
মিনিট ১৫ আগেও যে মুখগুলো ঝলমল করছিল হাসিতে, ম্যাচ শেষে সেই চেহারাগুলোই শোকে পাথর। নেইমার মাটিতে বসে কাঁদছেন। কে বলবে, কিছুক্ষণ আগেই এই বিশ্বকাপের অন্যতম সুন্দর গোলটা করেছেন এ ব্রাজিলিয়ান। গোলসংখ্যায় স্পর্শ করেছেন পেলেকে। অন্যদিকে যে মুখগুলোতে ভর করেছিল হতাশা, তারাই উল্লাসে মাতোয়ারা।
শেষ হয়ে গেল কাতারে ব্রাজিলের মিশন হেক্সা। ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্য সমতা, অতিরিক্ত সময়ে ১-১ ড্র; এরপর টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হেরে বিদায়। ব্রাজিলের অনেক নাচের মুদ্রাই অদেখা থেকে গেল।
বিশ্বকাপে ব্রাজিলের পেনাল্টি ভাগ্য মন্দ নয়। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ফ্রান্সের কাছে টাইব্রেকারে হেরেছিল ব্রাজিল, এরপর ১৯৯৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে ইতালির বিপক্ষে টাইব্রেকারে জিতে চতুর্থ শিরোপা জিতেছিল সেলেসাওরা। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও ব্রাজিল টাইব্রেকারে হারায় নেদারল্যান্ডসকে, ২০১৪ বিশ্বকাপেও শেষ ষোলোর ম্যাচেও টাইব্রেকারে ব্রাজিলের জয় চিলির বিপক্ষে। হারতে হলো ক্রোয়েশিয়ার কাছে এসে। যে দলটার টাইব্রেকার ভাগ্য অসাধারণ বললেও কম বলা হবে! ২০১৮ বিশ্বকাপে শেষ ষোলোয় ডেনমার্ক ও কোয়ার্টার ফাইনালে রাশিয়াকে টাইব্রেকারে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছিল ক্রোয়েশিয়া। এবারও একই নকশায় এগিয়ে চলছেন লুকা মদ্রিচরা। শেষ ষোলোয় জাপানের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়ে সমতা ফিরিয়ে টাইব্রেকারে জিতেছিল ক্রোয়েশিয়া। ব্রাজিলের বিপক্ষেও অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার অন্তিম মুহূর্তে গোল করেছিলেন নেইমার, যে গোলের সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করাটাও কঠিন। রদ্রিগো ও পেদ্রোর সঙ্গে দুটো ওয়ান-টু-ওয়ান পাস খেলে ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণ ভেঙে বক্সের ভেতর ঢুকে দুর্ভেদ্য দেয়াল হয়ে ওঠা ডমিনিক লিভাকোভিচকে এড়িয়ে যে গোলটা করেছেন নেইমার, তাতে লাতিন ফুটবলের শিল্প-সৌন্দর্য সবই মিশে আছে। ওই গোলের পর বাঁধনহারা উদযাপন এবং দুজন খেলোয়াড় পরিবর্তনই যেন কাল হলো ব্রাজিলের। তারা ভুলেই গেল, ম্যাচের আরও ১৫টা মিনিট বাকি।
ক্রোয়েশিয়ার এই দলের অনেক খেলোয়াড়েরই শৈশব কেটেছে যুদ্ধের মাঝে, শরণার্থী শিবিরে, গোলাগুলির শব্দে। এ জন্যই হয়তো মনের জোরে তারা অনেক এগিয়ে, সহজে হাল ছাড়ে না। শেষ বাঁশির মিনিট তিনেক আগে, বাম দিক দিয়ে বিপজ্জনকভাবে বক্সের ভেতর ঢুকে বলটা মদ্রিচের উদ্দেশে ঠেলেছিলেন ওর্সিচ। মদ্রিচ বলটা ধরার আগেই দৌড়ে এসে পেতকোভিচের জোরালো শট ঢুকে গেল ব্রাজিলের গোলপোস্টে। ১১৭ মিনিটে ওটাই গোলপোস্টে নেওয়া ক্রোয়েশিয়ার প্রথম শট এবং তাতেই গোল।
দীর্ঘতম ৩ মিনিট কাটিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে টাইব্রেকারে ব্রাজিল। শেষ মুহূর্তে জয় ছিনতাই হয়ে যাওয়ার হতাশা থেকেই রদ্রিগো শট নিলেন, যেটা ঠেকিয়ে দিলেন লিভাকোভিচ। পেনাল্টি শুটআউটে অনেক গোলকিপারই হয়ে যান নার্ভাস, তবে ডায়নামো জাগরেবের হয়ে খেলা এ গোলকিপার টাইব্রেকারে বরফের মতোই ঠা-া। শট নেওয়াতেও ক্রোয়াটরা দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। গোটা ১২০ মিনিটের খেলায় যাদের গোলমুখে একটা মাত্র শট, স্পটকিকে চারটার চারটাই তারা পাঠিয়েছে জালে। অ্যালিসনকে কোনো সুযোগই দেননি। ব্রাজিলের হয়ে চতুর্থ শটটা নিতে এলেন মারকুইনহোস, চোখেমুখে দ্বিধার ভাব স্পষ্ট। লিভাকোভিচ ঠিক দিকেই ঝাঁপ দিয়েছিলেন, কিন্তু তাকে কিছু করতে হয়নি। গোলপোস্টে লেগে বলটা ফিরে আসতে না আসতেই মাঝমাঠ থেকে আনন্দে ছুটতে শুরু করে দিয়েছেন ক্রোয়েশিয়ার খেলোয়াড়রা। লাল-সাদা ঢেউ জেগেছে স্টেডিয়ামে। সেই সঙ্গে নিশ্চিত হয়ে গেছে ব্রাজিলের বিদায়।
অনেক দিন পর, বিশ্বকাপ জেতার মতো একটা দল নিয়েই এসেছিল সেলেসাওরা। জমাট রক্ষণ, ধারালো আক্রমণ, তুখোড় মাঝমাঠ। কিন্তু ছিল না ভাগ্য। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে টেবিলের ওপর বসে থাকা একটা বিড়ালকে বেশ নির্মমভাবেই টেবিল থেকে ফেলে দিয়েছিলেন ব্রাজিল দলের এক কর্মকর্তা। কে জানে, সেই বিড়ালের অভিশাপেই হয়তো শেষ হয়ে গেল ব্রাজিলের বিশ্বকাপ। সেই সঙ্গে হয়তো বাংলাদেশের অনেক মানুষেরও।
সমাবেশের স্থান নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে সংঘাত, বিএনপির নেতাকর্মীদের আটক, তল্লাশিচৌকি বসিয়ে পুলিশের ব্যাপক তল্লাশি, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ‘সতর্ক পাহারার’ মহড়া সব মিলিয়ে রাজধানীর পরিবেশ কিছুটা হলেও থমথমে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে শুক্রবার ছুটির দিনে ঢাকার রাস্তায় ও বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় আসার যাত্রীবাহী গাড়ির সংখ্যা কমে যাওয়া। সব মিলিয়ে একধরনের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে। সমাবেশের স্থান নিয়ে টানাপড়েন শেষে দলটিকে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
আজ শনিবার বেলা ১১টায় বিএনপি সমাবেশ করবে। এই সমাবেশের জন্য প্রস্তুতি নিতে বিএনপি খুব কম সময়ই পেল। যদিও গত ১২ অক্টোবর থেকে শুরু করা বিভাগীয় গণসমাবেশ কর্মসূচি রাজধানীতে সমাবেশ করার মধ্য দিয়ে শেষ করার ঘোষণা দলটির আগে থেকেই ছিল।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও জ¦ালানির দাম বাড়ানোর প্রতিবাদ, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিএনপি গত আগস্ট থেকেই কর্মসূচি পালন করে আসছে। অক্টোবর থেকে শুরু বিভাগীয় গণসমাবেশ করতে গিয়ে দলটি বাধা ও হামলার মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছে। এ ছাড়া সমাবেশগুলোর আগে বিভিন্ন বিভাগে পরিবহন ধর্মঘটও হয়েছে। বিএনপি দাবি করেছে, সমাবেশে বাধা দিতেই পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল। বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে আগস্ট মাস থেকে গত বুধবার রাজধানীতে সংঘর্ষের ঘটনাসহ দলটির ৮ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন নেতারা। বুধবারের সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার পর পুলিশ রুহুল কবির রিজভী, শিমুল বিশ্বাসসহ কয়েক শ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে।
ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে রাজনীতির মাঠে উত্তেজনা ছড়ায়। ডিএমপি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার প্রস্তাব দেয় বিএনপিকে। শর্ত দেওয়া হয় ২৬টি। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই সমাবেশ করবে। সমাবেশস্থল নিয়ে ডিএমপি ও বিএনপির মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক শেষে গত বিকেলে ডিএমপি বিএনপিকে গোলাপবাগে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়। শর্ত সেই ২৬টি দেওয়া হয়। তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিএনপি তাদের কাছে মাঠ চেয়ে আবেদন করেনি।
গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘গোলাপাবাগে গণসমাবেশের অনুমতি পেয়েছি আমরা। বেলা ১১টায় সমাবেশ শুরু হবে।’ শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সমাবেশস্থল নিয়ে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল তার জন্য সরকার দায়ী। তিনি বলেন, ‘সমাবেশ থেকে সরকারের কাছে আমরা ১০ দফা দাবি পেশ করব। দাবি পূরণে আলটিমেটাম দেওয়া হবে। আমাদের বিভাগীয় সমাবেশ শেষে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক যেসব দলের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি, তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন শুরু হবে। সমাবেশে ঢাকাবাসীকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাই।’
গতকাল রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান এবং প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন দলের স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
সমাবেশ নিয়ে শেষ মুহূর্তের দৌড়ঝাঁপ : বিএনপি নয়াপল্টনে গণসমাবেশ করার ব্যাপারে অনড় থাকায় সংকট তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত দলটি ডিএমপিকে বিকল্প প্রস্তাব দেওয়ার অনুরোধ করে। গত বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল ডিএমপিতে যায় গণসমাবেশের স্থল নিয়ে আলোচনার জন্য। বিএনপি নয়াপল্টনের পরিবর্তে কমলাপুর স্টেডিয়ামের প্রস্তাব দেয়। পুুলিশের পক্ষ থেকে মিরপুরের বাঙলা কলেজ মাঠে সমাবেশের প্রস্তাব দেওয়া হয়। ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সংকট শুক্রবারই কেটে যাবে। শেষ পর্যন্ত সমঝোতার ভিত্তিতে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান হয়।
সমাবেশস্থলের অনুমতি ও সর্বশেষ অবস্থা : রাস্তা বন্ধ না করা, নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনা, পুলিশের নির্দেশনা অনুযায়ী সমাবেশস্থলে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) টিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ ২৬ শর্তে গোলাপবাগ মাঠে বিএনপিকে গণসমাবেশের অনুমতি দেয় ডিএমপি। গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে র্যাবের একটি দল মাঠে প্রবেশ করে মাঠ পরিদর্শন করে। শতাধিক র্যাব সদস্য মাঠের বিভিন্ন অংশে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন। এর আগে বেলা ২টার দিকে ডিএমপি কমিশনারের নেতৃত্বে একটি দল মাঠ পরিদর্শনে যায়। বিকেলে গুলশানে সংবাদ সম্মেলন শেষে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গোলাপবাগ মাঠে যায় সমাবেশস্থল পরিদর্শনে। এদিকে গোলাপবাগ মাঠে অনুমতি দেওয়ার পর সারা দেশ থেকে আসা নেতাকর্মীরা জড়ো হলে আধা ঘণ্টার মধ্যে সমাবেশস্থল কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়।
ডিএসসিসির আপত্তি : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলেছেন, গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ আয়োজনে বিএনপির কাছ থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো আবেদন পাননি তারা। আবেদন পাওয়ার পরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
উল্লেখ্য, গোলাপবাগ খেলার মাঠের উন্নয়নে ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন (মেগা)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, শিগগিরই মাঠ উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ করার পর্যায়ে রয়েছে। এ পর্যায়ে সেখানে রাজনৈতিক সমাবেশ হলে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে রাতে বিএনপি নেতা এমরান সালেহ প্রিন্স জানিয়েছেন, তারা আবেদনপত্র পাঠিয়েছেন।
রাজধানীর পরিস্থিতি : সমাবেশস্থল নিয়ে সংকট তৈরির জন্য আওয়ামী লীগ বিএনপিকে দায়ী করেছে। অন্যদিকে বিএনপি সরকারকে দায়ী করছে। এ নিয়ে গত কয়েক দিনের উত্তেজনার মধ্যে আওয়ামী লীগ বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের সতর্ক পাহারায় থাকতে নির্দেশনা দেয়। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর অবস্থান নেন। এতে করে কয়েক দিন ধরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের খ- খ- মিছিল নিয়ে রাজধানীর পাড়া-মহল্লায়, ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে মহড়া দিতে দেখা যায়। আজ শনিবারও তারা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেবেন। ফলে রাজধানীতে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে রাজধানীর সড়কগুলোতে তল্লাশিচৌকি বসিয়ে ব্যাপকহারে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে। তল্লাশিকালে মোবাইল ফোন পরীক্ষা করার কারণে অনেকের কাছ থেকে হয়রানির অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের এভাবে তল্লাশি চালানো আইনসংগত কি না।
এমন প্রেক্ষাপটে আজ কী হবে, কী হতে পারে ঘুরেফিরে এমন প্রশ্নই উঠে আসছে। গত বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সংঘর্ষের ঘটনায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও শঙ্কা দেখা দেয়। গতকাল স্বাভাবিক চেহারায় দেখা যায়নি রাজধানীর পথঘাট। সাধারণ মানুষকে কম দেখা গেলেও আওয়ামী লীগের মিছিল ও পুলিশের উপস্থিতি ছিল। ছুটির দিন হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বিকেলে ঘুরতে বের হওয়া কাউকে দেখা যায়নি। রাতে ভুতুড়ে পরিবেশ নেমে আসে। যানবাহনের দেখা মিলেছে একেবারেই কম। প্রতিদিনের মতো ঢাকার রাস্তায় হকারের উপস্থিতিও তেমন চোখে পড়েনি।
আমাদের কবি নজরুল কলেজ প্রতিনিধি যায়েদ হোসেন মিশু জানান, পুরান ঢাকায়ও মানুষকে সতর্ক থাকতে দেখা গেছে। কেউ কেউ বলছেন, এরই মধ্যে এক সপ্তাহের বাজার সেরে ফেলেছেন অনেকে। নিজেদের দোকান বন্ধ রাখবেন বলে জানিয়েছেন রাস্তার পাশের বিভিন্ন দোকানমালিকরা। রিকশা, সিএনজিসহ বিভিন্ন যানবাহন অবস্থা বুঝে চালানোর কথা জানান চালকরা। গ্রাম থেকে ঢাকায় পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অভিভাবকরা। ঘর থেকে বের না হওয়ার কথাও জানান অনেকে।
কবি নজরুল সরকারি কলেজের পাশে চা-দোকানের মালিক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আগে একটু বেশি রাতে দোকান বন্ধ করতাম। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন দোকানে এসে সতর্ক করে দিয়ে গেছেন। এখন একটু দ্রুতই দোকান বন্ধ করে দিই।’
স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভার সিদ্ধান্ত জানাতে সংবাদ সম্মেলন : মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল শুক্রবার সকালে স্থায়ী কমিটির এক ভার্চুয়াল সভা করে বিএনপি। সভার সিদ্ধান্ত জানাতে বিকেলে গুলশানে দলটির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি। মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সমাবেশকে কেন্দ্র করে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ। তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ৯টি বিভাগে জনসভা করেছি। সরকারের সব বাধা উপেক্ষা করে এসব জনসভায় জনতার ঢল নেমেছে। আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা, নির্যাতন করা হয়েছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হয়েছে। কিন্তু আমরা ধৈর্য ধরে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে চেয়েছি। তবে মনে হয়, সরকার অন্য কিছু চায়। আমরা চাই গণতন্ত্র।’
মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকারি বাহিনী ও সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা প্রায় ১৫ দিন ধরে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে জনসভা বানচালের জন্য গোটা ঢাকা মহানগর এবং ঢাকা বিভাগসহ সব বিভাগের সব জেলা, উপজেলা, মহানগরে মহড়া দিচ্ছে। তাদের এসব অগণতান্ত্রিক সন্ত্রাসী কার্যক্রম পুলিশের সামনেই এবং সমর্থনে চলছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, মো. শাহজাহান প্রমুখ।
বিএনপির ১০ দফা : ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ থেকে বিএনপি ১০ দফা দাবি জানাবে বলে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জানান খন্দকার মোশারফ। দফার মধ্যে কী কী থাকতে পারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান অনির্বাচিত অবৈধ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে সরকারের পদত্যাগ নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন অনুষ্ঠান, খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি, দেশে সভা, সমাবেশ ও মত প্রকাশে কোনো বাধার সৃষ্টি না করা ইত্যাদি।
বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গণসমাবেশ থেকে ১০ দফা দাবি পেশ করা হবে। সমাবেশ থেকে তৃতীয় তথা চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হবে। সেই আন্দোলন হবে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন।’
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সমাবেশে কী দফা আসবে তা নির্ভর করছে পরিবেশের ওপর। জনতা সিদ্ধান্ত নেবে তারা কী করবে। পরিস্থিতি বলে দেবে কী করতে হবে। এখনই কিছু বলা যাবে না।’
নারীদের সংসারের কাজকে কর্মক্ষেত্রের শ্রম হিসেবে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘নারী জাগরণের মধ্যেই আমাদের সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণে বাংলাদেশকে একটি উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’
গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বেগম রোকেয়া দিবস-২০২২’ ও ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২২’ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। নারী জাগরণের মধ্য দিয়েই ১৯৪১ সাল নাগাদ সেই বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এ জন্য ডেল্টা প্ল্যানও করে দিলাম, যাকে ভিত্তি করে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারে।’
তিনি বলেন, তার সরকার সারা দেশে ডিজিটাল সেন্টার ও ফ্রি ল্যান্সারদের স্বীকৃতি দিয়েছে এবং ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং’ প্রজেক্টের মাধ্যমে নারীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। যেখানে উদ্যোক্তা একজন নারী এবং একজন পুরুষ। সেখানে সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে দেশের নারীসমাজ। আর এর মাধ্যমে স্বল্পশিক্ষিত একজন নারীও ঘরে বসে অর্থ উপার্জন করতে পারে।
সরকারপ্রধান বলেন, তার সরকার কম্পিউটার প্রযুক্তি শিক্ষা একেবারে জেলা এবং উপজেলাভিত্তিক করে দিয়েছে। গ্রামে গ্রামে সুবিধার জন্য ‘তথ্য এপিএ’ সার্ভিস চালু করেছে এবং এর মধ্য দিয়ে বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন পূরণ প্রায় হয়েছে। কারণ দেশের সংসদে স্পিকার, সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা এবং সংসদ উপনেতাএ চারজনই মহিলা। দুর্ভাগ্যের বিষয় আপনারা জানেন আমাদের সংসদ উপনেতা বেগম সাজেদা চৌধুরী কিছুদিন আগে মৃত্যুবরণ করেছেন। তবে এই শূন্যস্থান পূরণ আমরা একজন নারীকে দিয়েই করব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সবাই যোগ্য (নারী/পুরুষ)। কাউকে আমি অযোগ্য বলছি না। কিন্তু আমাদের এই সমাজকে তো উৎসাহিত করতে হবে। সেটাই আমার লক্ষ্য, সেটিই আমরা করে যাচ্ছি।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য পাঁচ বিশিষ্ট নারীকে ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২২’ প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল। অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বেগম রোকেয়ার জীবন ও কর্মের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমাদের নারীদের শিক্ষা, নারীদের জাগরণ, নারীদের যতটুকু অর্জন এর পেছনে বেগম রোকেয়ার অবদান রয়েছে। ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়ার জন্মদিন। তিনি যদি সেই অচলায়তন ভেঙে নিজে শিক্ষাগ্রহণ করে মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা না করতেন, তাহলে আমরা আজকে যে যেখানে আছি, কেউ থাকতে পারতাম না।’
তিনি বলেন, ‘বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন ছিল মেয়েরা জজ-ম্যাজিস্ট্রেট হবে। নারীরা সমস্ত দায়িত্ব নেবে। তিনি যে আকাক্সক্ষা করেছিলেন আমরা কিন্তু ধীরে ধীরে তা অর্জনের পথে।’
নারী অগ্রযাত্রায় আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিমান, নৌ, সেনাবাহিনী, আগে বর্ডার গার্ডে কোনো মেয়ে ছিল না। সব জায়গায় মেয়েদের সুযোগ করে দিয়েছি। জাতির পিতা পুলিশে কিছু মেয়ে নিয়োগ দিয়ে গিয়েছিলেন। আমি দেখলাম কোনো ডিসি, এসপি পদে মেয়েদের স্থান নেই। বলা হতো, মেয়েরা পারবে না। সচিব নেই। মেয়েদের স্থান অনেক নিচে। সিনিয়রিটির ক্ষেত্রে একসঙ্গে তালিকা করা হতো। আমি বলেছি, মেয়েদের আলাদা লিস্ট চাই। সব জায়গায় ফাইট করে আনতে হয়েছে। তারপরও তারা সচিব পর্যায়ে উঠতে পারে না। প্রশাসনে একটি ব্যবস্থা আছে, রাষ্ট্রপতির কোটায় ১০ শতাংশ অফিসার নিয়োগ দেওয়া যায়। আমি সেই কোটা ধরে প্রথম মেয়ে নিয়োগ দিলাম। আমার অফিসে সচিব হিসেবে প্রধানমন্ত্রী দপ্তরে প্রথম নিয়োগ দিলাম। এভাবে দরজা খুলে দিয়েছি। প্রথম এসপি যখন করতে গেছি, প্রচণ্ড বাধা। মেয়েরা এসপি হবে! আমি বলেছি, হ্যাঁ, মেয়েরাই এসপি হবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের নারীরা যারা বাইরে কাজ না করে শুধু সংসারে কাজ করে, সেখানেও কিন্তু অনেক কাজ। এটাও তাদের কর্মক্ষেত্রে শ্রম হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। অনেকে গবেষণা করেন, মেয়েরা কোথায় কোথায় কাজ করছে, এই জায়গায় যেখানে দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়। সেই জায়গাকে কর্মক্ষেত্র হিসেবে গ্রহণ করা হয় না। আমার মনে হয়, এটা ঠিক নয়।’
প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় লিঙ্গ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এরা তো কোনো অপরাধ করেনি! এরা তো বাবা-মায়েরই সন্তান। বাবা-মাকে ফেলে দিয়ে তাদের রাস্তায় চলে যেতে হবে কেন? তাদের কোনো জীবন-জীবিকার কিছু থাকবে না এটা তো হতে পারে না। শুধু নারী অধিকার-নারী অধিকার বলে অনেকে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। কখনো এই শ্রেণির কথা কেউ চিন্তা করেননি। আমরা সংবিধানে তাদের স্বীকৃতি দিয়েছি। তারা বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকবে, লেখাপড়া শিখবে, চাকরি পাবে, কাজ-প্রশিক্ষণ পাবে, একটা সুস্থ জীবন তারা পাবে। প্রতিটি ফরমে নারী-পুরুষের সঙ্গে থার্ড জেন্ডার আমরা লাগিয়ে দিয়েছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘এই করোনা মহামারীর পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যেকটা মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। শুধু আমাদের দেশ নয়, উন্নত দেশগুলো আরও খারাপ অবস্থায় আছে। সেজন্য আমি সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি, যার যেখানে যতটুকু জায়গা আছে সেখানে যে যা পারেন উৎপাদন করেন। বিদ্যুৎ,পানি, তেল ব্যবহারে সবাই সাশ্রয়ী হোন।’
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার সময় জাতির পিতা বলেছিলেন, তার ‘মাটি ও মানুষ’ আছে তা দিয়েই তিনি দেশকে গড়ে তুলবেন, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই চিন্তা থেকেও আমরা যদি প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করি, সবাই যদি একটু মিতব্যয়ী হই, সাশ্রয়ী হই ইনশাআল্লাহ মন্দা আমাদের গ্রাস করতে পারবে না। আন্তর্জাতিকভাবে অনেক উন্নত দেশ এখন নিজেদের অর্থনৈতিক মন্দার দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশ আল্লাহর রহমতে এখনো দেয়নি, দেওয়া লাগবে না বলে আমি বিশ্বাস করি। কারণ আমরা নিজেরাই নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে চলব, এগিয়ে যাব। এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ, এগিয়ে যাবে নারীসমাজ।’ বাসস।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘কারও ফরমায়েশ, কারও হস্তক্ষেপ শেখ হাসিনা শুনবেন না। তিনি আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পান না। বন্ধুত্বটা নষ্ট করবেন না। আপনাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই।’
আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনকে সফল করতে গতকাল শুক্রবার দলটির সভাপতি শেখ হাসিনার ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘আমাদের অতীতের অনেক বেদনা আছে; পঁচাত্তরের, একাত্তরের। তারপরও আমরা বন্ধুত্ব চাই। কিন্তু এভাবে করলে বন্ধুত্বে ফাটল ধরবে।’
এদিকে গতকাল বিকেলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ আয়োজিত আরেক অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নয়া পল্টনে সমাবেশ আমরা করবই এ কথা যারা বলেছে তারা এখন গোলাপবাগে। পরাজয় কার হলো? আমাদের, না বিএনপির? নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে পারেনি। আন্দোলন কর্মসূচির পরাজয় তো অর্ধেক এখানেই হয়ে গেছে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কাতারের মাঠে ফুটবল খেলা হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে অপশক্তি, জঙ্গিবাদ, দুঃশাসন, আগুন-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে খেলা হবে। আগুন নিয়ে আসলে খেলা হবে। অনেক ছাড় দিয়েছি, আর ছেড়ে দেব না। লাঠি নিয়ে আসলে খেলা হবে। পুলিশের বিরুদ্ধে যারা হামলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে। খেলা তো হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির। সব অপশক্তি বনাম আওয়ামী লীগ, এ খেলা হচ্ছে রাজনীতির মাঠে।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সত্যটা তুলে ধরুন। কিছু কিছু মিডিয়া বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তারা কারা চিনে রাখুন। সময়মতো জবাব পাবে তারা।’
সড়ক ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) বলব আপনার আওয়ামী লীগ প্রস্তুত। পাড়া-মহল্লায়, নগরের উত্তর ও দক্ষিণে। তারা তো থাকবে গোলাপবাগে। মানুষ আতঙ্কিত কেন হবে? জনগণকে বলব আতঙ্কের কারণ নেই। আমরা চলে যাচ্ছি সাভারে। ঢাকায় আমরা নেই। কাল সাভারে চলে যাচ্ছি। এ শহরে বিএনপিকে দিয়ে যাচ্ছি। আতঙ্ক কেন? আমরা ক্ষমতায়, কেন আমরা অশান্তি চাইব ও বিশৃঙ্খলা করব?’
মহানগর নাট্যমঞ্চে আয়োজিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দক্ষিণের সভাপতি আবু আহম্মেদ মান্নাফী। ওই সমাবেশে বিএনপিকে সহজ-সরল পথে থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন সভাপতিম-লীর সদস্য আবদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের যদি আঙুল বাঁকা করতে হয়, আপনাদের পাকিস্তান চলে যেতে হবে। পাকিস্তানও বলেছে ওদের জায়গা আমাদের এখানে হবে না। তাহলে কী হবে? ওই কক্সবাজারে যে রোহিঙ্গারা আছে, তাদের সঙ্গে ওদের (বিএনপি) মিয়ানমারে পাঠাতে হবে।’
বিএনপি নেতারা জোশে হুঁশ হারিয়ে ফেলেছিল দাবি করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘বেহুঁশ হয়ে উল্টোপাল্টা কথাবার্তা বলেছিলেন। আমরা বলেছিলাম এই দেশে আওয়ামী লীগ সরকার আছে। বেহুঁশ হয়ে কথা বললে শিশু বক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানীর মতো হবে। সেটা হয়েছে। এখনই অনেকই হাত-পা ধরা শুরু করেছেন।’
এই এক ওলট-পালটের রাত। এ রাতে পাঁচবারের বিশ্বসেরা ব্রাজিলকে টাইব্রেকারে হেরে মেনে নিতে হয় বিদায়ের পরিণতি। আবার এ রাতেই টাইব্রেকার ভাগ্য নিজেদের করে আর্জেন্টিনা পা রাখে সেমিফাইনালে। অথচ এ রাতটা হতে পারত লিওনেল মেসির। আবার তাকে ম্লান করে রাতটা নিজের করে নিতে পারতেন নেদারল্যান্ডসের বদলি স্ট্রাইকার ওউট ওয়েগহার্স্টও। তবে সবাইকে ছাপিয়ে এ ম্যাচের নায়ক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। আর্জেন্টিনার গোলকিপার সব আলো কেড়ে নিয়েছেন টাইব্রেকারে ডাচদের প্রথম দুটি শট রুখে দিয়ে। ২-২-এ অমীমাংসিত ম্যাচটা আর্জেন্টিনা টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে জিতে চলে গেছে ফাইনালের আরও কাছাকাছি। ১৩ ডিসেম্বর ব্রাজিলকে কাঁদানো ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হতে হবে আর্জেন্টিনাকে।
এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে গতবারের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া রূপকথা জন্ম দেয় হট ফেভারিট ব্রাজিলকে হারিয়ে। আর লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে নেদারল্যান্ডসও সে পথেই হাঁটছিল। একটা সময় মেসির বিদায়ও নেইমারের মতো শূন্যহাতে হওয়ার শঙ্কা চেপে ধরেছিল আর্জেন্টাইন শিবিরে। তবে ভাগ্য এবার আর মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। গত দেড় দশক বিশ্ব ফুটবলকে দুই হাত ভরে দেওয়া মেসিকে যেন নিয়তি কিছুটা হলেও ফিরিয়ে দিয়েছে এই ওলট-পালট রাতে।
ব্রাজিলিয়ানদের সব হারানোর রাতে মেসি ঠিকই খেলেছেন ভয়ংকর সুন্দর ফুটবল। প্রথমে সতীর্থ নাহুয়েল মলিনাকে দিয়ে গোল করিয়েছেন। এরপর পেনাল্টি থেকে ব্যবধান বাড়িয়েছেন। তারপর তার বিশ্বকাপ স্বপ্নে বড়সড় ধাক্কা দিতে দৃশ্যপটে হাজির হন ডাচ বদলি স্ট্রাইকার ওয়েগহার্স্ট। ৭৮ মিনিটে মেম্পিস ডিপের জায়গায় নেমে ৮৩ মিনিটে করেন প্রথম গোল। আর ১০ মিনিটের যোগ করা সময়ের শেষ মুহূর্তে ডাচদের কৌশলী ফ্রি-কিক কাজে লাগিয়ে ম্যাচটা নিয়ে যান ৩০ মিনিটের অতিরিক্ত সময়ে। নতুন জীবন পেয়ে ডাচরা মনোযোগী হয় নিজেদের দুর্গ সামলাতে। আর আর্জেন্টিনা মরিয়া আক্রমণ চালায় যাতে কোনোভাবেই ম্যাচটা টাইব্রেকারের অনিশ্চয়তায় না যায়। তবে এই ৩০ মিনিট ভাগ্য সহায় হয়নি আলবিসেলেস্তেদের। হয়তো মেসি, ওয়েগহার্স্টকে ছাপিয়ে এমি মার্তিনেজকে জয়ের নায়ক বানাতেই ঈশ্বর এভাবে লিখেছিলেন চিত্রনাট্য। ভাগ্য পরীক্ষায় শুরুতেই ভার্জিল ফন ডাইক ও স্টিভেন বার্গউইনের শট রুখে দেন গত বছর কোপার সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে কলম্বিয়ার তিনটি শট রুখে দেওয়া মার্তিনেজ। ওদিকে আর্জেন্টিনার হয়ে ঠিকই লক্ষ্যভেদ করেন মেসি ও পারেদেস। ২-০ লিডটা একটা সময় ৩-২ হয় আর্জেন্টিনার হয়ে গনজালো মনতিয়েল ও নেদারল্যান্ডসের টিউন কোপমেইনার্স ও ওয়েগহার্স্ট গোল করায়। আর্জেন্টিনার হয়ে চতুর্থ শট নিতে আসা এনজো ফার্নান্দেজের শট পোস্টের বাইরে গেলে এবং লুক ডি ইয়ং গোল করলে ফের হারের শঙ্কা জাগে আর্জেন্টাইনদের। তবে লাউতারো মার্তিনেজ ঠিকই লক্ষ্যভেদ করে দলকে নিয়ে যান শেষ চারে।
এর আগে চিরবৈরী ব্রাজিলের বিদায়ের খবরটা শুনে মাঠে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। ক্রোয়েশিয়ার কাছে লাতিন শত্রুদের হারে লুসাইল স্টেডিয়ামে মহারণের আগে উপস্থিত আর্জেন্টাইন সমর্থকরা উল্লাসে মাতলেও একটা চাপা আতঙ্ক ঠিকই ছিল ভেতর ভেতর। তাদের পরিণতিও যদি ব্রাজিলের মতোই হয়? হতেও পারত। তবে স্নায়ুর লড়াইটা জিতে ডাচদের আরেকবার হতাশায় ডুবিয়েছে মেসির আর্জেন্টিনা।
ক্রোয়েশিয়ার কাছে ব্রাজিলের হারের ভীতিটা তাড়াতে লুসাইলে সবার দৃষ্টি ছিল একজনের দিকে। আর্জেন্টাইন কোচ জানতেন ডাচরা মেসির খেলাটা সহজ হতে দেবে না। তাই ৫-৩-২ ফরমেশনে একাদশ সাজিয়ে কিছুটা ভড়কে দিতে চেয়েছিলেন। সেটা কাজেও লেগেছে দারুণভাবে। মেসিকে আটকে রাখার সুযোগ ডাচদের রক্ষণ আলগা হবে। সেটা কাজে লাগাতে দুই ফুলব্যাক বারবার যোগ দেবে আক্রমণে। আর এ মেসিকে সহজে আটকে রাখা যায়? ডাচরা ম্যাচের আগে যতই হম্বিতম্বি করুক। মেসিকে রোখা যায়নি। ৩৫ মিনিটে তার ডিফেন্সচেরা পাসকে গোলে পরিণত করেন নাহুয়েল মলিনা। এরপর ৭৩ মিনিটে আকুনাকে বক্সের ভেতরে ফেলে দিয়ে পেনাল্টি উপহার দেন ডাচ ডিফেন্ডার ডামফ্রিস। যা থেকে বিশ্বকাপে নিজের দশম গোল করেন মেসি। বাকি কাজটা ছিল আর্জেন্টাইন রক্ষণের। সেটা পুরোপুরি করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। যার সুযোগ নিয়ে অখ্যাত থেকে বিখ্যাত হয়ে গেছেন ওয়েগহার্স্ট। ম্যাচের ৭৮ মিনিটে যখন দল ২-০ গোলে পিছিয়ে, তখনই নিভে থাকা ডিপেকে তুলে নিয়ে ওয়েগহার্স্টকে মাঠে পাঠিয়েছিলেন নেদারল্যান্ডস কোচ লুই ফন গাল। এ পরিবর্তনটাই তাদের ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছিল।
তবে এ রাতটা শতভাগ লাতিন ফুটবল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি বলেই বিশ্বকাপের আবেদনটা অটুট থাকছে। আর সেটা মেসির স্বপ্নটা বেঁচে আছে বলেই।
বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম আজাদ (বীর প্রতীক)। ডাক নাম দারা। গোলাম হাসিব ও রাবেয়া বেগমের দ্বিতীয় সন্তান গোলাম আজাদ। বাড়ি নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার ইতনা গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন খুলনা এম এম (মজিদ মেমোরিয়াল) সিটি কলেজের সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র। যুদ্ধ শুরু হলে তিনি হায়ার ট্রেনিং নেন প্রথমে ৮ নম্বর সেক্টর হেডকোয়ার্টার কল্যাণীতে, পরে বিহারের চাকুলিয়ায়। ট্রেনিং শেষে যান প্রথমে কল্যাণীতে; পরে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় পেট্রাপোলে।
প্রথম অপারেশন বিফলে যায় আজাদদের। তাদের কাছে ছিল একটা এসএমসি, এসএলআর ও ছয়টা থ্রি নট থ্রি রাইফেল। এ দিয়ে আর্মির সঙ্গে যুদ্ধ করা সম্ভব ছিল না। তাই তারা ফিরে যান পেট্রাপোলে।
বাকি ইতিহাস শুনি মুক্তিযোদ্ধা গোলাম আজাদের মুখেই। তিনি বলেন, আমাদের পাঠানো হয় বয়রা সাব-সেক্টরে; কমান্ডার ছিলেন মেজর খন্দকার নাজমুল হুদা। তখন সেখানে জি-ফোর কোম্পানি গঠন করা হয়, এম এইচ সিদ্দিকী (কমল সিদ্দিকী) স্যারের নেতৃত্বে। তিনটি প্লাটুন গঠন করে একটা প্লাটুনে তিনটি করে সেকশন করে দেন তিনি। প্রতি সেকশনে ১৩ জন ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা আর একজন কমান্ডার।
তিনটি প্লাটুনের একটি ছিল হেডকোয়ার্টার প্লাটুন। সেখানে সবাই ছিলেন ইপিআরের লোক। তাদের কাছে থাকত থ্রি-ইঞ্চ মর্টার। তারা কাভারিং সাপোর্ট দিত। সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গঠন করা হয় প্লাটুন নম্বর-০১। এই প্লাটুনের দায়িত্ব ছিল আমার ওপর। প্লাটুন নম্বর-০২-এ ছিলেন এয়ার ফোর্স, ইপিআর, পুলিশের লোকসহ বিভিন্ন বাহিনী থেকে আসা বাঙালি সদস্যরা। প্রতি সেকশনে অস্ত্র ছিল এসএমজি, এলএমজি, এসএলআর ও স্টেনগান আর অগণিত মাইন।
বীরপ্রতীক গোলাম আজাদদের পুরো কোম্পানি মার্চ করে চলে আসে মাগুড়ায়, বুনোগাতি বাজারে। তারা যখন সেখানে যায়, তখন কয়েকটা দোকান পুড়ছিল। লোকজন জানায়, পাশেই এক স্কুলে রাজাকারদের ক্যাম্প। দিনের বেলায় পাকিস্তানি সেনারা বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ওই ক্যাম্পে আসে। আশপাশের গ্রামগুলোতে অত্যাচার চালায় রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে। মুক্তিযোদ্ধারা ওই ক্যাম্প দখলের পরিকল্পনা করে। সেটা করা গেলে আর্মি খুব সহজে সেখানে নতুন ক্যাম্প করতে পারবে না।
অপারেশন কীভাবে করলেন? গোলাম আজাদের উত্তর, আক্রমণের প্ল্যানটি করেন কমল সিদ্দিকী স্যার। দুটি প্লাটুন সামনের দিক থেকে আক্রমণ করবে। তাদের ঠেকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে শত্রুরা। পেছনটায় কোনো বাধা থাকবে না; বিনা বাধায় আমি আমার প্লাটুন নিয়ে ক্যাম্পে ঢুকে যাব।
কিন্তু ইনফরমেশন ভুল ছিল। খুব ভোরে গোলাগুলি শুরু হলে পেছনে যেতেই দেখি ওদের একটা আন্ডারগ্রাউন্ড বাঙ্কার। বাঙ্কারের পাশ দিয়ে চলে গেছে নবগঙ্গা নদী। আমরা খুব কাছাকাছি পজিশন নিয়ে থাকি।
সামনের দিকে গোলাগুলি শুরু হলে ওরা হতভম্ব হয়ে পেছনের বাঙ্কার থেকে এলোপাতাড়ি ফায়ার করতে থাকে। গুলিগুলো মাথার অনেক ওপর দিয়ে বাঁশঝাড়ে গিয়ে লাগে। বুঝে যাই ওরা না দেখেই গুলি করছে। এ সুযোগটাই নিই আমি। কয়েক সেকেন্ডের ভেতর একটা গ্রেনেডের পিন খুলে ওদের বাঙ্কারে থ্রো করি। ধুম করে বিকট শব্দ হয়। বাঙ্কারে গোঙানির শব্দ শুনতে পাই। একজন দৌড়ে নদীর দিকে সরে যাচ্ছিল। এসএলআর দিয়ে তিনটি গুলি করি তাকে। সে নদী পার হয়ে ওপারে গিয়েই মারা যায়। তখনই ওদের ক্যাম্পে উঠে পড়ি। ভেতরে থাকা রাজাকারদের সারেন্ডার করিয়ে এক ঘরে আটকে রাখি। সব অস্ত্র জড়ো করে রাখি আরেক রুমে।
সামনের গ্রুপ দুটি ক্যাম্পের দিকে তখনো গুলি করছিল। খানিক পরে এক ইপিআর ক্যাম্পে ঢুকেই দেখে আমার কা-। সবাইকে সারেন্ডার করিয়ে বসে আছি। তিনি খুব অবাক হন। আনন্দে চিৎকার দিয়ে বলেন, ‘গুলি বন্ধ করো। দারা সবাইকে সারেন্ডার করিয়েছে।’ অপারেশনে আমার সাহস দেখে কমল সিদ্দিকী স্যার খুব বাহবা দিয়েছিলেন। দিনটির কথা মনে হলে এখনো অন্য রকম লাগে।
এরপর হেডকোয়ার্টার প্লাটুন বাদে পুরো কোম্পানি কমল সিদ্দিকীর নেতৃত্বে চলে আসে লোহাগড়ায়, ইতনা গ্রামে। গোলাম আজাদরা লোহাগড়া থানা দখলে নেন। কীভাবে? তিনি বলেন, ডিসেম্বরের ৮ তারিখ, ভোরবেলা। থানার দক্ষিণ পাশে পজিশন নিয়ে থাকি। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারাও যোগ দেয়। চারপাশ থেকে থানা ঘিরে রাখি আমরা। হঠাৎ গোলাগুলি শুরু হয়। বাম পাশে ছিল সহযোদ্ধা মোস্তফা কামাল, বাড়ি যশোরে। একটা গুলি এসে ওর কানের দিক দিয়ে ঢুকে বেরিয়ে যায়। ‘মা গো’ বলেই সে ছিটকে পড়ে। শরীরটা কয়েকটা ঝাঁকি দিয়েই নিথর হয়ে যায়। গুলিটা ওর গায়ে না লাগলে আমার গায়ে লাগত।
সহযোদ্ধারা এগিয়ে এলে আমি থানার দিকে এগোই। চারপাশে ট্রেঞ্চ করা। একদিকে চোখা করে বাঁশ গেড়ে দেওয়া হয়েছে। তার পাশেই কাঁটাতারের বেড়া। কারও ঢোকার সাধ্য নেই। কিন্তু আমার মনে তখন সহযোদ্ধা হত্যার প্রতিশোধের আগুন। ওদের সব বাধা কীভাবে পেরিয়েছি জানি না। ঢুকে পড়ি থানার ভেতরে। অন্য পাশ দিয়ে ঢোকে মোক্তার। টার্গেট ছিল পুলিশের খালেক। বাঙালিদের ওপর বেশি অত্যাচার করছে সে। ওকে পেয়েই মেরে দিই। থানা দখলে চলে আসে।
কমল সিদ্দিকীর নির্দেশে এরপর গোলাম আজাদরা মুভ করেন নড়াইলের দিকে। সেখানে মুক্তিযোদ্ধারা চতুর্দিক থেকে ঘিরে রাখে পাকিস্তানি সেনাদের। ওরা ছিল পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাংলোয়। আর মিলিশিয়ারা ছিল সার্কিট হাউজে। ওরা সারেন্ডার করলে ১০ ডিসেম্বর কমল সিদ্দিকী এবং অন্যরা বাংলাদেশের ফ্ল্যাগ ওড়ায়। নড়াইল মুক্ত হয়।
১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলেও ভাটিয়াপাড়ায় তখনো চলছে যুদ্ধ। বয়রা সাব-সেক্টরের কমান্ডার মেজর খন্দকার নাজমুল হুদা ও জি-ফোর কোম্পানির কমান্ডার এম এইচ সিদ্দিকী (কমল সিদ্দিকী)সহ গোলাম আজাদরা মুভ করে ভাটিয়াপাড়ায়।
তিনি বলেন, পাকিস্তানি সেনাদের শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল ওটা। আমরা ওদের পূর্বদিকে অবস্থান নিই। হুদা স্যার ওয়াকিটকিতে নির্দেশে দিলে পেছন থেকে আর্টিলারি সাপোর্ট দেয় আরেক গ্রুপ। পজিশনে সবাই। তুমুল ফায়ারিং চলছে। হঠাৎ বাঁ দিক থেকে একটা গুলি এসে কমল সিদ্দিকী স্যারের ডান চোখ বিদ্ধ করে। উনি ছিটকে পড়েন। প্রথম বুঝতে পারিনি। হুদা স্যার চিৎকার দিলে আমরা ছুটে যাই কমল সিদ্দিকীর কাছে। পরে তাকে লঞ্চে নড়াইল পর্যন্ত দিয়ে আসি। আমাদের কমান্ডারকে গুলি করেছে। আমরা ঠিক থাকতে পারি না।
তুমুল গোলাগুলি চলে ওদের সঙ্গে। এক দিন পরেই ওরা সারেন্ডার করার মতো পজিশনে চলে যায়। কিন্তু সারেন্ডার করে না। ভয় পাচ্ছে যদি গুলি করে মেরে ফেলি। ফলে অস্ত্র ছাড়তে চায় না। ওই সময় চলে আসেন ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর এম আবুল মঞ্জুর। তার হুংকারেই পাকিস্তানি সেনারা অস্ত্র ফেলে সারেন্ডার করে। কিন্তু একজন পাকিস্তানি সোলজার সারেন্ডার মেনে নিতে পারেনি। নিজের অস্ত্র বুকে ঠেকিয়ে গুলি করে। সে বেঁচেছিল কি না, আমার জানা নেই। ১৯ ডিসেম্বর ভাটিয়াপাড়া মুক্ত করি আমরা।
শত বাধা পেরিয়ে প্রজন্ম এগিয়ে নিয়ে যাবে দেশটাকে। এমন স্বপ্নে বিভোর হন বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম আজাদ (বীরপ্রতীক)। চোখে-মুখে আলো ছড়িয়ে তাদের উদ্দেশে তিনি বললেন, তোমরা দেশকে ভালোবেসো। নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোলো। নিজের কর্ম সততার সঙ্গে করাই বড় দেশপ্রেম। দেশও তখন এগিয়ে যাবে। আমার বিশ^াস, তোমরা অবশ্যই জয়ী হবে।
সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে বিকেলে ঢাকায় এসেছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল। আজ শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনা মো. হাশিম।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি শ্রমবাজারের জটিলতা নিয়ে আলাপ করবেন। কিভাবে দেশটিতে আমরা সহজে কর্মী পাঠাতে পারি; সেগুলো আলোচনায় উঠে আসবে। আমাদেরও কিছু প্রস্তাব রয়েছে। আমাদের কর্মীদের স্বার্থ আগে আমরা চাই, সবার জন্য বাজার খুলে দেওয়া হোক। নিয়োগকর্তার পছন্দমতো রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়োগ— এটা আমরা চাই না। অভিবাসন ব্যয়
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার গত কয়েক বছর ধরে অস্থির। দেশটিতে প্রত্যাশিত শ্রমিক পাঠাতে পারছে না বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমবাজারটির জটিলতা নিরসনে আলোচনা করতে সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে ঢাকায় আসছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল।
তার সফরে শ্রমবাজারটি গতিশীল করতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) পরিবর্তন, অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় কমানোসহ দেশের সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য বাজার উন্মুক্ত করার প্রস্তাব দেবে ঢাকা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ২৪ ঘণ্টার সফরে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পাশাপাশি তিনি সেনাকল্যাণ সংস্থার সঙ্গেও একটি বৈঠক করবেন।
'পাঠান' মুক্তির আগে থেকেই অনুরাগীদের সঙ্গে শাহরুখের যোগাযোগের একটাই মাধ্যম, টুইটার। শনিবার ফের টুইটারে 'আস্ক এসআরকে' সেশনে ধরা দিলেন শাহরুখ। হালকা মেজাজে, খোলামেলা আড্ডায় মাতলেন অনুরাগীদের সঙ্গে। অনুরাগীদের প্রশ্ন উত্তর দিলেন। সেখানেই একজন টুইটার ব্যবহারকারীর উপদেশ- বয়স অনুযায়ী চরিত্রে অভিনয়ের করার। পাল্টা জবাব দেন শাহরুখও। বলেন, 'তিনি হিরো ছিলেন, আছেন, থাকবেন'।
অনুরাগীরা যেমন রয়েছেন, তেমনই ট্রোল করার লোকের সংখ্যাও কম নয় শাহরুখের সোশালে। বছর সাতান্নর 'তরুণ' এই অভিনেতাকে একজনের প্রশ্ন, 'আপনি কি এভাবেই হিরোর চরিত্রেই অভিনয় করবেন, নাকি কোনো দিন নায়ক-নায়িকার বাবার চরিত্র করার পরিকল্পনাও রয়েছে?' তাতে শাহরুখ যা জবাব দিয়েছেন, তা রীতিমত ছড়িয়ে পড়েছে সোশালে।
এমনিতেই রসিক মানুষ শাহরুখ। তবে কোন কথায় কাকে কী উত্তর দেবেন, তা ভালোই জানা তার। বাদশাহ লেখেন, 'তুই বাপ হ… আমি হিরোর চরিত্রেই ঠিক আছি।'
শনিবারের 'আস্ক এসআরক'-এ সেশনে, শাহরুখের কাছে জানতে চাওয়া হয় 'পাঠান'-এর মোট আয়ের পরিসংখ্যান। তাকেও ফেরাননি শাহরুখ। উত্তর দিয়ে লেখেন, 'ভালোবাসা ৫ হাজার কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে, ৩ হাজার কোটি প্রশংসা, ৩২৫০ কোটি হাগ, ২০০০ কোটি হাসি এখনও গণণা চলছে। তোমার অ্যাকাউন্ট্যান্ট কী বলছেন?'
'পাঠান' ঘিরে উন্মাদনা নজিরবিহীন। প্রেক্ষাগৃহের বাইরে এই ছবি দেখার ঢল। শাহরুখ অভিনীত ছবিটি লম্বা রেসের ঘোড়া, বলেছেন সিনেমা বিশেষজ্ঞরা। ৪ বছর পর শাহরুখ পর্দায় ফিরেছেন বলেই শুধু নয়, ৭ দিনে বক্স অফিসে ৭০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে 'পাঠান', যা বলিউডে বছরের সেরা ব্লকবাস্টার হিসাবে গণ্য হতে চলেছে।
দুঃসময় পিছু ছাড়ছে না লিভারপুলের। প্রিমিয়ার লিগে টানা তিন ম্যাচে জয়হীন থেকে মাঠে নেমেছিল তারা। ভাঙতে চেয়েছিল ব্যর্থতার বৃত্ত। কিন্তু পারেনি, উল্টো উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্সের ধরাশায়ী হয়েছে তারা। পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থাকা দল হেরে গেছে বড় ব্যবধানে।
নিজেদের মাঠে শনিবার ৩-০ গোলে জিতেছে উলভস। লিভারপুলের বিপক্ষে লিগে আগের ১১ ম্যাচে হারের পর জয়ের স্বাদ পেয়েছে তারা।
শুরুর ১২ মিনিটে দুই গোল হজম করে দিশেহারা লিভারপুল ঘুরে দাঁড়ানোর পথই খুঁজে পায়নি। দ্বিতীয়ার্ধে হজম করেছে আরও একটি গোল। তার আগেই ছিটকে যায় ম্যাচ থেকে। দারুণ জয়ে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেন উলভসের ফুটবলাররা।
শুরু থেকে একের পর এক আক্রমণে লিভারপুলের রক্ষণ কাঁপাতে থাকে উলভস। দলটির সমর্থকরা আনন্দে মেতে ওঠার উপলক্ষ পেয়ে যায় পঞ্চম মিনিটে। আত্মঘাতী গোল করে লিভারপুল। বাইলাইনের কাছাকাছি গিয়ে হাং হি-চান শট নেওয়ার পরিস্থিতি না দেখে তিনি বক্সে বাড়ান বল, জোয়েল মাতিপের পায়ে লেগে বল পোস্ট ছুঁয়ে গোললাইন পেরিয়ে যায়। আলিসনের প্রাণপণ চেষ্টা যায় বিফলে।
দ্বাদশ মিনিটে আবারও গোল হজম করে বসে লিগে ধুঁকতে থাকা লিভারপুল। ইংলিশ ডিফেন্ডার ক্রেইগ ডসনের পায়ের জোরাল শটে বল খুঁজে নেয় জাল। উলভসের হয়ে অভিষেকেই গোল পেয়ে যান তিনি। ২-০ গোলের ব্যবধান নিয়ে বিরতিতে যায় উলভস।
বিরতির পরও চলে আক্রমণ আর পালটা আক্রমণ। ৭১তম মিনিটে মাঝমাঠে জো গোমেজ ও স্তেফান বাইচেতিস আটকাতে পারেননি জোয়াও মৌতিনিয়োকে। এই পর্তুগিজ মিডফিল্ডারের পাস ধরে বক্সে আড়াআড়ি ক্রস বাড়ান আদামা ত্রাওরো। নিখুঁত টোকায় বাকি কাজ সারেন রুবেন নেভেস। ম্যাচের ভাগ্যও লেখা হয়ে যায় অনেকটাই।
এই হারে লিগ টেবিলে সেরা চারে থাকার পথটা আরও কঠিন হয়ে গেল লিভারপুলের। ২০ ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে দশম স্থানে আছে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। তাদের চেয়ে ১০ পয়েন্ট বেশি নিয়ে চার নম্বরে নিউক্যাসল ইউনাইটেড। ২১ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে ১৫তম স্থানে উঠে এসেছে উলভস।
ছবি মুক্তির ১০ দিন পার। এখনও বক্স অফিসে 'পাঠান' রাজ। শুধু দেশের মাটিতেই নয়, বিদেশেও অব্যাহত 'পাঠান' ঝড়। বিশ্বজুড়ে ৭০০ কোটির বেশি ব্যবসা ইতিমধ্যেই করে ফেলেছে শাহরুখ খানের এই ছবি। এমনকি, ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানেও 'পাঠান' জ্বরে ভুগছেন আমজনতা। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সে দেশে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হলো 'পাঠান'। খালি রইল না প্রেক্ষাগৃহের একটি আসনও, হাউসফুল সেই শো।
অন্য ভারতীয় ছবির মতোই পাকিস্তানে মুক্তির ছাড়পত্র পায়নি সিদ্ধার্থ আনন্দ পরিচালিত ছবি 'পাঠান'। তবে সে দেশের সিন্ধ সেন্সর বোর্ডের সেই নিষেধাজ্ঞাকে একপ্রকার বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন করল শাহরুখের ছবি। কানায় কানায় ভর্তি প্রেক্ষাগৃহ দেখল রুপালি পর্দায় 'বাদশাহ ম্যাজিক'।
পাকিস্তানি মুদ্রায় ৯০০ টাকার টিকিটেও হাউসফুল 'পাঠান'-এর শো। নিষেধাজ্ঞা থাকায় বেআইনিভাবেই জোগাড় করে দেখানো হলো 'ওয়াইআরএফ স্পাই ইউনিভার্স'-এর এই ছবি।
পাকিস্তানের 'ফায়ারওয়ার্ক ইভেন্ট' নামক এক সংস্থা আয়োজন করে 'পাঠান' ছবির প্রদর্শনের। ছবির টিকিটমূল্য রাখা হয় পাকিস্তানি মুদ্রায় ৯০০ টাকা। তাতেই ছবির টিকিট পাওয়ার জন্য কাউন্টারের বাইরে লম্বা লাইন পড়ে সিনেপ্রেমীদের। অল্প সময়ের মধ্যেই শো হাউসফুল ঘোষণা করে দেওয়া হয়। তবে পাকিস্তানি সেন্সর বোর্ডের কানে এ খবর যেতেই নড়েচড়ে বসে তারা। 'ফায়ারওয়ার্ক ইভেন্ট'কে অবিলম্বে 'পাঠান'-এর সব প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বিবৃতি জারি করে সিন্ধ সেন্সর বোর্ড। কেউ যদি এর পরেও বেআইনিভাবে 'পাঠান' প্রদর্শন করে, তাহলে অপরাধের শাস্তিস্বরূপ তার ১ লাখ টাকা জরিমানা থেকে ৩ বছরের জেল পর্যন্ত হতে পারে, হুঁশিয়ারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
সাভারের আশুলিয়ায় মহাসড়কের পাশের একটি ডোবা থেকে মো. ইমাম হোসেন (৪৬) নামে এক ব্যক্তির ভাসমান লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যায় সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পার্শ্ববর্তী ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পশ্চিম পাশের ডোবা থেকে নিহতের ক্ষতবিক্ষত মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত ইমাম হোসেন জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ভালুকগড়ি গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে। তিনি পরিবার নিয়ে আশুলিয়ার জিরাবো পুকুরপাড় এলাকার ভাড়া বাসায় থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
থানা পুলিশ জানায়, স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে সন্ধ্যায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী একটি ডোবা থেকে লুঙ্গি এবং জ্যাকেট পরিহিত অজ্ঞাত এক ব্যক্তির ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পিবিআইকে খবর দেওয়া হলে তারা এসে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে।
নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল-মামুন কবির বলেন, ইমাম হোসেন বৃহস্পতিবার অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। মরদেহটি উদ্ধারের খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা থানায় এসে লাশ শনাক্ত করেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে দুর্বৃত্তরা তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে গেছে এবং নিহতের মরদেহটি ডোবার মধ্যে ফেলে গেছে।
মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আশুলিয়া থানায় মামলা দায়েরের পাশাপাশি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার এবং গায়েব হওয়া অটোরিকশাটি উদ্ধারে অভিযান চালানো হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।