
পুরনো ৯৭৪টি কন্টেইনার ব্যবহার করে গড়ে তোলা হয়েছে স্টেডিয়াম ৯৭৪। সেখানেই কাল সন্ধ্যায় সুইজারল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল ফেভারিট ব্রাজিল। ৪৪ হাজার আসনবিশিষ্ট স্টেডিয়ামের বড় অংশই দখলে ছিল ব্রাজিল সমর্থকদের। ম্যাচের অনেক আগে থেকেই আনাগোনা শুরু হয় ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জয়ের সাক্ষী হতে আসা ব্রাজিল সমর্থকদের। প্রথম ম্যাচে সার্বিয়াকে রিচার্লিসনের জোড়ায় হারানোর পর থেকেই সেলেসাও সমর্থকদের চোখে-মুখে খেলে যাচ্ছে উত্তুঙ্গ আত্মবিশ্বাস। এই ব্রাজিল অবসান ঘটাবে দু’দশকের শিরোপা অপেক্ষা। এমনই আস্থা তিতের দলের ওপর। তবে একজনে আস্থাটা নড়ে গেছে খোদ ব্রাজিলিয়ানদেরই। তিনি দলের সবচেয়ে বড় তারকা নেইমার। সার্বিয়া ম্যাচে গোড়ালিতে চোট পেয়ে গ্রুপ পর্বে আর খেলা হচ্ছে না তার। বিশ্বকাপ এলেই চোটের সঙ্গে সখ্য গড়েন পিএসজি তারকা। এটা চলছে সেই ২০১৪ বিশ্বকাপ থেকেই। চোটের কারণে মারাকানায় জার্মানির বিপক্ষে সেমিফাইনাল খেলতে পারেননি। মেশিন জার্মানি সেই ম্যাচে ব্রাজিলকে দেয় ৭-১ হারের লজ্জা। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপটাও নেইমার খেলেছেন চোট নিয়ে। এবারও ঘটল একই ঘটনা। তাই ব্রাজিলের কারও কারও কাছে রীতিমতো শত্রুতে পরিণত হয়েছেন ব্রাজিলের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৫ গোল করা নেইমার। তবে দলসহ অনেকেই নেইমারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। দিচ্ছেন সাহস। তাদের বিশ্বাস, নেইমার ফিরবেন বীরের মতো।
সার্বিয়ার বিপক্ষে নেইমারকে ৯ বার ফাউল করা হয়েছিল। বিশ্বকাপ অভিযানে তিনি এসেছিলেনও বিশ্বের সবচেয়ে ফাউলপ্রবণ ফরোয়ার্ডের রেকর্ড সঙ্গী করে। নেইমারের শারীরিক সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে গতকালের ম্যাচ দেখতে আসা ব্রাসিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পাওলো লুকাস বলেন, ‘ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ওকে দেখে আসছি সবসময় ফাউলের শিকার হতে। এটা কেবল বল পায়ে রাখার জন্য হয় না। ওর আসলে ফাউল এড়িয়ে খেলার শারীরিক সামর্থ্যই নেই। বিশ্বকাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ আসরে ও সবসময় চোটের অজুহাতে ম্যাচ মিস করে; যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’ নেইমারের ভক্ত হয়েও এবার প্রিয় তারকার ইনজুরিতে পড়াটা ভালো চোখে দেখছেন না সাও পাওলোর ফেরনান্দা ফ্রান্সিসকা। পেশায় শিক্ষক এই নারী বলেন, ‘বিশ্বকাপে নেইমারের ম্যাজিক দেখব বলেই এত পয়সা খরচ করে এসেছি। অথচ সে প্রথম ম্যাচেই চোটকে কাছে টেনে নিল। এরকম ও নিয়মিতই করে। এভাবে ও কখনই বিশ্বসেরা হতে পারবে না।’ গ্যাব্রিয়েল গ্যাসপারের কাছে নেইমার নন, ব্রাজিলকে শিরোপা এনে দিতে পারেন কেবল রিচার্লিসন ‘এই দলে নেইমারের চেয়ে রিচার্লিসনের গুরুত্ব অনেক বেশি। নেইমার অভিনেতা। আর রিচার্লিসন ব্রাজিলের আগামীর আশার বাতিঘর।’
নেইমারের পাশে থাকা ভক্তের সংখ্যাও একেবারে কম নয়। অনেকের মতে, নেইমারকে নিয়ে বিতর্কটা উসকে দিচ্ছে আর্জেন্টাইন কিছু সমর্থক। হোসে মার্কোসের বিশ্বাস, নেইমার ফিরবেন রাজার মতোই ‘একজন ভালো খেলোয়াড়কে সামলে রাখার দায়িত্ব ফিফার। সার্বিয়া ম্যাচে ওকে বড় নৃশংসভাবে ফাউল করা হয়েছে। তারপরও ও দলের স্বার্থেই মাঠে ছিল পুরোটা সময়। আমি মনে করি ওকে যারা হিংসে করে, যারা ব্রাজিলের ভালো চায় না, তারাই এসব বাজে কথা ছড়াচ্ছে। আমার বিশ্বাস, আমাদের ভালোবাসার প্রতিদান দিতে নেইমার ফিরে আসবেন ঠিক ব্যাটম্যানের মতো।’ সতীর্থ ও কোচদের অবশ্যই পাশেই পাচ্ছেন নেইমার। দূর থেকে তাকে সমর্থন জানিয়েছেন অনেক তারকাও। যাদের অন্যতম ব্রাজিলকে ২০০২ বিশ্বকাপ জেতানো স্ট্রাইকার রোনালদো। বিশ্বের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ডদের একজন রোনালদো নেইমারের চোটে কিছু ব্রাজিলিয়ান ভক্তকে নগ্ন উল্লাস করতে দেখে ইনস্টাগ্রামে দিয়েছেন প্রতিক্রিয়া ‘তুমি যেভাবে নিজের প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটিয়েছো, যে পর্যায়ে পৌঁছে গেছো, আমার বিশ্বাস সারা বিশ্বের অনেক মানুষ তোমাকে ভালোবাসে ও তোমার অবদানকে স্মরণ করে।’ তিনি আরও লিখেন ‘তোমার সাফল্য, তোমার শীর্ষে ওঠাটা হয়তো অনেকেই সহ্য করতে পারে না, তোমাকে ঈর্ষা করে। তোমার চোটে যারা উল্লাস করে, তাদের দেখে মনে হয় আমরা কি সত্যিই অধিনায়ক সমাজে বাস করি? এটা কেমন জগৎ? আগামী প্রজন্মের কাছে কেমন বার্তা আমরা পৌঁছে দিচ্ছি? তাই আমি এখানে সেই সমাজের বিরোধিতা করে বলছি, তুমি আরও শক্তি নিয়ে ফিরে আসো, এই বিরতি যেন তোমার গোলের, জয়ের ক্ষুধা আরও বাড়িয়ে দেয়।’
ব্রাজিলের হয়ে আগের দুই বিশ্বকাপে ছয় গোল করেছেন নেইমার। এবার দোহায় এসে গোল না পেলেও নিজের সহজাত কারুকাজে নজর কেড়েছিলেন। তবে গোড়ালির চোট তাওক ছিটকে দিয়েছে। এজন্য আক্ষেপ করছেন অনেকেই।
বছর বছর মাথাপিছু আয় বাড়ছে। বাহাবা জুটছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। সরকারের স্মিত হাসি চওড়া হচ্ছে। এত ভালোর মধ্যেও নির্ধারিত আয়ের মানুষের পাতের খাবারের তালিকা সংকুচিত হচ্ছে। কেউ কম খাচ্ছেন, কেউবা খাবারের মান কমিয়েছেন। সংসারের অন্য সব খরচেও টান পড়েছে। শখের জিনিসের পেছনে খরচ বন্ধ হয়েছে অনেক আগেই। সবকিছু মিলে কষ্টে দিন পার করছেন সাধারণ মানুষ। মাথাপিছু আয় বাড়লেও এতে সাধারণ বা খেটে খাওয়া মানুষের পেট ভরছে না।
গত ১৪ নভেম্বর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। বৈঠকে গত অর্থবছরের (২০২১-২২) মাথাপিছুু আয় ২ হাজার ৮২৪ ডলারে উন্নীত হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৩৩ ডলার বেশি। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হার প্রতি বছরই বাড়ছে।
নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জীবনে মাথাপিছু আয় বাড়ার যে কোনো প্রভাব নেই, তা বোঝা যায় বিক্রয়কর্মী বকুলের জবানিতে। ঢাকা নিউমার্কেটের একটি শাড়ির দোকানের এ বিক্রয়কর্মী জানান, তিনি মাসে বেতন ও কমিশন মিলে ২০ হাজার টাকা পান। তার দুই ছেলে গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলে পড়ে। বড় ছেলে ফিজিকস ও কেমিস্ট্রির জন্য কোচিং করত। কুলিয়ে উঠতে না পারায় গত মার্চ থেকে কোচিং বন্ধ করে দিয়েছেন। বাবার অসহায়ত্ব টের পেয়ে ছেলে একটি অনলাইনভিত্তিক খাবার বিক্রি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহকারীর চাকরি নিয়েছে। পাশাপাশি লেখাপড়াও চালাচ্ছে।
ঘটনাটি জানিয়ে বকুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সারা দিন সাইকেলে করে ছেলে এখানে-ওখানে খাবার পৌঁছে দেয়। রাতে ডিউটি শেষে ছেলে যখন বাসায় ফিরে ক্লান্ত শরীরে বই নিয়ে বসে, তখন আর সইতে পারি না। চোখের পাতা ভিজে উঠে। স্ত্রী টের পায়, কষ্টে সেও পাশে এসে দাঁড়াতে চায়। তখন বাবা হিসেবে নিজেকে অক্ষম মনে হয়। কিন্তু আমার যে আর করার কিছু নেই। একটাই পারি, পরিবারের সদস্যদের গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে। কিন্তু ছেলেকে একটা ভালো স্কুলে ভর্তি করেছি। তাও পারতাম না, লটারি পদ্ধতির কারণে আমার ছেলে স্কুলটিতে ভর্তি হতে পেরেছে। এ জন্য কষ্ট করে হলেও তাদের ঢাকায় রেখেছি।’
কিন্তু এভাবে আর চলতে পারছেন না জানিয়ে বকুল বলেন, ‘প্রতিদিনই কোনো না কোনো জিনিসের দাম বাড়ছে। ছেলের কোচিং না হয় বন্ধ করলাম। কাগজ, কলম, পেনসিল, গ্রাফপেপার, বই দাম বাড়ার তালিকা থেকে কোনো কিছুই বাদ যাচ্ছে না। আটা-ময়দা, চাল-চিনি, তেল-সাবান, তরিতরকারি যেটুকু কিনি তার সবটাই বাড়তি দামে।’
গত তিন বছরে নিউমার্কেটের বিক্রয়কর্মীদের কোনো বেতন বাড়েনি। প্রথম দুই বছর করোনা মহামারীর জন্য নিয়মিত বেতন হয়নি। তবে মহামারী নিয়ন্ত্রণে আসার পর থেকে নিয়মিত বেতন হচ্ছে। সরকারের মাথাপিছু আয়ের যে ফর্মুলা তাতে প্রতি বছরই বেতন বৃদ্ধির কথা বলা হয়ে থাকে। ফর্মুলা অনুযায়ী জিনিসপত্রের যেমন দাম বাড়ে, তেমনি শ্রমের মজুরিও বাড়ে বছর বছর।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) মতে, গত মাসে চারজনের একটি পরিবারের খরচ ছিল ২২ হাজার ৪২১ টাকা। এ হিসাব খাবার তালিকায় মাছ-মাংস ধরে। মাছ-মাংস বা আমিষের জোগান বাদ দিয়ে খরচ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৯ টাকা। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে খরচ ছিল মাছ-মাংসসহ ১৭ হাজার ৫৩০ টাকা আর বাদ দিয়ে ৬ হাজার ৫৪১ টাকা।
বাজার দর কতটা বাড়ল তা নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি তথ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। গত ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ওই মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ, যা গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ওই সময় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। কিন্তু সিপিডি বলছে, ওই সময় খাদ্যপণ্যের প্রকৃত মূল্যস্ফীতি ২০ থেকে ৫০ শতাংশ।
খাদ্যের পেছনে মানুষকে এখন তার আয়ের বেশিরভাগ অংশ ব্যয় করতে হচ্ছে। এক বছরের ব্যবধানে জরুরি খাদ্যপণ্যের দাম ৩৬ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এক বছর আগে বাজারে মোটা চালের দাম ছিল প্রতি কেজি ৪৪ থেকে ৪৮, যা এখন ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় উন্নীত হয়েছে। এ সময়ে নাজিরশাইল চাল ৬০ থেকে ৮০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ৩৪ টাকার খোলা আটা এখন ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা। গত এক বছরে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে অন্তত ২৫ শতাংশ। এ সময়ে বিভিন্ন ধরনের মসুর ডাল ২০ থেকে ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। আর চিনির দাম ৭৫ থেকে ১১০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ ডলারে উঠলেও বাস্তবে দেশের প্রতিটি মানুষের আয় তা নয়। কারণ, মাথাপিছু আয় কোনো ব্যক্তির একক আয় নয়। দেশের অভ্যন্তরের পাশাপাশি রেমিট্যান্সসহ যত আয় হয়, তা দেশের মোট জাতীয় আয়। সেই জাতীয় আয়কে দেশের মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে মাথাপিছু আয় বের হয়। ফলে দেশে মাথাপিছু আয় বাড়লেও, তাতে ব্যক্তির আয়ে কোনো তারতম্য হয় না।
মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) হিসাব করার জন্য সম্প্রতি নতুন ভিত্তিবছর চূড়ান্ত করেছে সরকার। ২০১৫-১৬ ভিত্তিবছর ধরে জিডিপি, প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ বা মাথাপিছু আয় গণনা করা হয়। এতদিন ২০০৫-০৬ ভিত্তিবছর ধরে এসব গণনা করা হতো।
মাথাপিছু আয়ের যে হিসাব দেওয়া হচ্ছে তা সঠিকভাবে করা হচ্ছে কি না, সেটি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের একজনের আয় আসলেই ২ হাজার ৮২৪ ডলার হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। সেটা যদি হয়েও থাকে, তাহলে আয়টা কার কাছে যাচ্ছে সেটাও দেখা দরকার। কারণ এত আয়ের পরও সাধারণ মানুষ সংসার চালাতে পারছে না। বাস্তবতা হচ্ছে, কতিপয় মানুষের কাছে সম্পদ কুক্ষিগত হচ্ছে, যারা হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ফলে সমাজে বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করছে।’
দেশে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার কত, সরকারিভাবে তা প্রকাশ করা হয়নি। চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী দেশে দারিদ্র্যের যে হার উল্লেখ করেছেন তা পুরনো, অর্থাৎ ২০২০ ও ’২১ সালের করোনাভাইরাসের প্রকোপকালের আগের। গত জুনে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ আইপিসি ক্রনিক ফুড ইনসিকিউরিটি রিপোর্ট’টি ২০০৯-১৯ সময়কালের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রণীত। এতে করোনা মহামারী-পরবর্তী সময়ের অর্থাৎ ২০২০ ও ’২১ সাল শেষে দেশে দারিদ্র্যের হার সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই। দারিদ্র্যের হার নির্ধারণে কাজ করা সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০১৬ সালের পর এ সম্পর্কিত কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। সংস্থাটির সর্বশেষ ‘হাউজহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে (হায়েস) ২০১৬’-এ জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্যের হার দেখানো হয়েছে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। দেশের কয়েকটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা প্রতিবেদনে দারিদ্র্যের হারে যে ঊর্ধ্বগতি উঠে এসেছে তা গ্রহণে সরকার অনীহা প্রকাশ করেছে। তাই দেশে দারিদ্র্যের বর্তমান হার নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের একটানা এক যুগের শাসনামলের অর্জন নিয়ে একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে এবং অতিদারিদ্র্যের হার ১০ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।’
গত দুই বছরে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের অর্থনীতি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কর্মসংস্থানে মূল ভূমিকা পালনকারী বেসরকারি খাতে চাকরিচ্যুতি, বেতন বা মজুরি কর্তনে মানুষের আয় কমেছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক জনমত জরিপ প্রতিষ্ঠান গ্যালাপ পরিচালিত ‘স্টেট অব দ্য গ্লোবাল ওয়ার্কপ্লেস ২০২১’ অনুযায়ী, করোনার সময় বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ৫৫ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। আর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট উচ্চ মূল্যস্ফীতি আয় কমে যাওয়া মানুষের দুর্গতি বাড়িয়েছে বহুগুণ।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ। একই বছর শ্রম মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অর্থাৎ শ্রম মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি ছিল। ২০২০ সালে মহামারী দেখা দেওয়ার আগপর্যন্ত মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির হারের চেয়ে শ্রম মজুরি বৃদ্ধির হার বেশি ছিল। কিন্তু মহামারী শুরুর পর শ্রম মজুরির চেয়ে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির হার বেশি, যা এখনো বহাল রয়েছে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে দেশের স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষ যখন দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন দেশে কোটিপতির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত ১৩ বছরে দেশের ব্যাংকগুলোতে এক কোটি বা তার চেয়ে বেশি পরিমাণের আমানত রয়েছে এমন ব্যক্তির সংখ্যা চার গুণেরও বেশি বেড়েছে। এ সময়ে কোটিপতি আমানতকারীদের টাকার পরিমাণ বেড়েছে সাত গুণেরও বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০০৯ সালের মার্চে দেশে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ৬৩৬ জন, যা চলতি বছরের জুন শেষে ১ লাখ ৮ হাজার ৪৫৭তে উন্নীত হয়েছে। ১৩ বছরে কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে ৮৮ হাজার ৮২১ জন বা ৪৫২ শতাংশ।
২০০৯ সালে ব্যাংকে রাখা কোটিপতি আমানতকারীদের টাকার পরিমাণ ছিল ৭৯ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের জুন শেষে ৬ লাখ ৮০ হাজার ৩৬২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এ হিসাবে ১৩ বছরে কোটিপতি আমানতকারীদের ব্যাংকে গচ্ছিত সম্পদ বেড়েছে ৬ লাখ ৪৯৬ কোটি টাকা। এ সময়ে কোটিপতি আমানতকারী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকে রাখা তাদের সম্পদ বেড়েছে ৭৫১ শতাংশ।
গত বছরের চেয়ে এবার এসএসসি ও সমমানের ফলাফলে পাসের হার কমেছে ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। কিন্তু জিপিএ-৫ বেড়েছে ৮৬ হাজার ২৬২ জন। যা মোট উত্তীর্ণের ১৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এসএসসি পরীক্ষায় গ্রেডিং পদ্ধতি চালুর পর এ বছরই সবচেয়ে বেশি জিপিএ ৫ পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। মূলত বেশি প্রশ্নের মধ্য থেকে খুবই কম উত্তরের সুযোগ থাকায় জিপিএ ৫-এর এ উল্লম্ফন বলে মনে করছেন পরীক্ষাসংশ্লিষ্টরা।
গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় বোর্ড চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ বছরের এসএসসি ও সমমানের ফলাফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এরপর দুপুর ১টায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ সম্মেলনে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী।
এবার ৯টি সাধারণ বোর্ডসহ ১১ শিক্ষা বোর্ডে ১৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৩৭ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯ জন। গড় পাসের হার ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন। এর মধ্যে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২ হাজার ৯৭৫টি। তবে একজনও পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫০টি।
আর গত বছর পাসের হার ছিল ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং জিপিএ ৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন শিক্ষার্থী। ওই বছর শূন্য পাস প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১৮টি আর ৫ হাজার ৪৯৪টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করেছিল।
একাধিক শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে জিপিএ ৫-এর উল্লম্ফনের পেছনে তিনটি কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। প্রথমত এ বছর প্রত্যেক পরীক্ষার রচনামূলক অংশে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল বেশি। রচনামূলকে কোনো পরীক্ষায় ১১টির মধ্যে ৪টি এবং ব্যবহারিক থাকা পরীক্ষায় ৮টির মধ্যে ৩টির উত্তর দিতে হয়েছে। নৈর্ব্যক্তিক অংশে কোনো পরীক্ষায় ৩০টির মধ্যে ১৫টি এবং ব্যবহারিক থাকা পরীক্ষায় ২৫টির মধ্যে ১৫টির উত্তর দিতে হয়েছে। আর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা হয়েছে ৫০ নম্বরের, সেখানে তুলনামূলক আগের চেয়ে বেশি সময় দেওয়া হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের পক্ষে খুব সহজেই উত্তর করা সম্ভব হয়েছে।
দ্বিতীয় কারণ সাবজেক্ট ম্যাপিং। এবার ১২টি বিষয়ের মধ্যে ৯টির পরীক্ষা হয়েছে। বাকি তিনটিতে এসএসসির ক্ষেত্রে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), দাখিলের ক্ষেত্রে জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) এবং এসএসসি ও দাখিলের (ভোকেশনাল) ক্ষেত্রে নবম শ্রেণির ফলের ভিত্তিতে নম্বর দেওয়া হয়েছে। সাধারণত এসএসসির চেয়ে জেএসসি বা জেডিসিতে বেশি পাস করলেও বাংলা, ইংরেজি, গণিত, পদার্থ, রসায়ন, উচ্চতর গণিতের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নম্বর কম পায়। আবার তুলনামূলক সহজ বিষয়গুলোতে নম্বর বেশি পায়। এবার যেহেতু বাংলাদেশ ও বিশ^ পরিচয়/সাধারণ বিজ্ঞান, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিং হয়েছে। সেগুলোতে জেএসসি ও জেডিসিতে বেশি নম্বর পাওয়ায় অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থীর জিপিএ ৫ পাওয়ার পথ সুগম হয়েছে। তৃতীয় কারণ হচ্ছে, পরীক্ষার জন্য অনেক বেশি সময় পাওয়া। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনে পরীক্ষা শুরু হলেও এবার করোনা এবং বন্যার কারণে তা পিছিয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর শুরু হয়। এতে শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বছরের চেয়ে সাত মাসেরও বেশি সময় পায়। অথচ এ বছরের এসএসসির সিলেবাস ছিল সংক্ষিপ্ত। যা তাদের পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করে।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা এ বছর প্রস্তুতির জন্য অনেক বেশি সময় পেয়েছে। করোনার সময় অনলাইনে ক্লাস হয়েছে। আবার করোনার প্রাদুর্ভাব কমলে সরাসরি ক্লাস করেছে। শিক্ষার্থীরা বেশি পড়াশোনা করতে পেরেছে। এতে জিপিএ ৫ বেড়েছে। তবে আমরা চাই আমাদের সব শিক্ষার্থীই পাস করুক।’
জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এবার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে কম নম্বরের পরীক্ষা হয়েছে। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার অপশন ছিল বেশি। এমনকি শিক্ষার্থীরা নৈর্ব্যক্তিকেও অপশন পেয়েছে। যার কারণে প্রতিটি প্রশ্নই ভালো করে লেখার সুযোগ পেয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে সাবজেক্ট ম্যাপিং হয়নি। এতে কোনো শিক্ষার্থী জেএসসি বা জেডিসিতে খারাপ করলেও এসএসসিতে সে প্রভাব পড়েনি। ফলে জিপিএ ৫ বেড়ে গেছে।’
গত বছরের চেয়ে পাসের হার কিছুটা কমার কারণ জানিয়ে অধ্যাপক তপন কুমার বলেন, ‘এসএসসির ১২টি বিষয়ের মধ্যে গত বছর ৯টি বিষয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিং হয়েছিল। বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরীক্ষা হয়নি। শুধু তিনটি ঐচ্ছিক বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। জেএসসিতে বেশি পাস করলেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে ভালো ফল করে না। অথচ ওই বিষয়গুলোতেই গত বছর সাবজেক্ট ম্যাপিং হয়েছিল। এতে পাসের হার বেড়ে গেলেও এ বছরের চেয়ে জিপিএ ৫ কম ছিল। আর এ বছর ঠিক তার বিপরীত। তিনটি সহজ বিষয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিং হয়েছে। ফলে পাসের হার কিছুটা কমলেও জিপিএ ৫ বেড়েছে।’
শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিং কম বিষয়ে হওয়ায় এবার শূন্য পাস প্রতিষ্ঠান বেড়েছে। কেন তারা খারাপ করল সে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।’
ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে : এ বছর পাসের ও জিপিএ ৫ প্রাপ্তির দিক দিয়ে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে আছে। ৯ লাখ ৯৮ হাজার ১৯৩ জন ছেলে অংশ নিয়ে পাস করেছে ৮ লাখ ৭০ হাজার ৪৬ জন। ছেলেদের পাসের হার ৮৭ দশমিক ১৬ শতাংশ ও জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার ১৫৬ জন। অন্যদিকে ৯ লাখ ৯৫ হাজার ৯৪৪ জন মেয়ে অংশ নিয়ে পাস করেছে ৮ লাখ ৭৩ হাজার ৫৭৩ জন। মেয়েদের পাসের হার ৮৭ দশমিক ৭১ শতাংশ ও জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪৬ জন। অর্থাৎ ছেলেদের চেয়ে ৩ হাজার ৫২৭ জন বেশি মেয়ে পাস করেছে এবং ২৭ হাজার ২৯০ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ ৫ পেয়েছে।
শিক্ষার্থী বেশি মানবিকে, ফল ভালো বিজ্ঞানে : বিজ্ঞান বিভাগে ৫ লাখ ৭ হাজার ২৫৪ শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৪ লাখ ৯২ হাজার ৪৭৪ জন, পাসের হার ৯৭ দশমিক ৮ শতাংশ। এই বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ লাখ ৬ হাজার ৯৮৯ জন, অর্থাৎ বিজ্ঞান বিভাগের ৪০ দশমিক ৮১ শতাংশই জিপিএ ৫ পেয়েছে। মানবিক বিভাগ থেকে ৭ লাখ ৮১ হাজার ২৫৬ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ৬ লাখ ৩১ হাজার ৪২৯ জন, পাসের হার ৮০ দশমিক ৮২ শতাংশ। এই বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে মাত্র ১১ হাজার ৭২৫ জন, অর্থাৎ ১ দশমিক ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে।
অন্যদিকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ৩ লাখ ১৪৭ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৬৮ জন, পাসের হার ৯১ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এই বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৫ হাজার ৪৯ জন, অর্থাৎ ৫ দশমিক ০১ শতাংশ জিপিএ ৫ পেয়েছে।
তবে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় পাস করেছে ২ লাখ ১৩ হাজার ৮৮৩ জন। পাসের হার ৮২ দশমিক ২২ শতাংশ ও জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৫ হাজার ৪৫৭ জন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিলে (ভোকেশনাল) পাস করেছে ১ লাখ ৩০ হাজার ১৬৫ জন। পাসের হার ৮৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ ও জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৮ হাজার ৬৫৫ জন।
সর্বোচ্চ পাস যশোর বোর্ডে : এ বছর সবচেয়ে ভালো ফল করেছে যশোর বোর্ড, তাদের পাসের হার ৯৫ দশমিক ১৭ শতাংশ। এরপর কুমিল্লা ৯১ দশমিক ২৮ শতাংশ, ঢাকা ৯০ দশমিক ৩ শতাংশ, বরিশাল ৮৯ দশমিক ৬১ শতাংশ, কারিগরি বোর্ডে ৮৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ, ময়মনসিংহ ৮৯ দশমিক ২, চট্টগ্রাম ৮৭ দশমিক ৫৩, রাজশাহী ৮৫ দশমিক ৮৮, মাদ্রাসা বোর্ডে ৮২ দশমিক ২২, দিনাজপুর ৮১ দশমিক ১৬ এবং সিলেট বোর্ডে পাস করেছে ৭৮ দশমিক ৮২ শতাংশ।
সিলেট বোর্ডের ফল তুলনামূলক খারাপ হওয়ার পেছনে বন্যা পরিস্থিতিকে দায়ী করেন সিলেট বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রমা বিজয় সরকার।
বিষয়ভিত্তিক ফল : ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিষয়ভিত্তিক ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলায় পাসের হার ৯৯.৭৭ শতাংশ, ইংরেজিতে ৯৬.৬৫ শতাংশ, গণিতে ৯৪.৬৩ শতাংশ, পদার্থবিজ্ঞানে ৯৮.৪৩ শতাংশ, রসায়নে ৯৮.৭৬ শতাংশ, উদ্ভিদবিজ্ঞানে ৯৯ দশমিক ৫১ শতাংশ, অ্যাকাউন্টিংয়ে ৯৭.৬৯ শতাংশ, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিংয়ে ৯৭.৮৯ শতাংশ, অর্থনীতিতে ৯৭.৪৫ শতাংশ, কৃষি শিক্ষায় ৯৯.৬৩ শতাংশ এবং গার্হস্থ্য বিজ্ঞানে ৯৯.০৭ শতাংশ।
ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন শুরু আজ : এসএসসির ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন শুরু হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। আগামী ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসএমএসের মাধ্যমে ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করা যাবে। প্রতিটি বিষয় ও প্রতি পত্রের জন্য ১২৫ টাকা হারে চার্জ কাটা হবে। যেসব বিষয়ের দুটি পত্র (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র) রয়েছে, সেসব বিষয়ের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করলে ২৫০ টাকা ফি কাটা হবে। তবে পরীক্ষা না হওয়া বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়/সাধারণ বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি এবং ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছে বোর্ড।
মেক্সিকোকে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে হারিয়ে আর্জেন্টিনা তাদের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন টিকিয়ে রেখেছে। এখন শেষ ম্যাচে তারা কী করে তার ওপর নির্ভর করবে আর্জেন্টিনা পরের পর্বে যেতে পারবে কিনা। এখনই এত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে চাইছি না। সত্যি কথাটা হচ্ছে আর্জেন্টিনা ভালো খেলছে না। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে তারা সৌদি আরবের বিপক্ষে ১০ মিনিট আর মেক্সিকোর বিপক্ষে ৩০ মিনিট ভালো ফুটবল খেলেছে।
আমার চোখে, আর্জেন্টিনা যে ফুটবলটা খেলে কোপা আমেরিকা জিতেছিল ব্রাজিলকে হারিয়ে, তারা এখন সেই মানের ফুটবল থেকে অনেক অনেক দূরে। এমনকি ইতালিকে হারিয়ে যে দলটা ফিনালিসিমো জিতেছিল, সেই মানেরও ধারেকাছে নেই তারা।
কোচ লিওনেল স্কালোনির সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ। আর্জেন্টিনা দল নিয়ে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাত্রা বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে আর্জেন্টিনা দলের প্রতিটি ফুটবলারকেই নিজের সামর্থ্যরে সীমা বাড়িয়ে তুলতে হবে, যাতে লোকে বুঝতে পারে দলটা অনেক উঁচুমানের এবং সেই বিশ্বাস থেকেই যেন মনে করে এই দলটার অনেক বেশি সাফল্য পাওয়া উচিত। দলে এমন সব খেলোয়াড় আছে যারা শতভাগ ফিট নয়। রিজার্ভ বেঞ্চের খেলোয়াড়দের নিজেদের সামর্থ্যরে কথা জানান দিতে হবে এই মুহূর্তে। আর্জেন্টিনা গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচটা খেলবে পোল্যান্ডের বিপক্ষে। এই ম্যাচটা জিতলেই নিশ্চিত হবে পরের রাউন্ডে খেলা। এই ম্যাচেই বোঝা যাবে, দলটা কি আদৌ উন্নতি করছে নাকি এখনো দলে অনেক কমতি আছে। একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, বিশ্বকাপে কোনো দলই সহজ প্রতিপক্ষ নয় আর কোনো ম্যাচই সহজ নয়।
কোচের কৌশলে রদ্রিগো ডি পল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন খেলোয়াড় আর ব্রাজিলে কোপা আমেরিকা জয়ে তার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত তার পারফরম্যান্স অনেকের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ, যদিও সেটা আমি মনে করি না। এটা হোক রদ্রিগো বা গোটা দল, সবার জন্যই আমার একটা উপদেশ, সামনে এগিয়ে যাও। আত্মবিশ্বাস হারিও না। তোমাদের অনেক কিছু প্রমাণ করা বাকি।
দক্ষিণ আমেরিকার অন্য দল ব্রাজিল টুর্নামেন্টটা বেশ ভালোভাবেই শুরু করেছে, তবে নেইমারের চোট ব্রাজিলের জয়ের আনন্দ ছাপিয়ে বড় শংকার জায়গা হয়ে উঠেছে। যদিও ব্রাজিলের এখনো সেরা পারফরম্যান্সে পৌঁছানো বাকি আর নেইমারকে ছাড়া সেটা সহজ হবে না। পরের দুটো ম্যাচে ব্রাজিলের কোচকে একটা ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে, তারা কি শুধুই নেইমারের বদলে অন্য কাউকে দলে নেবে নাকি কৌশলেই পরিবর্তন আনবে? তার হাতে বিকল্প আছে আরও আক্রমণাত্মক একটা দল সাজানো অথবা আরেকটু রক্ষণাত্মক কৌশল অবলম্বন করে রক্ষণশীল একাদশ সাজানো। দলের সেরা তারকা যখন চোট পায়, তখন শুধুই তার বদলি কাউকে নামিয়ে দিলে কাজ হয় না। আমার মনে হয় এখন ব্রাজিলের উচিত দলের সমন্বয়ে পরিবর্তন আনা আর খেলার কৌশল বদল করা।
ইউরোপের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী স্পেন আর জার্মানি ড্র করেছে। এই ম্যাচে দুই দলের খেলা দেখে মনে হচ্ছে, একটা দল খুব ভালোভাবে জানত তারা কী করতে চায় আর অন্য দলটাকে মনে হয়েছে ভঙ্গুর। বল পায়ে এলে স্পেন তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ, অননুমেয় আর অনন্য ফুটবল খেলে। আর জার্মানি এখন এমন একটা জাতীয় দল যাকে কেউ ভয় পায় না। তারা সাধারণ মানের একটা দলে পরিণত হয়েছে। তাদের সেই সামর্থ্য নেই, শক্তি নেই। তবুও তারা প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে চায়। এখন পর্যন্ত জার্মানি দলকে খুব একটা কার্যকর মনে হয়নি। তাদের মধ্যে আগের সেই নির্দয় মানসিকতা আর ধারাবাহিকতা দেখা যায় না। ২০২২-এর জার্মানি খানিকটা রোমাঞ্চ জাগায় তবে ভঙ্গুর। এখন তাদের শেষ ম্যাচটা জিতলেই শুধু চলবে না, তাকিয়ে থাকতে হবে স্পেনের দিকেও।
বরিশালে বিএনপির গণসমাবেশে যাওয়ার পথে হামলার শিকার পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা, দশমিনা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও পটুয়াখালী জেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য শাহজাহান খান মারা গেছেন। গতকাল সোমবার ঢাকার ধানমন্ডি ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
গত ৫ নভেম্বর বরিশালে অনুষ্ঠিত বিএনপির গণসমাবেশে যাওয়ার পথে ৪ নভেম্বর রাতে পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের তেলিখালী এলাকায় শাহজাহান খান এবং তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা হামলার শিকার হন। হামলার গুরুতর আহত শাহজাহান খান সেই থেকে গত ২৪ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টি বলেন, ‘গত ৪ নভেম্বর রাতে তার (শাহজাহান খান) ওপর যে হামলা হয় সে সময় তার কিডনি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।’
শাহজাহান খান পটুয়াখালী জেলার একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, পাশাপাশি তিনি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, পটুয়াখালী রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
পুরনো হয়ে যাওয়া ৯৭৪টি কনটেইনারকে ব্যবহারযোগ্য করে গড়ে তোলা হয়েছে দোহার স্টেডিয়াম ৯৭৪। নানা রঙের কনটেইনারে সাজানো এ স্টেডিয়ামে হলুদ উৎসবের সব প্রস্তুতিই সেরে রেখেছিল প্রায় ৩০ হাজার ব্রাজিল সমর্থক। লুসাইলের পর এই মাঠে প্রিয় দলকে জেতাতে পুরোটা সময় গলা ফাটিয়েছেন তারা। তবে কেন যেন হচ্ছিলই না। তবে কি নেইমারবিহীন ব্রাজিল থমকে যাবে? না, সেটা হতে দেননি অভিজ্ঞ কাসেমিরো। ৮৪ মিনিটে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এ তারকা। বক্সের ওপর থেকে তার ডান পায়ের জোরালো হাফ ভলিতে ঠিকই খুঁজে নেয় গোলের ঠিকানা। তাতে যেমন নিশ্চিত হয়েছে শেষ ষোলো, তেমনই বিশ্বকাপ মঞ্চে সুইজারল্যান্ড আর ব্রাজিলের গলার কাঁটা হয়ে থাকল না। তৃতীয়বারের চেষ্টায় ঠিকই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে সেলেসাওরা।
১৯৫০ সালে পারেনি। ২০১৮ সালেও না। সেই ধারাবাহিকতা কি দোহাতেও বজায় থাকবে? ম্যাচের গতিপ্রকৃতি দেখে তাই মনে হচ্ছিল। তবে তারায় ভরা তিতের আক্রমণভাগকে রোখা অত সহজ নয়। প্রথমার্ধে রোখা গেছে। দ্বিতীয়ার্ধেরও অনেক সময় সুইজারল্যান্ডের রক্ষণে ফাটল ধরাতে পারেনি। তবে কাসেমিরো ঠিকই দেখালেন বুড়ো হারের ভেলকি। ভিনিসিয়ুস, রিচার্লিসন, রাফিনহা, রদ্রিগোদের একের পর এক আক্রমণ যখন ব্যর্থ হচ্ছে, তখনই গোলের দায়িত্ব নিলেন এ মৌসুমে রিয়াল ছেড়ে ম্যানইউতে আসা কাসেমিরো।
ব্রাজিল কোচ তিতে একাদশে দুটি পরিবর্তন আনেন। সামনে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রিচার্লিসন ও রাফিনহাকে রেখে, মাঝখানে খেলান লুকাস পাকেতা, কাসেমিরো ও নেইমারের জায়গায় ফ্রেদকে। গোলকিপার আলিসনের সামনে স্টপারব্যাক পজিশনে থিয়াগো সিলভা ও মার্কুইনোসের সঙ্গে লেফটব্যাকে অ্যালেক্স সান্দ্রো ও দানিলোর জায়গায় খেলান মিলিতাওকে। সুইজারল্যান্ড কোচ মুরাত ইয়াকিন ব্রাজিলের বিপক্ষে ৪-২-৩-১ ফরমেশন সাজান। তাতেই বোঝা যায় ঘর সামলে প্রতিআক্রমণ যাওয়াই এ কোচের লক্ষ্য। সেই পরিকল্পনাটা ফলেই যাচ্ছিল প্রায়। সার্বিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোল করা রিচার্লিসনকে সেভাবে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ভিনিসিয়ুস ছিলেন আগের মতোই আগ্রাসী। ২৭ মিনিটে গোলের প্রথম সুযোগ নষ্ট করেন এ তারকা। ডানদিক থেকে রাফিনহার ক্রস ছোট ডি-বক্সে পেয়েও প্লেসিংটা ঠিকঠাক করতে পারেননি। সুইজারল্যান্ড কিপার ইয়ান সোমার সহজেই রুখে দেন তার দুর্বল প্রচেষ্টা। ৩১ মিনিটে মিলিতাওয়ের সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে বক্সে ঢুকে জোরালো শট নিয়েছিলেন রাফিনহা। তবে কিপার সোমার সহজেই বল আয়ত্তে নেন।
বিরতি থেকে ফেরা ব্রাজিল মাঠে আসে পাকেতাকে রেখে রিয়াল মাদ্রিদ তারকা রদ্রিগোকে নিয়ে। তার আগমনে আক্রমণের ধার বাড়ে সেলেসাওদের। ৫৬ মিনিটে ভিনিসিয়ুসের আড়াআড়ি ক্রসে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন রিচার্লিসন। তবে ৬৪ মিনিটে ভিনিসিয়ুসের লক্ষ্যভেদে ব্রাজিল ভেবেছিল অবশেষে কাক্সিক্ষত লিডটা তারা পেয়ে গেছে। তবে প্রযুক্তি তাদের এগিয়ে যেতে দেয়নি। কাসেমিরোর বাড়ানো বল ধরে দ্রুত বক্সের বাঁদিক দিয়ে আক্রমণে উঠে বল জালে জড়ান রিয়াল মাদ্রিদ তারকা। তবে রিচার্লিসন অফসাইড থেকে ফিরে সেই মুভে যোগ দেওয়ায় হয়েছে সর্বনাশ। বেহায়া ভিএআর ঠিকই ধরে ফেলে তা। তবে ৮৩ মিনিটে কাসেমিরোর হাফ ভলি ঠিকই পোস্টের ডান দিকটা খুঁজে নিলে বিশ্বকাপের গ্রুপে প্রথমবারের মতো পরপর দুই ম্যাচে ইউরোপিয়ান দুই দলকে হারানোর রেকর্ড হয়ে যায় এই ব্রাজিলের।
রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন সুলতান মাহমুদ। ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে ধানমন্ডি এলাকায় ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন এ শিক্ষক। এখনো সেই ফ্ল্যাটের ঋণ পুরোপুরি পরিশোধ হয়নি। সুলতানের ব্যবহৃত ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা দুটি। একটি বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক আর অন্যটি প্রাইম ব্যাংকের।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা জানতে চাইলেন তিনি জানান, ফ্ল্যাটের কিস্তি পরিশোধ, সন্তানদের বেতন আর ফ্যামিলি খরচ পরিশোধ সব মিলিয়ে প্রায় প্রতি মাসের শেষেই আর্থিক সংকট তৈরি হয়। এ সংকট থেকে বাঁচতেই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন। তবে মাসের শুরুতে বেতন পেয়েই পরিশোধ করে দিচ্ছেন ক্রেডিট কার্ডের বিল। এতে অতিরিক্ত সুদও গুনতে হচ্ছে না তাকে।
সুলতান মাহমুদ বলেন, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার না করলে হয়তো প্রতি মাসেই আমার বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার করে চলতে হতো। এতে সম্মানহানিরও ঝুঁকি থাকে। কিন্তু এখন ব্যাংক থেকে স্বল্প সময়ের জন্য ধার নিয়ে তা আবার ফেরত দিচ্ছি। এতে কারও কাছে হাত পাততে হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, একসময় মানুষ ক্রেডিট কার্ডের প্রতি কম আগ্রহী হলেও বর্তমানে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে দেশের ৩৯টি ব্যাংক কার্ড সেবা দিচ্ছে। গত মার্চ শেষে এসব ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ লাখ ৭৮ হাজারটি। ঠিক চার বছর আগে ২০১৯ সালে মার্চ শেষে এ কার্ডের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৪৯ হাজারটি। অর্থাৎ মাত্র চার বছরের ক্রেডিট কার্ড বেড়েছে ৮ লাখ ২৮ হাজার বা ৬১ দশমিক ৪২ শতাংশ। এই একই সময়ে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। গত মার্চে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের মার্চে এ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ চার বছরের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
শুধু সুলতানই নন, ব্যবসায়ী আমিরুল, সাংবাদিক আক্তার আর চাকরিজীবী তারিকুলও একই কারণে ব্যবহার করছেন দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ক্রেডিট কার্ড। তাদের মতে, ক্রেডিট কার্ডের কারণে সহজ হয়েছে তাদের জীবনযাত্রা। তবে উল্টো চিত্রও আছে। করোনা মহামারীর সময় চাকরি হারানো আজাদুল ইসলাম ক্রেডিট কার্ডে ধার নিয়ে এখন বিপাকে রয়েছেন। তিনি বলেন, করোনার সময় প্রথম দিকে আমাদের বেতন কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। সে সময় সংসারের খরচ বহন করতে ক্রেডিট কার্ডের সহায়তা নিয়েছেন। যে ঋণ এখন পর্যন্ত টানতে হচ্ছে তাকে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ হবে বলে আশাবাদী এ গ্রাহক।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ক্রেডিট কার্ড জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে এর ‘ধার’ নেওয়ার পদ্ধতির জন্য। পাশাপাশি পণ্যের দামে ডিসকাউন্টের পাশাপাশি কিস্তিতে পরিশোধের পদ্ধতিও এ ব্যাপ্তি বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। যেটি গ্রাহককে এককালীন বেশি দামের পণ্য কিনতে সহায়তা করে। এবার জেনে নেওয়া যাক ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা-অসুবিধাগুলো।
পণ্য কিনতে কিস্তি সুবিধা : ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কিস্তিতে পণ্য কিনতে একসঙ্গে সব টাকা পরিশোধ করতে হবে না। বিনা সুদে বা নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদে গ্রাহক কয়েক মাসের সমান কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। যদিও গ্রাহক তার ক্রেডিট লিমিটের চেয়ে বেশি দামি পণ্য কিনতে পারবেন না। আর কিস্তির টাকাও পরিশোধ করতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। এতে কারও কাছে টাকা ধার করার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে পরিশোধের ক্ষেত্রে সময়সীমা পার হয়ে গেলে জরিমানা গুনতে হতে পারে।
ঋণের সুবিধা : কিছু ক্রেডিট কার্ড, বিশেষ করে বিদেশে শূন্য শতাংশ সুদে ঋণ দেয়। এসব ক্ষেত্রে মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ মূল্য পরিশোধ করতে হয়, যা বেশ সুবিধাজনক। আবার কোনো কোনো কার্ডে ঋণে সুদের হার অনেক থাকে। এ ক্ষেত্রেও একটা সুবিধা আছে। বোঝা এড়াতে দ্রুত ঋণ পরিশোধ করা হয়। নিজস্ব ঋণ থাকে না।
পরিবর্তনযোগ্য : এসব ক্ষেত্রে সঠিক কার্ডটি বেছে নিতে পারা জরুরি। একটি ভুল কার্ড দিনের পর দিন ব্যবহার করলে ঋণের বোঝা শুধু বাড়তেই থাকবে। তবে এটা বুঝতে ব্যাংকের পুরো শর্তাবলি মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। যদিও কার্ডের ধরন পরিবর্তন করা যায় খুব সহজে। কারণ প্রতিটি ব্যাংকে বিভিন্ন প্রকারের ক্রেডিট থাকে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কার্ড যেমন নিতে পারবেন তেমনি পরবর্তী সময়ে সেটির ধরন পরিবর্তনও করতে পারবেন। আবার নির্দিষ্ট পরিমাণ লেনদেন করলে বাৎসরিক ফি এড়ানো যায়। যেমন অনেক ব্যাংকের কার্ডে অন্তত ১৮ বার কেনাকাটা করলে বাৎসরিক ফি দিতে হয় না। ব্যাংকভেদে এ নিয়মের ভিন্নতা রয়েছে। দেশের বাইরেও ব্যবহার করা যায় : ক্রেডিট কার্ড ইন্টারন্যাশনাল হলে সেটি ব্যবহার করা যাবে বিশ্বের অনেক দেশেই। টাকার পাশাপাশি ডলারও ধার করে ব্যবহার করা যায়। হোটেল বুকিং, বিমানভাড়া, রেস্টুরেন্ট ও কেনাকাটায় মেলে নানা ছাড় ও পয়েন্ট জেতার সুযোগ। বিদেশে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে যা খরচ করবেন, মাস শেষে আপনার সেই পরিমাণ বিল হিসেবে ইস্যু করবে ব্যাংক। তারপর সুদ বা জরিমানা এড়াতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই বিল পরিশোধ করতে হবে।
অফারের ছড়াছড়ি
বিভিন্ন সময়ে ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন অফার দেওয়া হয়। যেমন ‘ক্যাশ ব্যাক অফার’, ‘স্পেশাল ডিসকাউন্ট’। দেশের বাইরে বেড়াতে গেলে, হোটেলে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারে অনেক সময়ই মূল্যছাড় দেওয়া হয়। প্লেনের টিকিট কাটতেও অনেক সময় পাওয়া যায় বিশেষ মূল্যছাড়। আর অনলাইন কেনাকাটার জন্যও এখন ক্রেডিট কার্ড বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন সময়ে দেখা যায়, নামিদামি হোটেল ও রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়ায় ছাড় এবং অফার দিয়ে থাকে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আবাসিক হোটেলগুলোও ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকে। একটি কিনলে একটি ফ্রি (বাই ওয়ান গেট ওয়ান) অফারও দেওয়া হয়। এ ছাড়া রয়েছে মূল্যছাড়সহ নানা অফার। অনেকেই পরিবার নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে ঘুরতে যান। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও হোটেলের নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হোটেল বুক করা যায়। এ ক্ষেত্রেও আপনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন। তবে বিদেশে হোটেল বুকিংয়ের টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে ডুয়েল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড প্রয়োজন হবে।
অসুবিধা
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি অসুবিধাও কম নয়। এজন্য বেশ সতর্ক হতে হবে গ্রাহককে। একটু বেখেয়ালি হলেই পড়তে পারেন ঋণের ফাঁদে।
ঋণের ফাঁদ
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার সবসময়ই একটি ঋণ নেওয়ার মাধ্যম। মনে রাখতে হবে অর্থ খরচের ৪৫ দিনের মধ্যে সেটি পরিশোধ করতেই হবে। অন্যথায় ঋণের ওপর সুদ শুরু হবে। যা ঋণের পরিমাণ প্রতিদিন বাড়িয়ে দেবে। তাই কিছুটা ঝুঁকি থেকেই যায়।
লুক্কায়িত ব্যয়
সুদের হার পরিশোধই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের একমাত্র ব্যয় নয়। সময়মতো মাসিক বিল পরিশোধ না করলে গ্রাহককে জরিমানা গুনতে হতে পারে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে নগদ অর্থ তুলতে এর জন্য নির্দিষ্ট হারে ফি দিতে হতে পারে। সরাসরি বুথ থেকে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে নগদ অর্থ উত্তোলন করতে গেলে বাড়তি ফি এবং ওইদিন থেকেই (এ ক্ষেত্রে ৪৫ দিন সময় দেওয়া হয় না) সুদ গণনা শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে চেক দিয়ে টাকা সঞ্চয় হিসেবে স্থানান্তর করে তারপর সেটি নগদায়ন করলে ৪৫ দিন সময় পাওয়া যাবে।
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলতে নেমে হিটস্ট্রোকে মাঠেই রিয়া আক্তার (১০) নামের এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার দুপুরে উপজেলার সহদেবপুর ইউনিয়নের দ্বীমুখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এদিকে মঙ্গলবারের (৩০ মে) খেলায় সদর উপজেলার এক ছাত্রী মাঠে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
নিহত রিয়া আক্তার কালিহাতীর ছুনুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী এবং একই গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে।
ছুনুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের সঙ্গে দ্বীমুখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলা ছিল। রিয়া মাঠে খেলতে নেমে হঠাৎ মাটিতে পড়ে যায়। পরে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোঘণা করেন।
প্রধান শিক্ষক বলেন, মরদেহ সোমবারই দাফন করা হয়েছে। আমরা রিয়ার বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা প্রকাশ করছি।
টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রচণ্ড গরমে খেলতে গিয়ে মেয়েটি মারা গেছে। মঙ্গলবারের খেলায় সদর উপজেলার একটি মেয়ে মাঠে বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বঙ্গমাতা টুর্নামেন্টটি আগামী ১২ জুনের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে।
প্রচণ্ড রোদে ছাত্রীদের খেলতে অসুবিধার বিষয়টি আমরা ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাকে অবগত করেছি।
রিয়া আক্তারকে খেলতে নামতে বাধ্য করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি অস্বীকার করেছেন।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সুজা উদ্দিন তালুকদার বলেন, এখনকার বাচ্চারা রোদের মধ্যে এ ধরনের খেলায় অভ্যস্ত নয়। প্রচণ্ড রোদে হঠাৎ করে মাঠে খেলতে নামলে তাদের জীবন ঝুঁকি থাকে। রোদের তাপে অতিরিক্ত ঘাম, ডিহাইড্রেশন এমনকি হিটস্ট্রোকে তাৎক্ষণিক মৃত্যু হতে পারে। তাই রোদের মধ্যে এভাবে বাচ্চাদের দিয়ে খেলানো উচিত নয়। বিষয়টি নীতি নির্ধারকদের বিবেচনা করা দরকার।
মহামারী করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বের প্রায় সব দেশই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি থেকে জনসাধারণকে কিছুটা স্বস্তি দিতে ঋণের সুদের হার বাড়িয়ে দেওয়াসহ নীতিনির্ধারণী নানা ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। বাংলাদেশও এমন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। বিদেশি মুদ্রার সংকটসহ মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে শর্তসাপেক্ষে ধার নেওয়া ছাড়াও আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এখনো এর সুফল মেলেনি। এমন সংকটের মধ্যেই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ বাজেট উপস্থাপন হতে যাচ্ছে।
এবারের বাজেট সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে সামনে নির্বাচন, অন্যদিকে বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক চাপে চিড়েচেপ্টা দেশের অর্থনীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম, আইএমএফের শর্তের জাল নানান বাস্তবতার মধ্যে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বিশাল বাজেট প্রস্তাব পেশ করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য বরাদ্দ করা অর্থ পুরোপুরি খরচ করতে না পারার শঙ্কার মধ্যেই আরও বড় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি। যদিও অর্থনীতিবিদরা এ বাজেটকে বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে মনে করছেন।
এবারের বাজেটের স্লোগান ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’। এটি মুস্তফা কামালের দায়িত্বকালে পঞ্চম, আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম ও বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। ১ জুন সংসদে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার কথা রয়েছে অর্থমন্ত্রীর। আজ বুধবার থেকে বাজেট অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে।
দেশের অর্থনীতি যখন চাপের মুখে, তখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে ঋণ চেয়েছিল বাংলাদেশ। নানান চড়াই-উতরাই শেষে গত ৩০ জানুয়ারি ৪৭ কোটি ডলার ছাড়ও করে ঋণদাতা সংস্থাটি। কিন্তু ঋণ দেওয়ার আগে নানান শর্ত জুড়ে দেয় তারা। এর মধ্যে ‘দুর্বল’ এনবিআরকে সবল করার বিশেষ শর্ত ছিল। জিডিপির তুলনায় বাংলাদেশের কর আদায়ের হার ৯ শতাংশের মধ্যে। ৩৮টি শর্তের মধ্যে কর আদায় বাড়ানোর অন্যতম শর্ত ছিল তাদের। এবারের বাজেটেও কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই কর আদায়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আদতে কতটুকু বাস্তবসম্মত তা নিয়েও সন্দিহান তারা।
বাজেটের আয়ের খাত বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজস্ব থেকে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদানসহ এর আকার দাঁড়াবে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। রাজস্ব বোর্ডের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি বছরের মতো এবারও বাড়ছে। এবারের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআরবহির্র্ভূত কর ২০ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কর ব্যতীত অন্য আয় হবে ৫০ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদানের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাজেটের যে লক্ষ্যমাত্রার হিসাব ধারা হয়েছে তা বাস্তবসম্মত নয়। গত বছরের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল সেটি থেকে বাড়িয়ে তারা বাজেট ধরছে। তবে আমি মনে করি, বাজেটে পাস হওয়ার পর তা কতটুকু কার্যকর হয়েছে সেই হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রার কতটা আদায় হয়েছে তা বিবেচনা করে নতুন করে বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা বাস্তবসম্মত নয়। সম্পদ আছে মনে করে যদি ব্যয় কাঠামো তৈরি করা হয়, তাহলে যে অর্থ নেই তাকে ব্যয় মনে করে দেখানো হবে। তার মানে হলো, সম্পদ না থাকলে ব্যয়ও হবে না।’
ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘এই মুহূর্তে লোক দেখানোর মতো একটা হিসাব দেখা যায়। আয়ও হবে না, ব্যয়ও হবে না। আমার ভাষায় এটি পরাবাস্তব বাজেট।’
ব্যয়ের খাত : অন্যান্য বারের মতো এবারও আয়ের তুলনায় ব্যয়ের খাত বেশি হচ্ছে। এবারের ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বাজেটে পরিচালন ব্যয় অর্থাৎ আবর্তক ব্যয়, মূলধন ব্যয়, অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ও বৈদেশিক ঋণের সুদসহ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। তাছাড়া এবারের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এডিপিবহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পগুলোর ব্যয় ৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়ায় অনুদানসহ ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।
ঘাটতি মেটানো হবে যেভাবে : বাজেটের ঘাটতি মেটানো হবে মূলত অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে। এবারের বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা প্রথমবারের মতো ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বিদেশিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে ঋণ আনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের ভরসা এবারও ব্যাংক খাত। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকেই নেওয়া হবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার ঋণ। ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেবে ৮৬ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেবে ৪৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা।
তাছাড়া ব্যাংক থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও এবারের বাজেটে ব্যাংকবহির্ভূত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে। এবারের ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে সরকার ঋণ নেবে ২৩ হাজার কোটি টাকা। গত বছরও এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। এবারের সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নেবে ১৮ হাজার কোটি টাকা, আগের অর্থবছরে যা ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা।
জিডিপি : আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটে সংশোধিত জিডিপির চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপির আকার ৪৪ লাখ ৩৯ কোটি ২৭৩ কোটি টাকা। এবারের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ আর ভোক্তা মূল্যসূচক বা মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমান পরিস্থিতিতে জিডিপি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
আগামী অর্থবছরের বাজেট সরকারের জন্য সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের যে ৩৮টি শর্ত রয়েছে, অর্ধেকের বেশিই বাস্তবায়ন করতে হবে এ অর্থবছরে। সরকারকে বেঁধে দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রিজার্ভের যথাযথ গণনা পদ্ধতি প্রণয়ন, প্রতি তিন মাস অন্তর জিডিপির হার নির্ধারণ, সুদের হারে করিডোর পদ্ধতি তৈরি, মুদ্রা বিনিময় হারের একটি দর রাখাসহ কয়েকটি শর্ত পূরণের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কিত। এগুলোর কিছু বাস্তবায়নের ঘোষণা আসবে আগামী জুন মাসে মুদ্রানীতি ঘোষণার সময়, কিছু আসবে জুলাইয়ে। আইএমএফের চাওয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ।
আকাশযাত্রা নিরাপদ ও শান্তিময় করাই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রুদের একমাত্র ব্রত। ফ্লাইট ছাড়ার পর মধ্য আকাশে আপনার পাশে দাঁড়িয়ে যিনি স্মিত হেসে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলেন, স্যার আপনার সিট বেল্ট বাঁধতে হবে। এর কিছুক্ষণ পর আরেকজন এসে বলবেন, চা কফি, কিংবা অন্য কিছু? এরপর যারা খাবার দেবেন, আবার সুনিপুণভাবে সেগুলো গুছিয়ে নিয়ে যাবেন, আপনার ঘুম পাড়ানোর জন্য পরিবেশ নিশ্চিত করবেন, সেটাই কেবিন ক্রুদের পেশা।
তারাই কেবিন ক্রু। যারা উড্ডয়ন থেকে অবতরণ পর্যন্ত সময়টুকু সার্বক্ষণিক সেবা শুশ্রূষা নিশ্চিত করেন। ছোটখাটো অসুখ-বিসুখ করলে কিংবা ঘরে অসুস্থ স্বজন রেখে আসলেও আপনার সামনে হাসিমুখে দাঁড়াতে হয়। এটাই তাদের মূল দায়িত্ব। বিশ্বব্যাপী এটাকে বলা হয় ‘গ্লামার জব ইন দ্য স্কাই‘।
আজ ৩১ মে আন্তর্জাতিক কেবিন ক্রু দিবস। কানাডা ইউনিয়নের উদ্যোগে ২০১৫ সালে বিশ্বে প্রথম কেবিন ক্রু দিবস পালন করা হয়। প্রথম ৪৮০ জন কেবিন ক্রু নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দিবসটি উদযাপন করা হয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স একমাত্র রাষ্ট্রীয় বিমান সেবা প্রতিষ্ঠান- যেখানে কাজ করছেন এক ঝাঁক অভিজ্ঞ ও নবীন কেবিন ক্রু। যারা পরিবার আত্মীস্বজনকে দূরে রেখে বিভিন্ন উৎসব, ছুটি ও বিশেষ দিনেও নিজেদের আনন্দকে বিসর্জন দিয়ে সাধারণ কর্মঘণ্টার বিপরীতে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই যাত্রীসেবা নিশ্চিত করে যাচ্ছেন।
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী উড়োজাহাজ নিয়ে দেশ বিদেশে বিভিন্ন গন্তব্যে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও সাহসিকতার স্বাক্ষর রাখছেন প্রতিনিয়ত। অতীতে বিমানের দেশে ও দেশের বাইরে জরুরি অবতরণে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ক্রুদের প্রচেষ্টায় সকল যাত্রীদের নিরাপদে রাখা সম্ভব হয়েছে।
সম্প্রতি বিমান ছিনতাই ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধেও বিমান কেবিন ক্রুরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়া অসুস্থ যাত্রীদের বিশেষ সেবা প্রদান, আকাশপথে প্রসূতি যাত্রীদের সন্তান প্রসবে সহযোগিতা ও গুরুতর আহত যাত্রীদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানসহ বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতার স্বাক্ষর তারা রেখেছেন। আকাশপথে কেবিন ক্রুদের নিবিড় সেবায় অসংখ্যা অসুস্থ যাত্রী সুস্থতার সঙ্গে তাদের গন্তব্যে অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য কেবিন ক্রু একটি অনন্য সাধারণ পেশা হিসেবে পরিচিত।
দিবসটি উপলক্ষে আজ সীমিত পরিসরে বিশেষ আয়োজন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কেবিন ক্রু অ্যাসোসিয়েন। এবার হজের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকায় তারা সীমিত করেছে সব কর্মসূচি। সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম দস্তগীর বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সমস্ত কেবিন ক্রুকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, এ উপলক্ষে আজ বুধবার কেবিন ক্রু অ্যাসোসিয়েশন অফিসে একটি কেক কেটে সব সদস্যকে শুভ্চ্ছো জানানো হবে। দিবসটিতে তাৎপর্য নিয়ে মতবিনিময় ও সবার কুশলাদি বিনিময় করে করোনার মাঝেও এই কঠিন দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে সবাইকে ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানানো হবে। পেশা আকর্ষণীয় ও সম্মানজনক হিসেবে বিবেচিত।
সুশিক্ষিত ও আলট্রা মডার্ন তরুণ-তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে থাকা এই পেশার প্রতি সাধারণ মানুষের কৌতূহলও লক্ষ্যণীয়। বিমানে কেবিন ক্রুদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে দস্তগীর বলেন, বিশ্বব্যাপী এটা অবশ্যই মর্যাদাসম্পন্ন পেশা। বিমান সেই মর্যাদা সমুন্নত রেখেছে। এখন আমাদের দাবি ২০১৮ সালের এডমিন অর্ডার অনুযায়ী আমাদের সকল সুযোগ-সুবিধা পুরোপুরি প্রদান করা হোক।
কেবিন ক্রুদের পেশাদারিত্ব ও দায়িত্ববোধ সম্পর্কে গোলাম দস্তগীর জানান, কেবিন ক্রুদের দুইভাবে চিহ্নিত করা যায়। প্রথমত ফেস অব দ্য এয়ারলাইন হিসেবে। কারণ কেবিন ক্রুদের আচরণ ও পেশাদারিত্বই এয়ারলাইনসগুলোর যাত্রী ধরে রাখা এবং নতুন যাত্রীদের আকৃষ্ট করা। দ্বিতীয়ত, লাস্ট লাইন অব দ্য ডিফেন্স হিসেবে। কারণ আকাশে উড্ডয়নের পরে যে কোনো জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য কেবিন ক্রু ছাড়া আর কোনো সিকিউরিটি পার্সোনাল থাকেন না। সমগ্র পৃথিবীতে ঝুঁকিপূর্ণ যেসব পেশা রয়েছে তন্মধ্যে কেবিন ক্রু অন্যতম। বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ক্রুরা বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফুট উচ্চতায় স্বল্প সুবিধা সংবলিত পরিবেশে কেবিন ক্রুরা তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
একজন ভ্রমণকারীর ভ্রমণকে সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিরাপদ করে তোলাই কেবিন ক্রুদের মূল কর্তব্য। প্রতিটি সফল উড্ডয়ন ও অবতরণ একজন কেবিন ক্রুকে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবীতে ভ্রমণপিপাসু মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবসায়িক ভ্রমণ, রাজনৈতিক ভ্রমণ, চিকিৎসার জন্য ভ্রমণ, আনন্দ ভ্রমণ ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে আকাশযাত্রা বেড়েই চলেছে। শিশু থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠ সবাই থাকেন কেবিন ক্রুদের ভ্রমণসঙ্গী। কেবিন ক্রুদের বলা হয়, ফার্স্ট রেসপনডার।
দস্তগীর বলেন, কেবিন ক্রুদের হার্টঅ্যাটাক, হাইপোক্সিয়া, হাইপারভেন্টিলেশন, হাইপোগ্লাসেমিয়া, হাইপারগ্লোসিমায়, চকিং, নোজ ব্লিডিং এবং প্রেগন্যান্ট ডেলিভারির দায়িত্বও পালন করতে হয় অনেক ক্ষেত্রে। পেশাদারিত্বের এই দক্ষতায় সত্যিকার অর্থেই আকাশ হয়ে উঠুক শান্তির নীড়। বিমান আকাশে ওড়ার একঘণ্টা আগে ক্যাপ্টেন কেবিন ক্রুদের আবহাওয়া ও অন্যান্য বিষয় সংক্রান্ত তথ্য জানিয়ে দেয়।
এছাড়া পরিচ্ছন্নতা, সি পকেট সংক্রান্ত তথ্য, খাবার-দাবারের সরঞ্জাম পৌঁছানো, জরুরি ইক্যুইপমেন্ট, ফার্স্ট এইড প্রভৃতি ঠিকঠাক আছে কিনা এসব কেবিন ক্রুদের দেখে নিতে হয়।
বিমানে ওঠার পর যাত্রীদের টিকিট মিলিয়ে দেখা, কেবিন লাগেজ সিটে পৌঁছাতে সহায়তা করা, যাত্রীদের সিট দেখিয়ে দেওয়া এবং বিমান আকাশে ওড়ার আগে যাত্রীদের সিট বেল্ট লাগাতে বলাও কেবিন ক্রুদের কাজের পর্যায়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, বিমান ওঠানামা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় পাইলটের হয় কেবিন ক্রুদের বলতে হয়। এই পেশার যে লাইফ স্টাইল এবং রোমাঞ্চকর অনুভূতি।
আজ বুধবার বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। বিকল্প খাদ্য ফসল উৎপাদন ও বিপণনের সুযোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টেকসই ও পুষ্টিকর ফসল চাষে তামাক চাষিদের উৎসাহিত করতে এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘গ্রো ফুড, নট টোব্যাকো’।
তামাক উৎপাদনে কোম্পানির কূটকৌশল উন্মোচনও এবারের বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। ‘তামাক নয়, খাদ্য ফলান’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে দিবসটি উদযাপিত হবে। দিবসটি উদযাপন উদযাপন উপলক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের আওতাধীন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি) প্রতিবছরের মত এবারও যথাযথ গুরুত্বের সাথে দিবসটি উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে সকাল ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়য়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে।
তামাক চাষ কৃষকের স্বাস্থ্য, মাটির স্বাস্থ্য এবং সার্বিকভাবে গোটা জনস্বাস্থ্য ও পৃথিবীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি সাধন করে। দীর্ঘমেয়াদে বৈশ্বিক প্রতিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং খাদ্য সংকট সৃষ্টিতেও ভুমিকা রাখে তামাক। বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান খাদ্য সংকটের পিছনে সংঘাত-যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ মহামারির অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবের পাশাপাশি তামাক চাষের একটি প্রভাব রয়েছে। বর্তমানে, পৃথিবীর ১২৫টিরও বেশি দেশের প্রায় ৪ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয় এবং শীর্ষ তামাক উৎপাদনকারী দেশগুলোর অধিকাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ভুক্ত দেশ।
অন্যদিকে পৃথিবীব্যাপী উৎকৃষ্ট মানের জমি ক্রমবর্ধমানহারে তামাকচাষে ব্যবহৃত হওয়ায় খাদ্য ফসলের জমি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। এসব জমি খাদ্যফসল ফলানোর কাজে ব্যবহার করা গেলে লাখ লাখ মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণের পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তার সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব।
বাংলাদেশে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ খুবই কম, মাত্র ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৭ হাজার একর। অথচ তামাক চাষে ব্যবহৃত মোট জমির পরিমাণের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। বিশ্বের মোট তামাকের ১.৩ শতাংশই উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। তামাকচাষের কারণে খাদ্য ফসলের জমি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশে রবি মৌসুমের প্রধান খাদ্য ফসলগুলোর মধ্যে বোরো, গম এবং আলু অন্যতম এবং এ মৌসুমেই তামাক চাষ হয়ে থাকে।
অন্যদিকে বাংলাদেশে তামাকজনিত অসুস্থতায় প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। দেশে মৃত্যু এবং পঙ্গুত্বের প্রধান চারটি কারণের একটি তামাক। তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা ব্যয় ও কর্মক্ষমতা হ্রাসের আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। তামাকের এসব ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করেই তামাক নিয়ন্ত্রণকে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের অন্তর্ভুক্ত (টার্গেট ৩এ) করা হয়েছে। কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তামাকের সরবরাহ এবং চাহিদা কমিয়ে আনাই হতে পারে তামাকের নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে ওঠার সঠিক উপায়।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক চাষে অতিরিক্ত যে লাভের কথা প্রচার করা হয়, তার প্রায় সবটাই বানোয়াট। আপাতদৃষ্টিতে তামাক চাষে বেশি আয় উপার্জন হলেও এই আয় থেকে পারিবারিক শ্রমের পারিতোষিক, জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত নিজস্ব গাছের বা কাঠের দাম, পরিবেশের ক্ষতি, স্বাস্থ্য ব্যয় ইত্যাদি বাদ দিলে তামাক চাষে লাভের বদলে ক্ষতি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক চাষে নেট সোশ্যাল রিটার্ন ঋণাত্মক, প্রতি একরে ক্ষতি ৯১৬.১১ ডলার।
টোব্যাকো অ্যাটলাসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় ৩১ শতাংশ বন নিধনের পেছনে তামাক চাষ দায়ী। গবেষণায় দেখা গেছে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার তিনটি উপজেলায় তামাকপাতা শুকানোর (কিউরিং) কাজে এক বছরেই প্রায় ৮৫ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি কাঠ ব্যবহৃত হয়েছে। স্থানীয় বন থেকে এইসব কাঠ সংগ্রহ করায় পাহাড়গুলো বৃক্ষহীন হয়ে পড়ছে এবং সেখানকার অধিবাসীরা আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধ্বসের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া তামাক চাষে ব্যবহৃত অতিরিক্ত কীটনাশক ও সার বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে নিকটস্থ জলাশয়ে মিশে মৎস্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তামাক বিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, তামাক চাষের ক্ষতি থেকে দৃষ্টি সরানোর জন্য তামাক কোম্পানিগুলো প্রায়শই নিজেদের অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব হিসেবে উপস্থাপন করে। তথাকথিত সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কর্মসূচির (সিএসআর) মাধ্যমে তামাক কোম্পানিগুলো তাদের ঘটানো ক্ষতি আড়াল করে এবং দায় এড়ানোর চেষ্টা করে।
তিনি বলেন, তামাক জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য হুমকি। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করণের মাধ্যমেই এসব ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের ঘোষণা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।