
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি অভিযান ও গোলাপবাগে গণসমাবেশের আগে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ এবং তাদের মুক্তির দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিএনপি।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি নেতারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নেতারা তাদের উদ্দেশে বলেন, সরকারের অন্যায়-অত্যাচার ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে পুলিশ গুলি চালাচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে। আপনারা কাকে রক্ষার জন্য এ কাজ করছেন। গুটিকয়েক লোককে রক্ষার জন্য কোটি কোটি মানুষের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। তাদের স্বার্থরক্ষা না করে জনগণের পক্ষে থাকুন।
বিচারকদের উদ্দেশে বিএনপি নেতারা বলেন, আপনারা যে শপথ নিয়েছেন তা পালন করছেন না। আল্লাহর কাছে আপনাদের জবাবদিহি করতে হবে।
সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিএনপির এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। তারা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে সেøাগান দেন। গত ১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। কর্মসূচি উপলক্ষে বিএনপি কার্যালয়ের সামনের রাস্তার এক পাশে নাইটিঙ্গেল মোড় ও অন্য পাশে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত বন্ধ ছিল। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কঠোর অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে খন্দকার মোশাররফ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘সরকারের সময় শেষ। জনগণ জেগে উঠেছে। তাদের চলে যেতে হবে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী। আপনাদের থাকতে হবে। অবৈধ সরকারের অবৈধ নির্দেশ মানবেন না। জনগণের পক্ষে থাকুন।’
তিনি বলেন, ‘গত ৭ ডিসেম্বর আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বর্বরতা চালানো হয়েছে। লন্ডভন্ড করা হয়েছে। জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। লক্ষ্য ছিল ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগের গণসমাবেশ প- করা। সরকার বিভিন্ন বিভাগের গণসমাবেশ পন্ড করতে পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছিল, হামলা চালিয়েছিল, নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছিল। তবুও গণসমাবেশ ঠেকাতে পারেনি। সরকার ভেবেছিল আমাদের মহাসচিব ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের গ্রেপ্তার করলে গণসমাবেশ পন্ড হবে। সরকার ব্যর্থ হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। ভোটাধিকার হরণ করেছে। গণতন্ত্র হত্যা করে দিনের ভোট রাতে ডাকাতি করে অবৈধভাবে সংসদ গঠন করেছে। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। বিদ্যুৎ খাতে লুটপাট করতে ইনডেমনিটি আইন করেছে। ব্যাংক লুট করা হচ্ছে। মানুষ আরও গরিব হচ্ছে, ঠিকমতো খেতে পারে না।’
সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধান বিরোধী দল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় বন্দি করে রেখেছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে বিদেশে থাকতে বাধ্য করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ব্যবহার করছে। এত নির্যাতন করেও বিএনপিকে দুর্বল করতে পারেনি। জনগণ পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে, এ সরকারকে তারা চায় না। সেই লক্ষ্যে আমরা যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলতে ১০ দফা ঘোষণা করেছি। গোটা বিশ্বের নেতারা বলছেন শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সরকারের পতন ঘটানো ছাড়া আমাদের বিকল্প নেই।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।বিজয় দিবসে রাজধানীতে র্যালি করবে বিএনপি : ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিজয় মিছিল বের করবে বিএনপি। বেলা ৩টায় শুরু হবে মিছিল। গতকাল মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বেলা ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আলোচনা সভা হবে। সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন বিএনপি নেতারা। বিজয় দিবসের দিন সকাল ৮টায় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিএনপির উদ্যোগে শহীদদের উদ্দেশে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। সাভার থেকে ফিরে সকাল ১০টায় শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাবেন নেতারা।
দেশের রাজনীতিতে বিদেশ নির্ভরতার বিষয়টি বেশ পুরনো। বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও বিদেশিদের হস্তক্ষেপ করার প্রবণতা বেড়েছে। আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ধরে রাখা আর ক্ষমতা থেকে আওয়ামী লীগকে হটিয়ে বিএনপির ক্ষমতার চেয়ারে বসার এই লড়াই বিদেশিদের আরও সুযোগ করে দিয়েছে। এছাড়া বিদেশিদের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা স্বার্থও রয়েছে। সেই স্বার্থের কারণে সুবিধাজনক দলকে তারা ক্ষমতায় দেখতে চায় বা রাখতে চায়।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ তৈরির বিষয়ে এসব তথ্য। অন্য আরও লক্ষ্যের সঙ্গে দুই দলের বড় সমাবেশের লক্ষ্যও তাই বিদেশিদের আস্থা আনা।
দুই দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিদেশিদের দিকে বেশি নজর বিএনপির। আবার চাপমুক্ত থাকতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বিদেশিদের সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে। তাদের হাতে রাখতে নানা কৌশলে রাজনীতি করে চলেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি।
প্রকাশ্যে বিদেশিদের নজর কাড়তে শোডাউন বা বড় বড় জমায়েতের কথা আওয়ামী লীগ বা বিএনপির কোনো নেতারা প্রকাশ্যে স্বীকার করেননি।
তবে দুই দলের একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানায়, শক্তিধর কয়েকটি দেশের কর্তাব্যক্তিরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে তেমন ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে। অর্থাৎ জনমত যেদিকে শক্তিধর দেশের সমর্থনও সেদিকেই থাকবে। বাংলাদেশের মানুষের চাওয়ার বাইরে তারা কোনো পক্ষ হতে চায় না। তবে গণতন্ত্র ধ্বংস হোক এমন কোনো পথেও দেশের কোনো রাজনৈতিক দলকেও তারা চায় না।
তাই বিদেশিদের কাছে জনপ্রিয়তা প্রমাণ করতে শোডাউনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তেমনি আওয়ামী লীগকে জনবিচ্ছিন্ন প্রমাণে শোডাউনের দিকে ঝুঁকেছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। দুই দলের একাধিক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলের কর্মসূচিও এখন বিদেশিদের নজর কাড়ার লক্ষ্যে নেওয়া হয়। কর্মসূচির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ জানান দিতে চায় যে, সরকার ও দল দেশের মানুষের কাছে সমান জনপ্রিয়। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে, থাকবে। অন্যদিকে সরকার জনবিচ্ছিন্ন সেটা প্রমাণ করতে নানা কায়দায় রাজনীতি করে চলেছে বিএনপি। নিজেদের পক্ষে বিদেশিদের সমর্থন টানতে দেশের জনগণকেই অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তাই দুই দলেরই যেকোনো কর্মসূচিতে মানুষের উপস্থিতি ঘটাতে মরিয়া হয়ে ওঠে তারা। পৃথক কর্মসূচি আয়োজন করতে গিয়ে কার চেয়ে কে বেশি লোকসমাগম ঘটাতে পারে সে চেষ্টায় থাকে দুই দলই।
সূত্র জানায়, বিদেশিরাও জনসমর্থন কোন দিকে সেটা দেখতে চায়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে জনগণের বাইরে গিয়ে কোনো পক্ষের দিকে ঝুঁকবেন না তারা, ঢাকায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা তাদের বক্তব্যে এমনটাই জানিয়ে দিয়েছেন। বিদেশি কূটনীতিকরা আরও জানিয়েছেন, দেশের মানুষের চাওয়া-পাওয়ার প্রতিফলন রাজনীতিতে ও নির্বাচনে দেখতে চান তারা। গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে জনগণের দাবির সঙ্গেই বিদেশিরা থাকবেন।
সূত্র জানায়, কোনো কোনো দেশের দূত বিএনপির নীতিনির্ধারকদের পরামর্শ দিয়েছেন, তাদের আন্দোলনে জনগণের সম্পৃক্ততা থাকতে হবে। তাহলে তারাও পক্ষে অবস্থান নেবেন। তাই বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে সংগঠনকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি জনগণ তাদের সঙ্গে আছে, সেটা প্রমাণে গণসমাবেশে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়াতে বিভিন্ন সুবিধা রাখা হয়েছে। সমাবেশে আসা লোকজনের খাবার, থাকার ব্যবস্থা করেছে। তাঁবু টানিয়ে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির কর্মসূচিগুলো শুধু দেশের জনগণের মধ্যে নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও নজর কেড়েছে। বিশেষ করে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর সরকারের দমন-পীড়ন, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা-মামলা, কর্মসূচি করতে না দেওয়া ইত্যাদি। সবই আন্তর্জাতিক মহলের পর্যবেক্ষণে রয়েছে।’ তিনি বলেন, “এতদিন এসব বিষয় বাংলাদেশের দূতাবাস পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন তা আরও বিস্তার লাভ করেছে। ফলে এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি অত্যন্ত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি’। বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন বিষয় আন্তর্জাতিক মহলের তীক্ষè নজরে রয়েছে।”
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে বিদেশিদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় কখনো নরম ও কখনো গরম অবস্থানও দেখিয়ে আসছেন। সে তুলনায় ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক সুসংহত করতে বিভিন্ন পথ অনুসরণ করে চলেছে। সরকারের বিরুদ্ধে বিদেশিদের সোচ্চার করে তুলতে বিএনপি টাকা খরচ করে লবিস্টও নিয়োগ দিয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির অপপ্রচারের জবাব দিতে সরকারের পক্ষেও লবিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে। রাজনীতির মাঠে এ নিয়ে নানা সময় দুই দলই কথার লড়াই করে।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জনসভা নিয়ে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ। লোকসমাগমকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। জনসভাগুলোতে স্বয়ং দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকছেন। আওয়ামী লীগের জনসভা সফল করতে যেখানে জনসভা করা হয় তার আশপাশের জেলার নেতা ও দলীয় সংসদ সদস্যদের প্রতি লোকসমাগমের ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ আন্তর্জাতিক পরিম-লে সরকার ও দলের জনপ্রিয়তা ও শক্তি জানান দেওয়া।
রাজনীতিতে ব্যাপক লোক জমায়েতের যে কৌশল সেটা অনুসরণ করে দুই দলই প্রমাণ করতে চায় নিজ নিজ জনসমর্থন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মসূচিগুলো শেষ হলে লোকসমাগম নিয়ে কর্মসূচির সফলতা ব্যর্থতা নিয়ে দুই দলের নেতারাও বিতর্কে জড়ান। কর্মসূচি শেষে আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় দলই তাদের কর্মসূচিতে লাখ লাখ লোকের সমাগম ঘটেছে বলে দাবি করে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশ তোষণের রাজনীতি আওয়ামী লীগ করে না। তবে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয় এই নীতিতে বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগ। এই নীতি অনুসরণ করেই দেশ পরিচালনা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি প্রতিনিয়তই বিদেশি শক্তির কাছে মাথা নোয়ায়। বিএনপি দেশের বিরুদ্ধে বিদেশিদের কাছে অপপ্রচারে লিপ্ত।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বেপরোয়া চালকের মতো রাজনীতিতে বেপরোয়া চালক হচ্ছে বিএনপি। তারা কখন, কোথায় দুর্ঘটনা ঘটায় সেটাই চিন্তার বিষয়। ১০ ডিসেম্বরে ব্যর্থ হয়ে গন্ডগোল পাকানোর জন্য ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের দিন গণমিছিল কর্মসূচি দিয়েছে তারা।
গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের মাঠে (পুরনো বাণিজ্য মেলা মাঠ) ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের তেজগাঁও জোন আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের দিন বিএনপির গণমিছিল কর্মসূচি দেওয়ায় দলটির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সেদিন কেন তাদের কর্মসূচি আমি জানতে চাই। প্রত্যাহার করুন। সংঘাতের উসকানি দেবেন না। আমরা দুই মাস আগে সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেছি। ওইদিন গণমিছিল করার অর্থ হচ্ছে সংঘাতের উসকানি দেবে। ১০ তারিখে ব্যর্থ হয়ে ২৪ তারিখে গন্ডগোল পাকানোর চক্রান্ত করছে বিএনপি। এটা প্রতিহত করতে হবে।’
গত ১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগ মাঠে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে ১০ দাবি ঘোষণা করে বিএনপি। দাবি আদায়ে ২৪ ডিসেম্বর দেশের জেলা ও মহানগরের গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ওয়াশিংটন গিয়েছিলেন দাবি করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারকে নিষেধাজ্ঞা দিতে তদবির করতে গেছেন। আমীর খসরু সাহেব কী পেলেন! যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য ২০টি দেশের ৭০ জন এমপি-মন্ত্রীদের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ নেই। আমীর খসরুর মিশন ব্যর্থ। ১০ ডিসেম্বরের মিশনও ব্যর্থ।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপির ১০ ডিসেম্বর ভুয়া। সরকারের পতন ভুয়া। বিজয় মিছিল ভুয়া। তারেকের আগমন ভুয়া।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বেগম জিয়া বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক পাগল-শিশু ছাড়া কেউ বোঝে না। আমরা তার কথা মানি। কথা সত্য। ধন্যবাদ জানাই এ কথা বলার জন্য। বিএনপি কেন উল্টো চলে? বিএনপি যে দেশের কাছে নালিশ করেছে তাদের দেশেও তত্ত্বাবধায়ক নেই। আদালত এটা নাকচ করে দিয়েছে।’
বিএনপিকে আর ছাড় দেওয়া হবে বলে জানিয়ে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতার হারানো ময়ূর সিংহাসন ফিরে পেতে বিএনপি পাগল হয়ে গেছে। এ পাগলকে ঠা-া করতে হবে।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদের যাওয়ায় তার সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, ‘অলি সাহেব, ওদের (বিএনপি) অফিসে পুলিশ ঢুকে হামলা করেনি। আপনি যে কথা বলছেন, সেটা মিথ্যা।’
আওয়ামী লীগ কখনো ষড়যন্ত্র ও পেশিশক্তিকে বিশ্বাস করে না বলে দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমরা জনগণের রায় নিয়ে চলছি। জনগণের সমর্থনে রাজনীতি করি।’
১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের সর্বোচ্চ সুবিধা দেওয়ার পরও তারা নির্দিষ্ট একটি স্থানে সমাবেশ করার জন্য গোঁ ধরেছিল। আমরা তাদের উন্মুক্ত মাঠে যেতে বলেছিলাম। তারপর তারা বাধ্য হয়ে সেখানে সমাবেশ করেছে। বিএনপি ষড়যন্ত্র করলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বসে থাকবে না।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচির সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রমুখ।
যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এ জেড এম আমিনুল ইসলাম চৌধুরী। তার বাবা আজিজুল ইসলাম চৌধুরীও ছিলেন সংগ্রামী মানুষ। যুক্ত ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে; কংগ্রেস করতেন। যুক্তফ্রন্টের সময় আওয়ামী মুসলিম লীগে যুক্ত হন তিনি। দীর্ঘদিন রতনকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। আমিনুলের মা আফতাব মহল ছিলেন গৃহিণী। তাদের বাড়ি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাহুকা গ্রামে। তিনি তৎকালীন সিরাজগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আমিনুল গোপনে চলে যান ভারতের কলকাতায়। দেখা করেন ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সাহেবের সঙ্গে। তিনি তাকে নিয়ে যান তাজউদ্দীন আহমেদের কাছে। ছাত্রলীগ করেন শুনতেই বললেন, ‘ওরা বিএলএফে যাক।’ তাকে রিক্রুট করেন সিরাজুল আলম খান। পরে পাঠিয়ে দেওয়া হয় দেরাদুন ট্রেনিং একাডেমিতে।
বাকি ইতিহাস শুনি এই বীরের জবানিতে। তিনি বলেন, “ট্রেনিং শুরু হলে ক্যাম্পে এসে নেতারা বললেন, ‘শর্ট ট্রেনিং দেন। ওকে আগেই ভেতরে পাঠাব।’ ফলে ১৫ দিন ট্রেনিং হয় আমার। এলএমজি, এসএলআর, গ্রেনেড, মর্টার ও আরসিএল গান চালানো ছাড়াও এক্সপ্লোসিভ দিয়ে ব্রিজ উড়িয়ে দেওয়ার কৌশলটাই বেশি শিখেছিলাম। ট্রেনিং শেষে হিলি বর্ডার দিয়ে গোপন পথে আসি নিজের এলাকায় সিরাজগঞ্জের রতনকান্দি ইউনিয়নে। সঙ্গে অস্ত্র ছিল একটা রিভলবার ও ২৫টি গুলি। ট্রেনিং শেষে বিভিন্ন ব্যাচ ঢুকবে। তাদের দেখাশোনা, শেল্টার, সহযোগিতা ও আক্রমণের ক্ষেত্র প্রস্তুত রাখতেই আগে পাঠানো হয় আমাকে।”
এলাকায় মুক্তিবাহিনীর লোকাল একটি গ্রুপকে পান আমিনুল। স্থানীয়ভাবে অস্ত্র সংগ্রহ করে ওই গ্রুপটি বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছিল। তিনি তাদের মোটিভেট করে দলে রাখেন। ২০ দিন পর ভারত থেকে ট্রেনিং শেষে ৮ জনের গ্রুপ নিয়ে ভেতরে ঢোকেন মোজাফ্ফর। সব মিলিয়ে তৈরি হয় তাদের ১৫ জনের একটি গেরিলা দল। কমান্ডে ছিলেন মোজাফ্ফর।
ট্রেনিংয়ে নির্দেশ ছিল ‘পরিচয় দেবে না, গোপনীয়তা রাখবে, অপারেশনে জয়লাভ করলেও প্রকাশ্যে আনন্দ প্রকাশ করা যাবে না।’ সেভাবেই গেরিলা অপারেশন শুরু করেন তারা। প্রথম অপারেশন ছিল বগুড়ার ধুনট থানায়। ওই অপারেশনে জয় পাননি। এরপর জয় বাংলা সেøাগান দিয়েই সিরাজগঞ্জের তাড়াশ থানায় আক্রমণ করেন। কয়েক পুলিশকে আত্মসমর্পণ করানোর পর সেখানে মিলে থ্রি নট থ্রি রাইফেল ও ৬-৭ বাক্সভর্তি গুলি। পরবর্তী অপারেশনগুলোতে সেসব কাজে লেগেছিল। বিএলএফের সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে এভাবেই আমিনুলরা গেরিলা আক্রমণ করেন বিভিন্ন এলাকায়।
ভাটপিয়ারী অপারেশনে মারাত্মক আহত হন আমিনুল ইসলাম। সেই ক্ষত নিয়েই জীবন কাটছে তার। কী ঘটেছিল একাত্তরের ওই দিনে? তিনি অকপটে বলেন অপারেশনের কথা, “ভাটপিয়ারীতে পাকিস্তানিদের একটা শক্তিশালী ক্যাম্প ছিল, একটি স্কুলের ভেতর। পাকিস্তানি আর্মি, রাজাকার ও মিলিশিয়া মিলে সেখানে ছিল প্রায় ৯০ জন। আমরা ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা। অস্ত্র ছিল ২টি এলএমজি, ৫টি এসএলআর আর অগণিত গ্রেনেড। ক্যাম্পে আক্রমণের আগে প্রতিজ্ঞা করি ‘লাশ হয়ে যাব, তবু জয় না নিয়ে ফিরব না।’ সময়টা অক্টোবরের ১৬ তারিখ হবে। রাত ১১টার দিকে সাডেন অ্যাটাক করি। অ্যাটাকের ধরন দেখে পাকিস্তানিরা ভেবেছিল ইন্ডিয়ান আর্মি আক্রমণ করেছে। ভেতর থেকে তারা চিৎকার করে বলে‘জয় হিন্দ’। আমরা তখন ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দিয়ে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করি।
স্কুলের ছাদে ছিল ওদের দুটি বাঙ্কার। সেখান থেকে ওরা বৃষ্টির মতো গুলি ছোড়ে। আমরা কিছুতেই এগোতে পারি না। আমাদের সঙ্গে ছিল দুর্ধর্ষ চারজন গেরিলা। তোতা, ফরিদ, মমিন ও হালিম। ওরা ছাত্র ইউনিয়ন করত। তাদের দায়িত্ব দিই বাঙ্কারে আক্রমণের। অস্ত্র রেখে তারা কোমরে লুঙ্গির ভাঁজে চারটা করে গ্রেনেড গুঁজে নেয়। ছাদের পাশেই ছিল বড় একটা বটগাছ। ওই গাছের একটা ডাল চলে গেছে ছাদের ওপর। ডাল বেয়ে ছাদের বাঙ্কারে গ্রেনেড ছোঁড়ে চার গেরিলা। দুজন করে দুই বাঙ্কারে চারজন পাকিস্তানি সেনাই মারা পড়ে। আনন্দে আমরা ‘জয় বাংলা’ সেøাগান তুলি।
রাত তখন আনুমানিক দুটো। পাকিস্তানিদের বলি সারেন্ডার করতে। কিন্তু তা না করে তারা কয়েকটা রুমে অবস্থান নেয়। দূরে শত শত লোক লাঠিসোটা নিয়ে দাঁড়িয়ে ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দিচ্ছিল। তখন আরও সাহসী হয়ে উঠি। খুশিতে স্কুল বিল্ডিংয়ের ভেতরে ঢুকে পড়ি। সঙ্গে ছিল মোতালেব। আমরা দুজন একটা বারান্দায় পৌঁছতেই পেছন দিকের একটা রুম থেকে পাকিস্তানিরা গুলি ছোঁড়ে। গুলিটি আমার নিতম্বের ডান পাশে বিদ্ধ হয়। গুলির ঝটকায় মোতালেবও ছিটকে পড়ে। প্রথমে কিছু বুঝিনি। পেছনে ব্যথা শুরু হলে নিতম্বে হাত দিতেই অনুভব করি বড় একটা মাংস খ- ঝুলছে। পিনপিন করে রক্ত বের হচ্ছিল। চিৎকার দিয়ে উপুড় হয়ে পড়ে থাকি। সহযোদ্ধারা ছুটে আসে। রক্ত যাচ্ছিল খুব। ধরেই নিয়েছিলাম মারা যাব। আমাদের এ অবস্থা দেখে সহযোদ্ধারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ‘আমাদের নেতাকে গুলি করছে! মার শালাদের’ বলেই গুলি করতে থাকে। কিছু পাকিস্তানি আখক্ষেতের ভেতর দিয়ে পালিয়ে যায়। তার আগেই মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে মারা যায় প্রায় ৬০ জন।”
চিকিৎসা নিলেন কোথায়? “সহযোদ্ধারা কাঁধে করে নিয়ে যায় ইটালি গ্রামে। ওটা ছিল নিচু গ্রাম, সারাবছর পানি থাকত। নামকরা কম্পাউন্ডার ছিলেন নুরুল ইসলাম। মেছরা গ্রাম থেকে তাকে ডেকে আনে তারা। নিতম্বে ঝুলে থাকা মাংস খন্ডটা সেলাই করে তিনি লাগিয়ে দেন। কিন্তু কিছুদিন পরেই ওই মাংসে পচন ধরে। কষ্টের মাত্রাও যায় বেড়ে। পরে মাংস খন্ডটি কেটে ফেলা হয়।
এক মাস বিছানায় ছিলাম। একেক রাতে থেকেছি একেক বাড়িতে। নিজে চলতে পারি না। সহযোদ্ধারা কাঁধে করে নিয়ে গেছে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। তাদের ঋণ শোধ হওয়ার নয়।”
বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল সুস্থ হয়ে আবার ফিরেন রণাঙ্গনে। তাদের সর্বশেষ অপারেশন হয় শৈলাবাড়ি হাই স্কুলে, সিরাজগঞ্জ শহর থেকে তিন মাইল দূরে। ওখানে ছিল একটি আর্মি ক্যাম্প। মুক্তিযোদ্ধারা শহরে ঢুকলে পাকিস্তানি আর্মি পেছন থেকে ঘেরাও করবে। এজন্যই ক্যাম্পটি করে তারা। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের কৌশলটা বুঝে যায়। শৈলাবাড়ি ক্যাম্প দখলে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন তারা। আমিনুলদের গ্রুপটির সঙ্গে যুক্ত হয় মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যান্য গ্রুপও। ১৪ ডিসেম্বর ক্যাম্প দখল করে তারা শহরে ঢুকে পড়ে। সিরাজগঞ্জ হানাদারমুক্ত হয়। বিএ কলেজ মাঠে সবাই একত্রিত হয়ে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ায়। ওইদিন তাদের আনন্দ ছিল অন্যরকম।
স্বাধীনতা লাভের কয়েক বছর পর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম সংবাদদাতা হিসেবে কাজ শুরু করেন দৈনিক ইত্তেফাকে। মুক্তিযুদ্ধের আগেই নিয়োগপত্র দিয়েছিলেন শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেন। পরে স্টাফ রিপোর্টার এবং সর্বশেষ বুরো প্রধান হন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
যে দেশের জন্য রক্ত দিলেন সেই দেশ কি পেয়েছেন? তিনি বলেন, ‘উন্নতি অবশ্যই হচ্ছে। তবে সেই কাক্সিক্ষত দেশ আমরা পাই নাই। স্বপ্ন ছিল এ দেশ হবে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও শোষণহীন দেশ। মানুষ পেট পুরে খেতে পারবে। হানাহানি থাকবে না; মানুষের মধ্যে মানবতাবোধ থাকবে। এটা ছিল বঙ্গবন্ধুরও স্বপ্ন। সেটা তো এখনো হয়নি।’
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তবে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা জরুরি বলে মনে করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এ জেড এম আমিনুল ইসলাম চৌধুরী। প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কত ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা তোমরা সে ইতিহাস জেনে নিও। স্বাধীনতাবিরোধীদের বিষয়ে সতর্ক থেকো। দেশটাকে ভালোবেসে এগিয়ে নিও। নিজের কাজ সততার সঙ্গে করার নামই দেশপ্রেম।’
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এ দিনে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামসরা বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ঠিক দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধীন বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস-২০২২ পালনের লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এদিন সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা এবং যুদ্ধাহত ও উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা একই দিনে সকাল ৭টা ২২ মিনিটে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এ ছাড়া সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সর্বস্তরের জনগণ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ। সকাল ৭টায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন এবং সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ও সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। এ ছাড়াও এদিন বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খবর বাসস।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ডা. আলীম চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ড. ফজলে রাব্বী, সিরাজউদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, অধ্যাপক জিসি দেব, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক রশীদুল হাসান, ড. আবুল খায়ের, ড. মুর্তজা, সাংবাদিক খন্দকার আবু তাহের, নিজামউদ্দীন আহমেদ, এসএ মান্নান (লাডু ভাই), এ এন এম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, সেলিনা পারভীনসহ আরও অনেকে।
রাকিব (২২)। রাজধানীর ওয়ারী থানায় ধর্ষণের মামলায় তিন মাস ধরে জেলে। তার মা তাসলিমা বেগম (৫০) কয়েক দিন আগে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার চম্পাপুর গ্রাম থেকে এসেছেন তাকে দেখতে। ১ ডিসেম্বর ছেলের কোর্টে হাজিরার তারিখ ছিল। সকালে ঢাকার সিএমএম (মুখ্য মহানগর হাকিম) আদালতের সামনে কথা হয় তাসলিমা বেগমের সঙ্গে। হাতে ছোট একটি চটের ব্যাগে খাবার ও শীতের পোশাক। পাশেই হাজতখানা। একেকটি প্রিজন ভ্যান আসে আর উঁচু স্বরে রাকিব রাকিব বলে চিৎকার করেন তাসলিমা বেগম। বেলা ১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে ব্যর্থই হতে হয়েছে তাকে।
তাসলিমা বেগম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ছেলেডা শীতে কষ্ট করতাছে। কিছু কাপড় আনছি। ইলিশ মাছ পছন্দ করে। ভাত-তরকারি রান্না কইরা আনছি। পুলিশ কয়, খাওন দেওয়া নিষেধ। সারা দিন না-খাওয়া থাকব। ছেলে আসামি, কিন্তু মা হইয়া এই কষ্ট কি সহ্য হয়?’
শুধু তাসলিমা বেগম নন, ঢাকার আদালতপাড়ার দুটি হাজতখানার আশপাশে প্রতি কর্মদিবসে এমন অসংখ্য স্বজনের পৃষ্ঠা ৯ কলাম ৩ >
যে অপেক্ষা উদ্বেগের, ক্লান্তির
দেখা মেলে। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা থাকেন। ওই দিন এমন বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। বাবাকে ছুঁয়ে দেখতে আসে ছোট্ট শিশু, ছেলেকে একনজর দেখতে আসা বাবা কিংবা মা, স্বামীর প্রতীক্ষায় থাকা স্ত্রী, ভাইয়ের মামলার সবশেষ অবস্থা জানাতে চাওয়া ভাই কত মানুষ থাকে! ঘটনা আলাদা হলেও পরিস্থিতি সবার জন্য প্রায় এক। আসামিবাহী প্রিজন ভ্যান এলেই ডাক-চিৎকার শোনা যায় ‘এই দিদার, এই আলী, এই রহমত, এই ইসমাইল, এই শাকিল ... ।’ নিরাপত্তার কড়াকড়িতে কাছে যাওয়া নিষেধ। অপেক্ষমাণ এই মানুষদের মুখে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর ক্লান্তির ছাপ। কখন আদালতে তুলবে, কখন একটু কথা বলা যাবে, মামলার সবশেষ অবস্থা কী, বাড়ির খবর জানানোর তাড়া এমন অপেক্ষা, অনিশ্চয়তা দিনভর। গাড়ির ভেতর থেকেও শোনা যায় স্বজনদের উদ্দেশ্যে চিৎকার। বাইরে থেকে প্রিজন ভ্যানের ভেতরের মানুষটিকে দেখার সুযোগ নেই।
আদালতের প্রসিকিউশন শাখার ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার আদালত এলাকার তিনটি হাজতখানায় প্রতি কর্মদিবসে অন্তত ৬০০ আসামিকে আনা হয়। তাদের মধ্যে আগের দিন গ্রেপ্তার বা আটক ব্যক্তিরা যেমন থাকে, তেমনি ধার্য তারিখে বিচারাধীন মামলার আসামিরাও থাকে। সিএমএম আদালতের পাশের হাজতখানায় আনা হয় সবচেয়ে বেশিসংখ্যক আসামি ৪০০ থেকে ৫০০।
স্বজনরা দিনভর অপেক্ষা করলেও সামনাসামনি সাক্ষাতের সুযোগ মেলে না। কখনো কখনো ‘বিশেষ’ ব্যবস্থায় সাক্ষাতের সুযোগ পেলেও অনেকেই টাউট ও দালালের প্রতারণার শিকার হন। স্বজনেরা বলেন, ‘এক প্যাকেট খাবার কিনতে যে টাকা খরচ হয় তার তিন গুণ টাকা দিতে হয় স্বজনের কাছে সেই খাবার পৌঁছে দিতে।’ দায়িত্বরত পুলিশরা বলে, ‘হাজিরার জন্য আনা আসামিকে বাইরে থেকে খাবার দেওয়ার নিয়ম নেই।’
পুরো আদালতপাড়ায় নারী ও শিশুদের জন্য ছোট একটি বিশ্রামাগার আছে রেবতি ম্যানশন ভবনের নিচে। সেখানে স্থান সংকুলান হয় না।
প্রায় এক মাস আগে চকবাজারে মোগলটুলী এলাকায় একটি ভেজাল প্রসাধনী কারখানায় অভিযানে মালিকের সঙ্গে গ্রেপ্তার হন কর্মচারী আফজাল (২১)। তার জামিনের জন্য চেষ্টা করছেন দুই ভাই সাদ্দাম ও সোহেল। ভাইয়ের হাজিরার ধার্য তারিখে কথা হয় দুজনের সঙ্গে। বড় ভাই সোহেল বলেন, ‘এইটুকু ছেলে জেলখানার কী বুঝে বলেন। অনেক চেষ্টা করছি। বেলা ১টা বাজলেও কথা বলতে পারিনি। কখন আদালতে তোলা হবে, জামিন হবে কি না, জানি না।’
সকালে রায়েরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি এলাকা থেকে দুই ছেলে ইমন ও রিয়াদকে একনজর দেখতে আসেন মা রীনা বেগম (৪৫)। মাদকের মামলায় দুই ছেলে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে এক মাস। কখন আদালতে তোলা হবে কিছুই জানেন না রীনা। আইনজীবীর বরাতে বলেন, অপেক্ষায় থাকতে হবে। নবম শ্রেণির ছাত্রী ছোট মেয়ে সুমীর হাত ধরে অপেক্ষা করেন, অপেক্ষার প্রহর ফুরোয় না। ভোর থেকে অপেক্ষমাণ। দুপুর গড়িয়ে গেলেও মুখে কিছু রোচেনি। রীনা বেগম বলেন, ‘মাইয়াডা একটা শিঙাড়া খাইছে। যার দুই ছেলে কারাগারে তার পেটে খাওন যায় ক্যামনে বলেন।’
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সিএমএম আদালত এলাকায় কথা হয় এক নারীর সঙ্গে। একটি বড়সড় কাপড়ের ব্যাগ হাতে অস্বস্তি নিয়ে পায়চারি করছেন। নাম-পরিচয় জানাতে অনিচ্ছুক তিনি। বলেন, ‘স্বামী একটি বায়িং হাউজের মালিক। বাসা উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে। গত ৩০ নভেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে স্বামীর মুঠোফোন থেকে স্থানীয় থানা-কর্তৃপক্ষ জানায় মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তার স্বামী থানায় আছেন। এরপর ফোন বন্ধ। তিনি বলেন, ‘শাশুড়িকে নিয়ে সারা রাত অস্থিরতায় কাটিয়েছি। সকাল থেকে স্বামীর অপেক্ষা। এখন পর্যন্ত জানতে পারিনি তাকে কোথায় রাখা হয়েছে। কখন কোন আদালতে তোলা হবে কিছুই জানি না।’
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতের সামনে কথা হয় মর্জিনা বেগমের (৩০) সঙ্গে। মাদকের মামলায় প্রায় দেড় বছর ধরে কারাবন্দি বাবা মোস্তফা মিয়া (৫৫)। কাজ করতেন বাসের কন্ডাক্টর হিসেবে। দাদাকে একনজর দেখতে এসেছে দুই বছরের নাতি (মর্জিনার ছেলে) মোহাম্মদ। সঙ্গে সকালে কেনা এক প্যাকেট বিরিয়ানি। সম্প্রতি আদালত এলাকা থেকে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তার কড়াকড়ি চলছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় দূর থেকে একনজর দেখার অপেক্ষায় ক্লান্ত মর্জিনা ও তার ছেলে। তিনি বলেন, ‘আব্বা ছাড়া আমার কেউ নাই। ছেলেডারে নিয়া খুব কষ্ট করতাছি। একটু যদি আব্বারে দেখতে পারতাম। একটু খাওয়াইতে পারতাম।’
সবুজবাগের শাহীনবাগ এলাকা থেকে মরিয়ম বেগম (৪০) এসেছেন ছেলে মোস্তাকিমের সাক্ষাৎ পেতে। অপহরণ মামলায় ছেলে কারাগারে ২২ মাস ধরে। আইনজীবী বলেছেন, হাজিরার ধার্য তারিখ। শীতের কাপড় নিয়ে অপেক্ষায় তিনি। যদি একটু দেখা মেলে। পূর্ব রামপুরা এলাকা থেকে স্বামী মিরাজকে (২৫) একনজর দেখার অপেক্ষায় স্ত্রী রুমী আক্তার। তিনি দাবি করেন, এলাকায় ডিশলাইন সংযোগের ব্যবসা নিয়ে বিরোধে মাদকের মামলায় তার স্বামীকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে প্রতিপক্ষ। দুই বছরের ছেলেকে রেখে এসেছেন শাশুড়ির কাছে। রুমী বলেন, ‘অনেক কষ্ট করতাছে। এক মাস আগের তারিখে আসছিলাম। সে বলেছে, জামিন আর লাগব না। এরপর আসলে তার লাশ নিয়া যাইতে কইছে।’
ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফিরোজুর রহমান মন্টু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কারাগারের বাইরে কাউকে খাবার, পোশাক দেওয়ার নিয়ম নেই; সাক্ষাতের সুযোগ নেই। কিছু অসৎ মানুষ টাকা নিয়ে কাজটি করে থাকে। অনেক দিন ধরেই এ অবস্থা চলছে। অনেকে নির্ধারিত তারিখে আসেন। আবার অনেকে ভুল তথ্য পেয়েও আসেন। নারী ও শিশুরা কষ্ট করেন।’ তিনি বলেন, ‘আমাদেরও খারাপ লাগে তাদের কষ্ট দেখে। ছোট এই এলাকায় বিশ্রাম করার মতো কোনো জায়গা বা পরিবেশ নেই। আইনজীবীরা যদি তাদের সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন তাহলে হয়তো এত দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।’
আসামিরা নানা অভিযোগে আটক আছেন। সেই সব অভিযোগ হয়তো আমলযোগ্য, অথবা নয়। তার বিচার করবে আদালত। কিন্তু আসামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসা স্বজনদের, অপেক্ষমাণ স্বজনদের কষ্টের, অনিশ্চয়তার, ক্লান্তির প্রহরগুলো বাস্তব এবং তা মানবিকতার দৃষ্টিতে দেখার দাবি রাখে। যে দ- আইনানুসারে প্রাপ্য তা আসামিরা পাক। স্বজনরাও মানবিকতার ছোঁয়া পাক, যতটুকু আইন অনুমোদন করে। হয়রানি, দালালের বাটপারির শিকার যেন তারা না হয়।
ভাড়া করা বিমানে উড়িয়ে নিয়েও মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম ম্যাচে একাদশে রাখল না দিল্লি ক্যাপিটালস। আসরে তাদের শুরুটাও ভালো হলো না। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারল মোস্তাফিজবিহীন দিল্লি।
ঘরের মাঠে ৫০ রানের জয়ে আসর শুরু করল লক্ষ্ণৌ। ১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিল্লি থামে ৯ উইকেটে ১৪৩ রানে। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়ে লক্ষ্ণৌয়ের জয়ের নায়ক মার্ক উড।
এদিন দিল্লির ব্যাটিং ছিল পুরো ফ্লপ। দলের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ৪৮ বলে ৫৬ রান করেছেন। পাশাপাশি রাইলি রোশো ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু বাকিরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ফলে যা হরার তাই হলো ম্যাচের ফল।
এর আগে স্বাগতিক দলের হয়ে ঝড় তোলেন কাইল মেয়ার্স। এই ক্যারিবীয়ান ৩৮ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন। ২টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৭টি ছক্কা। এ ছাড়া নিকোলস পুরান ২১ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৩ রানের পুঁজি গড়ে লক্ষ্ণৌ।
গত অক্টোবরের পর আর্সেনালের জার্সিতে প্রথম গোলের দেখা পেলেন গাব্রিয়েল জেসুস। তার আবার জোড়া গোল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের জ্বলে ওঠার দিনে লিডস ইউনাইটেডকে উড়িয়ে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ফের আট পয়েন্টে এগিয়ে গেল আর্সেনাল।
ঘরের মাঠে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতে আর্সেনাল। স্পট কিকে দলকে প্রথম এগিয়ে দেন জেসুস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেন হোয়াইট ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এর খানিক পরই জোড়া গোল পূর্ণ করেন জেসুস।
এরপর লিডস একটি গোল শোধ করলেও গ্রানিত জাকার গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে ফেরার পর এটিই প্রথম ম্যাচ ছিল আর্সেনালের। বিরতিতে যাওয়ার আগে নিজেদের মাঠে একই ব্যবধানে তারা হারিয়েছিল ক্রিস্টাল প্যালেসকে।
এই জয়ে ২৯ ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল গানাররা। ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর প্রথমবার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্সেনাল। তাদের সঙ্গে গত লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ব্যবধান ৮।
গানারদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিটি। একই দিন তারাও নিজেদের মাঠে লিভারপুলকে উড়িয়ে দিয়েছে ৪-১ গোলে।
গাজীপুরের টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীতে ৩৬০ টাকা বেতনে কর্মজীবন শুরু করা আসাদুর রহমান কিরণ এখন গাজীপুর মহানগরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর বিভিন্ন দল বদলে ক্ষমতার পাশাপাশি প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। বিভিন্ন সূত্র মতে, কিরণ এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। তার এত সম্পদের মালিক হওয়ার পেছনে রয়েছে দখলবাজি, জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর দুর্নীতি ও অনিয়ম।
কিরণের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ ৩১টি দপ্তরে যে অভিযোগ জমা পড়েছে, তাতে ডিগবাজি দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসা এই ভারপ্রাপ্ত মেয়রের ৬০০ কোটি টাকার দুর্নীতি-অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য হাইকোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছে।
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর নির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। নগরীর ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ তখন ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণকে একাধিকবার ফোন করা হয়েছে। মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।
৩১ দপ্তরে অভিযোগ : গত বছর ২০ জুলাই ৩১টি দপ্তরে সচেতন নাগরিক, বাংলাদেশের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন মো. নজরুল ইসলাম। লিখিত অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, দুদক, স্থানীয় সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে গত বছর জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালন না করেও সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে টাকা আত্মসাৎ করেছেন কিরণ।
জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার অভিযোগপত্রে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের দুর্নীতি ও অনিয়ম চিত্র তুলে ধরেছি।’
কিরণের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র : ভারপ্রাপ্ত মেয়রের চেয়ারে বসে কিরণ দুর্নীতি-লুটপাট, কমিশন বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। দায়িত্ব নেওয়ার পর তার নজর পড়ে পুবাইলের চিরুলিয়ায় অর্পিত সম্পত্তির ওপর। ২৩ বিঘা জমি নিজের কবজায় নেন কিরণ। এর জন্য ভুয়া জমির মালিক বানান একজনকে। এ জমি নিজের করায়ত্তে নিতে সিটি করপোরেশনের ১৮ লাখ টাকা কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। জানাজানি হয়ে গেলে কিছুদিন আগে কর পরিশোধ করেন। তবে অবৈধ প্রক্রিয়ায় জমির মালিক হওয়ায় ওই জমির খাজনা এখনো দিতে পারেননি কিরণ।
পোশাকশিল্প কারখানার সবচেয়ে বড় নগরী গাজীপুর। সিটি করপোরেশনের আয়ের সবচেয়ে বড় মাধ্যম শিল্প ও হোল্ডিং ট্যাক্স। আর সেখানেই অনিয়মের বড় ক্ষেত্র তৈরি করেছেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র। তিন/পাঁচ কোটি টাকার বকেয়া হোল্ডিং, শিল্প ট্যাক্স অর্ধেকে নামিয়ে এনে করপোরেশনের কোষাগারে মাত্র ৫০ লাখ টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে রেহাই দিয়ে দেন করদাতাদের। কিরণের এই কৌশলে বেঁচে যান কর ফাঁকি দেওয়া শিল্প-মালিকরা। কিন্তু রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় রাষ্ট্র। নগরের আটটি জোনে করের টাকা আত্মসাৎ করার অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিরণ ২০১৬-১৭ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় একটি টেন্ডার আহ্বান করেন। টেন্ডার নম্বর : জিসিসি/জেড। ওই টেন্ডারের কাজের অগ্রগতি না থাকায় জাহাঙ্গীর আলম মেয়র নির্বাচিত হলে ওই টেন্ডারের কোনো বিল পরিশোধ করতে পারেননি কিরণ। ২০২১ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই বিল পরিশোধের উদ্যোগ নেন। ওই সময়ের বিভিন্ন ঠিকাদারকে ডেকে তাদের কাছ থেকে কাজের হিসাব করে তার কমিশন আদায় করেন কিরণ। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কিছু চিত্র সিটি করপোরেশনের চেক রেজিস্ট্রার বই ঘেঁটেও পাওয়া গেছে।
উত্তরায় ‘অস্থায়ী কার্যালয়’ : উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডে ১০ নম্বর বাড়ির ছয়তলায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একটি ‘কার্যালয়’ করেছেন কিরণ। উত্তরার এ কার্যালয়ে বসে ঠিকাদারদের নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। লেনদেন-দরবার সবই হয় এ বাড়িতে বসেই। পার্সেন্টেজ ছাড়া যেমন ঠিকাদারদের কাজের বিল পরিশোধ করা হয় না, তেমনি পার্সেন্টেজ ছাড়া ঠিকাদারি কাজও পান না কেউই। কোন কাজ কে পাবে, কে পাবে না, কে কত পার্সেন্ট কমিশন দেবে এসব হিসাব ও মধ্যরাতের প্রমোদ-ফুর্তির যে ব্যয় হয় সিটি করপোরেশনের এলআর ফান্ড থেকে নির্বাহ করা হয়। শিল্পাঞ্চল-সমৃদ্ধ গাজীপুর নগরীর অধিকাংশ ব্যবসায়ী-ঠিকাদার ‘১০ পার্সেন্ট’ হিসাবেও কিরণকে চিনে-জানে।
বর্তমানে গাজীপুর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সারা জীবন রাজনীতি করেছি দলের জন্য। অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছি কিন্তু মূল্যায়ন পাইনি। একটি কাজের জন্য আমি ছয় মাস ঘুরছি। কিন্তু কিরণ আমাকে কাজ দিচ্ছেন না। কারণ আমার কাছ থেকে পার্সেন্টেজ নিতে পারবেন না।’
শুধু কী তা-ই, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজনের নামে গত বছর ১৭ মার্চ কোনো আয়োজন না করেই কিরণ সিটি করপোরেশনের খরচের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগও আছে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৭৬ জন কাউন্সিলর এবং কিছু কর্মকর্তার সিলেটে পিকনিক আয়োজন করার নামে করপোরেশনের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা খরচ বাবদ দেখিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগও আছে।
কিরণের সম্পদ : টঙ্গীর পাগাড়, ঢাকার আশুলিয়া এবং গাজীপুরে নিজ নামে, স্ত্রী, শ্যালক ও শ্যালিকার নামে ১১২ বিঘা জমির মালিক কিরণ। টঙ্গীর পাগাড়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কিছু জমি রয়েছে, যা নয়ছয় ও ভয়ভীতি দেখিয়ে দলিল করে নিয়েছেন তিনি। নজরুল ইসলামের অভিযোগ অনুযায়ী, উত্তরায় ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডের ১০ নম্বর বাড়িটি সাততলা। এটি নির্মাণ করতে কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। একই এলাকার ৭ নম্বর সেক্টরে ১৮ নম্বর রোডে ৯৫ নম্বর বাড়ি রয়েছে। বারোতলা নির্মাণাধীন ওই ভবনের আনুমানিক মূল্য ৩৫ কোটি টাকা। গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কে ফ্ল্যাটের তথ্যও পাওয়া গেছে। ২ হাজার ৫০০ বর্গফুটের ওই ফ্ল্যাটের মূল্য কমপক্ষে সাত কোটি টাকা।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় স্ত্রী ও নিজের নামে অন্তত ২০০ বিঘা জমির ওপর ভারপ্রাপ্ত মেয়রের কারখানা রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি টাকা হতে পারে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অধীনে টঙ্গীতে তিনটি কারখানা আছে তার। এগুলোর আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি কোটি টাকা।
কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত কয়েকশ কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিজের ও স্ত্রীর নামে যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্ক শহরে বাড়ি করেছেন বলেও অভিযোগ আছে। কিরণ দ্বৈত নাগরিক বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।
হাইকোর্টের আদেশ : গত বছরের ২০ জুলাই দুদকে জমা পড়া অভিযোগ লাল ফিতায় আটকে গেলে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন হয়। গত বছর ২১ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করা হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত কিরণের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে। হাইকোর্ট চার মাসের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে সময় বেঁধে দেন। একই সঙ্গে গাজীপুরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।
রাজনীতিতে উত্থান : প্রিন্টিং প্রেস কারখানায় বাইন্ডার-ম্যান হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন আসাদুর রহমান কিরণ। ১৯৮৪-৮৫ সালে এলিট প্রিন্টিং প্রেস নামে ওই কারখানায় চাকরি করা কিরণ ১৯৮৬ সালে রাজনীতিতে আসেন। ওই সময় তিনি জাতীয় পার্টির যুব সংগঠন যুব সংহতির টঙ্গীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই সময় গাজীপুর নিয়ন্ত্রণ করতেন হাসান উদ্দিন সরকার। তিনি জাতীয় পার্টি ও পরে বিএনপির রাজনীতিতেও যুক্ত হন। ওই সময়ের সবচেয়ে ক্ষমতাধর হাসান উদ্দিন সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা ও তার ঘনিষ্ঠ পরিচিতি লাভ করে শুরু করেন জমি দখল। টঙ্গী, পাগাড় মৌজায় হিন্দু-খ্রিস্টানের মালিকানায় থাকা জমি দখল করে নেন তিনি। পরে প্লট বানিয়ে চড়া দামে বিক্রি করেন। তবে প্রিন্টিং প্রেসের শ্রমিক কিরণ ওই সময় টঙ্গীর বিসিক এলাকায় শ্রমিক নেতা হিসেবেও আধিপত্য বিস্তার করেন। হিন্দু-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কেউ জমি দিতে না চাইলে রাজনৈতিক চাপ ও সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে উচ্ছেদ করতেন। পাগাড় শিল্পাঞ্চল এলাকা হওয়ায় ওই এলাকায় টার্গেট করে জমি দখল করেন কিরণ। টঙ্গী পৌরসভা হিসেবে প্রথম ভোটে ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কমিশনারও নির্বাচিত হন। তত দিনে ক্ষমতা-সম্পদ ও অঢেল অর্থের মালিক হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর গুরু পাল্টে কিরণ হয়ে যান সাবেক পৌর মেয়র গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লার ‘মাইম্যান’। এই সুযোগে ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত হয়ে ওঠে কিরণের। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে আজমত উল্লা মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক আবদুল মান্নানের কাছে পরাজিত হন। কিরণ মূলত দুর্নীতি-অনিয়ম শেখেন তখন থেকেই। বিএনপি নেতা মান্নান মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হলে তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান। গাজীপুরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচন কেন্দ্র করে আজমত উল্লার সঙ্গেও সুসম্পর্ক নেই কিরণের।
গাজীপুরের মাওনা এলাকার আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চেয়ার ছুঁয়েই কিরণ স্বেচ্ছাচারিতা, লুটপাট, ভূমিদখলসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তিনি করেননি। দলীয় লোককে সরিয়ে রেখেছেন, সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রেখেছেন। কারণ, কিরণ আওয়ামী লীগ নয়, মূলত সুবিধাবাদী।’
ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিষয়ে জানতে চাইলে আজমত উল্লা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিরণ অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন সত্যি, তবে তিনি দলের জন্য কাজ করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের যে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে সেটা তো প্রমাণ হয়নি এখনো। প্রমাণ হলে তখন মন্তব্য করা যাবে।’
অর্থনৈতিক সংকট আর রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে নতুন বছরে নতুন শুরুর আশা ছিল শ্রীলঙ্কার। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি সংকটের অভিঘাত এখনো সইতে হচ্ছে দেশটির। বিদেশি সহায়তার পরও হু হু করে বাড়ছে দেশটির মূল্যস্ফীতি। গেল ফেব্রুয়ারি মাসে মুদ্রাস্ফীতির হার ৫০ শতাংশের ওপরে ছিল। অথচ শ্রমিক-চাকরিজীবীদের বেতন বাড়েনি। অনেকে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাজ হারানো লোকের সংখ্যাও কম না। এ পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার তরুণদের অনেকেই দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। দেশটির সরকারি সূত্র অনুযায়ী, ২০২২ সালেই ৩ লাখের বেশি মানুষ বাইরের দেশে কাজ খুঁজতে গিয়েছে। আর চলতি বছর প্রথম দিনেই দেশ ছেড়েছে আরও ৭৩ হাজার মানুষ। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, দেশটি তার বিভিন্ন শিল্প খাতের প্রয়োজনীয় লোকবলই পাচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে চললে উৎপাদন কমে গিয়ে আরেক দফা সংকটে পড়তে পারে দ্বীপরাষ্ট্রটি।
ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে দেশটির ব্যবসায়ীদের বরাতে বলা হয়েছে, তারা কর্মী সংকটে ভুগছেন, যাদের মধ্যে ম্যানেজার পদও রয়েছে। খালি থাকা ম্যানেজার পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়ার জন্য তাদের আলাদা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। কোম্পানিগুলো সাধারণত ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদেরই নিয়োগ দিত এবং এ বয়সের তরুণরাই চাকরি ছেড়ে নতুন চাকরিতে যোগ দিতেন। তবে এখন চল্লিশ এবং পঞ্চাশ বছর বয়সীরাও চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
জানুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে আইএমএফ-এর ঋণ প্যাকেজের শর্ত হিসেবে বেশ কয়েক দফা কর বাড়িয়েছেন। বর্তমানে দেশটিতে আয়করের হার ৩৬ শতাংশ। এর সঙ্গে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি জনগণকে ফেলেছে ভীষণ চাপে। দ্বিমুখী এই চাপে দেশ ছাড়ছেন নাগরিকরা। দেশটির বিরোধী দল ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার পার্টির ভাষ্য, সরকার অতিরিক্ত করের বোঝা চাপানোয় দলে দলে দেশ ছাড়ছেন মানুষ।
সাময়িকীটি বলছে, শত শত ডাক্তার ইতিমধ্যেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, যার মধ্যে গত বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসেই গিয়েছেন ৪৭৭ জন। এভাবে এগোতে থাকলে গ্রামীণ অঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার সংকট দেখা যাবে।
এদিকে শ্রীলঙ্কান সরকারও এই দেশ ছেড়ে পালানোকে উৎসাহিত করছে। প্রথমত, সরকারি খাতে বেতনের বোঝা কমানোর জন্য এবং দ্বিতীয়ত, বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের আশায়। গত জুন মাসে সরকার মাসে ১০০-৫০০ ডলার রেমিট্যান্স পাঠানোর শর্তে দেশটির ডাক্তারদের পাঁচ বছরের জন্য ছুটি দেওয়ার ঘোষণাও দেয়।
ইকোনমিস্ট বলছে, দেশটির প্রবাসী নিয়োগ মন্ত্রী মনুশা নানায়াক্কার বিভিন্নভাবে শ্রীলঙ্কান কর্মীদের দেশের বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করছেন। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় চাকরির সুযোগের বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। চলো বিদেশে যাই- নামের এক ইউটিউব চ্যানেল থেকে জনগণের কাছে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় বিদেশে চাকরির সুযোগ প্রচার করা হচ্ছে। তাতে বলা হচ্ছে, নার্সিং, কেয়ার-গিভিংসহ অন্যান্য সেবামূলক কাজেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে শ্রীলঙ্কান সরকার, যাতে করে কাতার, কুয়েত, সৌদি আরবের মতো দেশগুলোতে তারা কাজের ব্যবস্থা করতে পারে। আর এই পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে আশানুরূপ ফলাফল পাচ্ছে শ্রীলঙ্কান সরকার। গত চার মাসে রেমিট্যান্সের হার বেশ খানিকটা বেড়েছে। তবে এর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় মেধাবীরা দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন, যাদের দেশ পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজন।
নানায়াক্কার জানিয়েছেন সেবা এবং উৎপাদন খাতে ইতিমধ্যেই কর্মী সংকট দেখা গিয়েছে। এটি প্রতিরোধের জন্য কিছু কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘লয়্যালটি বোনাস’ ঘোষণা করেছে, অর্থাৎ চাকরি না ছাড়লে অতিরিক্ত বেতন দেওয়া হবে।
কুমিল্লার মুরাদনগরে বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তায় ইটের প্রাচীর তুলে প্রতিবেশী দুই পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী দুই সহোদরের বিরুদ্ধে। আর শুধু তাই নয় মাইনুদ্দিন ও শফিকুল ইসলাম নামে ওই দুই সহোদরের তোলা প্রাচীরের কারণে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে একটি মাদ্রাসাও। ফলে নিরুপায় হয়ে মই দিয়ে ৭ ফুট উঁচু সীমানা প্রাচীর পার হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে মাদ্রাসাটির শতাধিক শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীকে, যা তাদের জন্য খুবই বিপজ্জনক। অন্যদিকে প্রাচীরে আটকে পড়া দুটি পরিবারের শিক্ষার্থীরাও মই দিয়ে প্রাচীর টপকে তাদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়াও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে পরিবার দুটি। এমন ঘটনা ঘটেছে উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার রামচন্দ্রপুর উত্তর বাখরাবাদ গ্রামে।
এদিকে প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী বলছে, প্রত্যেকেরই যার যার বাড়ির নিরাপত্তা বেষ্টনীর প্রয়োজন রয়েছে, তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রতিবেশীদের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে তা কারও কাম্য নয়।
জানা গেছে, উত্তর বাখরাবাদ গ্রামের প্রভাবশালী মাইনুদ্দিনের বাড়ির পাশে কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় রাবেয়া বসরী মাদ্রাসা। তার পাশে বসবাস দুটি পরিবারের। মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পরিবার দুটির সদস্যদের চলাচলের একমাত্র রাস্তা ছিল মাইনুদ্দিন ও শফিকুলের জমির ওপর দিয়ে। কিন্তু তিনি হঠাৎই তার বাড়ির চারপাশে ইটের সীমানা দেয়াল তুলে দেন। এতে বাধ্য হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিদিন মাদ্রাসায় যেতে হচ্ছে বাঁশের মই বেয়ে প্রতিবেশীদের দেয়াল টপকে। আবার তাদের বাড়ি ফিরতেও হয় দেয়াল বেয়ে। এরই মধ্যে পা ফসকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে অনেকেই।
ভুক্তভোগী রাবেয়া বসরী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হাফেজ নজরুল ইসলাম অভিযোগ করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বি চাপিতলা গ্রামের মরহুম হাজি আব্দুর রহমান ২০১৮ সালে ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য রাস্তাটি মৌখিকভাবে দিয়ে যান। কিন্তু তার মৃত্যুর পর ছেলে মাইনুদ্দিন ও তার ভাই শফিকুল ইসলাম মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও প্রতিবেশীদের যাতায়াতের রাস্তাটি বন্ধ করে দেন। সমাধান চেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল সরকারের কাছে বেশ কয়েকবার গেলেও তিনি দুই বছর ধরে আমাকে ঘুরাচ্ছেন। দুই বছর আগে বাড়িসহ জমি কেনার প্রস্তাব দেন তারা। কিনতে রাজি না হওয়ায় সীমানা প্রচীর নির্মাণ করে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেন।’ এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলেও জানান হাফেজ নজরুল ইসলাম।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য ও রামচন্দ্রপুর রামকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক কবির আহমেদ ভূঁইয়া আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ এখানে বসবাস করছি এবং বসবাসের শুরু থেকেই ওই সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করে আসছি। হঠাৎ করে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি।’
তবে সীমানা প্রাচীর নির্মাণকারী মাইনুদ্দিন বলেন, ‘প্রাচীর নির্মাণ করে আমি কোনো অপরাধ করিনি। আমার জমিতে আমি প্রাচীর নির্মাণ করেছি। এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেশ কয়েকবার আমি চেষ্টা করেছি বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার। কিন্তু জমির মালিক মাইনুদ্দিন তার জমির ওপর দিয়ে সড়ক দিতে রাজি হচ্ছেন না।’
সার্বিক বিষয়ে মুরাদনগরের ইউএনও মো. আলাউদ্দিন ভূঁইয়া জনী বলেন, ‘অবরুদ্ধ হওয়ার বিষয়টি আমি জেনেছি। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বলেছি বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করে দেওয়ার জন্য। এর পরও ভুক্তভোগীরা আদালতের সহযোগিতা নিতে পারেন।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।