
নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’য় যুক্ত হয়ে ঘর ছেড়েছে বহু তরুণ। সংগঠনটি জামায়াতে ইসলামীর কাছ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেররিজমের (সিটিটিসি) প্রধান আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘শারক্বীয়ার শীর্ষ পর্যায়ের যাদের গ্রেপ্তার করেছি তাদের জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য পেয়েছি তারা জামায়াতে ইসলামীর কাছ থেকেও সহযোগিতা পাচ্ছে।’
এদিকে গতকাল বিকেলে শফিকুর রহমানকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে সিটিটিসি। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালত সাত দিনের রিমান্ডের আদেশ দেয়।
সিটিটিসিপ্রধান বলেন, ‘সিলেট অঞ্চল থেকে হিজরতকারী যাদের গ্রেপ্তার করেছি তাদের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখেছি, তারা আগে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল। এ দুই সংগঠনের সঙ্গে পরস্পর বোঝাপড়া থাকতে পারে। অথবা তাদের সম্পূর্ণরূপে সহযোগিতাও করতে পারে।’ গত সোমবার রাতে ঢাকা থেকে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. মো. শফিকুর রহমানকে আটক করা হয়। তাকে যাত্রাবাড়ী থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় সিটিটিসি। ওই মামলায় তার ছেলে রাফাতও আসামি।
গতকাল বিকেলে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসিপ্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, জামায়াত আমিরের ছেলেই প্রথম হিজরতকারী। তার নেতৃত্বেই একটি বড় অংশ হিজরত করেছে। যে সংগঠনের আমিরের ছেলে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে হিজরত করে, সেই সংগঠনের অন্য আঞ্চলিক পর্যায়ের নেতাদের সমর্থন সহযোগিতা ছিল বলে জেনেছি, তথ্যও পেয়েছি।
তিনি জানান, গত ৯ নভেম্বর জামায়াত আমিরের ছেলে ডা. রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে নতুন জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়ে ট্রেনিং ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য সিলেট থেকে হিজরত করা তিন জঙ্গি সদস্যকে যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডা. রাফাতকে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আসাদুজ্জামান বলেন, ডা. রাফাত বাবা ডা. শফিকুর রহমানের সম্মতিক্রমেই ২০২১ সালের জুন মাসে বান্দরবানে কুকিচিনে নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। শফিকুর রহমানের সিলেটের বাসায় বিভিন্ন সময় জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন ডা. রাফাত। ১১ ছেলেসহ রাফাত যে হিজরত করেছেন এর সবই জানতেন জামায়াত আমির। ক্ষেত্রবিশেষ তিনি সহযোগিতাও করেছেন। হিজরতের যাবতীয় ব্যয়ভারও তিনি বহন করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, ডাক্তার শাকের নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করেছি। তিনি নতুন জঙ্গি সংগঠনটির দাওয়াতি শাখার প্রধান ছিলেন। এ সংগঠন থেকে আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিকভাবে অনেক সহযোগিতাই তারা পেতেন।
জামায়াতের আমির সাত দিনের রিমান্ডে : রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. মো. শফিকুর রহমানকে পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। সিটিটিসি ইউনিটের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী রিমান্ডের এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু, ঢাকা জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়ত হোসেন, বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর আজাদ রহমান প্রমুখ। আসামিপক্ষে রিমান্ডের বিরোধিতা করে শুনানি করেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, এসএম কামাল উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন।
আদালতের আদেশ শেষে জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মিছিল করেন। এর আগে জামায়াতের আমিরকে আদালতে আনার সময় আদালত অঙ্গনে নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সোয়াটের গাড়ি দ্বারা নিরাপত্তা বেষ্টনীতে তাকে আদালতের হাজতখানায় আনা ও এজলাসে তোলা হয়।
দেশের রাজনীতিতে বিদেশ নির্ভরতার বিষয়টি বেশ পুরনো। বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও বিদেশিদের হস্তক্ষেপ করার প্রবণতা বেড়েছে। আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ধরে রাখা আর ক্ষমতা থেকে আওয়ামী লীগকে হটিয়ে বিএনপির ক্ষমতার চেয়ারে বসার এই লড়াই বিদেশিদের আরও সুযোগ করে দিয়েছে। এছাড়া বিদেশিদের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা স্বার্থও রয়েছে। সেই স্বার্থের কারণে সুবিধাজনক দলকে তারা ক্ষমতায় দেখতে চায় বা রাখতে চায়।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ তৈরির বিষয়ে এসব তথ্য। অন্য আরও লক্ষ্যের সঙ্গে দুই দলের বড় সমাবেশের লক্ষ্যও তাই বিদেশিদের আস্থা আনা।
দুই দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিদেশিদের দিকে বেশি নজর বিএনপির। আবার চাপমুক্ত থাকতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বিদেশিদের সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে। তাদের হাতে রাখতে নানা কৌশলে রাজনীতি করে চলেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি।
প্রকাশ্যে বিদেশিদের নজর কাড়তে শোডাউন বা বড় বড় জমায়েতের কথা আওয়ামী লীগ বা বিএনপির কোনো নেতারা প্রকাশ্যে স্বীকার করেননি।
তবে দুই দলের একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানায়, শক্তিধর কয়েকটি দেশের কর্তাব্যক্তিরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে তেমন ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে। অর্থাৎ জনমত যেদিকে শক্তিধর দেশের সমর্থনও সেদিকেই থাকবে। বাংলাদেশের মানুষের চাওয়ার বাইরে তারা কোনো পক্ষ হতে চায় না। তবে গণতন্ত্র ধ্বংস হোক এমন কোনো পথেও দেশের কোনো রাজনৈতিক দলকেও তারা চায় না।
তাই বিদেশিদের কাছে জনপ্রিয়তা প্রমাণ করতে শোডাউনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তেমনি আওয়ামী লীগকে জনবিচ্ছিন্ন প্রমাণে শোডাউনের দিকে ঝুঁকেছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। দুই দলের একাধিক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলের কর্মসূচিও এখন বিদেশিদের নজর কাড়ার লক্ষ্যে নেওয়া হয়। কর্মসূচির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ জানান দিতে চায় যে, সরকার ও দল দেশের মানুষের কাছে সমান জনপ্রিয়। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে, থাকবে। অন্যদিকে সরকার জনবিচ্ছিন্ন সেটা প্রমাণ করতে নানা কায়দায় রাজনীতি করে চলেছে বিএনপি। নিজেদের পক্ষে বিদেশিদের সমর্থন টানতে দেশের জনগণকেই অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তাই দুই দলেরই যেকোনো কর্মসূচিতে মানুষের উপস্থিতি ঘটাতে মরিয়া হয়ে ওঠে তারা। পৃথক কর্মসূচি আয়োজন করতে গিয়ে কার চেয়ে কে বেশি লোকসমাগম ঘটাতে পারে সে চেষ্টায় থাকে দুই দলই।
সূত্র জানায়, বিদেশিরাও জনসমর্থন কোন দিকে সেটা দেখতে চায়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে জনগণের বাইরে গিয়ে কোনো পক্ষের দিকে ঝুঁকবেন না তারা, ঢাকায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা তাদের বক্তব্যে এমনটাই জানিয়ে দিয়েছেন। বিদেশি কূটনীতিকরা আরও জানিয়েছেন, দেশের মানুষের চাওয়া-পাওয়ার প্রতিফলন রাজনীতিতে ও নির্বাচনে দেখতে চান তারা। গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে জনগণের দাবির সঙ্গেই বিদেশিরা থাকবেন।
সূত্র জানায়, কোনো কোনো দেশের দূত বিএনপির নীতিনির্ধারকদের পরামর্শ দিয়েছেন, তাদের আন্দোলনে জনগণের সম্পৃক্ততা থাকতে হবে। তাহলে তারাও পক্ষে অবস্থান নেবেন। তাই বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে সংগঠনকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি জনগণ তাদের সঙ্গে আছে, সেটা প্রমাণে গণসমাবেশে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়াতে বিভিন্ন সুবিধা রাখা হয়েছে। সমাবেশে আসা লোকজনের খাবার, থাকার ব্যবস্থা করেছে। তাঁবু টানিয়ে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির কর্মসূচিগুলো শুধু দেশের জনগণের মধ্যে নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও নজর কেড়েছে। বিশেষ করে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর সরকারের দমন-পীড়ন, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা-মামলা, কর্মসূচি করতে না দেওয়া ইত্যাদি। সবই আন্তর্জাতিক মহলের পর্যবেক্ষণে রয়েছে।’ তিনি বলেন, “এতদিন এসব বিষয় বাংলাদেশের দূতাবাস পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন তা আরও বিস্তার লাভ করেছে। ফলে এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি অত্যন্ত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি’। বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন বিষয় আন্তর্জাতিক মহলের তীক্ষè নজরে রয়েছে।”
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে বিদেশিদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় কখনো নরম ও কখনো গরম অবস্থানও দেখিয়ে আসছেন। সে তুলনায় ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক সুসংহত করতে বিভিন্ন পথ অনুসরণ করে চলেছে। সরকারের বিরুদ্ধে বিদেশিদের সোচ্চার করে তুলতে বিএনপি টাকা খরচ করে লবিস্টও নিয়োগ দিয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির অপপ্রচারের জবাব দিতে সরকারের পক্ষেও লবিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে। রাজনীতির মাঠে এ নিয়ে নানা সময় দুই দলই কথার লড়াই করে।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জনসভা নিয়ে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ। লোকসমাগমকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। জনসভাগুলোতে স্বয়ং দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকছেন। আওয়ামী লীগের জনসভা সফল করতে যেখানে জনসভা করা হয় তার আশপাশের জেলার নেতা ও দলীয় সংসদ সদস্যদের প্রতি লোকসমাগমের ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ আন্তর্জাতিক পরিম-লে সরকার ও দলের জনপ্রিয়তা ও শক্তি জানান দেওয়া।
রাজনীতিতে ব্যাপক লোক জমায়েতের যে কৌশল সেটা অনুসরণ করে দুই দলই প্রমাণ করতে চায় নিজ নিজ জনসমর্থন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মসূচিগুলো শেষ হলে লোকসমাগম নিয়ে কর্মসূচির সফলতা ব্যর্থতা নিয়ে দুই দলের নেতারাও বিতর্কে জড়ান। কর্মসূচি শেষে আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় দলই তাদের কর্মসূচিতে লাখ লাখ লোকের সমাগম ঘটেছে বলে দাবি করে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশ তোষণের রাজনীতি আওয়ামী লীগ করে না। তবে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয় এই নীতিতে বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগ। এই নীতি অনুসরণ করেই দেশ পরিচালনা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি প্রতিনিয়তই বিদেশি শক্তির কাছে মাথা নোয়ায়। বিএনপি দেশের বিরুদ্ধে বিদেশিদের কাছে অপপ্রচারে লিপ্ত।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বেপরোয়া চালকের মতো রাজনীতিতে বেপরোয়া চালক হচ্ছে বিএনপি। তারা কখন, কোথায় দুর্ঘটনা ঘটায় সেটাই চিন্তার বিষয়। ১০ ডিসেম্বরে ব্যর্থ হয়ে গন্ডগোল পাকানোর জন্য ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের দিন গণমিছিল কর্মসূচি দিয়েছে তারা।
গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের মাঠে (পুরনো বাণিজ্য মেলা মাঠ) ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের তেজগাঁও জোন আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের দিন বিএনপির গণমিছিল কর্মসূচি দেওয়ায় দলটির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সেদিন কেন তাদের কর্মসূচি আমি জানতে চাই। প্রত্যাহার করুন। সংঘাতের উসকানি দেবেন না। আমরা দুই মাস আগে সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেছি। ওইদিন গণমিছিল করার অর্থ হচ্ছে সংঘাতের উসকানি দেবে। ১০ তারিখে ব্যর্থ হয়ে ২৪ তারিখে গন্ডগোল পাকানোর চক্রান্ত করছে বিএনপি। এটা প্রতিহত করতে হবে।’
গত ১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগ মাঠে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে ১০ দাবি ঘোষণা করে বিএনপি। দাবি আদায়ে ২৪ ডিসেম্বর দেশের জেলা ও মহানগরের গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ওয়াশিংটন গিয়েছিলেন দাবি করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারকে নিষেধাজ্ঞা দিতে তদবির করতে গেছেন। আমীর খসরু সাহেব কী পেলেন! যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য ২০টি দেশের ৭০ জন এমপি-মন্ত্রীদের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ নেই। আমীর খসরুর মিশন ব্যর্থ। ১০ ডিসেম্বরের মিশনও ব্যর্থ।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপির ১০ ডিসেম্বর ভুয়া। সরকারের পতন ভুয়া। বিজয় মিছিল ভুয়া। তারেকের আগমন ভুয়া।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বেগম জিয়া বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক পাগল-শিশু ছাড়া কেউ বোঝে না। আমরা তার কথা মানি। কথা সত্য। ধন্যবাদ জানাই এ কথা বলার জন্য। বিএনপি কেন উল্টো চলে? বিএনপি যে দেশের কাছে নালিশ করেছে তাদের দেশেও তত্ত্বাবধায়ক নেই। আদালত এটা নাকচ করে দিয়েছে।’
বিএনপিকে আর ছাড় দেওয়া হবে বলে জানিয়ে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতার হারানো ময়ূর সিংহাসন ফিরে পেতে বিএনপি পাগল হয়ে গেছে। এ পাগলকে ঠা-া করতে হবে।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদের যাওয়ায় তার সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, ‘অলি সাহেব, ওদের (বিএনপি) অফিসে পুলিশ ঢুকে হামলা করেনি। আপনি যে কথা বলছেন, সেটা মিথ্যা।’
আওয়ামী লীগ কখনো ষড়যন্ত্র ও পেশিশক্তিকে বিশ্বাস করে না বলে দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমরা জনগণের রায় নিয়ে চলছি। জনগণের সমর্থনে রাজনীতি করি।’
১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের সর্বোচ্চ সুবিধা দেওয়ার পরও তারা নির্দিষ্ট একটি স্থানে সমাবেশ করার জন্য গোঁ ধরেছিল। আমরা তাদের উন্মুক্ত মাঠে যেতে বলেছিলাম। তারপর তারা বাধ্য হয়ে সেখানে সমাবেশ করেছে। বিএনপি ষড়যন্ত্র করলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বসে থাকবে না।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচির সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রমুখ।
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি অভিযান ও গোলাপবাগে গণসমাবেশের আগে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ এবং তাদের মুক্তির দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিএনপি।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি নেতারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নেতারা তাদের উদ্দেশে বলেন, সরকারের অন্যায়-অত্যাচার ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে পুলিশ গুলি চালাচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে। আপনারা কাকে রক্ষার জন্য এ কাজ করছেন। গুটিকয়েক লোককে রক্ষার জন্য কোটি কোটি মানুষের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। তাদের স্বার্থরক্ষা না করে জনগণের পক্ষে থাকুন।
বিচারকদের উদ্দেশে বিএনপি নেতারা বলেন, আপনারা যে শপথ নিয়েছেন তা পালন করছেন না। আল্লাহর কাছে আপনাদের জবাবদিহি করতে হবে।
সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিএনপির এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। তারা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে সেøাগান দেন। গত ১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। কর্মসূচি উপলক্ষে বিএনপি কার্যালয়ের সামনের রাস্তার এক পাশে নাইটিঙ্গেল মোড় ও অন্য পাশে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত বন্ধ ছিল। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কঠোর অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে খন্দকার মোশাররফ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘সরকারের সময় শেষ। জনগণ জেগে উঠেছে। তাদের চলে যেতে হবে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী। আপনাদের থাকতে হবে। অবৈধ সরকারের অবৈধ নির্দেশ মানবেন না। জনগণের পক্ষে থাকুন।’
তিনি বলেন, ‘গত ৭ ডিসেম্বর আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বর্বরতা চালানো হয়েছে। লন্ডভন্ড করা হয়েছে। জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। লক্ষ্য ছিল ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগের গণসমাবেশ প- করা। সরকার বিভিন্ন বিভাগের গণসমাবেশ পন্ড করতে পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছিল, হামলা চালিয়েছিল, নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছিল। তবুও গণসমাবেশ ঠেকাতে পারেনি। সরকার ভেবেছিল আমাদের মহাসচিব ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের গ্রেপ্তার করলে গণসমাবেশ পন্ড হবে। সরকার ব্যর্থ হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। ভোটাধিকার হরণ করেছে। গণতন্ত্র হত্যা করে দিনের ভোট রাতে ডাকাতি করে অবৈধভাবে সংসদ গঠন করেছে। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। বিদ্যুৎ খাতে লুটপাট করতে ইনডেমনিটি আইন করেছে। ব্যাংক লুট করা হচ্ছে। মানুষ আরও গরিব হচ্ছে, ঠিকমতো খেতে পারে না।’
সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধান বিরোধী দল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় বন্দি করে রেখেছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে বিদেশে থাকতে বাধ্য করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ব্যবহার করছে। এত নির্যাতন করেও বিএনপিকে দুর্বল করতে পারেনি। জনগণ পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে, এ সরকারকে তারা চায় না। সেই লক্ষ্যে আমরা যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলতে ১০ দফা ঘোষণা করেছি। গোটা বিশ্বের নেতারা বলছেন শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সরকারের পতন ঘটানো ছাড়া আমাদের বিকল্প নেই।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।বিজয় দিবসে রাজধানীতে র্যালি করবে বিএনপি : ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিজয় মিছিল বের করবে বিএনপি। বেলা ৩টায় শুরু হবে মিছিল। গতকাল মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বেলা ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আলোচনা সভা হবে। সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন বিএনপি নেতারা। বিজয় দিবসের দিন সকাল ৮টায় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিএনপির উদ্যোগে শহীদদের উদ্দেশে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। সাভার থেকে ফিরে সকাল ১০টায় শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাবেন নেতারা।
যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এ জেড এম আমিনুল ইসলাম চৌধুরী। তার বাবা আজিজুল ইসলাম চৌধুরীও ছিলেন সংগ্রামী মানুষ। যুক্ত ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে; কংগ্রেস করতেন। যুক্তফ্রন্টের সময় আওয়ামী মুসলিম লীগে যুক্ত হন তিনি। দীর্ঘদিন রতনকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। আমিনুলের মা আফতাব মহল ছিলেন গৃহিণী। তাদের বাড়ি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাহুকা গ্রামে। তিনি তৎকালীন সিরাজগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আমিনুল গোপনে চলে যান ভারতের কলকাতায়। দেখা করেন ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সাহেবের সঙ্গে। তিনি তাকে নিয়ে যান তাজউদ্দীন আহমেদের কাছে। ছাত্রলীগ করেন শুনতেই বললেন, ‘ওরা বিএলএফে যাক।’ তাকে রিক্রুট করেন সিরাজুল আলম খান। পরে পাঠিয়ে দেওয়া হয় দেরাদুন ট্রেনিং একাডেমিতে।
বাকি ইতিহাস শুনি এই বীরের জবানিতে। তিনি বলেন, “ট্রেনিং শুরু হলে ক্যাম্পে এসে নেতারা বললেন, ‘শর্ট ট্রেনিং দেন। ওকে আগেই ভেতরে পাঠাব।’ ফলে ১৫ দিন ট্রেনিং হয় আমার। এলএমজি, এসএলআর, গ্রেনেড, মর্টার ও আরসিএল গান চালানো ছাড়াও এক্সপ্লোসিভ দিয়ে ব্রিজ উড়িয়ে দেওয়ার কৌশলটাই বেশি শিখেছিলাম। ট্রেনিং শেষে হিলি বর্ডার দিয়ে গোপন পথে আসি নিজের এলাকায় সিরাজগঞ্জের রতনকান্দি ইউনিয়নে। সঙ্গে অস্ত্র ছিল একটা রিভলবার ও ২৫টি গুলি। ট্রেনিং শেষে বিভিন্ন ব্যাচ ঢুকবে। তাদের দেখাশোনা, শেল্টার, সহযোগিতা ও আক্রমণের ক্ষেত্র প্রস্তুত রাখতেই আগে পাঠানো হয় আমাকে।”
এলাকায় মুক্তিবাহিনীর লোকাল একটি গ্রুপকে পান আমিনুল। স্থানীয়ভাবে অস্ত্র সংগ্রহ করে ওই গ্রুপটি বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছিল। তিনি তাদের মোটিভেট করে দলে রাখেন। ২০ দিন পর ভারত থেকে ট্রেনিং শেষে ৮ জনের গ্রুপ নিয়ে ভেতরে ঢোকেন মোজাফ্ফর। সব মিলিয়ে তৈরি হয় তাদের ১৫ জনের একটি গেরিলা দল। কমান্ডে ছিলেন মোজাফ্ফর।
ট্রেনিংয়ে নির্দেশ ছিল ‘পরিচয় দেবে না, গোপনীয়তা রাখবে, অপারেশনে জয়লাভ করলেও প্রকাশ্যে আনন্দ প্রকাশ করা যাবে না।’ সেভাবেই গেরিলা অপারেশন শুরু করেন তারা। প্রথম অপারেশন ছিল বগুড়ার ধুনট থানায়। ওই অপারেশনে জয় পাননি। এরপর জয় বাংলা সেøাগান দিয়েই সিরাজগঞ্জের তাড়াশ থানায় আক্রমণ করেন। কয়েক পুলিশকে আত্মসমর্পণ করানোর পর সেখানে মিলে থ্রি নট থ্রি রাইফেল ও ৬-৭ বাক্সভর্তি গুলি। পরবর্তী অপারেশনগুলোতে সেসব কাজে লেগেছিল। বিএলএফের সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে এভাবেই আমিনুলরা গেরিলা আক্রমণ করেন বিভিন্ন এলাকায়।
ভাটপিয়ারী অপারেশনে মারাত্মক আহত হন আমিনুল ইসলাম। সেই ক্ষত নিয়েই জীবন কাটছে তার। কী ঘটেছিল একাত্তরের ওই দিনে? তিনি অকপটে বলেন অপারেশনের কথা, “ভাটপিয়ারীতে পাকিস্তানিদের একটা শক্তিশালী ক্যাম্প ছিল, একটি স্কুলের ভেতর। পাকিস্তানি আর্মি, রাজাকার ও মিলিশিয়া মিলে সেখানে ছিল প্রায় ৯০ জন। আমরা ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা। অস্ত্র ছিল ২টি এলএমজি, ৫টি এসএলআর আর অগণিত গ্রেনেড। ক্যাম্পে আক্রমণের আগে প্রতিজ্ঞা করি ‘লাশ হয়ে যাব, তবু জয় না নিয়ে ফিরব না।’ সময়টা অক্টোবরের ১৬ তারিখ হবে। রাত ১১টার দিকে সাডেন অ্যাটাক করি। অ্যাটাকের ধরন দেখে পাকিস্তানিরা ভেবেছিল ইন্ডিয়ান আর্মি আক্রমণ করেছে। ভেতর থেকে তারা চিৎকার করে বলে‘জয় হিন্দ’। আমরা তখন ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দিয়ে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করি।
স্কুলের ছাদে ছিল ওদের দুটি বাঙ্কার। সেখান থেকে ওরা বৃষ্টির মতো গুলি ছোড়ে। আমরা কিছুতেই এগোতে পারি না। আমাদের সঙ্গে ছিল দুর্ধর্ষ চারজন গেরিলা। তোতা, ফরিদ, মমিন ও হালিম। ওরা ছাত্র ইউনিয়ন করত। তাদের দায়িত্ব দিই বাঙ্কারে আক্রমণের। অস্ত্র রেখে তারা কোমরে লুঙ্গির ভাঁজে চারটা করে গ্রেনেড গুঁজে নেয়। ছাদের পাশেই ছিল বড় একটা বটগাছ। ওই গাছের একটা ডাল চলে গেছে ছাদের ওপর। ডাল বেয়ে ছাদের বাঙ্কারে গ্রেনেড ছোঁড়ে চার গেরিলা। দুজন করে দুই বাঙ্কারে চারজন পাকিস্তানি সেনাই মারা পড়ে। আনন্দে আমরা ‘জয় বাংলা’ সেøাগান তুলি।
রাত তখন আনুমানিক দুটো। পাকিস্তানিদের বলি সারেন্ডার করতে। কিন্তু তা না করে তারা কয়েকটা রুমে অবস্থান নেয়। দূরে শত শত লোক লাঠিসোটা নিয়ে দাঁড়িয়ে ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দিচ্ছিল। তখন আরও সাহসী হয়ে উঠি। খুশিতে স্কুল বিল্ডিংয়ের ভেতরে ঢুকে পড়ি। সঙ্গে ছিল মোতালেব। আমরা দুজন একটা বারান্দায় পৌঁছতেই পেছন দিকের একটা রুম থেকে পাকিস্তানিরা গুলি ছোঁড়ে। গুলিটি আমার নিতম্বের ডান পাশে বিদ্ধ হয়। গুলির ঝটকায় মোতালেবও ছিটকে পড়ে। প্রথমে কিছু বুঝিনি। পেছনে ব্যথা শুরু হলে নিতম্বে হাত দিতেই অনুভব করি বড় একটা মাংস খ- ঝুলছে। পিনপিন করে রক্ত বের হচ্ছিল। চিৎকার দিয়ে উপুড় হয়ে পড়ে থাকি। সহযোদ্ধারা ছুটে আসে। রক্ত যাচ্ছিল খুব। ধরেই নিয়েছিলাম মারা যাব। আমাদের এ অবস্থা দেখে সহযোদ্ধারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ‘আমাদের নেতাকে গুলি করছে! মার শালাদের’ বলেই গুলি করতে থাকে। কিছু পাকিস্তানি আখক্ষেতের ভেতর দিয়ে পালিয়ে যায়। তার আগেই মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে মারা যায় প্রায় ৬০ জন।”
চিকিৎসা নিলেন কোথায়? “সহযোদ্ধারা কাঁধে করে নিয়ে যায় ইটালি গ্রামে। ওটা ছিল নিচু গ্রাম, সারাবছর পানি থাকত। নামকরা কম্পাউন্ডার ছিলেন নুরুল ইসলাম। মেছরা গ্রাম থেকে তাকে ডেকে আনে তারা। নিতম্বে ঝুলে থাকা মাংস খন্ডটা সেলাই করে তিনি লাগিয়ে দেন। কিন্তু কিছুদিন পরেই ওই মাংসে পচন ধরে। কষ্টের মাত্রাও যায় বেড়ে। পরে মাংস খন্ডটি কেটে ফেলা হয়।
এক মাস বিছানায় ছিলাম। একেক রাতে থেকেছি একেক বাড়িতে। নিজে চলতে পারি না। সহযোদ্ধারা কাঁধে করে নিয়ে গেছে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। তাদের ঋণ শোধ হওয়ার নয়।”
বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল সুস্থ হয়ে আবার ফিরেন রণাঙ্গনে। তাদের সর্বশেষ অপারেশন হয় শৈলাবাড়ি হাই স্কুলে, সিরাজগঞ্জ শহর থেকে তিন মাইল দূরে। ওখানে ছিল একটি আর্মি ক্যাম্প। মুক্তিযোদ্ধারা শহরে ঢুকলে পাকিস্তানি আর্মি পেছন থেকে ঘেরাও করবে। এজন্যই ক্যাম্পটি করে তারা। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের কৌশলটা বুঝে যায়। শৈলাবাড়ি ক্যাম্প দখলে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন তারা। আমিনুলদের গ্রুপটির সঙ্গে যুক্ত হয় মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যান্য গ্রুপও। ১৪ ডিসেম্বর ক্যাম্প দখল করে তারা শহরে ঢুকে পড়ে। সিরাজগঞ্জ হানাদারমুক্ত হয়। বিএ কলেজ মাঠে সবাই একত্রিত হয়ে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ায়। ওইদিন তাদের আনন্দ ছিল অন্যরকম।
স্বাধীনতা লাভের কয়েক বছর পর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম সংবাদদাতা হিসেবে কাজ শুরু করেন দৈনিক ইত্তেফাকে। মুক্তিযুদ্ধের আগেই নিয়োগপত্র দিয়েছিলেন শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেন। পরে স্টাফ রিপোর্টার এবং সর্বশেষ বুরো প্রধান হন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
যে দেশের জন্য রক্ত দিলেন সেই দেশ কি পেয়েছেন? তিনি বলেন, ‘উন্নতি অবশ্যই হচ্ছে। তবে সেই কাক্সিক্ষত দেশ আমরা পাই নাই। স্বপ্ন ছিল এ দেশ হবে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও শোষণহীন দেশ। মানুষ পেট পুরে খেতে পারবে। হানাহানি থাকবে না; মানুষের মধ্যে মানবতাবোধ থাকবে। এটা ছিল বঙ্গবন্ধুরও স্বপ্ন। সেটা তো এখনো হয়নি।’
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তবে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা জরুরি বলে মনে করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এ জেড এম আমিনুল ইসলাম চৌধুরী। প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কত ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা তোমরা সে ইতিহাস জেনে নিও। স্বাধীনতাবিরোধীদের বিষয়ে সতর্ক থেকো। দেশটাকে ভালোবেসে এগিয়ে নিও। নিজের কাজ সততার সঙ্গে করার নামই দেশপ্রেম।’
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এ দিনে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামসরা বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ঠিক দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধীন বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস-২০২২ পালনের লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এদিন সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা এবং যুদ্ধাহত ও উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা একই দিনে সকাল ৭টা ২২ মিনিটে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এ ছাড়া সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সর্বস্তরের জনগণ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ। সকাল ৭টায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন এবং সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ও সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। এ ছাড়াও এদিন বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খবর বাসস।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ডা. আলীম চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ড. ফজলে রাব্বী, সিরাজউদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, অধ্যাপক জিসি দেব, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক রশীদুল হাসান, ড. আবুল খায়ের, ড. মুর্তজা, সাংবাদিক খন্দকার আবু তাহের, নিজামউদ্দীন আহমেদ, এসএ মান্নান (লাডু ভাই), এ এন এম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, সেলিনা পারভীনসহ আরও অনেকে।
দুর্নীতি দমন কমিশনার (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ বলেছেন, নির্বাচনের বছরে দুদক চোখ-কান খোলা রাখবে। আইন অনুসারে আমাদের যেটুকু অংশ, আমরা তা নিরপেক্ষভাবে পালনের চেষ্টা করব। আমরা সাধ্যমতো কাজ করছি।
মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সন্সেলনে দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ও মো. জহুরুল হক এবং দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের বছরে সব প্রার্থীর হলফনামায় যে সম্পদ বিবরণী থাকে তা খতিয়ে দেখবে দুদক। এ বছর চোখ-কান খোলা রাখবে। সমস্ত প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে। আগামী বছরে দুদকের কাজে আরো গতিশীলতা আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সোমবার রাতে বার্ষিক প্রতিবেদনটি (২০২২) রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়ে কিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থান নিতে বলেছেন। দুদক স্বচ্ছতার সঙ্গে সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবগত করা হয়েছে।
ফাঁদ মামলা কেন কমেছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যতটুকু তথ্য পেয়েছি, সেই অনুসারে ফাঁদ মামলা হয়েছে। আমরা শতভাগ সফল হতে পারিনি। বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় গত বছর সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করেছি। ওই বছর এফআরটি কম হয়েছে। মামলা বেশি হয়েছে, এফআরটি কমেছে। সাজার হার বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দুদক ঠিকমতো কাজ করছে না, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মামলা, তদন্ত, অনুসন্ধান সব কিছুই বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। তারা তাদের বক্তব্য দিয়েছে। আমরা তথ্য দিলাম, এগুলো সংরক্ষিত আছে। আপনারাই বিবেচনা করবেন।
এ সময় বেসিক ব্যাংক দুর্নীতি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মামলাগুলো চলমান। এ নিয়ে আর কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি তিনি।
সম্প্রতি আলোচিত দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের ‘অর্থপাচার’ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে দুদক চেয়ারম্যান জানান, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই, পেলে কাজ করবে দুদক।
এদিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, দেশের টাকা বাইরে চলে গেছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো কাজ করতে পারেনি দুদক। পাচারকৃত অর্থ নিয়ে কাজ করে আরো অনেকগুলো সংস্থা। শুধু দুদকের একার কাজ নয় এটি। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি টাকা ফিরিয়ে আনার।
দুদকের অসন্তুষ্টির জায়গা কোনটি এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক বড় বড় দুর্নীতি বিশেষ করে দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেক দুর্নীতিবাজ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, ব্যবসার আড়ালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে। এই বিষয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের মাত্র একটি অপরাধের এখতিয়ার আছে। বাকি ২৬টি অপরাধের বিষয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ার। কিন্তু জনগণের মনে এখনো ভ্রান্ত ধারণা দুদক কী কাজ করে। কিন্তু আমাদের অংশে আমরা কাজ করি ও শতভাগ সাফল্য রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশেরে এক পর্যবেক্ষণের সূত্র ধরে দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, দেশে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বাড়ে নাই, বরং কমেছে। তবে আভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বন্ধ করতে পারিনি। মামলা পরিচালনা ক্ষমতা কমেছে এটা মিথ্যা কথা। কারণ মানিলন্ডারিং মামলায় ১০০ ভাগ সাফল্য, অন্যান্য মামলায় সাজার পরিমাণ ৬৭ থেকে ৭০ ভাগ আমাদের পক্ষে। আমাদের সক্ষমতা কমেছে কে এটা বলেছে। এ কথা আমি বিশ্বাস করি না।
দুদকের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরে দুদকে জমা পড়ে ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগ। এসব যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের জন্য সংস্থাটি হাতে নিয়েছে ৯০১টি অভিযোগ, যা মোট অভিযোগের ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৯৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ অভিযোগই অনুসন্ধানের জন্য আমলে নিতে পারেনি দুদক। ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগের মধ্যে ৩ হাজার ১৫২টি অভিযোগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে। ২০২২ সালে চার্জশিট অনুমোদন হয়েছে ২২৪টি, মামলা হয়েছে ৪০৬টি, ফাঁদ মামলা হয়েছে মাত্র ৪টি।
২০২১-২২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাজা, নিষ্পত্তি ও খালাসের পরিমাণ বেড়েছে। এরমধ্যে গতবছর সংস্থাটির ৩৪৬টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এছাড়া এই সময়ে কমিশন আমলের ৬৪ দশমিক ১৭ শতাংশ ও ব্যুরো আমলের ৩৫ দশমিক ৯০ মামলার আসামির সাজা হয়েছে। ২০২২ সালের দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন দুদক চেয়ারম্যান। উপস্থাপনকালে এই তথ্য জানানো হয়।
ছেলে ইজহান মালিককে সঙ্গে নিয়ে ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে রয়েছেন ভারতের সাবেক টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একাধিক ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে মনিদা শরীফে তোলা নিজের একাধিক ছবি পোস্ট করেন সানিয়া। ভিডিও পোস্ট করেছেন ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে।
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা প্রথম ছবিতেই দেখা যাচ্ছে সানিয়া তাকিয়ে আছেন তার ছেলের দিকে। সানিয়ার পরনে কালো রঙের বোরকা।
ছবিগুলো পোস্ট করে ক্যাপশনে সানিয়া লিখেছেন, ‘আলহামদুল্লিাহ। আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করুন।’
সানিয়ার পোস্ট করা ছবিগুলোর কয়েকটিতে পরিবারের অন্য সদস্যরাও রয়েছেন। তবে তার স্বামী পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিককে কোনোটাতেই দেখা যায়নি।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।