
বয়স তার ৩৭। তার চেয়ে অনেক কম বয়সে অনেক তারকা বুটজোড়া তুলে রেখে সাবেক বনে গেছেন। লুকা মদ্রিচ অবশ্য বয়সের কাছে হার মানার পাত্র নন। লাজুক বলে ছোটবেলায় উপেক্ষিত মদ্রিচ এখন ক্রোয়েশিয়ার সর্বকালের সেরাদের একজন। তবে সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে দেশকে এনে দিতে হবে অধরা বিশ্বকাপ শিরোপা। চার বছর আগে হয়নি। এবার না হলে মুকুটহীন সম্রাট হয়েই বিশ্বকাপকে বিদায় জানাতে হবে। মদ্রিচের স্বপ্ন বেঁচে গেলে হতাশার সাগরে ভেসে যাবে ফুটবল দুনিয়া। ফাইনালের মঞ্চে যাওয়ার আগে ক্রোয়াটদের হারাতে হবে বিশ্বফুটবলের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে। মদ্রিচের স্বপ্ন বেঁচে যাওয়া মানেই সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী মেসির শূন্য হাতে প্রস্থান।
এই বুড়ো বয়সেও দিব্যি ১২০ মিনিট একই ছন্দে, একই তালে খেলে যাচ্ছেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা মদ্রিচ। মেসিরও বয়স ৩৫। তার খেলাতেও নেই বয়সের ছাপ। এই বিশ্বকাপেই দুই অধিনায়ক টেনে নিচ্ছেন দুদলের মহাভার। মেসি গোল করছেন এবং করাচ্ছেনও। আর মদ্রিচ বল জোগান দেওয়ার অন্যতম দায়িত্বটা পালন করছেন সুচারুভাবে।
প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনা হলেই মদ্রিচের ভাবনায় চলে আসে ১৬ বছর আগের স্মৃতি। আলবিসেলেস্তাদের বিপক্ষেই আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছিল মদ্রিচের। সুইজারল্যান্ডে প্রীতিম্যাচে আর্জেন্টাইনদের হারিয়ে দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া ৩-২ গোলে। সেই ম্যাচে জয় না পাওয়া আর্জেন্টিনার হয়ে গোল করেছিলেন মেসি। মদ্রিচ আর তার দলের কাছে গত বিশ্বকাপেও বড় হারের তেতো স্বাদ পেতে হয়েছিল মেসিদের। ৩-০ গোলের জয়ে মদ্রিচও করেছিলেন এক গোল। সেই হারটা বড় ক্ষতি করে দেয় আলবিসেলেস্তাদের। গ্রুপ রানার্স-আপ হওয়ায় তাদের মুখোমুখি হতে হয় ফ্রান্সের। শেষ পর্যন্ত ফরাসিদের কাছে ৪-৩ গোলে হেরে বিদায় নিতে হয়।
এবার অবশ্য দুদল মুখোমুখি হচ্ছে আরও বড় মঞ্চে। আর্জেন্টিনার সামনে এক আসর পরে ফাইনালে ওঠার হাতছানি। ক্রোয়েশিয়ার লক্ষ্য টানা দ্বিতীয় ফাইনাল। দুদল যখন মুখোমুখি, তখন তাদের ভাবনায় চলে আসবে দুদলের দুই মহানায়ক মেসি এবং মদ্রিচ। দুজনেরই এটা শেষ বিশ্বকাপ। তাই আগামীকাল বিশ্বকাপের আকাশ থেকে আরেকটি নক্ষত্রের পতন অনিবার্য এবং অবশ্যই শূন্য হাতে। খ্যাতি, প্রতিভা ও প্রাপ্তিতে মেসির ধারেকাছে নেই মদ্রিচ। তবে মদ্রিচ নিজের মতো করেই রিয়াল মাদ্রিদকে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন গেল এক দশক।
দুজনের এবারের লড়াইটা ভিন্ন রকম শেষের বাঁশি বাজিয়ে কাতারে এসেছেন বলেই। দুজনই চান, যে করেই হোক মর্যাদার শিরোপাটা জিততে। তাই লুসাইলে লড়াইটা হবে ভিন্নমাত্রার। ক্রোয়েশিয়া পরপর দুম্যাচে টাইব্রেকারের ভাগ্য নিজেদের করে নিয়ে সেমিফাইনালে এসেছে। জাপানকে দ্বিতীয়পর্বে হারানোর পর তারা পাঁচবারের ব্রাজিলকে কাঁদিয়েছে। গোলকিপার ডমিনিক লিভাকোভিচ দুটি ম্যাচেই অসাধারণ সব সেভে দলকে জিতিয়েছিলেন। ডাচদের টাইব্রেকারে হারিয়ে আর্জেন্টিনাকে সেমিতে এনেছেন গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। দুটি সেভ করে তিনি যেমন মেসির শিরোপা স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছেন। ঠিক তেমনই আর্জেন্টিনার বিপক্ষে আরেকবার জ্বলে উঠে লিভাকোভিচও পারেন তাদের মধ্যমণি মদ্রিচের অধরা স্বপ্ন টিকিয়ে রাখতে।
এমি মার্তিনেজও নিশ্চয় চাইবেন না যার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত, সেই মেসির শূন্য হাতে বিদায়।
বিএনপির সাত সংসদ সদস্যের পদত্যাগ রাজনীতিতে নতুন আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে। এ আলোচনার মূল বিষয় হচ্ছে তাদের পদত্যাগের সরকার কী ধরনের বিপদে পড়বে। সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক ফলাফল কী দাঁড়াবে?
গত শনিবার বিএনপি তাদের ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে সাত সংসদ সদস্যের পদত্যাগের ঘোষণা দেয়। গতকাল রবিবার তাদের মধ্যে ছয়জন স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। তাদের পদত্যাগ গ্রহণ করা হয়েছে। আরেকজনের পদত্যাগপত্র এখনো গ্রহণ করা হয়নি।
বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের সাত সংসদ সদস্যের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন করে সরকার চাপে পড়বে। তারা বলেন, পদত্যাগের মধ্য দিয়ে সরকারকে তারা আবারও বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছেন যে, এ সংসদ অবৈধ ও অকার্যকর।
বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, গত বৃহস্পতিব ও শুক্রবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠক থেকেই দলীয় সংসদ সদস্যদের ফোনে সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলা হয়, শনিবার সংসদ বিলুপ্ত করে সরকারের পদত্যাগের দাবিসহ ১০ দফা দাবি জানানো হবে। সেখানে বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ না করলে তা স্ববিরোধিতা হয়ে যায়।
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর বিএনপি প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় নির্বাচন দাবি করে। এ নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে তাদের সংসদ সদস্যরা সংসদে যোগ দেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যোগ না দেওয়ায় তার আসন শূন্য ঘোষণা করে উপনির্বাচন করা হয়। শেষ পর্যন্ত সংসদে বিএনপির প্রতিনিধির সংখ্যা দাঁড়ায় সাত। এরপরও বিএনপি বরাবর বলে আসছিল এ সরকার অবৈধ। কিন্তু সংসদে প্রতিনিধি থাকায় এতদিন তাদের এমন দাবি ক্ষমতাসীনরা গ্রাহ্য করেনি।
এখন বিএনপির সাত সংসদ সদস্য পদত্যাগ করায় তাদের সাতটি আসন শূন্য হচ্ছে। গেজেটের পর নির্বাচন কমিশন আসন শূন্য ঘোষণা করে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন দেবে। সংবিধান অনুযায়ী সেটাই এখন করণীয়।
বিভিন্ন মহলে সংসদ থেকে বিএনপির পদত্যাগের ফলাফল নিয়ে দুই ধরনের আলোচনা রয়েছে। এক হলো প্রতিনিধিত্ব যতই কম হোক, দলটির সংসদ সদস্যরা সরকারের সমালোচনায় সরব ছিলেন। এটা মানুষের মধ্যে সাড়া ফেলত। গণমাধ্যমেও তাদের বক্তব্য গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হতো। এখন আর তাদের সে সুযোগ নেই। তবে কেউ কেউ বলছেন, বিএনপির প্রতিনিধিত্ব না থাকায় সংসদ একতরফা হয়ে যাওয়ায় গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে। সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক মহলের চাপও তৈরি হবে।
তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, সংসদে বিএনপির অবস্থান এতই কম যে, ওই অংশের পদত্যাগ বড় কোনো জটিলতা তৈরি করবে না। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, সাংবিধানিক কোনো সংকট বা সংসদে জটিলতা সৃষ্টি করার মতো ঘটনা এটা নয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলেন, বিএনপি তো সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছে। বিদেশিরা তো সংবিধান ও আইনের বাইরে যাওয়ার চাপ দিতে পারে না। সংখ্যায় বেশি হলে বা সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রশ্নে বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ নানা সংকট তৈরি করত।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের ১০ দফার প্রথম দাবি হচ্ছে এই অবৈধ সংসদ বাতিল করতে হবে। এ দাবির প্রথম অ্যাকশন হিসেবে আমাদের সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করেছেন। তাদের এ পদত্যাগে দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবশ্যই প্রতিক্রিয়া হবে। সেটি হবে বলেই তো তারা পদত্যাগ করেছেন। এ প্রতিক্রিয়া শিগগিরই দেশবাসী দেখতে পাবে।’
সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য জিএম সিরাজ বলেন, ‘আমরা সাতজন নির্বাচিত সংসদ সদস্য সংসদে ছিলাম। আমরা স্ববিরোধী অবস্থানে রয়েছি, এমনটা অনেকেই বলতেন। আমাদের সংসদে যাওয়া ছিল দলীয় কৌশলের অংশ। এখন পদত্যাগ করলাম, সেটিও দলের সিদ্ধান্তে।’
বিএনপির পদত্যাগের ফলাফল কী হতে পারে সে বিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির সাত সংসদ সদস্যের পদত্যাগে এ সংসদের কার্যক্রমে কোনো প্রভাব পড়বে না। কিন্তু এ সংসদ তো আগে থেকেই একতরফা ছিল। এখন এ সংসদের গুরুত্বহীনতা আরেকটু বাড়ল।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক ধারায় আগে থেকেই ঘাটতি ছিল। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নির্বাচন ও সংসদ প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। ফলে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ আরও প্রকট হয়ে উঠবে।’
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে এখন পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো তারা নিজের আলোয় সবকিছু দেখতে চায়। ভারত বা অন্য কোনো দেশের দৃষ্টিতে তারা আর বাংলাদেশকে দেখতে চায় না। এ সরকার ভারতের সমর্থন নিয়ে টিকে আছে সেটা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায় পরিষ্কার। কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে নিজেরাই সবকিছু দেখভাল করছে।’
গত বছর ১০ ডিসেম্বরের নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই ১০ ডিসেম্বর যখন বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি নিয়ে নানা ঘটনা ঘটল তখন পশ্চিম দেশগুলোর কয়েকটি এমনকি জাতিসংঘও স্টেটমেন্ট (বিবৃতি) দিল। এর অর্থ হচ্ছে, পশ্চিমা দেশগুলো এখন বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য বিএনপির সাত সংসদের পদত্যাগ অবশ্যই বহির্বিশ্বে গুরুত্ব বহন করবে।’
তিনি জানান, বিএনপি ১০ দফার যে দাবি দিয়েছে সেটি দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য নয়, বরং বিএনপি আওয়ামী লীগের সমঝোতার একটি মাধ্যম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ প্রস্তাব নিয়ে তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে দুই দল আলোচনা করে একটি পন্থা বের করে সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাবে বলেও তিনি মনে করেন।
সংসদ থেকে বিরোধী দলের পদত্যাগের ঘটনা আগেও ঘটেছে। বিএনপির শাসনামলে ১৯৯৪ সালে আওয়ামী লীগ ও সরকারবিরোধী দলগুলো সংসদ থেকে পদত্যাগ করে। তবে তাদের পদত্যাগ গ্রহণ করা হয় সাত মাস পর। এর ধারাবাহিকতায় বিএনপি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনও করে।
এখন একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে দলের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ তেমন কোনো জটিলতা সৃষ্টি করবে না। সংবিধান ও সংসদ অনুযায়ী যা করার তাই করবেন স্পিকার।’
বিএনপি সংসদে না থাকলে কী হতে পারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পদত্যাগের মধ্য দিয়ে এ মুহূর্তে বিএনপির লাভ-লোকসান কিছু হয়নি। রাজনৈতিক কোনো সুফল পাবে সেটাও মনে হয় না। তবে সংখ্যা কম হলেও সংসদে উপস্থিত থেকে তারা যে বক্তব্য দিতেন সেটা সংসদে লিপিবদ্ধ হতো, দেশ-বিদেশে, গণমাধ্যমে প্রকাশ হতো। জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণের এ সুযোগটি তারা হারাবেন।’
তিনি মনে করেন, ‘এ সাতজনের পদত্যাগের মধ্যে দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়নি। কারণ তারা দলের শীর্ষ ১০ বা ২০ জনের কেউ নন। আজকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো নেতারা সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে আলোড়ন তৈরি হতো।’
আসন শূন্য হওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব জাহাঙ্গীর আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে যেভাবে কার্যক্রম চালানোর বিষয়ে ক্ষমতা দিয়েছে, কমিশন সেটি করবে।’
নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্র বলছে, পদত্যাগের পর সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা হলো ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো এক বছরেরও কিছু সময় বেশি বাকি রয়েছে। তাই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন হলেই ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে উপনির্বাচন দিতে হবে। তবে বিভিন্ন কারণে আরও সময়ক্ষেপণ করা যায়।
শূন্য আসনে উপনির্বাচন করতেই হবে সেটি আরও পরিষ্কার করেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে হলে ইসিকে তিন মাসের মধ্যে উপনির্বাচন করতেই হবে। এ নিয়ে সংবিধানে অন্য কোনো রাস্তা নেই।’
যুক্তরাষ্ট্রের বিজনেস ম্যাগাজিন ফোর্বসের বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪২তম স্থানে আছেন। গত বছর তিনি ৪৩তম স্থানে ছিলেন।
ফোর্বসের তালিকায় ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেনকে বিশে^র সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে আছেন ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ক্রিস্টিনা লাগার্দে এবং তৃতীয় স্থানে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
শেখ হাসিনার বিষয়ে ফোর্বস উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে চতুর্থ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। তার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৮৮টিতে জয়লাভের পর তিনি চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হন, যা তার টানা তৃতীয় মেয়াদও।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, তিনি খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তার মতো বিষয়গুলোতে আরও ফোকাস করার পরিকল্পনা করেছেন।
গত ৯ ডিসেম্বর যখন তালিকাটি প্রকাশ করা হয়, তখন ফোর্বস জানায়, বাংলাদেশে দৃঢ় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা শেখ হাসিনার একটি চলমান সংগ্রাম।
তালিকার ৩৬তম স্থানে আছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ। তিনিসহ ভারতের ৬ জন এ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে ইরানের জিনা মাসা আমিনিকে মরণোত্তর প্রভাবশালী তালিকায় ১০০ নম্বরে স্থান দেওয়া হয়েছে। ২০০৪ সাল থেকে প্রতি বছর ফোর্বস ম্যাগাজিন বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাধর নারীর তালিকা প্রকাশ করে আসছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার। গতকাল রবিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
স্বাভাবিক নিয়মে প্রশাসন ক্যাডারের সবচেয়ে সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে কবির বিন আনোয়ারেরই এ পদে বসার কথা। কিন্তু বরিশালের রাজনৈতিক ঘটনায় অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে কবির বিন আনোয়ারের সরকারি কর্মকর্তাদের পক্ষে শক্ত অবস্থানের কারণে তা অনিশ্চিত বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তার ওপরই আস্থা রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কবির বিন আনোয়ার শিগগিরই অবসরে যাবেন। এর আগেই তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে এ পদেই বহাল রাখা হবে বলে জানা গেছে।
কবির বিন আনোয়ার বিদায়ী মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম অবসরোত্তর ছুটিতে যাচ্ছেন ১৫ ডিসেম্বর।
২০১৮ সাল থেকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের দায়িত্ব সামলানো কবির বিন আনোয়ার দেশের ২৩তম মন্ত্রিপরিষদ সচিব হচ্ছেন।
১৯৮৮ সালে সহকারী কমিশনার হিসেবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) যোগ দেন কবির বিন আনোয়ার। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপসচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসক) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন কবির বিন আনোয়ার। তার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে এমএ করে পরে এলএলবি ডিগ্রিও নেন। বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের সপ্তম ব্যাচের কর্মকর্তা তিনি। বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক ছাড়াও বিভিন্ন পুরস্কারে পেয়েছেন কাজের স্বীকৃতি।
পেশাগত কাজের বাইরে কবির বিন আনোয়ার বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক কর্মকা-ের সঙ্গেও যুক্ত। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশেনের সভাপতি এবং বাংলাদেশ ইয়োগা অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটি, সুন্দরবন সংরক্ষণ কমিটি এবং বাংলাদেশ স্কাউটের সঙ্গেও তিনি যুক্ত রয়েছেন।
কবির বিন আনোয়ার লেখালেখির সঙ্গেও যুক্ত। বিশ্ব ধারা মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম (সংকলন-১), বিশ্ব ধারা মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম (সংকলন-২), বিস্মৃত মুসলিম মানস, রূপসী বাংলা (১ম খণ্ড), প্রযুক্তি বদলে দিল যারা, অপরূপ বাংলাদেশ (১ম খন্ড) তার উল্লেখযোগ্য বই।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব পদেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন মুখ্য সচিব হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। আর সচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন। মুখ্য সচিব পদে তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বিদায়ী মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। আহমদ কায়কাউস বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। পরবর্তী তিন বছরের জন্য তিনি ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে যাচ্ছেন। এ জন্য মুখ্য সচিবের পদমর্যাদায় তাকে চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
আর মাত্র চারটি ম্যাচ, তারপর আবার চার বছরের অপেক্ষা। অনেক জল্পনা-কল্পনার ফানুশ উড়িয়ে, স্বপ্নের রং মেখে যে বিশ্বকাপ গড়িয়েছিল মাঠে; এক মাসের রাত জাগার অবসান ঘটিয়ে আর মাত্র কয়েকদিন পরই তার সমাপ্তি। ৩২ দলের আসরে শিরোপার লড়াইতে টিকে আছে মাত্র ৪ দল, প্রত্যেকের সামনেই দুটো করে ম্যাচ। দুই দল খেলবে ফাইনালে, আর সেমিফাইনালে হেরে যাওয়া দুই দল খেলবে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, নেইমার, হ্যারি কেইন ফুটবলের দুনিয়ায় বাঘা বাঘা সব নাম। আসর শুরুর আগে তাদের কার হাতে উঠবে শিরোপা, কে পাবেন সোনার জুতো আর কে জিতবেন সোনার বল; এই নিয়ে ভক্তদের তর্ক আর আলোচনা কম হয়নি। কিন্তু কাতার তাদের তিনজনকেই ফেরাল খালি হাতে। রোনালদো আর নেইমার মাঠ ছেড়েছেন কান্নায়, কেইনের চোখে হয়তো পানি দেখা যায়নি, তবে ভেতরে ভেতরে ঠিকই পুড়ছেন অন্তজ্বালার দহনে।
ব্রাজিল, পর্তুগাল আর ইংল্যান্ড; তিন দলই বিদায় নিয়েছে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। পরপর দুই রাতে তিন দলের তিন সুপারস্টারের বিদায়ে বিশ্বকাপ কিছুটা হলেও রং হারিয়েছে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর এটাই ছিল শেষ বিশ্বকাপ। আসর শুরুর আগে পিয়ার্স মরগ্যানকে এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন রোনালদো, যেখানে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ ও মালিকপক্ষকে নিয়ে ছিল অনেক চাঁচাছোলা মন্তব্য। ফলে বিশ্বকাপের মধ্যেই রোনালদোর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ম্যানইউ। পর্তুগালের কোচ ফার্নান্দো সান্তোসের সঙ্গেও সম্পর্কটা খারাপ গেছে রোনালদোর। শুরুর একাদশে জায়গা না দেওয়াসহ নানান বিতর্কে পর্তুগাল দলের সঙ্গে রসায়নটা আর ঠিক থাকেনি রোনালদোর। তবুও মরক্কোর সঙ্গে ম্যাচটা শেষে রোনালদো যখন কাঁদতে কাঁদতে টানেল দিয়ে বেরিয়ে যান, সেই দৃশ্যটা দেখে ভক্তরাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। নিজের শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচে রোনালদো মাঠে নেমেছিলেন ৫১ মিনিটে, রুবেন নেভাসের বদলি হিসেবে। সেটা ছিল রোনালদোর ১৯৬টা আন্তর্জাতিক ম্যাচ, কুয়েতের বাদের আলমোতাওয়াহ’র সঙ্গে যৌথভাবে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার রেকর্ডটা ছোঁয়ার দিনেই কান্নাভেজা চোখে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। কারণ অ্যাটলাসের সিংহদের যে হারানো যায়নি! বিপজ্জনক ক্রসগুলোতে লাফিয়ে মাথা ছোঁয়ানো হয়নি রোনালদোর, তার আগেই যে সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল ইয়াসিন বনুর হাত।
ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরে যাওয়ার পর মাঠের ভেতর কান্নায় ভেঙে পড়েন নেইমারও। চোট কাটিয়ে ফিরেছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে, ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ে যে গোলটা করেছিলেন সেটা বিশ্বকাপের সেরা গোলের তালিকায় নিঃসন্দেহে থাকবে। তবুও নেইমারকে কান্নাভেজা চোখে বিদায় বলতে হয়েছে বিশ্বকাপকে। অথচ এবারই ছিল সেরা সুযোগ। বয়স ৩০, দলে সতীর্থরা সব রিয়াল মাদ্রিদ নয়তো বার্সেলোনা, ম্যানইউ, টটেনহ্যামের মতো বড় বড় ক্লাবে দারুণ ছন্দে। জমাট রক্ষণ, ধারালো আক্রমণ সবই ছিল ব্রাজিলের। ছিল না ভাগ্য। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ৩ মিনিটের অসতর্কতা ম্যাচের রং পালটে দিল আর টাইব্রেকারে স্নায়ুর চাপটা নিতেই পারল না সেলেসাওরা। পরের বিশ্বকাপে নেইমারের বয়স হবে ৩৪। যে হারে চোট আঘাতের শিকার হতে হয় নেইমারকে, বছর চারেক পর নিজের সেরা ছন্দে থেকে বিশ্বকাপটা খেলার মতো অবস্থানে আদৌ থাকবেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর আপাতত নেই। নিজের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে দীর্ঘ একটা পোস্ট দিয়েছেন নেইমার, সেখানে লিখেছেন, ‘আমি মানসিকভাবে একদম বিধ্বস্ত হয়ে গেছি। ১০ মিনিটের মতো সময় ধরে অসাড় হয়ে পড়েছিলাম। এরপর অবিরাম কান্না। এই হারের স্মৃতি আমাদের অনেক দিন তাড়িয়ে বেড়াবে। এই দলটার আরও বেশি সাফল্য প্রাপ্য ছিল।’
ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হ্যারি কেইনও পুড়ছেন পেনাল্টি মিসের অন্তজ্বালায়। ফ্রান্সের গোলরক্ষক হুগো লরি তার টটেনহ্যাম সতীর্থ এবং দীর্ঘদিনের বন্ধু। তার বিপক্ষে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে একটা পেনাল্টি মারার চাপ নিয়ে গোল করেছেন। কিন্তু পরের বার যখন ম্যাচের শেষ সময়ে আবার পেনাল্টি পেল ইংল্যান্ড, কেইন সেটা রাগবির কিকের মতো বক্সের অনেক ওপর দিয়ে উড়িয়ে মেরেছেন। কেইন নিজে চাপে থাকলে অন্য কোনো সতীর্থকে শট নিতে পাঠালে হয়তো এমন হয় না। ম্যাচের পর কেইন বললেন, ‘একেবারে বিধ্বস্ত অবস্থা। আমার জন্য আর দলের জন্য এটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন। আমরা ভালো খেলেছি, ভালো সুযোগও পেয়েছি কিন্তু ফুটবলে শেষ পর্যন্ত অনেক খুঁটিনাটি ব্যাপারই ব্যবধান গড়ে দেয়। অধিনায়ক হিসেবে এবং পেনাল্টি মিস করা নিয়ে আমি নিজে সম্পূর্ণ দায় নিচ্ছি।’
তাদের মতো বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে ভার্জিল ফন ডাইকেরও। বিশ্বের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার, একমাত্র ডিফেন্ডার হিসেবে উয়েফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জয়সহ অনেক অর্জনই আছে নেদারল্যান্ডসের অধিনায়কের। প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে এসেই দলনেতা, সেই গর্ব মুছে গিয়ে ফিরতি পথের সঙ্গী ব্যর্থতা। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচে মেসিকে আটকাতে পারেননি, নাহুয়েল মলিনাকে দেওয়া পাসের আগে দৌড়ের শুরুতে ফন ডাইককেই কাটিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন জাদুকর। পরে ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ায়, শুরুতেই স্পটকিক নিতে আসেন ফন ডাইক এবং এমিলিয়েনো মার্তিনেজ তার গোলটা বাঁচিয়েই পেয়ে যান আত্মবিশ্বাস। অভিষেক বিশ্বকাপেই ফন ডাইক দেখে ফেলেছেন বিশ্বকাপের নিষ্ঠুর দিকটাও।
ঢাকায় বিএনপির আলোচিত গণসমাবেশ থেকে যে ১০ দফা দাবি তোলা হয়েছে তা নাকচ করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলের নেতারা বলছেন, এসব দাবির মধ্যে বিএনপি, বিশেষ গোষ্ঠী ও খালেদা জিয়ার পরিবারের স্বার্থ ছাড়া আর কিছু নেই। সে কারণে এ ব্যাপারে তাদের আগ্রহও নেই।
বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা কর্মসূচিতে জনগণের কল্যাণের কোনো কথা নেই দাবি করে আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা ও সরকারের মন্ত্রীরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এই দফাগুলো নতুন কিছু নয়। তাই এসব দাবি আসায় তারা কোনো চাপ দেখছেন না। বিএনপির আন্দোলনের ব্যাপারেও সরকার ও আওয়ামী লীগের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন ঘটবে না। নিয়মের বাইরে দাবি করে, চাপ দিয়ে একটি দফাও আদায় করতে পারবে না বিএনপি।
নিরপেক্ষ সরকার, সংসদ ভেঙে দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ে বিএনপি ছয় মাস ধরে টানা আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছে। মূলত বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশের মধ্যে তাদের কর্মসূচি সীমিত ছিল। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পর্যায়ক্রমে ১০টি বিভাগীয় গণসমাবেশ করে দলটি। যার শেষটি ছিল গত শনিবার রাজধানীতে। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ গণসমাবেশ করা নিয়ে বিএনপি অনড় অবস্থানে চলে গিয়েছিল। সংঘাত, প্রাণহানি, দলের মহাসচিবসহ কয়েক শ নেতাকর্মীর গ্রেপ্তারের ধারাবাহিকতায় বিএনপি তার অবস্থান পরিবর্তন করে। শেষ পর্যন্ত গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করে ১০ দফা দাবি উত্থাপন করে বিএনপি। এর ভিত্তিতে শরিক ও সমমনাদের নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেয়। সেই সঙ্গে দলটির সাত সংসদ সদস্যের পদত্যাগের ঘোষণা দেয়। সমাবেশ নিয়ে বিএনপি অনড় অবস্থান থেকে সরে আসার পর সেটা দলটির পরাজয় হিসেবে তুলে ধরে ক্ষমতাসীনরা।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আগামী সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। তার আগে দেশের দুটি বড় দল একেবারে বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে। বিএনপির ১০ দফা দাবি সরকার ও ক্ষমতাসীনরা বিবেচনা করবে কি না, এই কৌতূহল সব মহলে রয়েছে। এ নিয়ে গতকাল রবিবার আওয়ামী লীগের অবস্থান জানার চেষ্টা করেছে দেশ রূপান্তর।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে নিঃশর্তভাবেই আসতে হবে। সংবিধানের বাইরে একচুলও সরবে না সরকার।
বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের একধরনের সংলাপ আয়োজন করে নির্বাচনে বিএনপিকে আনতে হবে এমন একটি আলোচনা বিভিন্ন মহলে রয়েছে। এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের ওই নেতারা বলেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিএনপি সেই পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি করতেও পারবে না।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ওই নেতারা বলেন, দফার রাজনীতি জনগণ আগেও দেখেছে, ভবিষ্যতেও দেখবে। তারা দাবি করেন, বিএনপির ১০ দফায় দেশের ও জনগণের কোনো কথা নেই। ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার কথা আছে। জনগণের কথা না থাকায় জনগণ যেমন আমলে নেয়নি, তাই আওয়ামী লীগও বিএনপির ১০ দফাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
বিএনপির এই ঘোষণাকে তাদের দলের নেতাকর্মীকে চাঙা করার একটি কৌশল মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশে ছয় দফা ও ১১ দফা ছাড়া জনগণ অন্য কিছু চেনে না। এগুলো মাইলস্টোন। কারণ ওইগুলোতে জনগণের কথা, দেশের কথা তুলে ধরা হয়েছে। শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে নিপীড়িত মানুষের স্বপ্ন ছিল ছয় দফা ও ১১ দফার ভেতরে। বিএনপির এই ১০ দফায় নতুন কিছুই নেই।’
বিএনপির ১০ দফায় কিছুই নেই দাবি করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, দন্ড-প্রাপ্তদের মুক্তির কথা বলা হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি। যে মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি সেই মামলায় নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে ৮ বছর আইনি লড়াই করেছেন। কিন্তু নির্দোষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তার ছেলে তারেক রহমান দন্ডপ্রাপ্ত আসামি। বিদেশে পালিয়ে আছেন।
হানিফ বলেন, ‘তারেক রহমান হত্যা-খুন ও দুর্নীতি করেছেন হাওয়া ভবন সৃষ্টি করে। তিনি কি কখনো রাজনীতি করেছেন? তিনি কি রাজনীতিবিদ? সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পুত্র, এই হলো তার পরিচয়। যে আইন-আদালত বিচার করেছে এবং দন্ড দিয়েছে। তাদের মুক্ত করা মানে দেশে আইন-আদালত থাকবে না, এই তো তাদের দফায় বলা হয়েছে।’
বিএনপির ১০ দফার আরেকটি হলো ’৭৪-এর আইন বাতিল করা। এ-সম্পর্কে হানিফ বলেন, তারাও তো রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। তখন কেন করেনি। তিনি বলেন, বিএনপির আরেক দফায় বলা হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করার কথা। খালেদা জিয়া নিজেই বহুবার দাবি করেছেন, দেশে পাগল ছাড়া নিরপেক্ষ কেউ নেই। ফলে এই দাবি তো বিএনপির স্ববিরোধী অবস্থান। বিএনপির দাবিগুলোতে প্রকারান্তরে জঙ্গিদের মুক্তি চাওয়া হয়েছে। জঙ্গি বিএনপি এবং তারেকের সৃষ্টি। জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক বিএনপি দেশের মানুষকে অনিরাপদে রাখতে চায় বলেই তাদের মুক্তি চেয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপির দাবিনামায় একটি দলের একটি গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার কথাই শুধু রয়েছে, সেটিকে আওয়ামী লীগ গুরুত্ব দিতে পারে না।
দলটির অপর সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেখানে জনগণের স্বার্থ নিহীত থাকে না, সেখানে জনগণের সমর্থন পাওয়া যায় না। তাই বিএনপি ঘোষিত এই দফা বা দাবি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার, আওয়ামী লীগের মনোযোগ পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।