
বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়া বাড়িয়েছে সরকার। চলতি অর্থবছরের নভেম্বর মাসে ব্যাংক খাতে ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ৬১১ কোটি টাকা। সরকার ঋণের পুরোটাই নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। নভেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৯ হাজার ১১৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ কথা জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, সরকার বাজেট-ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। ঋণের অধিকাংশই বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটে যায়। ব্যয়-সংকোচন নীতির কারণে অর্থবছরের শুরুর দিকে সরকারের অর্থচাহিদা কম ছিল। এখন কিছু প্রকল্প চালু হয়েছে। এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বেড়েছে। ফলে খাদ্য ও জ্বালানি আমদানিতে আগের চেয়ে বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। যে হারে খরচ বেড়েছে সে হারে আয় না বাড়ায় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের আগস্ট শেষে ব্যাংক থেকে সরকারের নেওয়া ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছিল ২ লাখ ৬৭ হাজার ৫২ কোটি টাকা। পরের মাসে ঋণস্থিতি দাঁড়ায় ২ লাখ ৮২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। আরও বেড়ে নভেম্বর মাসে ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৯ হাজার ১১৯ কোটি টাকা। নভেম্বর পর্যন্ত সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮৭ হাজার ২৫২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। আর বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নিয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, অর্থবছরের প্রথমদিকে সরকার সাধারণত ব্যাংক খাত থেকে ঋণ কম নেয়। এই প্রবণতা বাড়ে অর্থবছরের শেষ দিকে। এ বছর উল্টো হচ্ছে। এখন অর্থবছরের মাঝামাঝি। রাজস্ব কমে গেলে সরকার ঋণ নেয়। এখন সঞ্চয়পত্র বিক্রিও অনেক কম। সঞ্চয়পত্রে বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কমানো হয়েছে সুদের হার। তবে কী কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি এতটা কমেছে তার কারণ এখনো পরিষ্কার নয়। সরকারকে ঋণ নিতে হলে এখন ব্যাংক খাত থেকেই নিতে হবে। এসব কারণে ব্যাংকে সরকারের ঋণ বাড়ছে। নভেম্বরে সরকার সব টাকাই নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া বাড়িয়েছে। এটা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ নীতির বিরোধী। এই ঋণের কারণে মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।
চলতি অর্থবছরের আগস্ট পর্যন্ত সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে উল্টো পরিশোধ করেছিল। তবে সেপ্টেম্বর মাসে বেশি পরিমাণে ঋণ নেওয়া শুরু করে। সে মাসেই ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নেয় ১৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল ২ লাখ ৭০ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত এর পরিমাণ বেড়েছে ২৮ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট-ঘাটতি পূরণে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার ব্যাংকঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। আগের অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ছিল ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এবার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য সরকারের। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকেও ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার।
রাজধানীতে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের স্থান নিয়ে উত্তেজনা সহিংসতার পর সমঝোতার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিএনপি নয়াপল্টনে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কের পরিবর্তে তাদের পছন্দের স্থান হিসেবে কমলাপুর স্টেডিয়ামে সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে। অন্যদিকে ঢাকার পুলিশ প্রশাসন তাদের মিরপুরের দারুস সালাম এলাকার বাঙলা কলেজ মাঠের প্রস্তাব দিয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুপক্ষের মধ্যে আজ শুক্রবারের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, আগামীকাল শনিবার বিএনপির গণসমাবেশের দিন নির্ধারিত রয়েছে। দলটি নয়াপল্টনে সমাবেশ করার ব্যাপারে অনড় অবস্থান নেয়। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) তাদের নানা শর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার প্রস্তাব দেয়। এ নিয়ে উত্তেজনা চলার মধ্যে বিএনপি নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে অবস্থান নিতে শুরু করেন। গত বুধবার পুলিশ সেখানে অভিযান চালালে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। আটক করা হয় বিএনপির কয়েকশ নেতাকর্মীকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দলটির দায়িত্বশীল নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলছেন, তারা নয়াপল্টনে সমাবেশ করবেন। যেকোনো মূল্যে নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের সামনে হাজির হবেন। আসবেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা। তবে বিএনপির মহাসচিব সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সরকার যদি বিকল্প প্রস্তাব দেয় এবং সে স্থান যদি তাদের পছন্দ হয়, তাহলে ভেবে দেখবেন তারা। এরপরই সমাবেশের স্থান নিয়ে বিএনপি ও পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে আলোচনা হয়।
কমলাপুর স্টেডিয়াম চায় বিএনপি, পুলিশ বলছে বাঙলা কলেজ : গতকাল রাতে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে বৈঠক হয় বিএনপির একটি প্রতিনিধিদলের। বৈঠক শেষে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুটি স্পট নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমরা জায়গা পরিদর্শন করে সিদ্ধান্ত জানাব।’
এদিকে বিএনপির প্রতিনিধির সঙ্গে ডিএমপি কমিশনারের সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকেই সমাবেশের মাঠের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। গণসমাবেশের স্থান নিয়ে যে সমস্যা চলছে তার সমাধান হবে বলে আশা করছি।’
গতকাল বুলুর নেতৃত্বে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, অধ্যাপক ডাক্তার এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ডিএমপি কার্যালয়ে যান।
এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপি নেতৃবৃন্দ ডিএমপিতে গিয়ে আলাপ করুক।’ এরপর বিএনপির প্রতিনিধিদল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ডিএমপি কার্যালয়ে যায়।
বিএনপির সংবাদ সম্মেলন : গতকাল বিকেলে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিকল্প প্রস্তাব না পেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণসমাবেশ করবেন তারা। তিনি বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চাই। গণসমাবেশের দিন আমরা নয়াপল্টনে যাব। জনগণ কী সিদ্ধান্ত নেয় তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। কার্যালয় খুলে দিতে হবে। আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। গণসমাবেশ করার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গণসমাবেশের দিন আমরা সমাবেশস্থলে যাব।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সংবিধানসম্মত শান্তিপূর্ণভাবে গণসমাবেশ করবে বিএনপি। প্রশাসন যদি আমাদের অন্য কোনো প্রস্তাব দেয় সেটি যদি আমাদের অনুকূলে হয়, তাহলে আমরা ভেবে দেখব। তবে আমরা নয়াপল্টনেই শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বোমা নিয়ে গেছে কার্যালয়ে : সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল দাবি করেন, ‘পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্য নয়াপল্টনে অযাচিতভাবে প্রবেশ করে সিমেন্টের ব্যাগে করে হাতবোমা নিয়ে যায়। সেখানে রেখে আসে, যা বিভিন্ন মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছে। এরপর দলীয় কার্যালয়ে তারা ন্যক্কারজনকভাবে অভিযান চালিয়ে নিচতলা থেকে ষষ্ঠতলা পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের বিভিন্ন কক্ষ তছনছ করেছে।’ তিনি আরও দাবি করেন, ‘কার্যালয়ের ভেতর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিএনপি চেয়ারপারসনের কক্ষ, মহাসচিবের কক্ষ, অফিস কক্ষের দরজা ভেঙে প্রবেশ করেন এবং সব আসবাবপত্র, ফাইল, গুরুত্বপূর্ণ নথি তছনছ করেন। তারা কম্পিউটার, ল্যাপটপ, হার্ডডিস্ক এবং দলীয় সদস্যদের প্রদেয় মাসিক চাঁদার টাকা, ব্যাংকের চেক বই, নির্বাচন কমিশনসংক্রান্তসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে যান।’
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গত বুধবার পুরো ঢাকা শহরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তাদের সশস্ত্র ও উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা পাড়া-মহল্লায় জঙ্গি মিছিল করে এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা ও তাদের পরিবার-পরিজনের ওপর হামলা করে।’ তার দাবি, ‘আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ওয়ারী থানার যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল মেহবুব মিজুকে বাসায় না পেয়ে তার বৃদ্ধ বাবা মিল্লাত হোসেনকে বেদম প্রহার করে। যার ফলে তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন।’
মির্জা ফখরুল দাবি করেন, ‘পুলিশের গুলিতে পল্লবী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মকবুল হোসেন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অসংখ্য নেতাকর্মী ও পথচারী।’ তিনি মকবুল নিহত হওয়ার ঘটনার তদন্ত দাবি করেন।
গতকাল সকালে কার্যালয়ে যেতে বাধা দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আইনজীবীসহ নয়াপল্টনের কার্যালয়ে প্রবেশ করতে চাইলে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, বিএনপি কার্যালয়ে বিস্ফোরকদ্রব্য পাওয়া গেছে। তল্লাশি চালানোর জন্য ক্রাইম সিন ঘোষণা করে সেখানে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। অথচ আইন হচ্ছে কোনো বাড়িতে তল্লাশি চালাতে হলে সেই বাড়ির মালিককে সঙ্গে রাখতে হবে এবং নিরপেক্ষ সাক্ষী থাকতে হবে। সাধারণত এ ধরনের তল্লাশি চালাতে হলে সার্চ ওয়ারেন্ট ইস্যু করতে হয়। এ ক্ষেত্রে কিছুই করা হয়নি।’
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ^র চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স প্রমুখ।
গণসমাবেশের প্রস্তুতি : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ সফল করার প্রস্তুতি আমাদের আছে। আমরা পরিকল্পনা করছি, কীভাবে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে নয়াপল্টনে জড়ো হব। সারা দেশ থেকে ইতিমধ্যে নেতাকর্মীরা ঢাকায় পৌঁছে গেছেন।’ যেকোনো মূল্যে তারা সমাবেশ সফল করবেন জানিয়ে ওই নেতা বলেন, ‘বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা গণসমাবেশ সফল করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঢাকা শহরে লাখের ওপর আমাদের নেতা রয়েছেন। এর বাইরে কর্মী-সমর্থকরা আছেন।’
এদিকে গত বুধবার নয়াপল্টনে পুলিশের হামলা, অভিযান ও নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গতকাল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের চকবাজার, রমনা, খিলগাঁও, মতিঝিল ও বংশাল থানা বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ মিছিল করেছেন। বংশাল থানার নেতাকর্মীদর মিছিল থেকে আকাশ ও জনিসহ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ।
কার্যালয়ে যেতে ফখরুলকে বাধা : সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাওয়ার পথে বিএনপি মহাসচিবের গাড়ি নাইটিঙ্গেল মোড়ে এলে পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে আটকে দেন। এ সময়ে মহাসচিবের সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান ছিলেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার তাদের জানান, ‘ক্রাইম সিনের’ কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি অফিসে কারও প্রবেশাধিকার নেই।
এ সময় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপি অফিসে কোনো ধরনের বিস্ফোরক ছিল না। পুলিশ এসব বোমা রেখেছে।’
মকবুলের পরিবারের পাশে মির্জা ফখরুল : বেলা ১১টার দিকে বিএনপি মহাসচিব ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে কিছুক্ষণ অবস্থান করে নয়াপল্টনে সংঘর্ষে নিহত মকবুলের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম। নিহত মকবুল হোসেনের ভাই নূর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপির মহাসচিব হঠাৎ এসে আমাদের সঙ্গে কয়েক মিনিট কথা বলে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। তিনি মকবুলের স্ত্রী ও বাচ্চাকে সান্ত¡না দিয়ে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।’
আমরা তখন ভারতের টাকিতে, ত্বকীপুর ইয়ুথ ক্যাম্পে। আটজন বাঙালি সাবমেরিনার ফ্রান্স থেকে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে চলে আসেন ভারতে। ভারতীয় নৌবাহিনীর সহযোগিতায় তারা সমন্বিত একটি দল গঠন করার উদ্যোগ নেন। ১২ মে, ১৯৭১। ক্যাম্পে তখন পাঁচ হাজারের মতো যুবক। সবাইকে ফল-ইন করিয়ে তারা ১২০ জনকে সিলেক্ট করে। শারীরিক গঠন আর সাঁতার জানা ছিল মাপকাঠি। বাড়ির একমাত্র ছেলে হলেই আনফিট করে দেওয়া হতো। নদীর পাড়ের ছেলেরা টিকে যায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যায়। সে হিসেবে আমাকেও তারা নিয়ে নেয়।
টাকি থেকে প্রথমে কল্যাণী এবং পরে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয় পলাশীতে। ভাগীরতি নদীর তীরে জঙ্গল পরিষ্কার করে আমরা ক্যাম্প করি। এরপর শুরু হয় ট্রেনিং। প্রথমে শপথ নিই ‘দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করে আমি স্বেচ্ছায় এ আত্মঘাতী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছি।’ ট্রেনিংয়ে ভারতীয় নৌবাহিনী আমাদের শেখায় বিশেষ ধরনের সাঁতার। পানির নিচে শরীর এবং ওপরে নাক-চোখ ভাসিয়ে সাঁতার দিতে হতো। এ পদ্ধতিতে সাঁতার কেটে নিঃশব্দে যেকোনো মানুষের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া যেত। সবচেয়ে কঠিন ছিল পানির নিচ দিয়ে সাঁতরে গিয়ে জাহাজে মাইন-অ্যাসেম্বল সেট করা। নৌবাহিনীর তিন বছরের ট্রেনিং আমরা নিই তিন মাসে। আমার নৌ-কমান্ডো নম্বর ছিল ০০৬০। ট্রেনিং চলাকালে ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রধান, বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ও কর্নেল এমএজি ওসমানী সাহেব এসেছিলেন।
প্রশিক্ষণ শেষে পরিকল্পনা হয় চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর, চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরে একই দিনে একই সময়ে বিস্ফোরণ ঘটানোর। সমন্বিত এ আক্রমণের নাম অপারেশন জ্যাকপট।
একাত্তরের কথা এভাবেই তুলে ধরেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নৌ-কমান্ডো মো. খলিলুর রহমান। আয়জুদ্দিন ও ওয়ালিউর নেছার সপ্তম সন্তান খলিলুর রহমান। বাড়ি সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার ভাতশালা গ্রামে। তার মুখেই শুনি মোংলা অপারেশনের কথা।
তিনি বলেন আমরা নৌ-কমান্ডো। যোদ্ধা ছিলাম ১৬০ জন। চট্টগ্রামের জন্য ৬০, মোংলার জন্য ৬০, চাঁদপুরের জন্য ২০ ও নারায়ণগঞ্জের জন্য ২০ জন করে চারটি গ্রুপ গঠন করা হয়। আমি ছিলাম মোংলা বন্দরের গ্রুপে। কমান্ডার ছিলেন প্রয়াত আহসান উল্লাহ বীরপ্রতীক।
৭ আগস্ট, ১৯৭১। ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে আমাদের নেওয়া হয় ব্যারাকপুর ক্যাম্পে। গঙ্গায় নামিয়ে একটি জাহাজ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। পরে ক্যানিং থেকে দেশি নৌকায় রায়মঙ্গল নদী পার হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সুন্দরবনের ভেতর কৈখালি মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে পৌঁছি। ক্যাম্প কমান্ডার ছিলেন জর্জ মার্টিস, লেফটেন্যান্ট কফিল। প্র্যাকটিসের জন্যই স্থলপথে না নিয়ে ভয়াল নদী পথে আমাদের নিয়ে আসা হয়।
সমুদ্রের পাশ দিয়ে হেঁটে সুন্দরবনের ভেতর প্রথমে উঠি কালাবগি নামের গ্রামে। পরে ক্যাম্প গড়ি সুতারখালিতে। অপারেশনের জন্য ২০ জনের তিনটি দলে ভাগ হই। দল তিনটির নেতা মজিবর রহমান, আফতাব উদ্দিন এবং আমি। আমাদের সাপোর্টের জন্য আসে ২০ জন গেরিলা। তাদের কমান্ডার ছিলেন খিজির আলী বীরবিক্রম। আমরা নির্দেশের অপেক্ষায় থাকি।
বলা ছিল, চারটি বন্দরে আক্রমণের জন্য সবকটি গ্রুপকে একসঙ্গে নির্দেশ দেওয়া হবে। কীভাবে? এর জন্য প্রত্যেক গ্রুপকে দেওয়া হয় একটি করে রেডিও। বলা হয় তোমরা ১৩ আগস্ট থেকে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে আকাশবাণী ‘খ’ কেন্দ্র শুনবে। যেকোনো দিন পঙ্কজ মল্লিকের কণ্ঠে তোমাদের একটা গান শোনানো হবে ‘আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলাম গান...।’ এ গান শুনলেই বুঝতে হবে প্রস্তুতির নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এর ২৪ ঘণ্টা বা তারও পরে শোনানো হবে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে একটি গান ‘আমার পুতুল আজকে যাবে শ^শুর বাড়ি...।’ এ গান শুনলে ওইদিনই টার্গেটে হিট করতে হবে।
১৩ আগস্ট রেডিওতে আমরা প্রথম গানটি শুনলাম। কিন্তু দ্বিতীয় গানটি শোনানো হলো ৪৮ ঘণ্টা পর অর্থাৎ ১৫ আগস্ট সকালে। টিম লিডার আহসান উল্লাহ সাহেব সবাইকে ডেকে নির্দেশ দিলেন হিট করার। প্রস্তুত হয়ে নিলাম। সাঁতার কাটার জন্য পায়ে শুধু ফিনস এবং গায়ে সুইমিং কস্টিউম। গামছা দিয়ে শরীরে পেঁচিয়ে নিলাম মাইনটি। জাহাজের গায়ে মাইন লাগানোর জন্য সঙ্গে ছিল একটি ড্যাগার।
গেরিলারা রেকি করে আসে দিনের বেলায়। ওইদিন সন্ধ্যার পরই আমাদের শপথ করানো হলো ‘আমরা সবাই ভাই ভাই। দেশের জন্য জীবন দিতেও দ্বিধা করব না। কাউকে বিপদে ফেলব না এবং বিপদ দেখে সরে পরব না।’
রাতে নৌকায় করে রওনা হলাম। স্রোত ছিল প্রতিকূলে। ফলে ভোরের দিকে পৌঁছলাম মোংলা বন্দরের অন্য তীরে, বানিয়াশান্তা গ্রামে। আমরা অবস্থান নিই বেড়িবাঁধের নিচে। কথা ছিল মধ্যরাতে অপারেশন করার। কিন্তু তা হলো না। তখন সূর্য উঠছে। শরীরে সরিষার তেল মেখে কস্টিউম পরে নিই। বুকে মাইন বেঁধে পানিতে নেমে দিবালোকেই অপারেশন করি। মোংলা বন্দরের জাহাজগুলোতে মাইন লাগিয়ে যে যার মতো সরে পড়ি। পানির ওপরে তখন পাকিস্তানিদের গানবোট। সকাল তখন ৯টার মতো। একে একে বিস্ফোরিত হতে থাকে মাইনগুলো। এটাই ছিল অপারেশন জ্যাকপট। এ অপারেশনে চারটি বন্দরের ২৬টি জাহাজ আমরা ডুবিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলাম।
অপারেশনের পর সরে যেতে গিয়ে ধরা পড়েন নৌ-কমান্ডো খলিলুর রহমান। সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘১৮ আগস্ট ১৯৭১। অপারেশন জ্যাকপট শেষে ফেরার পথে সাতক্ষীরার বুদহাটাতে আমরা সাতজন পাকিস্তানি সেনাদের অ্যামবুশের মুখে পড়ি। নদীপথে নৌকা দিয়ে যাচ্ছিলাম। সবাই খুব ক্লান্ত। একজন পাহারা দিলে বাকিরা ঘুমাত। রাত ১টা। পাহারার দায়িত্ব ছিল মোহসিনের। হঠাৎ চারদিকে গুলির শব্দ। নৌকার ওপর লাইট মেরে পাকিস্তানি সেনারা গুলি ছুড়ছে। আমাদের না জাগিয়েই মোহসিন প্রাণ বাঁচাতে সাঁতরে পালিয়ে গেল। চোখ খুলে দেখি, চারপাশ থেকে শুধু গুলি আসছে। প্রত্যেকের হাতেই একটা করে এসএমজি আর দুটো করে ম্যাগাজিন। এসএমজি দিয়ে মাত্র ২৫ গজ দূরে আঘাত করা যায়। আমরা পেরে উঠলাম না। ওখানেই আফতাব উদ্দিন ও সাতক্ষীরার কাটিয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম মারা যায়। ডাঙ্গায় ওঠার আগেই আমরা অস্ত্র ফেলে দিই। বন্দি হই আমিসহ মুজিবর রহমান, ইমাম বারি ও ইমদাদুল হক। ওরা বুঝে যায় আমরা মুক্তিযোদ্ধা। ধরে নিয়ে শুরু করে নির্মম টর্চার।
তিনি বলেন, চোখ বেঁধে, সারা শরীরে রড দিয়ে পেটাত ওরা। প্রচন্ড যন্ত্রণায় কোমর পর্যন্ত অবশ হয়ে যায়। ওদের আঘাতে আমার সামনের সব দাঁত ভাঙা। একদিন ইটের খোয়ার রাস্তায় জিপ গাড়ির সঙ্গে পা বেঁধে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। পেটের চামড়া উঠে গিয়ে রক্ত পড়ছিল। মা-গো, বাবা-গো বলে চিৎকার করছিলাম। উত্তেজিত হয়ে তারা প্রায়ই বেয়নেট দিয়ে শরীরে খোঁচা দিত।
এরপর আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় সাতক্ষীরায়, ডায়মন্ড হোটেলে। সেখানে প্রতিরাতে শুনতাম মেয়েদের আর্তচিৎকার। একদিন কবর খুঁড়ে সেখানে নিয়ে গিয়ে ওরা বলে, মুখ খোল, না হলে এখনই মেরে ফেলব। আমরা তবু মুখ খুলিনি। পরে নিয়ে যাওয়া হয় যশোর ক্যান্টনমেন্টে। সেখান থেকেই কৌশলে ঝুঁকি নিয়ে পালিয়ে আসি।
নৌ-কমান্ডো খলিলুর রহমান এখন প্রয়াত। কিন্তু তার বলা কথা বর্তমান প্রজন্মের কাছে ইতিহাস হয়ে থাকবে। প্রজন্মের প্রতি আশা নিয়ে তিনি বললেন আমরা একটা ভৌগোলিক কাঠামো, পতাকা ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশটাকে অর্থনৈতিকভাবে তোমাদেরই সমৃদ্ধ করতে হবে। তোমরা ত্যাগী, সাহসী আর প্রতিবাদী হইও। শুধু নিজের চিন্তা করে দেশ ত্যাগ করো না। ভালোবেসে নিজের দেশের পাশে থেকো।
সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাড়া মহল্লায় সতর্ক অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই পঁচাত্তর থেকে একুশ বছর শুধু মার খেয়েছি। ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত শুধু মার খেয়েছি। এবার যে হাত দিয়ে মারবে সেই হাত ভেঙে দিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এবার যেন আর কোনো বিআরটিসির বাস পোড়াতে না পারে। যেটা পোড়াতে যাবে এখন তো সবার হাতে ক্যামেরা। ভিডিও ফুটেজ দেখে যেই হাতে আগুন দেবে, সেই হাত সঙ্গে সঙ্গে পুড়িয়ে দিতে হবে। পোড়ার যন্ত্রণাটা তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে। কোনোদিন বলিনি এখন বলবআর মার খাওয়ার সময় নেই।’
গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের এক যৌথ সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এমন কড়া বক্তব্য দেন তিনি। এসময় তিনি বলেন, ‘অনেক মার খেয়েছি, আর নয়।’
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের স্থান নিয়ে উত্তেজনা চলার মধ্যে গত বুধবার বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে হতাহত ও আটকের ঘটনা ঘটে। এরপর রাতে চট্টগ্রামে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল থেকে গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকার বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করার ব্যাপারে অনড়। তারা বিকল্প প্রস্তাব পছন্দ হলে ভেবে দেখবে বলেও জানায়।
বসে বসে মার খাব না : প্রধানমন্ত্রী তবে প্রশাসন বলছে, রাস্তায় কাউকে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। এ অবস্থায় রাজনৈতিক পরিম-লে উত্তেজনা চলছে।
এমন প্রেক্ষাপটে দলীয় সভায় যুক্ত হয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কারও গায়ে হাত দিলে আর ক্ষমা করা হবে না। এরা (বিএনপি) কীভাবে অত্যাচার করেছে সেটা মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। বিএনপির অপকর্ম তুলে ধরতে হবে। আমাদের যেসব নেতাকর্মী বিএনপির হাতে ছেঁচা মার খেয়েছে তাদের বসে থাকলে তো চলবে না। বসে বসে আর মার খাওয়া যাবে না।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘অগ্নিসন্ত্রাসী, স্বাধীনতাবিরোধীদের আর ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না। এটা পরিষ্কার কথা। ওরা আমাদের উৎখাত করবে? ওরা পকেট থেকে এসেছে, আবার পকেটেই থাকবে। গণতন্ত্রের কথা ওদের মুখে মানায় না।’
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশিদের বিভিন্ন বক্তব্যের সমালোচনা করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘যেসব দেশ আমাদের দেশের গণতন্ত্রের কথা বলে তাদের দেশের অবস্থা তো আমরা জানি। প্রতিদিন মানুষ খুন হয়। ভোট চুরি হয়েছে বলে তাদের ক্যাপিটাল হিলেও আক্রমণ হয়। পাঁচ-ছয়জনকে গুলি করে মারে। তাদের কাছ থেকে আমার গণতন্ত্রের সবক নিতে হবে? আমার বাংলাদেশ, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা বাস্তবায়ন করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুচলেকা দিয়ে গেছিল সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আমি ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করব, তারেক জিয়াকে বাংলাদেশে ধরে এনে সাজা বাস্তবায়ন করব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকা...তারা খুনি পালতেছে একটা। আবার কানাডা পালে আরেকটা। পাকিস্তানে আছে দুইটা। সব দেশকে বলব এই খুনিদের ফেরত পাঠাতে হবে। ব্রিটিশ সরকারকে বলব তারেক জিয়াকে দেশে ফেরত পাঠাতে। কারণ সে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তারা মানবতার কথা বলে, দুর্নীতির কথা বলে আবার সেই খুনি-দুর্নীতিবাজকে আশ্রয় দেয়। কাজেই তাকে বাংলাদেশের কাছে হ্যান্ডওভার করতে হবে।’
গণমাধ্যমের মালিকদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, ‘যেসব মিডিয়া এখন ধরনা দিচ্ছে, এত টেলিভিশন এগুলো তো আমারই দেওয়া। আমি যদি উন্মুক্ত না করে দিতাম, এত মানুষের চাকরিও হতো না। এত মানুষ ব্যবসাও করতে পারত না।’
সবার শান্তি নিশ্চিত করেছে তার সরকারএ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সে বিএনপির ব্যবসায়ীই হোক, আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ী হোক, সবাই কিন্তু শান্তিতে ব্যবসা করেছে। হাওয়া ভবনও আমরা খুলি নাই। খাওয়া ভবনও আমরা খুলি নাই। ব্যবসা করার সুযোগ করে দিয়েছি। আবারও হাওয়া ভবন আসলে এখন আরেকটা নাম দেবে। আবারও চুষে চুষে খাবে। শান্তিতে ব্যবসা করতে হবে না।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে যারা তেল মারছে, আমরা তাদেরও হিসাব করব। বিএনপির আমলে তো এত আরামে ব্যবসা করতে পারেননি। মিডিয়া একটু উল্টাপাল্টা লিখলেই তো মারত। তার পরও এত আহ্লাদ কীসে, এত তেল মারা কীসে, আমি তো জানি না। কত তেল আছে আমি দেখব।’
বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। ২০০১ সালের নির্বাচনের পরপরই একেকজন বাড়ি দখল করে রাতারাতি পুকুর কেটে কলাগাছের বাগান করেছে। মেয়েদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করেছে। ছয় বছরের মেয়ে থেকে শুরু করে ৬০ বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। সেই পূর্ণিমা-ফাহিমা সারা বাংলাদেশের কত নাম বলব সবার চিকিৎসা করতে হয়েছে। অনেকে লজ্জায় নামই প্রকাশ করেনি।’ তিনি বলেন, ‘২০০১ সালে যে অত্যাচারটা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর করেছে আমরা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর গুণে গুণে সেই অত্যাচারের জবাব দিতে পারতাম। সেই ক্ষমতা আওয়ামী লীগ রাখে। কই আমরা তো তা করি নাই। আমরা তো তাদের ওপর এইভাবে অত্যাচার নির্যাতন করতে যাইনি। বরং ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে তারা আগুনে পুড়িয়ে মারা শুরু করল।’
বিএনপির নেতা খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুব বড় গলায় বলেন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। তারা তাদের কোনো ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে পেরেছে? পারেনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাকে যখন আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হলো আমি তখনই দেশে চলে এসেছি। তারেক জিয়ার বাপও আমাকে ঠেকাতে পারেনি। আবার যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার তখনো পারেনি। এতই নেতৃত্ব দেওয়ার শখ, দেশের বাইরে পালিয়ে থেকে কেন? ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি সেই সুযোগে ডিজিটালি কথা বলে।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি গত বুধবার লাশ ফেলার দুরভিসন্ধি কার্যকর করেছে। আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে সারা দেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সতর্ক পাহারায় থাকবে, রাস্তায় কোনো সমাবেশ করতে দেব না।
গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের এক যৌথসভায় এ কথা বলেন তিনি। এ সময় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী নেতাকর্মীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন।
বিদেশিদের উদ্বেগের বিষয় তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিদেশিরা আমাদের বন্ধু। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কিন্তু এটা একপেশে, এটা উচিত নয়। আমরা আপনাদের বন্ধু। আমাদের সঙ্গে শত্রুতা করবেন না। জনতা কার সঙ্গে সেটা যদি পাবলিক জমায়েতে মনে হয়ে থাকে, তাহলে যশোর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সমাবেশ দেখুন। জনগণ কী চায় বুঝতে পারবেন।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আজকে অশান্তি, বিশৃঙ্খলা করতে উসকানি দিচ্ছে বিএনপি। তাদের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে তারা সংঘাতের উসকানি দিচ্ছে। সাম্প্রদায়িক শক্তি, জঙ্গিবাদী শক্তি মাঠে নামিয়ে লাশ ফেলার দুরভিসন্ধি তারা কার্যকর করেছে গত বুধবার।’
তিনি বলেন, ‘রাস্তা বন্ধ করে জনগণকে কষ্ট দিয়ে সমাবেশ করা, এটা আর হতে দেওয়া হবে না। আমরাও করব না। মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সমাবেশ আমরা মহানগর নাট্যমঞ্চে করব।’
নেতাকর্মীদের পাড়া-মহল্লায় সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সারা বাংলাদেশের সব জেলা-উপজেলা, মহানগর, থানা, পৌরসভা, ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে সতর্ক পাহারায় থাকবেন। আক্রমণ আমরা করব না, আক্রমণের উসকানি দিলে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। এই বিজয়ের মাসে আমরা দেশকে সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে তুলে দিতে পারি না। এটা আমাদের শপথ।’ গণমাধ্যম একপক্ষ নিয়েছেএ অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘অনেকেই নিরপেক্ষতার কথা বলেন, বস্তুনিষ্ঠতার কথা বলেন। পুলিশ মার খেয়ে রাস্তায় পড়ে আছে, কেউ তো সেই ছবি দিলেন না। বিআরটিসির গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কেউ পত্রিকায় ছবি দিলেন না। এই দুর্ব্যবহার কেন করা হচ্ছে? মিডিয়া কেন একটা পক্ষ নিচ্ছে, পক্ষপাতিত্ব করছে। এটা আমার অভিযোগ।’
সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান; যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম; সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন; বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়া ও উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিজয়ের মাসে নাশকতার বিরুদ্ধে খেলা হবে : আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ডিসেম্বর মাস বিজয়ের মাস। বিজয়ের মাসে নাশকতার বিরুদ্ধে খেলা হবে। কুমিল্লার মানুষকে প্রস্তুত থাকতে হবে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে খেলা হবে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে খেলা হবে, ভোট চুরির বিরুদ্ধে খেলা হবে, ভুয়া ভোটার তালিকার বিরুদ্ধে খেলা হবে। বিএনপির দুরভিসন্ধি আমরা বুঝে গেছি, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী তথা দেশবাসী প্রস্তুত, নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে এবার রুখে দাঁড়াবে।
গতকাল বিকেলে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন ভার্চুয়ালি উদ্বোধনকালে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। এতে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক, জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, সাবেক মন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিব, নাসিমুল আলম নজরুল এমপি, আবুল হাশেম খান এমপিসহ জেলার সিনিয়ার নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
বিএনপি নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বসে পড়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন, ‘বিএনপি পার্টি অফিসে অনেক চালের মজুদ, পানির মজুদ ছিল। চিনি-ডালের মজুদ ছিল, ১৫টি অবিস্ফোরিত হাতবোমা ছিল। ছুরি-কাঁচি ছিল। ডেগে ডেগে খিচুড়ি ছিল। এগুলো আনার পেছনে কারণ কী? তা আমরা জানি। বড় জমায়েত হলে এমন হয়। কিন্তু আমরা এখন শুনছি তারা এখানে সমাবেশ করতে এসে বসে পড়ার পরিকল্পনা হিসেবে এসব রসদ এনেছিল।’
গতকাল বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায় রাজধানীর রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ও ডিএমপি কমিশনারসহ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ভাঙচুর ও জানমালের ক্ষতি করলে পুলিশ বসে থাকবে না বলে বিএনপিকে সতর্ক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। দলটিকে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে দলীয় কাজ করেন। আপনারা মিছিল করেন, মিটিং করেন কোনো আপত্তি নেই। তবে আপনারা যদি ভাঙচুর করেন, জানমালের ক্ষতি করেন, পুলিশকে আহত করেন, তখন তো নিরাপত্তা বাহিনী বসে থাকবে না। তাদের কাজই তো প্রটেকশন দেওয়া।’
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পরিস্থিতি নাজুক হয়েছে সেটা আমরা মনে করি না। পরিস্থিতি সবসময় আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক, তাদের একঘেয়েমি ছেড়ে হয় তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসুক। বিরাট সমাবেশ করুক, আমরাও দেখি, দেশবাসীও দেখবে। নয়তো কালশী মাঠে যাক। এরপরও আলোচনা হতে পারে। তারা আসুক ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বসুক।’
বুধবার নয়াপল্টনে পুলিশ বাধ্য হয়েই অ্যাকশনে গিয়েছিল দাবি করে তিনি বলেন, ‘তারা (পুলিশ) যেভাবে মার খাচ্ছিল, এ ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। বিশৃঙ্খলা করলে তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তো চুপ থাকবে না।’
পুলিশ ব্যাগে করে বিএনপি কার্যালয়ে ককটেল নিয়ে গিয়েছিল বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যেসব পুলিশ আহত হয়েছে তাদের দেখে আসুন, তারা কি নিজেরা নিজেরা ককটেলে আহত হয়েছে? তারা মার খেয়েছে, ককটেলের হামলার শিকার হয়েছে।’
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করতে ঘুরেফিরে সংলাপের বিষয়টি আসছে। ক্ষমতাসীনদের তরফ থেকে প্রভাবশালী যেসব দেশ বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের বারবার সংলাপের রাস্তা বাতলেছেন। সেই রাস্তায় না চলে দফায় দফায় অনীহা দেখিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। হঠাৎ গত মঙ্গলবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের জনসভা থেকে বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমুর জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপে বসা সংক্রান্ত বক্তব্য ঘিরে আবার আলোচনায় এসেছে বিষয়টি। অবশ্য এ প্রস্তাব বিএনপির প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমুর মাধ্যমে আসা প্রস্তাবটি হাওয়া থেকে আসেনি। এটা যুক্তরাষ্ট্রকে এড়িয়ে তৃতীয়পক্ষকে সামনে এনে দায় এড়ানোর এক ধরনের কৌশল হতে পারে।
১৪ দলের জনসভায় আমু বলেছেন, প্রয়োজনে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। এ নিয়ে সরকারের তিনজন মন্ত্রী গতকাল কথা বলেছেন। দুজন বলেছেন, এমন কোনো সংকট হয়নি জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপ করতে হবে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সংকট সমাধানে আলোচনার বিকল্প নেই।
তবে বিএনপি আমুর এ প্রস্তাবকে আপাতত আমলে নিচ্ছে না। দলটির নেতারা বলেছেন, লিখিত প্রস্তাব দিলে ভেবে দেখবেন তারা।
প্রভাবশালী যেসব দেশ বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়, তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের বারবার সংলাপের রাস্তা বাতলেছেন। সেই রাস্তায় না চলে দফায় দফায় অনীহা দেখিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সংলাপে অনীহার কারণও উল্লেখ করেছে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দলটি। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছিলেন। ফলে পথ হারিয়েছিল সংলাপ আলোচনা। তারা পরে গত মঙ্গলবার হঠাৎ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের জনসভা থেকে বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু সংলাপ বিষয়ে বক্তব্য দেন।
কূটনীতিতে দক্ষ কয়েকজন রাজনীতিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ কোনো সংস্থা নয় যে, কারও প্রস্তাবে মধ্যস্থতায় আসতে রাজি হয়ে যাবে। মধ্যস্থতা চেয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সহযোগিতা চাইলেই কেবল আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি সাড়া দিতে পারে। সুতরাং সরকারেরও সায় রয়েছে এ প্রস্তাবে। তার আগে প্রতিক্রিয়া যাচাই করা রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া সুফল পাবে মনে করলে সরকার সে পথে যেতে পারে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের দুই সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, সংলাপের ব্যাপারে একেবার অনীহা থাকলে প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে এ ধরনের প্রস্তাব দেওয়ার মতো নেতা আমির হোসেন আমু নয়। সংলাপের ব্যাপারে সরকারের ভেতর-বাইরে অবস্থান যাই থাকুক, আমুর প্রস্তাবে সরকারের ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের ইশারা ছাড়া হয়নি।
এ প্রস্তাবের এক দিন পর গতকাল দলীয় একটি আলোচনা সভায় আমির হোসেন আমু বলেন, ‘এটা আওয়ামী লীগের বাড়ির দাওয়াত না যে, দাওয়াত করে এনে খাওয়াব। আলোচনার জন্য কাউকে বলা হয়নি, কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি।’ বর্ষীয়ান এ নেতা বলেন, ‘নির্বাচন হবে সংবিধানের ভিত্তিতে। সেই পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে বলা যায়। কিন্তু আলোচনার জন্য নয়।’ এর আগে মঙ্গলবার ১৪ দল আয়োজিত জনসভায় তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহার করেননি। কিছুটা কৌশলী বক্তব্য রেখেছেন গতকাল।
এ পর্যায়ে সংলাপের প্রস্তাব উদ্দেশ্যবিহীন মনে করে না ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতাও। তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ পর্যায়ে বিএনপিও কী প্রতিক্রিয়া দেখায় সেটাও দেখার আছে। প্রস্তাব গ্রহণ করলে এক ধরনের কৌশলে যাবে, প্রস্তাব নাকচ করলে দেশি ও বিদেশি মহলে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে এক ধরনের সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। সেই আশায়ও নতুন করে এ প্রস্তাব দিয়ে থাকতে পারেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ এ নেতা।
সূত্র জানায়, আলোচনায় উঠে এসেছে সরকার বা আওয়ামী লীগ এক ধরনের চাপে পড়েছে। আর সেই চাপ সামলে নির্বাচন তুলে নিতে সংলাপের রাজনীতিকে কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। ‘ব্যাকফুটে’ খেলে চার বা ছক্কা হাঁকাতে চায় বলে সংলাপের আওয়াজ দিয়েছে মাঠে। আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থাকে মধ্যস্থতায় রেখে সংলাপের আলোচনা নতুন কোনো শক্তিকে আলোচনায় আনার কৌশলও হতে পারে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী নেতা ও ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের একাধিক নেতাও দেশ রূপান্তরকে বলেন, শীর্ষ পর্যায়ের ইশারা ছাড়া আমু এমন প্রস্তাব কোনোভাবেই দেননি। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপের পথ দেখিয়ে মূলত তৃতীয়পক্ষকে আনতে পারে, রাজনীতিতে সে আলোচনা তুলতে চেয়েছেন।
আওয়ামী লীগের মধ্যমসারির নেতাদের একটি অংশ যদিও দাবি করেন, তাদের দলের প্রভাবশালী এ নেতার বক্তব্য সম্পর্কে তাদের কাছে কোনো ধারণা নেই। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমির হোসেন আমু জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপের যে প্রস্তাব দিয়েছেন সে সম্পর্কে তাদের পর্যায়ের নেতাদের কোনো ধারণা থাকার কথা নয়।’ দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মি আহমেদ বলেন, ‘এ বক্তব্য সম্পর্কে তারও কোনো ধারণা নেই।’
অবশ্য নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, একেবারেই হাওয়া থেকে এমন প্রস্তাব আসেনি। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মাধ্যমের প্রত্যাশা তো আছেই।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সংলাপ হতে পারে। হয়তো হবেও। কিন্তু সেই সময় এখনো আসেনি।’
আওয়ামী লীগ সিনিয়র নেতারা মনে করেন, সংলাপ ও আলোচনায় সমস্যা সমাধানে কখনই আগ্রহী নয় বিএনপি। ফলে সংলাপের ডাক দিয়ে দায় থেকে মুক্ত হতে পারবে আওয়ামী লীগ। সেই কৌশলে সংলাপ আয়োজনে গেলে ক্ষতি কি? সেই পরিকল্পনা থেকে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে আমু সেই পথ দেখিয়েছেন। তাছাড়া হঠাৎ যে চাপে পড়েছে সরকার সেখান থেকে বেরিয়ে আসা যায় কি না, সেটাও দেখা যাবে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপের প্রস্তাবে।
তবে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল দলীয় একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে আমরা আলোচনা করব, এটা নিজেদের সমস্যা, নিজেরাই সমাধান করব। বিগত নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী সংলাপের আহ্বান করেছিলেন। যেখানে বিএনপি দুবার সংলাপে অংশ নিয়েছিল। আলোচনার জন্য জাতিসংঘ কেন মধ্যস্থতা করবে? আমাদের দেশে এমন কোনো রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়নি যে জাতিসংঘের এখানে হস্তক্ষেপ করতে হবে।’
একইদিন রাজধানীতে আরেকটি অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘রাজনৈতিক যেকোনো সমস্যা সমাধানে আলোচনা প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ দল হিসেবে সব দলকে নিয়ে আলোচনা করে সমাধানে বিশ্বাসী।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে জনগণের ক্ষমতায় চলতে হবে। আর জনগণের ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে হলে সবার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তাই আলোচনার বিকল্প কিছু নেই।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা বলছেন, লিখিত কোনো প্রস্তাব আসে সেটার জবাব কী দেওয়া যায় তা নিয়ে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে ওই প্রস্তাবে অবশ্যই ‘নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক’ যে নামেই ডাকা হোক, তা এজেন্ডায় থাকতে হবে।
ওই নেতা বলেন, গত মে মাসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপিকে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছিলেন। যদিও ৯ মে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপির অংশগ্রহণের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর থেকে দুই দলের আলোচনায় বসা না বসা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা রয়েছে।
গত সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে আলোচনার একপর্যায়ে এ প্রসঙ্গে এক নেতা জানান, হয়তোবা তাদের (ক্ষমতাসীনদের) কাছ থেকে প্রস্তাব (সংলাপ) আসতে পারে। কেননা সম্প্রতি তারা নরম সুরে কথা বলছে। তবে স্থায়ী কমিটির প্রায় সব সদস্যই এজেন্ডা ছাড়া সেই আলোচনায় যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে মত দেন।
সিনিয়র এক নেতা তার মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে বৈঠকে বলেন, ২০১৮ সালে শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করে আমরা তার সঙ্গে সংলাপে বসেছিলাম। সেই সংলাপে যেসব কথা তিনি দিয়েছিলেন, সেগুলোর একটাও তারা রক্ষা করেননি। আর ২০১৪ সালে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর মধ্যস্থতায় ৫ জানুয়ারি নিয়মরক্ষার নির্বাচন বলা হলেও ক্ষমতা এসে আর নির্বাচন দেয়নি আওয়ামী লীগ। তাই এবার বসতে হলে এজেন্ডা নিয়ে বসতে হবে। অপেক্ষাকৃত জুনিয়র এক নেতা বলেন, হঠাৎই আওয়ামী লীগ সংলাপের বিষয়ে কথা বলছে না। তারা বলতে বাধ্য হচ্ছে। আমাদের করণীয় ঠিক রেখেই তাদের সঙ্গে বসতে হবে। ওই এজেন্ডায় খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না। উনি (আমির হোসেন আমু) আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল স্পোকস ম্যান কি না এটা আমি জানি না। আমরা উনার বক্তব্যকে গুরুত্ব দেব কেন? আমি এর বেশি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না।’
জামালপুরের সরিষাবাড়ীর সোহরাব হাসান ও তার স্ত্রী হজে যাওয়ার জন্য চার দিন আগে ঢাকায় আসেন। আশকোনার একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন তারা। গত সোমবার তাদের ফ্লাইট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভিসা না হওয়ায় তারা এখনো যেতে পারেননি। তাদের এজেন্ট বলেছেন, তিন-চার দিনের মধ্যে ভিসা হয়ে যাবে এবং বিমানের একটি ফ্লাইটে জেদ্দায় যাবেন তারা।
সোহরাব হাসানদের মতো অন্তত ১৬ হাজার হজযাত্রীর ভিসা এখনো হয়নি। কবে হবে তা-ও কেউ স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না। তবে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হাব বলছে, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই সবার ভিসা সম্পন্ন করা হবে।
মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবারের মধ্যেই সবার ভিসার বিষয়টি শেষ করতে বলেছিল। তা না হলে এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিল। অন্যদিকে সৌদি সরকার বাংলাদেশকে লাল তালিকাভুক্ত করার হুঁশিয়ারি দিয়ে সতর্কবার্তা পাঠায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ৮ হাজার হজযাত্রীর ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আরও তিন দিন সময় চেয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
গতকাল আশকোনায় হজক্যাম্পে সরেজমিনে কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, এজেন্সিগুলোর খামখেয়ালিপনায় ভিসা পেতে দেরি হচ্ছে। যাদের ভিসা হচ্ছে না তারা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। মন্ত্রণালয় আশার বাণী শোনাচ্ছে। ভিসাসহ আরও কিছু অভিযোগে ৯০টি হজ এজেন্টকে শোকজ করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। জবাব সন্তোষজনক না হলে তাদের আইনের আওতায় আনারও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানায়।
অপরদিকে, হজযাত্রী সংকট থাকায় বিমানের শিডিউল কিছুটা এলোমেলো হওয়ার পাশাপাশি ফ্লাইট বাতিলও হয়েছে। এসব ফ্লাইট নতুন করে চূড়ান্ত করছে বিমান। তা ছাড়া ফ্লাইটের সøট পেতে সৌদি আরবে চিঠি পাঠিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ১৬ দিনে ২৮ হাজার ৬৩১ জন হজযাত্রীকে সৌদি আরবে নিয়ে গেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।
আশকোনা হজ অফিসের পরিচালক সাইফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আল্লাহর ঘরে যাওয়ার জন্য যারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন, সবাইকে ২২ জুনের মধ্যে সৌদি আরব পাঠানো হবে। এখনো যাদের ভিসা হয়নি, তাদের আমরা সব ধরনের সহায়তা করছি। আমরাও অভিযোগ পাচ্ছি। আবার তা সমাধানও করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, যেসব এজেন্সি ঘাপলা করছে, তাদের নজরদারি করা হচ্ছে। এখনো সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া করেনি ১৬৯টি হজ এজেন্সি। তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা দ্রুত বাড়ি ভাড়া করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জানা গেছে, চলতি বছর ১ লাখ ২২ হাজার ২২১ বাংলাদেশি হজ পালন করার অনুমতি পেয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯০ জন হজযাত্রীর ভিসা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ১৬ হাজারের মতো হজযাত্রীর ভিসা হয়নি। মক্কা-মদিনা বাড়িভাড়া, মোয়াল্লেমসহ সৌদি আরবের দেওয়া বিভিন্ন শর্ত পূরণ করতে না পারায় ভিসা পেতে দেরি হচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে। তা ছাড়া ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে হজ এজেন্সিগুলোকে সৌদি আরব আরও কিছু শর্ত দিয়েছে। এর মধ্যে ফ্লাইটের টিকিট, প্রবেশ ও বের হওয়ার রুট এবং আসা-যাওয়ার তারিখ নিশ্চিত করা অন্যতম। কিন্তু এজেন্সিগুলো শর্ত পূরণ না করায় হজযাত্রীদের ভিসা পেতে দেরি হওয়ায় হজ ফ্লাইট নিয়ে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। বিমানের প্রায় প্রতিটি হজ ফ্লাইটইকে খালি আসন নিয়ে ছেড়ে যেতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে যাত্রীর সংকট দেখা দেওয়ায় বাতিল হয়েছে বেশ কয়েকটি ফ্লাইট। সমস্যা সমাধানে সপ্তাহখানেক আগে সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তওফিক আল-রাবিয়াহ চিঠি পাঠিয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানকে। এরপর ধর্ম মন্ত্রণালয় বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে কয়েক দিন আগে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া অন্যতম।
সূত্র জানায়, গতকাল বুধবারের মধ্যে ৮০ শতাংশ ভিসা সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশকে কড়া সতর্কবার্তা দেয় সৌদি আরব। অন্যথায় বাংলাদেশকে সৌদি আরবের বিধিনিষেধে পড়তে হতে পারে। এমনকি সৌদি সরকারের এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা না মানলে বাংলাদেশকে লাল তালিকাভুক্তও করা হতে পারে। সৌদি সরকারের এই নির্দেশনার বিষয়টি জানিয়ে সেখানকার বাংলাদেশ হজ অফিস ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠি পাঠায়। এর পরই মন্ত্রণালয় হজ এজেন্সিগুলোকে জরুরিভিত্তিতে ভিসা কার্যক্রম শেষ করার তাগিদ দেয়।
বিমানের মার্কেটিং শাখার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা জটিলতা দেখা দিয়েছে মূলত হজ এজেন্সিগুলোর কম পয়সায় প্যাকেজ ঠিক রেখে অতিরিক্ত মুনাফা লোটার মানসিকতায়; বিশেষ করে মদিনায় এ বছর মসজিদের আশপাশের বাংলাদেশি-অধ্যুষিত এলাকার সস্তার হোটেলগুলো সব ভেঙে দেওয়ায় এখন হজযাত্রীদের জন্য দামি বাড়ি ভাড়া নিতে হচ্ছে। এই বাড়তি ব্যয় এড়াতে এজেন্সিগুলো লম্বা সময়ের প্যাকেজের পরিবর্তে স্বল্পমেয়াদি প্যাকেজ নেওয়ার কৌশল অবলম্বন করছে। ঢাকায় হজযাত্রীদের ভিসা আবেদনের সময় সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়ার রসিদ প্রদর্শন না করলে ভিসা দেওয়া হয় না। এতে বেকায়দায় পড়ে হজ এজেন্সিগুলো। তারা হজ ঘনিয়ে আসার আগের সাত দিন ও শেষ হওয়ার প্রথম সাত দিনের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে আনার হিসাব মাথায় রেখে বাড়িভাড়া নেয়। এই একটা কারণেই ঢাকার হজ এজেন্সিগুলো এখন শেষ মুহূর্তে হজযাত্রীদের জন্য বাড়িভাড়া নিয়ে ভিসার আবেদন করার কৌশল নিয়েছে। এতে হজযাত্রী সংকটে বিমান ও সাউদিয়ার বেশ কটি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। এজেন্সিগুলো চাইছে স্বল্প মেয়াদি প্যাকেজের মাধ্যমে প্রতি হজযাত্রীর কাছ থেকে ৪০-৫০ হাজার টাকা লাভ করতে চায়। তাদের এই মুনাফাকেন্দ্রিক কৌশলের দরুন এত দিন প্রায় অর্ধেক ভিসা সম্পন্ন করা হয়নি।
গতকাল আশকোনায় হজক্যাম্পে গিয়ে দেখা গেছে, তারা ভিসার বিষয়ে ক্যাম্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছেন। তবে কড়াকড়ি থাকায় অনেকে ভেতরে ঢুকতে পারছিলেন না। ফরিদপুরের আবদুর রহমান বলেন, এলাকার একটি এজেন্সিকে প্রায় ৮ লাখ টাকা দিয়েছেন। তারা সঠিক সময়ে ভিসা করতে পারেনি। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে ঝগড়াও হয়েছে। তারা জানিয়েছে, তারা জোর দিয়ে বলেছে যে তিন দিনের মধ্যে ভিসার ব্যবস্থা করবে। ওই এজেন্সির লোকজনকে হজক্যাম্পে তলবও করা হয়েছে। তাদের সামনেই বলেছেন, ভিসার ব্যবস্থা করতে না পারলে যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নেবেন তারা। এখন অপেক্ষায় আছেন বলে জানিয়েছেন রহমান।
এ বিষয়ে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি শাহাদাত হোসাইন তসলিম জানান, সৌদি আরব এমন কৌশল সব সময় নিয়ে থাকে। এ নিয়ে নানা ধরনের আতঙ্ক ছড়ায়। অথচ ৮০ ভাগ ভিসা বুধবার পর্যন্ত হয়ে গেছে। এই হিসাবে আর মাত্র সর্বোচ্চ ১৬ হাজার হজযাত্রী বাকি রয়েছে। এ নিয়ে অযথা কোনো দুশ্চিন্তা বা আশঙ্কা করার কিছু নেই; বরং এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় হজ ব্যবস্থাপনা আরও সুন্দর ও সফলতার সঙ্গেই শেষ করতে পারবেন তারা। তিনি বলেন, শেষ সময়ে এসে ভিসা জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। ভিসার জন্য সৌদি আরবের দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে প্রতিটিই পূরণ করতে হয় এজেন্সির মালিকদের। একটিও পূরণ করতে ব্যর্থ হলে তারা ভিসা দেয় না।
শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘আমরা তথ্য পাচ্ছি অনেক এজেন্সি এসব শর্ত পূরণ করতে পারেনি বলে তাদের ভিসা দিচ্ছে না। হাবের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।’
বিমানের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনো অনেক হজযাত্রীর ভিসা হয়নি তা সত্য। তবে এজেন্সিগুলো আগাম টিকিট বুকিং দিয়ে রেখেছে।’ তিনি জানান, ১৬ দিনে ২৮ হাজার ৬৩১ জন হজযাত্রীকে জেদ্দা ও মদিনায় পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে সোমবার পাঠানো হয়েছে ১ হাজার ৭০৫ জনকে। ২২ জুন শেষ ফ্লাইট।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসা আনাসহ নানা কারণে ৯০টি হজ এজেন্সিকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। ওই নোটিসে বলা হয়, হজ কার্যক্রম পরিচালনাকারী সব এজেন্সিকে তাদের নিজেদের সব হজযাত্রীর ভিসা সম্পন্ন করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত নিবন্ধিত হজযাত্রীদের ভিসা ইস্যু করেনি; যা সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় অসহযোগিতার শামিল। এ ধরনের অব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় বিঘœ সৃষ্টি করেছে এবং সরকারের হজ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট নির্দেশনা উপেক্ষিত হয়েছে, যা ‘হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২১’-এর পরিপন্থী। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের কারণ বিদ্যমান বলেও নোটিসে জানানো হয়। সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলো সঠিকভাবে দিতে না পারলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, সব হজযাত্রীকে পরিবহনে নতুন করে আরও পাঁচটি ফ্লাইটের সøট দিতে সৌদি সিভিল এভিয়েশনকে অনুরোধ জানাতে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করে চিঠি পাঠানো হয়েছে কিছুদিন আগে। হজ এজেন্সিগুলোর কারণে এ পর্যন্ত বিমানের কটি ফ্লাইট ধারণক্ষমতার কম যাত্রী নিয়ে পরিচালিত হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়েছে, তা জানাতে সংস্থাটির এমডিকে মঙ্গলবার চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
ফ্লাইটের সøটের বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু ফ্লাইট না যাওয়ায় ক্যাপাসিটি লস হয়েছে। ওই ফ্লাইটগুলোতে যতসংখ্যক যাত্রী যাওয়ার কথা ছিল তা কমে গেছে। এ জন্য কিছু ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।
লিওনেল মেসি ঘোষণা দিলেন, ‘আমি ইন্টার মিয়ামিতে যাচ্ছি।’
রাতে স্প্যানিশ গণমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে এ ঘোষণা দিয়েছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক।
ডারিও স্পোর্টকে তিনি জানান, ‘আমার ইউরোপের আরেক ক্লাব থেকে প্রস্তাব ছিল। কিন্তু ওই প্রস্তাব দেখিওনি, কারণ আমি ইউরোপে খেললে বার্সেলোনায় খেলতে চেয়েছে। বিশ্বকাপ জেতার এবং বার্সাতে না যেতে পারায়, এখন সময় যুক্তরাষ্ট্র লিগে খেলার এবং ভিন্নাভাবে ফুটবলকে উপভোগ করার। তবে দায়িত্ব থাকবে একই এবং আকাঙ্খা থাকবে জেতার এবং অবশ্যই ভালো করার। তবে আরো শান্তিপূর্ণভাবে।’
মেসি জানান, ‘বুসকেটস আর জর্ডি আলবার সাথে যোগাযোগ ছিল, কখনো তাদের সাথে একই জায়গায় যাওয়ার ব্যাপারে কথা হয়নি। আমি আমার সিদ্ধান্ত নিজে নিয়েছি।’
শৈশবের ক্লাব বার্সেলোনা থেকে মনের কষ্ট নিয়েই ২০২১ সালে স্পেন ছেড়ে ফ্রান্সের পিএসজিতে যোগ দিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। দু'বছর পর আবার বার্সেলোনায় ফিরতে চেয়েছিলেন খুব করে। তার জন্য বাধা হয়ে দাড়ানো লা ফিনান্সিয়াল ফেয়ার প্লে'র অনুমোদনও দিয়েছিল লিগা কর্তৃপক্ষ। মেসি চাচ্ছিলেন আগের বার তাকে যেভাবে চলে যেতে হয়েছিল বার্সেলোনা ছেড়ে, সেটা যেন না হয় পরে।
দুদিন ধরে এ নিয়ে কথাবার্তা হলেও বার্সেলোনা সেই নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। মেসির কাছে ছিল দুটি অপশন- সৌদি ক্লাব আল-হিলালের দুবছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব গ্রহণ করা নয়তো মেজর লিগ সকারের ক্লাব ইন্টার মিয়ামির প্রস্তাব গ্রহণ করা। আল হিলালকে এক বছরের জন্য অপেক্ষায় থাকবে বলেছিলেন মেসি দুদিন আগে। বাকি ইন্টার মিয়ার প্রস্তাব। সেটাই গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্রে ক্লাব ফুটবল খেলতে যাচ্ছেন।
মেসির সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি হচ্ছে ইন্টার মায়ামির। প্রতিবছর শেষ মেসি ক্লাব ছেড়ে দিতে পারবেন, না দিলে সয়ংক্রিয় ভাবে তিনি পরের বছর খেলবেন। বছর প্রতি ৫৪ লাখ ডলার পারিশ্রমিক পাবেন তিনি।
এবার অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ।
বুধবার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় ২০২২-২৩ হিসাববছরের নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে লভ্যাংশের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোম্পানির সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে ১ জুন কোম্পানিটি ২০২১-২২ হিসাববছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করে।
কোম্পানি সূত্র জানায়, চলতি ২০২২-২৩ হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে পণ্য বিক্রি করে আয় হয়েছে ৭৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। উৎপাদন, পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয় সমন্বয়ের পর কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা।
এতে করে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় বা (ইপিএস) দাঁড়ায় ৮৭ পয়সার কিছুটা বেশি।
তবে এফআরসির বিধান অনুযায়ী, শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিপরীতে নতুন ইস্যু করা শেয়ার বিবেচনায় নয় মাসে ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৫৮ পয়সা। এই আয় থেকেই শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ অন্তর্বর্তী নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রায় ছয় বছর বন্ধ থাকার পর জাপানি বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনায় ঘুরে দাঁড়ায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। জাপানি প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে উৎপাদনে ফেরে মৃতপ্রায় এমারেল্ড। উৎপাদিত রাইস ব্র্যান অয়েল বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৪৫ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ ও নতুন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এমারেল্ডে প্রাণ ফিরিয়ে আনে মিনোরি।
রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় কোম্পানিটির প্রধান উদ্যোক্তা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ায় ২০১৬ সালে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এমারেল্ড অয়েলের। এ কারণে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে টানা পাঁচ বছর শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। মিনোরির তত্ত্বাবধানে এখন লভ্যাংশ দেওয়া শুরু করেছে কোম্পানিটি।
মিনোরির নতুন বিনিয়োগের বিপরীতে গত ১০ এপ্রিল এমারেল্ড অয়েলের আরও ৩ কোটি ১৫ লাখ ৫৮ হাজার নতুন শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন দিয়েছে এসইসি, যা মিনোরি বাংলাদেশের নামে ইস্যু করা হবে। এর আগে বাজার থেকে এমারেল্ড অয়েলের ৪৬ লাখ শেয়ার কেনে মিনোরি বাংলাদেশ। নতুন শেয়ার যুক্ত হলে এমারেল্ড অয়েলের পরিশোধিত মূলধন ৯১ কোটি ২৭ লাখ টাকায় উন্নীত হবে।
ফুটবল কিংবদন্তী পেলের গোটা জীবন কেটেছে ব্রাজিলের ক্লাব সান্তোসে। বিশ্ব ফুটবলে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে যিনি আলো ছড়িয়েছেন, তিনি ক্যারিয়ারের সেরা সময় যাননি ইউরোপের কোনো ক্লাবে।
তবে ১৯৭৪ সালে ৩৪ বছর বয়সে সান্তোসের সঙ্গে সম্পর্কের ইতি টানেন ফুটবল সম্রাট। পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে।
১৯৭৫ সালে নিউ ইয়র্ক কসমসে যোগ দেন। সেই বছরের ১৫ জুন ক্লাবটিতে নাম লিখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসেন।
যে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষজন একটা সময় ফুটবল খেলাই দেখতে যেতেন না, পেলে যোগ দেওয়ার পর ৮০ হাজার ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। সেদিনই পেলে নিউইয়র্ক জয় করেছিলেন।
পেলে কসমসে যাওয়ার ১৫ বছর পর ফের বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে টুর্নামেন্টের অভিষেক আসরের তৃতীয় স্থান অর্জনকারী যুক্তরাষ্ট্র। সেই থেকে শুধুমাত্র ২০১৮ সাল ছাড়া প্রতিটি বিশ্বকাপেই খেলেছে তারা। ২০০২ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন। কাতার বিশ্বকাপেও শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিয়ে হয়েছে ১৪তম দল হয়ে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।