খারাপ করল সে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।’
ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে : এ বছর পাসের ও জিপিএ ৫ প্রাপ্তির দিক দিয়ে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে আছে। ৯ লাখ ৯৮ হাজার ১৯৩ জন ছেলে অংশ নিয়ে পাস করেছে ৮ লাখ ৭০ হাজার ৪৬ জন। ছেলেদের পাসের হার ৮৭ দশমিক ১৬ শতাংশ ও জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার ১৫৬ জন। অন্যদিকে ৯ লাখ ৯৫ হাজার ৯৪৪ জন মেয়ে অংশ নিয়ে পাস করেছে ৮ লাখ ৭৩ হাজার ৫৭৩ জন। মেয়েদের পাসের হার ৮৭ দশমিক ৭১ শতাংশ ও জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪৬ জন। অর্থাৎ ছেলেদের চেয়ে ৩ হাজার ৫২৭ জন বেশি মেয়ে পাস করেছে এবং ২৭ হাজার ২৯০ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ ৫ পেয়েছে।
শিক্ষার্থী বেশি মানবিকে, ফল ভালো বিজ্ঞানে : বিজ্ঞান বিভাগে ৫ লাখ ৭ হাজার ২৫৪ শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৪ লাখ ৯২ হাজার ৪৭৪ জন, পাসের হার ৯৭ দশমিক ৮ শতাংশ। এই বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ লাখ ৬ হাজার ৯৮৯ জন, অর্থাৎ বিজ্ঞান বিভাগের ৪০ দশমিক ৮১ শতাংশই জিপিএ ৫ পেয়েছে। মানবিক বিভাগ থেকে ৭ লাখ ৮১ হাজার ২৫৬ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ৬ লাখ ৩১ হাজার ৪২৯ জন, পাসের হার ৮০ দশমিক ৮২ শতাংশ। এই বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে মাত্র ১১ হাজার ৭২৫ জন, অর্থাৎ ১ দশমিক ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে।
অন্যদিকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ৩ লাখ ১৪৭ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৬৮ জন, পাসের হার ৯১ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এই বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৫ হাজার ৪৯ জন, অর্থাৎ ৫ দশমিক ০১ শতাংশ জিপিএ ৫ পেয়েছে।
তবে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় পাস করেছে ২ লাখ ১৩ হাজার ৮৮৩ জন। পাসের হার ৮২ দশমিক ২২ শতাংশ ও জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৫ হাজার ৪৫৭ জন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিলে (ভোকেশনাল) পাস করেছে ১ লাখ ৩০ হাজার ১৬৫ জন। পাসের হার ৮৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ ও জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৮ হাজার ৬৫৫ জন।
সর্বোচ্চ পাস যশোর বোর্ডে : এ বছর সবচেয়ে ভালো ফল করেছে যশোর বোর্ড, তাদের পাসের হার ৯৫ দশমিক ১৭ শতাংশ। এরপর কুমিল্লা ৯১ দশমিক ২৮ শতাংশ, ঢাকা ৯০ দশমিক ৩ শতাংশ, বরিশাল ৮৯ দশমিক ৬১ শতাংশ, কারিগরি বোর্ডে ৮৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ, ময়মনসিংহ ৮৯ দশমিক ২, চট্টগ্রাম ৮৭ দশমিক ৫৩, রাজশাহী ৮৫ দশমিক ৮৮, মাদ্রাসা বোর্ডে ৮২ দশমিক ২২, দিনাজপুর ৮১ দশমিক ১৬ এবং সিলেট বোর্ডে পাস করেছে ৭৮ দশমিক ৮২ শতাংশ।
সিলেট বোর্ডের ফল তুলনামূলক খারাপ হওয়ার পেছনে বন্যা পরিস্থিতিকে দায়ী করেন সিলেট বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রমা বিজয় সরকার।
বিষয়ভিত্তিক ফল : ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিষয়ভিত্তিক ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলায় পাসের হার ৯৯.৭৭ শতাংশ, ইংরেজিতে ৯৬.৬৫ শতাংশ, গণিতে ৯৪.৬৩ শতাংশ, পদার্থবিজ্ঞানে ৯৮.৪৩ শতাংশ, রসায়নে ৯৮.৭৬ শতাংশ, উদ্ভিদবিজ্ঞানে ৯৯ দশমিক ৫১ শতাংশ, অ্যাকাউন্টিংয়ে ৯৭.৬৯ শতাংশ, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিংয়ে ৯৭.৮৯ শতাংশ, অর্থনীতিতে ৯৭.৪৫ শতাংশ, কৃষি শিক্ষায় ৯৯.৬৩ শতাংশ এবং গার্হস্থ্য বিজ্ঞানে ৯৯.০৭ শতাংশ।
ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন শুরু আজ : এসএসসির ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন শুরু হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। আগামী ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসএমএসের মাধ্যমে ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করা যাবে। প্রতিটি বিষয় ও প্রতি পত্রের জন্য ১২৫ টাকা হারে চার্জ কাটা হবে। যেসব বিষয়ের দুটি পত্র (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র) রয়েছে, সেসব বিষয়ের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করলে ২৫০ টাকা ফি কাটা হবে। তবে পরীক্ষা না হওয়া বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়/সাধারণ বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি এবং ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছে বোর্ড।
মেক্সিকোকে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে হারিয়ে আর্জেন্টিনা তাদের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন টিকিয়ে রেখেছে। এখন শেষ ম্যাচে তারা কী করে তার ওপর নির্ভর করবে আর্জেন্টিনা পরের পর্বে যেতে পারবে কিনা। এখনই এত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে চাইছি না। সত্যি কথাটা হচ্ছে আর্জেন্টিনা ভালো খেলছে না। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে তারা সৌদি আরবের বিপক্ষে ১০ মিনিট আর মেক্সিকোর বিপক্ষে ৩০ মিনিট ভালো ফুটবল খেলেছে।
আমার চোখে, আর্জেন্টিনা যে ফুটবলটা খেলে কোপা আমেরিকা জিতেছিল ব্রাজিলকে হারিয়ে, তারা এখন সেই মানের ফুটবল থেকে অনেক অনেক দূরে। এমনকি ইতালিকে হারিয়ে যে দলটা ফিনালিসিমো জিতেছিল, সেই মানেরও ধারেকাছে নেই তারা।
কোচ লিওনেল স্কালোনির সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ। আর্জেন্টিনা দল নিয়ে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাত্রা বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে আর্জেন্টিনা দলের প্রতিটি ফুটবলারকেই নিজের সামর্থ্যরে সীমা বাড়িয়ে তুলতে হবে, যাতে লোকে বুঝতে পারে দলটা অনেক উঁচুমানের এবং সেই বিশ্বাস থেকেই যেন মনে করে এই দলটার অনেক বেশি সাফল্য পাওয়া উচিত। দলে এমন সব খেলোয়াড় আছে যারা শতভাগ ফিট নয়। রিজার্ভ বেঞ্চের খেলোয়াড়দের নিজেদের সামর্থ্যরে কথা জানান দিতে হবে এই মুহূর্তে। আর্জেন্টিনা গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচটা খেলবে পোল্যান্ডের বিপক্ষে। এই ম্যাচটা জিতলেই নিশ্চিত হবে পরের রাউন্ডে খেলা। এই ম্যাচেই বোঝা যাবে, দলটা কি আদৌ উন্নতি করছে নাকি এখনো দলে অনেক কমতি আছে। একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, বিশ্বকাপে কোনো দলই সহজ প্রতিপক্ষ নয় আর কোনো ম্যাচই সহজ নয়।
কোচের কৌশলে রদ্রিগো ডি পল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন খেলোয়াড় আর ব্রাজিলে কোপা আমেরিকা জয়ে তার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত তার পারফরম্যান্স অনেকের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ, যদিও সেটা আমি মনে করি না। এটা হোক রদ্রিগো বা গোটা দল, সবার জন্যই আমার একটা উপদেশ, সামনে এগিয়ে যাও। আত্মবিশ্বাস হারিও না। তোমাদের অনেক কিছু প্রমাণ করা বাকি।
দক্ষিণ আমেরিকার অন্য দল ব্রাজিল টুর্নামেন্টটা বেশ ভালোভাবেই শুরু করেছে, তবে নেইমারের চোট ব্রাজিলের জয়ের আনন্দ ছাপিয়ে বড় শংকার জায়গা হয়ে উঠেছে। যদিও ব্রাজিলের এখনো সেরা পারফরম্যান্সে পৌঁছানো বাকি আর নেইমারকে ছাড়া সেটা সহজ হবে না। পরের দুটো ম্যাচে ব্রাজিলের কোচকে একটা ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে, তারা কি শুধুই নেইমারের বদলে অন্য কাউকে দলে নেবে নাকি কৌশলেই পরিবর্তন আনবে? তার হাতে বিকল্প আছে আরও আক্রমণাত্মক একটা দল সাজানো অথবা আরেকটু রক্ষণাত্মক কৌশল অবলম্বন করে রক্ষণশীল একাদশ সাজানো। দলের সেরা তারকা যখন চোট পায়, তখন শুধুই তার বদলি কাউকে নামিয়ে দিলে কাজ হয় না। আমার মনে হয় এখন ব্রাজিলের উচিত দলের সমন্বয়ে পরিবর্তন আনা আর খেলার কৌশল বদল করা।
ইউরোপের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী স্পেন আর জার্মানি ড্র করেছে। এই ম্যাচে দুই দলের খেলা দেখে মনে হচ্ছে, একটা দল খুব ভালোভাবে জানত তারা কী করতে চায় আর অন্য দলটাকে মনে হয়েছে ভঙ্গুর। বল পায়ে এলে স্পেন তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ, অননুমেয় আর অনন্য ফুটবল খেলে। আর জার্মানি এখন এমন একটা জাতীয় দল যাকে কেউ ভয় পায় না। তারা সাধারণ মানের একটা দলে পরিণত হয়েছে। তাদের সেই সামর্থ্য নেই, শক্তি নেই। তবুও তারা প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে চায়। এখন পর্যন্ত জার্মানি দলকে খুব একটা কার্যকর মনে হয়নি। তাদের মধ্যে আগের সেই নির্দয় মানসিকতা আর ধারাবাহিকতা দেখা যায় না। ২০২২-এর জার্মানি খানিকটা রোমাঞ্চ জাগায় তবে ভঙ্গুর। এখন তাদের শেষ ম্যাচটা জিতলেই শুধু চলবে না, তাকিয়ে থাকতে হবে স্পেনের দিকেও।
বরিশালে বিএনপির গণসমাবেশে যাওয়ার পথে হামলার শিকার পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা, দশমিনা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও পটুয়াখালী জেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য শাহজাহান খান মারা গেছেন। গতকাল সোমবার ঢাকার ধানমন্ডি ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
গত ৫ নভেম্বর বরিশালে অনুষ্ঠিত বিএনপির গণসমাবেশে যাওয়ার পথে ৪ নভেম্বর রাতে পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের তেলিখালী এলাকায় শাহজাহান খান এবং তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা হামলার শিকার হন। হামলার গুরুতর আহত শাহজাহান খান সেই থেকে গত ২৪ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টি বলেন, ‘গত ৪ নভেম্বর রাতে তার (শাহজাহান খান) ওপর যে হামলা হয় সে সময় তার কিডনি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।’
শাহজাহান খান পটুয়াখালী জেলার একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, পাশাপাশি তিনি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, পটুয়াখালী রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
পুরনো হয়ে যাওয়া ৯৭৪টি কনটেইনারকে ব্যবহারযোগ্য করে গড়ে তোলা হয়েছে দোহার স্টেডিয়াম ৯৭৪। নানা রঙের কনটেইনারে সাজানো এ স্টেডিয়ামে হলুদ উৎসবের সব প্রস্তুতিই সেরে রেখেছিল প্রায় ৩০ হাজার ব্রাজিল সমর্থক। লুসাইলের পর এই মাঠে প্রিয় দলকে জেতাতে পুরোটা সময় গলা ফাটিয়েছেন তারা। তবে কেন যেন হচ্ছিলই না। তবে কি নেইমারবিহীন ব্রাজিল থমকে যাবে? না, সেটা হতে দেননি অভিজ্ঞ কাসেমিরো। ৮৪ মিনিটে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এ তারকা। বক্সের ওপর থেকে তার ডান পায়ের জোরালো হাফ ভলিতে ঠিকই খুঁজে নেয় গোলের ঠিকানা। তাতে যেমন নিশ্চিত হয়েছে শেষ ষোলো, তেমনই বিশ্বকাপ মঞ্চে সুইজারল্যান্ড আর ব্রাজিলের গলার কাঁটা হয়ে থাকল না। তৃতীয়বারের চেষ্টায় ঠিকই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে সেলেসাওরা।
১৯৫০ সালে পারেনি। ২০১৮ সালেও না। সেই ধারাবাহিকতা কি দোহাতেও বজায় থাকবে? ম্যাচের গতিপ্রকৃতি দেখে তাই মনে হচ্ছিল। তবে তারায় ভরা তিতের আক্রমণভাগকে রোখা অত সহজ নয়। প্রথমার্ধে রোখা গেছে। দ্বিতীয়ার্ধেরও অনেক সময় সুইজারল্যান্ডের রক্ষণে ফাটল ধরাতে পারেনি। তবে কাসেমিরো ঠিকই দেখালেন বুড়ো হারের ভেলকি। ভিনিসিয়ুস, রিচার্লিসন, রাফিনহা, রদ্রিগোদের একের পর এক আক্রমণ যখন ব্যর্থ হচ্ছে, তখনই গোলের দায়িত্ব নিলেন এ মৌসুমে রিয়াল ছেড়ে ম্যানইউতে আসা কাসেমিরো।
ব্রাজিল কোচ তিতে একাদশে দুটি পরিবর্তন আনেন। সামনে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রিচার্লিসন ও রাফিনহাকে রেখে, মাঝখানে খেলান লুকাস পাকেতা, কাসেমিরো ও নেইমারের জায়গায় ফ্রেদকে। গোলকিপার আলিসনের সামনে স্টপারব্যাক পজিশনে থিয়াগো সিলভা ও মার্কুইনোসের সঙ্গে লেফটব্যাকে অ্যালেক্স সান্দ্রো ও দানিলোর জায়গায় খেলান মিলিতাওকে। সুইজারল্যান্ড কোচ মুরাত ইয়াকিন ব্রাজিলের বিপক্ষে ৪-২-৩-১ ফরমেশন সাজান। তাতেই বোঝা যায় ঘর সামলে প্রতিআক্রমণ যাওয়াই এ কোচের লক্ষ্য। সেই পরিকল্পনাটা ফলেই যাচ্ছিল প্রায়। সার্বিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোল করা রিচার্লিসনকে সেভাবে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ভিনিসিয়ুস ছিলেন আগের মতোই আগ্রাসী। ২৭ মিনিটে গোলের প্রথম সুযোগ নষ্ট করেন এ তারকা। ডানদিক থেকে রাফিনহার ক্রস ছোট ডি-বক্সে পেয়েও প্লেসিংটা ঠিকঠাক করতে পারেননি। সুইজারল্যান্ড কিপার ইয়ান সোমার সহজেই রুখে দেন তার দুর্বল প্রচেষ্টা। ৩১ মিনিটে মিলিতাওয়ের সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে বক্সে ঢুকে জোরালো শট নিয়েছিলেন রাফিনহা। তবে কিপার সোমার সহজেই বল আয়ত্তে নেন।
বিরতি থেকে ফেরা ব্রাজিল মাঠে আসে পাকেতাকে রেখে রিয়াল মাদ্রিদ তারকা রদ্রিগোকে নিয়ে। তার আগমনে আক্রমণের ধার বাড়ে সেলেসাওদের। ৫৬ মিনিটে ভিনিসিয়ুসের আড়াআড়ি ক্রসে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন রিচার্লিসন। তবে ৬৪ মিনিটে ভিনিসিয়ুসের লক্ষ্যভেদে ব্রাজিল ভেবেছিল অবশেষে কাক্সিক্ষত লিডটা তারা পেয়ে গেছে। তবে প্রযুক্তি তাদের এগিয়ে যেতে দেয়নি। কাসেমিরোর বাড়ানো বল ধরে দ্রুত বক্সের বাঁদিক দিয়ে আক্রমণে উঠে বল জালে জড়ান রিয়াল মাদ্রিদ তারকা। তবে রিচার্লিসন অফসাইড থেকে ফিরে সেই মুভে যোগ দেওয়ায় হয়েছে সর্বনাশ। বেহায়া ভিএআর ঠিকই ধরে ফেলে তা। তবে ৮৩ মিনিটে কাসেমিরোর হাফ ভলি ঠিকই পোস্টের ডান দিকটা খুঁজে নিলে বিশ্বকাপের গ্রুপে প্রথমবারের মতো পরপর দুই ম্যাচে ইউরোপিয়ান দুই দলকে হারানোর রেকর্ড হয়ে যায় এই ব্রাজিলের।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিশ্বের প্রায় সব দেশই। অধিকাংশ দেশই তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির কথা প্রায় সবারই জানা, তারাও ইতিমধ্যে তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। ফলাফল ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) বা মূল্যস্ফীতিতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সিপিআই ইনডেক্সে এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বাজেটের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আগামী অর্থবছরে সরকার কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজেট প্রস্তাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পরাবাস্তব বাজেট। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা আসলে সম্ভব নয়। গত ১১ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, আগের বছরের মে মাসে যে পণ্য গড়ে ১০০ টাকা কিনতে হয়েছে, এ বছরের মে মাসে তা কিনতে হচ্ছে গড়ে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সায়। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ধরুন আগের বছরের একই সময়ে ৫০০ টাকার একটি নোটে কোনো ব্যক্তি পাঁচটি পণ্য কিনতে পেরেছিলেন। এ বছরের একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এখন একই টাকায় তিনটি পণ্য কিনতে পারছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১ বছরে বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ : ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, অথচ এ বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ বছরের এপ্রিল মাসেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এক বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ : বিবিএসের তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৬৪ শতাংশ।
গ্রামের চেয়ে শহরের মূল্যস্ফীতি বেশি : এক বছর আগেও শহরের মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে কম ছিল। কারণ গ্রামের চেয়ে শহরে পণ্য মজুদের আধুনিক ব্যবস্থা আছে। তবে সরকারি উদ্যোগে শহরের মতো গ্রামেও কিছু স্থানে খাদ্যগুদামের ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় এখন শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। মে মাসে শহর এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, একই সময়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বিশ্বে কমেছে মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশে বাড়ছে : গত শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, গত এপ্রিলে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেখান থেকে ৪৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখান থেকে ৩৪ শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে ইইউ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তবে বাংলাদেশ এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো গত বছর আগস্টে এক ঘোষণাতেই জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ দেরিতে হলেও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে এ সুদহার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে নীতি সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আভাস দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দাবি করেছে, বিশে^র দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে হার, তা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য হুমকি। মূল্যস্ফীতির এই হার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এরকম এক সময়ে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এ দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে।
যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে আসে। জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হয় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছিল।
মজুরি সূচক বেড়েছে : বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩২ শতাংশে।
সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেম এরপর বিয়ে। দেড় বছরের দাম্পত্য জীবনে আট মাস ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও শরিফুল রাজের বনিবনা হচ্ছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। চলছে টানাপোড়েন এবং সেই সংসার এখন ভাঙনের পথে। রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রাজের সঙ্গে পরীমণির মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। সব ছাপিয়ে যা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রবিবার একটি গণমাধ্যমের ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এসে শরিফুল রাজ জানান, আপাতত তারা সেপারেশনে আছেন এবং তাদের আর একসাথে হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীকে তিনি শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে সবশেষে পরীমণির উদ্দেশ্যে রাজ বলেন, ‘বেবি, আই লাভ ইউ। যা-ই হোক না কেন, আনন্দে থেকো। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো রাখব।’
রাজের এমন মন্তব্যের উত্তর দিতে সোমবার রাতে গণমাধ্যমটির লাইভে এসে রাজের উদ্দেশ্যে পরীমণি বলেন, ‘গরু মেরে জুতা দান করার কোনো দরকার নেই। কেউ রেসপেক্ট করলে সেটা তার কার্যকলাপ দেখেই বোঝা যায়, মুখ ফুটে বলতে হয় না। আমাকে পাবলিকলি অপমান করে এরপর রেসপেক্ট দেখানোর কোনো দরকার নেই। আর আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসব ইমোশনালি কোনো কথা শুনতে চাই না। এসব ইমোশনালি কথা মানুষকে গিলিয়ে লাভ নেই। মানুষ বুঝে।’
ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলো পরী বলেন, ‘এত বছর ধরে তারা বন্ধু অথচ আমি জানতাম না। এসব সামনে আসার পর জানতে পারলাম। আর রাজ যতটা তার বন্ধুদের ইমেজ নিয়ে কনসার্ন তার পরিবার নিয়ে এতটাও কনসার্ন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমনিতে অনেক শান্তশিষ্ট। অনেকটা সাপের মতো, লেজে পাড়া না দিলে চুপচাপ থাকি কিন্তু আমার লেজে পাড়া দিলেই আমি ফুঁস করে উঠি আর তখন কামড় দিবই।’
সবশেষে পরী বলেন, ‘আমি চাই এসবের শেষ হোক। আমি আজকে এখানে এসে এসব বলতাম না। তুমিই (রাজ) আমাকে বাধ্য করেছ। এরকম অসুস্থ মানুষের সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। আমি চাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ আমাকে ডিভোর্স দিক।’
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।