
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ে আনন্দ উল্লাস বাংলাদেশেও। অন্তর্জালের কল্যাণে বাংলাদেশের আর্জেন্টিনা সমর্থকদের কথা পৌঁছে গেছে সুদূর দক্ষিণ আমেরিকায়। এদেশে দূতাবাস খোলার আগ্রহ দেখিয়েছে আর্জেন্টিনা। আর বিশ্বকাপ ফাইনাল শেষে আর্জেন্টিনার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিও পোস্ট করে ধন্যবাদ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশকে। ফিফা র্যাংকিংয়ের তলানির দিকের দেশ বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা দূরপরাহত। আর্জেন্টিনার সঙ্গে নেই সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক বা রাজনৈতিক যোগাযোগও। তবুও বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার এত বিস্ময়কর সমর্থক সংখ্যা অবাক করেছে আর্জেন্টাইনদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে প্রচুর মানুষের একসঙ্গে বসে খেলা দেখার ছবি, ফেইসবুকে বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের ভক্ত বনে যাওয়া আর্জেন্টিনার মানুষদের গ্রুপ... সবই বলে দিচ্ছে দুনিয়ার এপিঠ-ওপিঠে হলেও দুই দেশের মানুষের আবেগের স্রোত একই রকম।
তাই তো আর্জেন্টিনা থেকে বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে বাংলাদেশে চলে এসেছেন সাংবাদিকরা! আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ার্সে টাইমসসহ অনেক পত্রপত্রিকায় বাংলাদেশের সমর্থকদের খবর প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্বকাপ জুড়েই সমর্থন দিয়ে যাওয়া সবাইকে ধন্যবাদ দিয়েছে এএফএ। টুইটারে বাংলাদেশের একটি ভিডিও পোস্ট করে লেখা হয়েছে ‘ধন্যবাদ বাংলাদেশ। ধন্যবাদ কেরালা, ভারত, পাকিস্তান। তোমাদের সমর্থন ছিল অসাধারণ।’ টুইটটি প্রায় ৫ হাজার বারের মতো রিটুইট হয়েছে।
বিজয় মিছিল একদফা হয়ে গেছে কাতারে। দেশটির স্বাধীনতা দিবসের উৎসব আরও রঙিন হয়েছে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ে। এবারে ঘরের ছেলেদের ঘরে ফিরে যাওয়ার পালা। মরুর বুকে বিশ্বকাপের ফুল ফুটিয়ে লিওনেল মেসিরা রওনা হয়ে গেছেন আর্জেন্টিনার পথে। বিশ্বজয়ীদের বরণ করে নিতে প্রস্তুত বুয়েনস আয়ার্স।
লুসাইল স্টেডিয়ামে ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতার পর উৎসব করতে করতেই কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে যান আর্জেন্টাইন ফুটবলাররা। সেখানে রাতভর উল্লাস, উদযাপন আর এরই মাঝে রাতের খাবার খেয়ে নেওয়া। আনন্দে নির্ঘুম কেটেছে রবিবারের রাত। সোমবার সকালে অ্যারোলিনস আর্জেন্টিনোসের একটি বিশেষ বিমানে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফ সদস্যরা উড়াল দেন কাতার থেকে। প্রথম গন্তব্য রোম। সেখান থেকে ফের উড়াল দিয়ে বুয়েনস আয়ার্সে। এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, মোট ২১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের উড়াল শেষে বিশ্বকাপজয়ীরা পা রাখবেন আর্জেন্টিনার মাটিতে।
আর্জেন্টিনায় উৎসব এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। রাজধানী বুয়েনস আয়ার্সের কেন্দ্রস্থল অবেলিস্ক ফাইনালের দিন সকাল থেকে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। মেসির নিজের শহর রোজারিও এবং প্রদেশের প্রধান শহর সান্তা ফে’র কেন্দ্রীয় অংশেও মানুষের ঢল। আর্জেন্টিনার স্থানীয় সময় সোমবার মাঝরাত থেকে মঙ্গলবার সকালের ভেতর কোনো এক সময়ে দেশে পা রাখবেন মেসিরা।
রবিবারই তিনতারকা খচিত নতুন জার্সি গায়ে দিয়েছেন আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা। ছাদখোলা গাড়িতে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথেই খেলোয়াড়দের দেখা গেছে তিনটি বিশ্বকাপ জয়ের স্মারক তিন তারা খচিত নতুন জার্সিতে উল্লাস করতে।
এমন একটা সময়ে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতল, যখন গোটা দেশের মানুষ অপেক্ষায় ছিল একটা সুসংবাদের। দেশটিতে আর্থিক মন্দা ও মুদ্রা সংকট চলমান, মূল্যস্ফীতি ১০০ শতাংশ ছুঁয়েছে, গত সপ্তাহেই দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা ক্রিস্তিনা ফার্নান্দেজ দে কির্চনারকে দুর্নীতির অভিযোগে ৬ বছরের কারাদ- দেওয়া হয়েছে। বাস্তব পৃথিবীর এই কঠিন শৃঙ্খল থেকে খোলা হাওয়ার পরশ বুলিয়ে মেসিরা জিতেছেন বিশ্বকাপ, এতে করে সমস্যার সমাধান হয়তো হবে না, তবে মনের শান্তি তো পাবে আর্জেন্টিনার বাসিন্দারা।
ফাইনালের আগে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে টুইট করেছিলেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্ত ফার্নান্দেজ। তিনি লিখেছিলেন ‘প্রিয় সুহৃদ ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, তোমার প্রতি আমার অশেষ ভালোবাসা আর তোমার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি। তবে এই রবিবারের জন্য নয়। আর্জেন্টিনা একটা চমৎকার দেশ, আর এটা লাতিন আমেরিকা। এগিয়ে যাও আকাশি-সাদারা।’ নভেম্বরেই প্যারিসে দেখা হয় ম্যাক্রোঁ-ফার্নান্দেজের। দুজনের মধ্যে ৪৫ মিনিট আলাপে লাতিন আমেরিকার রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বিষয়ে অনেক আলোচনা হয়। নিশ্চয়ই ফ্রান্স আর্জেন্টিনার বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র, তবে এখন সেই সম্প্রীতি ভুলে ফ্রান্সের বিপক্ষে জয় উদযাপনেই মশগুল আর্জেন্টাইনরা।
বিশ্বকাপ জিতে আসা খেলোয়াড়দের দেখতে বুয়েনস আয়ার্সের প্লাজা দে মায়ো স্কয়ারে অনেকের সঙ্গে অপেক্ষায় আছেন ৪৪ বছর বয়সী স্কুলশিক্ষিকা ভেরোনিকা সিলভা। বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি জানিয়েছেন, আরও অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতেও রাজি ‘অবশ্যই অপেক্ষা করব। এই মুহূর্তের জন্যই তো এতদিন অপেক্ষা করে আছি। এমনটা আরও দিন দুয়েক চলবে। মাত্র তো শুরু হলো, কালকের আগে শেষ হবে না কারণ ওরা আসছেই তো কালকে। অপেক্ষার প্রহর আরও লম্বা হতে পারে।’ ৬৩ বছর বয়সী রোসা রদ্রিগেস জানালেন, ‘আমি ওদের সবাইকে দেখতে চাই। ওরা খুব ভালো দল আর আমাদের গর্বিত করেছে। ওরা এখানে আসার পর সবচেয়ে বড় উদযাপন শুরু হবে।’
২৫ বছর বয়সী নির্মাণশ্রমিক অগাস্টিন আকেভেদো জানিয়েছেন, সব কষ্টের পরও বিশ্বকাপ জয় তাদের মতো মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে ‘আর্জেন্টিনা একটা অর্থনৈতিক দুরবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, এখন দিন এনে দিন খাওয়াটাও কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে ঠিক আছে, আমরা যত কষ্টই করি না কেন দিন শেষে আমাদের কষ্টের মূল্যটা হচ্ছে এই বিশ্বকাপ। আমাদের অনেক সমস্যা আছে, তবে এই উপলক্ষটাও দরকার ছিল।’
এভাবেই ব্যক্তিগত দুঃখ, কষ্ট, বঞ্চনা আর বেদনাকে ভুলে গিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে বুঁদ হয়ে থাকবেন আর্জেন্টিনার নাগরিকরা। ৩৬ বছর পর ফের বিশ্বকাপ এসেছে দেশে। অভাব, অনটন, বঞ্চনা এসব তো সব সময়ই থাকবে। বিশ্বকাপ তো মাত্র চার বছর! তাই এখন উৎসবের পালা।
১৯৭৮ সালে আমি ছিলাম এস্তাদিও মনুমেন্টালের বাইরে, তখন আমি নিতান্তই ১৬ বছরের এক কিশোর। ১৯৮৬ সালে নিজেই হয়ে গেলাম বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য, সোনার কাপটাকে ধরলাম আর চুমু খেলাম। আর এইবার, ২০২২ সালে এসে গ্যালারি থেকে খেলা দেখলাম, আর্জেন্টিনার জয়ে উল্লাস করলাম আর পরে আরও একবার বিশ্বকাপ ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখলাম। এক জীবনে আর কী চাই! আমি একজন আর্জেন্টাইন হিসেবে গর্বিত, তিন বার বিশ্বকাপজয়ী একটা দেশের হয়ে খেলেছি এইজন্য গর্বিত। মেসিই যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলার, এই নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশই নেই। সেই সঙ্গে আর্জেন্টিনা হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম এক ফুটবল পীঠস্থান, যে দেশকে সবাই সম্মান করে।
মেসির আর্জেন্টিনা গোটা ম্যাচেই দাপটের সঙ্গে খেলেছে। এমবাপ্পেকে জ্বলে উঠতে দেখা গেছে হঠাৎ হঠাৎ। তবে এই মুহূর্তে ফুটবল ম্যাচ নিয়ে আর বিশ্লেষণ করে লাভ নেই কারণ ইতিহাস বলবে, রেকর্ড বই বলবে যে ২০২২ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা।
ম্যাচ শেষে মনে হচ্ছিল, আমি এস্তাদিও মনুমেন্টালে বসে আছি। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর আর্জেন্টিনার ফুটবল দলের খেলোয়াড়দের স্ত্রী, সন্তান, বাবা, মা সবাই নেমে গেল মাঠে। সবাই তখন নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে আনন্দের মুহূর্তগুলো ভাগাভাগি করে নিতে ব্যস্ত। গনজালো মন্তিয়েলের শটে টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনার শিরোপা নিশ্চিত হওয়ার দুই ঘণ্টা পরও মাঠে তাদের দেখলাম আনন্দে মগ্ন। ঘাসের ওপর শিশুরা খেলছে, কেউ দৌড়াচ্ছে, কেউ স্মারক সংগ্রহ করছে।
এই জয়ে, লিওনেল মেসি আর ডিয়েগো ম্যারাডোনা মিলে গেল একবিন্দুতে। মেসি এইবার বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়, বিশ্বকাপজয়ী। ম্যারাডোনা ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জিতেছিল আর ১৯৯০ বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরেছিল পশ্চিম জার্মানির কাছে। মেসিরও এটা দ্বিতীয় ফাইনাল ২০১৪ সালে জার্মানির কাছে হারের পর এবার বিশ্বকাপ জয়। তার ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই, শুধু এই একটা কমতিই ছিল যেটা পূরণ হয়ে গেল।
ইতিহাসের সর্বকালের সেরা হয়ে গেছে মেসি। এরপর আমরা অন্য যে কোনো বিষয় নিয়ে আলাপ করতে পারি। ম্যারাডোনা কী দিয়েছে, ম্যারাডোনা কী পারত এসব প্রসঙ্গে ম্যারাডোনার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রেখেই বলছি, মেসি সর্বশ্রেষ্ঠ।
মেসির বিশ্বকাপ জয়টা ছিল আর্জেন্টাইনদের জন্য একটা বড় স্বস্তি। মাঠের ভেতর সবাই কাঁদছে, গান গাইছে, গলা জড়াজড়ি করছে... ফুটবল মাঠে এমন দৃশ্য আমি কখনো দেখিনি। অবিশ্বাস্য, অসাধারণ। কী যে একটা ম্যাচ হয়েছে! একবার মনে হয়েছিল, আমরা অতি সহজে জিতব। একবার মনে হলো আমরা হেরে যেতে পারি। অতিরিক্ত সময়ে আমরা জিততে পারতাম, হারতেও পারতাম। অবশেষে টাইব্রেকারে গিয়ে জিতলাম। শ্বাসরুদ্ধকর, আনন্দময়, হৃদয় জয় করা ফুটবল।
দলটা আরও একবার দেখিয়েছে, তারা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। দেখিয়েছে তাদের শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাওয়ার সামর্থ্য। এই বৈশিষ্ট্যের জন্যই আজ আমরা বিশ্বকাপ জিততে পেরেছি। এই গুণটা সত্যিই বিশেষ কিছু, আমাদের জাতীয় দলটা আসলেই বিশ্বকাপ জেতার যোগ্য। দলটাকে যারা তৈরি করেছে, যারা পাশে থেকেছে সবাই প্রশংসার দাবিদার। আমরা আর ফুটবলপ্রেমীরা অনেকদিন ধরেই অপেক্ষা করছি। এই কাপটা আমাদের প্রাপ্য। একই সঙ্গে এই শিরোপার সবচেয়ে বড় দাবিদার লিওনেল মেসি, এই নিয়ে কোনো সন্দেহই নেই।
আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কারণ তারা প্রথম ম্যাচে হারের ক্ষত থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছে। এবং মেক্সিকোর সঙ্গে ম্যাচটা বাদ দিলে গোটা আসরেই ভালো খেলেছে এবং প্রতি ম্যাচেই আগের ম্যাচের চেয়ে উন্নতি করেছে। আমার মনে হয় এটাই সেরা দল। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে প্রথম ম্যাচে হেরে একটা বড় ধাক্কা খেয়েছে ওরা, সেটাই তাদের ভেতরকার ফুটবলটা বের করে এনেছে। প্রতিটা খেলোয়াড়ই ধীরে ধীরে তাদের সেরাটা বের করে এনেছে, তাদের সামর্থ্যরে সর্বোচ্চটা দেখিয়েছে যেটা শুরুতে অনেক কম মনে হচ্ছিল। দলটা উন্নতি করেছে, সবগুলো বাধা অতিক্রম করেছে আর অনেক বছর পর আমাদের গর্বিত করেছে।
অবশেষে ২ কোটি আর্জেন্টাইনের জীবনে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। অনেকেই তাদের দাদা দাদিদের কাছে ১৯৭৮ এর বিশ্বকাপ জয়ের গল্প শুনেছে, বাবা-মায়ের কাছে ১৯৮৬’র বিশ্বকাপ জয়ের গল্প শুনেছে যা আমার কাছে খুবই স্মরণীয়; এবার বর্তমান প্রজন্মও দেখল আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিততে। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের জার্সির তিনটা তারা যেন এক সুতোয় বাঁধল তিনটা প্রজন্মকে। সমর্থকরা যে উপলক্ষটার জন্য অনেকদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলেন, অবশেষে সেই উপলক্ষটা এলো।
আর্জেন্টিনা দলটা অতীত গৌরবের ওপর বাঁচতে বাঁচতে একটা সময়ে মরেই যাচ্ছিল, এই বিশ্বকাপ জয় আবার তাদের বাঁচিয়ে দিল। মেসির দারুণ এক অর্জন। ম্যারাডোনার খেলা ছাড়ার পর আর আমাদের অবসরের পর মেসিকে কেন্দ্র করে দারুণ একটা দল বানাতে ৭ থেকে ৮ বছর লেগেছে। মেসির অবসরের পর আর্জেন্টিনার কী হয় সেটা ঠিক করতে হবে এক্ষুনি কারণ পরের কয়েকটা বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য, বিচারব্যবস্থার সংস্কারে ‘জুডিশিয়াল কমিশন’ গঠন, মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সংগতি রেখে মজুরি, চাকরির বয়সসীমা বাড়ানো, মিডিয়া কমিশন গঠনসহ রাষ্ট্র সংস্কারে ২৭ দফা রূপরেখা ঘোষণা করেছে বিএনপি। জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা ও খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ এর আলোকে ২৭ দফা তৈরি করা হয়েছে বলে গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানিয়েছেন।
ঘোষিত ২৭ দফার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দফাগুলো হলো প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময়সীমা আন্তর্জাতিক মানদ-ে নিয়ে যাওয়া, বেকার ভাতা চালু, আওয়ামী লীগ সংবিধানে যেসব পরিবর্তন এনেছে তা সংশোধন করা, গণমাধ্যমের সার্বিক সংস্কারের লক্ষ্যে একটি ‘মিডিয়া কমিশন’ গঠন, বিচারব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একটি ‘জুডিশিয়াল কমিশন’ গঠন, প্রশাসনিক সংস্কার বিষয়ক একটি ‘প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন’ গঠন, সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, যুক্তরাজ্যের ‘ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসেস’-এর আদলে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রবর্তন করা।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, “২৭ দফাই শেষ নয়, আরও প্রস্তাব আসবে। যথাযথ সময়ে অন্যান্য বিষয়ভিত্তিক সংস্কার প্রস্তাব ও উন্নয়ন কর্মসূচি প্রকাশ করা হবে। অতীতের ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও দায়ীদের মধ্যে সমঝোতা করতে একটি কমিশন গঠন করা হবে। ‘প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ‘রেইনবো নেশন’ (বহু বর্ণ-ধর্ম মিলিয়ে জাতি) প্রতিষ্ঠা করা হবে। এজন্য করা হবে একটি ‘জাতীয় রিকনসিলিয়েশন কমিশন’।”
আগামীতে জনগণের সরকার ক্ষমতায় এলে বেকার ভাতা চালু হবে বলে জানিয়েছেন খন্দকার মোশাররফ। এছাড়া সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী নির্ধারণ, শ্রমজীবীদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা, বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া, বাংলাদেশ ভূখ-ের মধ্যে কোনো প্রকার সন্ত্রাসী তৎপরতা বরদাশত না করার অঙ্গীকারও করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘কোনো সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা আশ্রয়-প্রশ্রয় পাবে না।’
সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার অঙ্গীকারও করেছে বিএনপি। ২৭ দফায় আরও আছে, ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহারের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে রাজনৈতিক ঢাল বা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এবং সন্ত্রাসবাদের তকমা লাগিয়ে ভিন্নমতের বিরোধী শক্তি এবং রাজনৈতিক বিরোধী দল দমনের অপতৎপরতা বন্ধ করা হলে প্রকৃত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে এবং আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা সম্ভব হবে।’
সংসদ ও সংবিধান বিষয় নিয়ে বিএনপির আন্দোলন, সেই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংবিধানের যেসব সংশোধনী এসেছে সেগুলো ফের সংশোধন। রাষ্ট্রপতির মতো প্রধানমন্ত্রী পদেও পরপর দুইবারের বেশি নয় এমন একটি বিধান করবে বিএনপি। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে আনা হবে ভারসাম্য। জাতীয় সংসদে নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার বাধা দূরের অঙ্গীকারও করেছে বিএনপি। এজন্য সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করার বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে তারা।
এ সময় যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে ছিলেন আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, নিতাই রায় চৌধুরী। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, আবদুল হাই শিকদার, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন প্রমুখ।
বস্তুনিষ্ঠ, নিরপেক্ষতা ও সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতার প্রতিশ্রুতি এ স্লোগান ধারণ করে যাত্রা শুরু করেছিল দৈনিক দেশ রূপান্তর। আজ ২০ ডিসেম্বর পাঠকপ্রিয়তায় শীর্ষস্থানীয় এ পত্রিকা চার বছর পেরিয়ে পাঁচ-এ পা রেখেছে। ২০১৮ সালের এই দিনে প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সম্পাদক অমিত হাবিবের হাত ধরে পথচলা শুরু করেছিল দেশ রূপান্তর।
পত্রিকার দায় শুধু পাঠকের কাছে এ বিবেচনায় পাঠকের চাহিদাকে সম্মান দিয়ে স্বকীয়তা, উদ্ভাবনমূলক, নতুন চিন্তার প্রতিফলনের সঙ্গে অনুসন্ধানী ও পর্যবেক্ষণমূলক প্রতিবেদনের মাধ্যমে পাঠক ও গণমানুষের কাছে দেশ রূপান্তর উজ্জ্বল ব্যতিক্রম হয়ে ওঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
পথচলা শুরুর মাত্র ১৫ মাসে দেশ রূপান্তর নিয়ে যখন নানা মহলে ইতিবাচক সাড়া ও আলোচনা শুরু হয়েছে তখনই এলো করোনা মহামারী। তবে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান রূপায়ণ গ্রুপের আন্তরিকতায় প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দমে যায়নি দেশ রূপান্তর। চলতি বছর ২৮ জুলাই পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক অমিত হাবিবের অকাল এবং অকস্মাৎ মৃত্যু ছিল বজ্রাঘাতের মতো।
এ শূন্যতা পূরণ হতে না হতেই বৈশি^ক অর্থনৈতিক মন্দা, পত্রিকার জন্য অপরিহার্য কাগজ ও অন্যান্য উপকরণের আকাশচুম্বী মূল্য সংকটকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। বোদ্ধামহলের অভিমত, প্রযুক্তি আর কনটেন্টের এ সময়ে ছাপা পত্রিকা টিকে থাকার সংগ্রামেরত। তবে যাত্রা শুরুর সময়ের যে প্রতিশ্রুতি সঙ্গীন এ সময়েও তা থেকে সরে আসেনি দেশ রূপান্তর। নিজস্ব অবস্থান ধরে রেখে বিরূপ পরিস্থিতি সামাল দিয়ে দেশ রূপান্তর গণমানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে নিয়ত।
পঞ্চম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে বাংলা মোটরে রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারে পত্রিকাটির কার্যালয়ে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় কেক কাটেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। এর আগে অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। দেশ রূপান্তরের প্রকাশক ও রূপায়ণ গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান মাহির আলী খাঁন রাতুলকে ফুল দিয়ে বরণ করেন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন। রূপায়ণ গ্রুপের উপদেষ্টা ক্যাপ্টেন (অব.) পি জে উল্লাহকে বরণ করেন দেশ রূপান্তরের বার্তা সম্পাদক শাহ আলম বাবুল ও রূপায়ণ গ্রুপের মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর মেহেদী হাসান। রূপায়ণ গ্রুপের উপদেষ্টা আবদুল গাফফারকে বরণ করেন প্রধান প্রতিবেদক উম্মুল ওয়ারা সুইটি ও বিশেষ প্রতিনিধি আশরাফুল হক, রূপায়ণ গ্রুপের পরিচালক (মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসন) লে. ক. (অব.) আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদকে বরণ করেন দেশ রূপান্তরের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আনোয়ার চৌধুরী, ইউসুফ কবির এবং সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এটিএম রোবায়েত আলী।
অনুষ্ঠানে দেশ রূপান্তরের প্রকাশক ও রূপায়ণ গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান মাহির আলী খাঁন রাতুল তার বক্তব্যে পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রয়াত অমিত হাবিবকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
পত্রিকাসংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, দেশ রূপান্তরের সবচেয়ে বড় সম্পদ তার সাহস। নানা সংকটের মধ্যেও প্রতিটি কর্মী সাহসের সঙ্গে পত্রিকাটিকে এগিয়ে নিতে কাজ করছেন। আমাদের যে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য, এই সাহস যেন সেই বিজয় নিয়ে আসে আমি সেই প্রত্যাশা করি। তিনি বলেন, দেশ রূপান্তরের সেøাগান এটি দায়িত্বশীলদের দৈনিক। এখন দায়িত্বশীল লোকদের পাশাপাশি সমাজে আরও যারা আছে তাদের কীভাবে আরও দায়িত্বশীল করা যায় সেই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
রূপায়ণ গ্রুপের উপদেষ্টা ক্যাপ্টেন (অব.) পি জে উল্লাহ বলেন, এই পত্রিকার শুরু থেকে প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদকের সঙ্গে আমি ছিলাম। পত্রিকাটি ইতিমধ্যে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। যত পাঠক ও বিজ্ঞাপন বাড়বে তত আমাদের ভালো লাগবে। এখন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক দায়িত্ব নিয়েছেন। আশা করি পত্রিকাটি অনেকদূর এগিয়ে যাবে।
দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন বলেন, আমাদের পথ দেখিয়েছেন অমিত হাবিব। বস্তুনিষ্ঠ ও সত্য সংবাদ প্রকাশে আমাদের সাহসিকতা যেমন চলবে তেমনি অতি সাহসিকতা দেখাতে গিয়ে আমরা আমাদের দায়িত্বশীলতাকে ভুলব না। দায়িত্বশীলতা ও সাহসের সমন্বয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছব বলে আমি বিশ্বাস করি।
রূপায়ণ গ্রুপের মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর মেহেদী হাসান বলেন, রূপায়ণ গ্রুপের মাননীয় চেয়ারম্যান দেশ রূপান্তর নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন। শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক যখন যা চেয়েছেন-বলেছেন তিনি তাতে সায় দিয়েছেন। দেশ রূপান্তর চেয়ারম্যান স্যারের কাছে একটু আলাদা। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মামুন ভাইয়ের নেতৃত্বে দেশ রূপান্তর এগিয়ে যাবে এটিই আমাদের প্রত্যাশা।
দেশ রূপান্তর ডিজিটালের ইনচার্জ হাবিবুর রহমান পলাশের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রধান প্রতিবেদক উম্মুল ওয়ারা সুইটি ও বিশেষ প্রতিনিধি আশরাফুল হক।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন দেশ রূপান্তরের উপ-প্রধান প্রতিবেদক প্রতীক ইজাজ, বিশেষ প্রতিনিধি সরোয়ার আলম, পাভেল হায়দার চৌধুরী প্রমুখ।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আজ দিনভর প্রীতি সম্মেলন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আজ মঙ্গলবার দিনভর উৎসবমুখর থাকবে দেশ রূপান্তর কার্যালয়। বেলা ১১টায় রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খাঁন মুকুল শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন। দুপুর ১২টায় হবে কেক কাটা ও পত্রিকাটির নতুন ওয়েবসাইট উদ্বোধন। বিকেল ৩টা থেকে দেশ রূপান্তরের কর্মীদের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার মধ্য রয়েছে বিভিন্ন বিভাগের বছরসেরা সংবাদকর্মীদের পুরস্কার, ক্রেস্ট ও অভিনন্দনপত্র প্রদান। এ ছাড়া পত্রিকাটির বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের তিন সেরা সাংবাদিককে পুরস্কৃত করা হবে। সন্ধ্যায় হবে সংবাদকর্মীদের আলোচনা, আড্ডা, গান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, র্যাফেল ড্র ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান।
সরকারবিরোধী আন্দোলন ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে থাকায় ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলন। নির্বাচিত কমিটির নেতাদের ওপর দলের কর্মী-সমর্থকদের প্রত্যাশার চাপ থাকবে অন্যান্য বারের চেয়ে বেশি। এই নেতৃত্বকেই বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলা করতে হবে। বিজয়ী হতে হবে সংসদ নির্বাচনে।
আগামী ২৪ ডিসেম্বর হবে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এবার নিয়ে পঞ্চমবার সম্মেলন করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা।
আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, দলের ঐক্য সুদৃঢ় করার জন্য দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হবে নতুন নেতৃত্বকে। যে কারণে ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’ নেতাদের কবল থেকে আওয়ামী লীগকে বের করে এনে নিবেদিতদের হাতেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব তুলে দেওয়ার কঠিন কাজটিও করতে হবে। সুসময়ে আদর্শহীন গোষ্ঠীর দাপটে দলের পুরনো ও ত্যাগী নেতাদের মধ্যে সৃষ্ট ক্ষোভ দূর করতে হবে। দলের ইস্পাতকঠিন ঐক্য নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিতে হবে নতুন কমিটিকে। সে কারণে এবারের সম্মেলন যেমন গুরুত্বের তেমনি চ্যালেঞ্জেরও।
অন্য একটি সূত্রের দাবি, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য এবারের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে প্রস্তুত করে তুলতে চান দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, গ্রহণযোগ্য ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন, কর্মীদের কাছে প্রিয়-বিশ্বস্ত নেতৃত্ব উপহার দেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই আওয়ামী লীগের। তাই যোগ্য-দক্ষ, কর্মীবান্ধব-সক্রিয় নেতারাই দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রাধান্য পাবেন। দলে কাজে পুরোপুরি সময় দিতে পারবেন এমন নেতারাই আওয়ামী লীগের চালিকা ৮১ জনের একজন হওয়ার সুযোগ পাবেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ দলীয় দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছেন। তিনি ছাড়াও সারা বছর নেতাকর্মীবেষ্টিত থেকেছেন ড. হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দুই মেয়াদে এই পদে আছেন। নিয়মিত দলীয় কার্যালয়মুখী এই নেতা পরিবেশ নিয়ে প্রশংসনীয় অনেক কাজ করেছেন। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসার কারণে বিভিন্ন পেশায় থাকা কর্মকর্তারা এই নেতার বন্ধু সার্কেলে রয়েছেন। তার অনুসারীর সংখ্যাও কম নয়, যারা জেলা-উপজেলা বা থানা পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন। এসব বিষয় আমলে নিলে পদোন্নতির সুযোগ থাকছে তার। ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী যেকোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে ত্রাণ নিয়ে দাঁড়িয়েছেন দুর্গত অসহায় মানুষের পাশে। তিনিও পদোন্নতির আশা করছেন।
সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল হোসেন ও আফজাল হোসেন সাংগঠনিক জেলাগুলো সফর করে নেতাকর্মীদের সুবিধা-অসুবিধা জেনেছেন। সমাধানের চেষ্টা করেছেন। কখনো কখনো ঢাকায় ডেকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করে জটিল পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে সাংগঠনিক সম্পাদকদের বিরুদ্ধে অনেক তৃণমূল নেতাকর্মী আর্থিক লেনদেন ও অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। সে কারণে সাংগঠনিক সম্পাদকদের দুই-চারজনের বাদ পড়া বিষয়টি যেমন দলে আলোচিত হচ্ছে, তেমনি পদোন্নতির সুযোগও আছে।
অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। তার ব্যাপারে দলের নেতাকর্মীরা ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী রাজনীতিতে সার্বক্ষণিক থাকার চেষ্টা করেন। দলের নেতাকর্মীদের অভাব-অভিযোগ মনোযোগ দিয়ে শোনেন এই নেতা। বাসায়ও নেতাকর্মীদের সময় দেন। দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া ও উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান দাপ্তরিক কাজে সক্রিয় থেকেছেন সব সময়ই। তবে ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমানের মতো নেতারা সম্পাদকীয় পদে থাকলেও তাদের সাংগঠনিক কাজ কর্মে তেমন দেখা যায়নি। তবে আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বিভিন্ন সময়ে দেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের নিয়ে সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করেছেন, দলের ও সরকারের অবস্থান তুলে ধরেছেন। যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশীদ ক্রীড়ার মানোন্নয়নে তেমন ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি। তবে তার ভাবমূর্তি পরিচ্ছন্ন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুর সবুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে এই সরকারের সময়ে তা তুলে ধরার কাজে সম্পৃক্ত থেকেছেন। প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকায় তার বিভাগে উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বেশ সক্রিয় থেকেছেন। আইন সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু। কিন্তু দলের পক্ষে আইনি কার্যক্রম নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রিয়াজুল কবির কাওছার সর্বত্র সরব ছিলেন। এ ছাড়া করোনা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন দুর্যোগ-দুর্বিপাকে মানুষের পাশে দাঁড়ানো নেতাদেরও পদোন্নতি দিয়ে মূল্যায়ন করা হবে এমন আলোচনা আছে আওয়ামী লীগে। কেন্দ্রীয় পদে থাকা যেসব নেতা সক্রিয় থেকেছেন, তাদের পদোন্নতি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্পাদকীয় পদে দায়িত্ব পালন করা একাধিক নেতার ওপর ভীষণ খুশি দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। তাদের এবার পদোন্নতির সম্ভাবনা আছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পদ অনুযায়ী দলকে যারা সার্ভিস দিয়েছেন, নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সেসব নেতাকে পুরস্কৃত করবেন। দলকে যারা সার্ভিস দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের ব্যাপারেও নিশ্চয়ই ভাববেন তিনি।’
২০ সদস্যের সভাপতিমন্ডলীর সদস্যদের মধ্যে মতিয়া চৌধুরী, কাজী জাফরউল্যাহ, ফারুক খান, ড. আবদুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান বাদে অন্যদের রাজনৈতিক কার্যক্রমে দেখা যায়নি গত তিন বছর। দলীয় সূত্র জানায়, সভাপতিমন্ডলীর বেশ কয়েকজন সদস্যকে এবার উপদেষ্টা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সভাপতিমন্ডলীর শূন্য পদ পূরণ করা হবে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদে থাকা দক্ষ নেতাদের দিয়ে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান কমিটির কমপক্ষে দুই ডজন নেতার বাদ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পদ পেয়ে ভাগ্য বদলেছেন, বলয় তৈরি করেছেন ও দলের চেয়ে ব্যক্তির রজনীতি শক্তিশালী করেছেন এবং সুযোগ পেয়েও যারা নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন, এবারের বাদের তালিকায় থাকছেন তারা। যারা কাজ করেছেন, দক্ষতা দেখিয়েছেন, তারা টিকে যাবেন। কেউ পাবেন পদোন্নতি।
সূত্রগুলো জানায়, ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত ২১তম জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়া নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আবারও ফিরতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ পদে। সাংগঠনিক সম্পাদক থাকাকালে দায়িত্ব পালনে বেশ দক্ষতার পরিচয় রেখেছিলেন। পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসেবে সারা দেশে নেতাকর্মীদের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। নির্বাচনের আগে সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চায় বলেই তার ফেরার কথা বলছেন অনেকেই।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় নেতার পদে থেকে ঘোরাঘুরি করে সময় কাটানো নিষ্ক্রিয়রা সম্মেলনের তারিখ ঠিক হওয়ার পর পদ ধরে রাখতে বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। নিয়মিত দলীয় কার্যালয়ে যাতায়াত করছেন। দলীয় কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকছেন। নেতাকর্মীদের কাছ থেকে দূরে থাকা অনেক কেন্দ্রীয় নেতা এখন কর্মীদের সময় দিচ্ছেন। পদে টিকে থাকতে তদবিরে ছোটাছুটি করছেন এদিক-ওদিক।
জানা গেছে, ৫০-৬০ বছর বয়সের মধ্যে দক্ষ-যোগ্য পরীক্ষিত নেতা বেছে নেবেন দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা। কারণ বর্তমান বিশে^র রাজনীতি তারুণ্যনির্ভর হয়ে গেছে। তাই তরুণ নেতৃত্ব দিয়ে আওয়ামী লীগ পরিচালিত করার চিন্তা রয়েছে শেখ হাসিনার। এ ছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ে পরিচিতি-সম্পর্ক থাকা কর্মীদের পদ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ, আমলা, পুলিশ, ব্যবসায়ী ও গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ-সম্পর্ক ও পরিচিতি থাকা নেতাদের কমিটিতে অগ্রাধিকার পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে তার ঘনিষ্ঠ মহলে তার এমন আগ্রহের কথা জানান। নির্বাচন ও আন্দোলন মোকাবিলায় ব্যক্তিগত যোগাযোগ-সম্পর্ক-পরিচিতি থাকা নেতারা দলের জন্য বাড়তি সুযোগ তৈরি করতে পারবেন মনে করেন তিনি। সে হিসেবে বিভিন্ন পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ুয়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের এবার সুযোগ তৈরি হতে পারে।
ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের মধ্যে আলোচনায় আছেন, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, বাহাদুর বেপারী, মাহমুদ হাসান রিপন, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইফুজ্জামান শিখর, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন, ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সাইফুদ্দিন আহমেদ নাসির, প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমান্ত তালুকদার, সাবেক আন্তর্জাতিক সম্পাদক সালাহউদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খলিলুর রহমান খলিল, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাদ সাকিব বাদশা, নুরুল আলম পাঠান মিলন, দপ্তর সম্পাদক কাজী নাছিম আল মোমিন রূপক।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সব সময় নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচিত হয়। যাতে নবীনের উদ্যম আর প্রবীণের অভিজ্ঞতার সমন্বয় করে এগিয়ে যেতে পারে আওয়ামী লীগ।’ তিনি বলেন, প্রতিটি সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি নারীদের ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এবারও সেটা হবে।
এবারের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারীদের সংখ্যা বাড়ছে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। গত সম্মেলনে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাসহ ১৯ নারী ছিলেন। এর মধ্যে সভাপতিম-লীর সদস্য সাজেদা চৌধুরী ও সাহারা খাতুন মারা গেছেন। সম্প্রতি শূন্য থাকা একটি পদে সিমিন হোসেন রিমিকে নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পর্যায়ে এখন ১৮ জন নারী আছেন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) রাজনৈতিক দলগুলোর সর্বস্তরে ৩৩ শতাংশ নারী থাকার কথা বলা হয়েছে। সেই অনুযায়ী আগামী সম্মেলনে আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব পর্যায়ে নারীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। নতুন যাদের নিয়ে দলে আলোচনায় আছে তারা হলেন জাতীয় চার নেতার একজন সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে সৈয়দ জাকিয়া নূর লিপি, তারানা হালিম, যুব মহিলা লীগের বিদায়ী সভাপতি নাজমা আক্তার ও বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রেকর্ড গড়ে সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকুর রহিম। যে ইনিংসটি চোখে লেগে আছে ওপেনার লিটন দাসের। মুশফিকের এদিনের মতো ইনিংস বাংলাদেশের আর কোনো ক্রিকেটারে ব্যাটেই দেখেননি বলে মন্তব্যও করেছেন তিনি।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায় বাংলাদেশ ইনিংসের পরই। এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৪৯ রানের পুঁজি গড়ে বাংলাদেশ। যা নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
ছয় নম্বরে খেলতে নেমে মুশফিক ৬০ বলে ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ১৪ চার ও ২ ছক্কায়। ম্যাচ শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন লিটন। এ সময় মুশফিকের ইনিংস নিয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমি যতদিন খেলছি, বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড়ই এভাবে শেষের দিকে গিয়ে ১০০ করেনি।’
মুশফিকে মুদ্ধ লিটন বলে যান, ‘যখন দল থেকে কেউ এরকম একটা সেঞ্চুরি করে, দেখলে অনেক ভালো লাগে। সিনিয়ররা কেউ করলে তো আরও ভালো লাগে। মুশফিক ভাইয়ের শুধু আজকের ইনিংস না, শেষ ম্যাচের ইনিংসটা যদি দেখেন, আমার মনে হয় অসাধারণ ছিল।’
‘যদিও রান বেশি নয়, ৪০ বা এরকম ছিল (২৬ বলে ৪৪)। এটাই কিন্তু বড় ভূমিকা রাখে তিন শর বেশি রান করতে। আজকের ইনিংসটা তো ম্যাচের চিত্র বদলে দিয়েছে।’
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান করেছিল টাইগাররা। এ ম্যাচের আগ পর্যন্ত সেটাই ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতেছিল রেকর্ড ১৮৩ রানের ব্যবধানে। রানের হিসেবে যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। সুবাদে ১-০ তে সিরিজে এগিয়ে তামিম ইকবালের দল।
একই ভেন্যুতে আগামী বৃহস্পতিবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।