
আর কত একা লড়াই করবেন মেসি? বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচ শেষে উঠেছিল এই প্রশ্ন। পঁয়ত্রিশেও আর্জেন্টিনার স্বপ্ন টিকিয়ে রেখেছেন বাঁ পায়ের খুদে জাদুকর। গ্রুপের শেষ ম্যাচেও কি তিনিই হবেন ত্রাতা? জাদুকরকে একটা জয়ও উপহার দিতে পারবে না সতীর্থরা? এ প্রশ্নের জবাবটা দিতেই কাল অন্য রূপে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। আগের ম্যাচের মতো পোল্যান্ডের বিপক্ষেও কাল প্রথমার্ধে গোল হয়নি। রাজা নিজেই পেনাল্টির সুযোগ হাতছাড়া করে দুশ্চিন্তাটা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তবে দ্বিতীয়ার্ধে মেসির কোনোরকম সহায়তা ছাড়াই আর্জেন্টিনাকে জিতিয়েছেন ম্যাক অ্যালিস্টার ও জুলিয়ান আলভারেজ। তাদের গোলে পোল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারিয়ে ‘সি’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় লিওনেল স্কালোনির দল। গ্রুপের ভীষণ নাটকীয় অন্য ম্যাচে মেক্সিকো ২-১ গোলে সৌদি আরবকে হারালেও লাভ হয়নি। ৪ পয়েন্ট নিয়ে গোল গড়ে মেক্সিকোকে পেছনে ফেলে পোল্যান্ড পেয়েছে দ্বিতীয় পর্বের টিকিট। সৌদির কাছে অঘটনের শিকার হয়ে শুরু করা আর্জেন্টিনা পরের দুই ম্যাচে জিতে শেষ ষোলোতে অপেক্ষাকৃত সহজ প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়াকে পেয়েছে। আর পোল্যান্ডকে খেলতে হবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের সঙ্গে।
পোলিশ কিপার ভোইচেক সেজনি আগের দিনই সতর্ক করে বলেছিলেন, আর্জেন্টিনার মহানায়কের ঝড় থামাতে তিনি প্রস্তুত। বিশেষ করে মেসির পেনাল্টির কৌশল পড়ে ফেলার কথাও জোর গলায় বলেছিলেন। ম্যাচের ৩৯ মিনিটে সেজনির ভুলেই পেনাল্টি পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। আলভারেজের ক্রসে মাথা ছোঁয়াতে লাফিয়েছিলেন মেসি। সেজনি চেয়েছিলেন পাঞ্চ করতে। তবে তার গ্লাভস গিয়ে আঘাত করে মেসির মুখে। ভিএআরে পরীক্ষা করে ডাচ রেফারি ম্যাকেলিয়ে ড্যানি পেনাল্টি নির্দেশ দেন। এ সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ হলেও দলকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগটা এসেছিল মেসির সামনে। তবে স্পট থেকে তার বাঁ পায়ের শট দারুণ তৎপরতায় রুখে দেন সেজনি। পেনাল্টির সহজ সুযোগ নষ্ট করে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগিয়েছিলেন মেসি। তবে কি নিজের স্বপ্নটা নিজেই গলা টিপে হত্যা করলেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক? সেই আক্ষেপ অবশ্য ঘুচিয়ে দিয়েছেন ম্যাক অ্যালিস্টার। বিরতি থেকে ফিরেই পোলিশ প্রতিরোধ ভেঙে দেন আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার। এরপর আলভারেজের দারুণ ফিনিশে নিশ্চিত হয় জয়।
ম্যাচ শেষে ম্যাক অ্যালিস্টার বলেন, ‘আমি খুশি যে দারুণ খেলেই জিতেছি। আমরা পুরোটা সময়ই গোলের খোঁজে ছিলাম। আমার মনে হয় প্রথম ম্যাচ হারের পর আমরা একটু পেছনে গিয়েছি। নিজেদের ফিরিয়ে আনতে চেয়েছি আগের রূপে যেমনটা আমরা ছিলাম। আমরা বেশিরভাগ সময়ই বল দখলে রেখেছি, শান্ত থেকেছি এবং ভেঙে পড়িনি। অবশ্যই দারুণ একটা ম্যাচ খেলেছি।’ এদিকে মেসি বলছিলেন, ‘আগের ম্যাচ আমাদের অনেকটা শান্তি দিয়েছে। মানসিকভাবে আমাদের প্রস্তুত করেছে। আজ আমরা জয়ের জন্যই মাঠে এসেছিলাম। সামনে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ম্যাচটি খুব কঠিন হতে যাচ্ছে। যে কেউ যেকোনো দলকে হারাতে পারে। সবকিছুই হচ্ছে। আমাদের সবসময়ের মতো সর্বোচ্চ সেরা প্রস্তুতিটা নিতে হবে।’
মেক্সিকো ম্যাচের একাদশে চারটি পরিবর্তন এনে দল নামিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন কোচ স্কালোনি। মেসির পর সবচেয়ে কমবয়সী আর্জেন্টাইন হিসেবে প্রথম একাদশে গিদো রদ্রিগেজের জায়গায় সুযোগ হয় আগের ম্যাচে গোল পাওয়া ২১ বছরের এনজো ফার্নান্দেজের। এ ছাড়া গত ম্যাচে নিভে থাকা লাউতারো মার্তিনেজের জায়গা নেন জুলিয়ান আলভারেজ। দুই ডিফেন্ডার লিসান্দ্রো মার্তিনেজ ও গনজালো মনতিয়েলের জায়গায় নামানো হয় ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো ও নাহুয়েল মলিনাকে।
আগের দুই ম্যাচের সঙ্গে তুলনায় স্কালোনির ৪-২-৩-১ কম্বিনেশনটা দারুণ কাজ করেছে কাল। পুরোটা সময় দারুণ আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলেছে আলবিসেলেস্তারা। বলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখে পোলিশ সীমান্তে বারবার হানা দিয়ে তারা চেয়েছে কাক্সিক্ষত গোলটা পেতে। ওভারল্যাপ করে বারবার আকুনা ও মলিনা আক্রমণে যোগ দেওয়ায় পোলিশদের কোণঠাসা হয়ে পড়তে হয়। তবে অসম্ভব সব প্রচেষ্টা রুখে দিয়ে দলের গোলের দরজা সুরক্ষিত রাখেন প্রথমার্ধে। বিশেষ করে মেসিকে রুখে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিটা ঠিকই রেখেছেন জুভেন্তাসের গোলকিপার। ষষ্ঠ মিনিটে সেজনিকে প্রথম পরীক্ষা নেন আগের সাত আন্তর্জাতিক ম্যাচে গোল পাওয়া মেসি। তবে তার শট সহজেই রুখে দেন সেজনি। চার মিনিট বাদে বক্সের বাঁদিক থেকে মেসির জোরালো শটের সামনে ফের বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে যান পোলিশ কাস্টডিয়ান। এর পরপরই মেসির থালায় সাজিয়ে দেওয়া পাসে এলোমেলো শট করে গোলের সুযোগ নষ্ট করেন আকুনা। শুরুর এতগুলো সুযোগ কাজে না আসায়ও হতোদ্যম হয়নি আর্জেন্টিনা। যার ফলটাই তাদের মিলেছিল মেসির পেনাল্টি আদায় করে নেওয়ার মাধ্যমে। তবে সুযোগটা নষ্ট করে টানা আট ম্যাচে গোলের এবং ম্যারাডোনাকে বিশ্বকাপ মঞ্চে গোলের হিসেবে ছাড়িয়ে যাওয়া হয়নি আর্জেন্টাইন অধিনায়কের। তবে ম্যারাডোনাকে বিশ্বকাপে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডে পেছনে ফেলেছেন মেসি। কাল খেলেছেন ২২তম ম্যাচ।
বিরতি থেকে ফিরেই আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নেন ম্যাক অ্যালিস্টার। ডানদিক থেকে মলিনার কাটব্যাকে এ মিডফিল্ডারের প্লেসিংটা ছিল নড়বড়ে। তবে তা পোলিশ কিপারকে সুযোগ না দিয়ে দূরের পোস্টে প্রবেশ করে। আর ৬৭ মিনিটে এনজো ফার্নান্দেজের বাড়ানো বল নিয়ে বক্সে ঢুকে ডান পায়ের জোরালো শটে আর্জেন্টিনাকে আরও এগিয়ে নেন আলভারেজ। ৭১ মিনিটে ফের গোলের সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। সতীর্থের কাটব্যাক গোলমুখে পেলেও তার বাঁ পায়ের প্লেসিং শুয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন সেজনি। দুই মিনিট পর গোলকিপারকে একা পেয়েও বল লক্ষ্যে রাখতে পারেননি আলভারেজ। তার শট বাইরের জাল কাঁপায়। অতিরিক্ত সময়ে বদলি তাগলিয়াফিকোর শট গোললাইন থেকে ইয়াকব কিভিওর ফিরিয়ে পোল্যান্ডকে তুলে নেন পরের ধাপে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ করবে বিএনপি। দলটির নেতারা কখনোই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাবেন না। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ফাঁদে ফেলার জন্য। কিন্তু বিএনপি সরকারের সেই পাতা ফাঁদে পা দেবে না। গতকাল বুধবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন দলটির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সমাবেশের আগেই ঢাকার বাইরের নেতাকর্মীরা ঢাকায় চলে আসবে। তাদের কেউ কেউ স্বজনদের বাসা-বাড়িতে কিংবা হোটেলে উঠবেন। এর বাইরে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেবেন। তবে আমরা চাইছি ঢাকা মহানগর বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের দিয়ে সমাবেশস্থল পরিপূর্ণ করতে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার এত দিন বলেছে, বিএনপির জনসমর্থন নেই। এখন হঠাৎ করে বলছে, নয়াপল্টনে ছোট জায়গায় সমাবেশে বিএনপির নেতাকর্মী ধরবে না। তাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ দিতে চায়। আসলে এর মধ্যে সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য আছে। লোক কম হলে তো সরকারের ভালো। কম লোক নিয়ে আমরা সমাবেশ করব। সরকারের সমস্যা কোথায়?’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে নয়াপল্টনে সমাবেশ করে আসছি। কোনো দিন সমস্যা হয়নি। হঠাৎ করে সমস্যার কথা বলে সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে বলছে। কিন্তু আমরা নয়াপল্টনেই সমাবেশ করব। এটাই আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত।’
গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক ভার্চুয়াল সভা হয়। সভায় আবারও সিদ্ধান্ত হয় নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার বিষয়টি। কারণ ইতিমধ্যে ঢাকার নয়াপল্টনসহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন হোটেলে নেতাকর্মীরা সিট বুকিং দিয়ে গেছেন। অনেকে স্বজনদের বাসা-বাড়িতে উঠবেন। ঢাকার যাত্রাবাড়ী, গাবতলী, টঙ্গীসহ আশপাশের এলাকার নেতাকর্মীরা মিছিলসহকারে সমাবেশে যোগ দেবেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ হবে। এরপর ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগের সমাবেশ। ইতিমধ্যে আমরা যে আটটি সমাবেশ করেছি, সেগুলো আমরা সরকারের শত বাধা ও উসকাানির পরও শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করেছি। নেতাকর্মীরা চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। দেশের জনগণের পাশাপাশি বিদেশি বন্ধুরা দেখেছেন কীভাবে আমরা সমাবেশ করেছি; বরং সরকার দফায় দফায় উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নেব না।’
যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ সফল করতে বিএনপির পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন ইউনিটের নেতাদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা করছি।’
ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ছাত্রদল ঢাকার সমাবেশ সফল করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। যেকোনো বাধা পেরিয়ে ছাত্রদল সমাবেশ সফল করতে বদ্ধপরিকর।’
এদিকে গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ১০ ডিসেম্বরের ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে দলটির বিভিন্ন উপকমিটির প্রস্তুতি সভা হয়। সভাগুলোতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। অভ্যর্থনা উপকমিটির আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল নোমানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খানের সঞ্চালনায় প্রস্তুতি সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন অভ্যর্থনা উপকমিটির সদস্য আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, সালাহউদ্দিন আহমেদ, শিরিন সুলতানা, আমিনুল হক, নজরুল ইসলাম আজাদ, রফিকুল আলম মজনু, নবী উল্লাহ নবী প্রমুখ। সভায় শৃঙ্খলা উপকমিটি, যোগাযোগ উপকমিটি, সাংস্কৃতিক উপকমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা অংশ নেন।
মুক্তিযুদ্ধের ১৬টি সফল মিশনের বিস্তারিত ধারাবাহিকভাবে লিখছেন সালেক খোকন
১৯৭১ সাল। মুক্তিযুদ্ধ চলছে পুরোদমে। আমরা হাইড-আউট ক্যাম্প করি ঢাকার কাছে, ডেমরায়। গ্রামের নাম আমুলিয়া মেহেন্দিপুর। জামদানি শাড়ি বানাত গোটা গ্রামের মানুষ। যথেষ্ট সাহায্য করেছিল তারা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত ওই গ্রামের মানুষেরা আমাদের আশ্রয় দিয়েছিল। তাদের ঋণ শোধ হওয়ার নয়।
ক্যাম্পে ছিলাম ৪০ জন। কমান্ডে সাদেক হোসেন খোকা (ঢাকার প্রয়াত মেয়র)। ওখান থেকে বেরিয়ে ঢাকার ভেতরে গেরিলা অপারেশন করে আবার ফিরে যেতাম। ঢাকার কিছু গ্রুপ খবরাখবর দিত। আবার নিজেরাও বেরোতাম রেকি করতে। বন্ধু জগলু আর মামাতো ভাই শহিদ নানা মেসেজ দিয়ে সাহায্য করেছে। ‘খোকা’ গ্রুপের গেরিলা হিসেবেই পরিচিত ছিলাম। ঢাকায় গেরিলা অপারেশন করেছি ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে।
প্রাদেশিক ইলেকশন কমিশন অফিস তখন ছিল মোমিনবাগে, রাজারবাগের উল্টো পাশে। দুটো ভাড়াবাড়িতে চলত তাদের কাজ। দেশে তখন পুরোদমে যুদ্ধ চলছে। সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচিত এমপিএ আর এমএনএরা স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষ নিয়ে চলে গেছেন মুক্তাঞ্চলে ও ভারতে। সে সময় পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ফন্দি আঁটে। নির্বাচিত সব এমএনএ ও এমপিএর পদ শূন্য ঘোষণা করে আসনগুলোতে উপনির্বাচনের গোপন প্রস্তুতি নিতে থাকে তারা। এ খবর পেয়েই সিদ্ধান্ত নিই প্রাদেশিক ইলেকশন কমিশন অফিস উড়িয়ে দেওয়ার। এতে বিশ^ গণমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়বে ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের খবর। চাপের মুখে পড়বে পাকিস্তান সরকার। খোকা ভাইয়ের নেতৃত্বে ওই অপারেশনে অংশ নিই আমি, লস্কর, সুফি আর হেদায়েত। জায়গাটা রেকি করে আসি এক দিন আগেই।
১ নভেম্বর, ১৯৭১। রোজার মাস ছিল। ঢাকায় যখন ঢুকি রাত তখন ৮টার মতো। তারাবির নামাজ চলছে। রাস্তাঘাট ফাঁকা। ওই সময়ই বিল্ডিংয়ে ঢুকে ১২ পাউন্ড এক্সপ্লোসিভ ফিট করি আমরা। বেরিয়ে এসেই বিস্ফোরণ ঘটাই। বিস্ফোরণে গোটা ঢাকা শহর কেঁপে ওঠে। বিল্ডিংয়ের এক পাশ ধসে পড়ে। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় ইলেকশন কমিশন অফিসের কাগজপত্র। ওখানে থাকা এক দারোয়ানও মারা যায়।
স্মুথলি আমরা অপারেশনটা করি। কিন্তু কাজটা শেষ করতে বেজে যায় রাত ১২টা। পাকিস্তানি আর্মি তখন ঢাকার রাস্তায় টহলে নেমেছে। ক্যাম্পে ফেরার কোনো উপায় নেই।
গলিপথ দিয়ে আমরা মালিবাগের এক মেসে গিয়ে আশ্রয় নিই। মেসটির ওপরে টিন। চারপাশে বেড়া। কর্মজীবী কিছু লোক থাকত সেখানে। ঢুকেই বলি, ‘একটু আগে বিস্ফোরণের যে আওয়াজ হয়েছে, সেটা আমরাই করেছি। আমরা মুক্তিযোদ্ধা।’ কথা শুনে আর অস্ত্র দেখে থরথর করে কাঁপছিল তারা। প্রথম কোনো মুক্তিযোদ্ধা দেখছে। তবু রাতে আমাদের থাকার কথা শুনে ভয় পেল না; বরং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের সাহায্য করল।
মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়াও তখন ছিল আরেক যুদ্ধ। পাকিস্তানি সেনারা টের পেলে সবাইকে হত্যা করত। মেসের পাশেই ছিল পিডিবির একটি অফিস। সেই অফিসের পাহারায় ছিল পাকিস্তানি সেনারা। ফলে ওই মেসে থাকাটা ছিল প্রচ- ঝুঁকির।
ওই রাতে মেসের লোকেরা তাদের জন্য রান্না করা খাবার আমাদের খাওয়ায়। তাদের বিছানাতেই থাকতে দেয়। আমাদের বাঁচাতে রাতভর পালা করে বাইরে দাঁড়িয়ে পাহারাও দিয়েছিল তারা। খুব ভোরে সেখান থেকে ফিরে যাই ক্যাম্পে। মেসের মানুষগুলোর কথা খুব মনে পড়ে। ওই রাতে তাদের সাহায্য না পেলে হয়তো ধরা পড়তে হতো। মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষের অবদানের ইতিহাসও তুলে আনা প্রয়োজন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকায় গেরিলা অপারেশনের কথা এভাবেই তুলে ধরেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হক নান্টু।
চার ভাই ও পাঁচ বোনের সংসারে নান্টু সবার ছোট। বাবা আব্দুল হামিদ ও মা নছিমুল নেসা। মুক্তিযুদ্ধের সময় নান্টু ছিলেন ঢাকা শাহীন স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। একাত্তরে ভারতের মেলাঘর থেকে ২১ দিন ট্রেনিং নেন তিনি। তার মুখেই শুনি ঢাকার আরেকটি অপারেশনের কথা।
তার ভাষায়, ডিএফপি অফিস তখন ছিল শান্তিনগরে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর সৃষ্টির জন্য আমরা সেখানে হিট করার প্রস্তুতি নিই। আমার মেজো ভাই সাইদুল হক বাবু ছিলেন ডিএফপির ফিল্ম প্রডিউসার। এ কারণে রেকি করার দায়িত্ব পড়ে আমার ওপর। সব খবর নিয়ে এসে আমি খোকা ভাইকে দিই। ওই দিন ছিল আখেরি জুমা। দুপুরে বায়তুল মোকাররমের নিউজ কাভার করে ফিরেছে সবাই। বেলা ৩টার পর আমরা ডিএফপিতে ঢুকি। অফিসে কেউ নেই। তিনতলায় সিঁড়িঘরে থাকা দারোয়ানকে বের করে দিই প্রথম।
টেবিলের ওপর ১২ কেজি এক্সপ্লোসিভ আমরা ফিট করি। বিস্ফোরণে যাতে স্টিলের টুকরোগুলো স্পিন্টার হিসেবে কাজ করে, সে কারণে স্টিলের আলমারিটাকেও এক্সপ্লোসিভের ওপর চাপ দিয়ে ফেলে রাখি। ঘটলও তাই। বিস্ফোরণে পুরো বিল্ডিং উড়ে যায়। দ্রুত একটা মাইক্রোবাসে করে আমরা সরে পড়ি। ওই অপারেশনের খবর ফলাও করে প্রচারিত হয়েছিল ভয়েস অব আমেরিকা, আকাশবাণী, বিবিসি ও স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে। আমাদের মনোবল ও সাহস আরও বেড়ে যায়।
গেরিলা নান্টু কেমন বাংলাদেশ চান? দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি বলেন, ভালো বাংলাদেশ চাই। পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো বাংলাদেশ চাই। ভালো দেশের নাগরিক হিসেবে বাঁচতে চাই। যে সরকার দেশকে সঠিক পথে নিয়ে যেতে পারবে, সেই সরকারের শাসন চাই। দুর্নীতি উন্নয়নকেই বিতর্কিত করবে। তাই এটা দেখা উচিত কঠোরভাবে। প্রকৃত লোকদের কাজে লাগাতে হবে।
ইচ্ছা আর চেষ্টা থাকলে দেশটাকে আরও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব এমনটাই বিশ্বাস করতেন গেরিলা বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হক নান্টু। আশায় বুক বেঁধে তিনি শুধু বললেন, ‘যদি দেশের সঠিক ইতিহাস ও বীরত্বের কাহিনী জানো, তবেই বীরের মতো তোমরা এগোতে পারবে। মনে রেখো, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসই তোমাদের পথ দেখাবে।’
ছবি নম্বর ও ক্যাপশন
ছবি-০১-১: বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হক নান্টু, ছবি: সালেক খোকন
ছবি-০১-২: গেরিলা অপারেশনের পর ইলেকশন কমিশন অফিস
ছবি: জালালুদ্দিন হায়দার
আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি গণসমাবেশ করতে যতটা অনড় সেখানে সমাবেশ করতে না দেওয়ার ব্যাপারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ঠিক ততটাই কঠোর। গত সোমবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভায় কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে কঠোর অবস্থানের কথা নিশ্চিত করে বলেছেন, শেখ হাসিনা বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে শুধু কঠোর অবস্থানই দেখাননি, দেখিয়েছেন সহনশীলতাও। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সমাবেশ করার পরামর্শ জানিয়ে মূলত সহনশীল মনোভাব প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
কেন্দ্রীয় নেতারা দেশ রূপান্তরকে আরও জানিয়েছেন, বিএনপি কর্মসূচির নামে ওইদিন জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে সরকার বসে বসে নীরবে তা দেখবে ব্যাপারটা এমন হবে না। কারণ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া যেমন সরকারের দায়িত্ব তেমনি দুর্ভোগ থেকে জনগণকে রক্ষা করাও দায়িত্ব সরকারের। কর্মসূচির পেছনে বিএনপির চক্রান্ত রয়েছে বলেই সমাবেশের স্থান নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে বিএনপি। অথবা ১০ লাখ লোক সমাগম করার মতো সাংগঠনিক শক্তি নেই বলে ছোট জায়গায় সমাবেশ করতে চায় বিএনপি।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ২৬ শর্তে বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু বিএনপি বলছে, তারা নয়াপল্টনে সমাবেশ করবে। তারা সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নয়াপল্টনেই গণসমাবেশ করবে, তাদের অনড় অবস্থান কী প্রমাণ করে? কর্মসূচির নামে পেছনে দলটি অন্য কোনো ষড়যন্ত্র করতে চায়। তা না হলে অনড় অবস্থানে কেন থাকবে বিএনপি? ওই নেতা আরও বলেন, সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ না করে ইস্যুটি নিয়ে রাজনীতি করবে, সহিংসতা-সংঘাত করবে, সেই সুযোগও বিএনপিকে দেওয়া হবে না। সহিংসতার চেষ্টা করা হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শক্ত হাতে তা নিয়ন্ত্রণ করবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি ১০ লাখ মানুষের উপস্থিতি ঘটাবে ঘোষণা দিয়েছে। নয়াপল্টনে অত মানুষ ধরবে না। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার প্রস্তাব দিয়ে আমি মনে করি উদারতা দেখিয়েছেন, মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন। এই প্রস্তাব পরিহার করা এবং নয়াপল্টনে সমাবেশ করার ব্যাপারে অনড় থাকার অর্থই হলো কর্মসূচির পেছনে ষড়যন্ত্রের মানসিকতা।’
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে বড় জোর ৪০/৫০ হাজার লোক ধরবে। লাখ লাখ লোকের সমাবেশের জায়গা মূলত নয়াপল্টন নয়। তিনি বলেন, বিষয়টি অনুধাবন করে সোহরাওয়ার্দীতেই বিএনপির সমাবেশ করা উচিত।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের তিন নেতা বলেন, বিএনপি ১০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে মূলত জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে তৎপরতা চালাচ্ছে। বিএনপি সরকারের সহযোগিতাকে দুর্বলতা মনে করছে। তারা আওয়ামী লীগকে উসকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী বিএনপিকে সভাসমাবেশ করতে দিচ্ছে। বিএনপি ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়ে সহিংসতার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে বলে আওয়ামী লীগ সতর্ক থাকে। ১০ ডিসেম্বর নিয়েও সেটাই করছে।
দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি সমাবেশের স্থান নিয়ে গোঁয়ার্তুমি করলে শেষ পর্যন্ত কর্মসূচিই পালন করতে পারবে না। সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়ে রাজনৈতিক সহনশীলতা দেখিয়েছে। এই সহনশীলতা ভিন্নভাবে নিয়ে এবং চক্রান্ত করতে চাইলে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার সব প্রচেষ্টা কঠোর হাতে দমন করা হবে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, শেষ পর্যন্ত নয়াপল্টনে সমাবেশ করার ব্যাপারে অনড় থাকলে অনেক শর্ত পূরণ করতে হবে এবং শর্ত যে পূরণ করবে সেটাও প্রকাশ্যে বলতে হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগ বিএনপির ব্যাপারে যেমন নমনীয়, প্রয়োজন হলে ঠিক উল্টো পথেও চলবে। তিনি বলেন, বিএনপিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এর মূল কারণ বিএনপি রাজনীতিতে আস্থার চেয়ে অনাস্থাই বেশি দেখেছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে আমি কোনো আলোচনা করতেই রাজি নই। তিনি বলেন, বিএনপি কী করে, কী করতে পারে দেখা যাক।’
১৮ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় দিনাজপুর পৌরসভার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিক্রয় ও বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান নেসকো। গত প্রায় ১৫ বছর ধরে এক টাকাও বিল পরিশোধ করেনি প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভা। মঙ্গলবার বিকাল থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় জন্মনিবন্ধনসহ পৌরসভার সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সেবা নিতে এসে ঘুরে যাচ্ছেন জনগণ। অপরদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় করোনার ভ্যাকসিনসহ বিভিন্ন ভ্যাকসিন নষ্টের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের আগে পৌর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়নি বলে দাবি করেছেন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মিনারুল ইসলাম খান। তবে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করতে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন। প্যানেল মেয়র আবু তৈয়ব আলম দুলাল জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা চলছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বুধবার সরেজমিনে পৌরসভায় গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে আছে দিনাজপুর পৌরসভা। শুধুমাত্র কর্মকর্তাদের রুমের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে একটি জেনারেটর ব্যবহার করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় জন্মসনদসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে কেউ রুমে অথবা কেউ বাইরে বসে অলস সময় পার করছেন কর্মচারীরা। সকাল থেকে শত শত জনগণ পৌরসভায় এসে সেবা না পেয়ে ঘুরে যাচ্ছেন।
পৌরসভার ইপিআই সুপারভাইজার মোমরেস সুলতানা বলেন, ‘গতকাল থেকে বিদ্যুৎ নেই। করোনার ভ্যাকসিন ও শূন্য থেকে ১১ মাস বয়সী বাচ্চাদের দেওয়ার জন্য টিকা রয়েছে। আগামীকাল (আজ) করোনার ভ্যাকসিন প্রদানের প্রোগ্রাম আছে। আমাদের এখানে ২টি ডিপ ও ২টি সাধারণ ফ্রিজ রয়েছে। ফ্রিজগুলোতে টিকাগুলো সংরক্ষিত রয়েছে। এখানে করোনার ভ্যাকসিন ৪ হাজার টিকা রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য ভ্যাকসিন কয়েক হাজার টিকা রয়েছে। কিন্তু গতকাল থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্রিজগুলো বন্ধ হয়ে আছে। এখন আল্লাহর ওপর ভরসা।’
বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের ব্যাপারে পৌর মেয়রের ওপর ক্ষোভ ঝারলেন পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জুলফিকার আলী স্বপন। তিনি বলেন, ‘আমি কাউন্সিলর হয়েছি ২ বছর হলো। এই ২ বছরে ২৪টি মাসিক সমন্বয় সভা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো মাসিক সমন্বয় সভায় বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার ব্যাপারে অবহিত করা হয়নি। এখন আমরা অন্ধকারের মধ্যে আছি।
এদিকে পৌরসভায় মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের কার্যালয়ে যাওয়া হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার রুমটি বাইরে থেকে তালা মারা অবস্থায় পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে মেয়রকে মোবাইল করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে ফোনটি কেটে দেন।
দিনাজপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মিনারুল ইসলাম খান বলেন, ‘দিনাজপুর পৌরসভার কাছে বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ১ ও ২’-এ মোট ১৮ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। এছাড়াও বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ১-এর অফিসটি দিনাজপুর পৌরসভার সম্পত্তি। এ বাবদ প্রথম থেকে প্রায় ৭০ কোটি টাকা তাদের কাছ থেকে আমরা পাই।’
এ ব্যাপারে দিনাজপুর বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম শাহাদত হোসেন বলেন, পৌরসভার কাছে বিদ্যুৎ বিভাগ ১ ও ২ এর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। কিন্তু তারা কোনো ধরনের টাকা পরিশোধ করছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে শুধুমাত্র পৌরসভা ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আর আমাদের কাছে পৌরসভা জমি ভাড়া বাবদ যদি কোনো টাকা পেয়ে থাকে তাহলে আমাদের কাগজপত্র দেখাক। কিন্তু তারা আমাদের কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারে না।’
দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডা. বোরহন-উল হক বলেন, ‘পৌরসভায় আমাদের টিকা রয়েছে। আইসল্যান্ড রেফ্রিজারেটর থাকলে ৭২ ঘণ্টা টিকা ঠিক থাকে। বিষয়টি জানার পর পৌরসভার কাছে থাকা টিকাগুলো বিকল্প জায়গায় ফ্রিজার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র বছরখানেক বাকি। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৎপর হতে শুরু করেছে। নির্বাচন কেমন হবে, কেমন নির্বাচন হওয়া উচিত এ নিয়ে রাজনৈতিক এবং বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।
প্রভাবশালী দেশগুলোর মন্তব্যও আসছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাজ্য, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে হস্তক্ষেপ না করলেও সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে তাদের মত দিয়ে আসছে।
ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, ইইউসহ বেশ কয়েকটি দেশের ও রাষ্ট্রজোটের রাষ্ট্রদূতরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা করেছেন। তারা আগামী (দ্বাদশ) নির্বাচন নিয়েও মন্তব্য করছেন।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিশেষ করে নির্বাচন, গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক বিষয়ে প্রকাশ্যে বিভিন্ন ফোরামে বক্তব্য দেওয়া ও মন্তব্য করাকে কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত কাজ আখ্যা দিয়েছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা এবং সরকারপক্ষ। সরকারের পক্ষ তাদের সতর্কও করেছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে বিদেশিদের তৎপরতা তত বাড়তে পারে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য বা হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও তৎপরতা শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোকেও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর থেকেই, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনীতি জোরদারকরণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে মিশনগুলোকে প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের সিদ্ধান্তও হয়েছে। ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিকদের ডেকে সতর্ক করার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।’
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা এ ব্যাপারে দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত কয়েকটি নির্বাচনে আমরা দেখেছি, বিদেশিরা নির্বাচনে নাক গলাচ্ছে। আবার এটা যে শুধু তাদের পক্ষ থেকে হচ্ছে তা নয়। দেশের ভেতর থেকেই নাক গলানোর বা মন্তব্য করার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই ভালো দিক হতে পারে না। এ দেশের রাজনীতি, নির্বাচন এ দেশের মানুষই ঠিক করবে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশিদের নাক গলানোর বিষয়টি কখনোই কোনো দেশের গণতন্ত্র বা রাজনীতির জন্য কাম্য নয়, হতে পারে না। সরকার কী অ্যাকশনে যাবে সেটা সরকারপক্ষই ঠিক করবে। সরকার চাইলে রাষ্ট্রদূতদের সতর্ক করতে পারে।’
সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশিদের আমরাই আহ্বান করছি। আমাদের দেশের নির্বাচন কেমন হওয়া উচিত তা আমরাই তাদের কাছে জানতে চাচ্ছি। এ প্রবণতা একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের জন্য সুফল বয়ে আনবে না। এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের নির্বাচন নিয়ে মন্তব্যকে শিষ্টাচারবহির্ভূত বলে গত দুই মাস ধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সতর্ক করছে। সম্প্রতি জাপানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকির মন্তব্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা।
জাপানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি গত ১৩ নভেম্বর সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) ও ফ্র্রেডরিক-এবার্ট-স্টিফটুং (এফইএস) আয়োজিত ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসাডর’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গত নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে বৈশ্বিকভাবে জাপানের মতামতের গুরুত্ব রয়েছে। এর আগে আমরা নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার কথা শুনেছি, যা পৃথিবীর আর কোথাও হয়েছে বলে শুনিনি। আমি আশা করব, এবার তেমন সুযোগ থাকবে না বা এমন ঘটনা ঘটবে না। জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন আশা করি। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা চলমান রাখতে আগামী নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।’ ইতো নাওকি বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথাও বলেন।
সংসদের বাইরে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি তিন মাস ধরে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। তারা বলছে, বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিয়েও তারা কথা বলছে রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে।
বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের মন্তব্যে সরকারপক্ষ অসন্তোষ জানিয়ে সতর্ক করছে। গত নির্বাচন নিয়ে বক্তব্যের পর গত ১৪ নভেম্বর জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। গত শনিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সতর্ক করে বলেছেন, ‘বিদেশি দূতরা কোড অব কন্ডাক্ট না মানলে শক্তিশালী দেশগুলো চাইলেই ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু শক্তি না থাকায় সে পথে যেতে পারছে না বাংলাদেশ। সময় হলে বাংলাদেশও অ্যাকশনে যাবে।’
সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে বিকেলে ঢাকায় এসেছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল। আজ শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনা মো. হাশিম।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি শ্রমবাজারের জটিলতা নিয়ে আলাপ করবেন। কিভাবে দেশটিতে আমরা সহজে কর্মী পাঠাতে পারি; সেগুলো আলোচনায় উঠে আসবে। আমাদেরও কিছু প্রস্তাব রয়েছে। আমাদের কর্মীদের স্বার্থ আগে আমরা চাই, সবার জন্য বাজার খুলে দেওয়া হোক। নিয়োগকর্তার পছন্দমতো রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়োগ— এটা আমরা চাই না। অভিবাসন ব্যয়
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার গত কয়েক বছর ধরে অস্থির। দেশটিতে প্রত্যাশিত শ্রমিক পাঠাতে পারছে না বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমবাজারটির জটিলতা নিরসনে আলোচনা করতে সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে ঢাকায় আসছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল।
তার সফরে শ্রমবাজারটি গতিশীল করতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) পরিবর্তন, অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় কমানোসহ দেশের সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য বাজার উন্মুক্ত করার প্রস্তাব দেবে ঢাকা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ২৪ ঘণ্টার সফরে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পাশাপাশি তিনি সেনাকল্যাণ সংস্থার সঙ্গেও একটি বৈঠক করবেন।
'পাঠান' মুক্তির আগে থেকেই অনুরাগীদের সঙ্গে শাহরুখের যোগাযোগের একটাই মাধ্যম, টুইটার। শনিবার ফের টুইটারে 'আস্ক এসআরকে' সেশনে ধরা দিলেন শাহরুখ। হালকা মেজাজে, খোলামেলা আড্ডায় মাতলেন অনুরাগীদের সঙ্গে। অনুরাগীদের প্রশ্ন উত্তর দিলেন। সেখানেই একজন টুইটার ব্যবহারকারীর উপদেশ- বয়স অনুযায়ী চরিত্রে অভিনয়ের করার। পাল্টা জবাব দেন শাহরুখও। বলেন, 'তিনি হিরো ছিলেন, আছেন, থাকবেন'।
অনুরাগীরা যেমন রয়েছেন, তেমনই ট্রোল করার লোকের সংখ্যাও কম নয় শাহরুখের সোশালে। বছর সাতান্নর 'তরুণ' এই অভিনেতাকে একজনের প্রশ্ন, 'আপনি কি এভাবেই হিরোর চরিত্রেই অভিনয় করবেন, নাকি কোনো দিন নায়ক-নায়িকার বাবার চরিত্র করার পরিকল্পনাও রয়েছে?' তাতে শাহরুখ যা জবাব দিয়েছেন, তা রীতিমত ছড়িয়ে পড়েছে সোশালে।
এমনিতেই রসিক মানুষ শাহরুখ। তবে কোন কথায় কাকে কী উত্তর দেবেন, তা ভালোই জানা তার। বাদশাহ লেখেন, 'তুই বাপ হ… আমি হিরোর চরিত্রেই ঠিক আছি।'
শনিবারের 'আস্ক এসআরক'-এ সেশনে, শাহরুখের কাছে জানতে চাওয়া হয় 'পাঠান'-এর মোট আয়ের পরিসংখ্যান। তাকেও ফেরাননি শাহরুখ। উত্তর দিয়ে লেখেন, 'ভালোবাসা ৫ হাজার কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে, ৩ হাজার কোটি প্রশংসা, ৩২৫০ কোটি হাগ, ২০০০ কোটি হাসি এখনও গণণা চলছে। তোমার অ্যাকাউন্ট্যান্ট কী বলছেন?'
'পাঠান' ঘিরে উন্মাদনা নজিরবিহীন। প্রেক্ষাগৃহের বাইরে এই ছবি দেখার ঢল। শাহরুখ অভিনীত ছবিটি লম্বা রেসের ঘোড়া, বলেছেন সিনেমা বিশেষজ্ঞরা। ৪ বছর পর শাহরুখ পর্দায় ফিরেছেন বলেই শুধু নয়, ৭ দিনে বক্স অফিসে ৭০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে 'পাঠান', যা বলিউডে বছরের সেরা ব্লকবাস্টার হিসাবে গণ্য হতে চলেছে।
দুঃসময় পিছু ছাড়ছে না লিভারপুলের। প্রিমিয়ার লিগে টানা তিন ম্যাচে জয়হীন থেকে মাঠে নেমেছিল তারা। ভাঙতে চেয়েছিল ব্যর্থতার বৃত্ত। কিন্তু পারেনি, উল্টো উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্সের ধরাশায়ী হয়েছে তারা। পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থাকা দল হেরে গেছে বড় ব্যবধানে।
নিজেদের মাঠে শনিবার ৩-০ গোলে জিতেছে উলভস। লিভারপুলের বিপক্ষে লিগে আগের ১১ ম্যাচে হারের পর জয়ের স্বাদ পেয়েছে তারা।
শুরুর ১২ মিনিটে দুই গোল হজম করে দিশেহারা লিভারপুল ঘুরে দাঁড়ানোর পথই খুঁজে পায়নি। দ্বিতীয়ার্ধে হজম করেছে আরও একটি গোল। তার আগেই ছিটকে যায় ম্যাচ থেকে। দারুণ জয়ে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেন উলভসের ফুটবলাররা।
শুরু থেকে একের পর এক আক্রমণে লিভারপুলের রক্ষণ কাঁপাতে থাকে উলভস। দলটির সমর্থকরা আনন্দে মেতে ওঠার উপলক্ষ পেয়ে যায় পঞ্চম মিনিটে। আত্মঘাতী গোল করে লিভারপুল। বাইলাইনের কাছাকাছি গিয়ে হাং হি-চান শট নেওয়ার পরিস্থিতি না দেখে তিনি বক্সে বাড়ান বল, জোয়েল মাতিপের পায়ে লেগে বল পোস্ট ছুঁয়ে গোললাইন পেরিয়ে যায়। আলিসনের প্রাণপণ চেষ্টা যায় বিফলে।
দ্বাদশ মিনিটে আবারও গোল হজম করে বসে লিগে ধুঁকতে থাকা লিভারপুল। ইংলিশ ডিফেন্ডার ক্রেইগ ডসনের পায়ের জোরাল শটে বল খুঁজে নেয় জাল। উলভসের হয়ে অভিষেকেই গোল পেয়ে যান তিনি। ২-০ গোলের ব্যবধান নিয়ে বিরতিতে যায় উলভস।
বিরতির পরও চলে আক্রমণ আর পালটা আক্রমণ। ৭১তম মিনিটে মাঝমাঠে জো গোমেজ ও স্তেফান বাইচেতিস আটকাতে পারেননি জোয়াও মৌতিনিয়োকে। এই পর্তুগিজ মিডফিল্ডারের পাস ধরে বক্সে আড়াআড়ি ক্রস বাড়ান আদামা ত্রাওরো। নিখুঁত টোকায় বাকি কাজ সারেন রুবেন নেভেস। ম্যাচের ভাগ্যও লেখা হয়ে যায় অনেকটাই।
এই হারে লিগ টেবিলে সেরা চারে থাকার পথটা আরও কঠিন হয়ে গেল লিভারপুলের। ২০ ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে দশম স্থানে আছে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। তাদের চেয়ে ১০ পয়েন্ট বেশি নিয়ে চার নম্বরে নিউক্যাসল ইউনাইটেড। ২১ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে ১৫তম স্থানে উঠে এসেছে উলভস।
ছবি মুক্তির ১০ দিন পার। এখনও বক্স অফিসে 'পাঠান' রাজ। শুধু দেশের মাটিতেই নয়, বিদেশেও অব্যাহত 'পাঠান' ঝড়। বিশ্বজুড়ে ৭০০ কোটির বেশি ব্যবসা ইতিমধ্যেই করে ফেলেছে শাহরুখ খানের এই ছবি। এমনকি, ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানেও 'পাঠান' জ্বরে ভুগছেন আমজনতা। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সে দেশে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হলো 'পাঠান'। খালি রইল না প্রেক্ষাগৃহের একটি আসনও, হাউসফুল সেই শো।
অন্য ভারতীয় ছবির মতোই পাকিস্তানে মুক্তির ছাড়পত্র পায়নি সিদ্ধার্থ আনন্দ পরিচালিত ছবি 'পাঠান'। তবে সে দেশের সিন্ধ সেন্সর বোর্ডের সেই নিষেধাজ্ঞাকে একপ্রকার বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন করল শাহরুখের ছবি। কানায় কানায় ভর্তি প্রেক্ষাগৃহ দেখল রুপালি পর্দায় 'বাদশাহ ম্যাজিক'।
পাকিস্তানি মুদ্রায় ৯০০ টাকার টিকিটেও হাউসফুল 'পাঠান'-এর শো। নিষেধাজ্ঞা থাকায় বেআইনিভাবেই জোগাড় করে দেখানো হলো 'ওয়াইআরএফ স্পাই ইউনিভার্স'-এর এই ছবি।
পাকিস্তানের 'ফায়ারওয়ার্ক ইভেন্ট' নামক এক সংস্থা আয়োজন করে 'পাঠান' ছবির প্রদর্শনের। ছবির টিকিটমূল্য রাখা হয় পাকিস্তানি মুদ্রায় ৯০০ টাকা। তাতেই ছবির টিকিট পাওয়ার জন্য কাউন্টারের বাইরে লম্বা লাইন পড়ে সিনেপ্রেমীদের। অল্প সময়ের মধ্যেই শো হাউসফুল ঘোষণা করে দেওয়া হয়। তবে পাকিস্তানি সেন্সর বোর্ডের কানে এ খবর যেতেই নড়েচড়ে বসে তারা। 'ফায়ারওয়ার্ক ইভেন্ট'কে অবিলম্বে 'পাঠান'-এর সব প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বিবৃতি জারি করে সিন্ধ সেন্সর বোর্ড। কেউ যদি এর পরেও বেআইনিভাবে 'পাঠান' প্রদর্শন করে, তাহলে অপরাধের শাস্তিস্বরূপ তার ১ লাখ টাকা জরিমানা থেকে ৩ বছরের জেল পর্যন্ত হতে পারে, হুঁশিয়ারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
সাভারের আশুলিয়ায় মহাসড়কের পাশের একটি ডোবা থেকে মো. ইমাম হোসেন (৪৬) নামে এক ব্যক্তির ভাসমান লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যায় সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পার্শ্ববর্তী ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পশ্চিম পাশের ডোবা থেকে নিহতের ক্ষতবিক্ষত মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত ইমাম হোসেন জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ভালুকগড়ি গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে। তিনি পরিবার নিয়ে আশুলিয়ার জিরাবো পুকুরপাড় এলাকার ভাড়া বাসায় থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
থানা পুলিশ জানায়, স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে সন্ধ্যায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী একটি ডোবা থেকে লুঙ্গি এবং জ্যাকেট পরিহিত অজ্ঞাত এক ব্যক্তির ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পিবিআইকে খবর দেওয়া হলে তারা এসে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে।
নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল-মামুন কবির বলেন, ইমাম হোসেন বৃহস্পতিবার অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। মরদেহটি উদ্ধারের খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা থানায় এসে লাশ শনাক্ত করেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে দুর্বৃত্তরা তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে গেছে এবং নিহতের মরদেহটি ডোবার মধ্যে ফেলে গেছে।
মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আশুলিয়া থানায় মামলা দায়েরের পাশাপাশি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার এবং গায়েব হওয়া অটোরিকশাটি উদ্ধারে অভিযান চালানো হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।