
বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে এবং এ কথা স্বীকার করছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন সংস্থাও। অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই আমদানি-রপ্তানিতে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে-কমিয়ে দেখানো হয়। সাধারণত উৎপাদনে থাকা কোম্পানিগুলো এমন পদ্ধতিতে অর্থ পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকে। কিন্তু এবার উৎপাদনে নেই এমন কোম্পানিও আমদানি-রপ্তানির আড়ালে বড় অঙ্কের অর্থ পাচার করেছে। সব মিলিয়ে ৮০৬টি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যের আড়ালে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক তদন্ত প্রতিবেদনে বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচারের এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রায় ছয় মাস থেকে যৌথভাবে তদন্ত পরিচালনা করেছে এনবিআরের কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, ভ্যাট নিরীক্ষা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত ১৭ সদস্যের টাস্কফোর্স কমিটি। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। আর্থিক অনিয়মে জড়িতদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চাওয়া হবে।
অর্থ পাচারে জড়িত অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান তৈরি পোশাকশিল্পসংশ্লিষ্ট। দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক থেকে। একইভাবে আমদানি ব্যয়ের বড় অংশও ব্যয় হয় এ খাতের প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল জোগানে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাঁচামাল আমদানিতে মূল্য বাড়িয়ে দেখিয়ে অর্থ পাচার করা হয়েছে।
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, একসময় উৎপাদনে থাকলেও দীর্ঘদিন থেকে ৮০৬ প্রতিষ্ঠানের একটিও উৎপাদনে নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহর করে ব্যবসায়ী নামধারী কিছু অসাধু ব্যক্তি ৪ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা পাচার করেছেন।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুর রউফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আর্থিক অনিয়ম করলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। আর্থিক অনিয়ম করেছে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে চিহ্নিত হয়েছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভালো-মন্দ সব ক্ষেত্রেই আছে। প্রকৃত ব্যবসায়ীরা আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দুর্নীতি করেন না। ব্যবসায়ী নামধারী ব্যক্তিরাই মিথ্যা তথ্য দিয়ে আর্থিক অনিয়ম করে থাকেন। তারাই প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সুনাম নষ্ট করেছেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে ওসাকা স্টিল লিমিটেড (১৬-কাস্ট-পিবিডব্লিউ-২০০১, সার্কেল ৪১), সিওয়েভ একসেসরিজ লিমিটেড (লাইসেন্স ৯৬৩-কাস্ট-পিবিডব্লিউ ২০১৪, সার্কেল ২), নিকিতা করপোরেশন লিমিটেড (৩৯৯-কাস্ট-এসডব্লিউবি ৯৬), টিজেএন্ডকো (১০৮-কাস্ট-এসবিডব্লিউ ৯১, সার্র্কেল ২৭), শামসুল আলামিন কটন মিল লিমিটেড (১২৮/কাস্ট-এসবিডব্লিউ ২০০১, সার্র্কেল ৪০), আদনান সোয়েটার লিমিটেড (২২২/ কাস্ট-এসবিডব্লিউ-২০০২, সার্কেল ১৬), ইউলি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড (১৭৬৮/ কাস্ট-এসবিডব্লিউ-৯৩, সার্কেল ৬), ভেনাস অ্যাপারেল লিমিটেড (৩২৫/ কাস্ট-এসবিডব্লিউ-২০০৩, সার্কেল ৬), উইনস গামেন্টস লিমিটেডসহ (১৬৩৬/কাস্ট-এসবিডব্লিউ-৯৩, সার্কেল ২৭) ৬০৩ প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ আছে।
এনবিআরের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে বলা যায়, আশির দশকে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা গতিশীল করতে বিনা শুল্কে কাঁচামাল আমদানির সুবিধা দেয় এনবিআর, যা বন্ড সুবিধা নামে পরিচিত। এই সুবিধা পাওয়ার শর্ত থাকে আমদানিকৃত পণ্যের সবটাই রপ্তানিকৃত পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার করতে হবে। খোলাবাজারে বিক্রি করা যাবে না। এসব শর্ত ভঙ্গ করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। আমদানিকারকের বিরুদ্ধে এনবিআর প্রয়োজনে ফৌজদরি মামলা করতে পারবে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স এবং বন্ড সুবিধা বাতিল করা হবে। কাঁচামালের ৮০৬ প্রতিষ্ঠানই এনবিআরের বন্ড সুবিধাপ্রাপ্তির তালিকায় আছে। এনবিআরের তদন্তে ধরা পড়ার পর শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করা হয়েছে।
বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি এবং তৈরি পোশাক খাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম মুর্শেদী দেশ রূপান্তরকে বলেন, রপ্তানি খাতকে গতিশীল করতে শুল্কমুক্ত সুবিধায় পণ্য আমদানির সুবিধা দিয়েছে সরকার। কিছু প্রতিষ্ঠান এ সুবিধা নিয়েও আর্থিক অনিয়ম করেছে বলে অভিযোগ আছে। তবে কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের একার পক্ষে শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে অর্থ পাচার করা সম্ভব নয়। অবশ্যই এ কাজে এনবিআর ও ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা জড়িত। তাই অসাধু ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অসাধু কর্মকর্তাদেরও দুষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
এনবিআরের তদন্ত কর্মকর্তারা সরেজমিনে ৮০৬ প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা অনুযায়ী গিয়ে দেখতে পেয়েছেন, কারখানার অবকাঠামো থাকলেও ২১৯টি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এবং ১১৭টি শুধু গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রধান ফটকে নিরাপত্তারক্ষী রয়েছে। তারা জানে না এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক কারা। মাস গেলে তাদের কাছে বেতন পৌঁছে যায়। বাকি ২৬৭টির ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায়, দোকানপাট ও ঘরবাড়ি করে ভোগদখল করে আছে। মাস গেলে কেউ এসে ভাড়া নিয়ে যায়। এনবিআরের তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব প্রতিষ্ঠানের জমির মালিকের সন্ধান করা হলে প্রত্যেকেই বলেছেন, একসময়ে উৎপাদনে থাকলেও দীর্ঘদিন থেকে কারখানা বন্ধ রেখেছেন। তারা জানেন না কে বা কারা তাদের কারখানার ঠিকানা ব্যবহার করে অনৈতিক কাজ করেছেন। ৮০৬ কারখানার প্রতিনিধিরা রপ্তানিকৃত পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার করার কথা জানিয়ে এনবিআর থেকে কাঁচামালের পরিমাণ উল্লেখ করে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানির অনুমতি নিয়েছে।
যে কাঁচামালের নাম উল্লেখ করা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে আনা হয়েছে তার চেয়ে নিম্নমানের কম দামি পণ্য। বিনিময়ে ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলে পণ্যের দাম হিসেবে বিদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে পাঠানো হয়েছে কয়েক গুণ বেশি পরিমাণ অর্থ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমদানিকারকরা বিদেশে নামসর্বস্ব কোম্পানি খুলে বছরের পর বছর এই প্রক্রিয়ায় অর্থ পাচার করে এসেছেন। ব্যবসায়ী নামধারী অসাধু ব্যক্তিরা আমদানিকৃত নি¤œমানের পণ্য বন্দর থেকে নিজস্ব প্রতিনিধি পাঠিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। এভাবেও তারা বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।
সারা দেশে প্রায় ৯ হাজার প্রতিষ্ঠান শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানির সরকারি সুবিধা পেয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় আছে প্রায় ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোকবলের অভাবে এনবিআর কর্মকর্তারা সরেজমিনে কারখানার অস্তিত্ব আছে কি না, তা যাচাই করতে পারেন না। তবে আগের ধারা থেকে বের হয়ে এনবিআর কাজ করছে। ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ অটোমেশনে যাচ্ছে এনবিআর। এতে আমদানি-রপ্তানিতে স্বচ্ছতা আসবে। অর্থ পাচারও কমবে।
এর আগে এনবিআরের তদন্তে দেখা গেছে, দেশ থেকে পাচারকৃত মোট অর্থের প্রায় ৮০ ভাগই আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাণিজ্যের আড়ালে পাচার হয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনেও বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত তথ্যের পরিসংখ্যান প্রকাশ পেয়েছে। ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ছয় বছরে বাংলাদেশ থেকে শুধু বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে ৫ হাজার কোটি ডলার পাচার হয়েছে। আর সুইস ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, সেখানে বাংলাদেশিদের জমা আছে প্রায় ৫ হাজার ২০৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি বলেছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে মোট ৮ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং ব্যাংকে তারল্য নিয়ে কোনো অপপ্রচারে কর্ণপাত না করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক উন্নত দেশ বিপদের মধ্যে থাকলেও বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল সোমবার মিরপুর সেনানিবাসের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স-২০২২ ও ‘আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স’-এর গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। অনেক উন্নত দেশ অর্থনৈতিকভাবে বিপদে এবং সমস্যার সম্মুখীন, তাদের রিজার্ভ কমছে। সে অবস্থায় আমরা বলতে পারি যে বাংলাদেশকে স্থিতিশীল অবস্থায় রাখতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য হচ্ছে যখনই দেশ একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যায় তখন সবার কাছে (স্বার্থান্বেষী মহল) এটা পছন্দ হয় না, এটা হলো বাস্তবতা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে প্রবৃদ্ধি ৯ ভাগে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর কভিডের আগে আওয়ামী লীগ তুলেছিল ৮ শতাংশের ওপরে। কিন্তু কভিড-১৯ ও এর পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে কেন্দ্র করে স্যাংশনে অনেক উন্নত দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
এ সময় নানা কথা বলে ভয়-ভীতি ছড়ানোর অপচেষ্টায় কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধকালীন এই সংকটে অনেক ধনী দেশ জ্বালানি সাশ্রয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমরাও নানা পদক্ষেপ নিই। অথচ জ্বালানি নিয়ে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে মানুষকে পক্ষে টানা হচ্ছে।’
দেশের অতীত ও বর্তমান রিজার্ভের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ’৯৬ সালে একুশ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় রিজার্ভ পেয়েছিল মাত্র ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তখন তার সরকার সেই রিজার্ভ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার যখন সরকার গঠন করে তখন রিজার্ভ পায় ৫ বিলিয়ন ডলার যেটাকে টানা সরকারে থাকায় তারা ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হয়।
তিনি বলেন, ‘করোনার সময় যাতায়াত ও আমদানি বন্ধ ছিল। এ জন্য রিজার্ভ জমে যায়। পরে সব চ্যানেল খুলে গেলে আমাদের আমদানিতে রিজার্ভ ব্যয় করতে হয়েছে। ভ্যাকসিন কেনা, টিকা গবেষণায় অর্থ দেওয়াসহ করোনা চিকিৎসার সরঞ্জাম ক্রয় করতে আমাদের অনেক টাকা লেগেছে। এগুলোর জন্য আমাদের ডলার খরচ হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন কেবলমাত্র ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা চলছে তখন তার সরকার ১২০০ কোটি টাকা খরচ করে ভ্যাকসিন আনার জন্য বুকিং দেয় এবং দেশের মানুষের জন্য ঝুঁকি নেয়। অথচ অনেক উন্নত দেশও বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেয়নি। সে সময় দেশের ব্যবসায়ীসহ সব শ্রেণিকে তার সরকার যে আর্থিক প্রণোদনা দেয় তাতেও অর্থ ব্যয় হয় এবং তৃণমূল পর্যায়ে অর্থ সরবরাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে। ফলে করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি অর্থনীতিও ধরে রাখতে সক্ষম হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ এবং স্যাংশনের কারণে ইতিমধ্যে আমদানি ব্যয় বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, যে গম এক সময় ২০০ ডলারে পাওয়া যেত তা এখন ৬০০ ডলারে কিনতে হচ্ছে। যে পরিবহন ব্যয় ৮০০ ডলার ছিল তা ৩৮০০ ডলারে গিয়ে ঠেকেছে। কিন্তু এখানে রিজার্ভ খরচ করতে হলেও তার সরকার দেশের জনগণের কথা বিবেচনা করে কোনো কার্পণ্য করেনি। পাশাপাশি সরকারের রপ্তানি এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধিতে তার সরকারের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বিলাসিতা পরিহার করে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশ ও সম্পদ আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। আমরা কারও কাছে হাত পেতে চলব না, নিজেরা ফসল উৎপাদন করব এবং নিজেদের দেশকে গড়ে তুলব। এই আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে চলতে পারলেই ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, কেউ রুখতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমার ও আমার পরিবারের সবার বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু প্রমাণ হয়েছে, এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম নিজের অর্থে পদ্মা সেতু করব। তখন অনেকে বলেছে, এটা কখনো সম্ভব নয়। অসম্ভবকে সম্ভব করাই বাঙালির চরিত্র। এটা আমরা করতে পারব এটা আমরা করেছি।’
যেকোনো দুর্যোগে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী মানুষের পাশে দাঁড়ায় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা এজন্য দেশে যেমন মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে তেমনি বিদেশের শান্তিরক্ষা মিশনে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ভূমিকা রাখছে।
এটা সবসময় মনে রাখতে হবে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী গড়ে উঠেছে। কাজেই আমাদের দেশের মান-মর্যাদা সবসময় সমুন্নত রাখা এবং তাদের পাশে থাকা ও সহযোগিতা করা সবচেয়ে বড় লক্ষ্য।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ২ কোটি ৫৩ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়ে থাকি। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ভূমিহীন ৩৫ লাখ মানুষকে ঘরবাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি।’ এ কাজে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর অবদান রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে সনদপ্রাপ্তদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি কোর্স পরিচালনাকারী সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী পরে মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্স, ডিএসসিএসসিতে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি) এবং ডিএসসিএসসি গভর্নিং বডির ১৯০০তম যৌথ সভায় যোগ দেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন এনডিসি ও ডিএসসিএসসির চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বাসস
চোট কাটিয়ে নেইমার ফিরেছেন। তাতে ব্রাজিলও ফিরেছে কক্ষপথে, ঠিক রাজার মতোই। ম্যাচের ১৩ মিনিটেই ভিনিসিয়ুস ও নেইমারের গোলে ২-০ লিড। ২৯ মিনিটে সেটা ৩-০ করেন রিচার্লিসন। আর ৩৬ মিনিটে লুকাস পাকেতার পায়ের ঝলকে হয় ৪-০। ব্রাজিলের আগ্রাসনে কোরিয়া শিবির তখন পুরোপুরি বিধ্বস্ত। সেই ঝড় কিছুটা থেমেছে দ্বিতীয়ার্ধে। আর সেভাবে গোলের জন্য ঝাঁপায়নি রুদ্রমূর্তি ধারণ করা ব্রাজিলের আক্রমণভাগ। তাই আর গোলও হয়নি। এক গোল পরিশোধ করে কোরিয়া হারের ব্যবধানটাই শুধু কমিয়েছে। প্রথমার্ধে ৪-০ লিডের পর এই ম্যাচে আর কীইবা বাকি থাকে? গতকাল দোহার স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ ৪-১ গোলের জয়ে ব্রাজিল কেটেছে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট। যেখানে তাদের জন্য আগে থেকেই অপেক্ষায় ছিল ক্রোয়েশিয়া। দিনের প্রথম ম্যাচে আরেক এশিয়ান জায়ান্ট জাপানকে টাইব্রেকারে ৩-১ গোলে হারিয়ে শেষ আট নিশ্চিত করে গত আসরের ফাইনালিস্টরা। ম্যাচটি নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে ড্র ছিল।
গোড়ালির চোট গ্রুপের শেষ দুই ম্যাচ খেলতে দেয়নি নেইমারকে। তবে সেরে উঠে এ ম্যাচের প্রায় পুরোটাই খেলেছেন। নেইমারকে পেয়ে সতীর্থরা যেমন উজ্জীবিত হয়েছেন, একইভাবে তার উপস্থিতি হলুদরঙা গ্যালারিতে এনে দিয়েছে স্বস্তির পরশ। তাই তো ম্যাচ শুরুর আগে থেকেই ব্রাজিল সমর্থকদের নেইমার, নেইমার স্লোগানে মুখরিত পুরো স্টেডিয়াম। এ ম্যাচে তৃতীয় গোলরক্ষক ও বেঞ্চে থাকা দুই ফুটবলারকে নামিয়ে দলে থাকা ২৬ খেলোয়াড়কেই মাঠে নামান তিতে। ইতিহাসে প্রথমবার কোন ফুটবল দল দলের সবাইকে বিশ^কাপ ম্যাচে রাখল। নাহ, নেইমার খুব বেশি কিছু করেননি। পেনাল্টি থেকে দলের হয়ে একটি গোলই করেছেন মাত্র। তবে তার উপস্থিতি ঠিক ম্যাজিকের মতো বদলে দিয়েছে পুরো দলকে। দুর্ভাগ্য কোরিয়ার। ব্রাজিল রাজসিক প্রত্যাবর্তনের গল্পটা লিখতে প্রতিপক্ষ হিসেবে বেছে নিয়েছে তাদেরই। ব্রাজিলেরও করার কিছু ছিল না। এ যে নকআউট পর্ব। এখানে দুর্বল প্রতিপক্ষ বলে দয়া-মায়ার সুযোগই নেই।
ক্যামেরুনের বিপক্ষে ৯টি পরিবর্তন এনে তিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে দলকে একটা বাজে অভিজ্ঞতার সামনে ফেলেছিলেন। তবে ব্রাজিল কোচ কাল কোনো পরীক্ষার পথে হাঁটেননি। ৪-২-৩-১ ফরমেশনে রিচার্লিসনকে নাম্বার নাইনে রেখে নেইমার, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ও রাফিনহাকে দেন আক্রমণের মূল দায়িত্ব। ঠিক পেছন থেকে পাকেতা আর কাসেমিরো দিয়েছেন সংগত। আর রক্ষণ সামলাতে এলিসনের সামনে রেখেছেন থিয়াগো সিলভা, দানিলো, এদের মিলিতাও ও মার্কুইনহোসকে।
শুরু থেকেই ঝাঁপানোর লক্ষ্য নিয়ে মাঠে আসা ব্রাজিলকে সপ্তম মিনিটে এগিয়ে নেন ভিনিসিয়ুস। ডানদিক দিয়ে রাফিনহার আড়াআড়ি পাস ধরে ঠান্ডা মাথায় দূরের পোস্টে বল জমা করেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা। ৬ মিনিট পর পেনাল্টি থেকে গোল করে ব্যবধান বাড়ান নেইমার। বক্সের ভেতরে রিচার্লিসনকে ফেলে দিয়েছিলেন কোরিয়ার এক ডিফেন্ডার। নেইমার সেই সুযোগটা ঠান্ডা মাথায় কাজে লাগিয়ে এই বিশ্বকাপে প্রথম ও সব আসর মিলিয়ে সপ্তম গোলের দেখা পান। দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৭ গোল করা পেলের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন ৩০ বছরের তারকা। আর এক গোল করলেই তিনি ছুঁয়ে ফেলবেন আইডলকে।
ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিল কোরিয়া। ১৭ মিনিটে হি চিনের জোরালো শট রুখে দেন ব্রাজিল কিপার এলিসন। ২৯ মিনিটে ৩-০ করেন রিচার্লিসন। আক্রমণের শুরুটা করেছিলেন নিজেই। অসামান্য স্কিলে পাকেতার কাছে বল বাড়িয়েই দ্রুত আক্রমণ ওঠেন। পাকেতার আড়াআড়ি পাস ডামি করে ছাড়েন কাসেমিরোর কাছে। ম্যানইউ তারকা সেটা এক টাচে রিচার্লিসনকে দিলে গোলের আনুষ্ঠানিকতা সারতে সময় নেননি টটেনহ্যাম স্ট্রাইকার। সার্বিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোল করা রিচার্লিসন পেয়ে যান আসরে তৃতীয় গোল। সাত মিনিট পর প্রতিআক্রমণ থেকে গোল করে উৎসবে যোগ দেন পাকেতা। নিজেদের অর্ধ থেকে দ্রুত বল নিয়ে রিচার্লিসন বাঁদিকে বাড়ান ভিনিসিয়ুসকে। বক্সে ঢুকে আলতো চিপে পাকেতার পায়ে বল তুলে দেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা। তাতে পাকেতার প্লেসিং রোখার সাধ্যি ছিল না কোরিয়া কিপার কিম সিউংয়ের। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে কোরিয়া কিপার দুটি দারুণ সুযোগ রুখে দিলে ব্রাজিলকে চার গোলের লিড নিয়েই বিরতিতে যেতে হয়।
বিরতি থেকে ফিরেই ব্যবধান কমানোর সুযোগ এসেছিল কোরিয়ার সামনে। তবে আক্রমণভাগের সতীর্থদের মতো কাল জ্বলে উঠেছিলেন ব্রাজিল কাস্টডিয়ান এলিসনও। সনের ডান পায়ের জোরালো শট এগিয়ে এসে হাত ছুঁইয়ে পোস্টে যেতে দেননি লিভারপুল কিপার। ওদিকে ব্রাজিলের আক্রমণের গতি খানিকটা শ্লথ হলেও বেশ কবার গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন রাইট উইঙ্গার রাফিনহা। তবে কিম সিউংয়ের দৃঢ়তায় আর গোল খায়নি কোরিয়া। বরং আক্রমণে উঠে তারা জোরচেষ্টা করেছে ব্যবধান কমানোর। ৬৮ মিনিটে এলিসনের অসামান্য কৃতিত্বে ব্রাজিলের গোলের দরজা খুলতে পারেননি হোয়াং ও সন। তবে ৭৬ মিনিটে বক্সের বেশ বাইরে থেকে বাঁ পায়ের জোরালো শটে হারের ব্যবধান কমান পাইক সিউং-হো।
এমন জয়ের পর ব্রাজিলের উদযাপনটা মাত্রা ছাড়ায়নি। হেক্সা জয়ের স্বপ্ন সত্যি করতে যে তাদের আরও তিন ম্যাচ জেতা বাকি। বরং নেইমার নিজে গ্যালারি থেকে পেলের ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড মাঠে এনে প্রিয় মানুষটাকে জানিয়েছেন শুভকামনা। সাও পাওলোর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পেলেকে জয়টাও উৎসর্গ করেছেন সেলেসাওরা।
ক্রোয়েশিয়ায় জাপানি সূর্যাস্ত : এই ক্রোয়েশিয়া লম্বা রেসের ঘোড়া। গত বিশ্বকাপে লম্বা দৌড়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েই ফাইনালে উঠেছিল তারা। শেষ পর্যন্ত শিরোপা আসেনি তবে তিনটি নকআউট ম্যাচের তিনটিতেই নির্ধারিত সময়ের বাইরে গিয়ে জিতেছিল ক্রোয়াটরা। এই একটি দিকেই ভয় ছিল এবারের উজ্জীবিত জাপানের। কাল সেই ভয়ই কাল হলো। ক্রোয়েশিয়ার কাছে পেনাল্টিতে ৩-১ গোলে হেরে বিশ্বকাপ থেকে অস্ত গেল জাপানি সূর্য। ক্রোয়েশিয়ান গোলকিপার ডমিনিক লিভাকোভিচের অতিমানবীয় পারফরম্যান্স এগিয়ে নিল ক্রোয়েশিয়াকে। পেনাল্টিতে পাঁচ শটের তিনটি রুখে দিয়েছেন এ গোলকিপার। নির্ধারিত সময়ে ১-১ ব্যবধানে ড্র ছিল ম্যাচ। গতবারের রানার্সআপদের বিপক্ষে এগিয়ে গিয়েও নিজেদের ইতিহাসে সেরা অর্জন পাওয়া হলো না জাপানের। বিশ্বকাপে শেষ ষোলোই ছিল জাপানের সেরা অর্জন। এবার প্রথমবার কোয়ার্টারে ওঠার হাতছানি ছিল। কিন্তু তা মিলিয়ে গেল ওই দ্বিতীয় রাউন্ডেই।
দারুণ এক জয়ে লিওনেল স্কালোনির আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেছে। এখন লুই ফন গালের দলের বিপক্ষে খেলতে হবে তাকে। ম্যাচটা হবে লুসাইল স্টেডিয়ামে, যেখানে আর্জেন্টিনা আরও দুটো ম্যাচ খেলেছে, একটিতে হেরেছে সৌদি আরবের কাছে আর অন্যটিতে জিতেছে মেক্সিকোর বিপক্ষে।
আর্জেন্টিনা দলে কোচ স্ক্যালোনি একটা জিনিস স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিয়েছেন যে তিনি শক্ত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করতে পারেন। দলের খেলার উন্নতির জন্য যদি প্রচলিত ছক ভেঙে নতুন ছকেও খেলাতে হয়, স্কালোনি সেই ঝুঁকিটাও নিতে রাজি। কোনো পরিবর্তন আনতে তিনি কোনো দ্বিধাবোধ করেন না। সৌদি আরবের সঙ্গে ম্যাচটা হেরে যাওয়ার পর মেক্সিকোর সঙ্গে ম্যাচে তিনি একাদশে পাঁচটা পরিবর্তন এনেছিলেন। এরপর পোল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে তিনি চারটা পরিবর্তন আনেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পরের ম্যাচটায় অবশ্য তার একই একাদশ ফের মাঠে নামানোরই ইচ্ছা ছিল কিন্তু অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার চোটের কারণে বাধ্য হয়ে তিনি পাপু গোমেজকে মাঠে নামান।
ডি মারিয়া পরের ম্যাচে শুরু থেকে খেলতে পারবেন কি না এটা অনিশ্চিত। পোল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের ম্যাচটিতে ডি মারিয়া তার উরুর পেশিতে ব্যথা অনুভব করেছেন, যে কারণে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটা তিনি খেলতে পারেননি। আলেজান্দ্রো (পাপু) গোমেজ তার জায়গায় খেলেছেন। ধারণা করছি, ডি মারিয়ার চোটটা খুব গুরুতর নয় এবং আশা করছি শুক্রবারের ম্যাচে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েই খেলবেন।
এই দলটায় কোনো প্রাচীন সংস্কার আঁকড়ে রাখার মানসিকতা নেই, নেই একইভাবে সব ম্যাচ খেলার প্রবণতা। প্রথম দিকে আর্জেন্টিনা দলটার উদ্দেশ্য ছিল শুধুই জেতা, প্রতিপক্ষের ওপর নির্ভর করে খেলার ধরনে পরিবর্তন আনা এক পাশ থেকে অন্য পাশে বলের আদান প্রদান। আর্জেন্টিনা জিতেছে আক্রমণভাগে জুলিয়ান আলভারেজের সাবলীলতা আর মাঝমাঠে অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার এনজো ফার্নান্দেজের ধীরস্থিরতায়। মেসিকে দলে পাওয়ার যে সুবিধা আর্জেন্টিনা পেয়েছে, সেটা হচ্ছে প্রতিপক্ষ এখন মেসির ভয়েই রক্ষণ সামলাতে অনেক বেশি ব্যস্ত। রোমেরো-ওতামেন্দির জুটিটাকেও বেশ কার্যকর মনে হচ্ছে আর লিসান্দ্রো মার্তিনেজের উপস্থিতি রক্ষণভাগকে করেছে আরও বহুমাত্রিক, কারণ সে অনেকগুলো পজিশনেই খেলতে পারে।
এই বিশ্বকাপে যে চারটা দল এখন পর্যন্ত অপরাজিত, লুই ফন হালের দল তাদের একটা। বাকি দলগুলো হচ্ছে ইংল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া আর মরক্কো। রাশিয়ায় ২০১৮ বিশ্বকাপে সুযোগ না পেয়ে ডাচরা সম্পূর্ণ নতুন একটা দল নিয়েই ২০২২ বিশ্বকাপে খেলতে এসেছে। এটা নেদারল্যান্ডসের নতুন প্রজন্মের দল যারা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে চায়। এরই মধ্যে কাতারে তারা তাদের সুসময়ের ঝলক দেখাচ্ছে, তারা জিতেছে স্বাগতিক কাতার ও সেনেগালের বিপক্ষে আর ড্র করেছে ইকুয়েডরের সঙ্গে। শনিবার তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে এমন একটা ম্যাচে জিতল, যেখানে তারা খুব কম বলের দখল রাখলেও সেটপিস এবং যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়েছে।
শেষ আটের লড়াইতে লোকে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের হাই-ভোল্টেজ ম্যাচ দেখতে পাবে যেটা তাদের সমৃদ্ধ ইতিহাসকেও ছাপিয়ে। এই দুই দল প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হবে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে। এই দুই দল গ্রুপপর্বে মুখোমুখি হয়েছে দুইবার এবং দুইবারই জিতেছে ইংল্যান্ড। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে ২-০ ও ১৯৮২ বিশ্বকাপে ৩-১ ব্যবধানে।
ফ্রান্স কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছে পোল্যান্ডকে ৩-১ গোলে হারিয়ে। এই ফরাসি দলটা পরিচালনা করছেন দিদিয়ের দেশম, এই দলের খেলোয়াড়রা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আর এরা বিশ্বকাপের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক দলগুলোর একটি। সামনে খেলছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। অন্যদিকে ইংল্যান্ড শেষ আটে এসেছে সেনেগালকে ৩-০ গোলে হারিয়ে, গোলগুলো করেছেন জর্ডান হেন্ডারসন, হ্যারি কেইন ও বুকায়ো সাকা। এই ম্যাচটা হতে যাচ্ছে অত্যন্ত রোমাঞ্চকর কারণ দুই দলেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো বারুদ আছে।
দেশে ইসলামি ধারার ব্যাংক ব্যবস্থা প্রচলনের মাধ্যমে গ্রাহকের আস্থায় স্বল্পতম সময়ে বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক সময়ে ঋণ ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিতর্ক চলছে ব্যাংকটিকে ঘিরে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকটির সার্বিক অবস্থা নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা।
২০১৭ সালে মালিকানা পরিবর্তনের প্রায় পাঁচ বছর পর ব্যাংকটির ঋণ বিতরণ নিয়ে বিতর্ক চলছে। সম্প্রতি গণমাধ্যমে ব্যাংকটি নিয়ে কয়েকটি সংবাদ প্রকাশের পর ইসলামী ব্যাংকের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ কিছু তথ্য ছড়িয়েছে। এতে গ্রাহকদের মধ্যে কিছুটা শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে গ্রাহকদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা।
মনিরুল মাওলা বলেন, একটি ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদের পরিবর্তন খুবই সাধারণ বিষয়। কিন্তু মালিকানা পরিবর্তনের পর গত পাঁচ বছরে ইসলামী ব্যাংক সব সূচকেই উন্নতি করেছে। মালিকানা পরিবর্তনের সময় ব্যাংকটির আমানত ছিল ৫৮ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে তার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা। আমানত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঋণ বিতরণও বেড়েছে স্বাভাবিক নিয়মে। ব্যাংকটির আর্থিক স্বাস্থ্যেও ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। সে হিসেবে আমরা মনে করি অল্প সময়ের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক আরও এগিয়ে যাবে।
বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক বিশ্বে তুলে ধরছে ইসলামী ব্যাংক জানিয়ে মনিরুল মাওলা বলেন, একটি ব্যাংককে পরিমাপ করার জন্য যতগুলো সূচক আছে, অর্থাৎ ব্যাংকের আমানত, বিনিয়োগ, প্রবাসী আয়, পরিচালন লাভ থেকে শুরু করে আমদানি, রপ্তানিসহ সব সূচকেই ইসলামী ব্যাংক সবার শীর্ষে অবস্থান করছে। এ অবস্থায় ইসলামী ব্যাংকের বিষয়ে বেশ কয়েকটি সংবাদ গণমাধ্যমে এসেছে। বাংলাদেশের গতিশীল অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য এসব সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। কারণ ব্যাংকিং খাতকে মানুষ সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করে। এ বিশ্বাসে যদি ফাটল ধরানো যায় তাহলে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে। এ জন্য কিছু লোক এ জায়গাটিকে বেছে নিয়েছে। দেশের এমন কোনো খাত নেই যেখানে ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ নেই। এমনকি দেশের সব বড় ব্যবসায়ী গ্রুপের সঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়েগের কারণে দেশে প্রায় ৮৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিং এবং ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড একসঙ্গেই চলছে। প্রতিষ্ঠার ৪০ বছরে অনেক গ্রাহক আমাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। ইসলামী ব্যাংকের এমডি বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের আমানতকারী সংখ্যা ১ কোটি ৯০ লাখ। পারিবারিক সদস্য সংখ্যা বিবেচনা করা হলে এর সংখ্যা ৮ কোটি ছাড়াবে। বর্তমানে দেশের ব্যাংক খাতে ইসলামী ব্যাংক সব প্যারামিটারেই সেরা। গ্রাহকরা গত ৪০ বছর আমাদের সঙ্গে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাংক হিসেবে ইসলামী ব্যাংক আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে এক হাজার ব্যাংকের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বর্তমানে আমাদের অবস্থান ৮৮২তম। আর দ্রুত সময়ের মধ্যে শীর্ষ ৫০০ ব্যাংকের মধ্যে আসতে চাই।
দেশে বৈদেশিক মুদ্রার দুটি খাত রয়েছে। রপ্তানি আয় এবং প্রবাসী আয়। বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী আয় সংগ্রহে সবার শীর্ষে অবস্থান করছে। দেশের মোট প্রবাসী আয়ের ৩০ শতাংশই আসে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। এ ছাড়া যে তিনটি দেশ (সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্র) থেকে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় আসে, সেই দেশগুলো বিবেচনায় নিলে এ ব্যাংকের মাধ্যমেই ৫২ শতাংশ প্রবাসী আয় আসে বলেও জানিয়েছেন ইসলামী ব্যাংকের এমডি।
সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ঋণ অনিয়মের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার বাইরে কোনো ঋণ বিতরণ হয়নি। গণমাধ্যমে যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে আংশিক সত্য রয়েছে। যেমন তারা উল্লেখ করেছে, নভেম্বরে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। বিষয়টি সঠিক। দেশের খাদ্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমরা যেসব বিনিয়োগ করেছি তার অধিকাংশ এলসির দায় নভেম্বরে পরিশোধ করা হয়েছে। যে কারণে এ মাসে ঋণ বিতরণের পরিমাণ বেশি ছিল। তবে যেসব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া হয়েছে, তা খেলাপি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান খেলাপি হয়েও যায় তাদের অর্থ জামানত থেকে উঠে আসবে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠান ঋণের টাকা পরিশোধ করবে বলেও আশা করছি আমরা।
নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া ঋণের বিষয়ে মনিরুল মাওলা বলেন, যে বিনিয়োগগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সেগুলো দেশ ও জাতির কল্যাণে দেওয়া হয়েছে। করোনাকালীন দেশে আমদানি করার সুযোগ হয়নি। করোনার পর আমদানির চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। বিশেষ করে খাদ্যপূর্ণ আমদানির চাহিদা বাড়ার কারণে আমরা বেশ কিছু বিনিয়োগ করেছি। প্রধানমন্ত্রী পক্ষ থেকে নির্দেশনা ছিল, দেশের কোনো জায়গায় যাতে খাদ্যপণ্যের ঘাটতি তৈরি না হয়। এ জন্য ইসলামী ব্যাংক বিভিন্ন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছে।
তবে অনেক ক্ষেত্রে আমদানিকারকরা দেশের সব জায়গায় পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় স্থানীয় পর্যায়ে যেসব প্রতিষ্ঠান পাইকারি বিক্রি করে সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে কিছু বিনিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অপরিচিত এসব প্রতিষ্ঠানকেই গণমাধ্যম বেনামি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আখ্যায়িত করছে। তবে আমাদের টিম ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিদর্শন করে ও তাদের ঋণ পরিশোধের সম্ভাব্যতা যাচাই করেই এসব বিনিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের টিম বর্তমানেও ওইসব প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। পণ্য বিক্রি হলেই আমরা তাদের ঋণ সমন্বয় করে নেব।
সম্প্রতি আলোচিত রাজশাহীকেন্দ্রিক নাবিল গ্রুপকে দেওয়া ঋণ প্রসঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের এমডি বলেন, নাবিল গ্রুপ একটি বড় প্রতিষ্ঠান। আমরা ২০০২ সাল থেকে তাদের সঙ্গে ব্যবসা করছি। তাদের বর্তমান বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার কোটি ছাড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনায় বেশ কয়েকটি ফিড মিল রয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় অটোরাইস মিল নাবিল গ্রুপের। এ ছাড়া তাদের কোল্ড স্টোরেজ, হ্যাচারি, পোলট্রিসহ নানা ধরনের ব্যবসা রয়েছে। এই গ্রুপের শুরুও হয়েছে ইসলামী ব্যাংকে থেকে নেওয়া ১৫ লাখ টাকা ঋণ দিয়ে। এখন এটি একটি বড় গ্রুপে রূপান্তরিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির এখন পর্যন্ত কোনো ঋণ একদিনের জন্যও খেলাপি হয়নি। এই গ্রুপটিকে দেওয়া ঋণগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে ফেরত আসবে বলেও জানান তিনি।
খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে মনিরুল মাওলা বলেন, ইসলামী ব্যাংকের আমানত সর্বোচ্চ। আমাদের বর্তমানে ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। ঋণের দিকে দ্বিতীয় অবস্থানে যে ব্যাংক রয়েছে, তার ঋণের পরিমাণ ৫২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ আমানত এবং ঋণ বিতরণে ইসলামী ব্যাংক সবার শীর্ষ অবস্থান করছে। আমাদের যে ঋণ রয়েছে, তার মধ্যে খেলাপির পরিমাণ মাত্র ৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ। যদিও ৫ শতাংশ খেলাপি থাকলেও তাকে স্ট্যান্ডার্ড ধরা হয়। তবুও আমরা এ খেলাপি ঋণের পরিমাণ দ্রুত সময়ের মধ্যে তিন শতাংশের নিচে নিয়ে আসতে কাজ করছি।
ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ ছাড়াও বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের অন্যতম বড় সংগঠন ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন আজ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম এ সংগঠনটির ৩০তম জাতীয় সম্মেলন এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন সরকারবিরোধী আন্দোলন চলছে। এ ছাড়া সামনে রয়েছে জাতীয় নির্বাচনের বড় চ্যালেঞ্জ।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ গঠিত হয়। সংগঠনটির বয়স বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যোগ হয়েছে নানা বিতর্ক। নানা সময়ে বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকান্ডে সংগঠনটির গৌরবোজ্জ্বল অতীত ম্লান হয়েছে। ছাত্রলীগের নামে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, খুনোখুনি, দখলবাজির মতো গুরুতর অভিযোগ উঠছে। চাঁদাবাজির অভিযোগে পদ হারাতে হয়েছে সংগঠনটির সাবেক শীর্ষ দুই নেতা শোভন-রাব্বানীকে।
এ অবস্থায় সম্মেলন ঘিরে ছাত্রলীগের সোনালি অতীত ফিরিয়ে আনার প্রত্যাশা করছেন সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান নেতারা। তাদের চাওয়া, এমন নেতৃত্ব খুঁজে বের করা উচিত যারা ঘুণে ধরা ছাত্রলীগকে গৌরবের ছাত্রলীগে রূপান্তর করবে। বৈষয়িক নেতার চেয়ে আদর্শিক নেতা বেরিয়ে আসবে। মোটাদাগে বিতর্কহীন নেতৃত্ব এ সংগঠনের নেতৃত্ব দেবে।
ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাহালুল মজনুন চুন্নু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ছাত্রলীগকে অবশ্যই দেশের মানুষের জন্য কাজ করা উচিত। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা উচিত। আমাদের সময়ে ছাত্রনেতারা সংগঠনের আদর্শ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বলে ছাত্রলীগ করতে উদ্বুদ্ধ করতেন। এখন সেই কর্মকান্ড নেই। এখনকার নেতাদের মধ্যে সুবিধা নেওয়ার বিষয় কাজ করে, যেটা আমাদের সময় ছিল না।’
ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলন হয় ২০১৮ সালের মে মাসে। ওই বছরের ৩১ জুলাই শোভন ও রাব্বানীর হাতে সংগঠনের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পদচ্যুত হন শোভন-রাব্বানী। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব দেওয়া হয় আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্যকে। পরের বছর ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি তারা পূর্ণ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।
আজ মঙ্গলবার ৩০তম জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগে নতুন নেতৃত্ব আসবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক দিনের এ সম্মেলন হবে। এর আগে সংগঠনের জাতীয় সম্মেলন হতো দুদিনব্যাপী।
ছাত্রলীগের সাবেক কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০০ সালের পর থেকে যারা সংগঠনের নেতৃত্বে এসেছেন তাদের হাত ধরে বিতর্কের শুরু। সর্বশেষ নেতৃত্ব জয় ও লেখক সংগঠনকে আরও বেশি বিতর্কিত করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনের এখনকার নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, পদবাণিজ্য থেকে শুরু করে শিবির-ছাত্রদল করার অভিযোগ থাকা ছাত্রদেরও এ সংগঠনে বড় পদ দিয়েছেন তারা। টাকার সুবিধা নিয়ে নেতা বানিয়ে ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন এ দুজন। এমন অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত অক্টোবরে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। গত রবিবার রাতে ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা জয়কে অবরুদ্ধ করেন। জানতে চান, সংগঠনকে কেন বিতর্কিত করেছেন তারা। অবশ্য, পরে জয়কে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সম্মেলন না করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিটি দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে টাকা লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। তবে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘টাকা খেয়ে কমিটি, পদবাণিজ্যের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
গত নভেম্বরের মাঝামাঝি সম্মেলন ছাড়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কমিটি না দিতে সংগঠনটিকে আওয়ামী লীগ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। নতুন কমিটি না দিলেও গত কয়েক দিন ৩১ জুলাইয়ে স্বাক্ষরে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির পদ পেয়েছেন দাবি করে অনেকই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি দিয়ে জানাচ্ছেন। গত ৪ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীবুর রহমান সজীব ও সাধারণ সম্পাদক আবু ইউসুফ হল শাখার সহসভাপতি মীর লায়েককে কারণ ব্যাখ্যার জন্য চিঠি দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, ‘গত ৪ ডিসেম্বর আপনার ফেইসবুক আইডিতে দেওয়া পোস্টে আপনি ৩১ জুলাই ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন। কিন্তু গত ১১ সেপ্টেম্বর হল কমিটির পদের জন্য দেওয়া জীবনবৃত্তান্তে বিষয়টি উল্লেখ ছিল না।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি গঠনের বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পরে করোনা মহামারীর কারণে সব স্থবির হয়ে যায়। ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের চার নেতা ছাড়াও আমাদের অভিভাবক শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে কমিটি নির্ধারণ করেছি।’
পুরনো তারিখ দিয়ে নেতা বানানোর যে অভিযোগ উঠেছে সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে দেশ রূপান্তরকে জানান ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
বর্তমান কমিটির নেতাদের নামে এত নানা সমালোচনা-বিতর্ক থাকলেও তাদের অনেকেই জনকল্যাণমূলক কাজ করে আলোচনায় এসেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী অন্যতম। ডাকসুর সম্পাদকীয় পদে শিক্ষার্থীদের বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। করোনা মহামারীতে যখন অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছিল তখন সাদের নেতৃত্বে সংগঠনের কর্মীরা ‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’ নিয়ে পথেঘাটে ঘুরেছেন। চাল-ডাল নিয়ে অসহায় মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছেন। সাদকে ‘ছাত্রলীগের অক্সিজেন’ হিসেবেই সারা দেশের মানুষ চেনে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করে গেছেন। হায়দার মোহাম্মদ জিতু গণমাধ্যমে লেখালেখি করে পরিচিতি লাভ করেছেন। সবুর খান কলিন্স, তানভীর রহমান মাহিদ ও বরিকুল হাসান বাঁধন সামাজিক বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত থেকে ছাত্রলীগের সুনাম রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন।
এদিকে গত সম্মেলনে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের বয়সসীমা অনূর্ধ্ব ২৯ বছর ছিল। দুই বছর মেয়াদি কমিটির সম্মেলন চার বছর সাত মাস পর হওয়ায় এবারের সম্মেলনে বয়সসীমা কত হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
এবার ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থিতার ফরম জমা দিয়েছেন ২৫৪ জন। এর মধ্যে সভাপতি পদে ৯৬ এবং সম্পাদক পদে ১৫৮ জন। দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তারা দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে তারা সংক্ষিপ্ত তালিকা দেবেন। তিনি সেগুলো থেকে যাচাই-বাছাই করবেন। তার বাইরে থেকেও নেতা নির্বাচন করা হতে পারে। তবে বয়স নিয়ে ছাড় চান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা বলেন, যোগ্য নেতৃত্ব বের করতে হলে বয়সের ব্যাপারটি ছাড় দেওয়া উচিত। আর গঠনতন্ত্রে দুই বছর মেয়াদে সম্মেলন হওয়ার নিয়ম আছে। সেখানে চার-পাঁচ বছর পর সম্মেলন হয়। সে ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মেলন না হলে শুধু বয়সের ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্র মানতে হবে। সেটি ঠিক হবে না।
ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বয়সের বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি, কিন্তু এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এবারে যেহেতু করোনাসহ বিভিন্ন ক্রাইসিস সময় আমরা পার করছি তাই এ ব্যাপারে নতুন সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’
৬ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই শীর্ষ নেতার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতার নাম ঘোষণা করার সম্ভাবনা রয়েছে। পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন সোহান খান, সাদ্দাম হোসেন, সৈয়দ আরিফ হোসেন, ইয়াজ আল রিয়াদ, কামাল খান, মাজহারুল ইসলাম শামীম, তাহসান আহমেদ রাসেল, সাদ বিন কাদের চৌধুরী, বরিকুল ইসলাম বাঁধন, তানভীর হাসান সৈকত, ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী সজীব, আবু হাসনাত সরদার হিমেল, ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত, হায়দার মোহাম্মদ জিতু, আবদুল্লাহ হীল বারী, রনি মুহাম্মদ, তিলোত্তমা শিকদার, ফরিদা পারভীন, তানভীর রহমান মাহিদ, জয়দীপ দত্ত (জয়াজিৎ), খাদিমুল বাশার জয়, আরিফুজ্জামান ইমরান, শেখ ওয়ালী আসিফ (ইনান), ফাল্গুনী দাস তন্বী, তারেক আজীজ, শেখ মেহেদী হাসান, রফিকুল ইসলাম সবুজ, শরীফ বায়েজিদ ইবনে মাহমুদ কোতওয়াল ও ইমরান জমাদ্দার।
ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি সম্পাদক অসীম কুমার উকিল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ছাত্রলীগের ইতিহাস। নেতৃত্ব নির্বাচন করে সেই জায়গা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা হবে, এটাই প্রত্যাশা।’
সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে বিকেলে ঢাকায় এসেছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল। আজ শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনা মো. হাশিম।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি শ্রমবাজারের জটিলতা নিয়ে আলাপ করবেন। কিভাবে দেশটিতে আমরা সহজে কর্মী পাঠাতে পারি; সেগুলো আলোচনায় উঠে আসবে। আমাদেরও কিছু প্রস্তাব রয়েছে। আমাদের কর্মীদের স্বার্থ আগে আমরা চাই, সবার জন্য বাজার খুলে দেওয়া হোক। নিয়োগকর্তার পছন্দমতো রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়োগ— এটা আমরা চাই না। অভিবাসন ব্যয়
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার গত কয়েক বছর ধরে অস্থির। দেশটিতে প্রত্যাশিত শ্রমিক পাঠাতে পারছে না বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমবাজারটির জটিলতা নিরসনে আলোচনা করতে সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে ঢাকায় আসছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল।
তার সফরে শ্রমবাজারটি গতিশীল করতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) পরিবর্তন, অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় কমানোসহ দেশের সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য বাজার উন্মুক্ত করার প্রস্তাব দেবে ঢাকা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ২৪ ঘণ্টার সফরে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পাশাপাশি তিনি সেনাকল্যাণ সংস্থার সঙ্গেও একটি বৈঠক করবেন।
'পাঠান' মুক্তির আগে থেকেই অনুরাগীদের সঙ্গে শাহরুখের যোগাযোগের একটাই মাধ্যম, টুইটার। শনিবার ফের টুইটারে 'আস্ক এসআরকে' সেশনে ধরা দিলেন শাহরুখ। হালকা মেজাজে, খোলামেলা আড্ডায় মাতলেন অনুরাগীদের সঙ্গে। অনুরাগীদের প্রশ্ন উত্তর দিলেন। সেখানেই একজন টুইটার ব্যবহারকারীর উপদেশ- বয়স অনুযায়ী চরিত্রে অভিনয়ের করার। পাল্টা জবাব দেন শাহরুখও। বলেন, 'তিনি হিরো ছিলেন, আছেন, থাকবেন'।
অনুরাগীরা যেমন রয়েছেন, তেমনই ট্রোল করার লোকের সংখ্যাও কম নয় শাহরুখের সোশালে। বছর সাতান্নর 'তরুণ' এই অভিনেতাকে একজনের প্রশ্ন, 'আপনি কি এভাবেই হিরোর চরিত্রেই অভিনয় করবেন, নাকি কোনো দিন নায়ক-নায়িকার বাবার চরিত্র করার পরিকল্পনাও রয়েছে?' তাতে শাহরুখ যা জবাব দিয়েছেন, তা রীতিমত ছড়িয়ে পড়েছে সোশালে।
এমনিতেই রসিক মানুষ শাহরুখ। তবে কোন কথায় কাকে কী উত্তর দেবেন, তা ভালোই জানা তার। বাদশাহ লেখেন, 'তুই বাপ হ… আমি হিরোর চরিত্রেই ঠিক আছি।'
শনিবারের 'আস্ক এসআরক'-এ সেশনে, শাহরুখের কাছে জানতে চাওয়া হয় 'পাঠান'-এর মোট আয়ের পরিসংখ্যান। তাকেও ফেরাননি শাহরুখ। উত্তর দিয়ে লেখেন, 'ভালোবাসা ৫ হাজার কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে, ৩ হাজার কোটি প্রশংসা, ৩২৫০ কোটি হাগ, ২০০০ কোটি হাসি এখনও গণণা চলছে। তোমার অ্যাকাউন্ট্যান্ট কী বলছেন?'
'পাঠান' ঘিরে উন্মাদনা নজিরবিহীন। প্রেক্ষাগৃহের বাইরে এই ছবি দেখার ঢল। শাহরুখ অভিনীত ছবিটি লম্বা রেসের ঘোড়া, বলেছেন সিনেমা বিশেষজ্ঞরা। ৪ বছর পর শাহরুখ পর্দায় ফিরেছেন বলেই শুধু নয়, ৭ দিনে বক্স অফিসে ৭০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে 'পাঠান', যা বলিউডে বছরের সেরা ব্লকবাস্টার হিসাবে গণ্য হতে চলেছে।
দুঃসময় পিছু ছাড়ছে না লিভারপুলের। প্রিমিয়ার লিগে টানা তিন ম্যাচে জয়হীন থেকে মাঠে নেমেছিল তারা। ভাঙতে চেয়েছিল ব্যর্থতার বৃত্ত। কিন্তু পারেনি, উল্টো উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্সের ধরাশায়ী হয়েছে তারা। পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থাকা দল হেরে গেছে বড় ব্যবধানে।
নিজেদের মাঠে শনিবার ৩-০ গোলে জিতেছে উলভস। লিভারপুলের বিপক্ষে লিগে আগের ১১ ম্যাচে হারের পর জয়ের স্বাদ পেয়েছে তারা।
শুরুর ১২ মিনিটে দুই গোল হজম করে দিশেহারা লিভারপুল ঘুরে দাঁড়ানোর পথই খুঁজে পায়নি। দ্বিতীয়ার্ধে হজম করেছে আরও একটি গোল। তার আগেই ছিটকে যায় ম্যাচ থেকে। দারুণ জয়ে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেন উলভসের ফুটবলাররা।
শুরু থেকে একের পর এক আক্রমণে লিভারপুলের রক্ষণ কাঁপাতে থাকে উলভস। দলটির সমর্থকরা আনন্দে মেতে ওঠার উপলক্ষ পেয়ে যায় পঞ্চম মিনিটে। আত্মঘাতী গোল করে লিভারপুল। বাইলাইনের কাছাকাছি গিয়ে হাং হি-চান শট নেওয়ার পরিস্থিতি না দেখে তিনি বক্সে বাড়ান বল, জোয়েল মাতিপের পায়ে লেগে বল পোস্ট ছুঁয়ে গোললাইন পেরিয়ে যায়। আলিসনের প্রাণপণ চেষ্টা যায় বিফলে।
দ্বাদশ মিনিটে আবারও গোল হজম করে বসে লিগে ধুঁকতে থাকা লিভারপুল। ইংলিশ ডিফেন্ডার ক্রেইগ ডসনের পায়ের জোরাল শটে বল খুঁজে নেয় জাল। উলভসের হয়ে অভিষেকেই গোল পেয়ে যান তিনি। ২-০ গোলের ব্যবধান নিয়ে বিরতিতে যায় উলভস।
বিরতির পরও চলে আক্রমণ আর পালটা আক্রমণ। ৭১তম মিনিটে মাঝমাঠে জো গোমেজ ও স্তেফান বাইচেতিস আটকাতে পারেননি জোয়াও মৌতিনিয়োকে। এই পর্তুগিজ মিডফিল্ডারের পাস ধরে বক্সে আড়াআড়ি ক্রস বাড়ান আদামা ত্রাওরো। নিখুঁত টোকায় বাকি কাজ সারেন রুবেন নেভেস। ম্যাচের ভাগ্যও লেখা হয়ে যায় অনেকটাই।
এই হারে লিগ টেবিলে সেরা চারে থাকার পথটা আরও কঠিন হয়ে গেল লিভারপুলের। ২০ ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে দশম স্থানে আছে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। তাদের চেয়ে ১০ পয়েন্ট বেশি নিয়ে চার নম্বরে নিউক্যাসল ইউনাইটেড। ২১ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে ১৫তম স্থানে উঠে এসেছে উলভস।
ছবি মুক্তির ১০ দিন পার। এখনও বক্স অফিসে 'পাঠান' রাজ। শুধু দেশের মাটিতেই নয়, বিদেশেও অব্যাহত 'পাঠান' ঝড়। বিশ্বজুড়ে ৭০০ কোটির বেশি ব্যবসা ইতিমধ্যেই করে ফেলেছে শাহরুখ খানের এই ছবি। এমনকি, ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানেও 'পাঠান' জ্বরে ভুগছেন আমজনতা। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সে দেশে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হলো 'পাঠান'। খালি রইল না প্রেক্ষাগৃহের একটি আসনও, হাউসফুল সেই শো।
অন্য ভারতীয় ছবির মতোই পাকিস্তানে মুক্তির ছাড়পত্র পায়নি সিদ্ধার্থ আনন্দ পরিচালিত ছবি 'পাঠান'। তবে সে দেশের সিন্ধ সেন্সর বোর্ডের সেই নিষেধাজ্ঞাকে একপ্রকার বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন করল শাহরুখের ছবি। কানায় কানায় ভর্তি প্রেক্ষাগৃহ দেখল রুপালি পর্দায় 'বাদশাহ ম্যাজিক'।
পাকিস্তানি মুদ্রায় ৯০০ টাকার টিকিটেও হাউসফুল 'পাঠান'-এর শো। নিষেধাজ্ঞা থাকায় বেআইনিভাবেই জোগাড় করে দেখানো হলো 'ওয়াইআরএফ স্পাই ইউনিভার্স'-এর এই ছবি।
পাকিস্তানের 'ফায়ারওয়ার্ক ইভেন্ট' নামক এক সংস্থা আয়োজন করে 'পাঠান' ছবির প্রদর্শনের। ছবির টিকিটমূল্য রাখা হয় পাকিস্তানি মুদ্রায় ৯০০ টাকা। তাতেই ছবির টিকিট পাওয়ার জন্য কাউন্টারের বাইরে লম্বা লাইন পড়ে সিনেপ্রেমীদের। অল্প সময়ের মধ্যেই শো হাউসফুল ঘোষণা করে দেওয়া হয়। তবে পাকিস্তানি সেন্সর বোর্ডের কানে এ খবর যেতেই নড়েচড়ে বসে তারা। 'ফায়ারওয়ার্ক ইভেন্ট'কে অবিলম্বে 'পাঠান'-এর সব প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বিবৃতি জারি করে সিন্ধ সেন্সর বোর্ড। কেউ যদি এর পরেও বেআইনিভাবে 'পাঠান' প্রদর্শন করে, তাহলে অপরাধের শাস্তিস্বরূপ তার ১ লাখ টাকা জরিমানা থেকে ৩ বছরের জেল পর্যন্ত হতে পারে, হুঁশিয়ারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
সাভারের আশুলিয়ায় মহাসড়কের পাশের একটি ডোবা থেকে মো. ইমাম হোসেন (৪৬) নামে এক ব্যক্তির ভাসমান লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যায় সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পার্শ্ববর্তী ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পশ্চিম পাশের ডোবা থেকে নিহতের ক্ষতবিক্ষত মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত ইমাম হোসেন জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ভালুকগড়ি গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে। তিনি পরিবার নিয়ে আশুলিয়ার জিরাবো পুকুরপাড় এলাকার ভাড়া বাসায় থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
থানা পুলিশ জানায়, স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে সন্ধ্যায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী একটি ডোবা থেকে লুঙ্গি এবং জ্যাকেট পরিহিত অজ্ঞাত এক ব্যক্তির ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পিবিআইকে খবর দেওয়া হলে তারা এসে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে।
নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল-মামুন কবির বলেন, ইমাম হোসেন বৃহস্পতিবার অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। মরদেহটি উদ্ধারের খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা থানায় এসে লাশ শনাক্ত করেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে দুর্বৃত্তরা তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে গেছে এবং নিহতের মরদেহটি ডোবার মধ্যে ফেলে গেছে।
মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আশুলিয়া থানায় মামলা দায়েরের পাশাপাশি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার এবং গায়েব হওয়া অটোরিকশাটি উদ্ধারে অভিযান চালানো হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।