
‘বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগে সংসদ অচল হবে না’ উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেছেন, ‘মানুষ জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও খুনের বাংলাদেশে ফিরে যেতে চায় না। মানুষ খুনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। তাই ৭ এমপির পদত্যাগের মাশুল দিতে হবে বিএনপিকে।’
শনিবার বিকেলে সাভারের রেডিও কলোনি স্কুল মাঠে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচারের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। এছাড়া বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের অভিযোগ এনে তা প্রতিরোধে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যারা ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে তারাই জেলখানায় চার নেতাকে হত্যা করেছে। আবার তাদের দোসররাই আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। এগুলো সবই একই সূত্রে গাঁথা।
এসময় তিনি আরও বলেন, ১৫ আগস্টের হত্যার মাস্টারমাইন্ড জিয়াউর রহমান। তিনি খুনিদের পুরস্কৃত করেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িতদের পুনর্বাসিত করেছেন এবং জেল হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন। অন্যদিকে খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাৎ করায় কারাদন্ডপ্রাপ্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদারতায় আজ তিনি বাসায় আছেন, নিরাপদে আছেন। বিএনপি কি আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেছে?
সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা দৌলার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, অ্যাড. কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম প্রমুখ।
নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি। তিনি বিএনপিকে সন্ত্রাসের রাজনীতি পরিহার করে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ইনশাআল্লাহ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সঠিক সময়ে নির্বাচন হবে। নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন বিদেশিরা বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে পারবে না। নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো উপায় নেই। নির্বাচনে না এলে অস্তিত্ব হারাবে বিএনপি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ১০ ডিসেম্বরের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ায় বিএনপির সংসদ সদস্যরা লজ্জায় পদত্যাগ করেছেন।
বিএনপিকে মিথ্যাবাদী ও ভাঁওতাবাজির দল উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, বিএনপি জনগণের সঙ্গে ভাঁওতাবাজি করে, দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও ভাঁওতাবাজি করে। তাদের পরিকল্পনা ছিল দলের কর্মীদের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকায় এনে নাশকতা করে সরকারকে বিব্রত করে পতন ঘটাবে।
এছাড়া শনিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলো। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
নোয়াখালী : শনিবার সকাল ১১টায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে প্রধান সড়কে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। এসময় নেতারা বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ দেওয়া হবে না। তাদের প্রতিরোধ করতে আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠে রয়েছেন।
ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) : সকালে উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের আয়োজনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাদানী সিএনজি পাম্প এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে ত্রিশাল পৌর শহর প্রদক্ষিণ করে। বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে নৈরাজ্য, সন্ত্রাস করে জনগণের কোনো ক্ষতি করতে না পারে তার জন্য আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাজপথে প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুত আছি।
ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ) : সকাল বঙ্গবন্ধু স্মৃতিসৌধের সামনে সমাবেশে রাষ্ট্রবিরোধী অপশক্তি বিএনপি-জামায়াত দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এর প্রতিবাদে রাজপথে যুবলীগের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবেন বলে জানান।
কুড়িগ্রাম : জেলা আওয়ামী লীগ একটি বিক্ষোভ মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে। এ সময় বিএনপি ও তাদের দোসর জামাত শিবির চক্র আবারও দেশব্যাপী সন্ত্রাস, নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ করেন নেতারা।
রাজধানীতে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা থাকলেও শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে দলটির কর্মসূচি শেষ হয়েছে।
সমাবেশস্থল দিয়ে সংঘর্ষের ঘটনার পর উত্তেজনা ও উদ্বেগ ছড়ায় পথে পথে পুলিশের ব্যাপক তল্লাশি, মোবাইল ফোন পরীক্ষার নামে হয়রানি ও গ্রেপ্তার, রাজধানীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাহারায় নামার কারণে।
সমাবেশের স্থান নিয়ে মাসখানেক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে দলটির টানাপড়েন চলছিল। শেষ পর্যন্ত গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার মধ্যে দিয়ে সংকটের সমাধান হয়। গতকাল সমাবেশের দিন বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও মুগদায় দুটি মোটরসাইকেল পোড়ানোর মতো কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের অঘটন না ঘটায় দিনশেষে সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
গণসমাবেশ আয়োজনের প্রস্তুতির জন্য দৃশ্যত একদিনেরও কম সময় পেলেও সমাবেশে বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী যোগ দিয়েছেন। সমাবেশস্থলের আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে নেতাকর্মীরা জড়ো হন। নানা প্রতিকূলতা পার করে আয়োজিত গণসমাবেশ মঞ্চ থেকে বিএনপি সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়াসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে। দাবি আদায়ে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যাদের সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে তাদের নিয়ে আগামী ২৪ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সব মহানগর ও জেলা সদরে যুগপৎ গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এছাড়া নয়াপল্টনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের সময় সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মকবুল নিহত ও শতাধিক নেতাকর্মীর আহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে আগামী ১৩ ডিসেম্বর গণবিক্ষোভের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। ওইদিন রাজধানী ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশের বিভাগ ও জেলায় এ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াত ও সমমনা দলগুলো ১০ দফা দাবির সঙ্গে ঐকমত্য প্রকাশ ও যুগপৎ কর্মসূচিতে সম্মতি দিয়েছে।
জ্বালানি তেল ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, নজিরবিহীন লোডশেডিং, সারা দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ ও খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, সরকারের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে বিএনপির এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১১টায় কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় সমাবেশ। অন্যান্য সমাবেশের মতো মঞ্চে দুটি চেয়ার ফাঁকা রাখা হয় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য। সমাবেশের শুরুতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামে সমাবেশের মাধ্যমে শুরু হয় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ এবং গতকাল গোলাপবাগের সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয় এই সমাবেশ। তার আগে ২২ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছিল বিএনপির জেলা শহরের সমাবেশ। এসব আন্দোলন কর্মসূচিতে ১৩ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
গোলাপবাগ মাঠ ছাড়িয়ে সমাবেশের বিস্তার : বিএনপি ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের জন্য নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাছে আবেদন করে। ডিএমপি নয়াপল্টনে না দিয়ে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেয়। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ না করে নয়াপল্টনে সমাবেশ করার বিষয়ে অটল থাকে। এ অবস্থায় গত ৫ ডিসেম্বর থেকে ঢাকার বাইরে থেকে আগত নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। গত বুধবার পুলিশ নয়াপল্টনে অভিযান চালায়। এ সময় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গ্রেপ্তার করা হয় শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ কয়েকশ নেতাকর্মীকে। পরদিন রাতে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে বাসা থেকে আটক করা হয়। পরদিন শুক্রবার তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। ওইদিন দুপুরে ডিএমপি ও বিএনপির মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়। ২৬ শর্ত দিয়ে পুলিশ গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশে অনুমতি দেওয়ার পর রাতেই নেতাকর্মীতে মাঠ পূর্ণ হয়ে যায়। গতকাল মাঠ ছাড়িয়ে মানিকনগর বিশ্বরোড, ধলপুর রোডসহ কমলাপুর থেকে হানিফ ফ্লাইওভারের রাস্তা পরিপূর্ণ হয়ে যায় সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীতে। রাজধানীর প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ী, গাবতলী, টঙ্গীসহ আশপাশের এলাকা থেকে যানবাহন আসা বন্ধ করে দেওয়া হয়। গ্রেপ্তার ও হয়রানির ঘটনাও ঘটে। এছাড়া গত শুক্রবার রাত থেকেই রাজধানীতে বাস বন্ধ হয়ে যায়। গতকালও চলেনি। এতে রাজধানীবাসী ভোগান্তির শিকার হন।
বিএনপি নেতারা দাবি করেন, সরকারের শত বাধা উপেক্ষা করে, গ্রেপ্তার, হামলা, মামলা এবং গুলি সব কিছুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জনগণ সমাবেশ সফল করেছেন। বাধা না দিলে পুরো রাজধানীজুড়ে নেতাকর্মীদের ভিড় ছড়িয়ে পড়ত। তবে শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ শেষ হওয়ায় জনগণকে ধন্যবাদ জানান তারা।
‘জনগণ সরকারকে সরে যেতে বলছে’ : সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকার এখন জনতার ভয়ে ভীত। এজন্য আমাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সভা সমাবেশ করা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু সেখানেও বাধা। কারণ আমরা মানুষের ভোটের অধিকারের কথা বলছি। নিরাপত্তার কথা বলছি। আমরা জানি, এই বাংলাদেশের মানুষ আর সরকারকে ভয় পায় না। মানুষ এখন শেখ হাসিনার বিদায় চায়।’ তিনি বলেন, ‘খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল পর্যন্ত লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছে। এতে মানুষ কী বার্তা দিচ্ছে। মানুষ এখন সরকারকে সরে যেতে বলছে। মানুষ আর হাসিনা সরকারকে দেখতে চাচ্ছে না। মানুষ এখন নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের নেতৃত্ব চাচ্ছে।’
১০ দফা দাবি তুলে ধরে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভের পর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ দেশের সংবিধানকে কেটেছেঁটে তাদের দলীয় ইশতেহারে পরিণত করেছে। দেশে একদলীয় বাকশাল কায়েম করতে গিয়ে নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সাংবিধানিক সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেশের জনগণের ভোটাধিকারসহ সব ধরনের অধিকার বঞ্চিত করা হয়েছে। এ অবস্থায় জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সংবিধান সমুন্নত রাখা, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংস্কার করা এবং ভোটাধিকার, মানবাধিকারসহ সংবিধানে দেওয়া সব অধিকার ফিরিয়ে আনতে রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যে সরকারের কাছে বিএনপি ১০ দফা দাবি জানাচ্ছে।
দাবি আদায়ে কর্মসূচি ঘোষণা : ১০ দফা দাবি আদায়ে সমাবেশ থেকে দুদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘সরকারবিরোধী যেসব রাজনৈতিক দল যুগপৎ আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে ঐকমত্যে এসেছে তারাও এ কর্মসূচি পালন করবে। কর্মসূচি ঘোষণার আগে তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তারা সম্মতি দিয়েছে।’
সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের ঘোষণা : গণসমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) সিরাজ বলেন, ‘সংসদে জনগণের পক্ষে কথা বলা যায় না। সেখানে মাত্র একজনের গুণগান গাওয়া হয়। তাই আমরা সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা করছি। আগামীকাল (আজ) রবিবার সংসদ ভবনে পদত্যাগপত্র পৌঁছে দেব।’
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য রুমিন ফারহানা তার বক্তব্যে বলেন, ‘বিএনপি খেলা শুরু না করতেই সরকারের কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে। আপনারা ঘরে ঘরে তল্লাশি করেছেন, মামলা দিয়েছেন। বন্ধ করতে পেরেছেন আমাদের জনসভা? না।’
সংসদে বিএনপির সাত সদস্য হলেন মো. আমিনুল ইসলাম, মো. হারুনুর রশীদ, উকিল আবদুস সাত্তার, মো. মোশাররফ হোসেন, জিএম সিরাজ এবং জাহিদুর রহমান। সংরক্ষিত সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা।
তাদের মধ্যে হারুনুর রশীদ অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছেন। উকিল আব্দুস সাত্তার অসুস্থ। বাকি পাঁচজন সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। তারা আজ সকাল ১১টায় জাতীয় সংসদের স্পিকারের অফিসে যাবেন পদত্যাগপত্র জমা দিতে। হারুনুর রশীদ বিদেশ থেকে ই-মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বলে বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহিরউদ্দিন স্বপন জানিয়েছেন। আর উকিল আব্দুস সাত্তারের পদত্যাগপত্র তার পক্ষে একজন সমাবেশে উপস্থাপন করেন।
সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের প্রতি পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আগামীকালের মধ্যে আপনারাও পদত্যাগ করে জনতার কাতারে চলে আসুন। জনগণ আর এক মুহূর্তও এই সরকারকে চায় না। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করি। ভোটাধিকার, মানবাধিকারসহ সাংবিধানিক সব অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আন্দোলন করি।’
মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়ার অনুরোধ : সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমাদের এ সমাবেশ ঠেকাতে সরকার মামলা হামলা খুনসহ সবকিছুই করেছে। আজ ঢাকায় সবকিছু বন্ধ কেন এর জন্য সরকারই দায়ী। আপনারা মানে মানে কেটে পড়েন। যদি না যান তবে আপনাদের সরাতে যা যা করা দরকার তাই করে বিদায়ের ব্যবস্থা করা হবে।’ রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে নতুন একটি নির্বাচন দিন।’
আত্মগোপনে থাকা ইশরাক গণসমাবেশে : গত ৫ ডিসেম্বর মতিঝিল থানার নাশকতার একটি মামলায় বিএনপির পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন আদালতে গরহাজির থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। গ্রেপ্তার এড়াতে ওইদিনই আত্মগোপনে যান ইশরাক। গতকাল সমাবেশের মঞ্চে হাজির হয়ে ইশরাক বলেন, ‘আমাদের সমাবেশকে সামনে রেখে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে ভূমিকা রেখেছে তাতে তারা আর পুলিশের পোশাক পরার অধিকার রাখে না। জনগণের টাকায় কেনা অস্ত্র, পোশাক রেখে মুজিব কোট পরে রাস্তায় আসেন। দেখেন, আমরা জিয়ার সৈনিকরা আপনাদের উচিত জবাব দিতে পারি কি না।’
আফরোজা আব্বাসের অভিযোগ : সমাবেশে মির্জা আব্বাসের স্ত্রী ও মহিলা দল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি আফরোজা আব্বাস বলেন, ‘আমাদের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠাল। কারাগারে তাদের সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে ফ্লোরে ঘুমাতে বাধ্য করেছে।’
গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান। সভা পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও রফিকুল আলম মজনু।
সমাবেশ নেতাকর্মীদের মধ্যে খাবার বিতরণ করে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন। চিকিৎসা সহয়তা দেয় ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।
নয়াপল্টন পুলিশের ব্যারিকেড : বিকেল ৪টার পর নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ও সড়কের দুই পাশে বাড়ানো হয় পুলিশের সংখ্যা। প্রস্তুত রাখা হয় পুলিশের জলকামান। কাকরাইলের নাইটিংগেল মোড়েও ব্যারিকেডের পাশে শত শত পুলিশ সদস্য দেখা গেছে। বিএনপি কার্যালয়ের নিচেও পুলিশ সদস্যরা ছিলেন। গত বুধবার সংঘর্ষের পর থেকেই তারা সেখানে অবস্থান করছেন।
ইংল্যান্ড-ফ্রান্সের রাজনৈতিক বৈরিতার ইতিহাস কমবেশি সবারই জানা। ইউরোপের দুই পড়শির সম্পর্ক এখন অম্ল-মধুর। কখনও ভালো তো কখনও খারাপ। ফুটবল বৈরিতায় অবশ্য ইংল্যান্ড অনেকটা এগিয়ে। বিশেষ করে বিশ্বকাপের মঞ্চে তারা প্রতিবারই জয়ী দল। আগের দুবারে সাক্ষাতেই হারকে বরণ করতে হয়েছে ফ্রান্সকে। তবে এবার আর পারল না ইংল্যান্ড। প্রতিবেশীদের শতভাগ জয়ের রেকর্ড ভেঙে সেমিফাইনালে পা রেখেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। আল বায়েত স্টেডিয়ামে রোমাঞ্চকর ম্যাচটি ২-১ গোলে জিতে নিয়েছে দিদিয়ের দেশমের দল। আর ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেনের পেনাল্টি মিসের খেসারত দিতে হয়েছে দীর্ঘ ৬৬ বছর শিরোপা জিততে না পারা ইংল্যান্ডকে।
এই ম্যাচে সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি ফরাসিদের আক্রমণভাগের নায়ক কিলিয়েন এমবাপ্পেকে। তাকে ঠিকই রুখে দিতে পেরেছিলেন কাইল ওয়াকার, লুক শ, হ্যারি ম্যাগুয়েররা। তবে ইংলিশ কোচ গ্যারেথ সাউথগেট যে ভয়টা করেছিলেন সেটাই হয়েছে। ফ্রান্স দলটাই তারায় তারায় পরিপূর্ণ। এমবাপ্পে হয়তো সেই আকাশের জ্বলজ্বলে নক্ষত্র। তবে অন্যদের খাটো করার সুযোগ কই? সেটার প্রমাণ দিতেই ১৭ মিনিটে অরলিয়েন শুয়ামেনির এগিয়ে নেওয়া গোলের পর অভিজ্ঞ অলিভিয়ের জিরুদ ৭৮ মিনিটে করেন জয়সূচক গোল। এই দুই গোলের মাঝখানে হ্যারি কেনের পেনাল্টি থেকে লক্ষ্যভেদে জমে উঠেছিল ম্যাচ। তবে শেষ দিকে পিছিয়ে পড়া ইংল্যান্ডের স্বপ্ন বিলীন হয় কেনেরই পেনাল্টি মিসে। আর ফ্রান্স কঠিন হার্ডল পেরিয়ে সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়ে যায় বিস্ময় জাগানিয়া মরক্কোকে।
ইংল্যান্ডের ৪-৩-৩ ফরমেশনের জবাবে ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশম ৪-২-৩-১ কৌশল নেন। এমবাপ্পে, আন্তেইন গ্রিজমান ও উসমান দেম্বেলেকে আক্রমণ গোছানোর দায়িত্ব দিয়ে জিরুদকে রাখেন গোলের দায়িত্বে। তবে পরিকল্পনা ছিল আক্রমণে যোগ দেবেন দুই হোল্ডিং মিডফিল্ডার অরলিয়েন শুয়ামেনি ও আদ্রিয়েন রাবিয়ট। এই কৌশলেই ফল আসে। ১৭ মিনিটে শুয়ামেনির অসাধারণ গোলে এগিয়ে যায় চ্যাম্পিয়নরা। গ্রিজমানের পাস ধরে বক্সের প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে এই মিডফিল্ডারের ডান পায়ের জোরালো শট কোনাকুনি জালে জড়ায়। ইংলিশ কিপার জর্ডান পিকফোর্ড ডানদিকে ঝাঁপিয়েও তার নাগাল পাননি। চার মিনিট পর অবশ্য ভালো সুযোগ এসেছিল ইংল্যান্ডের সামনে। লুক শর বাঁ পায়ের ফ্রিকিক জমা পড়ে ফরাসি কিপার হুগো লরিসের হাতে। পরের মিনিটে হ্যারি কেনের জটলার মধ্য থেকে শট কোনোমতে ফেরান ফরাসি অধিনায়ক।
বিরতি থেকে ফিরে আক্রমণের গতি বাড়ায় ইংল্যান্ড। ৪৭ মিনিটে লরিসের দৃঢ়তায় গোল পায়নি থ্রি-লায়নরা। জুড বেলিংহ্যামের বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট কোনোমতে ফিস্ট করে দুর্গ সামলান ৩৫ বছরের ফরাসি কাস্টডিয়ান। তবে ৫৪ মিনিটে হ্যারি কেনের জোরালো পেনাল্টি রুখতে পারেননি। বুকায়ো সাকাকে বক্সে ফেলে দিয়েছিলেন শুয়ামানি। কেন সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইংলিশ তারকা ওয়েন রুনির ৫৩ গোলের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেন। এরপর ম্যাচ এগুতে থাকে আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে। ৭২ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার আরেকটি ভালো সুযোগ নষ্ট হয় ইংল্যান্ডের। লুক শ’র আড়াআড়ি ক্রসে সাকা পা ছোঁয়ালেও তা দূরের পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়। ৭৭ মিনিটে ইংল্যান্ডের ত্রাতা গোলকিপার পিকফোর্ড। ছোট ডি-বক্সের মাঝখান থেকে জিরুদের ডান পায়ের ভলি ফিরিয়ে দেন ইংলিশ কিপার। তবে পরের মুহূর্তে জিরুদকে আর আটকে রাখা যায়নি। বাঁ দিক থেকে গ্রিজমানের ক্রসে দারুণ হেডে ঠিকই কাজের কাজটা করেন ফ্রান্সের নাম্বার নাইন। বিশ্বকাপে পেয়ে যান চতুর্থ গোলের দেখা। ম্যাচের ৮৫ মিনিটে দলকে ম্যাচে রাখার সুযোগটা নষ্ট করেন কেন। ম্যাসন মাউন্টকে বক্সে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলেন লুকাস হার্নান্দেজ। প্রথমে সেটা রেফারির চোখ এড়ালেও পরে ভিএআরে দেখে পেনাল্টির নির্দেশ দেন। তবে এবার আর ¯œায়ু ধরে রাখতে পারেননি ইংলিশ অধিনায়ক। তার শট বারের ওপর দিয়ে যেতে যেন ইংলিশদের ভাগ্যও ম্যাচ থেকে মিলিয়ে যায় হাওয়ায়। আর প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়কের চড়া মাশুলের সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ফ্রান্স চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে।
এই ম্যাচে এমবাপ্পেকে ভয়ংকর হতে দেখা যায়নি। তবে সতীর্থরা ঠিকই দারুণ এক জয় উপহার দিয়েছে পাঁচ গোল করে গোল্ডেন বুটের সবচেয়ে বড় দাবিদারকে। কাল রাতেই পর্তুগালকে হারিয়ে প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে সেমিফাইনালে আসা মরক্কো ফরাসিদের ফাইনালের পথের কাঁটা। সে কাঁটা উপড়ে ফেলতে পারলেই টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালের মঞ্চে দেখা যাবে তিনবারের বিশ্বজয়ীদের। মেরুন পতাকার কাতারে লাল সমুদ্র হয়ে ভেসে আসে মরক্কো। সেই সমুদ্রের ঢেউ দলটিকে তুলে নিল বিশ্বকাপের শেষ চারে; যা এক ইতিহাস। যে ইতিহাস করতে স্বপ্ন দেখেছিল ক্যামেরুন, সেনেগাল ও ঘানা। কিন্তু কোনো দলই কোয়ার্টার ফাইনাল গেরো পেরোতে পারেনি। ক্যামেরুন থেমেছিল ১৯৯০-এ, সেনেগাল ২০০২ আর ঘানা ২০১০-এ। তাই আফ্রিকা মহাদেশের কোনো দেশের পক্ষে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের আমেজ কেমন তা গায়ে মাখাও হয়নি। সেই আক্ষেপ পূরণ করে পুরো আফ্রিকার মুখ উজ্জ্বল করল মরক্কো। শুধু আফ্রিকাই নয়, প্রথম আরব দেশ হিসেবে সেমিফাইনালে পৌঁছার গৌরবও দলটির। সবাইকে এমন চমক দিয়েই আরব্য রজনীর রূপকথার মতো সেমিফাইনালে উঠে এলে মরক্কো। ওই লাল সমুদ্র ছিল লাল জার্সি পরা দলটির সমর্থকরা। তাদের নিয়েই গতকাল ‘টুপির আদলে গড়া’ আল থুমামা স্টেডিয়ামে পর্তুগালকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথম আফ্রিকান হিসেবে বিশ^কাপ সেমিফাইনালে মরক্কো। একই দিনে পর্তুগালের বিদায়ে থামল ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো নামক বিশ্ব ফুটবলের এক অতিমানব গোল মেশিনের। বিশ্বকাপে তাকে আর দেখা যাবে না নিশ্চিত। হয়তো জাতীয় দলের জার্সিতেও আর নয়।
ম্যাচ শেষে অশ্রুভেজা চোখে মাঠ ছেড়েছেন রোনালদো। তার শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচটিতেই আসর থেকে এমন বিদায় কল্পনা করেননি পর্তুগিজ যুবরাজ। তাই কান্নাটাও ছিল বেশি। মাঠ ছাড়িয়ে স্টেডিয়ামের টানেল ধরে এগিয়ে যেতে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেননি রোনালদো। চোখে হাত দিয়ে কেঁদে ফেলেছেন অঝোরে। আর এসবই উঠে এসেছে টিভি স্ক্রিনে। তা দেখে হয়তো বিশ্ব জোড়া রোনালদো ভক্তরাও কেঁদেছেন অঝোরে। এসবের আগে ৪২ মিনিটে এন-নেসেরির হেড থেকে গোল হজমের পর দ্বিতীয়ার্ধের পুরো সময় মরক্কোর অর্ধে আক্রমণ করে গেছে পর্তুগাল। বড় মঞ্চের পরীক্ষিত ‘ম্যাচ সেভার’ রোনালদোকে গোল হজমের প্রায় পরপরই মাঠে নামান ফার্নান্দো সান্তোস। কখনো ব্রুনো ফার্নান্দেসের জোরালো শট চলে যায় বার পোস্টের ওপর দিয়ে। কখনো হুয়াও ফেলিক্সের দারুণ বাঁকানো শটটি ধরে ফেলেন মরক্কোর গোলকিপার বুনো। ম্যাচের শেষ ৮ মিনিটের ইনজুরি সময় পায় পর্তুগাল। ওই সময় এক ফুটবলারকে লাল কার্ড দেখে মাঠের বাইরেও যেতে হয়। শেষ দিকে ১০ জনের দলে পরিণত হয় মরক্কো। অথচ এদিন কোনো কিছুই যেন মরক্কোর জয় ঠেকাতে পারেনি। বেলজিয়াম, স্পেনের মতো ইউরোপিয়ান পরাশক্তিদের হারানোর পর ২০১৬ ইউরো জয় পর্তুগালকে হারিয়ে ইতিহাসটা লিখেই ফেলল এটলাস লায়নরা।
এমন ঐতিহাসিক দিনে গর্বিত কোচ ওয়ালিদ রাগ্রেগুই যেন বাকহারা। আফ্রিকার জন্য ইতিহাস গড়ার কথা বলেছিলেন শিষ্যদের। তা নিশ্চিত হওয়ায় খুশি কোচ বলেন, ‘আজকের ম্যাচটি খুবই কঠিন ছিল। আমরা বেলজিয়াম, স্পেনের পর ইউরোপের আরও একটি কঠিন দলের বিপক্ষে জিতলাম। আমাদের যা ছিল, মাঠে সবটাই দিয়েছে ছেলেরা। এখনো অনেকে ইনজুরড। ম্যাচ শুরুর আগে ওদের বলছিলাম, আমাদের হেরে গেলে চলবে না। আফ্রিকার জন্য ইতিহাস লিখতে হবে। আমরা তা পেরেছি।’
টানা তিনটি ইউরোপিয়ান জায়ান্টদের হারানোর আত্মবিশ্বাসে এখন ফুটন্ত মরক্কো। সেমিফাইনালে তাদের সামনে ফ্রান্স অথবা ইংল্যান্ড। এই আসরের পথচলা বলছে, ওই দুই দলের কাউকেই এখন আর ভয় পায় না লাল সমুদ্রের দলটি। আরও একবার গ্যালারি ভর্তি লাল ঢেউ নিয়ে তারা সাবেক চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে আরেক ইতিহাস গড়ে ফাইনালে যেতেই পারে।
২০০২ সালে বিশ্বকাপ জেতার পর ব্রাজিল কখনই ইউরোপের কোনো দলকে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে হারাতে পারেনি। কোনো রকম সৃষ্টিশীলতা ছাড়া যখন কোনো টেকনিক্যাল সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় আর সামনে থাকে অনড় এক প্রতিপক্ষ যারা ১২০ মিনিট ধরে একই রকম ভাবে রক্ষণ আগলে থাকতে পারে, তখন তিতের ব্রাজিল দলকে বিদায় নিতেই হলো। ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হেরে শেষ হলো ব্রাজিলের কাতার বিশ্বকাপ। এই বিশ্বকাপটা আমাকে ১৯৮২ সালের আসরের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। সেবারও ব্রাজিল দলে দারুণ সব খেলোয়াড় ছিল আর বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে ফেভারিট ভাবা হচ্ছিল কিন্তু ব্রাজিলকে ফিরতে হয়েছিল খালি হাতেই।
ব্রাজিল অনেক আত্মবিশ্বাস নিয়েই কাতারে এসেছিল। তারা ছিল বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার, দলে দারুণ দারুণ সব প্রতিভাবান খেলোয়াড়, প্রায় সবাই শারীরিক ভাবে ফিট আর জেতার জন্য মরিয়া। সবাই তাদের ক্লাব ফুটবলের মৌসুমের মাঝপথেই বিশ্বকাপে এসেছিল। গ্রুপ পর্ব এবং শেষ ষোলোতে একদমই একপেশে জয়ের পর নেইমারকেও ফিরে পাওয়া গেল দলে। জানাই ছিল প্রতিপক্ষ হবে ভালো একটা দল, যারা চোখধাঁধানো ফুটবল না খেললেও কার্যকর ফুটবল খেলে। এটাই হয়তো দলের সবাই মাথার ভেতরে নেয়নি। ৯০ মিনিটের খেলায় যদি কোনো টেকনিক্যাল সমস্যা হয়, তাহলে কী করতে হবে এটা তাদের জানা ছিল না। সেই সঙ্গে চোট সমস্যা, বারবার একাদশে বদল, এর বদলে ওকে নামানো আর চূড়ান্তভাবে টেকনিক্যাল ভুল এবং দুর্ভাগ্য ব্রাজিলের এই বিদায়ের জন্য দায়ী। দক্ষিণ কোরিয়াকে হারাবার পর যে ছন্দটা খুঁজে পেয়েছিল ব্রাজিল, ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে সেই ছন্দটা তারা খুঁজে পায়নি। খুব কষ্ট হয়েছে প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভাঙতে।
আমরা সবাই তিতের কৌশলের প্রশংসা করেছি। খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দেওয়া, সবাইকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানো এসবে খানিকটা প্রশ্ন উঠল সবই ছিল নিখুঁত। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে সেই ছন্দময় ফুটবলটা দেখা যায়নি। প্রথমার্ধটা ছিল ফলহীন, কোনো রকম স্কোরিং পজিশনেই কেউ যেতে পারেনি। লুকাস পাকেতাকে আমার কাছে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবেই বেশি কার্যকর মনে হয়। ও যখন কোনো পাস ধরে, ও কেমন করে যেন ওর পিঠ থাকে আক্রমণভাগের দিকে। যে কারণে ও সবসময় ভুল খেলোয়াড়টির কাছে বল পাঠায়।
নেইমার খেলছিল তিন স্কোরারের মাঝের জায়গাটায়, সে নিজের জায়গা বদলের কোনো ইচ্ছাও প্রকাশ করেনি। ভিনিসিয়ুস বাম প্রান্ত দিয়ে চেষ্টা করেছে কিন্তু কোনো সহায়তা পায়নি। শেষ পর্যন্ত রাফিনহা কিছুই করতে পারেনি। রিচার্লিসনকে তুলে নেওয়ার পর পেদ্রোকে নিয়ে খেলতে দলের কষ্ট হয়েছে। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের শেষ সময়ে নেইমারের অবিশ্বাস্য নৈপুণ্যে যে গোলটা পেল ব্রাজিল, সেটা কী করে ধরে রাখতে হবে এই নিয়ে তাদের কোনো ধারণাই ছিল না। তারা তাদের খেলায় পরিবর্তন আনেনি, রক্ষণ আরও জমাট করেনি। এই সময়ে বলের দখল নিজেদের কাছে রাখা দরকার ছিল, সেই সঙ্গে পাস দেওয়ার বেলায় আরও সাবধানী। কিন্তু এই ব্রাজিলিয়ান দল আমাকে হতাশ করেছে।
সবার চোখ ছিল কাসেমিরো আর তার রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক সতীর্থ লুকা মদ্রিচের দিকে। ক্রোয়েশিয়ার মাঝমাঠের প্রধান খেলোয়াড় ব্রাজিলের মাঝমাঠের প্রধান খেলোয়াড়কে ছাপিয়ে গেছে। মদ্রিচ ঠান্ডা মাথায় মাঝমাঠের একটা বড় অংশ নিজেদের দখলে রেখেছে। পুরো মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ ছিল তার পায়ে, সেই ছিল সূত্রধর। সেন্টারব্যাকরাও কাজ করেছে মদ্রিচের ইশারাতেই।
ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা ব্রাজিলের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের নিজেদের জায়গায় ঢুকতেই দেয়নি। তার ওপর গোলবারে ছিল লিভাকোভিচ। লুকা মদ্রিচ পেনাল্টি শটটাও দারুণভাবে নিয়েছে। এখন তার নজর সেমিফাইনালের অন্য প্রতিপক্ষের দিকে।
আমি আবারও বলি, ব্রাজিল এই বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট ছিল। দলের কোচ ছিলেন তিতের মতো অভিজ্ঞ একজন, দলে অনেকগুলো প্রতিভাবান খেলোয়াড় ছিল। তারা গ্রুপ পর্বে আর রাউন্ড অব সিক্সটিনে ভালো খেলেছে, স্রেফ একটা দিন তারা ভুল করেছে। তাতেই তারা ছিটকে গেছে। তারা ম্যাচে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে, গোলের শটে নিশানায় ভুল করেছে, রক্ষণ করে লিড ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে এবং চূড়ান্ত ভাবে স্পটকিক মিস করেছে। এখন ব্রাজিলের আবারও চার বছরের অপেক্ষা।
গতকাল শনিবার বেলা ১টা। রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন অন্তত ১৫ জন পুলিশ সদস্য। এ সময় রবিন নামে এক যুবক হেঁটে নাবিস্কো মোড়ের দিকে যাচ্ছিলেন। পুলিশ সদস্যরা তাকে আটকে গন্তব্য কোথায় ও যাওয়ার কারণ জানতে চান। উত্তর দিয়ে চলে যেতে চাইলে রবিনকে আটকে তার মোবাইল ফোন দেখতে চাওয়া হয়। কিন্তু তা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত বিষয় আপনাদের দেখাব কেন?’ পুলিশ সদস্যরা তখন অনেকটা জোর করেই রবিনের মোবাইল ফোনটি কেড়ে নিয়ে মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের কললিস্ট ও আদান-প্রদান করা বার্তা ঘেঁটে দেখতে থাকে। একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে রবিন বলেন, ‘মোবাইলটি রেখে দেন। আমি চললাম। যা করার খুশি আপনারা করেন। আমি তো চোর না! অপরাধীদের যেভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন, আমাকে সেভাবেই করলেন।’ এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যরা দুঃখ প্রকাশ করে তার মোবাইল ফোনটি ফিরিয়ে দেন।
এর আগে গতকাল বেলা ১১টার দিকে উত্তরার আজমপুরে তল্লাশির নামে প্রায় একই ধরনের পরিস্থিতির শিকার হন সজীব নামে এক ব্যক্তি। তাকে রিকশা থেকে নামিয়ে শরীর তল্লাশির পর অনেকটা জোর করেই মোবাইল ফোন নিয়ে ঘেঁটে দেখেন পুলিশ সদস্যরা। পরে বিরক্তি প্রকাশ করে সেখান থেকে চলে যান সজীব।
এই দুজনের মতোই গতকাল রাজধানীতে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে নিরাপত্তার বাড়াবাড়িতে পথে পথে অনেকেই পুলিশি হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যাদের কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে পথচারীদের তল্লাশি করা হয়েছে। ইচ্ছে করে কাউকে হয়রানি করা হয়নি।
আর শুধু ঢাকাতেই নয়, রাজধানীর প্রবেশমুখগুলো এবং আশপাশের জেলাগুলোতেও সড়কে পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রী ও পথচারীরা হয়রানির শিকার হন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জরুরি কাজে ঢাকায় ঢোকার সময় প্রবেশমুখ থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে কাউকে কাউকে।
বিএনপির সমাবেশ সামনে রেখে গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর মোড়ে মোড়ে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হেলমেট পরে অবস্থান নেয়। সমাবেশস্থলের আশপাশসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে ছিলেন পুলিশ, র্যাব, আনসার ও এপিবিএন সদস্যরা। রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তায় কাজ করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তত ৩২ হাজার সদস্য। সমাবেশস্থল গোলাপবাগ মাঠ, কমলাপুর রেলস্টেশন, মতিঝিল, নয়াপল্টন, কাকরাইল, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকা কড়া নিরাপত্তার বলয়ে রাখা হয়।
তল্লাশিচৌকিতে দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে তারা তল্লাশি করছেন। বিভিন্ন জেলা থেকে যেন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনো মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করতে না পারে তা খেয়াল রাখা হয়। সমাবেশের নামে নাশকতা যাতে না হয়, সে জন্য নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও ঢাকার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ভ্রাম্যমাণ চেকপোস্ট বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করে। মতিঝিল, শাপলা চত্বর, ফকিরাপুল, সচিবালয় এবং জিরো পয়েন্টসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় র্যাবের চেকপোস্ট বসানো হয়।
এ প্রসঙ্গে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘সমাবেশ সামনে রেখে বিভিন্নস্থানে নিরাপত্তাচৌকি বসানো হয়েছে। দেশের নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার, র্যাব সবকিছুই করছে।’
গতকাল সকালে বিজয়নগর এলাকায় আসেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বাসিন্দা শরফরাজ। ব্যারিকেড উপেক্ষা করে নয়াপল্টন যেতে চাইলে তাকে আটকে তার মোবাইল ফোন ঘেঁটে দেখেন পুলিশ সদস্যরা। মোবাইল ফোনে দেখা যায়, বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে বার্তা আদান-প্রদান করেছেন শরফরাজ। একপর্যায়ে স্বীকার করেন তিনি বিএনপির রাজনীতি করেন। পার্টি অফিস দেখতে এসেছেন। পরে পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় শরফরাজ বলতে থাকেন, ‘আমি এই দেশের নাগরিক। কোনো অন্যায় করিনি।’
তল্লাশির নামে হয়রানির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ সহায়তা করেছে। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পুলিশি টহল ছিল। নাশকতা রোধ করতে পুলিশ নানাভাবে কাজ করেছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অপরাধীরা তথ্য আদান-প্রদান করছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। আর এ কারণে সন্দেহভাজনদের মোবাইল ফোনে কী তথ্য আছে, তা দেখা হচ্ছে। তবে মোবাইল ফোন দেখার নামে কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।’
গতকাল রাজধানীর ৫০টি থানার পুলিশ সদস্যরাও পাড়া-মহল্লায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করে। তারা বেশি তৎপর ছিল পথচারীদের মোবাইল ফোন সেট ঘেঁটে দেখাতে। এ নিয়ে অনেক জায়গায় পুলিশের সঙ্গে পথচারীদের বাগ্্বিতণ্ডাও হতে দেখা গেছে। মোবাইল ফোনের ব্যক্তিগত তথ্য ঘেঁটে দেখাতে পথচারীরা হন ত্যক্তবিরক্ত।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘অপরাধীদের ধরতে পুলিশ বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। বিএনপির সমাবেশ সামনে রেখে কোনো ধরনের অভিযান চালানো হচ্ছে না। তল্লাশির সময় মোবাইল ফোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে নিরাপত্তার স্বার্থেই। পুলিশের কোনো সদস্য কাউকে অহেতুক হয়রানি করলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গাজীপুরে ঢাকায় ঢুকতে বাধা : ঢাকার পাশের জেলা গাজীপুরে রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালায়। পুলিশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের তৎপরতার কারণে সাধারণ মানুষ ঢাকার দিকে কেউ যেতে পারেনি। গতকাল উত্তরাঞ্চল থেকে কোনো যাত্রীবাহী বাস ও ব্যক্তিগত যানবাহনও ঢাকার দিকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া টঙ্গী রেলজংশন ও জয়দেবপুর রেলজংশনে ঢাকাগামী যাত্রীদের ট্রেনে উঠতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। টঙ্গী ও জয়দেবপুর স্টেশনে প্রতিটি ট্রেনকে তিন-চার ঘণ্টা করে থামিয়ে রাখতে দেখা গেছে। পরে ট্রেন ছাড়লেও ট্রেনগুলো মূলত ফাঁকা অবস্থায় ঢাকা গেছে।
রূপগঞ্জে গণপরিবহন চলাচল বন্ধে ভোগান্তি : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে কড়া তল্লাশি চালায়। ঢাকাসহ অন্যান্য জেলা-উপজেলায় যাওয়ার সব গণপরিবহনও বন্ধ ছিল। এতে ভোগান্তির শিকার হয় সাধারণ যাত্রীরা।
সাভারে ফাঁকা সড়কে পথে পথে তল্লাশি : ঢাকার সাভারে সড়ক-মহাসড়কের মোড়ে মোড়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে সড়কে গণপরিবহনের উপস্থিতি কম দেখা গেছে। পুলিশি ঝামেলার আশঙ্কায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক এবং নবীনগর-চন্দ্রা ও বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কে দূরপাল্লার কোনো গণপরিবহনের দেখা মেলেনি।
সিংগাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে যান বন্ধ : ঢাকার প্রবেশদ্বার মানিকগঞ্জের সিংগাইরে প্রায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ ছিল। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন অসুস্থ রোগীসহ সাধারণ যাত্রীরা। চেকপোস্টে কঠোর অবস্থান নেয় পুলিশ।
কেরানীগঞ্জে অঘোষিত হরতাল : ঢাকার কেরানীগঞ্জে এক প্রকার অঘোষিত হরতাল পালিত হয়েছে। সকাল থেকে যান চলাচল এক প্রকার বন্ধ ছিল। কেরানীগঞ্জ থেকে রাজধানীর প্রবেশমুখে ছিল পুলিশের কড়াকড়ি চেকপোস্ট। এ ছাড়া বুড়িগঙ্গা নদীতে সকাল থেকে নৌকা বা অন্য কোনো নৌ-যান চলাচল করতে দেখা যায়নি। বাবুবাজার সেতু, পোস্তগোলা সেতু ও বসিলা ব্রিজে ছিল পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি। রাজধানী থেকে কেরানীগঞ্জে প্রবেশে কোনো বাধার মুখে না পড়তে হলেও, রাজধানীতে প্রবেশে প্রত্যেক ব্যক্তিকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়েছে।
যাত্রীর সংকটে ঢাকা ছেড়ে যায়নি বেশির ভাগ লঞ্চ : গতকাল নগরীর একমাত্র লঞ্চ টার্মিনাল সদরঘাটে সারি সারি লঞ্চ দাঁড় করানো ছিল। যাত্রীর সংকটে ঢাকা ছেড়ে যায়নি বেশির ভাগ লঞ্চ। আবার দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা লঞ্চের সংখ্যাও ছিল খুব কম। দু-একজন যাত্রী এলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ফিরে যেতে হয়েছে তাদের। সংঘাতের শঙ্কায় বন্ধ ছিল সদরঘাটমুখী সব ধরনের গণপরিবহন। বুড়িগঙ্গা নদীতে খেয়া নৌকা পারাপার বন্ধ থাকায় বাবুবাজার সেতু দিয়ে চলাচল করতে হয় যাত্রীদের।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলা, উপজেলার প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারা এবং কবি নজরুল সরকারি কলেজ প্রতিনিধি।
মুক্তিযুদ্ধের ১৬টি সফল মিশনের বিস্তারিত ধারাবাহিকভাবে লিখছেন সালেক খোকন
একাত্তরে আমরা সামনাসামনি ও গেরিলা উভয় আক্রমণই করেছি। আগেই রেকি করা হতো। ল্যান্সনায়েক হাফিজ উদ্দিন ও এক সিভিলিয়ান ছেলে ছিল ভালো রেকিম্যান। গ্রুপে তখন ৫৫ জন। কমান্ডে সুবেদার নুরুল আজিম চৌধুরী। সঙ্গে ছিলেন সুবেদার বজলুর রহমান, আব্দুল লতিফ, ইদ্রিস, নায়েক আব্দুল হাইসহ অনেকেই। বগামারা রেলওয়ে ব্রিজ পাহারায় ছিল রাজাকাররা। আক্রমণের মুখে ওরা সরে পড়ে। পরে ব্রিজটা আমরা ভেঙে দিই।
ঠিক ওই সময়ই পাকিস্তানি আর্মিরা ট্রেনে করে চলে আসে উত্তর দিক থেকে। এ খবর জানা ছিল না। ওরা ট্রেন থেকে নামলে ম্যাসাকার করে দেবে। তাই আমরা রেললাইনের নিচের দিকে ধানক্ষেতে পজিশন নিয়ে গুলি করতে থাকি। বৃষ্টি হচ্ছিল মুষলধারে। তার ভেতরই চলে লড়াইটা। ওরাও ফায়ার করে। ফলে সুবেদার বজলুর রহমান ও আব্দুল লতিফ আহত হন। বৃষ্টির কারণে পাকিস্তানি সেনারা সুবিধা করতে পারেনি। ট্রেন ব্যাক করে পেছনে চলে যায়। পরে খবর পাই কিশোরগঞ্জ স্টেশনে গিয়ে ওরা অনেক লাশ নামিয়েছে। একাত্তরের মতো বৃষ্টি কখনো হয়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ওই বৃষ্টিও ছিল আশীর্বাদ।
একাত্তরের একটি অপারেশনের কথা এভাবেই তুলে ধরেন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কনস্টেবল মো. আবু শামা। তিনি ছিলেন পুলিশের কনস্টেবল, ব্রাশ (বডি) নম্বর ছিল ৫০৩৪। ২৫ মার্চ রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে তিনি প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন এবং পাকিস্তানি সেনাদের হাতে বন্দিও হন। পরে ছাড়া পেলে চলে আসেন গ্রামের বাড়িতে, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার পীরপুরে।
বাড়িতে কয়েক দিন থাকার পরই আবু শামা চলে যান আগরতলায়, নাইনটি ওয়ান বিএসএফ শালবনে। আগেই ট্রেনিং ছিল। তাই ওখান থেকে শুধু অস্ত্র সংগ্রহ করে ভেতরে চলে আসেন। ১৭ জনের একটা গ্রুপ ছিল তাদের। গ্রুপটিতে আর্মি, ইপিআর আর পুলিশের সদস্যরা ছাড়া সিভিল কেউ ছিলেন না। তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেন তিন নম্বর সেক্টরে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, সিলেটের ও ঢাকারও কিছু অংশ নিয়ে ছিল এই সেক্টর। অপারেশন করেছেন কিশোরগঞ্জের গুতালিয়া মাইলপাশা, নিকলি থানা, বগামারা রেলওয়ে ব্রিজ, গুরাউতরা নদীতে, বাজিতপুর, সরারচর প্রভৃতি এলাকায়।
বাজিতপুর অপারেশনে মারাত্মকভাবে রক্তাক্ত হন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু শামা। পাকিস্তানি সেনাদের একটি গুলি তার বুকের ডান দিকের নিচ দিয়ে ঢুকে রগগুলো ছিঁড়ে বেরিয়ে যায়। ছোট ছোট কিছু স্পিøন্টারও বুকের ডান পাশ দিয়ে ঢুকে বাম পাশের ভেতরে চলে গেছে। সরিষা দানার মতো ওই স্পিøন্টারগুলো এখনো আবু শামার বুকের ভেতর রয়ে গেছে। ডাক্তার বলেছিল শরীরে চর্বি যখন কমে যাবে তখন পেইন হবে। তাই হয়েছে। এখন তার বুকের ভেতর ব্যথা হয় মাঝেমধেই। ফলে স্বাধীনতার জন্য রক্ত দেওয়া এই যোদ্ধার যুদ্ধ চলছে শরীরের সঙ্গে। আহত হলেও ওই অপারেশনে বাজিতপুর মুক্ত হয়েছিল।
কী ঘটেছিল রক্তাক্ত ওই দিনে? জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা আবু শামা অকপটে বলেন, ‘অক্টোবর মাসের ঘটনা। আমাদের গোপন মিটিং হয় বাজিতপুরের খইকুড়ি নামক জায়গায়। গ্রুপ কমান্ডার মেজবাহ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন সেখানে। সিদ্ধান্ত হয় বকতারপাড়া ও বগামারা রেল ব্রিজটা ভেঙে দেওয়ার। যাতে ভৈরব ও কিশোরগঞ্জ থেকে ট্রেনে পাকিস্তানি ফোর্স ঢুকতে না পারে। পরিকল্পনা মোতাবেক কুলিয়ারচরের মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুর, মঞ্জু ভাইসহ একটি গ্রুপ বকতারপাড়া ব্রিজ আর আমরা বগামারা ব্রিজটা ভেঙে দিই। এরপর অক্টোবরের ২০ তারিখের পর সরারচর ও বাজিতপুরের ভেতরে থাকা আর্মি ও রাজাকারদের ওপর একই টাইমে আক্রমণ করি। ওই অপারেশনেই একই সঙ্গে সরারচর ও বাজিতপুর শত্রুমুক্ত হয়।
বাজিতপুর আক্রমণের গ্রুপটিতে ছিলাম আমি। আক্রমণটা হয় ভোররাতে। বাজিতপুরের বাঁশমল নামক জায়গায় ছিল পাকিস্তানি আর্মিরা। আর থানা এলাকায় ছিল মিলিশিয়া ফোর্স আর রাজাকাররা। সব মিলে ওরা পঁচাত্তরজনের মতো, সবাই নিহত হয় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে।
উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বআমরা তিন দিক থেকে আক্রমণ করি। পশ্চিম দিকটা ছিল খোলা। আমাদের গ্রুপে সুবেদার মেজর নুরুল আজিম চৌধুরী, প্রফেসর ইয়াকুব, সুবেদার বজলুর রহমান, হাবিলদার ইদ্রিস, নায়েক আব্দুল হাইসহ ছিলেন অনেকেই। একেবারে থানার কাছাকাছি চলে আসি আমরা। গোলাগুলি চলছে প্রচ-। একতলা বিল্ডিংয়ের মতো উঁচু ছোট্ট একটা জায়গা। ওখানে একটা আমগাছ। গাছের পাতার ভেতর ওদের একটা বাঙ্কার। পাকিস্তানি মিলিশিয়া এক সৈনিক ওত পেতে ছিল সেখানে। প্রথম দিকে সে নীরব থাকে। ফলে আমরাও খেয়াল করিনি।
মার্ক ফোর রাইফেল নিয়ে লাইন পজিশনে ছিলাম। পরে ক্রলিং করে এগোচ্ছি। ঠিক তখনই আমার মাথা লক্ষ্য করে একটা গুলি আসে ওই বাঙ্কার থেকে। নিচের দিকে থাকায় গুলিটি আমার বুকের ডান দিকের নিচ দিয়ে ঢুকে রগগুলো ছিঁড়ে বেরিয়ে যায়। ফলে নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরুতে থাকে। রগ ছেঁড়ার কারণে ডান হাতটা ঝুলে ছিল। বুকের চামড়াটা ছিঁড়ে মাংস বেরিয়েও যায়।
সহযোদ্ধারা দ্রুত সরিয়ে নেয় আমাকে। সুবেদার মেজর নুরুল আজিম চৌধুরী তখনই ওই আমগাছের ব্যাঙ্কারে একটা থ্রি-ইঞ্চি মর্টার নিক্ষেপ করে। বুকের দিকে তাকিয়ে রক্ত দেখে খানিক পরেই জ্ঞান হারাই। ভেবেছি মরে যাব।
গ্রামের ভেতরেই চিকিৎসা চলে। ডাক্তার মঞ্জু ও ওয়াহাব চিকিৎসা করেন। প্রথম গজ ঢুকিয়ে সেলাই করার চিন্তা ছিল। কিন্তু ওয়াহাব ডাক্তার বললেন, এটা করলে ইনফেকশন হয়ে যাবে। বরং প্রতিদিন গজ ঢুকিয়ে লোশন দিতে হবে। এতে ধীরে ধীরে ক্ষত ভেতর থেকে শুকিয়ে আসবে। তাই করা হয়। লোশন দিয়ে প্রতিদিন ওয়াশ করার সময় জীবনটা যেন বেরিয়ে যেত। কষ্টে চিৎকার করতাম। ছোট ছোট কিছু স্পিন্টারও বুকের ডান পাশ দিয়ে ঢুকে বাম পাশের ভেতরে চলে যায়। সেগুলো বের করা সম্ভব হয়নি। মাস দেড়েক চিকিৎসা চলে। এরপর আর রণাঙ্গনে ফিরতে পারিনি। আহত হলেও ওই অপারেশনে জয় লাভ করেছি। এটা ভেবেই তৃপ্ত হই।’
আবু শামার মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার অপরাধে তার বাবাকে টর্চার করে পাকিস্তানি সেনারা। তাদের বাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়। সেসব কথা বলতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হন এই যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। অতঃপর বলেন, ‘আমি তখন মুক্তিযুদ্ধে। গ্রামের একটা লোক গামছা দিয়ে মুখ ঢেকে পাকিস্তানি আর্মিদের বাড়ি চিনিয়ে দেয়। আর্মিরা এসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় বাড়িটা। বাবাকে গাছের সাথে বেঁধে আমার কথা জিগাইছে। নির্দয়ভাবে মারছে তারে। এটাই বেদনাদায়ক। বুকে বুলেট লাগছে এটা এত কষ্ট দেয় নাই। কষ্ট হলো বাবাকে কেন এমনভাবে মারল ওরা। স্বাধীনের পর ফিরে আসলে বাবা কিছু বলেন নাই। শুনেছি অন্য লোকের মুখে। পরে বাবাকে বলি আপনে চিনছেন মুখ ঢাকা ওই লোকটাকে।
বাবা বলে, ‘না। আমাকে আর্মিরা গাছে বেঁধে পেটাচ্ছিল। তখন একজন দাড়িওয়ালা পাকিস্তানি ওদের থামিয়ে বলে রুকো রুকো, এ তো সুফি আদমি লাগতা হে। আপকা নাম কেয়া হে। নাম বলেছি। কালেমা জানতা হে? কালেমা পড়েছি। শুনে বলে, ছোড় দাও আদমিকো।’
বাবা আমাকে বুঝিয়ে বলেন, না জেনে কাউকে মেরো না বাবা। সুস্থ মস্তিষ্কে, সজ্ঞানে কোনো মানুষ যে খুন করে ওই গুনাহ মাফ হবে না। শত্রুর সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে তুমি মারছ সেটা ভিন্ন। তুমি মরতেও পারতে। যুদ্ধক্ষেত্রে ওটা ঠিক আছে। আমি দোয়া করি তুমি বেঁচে থাকো বহুদিন। তুমি দেশের জন্য বুকের রক্ত দিয়েছ। আমি পিতা হিসেবে তোমার জন্য গর্বিত।
যে পাকিস্তানি সেনা বাবাকে ছেড়ে দিয়েছে তার ভেতর হয়তো মনুষ্যত্ব ছিল। কিন্তু গ্রামের যে বাঙালি লোকটা বাড়ি চিনিয়ে দিয়েছে, ওর তো মানবতা বোধটুকুও ছিল না। এখনো জানতে পারিনি কে সে? যদি এর প্রতিশোধ নিতে পারতাম। তাহলে হয়তো সন্তুষ্ট থাকতাম। আমার জন্মদাতা পিতাকে টর্চার করেছে ওরা। মনে হলে এখনো কষ্ট পাই।
পরবর্তী প্রজন্মই বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে। তাদের নিয়েই স্বপ্ন দেখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কনস্টেবল মো. আবু শামা। তাদের উদ্দেশে তিনি শুধু বললেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে তোমরা অনুসরণ করো। চার নেতাকেও স্মরণে রেখো। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস যদি তোমরা জেনে নাও, তাহলে দেশপ্রেমিক হবে। তোমরাই এ দেশেকে সোনার বাংলা করবে।’
অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া এবং শরীরচর্চার অভাবের বেশির ভাগ মানুষেরই হার্ট খারাপ হচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে 'খারাপ' কোলেস্টেরল— এ সব মানুষের নিত্যসঙ্গী। তবে রক্তের বিভিন্ন উপাদানের মাত্রা যদি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে যায়, তা হলে ওষুধ তো খেতেই হবে। সঙ্গে পছন্দের প্রায় সব খাবারেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে যাবে। তবে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, রোজকার খাবারে কিছু পরিবর্তন আনলেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই হার্টের যাবতীয় সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
বিরিয়ানি হোক বা পোলাও সঙ্গে মাটনের কোনো পদ ছাড়া জমে না। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, এ ধরনের 'লাল' মাংস খেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তাই খাসির বদলে মুরগির মাংস খাওয়া তুলনায় স্বাস্থ্যকর।
অনেক চেষ্টা করেও ভাজাভুজি খাবারের লোভ সামলাতে পারছেন না। এই অভ্যাসের ফলেই কিন্তু অজান্তেই বেশির ভাগ মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে চলেছে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ভাজার বদলে যদি বেকড খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা যায়, তবে এই সমস্যা অনেকটাই ঠেকিয়ে রাখা যেতে পারে।
সকালের নাশতায় পাউরুটি খান অনেকেই। কিন্তু পুষ্টিবিদেরা বলছেন, পাউরুটির ওপর মাখন দেওয়ার অভ্যাস ছাড়তে হবে। শুধু পাউরুটি খেতে যদি সমস্যা হয়, তবে ডিম ফেটিয়ে তার মধ্যে পাউরুটি ডুবিয়ে, তা বেক করে নিন। স্বাদ এবং স্বাস্থ্য দুই-ই থাকবে।
মন খারাপ হলে মাঝে মধ্যেই আইসক্রিম খেয়ে ফেলেন। তৎক্ষণাৎ মন ভালো করতে এই টোটকা সত্যিই কার্যকর। কিন্তু সমস্যা হলো আইসক্রিম খাওয়ার অভ্যাসে রক্তে বাড়তে থাকে কোলেস্টেরল। পরবর্তীতে যা হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
গরমে তেষ্টা মেটাতে বার বার ঠাণ্ডা পানীয়তে চুমুক দিচ্ছেন। কিন্তু এ পানীয়ে থাকা কৃত্রিম শর্করা যে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করছে, টের পেয়েছেন কী? পুষ্টিবিদেরা বলছেন, এই তেষ্টা মেটাতে এবং স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে নরম পানীয় না খেয়ে ফল থেকে তৈরি রস খেতে পারেন।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনজাত মিনিপ্যাকের উৎপাদন, ব্যবহার ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবগুলোই সমস্যা। পলিথিন উৎপাদন ও এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে যেমন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, অন্যদিকে এর ব্যবহার প্রাণিকুল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। প্লাস্টিকের কণা এখন মানুষের রক্তে, মায়ের দুধে, সামুদ্রিক মাছে। শুধু ব্যবহার সম্পর্কিত সমস্যা না, পলিথিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। কারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, শহরের নর্দমা বন্ধ করে দিচ্ছে তা আবার রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে এবং সবশেষে শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে দিচ্ছে।
এতসব সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করা বা বন্ধ করতে না পারার সংকট কোথায় সেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয়। পলিথিন বন্ধে আইন আছে, নানা ধরনের প্যাকেজিংয়ে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অনেক দিন হলো। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সহসাই হচ্ছে না। ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই সোনালি স্বপ্ন কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে এতদিনে।
পলিথিনের ব্যবহার শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি যার অনেকটাই অভ্যাসগত কারণে। শহরের মানুষের পলিথিনের ওপর অভ্যস্ততা যেমন বেশি, তেমনি তারা ভুক্তভোগীও বেশি। রাস্তাঘাট, ড্রেন নোংরা হয়ে তো থাকেই, বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধ, তৈরি হয় জলজট ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই। বাসাবাড়িতে পলিথিনের ব্যবহার তো আছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, বেকারিজাত পণ্যের পলিথিনের ব্যবহার ও পলিথিনের মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষেপই এই অবস্থার জন্য দায়ী। শুধু ঢাকা নয় অন্যান্য ছোট-বড় সব শহরে প্রায় একই অবস্থা। আর এগুলোই হচ্ছে পলিথিন নির্ভর অর্থনীতির অনুষঙ্গ কিন্তু এর অনর্থনীতি হচ্ছে পলিথিনের কারণে পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণভাবে পলিথিন ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় না। তবে দূষণের মাত্রা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে পলিথিনের অর্থনীতির থেকে এর ক্ষয়ক্ষতির অর্থনীতি যে অনেক বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসছে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান কোনো রূপকল্প এবারের বাজেটে উল্লেখ করতে সমর্থ হননি। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’। গত বছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী’। পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের এই একমাত্র পৃথিবীকে দূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন হয়েছে ২০০২-এ এবং আজ ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ ২১ বছরেও এই আইনের বাস্তবায়ন করা যায়নি। যদিও এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার এর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ধরেই নেওয়া যায় শুল্ক বৃদ্ধির এই হার কোনোভাবে পলিথিন নিরুৎসাহিত করার জায়গা থেকে না বরঞ্চ কিছুটা বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা থেকে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সস্তা পলিথিনের ব্যবহার টেকসই ভোগের ধারণার জন্যও কোনোভাবে সহায়ক না। বরঞ্চ এটা এমন এক ধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করে। যদিও বিশ্বব্যাপী টেকসই ভোগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখন ‘সার্কুলার অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সার্কুলার অর্থনীতি শুধু অপচয় কমায় না, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, দূষণরোধ, বর্জ্য থেকে তৈরি পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তাই পরিবেশগত ঝুঁকি, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং এ সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট ২০৩০ সমূহ অর্জনে সার্কুলার অর্থনীতি অন্যতম হাতিয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো পেট বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এখন পেট বোতলের প্রায় শতভাগ রিসাইকেল করা হয় এবং পেট বোতল সংগ্রহের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেও একটি সংগ্রহ-লাইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পলিথিনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সার্কুলার ইকোনমির ধারণার সঙ্গেও একেবারে মানানসই না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন রিসাইকেল করা অসম্ভব না হলেও এটি একটি জটিল এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যে কারণে পেট বোতলের মতো রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করতে কাউকে দেখা যায় না উলটো রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পলিথিন পড়ে থাকে।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অনর্থনীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন প্রথম দরকার এর ব্যবহার বন্ধ করা, এর ব্যবহারকে অনেক বেশি দামি করে ফেলতে হবে আর এর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। দ্বিতীয়ত, সার্কুলার অর্থনৈতিক চর্চার উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের মতো উদ্যোগগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতি বছর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করে কিন্তু দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না এর উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে। তা নাহলে পলিথিনের অর্থনীতির নামে শুধু অনর্থনীতিকে বাড়িয়ে তোলা হবে, আর সেটা হবে টেকসই অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। এমন অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না কেউ। তাই বলে গরমের ভয়ে ঘরে বসে থাকলে তো আর জীবন চলবে না। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যেতে হবে। আর কর্মজীবীদের অফিস ও অন্যান্য কর্মস্থলে। অনেকেরই এই গরমেও কাজের প্রয়োজনে সারাদিন কেটে যায় বাইরে ঘুরে ঘুরেই। গরমকে মোকাবিলা করতে সঙ্গে এই প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো রাখলেই গরমের কাছে নিজেকে হার মানতে হবে না।
পানি পান
গরমের সময় শরীর থেকে স্বাভাবিক ভাবে অনেক বেশি ঘাম বের হয়ে থাকে। যার ফলে দেখা দিতে পারে পানি শূন্যতা। শরীরের মধ্যে যদি পানির পরিমাণ কমে যায় তাহলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। পানি শূন্যতা দূর করতে হলে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে।
বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার পাশাপাশি ফলের জুস কিংবা কচি ডাবের পানি খেতে পারেন। দেহের ত্বককে ভালো রাখতে পানি, শরবত বা জুস পানের বিকল্প নেই। গরমে সময় প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লিটার বিশুদ্ধ পানি খেলে ডিহাইড্রেশন এবং পানি শূণ্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
খাবার স্যালাইন
গরমের সময় ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণ বের হতে থাকে যার ফলে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়। এ থেকে মুক্তি পেতে খাবার স্যালাইন খেতে পারেন। বিকেল বেলা খাবার স্যালাইন খেলে অতিরিক্ত গরমেও শরীরে সতেজতা ফিরে আসে। আবার অনেকেই স্বাদযুক্ত স্যালাইন খান যেমন, টেস্টি স্যালাইন। ভুল করেও এসব খাবেন না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হলো ওরস্যালাইন । তবে আপনাদের মধ্যে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা খাবার স্যালাইন খাওয়ার আগে ভালো কোনো ডাক্তারের মতামত নেওয়া উচিত।
রেড মিট পরিহার করুন
অতিরিক্ত গরমের সময় গরু-ছাগলের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ গরমের সময় বা অতিরিক্ত গরমের সময় গরুর মাংস খেলে শরীরের তাপমাত্রা অনেকাংশে বেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গরু-ছাগলের মাংস ছেড়ে মাছ খেতে পারেন। আর অতিরিক্ত গরমে অবশ্যই অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকুন।
সবুজ শাক সবজি
গরমের সময় শরীরকে সুস্থ রাখতে বেশি বেশি করে সবুজ শাক সবজি খেতে পারেন। সবুজ শাক সবজিতে অধিক পরিমাণে ভিটামিন মিনারেল এবং খনিজ উপাদান থাকে। এতে করে অতিরিক্ত গরমেও শরীর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।তাছাড়াও খেতে পারেন তরমুজ যা শরীরে এনার্জি দিতে পারে।
টক জাতীয় ফল
প্রচুর গরমে সুস্থ থাকার উপায় হিসেবে টক জাতীয় ফল খেতে পারেন। যেমন: কামরাঙ্গা, লেবু, তেতুল, আমরা ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে অতিরিক্ত টক ফল খাওয়া ঠিক নয়। যদি কারো এসিডিটির সমস্যা থেকে থাকে তবে টক জাতীয় ফল খাওয়া হতে বিরত থাকুন। টক জাতীয় ফল খালি পেটে খাওয়া যাবে না। এতে করে আরো বেশী অসুস্থ হয়ে পারতে পাবেন।
টক দই
অতিরিক্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে টক দই খেতে পারেন। যারা করা রোদে কাজ করেন বিশেষ করে তাদের জন্য অনেক উপকারী হলো টক দই। রোদের প্রচুর তাপ থেকে শরীরকে কিছুটা হলেও রক্ষা করবে টক দই। টক দই শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে অনেকাংশে সাহায্য করে।
প্রতিদিন গোসল করুন
গরমের সময় প্রতিদিন এক বার করে হলেও গোসল করতে হবে। যদি পারেন তবে দিনে ২ বার গোসল করতে পারেন। গোসল করার ক্ষেত্রে একটু সাবধান থাকতে হবে। বাহির থেকে এসে সাথে সাথে গোসল করতে যাবেন না। একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর গোসল করতে যাবেন। কারণ হঠাৎ করে গরম থেকে এসে গোসল করলে ঠাণ্ডা লাগতে পারে।
ঘরেই অবস্থান করুন
অতিরিক্ত গরমে বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বাহিরে যাবেন না । যদিও বিভিন্ন কারণে বাহিরে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে রোদ থেকে বাঁচতে প্রয়োজনে ছাতা ব্যবহার করতে পারেন। যতটুকু সম্ভব ছায়াযুক্ত স্থানে থাকার চেষ্টা করুন।
শারীরিক পরিশ্রম কম করুন
গরমের সময় অনেকেই আছে অতিরিক্ত ব্যায়াম করে থাকেন এমনটি করা যাবে না কারণ অতিরিক্ত গরমে শরীরের তাপমাত্রা একটু বেশি হয়ে থাকে।
পাতলা সুতি কাপড় পরিধান করা
গরমের সময় পাতলা সুতি কাপড় পরা দরকার। কারণ সাদা কাপড় তাপ শোষণ করতে পারে না বরং তাপের প্রতিফলন ঘটায় ও গরম কম লাগে।
পারফিউম ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
অতিরিক্ত গরমে ঘামের গন্ধ থেকে বেচে থাকার জন্য অনেকেই সুগন্ধি ব্যবহার করে থাকে। তবে অতিরিক্ত গরমে পারফিউম ব্যবহার না করাটাই উত্তম কাজ। কারণ, পারফিউম গরম লাগা বৃদ্ধি করে দেয়।
যদিও ব্যবহার করতে হয় তাহলে হালকা গন্ধের সুগন্ধি ব্যবহার করতে পাবেন। বাজারে কিছু সুগন্ধি পাওয়া যায় যেগুলো ব্যবহার করলে ঠাণ্ডা লাগে। সেগুলো ব্যবহার করলে আরো ভালো হয়।
ধূমপান পরিত্যাগ করা
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা কিনা ধূমপান করে থাকি। ধূমপান করলে শরীরের তাপমাত্রা তুলনামূলক ভাবে বেড়ে যায়। তাই প্রচন্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে ধূমপান পরিত্যাগ করতে হবে। যদিও এই অভ্যাসটি সহজে পরিত্যাগ করা যায় না। তাই যতটুকু পারেন ধূমপান কম করার চেষ্টা করুন।
চা কফি পরিত্যাগ করুন
চা, কফি বা অ্যালকোহল খেলে শরীরের তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পায়। আর যদি অতিরিক্ত গরমে চা, কফি বা অ্যালকোহল খেয়ে থাকেন তাহলে শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পাবে যার ফলে হতে পারে হিটস্ট্রোক। তাই গরমের সময় চা কফি বা অ্যালকোহল খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
শান্ত থাকুন
মন মেজাজ গরম থাকলে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। রাগের কারণে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং অতিরিক্ত গরমের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় আর দুই তাপমাত্রা এক সঙ্গে হলে কি অবস্থা হতে পারে একবার হলেও সেটা ভেবে দেখবেন।
বিশেষজ্ঞরা অতিরিক্ত গরমে শান্ত থাকার জন্য মতামত দিয়ে থাকে। বিশেষ করে যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য শান্ত থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।