
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে হতে যাচ্ছে বিরোধী দল বিএনপির নবম বিভাগীয় গণসমাবেশ। সর্বশেষ এই বিভাগীয় সমাবেশের পর ১০ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকায় গণসমাবেশ করার কথা রয়েছে দলটির। যা ঘিরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এরইমধ্যে অনেকটা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণ ও উদ্ধারের ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার রাতে এবং গতকাল বুধবারও দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ‘গায়েবি’ মামলা এবং ধরপাকড় চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতারা।
এরমধ্যে মঙ্গলবার রাতে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ও জয়পুরহাটে ৫৩ নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। এছাড়াও মানিকগঞ্জে যুবদল ও বিএনপির পাঁচ নেতাকে গ্রেপ্তার, গাজীপুরের শ্রীপুরে ছাত্রদলের ৯ নেতাকর্মীসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা এবং একই জেলার কালিয়াকৈরে বিএনপির ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কালিয়াকৈরের মামলায় এক বিএনপি নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঝালকাঠিতে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ১০৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বিস্ফোরক আইনে।
বিএনপির নেতাদের দাবি, তাদের গণসমাবেশ কর্মসূচিতে বিপুল জমায়েত ঠেকাতে প্রশাসনের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। তবে পুলিশ বলছে, গণসমাবেশ সামনে রেখে বিএনপি নেতাকর্মীরা নাশকতার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
রাজশাহীতে গণসমাবেশের আগে গ্রেপ্তারের অভিযোগ : রাজশাহীর গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার করে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেন দলটির নেতারা। এতে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল (মঙ্গলবার) রাতেই অন্তত ৫০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে শতাধিক মামলা দেওয়া হয়েছে।’
তবে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করে রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযান চলমান প্রক্রিয়ার অংশ। নিয়মিত মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি সঠিক নয়।’
মানিকগঞ্জে বিএনপি-যুবদলের ৫ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার : ককটেল বিস্ফোরণ করে নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে মানিকগঞ্জ জেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক মাসুদ পারভেজ এবং যুবদলকর্মী জামাল উদ্দিন আকাশকে গ্রেপ্তার করেছে মানিকগঞ্জ সদর থানা পুলিশ। অন্যদিকে সাটুরিয়া থানা পুলিশ উপজেলার বালিয়াটি ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মো. মাসুদুর রহমান খান স্বপন ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ইউনিয়ন সভাপতি মো. রেজাউল করিমকে গ্রেপ্তার করেছে। গত মঙ্গলবার রাতে বেউথা এলাকা থেকে জেলার দুই নেতা এবং বালিয়াটির নিজ নিজ এলাকা থেকে সাটুরিয়া থানা পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করে আইনি প্রক্রিয়া শেষে গতকাল আদালতে হাজির করে। এ ছাড়া মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি মোতালেব হোসেন মোতালেবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মানিকগঞ্জ শহর থেকে গতকাল রাতে সদর থানা পুলিশ তাকে আটক করে।
শ্রীপুরে ছাত্রদল-বিএনপির ২৩ নেতাকর্মীর নামে মামলা : গাজীপুরের শ্রীপুরে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হামলা ও মারধরের অভিযোগ এনে ছাত্রদলের ৯ নেতাকর্মীসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মাহাবুব হাসান বাদী হয়ে মামলটি করেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মামলার প্রধান আসামি উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জিয়াউল করিম রিফাত মোড়ল বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশকে সামনে রেখে হয়রানি করতে এ মামলা করা হয়েছে।’
কালিয়াকৈরে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা, কাউন্সিলর গ্রেপ্তার : গাজীপুরের কালিয়াকৈরে পৌর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১১ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০০ থেকে দেড়শ জনের নামে মামলা হয়েছে। ওই কার্যালয়ের অফিস সহকারী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এ ঘটনায় এক বিএনপি নেতাকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার সারোয়ার হোসেন আকুল কালিয়াকৈর পৌর বিএনপির যগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।
ঝালকাঠিতে ১০৬ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা : ঝালকাঠির রাজাপুরে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করে বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ইলিয়াস ফরাজি বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এতে উপজেলা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ২৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। তবে মামলার প্রধান আসামি উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তালুকদার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘মূলত আমাদের মধ্যে ভীতি তৈরি করে আন্দোলনে বাধা প্রদানের জন্য এই গায়েবি মামলা করা হয়েছে।’
নারায়ণগঞ্জের তিন জায়গায় একই সময়ে ককটেল বিস্ফোরণ : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জে মৌচাক এলাকাসহ তিন জায়গায় গতকাল সন্ধ্যায় খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের মুক্তির দাবিতে মশাল মিছিল করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। ওই সময় রাস্তায় টায়ার জ¦ালিয়ে অগ্নিসংযোগ করেন তারা। সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক ও মাদানীনগর এলাকার মধ্যবর্তী স্থানে, নারায়ণগঞ্জ শহরের হক প্লাজা এবং সদর উপজেলা ফতুল্লার কমর আলী স্কুলের পাশে এসব ঘটনা ঘটে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঢাকামুখী প্রবেশপথের যান চলাচল কিছুটা সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
মুন্সীগঞ্জে ককটেল বিস্ফোরণে আহত ৩ : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় গতকাল রাতে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন ছাত্রলীগের তিন কর্মী। এ সময় সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়। রাত সোয়া ৮টার দিকে গজারিয়া উপজেলার ভিটিকান্দি এলাকাসংলগ্ন মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিভাগীয় মহাসমাবেশ সামনে রেখে বের করা বিক্ষোভ মিছিল থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান বলে দাবি করেছে পুলিশ।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক এবং সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলার প্রতিনিধিরা
রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ করবে বিএনপি। দলটির নেতারা কখনোই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাবেন না। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ফাঁদে ফেলার জন্য। কিন্তু বিএনপি সরকারের সেই পাতা ফাঁদে পা দেবে না। গতকাল বুধবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন দলটির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সমাবেশের আগেই ঢাকার বাইরের নেতাকর্মীরা ঢাকায় চলে আসবে। তাদের কেউ কেউ স্বজনদের বাসা-বাড়িতে কিংবা হোটেলে উঠবেন। এর বাইরে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেবেন। তবে আমরা চাইছি ঢাকা মহানগর বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের দিয়ে সমাবেশস্থল পরিপূর্ণ করতে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার এত দিন বলেছে, বিএনপির জনসমর্থন নেই। এখন হঠাৎ করে বলছে, নয়াপল্টনে ছোট জায়গায় সমাবেশে বিএনপির নেতাকর্মী ধরবে না। তাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ দিতে চায়। আসলে এর মধ্যে সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য আছে। লোক কম হলে তো সরকারের ভালো। কম লোক নিয়ে আমরা সমাবেশ করব। সরকারের সমস্যা কোথায়?’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে নয়াপল্টনে সমাবেশ করে আসছি। কোনো দিন সমস্যা হয়নি। হঠাৎ করে সমস্যার কথা বলে সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে বলছে। কিন্তু আমরা নয়াপল্টনেই সমাবেশ করব। এটাই আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত।’
গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক ভার্চুয়াল সভা হয়। সভায় আবারও সিদ্ধান্ত হয় নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার বিষয়টি। কারণ ইতিমধ্যে ঢাকার নয়াপল্টনসহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন হোটেলে নেতাকর্মীরা সিট বুকিং দিয়ে গেছেন। অনেকে স্বজনদের বাসা-বাড়িতে উঠবেন। ঢাকার যাত্রাবাড়ী, গাবতলী, টঙ্গীসহ আশপাশের এলাকার নেতাকর্মীরা মিছিলসহকারে সমাবেশে যোগ দেবেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ হবে। এরপর ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগের সমাবেশ। ইতিমধ্যে আমরা যে আটটি সমাবেশ করেছি, সেগুলো আমরা সরকারের শত বাধা ও উসকাানির পরও শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করেছি। নেতাকর্মীরা চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। দেশের জনগণের পাশাপাশি বিদেশি বন্ধুরা দেখেছেন কীভাবে আমরা সমাবেশ করেছি; বরং সরকার দফায় দফায় উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নেব না।’
যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ সফল করতে বিএনপির পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন ইউনিটের নেতাদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা করছি।’
ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ছাত্রদল ঢাকার সমাবেশ সফল করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। যেকোনো বাধা পেরিয়ে ছাত্রদল সমাবেশ সফল করতে বদ্ধপরিকর।’
এদিকে গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ১০ ডিসেম্বরের ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে দলটির বিভিন্ন উপকমিটির প্রস্তুতি সভা হয়। সভাগুলোতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। অভ্যর্থনা উপকমিটির আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল নোমানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খানের সঞ্চালনায় প্রস্তুতি সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন অভ্যর্থনা উপকমিটির সদস্য আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, সালাহউদ্দিন আহমেদ, শিরিন সুলতানা, আমিনুল হক, নজরুল ইসলাম আজাদ, রফিকুল আলম মজনু, নবী উল্লাহ নবী প্রমুখ। সভায় শৃঙ্খলা উপকমিটি, যোগাযোগ উপকমিটি, সাংস্কৃতিক উপকমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা অংশ নেন।
মুক্তিযুদ্ধের ১৬টি সফল মিশনের বিস্তারিত ধারাবাহিকভাবে লিখছেন সালেক খোকন
১৯৭১ সাল। মুক্তিযুদ্ধ চলছে পুরোদমে। আমরা হাইড-আউট ক্যাম্প করি ঢাকার কাছে, ডেমরায়। গ্রামের নাম আমুলিয়া মেহেন্দিপুর। জামদানি শাড়ি বানাত গোটা গ্রামের মানুষ। যথেষ্ট সাহায্য করেছিল তারা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত ওই গ্রামের মানুষেরা আমাদের আশ্রয় দিয়েছিল। তাদের ঋণ শোধ হওয়ার নয়।
ক্যাম্পে ছিলাম ৪০ জন। কমান্ডে সাদেক হোসেন খোকা (ঢাকার প্রয়াত মেয়র)। ওখান থেকে বেরিয়ে ঢাকার ভেতরে গেরিলা অপারেশন করে আবার ফিরে যেতাম। ঢাকার কিছু গ্রুপ খবরাখবর দিত। আবার নিজেরাও বেরোতাম রেকি করতে। বন্ধু জগলু আর মামাতো ভাই শহিদ নানা মেসেজ দিয়ে সাহায্য করেছে। ‘খোকা’ গ্রুপের গেরিলা হিসেবেই পরিচিত ছিলাম। ঢাকায় গেরিলা অপারেশন করেছি ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে।
প্রাদেশিক ইলেকশন কমিশন অফিস তখন ছিল মোমিনবাগে, রাজারবাগের উল্টো পাশে। দুটো ভাড়াবাড়িতে চলত তাদের কাজ। দেশে তখন পুরোদমে যুদ্ধ চলছে। সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচিত এমপিএ আর এমএনএরা স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষ নিয়ে চলে গেছেন মুক্তাঞ্চলে ও ভারতে। সে সময় পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ফন্দি আঁটে। নির্বাচিত সব এমএনএ ও এমপিএর পদ শূন্য ঘোষণা করে আসনগুলোতে উপনির্বাচনের গোপন প্রস্তুতি নিতে থাকে তারা। এ খবর পেয়েই সিদ্ধান্ত নিই প্রাদেশিক ইলেকশন কমিশন অফিস উড়িয়ে দেওয়ার। এতে বিশ^ গণমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়বে ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের খবর। চাপের মুখে পড়বে পাকিস্তান সরকার। খোকা ভাইয়ের নেতৃত্বে ওই অপারেশনে অংশ নিই আমি, লস্কর, সুফি আর হেদায়েত। জায়গাটা রেকি করে আসি এক দিন আগেই।
১ নভেম্বর, ১৯৭১। রোজার মাস ছিল। ঢাকায় যখন ঢুকি রাত তখন ৮টার মতো। তারাবির নামাজ চলছে। রাস্তাঘাট ফাঁকা। ওই সময়ই বিল্ডিংয়ে ঢুকে ১২ পাউন্ড এক্সপ্লোসিভ ফিট করি আমরা। বেরিয়ে এসেই বিস্ফোরণ ঘটাই। বিস্ফোরণে গোটা ঢাকা শহর কেঁপে ওঠে। বিল্ডিংয়ের এক পাশ ধসে পড়ে। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় ইলেকশন কমিশন অফিসের কাগজপত্র। ওখানে থাকা এক দারোয়ানও মারা যায়।
স্মুথলি আমরা অপারেশনটা করি। কিন্তু কাজটা শেষ করতে বেজে যায় রাত ১২টা। পাকিস্তানি আর্মি তখন ঢাকার রাস্তায় টহলে নেমেছে। ক্যাম্পে ফেরার কোনো উপায় নেই।
গলিপথ দিয়ে আমরা মালিবাগের এক মেসে গিয়ে আশ্রয় নিই। মেসটির ওপরে টিন। চারপাশে বেড়া। কর্মজীবী কিছু লোক থাকত সেখানে। ঢুকেই বলি, ‘একটু আগে বিস্ফোরণের যে আওয়াজ হয়েছে, সেটা আমরাই করেছি। আমরা মুক্তিযোদ্ধা।’ কথা শুনে আর অস্ত্র দেখে থরথর করে কাঁপছিল তারা। প্রথম কোনো মুক্তিযোদ্ধা দেখছে। তবু রাতে আমাদের থাকার কথা শুনে ভয় পেল না; বরং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের সাহায্য করল।
মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়াও তখন ছিল আরেক যুদ্ধ। পাকিস্তানি সেনারা টের পেলে সবাইকে হত্যা করত। মেসের পাশেই ছিল পিডিবির একটি অফিস। সেই অফিসের পাহারায় ছিল পাকিস্তানি সেনারা। ফলে ওই মেসে থাকাটা ছিল প্রচ- ঝুঁকির।
ওই রাতে মেসের লোকেরা তাদের জন্য রান্না করা খাবার আমাদের খাওয়ায়। তাদের বিছানাতেই থাকতে দেয়। আমাদের বাঁচাতে রাতভর পালা করে বাইরে দাঁড়িয়ে পাহারাও দিয়েছিল তারা। খুব ভোরে সেখান থেকে ফিরে যাই ক্যাম্পে। মেসের মানুষগুলোর কথা খুব মনে পড়ে। ওই রাতে তাদের সাহায্য না পেলে হয়তো ধরা পড়তে হতো। মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষের অবদানের ইতিহাসও তুলে আনা প্রয়োজন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকায় গেরিলা অপারেশনের কথা এভাবেই তুলে ধরেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হক নান্টু।
চার ভাই ও পাঁচ বোনের সংসারে নান্টু সবার ছোট। বাবা আব্দুল হামিদ ও মা নছিমুল নেসা। মুক্তিযুদ্ধের সময় নান্টু ছিলেন ঢাকা শাহীন স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। একাত্তরে ভারতের মেলাঘর থেকে ২১ দিন ট্রেনিং নেন তিনি। তার মুখেই শুনি ঢাকার আরেকটি অপারেশনের কথা।
তার ভাষায়, ডিএফপি অফিস তখন ছিল শান্তিনগরে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর সৃষ্টির জন্য আমরা সেখানে হিট করার প্রস্তুতি নিই। আমার মেজো ভাই সাইদুল হক বাবু ছিলেন ডিএফপির ফিল্ম প্রডিউসার। এ কারণে রেকি করার দায়িত্ব পড়ে আমার ওপর। সব খবর নিয়ে এসে আমি খোকা ভাইকে দিই। ওই দিন ছিল আখেরি জুমা। দুপুরে বায়তুল মোকাররমের নিউজ কাভার করে ফিরেছে সবাই। বেলা ৩টার পর আমরা ডিএফপিতে ঢুকি। অফিসে কেউ নেই। তিনতলায় সিঁড়িঘরে থাকা দারোয়ানকে বের করে দিই প্রথম।
টেবিলের ওপর ১২ কেজি এক্সপ্লোসিভ আমরা ফিট করি। বিস্ফোরণে যাতে স্টিলের টুকরোগুলো স্পিন্টার হিসেবে কাজ করে, সে কারণে স্টিলের আলমারিটাকেও এক্সপ্লোসিভের ওপর চাপ দিয়ে ফেলে রাখি। ঘটলও তাই। বিস্ফোরণে পুরো বিল্ডিং উড়ে যায়। দ্রুত একটা মাইক্রোবাসে করে আমরা সরে পড়ি। ওই অপারেশনের খবর ফলাও করে প্রচারিত হয়েছিল ভয়েস অব আমেরিকা, আকাশবাণী, বিবিসি ও স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে। আমাদের মনোবল ও সাহস আরও বেড়ে যায়।
গেরিলা নান্টু কেমন বাংলাদেশ চান? দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি বলেন, ভালো বাংলাদেশ চাই। পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো বাংলাদেশ চাই। ভালো দেশের নাগরিক হিসেবে বাঁচতে চাই। যে সরকার দেশকে সঠিক পথে নিয়ে যেতে পারবে, সেই সরকারের শাসন চাই। দুর্নীতি উন্নয়নকেই বিতর্কিত করবে। তাই এটা দেখা উচিত কঠোরভাবে। প্রকৃত লোকদের কাজে লাগাতে হবে।
ইচ্ছা আর চেষ্টা থাকলে দেশটাকে আরও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব এমনটাই বিশ্বাস করতেন গেরিলা বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হক নান্টু। আশায় বুক বেঁধে তিনি শুধু বললেন, ‘যদি দেশের সঠিক ইতিহাস ও বীরত্বের কাহিনী জানো, তবেই বীরের মতো তোমরা এগোতে পারবে। মনে রেখো, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসই তোমাদের পথ দেখাবে।’
ছবি নম্বর ও ক্যাপশন
ছবি-০১-১: বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হক নান্টু, ছবি: সালেক খোকন
ছবি-০১-২: গেরিলা অপারেশনের পর ইলেকশন কমিশন অফিস
ছবি: জালালুদ্দিন হায়দার
আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি গণসমাবেশ করতে যতটা অনড় সেখানে সমাবেশ করতে না দেওয়ার ব্যাপারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ঠিক ততটাই কঠোর। গত সোমবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভায় কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে কঠোর অবস্থানের কথা নিশ্চিত করে বলেছেন, শেখ হাসিনা বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে শুধু কঠোর অবস্থানই দেখাননি, দেখিয়েছেন সহনশীলতাও। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সমাবেশ করার পরামর্শ জানিয়ে মূলত সহনশীল মনোভাব প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
কেন্দ্রীয় নেতারা দেশ রূপান্তরকে আরও জানিয়েছেন, বিএনপি কর্মসূচির নামে ওইদিন জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে সরকার বসে বসে নীরবে তা দেখবে ব্যাপারটা এমন হবে না। কারণ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া যেমন সরকারের দায়িত্ব তেমনি দুর্ভোগ থেকে জনগণকে রক্ষা করাও দায়িত্ব সরকারের। কর্মসূচির পেছনে বিএনপির চক্রান্ত রয়েছে বলেই সমাবেশের স্থান নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে বিএনপি। অথবা ১০ লাখ লোক সমাগম করার মতো সাংগঠনিক শক্তি নেই বলে ছোট জায়গায় সমাবেশ করতে চায় বিএনপি।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ২৬ শর্তে বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু বিএনপি বলছে, তারা নয়াপল্টনে সমাবেশ করবে। তারা সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নয়াপল্টনেই গণসমাবেশ করবে, তাদের অনড় অবস্থান কী প্রমাণ করে? কর্মসূচির নামে পেছনে দলটি অন্য কোনো ষড়যন্ত্র করতে চায়। তা না হলে অনড় অবস্থানে কেন থাকবে বিএনপি? ওই নেতা আরও বলেন, সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ না করে ইস্যুটি নিয়ে রাজনীতি করবে, সহিংসতা-সংঘাত করবে, সেই সুযোগও বিএনপিকে দেওয়া হবে না। সহিংসতার চেষ্টা করা হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শক্ত হাতে তা নিয়ন্ত্রণ করবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি ১০ লাখ মানুষের উপস্থিতি ঘটাবে ঘোষণা দিয়েছে। নয়াপল্টনে অত মানুষ ধরবে না। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার প্রস্তাব দিয়ে আমি মনে করি উদারতা দেখিয়েছেন, মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন। এই প্রস্তাব পরিহার করা এবং নয়াপল্টনে সমাবেশ করার ব্যাপারে অনড় থাকার অর্থই হলো কর্মসূচির পেছনে ষড়যন্ত্রের মানসিকতা।’
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে বড় জোর ৪০/৫০ হাজার লোক ধরবে। লাখ লাখ লোকের সমাবেশের জায়গা মূলত নয়াপল্টন নয়। তিনি বলেন, বিষয়টি অনুধাবন করে সোহরাওয়ার্দীতেই বিএনপির সমাবেশ করা উচিত।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের তিন নেতা বলেন, বিএনপি ১০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে মূলত জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে তৎপরতা চালাচ্ছে। বিএনপি সরকারের সহযোগিতাকে দুর্বলতা মনে করছে। তারা আওয়ামী লীগকে উসকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী বিএনপিকে সভাসমাবেশ করতে দিচ্ছে। বিএনপি ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়ে সহিংসতার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে বলে আওয়ামী লীগ সতর্ক থাকে। ১০ ডিসেম্বর নিয়েও সেটাই করছে।
দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি সমাবেশের স্থান নিয়ে গোঁয়ার্তুমি করলে শেষ পর্যন্ত কর্মসূচিই পালন করতে পারবে না। সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়ে রাজনৈতিক সহনশীলতা দেখিয়েছে। এই সহনশীলতা ভিন্নভাবে নিয়ে এবং চক্রান্ত করতে চাইলে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার সব প্রচেষ্টা কঠোর হাতে দমন করা হবে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, শেষ পর্যন্ত নয়াপল্টনে সমাবেশ করার ব্যাপারে অনড় থাকলে অনেক শর্ত পূরণ করতে হবে এবং শর্ত যে পূরণ করবে সেটাও প্রকাশ্যে বলতে হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগ বিএনপির ব্যাপারে যেমন নমনীয়, প্রয়োজন হলে ঠিক উল্টো পথেও চলবে। তিনি বলেন, বিএনপিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এর মূল কারণ বিএনপি রাজনীতিতে আস্থার চেয়ে অনাস্থাই বেশি দেখেছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে আমি কোনো আলোচনা করতেই রাজি নই। তিনি বলেন, বিএনপি কী করে, কী করতে পারে দেখা যাক।’
আর কত একা লড়াই করবেন মেসি? বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচ শেষে উঠেছিল এই প্রশ্ন। পঁয়ত্রিশেও আর্জেন্টিনার স্বপ্ন টিকিয়ে রেখেছেন বাঁ পায়ের খুদে জাদুকর। গ্রুপের শেষ ম্যাচেও কি তিনিই হবেন ত্রাতা? জাদুকরকে একটা জয়ও উপহার দিতে পারবে না সতীর্থরা? এ প্রশ্নের জবাবটা দিতেই কাল অন্য রূপে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। আগের ম্যাচের মতো পোল্যান্ডের বিপক্ষেও কাল প্রথমার্ধে গোল হয়নি। রাজা নিজেই পেনাল্টির সুযোগ হাতছাড়া করে দুশ্চিন্তাটা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তবে দ্বিতীয়ার্ধে মেসির কোনোরকম সহায়তা ছাড়াই আর্জেন্টিনাকে জিতিয়েছেন ম্যাক অ্যালিস্টার ও জুলিয়ান আলভারেজ। তাদের গোলে পোল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারিয়ে ‘সি’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় লিওনেল স্কালোনির দল। গ্রুপের ভীষণ নাটকীয় অন্য ম্যাচে মেক্সিকো ২-১ গোলে সৌদি আরবকে হারালেও লাভ হয়নি। ৪ পয়েন্ট নিয়ে গোল গড়ে মেক্সিকোকে পেছনে ফেলে পোল্যান্ড পেয়েছে দ্বিতীয় পর্বের টিকিট। সৌদির কাছে অঘটনের শিকার হয়ে শুরু করা আর্জেন্টিনা পরের দুই ম্যাচে জিতে শেষ ষোলোতে অপেক্ষাকৃত সহজ প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়াকে পেয়েছে। আর পোল্যান্ডকে খেলতে হবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের সঙ্গে।
পোলিশ কিপার ভোইচেক সেজনি আগের দিনই সতর্ক করে বলেছিলেন, আর্জেন্টিনার মহানায়কের ঝড় থামাতে তিনি প্রস্তুত। বিশেষ করে মেসির পেনাল্টির কৌশল পড়ে ফেলার কথাও জোর গলায় বলেছিলেন। ম্যাচের ৩৯ মিনিটে সেজনির ভুলেই পেনাল্টি পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। আলভারেজের ক্রসে মাথা ছোঁয়াতে লাফিয়েছিলেন মেসি। সেজনি চেয়েছিলেন পাঞ্চ করতে। তবে তার গ্লাভস গিয়ে আঘাত করে মেসির মুখে। ভিএআরে পরীক্ষা করে ডাচ রেফারি ম্যাকেলিয়ে ড্যানি পেনাল্টি নির্দেশ দেন। এ সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ হলেও দলকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগটা এসেছিল মেসির সামনে। তবে স্পট থেকে তার বাঁ পায়ের শট দারুণ তৎপরতায় রুখে দেন সেজনি। পেনাল্টির সহজ সুযোগ নষ্ট করে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগিয়েছিলেন মেসি। তবে কি নিজের স্বপ্নটা নিজেই গলা টিপে হত্যা করলেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক? সেই আক্ষেপ অবশ্য ঘুচিয়ে দিয়েছেন ম্যাক অ্যালিস্টার। বিরতি থেকে ফিরেই পোলিশ প্রতিরোধ ভেঙে দেন আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার। এরপর আলভারেজের দারুণ ফিনিশে নিশ্চিত হয় জয়।
ম্যাচ শেষে ম্যাক অ্যালিস্টার বলেন, ‘আমি খুশি যে দারুণ খেলেই জিতেছি। আমরা পুরোটা সময়ই গোলের খোঁজে ছিলাম। আমার মনে হয় প্রথম ম্যাচ হারের পর আমরা একটু পেছনে গিয়েছি। নিজেদের ফিরিয়ে আনতে চেয়েছি আগের রূপে যেমনটা আমরা ছিলাম। আমরা বেশিরভাগ সময়ই বল দখলে রেখেছি, শান্ত থেকেছি এবং ভেঙে পড়িনি। অবশ্যই দারুণ একটা ম্যাচ খেলেছি।’ এদিকে মেসি বলছিলেন, ‘আগের ম্যাচ আমাদের অনেকটা শান্তি দিয়েছে। মানসিকভাবে আমাদের প্রস্তুত করেছে। আজ আমরা জয়ের জন্যই মাঠে এসেছিলাম। সামনে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ম্যাচটি খুব কঠিন হতে যাচ্ছে। যে কেউ যেকোনো দলকে হারাতে পারে। সবকিছুই হচ্ছে। আমাদের সবসময়ের মতো সর্বোচ্চ সেরা প্রস্তুতিটা নিতে হবে।’
মেক্সিকো ম্যাচের একাদশে চারটি পরিবর্তন এনে দল নামিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন কোচ স্কালোনি। মেসির পর সবচেয়ে কমবয়সী আর্জেন্টাইন হিসেবে প্রথম একাদশে গিদো রদ্রিগেজের জায়গায় সুযোগ হয় আগের ম্যাচে গোল পাওয়া ২১ বছরের এনজো ফার্নান্দেজের। এ ছাড়া গত ম্যাচে নিভে থাকা লাউতারো মার্তিনেজের জায়গা নেন জুলিয়ান আলভারেজ। দুই ডিফেন্ডার লিসান্দ্রো মার্তিনেজ ও গনজালো মনতিয়েলের জায়গায় নামানো হয় ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো ও নাহুয়েল মলিনাকে।
আগের দুই ম্যাচের সঙ্গে তুলনায় স্কালোনির ৪-২-৩-১ কম্বিনেশনটা দারুণ কাজ করেছে কাল। পুরোটা সময় দারুণ আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলেছে আলবিসেলেস্তারা। বলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখে পোলিশ সীমান্তে বারবার হানা দিয়ে তারা চেয়েছে কাক্সিক্ষত গোলটা পেতে। ওভারল্যাপ করে বারবার আকুনা ও মলিনা আক্রমণে যোগ দেওয়ায় পোলিশদের কোণঠাসা হয়ে পড়তে হয়। তবে অসম্ভব সব প্রচেষ্টা রুখে দিয়ে দলের গোলের দরজা সুরক্ষিত রাখেন প্রথমার্ধে। বিশেষ করে মেসিকে রুখে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিটা ঠিকই রেখেছেন জুভেন্তাসের গোলকিপার। ষষ্ঠ মিনিটে সেজনিকে প্রথম পরীক্ষা নেন আগের সাত আন্তর্জাতিক ম্যাচে গোল পাওয়া মেসি। তবে তার শট সহজেই রুখে দেন সেজনি। চার মিনিট বাদে বক্সের বাঁদিক থেকে মেসির জোরালো শটের সামনে ফের বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে যান পোলিশ কাস্টডিয়ান। এর পরপরই মেসির থালায় সাজিয়ে দেওয়া পাসে এলোমেলো শট করে গোলের সুযোগ নষ্ট করেন আকুনা। শুরুর এতগুলো সুযোগ কাজে না আসায়ও হতোদ্যম হয়নি আর্জেন্টিনা। যার ফলটাই তাদের মিলেছিল মেসির পেনাল্টি আদায় করে নেওয়ার মাধ্যমে। তবে সুযোগটা নষ্ট করে টানা আট ম্যাচে গোলের এবং ম্যারাডোনাকে বিশ্বকাপ মঞ্চে গোলের হিসেবে ছাড়িয়ে যাওয়া হয়নি আর্জেন্টাইন অধিনায়কের। তবে ম্যারাডোনাকে বিশ্বকাপে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডে পেছনে ফেলেছেন মেসি। কাল খেলেছেন ২২তম ম্যাচ।
বিরতি থেকে ফিরেই আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নেন ম্যাক অ্যালিস্টার। ডানদিক থেকে মলিনার কাটব্যাকে এ মিডফিল্ডারের প্লেসিংটা ছিল নড়বড়ে। তবে তা পোলিশ কিপারকে সুযোগ না দিয়ে দূরের পোস্টে প্রবেশ করে। আর ৬৭ মিনিটে এনজো ফার্নান্দেজের বাড়ানো বল নিয়ে বক্সে ঢুকে ডান পায়ের জোরালো শটে আর্জেন্টিনাকে আরও এগিয়ে নেন আলভারেজ। ৭১ মিনিটে ফের গোলের সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। সতীর্থের কাটব্যাক গোলমুখে পেলেও তার বাঁ পায়ের প্লেসিং শুয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন সেজনি। দুই মিনিট পর গোলকিপারকে একা পেয়েও বল লক্ষ্যে রাখতে পারেননি আলভারেজ। তার শট বাইরের জাল কাঁপায়। অতিরিক্ত সময়ে বদলি তাগলিয়াফিকোর শট গোললাইন থেকে ইয়াকব কিভিওর ফিরিয়ে পোল্যান্ডকে তুলে নেন পরের ধাপে।
১৮ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় দিনাজপুর পৌরসভার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিক্রয় ও বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান নেসকো। গত প্রায় ১৫ বছর ধরে এক টাকাও বিল পরিশোধ করেনি প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভা। মঙ্গলবার বিকাল থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় জন্মনিবন্ধনসহ পৌরসভার সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সেবা নিতে এসে ঘুরে যাচ্ছেন জনগণ। অপরদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় করোনার ভ্যাকসিনসহ বিভিন্ন ভ্যাকসিন নষ্টের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের আগে পৌর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়নি বলে দাবি করেছেন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মিনারুল ইসলাম খান। তবে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করতে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন। প্যানেল মেয়র আবু তৈয়ব আলম দুলাল জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা চলছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বুধবার সরেজমিনে পৌরসভায় গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে আছে দিনাজপুর পৌরসভা। শুধুমাত্র কর্মকর্তাদের রুমের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে একটি জেনারেটর ব্যবহার করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় জন্মসনদসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে কেউ রুমে অথবা কেউ বাইরে বসে অলস সময় পার করছেন কর্মচারীরা। সকাল থেকে শত শত জনগণ পৌরসভায় এসে সেবা না পেয়ে ঘুরে যাচ্ছেন।
পৌরসভার ইপিআই সুপারভাইজার মোমরেস সুলতানা বলেন, ‘গতকাল থেকে বিদ্যুৎ নেই। করোনার ভ্যাকসিন ও শূন্য থেকে ১১ মাস বয়সী বাচ্চাদের দেওয়ার জন্য টিকা রয়েছে। আগামীকাল (আজ) করোনার ভ্যাকসিন প্রদানের প্রোগ্রাম আছে। আমাদের এখানে ২টি ডিপ ও ২টি সাধারণ ফ্রিজ রয়েছে। ফ্রিজগুলোতে টিকাগুলো সংরক্ষিত রয়েছে। এখানে করোনার ভ্যাকসিন ৪ হাজার টিকা রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য ভ্যাকসিন কয়েক হাজার টিকা রয়েছে। কিন্তু গতকাল থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্রিজগুলো বন্ধ হয়ে আছে। এখন আল্লাহর ওপর ভরসা।’
বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের ব্যাপারে পৌর মেয়রের ওপর ক্ষোভ ঝারলেন পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জুলফিকার আলী স্বপন। তিনি বলেন, ‘আমি কাউন্সিলর হয়েছি ২ বছর হলো। এই ২ বছরে ২৪টি মাসিক সমন্বয় সভা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো মাসিক সমন্বয় সভায় বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার ব্যাপারে অবহিত করা হয়নি। এখন আমরা অন্ধকারের মধ্যে আছি।
এদিকে পৌরসভায় মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের কার্যালয়ে যাওয়া হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার রুমটি বাইরে থেকে তালা মারা অবস্থায় পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে মেয়রকে মোবাইল করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে ফোনটি কেটে দেন।
দিনাজপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মিনারুল ইসলাম খান বলেন, ‘দিনাজপুর পৌরসভার কাছে বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ১ ও ২’-এ মোট ১৮ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। এছাড়াও বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ১-এর অফিসটি দিনাজপুর পৌরসভার সম্পত্তি। এ বাবদ প্রথম থেকে প্রায় ৭০ কোটি টাকা তাদের কাছ থেকে আমরা পাই।’
এ ব্যাপারে দিনাজপুর বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম শাহাদত হোসেন বলেন, পৌরসভার কাছে বিদ্যুৎ বিভাগ ১ ও ২ এর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। কিন্তু তারা কোনো ধরনের টাকা পরিশোধ করছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে শুধুমাত্র পৌরসভা ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আর আমাদের কাছে পৌরসভা জমি ভাড়া বাবদ যদি কোনো টাকা পেয়ে থাকে তাহলে আমাদের কাগজপত্র দেখাক। কিন্তু তারা আমাদের কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারে না।’
দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডা. বোরহন-উল হক বলেন, ‘পৌরসভায় আমাদের টিকা রয়েছে। আইসল্যান্ড রেফ্রিজারেটর থাকলে ৭২ ঘণ্টা টিকা ঠিক থাকে। বিষয়টি জানার পর পৌরসভার কাছে থাকা টিকাগুলো বিকল্প জায়গায় ফ্রিজার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’
যশরাজ ফিল্মসের হাত ধরে বড় পর্দায় শাহরুখ খানের রাজকীয় প্রত্যাবর্তনের সাক্ষী বলিউড। তার 'পাঠান' বক্স অফিসে নজির গড়ছে। ভারতীয় ছবির সাফল্য পাড়ি দিয়েছে আমেরিকাতেও।
৪ বছর পর বড় পর্দায় ফিরেছেন শাহরুখ। 'পাঠান'-এ তার অ্যাকশন দেখতে দলে দলে হলে যাচ্ছেন অনুরাগীরা। মুক্তির পর প্রথম কয়েক দিনেই বিপুল টাকার ব্যবসা করে ফেলেছে এই ছবি। গড়েছে একাধিক নজির। গত বুধবার, ২৫ জানুয়ারি মুক্তি পায় 'পাঠান'। রবিবার পঞ্চম দিনে ছবিটি বিশ্বজুড়ে ৫০০ কোটির বেশি টাকার ব্যবসা করে ফেলেছে। কোনো কোনো পরিসংখ্যানে দাবি, পঞ্চম দিনের শেষে 'পাঠান'-এর আয় সাড়ে ৫০০ কোটি। মুক্তির প্রথম ৪ দিনই দেশের বাজারে হাফ সেঞ্চুরি করেছিল 'পাঠান'। রবিবারও তার অন্যথা হয়নি। ৫০ কোটির গণ্ডি পেরিয়ে এই ছবি রবিবার দেশে প্রায় ৭০ কোটি টাকার ব্যবসা করে। ভারতে এখন পর্যন্ত 'পাঠান'-এর মোট আয় ২৮২ কোটি টাকা। শনি ও রবিবার সপ্তাহান্তেই আরও বেশি করে এই ছবি দেখতে হলে যান মানুষ। চতুর্থ দিনে দেশের বক্স অফিসে শাহরুখের ছবির আয় ছিল ৫১ কোটি টাকা। সারা বিশ্বে এ ছবির মোট রোজগার শনিবার পর্যন্ত ছিল ৪২৯ কোটি টাকা। রবিবার এক লাফে ৫০০ কোটির গণ্ডি ছাড়িয়েছে 'পাঠান'।
দেশের বাইরে 'পাঠান' মোট ১০০টি দেশে মুক্তি পেয়েছে। বিদেশে ২৫০০টি পর্দায় এই ছবি দেখানো হচ্ছে। ভারতে এই ছবি চলছে সাড়ে ৫ হাজার পর্দায়। শুধুমাত্র আমেরিকাতেই ৬৯৪টি সিনেমা হলে 'পাঠান' মুক্তি পেয়েছে। সেখানে রমরমিয়ে চলছে শাহরুখ, দীপিকা পাডুকোন এবং জন আব্রাহাম অভিনীত ছবিটি। নজির গড়েছে। উত্তর আমেরিকার বক্স অফিসে হিন্দি ছবি হিসাবে 'পাঠান'-এর প্রথম দিনের আয় সর্বোচ্চ। ছবিটি মুক্তির দিন ১৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ১৫ কোটি টাকা) আয় করেছে আমেরিকায়। উত্তর আমেরিকার ৬৯৪টি সিনেমা হলে সাম্প্রতিককালে মুক্তিপ্রাপ্ত যেকোনো ছবির তুলনায় 'পাঠান'-এর গড় সবচেয়ে বেশি।
আয়ের গড় হিসাবে হলিউডকেও টেক্কা দিচ্ছেন শাহরুখ। এই নিরিখে হলিউডের ৩টি ছবি কেবল 'পাঠান'-এর সামনে রয়েছে। সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে সেরা গড়ের তালিকায় তৃতীয় কিংবা চতুর্থ স্থানে শেষ করতে পারে 'পাঠান'। তালিকায় 'পাঠান'-এর আগে রয়েছে 'অ্যাভাটার : দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’, 'পুস ইন দ্য বুটস : দ্য লাস্ট উইশ' এবং 'এ ম্যান কলড ওটো'।
কাস্টমস লাইসেন্সিং বিধিমালা বাতিলের দাবিতে আজ থেকে দুই দিন দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন।
রোববার (২৯ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. সুলতান হোসেন খান।
লিখিত বক্তব্যে সুলতান হোসেন খান জানান, কাস্টমস এজেন্টস লাইসেন্সিং বিধিমালা-২০১৬ তে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের মৌলিক অধিকার পরিপন্থী বিধি সন্নিবেশিত থাকায় বিধিমালা জারির পর ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে মৌলিক অধিকার পরিপন্থী বিধি সংশোধনের দাবি জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দেওয়া হলেও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাজস্ব বোর্ড কর্তৃপক্ষ বিধিমালা সংশোধনের কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
‘উপরন্তু ২০২০-২০২১ সালের বাজেট প্রস্তাবনার সঙ্গে আরও কঠিন শর্ত যুক্ত করে লাইসেন্সিং বিধিমালা-২০২০ জারি করা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের বাজেট প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে উত্থাপিত লাইসেন্সিং রুলের কয়েকটি বিধি ও উপবিধি সংশোধনীর প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছিল। কিন্তু গত বাজেটেও কোনোরূপ সংশোধনী আনা হয়নি।’
তিনি আরও জানান, দীর্ঘদিন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় গত বছরের জুনে সারা দেশে একদিনের কর্মবিরতি পালন করে সিঅ্যান্ডএফ সংশ্লিষ্টরা। জুন মাসের শেষে আবারও দুই দিনের কর্মবিরতি ঘোষণা দিলে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ৩০ দিনের মধ্যে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড হতে লাইসেন্সিং রুলসহ অন্যান্য বিধিসমূহ সংশোধনের জন্য কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নাই। এ বিষয়ে ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেও কার্যকর কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি। তাই বাধ্য হয়ে লাইসেন্সিং বিধিমালা-২০২০ এর আইন ও বিধি পরিবর্তন ও সংশোধনের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামী ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি সোম ও মঙ্গলবার দেশের সকল কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ফেডারেশন যে সকল বিধিবিধান সংশোধনের দাবি জানিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আমদানিকারকের কাছে শুল্ক করাদি পাওনা থাকলে সংশ্লিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের লাইসেন্স নবায়ন না করার বিধান বাতিল করা, উত্তরাধিকারের অনুকূলে লাইসেন্স হস্তান্তর সংশ্লিষ্ট শর্ত শিথিল করা, শুল্ককর পরিশোধ না করলে লাইসেন্স বাতিল ও অর্থদণ্ড আরোপের বিধান বাতিল করা, মূল লাইসেন্স বাতিল হলে রেফারেন্স লাইসেন্স বাতিলের বিধি বাদ দেওয়া, দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিকে লাইসেন্স প্রদান না করা, শুল্ক মূল্যায়ন বিধিমালা-২০০০ এর যথাযথ বাস্তবায়ন এবং ভুলের অজুহাতে ২০০ থেকে ৪০০ শতাংশ জরিমানার আদেশ বাতিলের দাবি উল্লেখযোগ্য।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ্ব শামছুর রহমান, সহসভাপতি জনাব শেখ মো. মোখলেছুর রহমান (লাভলু), অর্থ সচিব এ কে এম আকতার হোসেন, বন্দর বিষয়ক সচিব জনাব মো. খায়রুল বাশার প্রমুখ।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইলেকট্রিক্যাল ও মেশিনারি পণ্য নিয়ে রাশিয়া থেকে আসা বিদেশি জাহাজ ‘এম,ভি আনকা সান’ ও ‘এম,ভি সাপোডিলা’ মোংলা বন্দরে ভিড়েছে। রবিবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বন্দরের ৭ নম্বর জেটিতে ভিড়ে আনকা সান ও সন্ধ্যা ৭টায় ৮ নম্বর জেটিতে ভিড়ে সাপোডিলা।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইলেকট্রিক্যাল মালামাল নিয়ে ভেনুটা পতাকাবাহী জাহাজ এম,ভি আনকা সান রবিবার বিকেল পৌনে ৫টায় মোংলা বন্দরের ৭ নম্বর জেটিতে ভিড়েছে। ১ হাজার ৯৭৯ প্যাকেজের ১ হাজার ৪শ মেট্রিক টন ইলেকট্রিক্যাল পণ্য নিয়ে গত ২৬ ডিসেম্বর রাশিয়ার নভরস্কি বন্দর থেকে ছেড়ে আসে এ জাহাজটি। এ ছাড়া রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ বন্দর থেকে ৪৩৬ প্যাকেজের ৫১৮ মেট্রিক টন মেশিনারি পণ্য নিয়ে সন্ধ্যা ৭টায় বন্দরের ৮ নম্বর জেটিতে ভিড়ে বিদেশি জাহাজ এম,ভি সাপোডিলা।
বিদেশি জাহাজ আনকা সান’র স্থানীয় শিপিং এজেন্ট কনভেয়ার শিপিং লাইনসের খুলনার ম্যানেজার (অপারেশন শিপিং) সাধন কুমার চক্রবর্তী ও সাপোডিলা’র স্থানীয় শিপিং এজেন্ট ইন্টারপোর্ট’র খুলনার ম্যানেজার অসিম মন্ডল জানান, বন্দর জেটিতে অবস্থান নেয়া এ জাহাজ দুটি থেকে রবিবার সন্ধ্যার পর অর্থাৎ রাত থেকে পণ্য খালাস শুরু হবে। এরপর জাহাজের এ পণ্য খালাস করে জেটিতে রাখা হবে। তারপর সোম বা মঙ্গলবার থেকে তা সড়ক পথে নেয়া হবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে।
এর আগে গত ২২ জানুয়ারি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল নিয়ে মোংলা বন্দরে এসেছিল বিদেশি জাহাজ এম,ভি কামিল্লা। এ জাহাজগুলো মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত।
উল্লেখ্যে, সম্প্রতি ৭টি জাহাজ কোম্পানির ৬৯টি জাহাজে রূপপুরের মালামাল পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রেক্ষিতে রূপপুরের মালামাল নিয়ে রাশিয়া থেকে মোংলা বন্দরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা এম,ভি উসরা মেজরকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হয়নি তখন। ওই জাহাজটির ২৪ ডিসেম্বর মোংলা বন্দরে ভেড়ার শিডিউল ছিল। কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় তা আর সম্ভব হয়নি। পরে অবশ্য ওই জাহাজটি পণ্য খালাসে ভারতে গেলে সেখানেও পণ্য খালাস করতে না পারায় ফেরত যায় উসরা মেজর। যা মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, বাংলাদেশ ও ভারতসহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মহলে নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
চলছে শীত মৌসুম। এই সময় ফুলকপি খাবেন না, তা কি হয়? ফুলকপি খুবই পুষ্টিকর একটি সবজি; যা রান্না কিংবা কাঁচা যে কোন প্রকারে খাওয়া যায়। তবে ফুলকপির পাতাও কম উপকারী নয়। অনেকেই ফুলকপির পাতা ফেলে দেন। কিন্তু এর গুণ জানলে এমন করার আগে দু’বার ভাববেন।
ফুলকপিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, প্রোটিন, খনিজ পদার্থ, ক্যালসিয়াম প্রভৃতি রয়েছে। যা দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন রোগের হাত থেকে মানবদেহকে রক্ষা করে।
ওজন কমাতে
মেদ ঝরাতে পরিশ্রম কম করেন না কেউই। অথচ হাতের সামনে এমন উপকারী জিনিস থাকতেও, অপ্রয়োজনীয় ভেবে ফেলে দিচ্ছি। ফুলকপির পাতায় রয়েছে ভরপুর পরিমাণে ফাইবার। ওজন কমাতে চাইলে অতি অবশ্যই রোজের ডায়েটে রাখতে পারেন এই পাতা। শুধু লেটুস নয়, সালাদেও এই পাতা রাখতে পারেন।
দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে
গবেষণা বলছে, ফুলকপির পাতায় রয়েছে ভিটামিন এ। যা দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি, চোখ সংক্রান্ত নানা সমস্যার সমাধান করে। চোখের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে চোখ বন্ধ করে ভরসা রাখতে পারেন ফুলকপির পাতার উপর। রাতকানা রোগের আশঙ্কা দূর করতে এই পাতা কার্যকর।
হাড়ের যত্নে
শীতকালে হাড়ের বাড়তি খেয়াল রাখার দরকার পড়ে। তাই চিকিৎসকরা ক্যালশিয়ামে সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার কথা বলে থাকেন। ফুলকপির পাতা হল ক্যালশিয়ামের সমৃদ্ধ উৎস। এমনকি, ঋতুবন্ধের পরেও অনেক শারীরিক সমস্যা এড়াতে খেতে পারেন ফুলকপির পাতা।
সন্তানের বেড়ে ওঠায়
ফুলকপির পাতায় রয়েছে ভরপুর পরিমাণে প্রোটিন এবং খনিজ পদার্থ, যা শিশুর বেড়ে ওঠায় সাহায্য করবে। পুষ্টিবিদরা শিশুর বা়ড়ন্ত বয়সে এমন কিছু খাবার খাওয়ার কথা বলে থাকেন, যেগুলো তাদের উচ্চতা, ওজন এবং হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করবে। ফুলকপির পাতা সেই খাবারগুলোর মধ্যে অন্যতম।
‘শনিবার বিকেল’ মুক্তির বাধা কাটার খবর মিলেছিল গত ২১ জানুয়ারি। সেই দিনও ছিল শনিবার। এরপর দশ দিন কেটে গেলেও এখনও আনুষ্ঠানিক চিঠি হাতে পাননি ছবিটির নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সেন্সর বোর্ডের প্রতি দ্রুত চিঠি পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
ফেসবুকে পেজে দেওয়া পোস্টে সোমবার ফারুকী লিখেছেন, ‘সেন্সর বোর্ডের প্রিয় ভাই-বোনেরা, আমরা এখনও আপনাদের চিঠির অপেক্ষায়। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী আপিল বোর্ড একটা সিনেমার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার সর্বোচ্চ ক্ষমতা রাখে। শনিবার বিকেলের ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্ত দেশি-আন্তর্জাতিক পত্র-পত্রিকা এবং টেলিভিশনের কল্যাণে সারা দুনিয়ার মানুষ জানে। তারা সবাই তাকিয়ে আছে। আর দেরি না করে চিঠিটা তাড়াতাড়ি পাঠান।’
বাংলাদেশকে আর বিব্রতকর অবস্থায় না ফেলার অনুরোধ রাখেন ফারুকী, ‘আমরা বাংলাদেশকে আর বিব্রতকর অবস্থায় না ফেলি। ওদিকে ফারাজ রিলিজ হচ্ছে তিন তারিখ (৩ ফেব্রুয়ারি)। বাংলাদেশের মানুষ তাকিয়ে আছে শনিবার বিকেল মুক্তির দিকে, ফারাজের সাথে একই দিন বা এক ঘণ্টা আগে হলেও।’
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ২০১৬ সালের জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি নির্মিত। এতে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান, পরমব্রত, তিশা, ইরেশ যাকেরের সঙ্গে ফিলিস্তিনি অভিনেতা ইয়াদ হুরানিও। বাংলাদেশ-ভারত-জার্মান এই তিন দেশের যৌথ প্রযোজনায় সিনেমাটি বানাতে টানা ১৫ দিন মহড়ায় মাত্র ৭ দিনেই শুটিং শেষ করেন ফারুকী। এরপর বিদেশের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটি প্রদর্শিত এবং প্রশংসিত হলেও দেশে সেন্সর বোর্ডে এটি আটকে দেয়।
২০১৯ সালে সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা দুবার দেখার পর এটি আটকে দেন মূলত বোর্ডে থাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির আপত্তিতে। তখন বলা হয়েছিল, ‘স্পর্শকাতর’ বিষয়টি নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে।
যদিও ফারুকী বরাবরই বলে আসছিলেন, চলচ্চিত্রটি হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনা নিয়ে নয়, ওই ঘটনার ‘অনুপ্রেরণায়’ নির্মিত একটি কাহিনিচিত্র। তারপর ফারুকী ছাড়াও চলচ্চিত্র অঙ্গনের সবাই সিনেমাটি মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছিল।
গুলশান হামলা নিয়ে সম্প্রতি ভারতে নির্মিত সিনেমা ফারাজ এর মুক্তির দিন ঘোষণার পর নতুন করে শনিবার বিকেল নিয়ে সবাই সরব হয়। এর মধ্যে ফারুকীর করা আপিল আবেদন নিয়ে শুনানিতে বসে আপিল বোর্ড।
মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে সভাপতি ও সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যানকে আহ্বায়ক করে গঠিত সাত সদস্যের সেই আপিল কমিটিতে রয়েছেন সংসদ সদস্য অভিনয়শিল্পী সুবর্ণা মুস্তাফা, সাবেক অতিরিক্ত সচিব নূরুল করিম, অভিনেত্রী সুচরিতা ও সাংবাদিক শ্যামল দত্ত।
ফারুকী তার এদিনের স্ট্যাটাসে সেন্সর বোর্ডকে উদ্দেশ্য করে লিখেন, ‘এটা দ্রুত সমাধান করেন। আমরা হাসিমুখে সিনেমাটা রিলিজ করি। পৃথিবীর নানা দেশে সিনেমাটা দেখানো হয়েছে, হচ্ছে। এবার বাংলাদেশের মানুষের পালা।’
সেন্সর বোর্ডে সিনেমা আটকে দেওয়াকে সেকেলে চিন্তা উল্লেখ করে ফারুকী লিখেন, ‘এটাও আপনাদের ভাবার সময় আসছে, এই নতুন মিডিয়ার যুগে সিনেমা আটকানোর মতো সেকেলে চিন্তা আদৌ কোনো কাজে আসে কিনা। কারণ যে কেউ চাইলে তার ছবি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে উন্মুক্ত করে দিতে পারে। ফলে ছবি আটকানোর চেষ্টা একটা পণ্ডশ্রম যা কেবল দেশের জন্য বদনাম-ই বয়ে আনতে পারে।’
রাজপথে খালি পায়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে স্লোগান দিচ্ছে এক পথশিশু। পেছনে বিক্ষুব্ধ মিছিল। শিশুটির পরনে চার পকেটের হাফপ্যান্ট; গেঞ্জিটা কোমরে বাঁধা। কণ্ঠে স্বৈরতন্ত্রের কবর রচনার হুঙ্কার। দৃঢ় চোয়ালে অগ্নিস্পর্ধী সাহসিকতার বহিঃপ্রকাশ। পাঁজরগুলো যেন শরীরের ভেতর থেকে তীরের ফলার মতো বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। মিছিলের অগ্রভাগে থাকা অপ্রতিরোধ্য শিশুটি সেদিন সবার নজর কাড়ে। ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি সকালে বাংলাদেশের স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনের এ প্রতিবাদী মুহূর্তটি ক্যামেরায় বন্দি করেছিলেন প্রথিতযশা আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদার।
সেই সময়ে দৈনিক সংবাদের নিজস্ব সংবাদচিত্রী ছিলেন তিনি। ছবিটি ফ্রেমবন্দি করে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি ইতিহাসের মূর্ত সাক্ষীর আলোকচিত্রী। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের আইকনিক আলোকচিত্র হিসেবে ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠে এ ছবি। ছবিটি আমাদের সংগ্রামী অতীতকে স্মরণ করিয়ে দে য়। এর কেন্দ্রীয় চরিত্র শিশুটির চোখ-মুখের ভাষা মানুষকে মনে করিয়ে দেয় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের কথা। ছবিটির দৃশ্য-ভাষা এতই শক্তিশালী যে, এখনো মানুষের মনে শিহরন জাগায়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আহ্বান জানায়।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট : ছাত্রসমাজের ১১ দফা মুক্তিসনদকে সামনে নিয়ে ঊনসত্তরের ২০ জানুয়ারি দাবানলের মতো জ্বলে উঠে পূর্ব বাংলা ও তার রাজধানী ঢাকা। এর ধারাবাহিকতায় ২৪ জানুয়ারি কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে ঢাকার রাজপথে নামে জনতার ঢল। বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালাকেও ম্লান করে দেয় সেদিনের জনসমুদ্রের বিক্ষুব্ধ ঊর্মিদল। অধিকার-সচেতন জনতার হুঙ্কারে কেঁপে ওঠে অত্যাচারীর আসন। সেই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য গর্জে উঠে স্বৈরাচারের বন্দুক। বুলেটের আঘাতে রাজপথে ঝরে পড়ে কয়েকটি প্রাণ। শহীদের লাশ নিয়ে রাজপথে মিছিলের ঢল নামে। রাত ৮টায় কারফিউ জারির মাধ্যমে জনতাকে নিবৃত্ত করার সর্বশেষ প্রয়াসকে ব্যর্থ করে দিয়ে রাতের নৈঃশব্দ্যকে প্রকম্পিত করে মুক্তিপাগল জনতা। এর কয়েক দিন পর জনতার অদম্য আন্দোলনের মুখে অত্যাচারী সরকারকে পালাতে হয়। সমাধি রচিত হয় আইয়ুব-মোনায়েমের রাজত্বের।
সেদিন ছিল আধাবেলা হরতাল। ঢাকায় সেক্রেটারিয়েটের ভেতর থেকে পুলিশ দুই দফা গুলিবর্ষণ করে। প্রথম দফা গুলিবর্ষণ সকাল ১১টা ৫ মিনিটে। দুপুরে দ্বিতীয় দফা। গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় নবকুমার ইনস্টিটিউশনের নবম শ্রেণির ছাত্র মতিউর রহমান মল্লিক ও নোয়াখালীর নান্দিয়াপাড়া হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সৈয়দ রুস্তম আলী। প্রেস ট্রাস্ট অফিসের সামনে পুলিশের গুলিতে আরও একজন নিহত হয়। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ-ইপিআরের গুলিবর্ষণ ও লাঠিচার্জে আহত হয় ২১ জন। পরদিন সব দৈনিক পত্রিকা হতাহতদের নাম, বাবার নাম, বয়স, পেশা, কার-কোথায় গুলি লেগেছে, কীভাবে ঘটনা ঘটেছে তার বিস্তারিত বিবরণ ছাপায়। বেশিরভাগ পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় শহীদ মতিউর ও রুস্তমের মৃত মুখের ছবি ছাপা হয়। সেদিন কোনো পত্রিকায় কোনো পথশিশুর মৃত্যুর খবর ছাপা হয়নি।
আইকনিক ফটো : রশীদ তালুকদারের তোলা পথশিশুর ছবিটি প্রথম ছাপা হয় ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি দৈনিক সংবাদের বিশেষ ক্রোড়পত্রে। এরপর থেকে প্রতি বছর ২৪ জানুয়ারি ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক ঘটনার লেখনীর সঙ্গে ছবিটি দৈনিক সংবাদ প্রকাশ করে। রশীদ তালুকদার ১৯৭৫ সালে সংবাদ ছেড়ে ইত্তেফাকে যোগদান দেন। এরপর ইত্তেফাকও ছবিটি প্রতি বছর প্রকাশ করে। অনেক দিন এ ছবির নেপথ্য ঘটনার অনুসন্ধান হয়নি। কোনো পত্রিকায় ছবিটি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন, ফিচার, প্রবন্ধ-নিবন্ধও লেখা হয়নি। রশীদ তালুকদারও এই ছবি সম্পর্কে কোথাও কিছু লিখে যাননি। দীর্ঘ ৫৪ বছর শিশুটির কথা অজানাই রয়ে গেছে। খোঁজ মেলেনি বলে সবাই ধরে নিয়েছে শিশুটি সেদিন বুলেটবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী তার ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে শিশুটির পরিচয় তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, মিছিলের অগ্রভাগে থাকা শিশুটির নাম মো. হোসেন আলী। সেই সূত্রেই পাওয়া যায় হোসেন আলীর খোঁজ।
হোসেন আলীর কথা : ৬৪ বছর বয়সী হোসেন আলী বলেছেন, মিছিলের অগ্রভাগে থাকা শিশুটি তিনিই। তার বক্তব্য, ‘ঊনসত্তরে আমার বয়স আছিল দশ বছর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমারে ডাকতেন পালোয়ান বইলা। ওই দিন জগন্নাথ কলেজের দিক থাইক্যা ছাত্রলীগের একটা মিছিল আইতেছিল। আমি তখন ফুলবাড়িয়া ইস্টিশনে থাকি। “জেলের তালা ভাঙবো, মুজিব ভাইকে আনবো” স্লোগান শুইন্যা আমিও যোগ দিলাম ওই মিছিলে। মিছিলে আমার মতো কয়েকটি শিশুও আছিল। রেগওলা (স্ট্রাইপ) হাফশার্ট গায়ে ছেলেডা আমার পেছনে আছিল। মিছিল পলাশী ব্যারাক হইয়া শাহবাগের দিকে আইলো। আমি কিন্তু মিছিলের সামনে। গরমে ঘামাইয়া গেছি। তাই গেঞ্জিটা খুইলা কোমরে বাঁধলাম। শাহবাগের সামনে আইসা দেখি, রেডিও অফিসের সামনে ইপিআর পজিশন লইয়া আছে। দুইবার মাইকিং করছে “চল যাও, চল যাও”। কে কার কথা শুনে? আমি জয় বাংলা বলে স্লোগান দিচ্ছি। তিন-চারজন ছবি তুলতাছে। তিনবার বলার পর দেখি বন্দুক রেডি করতাছে। সাথে সাথে একটা গুলির আওয়াজ পাইলাম। দৌড়াইয়া তারের ঘের দেওয়া রেসকোর্স ময়দানে ঢুকলাম। এরপর মন্দির, হাইকোর্ট, সেক্রেটারিয়েট হয়ে জিন্নাহ অ্যাভিনিউর রুচিতা হোটেলে আইলাম। কাঙালি হিসেবে আমারে তখন জিন্নাহ অ্যাভিনিউর অনেকে চিনতো। একদিন কয়েকজন আমারে পত্রিকার ছবি দেখাইয়া কইলো ‘তোরে তো পাঞ্জাবিরা মাইরালাইবো।’
হোসেন আলী বলেন, ‘আমি বহুদিন বহু লোকরে কইছি ওই শিশুটা আমি। আমি তো কাঙাল মানুষ, তাই আমার কথা কেউ শোনে না, পাত্তা দেয় না। আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, বঙ্গবন্ধুর বডিগার্ড মহিউদ্দীন ভাই তো এখনো বাঁইচা আছে। আমারে তাগো কাছে লইয়া যান।’ বুকে একটা কালো দাগ দেখিয়ে বললেন, ‘আসল ছবিটার সঙ্গে মিলাইয়া দ্যাখেন। সবকিছু পরিষ্কার হইয়া যাইবো।’ হোসেন আলীর ছেলে উজ্জ্বল হোসেন বাবু বলেন, ‘ছোটবেলা বেলা থেকে বাবার মুখে এই কথা শুনে শুনে বড় হয়েছি। বাবার চুলের শেপটা দেখেন, মিল পাবেন।’
হোসেন আলীর গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার চান্দেরকান্দিতে। মফিজ উদ্দিন ও ফাতেমা বেগমের একমাত্র সন্তান তিনি। পথশিশু পরিচয়ে শৈশব কাটে ফুলবাড়িয়া টার্মিনালে। মুক্তিযুদ্ধের সময় থাকতেন আওয়ামী লীগ অফিসের নিচে। ৭৭ সালে ২২ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে শুরু করেন টোকানো কাগজের ব্যবসা। আটাশির বন্যায় দোকান তলিয়ে গেলে আবার নিঃস্ব হয়ে পড়েন। অনেক দিন রিকশা চালিয়েছেন। এখন আট হাজার টাকা বেতনে নৈশপ্রহরীর চাকরি নিয়েছেন। তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বেকার ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন মান্ডার কদমতলী এলাকার ঝিলপাড়ে।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে : ছবিটি কেমন করে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সেই গল্প বলেন ভারতের পদ্মশ্রী খেতাবপ্রাপ্ত আলোকচিত্রী টি কাশীনাথ। বাহাত্তরে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান ফেয়ারে অংশ নেয় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের ছবির নেগেটিভগুলো ফটোসাংবাদিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে দিল্লিতে যান ফটোসাংবাদিক মোহাম্মদ জহিরুল হক। বঙ্গবন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে একটি চিঠি লিখে দেন। জহিরুল হক সেই চিঠি পৌঁছান ভারতের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রীর হাতে। তথ্যমন্ত্রী ফটোগ্রাফি বিভাগের পরিচালক টি কাশীনাথকে ডেকে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করতে বলেন। কাশীনাথের তত্ত্বাবধানে ২০ ফুট বাই ৩০ ফুট সাইজে ছবিগুলো পরিবর্ধিত (এনলার্জ) করা হয়। রশীদ তালুকদারের তোলা ঊনসত্তরের পথশিশুর ছবি ও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ছবিটি প্রদর্শন করা হয় স্টলের প্রবেশমুখে। ছবি দুটি দেখার জন্য মেলায় আসা লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ে। বাংলাদেশের স্টলের সামনের ভিড় সরাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করতেও বাধ্য হয়। বাংলাদেশের শিল্পকলার এই চমকপদ তথ্যটি অনেক দিন এ দেশের মানুষের অজানা ছিল। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) রিসোর্স পারসন হিসেবে টি কাশীনাথ বাংলাদেশে এসে এ গল্পটি করেন।
নীরব অভিমান : ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোতে প্রথিতযশা আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদারের তোলা ছবিগুলো আমাদের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। ১৯৫৯ সালে রশীদ তালুকদারের কর্মজীবন শুরু। বাষট্টিতে দৈনিক সংবাদে আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করার আগে তিন বছর ৮০ টাকা বেতনে ফটো টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন পিআইডিতে। সংবাদে কাজ করেছেন টানা ১৩ বছর। এরপর তিনি যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে। বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার ঘটনা প্রভৃতির অসংখ্য ছবি তুলে স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির অল রোভস প্রোগ্রামে প্রতি বছর বিশ্বের একজন সেরা ফটোসাংবাদিককে পাইওনিয়ার ফটোগ্রাফার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। ২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এ পদক পান রশীদ তালুকদার। তার তোলা ছবি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া এনসাইক্লোপিডিয়ায় যুক্ত হয়েছে। এত কিছুর পরও আমাদের রাষ্ট্র তাকে ঠিক বুঝে উঠতে সক্ষম হয়নি। রাষ্ট্রের অন্যমনস্কতায় নীরব অভিমানে ২০১১ সালের ২৫ অক্টোবর ৭২ বছর বয়সে পরলোকে চলে গেলেন বাংলাদেশের ইতিহাস নির্মাণকালের এই রূপকার।
লেখক : দেশ রূপান্তরের আলোকচিত্র সম্পাদক
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে গড়ে উঠছে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর। এই সমুদ্রবন্দরে প্রবেশ করতে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ নীল পানির চ্যানেল (জাহাজ চলাচলের পথ) দেখে মনে হবে যেন উন্নত কোনো দেশের বন্দর। এই নীল জলরাশির তীরেই গড়ে উঠবে উপমহাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর। কিন্তু এই নীল পানি দেখে আশাবাদী হওয়ার বদলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের (চবক) কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। যার কারণ হলো কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত চ্যানেলের জন্য খরচ হওয়া প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার দায় পড়তে যাচ্ছে চবকের কাঁধে।
গত রবিবার মাতারবাড়ী ঘুরে দেখা যায়, ৩৫০ মিটার চওড়া ও ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল নির্মাণের কাজ শেষ। কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় জেটি নির্মাণও হয়ে গেছে, সেই জেটিতে ইতিমধ্যে ১১২টি জাহাজ ভিড়েছেও। কিন্তু চ্যানেলের জন্য চবককে পরিশোধ করতে হবে ৯ হাজার ৩৫০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ঋণ হিসেবে রয়েছে ৭ হাজার ৯২২ কোটি ১৬ লাখ এবং বাংলাদেশ সরকারের ১ হাজার ৪২৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এই টাকা কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় খরচ করা হয়েছিল। আর কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্যই চ্যানেলটি নির্মাণ হয়েছিল। এখন যেহেতু এই চ্যানেলকে ব্যবহার করে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে উঠছে, তাই তা নির্মাণের সব খরচ চবককে পরিশোধ করতে হবে বলে গত ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবকে প্রধান করে একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়, যে কমিটি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাছ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের কাছে চ্যানেলটি ও তা নির্মাণের ব্যয় হস্তান্তরের পদ্ধতি নির্ধারণ করবে।
কিন্তু এই টাকা পরিশোধ নিয়ে বিপাকে পড়েছে চবক। এ বিষয়ে বন্দর কর্র্তৃপক্ষের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এই সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার মধ্যে জাইকার ৭ হাজার ৯২২ কোটি ১৬ লাখ ঋণের পরিশোধ শুরু হবে আগামী বছর থেকে। সেই হিসাবে প্রথম বছরে পরিশোধ করতে হবে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা এবং পরবর্তী বছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। শুধু কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় ঋণ নয়, মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণের জন্য জাইকা থেকে ৬ হাজার ৭৪২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে চবক। এই টাকার বিপরীতে ২০২৯ সালে জাইকাকে দিতে হবে ১ হাজার ৮১৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা, পরে প্রতি বছর ঋণ ও সুদ বাবদ দিতে হবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া মাতারবাড়ী বন্দরের ড্রেজিং বাবদ বছরে খরচ হবে প্রায় ৫০ কোটি এবং এই বন্দর পরিচালনায় প্রতি বছর ভর্তুকি দিতে হবে প্রায় ৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে শুধু ঋণ শোধ বাবদ চবককে পরিশোধ করতে হবে ৪ হাজার ৪২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে আগামী বছর লাগবে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। বাকি টাকা পর্যায়ক্রমে ২০২৬ সাল থেকে প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া বে টার্মিনালের ব্রেক ওয়াটার ও চ্যানেল নির্মাণের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে চবক। অন্যদিকে চবকের বার্ষিক গড় আয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। তাহলে চবক এত টাকা কীভাবে পরিশোধ করবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
চবকের দাবি, চ্যানেল নির্মাণের খরচ যাতে তাদের কাঁধে দেওয়া না হয়। কিন্তু এই টাকা পরিশোধ করতে হবে বলে জানিয়েছেন কয়লাবিদ্যুৎ (কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড সিপিজিসিবিএল) প্রকল্পের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। এ প্রসঙ্গে তিনি গতকাল সোমবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই চ্যানেল কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নিমির্ত হয়েছে। এখন যেহেতু বন্দর কর্র্তৃপক্ষ চ্যানেল ব্যবহার করবে, তাহলে তো তাদের টাকা দিতেই হবে। আর এই টাকা তো ৪০ বছরে পরিশোধ করতে হবে।’
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। জাইকার অর্থায়নে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে মাতারবাড়ী পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ, ১৬ মিটার ড্রাফট (গভীরতা) এবং ২৫০ মিটার চওড়া চ্যানেল নির্মাণ হয় বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায়। কয়লাবিদ্যুতের চ্যানেলের ওপর ভিত্তি করে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলা যায় বলে জাইকা একটি প্রস্তাবনা দেয়। সেই প্রস্তাবনা ও পরে সমীক্ষার পর ‘মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয়। আর এরই আওতায় চ্যানেলের প্রশস্ততা ১০০ মিটার বাড়ানোর পাশাপাশি গভীরতাও ১৮ মিটারে উন্নীত করা হয়। এ জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষ ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ ১৩ হাজার টাকার বাজেট একনেক থেকে অনুমোদন করে। এর মধ্যে জাইকার ঋণ ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ ৫ হাজার টাকা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের (নিজস্ব তহবিল) ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা এবং বাংলাদেশ সরকারের ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। মাতারবাড়ীতে ৩৫০ মিটার দীর্ঘ ও ১৬ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের গভীরতা) জাহাজ ভিড়তে পারবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে ২০০ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে। মাতারবাড়ী চালু হলে এর সঙ্গে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রাবন্দরের নেটওয়ার্ক আরও বাড়বে। ফলে গভীর সমুদ্রবন্দরের অভাব পূরণ করবে মাতারবাড়ী বন্দর।
আর কখনো রাজনীতিতে জড়াবে না হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। মুচলেকা দিয়ে এ কথা বলেছে তারা। সংগঠনটির নেতারা আরও বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক দলের অংশও হবেন না তারা। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রকাশ্য বা গোপন কোনো সম্পর্কেই জড়াবে না হেফাজতে ইসলাম।
হেফাজতে ইসলাম বেশ কিছু শর্তও দিয়েছে। শর্তে তারা বলেছে, হেফাজত নেতা মামুনুল হকসহ যেসব নেতা কারাবন্দি রয়েছেন তাদের সবাইকে ছেড়ে দিতে হবে এবং মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। আওয়ামী লীগ ও হেফাজতে ইসলাম গত বছর ১৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে এ মুচলেকা দেয় এবং এসব শর্ত বা দাবি জানায়।
আগে হেফাজত নেতারা তিন মন্ত্রীর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেন। তারপর দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে মুচলেকা দেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা হেফাজতের মুচলেকা দেওয়ার কথা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন। সরকারের সহযোগী হিসেবে থাকার অঙ্গীকার করেছে হেফাজত।
১৪ দলের অন্যতম শরিক তরিকত ফেডারেশনের নেতা নজিবুল বশর মাইজভা-ারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, হেফাজতে ইসলামের চেয়ারম্যান তাকে জানিয়েছেন তারা কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়; তারা রাজনীতি করবে না। কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে তারা জোটবদ্ধও হবে না।
হেফাজতে ইসলাম আরও কিছু শর্ত দিয়েছে, যেমন কাদিয়ানি সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে এবং বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর বৃহত্তম বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশকে (বেফাক) সরকারি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে থেকে হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও তাদের মুক্তির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে মামুনুল হক এবং আরও কয়েকজনকে এখনই মুক্তি দেওয়া সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে সরকারি মহল। একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মামুনুলকে ছাড়তে হবে, যা সময়সাপেক্ষ।
সূত্রে আরও জানা গেছে, কাদিয়ানি সম্প্রদায় বিষয়ে হেফাজতের দাবি আপাতত আমলে নেওয়া হয়নি। কারণ, তাদের অমুসলিম ঘোষণা করা হলে বিদেশি চাপ আসবে। যে চাপ সামলানো প্রায় অসম্ভব। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন ঝামেলায় জড়ানো যাবে না বলে হেফাজত নেতাদের বলা হয়েছে। বেফাক ইস্যুতেও আপাতত কোনো উদ্যোগ নিতে চায় না সরকার। বেফাককে সরকারি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি মানাও আপাতত অসম্ভব, জানিয়েছে সরকার। তবে হেফাজত নেতাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, অন্য শর্তগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে আরও বৈঠক হবে।
হেফাজত নেতাদের বলা হয়েছে, ধর্মীয় বিভিন্ন অপপ্রচার চলছে সরকারের বিরুদ্ধে; এসব ব্যাপারে কথা বলতে হবে তাদের। জামায়াতবিরোধী অবস্থান নিয়ে কাজ করতে হবে হেফাজতকে। হেফাজত নেতারা বলেছেন, জামায়াত ইস্যুতে তারা কোনো ছাড় দেবে না। জামায়াতকে তারা ইসলামের ধারক-বাহক মনে করে না।
বলা যায়, হেফাজতের সঙ্গে সরকারের রাজনৈতিক বোঝাপড়া হয়েছে। এটা একটা ‘পলিটিক্যাল ডিল অর আন্ডারস্ট্যান্ডিং’। জানা গেছে, এ সমঝোতার ভিত্তিতেই হেফাজতের বিরুদ্ধে ২০৩টি মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে এবং নেতারা জামিন পেতে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে পুলিশকে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। হেফাজত ইসলামী বাংলাদেশের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে সরকার।
২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় এখনো তদন্ত হচ্ছে ২০৩টি মামলার। অনেক দিন ধরেই তদন্ত হচ্ছে। কিন্তু সুরাহা করতে পারছে না তদন্তকারী সংস্থাগুলো। হেফাজত নেতাকর্মীদের অনেকে কারাগারেও আছেন। তবে বেশিরভাগ আসামি প্রকাশ্যে চলাফেরা করছেন।
পুলিশের পাশাপাশি হেফাজত নেতারা মামলাগুলো নিয়ে ত্যক্ত-বিরক্ত। তারা এগুলোর নিষ্পত্তি চান। এ নিয়ে কয়েক দফা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন হেফাজত নেতারা। সর্বশেষ গত ১৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে হয়েছে। বৈঠকে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির অনুরোধ জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীও তাদের অনুরোধ বিবেচনায় নিয়ে সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
সরকারের নির্দেশনা পেয়ে পুলিশও কাজ শুরু করে দিয়েছে। গত এক মাসে অন্তত ১০ জন নেতা জামিন পেয়েছেন। তারা যেকোনো সময় কারামুক্ত হবেন। তবে মামুনুল হক আপাতত মুক্ত হচ্ছেন না।
হেফাজত নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর তারা আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারাও ‘সবুজ সংকেত’ দিয়েছেন। তারা বলেন, এসবের জন্যই সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় গিয়েছি আমরা। তবে সমঝোতার কথা সবিস্তারে প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, হেফাজতের মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে মৌখিক নির্দেশনা পাওয়া গেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করার পরিকল্পনা আছে আমাদের। হেফাজত নেতারা সরকারের অঙ্গীকার করেছে, তারা রাজনৈতিক কর্মকা- চালাবেন না। শুধু ইসলাম নিয়ে কথা বলবেন। জামায়াতে ইসলামীর কর্মকা-ের সমালেচনাও করবে বলে সরকারের নীতিনির্ধারকদের আশ্বস্ত করেছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি।
নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন তদন্তকারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পুলিশ সদর দপ্তর নির্দেশনা এসেছে। আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। মামলাগুলোর অনেক আসামি জামিনে আছে, কেউ কেউ জামিন ছাড়াই প্রকাশ্যে ঘুরছে। দীর্ঘদিন ধরে মামলাগুলোর নিষ্পত্তি না হওয়ায় সমালোচনাও হচ্ছে সবখানে। এগুলোর দ্রুত সুরাহা চাচ্ছি আমরাও।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, ২০১৩ সালে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন চলাকালে কথিত নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছিল হেফাজতে ইসলাম। ওই বছরের ৫ মে ঢাকার ছয়টি প্রবেশমুখে অবরোধ করে তারা। একপর্যায়ে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়। সে সময় হেফাজতের বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থকের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। তারা রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে যানবাহন ভাঙচুর করে এবং বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয়। সহিংসতায় হতাহতের ঘটনাও ঘটে।
২০২১ সালের মার্চ মাসে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসেন। তার সফরের বিরোধিতা করে মাঠে নামে হেফাজতে ইসলাম। ২৬ মার্চ রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকায় বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় তাদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। সংঘর্ষে ১৯ জনের মৃত্যু হয় এবং পুলিশসহ সহস্রাধিক হেফাজত নেতাকর্মী আহত হয়। হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয় সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায়। এসব ঘটনায় সারা দেশে ১৫৪টি মামলা হয়। ওইসব মামলার কোনোটাতেই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি।
হেফাজত ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মাসখানেক আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। বৈঠকে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় সবাই ছিলেন। বৈঠকে আমরা বলেছি, আমরা কোনো ধরনের রাজনীতি করি না। ইসলাম নিয়ে কাজ করি। একটি মহল আমাদের নামে অপবাদ দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি, আমরা রাজনীতি করছি না, আর করবও না।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশ রূপান্তরকে বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে। আমরাও চাচ্ছি মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হোক। হেফাজতের কেন্দ্রীয় এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারপ্রধানের সঙ্গে আমরা গত ১৭ ডিসেম্বর বৈঠক করেছি। তাতে সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহিয়ার নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। প্রায় ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট বৈঠক হয়েছে। অনেক কথা হয়েছে। আমাদের শর্তও তাকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, সমঝোতা ছাড়া কোনো কিছুরই সমাধান হয় না। আমরা চাই না সরকারের সঙ্গে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হোক। আমরা কথা বলেছি। সরকারপ্রধান ইতিবাচক হিসেবে বিষয়টি আমলে নিয়েছেন।
রাজপথে খালি পায়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে স্লোগান দিচ্ছে এক পথশিশু। পেছনে বিক্ষুব্ধ মিছিল। শিশুটির পরনে চার পকেটের হাফপ্যান্ট; গেঞ্জিটা কোমরে বাঁধা। কণ্ঠে স্বৈরতন্ত্রের কবর রচনার হুঙ্কার। দৃঢ় চোয়ালে অগ্নিস্পর্ধী সাহসিকতার বহিঃপ্রকাশ। পাঁজরগুলো যেন শরীরের ভেতর থেকে তীরের ফলার মতো বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। মিছিলের অগ্রভাগে থাকা অপ্রতিরোধ্য শিশুটি সেদিন সবার নজর কাড়ে। ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি সকালে বাংলাদেশের স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনের এ প্রতিবাদী মুহূর্তটি ক্যামেরায় বন্দি করেছিলেন প্রথিতযশা আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদার।
সেই সময়ে দৈনিক সংবাদের নিজস্ব সংবাদচিত্রী ছিলেন তিনি। ছবিটি ফ্রেমবন্দি করে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি ইতিহাসের মূর্ত সাক্ষীর আলোকচিত্রী। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের আইকনিক আলোকচিত্র হিসেবে ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠে এ ছবি। ছবিটি আমাদের সংগ্রামী অতীতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এর কেন্দ্রীয় চরিত্র শিশুটির চোখ-মুখের ভাষা মানুষকে মনে করিয়ে দেয় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের কথা। ছবিটির দৃশ্য-ভাষা এতই শক্তিশালী যে, এখনো মানুষের মনে শিহরন জাগায়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আহ্বান জানায়।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট : ছাত্রসমাজের ১১ দফা মুক্তিসনদকে সামনে নিয়ে ঊনসত্তরের ২০ জানুয়ারি দাবানলের মতো জ্বলে উঠে পূর্ব বাংলা ও তার রাজধানী ঢাকা। এর ধারাবাহিকতায় ২৪ জানুয়ারি কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে ঢাকার রাজপথে নামে জনতার ঢল। বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালাকেও ম্লান করে দেয় সেদিনের জনসমুদ্রের বিক্ষুব্ধ ঊর্মিদল। অধিকার-সচেতন জনতার হুঙ্কারে কেঁপে ওঠে অত্যাচারীর আসন। সেই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য গর্জে উঠে স্বৈরাচারের বন্দুক। বুলেটের আঘাতে রাজপথে ঝরে পড়ে কয়েকটি প্রাণ। শহীদের লাশ নিয়ে রাজপথে মিছিলের ঢল নামে। রাত ৮টায় কারফিউ জারির মাধ্যমে জনতাকে নিবৃত্ত করার সর্বশেষ প্রয়াসকে ব্যর্থ করে দিয়ে রাতের নৈঃশব্দ্যকে প্রকম্পিত করে মুক্তিপাগল জনতা। এর কয়েক দিন পর জনতার অদম্য আন্দোলনের মুখে অত্যাচারী সরকারকে পালাতে হয়। সমাধি রচিত হয় আইয়ুব-মোনায়েমের রাজত্বের।
সেদিন ছিল আধাবেলা হরতাল। ঢাকায় সেক্রেটারিয়েটের ভেতর থেকে পুলিশ দুই দফা গুলিবর্ষণ করে। প্রথম দফা গুলিবর্ষণ সকাল ১১টা ৫ মিনিটে। দুপুরে দ্বিতীয় দফা। গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় নবকুমার ইনস্টিটিউশনের নবম শ্রেণির ছাত্র মতিউর রহমান মল্লিক ও নোয়াখালীর নান্দিয়াপাড়া হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সৈয়দ রুস্তম আলী। প্রেস ট্রাস্ট অফিসের সামনে পুলিশের গুলিতে আরও একজন নিহত হয়। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ-ইপিআরের গুলিবর্ষণ ও লাঠিচার্জে আহত হয় ২১ জন। পরদিন সব দৈনিক পত্রিকা হতাহতদের নাম, বাবার নাম, বয়স, পেশা, কার-কোথায় গুলি লেগেছে, কীভাবে ঘটনা ঘটেছে তার বিস্তারিত বিবরণ ছাপায়। বেশিরভাগ পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় শহীদ মতিউর ও রুস্তমের মৃত মুখের ছবি ছাপা হয়। সেদিন কোনো পত্রিকায় কোনো পথশিশুর মৃত্যুর খবর ছাপা হয়নি।
আইকনিক ফটো : রশীদ তালুকদারের তোলা পথশিশুর ছবিটি প্রথম ছাপা হয় ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি দৈনিক সংবাদের বিশেষ ক্রোড়পত্রে। এরপর থেকে প্রতি বছর ২৪ জানুয়ারি ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক ঘটনার লেখনীর সঙ্গে ছবিটি দৈনিক সংবাদ প্রকাশ করে। রশীদ তালুকদার ১৯৭৫ সালে সংবাদ ছেড়ে ইত্তেফাকে যোগদান দেন। এরপর ইত্তেফাকও ছবিটি প্রতি বছর প্রকাশ করে। অনেক দিন এ ছবির নেপথ্য ঘটনার অনুসন্ধান হয়নি। কোনো পত্রিকায় ছবিটি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন, ফিচার, প্রবন্ধ-নিবন্ধও লেখা হয়নি। রশীদ তালুকদারও এই ছবি সম্পর্কে কোথাও কিছু লিখে যাননি। দীর্ঘ ৫৪ বছর শিশুটির কথা অজানাই রয়ে গেছে। খোঁজ মেলেনি বলে সবাই ধরে নিয়েছে শিশুটি সেদিন বুলেটবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী তার ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে শিশুটির পরিচয় তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, মিছিলের অগ্রভাগে থাকা শিশুটির নাম মো. হোসেন আলী। সেই সূত্রেই পাওয়া যায় হোসেন আলীর খোঁজ।
হোসেন আলীর কথা : ৬৪ বছর বয়সী হোসেন আলী বলেছেন, মিছিলের অগ্রভাগে থাকা শিশুটি তিনিই। তার বক্তব্য, ‘ঊনসত্তরে আমার বয়স আছিল দশ বছর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমারে ডাকতেন পালোয়ান বইলা। ওই দিন জগন্নাথ কলেজের দিক থাইক্যা ছাত্রলীগের একটা মিছিল আইতেছিল। আমি তখন ফুলবাড়িয়া ইস্টিশনে থাকি। “জেলের তালা ভাঙবো, মুজিব ভাইকে আনবো” স্লোগান শুইন্যা আমিও যোগ দিলাম ওই মিছিলে। মিছিলে আমার মতো কয়েকটি শিশুও আছিল। রেগওলা (স্ট্রাইপ) হাফশার্ট গায়ে ছেলেডা আমার পেছনে আছিল। মিছিল পলাশী ব্যারাক হইয়া শাহবাগের দিকে আইলো। আমি কিন্তু মিছিলের সামনে। গরমে ঘামাইয়া গেছি। তাই গেঞ্জিটা খুইলা কোমরে বাঁধলাম। শাহবাগের সামনে আইসা দেখি, রেডিও অফিসের সামনে ইপিআর পজিশন লইয়া আছে। দুইবার মাইকিং করছে “চল যাও, চল যাও”। কে কার কথা শুনে? আমি জয় বাংলা বলে স্লোগান দিচ্ছি। তিন-চারজন ছবি তুলতাছে। তিনবার বলার পর দেখি বন্দুক রেডি করতাছে। সাথে সাথে একটা গুলির আওয়াজ পাইলাম। দৌড়াইয়া তারের ঘের দেওয়া রেসকোর্স ময়দানে ঢুকলাম। এরপর মন্দির, হাইকোর্ট, সেক্রেটারিয়েট হয়ে জিন্নাহ অ্যাভিনিউর রুচিতা হোটেলে আইলাম। কাঙালি হিসেবে আমারে তখন জিন্নাহ অ্যাভিনিউর অনেকে চিনতো। একদিন কয়েকজন আমারে পত্রিকার ছবি দেখাইয়া কইলো ‘তোরে তো পাঞ্জাবিরা মাইরালাইবো।’
হোসেন আলী বলেন, ‘আমি বহুদিন বহু লোকরে কইছি ওই শিশুটা আমি। আমি তো কাঙাল মানুষ, তাই আমার কথা কেউ শোনে না, পাত্তা দেয় না। আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, বঙ্গবন্ধুর বডিগার্ড মহিউদ্দীন ভাই তো এখনো বাঁইচা আছে। আমারে তাগো কাছে লইয়া যান।’ বুকে একটা কালো দাগ দেখিয়ে বললেন, ‘আসল ছবিটার সঙ্গে মিলাইয়া দ্যাখেন। সবকিছু পরিষ্কার হইয়া যাইবো।’ হোসেন আলীর ছেলে উজ্জ্বল হোসেন বাবু বলেন, ‘ছোটবেলা বেলা থেকে বাবার মুখে এই কথা শুনে শুনে বড় হয়েছি। বাবার চুলের শেপটা দেখেন, মিল পাবেন।’
হোসেন আলীর গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার চান্দেরকান্দিতে। মফিজ উদ্দিন ও ফাতেমা বেগমের একমাত্র সন্তান তিনি। পথশিশু পরিচয়ে শৈশব কাটে ফুলবাড়িয়া টার্মিনালে। মুক্তিযুদ্ধের সময় থাকতেন আওয়ামী লীগ অফিসের নিচে। ৭৭ সালে ২২ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে শুরু করেন টোকানো কাগজের ব্যবসা। আটাশির বন্যায় দোকান তলিয়ে গেলে আবার নিঃস্ব হয়ে পড়েন। অনেক দিন রিকশা চালিয়েছেন। এখন আট হাজার টাকা বেতনে নৈশপ্রহরীর চাকরি নিয়েছেন। তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বেকার ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন মান্ডার কদমতলী এলাকার ঝিলপাড়ে।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে : ছবিটি কেমন করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সেই গল্প বলেন ভারতের পদ্মশ্রী খেতাবপ্রাপ্ত আলোকচিত্রী টি কাশীনাথ। বাহাত্তরে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান ফেয়ারে অংশ নেয় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের ছবির নেগেটিভগুলো ফটোসাংবাদিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে দিল্লিতে যান ফটোসাংবাদিক মোহাম্মদ জহিরুল হক। বঙ্গবন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে একটি চিঠি লিখে দেন। জহিরুল হক সেই চিঠি পৌঁছান ভারতের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রীর হাতে। তথ্যমন্ত্রী ফটোগ্রাফি বিভাগের পরিচালক টি কাশীনাথকে ডেকে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করতে বলেন। কাশীনাথের তত্ত্বাবধানে ২০ ফুট বাই ৩০ ফুট সাইজে ছবিগুলো পরিবর্ধিত (এনলার্জ) করা হয়। রশীদ তালুকদারের তোলা ঊনসত্তরের পথশিশুর ছবি ও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ছবিটি প্রদর্শন করা হয় স্টলের প্রবেশমুখে। ছবি দুটি দেখার জন্য মেলায় আসা লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ে। বাংলাদেশের স্টলের সামনের ভিড় সরাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করতেও বাধ্য হয়। বাংলাদেশের শিল্পকলার এই চমকপদ তথ্যটি অনেক দিন এ দেশের মানুষের অজানা ছিল। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) রিসোর্স পারসন হিসেবে টি কাশীনাথ বাংলাদেশে এসে এ গল্পটি করেন।
নীরব অভিমান : ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোতে প্রথিতযশা আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদারের তোলা ছবিগুলো আমাদের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। ১৯৫৯ সালে রশীদ তালুকদারের কর্মজীবন শুরু। বাষট্টিতে দৈনিক সংবাদে আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করার আগে তিন বছর ৮০ টাকা বেতনে ফটো টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন পিআইডিতে। সংবাদে কাজ করেছেন টানা ১৩ বছর। এরপর তিনি যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে। বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার ঘটনা প্রভৃতির অসংখ্য ছবি তুলে স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির অল রোভস প্রোগ্রামে প্রতি বছর বিশ্বের একজন সেরা ফটোসাংবাদিককে পাইওনিয়ার ফটোগ্রাফার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। ২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এ পদক পান রশীদ তালুকদার। তার তোলা ছবি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া এনসাইক্লোপিডিয়ায় যুক্ত হয়েছে। এত কিছুর পরও আমাদের রাষ্ট্র তাকে ঠিক বুঝে উঠতে সক্ষম হয়নি। রাষ্ট্রের অন্যমনস্কতায় নীরব অভিমানে ২০১১ সালের ২৫ অক্টোবর ৭২ বছর বয়সে পরলোকে চলে গেলেন বাংলাদেশের ইতিহাস নির্মাণকালের এই রূপকার।
লেখক : দেশ রূপান্তরের আলোকচিত্র সম্পাদক
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’