
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধের ধরন বদলে যাওয়ার প্রেক্ষিতে জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রথাগত ও অপ্রথাগত হুমকি মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ‘ট্র্যাডিশনাল সিকিউরিটি থ্রেট’-এর পাশাপাশি ‘নন ট্র্যাডিশনাল সিকিউরিটি থ্রেট’ও প্রতিহত করা সমান গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তার বিষয়টি অনেক বদলে গেছে। ডিজিটাল ডিভাইস যেমন আমাদের অনেক সুযোগ করে দিয়েছে, তেমনি সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ কিংবা অপরাধের ধারাটাও পাল্টে গেছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল মঙ্গলবার সকালে মিরপুর সেনানিবাসের ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) ‘ডিএসসিএসসি কোর্স ২০২২’-এর গ্র্যাজুয়েশন সিরিমনিতে গ্রাজুয়েটদের মধ্যে সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেশে থাকুক, সেভাবেই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি এবং আমাদের লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ডিজিটাল ডিভাইস সম্পর্কে জানবে, ব্যবহার করবে।’
শেখ হাসিনা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কল্যাণে অবিলম্বে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব বিরোধ ও মতভেদ দূর করতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে উন্নত ও শক্তিশালী করে চলেছে, কিন্তু কারও সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য নয়। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি, ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ খুব স্পষ্ট। আমরা জাতির পিতার গৃহীত পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি।’
তিনি ব্যাংকে পর্যাপ্ত বৈদেশিক রিজার্ভ এবং তারল্য থাকার বিষয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লিখিত রূপকল্প-২০২১ অনুযায়ী বাংলাদেশকে একটি ডিজিটাল ও উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ৪০ হাজার টন খাদ্য ঘাটতি থাকা অবস্থায় ’৯৬ সালে দেশের শাসনভার গ্রহণ করে দেশে প্রথমবারের মতো শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরকালে ২৬ লাখ টন উদ্বৃত্ত রেখে গিয়েছিলেন। তিনি দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১৬শ’ মেগাওয়াট থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াট করা এবং পরে বিএনপি সরকারের সময়ে তা আবার ৩ হাজার ২শ’ মেগাওয়াটে নামিয়ে ফেলাসহ বর্তমানে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট এবং সাক্ষরতার হার, গড় আয়ু বৃদ্ধি প্রভৃতি সাফল্যের বিবরণ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে। সে সময় আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ১৯৯৮ সালে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ’ এবং ‘মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’; ১৯৯৯ সালে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং’ এবং ‘আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করি। আমরাই প্রথম ২০০০ সালে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীতে নারী অফিসার নিয়োগ করি।
তিনি বলেন, ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার নির্বাচনে জয়লাভের পর আমরা অত্যাধুনিক ও যুগোপযোগী সামরিক বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমরা ১৯৭৪ সালে জাতির পিতার প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতিমালার আওতায় ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করছি। ২০১৬ সালে ‘বাংলাদেশ পিস বিল্ডিং সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেছি। জাতির পিতা প্রণীত প্রতিরক্ষানীতি যুগোপযোগী করে ‘জাতীয় প্রতিরক্ষানীতি, ২০১৮’ প্রণয়ন করেছি। আমরা সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছি।
‘সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ’ থেকে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৯৭৯ জন অফিসার সাফল্যের সঙ্গে কোর্স সম্পন্ন করেছেন, এর মধ্যে ৪৪টি বন্ধুপ্রতিম দেশের ১ হাজার ৩০১ জন অফিসারও এ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। বর্তমান কোর্সেও ২১টি বন্ধুপ্রতিম দেশের ৪৬ জন বিদেশি কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ পুলিশের ৩ কর্মকর্তাসহ আজ ২৫০ কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ শেষ করে পিএসসি ডিগ্রি লাভ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী গ্র্যাজুয়েশন প্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে মাতৃভূমির ওপর সম্পূর্ণ নিবেদিত হয়ে যার যার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি, সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ তার শিক্ষা-প্রশিক্ষণের উচ্চমানের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে। এ প্রতিষ্ঠানের গ্র্যাজুয়েটগণ তাদের অর্জিত জ্ঞান, ইচ্ছাশক্তি ও অঙ্গীকার সামনে রেখে দেশকে গৌরবময় অবস্থানে নিয়ে যাবে।
পেশাদারিত্বের সঙ্গে ‘সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ ২০২২’ কোর্স সফলভাবে সম্পন্ন ও পরিচালনা করার জন্য তিনি কমান্ড্যান্ট, ডিএসসিএসসিকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বিদেশ থেকে আগতদের ধন্যবাদ জানিয়ে তাদের দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব যেন অটুট থাকে সেজন্য আমাদের দেশের একেকজন দূত হিসেবে তাদের নিজ নিজ দেশে কাজ করে যাওয়ারও আহ্বান জানান।
দেশের রাজনীতিতে বিদেশ নির্ভরতার বিষয়টি বেশ পুরনো। বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও বিদেশিদের হস্তক্ষেপ করার প্রবণতা বেড়েছে। আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ধরে রাখা আর ক্ষমতা থেকে আওয়ামী লীগকে হটিয়ে বিএনপির ক্ষমতার চেয়ারে বসার এই লড়াই বিদেশিদের আরও সুযোগ করে দিয়েছে। এছাড়া বিদেশিদের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা স্বার্থও রয়েছে। সেই স্বার্থের কারণে সুবিধাজনক দলকে তারা ক্ষমতায় দেখতে চায় বা রাখতে চায়।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ তৈরির বিষয়ে এসব তথ্য। অন্য আরও লক্ষ্যের সঙ্গে দুই দলের বড় সমাবেশের লক্ষ্যও তাই বিদেশিদের আস্থা আনা।
দুই দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিদেশিদের দিকে বেশি নজর বিএনপির। আবার চাপমুক্ত থাকতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বিদেশিদের সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে। তাদের হাতে রাখতে নানা কৌশলে রাজনীতি করে চলেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি।
প্রকাশ্যে বিদেশিদের নজর কাড়তে শোডাউন বা বড় বড় জমায়েতের কথা আওয়ামী লীগ বা বিএনপির কোনো নেতারা প্রকাশ্যে স্বীকার করেননি।
তবে দুই দলের একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানায়, শক্তিধর কয়েকটি দেশের কর্তাব্যক্তিরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে তেমন ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে। অর্থাৎ জনমত যেদিকে শক্তিধর দেশের সমর্থনও সেদিকেই থাকবে। বাংলাদেশের মানুষের চাওয়ার বাইরে তারা কোনো পক্ষ হতে চায় না। তবে গণতন্ত্র ধ্বংস হোক এমন কোনো পথেও দেশের কোনো রাজনৈতিক দলকেও তারা চায় না।
তাই বিদেশিদের কাছে জনপ্রিয়তা প্রমাণ করতে শোডাউনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তেমনি আওয়ামী লীগকে জনবিচ্ছিন্ন প্রমাণে শোডাউনের দিকে ঝুঁকেছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। দুই দলের একাধিক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলের কর্মসূচিও এখন বিদেশিদের নজর কাড়ার লক্ষ্যে নেওয়া হয়। কর্মসূচির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ জানান দিতে চায় যে, সরকার ও দল দেশের মানুষের কাছে সমান জনপ্রিয়। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে, থাকবে। অন্যদিকে সরকার জনবিচ্ছিন্ন সেটা প্রমাণ করতে নানা কায়দায় রাজনীতি করে চলেছে বিএনপি। নিজেদের পক্ষে বিদেশিদের সমর্থন টানতে দেশের জনগণকেই অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তাই দুই দলেরই যেকোনো কর্মসূচিতে মানুষের উপস্থিতি ঘটাতে মরিয়া হয়ে ওঠে তারা। পৃথক কর্মসূচি আয়োজন করতে গিয়ে কার চেয়ে কে বেশি লোকসমাগম ঘটাতে পারে সে চেষ্টায় থাকে দুই দলই।
সূত্র জানায়, বিদেশিরাও জনসমর্থন কোন দিকে সেটা দেখতে চায়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে জনগণের বাইরে গিয়ে কোনো পক্ষের দিকে ঝুঁকবেন না তারা, ঢাকায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা তাদের বক্তব্যে এমনটাই জানিয়ে দিয়েছেন। বিদেশি কূটনীতিকরা আরও জানিয়েছেন, দেশের মানুষের চাওয়া-পাওয়ার প্রতিফলন রাজনীতিতে ও নির্বাচনে দেখতে চান তারা। গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে জনগণের দাবির সঙ্গেই বিদেশিরা থাকবেন।
সূত্র জানায়, কোনো কোনো দেশের দূত বিএনপির নীতিনির্ধারকদের পরামর্শ দিয়েছেন, তাদের আন্দোলনে জনগণের সম্পৃক্ততা থাকতে হবে। তাহলে তারাও পক্ষে অবস্থান নেবেন। তাই বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে সংগঠনকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি জনগণ তাদের সঙ্গে আছে, সেটা প্রমাণে গণসমাবেশে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়াতে বিভিন্ন সুবিধা রাখা হয়েছে। সমাবেশে আসা লোকজনের খাবার, থাকার ব্যবস্থা করেছে। তাঁবু টানিয়ে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির কর্মসূচিগুলো শুধু দেশের জনগণের মধ্যে নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও নজর কেড়েছে। বিশেষ করে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর সরকারের দমন-পীড়ন, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা-মামলা, কর্মসূচি করতে না দেওয়া ইত্যাদি। সবই আন্তর্জাতিক মহলের পর্যবেক্ষণে রয়েছে।’ তিনি বলেন, “এতদিন এসব বিষয় বাংলাদেশের দূতাবাস পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন তা আরও বিস্তার লাভ করেছে। ফলে এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি অত্যন্ত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি’। বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন বিষয় আন্তর্জাতিক মহলের তীক্ষè নজরে রয়েছে।”
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে বিদেশিদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় কখনো নরম ও কখনো গরম অবস্থানও দেখিয়ে আসছেন। সে তুলনায় ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক সুসংহত করতে বিভিন্ন পথ অনুসরণ করে চলেছে। সরকারের বিরুদ্ধে বিদেশিদের সোচ্চার করে তুলতে বিএনপি টাকা খরচ করে লবিস্টও নিয়োগ দিয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির অপপ্রচারের জবাব দিতে সরকারের পক্ষেও লবিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে। রাজনীতির মাঠে এ নিয়ে নানা সময় দুই দলই কথার লড়াই করে।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জনসভা নিয়ে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ। লোকসমাগমকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। জনসভাগুলোতে স্বয়ং দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকছেন। আওয়ামী লীগের জনসভা সফল করতে যেখানে জনসভা করা হয় তার আশপাশের জেলার নেতা ও দলীয় সংসদ সদস্যদের প্রতি লোকসমাগমের ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ আন্তর্জাতিক পরিম-লে সরকার ও দলের জনপ্রিয়তা ও শক্তি জানান দেওয়া।
রাজনীতিতে ব্যাপক লোক জমায়েতের যে কৌশল সেটা অনুসরণ করে দুই দলই প্রমাণ করতে চায় নিজ নিজ জনসমর্থন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মসূচিগুলো শেষ হলে লোকসমাগম নিয়ে কর্মসূচির সফলতা ব্যর্থতা নিয়ে দুই দলের নেতারাও বিতর্কে জড়ান। কর্মসূচি শেষে আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় দলই তাদের কর্মসূচিতে লাখ লাখ লোকের সমাগম ঘটেছে বলে দাবি করে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশ তোষণের রাজনীতি আওয়ামী লীগ করে না। তবে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয় এই নীতিতে বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগ। এই নীতি অনুসরণ করেই দেশ পরিচালনা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি প্রতিনিয়তই বিদেশি শক্তির কাছে মাথা নোয়ায়। বিএনপি দেশের বিরুদ্ধে বিদেশিদের কাছে অপপ্রচারে লিপ্ত।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বেপরোয়া চালকের মতো রাজনীতিতে বেপরোয়া চালক হচ্ছে বিএনপি। তারা কখন, কোথায় দুর্ঘটনা ঘটায় সেটাই চিন্তার বিষয়। ১০ ডিসেম্বরে ব্যর্থ হয়ে গন্ডগোল পাকানোর জন্য ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের দিন গণমিছিল কর্মসূচি দিয়েছে তারা।
গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের মাঠে (পুরনো বাণিজ্য মেলা মাঠ) ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের তেজগাঁও জোন আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের দিন বিএনপির গণমিছিল কর্মসূচি দেওয়ায় দলটির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সেদিন কেন তাদের কর্মসূচি আমি জানতে চাই। প্রত্যাহার করুন। সংঘাতের উসকানি দেবেন না। আমরা দুই মাস আগে সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেছি। ওইদিন গণমিছিল করার অর্থ হচ্ছে সংঘাতের উসকানি দেবে। ১০ তারিখে ব্যর্থ হয়ে ২৪ তারিখে গন্ডগোল পাকানোর চক্রান্ত করছে বিএনপি। এটা প্রতিহত করতে হবে।’
গত ১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগ মাঠে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে ১০ দাবি ঘোষণা করে বিএনপি। দাবি আদায়ে ২৪ ডিসেম্বর দেশের জেলা ও মহানগরের গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ওয়াশিংটন গিয়েছিলেন দাবি করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারকে নিষেধাজ্ঞা দিতে তদবির করতে গেছেন। আমীর খসরু সাহেব কী পেলেন! যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য ২০টি দেশের ৭০ জন এমপি-মন্ত্রীদের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ নেই। আমীর খসরুর মিশন ব্যর্থ। ১০ ডিসেম্বরের মিশনও ব্যর্থ।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপির ১০ ডিসেম্বর ভুয়া। সরকারের পতন ভুয়া। বিজয় মিছিল ভুয়া। তারেকের আগমন ভুয়া।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বেগম জিয়া বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক পাগল-শিশু ছাড়া কেউ বোঝে না। আমরা তার কথা মানি। কথা সত্য। ধন্যবাদ জানাই এ কথা বলার জন্য। বিএনপি কেন উল্টো চলে? বিএনপি যে দেশের কাছে নালিশ করেছে তাদের দেশেও তত্ত্বাবধায়ক নেই। আদালত এটা নাকচ করে দিয়েছে।’
বিএনপিকে আর ছাড় দেওয়া হবে বলে জানিয়ে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতার হারানো ময়ূর সিংহাসন ফিরে পেতে বিএনপি পাগল হয়ে গেছে। এ পাগলকে ঠা-া করতে হবে।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদের যাওয়ায় তার সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, ‘অলি সাহেব, ওদের (বিএনপি) অফিসে পুলিশ ঢুকে হামলা করেনি। আপনি যে কথা বলছেন, সেটা মিথ্যা।’
আওয়ামী লীগ কখনো ষড়যন্ত্র ও পেশিশক্তিকে বিশ্বাস করে না বলে দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমরা জনগণের রায় নিয়ে চলছি। জনগণের সমর্থনে রাজনীতি করি।’
১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের সর্বোচ্চ সুবিধা দেওয়ার পরও তারা নির্দিষ্ট একটি স্থানে সমাবেশ করার জন্য গোঁ ধরেছিল। আমরা তাদের উন্মুক্ত মাঠে যেতে বলেছিলাম। তারপর তারা বাধ্য হয়ে সেখানে সমাবেশ করেছে। বিএনপি ষড়যন্ত্র করলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বসে থাকবে না।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচির সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রমুখ।
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি অভিযান ও গোলাপবাগে গণসমাবেশের আগে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ এবং তাদের মুক্তির দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিএনপি।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি নেতারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নেতারা তাদের উদ্দেশে বলেন, সরকারের অন্যায়-অত্যাচার ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে পুলিশ গুলি চালাচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে। আপনারা কাকে রক্ষার জন্য এ কাজ করছেন। গুটিকয়েক লোককে রক্ষার জন্য কোটি কোটি মানুষের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। তাদের স্বার্থরক্ষা না করে জনগণের পক্ষে থাকুন।
বিচারকদের উদ্দেশে বিএনপি নেতারা বলেন, আপনারা যে শপথ নিয়েছেন তা পালন করছেন না। আল্লাহর কাছে আপনাদের জবাবদিহি করতে হবে।
সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিএনপির এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। তারা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে সেøাগান দেন। গত ১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। কর্মসূচি উপলক্ষে বিএনপি কার্যালয়ের সামনের রাস্তার এক পাশে নাইটিঙ্গেল মোড় ও অন্য পাশে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত বন্ধ ছিল। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কঠোর অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে খন্দকার মোশাররফ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘সরকারের সময় শেষ। জনগণ জেগে উঠেছে। তাদের চলে যেতে হবে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী। আপনাদের থাকতে হবে। অবৈধ সরকারের অবৈধ নির্দেশ মানবেন না। জনগণের পক্ষে থাকুন।’
তিনি বলেন, ‘গত ৭ ডিসেম্বর আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বর্বরতা চালানো হয়েছে। লন্ডভন্ড করা হয়েছে। জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। লক্ষ্য ছিল ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগের গণসমাবেশ প- করা। সরকার বিভিন্ন বিভাগের গণসমাবেশ পন্ড করতে পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছিল, হামলা চালিয়েছিল, নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছিল। তবুও গণসমাবেশ ঠেকাতে পারেনি। সরকার ভেবেছিল আমাদের মহাসচিব ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের গ্রেপ্তার করলে গণসমাবেশ পন্ড হবে। সরকার ব্যর্থ হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। ভোটাধিকার হরণ করেছে। গণতন্ত্র হত্যা করে দিনের ভোট রাতে ডাকাতি করে অবৈধভাবে সংসদ গঠন করেছে। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। বিদ্যুৎ খাতে লুটপাট করতে ইনডেমনিটি আইন করেছে। ব্যাংক লুট করা হচ্ছে। মানুষ আরও গরিব হচ্ছে, ঠিকমতো খেতে পারে না।’
সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধান বিরোধী দল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় বন্দি করে রেখেছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে বিদেশে থাকতে বাধ্য করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ব্যবহার করছে। এত নির্যাতন করেও বিএনপিকে দুর্বল করতে পারেনি। জনগণ পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে, এ সরকারকে তারা চায় না। সেই লক্ষ্যে আমরা যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলতে ১০ দফা ঘোষণা করেছি। গোটা বিশ্বের নেতারা বলছেন শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সরকারের পতন ঘটানো ছাড়া আমাদের বিকল্প নেই।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।বিজয় দিবসে রাজধানীতে র্যালি করবে বিএনপি : ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিজয় মিছিল বের করবে বিএনপি। বেলা ৩টায় শুরু হবে মিছিল। গতকাল মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বেলা ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আলোচনা সভা হবে। সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন বিএনপি নেতারা। বিজয় দিবসের দিন সকাল ৮টায় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিএনপির উদ্যোগে শহীদদের উদ্দেশে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। সাভার থেকে ফিরে সকাল ১০টায় শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাবেন নেতারা।
যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এ জেড এম আমিনুল ইসলাম চৌধুরী। তার বাবা আজিজুল ইসলাম চৌধুরীও ছিলেন সংগ্রামী মানুষ। যুক্ত ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে; কংগ্রেস করতেন। যুক্তফ্রন্টের সময় আওয়ামী মুসলিম লীগে যুক্ত হন তিনি। দীর্ঘদিন রতনকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। আমিনুলের মা আফতাব মহল ছিলেন গৃহিণী। তাদের বাড়ি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাহুকা গ্রামে। তিনি তৎকালীন সিরাজগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আমিনুল গোপনে চলে যান ভারতের কলকাতায়। দেখা করেন ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সাহেবের সঙ্গে। তিনি তাকে নিয়ে যান তাজউদ্দীন আহমেদের কাছে। ছাত্রলীগ করেন শুনতেই বললেন, ‘ওরা বিএলএফে যাক।’ তাকে রিক্রুট করেন সিরাজুল আলম খান। পরে পাঠিয়ে দেওয়া হয় দেরাদুন ট্রেনিং একাডেমিতে।
বাকি ইতিহাস শুনি এই বীরের জবানিতে। তিনি বলেন, “ট্রেনিং শুরু হলে ক্যাম্পে এসে নেতারা বললেন, ‘শর্ট ট্রেনিং দেন। ওকে আগেই ভেতরে পাঠাব।’ ফলে ১৫ দিন ট্রেনিং হয় আমার। এলএমজি, এসএলআর, গ্রেনেড, মর্টার ও আরসিএল গান চালানো ছাড়াও এক্সপ্লোসিভ দিয়ে ব্রিজ উড়িয়ে দেওয়ার কৌশলটাই বেশি শিখেছিলাম। ট্রেনিং শেষে হিলি বর্ডার দিয়ে গোপন পথে আসি নিজের এলাকায় সিরাজগঞ্জের রতনকান্দি ইউনিয়নে। সঙ্গে অস্ত্র ছিল একটা রিভলবার ও ২৫টি গুলি। ট্রেনিং শেষে বিভিন্ন ব্যাচ ঢুকবে। তাদের দেখাশোনা, শেল্টার, সহযোগিতা ও আক্রমণের ক্ষেত্র প্রস্তুত রাখতেই আগে পাঠানো হয় আমাকে।”
এলাকায় মুক্তিবাহিনীর লোকাল একটি গ্রুপকে পান আমিনুল। স্থানীয়ভাবে অস্ত্র সংগ্রহ করে ওই গ্রুপটি বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছিল। তিনি তাদের মোটিভেট করে দলে রাখেন। ২০ দিন পর ভারত থেকে ট্রেনিং শেষে ৮ জনের গ্রুপ নিয়ে ভেতরে ঢোকেন মোজাফ্ফর। সব মিলিয়ে তৈরি হয় তাদের ১৫ জনের একটি গেরিলা দল। কমান্ডে ছিলেন মোজাফ্ফর।
ট্রেনিংয়ে নির্দেশ ছিল ‘পরিচয় দেবে না, গোপনীয়তা রাখবে, অপারেশনে জয়লাভ করলেও প্রকাশ্যে আনন্দ প্রকাশ করা যাবে না।’ সেভাবেই গেরিলা অপারেশন শুরু করেন তারা। প্রথম অপারেশন ছিল বগুড়ার ধুনট থানায়। ওই অপারেশনে জয় পাননি। এরপর জয় বাংলা সেøাগান দিয়েই সিরাজগঞ্জের তাড়াশ থানায় আক্রমণ করেন। কয়েক পুলিশকে আত্মসমর্পণ করানোর পর সেখানে মিলে থ্রি নট থ্রি রাইফেল ও ৬-৭ বাক্সভর্তি গুলি। পরবর্তী অপারেশনগুলোতে সেসব কাজে লেগেছিল। বিএলএফের সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে এভাবেই আমিনুলরা গেরিলা আক্রমণ করেন বিভিন্ন এলাকায়।
ভাটপিয়ারী অপারেশনে মারাত্মক আহত হন আমিনুল ইসলাম। সেই ক্ষত নিয়েই জীবন কাটছে তার। কী ঘটেছিল একাত্তরের ওই দিনে? তিনি অকপটে বলেন অপারেশনের কথা, “ভাটপিয়ারীতে পাকিস্তানিদের একটা শক্তিশালী ক্যাম্প ছিল, একটি স্কুলের ভেতর। পাকিস্তানি আর্মি, রাজাকার ও মিলিশিয়া মিলে সেখানে ছিল প্রায় ৯০ জন। আমরা ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা। অস্ত্র ছিল ২টি এলএমজি, ৫টি এসএলআর আর অগণিত গ্রেনেড। ক্যাম্পে আক্রমণের আগে প্রতিজ্ঞা করি ‘লাশ হয়ে যাব, তবু জয় না নিয়ে ফিরব না।’ সময়টা অক্টোবরের ১৬ তারিখ হবে। রাত ১১টার দিকে সাডেন অ্যাটাক করি। অ্যাটাকের ধরন দেখে পাকিস্তানিরা ভেবেছিল ইন্ডিয়ান আর্মি আক্রমণ করেছে। ভেতর থেকে তারা চিৎকার করে বলে‘জয় হিন্দ’। আমরা তখন ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দিয়ে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করি।
স্কুলের ছাদে ছিল ওদের দুটি বাঙ্কার। সেখান থেকে ওরা বৃষ্টির মতো গুলি ছোড়ে। আমরা কিছুতেই এগোতে পারি না। আমাদের সঙ্গে ছিল দুর্ধর্ষ চারজন গেরিলা। তোতা, ফরিদ, মমিন ও হালিম। ওরা ছাত্র ইউনিয়ন করত। তাদের দায়িত্ব দিই বাঙ্কারে আক্রমণের। অস্ত্র রেখে তারা কোমরে লুঙ্গির ভাঁজে চারটা করে গ্রেনেড গুঁজে নেয়। ছাদের পাশেই ছিল বড় একটা বটগাছ। ওই গাছের একটা ডাল চলে গেছে ছাদের ওপর। ডাল বেয়ে ছাদের বাঙ্কারে গ্রেনেড ছোঁড়ে চার গেরিলা। দুজন করে দুই বাঙ্কারে চারজন পাকিস্তানি সেনাই মারা পড়ে। আনন্দে আমরা ‘জয় বাংলা’ সেøাগান তুলি।
রাত তখন আনুমানিক দুটো। পাকিস্তানিদের বলি সারেন্ডার করতে। কিন্তু তা না করে তারা কয়েকটা রুমে অবস্থান নেয়। দূরে শত শত লোক লাঠিসোটা নিয়ে দাঁড়িয়ে ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দিচ্ছিল। তখন আরও সাহসী হয়ে উঠি। খুশিতে স্কুল বিল্ডিংয়ের ভেতরে ঢুকে পড়ি। সঙ্গে ছিল মোতালেব। আমরা দুজন একটা বারান্দায় পৌঁছতেই পেছন দিকের একটা রুম থেকে পাকিস্তানিরা গুলি ছোঁড়ে। গুলিটি আমার নিতম্বের ডান পাশে বিদ্ধ হয়। গুলির ঝটকায় মোতালেবও ছিটকে পড়ে। প্রথমে কিছু বুঝিনি। পেছনে ব্যথা শুরু হলে নিতম্বে হাত দিতেই অনুভব করি বড় একটা মাংস খ- ঝুলছে। পিনপিন করে রক্ত বের হচ্ছিল। চিৎকার দিয়ে উপুড় হয়ে পড়ে থাকি। সহযোদ্ধারা ছুটে আসে। রক্ত যাচ্ছিল খুব। ধরেই নিয়েছিলাম মারা যাব। আমাদের এ অবস্থা দেখে সহযোদ্ধারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ‘আমাদের নেতাকে গুলি করছে! মার শালাদের’ বলেই গুলি করতে থাকে। কিছু পাকিস্তানি আখক্ষেতের ভেতর দিয়ে পালিয়ে যায়। তার আগেই মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে মারা যায় প্রায় ৬০ জন।”
চিকিৎসা নিলেন কোথায়? “সহযোদ্ধারা কাঁধে করে নিয়ে যায় ইটালি গ্রামে। ওটা ছিল নিচু গ্রাম, সারাবছর পানি থাকত। নামকরা কম্পাউন্ডার ছিলেন নুরুল ইসলাম। মেছরা গ্রাম থেকে তাকে ডেকে আনে তারা। নিতম্বে ঝুলে থাকা মাংস খন্ডটা সেলাই করে তিনি লাগিয়ে দেন। কিন্তু কিছুদিন পরেই ওই মাংসে পচন ধরে। কষ্টের মাত্রাও যায় বেড়ে। পরে মাংস খন্ডটি কেটে ফেলা হয়।
এক মাস বিছানায় ছিলাম। একেক রাতে থেকেছি একেক বাড়িতে। নিজে চলতে পারি না। সহযোদ্ধারা কাঁধে করে নিয়ে গেছে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। তাদের ঋণ শোধ হওয়ার নয়।”
বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল সুস্থ হয়ে আবার ফিরেন রণাঙ্গনে। তাদের সর্বশেষ অপারেশন হয় শৈলাবাড়ি হাই স্কুলে, সিরাজগঞ্জ শহর থেকে তিন মাইল দূরে। ওখানে ছিল একটি আর্মি ক্যাম্প। মুক্তিযোদ্ধারা শহরে ঢুকলে পাকিস্তানি আর্মি পেছন থেকে ঘেরাও করবে। এজন্যই ক্যাম্পটি করে তারা। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের কৌশলটা বুঝে যায়। শৈলাবাড়ি ক্যাম্প দখলে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন তারা। আমিনুলদের গ্রুপটির সঙ্গে যুক্ত হয় মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যান্য গ্রুপও। ১৪ ডিসেম্বর ক্যাম্প দখল করে তারা শহরে ঢুকে পড়ে। সিরাজগঞ্জ হানাদারমুক্ত হয়। বিএ কলেজ মাঠে সবাই একত্রিত হয়ে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ায়। ওইদিন তাদের আনন্দ ছিল অন্যরকম।
স্বাধীনতা লাভের কয়েক বছর পর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম সংবাদদাতা হিসেবে কাজ শুরু করেন দৈনিক ইত্তেফাকে। মুক্তিযুদ্ধের আগেই নিয়োগপত্র দিয়েছিলেন শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেন। পরে স্টাফ রিপোর্টার এবং সর্বশেষ বুরো প্রধান হন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
যে দেশের জন্য রক্ত দিলেন সেই দেশ কি পেয়েছেন? তিনি বলেন, ‘উন্নতি অবশ্যই হচ্ছে। তবে সেই কাক্সিক্ষত দেশ আমরা পাই নাই। স্বপ্ন ছিল এ দেশ হবে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও শোষণহীন দেশ। মানুষ পেট পুরে খেতে পারবে। হানাহানি থাকবে না; মানুষের মধ্যে মানবতাবোধ থাকবে। এটা ছিল বঙ্গবন্ধুরও স্বপ্ন। সেটা তো এখনো হয়নি।’
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তবে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা জরুরি বলে মনে করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এ জেড এম আমিনুল ইসলাম চৌধুরী। প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কত ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা তোমরা সে ইতিহাস জেনে নিও। স্বাধীনতাবিরোধীদের বিষয়ে সতর্ক থেকো। দেশটাকে ভালোবেসে এগিয়ে নিও। নিজের কাজ সততার সঙ্গে করার নামই দেশপ্রেম।’
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এ দিনে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামসরা বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ঠিক দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধীন বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস-২০২২ পালনের লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এদিন সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা এবং যুদ্ধাহত ও উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা একই দিনে সকাল ৭টা ২২ মিনিটে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এ ছাড়া সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সর্বস্তরের জনগণ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ। সকাল ৭টায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন এবং সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ও সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। এ ছাড়াও এদিন বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খবর বাসস।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ডা. আলীম চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ড. ফজলে রাব্বী, সিরাজউদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, অধ্যাপক জিসি দেব, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক রশীদুল হাসান, ড. আবুল খায়ের, ড. মুর্তজা, সাংবাদিক খন্দকার আবু তাহের, নিজামউদ্দীন আহমেদ, এসএ মান্নান (লাডু ভাই), এ এন এম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, সেলিনা পারভীনসহ আরও অনেকে।
নওগাঁ শহর থেকে আটকের পর র্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তির মোড় থেকে তাকে আটক করা হয়। এরপর গত শুক্রবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। র্যাবের দাবি, প্রতারণার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়। আটকের পর অসুস্থ হয়ে তিনি মারা গেছেন। তবে স্বজনদের অভিযোগ, হেফাজতে নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া সুলতানার মামা এবং নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক মন্টু দেশ রূপান্তরকে বলেন, তার ভাগনি বুধবার সকালে অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তির মোড় থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে র্যাবের লোকজন সুলতানাকে ধরে নিয়ে গেছে বলে মোবাইল ফোনে কল করে বিভিন্নজন তাকে জানান। একপর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে তার ভাগনি সুলতানা জেসমিনের ছেলে সাহেদ হোসেন সৈকত মোবাইল ফোনে কল করে জানান, তার মাকে র্যাব সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছে। এরপর মন্টু তার ভাগনির সন্ধানে থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু সন্ধান পাননি। পরে বেলা ২টার দিকে সুলতানা জেসমিনের ছেলে তাকে আবার মোবাইল ফোনে কল করে জানান তার মা নওগাঁ সদর হাসপাতালে আছেন। এরপর হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন তার ভাগনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কিন্তু ভেতরে গিয়ে ভাগনির সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করলে র্যাব সদস্যরা বাধা দেন বলে অভিযোগ করেন মন্টু। তবে জেসমিনকে র্যাবের কোন ক্যাম্প নেওয়া হয়েছিল তারা তার কিছুই জানতেন না। এর কিছুক্ষণ পর জেসমিনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয়। যদিও লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে গতকাল শনিবার। গতকাল বাদ আসর তার মরদেহ দাফন করা হয়েছে।
সুলতানা জেসমিনের ছেলে সাহেদ হোসেন সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। বিভিন্নভাবে জানতে পারেন তার মাকে র্যাবের সদস্যরা তুলে নিয়ে গেছে। এর পরই তার সন্ধানের চেষ্টা করা হয়। একপর্যায়ে জানতে পারেন তার মা নওগাঁ হাসপাতালে রয়েছেন। সেখানে তার মায়ের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল।
সৈকতের দাবি, তার মা চক্রান্তের শিকার হয়েছেন। র্যাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। যার কারণে মৃত্যু হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাব-৫-এর উপ-অধিনায়ক এএসপি মাসুদ রানা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে সুলতানা জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুক্তির মোড় এলাকা থেকে র্যাবের হেফাজতে নেওয়া হয়। কিন্তু আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে দ্রুত তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকরা তাকে রাজশাহীতে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু রাজশাহীতে নেওয়ার পর তার অবস্থা আরও খারাপ হয়। শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্ট্রোক করে তিনি মারা যান।’
সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল দুপুরে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয় বলেও জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।
নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মৌমিতা জলিল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বুধবার দুপুরে সুলতানা জেসমিন নামে এক রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন র্যাবের সদস্যরা। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রোগীর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। হাসপাতালেই সুলতানা জেসমিনের পরিবারের লোকজন র্যাবের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ওই রোগী মারা যান বলে জানতে পেরেছি।’
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, তারা যতটুকু জানতে পেরেছেন, র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদের সময় সুলতানা জেসমিন পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান। তারপর তাকে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সিটি স্ক্যান করে তারা জানতে পেরেছেন, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে ওই রোগীর মৃত্যু হয়। তার মাথায় ছোট্ট একটি লাল দাগ ছিল। শরীরে অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন জানান, ময়নাতদন্ত শেষে সুলতানা জেসমিনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে না আসা পর্যন্ত তার মৃত্যুর কারণ বলা সম্ভব নয়।
মেধাতালিকা বাদ দিয়ে নতুন নিয়মে পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। যার ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পদোন্নতিযোগ্য সোনালী ব্যাংকের শত শত কর্মী। এত দিন শূন্য পদের ভিত্তিতে মেধাতালিকা থেকে দুজন ও জ্যেষ্ঠতা (সিনিয়রিটি) তালিকা থেকে একজনকে পদোন্নতি দেওয়া হতো। কিন্তু হঠাৎ করেই নতুন নিয়ম চালু হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সবচেয়ে বড় ব্যাংকটিতে। পদোন্নতিতে মৌখিক পরীক্ষার জন্য শুধু জ্যেষ্ঠ তালিকার কর্মকর্তাদের বিবেচনা করা হয়েছে। বিশেষ কিছু ব্যক্তিকে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য মেধাবী ও কর্মঠ অফিসারদের বঞ্চিত করার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সোনালী ব্যাংকের কর্মীরা।
ইতিমধ্যে সোনালী ব্যাংকের অফিসার থেকে জিএম পদ পর্যন্ত পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যেখানে লঙ্ঘিত হচ্ছে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কর্মচারী পদোন্নতি নীতিমালা-২০২২। অনুসরণ করা হচ্ছে পর্ষদের ৮১০তম সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত। এই অনিয়ম বন্ধ ও আগের নিয়মে পদোন্নতির প্রক্রিয়া চালু করার জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর আবেদন জানিয়েছেন সোনালী ব্যাংকের শতাধিক কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোনালী ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতি দিলে বেশির ভাগ মেধাবী কর্মকর্তা বঞ্চিত হবেন। এতে কর্মকর্তারা কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। এই নীতি বাদ দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই এমডির কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি, তিনি বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, পর্ষদের ৮১০তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘অফিসার/সমমান থেকে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার/সমমান পদ পর্যন্ত পদোন্নতির ক্ষেত্রে সম্ভাব্য শূন্য পদের চেয়ে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা তিন গুণের বেশি হলে জ্যেষ্ঠতা তালিকা থেকে প্রতিটি সম্ভাব্য শূন্য পদের বিপরীতে সর্বোচ্চ তিনজন (১:৩) প্রার্থী নির্বাচনী সাক্ষাৎকার/বাছাইয়ের জন্য বিবেচ্য হবেন,’ যা সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কর্মচারী পদোন্নতি নীতিমালা-২০২২-এর সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। কারণ এর ফলে মেধাতালিকার কর্মীরা পদোন্নতি তো দূরের কথা, সাক্ষাৎকারেও অংশ নিতে পারবেন না।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা, ২০২২’-এ পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ বিষয়ের ৮(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘এই প্রবিধানমালা মোতাবেক এবং তফসিলে বর্ণিত শর্তাবলী পরিপালন সাপেক্ষে, কোনো কর্মচারীকে পরবর্তী উচ্চতর পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে মেধা, কর্মদক্ষতা ও জ্যেষ্ঠতাকে প্রাধান্য দেওয়া হইবে। কিন্তু কেবল জ্যেষ্ঠতার কারণে কোনো কর্মচারী অধিকার হিসেবে তাহার পদোন্নতি বা পদায়ন দাবি করিতে পারিবেন না।’
এদিকে, ২০২৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকারদের পদোন্নতি বিষয়ক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ‘ব্যাংকের চাকরিতে সিনিয়র অফিসার (জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা) অথবা সমতুল্য পদের পরবর্তী সব পদে পদোন্নতি পেতে হলে ব্যাংকিং ডিপ্লোমার দুই পর্বেই পাস করতে হবে,’ অর্থাৎ সোনালী ব্যাংকের ১:৩ নীতিমালা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।
এ বছর সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার, অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার থেকে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার থেকে জেনারেল ম্যানেজার পদে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ৭৫০, ৯১ ও ১৩ জন। এর বিপরীতে সম্ভাব্য পদোন্নতিযোগ্য পদের সংখ্যা যথাক্রমে ৬০, ১৯ ও ৩ জন। কিন্তু জ্যেষ্ঠ বিবেচনায় মৌখিক পরীক্ষার জন্য মনোনীত হবেন ১৮০, ৫৭ ও ৬ জন। এতে বঞ্চিত হবে মেধাতালিকা। সুতরাং আলোচ্য পদোন্নতি নীতিমালা স্ববিরোধী ও চাকরি প্রবিধানমালার সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক এবং যেখানে সততা ও ন্যায়ের প্রতিফলন নেই।
সোনালী ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরের তথ্য যাচাই-বাছাই ও গভীর অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে যেখানে দ্রুত পদোন্নতি হয়ে যায়, সেখানে সোনালী ব্যাংকে ব্যক্তি/গোষ্ঠী স্বার্থে প্রতিবার নতুন নতুন ধ্যান-ধারণা আমদানি করে অনাকাক্সিক্ষত সময়ক্ষেপণ করে একেবারে বছরের শেষে এসে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এভাবে সোনালী ব্যাংকের দক্ষ ও মেধাবী কমকর্তারা এখন সব জায়গায় ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়ছেন। এমন অবস্থায় সোনালী ব্যাংকে একটি স্থায়ী নীতিমালা করা প্রয়োজন। যেখানে কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থ প্রাধান্য পাবে না; বরং তা অপরিহার্য পছন্দরূপে সর্বমহলে প্রশংসিত ও গ্রহণযোগ্য হবে। যত দিন না এরূপ নীতিমালা করা সম্ভব, তত দিন কোনো বিতর্কিত নীতিমালা চাপিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত বলে মনে করছেন সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা। কারণ মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যদি সততা, দক্ষতা ও মেধার পরিবর্তে কেবল জ্যেষ্ঠতাকেই বেছে নেওয়া হয়, তাহলে মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তারা চ্যালেঞ্জ গ্রহণে আগ্রহ ও উৎসাহ-উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলবেন। চ্যালেঞ্জিং পদগুলো সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তার অভাবে দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আফজাল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোনালী ব্যাংকে যেই নীতিমালা রয়েছে, এটি অন্যান্য জায়গায়ও আছে; বিশেষ করে কৃষি ব্যাংক ও হাউজ বিল্ডিংয়েও একই নীতি মেনে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এখানে একজনের বিপরীতে তিনজনকে ডাকা হচ্ছে। তা ছাড়া এটা বোর্ডের সিদ্ধান্ত।
মেধাবীরা বঞ্চিত হবেন কি না এমন প্রশ্নে আফজাল করিম বলেন, ‘পদোন্নতির ক্ষেত্রে ১০০ নম্বরের মধ্যে ৮৫ হচ্ছে তার অর্জন। বাকি ১৫ নম্বর ভাইভা থেকে পাবেন। এ ক্ষেত্রে তেমন কোনো বৈষম্য হবে বলে মনে করি না। গত বছর অন্যভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। সে সময়ও কর্মকর্তাদের অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। এটা থাকবেই।’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ভবনেই গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র (ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট) নেই। বহুতল ভবন নির্মাণের আগে এবং পরে তা বসতের বা ব্যবহারের উপযোগী কি না, তার জন্য দুই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বা ছাড়পত্র লাগে।
কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলোর জন্য দুই প্রতিষ্ঠানের কোনোটির ছাড়পত্র নেই। অনুমোদন ছাড়াই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক ও আবাসিক কার্যক্রম।
অনুমোদন তথা ছাড়পত্র না নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও ওয়ার্কস দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান।
অনুমোদন না নিয়ে বিধি অমান্য করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ময়মনসিংহ বিভাগের উপপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান।
দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনা ঘটলে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, সে বিবেচনা থেকেই ভবন নির্মাণ করা হয়। সব ঠিক থাকলেই ছাড়পত্র (ক্লিয়ারেন্স সনদ) দেওয়া হয়। সনদের বাইরে গিয়ে ভবন নির্মাণ এবং ব্যবহারের সুযোগ নেই। অভিযোগ এলে আমরা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সুরাহা করার চেষ্টা করব। তবে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কাছ থেকে ক্লিয়ারেন্স নেয়নি।’
ময়মনসিংহ গণপূর্ত দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্কস ও প্ল্যানিং কমিটির সদস্য এ কে এম কামরুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। তারা তাদের মতো সিদ্ধান্ত নেয়। তবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ক্লিয়ারেন্স নেওয়া দরকার। না নিলে আইন অমান্য করা হয়। আমি উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থাগ্রহণের লক্ষ্যে কাজ করব।’
একদিকে ভবনের অনুমোদন নেই, অন্যদিকে অগ্নিনির্বাপণের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব। দশতলা বঙ্গমাতা ছাত্রী হলে অগ্নিনির্বাপণের জন্য ৬২টি ছোট সিলিন্ডার রয়েছে। এসবের কোনোটিরই মেয়াদ তথা কার্যকারিতা নেই। এ কথা নিশ্চিত করেছেন হলটির প্রাধ্যক্ষ নুসরাত শারমিন তানিয়া।
অগ্নিনির্বাপণের প্রস্তুতি কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা চিন্তিত। বারবার বলেও সমাধান পাইনি। আমাদের কিছু সিলিন্ডার থাকলেও সেগুলোর মেয়াদ নেই। তা ছাড়া এসব কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, সে বিষয়ে কাউকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। মোটকথা, এ ব্যাপারে প্রশিক্ষিত লোকবল নেই। কিছুদিন আগে হলে আগুন লাগার কথা ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়। আমরা নিদানের ব্যবস্থার জন্য প্রকৌশল দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেই যাচ্ছি।’
ফায়ার সার্ভিস ও গণপূর্তের ছাড়পত্রহীন ভবনে হলের কার্যক্রম চলছে কি না জানতে চাইলে নুসরাত শারমিন বলেন, ‘আমাদের ডিপিডি ও প্রকৌশল দপ্তর বলেছে, সব অনুমোদন আছে। তবে তারা আমাদের কোনো ডকুমেন্ট দেয়নি।’
একই চিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দশতলা বঙ্গবন্ধু হল, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবন, কলা ও বিজ্ঞান ভবনসহ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ডরমিটোরি, কোয়ার্টার ও প্রশাসনিক ভবনের। এমনকি নির্মাণাধীন কোনো ভবনের নকশার অনুমোদন নেই।’
আগুন নেভানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫৪টি সিলিন্ডার থাকলেও অধিকাংশের মেয়াদ নেই; এসব ব্যবহারের নিয়মও কেউ জানে না। অগ্নিনির্বাপণের কোনো প্রশিক্ষণের আয়োজনও নেই। ১৫৪টি সিলিন্ডারের মধ্যে বঙ্গমাতা হলে ৬২টি, বঙ্গবন্ধু হলে ২২টি, সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে ৩০টি করে এবং প্রশাসনিক ভবনে ১০টি সিলিন্ডার রয়েছে বলে জানা গেলেও জায়গামতো সেগুলো দৃশ্যমান নয়।
চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গমাতা হলে আগুন লাগার গুজবে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালেও নিতে হয়েছিল। এরপর প্রশাসন নড়েচড়ে বসলেও অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি।
৫৭ একরের বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কোনো পানির উৎস নেই। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে পানির ব্যবস্থা কীভাবে হবে তা নিয়ে শঙ্কিত ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। এত বড় ভবনের আগুন নেভানো তাদের রিজার্ভের পানি দিয়ে সম্ভব নয়।
আগুন নেভানোর সরঞ্জামের ঘাটতি ও ছাড়পত্র না থাকলেও তাদের প্রস্তুতি রয়েছে বলে মনে করেন পরিকল্পনা ও ওয়ার্কস দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান ও ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব হোসেন। হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দুটি আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার রয়েছে। আগুন লাগলে সেখান থেকে পানি সরবরাহ করা যাবে। আর জলাশয় নির্মাণের কাজ চলছে। ভবিষ্যতে ছাড়পত্রের বিষয়টি দেখা যাবে। আগুন লাগলে সৃষ্টিকর্তা না চাইলে আমাদের প্রস্তুতি দিয়েও লাভ হবে না। যা হয়ে গেছে, তা তো হয়েই গেছে।’
ভবনের গণপূর্ত ও ফায়ার সার্ভিসের সনদ না থাকার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার ধারণা নেই। সংশ্লিষ্ট দপ্তর বলতে পারবে। যদি সেসবের প্রয়োজন থাকে আর আমাদের সেসব না থেকে থাকে, তাহলে আমরা প্রশাসনিকভাবে সেসব নিয়ে কাজ করব। এসব বিষয়ে দ্রুতই চিঠি দেওয়া হবে।’
বঙ্গমাতা হলের শিক্ষার্থী ফাইজাহ ওমর তূর্ণা বলেন, ‘আমরা আতঙ্কে থাকি। সারা দেশে যেভাবে আগুন লাগছে, চিন্তা হয়। আমাদের এত বড় হল, তার আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা নেই; যা আছে তা ব্যবহার করতেও জানি না আমরা। আগুন লাগলে ভয়েই মরে যাব।’
বঙ্গবন্ধু হলের শিক্ষার্থী ফাহমিদ অর্ক বলেন, ‘আগুন নেভানোর যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই। ব্যবস্থা না নিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষার্থীরা। সত্বর সুরাহার ব্যবস্থা করা উচিত।’
অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার দুর্দশা নিয়ে চিন্তিত শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিয়াদ হাসান। তিনি বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে কাজ শুরু করার উদ্যোগ নেব।’
মোবাইল টেলিফোনে, এক ধরনের বিপ্লব ঘটেছে। বছর ২৫ আগে, বিষয়টি সাধারণের কল্পনার বাইরে ছিল। বর্তমানে এমন কোনো পেশার লোক নেই, যাদের হাতে মোবাইল ফোন দেখা যায় না। এমনকি, যারা নিত্য ভিক্ষা তনু রক্ষায় ব্যস্ত- সেই ভিক্ষুক শ্রেণির অধিকাংশের হাতেও মোবাইল। কিন্তু ৯০ দশকের শেষের দিকে, এই মোবাইল ফোন ব্যবহার করা মোটেও সহজ ছিল না।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা নিয়ে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। দপ্তরটির কতিপয় কর্মকর্তা, কানুনগো, সার্ভেয়ার এবং অফিস সহকারীদের কমিশন বাণিজ্য, দালালদের যোগসাজশে ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাৎসহ নানান অভিযোগে প্রায় সময় খবরের শিরোনাম হয়। সম্প্রতি এই দপ্তরের যাবতীয় কর্মকান্ডের ওপর অনুসন্ধান চালিয়েছে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা। ভূমি অধিগ্রহণ শাখা ঘিরে শক্তিশালী একটি চক্রের সন্ধানও পেয়েছে সংস্থাগুলো।
ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতির দৈত্য
দেশের পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) অন্যতম। অনেকটা নীরবেই দলটি তার ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে ৬ মার্চ। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালের এই দিনে পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই তারিখকেই সিপিবি তার প্রতিষ্ঠার দিন হিসেবে উদযাপন করে।
আল্লাহতায়ালার কাছে বান্দার সব আমল এক রকম আর রোজার হিসাব ভিন্ন রকম। আল্লাহর কাছে বান্দা আমলের প্রতিদান লাভ করবে। তবে রোজার প্রতিদান আল্লাহ নিজে বান্দাকে দান করবেন। আল্লাহ কেমন প্রতিদান দেবেন তা তিনিই ভালো জানেন। আমরা শুধু বুঝি, যে প্রতিদান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ বিশেষভাবে দেবেন, তা তার শান মোতাবেক দেবেন।
রোজার প্রতিদান আল্লাহ নিজে দেবেন
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ভবনেই গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র (ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট) নেই। বহুতল ভবন নির্মাণের আগে এবং পরে তা বসতের বা ব্যবহারের উপযোগী কি না, তার জন্য দুই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বা ছাড়পত্র লাগে।
তখনো দিনের আলো ফোটেনি পুরোপুরি, পুব আকাশ সবে একটু একটু করে পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। তখন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপস্থিত হতে শুরু করলেন নীলরঙের টি-শার্ট পরা কিছু মানুষ। প্রথমে একজন-দুজন। তারপর পাঁচজন-দশজনের ছোট ছোট দলে। সংখ্যা দাঁড়াল ১২৭। এরা একটি বিশেষ উদ্যোগে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসেছেন। এরা এসেছেন ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরপরাধ বাঙালির ওপর যে গণহত্যা চালিয়েছিল তার প্রতিবাদ জানাতে, এরা এসেছেন সেদিন যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, এরা এসেছেন শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে দেশ গড়ার দীপ্ত শপথ নিতে, এরা এসেছেন জাতীয় শহীদ মিনার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত ‘শোক থেকে শক্তি : অদম্য পদযাত্রা’য় অংশ নিতে।
বাজার থেকে মুরগি কিনে ড্রেসিং করার পর অনেকেই মুরগির পা, গিলা-কলিজা (লটপট) ফেলে যান। আর এসব গিলা, কলিজা কম দামে কেনেন নিম্ন আয়ের মানুষ। কিন্তু বাজারে হঠাৎ মুরগির দাম বাড়ায় এসব গিলা, কলিজার কদর বেড়েছে। তবে এখানেও দাম বেড়েছে কেজিতে ৫০ টাকা। এতে নিম্ন আয়ের মানুষ এসব কিনতে হিমশিম খাচ্ছে।
বাজারে গিলা-কলিজাও ২৬০ টাকা কেজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে অবৈধভাবে টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই লেনদেন সম্পর্কিত একটি ফোনালাপ দৈনিক দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
১৬ লাখ টাকা ভাগাভাগি ছাত্রলীগের ৫ নেতার
মেধাতালিকা বাদ দিয়ে নতুন নিয়মে পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। যার ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পদোন্নতিযোগ্য সোনালী ব্যাংকের শত শত কর্মী। এত দিন শূন্য পদের ভিত্তিতে মেধাতালিকা থেকে দুজন ও জ্যেষ্ঠতা (সিনিয়রিটি) তালিকা থেকে একজনকে পদোন্নতি দেওয়া হতো। কিন্তু হঠাৎ করেই নতুন নিয়ম চালু হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সবচেয়ে বড় ব্যাংকটিতে। পদোন্নতিতে মৌখিক পরীক্ষার জন্য শুধু জ্যেষ্ঠ তালিকার কর্মকর্তাদের বিবেচনা করা হয়েছে। বিশেষ কিছু ব্যক্তিকে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য মেধাবী ও কর্মঠ অফিসারদের বঞ্চিত করার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সোনালী ব্যাংকের কর্মীরা।
মেধার মূল্যায়ন নেই সোনালী ব্যাংকে
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে একটি গান গেয়েছেন প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী ফাহমিদা নবী। ‘ভোরের আলোয় ঝিকিমিকি’ শিরোনামের গানটি লিখেছেন সুলতানা নূরজাহান রোজ। সুর ও সংগীত করেছেন সজীব দাস। অডিও রেকর্ডিং শেষে এখন চলছে ভিডিও নির্মাণের কাজ। ইয়ামিন এলানের পরিচালনায় মিউজিক ভিডিওটিতে ফাহমিদা নবীও আছেন। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সুন্দর একটি গান করলাম। দেশ রাগের সুরে গানটি করা হয়েছে। এতে ঢোল, বাঁশি, তবলাসহ দেশীয় সংগীতের ছোঁয়া পাবেন শ্রোতারা। সুরকার সজীব দাস অনেক যত্ন নিয়ে গানটি করেছেন। আশা করছি গানের সুর ও মিউজিক ভিডিওটি শ্রোতা-দর্শকদের মন জয় করবে।’ গতকাল গানটি সুলতানা নূরজাহান রোজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছে।
‘তুমি আর নেই সে তুমি’, চন্দিকা হাথুরসিংহের বেলায় শচীন দেব বর্মনের এই গানের কলিটা উপমা হিসেবে আসতেই পারে। দ্বিতীয় মেয়াদে অনেক বদলে গেছেন শ্রীলঙ্কান এই কোচ। আগের মতো কড়া হেডমাস্টারের বদনাম এখনো শোনা যায়নি, সেই সঙ্গে প্রতিভার উপযাচক হিসেবেও তাকে দেখা যাচ্ছে না। হাথুরুসিংহে প্রতিভার প্রয়োগ চান, তাহলে তার দলে জায়গা মিলবে। স্রেফ প্রতিভার জোরে জাতীয় দলে দিনের পর দিন জায়গা ধরে রাখার দিন শেষ, কাল চট্টগ্রামে ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে এসে এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ দলের কোচ।
শুধু প্রতিভায় মন গলবে না হাথুরুর
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম। দারুস সুন্নাহ ওয়াল ফিকর, মিরপুরের প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম এবং মিরপুর সাংবাদিক এলাকার মসজিদে ফারুকের খতিব। হুফফাজুল কুরআন ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি। দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন- রমজানের আমল, ইমামের গুণাবলি ও হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতাসহ সমসাময়িক নানা প্রসঙ্গে।
সকাল ১০টায় রেডিও নতুন সামরিক আদেশের ঘোষণা দিল। যখনই কোনো সাংবাদিক সেনা কর্মকর্তাদের কাছে কোনো তথ্য জানতে চান, তাদের রূঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়। কূটনৈতিক মিশনে পৌঁছার সব চেষ্টা ব্যর্থ হলো। এক দল সাংবাদিক যখন সামনের দরজা দিয়ে একজন ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কথা বলতে বেরিয়ে এলেন, ক্যাপ্টেন ভয়ংকর ক্ষুব্ধ হলেন। তাদের ভেতরে ঢোকার হুকুম দিয়ে পেছন থেকে বললেন, ‘আপনাদের কীভাবে সামলাতে হবে আমি জানি। আমি আমার নিজের মানুষদের হত্যা করতে পারি। আমি আপনাদেরও হত্যা করতে পারব।’
কুড়িগ্রামে নতুন প্রজন্মকে উজ্জীবিত করতে এবং জানাতে একটি বিলের মাঝে লাল সবুজের রঙে রাঙিয়ে তোলা হয়েছে ব্যতিক্রমী অস্থায়ী ভাসমান এক দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিসৌধ।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে জেলার রাজারহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের উদ্যোগে বর্ণিল আলোকসজ্জায় চাকির পশার বিলে স্মৃতিসৌধের আদলে ভাসমান স্মৃতিসৌধটি তৈরি করা হয়।
রবিবার (২৬ মার্চ) রাতে উপজেলার চাকির পশা বিলের মাঝে এ ব্যতিক্রমী স্মৃতিসৌধটির দেখা মেলে। সন্ধ্যার পর থেকে ব্যতিক্রমী এ সৌধের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিলের পারে ভিড় জমান বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজারহাট উপজেলার চেয়ারম্যান জাহিদ ইকবাল সোহরাওয়ার্দী বাপ্পির নিজ অর্থায়নে উপজেলার চাকির পশা বিলে মাঝে ব্যতিক্রমী অস্থায়ী একটি ভাসমান স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হয়েছে। মূলত নতুন প্রজন্মকে উজ্জীবিত করতে স্মৃতিসৌধেটি লাল সবুজ রঙের আদলে তৈরি করা হয়। দেখলে মন কাড়বে যে কারো। রাতে পানির মাঝে স্মৃতিসৌধের সৌন্দর্য উপভোগ করতে শত শত মানুষ ভিড় করছে চাকির পাশ বিলের পাড়ে। স্মৃতিসৌধটিতে লোহার অ্যাঙ্গেল, রড, লোহার পাতি, কাপড় ও বিভিন্ন রঙের লাইট ব্যবহার করা হয়েছে। এটি লম্বা প্রায় ২১ ফিট।
সবকিছু ঠিকটাক থাকলে স্মৃতিসৌধটি বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের জন্য ঈদ পর্যন্ত বিলের মাঝেই রাখা হবে বলে জানা গেছে।
স্মৃতিসৌধটি দেখতে আসা রানা নামের একজন বলেন, বিলের মাঝে স্মৃতিসৌধ। আবার লাল সবুজের রঙের রাঙিয়ে তোলা হয়েছে। যা দেখতে অসাধারণ। আমি ফেসবুকে স্মৃতিসৌধটি সৌন্দর্য দেখতে পেয়ে চলে আসলাম। আসলেই অসাধারণ, নিজ চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না এর সৌন্দর্য।
স্মৃতিসৌধেটির তৈরির উদ্যোক্তা ও রাজারহাট উপজেলার চেয়ারম্যান জাহিদ ইকবাল সোহরাওয়ার্দী বাপ্পির বলেন, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে চাকির পশা বিলের মাঝে অস্থায়ী দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। নতুন প্রজন্মকে উজ্জীবিত এবং জানাতে মূলত স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করা হয়েছে। গত ১৫ দিন থেকে প্রস্তুতি নিয়ে এ কাজটি করেছি আমরা। দেখবেন নিজের ছবি নদীর মাঝে দেখতে কিন্তু ভালো লাগে। ঠিক তার চেয়েও সুন্দর লাগছে স্মৃতিসৌধটি পানিতে দেখতে। এর সৌন্দর্য রাতে উপভোগ করার মতো। দিনে এটি ভালো লাগবে না। মূলত রাতের জন্য তৈরি করা হয়েছে। আমরা স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের বলব, তারা যেন এটি দেখতে আসে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
রাজধানীর মিরপুরের একটি মাধ্যমিক-সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সিফাত। একই এলাকায় বসবাসকারী তার বন্ধু সিয়াম পড়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে। সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রোজার ছুটি। আর সরকারি প্রাথমিকে ছুটি ১৫ রোজা অর্থাৎ ৭ এপ্রিল থেকে।
এক দেশে একই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন নিয়মে ছুটি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে লেখাপড়ায় কেউ এগিয়ে যাবে, আবার কেউ পিছিয়ে পড়বে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ মামুনুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার বা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে ভেবেচিন্তেই নেয়। তবে সব ধরনের স্কুলে একটা কো-অর্ডিনেশন থাকলে ভালো হয়। আমরা ছুটির ব্যাপারে আরও আলাপ-আলোচনা করব।’
জানা গেছে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আগামী শুক্রবার শুরু হতে পারে রমজান মাস। বছরের শুরুতেই স্কুলগুলোর ছুটির তালিকা অনুমোদন করা হয়। সে অনুযায়ী পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস, ইস্টার সানডে, বৈসাবি, নববর্ষ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসা ও টিটি (টিচার্স ট্রেনিং) কলেজেও একই সময়ে ছুটির ঘোষণা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছুটির তালিকা ভিন্ন। তারা পবিত্র রমজান, ইস্টার সানডে, চৈত্র-সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ৭ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ প্রায় ১৫ রমজান পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে।
রাজধানীসহ বড় বড় শহরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিকের মতোই তাদের ছুটি থাকবে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রোজার ছুটিও একই। তবে মাদ্রাসায় রোজার ছুটি শুরু এক দিন আগেই অর্থাৎ আজ বুধবার, ২২ মার্চ।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান। তাই বুধবার ক্লাস করে বৃহস্পতিবার রোজার ছুটি শুরু হবে। তবে সব স্কুলে একই ধরনের ছুটি থাকা জরুরি। এতে একই সময়ে সিলেবাস শেষ করা যাবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও সন্তুষ্ট থাকবে।’
রমজানে মাধ্যমিকে স্কুল বন্ধ আর প্রাথমিকে খোলা রাখায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার লাখ শিক্ষকের মধ্যে। তারা বলছেন, যেসব অভিভাবকের সন্তান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই স্কুলেই পড়ে তাদের সমস্যা হবে। রমজান মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাও রোজা রাখেন। তাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিল রেখে প্রাথমিকের ছুটি নির্ধারণ করা যৌক্তিক হবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাংগাঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারি ছুটি ৭৬ দিন, কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৫৪ দিন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ছুটি নির্ধারণের যুক্তি তুলে ধরে আমরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছি। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো সাড়া পাইনি।’