
একদিন বাদেই বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন দল আওয়ামী লীগের জাতীয় ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। ২৪ ডিসেম্বর সম্মেলন শেষ হয়ে যাবে। কর্মী-সমর্থকের মাঝে প্রশ্ন কে হচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক। সম্মেলনের ক্ষণ যতই এগিয়ে আসছে নেতাকর্মীদের আগ্রহ তত বাড়ছে। এই আগ্রহের ইতি টানতে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের প্রথম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শামসুল হক। ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেছেন।
ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কি নতুনেই ভরসা রাখবেন না রেকর্ড গড়বেন কৌতূহল সবার। শেখ হাসিনার সংকেত বুঝতে যেমন নেতাকর্মীরা চেষ্টা করছেন তেমনি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আরও বেশি চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কারণ, রেকর্ড করার একমাত্র সুযোগ তারই।
তৃতীয়বার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হতে পারলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ সহচর তাজউদ্দীন আহমদের পাশে ওবায়দুল কাদেরের নাম লেখা হবে। বিরল এই রেকর্ড গড়তে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। ওবায়দুল কাদেরই হচ্ছেন তৃতীয়বারের সাধারণ সম্পাদক এমন আলোচনাও রয়েছে সর্বস্তরে।
ওবায়দুল কাদের গতকাল বৃহস্পতিবার সম্মেলনমঞ্চ পরিদর্শনে গিয়ে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এবারের সম্মেলনে বড় ধরনের পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তার এই বক্তব্যে ওবায়দুল কাদেরই থাকছেন সেই আলোচনা আরও জোরালো হয়ে উঠেছে। ফলে ক্ষমতাসীন দলের সম্মেলন ঘিরে যে উত্তাপ থাকার কথা তাতে একটু ভাটা পড়েছে। এ পদের প্রার্থীরা যেমন তাপ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষও আগ্রহ হারাতে বসেছেন।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সম্মেলন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সাধারণ সম্পাদক পদে ১৬ বছর দায়িত্ব পালন করার নজির থাকলেও টানা তিনবার সাধারণ সম্পাদক হওয়ার নজির রয়েছে মাত্র দুজনের। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানা তিনবার সাধারণ সম্পাদক পদে থেকে নজির স্থাপন করেছেন। তিন দফার পরেও ১৯৬৪ সালে তলবি সম্মেলনেও সাধারণ সম্পাদক থাকেন বঙ্গবন্ধু। ধরা যায় চার মেয়াদ। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও জাতীয় চার নেতার একজন তাজউদ্দীন আহমদও টানা তিনবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ওবায়দুল কাদের এবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলে রেকর্ড করবেন তিনিও। বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীনের পাশে লেখা থাকবে তার নামও। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে লম্বা সময় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দুইবার ও তার কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দুইবার। চার দফায় ১৬ বছর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কিশোরগঞ্জ জেলার সভাপতির দায়িত্ব পালন করা জিল্লুর রহমান ১৯৭২ সালে প্রথম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সভাপতি হন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৪ সালেও সাধারণ সম্পাদক থাকেন। তবে সেবার সভাপতি হন এএইচএম কামরুজ্জামান। শেখ হাসিনার সঙ্গে জিল্লুুর রহমান সাধারণ সম্পাদক হন ১৯৯২ সালে। ১৯৯৭ সালে চতুর্থ দফায় সাধারণ সম্পাদক হয়ে দায়িত্ব পালন করেন ২০০২ সাল পর্যন্ত। তবে টানা তিনবার থাকার সুযোগ হয়নি তার।
দ্বিতীয় লম্বা সময় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রথমে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থেকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৫৩ সালে পূর্ণাঙ্গ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে চার মেয়াদে ১৯৬৪ সাল ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। ’৬৪তে তলবি সম্মেলনেও সাধারণ সম্পাদক হন।
এরপর দুই দফায় ১০ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন প্রয়াত নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। আওয়ামী লীগে মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৭৮ সালের সম্মেলনে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮৩ সালে সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বহিষ্কার হলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭ সালের সম্মেলনে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ১৯৭৫-পরবর্তী রাজনীতির উত্তাল সময়েও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা কারাগারে আটক থাকায় দায়িত্ব চালান তিনি। এই পদে তৃতীয় সর্বোচ্চ সময় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। রাজনীতিবিরোধী ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সময়ে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনে যাওয়ার দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তিনিই। অস্থির ওই সময়ে নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দিয়ে দলকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করেন, ঐক্য অটুট রাখেন। ২০০৯ সালে প্রথম ও ২০১২ সালে দ্বিতীয়বার সাধারণ সম্পাদক হয়ে দায়িত্ব পালন করেন ২০১৬ সাল পর্যন্ত। ৮ বছর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ২ মেয়াদে ৮ বছর থাকলেও এক মেয়াদেই ৭ বছর ছিলেন প্রয়াত আবদুল জলিল। ২০০২ সালের সম্মেলনে সভাপতিম-লী থেকে সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। টানা তিনটি সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেও সবচেয়ে কম সময় দায়িত্ব পালন করেন তাজউদ্দীন আহমদ। আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে ৬ বছর ছিলেন তিনি। তাজউদ্দীন সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গেই দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক। পাঁচ বছর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নেতৃত্ব দেন। সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে ১৯৭৮ সালে প্রথম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৮১ সালে দ্বিতীয় দফায় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। ১৯৮৩ সালে বহিষ্কার হন তিনি।
এরপর দুই মেয়াদে ৬ বছর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দেন ওবায়দুল কাদের। কাদের ১৯৮৭ সালে সদস্য পদে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হন। শিক্ষা-সংস্কৃতি, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থেকে সভাপতিম-লীর সদস্য হয়ে সাধারণ সম্পাদক পদে আসেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর টানা দুইবার সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তিনজন জিল্লুর রহমান, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও ওবায়দুল কাদের। সৈয়দ আশরাফ ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় থেকেও টানা তিনবার সাধারণ সম্পাদক হতে পারেননি। তবে তাকে ক্রান্তিকালের সাধারণ সম্পাদক বলা যায়। প্রায় একই অবস্থায় ওবায়দুল কাদেরও রয়েছেন। সাধারণ সম্পাদকের আলোচনায় থাকলেও আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতে হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আগে প্রায় সবাই সম্পাদকীয় পদ থেকে হয়েছেন সাধারণ সম্পাদক। প্রয়াত আবদুল জলিল ও ওবায়দুল কাদের ব্যতিক্রম। এই দুজন সভাপতিম-লীর সদস্য থেকে সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। আওয়ামী লীগে আগে কিংবা পরে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার নজির বেশি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন আলোচনা যাই থাকুক, সমাধানে আসা এখনই সম্ভব নয়। তারা বলেন, এখনো ‘আনপেডিক্টেবল’, চূড়ান্তভাবে কিছু বলা যাবে না। ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে। অন্যদিকে একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, অন্য সম্মেলনের সপ্তাহখানেক আগে যে সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন তিনি বা তার অনুসারীরা সংকেত পেয়ে যেতেন। এবার মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সবুজ সংকেত আসেনি। আবার সম্পাদকম-লীর অন্য কয়েকজন নেতা বলেন, ওবায়দুল কাদের সংকেত পেয়ে গেছেন, তা না হলে বড় পরিবর্তন হবে না বলে এ কথা বলতেন না। তার কার্যক্রম ও চেহারা দেখে তারা বলেন, সম্ভবত তিনিই হচ্ছেন তৃতীয়বারের মতো সম্পাদক।
সম্পাদকম-লীর ওই নেতারা বলেন, পরিবর্তন না হলে দলে প্রাণচাঞ্চল্য আসবে না। করোনা-পরিস্থিতি ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন মাথায় রেখে পরিবর্তন হবে না বলে যে আলোচনা বাজারে আছে তা অযৌক্তিক। তাদের অনেকেই দাবি করেন, দলের ভেতরে যেসব নেতা পদপ্রত্যাশী তাদের মধ্য থেকে বেছে নিলেও দল চাঙ্গা হয়ে উঠবে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফসহ অন্য প্রার্থীদের অনেকের সারা দেশে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। হানিফের প্রতি এক ধরনের আস্থা সৃষ্টি হয়েছে সারা দেশে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে টানা দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন ওবায়দুল কাদের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তিনি। আগামীকাল ২৪ ডিসেম্বর দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলন। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে কে হচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক?
সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের নাম বেশি আলোচিত হচ্ছে। এবার হলে তৃতীয়বারেরমতো এ দায়িত্ব পাবেন তিনি। তবে তার শারীরিক অসুস্থতার ব্যাপারটিও বেশ আলোচিত। তিনি বাদ পড়তে যাচ্ছেন কি না সে সম্পর্কে কৌতূহল রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেলেও তিনি কি তা সামলাতে পারবেন এমন প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে তাদের মনে।
দলের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ওবায়দুল কাদের দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছেন। তার মন্ত্রণালয়ের অধীনেই দেশের সবচেয়ে বড় অর্জন পদ্মা সেতু হয়েছে। বিশে^ বাংলাদেশকে সম্মানের আসনে বসিয়েছে এই সেতু।
তৃতীয়বার সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আলোচনায় থাকলেও নানাবিধ চ্যালেঞ্জও সামনে রয়েছে ওবায়দুল কাদেরের। বড় চ্যালেঞ্জ হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ মাঠে বিরোধী দল বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবিলা করা। তৃতীয় চ্যালেঞ্জ দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা। এই তিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কতটা সফল হবেন বা ব্যর্থ হলে কী সংকট সৃষ্টি হবে তা নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে বিস্তর আলোচনা চলছে। আলোচনা চলছে ওবায়দুল কাদের ছাড়া বিকল্প কে আছেন, তা নিয়েও।
২২তম জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদাকাক্সক্ষীরা ও তাদের অনুসারীরা তৃতীয় দফায় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেখতে চান না ওবায়দুল কাদেরকে। ফলে ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অসুস্থতার বিষয়টি আলোচনায় আনা হচ্ছে। দলের একটি অংশ মনে করে, আগামী নির্বাচন সামলাতে ও আন্দোলন মোকাবিলা করতে হলে সাধারণ সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার পাশে সুস্থ-সবল একজন সাধারণ সম্পাদকের বিশেষ প্রয়োজন। তাতে সভাপতি কিছুটা চাপমুক্ত থাকতে পারবেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সারা দেশ সফর করতে হবে দলের সাধারণ সম্পাদককে। কৌশলী রাজনীতি ও সিদ্ধান্তের প্রয়োজন পড়বে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি-কূটনীতি দক্ষতার সঙ্গে সামলাতে হবে দলের সভাপতির পাশাপাশি দলের সাধারণ সম্পাদককেও। আলোচনায় থাকা ওবায়দুল কাদেরের জন্য বয়স ও শারীরিক অবস্থার কারণে এসব কাজ সঠিকভাবে করে ওঠা কঠিন হবে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা-মেধা-দক্ষতায়, সর্বোপরি আওয়ামী লীগের জন্য কৌশলী একজন সাধারণ সম্পাদক সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যিনি দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারবেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ভালোভাবে সামাল দিতে পারবেন ও আন্দোলন মোকাবিলা করতে পারবেন। কৌশলগত রাজনীতিতে বিশেষ পারদর্শী হবেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় থাকায় বিভিন্ন মত-পথের ও আদর্শের লোক দলে জায়গা নিয়েছে, ব্যক্তি-অনুসারী বেড়েছে দলে। সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে আদর্শের-স্বার্থের দ্বন্দ্ব-কোন্দল এখন চরমে। দ্বন্দ্ব ন্যূনতম মাত্রায় রাখতে সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকা অনেক বেশি। এটি বিশেষ আমলে রাখতে হবে।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অবর্তমানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে উঠেছেন। সামনে ফখরুল আরও গুরুত্বপূর্ণ হবেন। এই সময়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমন কাউকে হতে হবে, যিনি ভাবমূর্তি সম্পন্ন হবেন এবং মির্জা ফকরুলকে মাঠের রাজনীতিতে ঘায়েল করতে পারবেন। গ্রহণযোগ্য একজন নেতাকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে বসাতে হবে।
আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আওয়ামী লীগের দায়িত্ব হাতে নিয়ে দল পরিচালনায় সফলতার যে স্বাক্ষর রেখেছেন, দলকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তাতে যিনিই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হবেন তাকে সবসময় ছায়া সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে হবে। সৈয়দ আশরাফ দায়িত্ব পালনের সময়ে নানা সমালোচনায় পড়লেও দায়িত্ব ছাড়ার পর আওয়ামী লীগের সর্বস্তরে একটি আস্থার নাম হয়ে ওঠেন। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলের সবাই চান একজন সৈয়দ আশরাফকে।
দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও শুভাকাক্সক্ষীরা দাবি করেন, এখন কাদেরের চেয়ে ভালো সাধারণ সম্পাদক বেছে নেওয়াও কঠিন। আর যাই হোক ওবায়দুল কাদেরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ার আছে। তার দলের জন্য ত্যাগও আছে। একাধিকবার কারাবরণ করেছেন। রাজনীতির সুসময়-দুঃসময় দুটোই দেখেছেন কাছ থেকে। সারা দেশে পরিচিতিও আছে। তার চেয়ে বেশি জানাশোনা কম নেতারই আছে। আওয়ামী লীগের জন্য কমিটমেন্টও নেহায়েত কম নয় কাদেরের।
দলের সম্পাদকম-লীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগের মতো প্রাচীন একটি দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এমন দুয়েকজনের নাম শোনা যায়, যারা দায়িত্ব পেলে রাজনীতি ছেড়ে দিতে চাইবেন অনেকে। তিনি বলেন, সভাপতিমন্ডলীর তিন জন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদের একজন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় আছেন। ওনাদের মধ্যে একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও রাজনীতি-আন্দোলন ও নির্বাচন মোকাবিলা করা যাবে। এর বাইরে যারা রয়েছেন কেউই এই সময়ে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ফিট নন।
২০১৬ সালে দলের ২০তম সম্মেলনে প্রথমবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান ওবায়দুল কাদের। ২০১৯ সালের মার্চে ২১তম সম্মেলনের আগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তার শারীরিক অসুস্থতার বিষয়টি সামনে এনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এই পদে তাকে পিছিয়ে রাখতে বহু চেষ্টা করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আস্থা অর্জন করেছেন তিনিই।
১৯৭১ সালে মুজিব বাহিনীর হয়ে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলয় আহত ওবায়দুল কাদের। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দীর্ঘ আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরের মেয়াদেও সভাপতি হন। তিন বারের সংসদ সদস্য ওবায়দুল কাদের। বর্ণাঢ্য এই রাজনীতিক ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
১৯৭৫-পরবর্তী কঠিন সময়ের রাজনীতির অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ ওবায়দুল কাদের সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক পদ নিয়ে প্রথমে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসেন। পরের দুটি সম্মেলনে এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯তম সম্মেলনে সভাপতিম-লীর সদস্য হন ওবায়দুল কাদের। ২০তম ও ২১তম সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক হন।
ওই সম্মেলনের আগেই সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দিয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ওবায়দুল কাদেরকে ফিরিয়ে আনা হয়। বানানো হয় টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক। তবে দায়িত্ব পেলেও শারীরিক অবস্থা ও করোনা মহামারীর কারণে দেড় বছর ঘরবন্দি থাকতে হয়েছে তাকে। সড়ক, যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী হিসেবে দাপ্তরিক কাজও সেরেছেন ঘর থেকেই। এর ফলে সরকারি কাজে তেমন প্রভাব না পড়লেও সারা দেশে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে বিরূপ প্রভাব পড়ে; সংগঠন ঝিমিয়ে পড়ার দশায়। ঘরে বসে গণমাধ্যমে সরব থেকেছেন ওবায়দুল কাদের। প্রতিদিন গণমাধ্যমে দলের ও সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেছেন সংবাদ সম্মেলনে।
চলতি বছরের শেষের দিকে ঘর থেকে বাইরে বের হতে শুরু করেন ওবায়দুল কাদের। দলীয় কর্মকা-ে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। তৃণমূলের সম্মেলন-বর্ধিতসভা, কর্মিসভা এসব আয়োজনে যাওয়া-আসা শুরু করেন। ঢাকার বাইরেও নিয়মিত যাতায়াত করছেন। শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে শোনা যায়। তাই নিজের শক্তি-সামর্থ্য প্রমাণ করতে আগের মতো সরব হয়ে উঠেছেন তিনি। এই নেতার ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেতে আগ্রহী তিনি। অসুস্থতার কথা ভুলে দলীয় কার্যক্রমে নিয়মিত উপস্থিত থাকছেন তিনি।
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে বিএনপিকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের মুখপাত্র হিসেবে সারা দেশে ব্যাপক সাড়া ফেলছিলেন। সরকার তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানান বিএনপির একাধিক নেতা।
নেতারা বলেন, দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে মির্জা ফখরুল সারা দেশে বিভাগীয় সমাবেশ-সফর করে দলকে চাঙ্গা করেন। গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে ৮ ডিসেম্বর তাকে উত্তরার বাসভবন থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গভীর রাতে আটক করে মিন্টো রোডের অফিসে নিয়ে যান। ৯ ডিসেম্বর তার জামিন বাতিল করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। বিএনপি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তার মুক্তি দাবি করে। এরপর চার দফা আদালতে জামিনের আবেদন করে ব্যর্থ হন দলের আইনজীবীরা। বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার জানান, তার বিরুদ্ধে ৮১টি মামলা রয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মহাসচিবের মুক্তির দাবিতে আমরা রাজপথে কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আমাদের মহাসচিব যখন সবার প্রিয় হয়ে উঠেছেন, তখন তাকে থামিয়ে দিতে সরকার মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে নিয়েছে। তবে তাকে জনগণের হৃদয় থেকে মুছে ফেলতে পারবে না।’
বিএনপি নেতারা বলেন, দল পরিচালনার পাশাপাশি মির্জা ফখরুল ঢাকায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও মিশনপ্রধানরা সাক্ষাৎ করতে এলে তাতেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যেরও জবাব দিয়েছেন তিনি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা প্রায়ই প্রশ্ন করেন বিএনপির পরবর্তী নেতা কে?
দলটির নেতারা বলছেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের নেতা। তাদের অনুপস্থিতিতে মহাসচিব মির্জা ফখরুলই আমাদের নেতা হিসেবে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে তিনশো আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে দলীয় যে মনোনয়নপত্র দেওয়া হয়েছিল তাতে স্বাক্ষর করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল তাকে। সরকার পতনের পর যে নির্বাচন হবে তাতেও দলীয় মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর করবেন তিনি।
মির্জা ফখরুল ১৯৯১ সালের পঞ্চম ও ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী খাদেমুল ইসলামের কাছে পরাজিত হন। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের রমেশ চন্দ্র সেনকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই বছর নভেম্বরে বিএনপি সরকার গঠন করলে খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় প্রথমে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও পরে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০০৬ সালের অক্টোবরে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগপর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। তখন তিনি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। এরপর দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব নির্বাচিত হন। ২০১১ সালের মার্চে দলের মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর তিনি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হন। ২০১৬ সালে দলের ষষ্ঠ কাউন্সিলে মহাসচিব নির্বাচিত হন।
বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, দলের মহাসচিব নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার বিরুদ্ধে অনিয়মের কোনো অভিযোগ ওঠেনি। দেশ-বিদেশে একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে মির্জা ফখরুল বিএনপিতে নিজের নেতৃত্ব যেমন প্রতিষ্ঠিত করেছেন তেমনি জনপ্রিয় হয়েছেন। সারা দেশে বিএনপির চলমান আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। তার নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠেছে। বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে জনসমাগমের রেকর্ড হয়েছে। সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রভৃতি দাবিতে সফলতা আশা করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
তারা বলেন, দলে যে অবস্থানে মির্জা ফখরুল উঠেছেন তা হঠাৎ করে হয়নি। বিভিন্ন কর্মকা-ে দলের মধ্যে সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাকে অপছন্দ করেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে। সব গুঞ্জন উড়িয়ে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর দেওয়ার অনুমিত দেন। তখন আপত্তি করেননি তৎকালীন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সে সময় ঠাকুরগাঁও-১ ও বগুড়া-৬ আসনে নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। ঠাকুরগাঁও-১ আসনে পরাজিত হলেও বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত হন মির্জা ফখরুল। নির্বাচিত হলেও সংসদে যোগ দেননি। তবে দলের বাকি নির্বাচিতরা শপথ নেন। তিনি জানান, রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে তিনি শপথ নেননি।
বিএনপির এক বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সর্বোচ্চ ব্যক্তি। তার নেতৃত্বে আমরা বিএনপিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। গত ১২ অক্টোবর শুরু হওয়া বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের প্রধান অতিথি করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল স্থায়ী কমিটিতে। পরে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করে সব বিভাগীয় সমাবেশে তাকে প্রধান অতিথি করা হয়।
খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, মির্জা ফখরুল আমাদের ভাগ্নে। দলের দুর্দিনে সে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে। প্রথমে দলের কেউ কেউ তাকে অসহযোগিতা করেছে। এখন দুই-একজন ছাড়া সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
মির্জা ফখরুল-বিরোধী স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার না করার অঙ্গীকার করেন। কিন্তু এরপরও নেতাকর্মীদের ধরতে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্তদের ঘরে আটকে রাখতে শুরু করে। এমনকি ১৮ জনের মতো সংসদ সদস্য প্রার্থীকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়। তখন স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ অনেকে নির্বাচন বর্জনের দাবি তোলেন। কেউ কেউ নির্বাচন কমিশনে গিয়ে অবস্থান নিতে পরামর্শ দেন। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় এবং কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ার জন্য মির্জা ফখরুলের সমালোচনা করেন নেতাকর্মীদের একটি অংশ। নির্বাচনের পর গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট করারও সমালোচনা করেন বিএনপির কিছু নেতা। মহাসচিব সব সিদ্ধান্ত দলীয়ভাবে চেয়ারপারসন দিয়েছেন বলে জানান। সর্বশেষ সংসদ থেকে পদত্যাগের বিষয়ে স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য ভার্চুয়াল সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানালেও তাতে মির্জা ফখরুল একমত হননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিভাগীয় সমাবেশে অন্য নেতাদের পাঠালে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো ঢাকা থেকে তাদের প্রতিনিধি পাঠাবে না বলে জানিয়ে দেয় বিএনপিকে। মির্জা ফখরুল প্রধান অতিথি থাকলে তারা ঢাকা থেকে রিপোর্টার পাঠানোর ও গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ প্রচার করার কথা জানায়। পরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সব বিভাগীয় সমাবেশে মির্জা ফখরুলকে প্রধান অতিথি করার নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে আলোচনার দায়িত্ব দেওয়া হয় মির্জা ফখরুলকে। এভাবে সবকিছুর নিয়ামক হয়ে ওঠেন তিনি।
৭৫ বছর বয়সী মির্জা ফখরুল শারীরিক নানা জটিলতা নিয়ে দলের নেতৃত্বে রয়েছেন। ১৯৭২ সালে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষা ক্যাডারে ঢাকা কলেজে অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতায় যোগ দেন তিনি। বেশ কয়েকটি সরকারি কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৮৬ সালে ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজে অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৮ সালে এরশাদের আমলে তিনি শিক্ষা বিভাগের ডিজি ছিলেন। ১৯৮৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মির্জা ফখরুল পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের শেষের দিকে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯২ সালে তিনি বিএনপির ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। একই সঙ্গে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে মির্জা ফখরুল যখন বিএনপির মনোনয়ন পান তখন তিনি ঠাকুরগাঁও জেলার প্রাথমিক সদস্যও ছিলেন না। চাচা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা মির্জা গোলাম হাফিজের সুবাদে তিনি মনোনয়ন পান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) মির্জা ফখরুল ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (পরে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন) সদস্য ছিলেন এবং এসএম হল শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় তিনি সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ছিলেন। জিয়াউর রহমান সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এসএ বারী এটি। তার ব্যক্তিগত সচিব পদে মির্জা আলমগীর দায়িত্ব পালন করেন ১৯৮২ সাল পর্যন্ত। স্বৈরাচার এরশাদ ক্ষমতা দখলের পর এসএ বারী উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করলে শিক্ষকতা পেশায় ফিরে যান তিনি। নিজ জেলা শহর ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজে অর্থনীতির অধ্যাপক পদে যোগ দেন। পরে আবার রাজনীতিতে যুক্ত হন। রাজনীতিতে যোগ দিয়ে প্রথমে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মেয়র হন।
মির্জা ফখরুল বিবাহিত এবং দুই মেয়ের বাবা। বড় মেয়ে মির্জা শামারুহ বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবে কর্মরত। ছোট মেয়ে মির্জা সাফারুহ একটি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। স্ত্রী রাহাত আরা বেগম বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
চলতি ডিসেম্বর মাসের ২৮ তারিখে বহুল কাক্সিক্ষত মেট্রোরেল উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে চলাচল করবে। এতে মেট্রোরেলের প্রথম সুবিধা পাবেন মিরপুরবাসী। তারপর যারা উত্তরা থেকে মিরপুর যাতায়াত করবেন তারা এ সুবিধাভোগী হবেন। এদিকে মেট্রোরেল উদ্বোধনের দিন স্থানীয়দের সাতটি নির্দেশনা মেনে চলতে বলেছে পুলিশ। সরেজমিনে গতকাল বৃহস্পতিবার মিরপুর গিয়ে দেখা যায়, একসময় এই এলাকায় রাস্তায় মেট্রোরেলের মালামাল রাস্তার ওপরই থাকত। এখন সেখানে মালামাল নেই। আগের থেকে রাস্তা সম্প্রসারণ হয়েছে। আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যাম লেগে থাকলেও গতকাল তেমনটা দেখা যায়নি।
আগারগাঁও এলাকার বাসিন্দা রাশেদ খান দেশ রূপান্তরকে জানান, মিরপুরে একসময় ধুলায় একাকার ছিল মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের জন্য। বাসা থেকে বের হলেই নানা সমস্যায় পড়তে হতো। কিন্তু এখন অনেকটাই কমতে শুরু করেছে এ সমস্যাগুলো।
মিরপুর-১২ এলাকার বাসিন্দা আলিম উদ্দীন বলেন, ‘মিরপুরের নাম শুনলে অনেক সিএনজিচালক এই এলাকায় আসতে চাইত না। এলেও ভাড়া ডাবল চাইত। কারণ, মিরপুর মানেই যানজটের শহর। এখন এখানকার রাস্তা বড় হওয়ার পাশাপাশি ফুটপাত দিয়ে মানুষ যাতায়াত করতে পারছে। তাই মেট্রোরেল চালু হলে আমরাই এখন প্রথম সুবিধাভোগী হব।’
এই এলাকার আরেক বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমার অফিসের কাজে উত্তরায় যাওয়া হয় মাঝেমধ্যে। এখন মিরপুর থেকে উত্তরা যেতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা লেগে যায়। কিন্তু মেট্রোরেল চালু হলে মিরপুর থেকে খুব সহজে উত্তরায় যাওয়া যাবে। এতে সময়ও বাঁচবে অনেক।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ সাইফুন নেওয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মেট্রোরেল একটি পরীক্ষিত যাতায়াতমাধ্যম। এর সুবিধাটা ধীরে ধীরে সবাই পাবে। কিন্তু প্রথম সুবিধাভোগী হবে মিরপুরবাসী। এরপর যারা উত্তরা থেকে মিরপুরের উদ্দেশ্য যাতায়াত করবে তারাও সুবিধাভোগী হবে। তবে এ মেট্রোরেলের জন্য অনেক ভোগান্তিতে পড়েছিল মিরপুরের বাসিন্দারা। যেসব রাস্তা আগে সংকুচিত ছিল, সেগুলোর সমস্যা আর থাকবে না। তিনি আরও বলেন, মিরপুরের বাসিন্দা কেউ যদি উত্তরায় যেতে চায় তাহলে ২০ মিনিটের মধ্যে যেতে পারবে। যেটার সময় এখন বাসে এক থেকে দুই ঘণ্টাও লেগে যায়।’
উদ্বোধনী দিনের নির্দেশনা : এদিকে ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে উপস্থিত থেকে মেট্রোরেল উদ্বোধন করবেন। সে জন্য উদ্বোধনের দিন স্থানীয়দের পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো ১. কোনো ভবন, বিল্ডিং বা ফ্ল্যাটে আগামী ২৯ ডিসেম্বরের আগে নতুন কোনো ভাড়াটিয়া উঠতে পারবে না। ২. কোনো ভবনের কমার্শিয়াল স্পেসে আগামী ২৮ ডিসেম্বর নতুন কোনো অফিস, দোকান, রেস্টুরেন্ট খোলা যাবে না। ৩. মেট্রোরেলসংলগ্ন কোনো ভবনের ব্যালকনিতে, ছাদে কাপড় শুকাতে দেওয়া যাবে না এবং কেউ দাঁড়াতে পারবেন না। ৪. ভবন, বিল্ডিং বা ফ্ল্যাটে ওইদিন কোনো ছবি বা ফেস্টুন লাগানো যাবে না। ৫. মেট্রোরেলসংলগ্ন কোনো ভবনের কমার্শিয়াল স্পেসে বা আবাসিক হোটেলে ২৮ ডিসেম্বর কেউ অবস্থান করতে পারবে না। ৬. কোনো ভবন বা ফ্ল্যাটে যদি কোনো বৈধ অস্ত্র থাকে, তা ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে থানায় জমা দিতে হবে। ৭. মেট্রোরেলের দুই পাশের সব ব্যাংক বা এটিএম বুথ ২৮ ডিসেম্বর সকাল থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান চলাকালীন পর্যন্ত বন্ধ রাখার কথা এ নির্দেশনায় দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এবারের সম্মেলনে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে ২২তম জাতীয় সম্মেলনে অন্তত ১০ নেতা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনস্থল পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘অপরিহার্যতা’ তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, দলের সভাপতি যিনি আছেন, তিনি আমাদের ঐক্যের প্রতীক। তিনি এখানে অপরিহার্য। তাকে সমর্থন করে না এমন একজনও কাউন্সিলর খুঁজে পাওয়া যাবে না। কাজেই এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।
দলটির সাধারণ সম্পাদকের বিষয়ে তিনি বলেন, এই পদে প্রার্থী হতে অনেকেরই ইচ্ছা থাকতে পারে। আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক দল। আমার জানা মতে, এ পদে অন্তত ১০ প্রার্থী আছেন, যারা সাধারণ সম্পাদক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। তাদের কে হবেন, তা নেত্রীর সিদ্ধান্ত এবং কাউন্সিলরদের মতামতে সবকিছুর প্রতিফলন ঘটবে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে।
তিনি বলেন, আমরা আগেই বলেছি, এবারের সম্মেলনে যে কমিটি হবে, তাতে তেমন একটা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম। পরবর্তী সম্মেলন নির্বাচনের পরে হবে। আপাতত বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনের ব্যাপারে আমরা ভাবছি না। তবে কাউন্সিলরদের মতামতের ওপর সবকিছু নির্ভর করবে। আমি এই মুহূর্তে কোনো কিছু প্রেডিক্ট করতে চাই না।
বিতর্কিতদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের ভাবনা জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, এবারের নির্বাহী কমিটি অত্যন্ত সক্রিয় একটা কমিটি। করোনার মধ্যেও কাজ করতে দেখেছি। নেত্রীর ওপর নির্ভর করে সবকিছু। আমরা কেউ পারফেক্ট মানুষ না, ভুলত্রুটি নিয়েই মানুষ। নতুন নেতৃত্ব খুঁজতে অনেক কিছু চিন্তাভাবনা করতে হবে। বিতর্কিতদের ব্যাপারে আমাদের চিন্তাভাবনা আছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সহযোগিতায় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন আওয়ামী লীগের লক্ষ্য ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। ২০৪১ পর্যন্ত উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করব আমরা। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যাব এবং এবারকার সম্মেলন এটা হবে একটা চ্যালেঞ্জিং টাইমস।
বৈশ্বিক যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞার প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ সংকটে আছে মন্তব্য করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এই সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দিতে এবারের সম্মেলনে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ উপস্থিতি থাকবে। এবারের সম্মেলন ঐতিহাসিক সম্মেলন হবে। সারা দেশে জাগরণের ঢেউ আছে। সম্মেলনে নেতাকর্মীদের ঢল নামবে।
তিনি বলেন, সুশৃঙ্খল, সুসংগঠিত উপস্থিতির মাধ্যমে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছি। আগামী নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমরা জাতির কাছে অঙ্গীকার রেখেছি, সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাব। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আওয়ামী লীগকে আরও সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করে গড়ে তুলতে চাই আমরা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ প্রস্তুত জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। আগামী সরকার পরিচালনার জন্য আমরা প্রস্তুত, ঐক্যবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল এটাই বার্তা আমাদের।
বিধিমতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী তার অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদক্রম অনুযায়ী সর্বোচ্চ নির্বাহী প্রকৌশলী পর্যন্ত বদলির এখতিয়ার রাখেন। কিন্তু এখন থেকে তিনি অধিদপ্তরের কোনো ধরনের বদলির সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। এ মর্মে চিঠি দিয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রধান প্রকৌশলী মো. শামীম আখতারের বিষয়ে তদন্ত করতেও নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়কে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীদের বদলি করা নিয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পর্কের ফাটল ধরে প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারের। সেই সূত্রেই তার নানা অনিয়ম নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে সংস্থা প্রধানকে কারণ দর্শানোর নোটিসও দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা যায়। এরই মধ্যে প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ারে বসতে সংস্থাটির আরও দুজন প্রভাবশালী প্রকৌশলীর জোর তৎপরতাও চোখে পড়ার মতো।
ঘটনার সূত্রপাত : গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের মধ্যে নগর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর চেয়ারটি নানা দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ চেয়ারে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করেছেন স্বর্ণেন্দু শেখর ম-ল। এ প্রকৌশলী চেয়ারে বসার শুরু থেকেই এখানে নিজের পছন্দের লোক বসাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী। আর দীর্ঘ সময় ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের চাকরি করা স্বর্ণেন্দু শেখর ম-লও নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন আগেভাগে। এরই মধ্যে গত ৬ ডিসেম্বর হঠাৎ এ প্রকৌশলীকে নগর ডিভিশন থেকে বদলি করে শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী করা হয়। সেই সঙ্গে এক দিনের মধ্যে তাকে কর্মস্থলে যোগ দিতে অফিস আদেশ দেওয়া হয়। এ প্রকৌশলীকে অনেকটা বলপ্রয়োগ করে ঢাকার বাইরে পাঠাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন প্রধান প্রকৌশলী। ঢাকায় একই চেয়ারে চার-পাঁচ বছর হয়েছে এমন প্রকৌশলীদের রেখে মাত্র এক বছরের মাথায় বদলি করা হয়। বিষয়টি নিয়ে স্বর্ণেন্দু শেখর ম-ল নিজ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দেনদরবার করেন। একপর্যায়ে সংশ্লিষ্ট আশীর্বাদ পেয়ে গেলে বদলি আদেশ বাতিল করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়টি নিয়েই মূলত প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন তৈরি হয় প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারের। তবে এ বিষয়ে নগর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী স্বর্ণেন্দু শেখর ম-লের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বদলি বন্ধ : সম্প্রতি গণপূর্ত অধিদপ্তরে চলমান উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে গত ২০ ডিসেম্বর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে একটি অফিস আদেশ জারি করা হয়। মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শেখ নূর মোহাম্মদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি গণপূর্ত অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের হয়রানিমূলক বদলিসংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়টি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এবং বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের নজরে এসেছে। সমন্বয়হীনভাবে এ ধরনের বদলি করায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। এমতাবস্থায় মন্ত্রণালয় থেকে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত গণপূর্ত অধিদপ্তরের তার নিয়ন্ত্রণাধীন সকল প্রকার বদলি/পদায়নসংক্রান্ত কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠি : গত ১৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৩ আবদুল্লাহ আল খায়রুম স্বাক্ষরিত চিঠিতে ‘গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এবং এইচবিআরআইর সাবেক মহাপরিচালক লেবাসধারী ভন্ডপীর মো. শামীম আখতারের দুর্নীতি প্রসঙ্গে’ শিরোনামে চিঠিতে বলা হয়, এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে অবহিত করতে হবে।
চেয়ারের দৌড়ে আরও দুজন : বিসিএস গণপূর্ত ক্যাডারের ১৫তম ব্যাচের প্রথম হলেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম। নিয়মমাফিক তিনি এ ব্যাচ থেকে প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ারে বসেছিলেন। কিন্তু এ প্রকৌশলী তার দায়িত্ব পালনকালীন নিজ দপ্তরসহ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। ওই সময়ের প্রভাবশালী সচিব শহীদ উল্লা খন্দকারের সঙ্গে প্রকাশ্যে বিবাদে জড়ান। একপর্যায়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একজন সচিবের সঙ্গে একটি বিষয় নিয়ে বিবাদে জড়ালে আশরাফুল আলমকে হাউজ বিল্ডিং রিসার্স ইনস্টিটিউটে বদলি করা হয়। সরকারপন্থি প্রকৌশলী হিসেবে দাবিদার আশরাফুল আলমও তার আগের চেয়ার অর্থাৎ গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ার পেতে তৎপর রয়েছেন বলে জানা যায়।
এ ছাড়া প্রধান প্রকৌশলী চেয়ারে বসতে চান একই ব্যাচের তৃতীয় স্থানে অবস্থান করা মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ। নিয়ম অনুযায়ী আশরাফুল আলমের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার কথা ছিল এ প্রকৌশলীর। কারণ দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মইনুল ইসলামের চাকরিসংক্রান্ত জটিলতা থাকায় মোসলেহ উদ্দিনের দায়িত্ব পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই সময় বিতর্কিত ঠিকাদার জি কে শামীমের ঘটনায় দুদকের একটি মামলায় আসামি ছিলেন মোসলেহ উদ্দিন। তাই সরকার বিতর্ক এড়াতে একই ব্যাচের সপ্তম অবস্থানে থাকা অনেকটা ক্লিন ইমেজের শামীম আখতারকে আবিষ্কার করে প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ারে এনে বসায়। এরই মধ্যে দুদকের মামলা থেকে নির্দোষ হয়েছেন মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ। সেই সঙ্গে শামীম আখতারও প্রায় দুই বছর প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ারে দায়িত্ব পালন চলছে। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর উন্নয়নকাজে কিছুটা স্থবিরতা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা দুর্বল হয়েছে এমন দাবি করেন মোসলেহ উদ্দিনপন্থি প্রকৌশলীরা। তারা মনে করেন, মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব করে আসা অভিজ্ঞ ও মেধাবী মোসলেহ উদ্দিনই এ চেয়ারের বসার যোগ্য। এ লক্ষ্যে তিনিও বেশ তৎপর রয়েছেন বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে জানতে মোসলেহ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিস্তারিত শুনে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
যা বললেন সংশ্লিষ্টরা : এসব বিষয়ে কথা বলতে প্রধান প্রকৌশলী মো. শামীম আখতারের মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। এইচবিআরআইয়ের মহাপরিচালক মো. আশরাফুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শামীম আখতার এইচবিআরআইয়ের দায়িত্ব পালনকালে বেশ কিছু অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন। এগুলো তিনটি তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। যেহেতু তিনি এখানে সংস্থাপ্রধান ছিলেন তাই আমি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। যে কারণে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা সব প্রমাণাদি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি ব্যাচের প্রথম অবস্থায় রয়েছি। প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ারে দায়িত্ব পালন করে আমাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
অপারেশন ছাড়াই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আব্দুল মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক মানসিক রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করেছেন চিকিৎসক।
এ কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। তাদের এই সাফল্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, তার ছেলে মোতালেব খুব ভাল ছাত্র ছিল। ২টি লেটার মার্ক নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর খারাপ সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলি খাদ্য মনে করে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। গত এক বছর ধরে তার শরীরে জ্বর ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছিল না। অবশেষে গত ১৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখানে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার অসুখের কারণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকরা তার পেটের ভিতর থেকে বিনা অপারেশনে কলমগুলো বের করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব হোসেন প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ফলে রোগীটিকে আমার কাছে রেফার্ড করেন। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, কাজটি আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। বর্তমানে রোগীটি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দু‘টি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।