
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত সংসদ নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ায় কক্সবাজারবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আসছে সংসদ নির্বাচনে নৌকার জন্য ভোট চান। তিনি বলেন, আপনারা ’১৮-তে নৌকায় ভোট দিয়েছেন। আমরা ক্ষমতায় এসেছি। টানা তিনবার ক্ষমতায় রয়েছি। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ভোট হবে, সেবারও আমাকে ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করবেন।
গতকাল বুধবার কক্সবাজারের শহীদ শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়োজিত আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনের জন্য নৌকার পক্ষে থাকার এ আহ্বান জানান।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার নিজেরও কক্সবাজার খুবই প্রিয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা কি নৌকায় ভোট দেবেন? আপনারা হাত তুলে ওয়াদা করেন দেবেন কি না।’ এ সময় জনসভাস্থল থেকে হাত তুলে লাখো লাখো জনতা ‘শেখ হাসিনার সরকার বারবার দরকার’ স্লোগান দিতে থাকেন।
সমাবেশস্থল স্টেডিয়াম মাঠ ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ। বেলা ১টার মধ্যে সমাবেশস্থল পূর্ণ হয়ে যায়। বাকিরা স্টেডিয়াম মাঠের বাইরে দাঁড়িয়েই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনেন। কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কক্সবাজারবাসী, আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাই যে আপনারা ২০১৮ সালের নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের প্রার্থীদের জয়যুক্ত করেছিলেন। ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮বারবার আপনারা ভোট দিয়েছেন। আপনাদের ভোট বৃথা যায়নি।’ সাগরপাড়ের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভাস্থলের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি লোক ছিল রাস্তায়। শহরের লালদীঘির পাড় থেকে শুরু করে হলিডের মোড় হয়ে কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্ট পর্যন্ত ছিল লোকারণ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার এলেন সাড়ে ৫ বছর পর। তবে এর মধ্যে তার সরকার টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কক্সবাজারের উন্নয়নে রেকর্ড পরিমাণ বরাদ্দ দেয়। এই উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে অভিভূত কক্সবাজারবাসী। গত মঙ্গলবার থেকেই চকরিয়া, পেকুয়া, টেকনাফ ও মহেশখালী থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী কক্সবাজার এসে জড়ো হন। আর গতকাল সকাল থেকেই মিছিল আর মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় পুরো এলাকা। উৎসবের সাজে সড়কে সড়কে শোভা পায় ফেস্টুন, ব্যানার।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই আমার সংগ্রাম। যে লক্ষ্য সামনে নিয়ে আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সে লক্ষ্যেই আমি কাজ করছি।’
বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বাংলার জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনারা বারবার ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেছেন বলেই আমি দেশের জন্য কাজ করতে পারছি।’
জামায়াত-বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস, খুন ও মানি লন্ডারিং দিয়েছে : জামায়াত-বিএনপি এ দেশের মানুষকে কী দিয়েছে? এই প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস, খুন, মানি লন্ডারিং এগুলো দিয়েছে। তিনি বিএনপি-জামায়াতকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘যারা দেশের উন্নয়ন না করে সম্পদ বিদেশে পাচার করেছে, লুট করেছে এবং জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে তারা কীভাবে জনগণের পাশে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতিমের টাকা মেরে খাওয়া ও বিদেশে সম্পদ পাচারই ছিল খালেদা-তারেকের কাজ। তারা দেশের শান্তি চায় না। অস্ত্র মামলায় এখনো তাদের একজন সাজা ভোগ করছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড বোমা হামলা ঘটিয়েছে ওরা। তারা জ্বালাও-পোড়াও ছাড়া কিছুই পারে না।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘যে গ্রেনেড যুদ্ধের মাঠে ব্যবহার করা হয়, সেই গ্রেনেড মারা হয়েছিল আমাদের ওপর। গ্রেনেড হামলায় আমাদের আইভি রহমানসহ অনেকে মারা গেছেন। আল্লাহর রহমতে আমি সেদিন বেঁচে গিয়েছিলাম। ধ্বংস করা ছাড়া বিএনপি-জামায়াত এ দেশকে কিছুই দিতে পারে না। পঁচাত্তরের পর এরা ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল। কী দিয়েছে বাংলাদেশকে? তারা কিছুই দিতে পারেনি।’
আবার আসিব ফিরে, এই কক্সবাজার সমুদ্রের তীরে : শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বাবা যখন জেল থেকে বের হতেন, তখন আমাদের কক্সবাজার নিয়ে আসতেন। আমরা এখানে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। এতই উন্নয়ন করেছি, একসময় দেখবেন, এই মহেশখালী সিঙ্গাপুরের চেয়ে সুন্দর হবে।’ ভবিষ্যতে কক্সবাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কুতুবদিয়া ও মহেশখালীতে আরও দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দেব। আমাদের সব সময়ের লক্ষ্য এ অঞ্চলের উন্নয়ন। মানুষের সমস্যা আমরা জানি, আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি।’ কক্সবাজারকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করে কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতা ‘আবার আসিব ফিরে’-এর অনুকরণে ‘ আবার আসিব ফিরে, এই কক্সবাজার সমুদ্রের তীরে’-এই পঙ্তি দিয়ে তিনি বক্তব্য শেষ করেন।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কেউ কক্সবাজারের দিকে মুখ ফিরে তাকায়নি : প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর এই কক্সবাজার তথা বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের প্রতি কেউ ফিরে তাকায়নি। দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কক্সবাজারকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছিল। কক্সবাজারে একে একে ১২টি মেগা প্রকল্পসহ ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্প কক্সবাজারে চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে ২৯টি প্রকল্প সমাপ্ত করতে পেরেছি। কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, রেললাইন, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে জনগণ এর সুফল ভোগ করবে। বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধিশীল দেশে রূপান্তরের কাজ চলছে। ২০৪১ সালে আমরা সে লক্ষ্যে পৌঁছাব, ইনশা আল্লাহ। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশে কোনো মানুষ ঠিকানাহীন ও গৃহহীন থাকবে না।’
জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ কেন্দ্রীয় এবং জেলা পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
নজর কেড়েছে সেলিমের মোটরসাইকেল: রংবেরঙের টিশার্ট-টুপি পরে মিছিলে মিছিলে দলে দলে সবাই ছুটছেন শেখ হাসিনার জনসভায়। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে সমাবেশস্থলের একটু সামনের মোটেল রোডের লাবণী মোড়ের তিন রাস্তার মাথায় উৎসুক জনতার দৃষ্টি আটকে গেল একটি মোটরসাইকেলের আরোহীর দিকে। মিছিল থেকে বেরিয়ে অনেকেই তার সঙ্গে সেলফি তুলছেন। কেউ কেউ গল্পও জুড়ে দিয়েছেন লাল-সবুজ টুপি ও বাদামি রঙের পাঞ্জাবির ওপর মুজিব কোট পরিহিত মধ্যবয়সী ওই লোকের সঙ্গে। এই মোটরসাইকেলের পেছনেই শোভা পাচ্ছে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা। জাতীয় পতাকার সঙ্গে মিলিয়ে লাল-সবুজ রঙের সাজানো হয়েছে নৌকাটি। এতে লেখা রয়েছে নৌকায় ভোট দিন। তার নাম মোহাম্মদ সেলিম। তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম মাদারবাড়ী এলাকার। নৌকার আদলের মোটরসাইকেল নিয়ে ১৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ক পাড়ি দিয়ে এসেছেন শেখ হাসিনার ভাষণ শুনতে।
পেট্রলবোমায় নিহত বাবা, বিচার দাবি : ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি কাতার যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকায় যাচ্ছিলেন কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলীর ইউসুফ। কিন্তু কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পৌঁছার পর ঢাকাগামী বাসে আগুন-সন্ত্রাসীদের পেট্রলবোমা হামলায় মারা যান তিনি। এর সাত বছরে সেই ঘটনার বিচার হয়নি। নিহত বাবার হত্যার বিচার চেয়ে গতকাল ফেস্টুন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশস্থলের সামনের সড়কে অবস্থান করছিলেন জাহেদ ইসলাম রুবেল। প্রধানমন্ত্রীর নজরে পড়লেই বাবা হত্যার বিচার পাবেন এমন আশায় সারা দিনই তিনি ছিলেন সমাবেশস্থলের আশপাশে।
বিএনপির আগামী ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা চলা সংঘর্ষের সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। টিয়ার শেলের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে বিএনপি কার্যালয় ও এর আশপাশের এলাকা। এ সময় মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মকবুল হোসেন নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তাকে নিজেদের দলীয় কর্মী বলে দাবি করেছে বিএনপি। এ ছাড়া সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের ছোড়া শর্টগানের গুলিতে দলের আরও অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতারা।
দলটির নেতাদের অভিযোগ, হঠাৎ করে পুলিশ দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে তাদের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। একই সঙ্গে কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে দরজা-জানালা ভাঙচুর করে। তবে পুলিশ বলছে, যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে গেলে তারা প্রথমে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। বিএনপি কার্যালয়ের ভেতর থেকে শতাধিক নেতাকর্মীকে আটকের পর বিপুলসংখ্যক ককটেল উদ্ধার করা হয় বলেও জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
এদিকে সংঘর্ষ শেষে সন্ধ্যায় বিএনপি কার্যালয়ে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ, যা শেষ হয় রাত ৯টায়। সেখান থেকে দলটির কয়েকজন শীর্ষ নেতাসহ তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল থেকেই বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। সব মিলিয়ে দুই হাজারের বেশি নেতাকর্মী হাজির হন। সেখানে দুটি ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়ে নেতারা বক্তব্য রাখছিলেন। বিকেল ৩টার দিকে পুলিশ তাদের রাস্তা ছেড়ে চলে যেতে অনুরোধ জানায়। কিন্তু নেতাকর্মীরা সেই অনুরোধে সাড়া না দিলে পুলিশ তাদের রাস্তা থেকে সরানোর চেষ্টা করে। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ তখন রাবার বুলেট, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। বিএনপি নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে আশপাশের অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতর থেকেও ইটপাটকেল ছোড়া হয়। আবার নেতাকর্মীদের ছুড়ে মারা ইটের টুকরো তুলে তা পাল্টা নিক্ষেপ করতেও দেখা যায় পুলিশকে। নয়াপল্টনের প্রধান সড়কে অবস্থান নেয় পুলিশ। বিকেল সাড়ে ৩টার মধ্যে পুরো পল্টনের রাস্তা নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। এরপর থেমে থেমে কয়েক দফা দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্ক ও ফকিরেরপুল এলাকায় মুখোমুখি অবস্থান নেয় পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা। সংঘর্ষ চলাকালে নয়াপল্টন, ফকিরেরপুল এবং নাইটিঙ্গেল ও কাকরাইল মোড় পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। বিএনপি কার্যালয়ের উল্টো পাশ থেকে দলটির নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু ককটেল ছুড়লে বিস্ফোরণের ধোঁয়ায় পুরো এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরপর হঠাৎ করেই বিএনপি নেতাকর্মীরা গলি থেকে বেরিয়ে এসে ককটেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় পুলিশকেও পাল্টা আক্রমণ করতে দেখা গেছে। পুলিশ দফায় দফায় টিয়ার শেল ছুড়তে থাকে। ফকিরেরপুল পানির ট্যাঙ্কের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সংঘর্ষ শুরুর আগে সকাল থেকে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন সেøাগান দিতে থাকেন। মাইক ও ব্যানারসহ কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী মঞ্চও ছিল। একপর্যায়ে মাইক্রোফোনে ঘোষণা দেওয়া হয় নেতাকর্মীদের রাস্তায় বসে পড়তে। মুহূর্তে শত শত নেতাকর্মী রাস্তায় বসে পড়লে ফকিরেরপুল থেকে কাকরাইল পর্যন্ত রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ আগে থেকেই সেখানে সতর্ক অবস্থানে ছিল। প্রিজন ভ্যান ও জলকামানও প্রস্তুত রাখা ছিল।
সংঘর্ষ চলাকালেই আহত কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মকবুল হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক পৌনে ৪টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, সংঘর্ষ শুরুর পর অসংখ্য নেতাকর্মীর সঙ্গে আহত ব্যক্তিরাও বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান নেন। এই সময় পুলিশ কার্যালয়ের ভেতর কাঁদানে গ্যাসের কয়েকটি শেল ছোড়ে। তখন বিএনপির পক্ষ থেকে চারটি অ্যাম্বুলেন্স নয়াপল্টন কার্যালয়ের সমানে এলে সেগুলোকে দাঁড়াতে দেয়নি পুলিশ। তারা দাবি করেন, ভেতরে অবস্থান নেওয়া অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন আহত ছিলেন। কাঁদানে গ্যাসের কারণে তাদের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, সন্ধ্যা ৫টা ২০ মিনিটে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য নিয়ে বিএনপি কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় দরজা বন্ধ পান। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। সেখান থেকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, প্রচার সম্পাদক ও মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আমান উল্লাহ আমানসহ দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করেন। এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে ছুটে এলেও তাকে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। দলীয় কার্যালয়ের গেট আটকে রাখলে গেটের সামনেই বসে পড়েন। সেখানে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা ন্যক্কারজনক হামলা। পুলিশ গেট বন্ধ করে ভেতরে তল্লাশির নামে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। ভেতরে বিস্ফোরক ঢুকিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। এটা অসাংবিধানিক।’
আটকের আগে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের এ গুলি চালানো সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ বানচাল করতে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থানরত নিরীহ নেতাকর্মীদের ওপর গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়েছে।’
নেতাকর্মীদের আটকের পর কার্যালয়ের সামনে থেকে সমাবেশের প্রচারের কাজে থাকা দুটি ট্রাক র্যাকার দিয়ে টেনে নিয়ে যায় পুলিশ।
সংঘর্ষ থামার পর ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল জোনের উপ-কমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সমাবেশের স্থান নিয়ে যখন আলোচনা চলছে তখন এই সংঘর্ষ শুরু হলো। সকাল থেকে পল্টনে বিএনপির নেতাকর্মীরা ভিড় করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে পুরো রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। আমরা তাদের সরে যেতে বারবার অনুরোধ করি। কিন্তু তারা আমাদের কথা শোনেননি। একপর্যায়ে তাদের সরিয়ে দিতে গেলে তারা পুলিশের ওপর হামলা করেন।’
তল্লাশি অভিযান শেষে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশিদ বলেন, বিএনপি কার্যালয় থেকে নগদ ২ লাখ টাকা, ১৬০ বস্তা চাল, পৌনে ২ লাখ পানির বোতলসহ রান্নার উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া অবিস্ফোরিত ১৫টি বোমা পাওয়া গেছে।
বিএনপি কার্যালয় থেকে ৩০০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আটকদের কারও বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, কারও বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। মামলার বাইরে যাদের আটক করা হয়েছে, যাচাই-বাছাই করে তাদের বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পেশায় কাপড়ের কারিগর ছিলেন নিহত মকবুল : নয়াপল্টনের সংঘর্ষে নিহত মকবুল হোসেন (৪৫) পেশায় কাপড় তৈরির কারিগর ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে। বাবার নাম মৃত আবদুস সামাদ। তিনি মিরপুর-১১’র লালমাটিয়া বাউনিয়া বাঁধের টিনশেড বাসায় ভাড়া থাকতেন। মকবুলের লাশ শনাক্ত করেন ভাই নুর হোসেন। তার লাশ দেখতে পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে ছুটে আসেন। এ সময় তাদের আহাজারিতে হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। নিহত মকবুল গতকাল সকালে বাসা থেকে বের হন বলে জানান স্ত্রী হালিমা আক্তার। তাদের এক কন্যাসন্তান রয়েছে।
আইন অমান্য করে সমাবেশ করলে সর্বোচ্চ ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি : ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, জননিরাপত্তা ও জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে নয়াপল্টনে বিএনপিকে গণসমাবেশের অনুমতি দেওয়া যাবে না। আইন অমান্য করলে বিএনপির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকাল সন্ধ্যায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘নয়াপল্টনের সামনে ১০ লাখ লোকের জায়গা হবে না। সর্বোচ্চ এক লাখ লোক দাঁড়াতে পারবে। বাকি ৯ লাখ লোক ঢাকা শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ছড়িয়ে পড়বে। যার ওপর বিএনপির কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। আমরা গোয়েন্দা সংস্থা এবং মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি, বিএনপি ঢাকা শহরে ১০ লাখ লোক জমায়েতের মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। কাজেই পার্টি অফিসের সামনে জনদুর্ভোগ করে এবং ঢাকার আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন করে তাদের সেখানে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া যাবে না।’
প্রচলিত নিয়ম মেনেই সভা-সমাবেশ করতে হবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, বিএনপিকে দেশের প্রচলিত নিয়ম মেনেই সভা-সমাবেশ করতে হবে। ২০-২৫ লাখ মানুষের সমাগম ঢাকায় সম্ভব না। তবুও তারা পল্টনেই কেন সমাবেশ করতে চায়, তা খতিয়ে দেখবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আওলাদ হোসেন মার্কেটে এক অনুষ্ঠান শেষে তিনি এ সব কথা বলেন।
ঢাকার বাইরে বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল হওয়ায় বিএনপির নেতাকর্মীদের মনোবল ও আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বহুগুণে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রাজধানীতে ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের আগেই দলটির নেতাকর্মীদের সেই মনোবল ও আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরাতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা ও আটক অভিযান শুরু করা হয়েছে। চলবে আরও কয়েক দিন। বিএনপিকে দুর্বল করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব জানা গেছে।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা জানান, বিএনপির নেতাকর্মীদের আটক অভিযান অব্যাহত রেখে মনোবল দুর্বল করা যাবে, নিশ্চিত হয়েই এ কৌশলে এগোচ্ছে সরকার। এ কৌশলের কারণে আন্তর্জাতিক মনোভাব ও প্রতিক্রিয়া কী হয় সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিতে চায় আওয়ামী লীগ।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে দিতে চাইলেও কোনোভাবেই চরমপন্থা নিতে চায় না। অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটিয়ে সমালোচনার দায় নিতে চায় না ক্ষমতাসীনরা।
গতকাল বুধবার বিএনপির কার্যালয়ের সামনে পুলিশের অভিযানের সময় সংঘর্ষে মৃত্যুর ঘটনা ঠিক কী কারণে তা খতিয়ে দেখবে সরকার। অন্য কোনো পক্ষ সুবিধা নিতে চায় কি না, সেটাও সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হবে। কারণ, এমন ঘটনা সরকার বা আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা চান না।
ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের চাওয়া হলো ঢাকা মুক্ত রাখা। তাই ঢাকার বাইরে বিনা বাধায়ই বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশ করেছে। তবে ঢাকায় কর্মসূচি পালন করতে বিএনপিকে ছাড় দেওয়া হবে না, সে ব্যাপারে আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখা হয়েছে। ঢাকায় বিনা বাধায় কর্মসূচি পালন করতে থাকলে বিএনপি আরও চাঙ্গা হয়ে উঠবে। তাই বিএনপির ঢাকার কর্মসূচিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে আওয়ামী লীগ ও সরকার।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আজকে (গতকাল) বিএনপির পূর্বনির্ধারিত কোনো কর্মসূচি ছিল না। বিএনপির নেতাকর্মীরা কেন নয়াপল্টনে গেল, পুলিশের ওপর হামলা করল? এতেই প্রমাণ হয়, বোঝা যায় বিএনপির সংঘাত-নাশকতা করার পূর্বপরিকল্পনা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা করল, ককটেল ফাটাল, এত ককটেল আসে কোত্থেকে?’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘যেকোনো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কেউ কোনো বাধা দেবে না। এ জন্যই বিএনপি শান্তি নষ্ট করার কর্মসূচি বেশি করতে চায়।’
আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১০ ডিসেম্বর ঘিরে পুলিশ যেমন মাঠে থাকবে, তেমনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও সতর্ক থাকবে।
দলটির নীতিনির্ধারকরা দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, বিএনপির সংঘাত-সংঘর্ষ প্রতিরোধ করা হবে। তাই ১০ ডিসেম্বরের আগেই মাঠে নামতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীনরা। নয়াপল্টনেই বসবে গতকাল বিএনপি এমন বার্তা দিতে চাইলে বসে থাকেনি সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীও আটক করার সুযোগ তৈরি হয়। পাশাপাশি বিএনপি কার্যালয়ে তল্লাশিও করেছে পুলিশ।
সূত্র জানায়, সমাবেশের স্থান নিয়ে বিএনপি অনড় অবস্থান দেখাবে সেটা জানাই ছিল ক্ষমতাসীন দলের। সমাবেশের স্থান নিয়ে মূলত বিতর্ক শুরু হয়েছে। ফলে ইস্যু সৃষ্টি করতে হলে সমাবেশ স্থান নিয়ে বিতর্ক তোলা জরুরি ছিল। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে।
ওই সূত্র জানায়, বিএনপি যেহেতু স্থান নিয়ে অনড় অবস্থানে চলে গিয়েছে সে ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে যেতে হয়েছে সরকারকেও। এ প্রশ্নে বিএনপি যেমন ছাড় দিতে চায় না, আওয়ামী লীগও ছাড় দেবে না। ওই সূত্র আরও জানায়, সমাবেশ স্থান নিয়ে কোনো পক্ষই এখন পিছু হটবে না। যে পক্ষই পিছু হটতে যাবে সে পক্ষই একরকম পরাজয় মেনে নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১০ ডিসেম্বরের বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে কোনো ষড়যন্ত্র না থাকলে সমাবেশের স্থান নিয়ে কেন তারা অনড় অবস্থানে চলে গিয়েছে? জনগণের ভোগান্তি হবে এ কারণে সরকার জনবহুল এলাকা বাদ দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির কর্মসূচির প্রস্তাব করেছে। এ প্রস্তাবকে ভিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই।’
এদিকে ওই দিনটি ঘিরে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও দুই অংশের মেয়রদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লী। সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা থেকে ১০ ডিসেম্বরের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হবে।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, গতকাল সকাল থেকে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্থানে মিছিলসহকারে অবস্থান নেন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীদের অনেকেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে সতর্কাবস্থানে থেকেছেন। ছোট ছোট মিছিল দেখা গেছে ভূতের গলি, হাতিরপুল ও রাসেল স্কয়ারে।
বিএনপির গণসমাবেশ সামনে রেখে শুক্রবার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করবে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এ সমাবেশ থেকে নেতাকর্মীদের একটি অংশ ১০ ডিসেম্বর শনিবার পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ এলাকায় থেকে যাওয়ার কথা জানা গেছে। প্রায় প্রতিদিনই সকাল-বিকেল সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নগর উত্তর-দক্ষিণের নেতারা। সে সঙ্গে বিভিন্ন ওয়ার্ডে মহড়া দিচ্ছেন তারা।
মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ১০ ডিসেম্বর তারা টঙ্গী, আশুলিয়া ও গাবতলীতে সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করবেন। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ সাভারের রেডিও কলোনি মাঠে ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ ডেকেছে। পাশাপাশি দলটির নেতাকর্মীরা কেরানীগঞ্জেও সতর্ক পাহারার ব্যবস্থা নিয়েছেন।
রাজধানীতে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে হঠাৎ করেই গতকাল বুধবার বিকেলে পুলিশ বিএনপির কার্যালয়ের সামনে অভিযান শুরু করে। একপর্যায়ে কার্যালয়েও ঢুকে পড়ে। পুলিশ টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড মেরে বিএনপির কার্যালয়ে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে। পুলিশের অভিযানের বিষয়টি আগে থেকে আঁচ করতে পেরেছিল জানিয়ে দলটির নেতারা বলেছেন, তাদের আশঙ্কাই সত্যি হলো।
এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার গুলশানে হোটেল লেকশোরে সংবাদ সম্মেলন করবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল নয়াপল্টনে সংঘর্ষের খবর শুনে ছুটে আসেন মির্জা ফখরুল। তিনি কার্যালয়ে ঢুকতে চাইলে কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এ সময় বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার দলের কার্যালয়ে কেন আমি ঢুকতে পারব না। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চেয়েছি। সরকার ভয়াবহ ঘটনা ঘটিয়েছে। সমাবেশ বানচাল করতেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ঘটনার দায় সরকারকে নিতে হবে। পরিস্থিতি শান্ত করতে ডিএমপি কমিশনার আমাকে নয়াপল্টনে আসতে বলেছেন। অথচ আসার পরে আমাকে অফিসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।’
আচমকা পুলিশের মারমুখী আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ব্যবহার করে একটা ভয়াবহ, ভীতিকর ও উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা আশা করতে পারি না, একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ের সামনে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।’ এ সময় তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে সেখান থেকে পুলিশ প্রত্যাহারের দাবি জানান। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অন্যথায় সব দায়দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তাবে।’
কার্যালয়ের সামনে বসে দেশ রূপান্তরকে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বিতর্কিত করতে পারে সরকার এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করে গত মঙ্গলবার ঢাকার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার মিশন প্রধানদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে বলেছিলাম। এরপর ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই সরকার তার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে নয়াপল্টনে আমাদের দলীয় কার্যালয়ে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের ওপর টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করেছে। দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।’
এর আগে ২০১৩ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করেছিল গোয়েন্দা পুলিশ। তখন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দেড় শতাধিক শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার সাংবাদিকদের কাছে দাবি করে বলেন, ‘বিএনপির পার্টি অফিসে বোমা রয়েছে। পুলিশকে লক্ষ্য করেও বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে।’ তবে বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা একটা ভিডিও ফুটেজ পেয়েছি। যেখানে দেখা যাচ্ছে ডিবি পুলিশ একটি বাজারের পলিথিনের ব্যাগে করে কার্যালয়ে ঢুকছে। পুলিশ বাজারের একটি ব্যাগে করে দলের কার্যালয়ের ভেতর বোমা নিয়ে গেছে।’
১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশের স্থান ঘিরে সরকারের সঙ্গে বিএনপির দরকষাকষি চলছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। তবে বিএনপি এতে রাজি নয়। দলটি নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই গণসমাবেশ করতে চাইছে।
এ পরিস্থিতিতে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ কি করা সম্ভব এমন এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সমাবেশকে কেন্দ্র করেই তো এগুলো হচ্ছে। তারা সমাবেশকে নষ্ট করার চেষ্টা করছে।’
রাতে ফখরুলের পাশে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা : রাতে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুুম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ব্যারিস্টার কায়সার কামালের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা নয়াপল্টনে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
মির্জা আব্বাসের বাসা ঘিরে রাখা হয় : রাতে মির্জা আব্বাস অভিযোগ করে বলেন, ‘নয়াপল্টনে নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের হামলার খবর পেয়ে সেখানে যেতে চাইলে আমার বাসার সামনের গেট ও রাস্তা অবরুদ্ধ করে রাখে পুলিশ, র্যাব ও ডিবি পুলিশ। এ ছাড়া স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা আমার বাসার সামনে অবস্থান নেয়। তাদের বাধার কারণে আমি যেতে পারিনি।’
আহতদের হাসপাতালে নিতে দেয়নি পুলিশ : বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ছোড়া টিয়ার শেলে আহত নেতাকর্মীরা কার্যালয়ে অবস্থান করে বারবার আমাকে অনুরোধ করেছিলেন অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে তাদের যেন হাসপাতালে নেওয়া হয়। কার্যালয়ে আটকে পড়া জ্যেষ্ঠ নেতারা আমাকে ফোন করে অনুরোধ জানান। খবর পেয়ে আহতদের হাসপাতালে নিতে দুটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে গিয়েছিলাম বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। পুলিশ আহতদের আনতে দেয়নি। শুধু তাই নয়, অ্যাম্বুলেন্সে আঘাত করেছে। ভাঙার চেষ্টা করেছে। পরে আমরা সেখান থেকে চলে যাই।’
গত রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক হয়েছে। বৈঠক শেষে স্থায়ী কমিটির এ সদস্য দেশ রূপান্তরকে জানান, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে আজ বিকেল ৩টায় হোটেল লেকশোয় শরিক দলগুলোকে নিয়ে যে সংবাদ সম্মেলন করার কথা ছিল তা স্থগিত করা হয়েছে।
নয়াপল্টনেই সমাবেশ : সংঘর্ষের আগে গতকাল দুপুরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সরকার গ্রহণযোগ্য ও পছন্দনীয় স্থানের প্রস্তাব না করলে বিএনপি আগামী ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবে।’ রাতে স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে বলে কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন।
কাতারে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ খুব চমৎকার ভাবে হচ্ছে। আমরা দেখেছি বেশ কিছু ছোট দলকে দারুণ সব জয় পেতে। আবার অনেক দলকে দেখেছি দুর্ভাগ্যজনক ভাবে হেরে যেতে। এসবই ফুটবলের সৌন্দর্য, এজন্যই ফুটবল অনিশ্চয়তার খেলা। এখন আমরা নকআউট পর্বে পৌঁছে গেছি। আসর যত এগোবে, ছোট দলের সম্ভাবনা ততই কমে আসবে আর যেসব দল অনেক ভালো প্রস্তুতি নিয়ে আসতে পেরেছে এবং নিজেদের কৌশল ও ট্যাকটিকসকে বিশ্বকাপের ছন্দের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পেরেছে তারাই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে।
নেইমারের প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করেছে যে ব্রাজিল শিরোপার দৌড়ে এগিয়ে আছে। ব্রাজিল তাদের শেষ ম্যাচে এমন এক পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছে যা দর্শকদের কাছে মন্ত্রমুগ্ধকর আর পরবর্তী প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়ার কাছে আতঙ্কের। তিতের ব্রাজিল রীতিমতো দক্ষিণ কোরিয়ার রক্ষণকে ছিন্নভিন্ন করে প্রথমার্ধেই চারটা গোল করে দারুণ এক জয় তুলে নিয়েছে। দুঃখজনক ভাবে ম্যাচটা আমার দেখা হয়নি কারণ কাতারে গোটা দুয়েক ম্যাচ দেখার পর সেখান থেকে তখন আমি মাত্র দেশে ফিরে এসেছি।
লোকে তিতের কৌশল নিয়ে অনেক প্রশ্ন তোলে। প্রথমে অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন ফুটবলারদের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বিশ্রাম দেওয়া নিয়ে, যে ম্যাচটা ব্রাজিল হেরেছিল। এরপর প্রশ্ন ওঠে পরের ম্যাচে শুরু থেকেই কেন নেইমারকে খেলানো হচ্ছে। আমার মনে হয় তারা উত্তরটা পেয়ে গেছে। যখন নেইমার মাঠে থাকে, তখন প্রতিপক্ষ তাকে আটকে রাখতেই ব্যস্ত থাকে। তার পেছনেই দেখা যায় এক-দুইজন খেলোয়াড়কে সারাক্ষণ পাহারায়। এতে করে রিচার্লিসন, ভিনিসিয়ুস ও রাফিনহাদের জন্য অনেক জায়গা বের হয় আর তখন তারা অনেক বেশি সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। আর দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিল দলকে আমরা যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে খেলতে দেখলাম, সেটা সম্ভব হয়েছে ওই একটা ম্যাচে বিশ্রাম দেওয়ার ফলেই।
আমার মনে হয় রক্ষণটা কোন কৌশলে কাদের নিয়ে সাজাতে হবে, তার চূড়ান্ত সমাধান পেয়ে গেছে তিতে। তার এই কৌশলটা নিখুঁতভাবে কাজ করছে। মিলিতাও আরও একবার খুব ভালো খেলেছে, দানিলো বাম দিকে খেলেছে আর এটাই ওর আসল জায়গা। মাঝমাঠও খুব ভালো করেছে আর খুব জমাট ছিল, প্রতিপক্ষ বল নিয়ে সহজে মাঝমাঠই পার করতে পারেনি।
শেষ আটে লড়াইটা হবে ব্রাজিলের আক্রমণভাগের সঙ্গে ক্রোয়েশিয়ার অভিজ্ঞ রক্ষণভাগের। ক্রোয়েশিয়া দলটার সঙ্গে ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে রানার্সআপ হওয়া দলের খুব একটা পার্থক্য নেই। তবে তাদের সবারই বয়স চার বছর করে বেড়েছে। রাশিয়ায় রানার্সআপ হওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়েই জøাতকো দালিচের দল শেষ আটে ব্রাজিলের বিপক্ষে মাঠে নামবে আর প্রস্তুত হবে শেষ আটে ব্রাজিলের বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ের জন্য।
মাঝমাঠে লড়াইটা হবে কাসেমিরো আর লুকা মদ্রিচের। তারা একে অন্যকে খুব ভালো করে জানে। এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ব্রাজিল দলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে কাসেমিরো। তিতে তার ওপর খুব ভরসা করে। ৩৭ বছর বয়সী লুকা মদ্রিচকে আরও একবার কাপ জয়ের লড়াইতে দেখতে পারাটাও হবে দারুণ ব্যাপার। অভিজ্ঞতা আর নৈপুণ্য বিচার করলে মদ্রিচ কিন্তু এগিয়ে থাকবে কাসেমিরোর চেয়ে। তবে ব্রাজিলিয়ানের পক্ষে আছে তার বয়স আর রক্ষণ আগলে রাখার কৌশল। এই ম্যাচটা হবে ব্রাজিলের আক্রমণের বিপক্ষে ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণের, যারা চেষ্টা করবে শেষ পর্যন্ত গোল করার সব রাস্তা আটকে রেখে ম্যাচটা টাইব্রেকারের দিকে নেওয়ার। এই ম্যাচে তুরুপের তাস হবে নেইমার। তার আক্রমণাত্মক কৌশল আর বুদ্ধিদীপ্ততাই ভাঙতে পারে ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণ দেয়াল। এই মুহূর্তে দলে কোনো চোট সমস্যা নেই আর দারুণ সব খেলোয়াড় মাঠে নামতে মুখিয়ে আছে।
আমি আশা করছি সম্ভাব্য সেরা ফলের; আমাদের জাতীয় দল যদি এই ছন্দ ধরে রাখতে পারে তাহলে তারাই আবারও বিশ্বকাপ জিতবে।
ডুবন্ত জাহাজের সঙ্গে নাকি জাহাজের ক্যাপ্টেনকেও সলিল সমাধি নিতে হয়। কাল মিরপুরে রোহিত শর্মাকে দেখে মনে হলো এমনই এক জাহাজের অধিনায়ক, মাঝসাগরে যার সলিল সমাধি অবধারিত। বুড়ো আঙুলের চোটের কারণে ব্যাট করতে নেমেছেন ৯ নম্বরে। অন্যপ্রান্তে সঙ্গী দীপক চাহার, ভারতের জিততে তখনো ৪৫ বলে ৬৫ রান দরকার।
ভাঙা আঙুলে সেখান থেকেই দলকে প্রায় জিতিয়েই দিচ্ছিলেন রোহিত, ৫ ছক্কা আর ৩ বাউন্ডারিতে ২৭ বলে ৫১ রানের ইনিংস খেলে অসম্ভব এক সমীকরণ প্রায় মিলিয়েই দিয়েছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক। শেষ বলে জয়ের জন্য লাগত ছয় রান, সৌম্য সরকারের বলে বছর চারেক আগে কলম্বোতে যে হিসাবটা মিলিয়ে দিয়েছিলেন দীনেশ কার্তিক। কিন্তু রোহিত পারলেন না, বলা যায় মোস্তাফিজুর রহমান পারতে দিলেন না। শেষ বলটা করেছেন লেগস্টাম্পে ইয়র্কার, উড়িয়ে মারার জন্য জায়গাই দেননি রোহিতকে। তাতেই ৫ রানের জয়ে ওয়ানডে সিরিজটা ২-০ তে নিজেদের করে নিল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের বিপক্ষে রোহিত সবসময়ই সফল। ব্যাট হাতে, নেতৃত্বেও। ২০১৮ সালের নিদাহাস ট্রফিতে সে-সময়কার নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলি বিশ্রামে, নেতৃত্বে রোহিত। শেষ বলে ছক্কায় রোহিতের হাতে ট্রফি এনে দিলেন দীনেশ কার্তিক। একই বছর এশিয়া কাপ, সেখানেও ফাইনালে শ্বাসরুদ্ধকর জয়ে রোহিতের ভারতের হাতে শিরোপা। ২০১৫ ও ২০১৯, দুই বিশ্বকাপেই বাংলাদেশের বিপক্ষে শতরান। বাংলদেশের বিপক্ষে এত সাফল্য যার, অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশ সফরে এসে তাকেই কি না নিতে হচ্ছে ওয়ানডে সিরিজে হারের দায়ভার? মোহাম্মদ সিরাজের বলে সিøপে এনামুল হক বিজয়ের বলে ক্যাচ নিতে গিয়ে আঙুলে চোট পেয়েছিলেন রোহিত। শেষ চেষ্টা হিসেবেই ব্যাটিং গ্লাভস কেটে, বুড়ো আঙুলে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে ব্যাট করতে নামা রোহিতের। এভাবেও জিতিয়েই দিচ্ছিলেন ভারতকে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারলেন না। বরং কাছে এসেও হৃদয় ভাঙার যে কষ্ট ভারতের কাছে হেরে পেয়েছে বাংলাদেশ, তারই যে প্রতিশোধ দেশের মাটিতে। প্রথম ম্যাচটা শেষ উইকেটে বাংলাদেশ জিতেছে, পরের ম্যাচটা ভারত হেরেছে শেষ বলে।
এই সিরিজে টানা দ্বিতীয়বারের মতো টসে জিতলেন লিটন দাস। দলে এক পরিবর্তন, হাসান মাহমুদের জায়গায় নাসুম আহমেদকে এনে তিন স্পিনারে ভারতকে আটকানোর চেষ্টা। কিন্তু টস জেতার পর লিটন আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত জানাতেই খানিকটা বিস্ময়, রাতের শিশিরে স্পিনারদের তো বল হাতে ধরতেই সমস্যা।
গোড়াপত্তনে একটু অদল-বদল, ডান-বামের প্রথা ভেঙে লিটনের সঙ্গী আনামুল হক। কিন্তু তাতে বাংলাদেশের টপ অর্ডারের চেহারাটা একটু ভালো হলেও বদলায়নি। আগের ম্যাচে নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হয়েছিলেন প্রথম বলে, এনামুল দুই চারে ১১ রান করে আউট হলেন। শান্ত নিচে নেমে কিছু রান পেয়েছেন, ২১ রান করার পর উমরান মালিকের যে বলটায় তার স্টাম্প উড়ে গেছে সে বলের গতি ছিল ঘণ্টায় ১৫১ কিলোমিটার!
পরপর দুই ওভারে ওয়াশিংটন সুন্দরের শিকার সাকিব আল হাসান (৮) ও মুশফিকুর রহিম (১২)। দলীয় ৬৯ রানে নেই ৬ উইকেট, চোখ রাঙাচ্ছে একশর নিচে অলআউট হওয়ার চোখ রাঙানি। এমন সময় দৃশ্যপটে মেহেদি হাসান মিরাজের আগমন। আগের ম্যাচে বাংলাদেশকে অবিস্মরণীয় এক জয় এনে দিয়েই নিজের কাজটা শেষ মনে করেননি মিরাজ, কাল আবারও দায়িত্বশীল ইনিংসে বুঝিয়ে দিলেন ব্যাটিংয়ের হাতটা খারাপ নয় তার। সপ্তম উইকেটে মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে ১৬৫ বলে ১৪৮ রানের জুটি গড়েন মিরাজ। আগের ম্যাচে নেতিবাচক মানসিকতার ব্যাটিং করায় বেশ সমালোচনাই শুনতে হয়েছে মাহমুদউল্লাহকে। কাল ফের দেখালেন, আগের সেই ঝলক এখনো খানিকটা আছে তার ব্যাটে।
৯৬ বলে ৭৭ রানে আউট হয়েছেন মাহমুদউল্লাহ, তবে মিরাজকে আউট করা যায়নি। শেষ ওভারে ১৫ রান নিয়ে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করার পাশাপাশি বাংলাদেশকেও ২৭১ রানের সংগ্রহে পৌঁছে দিয়েছেন মিরাজ। ১০ রানে ৩ উইকেট ওয়াশিংটন সুন্দরের, জোড়া শিকার উমরান মালিক ও মোহাম্মদ সিরাজের।
বছর তিনেক আগে, ইডেনে গোলাপি বলের টেস্টে বিরাট কোহলিকে আউট করার পর সেই যে স্যালুট ঠুকেছিলেন ইবাদত হোসেন, তার প্রায় তিন বছর ধরে ভারতের এই ব্যাটসম্যানের কোনো শতরান ছিল না! কাল সেই ইবাদতকে পুল করতে গিয়ে স্টাম্পে বল টেনে আনলেন কোহলি। রোহিতের অবর্তমানে ইনিংসের সূচনায় নেমে মাত্র ৫ রানে বোল্ড হয়ে ফেরেন কোহলি, মোস্তাফিজের বলে মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট শিখর ধাওয়ানও। ১৩ রানে নেই ভারতের ২ উইকেট। ওয়াশিংটন সুন্দরকে (১১) আগে পাঠিয়েও লাভ হয়নি, ভরসা জোগাতে পারেননি লোকেশ রাহুলও (১৪)। ভারতকে ম্যাচে রাখে শ্রেয়াশ আইয়ার আর অক্ষর প্যাটেলের ১০৭ রানের জুটি।
কিন্তু এই দুজনের দ্রুত বিদায়ে ভারত যখন হারের দোরগোড়ায়, তখনই দৃশ্যপটে রোহিতের আগমন। ভাঙা আঙুল নিয়ে ব্যাট করে ভারতকে জিতিয়েই দিচ্ছিলেন রোহিত, যদিও তাকে শেষ পর্যন্ত টিকিয়ে রাখার জন্য বাংলাদেশের ফিল্ডারদের অবদানও কম নয়। মাহমুদউল্লাহ’র করা ৪৯তম ওভারটায় রোহিত কোনো সিঙ্গেলস নেননি, জায়গায় দাঁড়িয়ে ব্যাট চালিয়ে শুধু ছক্কার চেষ্টাই করে গেছেন। দুটো ছক্কা হয়েছে, ক্যাচ পড়েছে দুটো। একবার ফেলেছেন ইবাদত, আরেকবার আনামুল
শেষ ওভারে মোস্তাফিজকে আটকাতে হবে ২০ রান, প্রথম বলটা ডট হলেও পরের দুই বলে দুই বাউন্ডারিতে লক্ষ্যের কাছে পৌঁছে যায় ভারত। শেষ তিন বলে ভারতের চাই ১২ রান, মোস্তাফিজ একটা ডট বল দিলেও পরের বলটায় সোজা ছয় মারেন রোহিত। আবারও শেষ বলে ছয় রানের সমীকরণ, কিন্তু এবার আর কলম্বো ফিরল না ঢাকায়। মোস্তাফিজের ইয়র্কারে নিশ্চিত হলো বাংলাদেশের ৫ রানের জয়, সেই সঙ্গে ২-০ তে নিশ্চিত হলো সিরিজও।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে আরকান্দি গ্রাম পর্যন্ত এক কিলোমিটার যমুনা নদীর ভাঙ্গণ এলাকার পাশ থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ কারণে ভাঙ্গণ এলাকায় হাজার হাজার বালুর বস্তা ডাম্পিং করেও ভাঙ্গণরোধ করা যাচ্ছে না। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা এ বাবদ খরচ হলেও কোনো কাজেই আসছে না বালুর বস্তা ডাম্পিং করে।
অপরদিকে অব্যাহত ভাঙ্গণের তাণ্ডবে প্রতিদিনই নদীগর্ভে বাড়িঘর বিলিন হয়ে যাওয়ায় এ এলাকার মানুষ গৃহহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে বাস করছে ও মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণগ্রামের নাজমা খাতুন আব্দুল কাদের, ইয়াহিয়া, জহুরুল ইসলাম, এমদাদুল হক মিলন, আরকান্দি গ্রামের মেহেদী হাসান, হালিমা খাতুন ও রেমান সরকার বলেন, গত ২ সপ্তাহ ধরে এখানে ব্যাপক ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে। এই ভাঙ্গণের তাণ্ডবে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ও বহু গাছপালা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এ ভাঙ্গণের তাণ্ডবে গৃহহারা হয়ে শত শত মানুষ অন্যত্র চলে গেছে। অনেকে আবার খোলাস্থানে ছাপড়া তুলে বাস করছে ও মানবেতর জীবন যাপন করছে।
তারা আরও বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড এ ভাঙ্গণ এলাকায় বালুর বস্তা ফেলার কাজ শুরু করেছে। কিন্তু ঠিকাদারের লোকজন ধীরগতিতে কাজ করায় তা কোনো কাজেই আসছে না। যেসব স্থানে বস্তা ফেলা হচ্ছে দুই দিন না যেতেই সেখানে আবার ভাঙ্গণ দেখা দিচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ ভাঙ্গণ এলাকার ৫০ থেকে ১০০ গজ দূরে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে বস্তা ফেলার কয়েকদিন না যেতেই ওই এলাকায় আবারও ভাঙ্গণ দেখা দিচ্ছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট হলেও ভাঙ্গণ রোধ হচ্ছে না।
তারা আরও বলেন, শুষ্ক মৌসুমে বস্তা ফেলার কাজ না করে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়ে যখন ব্যাপক ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে, তখন ঠিকাদারের লোকজন ধীরগতিতে ২/৪ নৌকা বস্তা ফেলে চলে যায়। ২-৩ দিন না যেতেই তা আবার ভেঙ্গে যমুনায় বিলিন হয়ে যায়। ফলে এ বস্তা ফেলা কোনো কাজেই আসছে না। অপরদিকে ঠিকাদারকে বালু সরবরাহের নামে এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রতিদিন ১৫/২০ ট্রলারে করে বালু অন্যত্র বিক্রি করছে। ফলে এ ভাঙ্গণের তাণ্ডব আরও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
এ বিষয়ে বালু সরবরাহকারী খোরশেদ আলম, জয়নাল সরকার ও ফজলু ব্যাপারী এলাকাবাসীর এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে অন্যত্র বিক্রি করা হচ্ছে না। ঠিকাদারের লোকজন বালু উত্তোলন করে তা বস্তায় ভরে ভাঙ্গণ স্থানে ফেলছে। আমরা শুধু তাদের কাজে সহযোগিতা করছি। একটি কুচক্রিমহল ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে আমাদের নামে মিথ্যা অপপ্রচার করছে।
এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদার আব্দুর রাজ্জাকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন বলেন, নদীভাঙ্গণ রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বস্তা ফেলার কাজ শুরু করেছে। অচিরেই এ সমস্যা আর থাকবে না।
ভাঙ্গণ এলাকার অদূরে যমুনা নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে অন্যত্র বিক্রির বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান বলেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে খুকনি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের মোবাইল ফোনে কল করা হলে ফোনটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিশ্বের প্রায় সব দেশই। অধিকাংশ দেশই তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির কথা প্রায় সবারই জানা, তারাও ইতিমধ্যে তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। ফলাফল ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) বা মূল্যস্ফীতিতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সিপিআই ইনডেক্সে এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বাজেটের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আগামী অর্থবছরে সরকার কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজেট প্রস্তাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পরাবাস্তব বাজেট। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা আসলে সম্ভব নয়। গত ১১ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, আগের বছরের মে মাসে যে পণ্য গড়ে ১০০ টাকা কিনতে হয়েছে, এ বছরের মে মাসে তা কিনতে হচ্ছে গড়ে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সায়। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ধরুন আগের বছরের একই সময়ে ৫০০ টাকার একটি নোটে কোনো ব্যক্তি পাঁচটি পণ্য কিনতে পেরেছিলেন। এ বছরের একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এখন একই টাকায় তিনটি পণ্য কিনতে পারছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১ বছরে বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ : ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, অথচ এ বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ বছরের এপ্রিল মাসেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এক বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ : বিবিএসের তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৬৪ শতাংশ।
গ্রামের চেয়ে শহরের মূল্যস্ফীতি বেশি : এক বছর আগেও শহরের মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে কম ছিল। কারণ গ্রামের চেয়ে শহরে পণ্য মজুদের আধুনিক ব্যবস্থা আছে। তবে সরকারি উদ্যোগে শহরের মতো গ্রামেও কিছু স্থানে খাদ্যগুদামের ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় এখন শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। মে মাসে শহর এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, একই সময়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বিশ্বে কমেছে মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশে বাড়ছে : গত শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, গত এপ্রিলে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেখান থেকে ৪৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখান থেকে ৩৪ শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে ইইউ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তবে বাংলাদেশ এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো গত বছর আগস্টে এক ঘোষণাতেই জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ দেরিতে হলেও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে এ সুদহার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে নীতি সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আভাস দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দাবি করেছে, বিশে^র দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে হার, তা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য হুমকি। মূল্যস্ফীতির এই হার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এরকম এক সময়ে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এ দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে।
যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে আসে। জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হয় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছিল।
মজুরি সূচক বেড়েছে : বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩২ শতাংশে।
দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে হাইড্রোলিক পাওয়ার স্টেশনে তীব্র পানির সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনাবৃষ্টি এবং তীব্র তাপদাহে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে এই সংকট দেখা দিয়েছে। ৫টি ইউনিটের মধ্যে কোনরকমে মাত্র ১টি ইউনিট সচল রেখে সর্বনিম্ন ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৬ জুন) সকালে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আবদুজ্জাহের জানান, হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি জানান, পানির অভাবে কেন্দ্রের সব ক’টি ইউনিট সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে ঠেকেছে। তিনি আরও জানান, কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে ১ নম্বর ইউনিটটি চালু রাখা হয়েছে। এই ইউনিট হতে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। অথচ এই কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট সচল থাকলে প্রায় ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে পাঠানো হয়। সেখানে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট।
এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, বছরের এই সময়ে কখনই পানি এতো নিচে থাকে না। এ বছর এখনো বৃষ্টিপাত শুরু না হওয়ায় খুবই বিপাকে পড়তে হয়েছে আমাদের। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মাত্র একটি ইউনিট চালু আছে। আমরাও বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি।
কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বরত প্রকৌশলী জানান, গত মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের পানির পরিমাণ ৭৩ দশমিক ৬২ ফুট (মিন সি লেভেল) ছিল। রুলকার্ভ অনুযায়ী এসময় হ্রদে পানি থাকার কথা ৭৮ দশমিক ২০ ফুট এমএসএল (মিন সি লেভেল)। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর বৃষ্টিপাত না হলে এই সংকট হতে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে জানান প্রকৌশলীরা।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানায়, অনাবৃষ্টি, বন উজার হওয়া, কাপ্তাই হ্রদে নাব্যতা সংকটের কারণে পানি তলানিতে চলে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে এমন বিপর্যয় ঘটেছে। সঙ্গতকারণে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে পানি কমে যাওয়ার ফলে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়, কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। হ্রদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি উপজেলার সাথে নৌপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কাপ্তাই হ্রদের পাশে বসবাসকারী নুরুল ইসলাম জানান, ভারী বৃষ্টিপাত না হলে হ্রদে পানি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তাই দ্রুত সময়ে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং করা প্রয়োজন। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদের গভীরতা যেমন বাড়বে তেমনি এই সমস্যা থেকে কিছুটা সমাধান পাওয়া যাবে।
বিলাইছড়ি বাজারের ব্যবসায়ী ইসমাঈল হোসেন জানান, বিলাইছড়িতে নৌপথ বন্ধ মানেই জীবন ও জীবিকার দুর্বিষহ অবস্থা। আমরা বিলাইছড়িবাসীই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি হ্রদের পানি কমে যাওয়ায়। বৃষ্টি হতে যত দেরি হবে আমাদের কষ্ট তত বেশি দীর্ঘায়িত হবে।
তিনি বলেন, হ্রদের পানি অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় বাজারের পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। বড় বোটতো আসতেই পারছে না, ছোট ছোট বোটে পণ্য পরিবহনে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে, পর্যাপ্ত পণ্যও আনা যাচ্ছে না। আবার অনেক দূর থেকে পণ্য বাজারে তুলতে শ্রমিকদের বাড়তি মজুরি দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে সাপ্তাহিক বাজারও এখন ঠিকমতো জমছে না। কারণ দূর থেকে মানুষজন আসতে পারছে না। এখন বৃষ্টি হওয়া ছাড়া পানি বাড়ার তো আর কোনো সম্ভাবনা নেই।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।