
বিএনপির ৬ সংসদ সদস্যের আসন শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সংসদ সচিবালয়। গতকাল রবিবার বিকেলে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। বিএনপির আরেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের পদত্যাগপত্র ই-মেইলে পাঠিয়েছেন। তাই স্পিকার তাকে সশরীরে পদত্যাগপত্র জমা দিতে বলেছেন। সংসদ সচিবালয় হারুনের পাঠানো পদত্যাগপত্রের সই তার নিজের কি না, নিশ্চিত করতে পারেনি। এ কারণে তার আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়নি।
জারি করা প্রজ্ঞাপনে বগুড়া-৬, বগুড়া-৪, ঠাকুরগাঁও-৩, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও একটি সংরক্ষিত নারী আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়।
গণসমাবেশে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার এক দিন পর গতকাল স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির সাতজন সংসদ সদস্য। এর মধ্যে সশরীরে জমা দেওয়া পাঁচজনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এতে চলতি সংসদে বিএনপির পাঁচ আসন ইতিমধ্যে শূন্য হয়ে গেছে। বাকি দুজনের একজন ই-মেইল ও একজন বাহকের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র জমা দেন। তাই স্পিকার বলেছেন, তাদের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। এদিকে সংসদ থেকে বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের পর নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর জানিয়েছেন, গেজেট প্রকাশের পর ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচনের আয়োজন করবে কমিশন। এখন প্রজ্ঞাপন জারির ফলে এই ছয় আসনে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে ইসিকে।
এদিকে এর আগে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে সংসদের বাইরে এসে বিএনপি দলীয় সংরক্ষিত আসনের সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ‘সংসদ থেকে এই পদত্যাগের মধ্য দিয়ে আন্দোলন আরও জোরালো হবে। আমাদের এই পদত্যাগের ঘটনায় স্পিকার কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তবে সবকিছু সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশেই সম্পন্ন হয়েছে।’
গতকাল রবিবার সকাল ১১টা ২০ মিনিটে সংসদ ভবনে স্পিকারের দপ্তরে গিয়ে বিএনপির পাঁচ সংসদ সদস্য পদত্যাগপত্র জমা দেন। এই সম্পর্কে শিরীন শারমিন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তারা (বিএনপির সংসদ সদস্য) স্ব-স্ব স্বাক্ষরযুক্ত আমার কাছে সাত জনের পদত্যাগের আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন। পাঁচ জন সশরীরে ছিলেন, তাদেরটি গ্রহণ করা হয়েছে। সংবিধবানের ৬৭ (২) অনুযায়ী ওই আসনগুলো শূন্য হয়ে গেছে। বাকি দুই জনের আবেদন যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেব। স্পিকার বলেন, হারুনুর রশীদ পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন ই–মেইলে, তার সই স্ক্যান করে বসানো। এটা গ্রহণ করা হবে না, তাকে আবার পদত্যাগপত্র দিতে হবে।
স্পিকার এও বলেন, পদত্যাগপত্র সশরীরে এসে জমা দিতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
উল্লেখ্য, পূর্ব ঘোষণা মোতাবেক গতকাল সশরীরে পদত্যাগপত্র দেন বগুড়া-৬ আসনের গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের মো. আমিনুল ইসলাম, বগুড়া-৪ আসনের মো. মোশাররফ হোসেন এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা। এরমধ্যে বিদেশে থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশীদ এবং অসুস্থতার কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার সশরীরে উপস্থিত হতে পারেননি।
পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে শিরীন শারমিন বলেন, ‘আসন শূন্য হওয়ার গেজেট প্রকাশের পর তাদের কাছে (বিএনপির সংসদ সদস্য) পাঠানো হবে। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হবে।’
স্পিকার জানান, বিএনপির সাত সংসদ সদ্যস্যের মধ্যে আব্দুস সাত্তার অসুস্থ থাকায় এবং হারুনুর রশীদ বিদেশে থাকায় অনুপস্থিত রয়েছেন। সংসদ সচিবালয় আব্দুস সাত্তারের স্বাক্ষর মিলিয়ে দেখবে এবং তার সঙ্গে কথা বলবে। সব ঠিক থাকলে তার আবেদনও গৃহীত হবে। তবে ই-মেইলের মাধ্যমে দেওয়ায় হারুনুর রশীদের আবেদন গ্রহণ করা হবে না, তাকে পরে এসে জমা দিতে হবে।’
সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ বিষয়ে সংবিধানের ৬৭ (২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘কোনো সংসদ সদস্য স্পিকারের কাছে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদত্যাগ করিতে পারিবেন এবং স্পিকার কিংবা স্পিকারের পদ শূন্য থাকিলে বা অন্য কোনো কারণে স্পিকার স্বীয় দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে ডেপুটি স্পিকার যখন ওই পত্র প্রাপ্ত হন, তখন হইতে ওই সদস্যের আসন শূন্য হইবে।’
পদত্যাগ দিয়েই আন্দোলনের শুরু : বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, সংসদ থেকে এই পদত্যাগের মধ্য দিয়ে আন্দোলন আরও জোরালো হবে। এ-সময় তিনি পদত্যাগপত্র সাংবাদিকদের পড়ে শোনান। পদত্যাগপত্রে বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে চরম স্বৈরশাসন চলছে। বর্তমান সরকারের গণতন্ত্র ও গণবিরোধী কার্যকলাপে গণতন্ত্রহীনতা, বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ওপর দমন-পীড়ন, গণগ্রেপ্তার, গুম, হত্যা এবং মতপ্রকাশের বাকস্বাধীনতা হরণ, ভোটাধিকার ও মানবাধিকার হরণ সর্বোপরি মহান জাতীয় সংসদকে অকার্যকর করার প্রতিবাদে জনস্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণকারী এই সংসদের সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগ করে এই সংসদ বাতিলের গণদাবির সঙ্গে একমত পোষণ করছি এবং দলীয় সিদ্ধান্তের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে স্বেচ্ছায়, সুস্থ শরীরে, স্থির মস্তিষ্কে, অন্যের বিনা প্ররোচনায় গভীরভাবে চিন্তা ও বিবেচনার পর অদ্য ১০ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে সংসদ থেকে যার যার আসন থেকে পদত্যাগ করলাম।’
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে ভোটে অংশ নিয়েছিল। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ছয়জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে দলটির সংসদ্য সদস্যদের শপথ গ্রহণ নিয়ে টানাপড়েন দেখা দেয়। বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত মির্জা ফখরুল ইসলাম ছাড়া বাকি পাঁচজন তখন শপথ নেন। নির্ধারিত সময়ে শপথ না নেওয়ায় মির্জা ফখরুলের আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। সেখানে পরে নির্বাচনে জয়ী হন বিএনপির প্রার্থী জি এম সিরাজ। পরে সংরক্ষিত নারী আসনের একটি পায় দলটি।
গত শনিবার রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপি ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ করে। সেখানে দলটি ১০ দফা দাবি তুলে ধরে। তার মধ্যে ছিল সংসদ বিলুপ্ত করে সরকারের পদত্যাগ ও দলনিরপেক্ষ একটি অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন। ওই গণসমাবেশ থেকেই বিএনপির সাত সংসদ সদস্যের পদত্যাগের ঘোষণা আসে।
ইসির ভাষ্য : বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের কারণে আসনগুলো শূন্য ঘোষণার গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে সেগুলোতে উপনির্বাচন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমরা মিডিয়ায় (গণমাধ্যম) দেখেছি, ওনারা পদত্যাগ করেছেন। যদি সত্যিকার অর্থেই ওনারা পদত্যাগ করে থাকেন, তাহলে আসন শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে।’
উপ-নির্বাচন হলে কয়েক মাসের মধ্যেই আবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন, এ বিষয়টি সামনে আনলে এই কমিশনার বলেন, ‘এটা তো সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। আসন শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। ’
গেজেট প্রকাশ হওয়ায় নির্বাচন কমিশনকে এখন ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।
বিএনপির সাত সংসদ সদস্যের পদত্যাগ রাজনীতিতে নতুন আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে। এ আলোচনার মূল বিষয় হচ্ছে তাদের পদত্যাগের সরকার কী ধরনের বিপদে পড়বে। সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক ফলাফল কী দাঁড়াবে?
গত শনিবার বিএনপি তাদের ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে সাত সংসদ সদস্যের পদত্যাগের ঘোষণা দেয়। গতকাল রবিবার তাদের মধ্যে ছয়জন স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। তাদের পদত্যাগ গ্রহণ করা হয়েছে। আরেকজনের পদত্যাগপত্র এখনো গ্রহণ করা হয়নি।
বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের সাত সংসদ সদস্যের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন করে সরকার চাপে পড়বে। তারা বলেন, পদত্যাগের মধ্য দিয়ে সরকারকে তারা আবারও বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছেন যে, এ সংসদ অবৈধ ও অকার্যকর।
বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, গত বৃহস্পতিব ও শুক্রবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠক থেকেই দলীয় সংসদ সদস্যদের ফোনে সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলা হয়, শনিবার সংসদ বিলুপ্ত করে সরকারের পদত্যাগের দাবিসহ ১০ দফা দাবি জানানো হবে। সেখানে বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ না করলে তা স্ববিরোধিতা হয়ে যায়।
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর বিএনপি প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় নির্বাচন দাবি করে। এ নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে তাদের সংসদ সদস্যরা সংসদে যোগ দেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যোগ না দেওয়ায় তার আসন শূন্য ঘোষণা করে উপনির্বাচন করা হয়। শেষ পর্যন্ত সংসদে বিএনপির প্রতিনিধির সংখ্যা দাঁড়ায় সাত। এরপরও বিএনপি বরাবর বলে আসছিল এ সরকার অবৈধ। কিন্তু সংসদে প্রতিনিধি থাকায় এতদিন তাদের এমন দাবি ক্ষমতাসীনরা গ্রাহ্য করেনি।
এখন বিএনপির সাত সংসদ সদস্য পদত্যাগ করায় তাদের সাতটি আসন শূন্য হচ্ছে। গেজেটের পর নির্বাচন কমিশন আসন শূন্য ঘোষণা করে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন দেবে। সংবিধান অনুযায়ী সেটাই এখন করণীয়।
বিভিন্ন মহলে সংসদ থেকে বিএনপির পদত্যাগের ফলাফল নিয়ে দুই ধরনের আলোচনা রয়েছে। এক হলো প্রতিনিধিত্ব যতই কম হোক, দলটির সংসদ সদস্যরা সরকারের সমালোচনায় সরব ছিলেন। এটা মানুষের মধ্যে সাড়া ফেলত। গণমাধ্যমেও তাদের বক্তব্য গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হতো। এখন আর তাদের সে সুযোগ নেই। তবে কেউ কেউ বলছেন, বিএনপির প্রতিনিধিত্ব না থাকায় সংসদ একতরফা হয়ে যাওয়ায় গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে। সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক মহলের চাপও তৈরি হবে।
তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, সংসদে বিএনপির অবস্থান এতই কম যে, ওই অংশের পদত্যাগ বড় কোনো জটিলতা তৈরি করবে না। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, সাংবিধানিক কোনো সংকট বা সংসদে জটিলতা সৃষ্টি করার মতো ঘটনা এটা নয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলেন, বিএনপি তো সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছে। বিদেশিরা তো সংবিধান ও আইনের বাইরে যাওয়ার চাপ দিতে পারে না। সংখ্যায় বেশি হলে বা সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রশ্নে বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ নানা সংকট তৈরি করত।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের ১০ দফার প্রথম দাবি হচ্ছে এই অবৈধ সংসদ বাতিল করতে হবে। এ দাবির প্রথম অ্যাকশন হিসেবে আমাদের সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করেছেন। তাদের এ পদত্যাগে দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবশ্যই প্রতিক্রিয়া হবে। সেটি হবে বলেই তো তারা পদত্যাগ করেছেন। এ প্রতিক্রিয়া শিগগিরই দেশবাসী দেখতে পাবে।’
সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য জিএম সিরাজ বলেন, ‘আমরা সাতজন নির্বাচিত সংসদ সদস্য সংসদে ছিলাম। আমরা স্ববিরোধী অবস্থানে রয়েছি, এমনটা অনেকেই বলতেন। আমাদের সংসদে যাওয়া ছিল দলীয় কৌশলের অংশ। এখন পদত্যাগ করলাম, সেটিও দলের সিদ্ধান্তে।’
বিএনপির পদত্যাগের ফলাফল কী হতে পারে সে বিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির সাত সংসদ সদস্যের পদত্যাগে এ সংসদের কার্যক্রমে কোনো প্রভাব পড়বে না। কিন্তু এ সংসদ তো আগে থেকেই একতরফা ছিল। এখন এ সংসদের গুরুত্বহীনতা আরেকটু বাড়ল।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক ধারায় আগে থেকেই ঘাটতি ছিল। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নির্বাচন ও সংসদ প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। ফলে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ আরও প্রকট হয়ে উঠবে।’
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে এখন পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো তারা নিজের আলোয় সবকিছু দেখতে চায়। ভারত বা অন্য কোনো দেশের দৃষ্টিতে তারা আর বাংলাদেশকে দেখতে চায় না। এ সরকার ভারতের সমর্থন নিয়ে টিকে আছে সেটা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায় পরিষ্কার। কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে নিজেরাই সবকিছু দেখভাল করছে।’
গত বছর ১০ ডিসেম্বরের নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই ১০ ডিসেম্বর যখন বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি নিয়ে নানা ঘটনা ঘটল তখন পশ্চিম দেশগুলোর কয়েকটি এমনকি জাতিসংঘও স্টেটমেন্ট (বিবৃতি) দিল। এর অর্থ হচ্ছে, পশ্চিমা দেশগুলো এখন বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য বিএনপির সাত সংসদের পদত্যাগ অবশ্যই বহির্বিশ্বে গুরুত্ব বহন করবে।’
তিনি জানান, বিএনপি ১০ দফার যে দাবি দিয়েছে সেটি দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য নয়, বরং বিএনপি আওয়ামী লীগের সমঝোতার একটি মাধ্যম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ প্রস্তাব নিয়ে তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে দুই দল আলোচনা করে একটি পন্থা বের করে সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাবে বলেও তিনি মনে করেন।
সংসদ থেকে বিরোধী দলের পদত্যাগের ঘটনা আগেও ঘটেছে। বিএনপির শাসনামলে ১৯৯৪ সালে আওয়ামী লীগ ও সরকারবিরোধী দলগুলো সংসদ থেকে পদত্যাগ করে। তবে তাদের পদত্যাগ গ্রহণ করা হয় সাত মাস পর। এর ধারাবাহিকতায় বিএনপি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনও করে।
এখন একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে দলের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ তেমন কোনো জটিলতা সৃষ্টি করবে না। সংবিধান ও সংসদ অনুযায়ী যা করার তাই করবেন স্পিকার।’
বিএনপি সংসদে না থাকলে কী হতে পারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পদত্যাগের মধ্য দিয়ে এ মুহূর্তে বিএনপির লাভ-লোকসান কিছু হয়নি। রাজনৈতিক কোনো সুফল পাবে সেটাও মনে হয় না। তবে সংখ্যা কম হলেও সংসদে উপস্থিত থেকে তারা যে বক্তব্য দিতেন সেটা সংসদে লিপিবদ্ধ হতো, দেশ-বিদেশে, গণমাধ্যমে প্রকাশ হতো। জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণের এ সুযোগটি তারা হারাবেন।’
তিনি মনে করেন, ‘এ সাতজনের পদত্যাগের মধ্যে দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়নি। কারণ তারা দলের শীর্ষ ১০ বা ২০ জনের কেউ নন। আজকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো নেতারা সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে আলোড়ন তৈরি হতো।’
আসন শূন্য হওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব জাহাঙ্গীর আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে যেভাবে কার্যক্রম চালানোর বিষয়ে ক্ষমতা দিয়েছে, কমিশন সেটি করবে।’
নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্র বলছে, পদত্যাগের পর সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা হলো ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো এক বছরেরও কিছু সময় বেশি বাকি রয়েছে। তাই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন হলেই ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে উপনির্বাচন দিতে হবে। তবে বিভিন্ন কারণে আরও সময়ক্ষেপণ করা যায়।
শূন্য আসনে উপনির্বাচন করতেই হবে সেটি আরও পরিষ্কার করেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে হলে ইসিকে তিন মাসের মধ্যে উপনির্বাচন করতেই হবে। এ নিয়ে সংবিধানে অন্য কোনো রাস্তা নেই।’
যুক্তরাষ্ট্রের বিজনেস ম্যাগাজিন ফোর্বসের বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪২তম স্থানে আছেন। গত বছর তিনি ৪৩তম স্থানে ছিলেন।
ফোর্বসের তালিকায় ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেনকে বিশে^র সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে আছেন ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ক্রিস্টিনা লাগার্দে এবং তৃতীয় স্থানে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
শেখ হাসিনার বিষয়ে ফোর্বস উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে চতুর্থ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। তার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৮৮টিতে জয়লাভের পর তিনি চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হন, যা তার টানা তৃতীয় মেয়াদও।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, তিনি খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তার মতো বিষয়গুলোতে আরও ফোকাস করার পরিকল্পনা করেছেন।
গত ৯ ডিসেম্বর যখন তালিকাটি প্রকাশ করা হয়, তখন ফোর্বস জানায়, বাংলাদেশে দৃঢ় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা শেখ হাসিনার একটি চলমান সংগ্রাম।
তালিকার ৩৬তম স্থানে আছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ। তিনিসহ ভারতের ৬ জন এ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে ইরানের জিনা মাসা আমিনিকে মরণোত্তর প্রভাবশালী তালিকায় ১০০ নম্বরে স্থান দেওয়া হয়েছে। ২০০৪ সাল থেকে প্রতি বছর ফোর্বস ম্যাগাজিন বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাধর নারীর তালিকা প্রকাশ করে আসছে।
বয়স তার ৩৭। তার চেয়ে অনেক কম বয়সে অনেক তারকা বুটজোড়া তুলে রেখে সাবেক বনে গেছেন। লুকা মদ্রিচ অবশ্য বয়সের কাছে হার মানার পাত্র নন। লাজুক বলে ছোটবেলায় উপেক্ষিত মদ্রিচ এখন ক্রোয়েশিয়ার সর্বকালের সেরাদের একজন। তবে সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে দেশকে এনে দিতে হবে অধরা বিশ্বকাপ শিরোপা। চার বছর আগে হয়নি। এবার না হলে মুকুটহীন সম্রাট হয়েই বিশ্বকাপকে বিদায় জানাতে হবে। মদ্রিচের স্বপ্ন বেঁচে গেলে হতাশার সাগরে ভেসে যাবে ফুটবল দুনিয়া। ফাইনালের মঞ্চে যাওয়ার আগে ক্রোয়াটদের হারাতে হবে বিশ্বফুটবলের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে। মদ্রিচের স্বপ্ন বেঁচে যাওয়া মানেই সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী মেসির শূন্য হাতে প্রস্থান।
এই বুড়ো বয়সেও দিব্যি ১২০ মিনিট একই ছন্দে, একই তালে খেলে যাচ্ছেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা মদ্রিচ। মেসিরও বয়স ৩৫। তার খেলাতেও নেই বয়সের ছাপ। এই বিশ্বকাপেই দুই অধিনায়ক টেনে নিচ্ছেন দুদলের মহাভার। মেসি গোল করছেন এবং করাচ্ছেনও। আর মদ্রিচ বল জোগান দেওয়ার অন্যতম দায়িত্বটা পালন করছেন সুচারুভাবে।
প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনা হলেই মদ্রিচের ভাবনায় চলে আসে ১৬ বছর আগের স্মৃতি। আলবিসেলেস্তাদের বিপক্ষেই আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছিল মদ্রিচের। সুইজারল্যান্ডে প্রীতিম্যাচে আর্জেন্টাইনদের হারিয়ে দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া ৩-২ গোলে। সেই ম্যাচে জয় না পাওয়া আর্জেন্টিনার হয়ে গোল করেছিলেন মেসি। মদ্রিচ আর তার দলের কাছে গত বিশ্বকাপেও বড় হারের তেতো স্বাদ পেতে হয়েছিল মেসিদের। ৩-০ গোলের জয়ে মদ্রিচও করেছিলেন এক গোল। সেই হারটা বড় ক্ষতি করে দেয় আলবিসেলেস্তাদের। গ্রুপ রানার্স-আপ হওয়ায় তাদের মুখোমুখি হতে হয় ফ্রান্সের। শেষ পর্যন্ত ফরাসিদের কাছে ৪-৩ গোলে হেরে বিদায় নিতে হয়।
এবার অবশ্য দুদল মুখোমুখি হচ্ছে আরও বড় মঞ্চে। আর্জেন্টিনার সামনে এক আসর পরে ফাইনালে ওঠার হাতছানি। ক্রোয়েশিয়ার লক্ষ্য টানা দ্বিতীয় ফাইনাল। দুদল যখন মুখোমুখি, তখন তাদের ভাবনায় চলে আসবে দুদলের দুই মহানায়ক মেসি এবং মদ্রিচ। দুজনেরই এটা শেষ বিশ্বকাপ। তাই আগামীকাল বিশ্বকাপের আকাশ থেকে আরেকটি নক্ষত্রের পতন অনিবার্য এবং অবশ্যই শূন্য হাতে। খ্যাতি, প্রতিভা ও প্রাপ্তিতে মেসির ধারেকাছে নেই মদ্রিচ। তবে মদ্রিচ নিজের মতো করেই রিয়াল মাদ্রিদকে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন গেল এক দশক।
দুজনের এবারের লড়াইটা ভিন্ন রকম শেষের বাঁশি বাজিয়ে কাতারে এসেছেন বলেই। দুজনই চান, যে করেই হোক মর্যাদার শিরোপাটা জিততে। তাই লুসাইলে লড়াইটা হবে ভিন্নমাত্রার। ক্রোয়েশিয়া পরপর দুম্যাচে টাইব্রেকারের ভাগ্য নিজেদের করে নিয়ে সেমিফাইনালে এসেছে। জাপানকে দ্বিতীয়পর্বে হারানোর পর তারা পাঁচবারের ব্রাজিলকে কাঁদিয়েছে। গোলকিপার ডমিনিক লিভাকোভিচ দুটি ম্যাচেই অসাধারণ সব সেভে দলকে জিতিয়েছিলেন। ডাচদের টাইব্রেকারে হারিয়ে আর্জেন্টিনাকে সেমিতে এনেছেন গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। দুটি সেভ করে তিনি যেমন মেসির শিরোপা স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছেন। ঠিক তেমনই আর্জেন্টিনার বিপক্ষে আরেকবার জ্বলে উঠে লিভাকোভিচও পারেন তাদের মধ্যমণি মদ্রিচের অধরা স্বপ্ন টিকিয়ে রাখতে।
এমি মার্তিনেজও নিশ্চয় চাইবেন না যার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত, সেই মেসির শূন্য হাতে বিদায়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার। গতকাল রবিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
স্বাভাবিক নিয়মে প্রশাসন ক্যাডারের সবচেয়ে সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে কবির বিন আনোয়ারেরই এ পদে বসার কথা। কিন্তু বরিশালের রাজনৈতিক ঘটনায় অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে কবির বিন আনোয়ারের সরকারি কর্মকর্তাদের পক্ষে শক্ত অবস্থানের কারণে তা অনিশ্চিত বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তার ওপরই আস্থা রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কবির বিন আনোয়ার শিগগিরই অবসরে যাবেন। এর আগেই তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে এ পদেই বহাল রাখা হবে বলে জানা গেছে।
কবির বিন আনোয়ার বিদায়ী মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম অবসরোত্তর ছুটিতে যাচ্ছেন ১৫ ডিসেম্বর।
২০১৮ সাল থেকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের দায়িত্ব সামলানো কবির বিন আনোয়ার দেশের ২৩তম মন্ত্রিপরিষদ সচিব হচ্ছেন।
১৯৮৮ সালে সহকারী কমিশনার হিসেবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) যোগ দেন কবির বিন আনোয়ার। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপসচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসক) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন কবির বিন আনোয়ার। তার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে এমএ করে পরে এলএলবি ডিগ্রিও নেন। বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের সপ্তম ব্যাচের কর্মকর্তা তিনি। বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক ছাড়াও বিভিন্ন পুরস্কারে পেয়েছেন কাজের স্বীকৃতি।
পেশাগত কাজের বাইরে কবির বিন আনোয়ার বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক কর্মকা-ের সঙ্গেও যুক্ত। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশেনের সভাপতি এবং বাংলাদেশ ইয়োগা অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটি, সুন্দরবন সংরক্ষণ কমিটি এবং বাংলাদেশ স্কাউটের সঙ্গেও তিনি যুক্ত রয়েছেন।
কবির বিন আনোয়ার লেখালেখির সঙ্গেও যুক্ত। বিশ্ব ধারা মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম (সংকলন-১), বিশ্ব ধারা মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম (সংকলন-২), বিস্মৃত মুসলিম মানস, রূপসী বাংলা (১ম খণ্ড), প্রযুক্তি বদলে দিল যারা, অপরূপ বাংলাদেশ (১ম খন্ড) তার উল্লেখযোগ্য বই।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব পদেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন মুখ্য সচিব হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। আর সচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন। মুখ্য সচিব পদে তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বিদায়ী মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। আহমদ কায়কাউস বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। পরবর্তী তিন বছরের জন্য তিনি ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে যাচ্ছেন। এ জন্য মুখ্য সচিবের পদমর্যাদায় তাকে চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
আর মাত্র চারটি ম্যাচ, তারপর আবার চার বছরের অপেক্ষা। অনেক জল্পনা-কল্পনার ফানুশ উড়িয়ে, স্বপ্নের রং মেখে যে বিশ্বকাপ গড়িয়েছিল মাঠে; এক মাসের রাত জাগার অবসান ঘটিয়ে আর মাত্র কয়েকদিন পরই তার সমাপ্তি। ৩২ দলের আসরে শিরোপার লড়াইতে টিকে আছে মাত্র ৪ দল, প্রত্যেকের সামনেই দুটো করে ম্যাচ। দুই দল খেলবে ফাইনালে, আর সেমিফাইনালে হেরে যাওয়া দুই দল খেলবে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, নেইমার, হ্যারি কেইন ফুটবলের দুনিয়ায় বাঘা বাঘা সব নাম। আসর শুরুর আগে তাদের কার হাতে উঠবে শিরোপা, কে পাবেন সোনার জুতো আর কে জিতবেন সোনার বল; এই নিয়ে ভক্তদের তর্ক আর আলোচনা কম হয়নি। কিন্তু কাতার তাদের তিনজনকেই ফেরাল খালি হাতে। রোনালদো আর নেইমার মাঠ ছেড়েছেন কান্নায়, কেইনের চোখে হয়তো পানি দেখা যায়নি, তবে ভেতরে ভেতরে ঠিকই পুড়ছেন অন্তজ্বালার দহনে।
ব্রাজিল, পর্তুগাল আর ইংল্যান্ড; তিন দলই বিদায় নিয়েছে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। পরপর দুই রাতে তিন দলের তিন সুপারস্টারের বিদায়ে বিশ্বকাপ কিছুটা হলেও রং হারিয়েছে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর এটাই ছিল শেষ বিশ্বকাপ। আসর শুরুর আগে পিয়ার্স মরগ্যানকে এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন রোনালদো, যেখানে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ ও মালিকপক্ষকে নিয়ে ছিল অনেক চাঁচাছোলা মন্তব্য। ফলে বিশ্বকাপের মধ্যেই রোনালদোর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ম্যানইউ। পর্তুগালের কোচ ফার্নান্দো সান্তোসের সঙ্গেও সম্পর্কটা খারাপ গেছে রোনালদোর। শুরুর একাদশে জায়গা না দেওয়াসহ নানান বিতর্কে পর্তুগাল দলের সঙ্গে রসায়নটা আর ঠিক থাকেনি রোনালদোর। তবুও মরক্কোর সঙ্গে ম্যাচটা শেষে রোনালদো যখন কাঁদতে কাঁদতে টানেল দিয়ে বেরিয়ে যান, সেই দৃশ্যটা দেখে ভক্তরাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। নিজের শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচে রোনালদো মাঠে নেমেছিলেন ৫১ মিনিটে, রুবেন নেভাসের বদলি হিসেবে। সেটা ছিল রোনালদোর ১৯৬টা আন্তর্জাতিক ম্যাচ, কুয়েতের বাদের আলমোতাওয়াহ’র সঙ্গে যৌথভাবে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার রেকর্ডটা ছোঁয়ার দিনেই কান্নাভেজা চোখে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। কারণ অ্যাটলাসের সিংহদের যে হারানো যায়নি! বিপজ্জনক ক্রসগুলোতে লাফিয়ে মাথা ছোঁয়ানো হয়নি রোনালদোর, তার আগেই যে সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল ইয়াসিন বনুর হাত।
ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরে যাওয়ার পর মাঠের ভেতর কান্নায় ভেঙে পড়েন নেইমারও। চোট কাটিয়ে ফিরেছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে, ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ে যে গোলটা করেছিলেন সেটা বিশ্বকাপের সেরা গোলের তালিকায় নিঃসন্দেহে থাকবে। তবুও নেইমারকে কান্নাভেজা চোখে বিদায় বলতে হয়েছে বিশ্বকাপকে। অথচ এবারই ছিল সেরা সুযোগ। বয়স ৩০, দলে সতীর্থরা সব রিয়াল মাদ্রিদ নয়তো বার্সেলোনা, ম্যানইউ, টটেনহ্যামের মতো বড় বড় ক্লাবে দারুণ ছন্দে। জমাট রক্ষণ, ধারালো আক্রমণ সবই ছিল ব্রাজিলের। ছিল না ভাগ্য। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ৩ মিনিটের অসতর্কতা ম্যাচের রং পালটে দিল আর টাইব্রেকারে স্নায়ুর চাপটা নিতেই পারল না সেলেসাওরা। পরের বিশ্বকাপে নেইমারের বয়স হবে ৩৪। যে হারে চোট আঘাতের শিকার হতে হয় নেইমারকে, বছর চারেক পর নিজের সেরা ছন্দে থেকে বিশ্বকাপটা খেলার মতো অবস্থানে আদৌ থাকবেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর আপাতত নেই। নিজের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে দীর্ঘ একটা পোস্ট দিয়েছেন নেইমার, সেখানে লিখেছেন, ‘আমি মানসিকভাবে একদম বিধ্বস্ত হয়ে গেছি। ১০ মিনিটের মতো সময় ধরে অসাড় হয়ে পড়েছিলাম। এরপর অবিরাম কান্না। এই হারের স্মৃতি আমাদের অনেক দিন তাড়িয়ে বেড়াবে। এই দলটার আরও বেশি সাফল্য প্রাপ্য ছিল।’
ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হ্যারি কেইনও পুড়ছেন পেনাল্টি মিসের অন্তজ্বালায়। ফ্রান্সের গোলরক্ষক হুগো লরি তার টটেনহ্যাম সতীর্থ এবং দীর্ঘদিনের বন্ধু। তার বিপক্ষে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে একটা পেনাল্টি মারার চাপ নিয়ে গোল করেছেন। কিন্তু পরের বার যখন ম্যাচের শেষ সময়ে আবার পেনাল্টি পেল ইংল্যান্ড, কেইন সেটা রাগবির কিকের মতো বক্সের অনেক ওপর দিয়ে উড়িয়ে মেরেছেন। কেইন নিজে চাপে থাকলে অন্য কোনো সতীর্থকে শট নিতে পাঠালে হয়তো এমন হয় না। ম্যাচের পর কেইন বললেন, ‘একেবারে বিধ্বস্ত অবস্থা। আমার জন্য আর দলের জন্য এটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন। আমরা ভালো খেলেছি, ভালো সুযোগও পেয়েছি কিন্তু ফুটবলে শেষ পর্যন্ত অনেক খুঁটিনাটি ব্যাপারই ব্যবধান গড়ে দেয়। অধিনায়ক হিসেবে এবং পেনাল্টি মিস করা নিয়ে আমি নিজে সম্পূর্ণ দায় নিচ্ছি।’
তাদের মতো বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে ভার্জিল ফন ডাইকেরও। বিশ্বের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার, একমাত্র ডিফেন্ডার হিসেবে উয়েফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জয়সহ অনেক অর্জনই আছে নেদারল্যান্ডসের অধিনায়কের। প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে এসেই দলনেতা, সেই গর্ব মুছে গিয়ে ফিরতি পথের সঙ্গী ব্যর্থতা। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচে মেসিকে আটকাতে পারেননি, নাহুয়েল মলিনাকে দেওয়া পাসের আগে দৌড়ের শুরুতে ফন ডাইককেই কাটিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন জাদুকর। পরে ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ায়, শুরুতেই স্পটকিক নিতে আসেন ফন ডাইক এবং এমিলিয়েনো মার্তিনেজ তার গোলটা বাঁচিয়েই পেয়ে যান আত্মবিশ্বাস। অভিষেক বিশ্বকাপেই ফন ডাইক দেখে ফেলেছেন বিশ্বকাপের নিষ্ঠুর দিকটাও।
দুর্নীতি দমন কমিশনার (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ বলেছেন, নির্বাচনের বছরে দুদক চোখ-কান খোলা রাখবে। আইন অনুসারে আমাদের যেটুকু অংশ, আমরা তা নিরপেক্ষভাবে পালনের চেষ্টা করব। আমরা সাধ্যমতো কাজ করছি।
মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সন্সেলনে দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ও মো. জহুরুল হক এবং দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের বছরে সব প্রার্থীর হলফনামায় যে সম্পদ বিবরণী থাকে তা খতিয়ে দেখবে দুদক। এ বছর চোখ-কান খোলা রাখবে। সমস্ত প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে। আগামী বছরে দুদকের কাজে আরো গতিশীলতা আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সোমবার রাতে বার্ষিক প্রতিবেদনটি (২০২২) রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়ে কিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থান নিতে বলেছেন। দুদক স্বচ্ছতার সঙ্গে সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবগত করা হয়েছে।
ফাঁদ মামলা কেন কমেছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যতটুকু তথ্য পেয়েছি, সেই অনুসারে ফাঁদ মামলা হয়েছে। আমরা শতভাগ সফল হতে পারিনি। বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় গত বছর সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করেছি। ওই বছর এফআরটি কম হয়েছে। মামলা বেশি হয়েছে, এফআরটি কমেছে। সাজার হার বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দুদক ঠিকমতো কাজ করছে না, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মামলা, তদন্ত, অনুসন্ধান সব কিছুই বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। তারা তাদের বক্তব্য দিয়েছে। আমরা তথ্য দিলাম, এগুলো সংরক্ষিত আছে। আপনারাই বিবেচনা করবেন।
এ সময় বেসিক ব্যাংক দুর্নীতি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মামলাগুলো চলমান। এ নিয়ে আর কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি তিনি।
সম্প্রতি আলোচিত দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের ‘অর্থপাচার’ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে দুদক চেয়ারম্যান জানান, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই, পেলে কাজ করবে দুদক।
এদিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, দেশের টাকা বাইরে চলে গেছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো কাজ করতে পারেনি দুদক। পাচারকৃত অর্থ নিয়ে কাজ করে আরো অনেকগুলো সংস্থা। শুধু দুদকের একার কাজ নয় এটি। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি টাকা ফিরিয়ে আনার।
দুদকের অসন্তুষ্টির জায়গা কোনটি এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক বড় বড় দুর্নীতি বিশেষ করে দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেক দুর্নীতিবাজ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, ব্যবসার আড়ালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে। এই বিষয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের মাত্র একটি অপরাধের এখতিয়ার আছে। বাকি ২৬টি অপরাধের বিষয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ার। কিন্তু জনগণের মনে এখনো ভ্রান্ত ধারণা দুদক কী কাজ করে। কিন্তু আমাদের অংশে আমরা কাজ করি ও শতভাগ সাফল্য রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশেরে এক পর্যবেক্ষণের সূত্র ধরে দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, দেশে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বাড়ে নাই, বরং কমেছে। তবে আভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বন্ধ করতে পারিনি। মামলা পরিচালনা ক্ষমতা কমেছে এটা মিথ্যা কথা। কারণ মানিলন্ডারিং মামলায় ১০০ ভাগ সাফল্য, অন্যান্য মামলায় সাজার পরিমাণ ৬৭ থেকে ৭০ ভাগ আমাদের পক্ষে। আমাদের সক্ষমতা কমেছে কে এটা বলেছে। এ কথা আমি বিশ্বাস করি না।
দুদকের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরে দুদকে জমা পড়ে ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগ। এসব যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের জন্য সংস্থাটি হাতে নিয়েছে ৯০১টি অভিযোগ, যা মোট অভিযোগের ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৯৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ অভিযোগই অনুসন্ধানের জন্য আমলে নিতে পারেনি দুদক। ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগের মধ্যে ৩ হাজার ১৫২টি অভিযোগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে। ২০২২ সালে চার্জশিট অনুমোদন হয়েছে ২২৪টি, মামলা হয়েছে ৪০৬টি, ফাঁদ মামলা হয়েছে মাত্র ৪টি।
২০২১-২২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাজা, নিষ্পত্তি ও খালাসের পরিমাণ বেড়েছে। এরমধ্যে গতবছর সংস্থাটির ৩৪৬টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এছাড়া এই সময়ে কমিশন আমলের ৬৪ দশমিক ১৭ শতাংশ ও ব্যুরো আমলের ৩৫ দশমিক ৯০ মামলার আসামির সাজা হয়েছে। ২০২২ সালের দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন দুদক চেয়ারম্যান। উপস্থাপনকালে এই তথ্য জানানো হয়।
ছেলে ইজহান মালিককে সঙ্গে নিয়ে ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে রয়েছেন ভারতের সাবেক টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একাধিক ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে মনিদা শরীফে তোলা নিজের একাধিক ছবি পোস্ট করেন সানিয়া। ভিডিও পোস্ট করেছেন ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে।
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা প্রথম ছবিতেই দেখা যাচ্ছে সানিয়া তাকিয়ে আছেন তার ছেলের দিকে। সানিয়ার পরনে কালো রঙের বোরকা।
ছবিগুলো পোস্ট করে ক্যাপশনে সানিয়া লিখেছেন, ‘আলহামদুল্লিাহ। আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করুন।’
সানিয়ার পোস্ট করা ছবিগুলোর কয়েকটিতে পরিবারের অন্য সদস্যরাও রয়েছেন। তবে তার স্বামী পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিককে কোনোটাতেই দেখা যায়নি।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।