
মুক্তিযুদ্ধের ১৬টি সফল মিশনের বিস্তারিত ধারাবাহিকভাবে লিখছেন সালেক খোকন
যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা দুলাল। আব্দুল গফুর সরদার ও আয়েশা গফুরের সপ্তম সন্তান। বাড়ি বরিশালের হিজলার হরিনাথপুরে। বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে তার বেড়ে ওঠা কুষ্টিয়া-যশোর অঞ্চলে। ১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন আলমডাঙ্গা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র।
কীভাবে এবং কেন তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেন? সেই গল্প জানতে চাই আমরা। তিনি বলেন, আমার বড় দুলাভাই চাকরি করতেন খুলনা কোকোনাট প্রসেসিং মিলে। তিনি পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ৩ মার্চ ১৯৭১। খুলনায় একটা মিছিল সার্কিট হাউজের কাছে পৌঁছালে গুলি চালায় পাকিস্তানি সেনারা। শহীদ হন তিনি। এ খবর আমাদের মনে ঝড় তোলে। বোনের মুখটার দিকে তাকাতেই পারি না।
কী করলেন তখন? দুলালের উত্তর ধারণা ছিল কিছু একটা ঘটবে। হান্নান ভাই প্রথম ট্রেনিংয়ের উদ্যোগ নেন। স্কাউট ট্রেনিং ছিল আমার। আনসারদের কাছ থেকে রাইফেল চালানোও শিখে নিয়েছিলাম। স্কুল থেকে চুরি করা এসিড বাল্ব দিয়ে এলজিইডির মাঠে শেখানো হলো ককটেল বানানো। কয়েকদিন পর হাসু আর হান্নান ভাই স্টেশনের জিআরপি পুলিশের কাছ থেকে কয়েকটা রাইফেল কেড়ে আনেন। তা দিয়েই আমরা আলমডাঙ্গায় পাহারা বসাই।’
৩০ মার্চ ১৯৭১। যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে এসে পাকিস্তানি সেনারা দখলে নেয় কুষ্টিয়া। এপ্রিলের ৭ তারিখে তারা পজিশন নেয় আলমডাঙ্গা থানায়। ওই দিনই আবুল হোসেনসহ ৮-১০ জনকে ওরা ধরে নিয়ে যায় হাটবলিয়া ফেরিঘাটের সামনে। গুলি করে তাদের হত্যা করা হয়। আলমডাঙ্গায় ওটাই প্রথম গণহত্যা।
এরপরই দুলালরা ট্রেনিংয়ে চলে যান। তাদের ট্রেনিং হয় বিহারের চাকুলিয়ায়। আটাশ দিনের ট্রেনিংয়ে শেখানো হলো থ্রি নট থ্রি রাইফেল, এসএমজি, এসএলআর, গ্রেনেড, মাইন, মর্টার, রকেট লঞ্চার প্রভৃতি চালানো। তার এফএফ (ফ্রিডম ফাইটার) নম্বর ২১২৭। ট্রেনিং শেষে আট নম্বর সেক্টরের আলমডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ করেন তিনি।
আলমডাঙ্গা অপারেশনের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন অভিযানের আদ্যোপান্ত রোজার মাস তখন। আমরা বৃহত্তর কুষ্টিয়ার আলমডাঙ্গা, মেহেরপুর এলাকায়। আলমডাঙ্গায় ছিল পাকিস্তানি মিলিশিয়া বাহিনী। তারা সবাই পাঞ্জাবি। ছিল কালো ড্রেস পরা রাজাকাররাও। বিহারির সংখ্যাও ছিল অনেক। পাকিস্তানি আর্মি আসত মাঝেমধ্যে। ঈদের দিনে আমরা আলমডাঙ্গা শহর অ্যাটাক করার পরিকল্পনা করি। তখন ঈদগাহে সবাইকে এক জায়গায় পাওয়া যাবে। আমাদের চারটা গ্রুপের সঙ্গে মরফত, কামাল ও আবদার ভাইয়ের দলসহ কয়েকটা গ্রুপ যোগ দেয়।
১১ নভেম্বর ১৯৭১। সন্ধ্যাবেলা। কুমার নদের ওপারে কুঠিবাড়ির কাছে পাওয়ার স্টেশনটি আমরা উড়িয়ে দিই। চুয়াডাঙ্গার দক্ষিণে যেন আর্মি আসতে না পারে সে জন্য সেখানকার রেললাইন ধ্বংস করা হয়। পরিকল্পনা করে কুষ্টিয়া থেকে আলমডাঙ্গাকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। আমরা পজিশনে থাকি আলমডাঙ্গার চারদিকে।
শহরের ভেতরটা রেকি করতে হবে। ১২ নভেম্বর ভোরে চারজনকে নিয়ে নান্নু ভাই শহরে ঢুকলেন। আমরা তার অপেক্ষায় থাকি। সময় সকাল ৯টা। হঠাৎ গুলির শব্দ। ভেতরে কিছু একটা হয়েছে। নান্নু ভাইকে উদ্ধার করতে হবে। আমরা কুমার নদ দিয়ে আলমডাঙ্গা শহরে ঢুকি। চারদিক থেকে অন্যরাও এগোতে থাকে। সোনালী ব্যাংকের পাশ থেকে চাঁদতারার (একটি জায়গার নাম) দিকে ফায়ার করি আমরা। ওখানে রাজাকাররা ছিল। খানিক এগোতেই নান্নু ভাইকে পাওয়া গেল। তার গ্রুপটি আগেই এক রাজাকারকে গুলি করে মেরেছে। চারদিকের আক্রমণে রাজাকার ও মিলিশিয়ারা আশ্রয় নেয় আলমডাঙ্গা থানায়। সেখানকার বাঙ্কারে অবস্থান নিয়ে তারা বার্স্ট ফায়ার চালাতে থাকে।
হান্নান ভাইসহ আমরা তিনজন ছিলাম অ্যাডভান্স পার্টিতে। একটা বাড়িতে পজিশন নিয়ে থানার দিকে ফায়ার করছি। তখন মধ্য দুপুর। নান্নু ভাই গার্লস স্কুলের পাশ দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করে। কিন্তু একটি গুলি এসে লাগে তার মাথায়। কয়েকটা ঝাঁকি দিয়েই তার শরীরটা নিথর হয়ে যায়। একইভাবে গুলিতে মারা যায় বজলু ডাক্তারও। হাসু ভাই ঢুকছিলেন ডাকবাংলোর পাশ দিয়ে। ওখানে মিলিশিয়ারা মুক্তিযোদ্ধাদের বেশ ধরে ছিল। মুক্তিযোদ্ধা ভেবে তিনি কাছে যেতেই বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে মারে ওরা। আনসার ভাই গুলি খান চাঁদতারার ওখানে। ওটা ছিল একটা আরবান ফাইট।
প্রচ- গোলাগুলি চলছে। আমাদের দৃষ্টি থানার দিকে। ডানে পোস্ট অফিসের কাছে যে একটা বাঙ্কার আছে সেটা বুঝতে পারিনি। ওরা ওঁৎ পেতে ছিল। আমাকে টার্গেট করে ওরা গুলি ছোড়ে। আমিও পাল্টা জবাব দেব। হঠাৎ মনে হলো ধাক্কা খেলাম। হাত থেকে এসএলআরটা পড়ে গেল। গুলি আমার মুখে লাগার কথা। কিন্তু তখন ম্যাগজিনটা কাট করছিলাম। এসএলআরটা মাঝখানে থাকায় গুলিটা প্রথম লাগে এসএলআরের বডিতে। স্পিøন্টার ঢুকে যায় ডানহাতের কবজিতে। ফলে হাড্ডি ভেঙে মাংস বেরিয়ে যায়। চামড়া ঝলসে গিয়ে রগগুলো গাছের শেকড়ের মতো ঝুলতে থাকে। রক্তে ভিজে যায় গোটা হাত।
তখনো জ্ঞান ছিল মুক্তিযোদ্ধা দুলালের। জীবন বাঁচানোর প্রাণান্ত সংগ্রাম তখনো শেষ হয়ে যায়নি। নিজেকে বাঁচানোর সে কাহিনী বড় করুণ, বড় কষ্টের। সে-সময়ই চুয়াডাঙ্গা থেকে পাকিস্তানি আর্মি মুহুর্মুহু গুলি ছুড়তে ছুড়তে আলমডাঙ্গার দিকে আসে। গুলিবিদ্ধ ও রক্তাক্ত দুলাল আশ্রয় নেন আলমডাঙ্গার এক কবরস্থানে। পাকিস্তানি সেনাদের ভয়ে পুরনো একটি কবরে সারা রাত লুকিয়ে রাখেন নিজেকে। মৃত মানুষই নয়, একাত্তরে জীবিত মানুষেরও ঠাঁই হয়েছিল কবরে!
স্মৃতির সেই কথা বলতে গিয়ে চোখে পানি আসে দুলালের। বলেন, হাতের ব্যথায় আমি গোঙাচ্ছিলাম। নওশের আমাকে কাঁধে তুলে নিয়ে যায় এরশাদপুর গ্রামে। সেখানেও ডাক্তার নেই। আমার হাত গামছা দিয়ে বাঁধা। সহযোদ্ধারা মসজিদের খাটিয়ায় তুলে নেয় আমাকে। সাদা কাপড়ে ঢাকা থাকে খাটিয়াটি। যেন লাশ আমি। বেলগাছির ওহাব মেম্বারের বাড়িতে মেলে গ্রাম্য চিকিৎসা। তাতেও কাজ হয় না। পরে গরুর গাড়িতে করে নেওয়া হয় পাচুরিয়া গ্রামের বিলে। আমার হাত তখন পচতে শুরু করেছে। গন্ধে কেউ কাছে আসে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সঙ্গে ছিলেন লালচান আর শহীদুল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা পালকিতে করে আমাকে বর্ডার পার করেন। চিকিৎসা হয় করিমপুর ফিল্ড হাসপাতালে। আমার হাতে গ্র্যাংগ্রিন হয়ে গিয়েছিল। চিকিৎসা হলেও এখনো ডান হাতের আঙুলগুলো পুরোপুরি সোজা করতে পারি না। তিনটি আঙুল অবশ। চামড়ায় ব্যথা হয় মাঝেমধ্যেই। কষ্ট হয় অনেক। হাতের দিকে চোখ পড়লে এখনো একাত্তর মনে পড়ে যায়।
ওইদিন দুলালরা আলমডাঙ্গা দখলে নিলেও ধরে রাখতে পারেননি। তবে ওই অপারেশন আলমডাঙ্গায় পাকিস্তানিদের শক্ত ভিতকে দুর্বল করে দেয়। মিলিশিয়া ও অনেক রাজাকার মারা যায়। পরে ৭ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা থেকে আলমডাঙ্গার দিকে পাকিস্তানি সেনাবহর অগ্রসর হলে মুক্তিযোদ্ধারা অসীম সাহসে প্রাণপণ যুদ্ধে লিপ্ত হন। মুক্তিযোদ্ধাদের মাইন বিস্ফোরণে অনেক পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। ৮ ডিসেম্বর সকালে আলমডাঙ্গা পুরোপুরি হানাদারমুক্ত হয়।
আলমডাঙ্গায় রক্তাক্ত হওয়া মুক্তিযোদ্ধা দুলালের কাছে আমাদের শেষ প্রশ্ন ছিল যে দেশের জন্য রক্ত দিলেন সে দেশ কি পেয়েছেন? তিনি বলেন, স্বাধীন ভূখ- পেয়েছি। কিন্তু চেয়েছিলাম একটা সমাজব্যবস্থা, যেখানে শোষিত-শাসক থাকবে না। সবাই মৌলিক অধিকার পাবে। দেশ অনেক উন্নত হয়েছে। কিন্তু ধনী-গরিবের বৈষম্যটাও অনেক বেড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় কেউ জিজ্ঞেস করেনি, আমার পাশে কে হিন্দু, কে মুসলমান। ধর্মটা এখন ব্যবহৃত হচ্ছে রাজনীতিতেও। স্বাধীন দেশে মানুষ দেখি না ভাই। দেখি কিছু হিন্দু আর মুসলমান। মানুষ কই?
বিএনপির সাত সংসদ সদস্যের পদত্যাগ রাজনীতিতে নতুন আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে। এ আলোচনার মূল বিষয় হচ্ছে তাদের পদত্যাগের সরকার কী ধরনের বিপদে পড়বে। সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক ফলাফল কী দাঁড়াবে?
গত শনিবার বিএনপি তাদের ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে সাত সংসদ সদস্যের পদত্যাগের ঘোষণা দেয়। গতকাল রবিবার তাদের মধ্যে ছয়জন স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। তাদের পদত্যাগ গ্রহণ করা হয়েছে। আরেকজনের পদত্যাগপত্র এখনো গ্রহণ করা হয়নি।
বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের সাত সংসদ সদস্যের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন করে সরকার চাপে পড়বে। তারা বলেন, পদত্যাগের মধ্য দিয়ে সরকারকে তারা আবারও বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছেন যে, এ সংসদ অবৈধ ও অকার্যকর।
বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, গত বৃহস্পতিব ও শুক্রবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠক থেকেই দলীয় সংসদ সদস্যদের ফোনে সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলা হয়, শনিবার সংসদ বিলুপ্ত করে সরকারের পদত্যাগের দাবিসহ ১০ দফা দাবি জানানো হবে। সেখানে বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ না করলে তা স্ববিরোধিতা হয়ে যায়।
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর বিএনপি প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় নির্বাচন দাবি করে। এ নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে তাদের সংসদ সদস্যরা সংসদে যোগ দেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যোগ না দেওয়ায় তার আসন শূন্য ঘোষণা করে উপনির্বাচন করা হয়। শেষ পর্যন্ত সংসদে বিএনপির প্রতিনিধির সংখ্যা দাঁড়ায় সাত। এরপরও বিএনপি বরাবর বলে আসছিল এ সরকার অবৈধ। কিন্তু সংসদে প্রতিনিধি থাকায় এতদিন তাদের এমন দাবি ক্ষমতাসীনরা গ্রাহ্য করেনি।
এখন বিএনপির সাত সংসদ সদস্য পদত্যাগ করায় তাদের সাতটি আসন শূন্য হচ্ছে। গেজেটের পর নির্বাচন কমিশন আসন শূন্য ঘোষণা করে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন দেবে। সংবিধান অনুযায়ী সেটাই এখন করণীয়।
বিভিন্ন মহলে সংসদ থেকে বিএনপির পদত্যাগের ফলাফল নিয়ে দুই ধরনের আলোচনা রয়েছে। এক হলো প্রতিনিধিত্ব যতই কম হোক, দলটির সংসদ সদস্যরা সরকারের সমালোচনায় সরব ছিলেন। এটা মানুষের মধ্যে সাড়া ফেলত। গণমাধ্যমেও তাদের বক্তব্য গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হতো। এখন আর তাদের সে সুযোগ নেই। তবে কেউ কেউ বলছেন, বিএনপির প্রতিনিধিত্ব না থাকায় সংসদ একতরফা হয়ে যাওয়ায় গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে। সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক মহলের চাপও তৈরি হবে।
তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, সংসদে বিএনপির অবস্থান এতই কম যে, ওই অংশের পদত্যাগ বড় কোনো জটিলতা তৈরি করবে না। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, সাংবিধানিক কোনো সংকট বা সংসদে জটিলতা সৃষ্টি করার মতো ঘটনা এটা নয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলেন, বিএনপি তো সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছে। বিদেশিরা তো সংবিধান ও আইনের বাইরে যাওয়ার চাপ দিতে পারে না। সংখ্যায় বেশি হলে বা সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রশ্নে বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ নানা সংকট তৈরি করত।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের ১০ দফার প্রথম দাবি হচ্ছে এই অবৈধ সংসদ বাতিল করতে হবে। এ দাবির প্রথম অ্যাকশন হিসেবে আমাদের সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করেছেন। তাদের এ পদত্যাগে দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবশ্যই প্রতিক্রিয়া হবে। সেটি হবে বলেই তো তারা পদত্যাগ করেছেন। এ প্রতিক্রিয়া শিগগিরই দেশবাসী দেখতে পাবে।’
সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য জিএম সিরাজ বলেন, ‘আমরা সাতজন নির্বাচিত সংসদ সদস্য সংসদে ছিলাম। আমরা স্ববিরোধী অবস্থানে রয়েছি, এমনটা অনেকেই বলতেন। আমাদের সংসদে যাওয়া ছিল দলীয় কৌশলের অংশ। এখন পদত্যাগ করলাম, সেটিও দলের সিদ্ধান্তে।’
বিএনপির পদত্যাগের ফলাফল কী হতে পারে সে বিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির সাত সংসদ সদস্যের পদত্যাগে এ সংসদের কার্যক্রমে কোনো প্রভাব পড়বে না। কিন্তু এ সংসদ তো আগে থেকেই একতরফা ছিল। এখন এ সংসদের গুরুত্বহীনতা আরেকটু বাড়ল।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক ধারায় আগে থেকেই ঘাটতি ছিল। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নির্বাচন ও সংসদ প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। ফলে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ আরও প্রকট হয়ে উঠবে।’
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে এখন পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো তারা নিজের আলোয় সবকিছু দেখতে চায়। ভারত বা অন্য কোনো দেশের দৃষ্টিতে তারা আর বাংলাদেশকে দেখতে চায় না। এ সরকার ভারতের সমর্থন নিয়ে টিকে আছে সেটা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায় পরিষ্কার। কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে নিজেরাই সবকিছু দেখভাল করছে।’
গত বছর ১০ ডিসেম্বরের নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই ১০ ডিসেম্বর যখন বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি নিয়ে নানা ঘটনা ঘটল তখন পশ্চিম দেশগুলোর কয়েকটি এমনকি জাতিসংঘও স্টেটমেন্ট (বিবৃতি) দিল। এর অর্থ হচ্ছে, পশ্চিমা দেশগুলো এখন বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য বিএনপির সাত সংসদের পদত্যাগ অবশ্যই বহির্বিশ্বে গুরুত্ব বহন করবে।’
তিনি জানান, বিএনপি ১০ দফার যে দাবি দিয়েছে সেটি দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য নয়, বরং বিএনপি আওয়ামী লীগের সমঝোতার একটি মাধ্যম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ প্রস্তাব নিয়ে তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে দুই দল আলোচনা করে একটি পন্থা বের করে সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাবে বলেও তিনি মনে করেন।
সংসদ থেকে বিরোধী দলের পদত্যাগের ঘটনা আগেও ঘটেছে। বিএনপির শাসনামলে ১৯৯৪ সালে আওয়ামী লীগ ও সরকারবিরোধী দলগুলো সংসদ থেকে পদত্যাগ করে। তবে তাদের পদত্যাগ গ্রহণ করা হয় সাত মাস পর। এর ধারাবাহিকতায় বিএনপি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনও করে।
এখন একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে দলের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ তেমন কোনো জটিলতা সৃষ্টি করবে না। সংবিধান ও সংসদ অনুযায়ী যা করার তাই করবেন স্পিকার।’
বিএনপি সংসদে না থাকলে কী হতে পারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পদত্যাগের মধ্য দিয়ে এ মুহূর্তে বিএনপির লাভ-লোকসান কিছু হয়নি। রাজনৈতিক কোনো সুফল পাবে সেটাও মনে হয় না। তবে সংখ্যা কম হলেও সংসদে উপস্থিত থেকে তারা যে বক্তব্য দিতেন সেটা সংসদে লিপিবদ্ধ হতো, দেশ-বিদেশে, গণমাধ্যমে প্রকাশ হতো। জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণের এ সুযোগটি তারা হারাবেন।’
তিনি মনে করেন, ‘এ সাতজনের পদত্যাগের মধ্যে দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়নি। কারণ তারা দলের শীর্ষ ১০ বা ২০ জনের কেউ নন। আজকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো নেতারা সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে আলোড়ন তৈরি হতো।’
আসন শূন্য হওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব জাহাঙ্গীর আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে যেভাবে কার্যক্রম চালানোর বিষয়ে ক্ষমতা দিয়েছে, কমিশন সেটি করবে।’
নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্র বলছে, পদত্যাগের পর সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা হলো ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো এক বছরেরও কিছু সময় বেশি বাকি রয়েছে। তাই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন হলেই ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে উপনির্বাচন দিতে হবে। তবে বিভিন্ন কারণে আরও সময়ক্ষেপণ করা যায়।
শূন্য আসনে উপনির্বাচন করতেই হবে সেটি আরও পরিষ্কার করেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে হলে ইসিকে তিন মাসের মধ্যে উপনির্বাচন করতেই হবে। এ নিয়ে সংবিধানে অন্য কোনো রাস্তা নেই।’
যুক্তরাষ্ট্রের বিজনেস ম্যাগাজিন ফোর্বসের বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪২তম স্থানে আছেন। গত বছর তিনি ৪৩তম স্থানে ছিলেন।
ফোর্বসের তালিকায় ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেনকে বিশে^র সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে আছেন ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ক্রিস্টিনা লাগার্দে এবং তৃতীয় স্থানে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
শেখ হাসিনার বিষয়ে ফোর্বস উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে চতুর্থ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। তার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৮৮টিতে জয়লাভের পর তিনি চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হন, যা তার টানা তৃতীয় মেয়াদও।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, তিনি খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তার মতো বিষয়গুলোতে আরও ফোকাস করার পরিকল্পনা করেছেন।
গত ৯ ডিসেম্বর যখন তালিকাটি প্রকাশ করা হয়, তখন ফোর্বস জানায়, বাংলাদেশে দৃঢ় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা শেখ হাসিনার একটি চলমান সংগ্রাম।
তালিকার ৩৬তম স্থানে আছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ। তিনিসহ ভারতের ৬ জন এ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে ইরানের জিনা মাসা আমিনিকে মরণোত্তর প্রভাবশালী তালিকায় ১০০ নম্বরে স্থান দেওয়া হয়েছে। ২০০৪ সাল থেকে প্রতি বছর ফোর্বস ম্যাগাজিন বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাধর নারীর তালিকা প্রকাশ করে আসছে।
বয়স তার ৩৭। তার চেয়ে অনেক কম বয়সে অনেক তারকা বুটজোড়া তুলে রেখে সাবেক বনে গেছেন। লুকা মদ্রিচ অবশ্য বয়সের কাছে হার মানার পাত্র নন। লাজুক বলে ছোটবেলায় উপেক্ষিত মদ্রিচ এখন ক্রোয়েশিয়ার সর্বকালের সেরাদের একজন। তবে সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে দেশকে এনে দিতে হবে অধরা বিশ্বকাপ শিরোপা। চার বছর আগে হয়নি। এবার না হলে মুকুটহীন সম্রাট হয়েই বিশ্বকাপকে বিদায় জানাতে হবে। মদ্রিচের স্বপ্ন বেঁচে গেলে হতাশার সাগরে ভেসে যাবে ফুটবল দুনিয়া। ফাইনালের মঞ্চে যাওয়ার আগে ক্রোয়াটদের হারাতে হবে বিশ্বফুটবলের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে। মদ্রিচের স্বপ্ন বেঁচে যাওয়া মানেই সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী মেসির শূন্য হাতে প্রস্থান।
এই বুড়ো বয়সেও দিব্যি ১২০ মিনিট একই ছন্দে, একই তালে খেলে যাচ্ছেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা মদ্রিচ। মেসিরও বয়স ৩৫। তার খেলাতেও নেই বয়সের ছাপ। এই বিশ্বকাপেই দুই অধিনায়ক টেনে নিচ্ছেন দুদলের মহাভার। মেসি গোল করছেন এবং করাচ্ছেনও। আর মদ্রিচ বল জোগান দেওয়ার অন্যতম দায়িত্বটা পালন করছেন সুচারুভাবে।
প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনা হলেই মদ্রিচের ভাবনায় চলে আসে ১৬ বছর আগের স্মৃতি। আলবিসেলেস্তাদের বিপক্ষেই আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছিল মদ্রিচের। সুইজারল্যান্ডে প্রীতিম্যাচে আর্জেন্টাইনদের হারিয়ে দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া ৩-২ গোলে। সেই ম্যাচে জয় না পাওয়া আর্জেন্টিনার হয়ে গোল করেছিলেন মেসি। মদ্রিচ আর তার দলের কাছে গত বিশ্বকাপেও বড় হারের তেতো স্বাদ পেতে হয়েছিল মেসিদের। ৩-০ গোলের জয়ে মদ্রিচও করেছিলেন এক গোল। সেই হারটা বড় ক্ষতি করে দেয় আলবিসেলেস্তাদের। গ্রুপ রানার্স-আপ হওয়ায় তাদের মুখোমুখি হতে হয় ফ্রান্সের। শেষ পর্যন্ত ফরাসিদের কাছে ৪-৩ গোলে হেরে বিদায় নিতে হয়।
এবার অবশ্য দুদল মুখোমুখি হচ্ছে আরও বড় মঞ্চে। আর্জেন্টিনার সামনে এক আসর পরে ফাইনালে ওঠার হাতছানি। ক্রোয়েশিয়ার লক্ষ্য টানা দ্বিতীয় ফাইনাল। দুদল যখন মুখোমুখি, তখন তাদের ভাবনায় চলে আসবে দুদলের দুই মহানায়ক মেসি এবং মদ্রিচ। দুজনেরই এটা শেষ বিশ্বকাপ। তাই আগামীকাল বিশ্বকাপের আকাশ থেকে আরেকটি নক্ষত্রের পতন অনিবার্য এবং অবশ্যই শূন্য হাতে। খ্যাতি, প্রতিভা ও প্রাপ্তিতে মেসির ধারেকাছে নেই মদ্রিচ। তবে মদ্রিচ নিজের মতো করেই রিয়াল মাদ্রিদকে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন গেল এক দশক।
দুজনের এবারের লড়াইটা ভিন্ন রকম শেষের বাঁশি বাজিয়ে কাতারে এসেছেন বলেই। দুজনই চান, যে করেই হোক মর্যাদার শিরোপাটা জিততে। তাই লুসাইলে লড়াইটা হবে ভিন্নমাত্রার। ক্রোয়েশিয়া পরপর দুম্যাচে টাইব্রেকারের ভাগ্য নিজেদের করে নিয়ে সেমিফাইনালে এসেছে। জাপানকে দ্বিতীয়পর্বে হারানোর পর তারা পাঁচবারের ব্রাজিলকে কাঁদিয়েছে। গোলকিপার ডমিনিক লিভাকোভিচ দুটি ম্যাচেই অসাধারণ সব সেভে দলকে জিতিয়েছিলেন। ডাচদের টাইব্রেকারে হারিয়ে আর্জেন্টিনাকে সেমিতে এনেছেন গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। দুটি সেভ করে তিনি যেমন মেসির শিরোপা স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছেন। ঠিক তেমনই আর্জেন্টিনার বিপক্ষে আরেকবার জ্বলে উঠে লিভাকোভিচও পারেন তাদের মধ্যমণি মদ্রিচের অধরা স্বপ্ন টিকিয়ে রাখতে।
এমি মার্তিনেজও নিশ্চয় চাইবেন না যার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত, সেই মেসির শূন্য হাতে বিদায়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার। গতকাল রবিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
স্বাভাবিক নিয়মে প্রশাসন ক্যাডারের সবচেয়ে সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে কবির বিন আনোয়ারেরই এ পদে বসার কথা। কিন্তু বরিশালের রাজনৈতিক ঘটনায় অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে কবির বিন আনোয়ারের সরকারি কর্মকর্তাদের পক্ষে শক্ত অবস্থানের কারণে তা অনিশ্চিত বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তার ওপরই আস্থা রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কবির বিন আনোয়ার শিগগিরই অবসরে যাবেন। এর আগেই তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে এ পদেই বহাল রাখা হবে বলে জানা গেছে।
কবির বিন আনোয়ার বিদায়ী মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম অবসরোত্তর ছুটিতে যাচ্ছেন ১৫ ডিসেম্বর।
২০১৮ সাল থেকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের দায়িত্ব সামলানো কবির বিন আনোয়ার দেশের ২৩তম মন্ত্রিপরিষদ সচিব হচ্ছেন।
১৯৮৮ সালে সহকারী কমিশনার হিসেবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) যোগ দেন কবির বিন আনোয়ার। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপসচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসক) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন কবির বিন আনোয়ার। তার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে এমএ করে পরে এলএলবি ডিগ্রিও নেন। বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের সপ্তম ব্যাচের কর্মকর্তা তিনি। বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক ছাড়াও বিভিন্ন পুরস্কারে পেয়েছেন কাজের স্বীকৃতি।
পেশাগত কাজের বাইরে কবির বিন আনোয়ার বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক কর্মকা-ের সঙ্গেও যুক্ত। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশেনের সভাপতি এবং বাংলাদেশ ইয়োগা অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটি, সুন্দরবন সংরক্ষণ কমিটি এবং বাংলাদেশ স্কাউটের সঙ্গেও তিনি যুক্ত রয়েছেন।
কবির বিন আনোয়ার লেখালেখির সঙ্গেও যুক্ত। বিশ্ব ধারা মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম (সংকলন-১), বিশ্ব ধারা মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম (সংকলন-২), বিস্মৃত মুসলিম মানস, রূপসী বাংলা (১ম খণ্ড), প্রযুক্তি বদলে দিল যারা, অপরূপ বাংলাদেশ (১ম খন্ড) তার উল্লেখযোগ্য বই।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব পদেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন মুখ্য সচিব হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। আর সচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন। মুখ্য সচিব পদে তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বিদায়ী মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। আহমদ কায়কাউস বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। পরবর্তী তিন বছরের জন্য তিনি ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে যাচ্ছেন। এ জন্য মুখ্য সচিবের পদমর্যাদায় তাকে চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
আর মাত্র চারটি ম্যাচ, তারপর আবার চার বছরের অপেক্ষা। অনেক জল্পনা-কল্পনার ফানুশ উড়িয়ে, স্বপ্নের রং মেখে যে বিশ্বকাপ গড়িয়েছিল মাঠে; এক মাসের রাত জাগার অবসান ঘটিয়ে আর মাত্র কয়েকদিন পরই তার সমাপ্তি। ৩২ দলের আসরে শিরোপার লড়াইতে টিকে আছে মাত্র ৪ দল, প্রত্যেকের সামনেই দুটো করে ম্যাচ। দুই দল খেলবে ফাইনালে, আর সেমিফাইনালে হেরে যাওয়া দুই দল খেলবে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, নেইমার, হ্যারি কেইন ফুটবলের দুনিয়ায় বাঘা বাঘা সব নাম। আসর শুরুর আগে তাদের কার হাতে উঠবে শিরোপা, কে পাবেন সোনার জুতো আর কে জিতবেন সোনার বল; এই নিয়ে ভক্তদের তর্ক আর আলোচনা কম হয়নি। কিন্তু কাতার তাদের তিনজনকেই ফেরাল খালি হাতে। রোনালদো আর নেইমার মাঠ ছেড়েছেন কান্নায়, কেইনের চোখে হয়তো পানি দেখা যায়নি, তবে ভেতরে ভেতরে ঠিকই পুড়ছেন অন্তজ্বালার দহনে।
ব্রাজিল, পর্তুগাল আর ইংল্যান্ড; তিন দলই বিদায় নিয়েছে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। পরপর দুই রাতে তিন দলের তিন সুপারস্টারের বিদায়ে বিশ্বকাপ কিছুটা হলেও রং হারিয়েছে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর এটাই ছিল শেষ বিশ্বকাপ। আসর শুরুর আগে পিয়ার্স মরগ্যানকে এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন রোনালদো, যেখানে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ ও মালিকপক্ষকে নিয়ে ছিল অনেক চাঁচাছোলা মন্তব্য। ফলে বিশ্বকাপের মধ্যেই রোনালদোর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ম্যানইউ। পর্তুগালের কোচ ফার্নান্দো সান্তোসের সঙ্গেও সম্পর্কটা খারাপ গেছে রোনালদোর। শুরুর একাদশে জায়গা না দেওয়াসহ নানান বিতর্কে পর্তুগাল দলের সঙ্গে রসায়নটা আর ঠিক থাকেনি রোনালদোর। তবুও মরক্কোর সঙ্গে ম্যাচটা শেষে রোনালদো যখন কাঁদতে কাঁদতে টানেল দিয়ে বেরিয়ে যান, সেই দৃশ্যটা দেখে ভক্তরাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। নিজের শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচে রোনালদো মাঠে নেমেছিলেন ৫১ মিনিটে, রুবেন নেভাসের বদলি হিসেবে। সেটা ছিল রোনালদোর ১৯৬টা আন্তর্জাতিক ম্যাচ, কুয়েতের বাদের আলমোতাওয়াহ’র সঙ্গে যৌথভাবে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার রেকর্ডটা ছোঁয়ার দিনেই কান্নাভেজা চোখে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। কারণ অ্যাটলাসের সিংহদের যে হারানো যায়নি! বিপজ্জনক ক্রসগুলোতে লাফিয়ে মাথা ছোঁয়ানো হয়নি রোনালদোর, তার আগেই যে সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল ইয়াসিন বনুর হাত।
ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরে যাওয়ার পর মাঠের ভেতর কান্নায় ভেঙে পড়েন নেইমারও। চোট কাটিয়ে ফিরেছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে, ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ে যে গোলটা করেছিলেন সেটা বিশ্বকাপের সেরা গোলের তালিকায় নিঃসন্দেহে থাকবে। তবুও নেইমারকে কান্নাভেজা চোখে বিদায় বলতে হয়েছে বিশ্বকাপকে। অথচ এবারই ছিল সেরা সুযোগ। বয়স ৩০, দলে সতীর্থরা সব রিয়াল মাদ্রিদ নয়তো বার্সেলোনা, ম্যানইউ, টটেনহ্যামের মতো বড় বড় ক্লাবে দারুণ ছন্দে। জমাট রক্ষণ, ধারালো আক্রমণ সবই ছিল ব্রাজিলের। ছিল না ভাগ্য। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ৩ মিনিটের অসতর্কতা ম্যাচের রং পালটে দিল আর টাইব্রেকারে স্নায়ুর চাপটা নিতেই পারল না সেলেসাওরা। পরের বিশ্বকাপে নেইমারের বয়স হবে ৩৪। যে হারে চোট আঘাতের শিকার হতে হয় নেইমারকে, বছর চারেক পর নিজের সেরা ছন্দে থেকে বিশ্বকাপটা খেলার মতো অবস্থানে আদৌ থাকবেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর আপাতত নেই। নিজের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে দীর্ঘ একটা পোস্ট দিয়েছেন নেইমার, সেখানে লিখেছেন, ‘আমি মানসিকভাবে একদম বিধ্বস্ত হয়ে গেছি। ১০ মিনিটের মতো সময় ধরে অসাড় হয়ে পড়েছিলাম। এরপর অবিরাম কান্না। এই হারের স্মৃতি আমাদের অনেক দিন তাড়িয়ে বেড়াবে। এই দলটার আরও বেশি সাফল্য প্রাপ্য ছিল।’
ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হ্যারি কেইনও পুড়ছেন পেনাল্টি মিসের অন্তজ্বালায়। ফ্রান্সের গোলরক্ষক হুগো লরি তার টটেনহ্যাম সতীর্থ এবং দীর্ঘদিনের বন্ধু। তার বিপক্ষে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে একটা পেনাল্টি মারার চাপ নিয়ে গোল করেছেন। কিন্তু পরের বার যখন ম্যাচের শেষ সময়ে আবার পেনাল্টি পেল ইংল্যান্ড, কেইন সেটা রাগবির কিকের মতো বক্সের অনেক ওপর দিয়ে উড়িয়ে মেরেছেন। কেইন নিজে চাপে থাকলে অন্য কোনো সতীর্থকে শট নিতে পাঠালে হয়তো এমন হয় না। ম্যাচের পর কেইন বললেন, ‘একেবারে বিধ্বস্ত অবস্থা। আমার জন্য আর দলের জন্য এটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন। আমরা ভালো খেলেছি, ভালো সুযোগও পেয়েছি কিন্তু ফুটবলে শেষ পর্যন্ত অনেক খুঁটিনাটি ব্যাপারই ব্যবধান গড়ে দেয়। অধিনায়ক হিসেবে এবং পেনাল্টি মিস করা নিয়ে আমি নিজে সম্পূর্ণ দায় নিচ্ছি।’
তাদের মতো বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে ভার্জিল ফন ডাইকেরও। বিশ্বের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার, একমাত্র ডিফেন্ডার হিসেবে উয়েফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জয়সহ অনেক অর্জনই আছে নেদারল্যান্ডসের অধিনায়কের। প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে এসেই দলনেতা, সেই গর্ব মুছে গিয়ে ফিরতি পথের সঙ্গী ব্যর্থতা। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচে মেসিকে আটকাতে পারেননি, নাহুয়েল মলিনাকে দেওয়া পাসের আগে দৌড়ের শুরুতে ফন ডাইককেই কাটিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন জাদুকর। পরে ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ায়, শুরুতেই স্পটকিক নিতে আসেন ফন ডাইক এবং এমিলিয়েনো মার্তিনেজ তার গোলটা বাঁচিয়েই পেয়ে যান আত্মবিশ্বাস। অভিষেক বিশ্বকাপেই ফন ডাইক দেখে ফেলেছেন বিশ্বকাপের নিষ্ঠুর দিকটাও।
ভাড়া করা বিমানে উড়িয়ে নিয়েও মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম ম্যাচে একাদশে রাখল না দিল্লি ক্যাপিটালস। আসরে তাদের শুরুটাও ভালো হলো না। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারল মোস্তাফিজবিহীন দিল্লি।
ঘরের মাঠে ৫০ রানের জয়ে আসর শুরু করল লক্ষ্ণৌ। ১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিল্লি থামে ৯ উইকেটে ১৪৩ রানে। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়ে লক্ষ্ণৌয়ের জয়ের নায়ক মার্ক উড।
এদিন দিল্লির ব্যাটিং ছিল পুরো ফ্লপ। দলের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ৪৮ বলে ৫৬ রান করেছেন। পাশাপাশি রাইলি রোশো ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু বাকিরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ফলে যা হরার তাই হলো ম্যাচের ফল।
এর আগে স্বাগতিক দলের হয়ে ঝড় তোলেন কাইল মেয়ার্স। এই ক্যারিবীয়ান ৩৮ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন। ২টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৭টি ছক্কা। এ ছাড়া নিকোলস পুরান ২১ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৩ রানের পুঁজি গড়ে লক্ষ্ণৌ।
গত অক্টোবরের পর আর্সেনালের জার্সিতে প্রথম গোলের দেখা পেলেন গাব্রিয়েল জেসুস। তার আবার জোড়া গোল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের জ্বলে ওঠার দিনে লিডস ইউনাইটেডকে উড়িয়ে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ফের আট পয়েন্টে এগিয়ে গেল আর্সেনাল।
ঘরের মাঠে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতে আর্সেনাল। স্পট কিকে দলকে প্রথম এগিয়ে দেন জেসুস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেন হোয়াইট ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এর খানিক পরই জোড়া গোল পূর্ণ করেন জেসুস।
এরপর লিডস একটি গোল শোধ করলেও গ্রানিত জাকার গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে ফেরার পর এটিই প্রথম ম্যাচ ছিল আর্সেনালের। বিরতিতে যাওয়ার আগে নিজেদের মাঠে একই ব্যবধানে তারা হারিয়েছিল ক্রিস্টাল প্যালেসকে।
এই জয়ে ২৯ ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল গানাররা। ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর প্রথমবার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্সেনাল। তাদের সঙ্গে গত লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ব্যবধান ৮।
গানারদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিটি। একই দিন তারাও নিজেদের মাঠে লিভারপুলকে উড়িয়ে দিয়েছে ৪-১ গোলে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।