
কাতারে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ খুব চমৎকার ভাবে হচ্ছে। আমরা দেখেছি বেশ কিছু ছোট দলকে দারুণ সব জয় পেতে। আবার অনেক দলকে দেখেছি দুর্ভাগ্যজনক ভাবে হেরে যেতে। এসবই ফুটবলের সৌন্দর্য, এজন্যই ফুটবল অনিশ্চয়তার খেলা। এখন আমরা নকআউট পর্বে পৌঁছে গেছি। আসর যত এগোবে, ছোট দলের সম্ভাবনা ততই কমে আসবে আর যেসব দল অনেক ভালো প্রস্তুতি নিয়ে আসতে পেরেছে এবং নিজেদের কৌশল ও ট্যাকটিকসকে বিশ্বকাপের ছন্দের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পেরেছে তারাই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে।
নেইমারের প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করেছে যে ব্রাজিল শিরোপার দৌড়ে এগিয়ে আছে। ব্রাজিল তাদের শেষ ম্যাচে এমন এক পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছে যা দর্শকদের কাছে মন্ত্রমুগ্ধকর আর পরবর্তী প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়ার কাছে আতঙ্কের। তিতের ব্রাজিল রীতিমতো দক্ষিণ কোরিয়ার রক্ষণকে ছিন্নভিন্ন করে প্রথমার্ধেই চারটা গোল করে দারুণ এক জয় তুলে নিয়েছে। দুঃখজনক ভাবে ম্যাচটা আমার দেখা হয়নি কারণ কাতারে গোটা দুয়েক ম্যাচ দেখার পর সেখান থেকে তখন আমি মাত্র দেশে ফিরে এসেছি।
লোকে তিতের কৌশল নিয়ে অনেক প্রশ্ন তোলে। প্রথমে অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন ফুটবলারদের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বিশ্রাম দেওয়া নিয়ে, যে ম্যাচটা ব্রাজিল হেরেছিল। এরপর প্রশ্ন ওঠে পরের ম্যাচে শুরু থেকেই কেন নেইমারকে খেলানো হচ্ছে। আমার মনে হয় তারা উত্তরটা পেয়ে গেছে। যখন নেইমার মাঠে থাকে, তখন প্রতিপক্ষ তাকে আটকে রাখতেই ব্যস্ত থাকে। তার পেছনেই দেখা যায় এক-দুইজন খেলোয়াড়কে সারাক্ষণ পাহারায়। এতে করে রিচার্লিসন, ভিনিসিয়ুস ও রাফিনহাদের জন্য অনেক জায়গা বের হয় আর তখন তারা অনেক বেশি সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। আর দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিল দলকে আমরা যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে খেলতে দেখলাম, সেটা সম্ভব হয়েছে ওই একটা ম্যাচে বিশ্রাম দেওয়ার ফলেই।
আমার মনে হয় রক্ষণটা কোন কৌশলে কাদের নিয়ে সাজাতে হবে, তার চূড়ান্ত সমাধান পেয়ে গেছে তিতে। তার এই কৌশলটা নিখুঁতভাবে কাজ করছে। মিলিতাও আরও একবার খুব ভালো খেলেছে, দানিলো বাম দিকে খেলেছে আর এটাই ওর আসল জায়গা। মাঝমাঠও খুব ভালো করেছে আর খুব জমাট ছিল, প্রতিপক্ষ বল নিয়ে সহজে মাঝমাঠই পার করতে পারেনি।
শেষ আটে লড়াইটা হবে ব্রাজিলের আক্রমণভাগের সঙ্গে ক্রোয়েশিয়ার অভিজ্ঞ রক্ষণভাগের। ক্রোয়েশিয়া দলটার সঙ্গে ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে রানার্সআপ হওয়া দলের খুব একটা পার্থক্য নেই। তবে তাদের সবারই বয়স চার বছর করে বেড়েছে। রাশিয়ায় রানার্সআপ হওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়েই জøাতকো দালিচের দল শেষ আটে ব্রাজিলের বিপক্ষে মাঠে নামবে আর প্রস্তুত হবে শেষ আটে ব্রাজিলের বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ের জন্য।
মাঝমাঠে লড়াইটা হবে কাসেমিরো আর লুকা মদ্রিচের। তারা একে অন্যকে খুব ভালো করে জানে। এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ব্রাজিল দলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে কাসেমিরো। তিতে তার ওপর খুব ভরসা করে। ৩৭ বছর বয়সী লুকা মদ্রিচকে আরও একবার কাপ জয়ের লড়াইতে দেখতে পারাটাও হবে দারুণ ব্যাপার। অভিজ্ঞতা আর নৈপুণ্য বিচার করলে মদ্রিচ কিন্তু এগিয়ে থাকবে কাসেমিরোর চেয়ে। তবে ব্রাজিলিয়ানের পক্ষে আছে তার বয়স আর রক্ষণ আগলে রাখার কৌশল। এই ম্যাচটা হবে ব্রাজিলের আক্রমণের বিপক্ষে ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণের, যারা চেষ্টা করবে শেষ পর্যন্ত গোল করার সব রাস্তা আটকে রেখে ম্যাচটা টাইব্রেকারের দিকে নেওয়ার। এই ম্যাচে তুরুপের তাস হবে নেইমার। তার আক্রমণাত্মক কৌশল আর বুদ্ধিদীপ্ততাই ভাঙতে পারে ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণ দেয়াল। এই মুহূর্তে দলে কোনো চোট সমস্যা নেই আর দারুণ সব খেলোয়াড় মাঠে নামতে মুখিয়ে আছে।
আমি আশা করছি সম্ভাব্য সেরা ফলের; আমাদের জাতীয় দল যদি এই ছন্দ ধরে রাখতে পারে তাহলে তারাই আবারও বিশ্বকাপ জিতবে।
বিএনপির আগামী ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা চলা সংঘর্ষের সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। টিয়ার শেলের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে বিএনপি কার্যালয় ও এর আশপাশের এলাকা। এ সময় মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মকবুল হোসেন নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তাকে নিজেদের দলীয় কর্মী বলে দাবি করেছে বিএনপি। এ ছাড়া সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের ছোড়া শর্টগানের গুলিতে দলের আরও অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতারা।
দলটির নেতাদের অভিযোগ, হঠাৎ করে পুলিশ দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে তাদের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। একই সঙ্গে কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে দরজা-জানালা ভাঙচুর করে। তবে পুলিশ বলছে, যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে গেলে তারা প্রথমে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। বিএনপি কার্যালয়ের ভেতর থেকে শতাধিক নেতাকর্মীকে আটকের পর বিপুলসংখ্যক ককটেল উদ্ধার করা হয় বলেও জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
এদিকে সংঘর্ষ শেষে সন্ধ্যায় বিএনপি কার্যালয়ে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ, যা শেষ হয় রাত ৯টায়। সেখান থেকে দলটির কয়েকজন শীর্ষ নেতাসহ তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল থেকেই বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। সব মিলিয়ে দুই হাজারের বেশি নেতাকর্মী হাজির হন। সেখানে দুটি ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়ে নেতারা বক্তব্য রাখছিলেন। বিকেল ৩টার দিকে পুলিশ তাদের রাস্তা ছেড়ে চলে যেতে অনুরোধ জানায়। কিন্তু নেতাকর্মীরা সেই অনুরোধে সাড়া না দিলে পুলিশ তাদের রাস্তা থেকে সরানোর চেষ্টা করে। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ তখন রাবার বুলেট, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। বিএনপি নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে আশপাশের অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতর থেকেও ইটপাটকেল ছোড়া হয়। আবার নেতাকর্মীদের ছুড়ে মারা ইটের টুকরো তুলে তা পাল্টা নিক্ষেপ করতেও দেখা যায় পুলিশকে। নয়াপল্টনের প্রধান সড়কে অবস্থান নেয় পুলিশ। বিকেল সাড়ে ৩টার মধ্যে পুরো পল্টনের রাস্তা নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। এরপর থেমে থেমে কয়েক দফা দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্ক ও ফকিরেরপুল এলাকায় মুখোমুখি অবস্থান নেয় পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা। সংঘর্ষ চলাকালে নয়াপল্টন, ফকিরেরপুল এবং নাইটিঙ্গেল ও কাকরাইল মোড় পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। বিএনপি কার্যালয়ের উল্টো পাশ থেকে দলটির নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু ককটেল ছুড়লে বিস্ফোরণের ধোঁয়ায় পুরো এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরপর হঠাৎ করেই বিএনপি নেতাকর্মীরা গলি থেকে বেরিয়ে এসে ককটেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় পুলিশকেও পাল্টা আক্রমণ করতে দেখা গেছে। পুলিশ দফায় দফায় টিয়ার শেল ছুড়তে থাকে। ফকিরেরপুল পানির ট্যাঙ্কের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সংঘর্ষ শুরুর আগে সকাল থেকে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন সেøাগান দিতে থাকেন। মাইক ও ব্যানারসহ কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী মঞ্চও ছিল। একপর্যায়ে মাইক্রোফোনে ঘোষণা দেওয়া হয় নেতাকর্মীদের রাস্তায় বসে পড়তে। মুহূর্তে শত শত নেতাকর্মী রাস্তায় বসে পড়লে ফকিরেরপুল থেকে কাকরাইল পর্যন্ত রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ আগে থেকেই সেখানে সতর্ক অবস্থানে ছিল। প্রিজন ভ্যান ও জলকামানও প্রস্তুত রাখা ছিল।
সংঘর্ষ চলাকালেই আহত কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মকবুল হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক পৌনে ৪টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, সংঘর্ষ শুরুর পর অসংখ্য নেতাকর্মীর সঙ্গে আহত ব্যক্তিরাও বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান নেন। এই সময় পুলিশ কার্যালয়ের ভেতর কাঁদানে গ্যাসের কয়েকটি শেল ছোড়ে। তখন বিএনপির পক্ষ থেকে চারটি অ্যাম্বুলেন্স নয়াপল্টন কার্যালয়ের সমানে এলে সেগুলোকে দাঁড়াতে দেয়নি পুলিশ। তারা দাবি করেন, ভেতরে অবস্থান নেওয়া অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন আহত ছিলেন। কাঁদানে গ্যাসের কারণে তাদের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, সন্ধ্যা ৫টা ২০ মিনিটে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য নিয়ে বিএনপি কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় দরজা বন্ধ পান। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। সেখান থেকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, প্রচার সম্পাদক ও মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আমান উল্লাহ আমানসহ দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করেন। এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে ছুটে এলেও তাকে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। দলীয় কার্যালয়ের গেট আটকে রাখলে গেটের সামনেই বসে পড়েন। সেখানে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা ন্যক্কারজনক হামলা। পুলিশ গেট বন্ধ করে ভেতরে তল্লাশির নামে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। ভেতরে বিস্ফোরক ঢুকিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। এটা অসাংবিধানিক।’
আটকের আগে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের এ গুলি চালানো সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ বানচাল করতে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থানরত নিরীহ নেতাকর্মীদের ওপর গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়েছে।’
নেতাকর্মীদের আটকের পর কার্যালয়ের সামনে থেকে সমাবেশের প্রচারের কাজে থাকা দুটি ট্রাক র্যাকার দিয়ে টেনে নিয়ে যায় পুলিশ।
সংঘর্ষ থামার পর ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল জোনের উপ-কমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সমাবেশের স্থান নিয়ে যখন আলোচনা চলছে তখন এই সংঘর্ষ শুরু হলো। সকাল থেকে পল্টনে বিএনপির নেতাকর্মীরা ভিড় করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে পুরো রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। আমরা তাদের সরে যেতে বারবার অনুরোধ করি। কিন্তু তারা আমাদের কথা শোনেননি। একপর্যায়ে তাদের সরিয়ে দিতে গেলে তারা পুলিশের ওপর হামলা করেন।’
তল্লাশি অভিযান শেষে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশিদ বলেন, বিএনপি কার্যালয় থেকে নগদ ২ লাখ টাকা, ১৬০ বস্তা চাল, পৌনে ২ লাখ পানির বোতলসহ রান্নার উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া অবিস্ফোরিত ১৫টি বোমা পাওয়া গেছে।
বিএনপি কার্যালয় থেকে ৩০০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আটকদের কারও বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, কারও বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। মামলার বাইরে যাদের আটক করা হয়েছে, যাচাই-বাছাই করে তাদের বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পেশায় কাপড়ের কারিগর ছিলেন নিহত মকবুল : নয়াপল্টনের সংঘর্ষে নিহত মকবুল হোসেন (৪৫) পেশায় কাপড় তৈরির কারিগর ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে। বাবার নাম মৃত আবদুস সামাদ। তিনি মিরপুর-১১’র লালমাটিয়া বাউনিয়া বাঁধের টিনশেড বাসায় ভাড়া থাকতেন। মকবুলের লাশ শনাক্ত করেন ভাই নুর হোসেন। তার লাশ দেখতে পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে ছুটে আসেন। এ সময় তাদের আহাজারিতে হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। নিহত মকবুল গতকাল সকালে বাসা থেকে বের হন বলে জানান স্ত্রী হালিমা আক্তার। তাদের এক কন্যাসন্তান রয়েছে।
আইন অমান্য করে সমাবেশ করলে সর্বোচ্চ ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি : ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, জননিরাপত্তা ও জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে নয়াপল্টনে বিএনপিকে গণসমাবেশের অনুমতি দেওয়া যাবে না। আইন অমান্য করলে বিএনপির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকাল সন্ধ্যায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘নয়াপল্টনের সামনে ১০ লাখ লোকের জায়গা হবে না। সর্বোচ্চ এক লাখ লোক দাঁড়াতে পারবে। বাকি ৯ লাখ লোক ঢাকা শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ছড়িয়ে পড়বে। যার ওপর বিএনপির কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। আমরা গোয়েন্দা সংস্থা এবং মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি, বিএনপি ঢাকা শহরে ১০ লাখ লোক জমায়েতের মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। কাজেই পার্টি অফিসের সামনে জনদুর্ভোগ করে এবং ঢাকার আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন করে তাদের সেখানে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া যাবে না।’
প্রচলিত নিয়ম মেনেই সভা-সমাবেশ করতে হবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, বিএনপিকে দেশের প্রচলিত নিয়ম মেনেই সভা-সমাবেশ করতে হবে। ২০-২৫ লাখ মানুষের সমাগম ঢাকায় সম্ভব না। তবুও তারা পল্টনেই কেন সমাবেশ করতে চায়, তা খতিয়ে দেখবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আওলাদ হোসেন মার্কেটে এক অনুষ্ঠান শেষে তিনি এ সব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত সংসদ নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ায় কক্সবাজারবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আসছে সংসদ নির্বাচনে নৌকার জন্য ভোট চান। তিনি বলেন, আপনারা ’১৮-তে নৌকায় ভোট দিয়েছেন। আমরা ক্ষমতায় এসেছি। টানা তিনবার ক্ষমতায় রয়েছি। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ভোট হবে, সেবারও আমাকে ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করবেন।
গতকাল বুধবার কক্সবাজারের শহীদ শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়োজিত আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনের জন্য নৌকার পক্ষে থাকার এ আহ্বান জানান।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার নিজেরও কক্সবাজার খুবই প্রিয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা কি নৌকায় ভোট দেবেন? আপনারা হাত তুলে ওয়াদা করেন দেবেন কি না।’ এ সময় জনসভাস্থল থেকে হাত তুলে লাখো লাখো জনতা ‘শেখ হাসিনার সরকার বারবার দরকার’ স্লোগান দিতে থাকেন।
সমাবেশস্থল স্টেডিয়াম মাঠ ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ। বেলা ১টার মধ্যে সমাবেশস্থল পূর্ণ হয়ে যায়। বাকিরা স্টেডিয়াম মাঠের বাইরে দাঁড়িয়েই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনেন। কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কক্সবাজারবাসী, আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাই যে আপনারা ২০১৮ সালের নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের প্রার্থীদের জয়যুক্ত করেছিলেন। ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮বারবার আপনারা ভোট দিয়েছেন। আপনাদের ভোট বৃথা যায়নি।’ সাগরপাড়ের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভাস্থলের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি লোক ছিল রাস্তায়। শহরের লালদীঘির পাড় থেকে শুরু করে হলিডের মোড় হয়ে কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্ট পর্যন্ত ছিল লোকারণ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার এলেন সাড়ে ৫ বছর পর। তবে এর মধ্যে তার সরকার টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কক্সবাজারের উন্নয়নে রেকর্ড পরিমাণ বরাদ্দ দেয়। এই উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে অভিভূত কক্সবাজারবাসী। গত মঙ্গলবার থেকেই চকরিয়া, পেকুয়া, টেকনাফ ও মহেশখালী থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী কক্সবাজার এসে জড়ো হন। আর গতকাল সকাল থেকেই মিছিল আর মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় পুরো এলাকা। উৎসবের সাজে সড়কে সড়কে শোভা পায় ফেস্টুন, ব্যানার।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই আমার সংগ্রাম। যে লক্ষ্য সামনে নিয়ে আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সে লক্ষ্যেই আমি কাজ করছি।’
বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বাংলার জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনারা বারবার ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেছেন বলেই আমি দেশের জন্য কাজ করতে পারছি।’
জামায়াত-বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস, খুন ও মানি লন্ডারিং দিয়েছে : জামায়াত-বিএনপি এ দেশের মানুষকে কী দিয়েছে? এই প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস, খুন, মানি লন্ডারিং এগুলো দিয়েছে। তিনি বিএনপি-জামায়াতকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘যারা দেশের উন্নয়ন না করে সম্পদ বিদেশে পাচার করেছে, লুট করেছে এবং জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে তারা কীভাবে জনগণের পাশে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতিমের টাকা মেরে খাওয়া ও বিদেশে সম্পদ পাচারই ছিল খালেদা-তারেকের কাজ। তারা দেশের শান্তি চায় না। অস্ত্র মামলায় এখনো তাদের একজন সাজা ভোগ করছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড বোমা হামলা ঘটিয়েছে ওরা। তারা জ্বালাও-পোড়াও ছাড়া কিছুই পারে না।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘যে গ্রেনেড যুদ্ধের মাঠে ব্যবহার করা হয়, সেই গ্রেনেড মারা হয়েছিল আমাদের ওপর। গ্রেনেড হামলায় আমাদের আইভি রহমানসহ অনেকে মারা গেছেন। আল্লাহর রহমতে আমি সেদিন বেঁচে গিয়েছিলাম। ধ্বংস করা ছাড়া বিএনপি-জামায়াত এ দেশকে কিছুই দিতে পারে না। পঁচাত্তরের পর এরা ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল। কী দিয়েছে বাংলাদেশকে? তারা কিছুই দিতে পারেনি।’
আবার আসিব ফিরে, এই কক্সবাজার সমুদ্রের তীরে : শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বাবা যখন জেল থেকে বের হতেন, তখন আমাদের কক্সবাজার নিয়ে আসতেন। আমরা এখানে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। এতই উন্নয়ন করেছি, একসময় দেখবেন, এই মহেশখালী সিঙ্গাপুরের চেয়ে সুন্দর হবে।’ ভবিষ্যতে কক্সবাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কুতুবদিয়া ও মহেশখালীতে আরও দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দেব। আমাদের সব সময়ের লক্ষ্য এ অঞ্চলের উন্নয়ন। মানুষের সমস্যা আমরা জানি, আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি।’ কক্সবাজারকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করে কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতা ‘আবার আসিব ফিরে’-এর অনুকরণে ‘ আবার আসিব ফিরে, এই কক্সবাজার সমুদ্রের তীরে’-এই পঙ্তি দিয়ে তিনি বক্তব্য শেষ করেন।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কেউ কক্সবাজারের দিকে মুখ ফিরে তাকায়নি : প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর এই কক্সবাজার তথা বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের প্রতি কেউ ফিরে তাকায়নি। দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কক্সবাজারকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছিল। কক্সবাজারে একে একে ১২টি মেগা প্রকল্পসহ ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্প কক্সবাজারে চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে ২৯টি প্রকল্প সমাপ্ত করতে পেরেছি। কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, রেললাইন, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে জনগণ এর সুফল ভোগ করবে। বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধিশীল দেশে রূপান্তরের কাজ চলছে। ২০৪১ সালে আমরা সে লক্ষ্যে পৌঁছাব, ইনশা আল্লাহ। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশে কোনো মানুষ ঠিকানাহীন ও গৃহহীন থাকবে না।’
জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ কেন্দ্রীয় এবং জেলা পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
নজর কেড়েছে সেলিমের মোটরসাইকেল: রংবেরঙের টিশার্ট-টুপি পরে মিছিলে মিছিলে দলে দলে সবাই ছুটছেন শেখ হাসিনার জনসভায়। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে সমাবেশস্থলের একটু সামনের মোটেল রোডের লাবণী মোড়ের তিন রাস্তার মাথায় উৎসুক জনতার দৃষ্টি আটকে গেল একটি মোটরসাইকেলের আরোহীর দিকে। মিছিল থেকে বেরিয়ে অনেকেই তার সঙ্গে সেলফি তুলছেন। কেউ কেউ গল্পও জুড়ে দিয়েছেন লাল-সবুজ টুপি ও বাদামি রঙের পাঞ্জাবির ওপর মুজিব কোট পরিহিত মধ্যবয়সী ওই লোকের সঙ্গে। এই মোটরসাইকেলের পেছনেই শোভা পাচ্ছে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা। জাতীয় পতাকার সঙ্গে মিলিয়ে লাল-সবুজ রঙের সাজানো হয়েছে নৌকাটি। এতে লেখা রয়েছে নৌকায় ভোট দিন। তার নাম মোহাম্মদ সেলিম। তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম মাদারবাড়ী এলাকার। নৌকার আদলের মোটরসাইকেল নিয়ে ১৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ক পাড়ি দিয়ে এসেছেন শেখ হাসিনার ভাষণ শুনতে।
পেট্রলবোমায় নিহত বাবা, বিচার দাবি : ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি কাতার যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকায় যাচ্ছিলেন কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলীর ইউসুফ। কিন্তু কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পৌঁছার পর ঢাকাগামী বাসে আগুন-সন্ত্রাসীদের পেট্রলবোমা হামলায় মারা যান তিনি। এর সাত বছরে সেই ঘটনার বিচার হয়নি। নিহত বাবার হত্যার বিচার চেয়ে গতকাল ফেস্টুন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশস্থলের সামনের সড়কে অবস্থান করছিলেন জাহেদ ইসলাম রুবেল। প্রধানমন্ত্রীর নজরে পড়লেই বাবা হত্যার বিচার পাবেন এমন আশায় সারা দিনই তিনি ছিলেন সমাবেশস্থলের আশপাশে।
ঢাকার বাইরে বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল হওয়ায় বিএনপির নেতাকর্মীদের মনোবল ও আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বহুগুণে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রাজধানীতে ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের আগেই দলটির নেতাকর্মীদের সেই মনোবল ও আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরাতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা ও আটক অভিযান শুরু করা হয়েছে। চলবে আরও কয়েক দিন। বিএনপিকে দুর্বল করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব জানা গেছে।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা জানান, বিএনপির নেতাকর্মীদের আটক অভিযান অব্যাহত রেখে মনোবল দুর্বল করা যাবে, নিশ্চিত হয়েই এ কৌশলে এগোচ্ছে সরকার। এ কৌশলের কারণে আন্তর্জাতিক মনোভাব ও প্রতিক্রিয়া কী হয় সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিতে চায় আওয়ামী লীগ।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে দিতে চাইলেও কোনোভাবেই চরমপন্থা নিতে চায় না। অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটিয়ে সমালোচনার দায় নিতে চায় না ক্ষমতাসীনরা।
গতকাল বুধবার বিএনপির কার্যালয়ের সামনে পুলিশের অভিযানের সময় সংঘর্ষে মৃত্যুর ঘটনা ঠিক কী কারণে তা খতিয়ে দেখবে সরকার। অন্য কোনো পক্ষ সুবিধা নিতে চায় কি না, সেটাও সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হবে। কারণ, এমন ঘটনা সরকার বা আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা চান না।
ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের চাওয়া হলো ঢাকা মুক্ত রাখা। তাই ঢাকার বাইরে বিনা বাধায়ই বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশ করেছে। তবে ঢাকায় কর্মসূচি পালন করতে বিএনপিকে ছাড় দেওয়া হবে না, সে ব্যাপারে আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখা হয়েছে। ঢাকায় বিনা বাধায় কর্মসূচি পালন করতে থাকলে বিএনপি আরও চাঙ্গা হয়ে উঠবে। তাই বিএনপির ঢাকার কর্মসূচিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে আওয়ামী লীগ ও সরকার।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আজকে (গতকাল) বিএনপির পূর্বনির্ধারিত কোনো কর্মসূচি ছিল না। বিএনপির নেতাকর্মীরা কেন নয়াপল্টনে গেল, পুলিশের ওপর হামলা করল? এতেই প্রমাণ হয়, বোঝা যায় বিএনপির সংঘাত-নাশকতা করার পূর্বপরিকল্পনা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা করল, ককটেল ফাটাল, এত ককটেল আসে কোত্থেকে?’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘যেকোনো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কেউ কোনো বাধা দেবে না। এ জন্যই বিএনপি শান্তি নষ্ট করার কর্মসূচি বেশি করতে চায়।’
আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১০ ডিসেম্বর ঘিরে পুলিশ যেমন মাঠে থাকবে, তেমনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও সতর্ক থাকবে।
দলটির নীতিনির্ধারকরা দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, বিএনপির সংঘাত-সংঘর্ষ প্রতিরোধ করা হবে। তাই ১০ ডিসেম্বরের আগেই মাঠে নামতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীনরা। নয়াপল্টনেই বসবে গতকাল বিএনপি এমন বার্তা দিতে চাইলে বসে থাকেনি সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীও আটক করার সুযোগ তৈরি হয়। পাশাপাশি বিএনপি কার্যালয়ে তল্লাশিও করেছে পুলিশ।
সূত্র জানায়, সমাবেশের স্থান নিয়ে বিএনপি অনড় অবস্থান দেখাবে সেটা জানাই ছিল ক্ষমতাসীন দলের। সমাবেশের স্থান নিয়ে মূলত বিতর্ক শুরু হয়েছে। ফলে ইস্যু সৃষ্টি করতে হলে সমাবেশ স্থান নিয়ে বিতর্ক তোলা জরুরি ছিল। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে।
ওই সূত্র জানায়, বিএনপি যেহেতু স্থান নিয়ে অনড় অবস্থানে চলে গিয়েছে সে ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে যেতে হয়েছে সরকারকেও। এ প্রশ্নে বিএনপি যেমন ছাড় দিতে চায় না, আওয়ামী লীগও ছাড় দেবে না। ওই সূত্র আরও জানায়, সমাবেশ স্থান নিয়ে কোনো পক্ষই এখন পিছু হটবে না। যে পক্ষই পিছু হটতে যাবে সে পক্ষই একরকম পরাজয় মেনে নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১০ ডিসেম্বরের বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে কোনো ষড়যন্ত্র না থাকলে সমাবেশের স্থান নিয়ে কেন তারা অনড় অবস্থানে চলে গিয়েছে? জনগণের ভোগান্তি হবে এ কারণে সরকার জনবহুল এলাকা বাদ দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির কর্মসূচির প্রস্তাব করেছে। এ প্রস্তাবকে ভিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই।’
এদিকে ওই দিনটি ঘিরে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও দুই অংশের মেয়রদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লী। সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা থেকে ১০ ডিসেম্বরের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হবে।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, গতকাল সকাল থেকে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্থানে মিছিলসহকারে অবস্থান নেন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীদের অনেকেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে সতর্কাবস্থানে থেকেছেন। ছোট ছোট মিছিল দেখা গেছে ভূতের গলি, হাতিরপুল ও রাসেল স্কয়ারে।
বিএনপির গণসমাবেশ সামনে রেখে শুক্রবার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করবে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এ সমাবেশ থেকে নেতাকর্মীদের একটি অংশ ১০ ডিসেম্বর শনিবার পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ এলাকায় থেকে যাওয়ার কথা জানা গেছে। প্রায় প্রতিদিনই সকাল-বিকেল সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নগর উত্তর-দক্ষিণের নেতারা। সে সঙ্গে বিভিন্ন ওয়ার্ডে মহড়া দিচ্ছেন তারা।
মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ১০ ডিসেম্বর তারা টঙ্গী, আশুলিয়া ও গাবতলীতে সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করবেন। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ সাভারের রেডিও কলোনি মাঠে ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ ডেকেছে। পাশাপাশি দলটির নেতাকর্মীরা কেরানীগঞ্জেও সতর্ক পাহারার ব্যবস্থা নিয়েছেন।
রাজধানীতে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে হঠাৎ করেই গতকাল বুধবার বিকেলে পুলিশ বিএনপির কার্যালয়ের সামনে অভিযান শুরু করে। একপর্যায়ে কার্যালয়েও ঢুকে পড়ে। পুলিশ টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড মেরে বিএনপির কার্যালয়ে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে। পুলিশের অভিযানের বিষয়টি আগে থেকে আঁচ করতে পেরেছিল জানিয়ে দলটির নেতারা বলেছেন, তাদের আশঙ্কাই সত্যি হলো।
এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার গুলশানে হোটেল লেকশোরে সংবাদ সম্মেলন করবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল নয়াপল্টনে সংঘর্ষের খবর শুনে ছুটে আসেন মির্জা ফখরুল। তিনি কার্যালয়ে ঢুকতে চাইলে কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এ সময় বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার দলের কার্যালয়ে কেন আমি ঢুকতে পারব না। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চেয়েছি। সরকার ভয়াবহ ঘটনা ঘটিয়েছে। সমাবেশ বানচাল করতেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ঘটনার দায় সরকারকে নিতে হবে। পরিস্থিতি শান্ত করতে ডিএমপি কমিশনার আমাকে নয়াপল্টনে আসতে বলেছেন। অথচ আসার পরে আমাকে অফিসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।’
আচমকা পুলিশের মারমুখী আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ব্যবহার করে একটা ভয়াবহ, ভীতিকর ও উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা আশা করতে পারি না, একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ের সামনে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।’ এ সময় তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে সেখান থেকে পুলিশ প্রত্যাহারের দাবি জানান। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অন্যথায় সব দায়দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তাবে।’
কার্যালয়ের সামনে বসে দেশ রূপান্তরকে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বিতর্কিত করতে পারে সরকার এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করে গত মঙ্গলবার ঢাকার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার মিশন প্রধানদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে বলেছিলাম। এরপর ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই সরকার তার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে নয়াপল্টনে আমাদের দলীয় কার্যালয়ে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের ওপর টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করেছে। দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।’
এর আগে ২০১৩ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করেছিল গোয়েন্দা পুলিশ। তখন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দেড় শতাধিক শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার সাংবাদিকদের কাছে দাবি করে বলেন, ‘বিএনপির পার্টি অফিসে বোমা রয়েছে। পুলিশকে লক্ষ্য করেও বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে।’ তবে বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা একটা ভিডিও ফুটেজ পেয়েছি। যেখানে দেখা যাচ্ছে ডিবি পুলিশ একটি বাজারের পলিথিনের ব্যাগে করে কার্যালয়ে ঢুকছে। পুলিশ বাজারের একটি ব্যাগে করে দলের কার্যালয়ের ভেতর বোমা নিয়ে গেছে।’
১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশের স্থান ঘিরে সরকারের সঙ্গে বিএনপির দরকষাকষি চলছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। তবে বিএনপি এতে রাজি নয়। দলটি নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই গণসমাবেশ করতে চাইছে।
এ পরিস্থিতিতে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ কি করা সম্ভব এমন এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সমাবেশকে কেন্দ্র করেই তো এগুলো হচ্ছে। তারা সমাবেশকে নষ্ট করার চেষ্টা করছে।’
রাতে ফখরুলের পাশে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা : রাতে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুুম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ব্যারিস্টার কায়সার কামালের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা নয়াপল্টনে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
মির্জা আব্বাসের বাসা ঘিরে রাখা হয় : রাতে মির্জা আব্বাস অভিযোগ করে বলেন, ‘নয়াপল্টনে নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের হামলার খবর পেয়ে সেখানে যেতে চাইলে আমার বাসার সামনের গেট ও রাস্তা অবরুদ্ধ করে রাখে পুলিশ, র্যাব ও ডিবি পুলিশ। এ ছাড়া স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা আমার বাসার সামনে অবস্থান নেয়। তাদের বাধার কারণে আমি যেতে পারিনি।’
আহতদের হাসপাতালে নিতে দেয়নি পুলিশ : বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ছোড়া টিয়ার শেলে আহত নেতাকর্মীরা কার্যালয়ে অবস্থান করে বারবার আমাকে অনুরোধ করেছিলেন অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে তাদের যেন হাসপাতালে নেওয়া হয়। কার্যালয়ে আটকে পড়া জ্যেষ্ঠ নেতারা আমাকে ফোন করে অনুরোধ জানান। খবর পেয়ে আহতদের হাসপাতালে নিতে দুটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে গিয়েছিলাম বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। পুলিশ আহতদের আনতে দেয়নি। শুধু তাই নয়, অ্যাম্বুলেন্সে আঘাত করেছে। ভাঙার চেষ্টা করেছে। পরে আমরা সেখান থেকে চলে যাই।’
গত রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক হয়েছে। বৈঠক শেষে স্থায়ী কমিটির এ সদস্য দেশ রূপান্তরকে জানান, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে আজ বিকেল ৩টায় হোটেল লেকশোয় শরিক দলগুলোকে নিয়ে যে সংবাদ সম্মেলন করার কথা ছিল তা স্থগিত করা হয়েছে।
নয়াপল্টনেই সমাবেশ : সংঘর্ষের আগে গতকাল দুপুরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সরকার গ্রহণযোগ্য ও পছন্দনীয় স্থানের প্রস্তাব না করলে বিএনপি আগামী ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবে।’ রাতে স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে বলে কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন।
ডুবন্ত জাহাজের সঙ্গে নাকি জাহাজের ক্যাপ্টেনকেও সলিল সমাধি নিতে হয়। কাল মিরপুরে রোহিত শর্মাকে দেখে মনে হলো এমনই এক জাহাজের অধিনায়ক, মাঝসাগরে যার সলিল সমাধি অবধারিত। বুড়ো আঙুলের চোটের কারণে ব্যাট করতে নেমেছেন ৯ নম্বরে। অন্যপ্রান্তে সঙ্গী দীপক চাহার, ভারতের জিততে তখনো ৪৫ বলে ৬৫ রান দরকার।
ভাঙা আঙুলে সেখান থেকেই দলকে প্রায় জিতিয়েই দিচ্ছিলেন রোহিত, ৫ ছক্কা আর ৩ বাউন্ডারিতে ২৭ বলে ৫১ রানের ইনিংস খেলে অসম্ভব এক সমীকরণ প্রায় মিলিয়েই দিয়েছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক। শেষ বলে জয়ের জন্য লাগত ছয় রান, সৌম্য সরকারের বলে বছর চারেক আগে কলম্বোতে যে হিসাবটা মিলিয়ে দিয়েছিলেন দীনেশ কার্তিক। কিন্তু রোহিত পারলেন না, বলা যায় মোস্তাফিজুর রহমান পারতে দিলেন না। শেষ বলটা করেছেন লেগস্টাম্পে ইয়র্কার, উড়িয়ে মারার জন্য জায়গাই দেননি রোহিতকে। তাতেই ৫ রানের জয়ে ওয়ানডে সিরিজটা ২-০ তে নিজেদের করে নিল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের বিপক্ষে রোহিত সবসময়ই সফল। ব্যাট হাতে, নেতৃত্বেও। ২০১৮ সালের নিদাহাস ট্রফিতে সে-সময়কার নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলি বিশ্রামে, নেতৃত্বে রোহিত। শেষ বলে ছক্কায় রোহিতের হাতে ট্রফি এনে দিলেন দীনেশ কার্তিক। একই বছর এশিয়া কাপ, সেখানেও ফাইনালে শ্বাসরুদ্ধকর জয়ে রোহিতের ভারতের হাতে শিরোপা। ২০১৫ ও ২০১৯, দুই বিশ্বকাপেই বাংলাদেশের বিপক্ষে শতরান। বাংলদেশের বিপক্ষে এত সাফল্য যার, অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশ সফরে এসে তাকেই কি না নিতে হচ্ছে ওয়ানডে সিরিজে হারের দায়ভার? মোহাম্মদ সিরাজের বলে সিøপে এনামুল হক বিজয়ের বলে ক্যাচ নিতে গিয়ে আঙুলে চোট পেয়েছিলেন রোহিত। শেষ চেষ্টা হিসেবেই ব্যাটিং গ্লাভস কেটে, বুড়ো আঙুলে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে ব্যাট করতে নামা রোহিতের। এভাবেও জিতিয়েই দিচ্ছিলেন ভারতকে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারলেন না। বরং কাছে এসেও হৃদয় ভাঙার যে কষ্ট ভারতের কাছে হেরে পেয়েছে বাংলাদেশ, তারই যে প্রতিশোধ দেশের মাটিতে। প্রথম ম্যাচটা শেষ উইকেটে বাংলাদেশ জিতেছে, পরের ম্যাচটা ভারত হেরেছে শেষ বলে।
এই সিরিজে টানা দ্বিতীয়বারের মতো টসে জিতলেন লিটন দাস। দলে এক পরিবর্তন, হাসান মাহমুদের জায়গায় নাসুম আহমেদকে এনে তিন স্পিনারে ভারতকে আটকানোর চেষ্টা। কিন্তু টস জেতার পর লিটন আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত জানাতেই খানিকটা বিস্ময়, রাতের শিশিরে স্পিনারদের তো বল হাতে ধরতেই সমস্যা।
গোড়াপত্তনে একটু অদল-বদল, ডান-বামের প্রথা ভেঙে লিটনের সঙ্গী আনামুল হক। কিন্তু তাতে বাংলাদেশের টপ অর্ডারের চেহারাটা একটু ভালো হলেও বদলায়নি। আগের ম্যাচে নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হয়েছিলেন প্রথম বলে, এনামুল দুই চারে ১১ রান করে আউট হলেন। শান্ত নিচে নেমে কিছু রান পেয়েছেন, ২১ রান করার পর উমরান মালিকের যে বলটায় তার স্টাম্প উড়ে গেছে সে বলের গতি ছিল ঘণ্টায় ১৫১ কিলোমিটার!
পরপর দুই ওভারে ওয়াশিংটন সুন্দরের শিকার সাকিব আল হাসান (৮) ও মুশফিকুর রহিম (১২)। দলীয় ৬৯ রানে নেই ৬ উইকেট, চোখ রাঙাচ্ছে একশর নিচে অলআউট হওয়ার চোখ রাঙানি। এমন সময় দৃশ্যপটে মেহেদি হাসান মিরাজের আগমন। আগের ম্যাচে বাংলাদেশকে অবিস্মরণীয় এক জয় এনে দিয়েই নিজের কাজটা শেষ মনে করেননি মিরাজ, কাল আবারও দায়িত্বশীল ইনিংসে বুঝিয়ে দিলেন ব্যাটিংয়ের হাতটা খারাপ নয় তার। সপ্তম উইকেটে মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে ১৬৫ বলে ১৪৮ রানের জুটি গড়েন মিরাজ। আগের ম্যাচে নেতিবাচক মানসিকতার ব্যাটিং করায় বেশ সমালোচনাই শুনতে হয়েছে মাহমুদউল্লাহকে। কাল ফের দেখালেন, আগের সেই ঝলক এখনো খানিকটা আছে তার ব্যাটে।
৯৬ বলে ৭৭ রানে আউট হয়েছেন মাহমুদউল্লাহ, তবে মিরাজকে আউট করা যায়নি। শেষ ওভারে ১৫ রান নিয়ে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করার পাশাপাশি বাংলাদেশকেও ২৭১ রানের সংগ্রহে পৌঁছে দিয়েছেন মিরাজ। ১০ রানে ৩ উইকেট ওয়াশিংটন সুন্দরের, জোড়া শিকার উমরান মালিক ও মোহাম্মদ সিরাজের।
বছর তিনেক আগে, ইডেনে গোলাপি বলের টেস্টে বিরাট কোহলিকে আউট করার পর সেই যে স্যালুট ঠুকেছিলেন ইবাদত হোসেন, তার প্রায় তিন বছর ধরে ভারতের এই ব্যাটসম্যানের কোনো শতরান ছিল না! কাল সেই ইবাদতকে পুল করতে গিয়ে স্টাম্পে বল টেনে আনলেন কোহলি। রোহিতের অবর্তমানে ইনিংসের সূচনায় নেমে মাত্র ৫ রানে বোল্ড হয়ে ফেরেন কোহলি, মোস্তাফিজের বলে মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট শিখর ধাওয়ানও। ১৩ রানে নেই ভারতের ২ উইকেট। ওয়াশিংটন সুন্দরকে (১১) আগে পাঠিয়েও লাভ হয়নি, ভরসা জোগাতে পারেননি লোকেশ রাহুলও (১৪)। ভারতকে ম্যাচে রাখে শ্রেয়াশ আইয়ার আর অক্ষর প্যাটেলের ১০৭ রানের জুটি।
কিন্তু এই দুজনের দ্রুত বিদায়ে ভারত যখন হারের দোরগোড়ায়, তখনই দৃশ্যপটে রোহিতের আগমন। ভাঙা আঙুল নিয়ে ব্যাট করে ভারতকে জিতিয়েই দিচ্ছিলেন রোহিত, যদিও তাকে শেষ পর্যন্ত টিকিয়ে রাখার জন্য বাংলাদেশের ফিল্ডারদের অবদানও কম নয়। মাহমুদউল্লাহ’র করা ৪৯তম ওভারটায় রোহিত কোনো সিঙ্গেলস নেননি, জায়গায় দাঁড়িয়ে ব্যাট চালিয়ে শুধু ছক্কার চেষ্টাই করে গেছেন। দুটো ছক্কা হয়েছে, ক্যাচ পড়েছে দুটো। একবার ফেলেছেন ইবাদত, আরেকবার আনামুল
শেষ ওভারে মোস্তাফিজকে আটকাতে হবে ২০ রান, প্রথম বলটা ডট হলেও পরের দুই বলে দুই বাউন্ডারিতে লক্ষ্যের কাছে পৌঁছে যায় ভারত। শেষ তিন বলে ভারতের চাই ১২ রান, মোস্তাফিজ একটা ডট বল দিলেও পরের বলটায় সোজা ছয় মারেন রোহিত। আবারও শেষ বলে ছয় রানের সমীকরণ, কিন্তু এবার আর কলম্বো ফিরল না ঢাকায়। মোস্তাফিজের ইয়র্কারে নিশ্চিত হলো বাংলাদেশের ৫ রানের জয়, সেই সঙ্গে ২-০ তে নিশ্চিত হলো সিরিজও।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
মার্চে ঘরের মাঠে দুটি প্রীতি ম্যাচের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেখা যায়নি আর্জেন্টিনাকে। তিন মাস পর আগামী মাসে তারা খেলবে আরও দুটি প্রীতি ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচের জন্য ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন লিওনেল স্কালোনি। তবে ঘোষিত সেই দলে নেই লাউতারো মার্তিনেজ।
আর্জেন্টিনার ক্রীড়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস ও ওলে তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গোড়ালির চোটের কারণে মার্তিনেজ চিকিৎসাধীন আছেন। তাই তাকে জাতীয় দলের স্কোয়াডে রাখা হয়নি।
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের হয়ে গোল করেছিলেন। ফাইনালেও তাকে ইতালিয়ান ক্লাবটির হয়ে খেলতে দেখা যেতে পারে। তারপরই তিনি মাঠের বাইরে চলে যাবেন। ঐ সময়ে তিনি বিশ্রামে থাকবেন। আর তাই কোচ স্কালোনি তাকে দলে রাখবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের অন্যতম সদস্য মার্তিনেজ। তবে পুরো টুর্নামেন্টে তিনি ব্যাথানাশক ঔষধ খেয়ে খেলছিলেন।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ও ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামে স্ত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় চাচাতো ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে পলাশ হোসেন (২৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পলাশ হোসেন ওই গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত পলাশ হোসেনের চাচাতো ভাই সুমন প্রায়ই পলাশের স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করত। শনিবার সন্ধ্যায় আবারো উত্ত্যক্ত করে। পলাশ বাড়িতে এলে বিষয়টি তাকে জানায় তার স্ত্রী। এ ঘটনায় পলাশ তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে বিষয়টির প্রতিবাদ করতে গেলে উভয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সুমন ছুরি দিয়ে পলাশকে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই পলাশ মারা যায়।
মহেশপুর থানার ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহত পলাশ পেশায় ভ্যানচালক ছিলেন, সঙ্গে কৃষিকাজও করত।
রেফারির বাঁশি বাজার তিন মিনিটের মধ্যেই রিয়াল মাদ্রিদের জালে জড়ায় বল। রাফা মিরের দুর্দান্ত এক গোলে লিড পায় সেভিয়া। তবে শেষ অবধি তারা ধরে রাখতে পারেনি সে হাসি। রদ্রিগোর জোড়া গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে রিয়াল।
রাতে লা-লিগার ম্যাচে সেভিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। খেলার তৃতীয় মিনিটেই লিড পেয়েছিল সেভিয়া। তবে ২৯ মিনিটে রদ্রিগো সমতায় ফেরান রিয়ালকে। সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
বিরতির পর ফের বাড়ে আক্রমণের ধার। যার ফলে ৬৯ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় রিয়াল। এবারও নায়ক রদ্রিগোই। এবারেরটি অবশ্য টনি ক্রুসের সহায়তায়। পরে আর কোনো গোল না হওয়ায় ২-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মাদ্রিদের ক্লাবটি।
তবে ম্যাচের ৮৩ মিনিটে লাল কার্ড দেখে আকুনা। হারের আগে সেভিয়ার আর্জেন্টাইন এই ডিফেন্ডারের ভুলে ১০ জনের দল নিয়ে খেলতে হয় রিয়ালকে।
শুরুতে গোল হজম করলেও ৬৭ শতাংশ সময় নিজেদের দখলে বল রেখেছিল রিয়াল। ছয়বার আক্রমণে গিয়েছিল তারা, যার মধ্যে তিনটি শট ছিল গোলবার লক্ষ্য করে।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
সংলাপে রাজনৈতিক সংকট দূর হওয়ার নজির তৈরি হয়নি এখনো। তবুও নানা সময়ে সংকট নিরসনে রাজনীতিতে সংলাপ করা নিয়ে আলোচনা হয়। সংলাপের আশ্রয় নিতেও দেখা গেছে দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভিন্ন মেরুতে অবস্থান থাকায় আবারও রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় আলোচনায় এসেছে ‘সংলাপ’। যদিও প্রধান দুই দলের নেতারা সংলাপে অনীহা প্রকাশ করে আসছেন। আবার আড়ালে আলাপে দুই দলের আগ্রহও দেখা গেছে।
অন্তরালের সংলাপ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার আড়ালে আলাপের মূল কারণ হলো বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বড় একটি অংশ বয়স্ক হয়ে গেছেন। তাদের অনেকের এবারের পরে নির্বাচন করার সক্ষমতা আর থাকবে না। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকতে গিয়ে সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হয়েছে। এ সময় সংসদ সদস্য হয়ে মর্যাদা নিয়ে চলতে চান তারা। বিএনপির ওই অংশের সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতাও রয়েছেন যারা নির্বাচনে যেতে চান। ফলে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী বিএনপির সেই সব নেতা আড়ালে আলাপে থাকতে রাজি আছেন। অন্যদিকে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখতে চাওয়া বিদেশি শক্তিগুলোর সরকারের ওপর চাপ থাকায় বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে চায় আওয়ামী লীগ। ফলে প্রকাশ্যে সংলাপের আগ্রহ না দেখিয়ে আড়ালের আলাপে আগ্রহী দলটির নেতারা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে এক চুলও নড়বে না। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে কোনোভাবেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যাবে না। দুই দলই নিজেদের এমন অনড় অবস্থান দেখাচ্ছে। দুই দলের পরস্পরবিরোধী অবস্থানে সৃষ্ট সংকট সমাধানে বিদেশি তৎপরতা বেশ আগে থেকেই শুরু হয়েছে। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসতে শুরু করেছে বিদেশি সেই তৎপরতায়ও গতি এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপি কাউকেই কাছাকাছি অবস্থানে, অর্থাৎ এক মেরুতে আনতে পারেনি এখনো। তবে বিদেশি প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা সংকট নিরসনে দুই দলকেই সংলাপে বসার জন্য বলছেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা সংলাপের মধ্য দিয়ে সমস্যা সমাধানের রাস্তা ঠিক করতে দুই দলকেই তাগিদ দিয়েছেন। বিদেশিদের অবস্থান হলো আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চান তারা। সে জন্য রাস্তা তৈরি করতে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই সংলাপে অনীহা দেখিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যে অনীহার কথা জানিয়েছেন। বিএনপিও প্রায় প্রতিদিনই অনীহা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখছে।
তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও সংলাপে সমাধান আসেনি। এবারও সংলাপে সমাধান আসার সম্ভাবনা কম। যদি সংলাপের আগেই এজেন্ডা নির্ধারণ করে সংলাপে বসে, সেই সংলাপ সফল হওয়ার পথ থাকে না।
দুই দলের একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, প্রকাশ্যে সংলাপ না করে এবার আড়ালে সংলাপ হতে পারে। অনেকটা হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটে যেতে পারে-বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন দিয়ে বসতে পারেন।’ তিনি বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
নির্বাচন সামনে রেখে দেশে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকেরা সংকট নিরসনে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। ওই সব বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দুই দলেরই অবস্থান জানতে চেয়েছেন তারা। একই সঙ্গে দুই দলকে তারা এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন যে ভিন্নমত থাকলেও স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের স্বার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়া জরুরি। এ কারণে নির্বাচনের আগে দুই প্রধান দলের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার আবশ্যকতা রয়েছে। এই সমঝোতার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, কিংবা উভয় পন্থায় দুই দলের মধ্যে ‘আলাপ’ হওয়া দরকার, তা সেটা সংলাপ বা আলোচনা যে নামেই করা হোক না কেন। এদিকে কূটনীতিকদের কাছে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে, বিএনপি কোনো ধরনের সংলাপে আগ্রহী নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপির আচরণ বিদেশিদের কাছে তুলে ধরে সংলাপে বিএনপির অনীহার কথা জানান।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দাবি করছেন, রাজনীতিতে কোনো কিছু আদায় করতে হলে আন্দোলনের মাধ্যমে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ক্ষমতাসীনদের বাধ্য করতে হয়। কিন্তু সেটা বিএনপি পারছে না। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছিল। সেখানে জনগণকে সম্পৃক্ত করে বিএনপিকে পদত্যাগে বাধ্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিএনপি এখন সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারবে বলে মনে করছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মাঠে আওয়ামী লীগের অবস্থান আছে। জনগণ সরকারের সঙ্গে আছে। আর তাদের সঙ্গে জনগণই নেই। তাই তো খালেদা জিয়াকে এখনো মুক্ত করতে পারেনি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘যেকোনো সমস্যার সমাধান সংলাপের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব। সংলাপে বসলে হয়তো শতভাগ পাব না। তবে গিভ অ্যান্ড টেক তো কিছু হবেই। গণতন্ত্রে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।’
তবে দলটির সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, ‘সংলাপ চলছে। মিডিয়ায়, টক শোতে, মাঠে মঞ্চে। এক দল আরেক দলকে উদ্দেশ্য করে যে বক্তব্য দিচ্ছে, তাও এক ধরনের সংলাপ। এসব অনেকেই সংলাপ বলে টের না পেলেও মূলত এটাও সংলাপ।’
আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, সংলাপের ব্যাপারে পশ্চিমা কূটনীতিকেরা তাদের তেমন কোনো পরামর্শ দেননি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘আমরা তাদের (কূটনীতিক) বলেছি সংলাপের উদ্যোগ আমরা নিয়ে কী করব? তাদের (বিএনপি) যদি কোনো দাবি থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলতে পারে। নির্বাচন কমিশন যদি সুপারিশ করে, সেটা অবশ্যই সরকারের কাছে আসবে। সরকার দেখবে তখন।’
সংলাপ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ভাবনা আমাদের নাই।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। আর আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচনকালীন এই সরকারই থাকবে এবং তাদের অধীনে নির্বাচনে হবে। নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ অবস্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সংকট সমাধানে কূটনীতিকদের দূতিয়ালি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও ইতিবাচক বিএনপি। সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থার দূতসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। ওই বৈঠকগুলোতে কেন এই সরকারের অধীনে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় না তা ব্যাখ্যা করেছে দলটি। বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে যাবে না, সেটিও স্পষ্ট করেছে। একই সঙ্গে কূটনীতিকদের বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে সে বিষয়ে সংলাপের আহ্বান আসলে তাতে সাড়া দেবে বিএনপি। আর এই সংকট মোকাবিলায় কূটনীতিকদের ‘রোল প্লে’ (ভূমিকা রাখা) করার সুযোগ আছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা। তাদের মতে, প্রকাশ্যে না হলেও পর্র্দার অন্তরালে সংলাপ হতে পারে। কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপের কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনেও গুঞ্জন রয়েছে ভেতর-ভেতর সংলাপ হচ্ছে।
সর্বশেষ ১৮ মে গুলশানের আমেরিকান ক্লাবে মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল চিফ ব্রান্ডন স্ক্যাট, পলিটিক্যাল অফিসার ম্যাথিউ বে, পলিটিক্যাল কনস্যুলার ডেনিয়েল শেরির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
জানতে চাইলে শামা ওবায়েদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে তারা আমাদের অবস্থান জানতে চান। আমরাও আমাদের অবস্থান তুলে ধরি। সর্বশেষ তারা জানতে চেয়েছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে আপনাদের অবস্থান কী। আমরা বলেছি, আন্দোলন চলছে, সেটা আমরা কন্টিনিউ (চালিয়ে যাব) করব। তারা অন্য পক্ষের (ক্ষমতাসীনদের) কথাও শুনছেন। এ অবস্থায় তারা কী করছে (দূতিয়ালি), নাকি অন্য কিছু হচ্ছে সেটা তাদের বিষয়। তবে আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আরেকটি গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হোক, সে ব্যাপারে তাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকুক।’
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক সংলাপের ব্যাপারে কূটনীতিকেরা কোনো বৈঠকেই আমাদের কিছু বলেনি।’
তবে বৈঠকগুলোতে থাকা দলের আরেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা একাধিকবার সরকারের সঙ্গে সংলাপ করেছি। ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনের সংলাপে পর চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের তিন মাস পর নতুন নির্বাচন দেওয়ার কথা বলে তারা প্রতারণা করেছে। তাই এজেন্ডা ছাড়া কোনো সংলাপে আমরা যাচ্ছি না। কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বলেছি, আনুষ্ঠানিক সংলাপের বিষয়ে আমরা ইতিবাচক। কিন্তু সেটি হতে হবে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে তা নিয়ে।’
ওই নেতার আরও বলেন, ‘সরকার এখন বিভিন্ন চাপে আছে। আন্তর্জাতিক চাপ তো আগে থেকেই আছে। এখন নতুন করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ বেড়েছে। এসব চাপ সামাল দিতে তারা সংলাপের নামে নানা কথা বলবে। কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় সরকারের মনোভাবে কিছু হলেও আঁচ করা যায়। হয়তো কয়েক দিন পর সরকার আনুষ্ঠানিক সংলাপের জন্য আমন্ত্রণও জানাতে পারে।’
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।