
নির্ধারিত দিনেই আগামীকাল শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ করতে চায় বিরোধী দল বিএনপি। তবে পুলিশ বলছে, সমাবেশের জন্য অনুমতি দেওয়া স্থান ছাড়া অন্য কোথাও করলে তা বেআইনি বলে গণ্য করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমন পরিস্থিতিতে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে বিএনপি ও পুলিশ। এছাড়া নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে গত বুধবার পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে। পল্টন, মতিঝিল, শাহজাহানপুর ও রমনা থানায় হওয়া মামলাগুলোতে ঘটনার দিনই আটক বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতাসহ ৭১৪ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এর বাইরে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে আরও ২ হাজার ২৫০ জনকে। সব মামলার বাদীই পুলিশ।
এদিকে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে রাজধানীর আশপাশের বিভিন্ন জেলায় পথে পথে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে পুলিশ। এসব তল্লাশি চৌকি পার হওয়ার সময় রাজধানীমুখী বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে কড়া জিজ্ঞাসাবাদের মুখে। এছাড়া যানবাহন চলাচল কম থাকায় তাদের ভোগান্তিতেও পড়তে হয়েছে। এছাড়া গত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় গত বুধবার রাতে এবং গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি নেতাদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এ সময় দলটির ৩০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া নারায়ণগঞ্জে এক নেতার বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে না পেয়ে ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
বুধবারের সংঘর্ষের পর গতকাল বিকেল ৪টা পর্যন্ত নয়াপল্টন এলাকায় রাস্তার দুই পাশেই চলাচল বন্ধ করে রেখেছিল পুলিশ। ডিএমপি মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) গোলাম রুহানী বলেন, ‘জনগণের দুর্ভোগের কথা ভেবে সড়ক আমরা খুলে দিয়েছি। তবে পার্টি অফিস বন্ধ রয়েছে। আমাদের পুলিশ টহল অব্যাহত রয়েছে।’
সংঘর্ষের ঘটনায় ৪ মামলা : বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনায় পল্টন, মতিঝিল, শাহজাহানপুর ও রমনা থানায় আলাদা ৪টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ওইদিনই আটক ৭১৪ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে ২ হাজার ২৫০ জনকে। সব মামলার বাদীই পুলিশ। ডিএমপি মুখপাত্র উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেন গতকাল এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন। জানা গেছে, পল্টন থানায় বিএনপি নেতা রুহুল কবীর রিজভী, আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস ছালাম, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানি, ফজলুল হক মিলন, খাইরুল কবীর খোকন, শামসুর রহমান ও শিমুল বিশ্বাসসহ ৪৭০ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫০০-২০০০ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা হয়েছে। এছাড়াও গতকাল মতিঝিল থানায় বিস্ফোরক আইনে ২৮ জনের নাম উল্লেখ করে, রমনা থানায় ১৬৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং শাহজাহানপুর থানায় ৫২ জনের নাম উল্লেখ ও ২০০-২৫০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে মামলা হয়।
আমান ও জুয়েলের জামিন, রিজভী কারাগারে : বুধবার সংঘর্ষের দিন গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের গতকাল আদালতে হাজির করা হলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন শুনানি শেষে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমানুল্লাহ আমান ও আব্দুল কাদের জুয়েলকে জামিন দেন। অন্যদিকে বিএনপির সহ-জলবায়ু সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, বিএনপি নেতা শাহজাহান, এ কে এম আমিনুল ইসলাম, ওয়াকিল আহমেদ, সজীব ভূঁইয়া, সারোয়ার হোসেন শেখ, সাইদুল ইকবাল মাহমুদ, মিজানুর রহমান, আল-আমিন, সাইফুল, শুভ ফরাজি ও মাহমুদ হাসান রনিকে রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেন। আর কারাগারে পাঠানো হয় বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্মমহাসচিব খাইরুল কবীর খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনসহ বাকি আসামিদের।
আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে গুলি ছোড়া ব্যক্তির পরিচয় মিলেছে : বুধবার সংঘর্ষের সময় আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে শটগান হাতে এক যুবকের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই যুবকের ছবি ফেইসবুকে শেয়ার করে অনেকেই তাকে ছাত্রলীগের নেতা বলে দাবি করেন। তার পরিচয় শনাক্ত করেছে পুলিশ। গতকাল বিকালে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ওই যুবকের নাম মাহিদুর রহমান, তিনি আনসার সদস্য। তিনি পল্টন থানার অন্তর্ভুক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন।’
বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি, পথে পথে চেকপোস্ট : টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নাশকতা চেষ্টার অভিযোগে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের চার নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বুধবার রাতে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। ঝিনাইদহ সদরসহ জেলার চার উপজেলায় নাশকতার আশঙ্কা ও মামলায় বিএনপির ২৬ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত সময়ে চালানো অভিযানে তাদের আটক করা হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবির বাসায় বুধবার রাত ২টার দিকে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় রবিকে বাসায় না পেয়ে তার ছেলে প্রীতমকে (২০) ধরে নিয়ে যায়।
রাজধানীর প্রবেশপথ আমিনবাজার ও আশুলিয়ায় চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। গতকাল সকাল থেকেই এসব চেকপোস্টে যানবাহন থামিয়ে যাত্রীদের তল্লাশি করতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। এর ফলে অফিসগামী ও জরুরি কাজে বের হওয়া মানুষকে কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হয়। মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরগাড়ি ও মাইক্রোবাসে বেশি তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এছাড়া কোনো পথচারীর সঙ্গে বড় ব্যাগ থাকলে তার গতিরোধ করে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। তল্লাশির কারণে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার এলাকায় ঢাকামুখী লেনে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
উত্তরাঞ্চল থেকে রাজধানীতে প্রবেশদ্বার গাজীপুরের কালিয়াকৈরের চন্দ্রা ত্রিমোড় এবং শ্রীপুরের জৈনা বাজার এলাকায় পুলিশ প্রতিটি গাড়ি ও যাত্রীকে তল্লাশি করছে। টঙ্গী ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্ত এবং আব্দুল্লাহপুর ফ্লাইওভারের নিচে চেকপোস্ট বসিয়ে প্রতিটি যানবাহনে তল্লাশি করা হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-দোহার এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ৩০টি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এসব চেকপোস্টে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। একসঙ্গে ৪-৫ জন দেখলেই পুলিশের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে যাত্রীদের।
গতকাল সকাল থেকে হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের ধল্লা ভাষাশহীদ রফিক সেতুর পশ্চিম পাশে পুলিশ চেকপোস্টে নজরদারি বাড়ানো হয়। এছাড়া ধল্লা চেকপোস্ট এলাকায় সকাল থেকে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
নারায়ণগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি তৎপরতা দেখা গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এছাড়া শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি সাঁজোয়া যান মোতায়েন করা হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক, ফতুল্লার সাইনবোর্ড লিংক রোড এলাকায় এবং মঙ্গলবার রাত থেকে সোনারগাঁয়ের মেঘনাঘাট টোল প্লাজা এলাকায় একাধিক চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলার প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারা
রাজধানীতে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের স্থান নিয়ে উত্তেজনা সহিংসতার পর সমঝোতার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিএনপি নয়াপল্টনে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কের পরিবর্তে তাদের পছন্দের স্থান হিসেবে কমলাপুর স্টেডিয়ামে সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে। অন্যদিকে ঢাকার পুলিশ প্রশাসন তাদের মিরপুরের দারুস সালাম এলাকার বাঙলা কলেজ মাঠের প্রস্তাব দিয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুপক্ষের মধ্যে আজ শুক্রবারের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, আগামীকাল শনিবার বিএনপির গণসমাবেশের দিন নির্ধারিত রয়েছে। দলটি নয়াপল্টনে সমাবেশ করার ব্যাপারে অনড় অবস্থান নেয়। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) তাদের নানা শর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার প্রস্তাব দেয়। এ নিয়ে উত্তেজনা চলার মধ্যে বিএনপি নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে অবস্থান নিতে শুরু করেন। গত বুধবার পুলিশ সেখানে অভিযান চালালে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। আটক করা হয় বিএনপির কয়েকশ নেতাকর্মীকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দলটির দায়িত্বশীল নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলছেন, তারা নয়াপল্টনে সমাবেশ করবেন। যেকোনো মূল্যে নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের সামনে হাজির হবেন। আসবেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা। তবে বিএনপির মহাসচিব সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সরকার যদি বিকল্প প্রস্তাব দেয় এবং সে স্থান যদি তাদের পছন্দ হয়, তাহলে ভেবে দেখবেন তারা। এরপরই সমাবেশের স্থান নিয়ে বিএনপি ও পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে আলোচনা হয়।
কমলাপুর স্টেডিয়াম চায় বিএনপি, পুলিশ বলছে বাঙলা কলেজ : গতকাল রাতে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে বৈঠক হয় বিএনপির একটি প্রতিনিধিদলের। বৈঠক শেষে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুটি স্পট নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমরা জায়গা পরিদর্শন করে সিদ্ধান্ত জানাব।’
এদিকে বিএনপির প্রতিনিধির সঙ্গে ডিএমপি কমিশনারের সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকেই সমাবেশের মাঠের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। গণসমাবেশের স্থান নিয়ে যে সমস্যা চলছে তার সমাধান হবে বলে আশা করছি।’
গতকাল বুলুর নেতৃত্বে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, অধ্যাপক ডাক্তার এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ডিএমপি কার্যালয়ে যান।
এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপি নেতৃবৃন্দ ডিএমপিতে গিয়ে আলাপ করুক।’ এরপর বিএনপির প্রতিনিধিদল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ডিএমপি কার্যালয়ে যায়।
বিএনপির সংবাদ সম্মেলন : গতকাল বিকেলে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিকল্প প্রস্তাব না পেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণসমাবেশ করবেন তারা। তিনি বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চাই। গণসমাবেশের দিন আমরা নয়াপল্টনে যাব। জনগণ কী সিদ্ধান্ত নেয় তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। কার্যালয় খুলে দিতে হবে। আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। গণসমাবেশ করার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গণসমাবেশের দিন আমরা সমাবেশস্থলে যাব।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সংবিধানসম্মত শান্তিপূর্ণভাবে গণসমাবেশ করবে বিএনপি। প্রশাসন যদি আমাদের অন্য কোনো প্রস্তাব দেয় সেটি যদি আমাদের অনুকূলে হয়, তাহলে আমরা ভেবে দেখব। তবে আমরা নয়াপল্টনেই শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বোমা নিয়ে গেছে কার্যালয়ে : সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল দাবি করেন, ‘পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্য নয়াপল্টনে অযাচিতভাবে প্রবেশ করে সিমেন্টের ব্যাগে করে হাতবোমা নিয়ে যায়। সেখানে রেখে আসে, যা বিভিন্ন মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছে। এরপর দলীয় কার্যালয়ে তারা ন্যক্কারজনকভাবে অভিযান চালিয়ে নিচতলা থেকে ষষ্ঠতলা পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের বিভিন্ন কক্ষ তছনছ করেছে।’ তিনি আরও দাবি করেন, ‘কার্যালয়ের ভেতর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিএনপি চেয়ারপারসনের কক্ষ, মহাসচিবের কক্ষ, অফিস কক্ষের দরজা ভেঙে প্রবেশ করেন এবং সব আসবাবপত্র, ফাইল, গুরুত্বপূর্ণ নথি তছনছ করেন। তারা কম্পিউটার, ল্যাপটপ, হার্ডডিস্ক এবং দলীয় সদস্যদের প্রদেয় মাসিক চাঁদার টাকা, ব্যাংকের চেক বই, নির্বাচন কমিশনসংক্রান্তসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে যান।’
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গত বুধবার পুরো ঢাকা শহরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তাদের সশস্ত্র ও উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা পাড়া-মহল্লায় জঙ্গি মিছিল করে এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা ও তাদের পরিবার-পরিজনের ওপর হামলা করে।’ তার দাবি, ‘আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ওয়ারী থানার যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল মেহবুব মিজুকে বাসায় না পেয়ে তার বৃদ্ধ বাবা মিল্লাত হোসেনকে বেদম প্রহার করে। যার ফলে তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন।’
মির্জা ফখরুল দাবি করেন, ‘পুলিশের গুলিতে পল্লবী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মকবুল হোসেন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অসংখ্য নেতাকর্মী ও পথচারী।’ তিনি মকবুল নিহত হওয়ার ঘটনার তদন্ত দাবি করেন।
গতকাল সকালে কার্যালয়ে যেতে বাধা দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আইনজীবীসহ নয়াপল্টনের কার্যালয়ে প্রবেশ করতে চাইলে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, বিএনপি কার্যালয়ে বিস্ফোরকদ্রব্য পাওয়া গেছে। তল্লাশি চালানোর জন্য ক্রাইম সিন ঘোষণা করে সেখানে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। অথচ আইন হচ্ছে কোনো বাড়িতে তল্লাশি চালাতে হলে সেই বাড়ির মালিককে সঙ্গে রাখতে হবে এবং নিরপেক্ষ সাক্ষী থাকতে হবে। সাধারণত এ ধরনের তল্লাশি চালাতে হলে সার্চ ওয়ারেন্ট ইস্যু করতে হয়। এ ক্ষেত্রে কিছুই করা হয়নি।’
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ^র চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স প্রমুখ।
গণসমাবেশের প্রস্তুতি : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ সফল করার প্রস্তুতি আমাদের আছে। আমরা পরিকল্পনা করছি, কীভাবে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে নয়াপল্টনে জড়ো হব। সারা দেশ থেকে ইতিমধ্যে নেতাকর্মীরা ঢাকায় পৌঁছে গেছেন।’ যেকোনো মূল্যে তারা সমাবেশ সফল করবেন জানিয়ে ওই নেতা বলেন, ‘বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা গণসমাবেশ সফল করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঢাকা শহরে লাখের ওপর আমাদের নেতা রয়েছেন। এর বাইরে কর্মী-সমর্থকরা আছেন।’
এদিকে গত বুধবার নয়াপল্টনে পুলিশের হামলা, অভিযান ও নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গতকাল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের চকবাজার, রমনা, খিলগাঁও, মতিঝিল ও বংশাল থানা বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ মিছিল করেছেন। বংশাল থানার নেতাকর্মীদর মিছিল থেকে আকাশ ও জনিসহ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ।
কার্যালয়ে যেতে ফখরুলকে বাধা : সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাওয়ার পথে বিএনপি মহাসচিবের গাড়ি নাইটিঙ্গেল মোড়ে এলে পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে আটকে দেন। এ সময়ে মহাসচিবের সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান ছিলেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার তাদের জানান, ‘ক্রাইম সিনের’ কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি অফিসে কারও প্রবেশাধিকার নেই।
এ সময় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপি অফিসে কোনো ধরনের বিস্ফোরক ছিল না। পুলিশ এসব বোমা রেখেছে।’
মকবুলের পরিবারের পাশে মির্জা ফখরুল : বেলা ১১টার দিকে বিএনপি মহাসচিব ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে কিছুক্ষণ অবস্থান করে নয়াপল্টনে সংঘর্ষে নিহত মকবুলের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম। নিহত মকবুল হোসেনের ভাই নূর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপির মহাসচিব হঠাৎ এসে আমাদের সঙ্গে কয়েক মিনিট কথা বলে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। তিনি মকবুলের স্ত্রী ও বাচ্চাকে সান্ত¡না দিয়ে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।’
আমরা তখন ভারতের টাকিতে, ত্বকীপুর ইয়ুথ ক্যাম্পে। আটজন বাঙালি সাবমেরিনার ফ্রান্স থেকে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে চলে আসেন ভারতে। ভারতীয় নৌবাহিনীর সহযোগিতায় তারা সমন্বিত একটি দল গঠন করার উদ্যোগ নেন। ১২ মে, ১৯৭১। ক্যাম্পে তখন পাঁচ হাজারের মতো যুবক। সবাইকে ফল-ইন করিয়ে তারা ১২০ জনকে সিলেক্ট করে। শারীরিক গঠন আর সাঁতার জানা ছিল মাপকাঠি। বাড়ির একমাত্র ছেলে হলেই আনফিট করে দেওয়া হতো। নদীর পাড়ের ছেলেরা টিকে যায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যায়। সে হিসেবে আমাকেও তারা নিয়ে নেয়।
টাকি থেকে প্রথমে কল্যাণী এবং পরে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয় পলাশীতে। ভাগীরতি নদীর তীরে জঙ্গল পরিষ্কার করে আমরা ক্যাম্প করি। এরপর শুরু হয় ট্রেনিং। প্রথমে শপথ নিই ‘দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করে আমি স্বেচ্ছায় এ আত্মঘাতী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছি।’ ট্রেনিংয়ে ভারতীয় নৌবাহিনী আমাদের শেখায় বিশেষ ধরনের সাঁতার। পানির নিচে শরীর এবং ওপরে নাক-চোখ ভাসিয়ে সাঁতার দিতে হতো। এ পদ্ধতিতে সাঁতার কেটে নিঃশব্দে যেকোনো মানুষের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া যেত। সবচেয়ে কঠিন ছিল পানির নিচ দিয়ে সাঁতরে গিয়ে জাহাজে মাইন-অ্যাসেম্বল সেট করা। নৌবাহিনীর তিন বছরের ট্রেনিং আমরা নিই তিন মাসে। আমার নৌ-কমান্ডো নম্বর ছিল ০০৬০। ট্রেনিং চলাকালে ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রধান, বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ও কর্নেল এমএজি ওসমানী সাহেব এসেছিলেন।
প্রশিক্ষণ শেষে পরিকল্পনা হয় চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর, চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরে একই দিনে একই সময়ে বিস্ফোরণ ঘটানোর। সমন্বিত এ আক্রমণের নাম অপারেশন জ্যাকপট।
একাত্তরের কথা এভাবেই তুলে ধরেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নৌ-কমান্ডো মো. খলিলুর রহমান। আয়জুদ্দিন ও ওয়ালিউর নেছার সপ্তম সন্তান খলিলুর রহমান। বাড়ি সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার ভাতশালা গ্রামে। তার মুখেই শুনি মোংলা অপারেশনের কথা।
তিনি বলেন আমরা নৌ-কমান্ডো। যোদ্ধা ছিলাম ১৬০ জন। চট্টগ্রামের জন্য ৬০, মোংলার জন্য ৬০, চাঁদপুরের জন্য ২০ ও নারায়ণগঞ্জের জন্য ২০ জন করে চারটি গ্রুপ গঠন করা হয়। আমি ছিলাম মোংলা বন্দরের গ্রুপে। কমান্ডার ছিলেন প্রয়াত আহসান উল্লাহ বীরপ্রতীক।
৭ আগস্ট, ১৯৭১। ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে আমাদের নেওয়া হয় ব্যারাকপুর ক্যাম্পে। গঙ্গায় নামিয়ে একটি জাহাজ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। পরে ক্যানিং থেকে দেশি নৌকায় রায়মঙ্গল নদী পার হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সুন্দরবনের ভেতর কৈখালি মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে পৌঁছি। ক্যাম্প কমান্ডার ছিলেন জর্জ মার্টিস, লেফটেন্যান্ট কফিল। প্র্যাকটিসের জন্যই স্থলপথে না নিয়ে ভয়াল নদী পথে আমাদের নিয়ে আসা হয়।
সমুদ্রের পাশ দিয়ে হেঁটে সুন্দরবনের ভেতর প্রথমে উঠি কালাবগি নামের গ্রামে। পরে ক্যাম্প গড়ি সুতারখালিতে। অপারেশনের জন্য ২০ জনের তিনটি দলে ভাগ হই। দল তিনটির নেতা মজিবর রহমান, আফতাব উদ্দিন এবং আমি। আমাদের সাপোর্টের জন্য আসে ২০ জন গেরিলা। তাদের কমান্ডার ছিলেন খিজির আলী বীরবিক্রম। আমরা নির্দেশের অপেক্ষায় থাকি।
বলা ছিল, চারটি বন্দরে আক্রমণের জন্য সবকটি গ্রুপকে একসঙ্গে নির্দেশ দেওয়া হবে। কীভাবে? এর জন্য প্রত্যেক গ্রুপকে দেওয়া হয় একটি করে রেডিও। বলা হয় তোমরা ১৩ আগস্ট থেকে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে আকাশবাণী ‘খ’ কেন্দ্র শুনবে। যেকোনো দিন পঙ্কজ মল্লিকের কণ্ঠে তোমাদের একটা গান শোনানো হবে ‘আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলাম গান...।’ এ গান শুনলেই বুঝতে হবে প্রস্তুতির নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এর ২৪ ঘণ্টা বা তারও পরে শোনানো হবে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে একটি গান ‘আমার পুতুল আজকে যাবে শ^শুর বাড়ি...।’ এ গান শুনলে ওইদিনই টার্গেটে হিট করতে হবে।
১৩ আগস্ট রেডিওতে আমরা প্রথম গানটি শুনলাম। কিন্তু দ্বিতীয় গানটি শোনানো হলো ৪৮ ঘণ্টা পর অর্থাৎ ১৫ আগস্ট সকালে। টিম লিডার আহসান উল্লাহ সাহেব সবাইকে ডেকে নির্দেশ দিলেন হিট করার। প্রস্তুত হয়ে নিলাম। সাঁতার কাটার জন্য পায়ে শুধু ফিনস এবং গায়ে সুইমিং কস্টিউম। গামছা দিয়ে শরীরে পেঁচিয়ে নিলাম মাইনটি। জাহাজের গায়ে মাইন লাগানোর জন্য সঙ্গে ছিল একটি ড্যাগার।
গেরিলারা রেকি করে আসে দিনের বেলায়। ওইদিন সন্ধ্যার পরই আমাদের শপথ করানো হলো ‘আমরা সবাই ভাই ভাই। দেশের জন্য জীবন দিতেও দ্বিধা করব না। কাউকে বিপদে ফেলব না এবং বিপদ দেখে সরে পরব না।’
রাতে নৌকায় করে রওনা হলাম। স্রোত ছিল প্রতিকূলে। ফলে ভোরের দিকে পৌঁছলাম মোংলা বন্দরের অন্য তীরে, বানিয়াশান্তা গ্রামে। আমরা অবস্থান নিই বেড়িবাঁধের নিচে। কথা ছিল মধ্যরাতে অপারেশন করার। কিন্তু তা হলো না। তখন সূর্য উঠছে। শরীরে সরিষার তেল মেখে কস্টিউম পরে নিই। বুকে মাইন বেঁধে পানিতে নেমে দিবালোকেই অপারেশন করি। মোংলা বন্দরের জাহাজগুলোতে মাইন লাগিয়ে যে যার মতো সরে পড়ি। পানির ওপরে তখন পাকিস্তানিদের গানবোট। সকাল তখন ৯টার মতো। একে একে বিস্ফোরিত হতে থাকে মাইনগুলো। এটাই ছিল অপারেশন জ্যাকপট। এ অপারেশনে চারটি বন্দরের ২৬টি জাহাজ আমরা ডুবিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলাম।
অপারেশনের পর সরে যেতে গিয়ে ধরা পড়েন নৌ-কমান্ডো খলিলুর রহমান। সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘১৮ আগস্ট ১৯৭১। অপারেশন জ্যাকপট শেষে ফেরার পথে সাতক্ষীরার বুদহাটাতে আমরা সাতজন পাকিস্তানি সেনাদের অ্যামবুশের মুখে পড়ি। নদীপথে নৌকা দিয়ে যাচ্ছিলাম। সবাই খুব ক্লান্ত। একজন পাহারা দিলে বাকিরা ঘুমাত। রাত ১টা। পাহারার দায়িত্ব ছিল মোহসিনের। হঠাৎ চারদিকে গুলির শব্দ। নৌকার ওপর লাইট মেরে পাকিস্তানি সেনারা গুলি ছুড়ছে। আমাদের না জাগিয়েই মোহসিন প্রাণ বাঁচাতে সাঁতরে পালিয়ে গেল। চোখ খুলে দেখি, চারপাশ থেকে শুধু গুলি আসছে। প্রত্যেকের হাতেই একটা করে এসএমজি আর দুটো করে ম্যাগাজিন। এসএমজি দিয়ে মাত্র ২৫ গজ দূরে আঘাত করা যায়। আমরা পেরে উঠলাম না। ওখানেই আফতাব উদ্দিন ও সাতক্ষীরার কাটিয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম মারা যায়। ডাঙ্গায় ওঠার আগেই আমরা অস্ত্র ফেলে দিই। বন্দি হই আমিসহ মুজিবর রহমান, ইমাম বারি ও ইমদাদুল হক। ওরা বুঝে যায় আমরা মুক্তিযোদ্ধা। ধরে নিয়ে শুরু করে নির্মম টর্চার।
তিনি বলেন, চোখ বেঁধে, সারা শরীরে রড দিয়ে পেটাত ওরা। প্রচন্ড যন্ত্রণায় কোমর পর্যন্ত অবশ হয়ে যায়। ওদের আঘাতে আমার সামনের সব দাঁত ভাঙা। একদিন ইটের খোয়ার রাস্তায় জিপ গাড়ির সঙ্গে পা বেঁধে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। পেটের চামড়া উঠে গিয়ে রক্ত পড়ছিল। মা-গো, বাবা-গো বলে চিৎকার করছিলাম। উত্তেজিত হয়ে তারা প্রায়ই বেয়নেট দিয়ে শরীরে খোঁচা দিত।
এরপর আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় সাতক্ষীরায়, ডায়মন্ড হোটেলে। সেখানে প্রতিরাতে শুনতাম মেয়েদের আর্তচিৎকার। একদিন কবর খুঁড়ে সেখানে নিয়ে গিয়ে ওরা বলে, মুখ খোল, না হলে এখনই মেরে ফেলব। আমরা তবু মুখ খুলিনি। পরে নিয়ে যাওয়া হয় যশোর ক্যান্টনমেন্টে। সেখান থেকেই কৌশলে ঝুঁকি নিয়ে পালিয়ে আসি।
নৌ-কমান্ডো খলিলুর রহমান এখন প্রয়াত। কিন্তু তার বলা কথা বর্তমান প্রজন্মের কাছে ইতিহাস হয়ে থাকবে। প্রজন্মের প্রতি আশা নিয়ে তিনি বললেন আমরা একটা ভৌগোলিক কাঠামো, পতাকা ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশটাকে অর্থনৈতিকভাবে তোমাদেরই সমৃদ্ধ করতে হবে। তোমরা ত্যাগী, সাহসী আর প্রতিবাদী হইও। শুধু নিজের চিন্তা করে দেশ ত্যাগ করো না। ভালোবেসে নিজের দেশের পাশে থেকো।
সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাড়া মহল্লায় সতর্ক অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই পঁচাত্তর থেকে একুশ বছর শুধু মার খেয়েছি। ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত শুধু মার খেয়েছি। এবার যে হাত দিয়ে মারবে সেই হাত ভেঙে দিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এবার যেন আর কোনো বিআরটিসির বাস পোড়াতে না পারে। যেটা পোড়াতে যাবে এখন তো সবার হাতে ক্যামেরা। ভিডিও ফুটেজ দেখে যেই হাতে আগুন দেবে, সেই হাত সঙ্গে সঙ্গে পুড়িয়ে দিতে হবে। পোড়ার যন্ত্রণাটা তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে। কোনোদিন বলিনি এখন বলবআর মার খাওয়ার সময় নেই।’
গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের এক যৌথ সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এমন কড়া বক্তব্য দেন তিনি। এসময় তিনি বলেন, ‘অনেক মার খেয়েছি, আর নয়।’
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের স্থান নিয়ে উত্তেজনা চলার মধ্যে গত বুধবার বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে হতাহত ও আটকের ঘটনা ঘটে। এরপর রাতে চট্টগ্রামে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল থেকে গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকার বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করার ব্যাপারে অনড়। তারা বিকল্প প্রস্তাব পছন্দ হলে ভেবে দেখবে বলেও জানায়।
বসে বসে মার খাব না : প্রধানমন্ত্রী তবে প্রশাসন বলছে, রাস্তায় কাউকে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। এ অবস্থায় রাজনৈতিক পরিম-লে উত্তেজনা চলছে।
এমন প্রেক্ষাপটে দলীয় সভায় যুক্ত হয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কারও গায়ে হাত দিলে আর ক্ষমা করা হবে না। এরা (বিএনপি) কীভাবে অত্যাচার করেছে সেটা মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। বিএনপির অপকর্ম তুলে ধরতে হবে। আমাদের যেসব নেতাকর্মী বিএনপির হাতে ছেঁচা মার খেয়েছে তাদের বসে থাকলে তো চলবে না। বসে বসে আর মার খাওয়া যাবে না।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘অগ্নিসন্ত্রাসী, স্বাধীনতাবিরোধীদের আর ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না। এটা পরিষ্কার কথা। ওরা আমাদের উৎখাত করবে? ওরা পকেট থেকে এসেছে, আবার পকেটেই থাকবে। গণতন্ত্রের কথা ওদের মুখে মানায় না।’
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশিদের বিভিন্ন বক্তব্যের সমালোচনা করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘যেসব দেশ আমাদের দেশের গণতন্ত্রের কথা বলে তাদের দেশের অবস্থা তো আমরা জানি। প্রতিদিন মানুষ খুন হয়। ভোট চুরি হয়েছে বলে তাদের ক্যাপিটাল হিলেও আক্রমণ হয়। পাঁচ-ছয়জনকে গুলি করে মারে। তাদের কাছ থেকে আমার গণতন্ত্রের সবক নিতে হবে? আমার বাংলাদেশ, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা বাস্তবায়ন করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুচলেকা দিয়ে গেছিল সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আমি ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করব, তারেক জিয়াকে বাংলাদেশে ধরে এনে সাজা বাস্তবায়ন করব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকা...তারা খুনি পালতেছে একটা। আবার কানাডা পালে আরেকটা। পাকিস্তানে আছে দুইটা। সব দেশকে বলব এই খুনিদের ফেরত পাঠাতে হবে। ব্রিটিশ সরকারকে বলব তারেক জিয়াকে দেশে ফেরত পাঠাতে। কারণ সে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তারা মানবতার কথা বলে, দুর্নীতির কথা বলে আবার সেই খুনি-দুর্নীতিবাজকে আশ্রয় দেয়। কাজেই তাকে বাংলাদেশের কাছে হ্যান্ডওভার করতে হবে।’
গণমাধ্যমের মালিকদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, ‘যেসব মিডিয়া এখন ধরনা দিচ্ছে, এত টেলিভিশন এগুলো তো আমারই দেওয়া। আমি যদি উন্মুক্ত না করে দিতাম, এত মানুষের চাকরিও হতো না। এত মানুষ ব্যবসাও করতে পারত না।’
সবার শান্তি নিশ্চিত করেছে তার সরকারএ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সে বিএনপির ব্যবসায়ীই হোক, আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ী হোক, সবাই কিন্তু শান্তিতে ব্যবসা করেছে। হাওয়া ভবনও আমরা খুলি নাই। খাওয়া ভবনও আমরা খুলি নাই। ব্যবসা করার সুযোগ করে দিয়েছি। আবারও হাওয়া ভবন আসলে এখন আরেকটা নাম দেবে। আবারও চুষে চুষে খাবে। শান্তিতে ব্যবসা করতে হবে না।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে যারা তেল মারছে, আমরা তাদেরও হিসাব করব। বিএনপির আমলে তো এত আরামে ব্যবসা করতে পারেননি। মিডিয়া একটু উল্টাপাল্টা লিখলেই তো মারত। তার পরও এত আহ্লাদ কীসে, এত তেল মারা কীসে, আমি তো জানি না। কত তেল আছে আমি দেখব।’
বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। ২০০১ সালের নির্বাচনের পরপরই একেকজন বাড়ি দখল করে রাতারাতি পুকুর কেটে কলাগাছের বাগান করেছে। মেয়েদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করেছে। ছয় বছরের মেয়ে থেকে শুরু করে ৬০ বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। সেই পূর্ণিমা-ফাহিমা সারা বাংলাদেশের কত নাম বলব সবার চিকিৎসা করতে হয়েছে। অনেকে লজ্জায় নামই প্রকাশ করেনি।’ তিনি বলেন, ‘২০০১ সালে যে অত্যাচারটা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর করেছে আমরা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর গুণে গুণে সেই অত্যাচারের জবাব দিতে পারতাম। সেই ক্ষমতা আওয়ামী লীগ রাখে। কই আমরা তো তা করি নাই। আমরা তো তাদের ওপর এইভাবে অত্যাচার নির্যাতন করতে যাইনি। বরং ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে তারা আগুনে পুড়িয়ে মারা শুরু করল।’
বিএনপির নেতা খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুব বড় গলায় বলেন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। তারা তাদের কোনো ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে পেরেছে? পারেনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাকে যখন আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হলো আমি তখনই দেশে চলে এসেছি। তারেক জিয়ার বাপও আমাকে ঠেকাতে পারেনি। আবার যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার তখনো পারেনি। এতই নেতৃত্ব দেওয়ার শখ, দেশের বাইরে পালিয়ে থেকে কেন? ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি সেই সুযোগে ডিজিটালি কথা বলে।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি গত বুধবার লাশ ফেলার দুরভিসন্ধি কার্যকর করেছে। আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে সারা দেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সতর্ক পাহারায় থাকবে, রাস্তায় কোনো সমাবেশ করতে দেব না।
গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের এক যৌথসভায় এ কথা বলেন তিনি। এ সময় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী নেতাকর্মীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন।
বিদেশিদের উদ্বেগের বিষয় তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিদেশিরা আমাদের বন্ধু। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কিন্তু এটা একপেশে, এটা উচিত নয়। আমরা আপনাদের বন্ধু। আমাদের সঙ্গে শত্রুতা করবেন না। জনতা কার সঙ্গে সেটা যদি পাবলিক জমায়েতে মনে হয়ে থাকে, তাহলে যশোর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সমাবেশ দেখুন। জনগণ কী চায় বুঝতে পারবেন।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আজকে অশান্তি, বিশৃঙ্খলা করতে উসকানি দিচ্ছে বিএনপি। তাদের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে তারা সংঘাতের উসকানি দিচ্ছে। সাম্প্রদায়িক শক্তি, জঙ্গিবাদী শক্তি মাঠে নামিয়ে লাশ ফেলার দুরভিসন্ধি তারা কার্যকর করেছে গত বুধবার।’
তিনি বলেন, ‘রাস্তা বন্ধ করে জনগণকে কষ্ট দিয়ে সমাবেশ করা, এটা আর হতে দেওয়া হবে না। আমরাও করব না। মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সমাবেশ আমরা মহানগর নাট্যমঞ্চে করব।’
নেতাকর্মীদের পাড়া-মহল্লায় সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সারা বাংলাদেশের সব জেলা-উপজেলা, মহানগর, থানা, পৌরসভা, ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে সতর্ক পাহারায় থাকবেন। আক্রমণ আমরা করব না, আক্রমণের উসকানি দিলে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। এই বিজয়ের মাসে আমরা দেশকে সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে তুলে দিতে পারি না। এটা আমাদের শপথ।’ গণমাধ্যম একপক্ষ নিয়েছেএ অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘অনেকেই নিরপেক্ষতার কথা বলেন, বস্তুনিষ্ঠতার কথা বলেন। পুলিশ মার খেয়ে রাস্তায় পড়ে আছে, কেউ তো সেই ছবি দিলেন না। বিআরটিসির গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কেউ পত্রিকায় ছবি দিলেন না। এই দুর্ব্যবহার কেন করা হচ্ছে? মিডিয়া কেন একটা পক্ষ নিচ্ছে, পক্ষপাতিত্ব করছে। এটা আমার অভিযোগ।’
সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান; যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম; সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন; বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়া ও উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিজয়ের মাসে নাশকতার বিরুদ্ধে খেলা হবে : আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ডিসেম্বর মাস বিজয়ের মাস। বিজয়ের মাসে নাশকতার বিরুদ্ধে খেলা হবে। কুমিল্লার মানুষকে প্রস্তুত থাকতে হবে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে খেলা হবে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে খেলা হবে, ভোট চুরির বিরুদ্ধে খেলা হবে, ভুয়া ভোটার তালিকার বিরুদ্ধে খেলা হবে। বিএনপির দুরভিসন্ধি আমরা বুঝে গেছি, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী তথা দেশবাসী প্রস্তুত, নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে এবার রুখে দাঁড়াবে।
গতকাল বিকেলে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন ভার্চুয়ালি উদ্বোধনকালে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। এতে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক, জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, সাবেক মন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিব, নাসিমুল আলম নজরুল এমপি, আবুল হাশেম খান এমপিসহ জেলার সিনিয়ার নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
বিএনপি নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বসে পড়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন, ‘বিএনপি পার্টি অফিসে অনেক চালের মজুদ, পানির মজুদ ছিল। চিনি-ডালের মজুদ ছিল, ১৫টি অবিস্ফোরিত হাতবোমা ছিল। ছুরি-কাঁচি ছিল। ডেগে ডেগে খিচুড়ি ছিল। এগুলো আনার পেছনে কারণ কী? তা আমরা জানি। বড় জমায়েত হলে এমন হয়। কিন্তু আমরা এখন শুনছি তারা এখানে সমাবেশ করতে এসে বসে পড়ার পরিকল্পনা হিসেবে এসব রসদ এনেছিল।’
গতকাল বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায় রাজধানীর রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ও ডিএমপি কমিশনারসহ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ভাঙচুর ও জানমালের ক্ষতি করলে পুলিশ বসে থাকবে না বলে বিএনপিকে সতর্ক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। দলটিকে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে দলীয় কাজ করেন। আপনারা মিছিল করেন, মিটিং করেন কোনো আপত্তি নেই। তবে আপনারা যদি ভাঙচুর করেন, জানমালের ক্ষতি করেন, পুলিশকে আহত করেন, তখন তো নিরাপত্তা বাহিনী বসে থাকবে না। তাদের কাজই তো প্রটেকশন দেওয়া।’
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পরিস্থিতি নাজুক হয়েছে সেটা আমরা মনে করি না। পরিস্থিতি সবসময় আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক, তাদের একঘেয়েমি ছেড়ে হয় তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসুক। বিরাট সমাবেশ করুক, আমরাও দেখি, দেশবাসীও দেখবে। নয়তো কালশী মাঠে যাক। এরপরও আলোচনা হতে পারে। তারা আসুক ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বসুক।’
বুধবার নয়াপল্টনে পুলিশ বাধ্য হয়েই অ্যাকশনে গিয়েছিল দাবি করে তিনি বলেন, ‘তারা (পুলিশ) যেভাবে মার খাচ্ছিল, এ ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। বিশৃঙ্খলা করলে তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তো চুপ থাকবে না।’
পুলিশ ব্যাগে করে বিএনপি কার্যালয়ে ককটেল নিয়ে গিয়েছিল বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যেসব পুলিশ আহত হয়েছে তাদের দেখে আসুন, তারা কি নিজেরা নিজেরা ককটেলে আহত হয়েছে? তারা মার খেয়েছে, ককটেলের হামলার শিকার হয়েছে।’
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
কুড়িগ্রাম সদরের বেলগাছা ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে সিমিত চন্দ্র (১২) নামের এক স্কুলছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বুধবার (৭ জুন) ভোরে ওই ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের বেলগাছা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত এক কিশোরকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে।
পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া সিমিত চন্দ্র বেলগাছা গ্রামের মানিক চন্দ্র ড্রাইভারের ছেলে। অভিযুক্ত কিশোর (১৬) একই গ্রামের প্রদীপ চন্দ্রের (দর্জি) ছেলে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম আর সাঈদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের গীতা সংঘ অনুষ্ঠান দেখতে যায় সিমিত ও তার বড় ভাই। সিমিতকে অনুষ্ঠানস্থলে রেখে বাড়িতে ফেরে তার বড় ভাই। পরে অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে সিমিতের সঙ্গে অভিযুক্ত কিশোরের কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনায় সিমিতকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ওই কিশোর। পরে তাদের একটি পরিত্যক্ত বাড়ির পেছনের গর্তে সিমিতের মরদেহ পুতে রাখে। অনুষ্ঠান শেষে সিমিত বাড়িতে না ফিরলে স্বজনরা তার খোঁজে বের হয়। অভিযুক্ত কিশোরকে সিমিতের বিষয়ে জিজ্ঞাস করলে সে অসংলগ্ন আচরণ করে। পরে তার বাবা প্রদীপ চন্দ্র তাদের পরিত্যক্ত বাড়ির পেছনের একটি গর্তে সিমিতের মরদেহ দেখিয়ে দেন। বুধবার ভোরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
আটক কিশোরের স্বীকারোক্তিতে সদর থানার ওসি এম আর সাঈদ বলেন, অভিযুক্ত কিশোরের সঙ্গে একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মেয়েটির অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে। এ নিয়ে সিমিতসহ অনেকেই ওই কিশোরকে খোঁচা দিত। গত রাতে সিমিত ওই কিশোরের সাথে এ নিয়ে আবারও খোঁচা দিলে সে সিমিতের গলা চেপে ধরে। এত শ্বাসরোধ হয়ে শিশুটি মারা যায়।
তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত কিশোর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনা স্বীকার করেছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হচ্ছে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে খরচ বাড়ছে। কোনো যাত্রী আকাশপথে ভ্রমণ করলেই তাকে দিতে হবে ২০০ টাকার কর। একই সঙ্গে বিদেশগামী বিমানযাত্রীদের কর ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ (২০২৩-২৪ অর্থবছর) বাজেট উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এদিকে পর্যটন খাত ও বিমানবহর সম্প্রসারণ ও বিমানবন্দর উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
পর্যটন খাত : অর্থমন্ত্রীর তার
বক্তৃতায় বলেন, ডলার সাশ্রয়ের জন্য অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ হ্রাস করা, কৃচ্ছ্রতার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং নতুন রাজস্ব আয়ের খাত তৈরি করতে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ কর ৬৭ শতাংশ বাড়িয়ে ২ হাজার, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যাওয়ার ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার এবং অন্যান্য দেশে ৫০ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার টাকা ভ্রমণ কর দিতে হবে।
পর্যটন খাত নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা : অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় আরও বলেছেন, পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক মানের আবাসন ও বিনোদন সুবিধা নিয়ে কক্সবাজার জেলায় সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারীর সময় দেশের পর্যটনশিল্প মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে এ শিল্পকে সহায়তা করার জন্য সরকার ১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে। বাংলাদেশে পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকাগুলোতে উন্নয়নে সরকারি অর্থায়নে ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে একটি পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পর্যটনের উন্নয়ন ও বিকাশের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে ৩৬টি জেলার পর্যটন ব্র্যান্ডিং অনুসারে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার পর্যটন এলাকার ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত আকর্ষণীয় পর্যটন স্থানগুলো সংরক্ষণে এবং পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান বিষয়ে ডকুমেন্টারি ও টেলিভিশন কমার্শিয়াল প্রস্তুত করা হচ্ছে।
বিমানবহর সম্প্রসারণ ও বিমানবন্দর উন্নয়ন : অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, সরকার দেশে আন্তর্জাতিক মানের বিমান পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তুলতে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আকাশপথে যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনায় চলতি বছরে মালদ্বীপ ও কানাডার টরন্টোতে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালু করা হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বর্তমানে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই কাজ চলছে। কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার লক্ষ্যে রানওয়ে সম্প্রসারণ ও নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করে সেখানে একটি আঞ্চলিক হাব গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রকল্প প্রণয়ন করা হচ্ছে। তাছাড়া দেশের অন্যান্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অবকাঠামো, রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে, হ্যাঙ্গার ও আমদানি-রপ্তানি পণ্য সংরক্ষণের শেডগুলো সংস্কার ও উন্নয়নসাধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।